Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প50 Mins Read0

    ৪. রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই

    রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

    অসংখ্য কণ্ঠের গগনবিদারি চিৎকারে দ্রুত গাড়ি থেকে নিচে নেমে এলেন পুলিশের বড় কর্তারা।

    তাদের চোখের ভাষা পড়ে নিতে ছোটকর্তাদের একমুহূর্ত বিলম্ব হলো না।

    মুহূর্তে তারা ফিরে তাকালেন কন্সটেবলগুলোর দিকে।

    হুকুমের দাস সেপাইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট লক্ষ করে এগিয়ে এলো রাস্তার মাঝখানে।

    প্রথম দশজন ছাত্রের দল তখন তৈরি হচ্ছে একশো চুয়াল্লিশ ধারা ভাঙার জন্যে।

    একটি ছেলে তাদের নাম-ঠিকানা কাগজে লিখে নিচ্ছে।

    প্রচণ্ড শব্দে লোহার গেটটা খুলে গেলো।

    পুলিশের দল আরো দু-পা এগিয়ে এলো সামনে।

    শপথের কঠিন দীপ্তিতে উজ্জ্বল দশজন ছাত্র।

    দশটি মুখ।

    মুষ্ঠিবদ্ধ হাতগুলো আকাশের দিকে তুলে পুলিশের মুখোমুখি রাস্তায় বেরিয়ে এলো।

    রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

    সেপাইরা ছুটে এসে চক্রাকারে ঘিরে দাঁড়ালো ওদের।

    সবার বুকের সামনে একটা করে রাইফেলের নল চিকচিক করছে।

    আমলা।

    মধুর রেস্তোরাঁ।

    ইউনিয়ন অফিস।

    পুকুরপাড়।

    চারপাশ থেকে ধ্বনি উঠলো—

    রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

    ততক্ষণে ছাত্রদের দ্বিতীয় দলটা বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়।

    তৃতীয় দল এলো।

    চতুর্থ দল এলো।

    ধরে ধরে সবাইকে দুটো খালি ট্রাকের মধ্যে তুলে নিলো সেপাইরা। পু

    লিশের বড়কর্তাদের চোখেমুখে উৎকণ্ঠা।

    কত ধরবো?

    কত নেবো জেলখানায়?

    ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের মতো বাইরে বেরিয়ে আসছে ছাত্ররা।

    সহসা চোখ-মুখ জ্বালা করে উঠলো ওদের।

    সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে।

    দরদর করে পানি ঝরছে দুচোখ দিয়ে।

    কে যেন চিৎকার দিয়ে উঠলো—

    কাঁদুনে গ্যাস ছেড়েছে ওরা।

    চোখে পানি দাও।

    অনেকগুলো ছাত্র হুমড়ি খেয়ে পড়লো বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরটার ভেতরে।

    চোখ জ্বলছে।

    পানি ঝরছে।

    কেমন যেন ধোঁয়াটে হয়ে গেছে পুরো এলাকাটা।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল টপকে ঝাকোকে ছাত্ররা এগিয়ে গেলো মেডিক্যাল ব্যারাকের দিকে।

    কবি আনোয়ার হোসেনের জামাটা একটা লোহার শিকের মধ্যে আটকে ছিঁড়ে গেল।

    পেছন ফিরে তাকালেন না তিনি।

    চোখমুখ জ্বলছে তার।

    জ্বলুক।

    ছাত্ররা একশো চুয়াল্লিশ ধারা ভেঙে দিয়েছে।

    আন্দোলন সবে শুরু হলো। কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়া দিয়ে তাকে আটকানো যাবে না।

    ভাইসব!

    সহসা চিল্কার করে উঠলো তসলিম।

    আপনারা বিশৃঙ্খলভাবে ছুটোছুটি করবেন না। আপনারা এদিকে আসুন। আমরা মেডিক্যাল ব্যারাকে আবার জমায়েত হবো।

    পুলিশের গাড়িগুলো ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে সরে গিয়ে মেডিক্যাল ব্যারাকের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

    বড়কর্তাদের কাছে হুকুম এসেছে, যেমন করে হোক এ আন্দোলনকে এখানে শেষ করতে হবে।

    একটু পরে এসেম্বলি বসবে।

    এমএলএরা সবাই আসবেন।

    তাদের আসার আগে পথ পরিষ্কার করে দিতে হবে।

    ছাত্রদের সরিয়ে দিতে হবে পুরো এলাকা থেকে।

    বড়কর্তারা আরো সেপাহি চাইলেন।

    আরো গাড়ি চাইলেন।

    আরো গাড়ি এলো।

    আরো সেপাহি এলো।

    আরো অস্ত্র এলো।

    সঙ্গে সঙ্গে আরো ছাত্র এলো।

    আরো কঠিন শপথে হলো দীপ্ত ওদের মুখ।

    মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তাটা প্রায় যুদ্ধক্ষেত্রের অবয়ব নিয়েছে।

    বিলকিস বানুর গাড়িটা ঘিরে দাঁড়ালো একদল ছাত্র।

    এদিকে কী হচ্ছে—ঘুরে দেখবার বাসনা নিয়ে দেখতে এসেছিলেন বিলকিস বানু।

    কিন্তু ছাত্রদের হাতে এভাবে ধরা পড়ে যাবেন ভাবতেও পারেননি।

    তার গাড়ির চাকা থেকে বাতাস ছেড়ে দেয়া হলো।

    কাচগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো ছাত্ররা।

    আপনার সাহস তো কম নয়। লিপস্টিক মেখে গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন! জানেন না আজ হরতাল?

    আমি কিছু জানি না। কিছু জানতাম না। বিশ্বাস করুন।

    ভয়ে আর আতঙ্কে গলাটা শুকিয়ে গেলো বিলকিস বানুর।

    ঝড়ে ভেজা কাকের মতো থরথর করে কাপছেন তিনি।

    মেয়েমানুষ, আপনাকে মাপ করে দিলাম। গাড়ি এখানে থাকবে। পায়ে হেঁটে যেখানে যাবার চলে যান।

    মুহূর্তে গাড়ির কথা ভুলে গেলেন বিলকিস বানু।

    গাড়ির চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

    বেঁচে থাকলে অকে অনেক গাড়ি হবে তার।

     

    একটা পুলিশও ছিলো না ওখানে?

    রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো মকবুল আহমদের।

    দুচোখে পানি ঝরছে বিলকিস বানুর।

    আমার চুল টেনে দিয়েছে ছাত্ররা।

    আমার মুখে থুথু দিয়েছে ছাত্ররা।

    আমার গাড়িটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

    রাগে কাঁপতে কাঁপতে রিসিভার তুলে নিলেন মকবুল আহমদ।

    পুলিশের বড়কর্তাকে ফোনে পেয়ে রীতিমতো গালাগাল দিলেন তিনি।

    গুণ্ডা বদমায়েশরা রাস্তাঘাটে মেয়েছেলেদের ধরে-ধরে অপমান করছে। দেখতে পাচ্ছেন না? কী করছেন আপনারা?

    কাঁদুনে গ্যাস আর লাঠিতে যদি কাজ না হয়, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে? গুলি করে ওদের খুলি উড়িয়ে দিতে পারছেন না?

     

    মেডিক্যাল ব্যারাকের উপর তখন অজস্র কাঁদুনে-গ্যাসের বর্ষণ চলছ।

    স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দ্বিগুণ গতি নিয়েছে।

    এসেম্বলির দিকে একটা মাইক্রোফোন লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে তসলিম।

    তার দিকে চেয়ে-চেয়ে বিড়বিড় করে বললেন কবি আনোয়ার হোসেন—

    আন্দোলন সবে শুরু হয়েছে। কার শক্তি আছে একে স্তব্ধ করে দেয়?

     

    মেডিক্যালের রাস্তায় অংসখ্য ইটের টুকরো ছড়ানো।

    পুলিশ আর ছাত্রদের মধ্যে এখন ইটের যুদ্ধ চলছে।

    পুঁটলিটা বগলে নিয়ে অবাক চোখে সেদিকে চেয়ে রইলো গফুর।

    কী হচ্ছে এসব?

    ভাবার চেষ্টা করলো।

    কিন্তু নিজের ক্ষুদ্রবুদ্ধি দিয়ে কারণ নির্ণয় করতে পারলো না।

    সূর্যটা ঈষৎ ঢলে পড়েছে পশ্চিম।

    আকাশে তখনো একটুকরো মেঘ নেই।

    পলাশের ডালে সোনালি রোদ লালরঙ মেখে নুয়ে পড়েছে পথের দু-পাশে। কয়েকটা কাক তারস্বরে চিৎকার জুড়েছে মেডিক্যালের কার্নিশে বসে।

    এতক্ষণ বাতাস ছিলো।

    মুহূর্ত-কয়েক আগে তাও বন্ধু হয়ে গেছে।

    সহসা শব্দ হলো।

    গুলির শব্দ।

    আবার!

    আবার!!

    মুহূর্তে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেল সবাই।

    ছাত্র।

    জনতা।

    মানুষ।

    এক ঝলক দমকা বাতাস হঠাৎ কোত্থেকে যেন ছুটে এসে ধাক্কা খেলো ব্যারাকের এক-কোণে দাঁড়ানো আমগাছটিতে।

    অনেকগুলো মুকুল ঝরে পড়লো মাটিতে।

    কাকগুলো চিঙ্কার থামিয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকালো।

    তারপর একটা কাক ভয়ার্ত ডানা মেলে আকাশে উড়লো।

    আকাশে তখনো গনগনে রোদ।

    শহরের সমস্ত আকাশ জুড়ে উড়তে লাগলো কাকটা।

    কোথাও কোনো শব্দ নেই।

    শুধু একটি ভয়ার্ত কাক আশব্দে উড়তে থাকলো আকাশে।

    ঈশানকোণ থেকে ভেসে এলো একটুকরো কালো মেঘ।

    সহসা সেই মেঘের আড়ালে মুখ লুকালো সূর্য।

     

    খবরটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো পুরো শহরে।

    ওরা গুলি করেছে।

    ছাত্রদের উপরে গুলি চালিয়েছে ওরা।

    কজন মারা গেছে?

    হয়তো একজন। কিম্বা দুজন। কিম্বা অনেক। অনেক।

    দোকান-পাটগুলো সব ঝড়ের বেগে বন্ধ হতে শুরু হলো।

    দোকানিরা নেমে এলো রাস্তায়।

    বাসের চাকা বন্ধ।

    কল-কারখানা বন্ধ।

    বিকট শব্দে হুইসেল বাজিয়ে ইঞ্জিন ছেড়ে নিচে নেমে এলো ট্রেনের ড্রাইভাররা।

    আজ চাকা বন্ধ।

    রিকশাটা একপাশে ঠেলে রেখে খবরটা যাচাই করার জন্যে সামনের একটা পান-দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো সেলিম।

    সে-ও আজ রিকশা চালাবে না।

    ওরা নাকি ছাত্রদের উপর গুলি করেছে। কতজন মারা গেছে?

    হিসাব নেই।

    সবাই খোঁজ নিতে এগিয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।

    মেডিক্যালের দিকে।

    এটা অন্যায়।

    এই অন্যায় আমরা সহ্য করবো না।

    মেডিক্যালের কাছাকাছি এসে জনতা এক বিশাল মিছিলে পরিণত হলো। ক্ষুব্ধ আক্রোশ ফেটে পড়ছে মানুষগুলো।

    এ হত্যার বিচার চাই আমরা।

    যারা আমাদের ভাইদের খুন করেছে তাদের বিচার চাই আমরা।

     

    ধীরেধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।

    ঘন অন্ধকারে ঢেকে গেল পুরো শহরটা!

    সেই অন্ধকারকে আশ্রয় করে দুটো এম্বুলেন্স নিয়ে মেডিক্যালের পেছনে মর্গের সামনে এসে দাঁড়ালো কয়েকজন পুলিশ অফিসার।

    মৃতদেহগুলো রাতারাতি সরিয়ে ফেলতে হবে।

    ভোর হবার আগেই আজিমপুরায় কবর দিয়ে দিতে হবে ওদের।

    সারাশরীর ঘামছে।

    পকেট থেকে রুমাল বের করে বারকয়েক মুখ মুছলেন আহমেদ হোসেন।

    লাশগুলোর নাম ধাম ঠিকানা যদি কিছু থেকে থাকে লিখে নাও।

    কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না স্যার।

    জবাব দিলেন জনৈক সহকারী।

    একজনের কাছে একটা পুঁটলি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দুটো শাড়ি, কিছু চুড়ি, আর একটা আলতার শিশি। এগুলো কী করবো স্যার?

    রেখে দাও। কাল অফিসে জমা দিয়ে দিয়ে। লাশগুলো তাড়াতাড়ি তুলে নাও গাড়ির ভেতরে। এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।

    লাশগুলো একবার দেখবেন কি স্যার?

    আরেক সহকারী প্রশ্ন করলেন।

    না। প্রয়োজন নেই।

    শান্তগলায় জবাব দিলেন আহমেদ হোসেন।

    রুমালে আবার মুখ মুছলেন তিনি।

    ছেলে তসলিমের মূখতার জন্য এতদিন প্রমোশন বন্ধ হয়েছিলো।

    এবার সরকার হয়তো মুখ তুলে তাকাবেন তার দিকে।

    মনে মনে ভাবলেন তিনি।

    মৃতদেহগুলো গাড়ির মধ্যে ভোলা হচ্ছে।

    সহসা একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে চমকে উঠলেন আহমেদ হোসেন।

    সমস্ত শরীরটা মুহূর্তে যেন হিম হয় গেলো তার।

    শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে অতি ক্ষীণস্বরে তিনি ডাকলেন—

    দাঁড়াও।

    মুহূর্তে যেন একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো।

    মাতালের মতো টলতে টলতে মৃতদেহের দিকে এগিয়ে এলেন তিনি।

    টর্চ! টর্চটা দেখি!!

    জনৈক সহকারী টর্চটা জ্বেলে মৃতদেহের উপর ধরলেন।

    মৃত তসলিমের রক্তাক্ত মুখের দিকে চেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন আহমেদ হোসেন।

    চেনেন নাকি স্যার?

    একজন সহকারী প্রশ্ন করলেন তাকে।

    আহমেদ হোসেন বোবাদৃষ্টিতে একবার তাকালেন শুধু তার দিকে।

    কিছু বলতে গিয়ে মনে হলো জিহ্বাটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে।

    কিছুতেই নাড়াতে পারছেন না তিনি।

     

    ডুকরে কেঁদে উঠলেন মা।

    এ কী সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার! আমি এবার কী নিয়ে বাঁচবো!!

    ছোট ভাইবোনগুলো মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে।

    জানালার পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে সালমা।

    বাইরের আকাশটার দিকে তাকালো সে।

    বুকে তার এক অব্যক্ত যন্ত্রণা।

    আর একটা দিনও কি বেঁচে থাকতে পারতো না তসলিম!

    কেন সে এমন করে মরে গেলো?

     

    মেডিক্যালের সবগুলো ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে দেখলো সালেহা।

    নেই।

    এখানে নেই।

    থানায় গেলো।

    জেলগেটে বন্দিদের খাতা খুলে নাম পড়লো সবার।

    নেই।

    এখানেও নেই।

    শূন্যঘরে ফিরে এসে সারারাত অপেক্ষা করলো সালেহা। ভোরের কাক ডেকে উঠলো।

    কেউ এলো না।

    কান্নায় ভেঙে পড়লো সালেহা।

    সে বুঝি আর এই পৃথিবীতেই নেই।

     

    কলসি কাঁখে পুকুরঘাটে দাড়িয়ে রইলো আমেনা।

    দিন গেলো।

    রাত গেলো।

    লোকটা যে বিয়ের বাজার করতে সেই-যে শহরে গেলো, কই আর তো এলো না।

    নকশি কাঁথার কত ফুল।

    কত পাখি! রঙিন সুতো দিয়ে আঁকলো আমেনা।

    রাতে কোনো বাড়িতে পুঁথিপড়ার শব্দ শুনলে হঠাৎ চমকে ওঠে আমেনা।

    চোখের পাতা পানিতে ভিজে যায়।

     

    সূর্য উঠছে।

    সূর্য ডুবছে।

    সূর্য উঠছে।

    সূর্য ডুবছে।

    সুতোর মতো সরু পানির লহরি বালির উপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে যাচ্ছে।

    ধলপহরের আগে রাস্তায় নেমে এলো একজোড়া খালি পা।

    সুতোর মতো সরু পানি ঝরনা হয়ে বয়ে যাচ্ছে এখন।

    কয়েকটি খালি পা কংক্রিটের পথ ধরে এগিয়ে আসছে সামনে।

    ঝরনা এখন নদী হয়ে ছুটে চলেছে সাগরের দিকে।

    সামনে বিশাল সমুদ্র।

    এ সমুদ্রের মতো জনতা।

    নগ্নপায়ে এগিয়ে চলেছে শহীদ মিনারের দিকে।

    অসংখ্য কালো পতাকা।

    পতপত করে উড়ছে।

    উড়ছে আকাশে।

    মানুষগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো অসংখ্য ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে সামনে।

    ইউক্যালিপ্টাসের পাতা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে নিচে। মাটিতে।

    ঝরে।

    প্রতি বছর ঝরে।

    তবু ফুরোয় না।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান
    Next Article আর কত দিন – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }