Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প575 Mins Read0

    ১১. সুইস গার্ডের অফিসে

    ১০১.

    গুন্থার গ্লিক বসে আছে সুইস গার্ডের অফিসে। তার জানা যত দেবতা আর ঈশ্বরের কথা মনে পড়ছে, সবার কাছেই কাকুতি মিনতি করছে সারাক্ষণ। প্লিজ, এটা যেন কোন স্বপ্ন না হয়, কাহিনী যেন এখানেই শেষ হয়ে না যায়!

    এ সুযোগ যে কোন রিপোর্টারের কাছে পরম আরাধ্য। জেগে আছ তুমি, বলল সে নিজেকে, এবং তুমি একজন স্টার। এ মুহূর্তে ড্যান র‍্যাথারের চিৎকার কে শুনবে!

    তার পাশেই আছে ম্যাক্রি। একটু স্থাণুর মত। গ্লিক দোষ দেয় না তাকে। এখনো ভিডিওগ্রাফারের মোহাবিষ্ট অনুভব কাটেনি। সে আর গ্লিক মিলে প্রচার করেছে ক্যামারলেনগোর লাইভ অনলবর্ষী বক্তৃতা। প্রচার করেছে কার্ডিনালদের মরদেহের ছবি, মৃত পোপের মুখাভ্যন্তরের চিত্র এমনকি যে ক্যানিস্টারটা এ মুহূর্তে ভ্যাটিকানের উপর খড়গহস্ত হয়ে আছে সেটার টিকটিক করে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবার দৃশ্য। অবিশ্বাস্য!

    একেবারে শেষ মুহূর্তে টেক্কা! বলল ম্যাক্রি। বসে আছে তারা সুইস গার্ডের অফিসে।

    একটা হাসি যোগাড় করতে পারল গ্লিক, ব্রিলিয়ান্ট, তাই না?

    বোবা করে দেয়ার মত ব্রিলিয়ান্ট।

    একটু কি হিংসা হচ্ছে ক্যামেরাম্যানের? হবেই হয়ত।

    সোনায় সোহাগা হয়ে আরো কিছু ব্যাপার এখানে নূতন মাত্রা যোগ করছে। ক্যাপ্টেন রোচার কোন এক অজ্ঞাত শুভাকাক্ষীর ফোন পেয়ে তার কথামত সার্চ চালানো শুরু করেছে। সুইস গার্ডের কয়েকজন অপেক্ষা করছে অতিথির আগমনের জন্য।

    শুনেও না শোনার ভাণ করবে গ্লিক, সেটাই স্বাভাবিক। তারপর আর সব আদর্শ রিপোর্টার যা করে, নিরালা একটা জায়গা খুঁজে নিবে তারা, তারপর নির্দেশ দিবে ভিডিওগ্রাফারকে ক্যামেরা রোল করানোর জন্য, ফাস করে দিবে তড়িঘড়ি করে যতটা গোমর সে জানে।

    ঈশ্বরের মহানগরীতে আৎকে দেয়া খবর আসছে প্রতিনিয়ত, এর আগেই সে ঘোষণা দিয়েছে উদার কণ্ঠে, অবশ্যই, মনে মনে, তারপর বলবে, আজকের দিনটাকে কোনক্রমে বাঁচিয়ে দিতে গোপন এক মেহমান আসছেন এখানে।

    একেবারে শেষ দানে টেক্কা। একজন লোক শেষ মুহূর্তে আসছে, সিটিকে বাঁচিয়ে দিতে। বারবার মনে মনে আউড়ে যাচ্ছে সে কথাটুকু।

    আমি ব্রিলিয়ান্ট! বলে সে নিজেকে, নিশ্চই পিটার জেনিংস এইমাত্র কোন ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

    তুমিই আমাদের এই নরকের সাথে যুক্ত করেছ, বলছে ম্যাক্রি, পুরো ব্যাপারটায় ঘাপলা ধাঁধাচ্ছ তুমি।

    কী আবোল তাবোল বকছ? আই ওয়াজ গ্রেট!

    সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আসছেন? একজন ইলুমিনেটাস?

    কে না জানে? হাসল গ্লিক। যে জানে না সে অনেক ব্যাপারেই ওয়াকিফহাল নয়। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ছিল একজন থার্টি থ্রি ডিগ্রি মেসন। আর সে সি আই এর হেড ছিল সেই মুহূর্তে যে সময়টায় সি আই এ প্রমাণের অভাবে ইলুমিনেটি কেসে ধামাচাপা দেয়। আর সেখানে কয়েকটা অমর বাণীও প্রচারিত হয় অহর্নিশি।

    আলোর হাজারটা উৎস… পৃথিবীর নূতন রীতি…

    জর্জ বুশ অবশ্যই ইলুমিনেটি ছিল। কোন সন্দেহ নেই।

    আর সার্নের সেই গোমর ফাঁস করে দেয়ার ব্যাপারে কী হবে? তেতে আছে ম্যাক্রি, কাল সকালেই তোমার দুয়ারে ধর্ণা দেবে অনেক অনেক আইনজীবী।

    সার্ন? ও, কাম অন! এটা হতই হত। একবার ভেবে দেখ! ইলুমিনেটি উনিশো পঞ্চাশের দশকে গায়েব হয়ে যায় ঠিক যে মুহূর্তে সার্ন জন্ম নেয়। পৃথিবীর সবচে আলোকিত মানুষগুলোর জন্য সার্ন সব সময়ই স্বর্গ। সেখানে প্রত্যেকের পিছনে রাশি রাশি অর্থ খরচ করা হয় অহরহ। আর তারাই অবশেষে এমন এক শক্তিশেল আবিষ্কার করল যা পৃথিবীর বুক থেকে ক্যাথলিক চার্চের নাম নিশানা গায়েব করে দিবে। হেরে গেল বেচারারা এই দান!

    তার মানে তুমি গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে চাও যেন সার্নই ইলুমিনেটির নতুন আখড়া?

    অবশ্যই! ব্রাদারহুড কখনোই একেবারে হাপিস হয়ে যায় না। কখনো যায়নি। ইলুমিনেটির কোন না কোন জায়গায় আশ্রয় নিতে হবেই। আমি বলছি না যে সার্নের প্রত্যেকেই ইলুমিনেটি, কিন্তু এটা বিশাল মেসনিক স্তুপে পরিণত হয়ে থাকতে পারে। এখানে প্রায় প্রত্যেকেই একেবারে তুলসি পাতায় ধোয়া হলেও উপরের দিকে রাঘব বোয়াল

    তুমি কি কখনো দায়িত্বজ্ঞানের কথা শুনেছ গ্লিক? দায়িত্ববোধের কথা?

    কখনো তুমি বাস্তব সাংবাদিকতার কথা শুনেছ?

    সাংবাদিকতা? পাতলা বাতাস থেকে তুমি গোবর তুলে আনছ। আমার ক্যামেরাটা বন্ধ করে দেয়া উচিৎ ছিল! আর সার্নের কর্পোরেট লোগোতে কিসের গন্ধ পেয়েছ? স্যাটানিক লোগো? মাথা খুইয়ে বসেছ একেবারে!

    হাসল গ্লিক। কোমল করে। ম্যাক্রির হিংসা একেবারে তেড়েফুঁড়ে বের হচ্ছে। ক্যামারলেনগোর জ্বালময় ভাষণের পর সবাই সার্ন আর এন্টিম্যাটার নিয়ে তেতে আছে। কোন কোন চ্যানেলের খবরের পিছনে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে সার্নের লোগোও দেখানো হচ্ছে। অনেকটা আধুনিক। দুটা পরস্পরছেদী বৃত্তের মধ্যে দুটা পার্টিকেল এ্যাক্সিলারেটর, আর পার্টিকেল ইঞ্জেকশন টিউবের উপর পাঁচটা রেখা।

    তাবৎ দুনিয়া এই লোগো দেখছে গত আধঘণ্টা ধরে, কিন্তু এই গ্লিক, যে নিজেকে একটু সিম্বলজিস্টও ভাবে, সর্বপ্রথম এর ভিতরে ইলুমিনেটির গন্ধ পাচ্ছে।

    তুমি মোটেও কোন সিম্বলজিস্ট নও। দাঁত কিড়মিড় করছে ম্যাক্রি, তুমি একেবারে ছাই উড়াতে গিয়ে হিরার খুনি পেয়ে গেছ, ব্যস। একজন্ ছা পোষা রিপোর্টার। তোমার বরং সিম্বলজির ব্যাপারটা হাভার্ডের লোকটার উপরে ছেড়ে দেয়াই ভাল।

    হাভার্ডের লোকটা ধরতে পারেনি এ গুপ্ত ব্যাপার…

    এই লোগোতে ইলুমিনেটির গন্ধ এত প্রকট!

    হাজারটা কারণ বের করতে থাকে সে। সার্নের কাছে অনেক অনেক এ্যাক্সিলারেটর থাকলেও তারা মাত্র দুটাকে প্রকাশিত করেছে। দুই হল ইলুমিনেটির একটা প্রতীক। যদিও বেশিরভাগ যন্ত্রেই একটা মাত্র টিউব থাকে, এখানে প্রকাশিত হচ্ছে পাঁচটা। পাঁচ! পাঁচ হল ইলুমিনেটির আরেক সংখ্যা। ইলুমিনেটি পেন্টাগ্রাম।

    সবচে বড় চমকটা এখনো বাকি রয়ে গেছে। প্রথমে এই রেখাগুলো দিয়ে একটা সিক্স দেখা যায়, তারপর এটাকে আরো একটু ঘোরালে আরো একটা, সবশেষে আরো

    একটা। তিনটা সিক্স! শয়তানের সংখ্যা।

    গ্লিক আসলেই এক জিনিয়াস!

    ম্যাক্রি তাকে কাঁচা খেয়ে ফেলার জন্য প্রস্তুত।

    তার হিংসা এক সময় না এক সময় ঠিক ঠিক চলে যাবে। গ্লিক ত নিয়ে চিন্তা করে না। তার চিন্তা, সার্ন যদি সত্যি সত্যি ইলুমিনেটি হেডকোয়ার্টার হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে ইলুমিনেটির সেই হিরকটা থাকার কথা নয় কি? একটা জার্নালে পড়েছিল গ্লিক, এক অনিন্দ্যসুন্দর ডায়মন্ড, প্রাচীণ পদ্ধতিতে এমন করে কাটা হয়েছে যে যে-ই দেখুক, তাকিয়ে থাকবে সবিস্ময়ে।

    ভেবে পুলকিত হয় গ্লিক, এই হিরা নিয়েও বেশ কিছু করার আছে তার। আজ রাতেই।

     

    ১০২.

    পিয়াজ্জা নাভোনা। ফাউন্টেইনস অব দ্য ফোর রিভারস।

    গরম দিনের পরও রোমের রাতগুলো মরুভূমির মত হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে আছে ল্যাঙডন পিয়াজ্জা নাভোনায়। জ্যাকেটটাকে আরো জড়িয়ে নিয়ে একটু উষ্ণতার জন্য প্রাণ আইঢাই করছে তার। হাতে সময় পনের মিনিট। একটু বিশ্রাম নিতে পারবে ভেবে বেঁচে বর্তে যায় সে।

    পিয়াজ্জা একেবারে জনশূণ্য। বার্নিনির ঝর্ণা সাদা ফেনার উপর পানির প্রবাহ। বইয়ে চলছে। আলো আসছে ঝর্ণার নিচ থেকে। মোহময়।

    ঝর্ণাটা আসলেই সুন্দর। পানির ধারা উঠে গেছে বিশ ফুট পর্যন্ত। সেখানে পাথুরে অবয়ব। অবয়বে পাগান দেবদেবীদের মূর্তি। সব ছাড়িয়ে উঠে এসেছে একটা বিশাল ওবেলিস্ক। চল্লিশ ফুট পর্যন্ত। তাকাল ল্যাঙডন বিনা দ্বিধায়। উপরে একটা একলা পায়রা উড়ে চলেছে উদাসভাবে।

    প্যান্থিয়নে কয়েক ঘণ্টা আগেও ভাবছিল সে, পাথ অব ইলুমিনেশন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু অবাক হলেও সত্যি, এত শতাব্দি পর্যন্ত অক্ষত আছে সেটা। পুরোটাই সে অনুসরণ করতে পেরেছে।

    কিন্তু চারেই খেলাটা শেষ নয়। এরপর আছে আসল গন্তব্য। চার্চ অব ইলুমিনেশন। ভেবে পায় না সে সেটা এখনো অক্ষত আছে কিনা। ভেবে পায় না সেখানেই পাওয়া যাবে কিনা ভিট্টোরিয়াকে।

    লেট এ্যাঞ্জেলস গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট।

    কোন ফেরেশতা আছে কি এ ঝর্ণায়? সেই কি দেখিয়ে দিবে পাথ অব ইলুমিনেশনের শেষ ধাপটা? এটা পাগান শিল্পকর্ম। এখানে আছে মানব, জন্তু, এমনকি আর্মাডিলো। এখানে পথনির্দেশটা তাকে পেতেই হবে।

     

    পিয়াজ্জার দূরপ্রান্তে একটা কালো ভ্যান এল দশটা ছিচল্লিশে। ল্যাঙডনের এর দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর কথা নয়। তবু তাকাল সে হেডলাইটের দিকে। ভ্যানটা পিয়াজ্জার চারপাশে একবার চক্কর দিল।

    সাথে সাথে গা ঢাকা দিল ল্যাঙড়ন। পিয়াজ্জার শেষপ্রান্তে সেন্ট এ্যাগনেস ইন এ্যাগোনি গির্জার সিঁড়ির আড়ালে। বেড়ে যাচ্ছে তার নাড়ির গতি।

    দু চক্কর দিয়ে এগিয়ে এল ভ্যান। থামল সোজা ঝর্ণার পাশে। এর স্লাইডিং ডডারের একেবারে কাছেই ঝর্ণা। পানির কণা ভেসে বেড়াচ্ছে চারপাশে।

    দৃষ্টিপথ আড়াল করে দাঁড়াল কুয়াশার মত পানি।

    তার আশা ছিল খুনি আসবে, তারপর হটিয়ে নিয়ে যাবে ভিকটিমকে, যেমনটা সে করেছিল সেন্ট পিটার্সে। খোলা একটা শট নেয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু যদি ভ্যানটাতেই সে থেকে থাকে, গডবড় হয়ে যাবে হিসাবে।

    হঠাৎ করে, ভ্যানের স্লাইড ডাের খুলে গেল।

    ভ্যানের ফ্লোরে পড়ে আছে যন্ত্রণাকাতর এক নগ্ন মানুষ। তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে ভারি লোহার শিকল দিয়ে। চেষ্টা করে সে নড়ার, কিন্তু শিকলটা আসলেই ভারি। শিকলটার এক অংশ ঘোড়ার লাগামের মত করে তার মুখের ভিতরে ঢোকানো যন্ত্রণার শব্দ করতে পারবে না ভিকটিম। এবার দেখতে পেল ল্যাঙডন, দ্বিতীয় একটা গডন এগিয়ে আসছে। তার চূড়ান্ত কাজ হাসিল করার জন্য।

    ল্যাঙডন জানে, প্রতিক্রিয়ার জন্য হাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় আছে।

    সাথে সাথে পিস্তলটাকে মাটিতে রেখে সে প্রস্তুত হল। খুলে ফেলল টুইড জ্যাকেট। সেখানেই নিরাপদ থাক গ্যালিলিওর ডায়াগ্রামা।

    ভ্যানের সরাসরি পিছন থেকে যাবে সে।

    এগিয়ে গেল। গেল দৌড়ে ! আশা একটাই, ঝর্ণার কলকল শব্দে ঢাকা পড়ে যাবে পায়ের আওয়াজ। হলও তাই, টের পেল না খুনি। এগিয়ে গিয়ে ঝর্ণার ভিতর লাফিয়ে পড়ল ল্যাঙডন।

    পানি বরফ-শিতল। কাঁপছে হাড়। কাপছে দাত পায়ের তলাটা পিচ্ছিল। সেইসাথে জমে আছে সৌভাগ্যের জন্য ফেলে দেয়া কয়েন। সেগুলোও জ্বালাচ্ছে। আশা করে সে, সৌভাগ্য আসছে তার জন্যও। চারপাশে পানির কণা। বুঝতে পারে না ল্যাঙডন, কাঁপছে কোন কারণে, শীতে, নাকি উত্তেজনায়। ভয়েও হতে পারে। কাঁপছে তার হাতের গানটা।

    নিজেকে লুকিয়ে ফেলল সে বিশাল ঘোড়ার পিছনে। তারপর উঁকি দিল সেখান থেকে। পনের ফুট দূরেও নেই ভ্যানটা। আবার ঢুকে গেছে হ্যাসাসিন। শিকলে বাঁধা কার্ডিনালকে বের করে আনছে টেনে। নামাবে সোজা ঝর্ণায়।

    হাত সামনে নিল ল্যাঙডন, তাক করল খুনির দিকে। যেন কোন ওয়াটার কাউবয় ড্র করল পিস্তল। ডােন্ট মুভ! বলল সে।

    চোখ তুলে তাকাল হ্যাসাসিন। এক মুহূর্তের জন্য সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। মনে করে কোন ভূতের মুখোমুখি হয়েছে। তারপর ক্রুর হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটে। হাত তোলে উপরের দিকে। এ্যান্ড সো ইট গোজ।

    ভ্যান থেকে বেরিয়ে এস।

    ভিজে চুপসে গেছ তুমি।

    সময়ের আগে চলে এসেছ।

    আমি পুরস্কারের কাছে ফিরে যেতে উদগ্রীব।

    সোজা করল ল্যাঙডন গানটাকে, একটা গুলি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করব না মি।

    তুমি এর মধ্যেই দ্বিধায় পড়ে গেছ।

    টের পেল ল্যাঙডন, তার আঙুল চেপে বসছে ট্রিগারের উপর। কার্ডিনাল একেবারে স্থির থেকে তাকিয়ে আছে। নড়াচড়া করছে না।

    বাঁধন খুলে দাও তার।

    তার কথা ভুলে যাও। তুমি মেয়েটার জন্য এসেছ। আর কিছু ভেব না।

    কথা না বাড়িয়ে মনে মনে স্বীকার করে নেয় ল্যাঙডন ব্যাপারটাকে। কোথায় সে?

    নিরাপদ কোন জায়গায়। আমার ফিরে যাবার অপেক্ষায় আছে।

    বেঁচে আছে সে!

    আশার আলো দেখতে দেখতে বলল ল্যাঙডন, চার্চ অব ইলুমিনেশনে?

    হাসল খুনি, তুমি কখনোই এটার লোকেশন জানতে পারবে না।

    তার মানে এখনো চার্চ অব ইলুমিনেশন টিকে আছে। কোথায়?

    জায়গাটা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে গুপ্ত। এমনকি আমার কাছে জায়গাটা সম্প্রতি উন্মোচিত হয়েছে। সেই বিশ্বাস ভাঙার আগে মরে যাব আমি।

    তোমাকে ছাড়াই খুঁজে বের করার মুরোদ আমার আছে।

    খুব আত্মবিশ্বাসী চিন্তা। ঝর্ণার দিকে তাকাল ল্যাঙড়ন, এদূর কী করে এলাম?

    বাকীগুলোও পেরিয়ে এসেছ। কিন্তু চূড়ান্তটা অনেক বেশি কঠিন।

    এগিয়ে গেল ল্যাঙডন। মাথার উপর হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে খুনিটা। গুলি করবে কি সে?

    না, হ্যাসাসিন জানে কোথায় আছে ভিট্টোরিয়া। জানে কোথায় এন্টিম্যাটার লুকানো। তাকে প্রয়োজন।

     

    একটু দয়া অনুভব করল খুনি আমেরিকানের প্রতি। লোকটা সাহসী। কিন্তু তার কোন ট্রেনিং নেই। এটাও প্রমাণিত হয়েছে। দক্ষতা ছাড়া সাহসের অপর নাম আত্মহত্যা। বেঁচে থাকার নিয়ম আছে কতগুলো। প্রাচীণ নিয়ম। আর সে তার সবগুলোই ভেঙেছে।

    তোমার হাতে সুযোগ ছিল। কিন্তু চমকে দেয়ার পরও সে সুযোগটা কাজে লাগাওনি।

    আমেরিকান এগিয়ে আসছে… যথা সম্ভব চেষ্টা করছে ব্যাকআপ দেয়ার… কিন্তু সে অদক্ষ।

    শিকারকে নখদন্তহীন না করে কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করোনা। কোণঠাসা শত্রু ভয়ানক শত্রু।

    আবারো কথা বলছে আমেরিকান। বাক্যবাণ ঝাড়ছে। করছে জিজ্ঞাসা।

    প্রায় জোরে হেসে ফেলল খুনি।

    এটা তোমাদের হলিউডের ছবি নয়… ফাইনাল শুট আউটের আগে গানপয়েন্টে লম্বা আলোচনা চলতে পারে না বাস্তব জীবনে। এই শেষ। এখনি।

    আস্তে আস্তে, ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে নিল খুনি তার হাতটাকে। ভ্যানের দিকে। তারপর উপরে পেয়ে গেল যা খুজছিল।

    সাথে সাথে শুরু করল শিকার।

     

    মুহূর্তের জন্য মনে হল, পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলো নিছক। নিমিষে চলে গেল সে ভিতরে। উড়ে গেল তার পা সহ বাকি শরীর। ঢুকে গেল ভিতরে। ঠেলে বের করে দিল কার্ডিনালকে। শিকল সই। তারপর চট করে চলে গেল আড়ালে। ফেলে দিল তাকে ঝর্ণার কিনারায়।

    এক মুহূর্তে বেরিয়ে এল হ্যাসাসিন। হাতে তার একটা রড। উড়ে চলল সামনের দিকে। ল্যাঙডনের চোখেমুখে পানির ঝাঁপ্টা লাগায় বিমূঢ় হয়ে গেল সে।

    বিনা দ্বিধায় ট্রিগার টেনে দিল ল্যাঙডন, বেরিয়ে গেল গুলি। লাগল হ্যাসাসিনের বাঁ পায়ের বুটের একটু দূরে গিয়ে। একই সাথে টের পেল সে, খুনির বুটজোড়া ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাকে, বুকের উপর ফ্লাইং কিক ছুঁড়েছে খুনি। পিছিয়ে যাচ্ছে ল্যাঙডন প্রতিনিয়ত।

    রক্ত আর পানির ধারায় পড়ে গেল দুজনেই।

    টের পেল ল্যাঙডন, হাত থেকে ছুটে গেছে গান। নিচু হল সে, ব্যাথা ভুলে গিয়ে হাত ডুবিয়ে দিল পানিতে। ধাতব কিছু ঠেকতেই সোজা তুলে আনল হাতটা। না, কয়েন। ফেলে দিল সাথে সাথে। আবার চেষ্টা করার আগে মেলল চোখজোড়া।

    পরের আঘাত কোথেকে আসবে জানেনা সে। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অস্ত্রটা তুলে আনার।

    তোমার এ্যাডভান্টেজ আছে, বলল সে নিজেকে, তুমি একজন সুইমার এবং ওয়াটারপোলো প্লেয়ার। পানি তোমার এলাকা।

    আরো একটা কিছু টের পেল হাতে। এবার কয়েন উঠে আসেনি।

    কিন্তু একই সাথে আরো একটা ব্যাপার ঘটছে। তলিয়ে যাচ্ছে কার্ডিনাল। ভারি লোহার শিকল টেনে নামাচ্ছে তাকে নিচে। তাকাল সে নিচে, সাথে সাথে মমতায় আর্দ্র হয়ে গেল মনটা। সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে কেমন যেন চোখ করে তাকিয়ে আছে কার্ডিনাল পানির তলা থেকে।

    সাথে সাথে চিন্তা ছেড়ে দিল সে। ডুব সাঁতার দিল পানির নিচে। টেনে তোলার চেষ্টা করল লোকটাকে। তার চোখে এখনো প্রাণ আছে। উঠে এল অবশেষে ভারি শরীরটার মাথা। কিন্তু তার পরই, মাত্র কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আবার তলিয়ে গেল দেহ। না, পিচ্ছিল ছিল শিকলটা। হাত ফস্কে গেছে। হারিয়ে গেল কার্ডিনাল পানির তলায়। উপরে ফেনিল তরঙ্গ।

    আবার ডুব দিল ল্যাঙডন। তলিয়ে গেল। পেল তাকে। দেখতে পেল শিকলে জড়ানো বুকটা… সেখানে দুর্বলতার একটা চিহ্ন আছে… মাংসের ভিতরে খোদিত হয়ে আছে একটা শব্দ।

    এক মুহূর্ত পরেই, দুটা বুট এগিয়ে এল। একটা থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত।

    পানির নিচের যুদ্ধে অনেক এগিয়ে আছে ল্যাঙডন। ওয়াটার পোললা খেলার যে কোন দক্ষ খেলোয়াড় এ কাজে একেবারে সিদ্ধহস্ত। সবচে নোংরা ম্যাচগুলোয় এমন ব্যাপার কখনো কখনো ঘটে। মাঝে মাঝে সে ডিফেন্সম্যানের কাছ থেকে লাথি খেয়েছে, পেয়েছে আঘাত, এমনকি কখনো কখনো কামড়েও ধরেছে কেউ কেউ।

    এখন, বার্নিনির কীর্তির বরফ শিতল পানিতে ডুবে গিয়ে ল্যাওডন টের পেল হার্ভার্ডের পুল থেকে সে অনেক দূরে অবস্থান করছে। সে খেলার জন্য লড়ছে না, লড়ছে প্রাণ বাঁচানোর জন্য। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত যুদ্ধ চলবে তাদের মধ্যে। কোন রিম্যাচ নেই। নেই কোন ফলাফল। প্রাণ বাঁচানো, ব্যাস। টের পেল সে, একজোড়া শক্তিমত্ত হাত এগিয়ে আসছে সামনে। তারপর সেটা যেভাবে আঁকড়ে ধরে মেঝের দিকে নিয়ে গেল তাকে তাতে কোন সন্দেহ নেই, লোকটা খুনই করতে চাচ্ছে।

    সাথে সাথে টর্পেডাের মত এগিয়ে গেল সে। উঠে যেতে চাইল উপরে। আবার টেনে নামাল খুনি ঘাড় ধরে। এখানে এমন এক সুবিধা আছে তার যা আর কোন ডিফেন্সম্যানের নেই। তার পা দুটা আটকে আছে শক্ত মাটির উপর। একটা চেষ্টা চালাল ল্যাঙডন, তার নিজের পা দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল খুনির গায়ে। কিন্তু খুনির এক হাত জড়িয়ে রেখেছে তার গলা।

    তারপর হঠাৎ করেই টের পেল ল্যাঙডন, সে উপরে উঠছে না। উপরে উঠে আসার চেষ্টা বাদ দিয়ে অন্য চিন্তা ধরল।

    যদি তুমি উত্তরে যেতে না পার, পূর্বে যাও।

    সমস্ত শরীর একত্র করে ডলফিনের মত সে হাত দুটা পিছনে নিয়ে গেল। তারপর এগিয়ে চলল পানির ভিতর দিয়েই, দ্রুতগতিতে। অবিশ্বাস্য শক্তিতে। বাটারফ্লাই স্ট্রোকে।

    কাজ হল তাতে। তলিয়ে যেতে পারল সে হ্যাসাসিনকে সঙ্গে নিয়ে। এগিয়ে এল একপাশে। ছুটে গেছে খুনির হাতের বাঁধন। তারপর ল্যাঙডন উঠে গেল উপরে। দম নিল মাত্র একটা। আবার এসে পড়েছে খুনি। হাত রেখেছে তার কাধে। চেষ্টা করল সে পা ব্যবহার করার। কিন্তু কাজ হল না। আবার তলিয়ে গেল হ্যাসাসিন তাকে নিচে নিয়ে।

    তলিয়ে যেতে যেতে ল্যাঙডন চেষ্টা করছে গানটা খুঁজে বের করার। কিন্তু কাজ হল না তাতে। নিচের দিকে বুদ্বুদ অনেক বেশি। দেখা যায় না তেমন কিছু। আরো নিচে নিয়ে যাচ্ছে খুনি। আরো অসহায় হয়ে পড়ছে ল্যাঙডন।

    নিচে তাকিয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠল ল্যাঙডনের মনটা। কালো নল। ভিতর থেকে দেখা যাচ্ছে ওলিভেট্টির গান। সেটার নল দেখা যাচ্ছে। বিনা দ্বিধায় হাত বাড়াল মুখের সামনে। একটানে তুলে আনতে গিয়ে বুঝতে পারল ভুল। না, গান নয়, এই ঝর্ণার অনেক বাবলমেকারের মত এটাও একটা প্লাস্টিকের নল।

     

    মাত্র কয়েক ফুট দূরে, কার্ডিনাল ব্যাজ্জিয়া টের পাচ্ছিল তার শরীরের খাচা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইছে প্রাণবায়ু। মনে মনে একটা কথাই ভাবছে কার্ডিনাল। জিসাস যে কষ্ট পেয়েছেন তার তুলনায় এটা কিছুই নয়।

    অনেক পাপের স্খলন ঘটানোর জন্যই তার মৃত্যু হয়েছিল…

    দূরে কোথাও যুদ্ধক্ষেত্রের দামামা বাজছে। কান দিল না বাজ্জিয়া। মনে পড়ে গেল খুনিটা আরো একজনকে শেষ করে দিতে চাচ্ছে। কোমল চোখ আর সাহায্য করার মন আছে এমন একজনকে।

    যন্ত্রণায় ছত্রখান হয়ে গিয়ে ব্যাঙ্ক্ষিয়া তাকাল উপরের দিকে। কালো আকাশের দিকে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হল, তারকা দেখতে পাচ্ছে সে কালো আকাশের বুকে।

    সময় চলে এসেছে।

    উপরের দিকে মুখ করে, হাঁ করল কার্ডিনাল। মুখে ঢুকে গেল অনেকটা পানি। বেরিয়ে এল ছোট ছোট স্বচ্ছ বুদ্বুদ। পানির কণাগুলো যেন ছুরির তীক্ষ্ণ্ণ ফলা। কয়েক সেকেন্ড সময়ের জন্য যন্ত্রণা হল।

    তারপর… শান্তি।

     

    পায়ের যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে হ্যাসাসিন মনোযোগ দিল ডুবতে থাকা আমেরিকানের উপর। চাপ দিল তার ঘাড়ে। ধরে রাখল পানির নিচে। জানে, এবার আর বেচারার বেঁচে যাবার কোন সুযোগ নেই… দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে এল ল্যাঙডনের শরীর।

    হঠাৎ করে কী যেন হয়ে গেল ল্যাঙডনের শরীরে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেল। কাপতে শুরু করল বন্যতা নিয়ে।

    ইয়েস! মনে মনে বলল খুনি, রিগর! প্রথমবার ফুসফুসে পানির ধাক্কা লাগলে শরীরটা এমন করে কাঁপতে থাকে। রিগর চলবে পাঁচ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে।

    ছ সেকেন্ড চলল ব্যাপারটা।

    তারপরও, ত্রিশ. সেকেন্ড ধরে ধরে রাখল সে নিথর শরীরটাকে। পালমোনারি টিস্যুর প্রান্তে প্রান্তে চলে যাক পানির বন্যা। এরপর শরীরটাকে ছেড়ে দিল সে। আস্তে করে ডুবে গেল সেটা। মিডিয়ার লোকজন ডবল সারপ্রাইজ পাবে।

    তাব্বান! চিৎকার করে উঠল খুনি উপরে ভেসে উঠে। না, পায়ের অবস্থা মোটেও ভাল নয়। বুড়ো আঙুলটা গেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পা। ব্যাথা উঠে আসছে উপরে। পা বেয়ে। ইবন আল-কুলব!

    কাপড় জড়িয়ে দিল ক্ষতস্থানটায়। রক্তপড়া বন্ধ হতে হবে।

    ব্যাথা আর সুখের চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে সে উঠে এল ভ্যানের কাছে। রোমের কাজ শেষ।

    কিন্তু এখনো একটা ব্যাপার বাকি রয়ে গেছে। টের পায় সে। এই শীতে এবং বেদনার মধ্যেও একটা উষ্ণতা টের পায়।

    আমি আমার উপহার অর্জন করেছি।

     

    যন্ত্রণাকাতর হয়ে জেগে উঠল ভিট্টোরিয়া, শহরের অন্যপ্রান্তে। উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল সে। সারা শরীরের পেশিগুলো যেন পাথর হয়ে গেছে। শক্ত। যন্ত্রণাময়। সারা গায়ে ব্যাথা। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। মাথা তুলতে পারছে না।

    কোথায় আছে বুঝে উঠতে পারছে না। তাকাল চারদিকে। একটা পাথুরে ঘরে বসে আছে। বড় এবং ভালভাবে সাজানো। প্রাচীণ। মশালের আলোয় আলোকিত। আদ্যিকালের কোন মিটিং হল। সামনেই সারি সারি সাজানো আছে বেঞ্চ।

    বাইরের দিকে একটা ব্যালকনির দরজা খোলা। উন্মত্ত হাওয়া আসছে সেটার ভিতর দিয়ে। বাঁধা অবস্থায়ই দেখতে পেল সে ভ্যাটিকান সিটিকে।

     

    ১০৪.

    রবার্ট ল্যাঙড়ন শুয়ে আছে ফাউন্টেনস অব ফোর রিভার্সের তলায়। ছড়ানো ছিটানো পয়সার ভিতরে। হাতের কাছেই সেই নলটা। আর আছে অকল্পনীয় অসাড়তা।

    বেঁচে আছে সে।

    পানিতে ডুবে মরার সময় মানুষের ঠিক কেমন বোধ হয় তা সে জানে না। কিন্তু টের পাচ্ছে, যন্ত্রণা ছড়িয়ে আছে সারা দেহে। ঠোঁটটা যেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তার একটাই ভরসা, ভুল বুঝেছে হ্যাসাসিন। ছেড়ে গেছে। আরো কিছুক্ষণ এখানে, পানির তলায় থাকতে হবে। উঠে আসার যো নেই, তবু, এখন উঠলে মরণ হবে নিশ্চিত।

    এগিয়ে আনল সে নলটাকে মুখের কাছে। আড়ষ্ট হাতে। তারপর সবচে দামি ব্যাপারটা খুঁজে পেল সেখানে। বাতাস। মুখে দিল সে। অপেক্ষা করল আরো আরো।

    ভেসে উঠল অবশেষে।

    না, ভ্যানটা চলে গেছে। আবার ডুব দিল সে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে। নামল নিচে। দেখতে পেল শিকলে মোড়া শরীরটাকে তুলে আনার চেষ্টা করল একটা হ্যাচকা টানে। পারল না। এখনো কার্ডিনালের অজ্ঞান হয়ে থাকার সম্ভাবনা আছে।

    না, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। চোখ উপরের দিকে উল্টে আছে। নেই নাড়ির স্পন্দন, নেই শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার প্রক্রিয়া। যেখানে পানি একটু অগভীর সেদিকে টেনে নিল সে উলঙ্গ শরীরটাকে। খুব বেশি এগিয়ে আনা গেল না।

    এরপরই কাজে নেমে পড়ল সে। আগেই সরিয়ে নিয়েছে শিকল। চাপ দিল নগ্ন বুকে, চেষ্টা করল ফুসফুস থেকে সবটুকু পানি বের করে দেয়ার। এরপর শুরু করল সি পি আর। হিসাব করে করে। তিনটা মিনিট ধরে চাপ দিয়ে গেল, দিয়ে গেল বাতাস। আরো পাঁচটা মিনিট ধরে যুঝল সে। তারপর বুঝল, সুযোগ আর নেই।

    এল প্রেফারিতো! যে লোকটা পোপ হতে পারত, শুয়ে আছে তার সামনে, অসহায়। অনড়।

    একজন সৎ মানুষ। মানুষের জন্য যে সারাটা জীবন ধৈর্য ধরেছে, সারাটা জীবন অবলম্বন করেছে অসম্ভব ব্রত, সে আজ এখানে একেবারে অসহায়ভাবে পড়ে আছে। যেন প্রার্থনা করছে মানুষের বোকামির জন্য।

    আদর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিল ল্যাঙডন লোকটার চেহারায়। কেমন এক পবিত্রতা বিরাজ করছে সেখানে। তারপর বুজিয়ে দিল খুলে থাকা চোখদুটা। কাজটা করতে গিয়ে টের পেল সে, বুকের ভিতর থেকে দলা পাকানো কান্না উঠে আসছে।

    বাঁধা দিল না সে। সব সময় আবেগকে দমিয়ে রাখতে নেই। এবং অনেক বছর পর, রবার্ট ল্যাঙডন কেন যেন বুক উজাড় করে কাদল।

     

    ১০৫.

    এক অবাধ্য আবেগকে সরিয়ে দিয়ে আবার পানিতে ফিরে গেল সে। ডুবে গেল। ভিতরের কান্নাকে ঠেলে আরো একটা আবেগ উঠে আসছে। শক্ত হয়ে যাচ্ছে শরীরের সমস্ত পেশী। থরথর করে কাঁপছে জিঘাংসায়।

    ইলুমিনেটি লেয়ার খুঁজে বের কর। উদ্ধার করে আন ভিট্টোরিয়াকে।

    নেমে গিয়ে খুব সাবধানে চারধার দেখতে শুরু করল সে। জানে, এখানকার স্থাপত্যের কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে ইলুমিনেটি লেয়ারের সূত্র। কোন না কোন মূর্তি নির্দেশ করছে ইলুমিনেটি লেয়ারকে। যত এগিয়ে গেল সে সার্চ করতে করতে, তত শক্ত হয়ে গেল ভিতরটা।

     

    লেট এ্যাঞ্জেলস গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট। এ এক পাগান স্ট্রাকচার। এখানে ফেরেশতার চিহ্নটাও নেই!

    হায়ারোগ্লিফিক লেখার ভিতর দিয়ে সে খোঁজার চেষ্টা করল সূত্র। মিশরিয় প্রতীকের ভিতর কিছু লুকিয়ে নেইতো! না, বার্নিনির আমলে হায়ারোগ্লিফিকের কোন মানে ছিল না। তখনো অর্থ আবিস্কৃত হয়নি। এই সবের ভিতরে কোথাও কি বার্নিনি কোন সূত্র রেখে যেতে পারে না?

    কোন এ্যাঞ্জেল নেই কোথাও।

    আরো দুবার চক্কর দিল সে। তাকাল চারধারে না। কোন সূত্র নেই। হাতের ঘড়িটাকে চেক করে নিল। সময় গুঁড়ি মেরে এগুচ্ছে নাকি উড়ে যাচ্ছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। ভিট্টোরিয়া…

    উপরের দিকে তাকাল সে। ওবেলিস্কের দিকে। এবং থমকে গেল। মনে করেছিল এটা কোন জীবিত প্রাণী। কিন্তু আসলে তা নয়। ওবেলিস্কের উপরদিকে যে পায়রাটা উড়ছিল সেটা আসলে উড়ন্ত কবুতরের মূর্তি ছাড়া আর কিছু নয়।

    একটা পায়রা।

    না, এটা উড়ে যায়নি। উড়ে যায়নি যুদ্ধ চলার সময়। উদাস মনে পাখা বিস্তার করে তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। তারার দিকে। পশ্চিমে ফিরানো তার মাথা।

    হাত মুঠো করে সে তুলে আনল এতগুলো পয়সা। ছুড়ে দিল কয়েনগুলো উপরের দিকে। প্রথমবার লাগল না সেগুলো। এরপর আবার ছুড়ে দেয়ার পর একটা গিয়ে লাগল সেটার গায়ে।

    ধাতুর সাথে ধাতুর সংঘর্ষের শব্দ।

    এটা ব্রোঞ্জের তৈরি।

    তুমি একটা এ্যাঞ্জেলের খোঁজ করছ। কোন পায়রা পাবার ইচ্ছা ছিল না তোমার।  ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠল।

    কিন্তু বড় দেরি হয়ে গেছে। পুরোটা বুঝে যাচ্ছে ল্যাঙডন এক পলকে। বুঝতে পারছে, এটা মোটেও কবুতর নয়।

    ঘুঘু।

    তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল সে সামনের দিকে। উঠে এল ওবেলিস্কের গোড়ায়। তাকাল উপরে। আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পাখিটার মুখ, মাথা।

    কোন সন্দেহ নেই, এ এক ঘুঘু।

    পাখিটার গা রোমের দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে এসে এসে কালো হয়ে গেছে। আজ সে প্যান্থিয়নে একজোড়া ঘুঘু দেখেছিল সে। কিন্তু তাতে কিছুই এসে যায় না। একটা, এখানে আছে মাত্র একটা।

    একলা ঘুঘু পাগান ঐতিহ্যে শান্তিদূতের পক্ষে কাজ করে। শান্তির ফেরেশতা।

    বার্নিনি শেষ ধাপে এসে ভাল চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছেন। এখানেও এ্যাঞ্জেল পথ দেখাবে, কিন্তু পাগান স্থাপত্যের এ্যাঞ্জেলও হবে পাগান। কোন সন্দেহ নেই।

    পাখিটা তাকিয়ে আছে পশ্চিমে।

    উঠে এল সে আরো উপরে। তারপর দেখার চেষ্টা করল পশ্চিমে। না। সামনে দৃষ্টির পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ ছোয়া অট্টালিকা।

    সেন্ট গ্রেগরি অব নিসা একটা কথা বলেছিলেন, আত্মা যখন আলোকিত হয়ে ওঠে… সাথে সাথে তা আকার নেয়। আকার নেয় সুন্দর কোন ঘুঘুর।

    আরো সামনে এসে সে ভিত্তিভূমিতে উঠল। আরো একটু উঁচু হল দৃষ্টি। কিন্তু এরচে উপরে ওঠা সম্ভব নয়। কারণ নিরেট ওবেলিস্কে ওঠা যাবে না। তার দৃষ্টি থেমে গেছে।

    বামে সেন্ট পিটার্সের আলোকবর্তিকা, ডানে সান্তা মারিয়া ডেলা ভিট্টোরিয়া, তার সামনে পিয়াজ্জা ডেল প্রোপোললা, নিচে চতুর্থ এবং শেষ মার্কার। ওবেলিস্কে গড়া বিশাল এক ক্রস। রোম জুড়ে বানানো।

    আরো একবার তাকাল সে উপরে, ঘুঘুর দিকে তাকাল নিচে।

    তারপর হঠাৎ করেই ধরে ফেলল ব্যাপারটাকে।

    একেবারে নিশ্চিত। একেবারে স্পষ্ট। একেবারে সরল।

    তাকিয়ে সে বুঝে উঠতে পারে না কী করে ইলুমিনেটি লেয়ার এত শতাব্দি ধরে গোপন আছে। নদীর অপর প্রান্তে, এক বিশাল পাথরের দিকে তাকিয়ে সে শিউরে ওঠে। ভ্যাটিকানের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভবনটা দাঁড়িয়ে আছে টাইবারের অপর প্রান্তে। ভবনের গাণিতিকতা একেবারে নিখুঁত। একটা গোলাকার দেয়াল চারধারে, দেয়ালের বাইরে, একটা পার্ক আছে। পেন্টাগ্রামের মত দেখতে পার্ক।

    সামনের বিশাল দুৰ্গটা ফ্লাডলাইটের আলোয় ভেসে যাচ্ছে। এর মাথায় বসানো এক ব্রোঞ্জের এ্যাঞ্জেল।

    লেট এ্যাঞ্জেল…

    দুর্গের একেবারে নিচের দিকে নির্দেশ করছে এ্যাঞ্জেল তার হাতের তলোয়ারটা দিয়ে।

    আরো আছে, এখানেই, সামনে বার্নিনির একেবারে নিজের হাতে গড়া সেই বিখ্যাত শিল্পকর্ম। বারো ফেরেশতা। ব্রিজ অব এ্যাঞ্জেলস।

    বার্নিনি কী নিখুঁতভাবেই না করেছিল কাজটা! ক্রসের মূল দন্ডটা চলে গেছে দুর্গের সেতুর উপর দিয়ে। একেবারে নিখুঁত দুভাগে বিভক্ত করে রেখাটা।

    উঠে এল ল্যাঙডন সাথে সাথে। হাতে নিল টুইড জ্যাকেটটাকে, ভিজা শরীর থেকে দূরে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল চুরি করা সেডানের উপরে। এ্যাক্সিলারেটর দাবিয়ে চলে এল কালিগোলা অন্ধকারের ভিতরে।

     

    ১০৬.

    রাত এগারোটা সাত বাজে। লুছোটোভেরে টোর ডি নোনা ধরে রাতের রোমকে পেরিয়ে যাচ্ছিল সে। তার সামনে পাহাড়ের মত উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই একলা অট্টালিকা।

    ক্যাসেল সান্ট এ্যাঞ্জেলো। ক্যাসেল অব দ্য এ্যাঞ্জেল।

    ব্রিজের কাছে এসে সে থমকে গেল। সেখানে ব্যারিকেড বসানো। কোনক্রমে চেপে ধরল ব্রেক।

    ভুলেই গিয়েছিল ব্রিজ অব এ্যাঞ্জেলসকে রক্ষা করার জন্য চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

    থমকে গেল সে। শীতে এখনো কাঁপছে থরথর করে। পরে নিল টুইড স্যুট জ্যাকেটটা। ফোলিও ঠিক থাকবে। ভিজে যাবে না। তাকাল সে সামনে। কী করা যায়! কীভাবে বেরিয়ে এসেছিল লোকটা তাহলে?

    তার দুপাশেই বার্নিনির গড়া এ্যাঞ্জেলদের মিছিল।

    লেট এ্যাঞ্জেলস গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট…

    সেটা যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করেনি সে। তার কাছে সামনের ক্যাসলটা এমনকি সেন্ট পিটার্সের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিল। এগিয়ে গেল। নেমে ছুটল সামনের দিকে। চক্কর দিল ভবনটাকে।

    না। কেউ নেই, যদ্দূর মনে হয়।

    ল্যাঙডন জানত এ জায়গাটা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে ভ্যাটিকান ব্যবহার করে আসছে একটা টম্ব হিসাবে, একটা দুর্গ হিসাবে, পোপের লুকানোর জায়গা হিসাবে, চার্চের শত্রুদের আটকে রাখার কারাগার হিসাবে–তবু, এত শতাব্দি ধরে তারা টেরও পায়নি যে এটাই চার্চ অব ইলুমিনেশন।

    এখানে অনেক গোলকধাঁধা আছে। আছে অনেক গোপন কুঠুরী, আছে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়ার মত এলাকা। ভালমত দেখল সে চারপাশটাকে। কোন সন্দেহ নেই, এটাও বার্নিনির কীর্তি।

    দুর্গের দুই পাল্লার দরজার সামনে এসে ভাল করেই চাপ দিল ল্যাঙডন দরজাটায়। অবাক হবার কিছু নেই। অনড় রইল প্রবেশদ্বার।

    একটু পিছিয়ে গেল সে। তাকাল উপরের দিকে। এ কেল্লা বর্বরদের, হিথেনদের, মুরদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। সে এক চেষ্টাতেই এখানে ঢুকে পড়বে সে আশা করা বোকামি।

    ভিট্টোরিয়া! মনে মনে গুমরে মরল সে, তুমি কি এখানে?

    দেয়ালের চারপাশে ঘুরে বেড়াল সে। আর কোন প্রবেশপথ আছেই আছে।

    চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে আরো একটা দরজা পেল সে। এটাও বন্ধ। একেবারে সিল করে দেয়া। আবার ঘোরা শুরু করে ল্যাঙডন।

    উপরে তাকাল এবার। আলো কি আছে আর কোথাও নেই। কোথাও নেই। শুধু একটা ফ্লাডলাইট আলো ছড়াচ্ছে বাইরের দিকে। পুরো দুর্গের সবগুলো জানালা কালো। মিশকালো। এখানে কারো থাকার কথা নয়।

    আশা ছাড়ল না সে। চোখ তুলে তাকাল আরো আরো উপরে। একেবারে শেষ প্রান্তে, শত ফুট উপরে, এ্যাঞ্জেলের ঠিক নিচে, একটা ব্যালকনি দেখা যাচ্ছে। আলোকিত।

    আলো আঁধারির খেলা দেখলে বোঝা যায় সেখানে মশাল জ্বালানো হয়েছে। একটা ছায়া কি দেখা যাচ্ছে সেখানে? ঠিক ঠিক…

    ভিট্টোরিয়া! চিৎকার করল ল্যাঙডন গলা ফাটিয়ে।

    কিন্তু পিছনের প্রমত্তা টাইবারের শব্দে হারিয়ে গেল তার আওয়াজ। ভেবে মরল সে কোথায় মরতে গেছে সুইস গার্ড! তারা কি ল্যাঙডনের সম্প্রচার শুনতে পায়নি?

    দৌড়ে গেল সে। এগিয়ে গেল নদীর ওপাড়ে পার্ক করা একটা মিডিয়া ট্রাকের দিকে। কানে হেডফোন জুড়ে দিয়ে একজন বসে আছে। এগিয়ে গেল তার দিকে।

    কোন দুঃখে, বন্ধু? লোকটার কণ্ঠ অস্ট্রেলিয়। আপনার ফোনটা দরকার। বন্ধুসুলভ রাখার চেষ্টা করল কণ্ঠটাকে ল্যাঙডন।

    শ্রাগ করল লোকটা। ডায়াল টোন নেই। সারাক্ষণ চেষ্টা করছি। সাকিট জ্যাম হয়ে আছে।

    চিৎকার করল সে লোকটার দিকে। এখানে… ঐদিকে কোন গাড়ি কি যেতে দেখেছেন আপনি?।

    আসলে, হ্যাঁ। সারাদিন একটা কালো ভ্যান আসা যাওয়া করছিল।

    পেটে যেন একটা ইটের আঘাত লাগল ল্যাঙডনের।

    লাকি বাস্টার্ড! বলল অসি, ব্যাটা সেখান থেকে ঠিক ঠিক ভাল ভিউ পাবে ভ্যাটিকানের। আমি শালা আশপাশে ঘেষতে না পেরে এখান থেকে সম্প্রচার করছি।

    ল্যাঙডন শুনছিল না। আর কোন উপায় আছে কিনা সেটাই তার চিন্তা।

    কী বলেন আপনি? ধরে বসল অসি, এই শেষ মুহূর্তের খেল কি সত্যি?

    কী?

    এখনো শোনেননি? সুইস গার্ভের ক্যাপ্টেন একটা ফোন পেয়েছে যে বলতে চায় যে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য তার কাছে আছে। সে এখন উড়াল দিয়েছে। আজকের দিনটা যদি ব্যাটা এসে ঠিক করে দিতে পারে…

    একজন ভাল সামারিটান উড়ে আসছে সাহায্য করতে? সে কে? লোকটা কি কোন কারণে জানে কোথায় বসানো আছে ক্যানিস্টারটা? তাহলে তার আসার দরকার কী, স্বাভাবিক ভাবেই বলে দিলে চলত। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই ল্যাঙডনের।

    হেই! বলল অবশেষে লোকটা, আপনি কি সে জন নন যাকে টিভিতে দেখেছিলাম?

    কোন জবাব দিল না ল্যাঙডন।

    উপরের দিকে তার দৃষ্টি চলে গেছে। ভ্যানের ছাদে একটা কলাপসিবল ডিস বসানো। আবার তাকায় সে দুর্গের দিকে।

    উপরে যাবার কোন উপায় নেই। কী করা যায়। দেয়াল ডিঙানোই অসম্ভব…

    স্যাটেলাইট আর্মের দিকে নির্দেশ করে সে লোকটাকে জিজ্ঞেস করল, কতদূর যায় এটা?

    হাহ? লোকটা যেন অনেকটা বিভ্রান্ত হয়ে গেল, পনের মিটার। কেন?

    ট্রাক মুভ করান। দেয়ালের পাশে পার্ক করনি। আমার সাহায্য দরকার।

    কী যা তা বলছেন?

    ব্যাখ্যা করল ল্যাঙডন।

    ছানাবড়া হয়ে গেল লোকটার চোখ। কী? এটা কোন মামুলী মই নয়। এটা দু লাখ ডলার দামের টেলিস্কোপিক এক্সটেনশন।

    টাকার কথা বলছেন? আমি আপনাকে এত দিতে পারব যা নিয়ে আয়েশ করে কাটাতে পারবেন কয়েক বছর।

    দুলাখ ডলারের চেয়েও বেশি দাম তথ্য?

    তার সহায়তার বদলে কী হতে পারে তা ব্যাখ্য করল ল্যাঙযডন লোকটার কাছে।

    নব্বই সেকেন্ড পরে, ল্যাঙডন উঠে পড়ে এক্সটেনশন ধরে উপরে। তারপর চলে আসে কেল্লার দেয়ালে।

    এবার তোমার কথা রাখ। বলল সাংবাদিক, কোথায় সে?

    কথাটা জানানোর গরজ ছিল না। কিন্তু কথা দিয়ে না রাখাটাও ঠিক নয়। হ্যাসাসিনও ডাকতে পারে মিডিয়াকে। পিয়াজ্জা নাড়োনা। সে ডুবে আছে ঝর্ণার নিচে।

    সাথে সাথে নিচু করল লোকটা তার স্যাটেলাইট, তারপর ভাগ্যের খোঁজে হন্যে হয়ে বেরিয়ে পড়ল।

     

    নগরীর একেবারে উপরের দিকে, একটা পাথুরে চেম্বারে, হ্যাসাসিন তার পায়ের বুটগুলো খুলে ফেলল। তারপর আবার ব্যান্ডেজ করল ক্ষতস্থান।

    ব্যথা আছে, কিন্তু ততটা নয় যে সে সব উপভোগ ছেড়ে ছুঁড়ে দিবে।

    উপহারের দিতে ফিরল সে।

    একটা রুডিমেন্টারি ডিভানে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মেয়েটা। হাত পিছমোড়া করে ধাঁধা। মুখও। তার দিকে এগিয়ে গেল হ্যাসাসিন। জেগে উঠেছে মেয়েটা। ব্যাপারটা তাকে স্বস্তি দিল। অবাক হলেও সত্যি কথা, চোখে ভয় নেই, আছে আগুন।

    ভয় আসবে।

     

    ১০৭.

    রবার্ট ল্যাঙডন দাঁড়িয়ে আছে বাইরের দেয়ালে। ফ্লাডলাইটের আলোয় ভালই লাগল  তার। নিচের দৃশ্য আদ্যিকালের যুদ্ধ জাদুঘরের মত। সেখানে আছে কামান, মার্বেলের গোলা আরো নানাবিধ অস্ত্রপাতি।

    ক্যাসেলের একাংশ ট্যুরিস্টদের জন্য খোলা থাকে। দিনের বেলায়। বাকি অংশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। আসল আকৃতি অবিকৃত রাখার জন্য।

    উপরের ব্রোঞ্জের এ্যাঞ্জেল পর্যন্ত ভবনটা একশ সাত ফুট লম্বা। আবার চিৎকার করবে কিনা ভেবে নিয়ে তাকাল সে নিচে। না। তারচে বরং ভিতরটায় যাবার একটা পথ বের করতে পারলে ভাল হয়।

    ঘড়িটা চেক করে নিল সে।

    এগারোটা বারো।

    নেমে এল নিচে। দৌড়ে গেল এধার থেকে সেধারে। কী করে লোকটা ভিতরে ঢুকল? কোন না কোন পথ বাকি আছেই। আবার ছায়ায় ছায়ায় প্রবেশপথের দিকে এগিয়ে গেল।

    পুরো ভবনটার চারধারে ঘোরা শেষ করার একটু আগে সে একটা ড্রাইভওয়ে দেখতে পেল সামনে। সেখানে শেষপ্রান্তে আছে একটা সুড়ঙ্গ।

    এল ট্রাফোরো! ল্যাঙডন এই অট্টালিকার ট্রাফোরোর ব্যাপারে পড়েছে। এখানে একটা দানবীয় পথ আছে। পথটাকে প্রায় পুরো ক্যাসলের ভিতরে দেখা যাবে। আগেরদিনের অশ্বারোহীরা যেন দ্রুত বেরুতে পারে সেজন্য বানানো হয় এটাকে।

    এ পথ ধরেই হ্যাসাসিন ভিতরদিকে টুকেছে! টের পায় সে।

    টানেলের পথ খোলা। উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে যায় সে। তারপর কপূরের মত উবে যায় তার আশা।

    সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ ঠিকই খোলা, কিন্তু সেটা নেমে গেছে নিচের দিকে।

    এক অন্ধকার টানেলের মুখে এগিয়ে যেতে যেতে সে ঠিক করল উপরদিকে আবার তাকাবে। তাকায় ল্যাঙডন। এখনো সেখানে নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছে।

    সিদ্ধান্ত নাও!

    মরিয়া হয়ে ভাবে সে।

     

    অনেক উপরে, খুনি তাকিয়ে আছে তার শিকারের দিকে। তার হাতের উপর দিয়ে বুলিয়ে নিল একটা হাত। মেয়েটার চামড়া যেন মাখনের মত নরম! তার সারা গায়ে একটা ভ্রমণ শেষ করার কথা চিন্তা করতেই উত্তেজনায় চকচক করে ওঠে হ্যাসাসিনের চোখ। কীভাবে কীভাবে সে মেয়েটাকে আতঙ্কিত করতে পারে? কত পথে?

    হ্যাসাসিন জানে, এই মেয়েটাকে তার পাবার কথা। জ্যানাসের সব কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। এবার উপভোগের পালা। ভাবে সে। প্রথমে যা করার করবে। শেষ হলে ডিভান থেকে হেঁচড়ে নামাবে তাকে। বসাবে হাটু গেড়ে। আবার মেয়েটা তার সেবা করবে। তারপর নিজের আনন্দের চরম মুহূর্তটা কেটে গেলে সোজা গলায় হাত চালাবে সে। ভেঙে দিবে সেটাকে।

    ঘায়ত আসাআদা, বলে তারা, চরম মুহূর্ত।

    তারপর সে আয়েশ করে দাঁড়াবে বারান্দায়। তাকারে বাইরে, সৌকর্যময় ভ্যাটিকানের দিকে তাকাবে। উপভোগ করবে এত মানুষের এত বছরের স্বপ্নটাকে সাকার হতে দেখে।

     

    আরো নেমে যাচ্ছে ল্যাঙডন। আরো কালো হয়ে আসছে টানেল।

    নিচে নামতে নামতে একবার টের পেল সে, সুড়ঙ্গটা আর নিচে নামছে না। এবার চলছে সোজা। বুঝতে পারে, পদধ্বণি শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। হাজির হল একটা কালো, বিশাল চেম্বারে। সামনে আলোর একটা ক্ষীণ রেখা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট…

    একটা যান। সামনে এগিয়ে গেল সে। দেখল, সত্যি সত্যি সেটা ভ্যান। স্লাইড ডোর খুলল। উপরের ছোট বাতি জ্বলে উঠল সাথে সাথে।

    দেখল, এটাই সেই ভ্যান। ঢুকল ভিতরে। কোন অস্ত্র নেই কাজে লাগানোর মত। একটা জিনিস আছে শুধু, একটা সেলফোন। ভিট্টোরিয়ার সেলফোন। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগানোর কোন উপায় নেই।

    দেরি হয়ে যায়নি তো! শিউরে ওঠে সে।

    হেডলাইট জ্বালাল। আলোকিত হয়ে উঠল চেম্বারটা। এ ঘরেও কিছু নেই। নেই কোন দরজা। এখানে হয়ত ঘোড়া অথবা গোলাবারুদ থাকত।

    পথ খুঁজে পাইনি আমি! মনে মনে বিষিয়ে ওঠে তার ভিতরটা।

    এখানে আছেতো মেয়েটা?

    সে চার্চ অব ইলুমিনেশনে অপেক্ষা করছে… অপেক্ষা করছে আমার ফিরে আসার জন্য। বলেছিল হ্যাসাসিন।

    কাঁপছে তার গা। ঘৃণা আর আবেগে।

    মেঝেতে রক্তের দাগ প্রথমবার দেখে ল্যাঙডন মনে করেছিল এটা ভিট্টোরিয়ার। তারপর দেখতে পায় রক্তাক্ত পদচিহ্ন। না, পা গুলো অনেকটা বড়। ভিট্টোরিয়ার নয়। শুধু বাম পা। হ্যাসাসিন!

    পায়ের দাগটা সোজা চলে গেছে ঘরের কোণায়। চলে গেছে, আর ফিরে আসেনি। যেন হারিয়ে গেছে লোকটা দেয়ালের ওপাড়ে।

    কাছে গিয়ে বিস্ফারিত নয়নে সে দেখল, একটা পেন্টাগ্রাম পাতলা পাথর পড়ে আছে। এগিয়ে যায় ল্যাঙডন, সরায় পাথুরে ঢাকনাটাকে। ভিতরে একটা প্যাসেজ আছে। আর আছে আলো। সামনে একটা কাঠের বাঁধা ছিল, সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেটাকে।

    এবার দৌড়াতে শুরু করল ল্যাঙডন। প্যাসেজটা উন্মুক্ত হয়েছে আরো বড় এক ঘরে। সেখানে টিমটিম করে জ্বলছে একটা মশাল! এখানে কোন বিদ্যুৎ নেই–এ এমন এক জায়গা যেখানে টুরিস্ট আসবে না কখনো। দিনের আলোয় জায়গাটাকে এত রহস্যময় দেখা যেত না। কিন্তু এখন রাত।

    লা প্রিজিওনে।

    ভিতরে এক ডজন ছোট ছোট জেল সেল। বেশিরভাগের লোহার বার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একটা বড় সেল এখনো অক্ষত। আর মেঝেতে এমন কিছু দেখতে পায় ল্যাঙডন যাতে চমকে ওঠে সে হঠাৎ করে। কালো রোব আর লাল শ্যাস পড়ে আছে। মেঝেতে। এখানেই কার্ডিনালদের আটকে রেখেছিল সে!

    এগিয়ে গেল সে সামনে, একটা প্যাসেজ দেখে। দৌড়ে গেল, সময় হাতে কতটুকু আছে কে জানে! গিয়েই থমকে গেল, এখানে আসেনি রক্তের ধারা। প্যাসেজের সামনে লেখাঃ

    এল প্যাসেট্টো।

    স্তব্ধ হয়ে গেল সে। এ টানেলের কথা কম শোনেনি। কোথায় আছে তা জানা ছিল। এল পেসেট্টো–দ্য লিটল প্যাসেজ তৈরি হয়েছিল ভ্যাটিকান আর সেন্ট এ্যাঞ্জেলোর মধ্যে। ভ্যাটিকানে হানা পড়ার সময় অনেক পোপ এ পথে নিরাপদে বেরিয়ে এসেছে… এমনকি পূণ্যবান পোপদের অনেকেই এ পথে মিস্ট্রেসদের সাথে দেখা করার জন্য অথবা বন্দিদের অত্যাচার তদারকির কাজে এসেছে এখানে। বর্তমান কালে এই প্যাসেজের দুধারের দরজাই তালা মেরে দেয়া হয়েছে এবং চাবি রেখে দেয়া হয়েছে ভ্যাটিকানের কোন এক নিরাপদ ভল্টে। এবার চট করে সে বুঝে ফেলে কী করে ইলুমিনেটি ভ্যাটিকানের ভিতর থেকে বাইরে আর বাইরে থেকে ভিতরে যাতায়ত করত। ভেবে পায় না কে ভিতর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। দিয়েছিল চাবিটা।

    ওলিভেট্টি? সুইস গার্ডের অন্য কেউ?

    যেই করে থাক, এখন আর তাতে কিছু এসে যায় না।

    প্যাসেজের বিপরীতে চলে গেছে রক্তের দাগ। অনুসরণ করল সে। একটা শিকল ঝোলানো দরজার পরে, প্যাচানো আদ্যিকালের সিঁড়ি ধরে উঠে এল। এখানেও একটা পেন্টাগ্রাম আছে।

    বার্নিনি নিজের গরজে বানিয়েছিল এটা?

    উঠে এল সে। দেখতে পেল, এখানেও রক্তের দাগ উঠে গেছে।

    উপরে উঠে যাবার আগে ল্যাঙডন ঠিক ঠিক বুঝতে পারল তার একটা অস্ত্র দরকার।

    কোন না কোন অস্ত্র প্রয়োজন, অবশ্যই প্রয়োজন। ইতিউতি তাকাতে চোখে পড়ল একটা লোহার রড। শেষপ্রান্ত খুব ধারালো। আশা করল সে, চমক আর সেই সাথে দুর্বলতার কারণে পিছিয়ে থাকবে খুনি।

    উপরে উঠে চলল সে। আলো হারিয়ে গেল আস্তে আস্তে। শব্দের আশায় থামে ল্যাঙডন। কোন আওয়াজ নেই। মনে হয় তার, গ্যালিলিও আর বিজ্ঞানের অন্যান্য মহারথীর বিদেহী আত্মা তাকে অনুসরণ করছে। অনুসরণ করছে ধার্মিকদের ভূতও।

    কী অবাক ব্যাপার, ভেবে বিস্ময় কাটে না তার। সারা রোমে, প্রতিথযশা বিজ্ঞানীদের বাড়িতে বাড়িতে যখন তল্লাশি চালাচ্ছিল ভ্যাটিকান তখন ভ্যাটিকানেরই। নাকের ডগায়, তার সবচে সুরক্ষিত এক ভবনে ঘাপটি মেরে ছিল সেসব বিজ্ঞানী। বার্নিনি আর কত চাতুরি করেছে আল্লা মালুম।

    চার্চ অব ইলুমিনেশন আসছে…

    এগিয়ে যায় সে আরো আরো। অন্ধকারের বুক চিরে। চারপাশের শ্যাফটটা আস্তে আস্তে চিকণ হয়ে আসে। দেখা যায় ক্ষীণ আলো।

    জানে না ল্যাওড়ন, দুর্গের কোথায় এখন সে আছে, এটুকুই শুধু জানে, অনেকদূর চলে এসেছে। চূড়ার কাছে।

    মাথার উপর একটা এ্যাঞ্জেল আছে। তার উদ্দেশ্যে সে বলল, আমার উপর নজর রাখো, এ্যাঞ্জেল।

    তারপর চলে গেল ঘরের দোরগোড়ায়। হাতে লোহার অস্ত্রটাকে শক্ত করে ধরে। প্রথমে জেগে উঠে ভিট্টোরিয়া মনে করেছিল তার হাতের বাঁধনটা আলগা করা যাবে। আস্তে আস্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এখল শক্তিমত্ত লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। খোলা বুকে। সেখানে শক্তির চিহ্ন সুস্পষ্ট। খুব ধীরে হ্যাসাসিন তার ভারি বেল্টটা খুলে ফেলে। ফেলে দেয় সেটাকে মেঝেতে।

    আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলল ভিট্টোরিয়া। আবার যখন খুলল সে, আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়ল খুনির হাতের ছুরি দেখে সেটা ধরে রাখা হয়েছে মুখের সামনে।

    স্টিলের অস্ত্রটা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল মেয়েটা।

    স্টিলের পাত ঠেকাল হ্যাসাসিন তার গালে, আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে তার ভোলা পেটে, তারপর সাবধানে শর্টসের উপর দিয়ে। অনেকক্ষণ ধরে।

    এই ব্লেডটাই তোমার বাবার চোখ উপড়ে নিয়েছে।

    সেই মুহূর্তে ভিট্টোরিয়া বুঝতে পারল যে সে খুন করার যোগ্যতা রাখে।

    খাকি শর্টসের উপর দিয়ে সে উপরনিচ করছিল ছুরিটাকে এমন সময় কেউ একজনের উপস্থিতি টের পাওয়া গেল ঘরে।

    সরে যাও তার কাছ থেকে! চিৎকার করে উঠল একটা কণ্ঠ দরজা থেকে।

    ভিট্টোরিয়া দেখতে পেল না কে বলছে কথা কিন্তু বুঝতে পারল মুহূর্তে।

    রবার্ট! সে এখনো বেঁচে আছে!

    চমকে উঠল খুনি, মিস্টার ল্যাঙডন, আপনার নিশ্চই পথ দেখানোর একজন এ্যাঞ্জেল আছে।

     

    ১০৮.

    এক মুহূর্তে ল্যাঙডন বুঝে নিল যে সে একটা গোপনীয় এলাকায় ঢুকে পড়েছে। নিরাপদ এবং গোপনীয়। চারপাশে হাজার সিম্বলজির খেলা। পেন্টাগ্রামের টাইল, গ্রহ-উপগ্রহের ফ্রেস্কো, ঘুঘু, পিরামিড।

    দ্য চার্চ অব ইলুমিনেশন। সরল এবং খাঁটি। চলে এসেছে সে জায়গামত।

    বরাবর সামনে একটা দরজা। সেখানে ব্যালকনি। ভিট্টোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নগ্ন বুকের খুনি। এক মুহূর্তের জন্য তাদের চোখাচোখি হল।

    তাহলে, আমরা আবার দেখা করছি! হাসল হ্যাসাসিন। আর এবার তুমি আমাকে মারার জন্য এটা নিয়ে এসেছ?

    ওর বাঁধন খুলে দাও।

    ভিট্টোরিয়ার গলায় চাকুটা বসিয়ে দিল খুনি, একটু চাপ দিল, বরং তাকে খুন করে ফেলি।

    আমার মনে হয়… সে এটাকেই বেছে নিবে, পরিস্থিতির কারণে।

    খুনি হাসল অপমানটা গায়ে না মেখে, ঠিকই বলেছ তুমি। তার দেয়ার মত অনেক কিছু আছে।

    সামনে এগিয়ে গেল ল্যাঙডন। হাতে জড়িয়ে রেখেছে লোহার বারটাকে। যেতে দাও ওকে!

    মনে হল একটা মুহূর্তে ব্যাপারটা ভাবল হ্যাসাসিন। হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে ঝুলিয়ে দিল কাঁধ। এমনভাবে হাতটাকে নামাল, যেন ফেলে দিবে ছুরি। তারপরই বিদ্যুৎ খেলে গেল তার শরীরে। কালো পেশীর একটা ঢেউ দেকতে পেল ল্যাঙডন। তারপর হাতটা উঠে এল উপরে। তারপর সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে সেখানে ঝলকে উঠল ছুরিটা। ছুটে এল তার বুক বরাবর।

    কিন্তু বড় বাঁচা বেঁচে গেল ল্যাঙডন। কানের পাশ দিয়ে শীষ কেটে বেরিয়ে গেল ছুরিটা। পড়ল গিয়ে মেঝেতে।

    নিলডাউন হয়ে আছে ল্যাঙডন। হাতের রডটা শক্ত করে ধরা। ছেড়ে দিল হ্যাসাসিন ভিট্টোরিয়াকে। এগিয়ে এল সামনে। একটা সিংহ যেভাবে শিকারের কাছে এগিয়ে যায়, সেভাবে।

    পা হঠাৎ করে নড়াচড়া বন্ধ করে দিল ল্যাঙডন। কেন যেন ভিজা কাপড় লেপ্টে আছে তার গায়ে। নিচু করে রাখা রডটাকে উঁচু করতে গিয়ে যেন ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে যাচ্ছে সে।

    খুব দ্রুত, যেন হাওয়ায় ভর করে এগিয়ে আসছে খুনি। তার প্রতিটা পদক্ষেপে দৃঢ়তার পরিচয়, পায়ের ব্যাথার কথা একেবারে বেমালুম ভুলে গেছে সে। বোঝাই যায়, তার অভ্যাস আছে এমন সব ব্যাপারে।

    জীবনে প্রথমবারের মত ল্যাঙডনের মনে হল, যদি একটা বিরাট আকারের গান থাকত হাতে!

    চারপাশে ঘুরছে খুনি। এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে ছুরিটার দিকে। কিন্তু তাকে সরিয়ে দিল ল্যাঙডন। আবার এগুনোর চেষ্টা করল সে ভিট্টোরিয়ার দিকে। এবারো বাধা দিল সে। সাবধানে, দূরত্ব রেখে শিকারীর মত এগুচ্ছে হ্যাসাসিন।

    এখনো সময় আছে। বলে দাও কোথায় আছে ক্যানিস্টারটা। ভ্যাটিকান তোমাকে। ভাল পে করবে। ইলুমিনেটির চেয়ে অনেক বেশি।

    তুমি একটা গাধা।

    আবার আঘাত হানার চেষ্টা করল ল্যাঙডন। সরে গেল খুনি। তাকে কোণঠাসা করে ফেলার চেষ্টা করছে গোলাকার ঘরটায়। কিন্তু হতাশ হতে হল ল্যাঙডনকে।

    এই মরার ঘরটায় কোন কোণা নেই!

    অবাক হলেও সত্যি কথা, খুনির নড়াচড়ায় আঘাত হানার কোন মতলব নেই। সে যেন খেলছে। যেন মজা পাচ্ছে। অপেক্ষা করছে সুযোগের জন্য।

    কীসের জন্য অপেক্ষা করছে লোকটা?

    অন্তহীন দাবাখেলার মত চলছে ধৈর্য পরীক্ষা। দুজনেই শান্ত। ধীর। স্থির।

    টের পেল হঠাৎ ল্যাঙডন। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে সে লোহার জিনিসটা ধরে রাখতে রাখতে। খুব বেশিক্ষণ সে কাজটা করতে পারবে না।

    ল্যাঙডনের মনটা যেন পড়ে ফেলল খুনি। সে এগিয়ে যেতে শুরু করল ঘরের মাঝখানে। টেবিলের দিকে।

    কোন অস্ত্র আছে কি সেখানে?

    আবারো পড়ে ফেলল খুনি তার মনটাকে। একটা লম্বা দৃষ্টি হানল সে টেবিলের দিকে।

    আর পারল না ল্যাঙডন। সেও তাকাল। একটা বড় পাঁচকোণা বাক্সে খোলা পড়ে আছে। সেটার ভিতরে পাঁচ বাহুতে পাঁচটা জিনিস।

    কোন সন্দেহ নেই কী সেগুলো।

    ইলুমমিনেটি, আর্থ, এয়ার, ফায়ার, ওয়াটার।

    কিন্তু একটু পরই টের পেল সে, ভিতরে আরো বড় একটা কম্পার্টমেন্ট আছে। মাঝামাঝি। সেখানে একটা ফাঁকা, চতুষ্কোণ জায়গা। তার ভিতরে সবচে বড় কোন প্রতীক থাকার কথা।

    মাই গড!

    হঠাৎ করেই ধৈর্যের খেলা বন্ধ করল হ্যাসাসিন। যেন এবারো বুঝতে পারছে, কী ভাবে ল্যাঙডন। এগিয়ে এল সে বাজপাখির মত।

    এবার লোহার দণ্ডটাকে ল্যাঙডনের মনে হল গাছের গুড়ির মত ভারি। সে কিছু করার আগেই এসে পড়ল খুনির শক্তিমদমত্ত হাত ধরে ফেলল বারটাকে। হাতের অমিত তেজ ঠিক ঠিক টের পাওয়া যায়। সেখানে যে একটা আঘাত আছে সেটা যেন ভুলেই গেছে হ্যাসাসিন।

    দুজনে টানাটানি শুরু করায় বুঝতে পারে ল্যাঙডন, হেরে যাচ্ছে সে। লোকটার হাত থেকে ছোটানোর কোন উপায় নেই।

    তারপর এল অন্ধকার। ছুটে গেল তার হাত থেকে রডটা। আক্রমণকারী হয়ে গেল কোণঠাসা। চোখে অন্ধকার দেখল আঘাত পেয়ে ল্যাঙডন।

    যেন কোন ঝড় উঠে এসেছে তার কাছে।

    তোমাদের আমেরিকান ছেলেখেলা পেয়েছ নাকি?

    ইলুমিনেটির ষষ্ঠ ব্র্যান্ডের কথা আমি কখনো শুনিনি!

    আমার মনে হয় তুমি শুনেছ। মুখ ভেঙচে হাসল হ্যাসাসিন।

    প্রাচীণ বস্তুগুলোর এক অসাধারণ সম্মিলন। আমার ভয় হচ্ছে তুমি হয়ত তা আদৌ দেখতে পাবে না।

    সময় ক্ষেপনের জন্য মরিয়া হয়ে কথা বাড়াচ্ছে ল্যাঙডন, আর তুমি এই ব্র্যান্ডটা দেখেছ?

    হয়ত কোন একদিন তারা আমাকে সম্মান করবে, যেভাবে তাদের সেবা করেছি। আমি!

    কোন এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে খুনি তাকে দেয়ালের দিকে ঘেঁষে ঘেঁষে।

    কোথায়?

    ব্র্যান্ডটা? কোথায় সেটা?

    এখানে নেই। জ্যানাস সেই ব্যক্তি যে সেটা ধারণ করে।

    জ্যানাস?।

    ইলুমিনেটির গুরু। আসছে সে অচিরেই।

    ইলুমিনেটির নেতা এখানে আসছে?

    শেষ ব্র্যান্ডিংটা পুরো করতে।

    শেষ ভিকটিম কে? সে? নাকি শান্ত হয়ে শুয়ে থাকা ভিট্টোরিয়া?

    এ কাজে, হাসল হ্যাসাসিন, তোমরা দুজন কিছুই না। তোমরা মারা যাচ্ছ, অবশ্যই, এ কথাটা সত্যি। কিন্তু শেষ লক্ষ্য এমন একজন, যে সত্যি সত্যি বড় এক শত্রু।

    কে?

    মারা গেছে সব প্রেফারিতি। মারা গেছে পোপ। আর কে থাকতে পারে?

    ক্যামারলেনগো।

    এই এক রাতে দশ-বিশ বহুরের জন্য ক্যামারলেনগো ডুবিয়ে দিয়েছে ইলুমিনেটিকে। মানুষের মনে তাদের জন্য যে অপার ঘৃণার জন্ম হয়েছে সেটা ইলুমিনেটির পথকে কণ্টকিত করবে।

    তুমি কখনোই তার কাছে যেতে পারবে না। চ্যালেঞ্জ ছুড়ল ল্যাঙডন।

    আমি না। ঐ সম্মান স্বয়ং জ্যানাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

    ইলুমিনেটির নেতা স্বয়ং ক্যামারলেনগোর বুকে ব্র্যান্ড বসিয়ে দিবে?

    ক্ষমতাবলে।

    কিন্তু এখন কেউ ভ্যাটিকান সিটিতে যেতে পারবে না।

    যে পর্যন্ত তার একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকছে সে পর্যন্ত।

    একজন, মাত্র একজন এগিয়ে আসছে ভ্যাটিকানের দিকে। যাকে প্রেস ডাকছে ইলেভেন্থ আওয়ার সামারিটান নামে। রোচার বলেছিল এ লোকের কাছে তথ্য আছে

    সাথে সাথে থেমে গেল ল্যাঙড়নের চিন্তার ধারা। গুড গুড!

    আমিও ভেবে পাচ্ছিলাম না জ্যানাস কীভাবে ঢুকবে। তারপর ভ্যানে আমি রেডিও শুনলাম। ইলেভেস্থ অওয়ার সামাটারিয়ান আসছে। ভ্যাটিকান খোলা হাতে জড়িয়ে। নিবে তাকে।

    আৎকে উঠল ল্যাঙডন আবার, জানাসই ইলেভেন্থ আওয়ার সামাটারিয়ান!

    কিন্তু কীভাবে রোচার তাকে স্বাগত জানাবে? নিয়ে যাবে ক্যামারলেনগোর চেম্বারে? নাকি সেও যুক্ত?

    এবার একটা আঘাত হানল হ্যাসাসিন।

    একপাশে একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিল আঘাতটাকে ল্যাওডন।

    জ্যানাস ভ্যাটিকান থেকে জ্যান্ত বেরুতে পারবে না।

    শ্রাগ করল হ্যাসাসিন, কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যার জন্য মরতেও আপত্তি নেই।

    কিছু কিছু কাজের জন্য মারা পড়তেও গৌরব। কিন্তু জ্যানাস কি সুইসাইড মিশনে আসতে পারে? সাইকেল পূর্ণ হয়েছে। এও হয়ত এক প্রকার গর্ব।

    হঠাৎ করে ল্যাঙডন টের পায়, তার পিছনের দেয়াল অদৃশ্য হয়ে গেছে। চলে। এসেছে সে ব্যালকনিতে। ঠান্ডা বাতাসের ঝাঁপ্টা লাগছে গায়ে।

    কোন সময় নষ্ট করল না খুনি। সোজা চালিয়ে দিল বর্শাটা। এড়িয়ে গেল ল্যাঙডন লাগল শার্টে। আবার হামলা।

    ধরে ফেলল এবার সে বর্শাটা। কিন্তু অনেক বেশি দক্ষ আর শক্তিমান খুনি। সে আবার হামলে পড়ল। টানাটানি শুরু করল নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।

    শরীরটা নিচের দিকে এলিয়ে দিয়ে ল্যাঙডন চেষ্টা করল হ্যাসাসিনের পায়ে আঘাত হানার।

    কিন্তু হ্যাসাসিন একজন প্রফেশনাল।

    এই মাত্র টেক্কা ছুড়ল ল্যাঙডন। এবং সে জানে, এইদান হেরে ভূত হয়ে যাচ্ছে সে। সাথে সাথে উপরের দিকে হাত তুলল হ্যাসাসিন। বড়টার দেহ লাগল ল্যাঙডনের বুকে। আড়াআড়ি। সেভাবেই চেপে ধরল তাকে খুনি। সাথে সাথে বুঝতে পারল ল্যাঙডন, তার পিছনে শূণ্যতা।

    মাআস সালামাহ্! বলল হ্যাসাসিন, গুডবাই!

    একহাতে রেলিং ধরে রাখল সে। অন্যটা, বাহাত, পিছলে গেছে। একই সাথে বাঁচার তাগিদে এক পা উঠিয়ে দিল সে উপরে। শরীর ঝুলে গেছে পিছনে।

    হঠাৎ পিছনে ঐশ্বরিক আলো এল এগিয়ে, কীভাবে যেন। আলোকিত হয়ে উঠল।

    ফস্কে গেল বর্শাটা। পড়ে গেল অন্ধকারে। নিচে।

    যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল হ্যাসাসিন।

    উঠে এল ল্যাঙডন ভিট্টোরিয়ার পাশে। জ্বলছে মেয়েটার চোখজোড়া, ধ্বক ধ্বক করে।

    কীভাবে মেয়েটা ছাড়া পেয়েছে জানে না, চেষ্টাও করে না জানার। এগিয়ে যায় সে ভিতরের দিকে।

    হ্যাসাসিন হাত বাড়াল। ধরে ফেলল মশালটা। কিন্তু সময় নষ্ট করবে না ল্যাঙডন। এগিয়ে গেল সে ভিতরে। চলে এল। পুড়ে যাচ্ছে হাসাসিনের পিছনটা।

    যেন এই চিৎকার আশপাশের নিরবতা ছেড়ে চলে গেল ভ্যাটিকানের দোরগোড়ায়।

    ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুনি। একই সাথে তার মুখে চেপে ধরেছে ভিট্টোরিয়া মশালটা। আবার জান্তব চিৎকার বেরিয়ে এল খুনির মুখ থেকে। কণ্ঠ চিরে। পুড়ে যাচ্ছে তার মুখমন্ডল। পোড়া মাংসের হিসহিসে শব্দ উঠছে। হাত দিয়ে মুখ ঢাকল সে।

    চোখের বদলে চোখ। সাপের মত হিসহিস করল ভিট্টোরিয়া।

    চেপে ধরল তাকে দুজনে পিছনদিকে। এলিয়ে পড়ল খুনি। তার বুক থেকে আর কোন যন্ত্রণার শব্দ উঠছে না। উঠছে বীভৎস এক গোঙানি। আজ

    আরো বেশি চাপ দিল ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন।

    আরো এলিয়ে পড়ল খুনি। রেলিঙে।

    তারপর, একেবারে হঠাৎ করেই, সমস্ত ভর চলে গেল। পড়ে গেল হ্যাসাসিন। অনেক অনেক নিচের কামানের গোলার মধ্যে।

    ফিরল ল্যাঙডন মেয়েটার দিকে। এত মমতা সে কোন মেয়ের জন্য পুষে রাখবে, কখনো কল্পনাও করেনি। তাকাল বিদ্ধস্ত মুখের দিকে।

    মেয়েটার চোখ জ্বলছে দাউ দাউ করে একটা জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মত।

    হাউডিনি যোগব্যায়াম জানত।

     

    ১০৯.

    অন্যদিকে, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে, সুইস গার্ডের দেয়াল চেপে ধরছিল লোকজনকে। পিছনদিকে সরিয়ে নিচ্ছিল। একটা নিরাপদ দূরত্বে। কোন কাজ হল না। কান দিচ্ছে না লোকজন।

    তাদের মনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা একবারো উঁকি দিচ্ছে না। সমস্ত ধ্যান জ্ঞান ভ্যাটিকানের উপর।

    ক্যামারলেনগোর কল্যাণে টিভি চ্যানেলগুলো সুইস গার্ডের কাছ থেকে পাওয়া ক্যানিস্টারের লাইভ টেলিকাস্ট করছে টিভি চ্যানেলগুলো।

    মানুষ কেয়ার করছে না। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে একটা মাত্র ফোঁটা মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলবে ঈশ্বরের মহানগরীকে। অথবা; যদি তা হয়ও, আরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাকি আছে।

    ইলুমিনেটি নিশ্চই আজ রাতে এমন কোন ঘোষণা আশা করেনি। তাই একদান এগিয়ে আছে কার্লো  ভেস্কো। ক্যামারলেনগো প্রমাণ করেছে, সেই ভ্যাটিকানের কমান্ডে আছে এই মুহূর্তে।

     

    সিস্টিন চ্যাপেলের ভিতরে, কার্ডিনাল মটাটি বসে আছে চুপচাপ। বেশ কয়েকজন কার্ডিনাল প্রার্থনায় রত। কেউ কেউ ফিসফিস করছে। বাকিরা ভিড় করেছে বাইরে বেরুনোর দরজার পাশে।

    ধাক্কা দিচ্ছে দরজায় কেউ কেউ।

    বাইরে, লেফটেন্যান্ট চার্ট্রান্ড একবার ঘড়ির দিকে তাকাল। কী করবে ভেবে পাচ্ছে সে। ক্যাপ্টেন রোচার শক্ত আদেশ দিয়েছে, সে না বলা পর্যন্ত কোন কার্ডিনাল বেরিয়ে আসতে পারবে না।

    ভেবে পায় না সে, কী করবে। আরো বাড়ছে দরজায় করাঘাত। ভুলে গেল নাতো ক্যাপ্টেন? রহস্যময় ফোনকল পাবার পর বিচিত্র আচরণ করছে ক্যাপ্টেন রোচার।

    ওয়াকিটকি খুলল সে, ক্যাপ্টেন? দিস ইজ চার্ট্রান্ড। শুড আই ওপেন দ্য সিস্টিন? ইট ইজ টাইম।

    দরজা বন্ধ থাকবে। মনে হয় আগেই আমি আদেশটা দিয়েছি তোমাকে।

    ইয়েস, স্যার। আই জাস্ট–

    আমাদের মেহমান চলে আসবেন যে কোন মুহূর্তে। অপেক্ষা কর। আর কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দাও পোপের অফিসের সামনে। ক্যামারলেনগো কোথাও যাচ্ছে না।

    আই এ্যাম সরি, স্যার?

    কোন ব্যাপারটা তুমি বুঝতে পারছ না, লেফটেন্যান্ট?

    কিছু না, স্যার। আমি কাজে নেমে পড়ছি।

     

    আগুনের পাশে বসে ক্যামারলেনগো মেডিটেশন করছে। পোপের অফিসে। শক্তি দাও ঈশ্বর! শক্তি দাও আমাকে। একটা মিরাকল ঘটাও। আজ রাতটা বাঁচবে কিনা তা ভাবতে ভাবতে সে তাকাল আগুনের দিকে।

     

    ১১০.

    এগারোটা তেইশ।

    ক্যাসল সেন্ট এ্যাঞ্জেলোর ব্যালকনিতে কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে আছে ভিট্টোরিয়া।

    পাগলের মত সে রবার্ট ল্যাংডনকে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে। একই সাথে কোত্থেকে যেন অস্বস্তি এসে থামিয়ে দিচ্ছে তাকে।

    পাশ থেকে তার কাঁধ ধরল ল্যাঙডন। সাথে সাথে ভেঙে গেল সব বাঁধ। প্রচণ্ড আবেগে ভিজে একসা হওয়া ল্যাঙডনের দিকে ফিরল সে। একটু দূরত্ব বজায় রেখে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ…

    ফিসফিস করে।

    চোখ মুছল ভিট্টোরিয়া। দুজনেই নিরবে দাঁড়িয়ে রইল। আরো অসীম সময় ধরে, অনন্তকাল তারা সেখানে সেভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত, কিন্তু হাতে সময় নেই।

    এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। বলল ল্যাঙডন অবশেষে।

    তাকাল তারা বিশ্বের সবচে হোট দেশটার দিকে। মিডিয়া ভ্যানের আলোয় সেটা আলোকিত। আর চত্তর জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে অযুত লোক। তাদের খুব একটা সরাতে পারেনি সুইস গার্ড।

    আমি ভিতরে যাচ্ছি। বলল ল্যাঙডন।

    ভ্যাটিকানের ভিতরে?

    ইলেভেন্থ আওয়ার সামাটারিয়ান যে কে সেটা বলল ল্যাঙডন। বলল বাকি কথাগুলোও।

    ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে কেউ জানে না, অবশেষে বলল সে, তাদের সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায় নেই আমার হাতে। আর লোকটা যে কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে। ভিতরে তাকে ঢুকতে দেয়ার আগে গার্ডদের সতর্ক করতে হবে।

    কিন্তু তুমি কখনোই এত মানুষের ভিড় ঠেলে ভিতরে যেতে পারবে না।

    একটা পথ আছে। ট্রাস্ট মি।

    আমিও আসছি।

    না, শুধু শুধু দুজনের জীবন বিপন্ন করার কোন মানে হয় না।

    আমাকে ঐ লোকগুলোকে সরাতে হবে। তারা খুব বড় একটা ঝুঁকির মধ্যে আছে–

    সাথে সাথে এল একটা কম্পন। অবিশ্বাস্য শক্তিতে কেঁপে উঠল গোটা ক্যাসেল। কেমন একটা চোখ ধাঁধানো আলো এল ভ্যাটিকান থেকে।

    মাই গড! এন্টিম্যাটার আগে আগেই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে!

    না, তেমন কিছু হয়নি। পুরো স্কয়ারের লোকজন চিৎকার করে উঠল। মিডিয়া ভ্যানের সমস্ত আলো আলোকিত করে তুলল আকাশকে। সেই সব আলো এসে পড়ল দুর্গের উপর।

    কেন!

    তাকাল ল্যাঙডন সাথে সাথে, কোন দোজখের…

    মাথার উপরে আকাশ চিল্কার করে উঠল।

    তারপরই দেখতে পেল তারা, পাগাল হেলিকপ্টার উঠে এসেছে তাদের মাথার উপরে। একেবারে নিচ দিয়ে সগর্জনে এগিয়ে গেল সেটা। মিডিয়ার সমস্ত আলো এসে পড়ছে সেটার উপর। এগিয়ে গেল চপারটা ক্যাসেলের উপর দিয়ে। ভ্যাটিকানের দিকে।

    আবার অন্ধকার।

    মানুষজন ছাড়া স্কয়ারের যেটুকু জায়গা ফাঁকা ছিল সেটায় নামল সেটা।

    কীভাবে ঢোকা যাবে, বল। বলল অস্থির ভিট্টোরিয়া।

    কিন্তু তাকিয়ে আছে তারা সামনের দিকে। ভ্যাটিকানের দিকে। বলল ল্যাঙডন, লাল গালিচা সংবর্ধনা। ঐতো, রোচার।

    থামল তারা একটু। আবার বলল সে, কারো তাদের সতর্ক করে দিতেই হবে!

    উদ্যত হল সে যেতে।

    কিন্তু তাকে বাধা দিল ভিট্টোরিয়া, থাম!

    তাকাল তারা আবার সেদিকে। খুলে গেছে দুয়ার। নেমে আসছে একজন। এমন একজন, যাকে এত দূরত্ব থেকেও সোজা দেখা যাবে। সে আর কেউ নয়, পঙ্গু একজন মানুষ।

    ইলেক্ট্রিক সিংহাসনে বসা এক রাজা। ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন
    Next Article দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.