Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একের পিঠে দুই – সত্যজিৎ রায়

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প199 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    লাখপতি

    লাখপতি

    লাখপতি

    ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এটা যে কি করে সম্ভব হয় তা ত্রিদিববাবু মোটেই বুঝতে পারেন না। আসলে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে করেই হয়েছে এই হাল। সাত চড়ে রা নেই বলেই ত জাতটার কোনদিন উন্নতি হল না।

    দরজায় টোকা পড়ল।

    ‘অন্দর আও।’

    দরজাটা একপাশে সরে গিয়ে বাইরে বেয়ারাকে দেখা গেল।

    ‘কামরার টেম্‌পারেচার কত রাখা হয়েছে?’ ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করলেন ত্রিদিববাবু।

    ‘উয়ো তো মালুম নহী হ্যায় বাবু।’

    ‘কেন? মালুম নেই কেন? এসি-তে ট্রাভেল করে গরম ভোগ করতে হবে এ আবার কি রকম কথা? এ ব্যাপারে তোমাদের কোন দায়িত্ব নেই?’

    বেয়ারা আর কী বলবে?—সে বোকার মতো দাঁত বার করে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে আপার বার্থের মাদ্রাজী ভদ্রলোকটির ঘুম ভেঙে গেছে, তাই ত্রিদিব চৌধুরীকে বাধ্য হয়ে তাঁর রাগ হজম করে নিতে হল।

    ‘ঠিক হ্যায়। তুম যাও।—আর শোন, কাল সকালে ঠিক সাড়ে ছটার সময় চা দেবে।’

    ‘বহুৎ আচ্ছা, হুজুর।’

    বেয়ারা চলে গেল। ত্রিদিববাবু দরজা বন্ধ করে তাঁর জায়গায় শুয়ে পড়লেন। এসব ল্যাঠা ভোগ করতে হত না যদি তিনি প্লেনে আসতেন। তাঁর মতো অবস্থার লোকেরা কলকাতা থেকে রাঁচি সাধারণত প্লেনেই যায়। মুশকিল হচ্ছে কি, প্লেনে যাত্রা সম্পর্কে ত্রিদিববাবু একটা আতঙ্ক বোধ করেন সেটা কাটিয়ে ওঠা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। বছর বারো আগে তিনি একবার প্লেনে করে বোম্বাই গিয়েছিলেন। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। সেদিন আবহাওয়া ছিল প্রতিকূল, ফলে প্লেন আকাশে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যে ঝাঁকুনি শুরু হয় সেটা চলে একেবারে শেষ পর্যন্ত। সেদিনই ত্রিদিববাবু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি আর কখনো প্লেনে চড়বেন না। তাই এবার যখন রাঁচি যাবার দরকার হল তখন তিনি সরাসরি রাঁচি এক্সপ্রেসে বুকিং করলেন। এ. সি.-তে আরামের প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু এখন সে আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে অন্ধকার কামরায় শুয়ে নানান চিন্তার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন।

    বিশেষ করে মনে পড়ছে তাঁর ছেলেবেলার কথা। রাঁচিতেই তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা আদিনাথ চৌধুরী ছিলেন রাঁচির নাম-করা ডাক্তার। ত্রিদিববার ইস্কুলের পড়াশুনা রাঁচিতে শেষ করে কলকাতায় চলে যান কলেজে পড়তে। মামাবাড়িতে থেকে বি. এ. পর্যন্ত পড়ে কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর এক মাড়োয়ারি বন্ধুর পরামর্শে ব্যবসার দিকে ঝোঁকেন। লোহালক্কড়ের ব্যবসা দিয়ে শুরু করে অল্পদিনের মধ্যেই ব্যাঙ্কে তাঁর অনেকগুলো টাকা জমে যায়। তিনি বুঝতে পারেন যে ভাগ্যলক্ষ্মী তাঁর প্রতি সবিশেষ প্রসন্ন। সেই থেকে তিনি কলকাতাতেই থেকে যান, যদিও বাপ-মা রাঁচি ছাড়েন নি। প্রথমে সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাটে। তারপর রোজগার বাড়লে পর হ্যারিংটন স্ট্রীটে একটা দোতলা বাড়ির একতলাটা ভাড়া নেন ত্রিদিববাবু। বাপ-মায়ের সঙ্গে যে একেবারে যোগাযোগ ছিল না তা নয়। প্রতি বছর অন্তত একবার সাতদিনের জন্য এসে পৈতৃক বাড়িতে কাটিয়ে যেতেন ত্রিদিববাবু। বাপ-মায়ের অনুরোধেই তিনি ছাব্বিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন। দুবছর পরে তাঁর একটি ছেলে হয়। সেই ছেলে এখন আমেরিকায় পড়াশুনা করছে। আর কোনও সন্তান হয়নি ত্রিদিববাবুর। স্ত্রী মারা গেছেন তিন বছর হল। মা দেহ রেখেছেন সেভেণ্টিটুতে, আর বাপ সেভেণ্টিফোরে। রাঁচির সেই বাড়ি এখনো রয়েছে একটি চাকর ও একটি মালির জিম্মায়। ত্রিদিববাবু নিয়মিত তাদের মাইনে দিয়ে এসেছেন গত দশ বছর ধরে। বাড়িটা রাখার উদ্দেশ্য হল মাঝে মাঝে দু-চারদিন বিশ্রাম করে যাওয়া। কিন্তু রোজগারের ধান্ধায় সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তিনদিন বিশ্রাম মানেই ত হাজার পাঁচেক টাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। যে মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হল অর্থোপার্জন, তার আর বিশ্রামের ফুরসৎ কোথায়? ত্রিদিববাবু আজ লাখপতি। বাঙালিরা ব্যবসায়ে রোজগার করতে পারে না—এই অপবাদের মুখে তিনি ঝাড়ু মেরেছেন।

    এবার যে দশ বছর বাদে ত্রিদিববাবু রাঁচি যাচ্ছেন, এটা বিশ্রামের জন্য নয়। রাঁচিতে লাক্ষার ব্যবসা একটা বড় ব্যবসা। এই ব্যবসায়ে কোনো সুবিধা হতে পারে কিনা সেইটে যাচাই করে দেখার জন্যই রাঁচি যাওয়া। পৈতৃক বাড়িতেই থাকবেন ত্রিদিববাবু, এবং দুদিনের মধ্যেই কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রশান্ত সরকারকে তিনি চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন আসছেন বলে। সেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে চাকরদের বলে সব ব্যবস্থা করে রাখবে। প্রশান্ত তাঁর বাল্যবন্ধু। রাঁচির এক মিশনারি স্কুলে মাস্টারি করে। ত্রিদিববাবুর সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে, যদিও পুরোন বন্ধুর জন্য তিনি এতটুকু করতে রাজি হবেন এটা ত্রিদিববাবু বিশ্বাস করেন।

    আশ্চর্য! এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ত্রিদিববাবুর ঘুম এসে গেল এটা তিনি নিজেই জানেন না। তাঁরও যে অন্য তিনজন যাত্রীর মত নাক ডাকে সেটাও কি তিনি জানেন?

    রাঁচি এক্সপ্রেস আসার টাইম সকাল সোয়া সাতটা। প্রশান্ত সরকার তাঁর ছেলেবেলার বন্ধুকে স্বাগত জানাতে দশ মিনিট আগেই হাজির হয়েছেন স্টেশনে। ইস্কুলে থাকতে ত্রিদিব চৌধুরী ওরফে মণ্টুর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল ঘনিষ্ঠ। ত্রিদিব যখন কলকাতায় কলেজে পড়ত তখনও দুজনের মধ্যে নিয়মিত চিঠি লেখালেখি চলত। কলেজ ছাড়ার পরে এখন দুজনের মধ্যে ব্যবধান এসে পড়ে। এর জন্য দায়ী অবশ্য ত্রিদিববাবুই। বাপ-মা বেঁচে থাকতে তিনি মাঝে মাঝে রাঁচিতে এসেছেন, কিন্তু প্রশান্তকে না জানিয়ে। ফলে অনেকবার এমন হয়েছে দুজনের মধ্যে দেখাই হয় নি। কেন যে এরকম হচ্ছে সেটা প্রশান্ত সরকার বুঝতেই পারেন নি। তারপর খবরের কাগজ থেকে জেনেছেন যে ত্রিদিব চৌধুরী এখন একজন ডাকসাইটে ব্যবসায়ী, অর্থাৎ তিনি এখন প্রশান্তর নাগালের বাইরে। সেটা আরো স্পষ্ট হয় এই সেদিনের পাওয়া চিঠিটা থেকে। চার লাইনের সংক্ষিপ্ত শুকনো চিঠিতে দুজনের মধ্যে দূরত্বটাই ফুটে ওঠে।

    বন্ধুর এই পরিবর্তনে প্রশান্তবাবু খুশি হতে পারেন নি। ইস্কুলের সেই সরল হাসিখুশি মণ্টুর সঙ্গে এই লাখপতি ত্রিদিব চৌধুরীর যেন কোন মিল নেই। মানুষ কি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এতই বদলে যায়? ত্রিদিব চৌধুরীর যে অভাবনীয় আর্থিক উন্নতি হয়েছে সেটা অস্বীকার করা যায় না; কিন্তু টাকার গরমটাকে কোনদিনই বিশেষ আমল দেন না প্রশান্ত সরকার। তাঁর চরিত্রের এই বিশেষ দিকটা তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া। প্রমথ সরকার ছিলেন গান্ধীভক্ত আদর্শবাদী পুরুষ। প্রশান্তর নিজের জীবনে তেমন কোনো উত্থান পতন ঘটেনি। একজন ইস্কুল মাস্টারের জীবনে কতই বা রকমফের হবে? তাই আজ তাঁকে দেখলে ছেলেবেলার প্রশান্ত ওরফে পানুকে চিনতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু ত্রিদিব চৌধুরী সম্বন্ধে সে কথা বলা চলে কি? সেটা জানার জন্যই প্রশান্ত সরকার উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। ছেলেবেলার বন্ধু আজ লক্ষপতি হয়ে যদি দেমাক দেখাতে আসে তাহলে সেটা বরদাস্ত করা মুশকিল হবে।

    ট্রেন এল দশ মিনিট লেটে। মাত্র তিনদিনের জন্য আসা, তাই ত্রিদিববাবু সঙ্গে একটা ছোট সুটকেস আর একটা ফ্লাস্ক ছাড়া আর কিছুই আনেন নি। সুটকেসটা প্রশান্তবাবু একরকম জোর করেই নিজের হাতে তুলে নিলেন। তারপর দুজনে রওনা দিলেন স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সির উদ্দেশে।

    ‘অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হল নাকি?’ ত্রিদিব চৌধুরী প্রশ্ন করলেন হাঁটতে হাঁটতে।

    ‘এই মিনিট কুড়ি।’

    ‘তুমি যে আবার স্টেশনে আসবে সেটা ভাবতেই পারিনি। কোনো দরকার ছিল না। আমি ত আর এই প্রথম আসছি না রাঁচিতে।’

    প্রশান্তবাবু মৃদু হাসলেন, কোনো মন্তব্য করলেন না। চিরকালের অভ্যাস মতো তিনি বন্ধুকে ‘তুই বলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু বন্ধু ‘তুমি’ বলাতে সেটা আর হল না।

    ‘এখানে সব খবর ভালো ত?’ জিগ্যেস করলেন ত্রিদিববাবু।

    ‘হ্যাঁ, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এ্যাদ্দিন বাদে বাবু আসছেন জেনে তোমার মালি আর চিন্তামণি খুব একসাইটেড।’

    চিন্তামণি হল একাধারে রসুয়ে আর চৌকিদার। ‘বাড়িটা বাসযোগ্য আছে ত এখনো? নাকি ভূতের বাসায় পরিণত হয়েছে?’

    প্রশান্তবাবু আবার মৃদু হেসে একটু চুপ থেকে বললেন, ‘ভূতের বাসার কথা জানি না, কিন্তু একটা কথা তোমাকে জানানো দরকার। আমি সেদিন রাত্রে তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় বাগানে একটি বছর দশেকের ছেলেকে খেলতে দেখেছি।’

    ‘রাত্রে মানে?’

    ‘বেশ বেশি রাত। সাড়ে এগারোটা। দেখে চমকে গিয়েছিলাম। মনে হল যেন দশ বছরের মণ্টু আবার ফিরে এসেছে।’

    ‘এনিওয়ে—ভূত যে নয় সে তো বোঝাই যাচ্ছে। বাড়ি তো আমার বাবার তৈরি—ওতে কে মরেছে না মরেছে সে তো আমার জানা আছে। কথা হল—বাড়িটাকে ঝেড়ে পুঁছে রেখেছে ত?’

    ‘একেবারে তকতকে। আমি কাল গিয়ে দেখে এসেছি। ভালো কথা—তোমার কাজটা কখন, কোথায়?’

    ‘আমার নামকাম যেতে হবে আজই দুপুরে, আফটার লাঞ্চ। মহেশ্বর জৈন বলে এক লাক্ষা ব্যবসায়ী থাকেন ওখানে। আড়াইটায় অ্যাপয়েণ্টমেণ্ট।’

    ‘বেশ তো, আমরা যে ট্যাক্সিটা এখন নিচ্ছি সেটাই তোমার জন্য ঠিক করা আছে। এখন তোমাকে পৌঁছিয়ে দুপুরে খেয়ে আবার দুটোর মধ্যে তোমার কাছে চলে আসবে। নামকাম যেতে মিনিট দশেকের বেশি লাগবে না।’

    ট্যাক্সিতে উঠে রওনা হবার পরে প্রশান্ত সরকার জরুরী কথাটা পাড়লেন—তাও সরাসরি নয়, একটু ভণিতা করে।

    ‘ইয়ে—তুমি আছ কদ্দিন?’

    ‘আজ কথা শেষ না হলে কাল আরেকবার যেতে হবে। আমি ফিরছি পরশু।’

    ‘যা ভারভার্তিক চেহারা হয়েছে তোমার, খোলাখুলি কথা বলতেও সংকোচ হয়।’

    ‘কী বলতে চাও বলে ফেল না। ওরকম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললেই সন্দেহ হয়।’

    ‘কিছুই না, সামান্য একটা অনুরোধ। তুমি রাজি হলে তোমার এই বাল্যবন্ধু খুব গ্রেটফুল বোধ করবে।’

    ‘কী অনুরোধ?’

    ‘ফাদার ইউলিয়াম্‌সকে মনে আছে?’

    ‘উইলিয়াম্‌স—উইলি, ও সেই লাল দাড়ি?’

    ‘লাল দাড়ি। সেই উইলিয়াম্‌স বছর পাঁচেক হল একটা ইস্কুল করেছেন গরীব ছেলেদের জন্য। তাতে হিন্দু, মুসলমান, ক্রিশ্চান, কোল সবরকম ছেলেই পড়ে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যাপারটাকে দাঁড় করিয়েছেন ভদ্রলোক। তাঁর খুব ইচ্ছে যে তুমি একবার ইস্কুলটাকে দেখে যাও। কিছুই না, আধঘণ্টার ব্যাপার। ভদ্রলোক খুব উৎসাহিত বোধ করবেন।’

    ‘গেলেই ত হাত পাতবে।’

    ‘মানে?’

    ‘এইসব আমন্ত্রণের পিছনে আসল কথাটা কী সেটা তুমি জান না? নতুন ইনষ্টিটিউশন, টানাটানির ব্যাপার, একজন পয়সাওয়ালা মক্কেলকে ডেকে খানিকটা আপ্যায়ন করে মাথায় হাত বুলিয়ে শেষে ভিক্ষের ঝুলিটা তার সামনে খুলে ধরো! দ্যাখো হে, এ জিনিস আমার কাছে নতুন নয়। এককালে বহুবার এই প্যাঁচে পড়তে হয়েছে। আমি ভুক্তভোগী। চ্যারিটি যদি করতেই হয় ত সে যখন পরকালের চিন্তা করব, তখন। এখন নয়। এখন সঞ্চয়ের সময়। পরোপকারী হিসেবে একবারটি নাম হয়ে গেলে আর নিস্তার নেই। কাজেই আমাকে এ ধরনের রিকোয়েস্ট করতে এস না, আমি শুনব না। বুঝিয়ে বললে ফাদার নিশ্চয়ই বুঝবেন; আর সে ভার তোমার উপর। এখানে এসে কাজের বাইরে আমি যেটা চাই সেটা হল রেস্ট। কলকাতায় একটা মিনিট ফাঁক নেই।’

    ‘ঠিক আছে।’

    এমন একটা প্রস্তাবের যে এই প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা প্রশান্তবাবু ভাবতে পারেন নি। এখন মনে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক। এ মণ্টূ সেকালের সে মণ্টু নয়। এই মানুষটাকে প্রশান্তবাবু চেনেন না।

    জন্মস্থানে এসে ত্রিদিববাবুর ভারিক্কি ভাবটা খানিকটা দূর হয়ে তার জায়গায় একটা প্রসন্নতার আমেজ দেখা দিল। এই সুযোগে প্রশান্তবাবু তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাবটা করলেন।

    ‘আমার একটা অনুরোধ ত নাকচ হয়ে গেল, কিন্তু দ্বিতীয়টি ভাই রাখতে হবে। আমার গিন্নী বারবার করে বলে দিয়েছেন তোমায় বলতে যে আজ রাত্তিরে যেন এই গরীবের বাড়িতে তোমার পায়ের ধুলো পড়ে। খাওয়াটাও ওখানেই সারতে হবে, বলা বাহুল্য। অভাবের সংসার হলেও এটা জোর দিয়ে বলতে পারি যে সেখানে ত্রিদিব চৌধুরীর সামনে কেউ ভিক্ষের ঝুলি খুলে ধরবে না।’

    ত্রিদিববাবু এ ব্যাপারে আপত্তি করলেন না। করুণাবশত কিনা তাই নিয়ে মাথা ঘামালেন না প্রশান্ত সরকার। তাঁর তাড়া আছে, বাজার সেরে, নাওয়া-খাওয়া সেরে, তারপর ইস্কুল যেতে হবে। বিদায় নেবার সময় তিনি বলে গেলেন যে আটটা নাগাত নিজে এসে তিনি ত্রিদিববাবুকে নিয়ে যাবেন।—‘আর দশটার মধ্যে খাইয়ে-দাইয়ে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব এ গ্যারাণ্টি দিচ্ছি।’

    ত্রিদিব চৌধুরীর ব্যক্তিত্ব আর তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা—এই দুটোই যে তাঁর সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ সেটা আজ আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেল। রাঁচিতে আসা বৃথা হয়নি। তাঁর নানান ব্যবসার সঙ্গে লাক্ষা যুক্ত হয়ে তাঁর জীবনটাকে আরেকটু জটিল করে তুলল সেটা ঠিক, কিন্তু সেই সঙ্গে অতিরিক্ত আয়ের কথাটা ভাবলে আর আক্ষেপ করার কোনো কারণ থাকে না।

    পাঁচটা নাগাত বাড়ি ফিরে চা খেয়ে ত্রিদিববাবু একবার তাঁর জন্মস্থানটা ঘুরে দেখলেন। দোতলা বাড়ি; একতলায় বৈঠকখানা, খাবার ঘর, গেস্টরুম আর রান্নাঘর, দোতলায় দুটো বেডরুম, বাথরুম, আর একটা বেশ বড় পশ্চিমমুখী ঢাকা বারান্দা। দুটোর মধ্যে ছোটো বেডরুমটা ছিল ত্রিদিববাবুর ঘর।

    ছেলেবেলার তুলনায় এখন সেটাকে অনেক ছোট বলে মনে হয়, কারণ তিনি নিজেই শুধু বড় হয়েছেন, ঘর যেমন ছিল তেমনই আছে। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে খাটটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ত্রিদিববাবু স্থির করলেন আজ রাত্রে সেখানেই শোবেন। চিন্তামণি সকালেই জিগ্যেস করেছিল, কিন্তু তিনি তখনও মনস্থির করে উঠতে পারেন নি। রাত্রে বেরোবার মুখে চাকরকে ডেকে ছোট ঘরে বিছানা করার কথা বলে দিলেন।

    প্রশান্ত সরকারের স্ত্রী বেলা সুগৃহিণী এবং রন্ধনে সুনিপুণা, তাই খাওয়াটা হল পরিপাটি। ভোজের ব্যাপারে প্রশান্তবাবু কোনো কার্পণ্য করেননি। বন্ধুকে মাংস, দুরকম মাছ, পোলাও, লুচি, তিনরকম মিষ্টি ও মালাই খাইয়েছেন। ত্রিদিববাবু তৃপ্তির সঙ্গেই খেয়েছেন। কিন্তু খাবার পরে দশ মিনিটের বেশি বসেন নি। তাঁর বর্তমান অবস্থা, এবং তিনি কী ভাবে সেই অবস্থায় পৌঁছালেন, সে সম্পর্কে প্রশান্তবাবুর কৌতূহল আর মিটল না। পৌনে দশটার মধ্যে ত্রিদিববাবু নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন।

    বাড়িটা শহরের একটা অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি অংশে। পাড়া এর মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। ত্রিদিববাবু সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার সময় তাঁর নিজের পায়ের আওয়াজ নিজের কাছেই দুরমুশের মতো মনে হল।

    দোতলায় এসে ত্রিদিববাবু দেখলেন যে তাঁর ছেলেবেলার খাটে তাঁর জন্য বিছানা পাতা হয়ে গেছে। সবেমাত্র খাওয়া হয়েছে, তাই তিনি স্থির করলেন যে কিছুক্ষণ বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে বিশ্রাম করে তারপর শুতে যাবেন।

    হেলানো চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি অনুভব করলেন যে সারাদিনের সমস্ত অবসাদ চলে গিয়ে তিনি আশ্চর্য হালকা ও শান্ত বোধ করছেন। বাইরে ফিকে চাঁদের আলো, বাগানের একটা নেড়া শিরীষ গাছের ছড়ানো কালো ডালগুলোর দিকে তাঁর দৃষ্টি। ত্রিদিববাবু বুঝতে পারলেন যে তিনি নিজের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। সমস্ত বিশ্বচরাচরে যেন সেটাই একমাত্র শব্দ।

    তাই কি?

    না, তার সঙ্গে আরেকটা শব্দ যোগ হল। একটা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর। সেটা কোত্থেকে আসছে বলা কঠিন।

    মনোযোগ দিয়ে শুনে ত্রিদিববাবু বুঝলেন যে সেটা কোনো অল্পবয়স্ক ছেলের গলায় আবৃত্তির শব্দ। কবিতাটা তাঁর ভীষণ চেনা।

    ক্ষীণ হলেও কণ্ঠস্বর স্পষ্ট, প্রত্যেকটি কথা পরিষ্কার।

    —‘রথের দিনে খুব যদি ভিড় হয়

    একলা যাব, করব না ত ভয়—

    মামা যদি বলেন ছুটে এসে

    ‘হারিয়ে যাবে, আমার কোলে চড়ো’

    বলব আমি, দেখছ না কি মামা

    হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো—

    আমায় দেখে মামা বলবে, ‘তাই-তো,

    খোকা আমার সে খোকা আর নাই তো।’—

    এতদিন যেন ত্রিদিব চৌধুরীর স্মৃতির কোণে লুকিয়ে ছিল কবিতাটা; আজ শুনে আবার নতুন করে মনে পড়ছে।

    আবৃত্তি ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে। ত্রিদিববাবু উঠে পড়লেন চেয়ার থেকে। মনটাকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়। আসল হল ভবিষ্যৎ; অতীত নয়। তিনি জানেন ভবিষ্যতে তাঁকে আরো অনেক ওপরে উঠতে হবে, লাখপতি থেকে কোটিপতি হতে হবে। অতীত মানে তো যা ফুরিয়ে গেছে, শুকিয়ে গেছে, শেষ হয়ে গেছে। অতীতের চিন্তা মানুষকে দুর্বল করে, আর ভবিষ্যতের আশা তাকে সবল করে, সক্রিয় করে।

    নিজের শোবার ঘরে গিয়ে ত্রিদিববাবু ভ্রূ কুঞ্চিত করলেন। শহরে এখন লোড শেডিং, খাটের পাশে টেবিলের উপর একটা মোমবাতি টিমটিম করে জ্বলছে, তার মৃদু আলোতেই তিনি স্পষ্ট দেখলেন যে বিছানাটা ভালো করে পাতা হয়নি, চাদর বালিশ দুটোই কুঁচকে আছে। হাত দিয়ে চাপড় মেরে সেগুলোকে টান করে দিয়ে, পাঞ্জাবী খুলে আলনায় রেখে ত্রিদিববাবু খাটে শুয়ে পড়লেন। মোমবাতিটা জ্বলবে কি? কোনো দরকার নেই। এক ফুঁয়ে সেটাকে নিবিয়ে দিলেন ত্রিদিববাবু। পোড়া মোমের উগ্র গন্ধ কিছুক্ষণ বাতাসে ঘোরাফেরা করে মিলিয়ে গেল। পশ্চিমের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। রাতের আকাশ চাঁদের আলোয় ফিকে। পায়ের দিকে ঘরের দরজা। দরজা দিয়ে বাইরে বারান্দা ও বাঁয়ে সিঁড়ির মুখটা দেখা যাচ্ছে। সিঁড়ির দিকে দৃষ্টি যাওয়ার কথা নয়, কিন্তু ত্রিদিববাবুর মনে হল তিনি যেন একটা পায়ের আওয়াজ পাচ্ছেন। খালি পায়ে থপ্‌থপ্‌ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার শব্দ।

    কিন্তু কেউ এল না। শব্দটা যেন মাঝসিঁড়িতে থেমে গেল।

    হঠাৎ ত্রিদিববাবুর মনে হল তিনি অনর্থক ছেলেমানুষী কল্পনাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সব ভৌতিক চিন্তা এক ঝটকায় মন থেকে দূর করে দিয়ে তিনি শক্ত করে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় প্রবৃত্ত হলেন। এক তলায় খাবার ঘরের জাপানী ঘড়িতে ঢং ঢং করে এগারটা বাজল। ঘড়িটা এতদিন বন্ধ ছিল। আজই সকালে ত্রিদিববাবু আবার সেটাকে চালু করে দিয়েছেন।

    ঘড়ির শেষ ঢং মিলিয়ে যাওয়ায় নৈঃশব্দ যেন আরো বেড়ে গেল।

    ত্রিদিববাবুর চোখ বন্ধ, এবং সেই বন্ধ চোখেই যেন তিনি টুকরো টুকরো ঝাপসা ছবি দেখতে শুরু করেছেন। তিনি জানেন যে এটা ঘুমের পূর্বাভাস। ওই টুকরো ছবিগুলো আসলে স্বপ্নের টুকরো। মানুষ গান করার আগে যেমন গুনগুন করে সুর ঠিক করে নেয়, এই টুকরো ছবিগুলো হল আসলে স্বপ্ন শুরু হবার আগে স্বপ্নের গুনগুনানি।

    কিন্তু স্বপ্নের সময় এখনো আসেনি। চোখ বন্ধ অথচ সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থাতেই ত্রিদিববাবু তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করলেন যে ঘরে যেন কে ঢুকেছে। না, শুধু ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নয়, শ্রবণেন্দ্রিয়ও বটে। ত্রিদিববাবু নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছেন। কেউ যেন দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

    লোক দেখতে পাবেন এই দৃঢ় বিশ্বাসে চোখ খুলে ত্রিদিববাবু বুঝলেন যে তিনি ভুল করেন নি।

    দরজার মুখে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, বছর দশেক বয়স, আর ডান হাতটা আলতো করে দরজার উপর রাখা, বাঁ পাটা একটু সামনের দিকে এগোন। ছেলেটি যেন ঘরে ঢুকতে গিয়ে লোক দেখে থেমে গেছে।

    ত্রিদিববাবু অনুভব করলেন একটা ঠাণ্ডা ভাব তাঁর পা থেকে শুরু করে মাথার দিকে উঠে আসছে শিরদাঁড়া বেয়ে। প্রশান্ত বলেছিল একটি ছেলেকে দেখেছে, বাগানে···খেলছিল···ছেলেবেলার মণ্টু···

    ছেলেটি নিঃশব্দে আরো তিন পা এগিয়ে এল। এখন সে খাট থেকে চার হাত দূরে। ছেলেবেলার মণ্টু···

    ত্রিদিববাবুর হাত পা বরফ, মাথা ঝিম ঝিম করছে। তিনি বুঝতে পারছেন এবার তিনি চোখে অন্ধকার দেখবেন, তাঁর আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে।

    ছেলেটি আরেক পা এগোল। বেগুনী সার্ট···এই সার্ট ত···

    সংজ্ঞা হারাবার ঠিক আগের মুহূর্তে ত্রিদিববাবু রিনরিনে গলায় প্রশ্ন শুনলেন।

    ‘আমার বিছানায় কে শুয়ে?’

    তাঁর কখন জ্ঞান হয়েছিল, বা আদৌ হয়েছিল কিনা, আর তারপর কখন তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, এসব কিছুই জানেন না ত্রিদিববাবু। সকালে যথারীতি সাড়ে ছটায় ঘুম ভেঙে গেল। প্রশান্ত বলেছে সাড়ে সাতটায় এসে তাঁর সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করবে। রাত্রে যা ঘটল, তারপর তিনি মামুলি দৈনন্দিন কাজের কথা ভাবতেই পারছেন না। জীবনে তিনি প্রথম এমন ধাক্কা খেলেন। কাল চাঁদনি রাতে যে আবৃত্তি শুনেছিলেন সেই আবৃত্তি করে তিনি ইস্কুলে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়? দ্বিতীয় হয়েছিল প্রশান্ত সরকার। তাতে মণ্টু খুশি হয়নি। ‘দুজনেই ফার্স্ট প্রাইজ পেলে দারুণ হত, নারে?’ মণ্টু বলেছিল তার প্রাণের বন্ধু পানুকে।

    আর ঘরে যে ছেলেটি এল তার মুখ বোঝা যায় নি, কিন্তু সার্টের রং যে বেগুনী সেটা দেখেছিলেন ত্রিদিববাবু। এই বেগুনী সার্ট—তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সার্ট—যেটা তাঁকেই জন্মদিনে দিয়েছিলেন তাঁর ছোটমাসি সেটা কি তিনি ভুলতে পারেন? ওই সার্ট পরে যেদিন প্রথম স্কুলে গেলেন সেদিন পানু বলেছিল, ‘তোকে ঠিক সাহেবের মতো দেখাচ্ছেরে মণ্টু!’

    এই অদ্ভুত ভৌতিক অভিজ্ঞতার মানেও তাঁর কাছে স্পষ্ট। আজকের ত্রিদিবের সঙ্গে ছেলেবেলার ত্রিদিবের কোনো মিল নেই। ছেলেবেলার সেই মণ্টু ছেলেবেলাতেই মরে গেছে। আর তার ভূত এসে কাল জানিয়ে গেছে যে লাখপতি ত্রিদিব চৌধুরীকে সে মোটেই বরদাস্ত করতে পারছে না।

    প্রশান্তবাবুকে রাত্রের ঘটনা কিছুই বললেন না ত্রিদিববাবু। তবে এটা তিনি বুঝতে পারছিলেন যে শত চেষ্টা করেও তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে পারছেন না। তাই বোধহয় প্রশান্তবাবু একসময় প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার কী হয়েছে বলত? রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি নাকি?’

    ত্রিদিববাবু গলা খাকরিয়ে বললেন, ‘না,—ইয়ে, আমি ভাবছিলাম, মানে, দুদিনের কাজ যখন একদিনেই হয়ে গেল, তখন আজ একবার ফাদার উইলিয়াম্‌সের স্কুলটা দেখে এলে হত না?’

    ‘উত্তম প্রস্তাব!’ উৎফুল্ল হয়ে বললেন প্রশান্ত সরকার।

    মুখের হাসি ছাড়া অন্তরের একটা গোপন হাসিও হাসলেন তিনি, কারণ তাঁর ফন্দি আশ্চর্য ভাবে কাজ দিয়েছে। ফেরার পথে তাঁর প্রতিবেশী নন্দ চক্রবর্তীর ছেলে বাবলুকে বলে যেতে হবে যে তার কাল রাত্তিরের আবৃত্তি আর অভিনয় চমৎকার হয়েছে। আর সেই সঙ্গে অবিশ্যি চিন্তামণিকে একটা ভালোরকম বকশিস দিতে হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএবারো বারো – সত্যজিৎ রায়
    Next Article একেই বলে শুটিং – সত্যজিৎ রায়

    Related Articles

    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }