Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একাত্তরের দিনগুলি – জাহানারা ইমাম

    জাহানারা ইমাম এক পাতা গল্প451 Mins Read0

    ২৫ আগস্ট, বুধবার ১৯৭১

    ২৫ আগস্ট, বুধবার ১৯৭১

    রুমী বলল, আম্মা, আমাকে একটু ২৮ নম্বর রোডে নামিয়ে দেবে?

    সাড়ে ছটা প্রায় বাজে। পশ্চিম আকাশে সূর্য লালচে হয়ে এসেছে। যেতে যেতে জিগ্যেস করলাম, কখন ফিরবি? নিতে আসব? রীম অন্যমনস্কভাবে বলল, কখন ফিরব? কি জানি। ঠিক বলতে পারছি না। তা, আধঘন্টা পরে এসো না হয় একবার।

    রুমীকে একটু যেন কেমন কেমন লাগছে। গতকাল দুপুরে খাওয়ার পর চলে গিয়ে আজই বিকেল পাঁচটার দিকে বাড়ি ফিরেছে। কি এক চাপা উত্তেজনায় ও চনমন করছে। মুখচোখ লালচে। ভেতরে ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে, সেটা চাপতে ওর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে কিছু জিগ্যেস করতে সাহস হলো না।

    ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডের যে বাড়িটায় ওদের আস্তানা সেটার মালিক দিলারা হাশেম। সে তার স্বামী-সন্তান নিয়ে করাচিতে থাকে। বাড়িটা ভাড়া দিয়েছে রাইকার ল্যাবরেটরিজকে। চুল্লু অর্থাৎ মাসুদ সাদেক ঐ কোম্পানির ফিল্ড ম্যানেজার। বাড়িটা রাইকার ল্যাবরেটরিজ-এর অফিস, তাই অফিস বন্ধের পর দারোয়ান আর নাইটগার্ড ছাড়া আর কেউ ও বাড়িতে থাকে না।

    রুমীকে নামিয়ে দিয়ে তক্ষুণি বাড়ি ফিরলাম না। আধঘন্টা পরে তাকে নিয়ে আসতে বলেছে। তাহলে ধরে নেওয়া যায় সে রাতে বাড়িতেই থাকবে। সুতরাং কিছু স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা করা যায় আজ। রুমী খেতে ভালোবাসে। ঢাকা ক্লাবে চলে গেলাম। স্মােকড় হিলশা আর টিকেন ক্র্যাম্ব চপ কয়েক প্লেট নিলাম। নিতে নিতে আধঘন্টা কেটে গেল। সুতরাং আবার চলে গেলাম ২৮ নম্বর রোডের বাড়িটায়। গেটের কাছে পৌঁছতেই দেখি একটা ফিয়াট ৬০০ বেরোচ্ছে। আমাকে দেখে গাড়িটা আমার ডানপাশে থামল। চালক হ্যারিস, রুমীর বন্ধু। ওকে দেখে আমিও থামলাম; কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ না করেই জিগ্যেস করলাম, রুমী আছে ভেতরে? হ্যারিসও গাড়ির ভেতর থেকেই বলল, না চাচী, রুমী তো এই পাঁচ মিনিট আগে বেরিয়ে গেল। আমি এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললাম, ও, আচ্ছা, বেস্ট অব লাক।

    বাড়ি ফিরে এলাম। এখন সমস্ত ব্যাপারটাই অনিশ্চিত হয়ে গেল। রুমী বাডিফিরবে কি ফিরবে না, খাবে কি খাবে না, কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবু খাবারগুলো গুছিয়ে রেখে ভাবলাম, ফ্রিজে কিমা রান্না করা আছে, কয়েকটা মোগলাই পরটা বানাই। রুমীর ভীষণ প্রিয়। আজ না আসে, কাল খাবে।

    আধঘন্টাও কাটে নি, দরজায় ঘন ঘন বেল। বেল টিপে আর যেন ছাড়েই না; শরীফ, জামী ওপরে বাবার কাছে। আমিই রান্নাঘর থেকে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢকুল রুমী, কাজী আর অচেনা একটি অল্প বয়সী ছেলে। আমি অবাক। মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম কিছু একটা ঘটেছে। তিনজনেরই মুখ লাল। ঠোট টিপে শান্ত হয়ে রয়েছে, কিন্তু আমার মনে হল ওদের ভেতরে চাপা উল্লাস আর হাসি ফুলে ফুলে উঠছে। রুমী ঢুকেই দরজা বন্ধ করে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে বলল, আম্মা, ওপরে চল, কথা আছে।

    দোতলায় রুমীর ঘরে এসে সবাই ঢুকলাম। হলে বসা শরীফ আর জামী আমার হাতের ইশারায় পিছুপিছু এল। রুমী চাপা আনন্দ আর উত্তেজনায় ফিসফিস করে বলল, আম্মা, আব্ব, আমরা একটা অ্যাকশান করে এলাম এই মাত্র। সাত-আটটা খানসেনা মেরে এসেছি।

    আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল, বলিস কিরে?

    আনন্দ-ডগমগ গলায় কাজী বলল, হ্যাঁ চাচী, ১৮ নম্বর রোডে। ওখানে একটা বাড়ির সামনে আমরা সবাই গাড়ি থেকে গুলি করে খানসেনা মেরে পাঁচ নম্বর রোড দিয়ে আসছিলাম। মিলিটারি জীপ পিছু নিয়েছিল। রুমী তাই দেখে গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে গুলি চালায়। ওর দুই পাশ থেকে স্বপন, বদিও গুলি করে। জীপ উল্টে সবগুলো মরেছে।

    রুমী বলল, আম্মা দেখ, আমার ঘাড়ে কাঁধে স্টেন থেকে আগুনের ফুলকি ছুটে কি রকম ফোসকা পড়ে গেছে। রাস্তায় মিলিটারি ধরলে এইটার জন্যই ফেঁসে যাব।

    রুমীর সার্টের কলার সরিয়ে দেখলাম ঘাড়ে-গলায়-কাধে অনেকগুলো কালো। কালো ছোট ছোট ফোসকা। সার্টও ফুটো ফুটো হয়ে গেছে। জিগ্যেস করলাম কি করে হল?

    রুমী বলল, স্টেনগান ফায়ার করার সময় তার গা দিয়ে আগুনের ফুলকি ছিটকে বেরোয়। আমার ঘাড়ের দুপাশ থেকে বদি ভাই, স্বপন ভাই ফায়ার করেছে তো, তাই আগুনের ফুলকিগুলো আমার গায়েই পড়েছে। তারপর হাসতে হাসতে বলল, উঃ। কানে এমন তালা লেগে গেছে, কিছু শুনতে পাচ্ছি না।

    ডেটল-তুলো দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করতে করতে বললাম, এত অল্প সময়ের মধ্যে কি কাণ্ড? কি করে করলি?

    বলব পরে। পাশের গলিতে এক বাড়িতে অস্ত্র রেখে এসেছি। এক্ষুণি নিয়ে আসতে হবে। তোমাকে যেতে হবে গাড়ি নিয়ে। মহিলা ড্রাইভার দেখলে ওরা গাড়ি থামাবে না–আশা করা যায়। আমি যাব তোমার সঙ্গে। কাজী ভাই, সেলিম, তোমরা ছাদের ঘরে গিয়ে শুয়ে থাক। আমরা অস্ত্র নিয়ে আসছি। আম্মা, দুটো ছালা নিয়ে নাও। আব্ব, আমরা যাবার পর পোর্চের বাতি নিভিয়ে রেখ। যদি মেহমান আসে, তাহলে জ্বালিয়ে রেখ। পোর্চে বাতি দেখলে আমরা ঢকুব না।

    নিচে নেমে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বারেককে বললাম, ভাত আর ডাল চড়াও।স্টোর থেকে দুটো বস্তা বের করে নিলাম।

    গাড়ি ব্যাক করে রাস্তায় নামলাম। রুমী পেছনে বসল। পাশের গলিটা একেবারে পাশেই। মেইন রোডে উঠে দুটো বাড়ির পরেই। গলিতে ঢোকার মুখে রুমী চাপা স্বরে বলল, একদম গলির শেষ মাথায় চলে যাও। বলাবাহুল্য, এ গলিটাও কানা, আমাদের গলির মতই।

    আমিও ফিসফিসিয়ে বললাম, শেষ মাথার বাড়িটা হাই সাহেবের যে! ওই বাড়িতে?

    না। ঢুকে দুটো বাড়ির পরে, ডান-হাতি। কিন্তু গাড়িটা শেষ মাথায় নিয়ে আগে দেখব কেউ ফলো করছে কি না।

    গলির শেষ বাড়িটা ইঞ্জিনিয়ার হাই সাহেবের। ডান-হাতি। গেট খোলা ছিল। গাড়ি ভেতরে ঢোকালাম। হাই সাহেব দোতলায় থাকেন। একতলাটা ভাড়া পোর্চ বেশি বড় নয়। গাড়ি ঢুকিয়ে বের করতে হলে ব্যাক করে রাস্তায় নামতে হয়। আমরা গাড়ি থেকে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে নামলাম। একতলার সামনের দিকের ঘরের জানালার পর্দা। বাতাসে উড়ছে। ভেতরে উজ্জ্বল আলো। খাটে বসে চারজন লোক তাস খেলছে। পাশে চেয়ারে তিন চারজন মহিলা, পুরুষ কথা বলছে। সবাই খেলা আর আড্ডা নিয়ে এমনিই মগ্ন যে মাত্র চার ফুট দূরে বাইরে একটা গাড়ি এসে থামল, কেউ একবার চোখ তুলেও তাকাল না। আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেটের মুখে দাঁড়ালাম। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। রুমী বলল, তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি হেঁটে গিয়ে দেখে আসি ও বাসায় বাইরের লোক কেউ আছে কি না।

    আমি বৃষ্টির ফোঁটা এড়াবার জন্য একতলার ঐ জানালাটার পাশেই দেয়াল ঘেঁষে একবার দাঁড়াই, আবার অস্থির হয়ে গেটের কাছে যাই। বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে, ভেতরে উজ্জ্বল আলোয় বসে সাত-আটটি নরনারী তাস খেলছে, কলকন্ঠে কথা বলছে, তুমুল হাসিতে ভেঙে পড়ছে, ভয় হচ্ছে এই বুঝি কেউ জানালার বাইরে তাকিয়ে কে, কে? বলে চেঁচিয়ে ওঠে, কিন্তু কেউ একবারও ভুলেও জানালার দিকে তাকাচ্ছে না। আমার খুব স্বস্তি লাগছে, আবার আশ্চর্যও লাগছে। এমন দিনকাল, একতলার জানালার বাইরেই গাড়ি থামছে, লোকনামছে, কেউ কেউ আবার সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরাও। করছে, তারা একবার খেয়ালও করবে না? মনে হচ্ছে আমি অনন্তকাল ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, লোকগুলোও অনন্তকাল ধরে ঐ রকম হাসি-গল্প-আড্ডা-খেলায় মেতে রয়েছে। যেন কার অভিশাপে ওরা বিশ্বসংসার ভুলে ওইরকম কলবল করছে।

    রুমী ফিরে এসে চুপি চুপি বলল, চল। আস্তে চালাবে।

    গাড়ি ব্যাক করে আবার গলিতে। নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে এসে রুমী থামতে বলল। এবার বাঁয়ে গাড়িটা। আমি গেট ঘেঁষে গলিতেই গাড়ি পার্ক করে গাড়িতে বসে রইলাম। রুমী বস্তা দুটো নিয়ে ভেতরে চলে গেল। তার ফিরে আসার সাড়া পেতেই আমি গাড়ি থেকে নেমে পেছনের বুটি খুলে দিলাম।

    এ গলি থেকে পাশের গলি–কতটা পথ পোয়া মাইল? তাও হবে কি না সন্দেহ। কিন্তু বুকে এমন ধুকপুকুনি, হাতে-পায়ে এমন গিট-ছাড়া ভাব, মনে হচ্ছে পঞ্চাশ মাইল চালিয়ে এসেছি।

    পোর্চের বাতি নেভাননা। শরীফ, জামী বুঝিবা দরজার ওপাশেই দাঁড়িয়েছিল। গাড়ি থামতেই দরজা খুলে বেরিয়ে এল। রুমী বুটি খুলল। সঙ্গে সঙ্গে গেট দিয়েও কে যেন ঢুকল। আমরা আঁতকে উঠলাম। কিন্তু না, বাইরের কেউ নয়, মাসুম। শরীফ, জামী টুক করে বস্তা দুটো তুলে ঘরে ঢুকে গেল।

    সিঁড়ি বেয়ে একেবারে ছাদের ঘরে। এতক্ষণে আমার হাতে-পায়ে জোর ফিরে এসেছে, ধুকপুকুনির বদলে বুকে এখন উত্তেজনার জোয়ার। বললাম, বের কর তো, দেখি তোদের কি রকম অস্ত্র।রুমী, কাজী বস্তা খুলে সাবধানে অস্ত্র বের করে জাজিমের ওপর রাখল। পাঁচটা স্টেনগান, একটা পিস্তল, দুটো হ্যান্ড গ্রেনেড। জীবনে এই প্রথম দেখলাম। আমি, শরীফ, জামী, মাসুম–চারজনে হুমড়ি খেয়ে বসে অস্ত্রগুলো হাতে তুলে উল্টেপাল্টে দেখলাম, সেগুলোর গায়ে হাত বুলোলাম, হ্যান্ড গ্রেনেড দুটোও একটু ছুঁয়ে দেখলাম। রুমীরা এগুলোকে বলে পাইন অ্যাপল আনারস। যতই আনারস বলুক, এগুলো মোটেই আনারসের মতো নিরীহ নয়।

    আমি আবার বলতে যাচ্ছিলাম, বল দেখি কি করে কি করলি কিন্তু শরীফ থামিয়ে দিয়ে বলল, ওসব পরে শুনব। এগুলো কোথায় লুকিয়ে রাখব, তাই ঠিক কর আগে।

    অনেক চিন্তাভাবনা করে ঠিক হলো, নিচের উঠোনে পানির যে বিরাট হাউজটা আছে, সেটার ভেতরে একটা টুল বসিয়ে তার ওপর অস্ত্র রাখা হবে। হাউজটা চওড়ায় আট ফুট, লম্বায় দশ ফুট, উঁচুতে তিন ফুট। তার এ মাথার এক কোণে লোহার তৈরি গোল একটা ম্যানহোল, এইটে দিয়ে হাউজটার ভেতরে নামা যায়। হাউজটা এখন কানায় কানায় ভর্তি। আমাদের প্যান্ট্রিতে কয়েকটা টুল আছে, সেগুলো সোয়া দুফুট উঁচু। হাউজের নিচের ট্যাপটা খুলে দেওয়া হল খানিকটা পানি বেরিয়ে যাবার জন্য। একটা টুল ভেতরে বসালো যেন তার বসার জায়গাটা পানির ওপর জেগে থাকে। বারেককে কিছু একটা কিনতে রশীদের দোকানে পাঠানো হল। জামী হাউজের ভেতরে নেমে টুলটা দূরতম কোণে নিয়ে বসাল। অস্ত্রগুলো ছালা দুটোতে ভরে ভালো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঐ টুলের ওপর রাখা হল। যদি রাতে মিলিটারি আসেও, এই পানিভর্তি হাউজের ঢাকনা খুলে তাকায়ও, তাহলে টলটলে পানি ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবে না। কারণ এখান থেকে উঁকি দিয়েও ওই কোণার টুল দেখা যায় না। টুল আবিষ্কার করতে হলে কাউকে হাউজের ভেতর নামতে হবে।

    একটু পরে কাজী আর সেলিম চলে গেল। সেলিম ছেলেটিকে এই প্রথম দেখলাম। শুনলাম, ও শাহীন স্কুলের ছাত্র এবার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার কথা ছিল। এপ্রিলেই মেলাঘরে চলে গিয়েছিল।

    খাওয়া-দাওয়ার পর রুমীকে ঘিরে আমরা চারজনে বসলাম। ওদের এই চমকপ্রদ অ্যাকশানের কথা শুনবার জন্য আর তর সইছিল না। রুমী যা বলল, তা হলো এই :

    ধানমন্ডির বিশনম্বর রাস্তার একটা বাড়িতে চাইনিজ এমব্যাসির কোন বড় কর্তা বাস করে। সে বাড়ির সামনে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিলিটারি পুলিশ পাহারা দেয়। আঠার নম্বর রোডের একটা বাড়ির সামনেও বেশ সাত-আটজন মিলিটারি পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনুমান হয়, ও বাড়িতে কোন ব্রিগেডিয়ার থাকে। কয়েকদিন থেকেই বদি, আলমের মাথায় চিন্তাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। গতকাল হঠাৎবদি, আলম, শাহাদত এরা মিলে প্ল্যান অব অ্যাকশান ঠিক করে ফেলে। ২৫ আগস্ট সন্ধ্যা রাতে কয়েকটা অ্যাকশান হবে–বদি, আলম, কাজী, রুমীরা একটা গাড়িতে, হ্যারিস, মুক্তার, জিয়ারা আরেকটা গাড়িতে। পাঁচ মাস আগে এই ২৫ তারিখের রাতেই বিবেকহীন বর্বর হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিচ্ছুরা উপলব্ধি করে এই তারিখে এমন কিছু করা দরকার, যাতে সামরিক জান্তা ভালোমত নাড়া খায়।

    রুমীরা পিরুলিয়া গ্রামে ওদের ক্যাম্প থেকে দরকারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে আজকেই দুপুরে। হ্যারিস আর জাহির গুলশান লেকের ঘাট থেকে রুমীদেরকে দুটো গাড়িতে তুলে ২৮ নম্বর রোডের বাড়িতে নিয়ে যায়। তারপর বদি, আলম একদিকে, হ্যারিস, মুক্তার অন্যদিকে এই দুদল দুদিকে বেরিয়ে যায় দুটো গাড়ি হাইজ্যাক করতে। বদি, আলম, ধানমন্ডি চার নম্বর রোড থেকে একটা মাজদা গাড়ি হাইজ্যাক করে। গাড়িটা ছিল আবুল মনসুর আহমদ সাহেবের বড় ছেলে মাহবুব আনামের। হ্যারিসরা একটা ফিয়াট ৬০০ হাইজ্যাক করে ধানমন্ডি ২২ নম্বর রোডের মোড় থেকে।

    ঠিক হয় : আলম, বদি, কাজী, রুমী, স্বপন ও সেলিম প্রথমে ধানমন্ডিতে অ্যাকশান। করবে। হ্যারিস, জিয়া, মুক্তার, আনু ও আরো দুটো ছেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে। আমরা গিয়ে ওদের সঙ্গে জয়েন করবে। তারপর দুগাড়ি মিলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গেটে এবং তারপর শহরের অন্যান্য দিকে সুযোগ-সুবিধেমত আরো কিছু অ্যাকশন করবে।

    রুমীটা যখন বেরোয়, শাহাদত জিগ্যেস করে, হোয়াট আর ইয়োর টার্গেটস? কোন দিকে যাচ্ছ? আলম জবাব দেয়, ডেস্টিনেশান–আননোন। টার্গেট মোবাইল।

    রুমীরা সন্ধ্যা ৭-২৫ মিনিটে ২৮ নম্বর রোড থেকে বেরিয়ে ৩২ নম্বর দিয়ে পুল পেরিয়ে ডাইনে ও বাঁয়ে ঘুরে ২০ নম্বর রোডে পড়ে। গাড়ি চালাচ্ছিল আলম, তার বা পাশের প্রথমে সেলিম ও তারপরে কাজী। পেছনের সিটে মাঝখানে রুমী, তার ডান পাশে (অর্থাৎ আলমের ঠিক পেছনে) স্বপন, বাঁ পাশে বদি। চাইনিজ ডিপ্লোম্যাটের বাসার সামনে গিয়ে দেখে পুলিশগুলো নেই। ওরা হতাশ হয়। আলম বলে তাহলে ১৮ নম্বরে যাই। ১৮ নম্বর রোডে নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে সাত-আটজন মিলিটারি পুলিশ বেশ মৌজ করে গল্প করছে, সিগারেট খাচ্ছে।

    আলম বলল, ব্রিগেডিয়ার সাহেব বাড়ি নেই নিশ্চয়, তাই খুব হেলে-বেঁকে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে। অলরাইট বয়েজ, ইউ হ্যাভ থ্রিমিনিটস। আমি সামনের সাত মসজিদের মোড় থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসছি।

    এখন বাড়িটা ডান হাতে রয়েছে। গাড়ি ঘুরিয়ে আনলে বাড়িটা বাঁয়ে পড়বে। তাহলে গাড়ির বাঁদিকে বসা কাজী ও বদি সামনের-পেছনের দুই জানালা দিয়ে ফায়ার করতে পারবে। গাড়ি ঘুরিয়ে আনতে আনতে আলম নির্দেশ দিল কাজী, সেলিম আর বদি গুলি করবে, রুমী ও স্বপন নজর রাখবে, ও তরফ থেকে কেউ অস্ত্র তোলে কি না, তুললে তাদের শেষ করার ভার রুমী আর স্বপনের।

    গাড়ি ধীরগতিতে বাড়িটার সামনে দিয়ে যাবার সময় আলমের চাপা গলার কম্যান্ড শোনা গেল : ফায়ার। অমনি গাড়ির দুই জানলা দিয়ে ঝলকে ঝলকে ছুটে গেল স্টেনগানের গুলি। দুটো স্টেন থেকে দুই লেভেলে গুলি গেল–বদির স্টেন থেকে ওদের পেটের লেভেলে, কাজীর স্টেন থেকে ওদের বুকের লেভেলে। সেলিমও কাজীর সামনে দিয়ে বাঁয়ে ঝুঁকে গুলি করল। পুলিশগুলো গল্পের মৌজে ছিল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধপাধপ পড়ে গেল সাত-আটটা তাগড়া শরীর। সমস্ত ব্যাপারটা ঘটতে সময় লাগল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তার পরই গাড়িটা হঠাৎ যেন জেটের গতিতে গিয়ে ঢুকল ২০ নম্বরে, তাদের আগের টার্গেটে। কিন্তু ওদের কপাল মন্দ। চীনা ডিপ্লোম্যাটের বাসার সামনে এখনো কোন প্রহরী নেই। কি হতে পারে? কিন্তু আলমদের দেরি করার উপায় নেই। অ্যাকশনটা মনোমত হল না। কিন্তু কি করা?

    এরপর আলম ধানমন্ডির ভেতরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে এসে সাত নম্বর রোডের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে মিরপুর রোডে পড়ে। ডাইনে মোড় নেয় নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে। পাঁচ নম্বর রোডের মুখ বরাবর আসতেই ওরা দেখে কি –সামনে লাইন ধরে গাড়ি দাড়িয়ে গেছে। তার মানে ওখানে মিলিটারি চেকপোস্ট বসে গেছে, গাড়ি চেক হচ্ছে। তার মানে, ১৮ নম্বর রোডের বাড়ির সামনে এম.পি. মারার খবর এর মধ্যেই ওরা জেনে গেছে।

    মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আলম। সামনের রাস্তায় ব্যারিকেড। দুটোট্রাকমিরপুর রোড় জুড়ে এদিকপানে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। একটা জীপ রাস্তার ডানদিকে, সেটার মুখও এদিকেই ফেরানো। আরেকটা জীপ, রাস্তার বাপাশে পেট্রল পাম্পটার সামনে নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো। এবং মাটিতে, রাস্তার ওপর দুজন শুয়ে–এল.এম.জি. নিয়ে।

    আলম যেমন ভেবে রেখেছিল, দুজন এম.পি, হাত উঠিয়ে চেঁচিয়ে গাড়ি থামাতে বলতেই সে হেডলাইট অফ করে ডানদিকে টার্ন নেবার ইনডিকেটার দিয়ে সামান্য ডানদিকে ঘুরবার ভাব দেখাল। এম.পি. দুটো চেঁচিয়ে একটা গাল দিয়ে বলে উঠল, কিধার যাতা হ্যায়? সঙ্গে সঙ্গে আলম তীব্রগতিতে বাঁয়ে টার্ন নিল। বদি আর রুমী এক সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, ও-ই এলেমজি নিয়ে শুয়ে আছে মাটিতে। ফায়ার!আলমও চেঁচিয়ে উঠল, ফায়ার! ঠাঠা ঠাঠা করে স্বপন ও বদির স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলি ছুটে গেল। রুমী স্টেন হাতে সিটের ওপর হাঁটু চেপে উল্টো হয়ে বসে পেছনের কাচের ভেতর দিয়ে এদিক-ওদিক দ্রুত চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকল–ওদিক থেকে কারো হাতের অস্ত্র উদ্যত হচ্ছে কিনা। আশ্চর্যের ব্যাপার ওদিক থেকে একটাও গুলি ছুটে এল না। তার মানে মাটিতে শোয়া আর্মি দুজন খতম, অন্যরা ঘটনার দ্রুততা ও আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছে। এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আলম গাড়ি পাঁচ নম্বর রোডে ঢুকিয়ে ফেলেছে। রোডটা অল্প একটুখানি গিয়েই গ্রীন রোডে পড়েছে। প্রায় গ্রীন রোডে গাড়ি পৌঁছে গেছে, এমনি সময় হঠাৎ রুমীর চোখে পড়ে একটা মিলিটারি জীপ তাদের পিছু নিয়েছে। সে সেই তখন থেকেই পেছনের সিটে উল্টো বসে কাচের ভেতর দিয়ে রাস্তার দিকে চেয়েছিল। সে চেঁচিয়ে ওঠে, লুক, লুক, আ জীপ ইজ ফলোয়িং আস। এবং সঙ্গে সঙ্গে তার স্টেনের বাট দিয়ে আঘাত করে পেছনের কাচ ভেঙে ফায়ার শুরু করে জীপটার ওপর। একই সঙ্গে রুমীর দুই পাশ থেকে বদি এবং স্বপনও ফায়ার শুরু করে। ভাঙা কাচের ফাঁক দিয়ে। কজন মরল তার হিসেব না পেলেও জীপের ড্রাইভার যে প্রথম চোটেই মরেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেলব্রাশ ফায়ারের সঙ্গে সঙ্গেই জীপটা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোড়ের ল্যাম্পপোস্টে গিয়ে ধাক্কা খেল। এবং সঙ্গে সঙ্গে উল্টে গেল। সেই মুহূর্তে আলম আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। বাদিকে টার্ন নেবার ইনডিকেটার লাইট জ্বালিয়ে বাঁয়ে গ্রীন রোডের দিকে একটু ঘুরেই শাঁ করে তীব্রগতিতে ডাইনে ঘুরে আবার নিউ মার্কেটমুখো হলো। এবং ঝড়ের গতিতে সেই পেট্রল পাম্পটার অন্য পাশ দিয়ে নিউ এলিফ্যান্ট রোডের দিকে গাড়ি ছোটাল। আলম ছাড়া বাদ বাকি সবাই পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল, যেমনটি আলম ভেবেছিল-ট্রাক দুটো, বাকি জীপটা গ্রীন। রোডের দিকে উধ্বশ্বাসে ছুটছে বিচ্ছু গাড়িটাকে ধরবার জন্য!

    এতক্ষণে গাড়ির ভেতরের সবাই স্বস্তির প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়ল। নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ঢুকে তবে আলম আবার হেড লাইট জ্বালল।

    এবার ওরা চিন্তা করতে লাগল অস্ত্রগুলো কোথায় রাখা যায়। গাড়িটা তাড়াতাড়ি ডাম্প করা দরকার।ঝিরঝির করে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। আমাদের গলির পরের গলিতে আলমদের পরিচিত ঐ ভদ্রলোকের বাড়িতে অস্ত্র রেখে রুমী, কাজী, সেলিমকে মেইন রোডে নামিয়ে আলম, বদি আর স্বপন গাড়ি নিয়ে চলে গেছে সুযোগমতো কোথাও গাড়িটা ফেলে রেখে বাড়ি চলে যাবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122 123 124 125 126 127 128 129 130 131 132 133 134 135 136 137 138 139 140 141 142
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম
    Next Article দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব – জাহিদ হোসেন

    Related Articles

    জাহানারা ইমাম

    নিঃসঙ্গ পাইন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    সাতটি তারার ঝিকিমিকি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বুকের ভিতর আগুন – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বিদায় দে মা ঘুরে আসি – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    বীর শ্রেষ্ঠ – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    জাহানারা ইমাম

    নয় এ মধুর খেলা – জাহানারা ইমাম

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }