Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এক ডজন গপ্‌পো – সত্যজিৎ রায়

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি – ৪র্থ পর্ব

    ৪

    ফেলুদা হল আমার মাসতুতো দাদা। ও আর আমি আমার বাবার সঙ্গে দার্জিলিং-এ বেড়াতে এসে শহরের নীচের দিকে স্যানাটোরিয়ামে উঠেছি। স্যানাটোরিয়াম ভর্তি বাঙালী; বাবা তাদেরই মধ্যে থেকে সমবয়সী বন্ধু জুটিয়ে নিয়ে তাসটাস খেলে গল্পটল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। আমি আর ফেলুদা কোথায় যাই, কী করি, তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান না।

    আজ সকালে আমার ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়েছে। উঠে দেখি বাবা রয়েছেন, কিন্তু ফেলুদার বিছানা খালি। কী ব্যাপার?

    বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, ‘ও এসে অবধি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে নি। আজ দিনটা পরিষ্কার দেখে বোধহয় আগেভাগে বেরিয়েছে।’

    আমি কিন্তু মনে মনে আন্দাজ করছিলুম যে ফেলুদা তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছে, আর সেই কাজেই বেরিয়েছে। কথাটা ভেবে ভারী রাগ হল। আমাকে বাদ দিয়ে কিছু করার কথা তো ফেলুদার নয়।

    যাই হোক্‌, আমিও মুখটুখ ধুয়ে চা-টা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

    লেডেন লা রোডে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডটার কাছাকাছি এসে ফেলুদার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমি বললাম, ‘বারে, তুমি আমায় ফেলে বেরিয়েছ কেন?’

    ‘শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিল—তাই ডাক্তার দেখাতে গেস্‌লাম।’

    ‘ফণী ডাক্তার?’

    ‘তোরও একটু একটু বুদ্ধি খুলেছে দেখছি।’

    ‘দেখালে?’

    ‘চার টাকা ভিজিট নিল, আর একটা ওষুধ লিখে দিল।’

    ‘ভালো ডাক্তার?’

    ‘অসুখ নেই তাও পরীক্ষা করে ওষুধ দিচ্ছে—কেমন ডাক্তার বুঝে দ্যাখ; তারপর বাড়ির যা চেহারা দেখলাম, তাতে পসার যে খুব বেশি তাও মনে হয় না।’

    ‘তাহলে উনি কখনই চিঠিটা লেখেন নি।’

    ‘কেন?’

    ‘গরীব লোকের অত সাহস হয়?’

    ‘তা টাকার দরকার হলে হয় বই কি।’

    ‘কিন্তু চিঠিতে তো টাকা চায় নি।’

    ‘ওই ভাবে খোলাখুলি বুঝি কেউ টাকা চায়?’

    ‘তবে?’

    ‘রাজেনবাবুর অবস্থা কাল কি রকম দেখলি বল তো?’

    ‘কেমন যেন ভীতু ভীতু।’

    ‘ভয় পেয়ে মনের অসুখ হতে পারে সেটা জানিস?’

    ‘তা তো পারেই।’

    ‘আর মনের অসুখ থেকে শরীরের অসুখ?’

    ‘তাও হয় বুঝি?’

    ‘ইয়েস। আর শরীরের অসুখ হলে ডাক্তার ডাকতে হবে সেটা আশা করি তোর মত ক্যাবলারও জানা আছে।’

    ফেলুদার বুদ্ধি দেখে আমার প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল। অবিশ্যি ফণী ডাক্তার যদি সত্যিই এত সব ভেবে-টেবে চিঠিটা লিখে থাকে, তাহলে ওরও বুদ্ধি সাংঘাতিক বলতে হবে।

    ম্যালের মুখে ফোয়ারার কাছাকাছি যখন এসেছি তখন ফেলুদা বলল, ‘কিউরিও সম্বন্ধে একটা কিউরিয়সিটি বোধ করছি।’

    ‘কিউরিও’র মানে আগেই শিখেছিলাম, আর কিউরিয়সিটি মানে যে কৌতূহল সেটা ইস্কুলেই শিখেছি।

    আমাদের ঠিক পাশেই ‘নেপাল কিউরিও শপ’। রাজেনবাবু আর অবনীবাবু এখানেই আসেন।

    ফেলুদা সটান দোকানের ভেতর গিয়ে ঢুকল।

    দোকানদারের গায়ে ছাই রং-এর কোট, গলায় মাফলার আর মাথায় সোনালি কাজ করা কালো টুপি। ফেলুদাকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে এল। দোকানের ভেতরটা পুরোনো জিনিসপত্রে গিজগিজ করছে, আলোও বেশি নেই, আর গন্ধটাও যেন সেকেলে।

    ফেলুদা এদিক ওদিক দেখে গম্ভীর গলায় বলল, ভালো পুরোনো থাংকা আছে?’

    ‘এই পাশের ঘরে আসুন। ভালো জিনিস তো বিক্রী হয়ে গেছে সব। তবে নতুন মাল আবার কিছু আসছে।’

    পাশের ঘরে যাবার সময় আমি ফেলুদার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম, ‘থাংকা কী জিনিস?’

    ফেলুদা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘দেখতেই তো পাবি।’

    পাশের ঘরটা আরো ছোট—যাকে বলে একেবারে ঘুপ্‌চি।

    দোকানদার দেয়ালে ঝোলানো সিল্কের উপর আঁকা একটা বুদ্ধের ছবি দেখিয়ে বলল, এই একটাই ভালো জিনিস আছে—তবে একটু ড্যামেজড্‌।

    একেই বলে থাংকা? এ জিনিস তো রাজেনবাবুর বাড়িতে অনেক আছে।

    ফেলুদা ভীষণ বিজ্ঞের মত থাংকাটার গায়ের উপর চোখ ঠেকিয়ে উপর থেকে নীচে অবধি প্রায় তিন মিনিট ধরে দেখে বলল, ‘এটার বয়স তো সত্তর বছরের বেশি বলে মনে হচ্ছে না। আমি অন্তত তিনশ বছরের পুরনো জিনিস চাইছি।’

    দোকানদার বলল, ‘আমরা আজ বিকালে কিন্তু এক লট মাল পাচ্ছি। তার মধ্যে ভালো থাংকা পাবেন।’

    ‘আজই পাচ্ছেন?’

    ‘আজই।’

    ‘এ খবরটা তাহলে রাজেনবাবুকে জানাতে হয়।’

    ‘মিস্টার মজুমদার? ওনার তো জানা আছে। রেগুলার খদ্দের যে দু-তিনজন আছেন, তাঁরা সকলেই নতুন মাল দেখতে বিকালে আসছেন।’

    ‘অবনীবাবুও খবরটা পেয়ে গেছেন? মিস্টার ঘোষাল?’

    ‘জরুর!’

    ‘আর বড় খদ্দের কে আছে আপনাদের?’

    ‘আর আছেন মিস্টার গিলমোর—চা বাগানের ম্যানেজার। সপ্তাহে দু’দিন বাগান থেকে আসেন। আর মিস্টার নাওলাখা। উনি এখন সিকিমে।’

    ‘বাঙালী আর কেউ নেই?’

    ‘না স্যার।’

    ‘আচ্ছা দেখি, বিকেলে যদি একবার ঢুঁ মারতে পারি।’

    তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, ‘তোপ্‌সে, তুই একটা মুখোশ চাস?’

    তোপ্‌সে যদিও আমার আসল ডাকনাম নয়, তবু ফেলুদা তপেশ থেকে ওই নামটাই করে নিয়েছে।

    মুখোশের লোভ কি সামলানো যায়? ফেলুদা নিজেই একটা বাছাই করে আমাকে কিনে দিয়ে বলল, ‘এইটেই সবচেয়ে হরেনডাস্‌—কী বলিস?’

    ফেলুদা বলে হরেনডাস্‌ বলে আসলে কোন কথা নেই। ‘ট্রিমেনডাস্‌’ মানে সাংঘাতিক, আর ‘হরিবল্‌’ মানে বীভৎস। এই দুটো একসঙ্গে বোঝাতে নাকি কেউ কেউ হরেনডাস্‌ ব্যবহার করে। মুখোশটা সম্বন্ধে যে ওই কথাটা দারুন খাটে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

    দোকান থেকে বেরিয়ে ফেলুদা আমার হাত ধরে কী একটা বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। এবারও দেখি ফেলুদা একজন লোকের দিকে দেখছে। বোধ হয় কাল রাতে যাকে দেখেছিল সেই লোকটাই। বয়স আমার বাবার মত, মানে চল্লিশ-বেয়াল্লিশ, গায়ের রং ফরসা, চোখে কালো চশমা। যে স্যুটটা পরে আছে সেটা দেখে মনে হয় খুব দামী। ভদ্রলোক ম্যালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পাইপ ধরাচ্ছেন। আমার দেখেই কেমন জানি চেনা চেনা মনে হল, কিন্তু কোথায় দেখেছি ঠিক বুঝতে পারলাম না।

    ফেলুদা সোজা লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে ভীষণ সাহেবি কায়দার উচ্চারণে বলল, ‘এক্সকিউজ মী, আপনি মিস্‌ঠা ছ্যাঠাঝি?’

    ভদ্রলোকও একটু গম্ভীর গলায় পাইপ কামড়ে বলল, ‘নো, আই অ্যাম নঠ্‌।’

    ফেলুদা খুবই অবাক হবার ভান করে বলল, ‘স্ট্রেঞ্জ—আপনি সেন্ট্রাল হোটেলে উঠেছেন না?’

    ভদ্রলোক একটু হেসে অবজ্ঞার সুরে বললেন, ‘না। মাউন্ট এভারেস্ট্‌। অ্যান্ড আই ডোন্ট হ্যাভ এ টুইন ব্রাদার।’

    এই বলে ভদ্রলোক গটগটিয়ে অবজারভেটরি হিলের দিকে চলে গেলেন। যাবার সময় লক্ষ করলাম যে তার কাছে একটা ব্রাউন কাগজে মোড়া প্যাকেট, আর কাগজটার গায়ে লেখা ‘নেপালী কিউরিও শপ’।

    আমি চাপা গলায় বললাম, ‘ফেলুদা, উনিও কি মুখোশ কিনেছেন নাকি?’

    ‘তা কিনতে পারে। মুখোশটা তো আর তোর আমার একচেটিয়া নয়। …চ’, কেভেনটার্সে গিয়ে একটু কফি খাওয়া যাক।’

    কেভেনটার্সের দিকে যেতে যেতে ফেলুদা বলল, ‘লোকটাকে চিনলি?’

    আমি বললাম, ‘তুমিই চিনলে না, আমি আর কি করে চিনি বল। তবে চেনা চেনা লাগছিল।’

    ‘আমি চিনলাম না?’

    ‘বা রে। কোথায় চিনলে? ভুল নাম বললে যে?’

    ‘তোর যদি এতটুকু সেন্স থাকে। ভুল নাম বলেছি হোটেলের নামটা বের করার জন্য, সেটাও বুঝলি না? লোকটার আসল নাম কী জানিস?’

    ‘কী?’

    ‘প্রবীর মজুমদার।’

    ‘ও হো! হ্যাঁ ঠিক বলেছ, ঠিক বলেছ! রাজেনবাবুর ছেলে, তাই না? যার ছবি রয়েছ তাকের উপর? অবিশ্যি বয়সটা এখন অনেক বেড়ে গেছে তো।’

    ‘শুধু যে চেহারায় মিল তা নয়—গালের আঁচিলটা নিশ্চয় তুইও লক্ষ করেছিস—আসল কথাটা হচ্ছে, ভদ্রলোকের জামা-কাপড় সব বিলিতি। স্যুট লন্ডনের, টাই প্যারিসের, জুতো ইটালিয়ান, এমন কি রুমালটা পর্যন্ত বিলিতি। সদ্য বিলেত-ফেরত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।’

    ‘কিন্তু ওঁর ছেলে এখানে রয়েছে সে খবর রাজেনবাবু জানেন না?’

    ‘বাপ যে এখানে রয়েছে সেটা ছেলে জানে কিনা সেটাও খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার।’

    রহস্য ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে, এই কথাটা ভাবতে ভাবতে কেভেন্টারের দোকানে পৌঁছলাম।

    দোকানের ছাতে যে বসার জায়গাটা আছে, সেটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। চারদিকে দার্জিলিং শহরটা, আর ওই নীচে বাজারটা দারুণ ভালো দেখায়।

    ছাতে উঠে দেখি কোণের টেবিলটায় চুরুট হাতে তিনকড়িবাবু বসে কফি খাচ্ছেন। ফেলুদাকে দেখতে পেয়েই হাত তুলে আমাদের তাঁর টেবিলে গিয়ে বসতে বললেন।

    আমরা তিনকড়িবাবুর দু’দিকে দুটো টিনের চেয়ারে বসলাম।

    তিনকড়িবাবু ফেলুদাকে বললেন, ‘ডিটেক্‌শনে তোমার পারদর্শিতা দেখে খুশি হয়ে আমি তোমাদের দু’জনকে দুটো হট্‌ চকোলেট খাওয়াব—আপত্তি আছে?’

    হট্‌ চকোলেটের নাম শুনে আমার জিভে জল এসে গেল।

    তিনকড়িবাবু তুড়ি মেরে একটা বেয়ারাকে ডাকলেন।

    বেয়ারা এসে অর্ডার নিয়ে গেলে পর তিনকড়িবাবু কোটের পকেট থেকে একটা বই বার করে ফেলুদাকে দিয়ে বললেন, এই নাও। একটা এক্সট্রা কপি ছিল—আমার লেটেস্ট্‌ বই। তোমায় দিলুম।’

    বইয়ের মলাটটা দেখে ফেলুদার মুখটা হাঁ হয়ে গেল।

    ‘আপনার বই মানে? আপনার লেখা? আপনিই ‘গুপ্তচর’ নাম নিয়ে লেখেন?’

    তিনকড়িবাবু আধ-বোজা চোখে অল্প হাসি হেসে মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বললেন।

    ফেলুদার অবাক ভাব আরো যেন বেড়ে গেল।

    ‘সেকি! আপনার সব ক’টা উপন্যাস যে আমার পড়া! বাংলায় আপনার ছাড়া আর কারুর রহস্য উপন্যাস আমার ভালো লাগে না।’

    ‘থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ! ব্যাপারটা কী জান? এখানে একটা প্লট মাথায় নিয়ে লেখার জন্যই এসেছিলাম। এখন দেখছি বাস্তব জীবনের রহস্য নিয়েই মাথা ঘামিয়ে ছুটিটা ফুরিয়ে গেল।’

    ‘আমার সত্যিই দারুণ লাক্‌—আপনার সঙ্গে এভাবে আলাপ হয়ে গেল।’

    ‘দুঃখের বিষয় আমার ছুটির মেয়াদ সত্যিই ফুরিয়ে এসেছে। কাল সকালে চলে যাচ্ছি আমি। আশা করছি যাবার আগে তোমাদের আরো কিছুটা হেল্প করে দিয়ে যেতে পারব।’

    ফেলুদা এবার তার এক্‌সাইটিং খবরটা তিনকড়িবাবুকে দিয়ে দিল।

    ‘রাজেনবাবুর ছেলেকে আজ দেখলাম।’

    ‘বল কী হে?’

    ‘এই দশ মিনিট আগে।’

    ‘তুমি ঠিক বলছ? চিনতে পেরেছ তো ঠিক?’

    ‘চোদ্দ আনা সিওর। মাউন্ট এভারেস্ট হোটেলে গিয়ে খোঁজ করলে বাকি দু-আনাও পুরে যাবে বোধ হয়।’

    তিনকড়িবাবু হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

    ‘রাজেনবাবুর মুখে তার ছেলের কথা শুনেছ?’

    ‘কাল যা বললেন, তার বেশি শুনি নি।’

    ‘আমি শুনেছি অনেক কথা। ছেলেটি অল্পবয়সে বখে গিয়েছিল। বাপের সিন্দুক থেকে টাকা চুরি করে ধরা পড়েছিল। রাজেনবাবু তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ছেলেটি গিয়েওছিল তাই। ২৪ বছর বয়স তখন তার। একেবারে নিখোঁজ। রাজেনবাবু অনেক অনুসন্ধান করেছিলেন, কারণ পরে তাঁর অনুতাপ হয়। কিন্তু ছেলে কোন খোঁজখবর নেয় নি বা দেয় নি। বিলেতে তাকে দেখেছিলেন রাজেনবাবুরই এক বন্ধু। তাও সে দশ-বারো বছর আগে।’

    ‘রাজেনবাবু তাহলে জানেন না যে তাঁর ছেলে এখানে আছে?’

    ‘নিশ্চয়ই না। আমার মনে হয় ওঁকে না জানানই ভালো। একে এই চিঠির শক্‌, তার উপর…’

    তিনকড়িবাবু হঠাৎ থেমে গেলেন। তারপর ফেলুদার দিকে ফিরে বললেন, ‘আমার বুদ্ধিশুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে। রহস্য উপন্যাস লেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

    ফেলুদা হাসতে হাসতে বলল, ‘প্রবীর মজুমদার যে চিঠি লিখে থাকতে পারেন সেটা আপনার খেয়াল হয় নি তো?’

    ‘এগজ্যাক্টলি। কিন্তু…’

    তিনকড়িবাবু অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।

    বেয়ারা হট্‌ চকোলেট এনে টেবিলে রাখতে তিনকড়িবাবু যেন একটু চাগিয়ে উঠলেন। ফেলুদার দিকে ফিরে বললেন, ‘ফণী মিত্তিরকে কেমন দেখলে?’

    ফেলুদা একটু যেন হকচকিয়ে গেল।

    ‘সে কি, আপনি কী করে জানলেন আমি ওখানে গেস্‌লাম?’

    ‘তুমি যাওয়ার অল্পক্ষণ পরেই আমিও গেস্‌লাম।’

    ‘আমাকে রাস্তায় দেখেছিলেন বুঝি?’

    ‘না।’

    ‘তবে?’

    ডাক্তারের ঘরের মেঝেতে একটি মরা সিগারেট দেখে জিজ্ঞেস করলাম কে খেয়েছে। ডাক্তার ধূমপান করেন না। ফণীবাবু তখন বর্ণনা দিলেন। তাতে তাোমার কথা মনে হল, যদিও তোমাকে আমি সিগারেট খেতে দেখি নি। কিন্তু এখন তোমার আঙ্গুলের গায়ে হলদে রং দেখে বুঝেছি, তুমি খাও।’

    ফেলুদা তিনকড়িবাবুর বুদ্ধির তারিফ করে বলল, ‘আপনারও কি ফণী মিত্তিরকে সন্দেহ হয়েছিল নাকি?’

    ‘তা হবে না? লোকটাকে দেখলে অভক্তি হয় না কি?’

    ‘তা হয়। রাজেনবাবু যে কেন ওকে আমল দেন জানি না।’

    ‘তাও জান না বুঝি? দার্জিলিং-এ আসার কিছুদিনের মধ্যে রাজেনবাবুর ধম্মকম্মের দিকে মন যায়। তখন ফণীবাবুই তাকে এক গুরুর সন্ধান দিয়েছিলেন। একই গুরুর শিষ্য হিসেবে ওদের যে প্রায় ভাই ভাই সম্পর্ক হে!’

    ফেলুদা জিজ্ঞেস করল, ‘ফণী মিত্তিরের সঙ্গে কথা বলে কী বুঝলেন?’

    ‘কথা তো ছুতো। আসলে বইয়ের আলমারিগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলুম।’

    ‘বাংলা উপন্যাস আছে কিনা দেখার জন্য?’

    ‘ঠিক বলেছ।’

    ‘আমিও দেখেছি, প্রায় নেই বললেই চলে। আর যা আছে তাও আদ্যিকালের।’

    ‘ঠিক।’

    ‘তবে ফণী ডাক্তার অন্যের বাড়ির বই থেকেও কথা কেটে চিঠি তৈরি করতে পারে।’

    ‘তা পারে। তবে লোকটাকে দেখে ভারী কুঁড়ে বলে মনে হয়। এ ব্যাপারে অতটা কাঠখড় পোড়াবে, সেটা কেন জানি বিশ্বাস হয় না।’

    ফেলুদা এবার বলল, ‘অবনী ঘোষাল লোকটা সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা?’

    ‘বিশেষ সুবিধের লোক নয় বলেই আমার বিশ্বাস। ভারী ওপর-চালাক। আর ওসব প্রাচীন শিল্প-টিল্প কিছু না। ওর আসল লোভ হচ্ছে টাকার। এখন খরচ করে জিনিস কিনছে, পরে বিদেশীদের কাছে বিক্রি করে পাঁচগুণ প্রফিট করবে।’

    ‘ওর পক্ষে এই হুম্‌কি চিঠি দেওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয় কি?’

    ‘সেটা এখনও তলিয়ে দেখি নি।’

    ‘আমি একটা কারণ আবিষ্কার করেছি।’

    আমি অবাক হয়ে ফেলুদার দিকে চাইলাম। ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।

    তিনকড়িবাবু বললেন, ‘কী কারণ?’

    ফেলুদা গলাটা নামিয়ে নিয়ে বলল, ‘যে দোকান থেকে ওঁরা জিনিস কেনেন, সেখানে কিছু ভালো নতুন মাল আজ বিকেলে আসছে।’

    এবার তিনকড়িবাবুর চোখও জ্বলজ্বল করে উঠল।

    ‘বুঝেছি। হুম্‌কি চিঠি পেয়ে রাজেন মজুমদার ঘরে বন্দী হয়ে রইলেন আর সেই ফাঁকতালে অবনী ঘোষাল দোকানে গিয়ে সব লুটেপুটে নিলেন।’

    ‘এগজ্যাক্টলি!’

    তিনকড়িবাবু চকোলেটের পয়সা দিয়ে উঠে পড়লেন। আমরা দু’জনেও উঠলাম।

    উৎসাহে আর উত্তেজনায় আমার বুকটা ঢিপ্‌ ঢিপ্‌ করছিল।

    অবনী ঘোষাল, প্রবীর মজুমদার আর ফণী মিত্তির—তিনজনকেই তাহলে সন্দেহ করার কারণ আছে!

    পনর মিনিটের মধ্যেই মাউন্ট এভারেস্ট হোটেলে গিয়ে ফেলুদা সেই খবরটা জেনে নিল। প্রবীর মজুমদার বলে একজন ভদ্রলোক সেই হোটেলের ষোল নম্বর ঘরে পাঁচদিন হল এসে রয়েছেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাদশাহী আংটি – সত্যজিৎ রায়
    Next Article সোনার কেল্লা – সত্যজিৎ রায়

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }