Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প50 Mins Read0

    ১. কচুপাতার উপরে টলটল করে

    কচুপাতার উপরে টলটল করে ভাসছে কয়েকফোঁটা শিশির।

    ভোরের কুয়াশার নিবিড়তার মধ্যে বসে একটা মাছরাঙা পাখি। ঝিমুচ্ছে শীতের ঠাণ্ডায় একটা ন্যাংটা ছেলে, বগলে একটা স্লেট। আর মাথায় একটা গোল টুপি। গায়ে চাদর পায়ে চলী ভেজা পথ ধরে স্কুলে যাচ্ছে।

    অনেকগুলো পাখি গাছের ডালে বসে নিজেদের ভাষায় অবিরাম কথা বলে চলেছে।

    কতগুলো মেয়ে।

    ত্রিশ কি চল্লিশ কি পঞ্চাশ হবে।

    একটানা কথা বলছে। কেউ কারো কথা শুনছে না। শুধু বলে যাচ্ছে।

    কতগুলো মুখ।

    মিছিলের মুখ।

    রোদে পোড়া।

    ঘামে ভেজা।

    শপথের কঠিন উজ্জ্বল দীপ্তির ভাস্বর।

    এগিয়ে আসছে সামনে।

    জ্বলন্ত সূর্যের প্রখর দীপ্তিকে উপেক্ষা করে।

    সহসা কতগুলো মুখ।

    শাসনের-শোষণের-ক্ষমতার-বর্বরতার মুখ।

    এগিয়ে এলো মুখোমুখি।

    বন্দুকের আর রাইফেলের নলগুলো রোদে চিকচিক করে উঠলো।

    সহসা আগুন ঠিকরে বেরুলো।

    প্রচণ্ড শব্দ হলো চারদিকে।

    গুলির শব্দ। কচুপাতার উপর থেকে শিশির ফোঁটাগুলো গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।

    মাছরাঙা পাখিটা ছুটে পালিয়ে গেলো ডাল থেকে।

    ন্যাংটা ছেলেটার হাত থেকে পড়ে গিয়ে স্লেট ভেঙে গেলো।

    পাখিরা নীরব হলো।

    মেয়েগুলো সব স্তব্ধ নির্বাক দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকালো।

    একরাশ কৃষ্ণচূড়া ঝরে পড়লো গাছের ডাল থেকে।

    সূর্যের প্রখর দীপ্তির নিচে–একটা নয়, দুটো নয়। অসংখ্য কালো পতাকা এখন।

    উদ্ধত সাপের ফণার মতো উড়ছে।

    একুশে ফেব্রুয়ারি।

    সন উনিশশ বায়ান্ন।

    খুব ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতো।

    চাষার ছেলে গফুর।

    এক একটা ছোট্ট ক্ষেত।

    একটা ছোট্ট কুঁড়ে।

    আর একটা ছোট্ট বউ।

    ক্ষেতের মানুষ সে।

    লেখাপড়া করেনি।

    সারাদিন ক্ষেতের কাজ করতো।

    গলা ছেড়ে গান গাইতো।

    আর গভীর রাতে পুরো গ্রামটা যখন ঘুমে ঢলে পড়তো তখন ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে পুঁথি পড়তো সে, বসে বসে।

    সুর করে পড়তো ছহি বড় সোনাভানের পুঁথি। ছয়ফল মুলুকের পুঁথি।

    আমেনাকে দেখেছিলো একদিন পুকুরঘাটে।

    পরনে লাল সবুজ ডুরে শাড়ি।

    ঘোমটার আড়ালে ছোট্ট একটি মুখ।

    কাঁচা হলুদের মতো রঙ।

    ভালো লেগেছিলো।

    বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে মেয়ের বাবা রাজি হয়ে গেলো।

    ফর্দ হলো।

    গফুরের মনে খুশি যেন আর ধরে না।

    ক্ষেতভরা পাকাধানের শীষগুলোকে আদরে আলিঙ্গন করলো সে।

    রসভরা কলসিটাকে খেজুরের গাছ থেকে নামিয়ে এনে একনিশ্বাসে পুরো কলসিটা শূন্য করে দিলো সে।

    জোয়ালে বাঁধা জীর্ণ-শীর্ণ গরু দুটোকে দড়ির বাধন থেকে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো—যা

    আজ তোদের ছুটি।

    গফুর শহরে যাবে।

    বিয়ের ফর্দ নিয়ে।

    এ সবকিছু নিজের হাতে কিনবে সে।

    ও শাড়ি, চুড়ি, আলতা, হাঁসুলি।

    অনেক কষ্টে সঞ্চয়-করা কতগুলো তেল চিটচিটে টাকার কাগজ রুমালে বেঁধে নিলো সে।

    বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে খেয়া পেরিয়ে শহরে আসবে গফুর। বিয়ের বাজার করতে।

    গফুরের দু-চোখে ঘরবাধার স্বপ্ন।

     

    বাবা আহমেদ হোসন।

    পুলিশের লোক।

    অতি সচ্চরিত্র।

    তবু প্রমোশন হলো না তার।

    কারণ, তসলিম রাজনীতি করে।

    ছাত্রদের সভায় বক্তৃতা দেয়।

    সরকারের সমালোচনা করে।

    ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছেন বাবা।

    মেরেছেনও।

    যাঁর ধমকে দাগি চোর, ডাকাতি, খুনি আসামিরা ভয়ে থরথর করে কাঁপতো তাঁর অনেক শাসন, তর্জন-গর্জনেও তসলিমের মন টললো না।

    মিছিলের মানুষ সে।

    মিছিলেই রয়ে গেলো।

    মা কাদলেন। বোঝালেন, দিনের পর দিন।

    আত্মীয়-স্বজন সবাই অনুরোধ করলো।

    বললো বুড়ো বাপটার দিকে চেয়ে এসব এবার ক্ষান্ত দাও। দেখছো না ভাইবোনগুলো সব বড় হচ্ছে। সংসারের প্রয়োজন দিনদিন বাড়ছে। অথচ প্রমোশনটা বন্ধ হয়ে আছে।

    কিন্তু নিষ্ঠুর-হৃদয় তসলিম বাবার প্রমোশন, মায়ের কান্না, আত্মীয়দের অনুরোধ, সংসারের প্রয়োজন সবকিছুকে উপেক্ষা করে মিছিলের মানুষ মিছিলেই রয়ে গেলো।

    কিন্তু এই নিষ্ঠুর হৃদয়ে একটা কোমল ক্ষত ছিলো।

    সালমাকে ভালোবাসতো সে।

    সালমা ওর খালাতো বোন।

    একই বাড়িতে থাকতো।

    উঠতো বসতো চলতো।

    তবু মনে হতো সালমা যেন অনেক-অনেক দূরের মানুষ।

    তসলিমের হৃদয়ের সেই কোমল ক্ষতটির কোনো খোঁজ রাখতো না সে।

    কিম্বা রাখতে চাইতো না।

    বহুবার চেষ্টা করেছে তসলিম।

    বলতে বোঝাতে। কিন্তু সালমার আশ্চর্য ঠাণ্ডা চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারেনি সে।

     

    এককালে ভালো কবিতা লিখতেন তিনি।

    এখন সরকারের লেজারের টাকার অঙ্ক থরেথরে লিখে রাখা তাঁর কাজ।

    কবি আনোয়ার হোসেন।

    এখন কেরানি আনোয়ার হোসেন।

    তবু কবি-মনটা মাঝেমাঝে উঁকি দিয়ে যায়। যখন তিনি দিনের শেষে রাতে ঘরে ফিরে এসে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেন।

    ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

    যখন এ দেহ মন জীবন আর পৃথিবীটাকে নোংরা একটা ছেড়া কাঁথার মতো মনে হয়, তখন একান্তে বসে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে তাঁর।

    আনোয়ার হোসেনের জীবনে অনেক অনেক দুঃখ।

    ঘরে শান্তি নেই। স্ত্রীর দুঃখ।

    বাসায় প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নেই। থাকার দুঃখ।

    সংসার চালানোর মতো অর্থ কিম্বা রোজগার নেই। বাঁচার দুঃখ।

    কবিতা লিখতে বসে দেখেন ভাব নেই। আবেগের দুঃখ।

    শুধু একটি আনন্দ আছে তার জীবনে। যখন তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে সামনে পানের দোকান থেকে কয়েকটা পান কিনে নিয়ে মুখে পুরে চিবুতে থাকেন। আর পথ চলতে চলতে কবিতা লেখার দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকেন। তখন আনন্দে ভরে ওঠে তার সারা দেহ।

    কবি আনোয়ার হোসেন, ঘর আর অফিস, অফিস আর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও যান না।

    যেতে ভালো লাগে না, তাই।

    কোনোদিন পথে কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে হয়তো একটা কি দুটো কুশল সংবাদ জিজ্ঞেস করেন। তারপর এড়িয়ে যান।

    ভালো লাগে না।

    কিছু ভালো লাগে না তাঁর।

     

     

    অর্থ আর প্রাচুর্যের অফুরন্ত সমাবেশ।

    অভাব বলতে কিছু নেই, মকবুল আহমদের জীবনে।

    বাড়ি আছে।

    গাড়ি আছে।

    ব্যাংকে টাকা আছে।

    ছেলেমেয়েদের নামে ইনসুরেন্স আছে কয়েকখানা।

    ব্যবসা একটা নয়।

    অনেক। অনেকগুলো।

    পানের ব্যবসা।

    তেলের ব্যবসা।

    পাটের ব্যবসা।

    পারমিটের ব্যবসা।

    সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।

    কখনো মন্ত্রীর দফতরে।

    কখনো আমলাদের সভা-সমিতিতে।

    তাঁর জীবনেও দুঃখ অনেক।

    দুটো পাটকল বসাবার বাসনা ছিলো। একটার কাজও এখনো শেষ হলো না। শ্রমের দুঃখ। বড় ছেলেটাকে বাচ্চা বয়সেই বিলেতে পাঠিয়ে ভালো শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু স্ত্রী তার সন্তানকে কাছছাড়া করতে রাজি না। জাগতিক দুঃখ।

    তেলের কলের শ্রমিকগুলো শুধু বেতন বাড়াবার জন্য সারাক্ষণ চিল্কার করে, আর হরতালের হুমকি দেয়। দুঃখ। উৎপাদনের দুঃখ।

    কিছু ছেলে ছোকরা আর গুণ্ডা জাতীয় লোক পথে-ঘাটে মাঠে-ময়দানে মিছিল বের করে।

    সভা বসিয়ে সরকারের সমালোচনা করে। যাদের টাকা আছে তাদের সব টাকা গরিবদের। বিলিয়ে দিতে বলে। দুঃখ। দেশের দুঃখ।

    এই অনেক দুঃখের মধ্যেও একটা আনন্দ আছে তাঁর। যখন সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে রাতে ক্লাবের এককোণে চুপচাপ বসে বোতলের পর বোতল নিঃশেষ করেন তিনি। তখন অদ্ভুত এক আনন্দে ভরে ওঠে তার চোখমুখ। স্ত্রী বিলকিস বানুর সঙ্গে তাঁর কদাচিৎ দেখা হয়। একই বাড়িতে থাকেন। এক বিছানায় শোন। কিন্তু কাজের চাপে, টেলিফোনের অহরহ যন্ত্রণায় স্ত্রীর সঙ্গে বসে দু-দণ্ড আলাপ করার সময় পান না তিনি। অথচ স্ত্রীকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন।

    তার সুখশান্তির উপর লক্ষ রাখেন।

    এবং যখন যা প্রয়োজন মেটাতে বিলম্ব করেন না।

    স্বামীর সঙ্গ পান না, সেজন্যে বিলকিস বানুর মনে কোনো ক্ষোভ নেই।

    কারণ, সঙ্গ দেয়ার লোকের অভাব নেই তার জীবনে।

     

    সেলিমও স্বপ্ন দেখে।

    একটা রিকশা কেনার স্বপ্ন।

    বারো বছর ধরে মালিকের রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে।

    সারাদিনের পরিশ্রম শেষে তিনটি টাকা রোজগার হলে দুটো টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হয়।

    একটা টাকা থাকে ওর।

    সেই টাকায় বউ আর বাচ্চাটাকে নিয়ে দিনের খাওয়া হয়।

    মাসের বাড়ি ভাড়া!

    বিড়ি কেনা।

    আর সিনেমা দেখা।

    পোষায় না তার।

    দেশ কী সে জানে না।

    সভা-সমিতি-মিছিলে লোকগুলো কেন এত মাতামাতি করে তার অর্থ সে বোঝে না।

    পুলিশেরা যখন ছাত্রদের ধরে ধরে পেটায় তখন সে অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে।

    কোনো মন্তব্য করে না।

    তার ভাবনা একটাই।

    একটা রিকশা কিনতে হবে।

    আরো একটা ভাবনা আছে তার। মাঝে মাঝে ভাবে।

    ছেলেটা আর একটু বড় হলে তাকেও রিকশা চালানো শেখাতে হবে।

     

    খেয়াঘাট পেরিয়ে শহরে এলো গফুর।

    বগলে একটা ছোট্ট কাপড়ের পুঁটলি।

    পুঁটলিতে বাধা একটা বাড়তি লুঙি, জামা আর কিছু পিঠে।

    শহরে নেমেই সে অবাক হয়ে দেখলো মানুষগুলো সব কেমন যেন উত্তেজনায় উত্তপ্ত।

    এখানে সেখানে জটলা বেঁধে কী যেন আলাপ করছে তারা।

    খবরের কাগজের হকাররা অস্থিরভাবে ছুটাছুটি করছে।

    কাগজ কেনার ধুম পড়েছে চারদিকে।

    সবাই কিনে কিনে পড়ছে।

    উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে এদেশের।

     

    না! না!!

    চিৎকার করে উঠলেন কবি আনোয়ার হোসেন।

    আমি মানি না।

    উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছিলেন তিনি।

    মুষ্টিবদ্ধ তার হাত।

    স্ত্রী অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে।

    স্বামীকে এত জোরে চিৎকার করতে কোনোদিন দেখেনি সে।

    কেন কী হয়েছে?

    ওরা বলছে বাংলাকে ওরা বাদ দিয়ে দেবে। উর্দু, শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করবে ওরা। জানো সালেহা, যে-ভাষায় আমরা কথা বলি, যে-ভাষায় আমি কবিতা লিখি, সে-ভাষাকে বাদ দিয়ে দিতে চায় ওরা।

    সে কিগো! আমরা তাহলে কোন ভাষায় কথা বলবো?

    ভয়ার্ত দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকায় সালেহা।

    না। না। আমি অন্যের ভাষায় কথা বলবো না। আমি নিজের ভাষায় কথা বলবো।

    কবি আনোয়ার হোসেন চিল্কার করে উঠলেন।

     

    বজ্র থেকে ধ্বনি নিয়ে গর্জন করে উঠলো তসলিম।

    এই সিদ্ধান্ত আমি মানি না।

    আমরা মানি না।

    মানি না!

    মানি না!!

    মানি না!!!

    আমতলায় ছাত্রদের সভাতে অনেকগুলো কণ্ঠ একসুরে বলে উঠলো–আমরা মানি না।

    বাচ্চারা কোনো কিছুই সহজে মানতে চায় না।

    তাদের মানিয়ে নিতে হয়।

    আমলাদের সভায় মেপে মেপে কথাগুলো বললেন মকবুল আহমেদ।

    প্রথমে আদর করে দুধকলা খাইয়ে ওদের মানিয়ে নিতে হয়। তবু যদি না মানে চাবুকটাকে তুলে নিতে হবে হাতে। মানবে না কী? মানতে বাধ্য হবে তখন।

     

    কতগুলো মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলে শ্লোগান দিচ্ছে—

    রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

    বাংলা চাই।

    আজ পান খাওয়া ভুলে গেলেন কবি আনোয়ার হোসেন। সেদিকে তাকিয়ে চোখজোড়া আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠলো তার।

    ভুলে গেলেন-—কখন পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।

    তিনি দেখছেন মিছিলের মুখগুলো।

    রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

    পেছন থেকে কে যেন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তাকে।

    কী সাব! রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কী দেখেন? বেল বাজাই শোনেন না?

    রিকশাচালক সেলিম।

    তার রিকশাটা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। ছেলেগুলো চিৎকার করছে। করুক। ওতে তার। কোনো উৎসাহ নেই।

    পারবে না। তুমি দেখে নিও। ওরা জোর করে উর্দুকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবে না।

    গদগদ কণ্ঠে স্ত্রীকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন কবি আনোয়ার হোসেন। ছেলেরা খেপেছে।

    বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে ওরা ছাড়বে না।

    স্ত্রী পান খাচ্ছিলো।

    একটুকরো চুন মুখে তুলে বললো–হ্যাঁ গো, রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলে তোমার বেতন কি বেড়ে যাবে? কটাকা বাড়বে বলোতো?

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান
    Next Article আর কত দিন – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }