Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প575 Mins Read0

    ০৬. বিবিসি অপারেটর গুন্থার গ্লিক

    ৫১.

    বিবিসি অপারেটর গুন্থার গ্লিক সেলফোনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। তুলে দেয়ার আগে ঝাড়া দশটা সেকেন্ড সে তাকিয়ে থাকল।

    এদিকে ভ্যানের পিছন থেকে ক্রিস্টিনা ম্যাক্রি তাকিয়ে আছে তার দিকে, কে?

    ঘুরে দাঁড়াল প্লিক, তার দৃষ্টি অনেকটা বাচ্চা ছেলের মত যে আশাও করেনি এমন মহা মূল্যবান ক্রিস্টমাস গিফট পাবে। আমি শুধু একটু সূত্র পেয়েছি, ভ্যাটিকানে কিছু একটা ঘটছে।

    এর নাম কনক্লেভ, বলল মেয়েটা, সবজান্তার ভঙ্গিতে, হ্যালুভা টিপ।

    না। এটুকু আমিও জানি। এরচে বেশি কিছু আছে। বড় কিছু। সে এখনো খাবি খাচ্ছে, কলার যে কথাটা বলল সেটা সত্যি হবার সম্ভাবনা কতটুকু! বেশ লজ্জা পেল গ্লিক উপলব্ধি করে যে সে কথাটার সত্যি হবার পক্ষে প্রার্থনা করছিল। আমি যদি তোমাকে বলি যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ চারজন কার্ডিনাল আজ রাতে অপহৃত হয়েছে এবং মারা যেতে যাচ্ছে চারটা ভিন্ন চার্চে, তুমি কী বলবে?

    আমি বলব যে তোমাকে নিয়ে অফিস থেকে কেউ বিশ্রী মানসিকতা নিয়ে মশকরা করছে।

    যদি আমি বলি প্রথম কোথায় হত্যাকান্ডটা ঘটছে সেটাও বলে দেয়া হয়েছে আমাকে?

    আমি জানতে চাই কোন চুলার কার সাথে তুমি এতক্ষণ কথা বললে।

    নাম বলেনি সে।

    কারণ হয়ত সে গোবর ভরা মাথা নিয়ে কথা বলেছে।

    সাথে সাথে সত্যের একটু ধাক্কা খেল গ্লিক। তার মনে পড়ে গেল একটা দশক জুড়ে সে ব্রিটিশ টেটলার-এ পাগলাটে মানুষের ফোন কল এবং সরাসরি যোগাযোগে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল তার জীবন। কিন্তু এ কলারও যে তেমন তা ঠিক ভেবে উঠতে পারছে না সে। এই লোক তেমন কোন মোহগ্রস্থ কলার নয়। পূর্ণ সচেতন, ঠান্ডা, যুক্তিনির্ভর। আমি আপনাকে আটটার ঠিক আগে কল করব, বলেছিল সে, আর বলব ঠিক কোথায় প্রথম হত্যাকান্ডটা ঘটবে। যে ছবি তুলবেন আপনি সেগুলো আপনাকে এক মুহূর্তে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। যখন গ্লিক জিজ্ঞেস করেছিল কেন তাকে এগুলো বলা হচ্ছে তখন লোকটা বলে, তার মধ্যপ্রাচ্যের টান সহ, বরফ-শীতল কণ্ঠে, সাফল্যের ডানহাত হল মিডিয়া।

    সে আমাকে আরো একটা কথা বলেছে, বলল সে।

    কী? এলভিস প্রিসলি এইমাত্র পোপ নির্বাচিত হয়েছেন?

    বিবিসি ডাটাবেসে ডায়াল কর, করবে কি তুমি? বলল গ্লিক, তেতে উঠছে সে মেয়েটার কথায়, এই লোকদের সম্পর্কে আর কী জানি আমরা সেটা জানতে হবে আমাকে।

    কোন লোকদের সম্পর্কে?

    আর কোন কথা জিজ্ঞেস করোনা আমাকে।

    ম্যাক্রি সাথে সাথে বিবিসি ডাটাবেসে সংযোগ দিতে দিতে বলল, এক মিনিট সময় লাগবে।

    গ্লিক ভাসছে কল্পনার জগতে, কলার আমাকে প্রশ্ন করেছিল আমার সাথে কোন ক্যামেরাম্যান আছে কি-না।

    ভিডিওগ্রাফার।

    আর আমরা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব কিনা।

    এক দশমিক পাঁচ তিন সাত মেগাহার্টজ। কী নিয়ে এত ভোলপাড় পড়ে গেল? বিপ করল ডাটাবেজ, ওকে, ঢুকে গেছি আমরা, কার খোঁজ করছ তুমি?

    একটা কি-ওয়ার্ড দিল গ্লিক তাকে।

    সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে ম্যাক্রি তার দিকে তাকাল, আশা করি তুমিও তামাশায় মেতে যাওনি!

     

    ৫২.

    আর্কাইভাল ভল্টের ভিতরকার স্থান চিহ্ন ল্যাঙডন যেমনটা আশা করেছিল তেমন নয়। তার উপর ডায়াগ্রামাকে গ্যালিলিওর আর সব রচনার সাথে এক কাতারে বসিয়ে রাখা হয়নি। বাইবেলিয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ঢুকে এখান থেকে বের না করে আর কোন উপায় দেখছে না তারা দুজন। চোখে দেখছে স্রেফ সর্ষে ফুল।

    তুমি শিওর ডায়াগ্রামা এখানেই আছে? অবশেষে প্রশ্ন না করে পারল না মেয়েটা।

    হ্যাঁ-বোধক। এখানে একটা জায়গা আছে যেখানে উফিসিও ডেলা প্রোপাগান্ডা ডেলা ফ্রেডে নামে একটা তালিকা আছে–

    চমৎকার। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে ব্যাপারটার প্রমাণ থাকছে ততক্ষণ অব্দি।

    ল্যাঙডন এবার ডানের পথ ধরল। চলছে তার ম্যানুয়াল সার্চ। তাকে গতি বজায় রাখতে হবে, তাকাতে হবে তার চোখের সামনে পড়া সব লেখার দিকে, আর এই ভন্টের ঐশ্বর্যের কোন তুলনা নেই। হেন জিনিস নেই যা এখানে নেই। দ্য এ্যাসেয়ার… নাক্ষত্রিক সংবাদবাহী… সানস্পট বিষয়ক চিঠিপত্র… গ্র্যান্ড ডাচেস ক্রিস্টিনার কাছে পাঠানো পত্র… এ্যাপোলোজিয়া প্রো গ্যালিলিও… আরো এবং আরো।

    অবশেষে সফল হল ভিট্টোরিয়াই, একপাশ থেকে হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠল, ডায়াগ্রামা ডেলা ভেরিটা!

    সাথে সাথে লাল আলোয় সামনে আসতে শুরু করল ল্যাঙডন, কোথায়?

    ভিট্টোরিয়া আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল। সাথে সাথে বুঝতে পারল ল্যাঙডন জিনিসটাকে বের করতে এত পরিশ্রম হবার কার। জিনিসটা শেলফে ছিল না, ছিল একটা ফোলিও বিনে। না বাধা কাগজপত্র রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় ফোলিও বিন। কন্টেইনারটার গায়ে আটা লেবেল দেখে খুব সহজেই বলে দেয়া চলে কোন ভুল হয়নি।

    ডায়মা ডেলা ভেরিটা
    গ্যালিলিও গ্যালিলি, ১৬৩৯

    ল্যাঙডন নিচু করে ফেলল তার কনুই। ধ্বক ধ্বক করছে তার হৃদপিন্ড। ডায়াগ্রামা! কোনমতে একটা দুর্বল হাসি ম্যানেজ করতে পারল সে, এ বিন থেকে কাগজগুলো তুলে আনতে সাহায্য কর আমাকে।

    ভিট্টোরিয়া নুয়ে এল তার কাছাকাছি। সামনেই বিনটার মধ্যে সাজানো আছে লেখাগুলো।

    কোন লক নেই? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া।

    নেভার। ডকুমেন্টগুলোকে মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে সরিয়ে আনতে হয়। আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে, সম্ভাবনা থাকে বা হবার।

    তাহলে এটাকে খোলা যাক।

    ল্যাঙডনের মোটেও প্রয়োজন নেই বাড়তি কোন উৎসাহ-উদ্দীপনার। এম্নিতেই সে টইটম্বুর। তার সারা ক্যারিয়ার জোড়া কাজের, স্বপ্নের সাকারত্ব দেখতে পাচ্ছে সে, অনুভব করছে, চোখের সামনে পাতলা হয়ে আসছে বাতাস। সেখানে, পাকানো কাগজের দলার ভিতরে এক ধরনের প্রিজার্ভেটিভ। কাগজটুকুকে বের করে আনল সে। পড়ে থাকল কালো প্রিজার্ভেটিভের বাক্সটা।

    আমি বরং কোন রত্নের কৌটা আশা করেছিলাম এখানে। বলল ভিট্টোরিয়া।

    ফলো মি! বলল ল্যাঙডন, তার হাতে ধরা ব্যাগটা, যেন অত্যন্ত প্রিয় কোন উপহার, অত্যন্ত পবিত্র, সংরক্ষিত, সে চলে গেল ভল্টের ঠিক মাঝখানটায়, যেখানে রাখা আছে আর্কাইভাল এক্সাম টেবিল। এটার কেন্দ্র থেকে চারদিক দিয়ে কাচ চলে গেছে। ছোট করেছে ভল্টের আয়তন। এতে অনেক সুবিধা, এক পাশের ডকুমেন্ট অন্য পাশে যেতে পারবে না, একপাশে ক্ষতিকর কোন কিছু হলে অন্যপাশে তার আছর পড়বে না। সবচে বড় কথা, আবিষ্কারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোন স্কলারই চায় না তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ আড়চোখে দেখে ফেলুক তার কাজ।

    ল্যাঙডন পাউচটাকে বসিয়ে দেয় টেবিলের গায়ে। পাশে পাশে আছে ভিট্টোরিয়া সর্বক্ষণ। এগিয়ে গেল সে। খুলে ধরল ব্যাগের মুখ। কাঁপছে তার আঙুল, সুতি গ্লাভের ভিতরেই।

    রিল্যাক্স, ফোড়ন কাটল ভিট্টোরিয়া, এটা কাগজের থলি, পুটোনিয়াম নয়।

    কিন্তু তার কথায় দমে যাবার পাত্র নয় ল্যাঙডন, সে সম পরিমাণ সাবধানতা এবং দক্ষতার সাথে স্পর্শ করল ভিতরের কাগজগুলোকে, আলতো করে ধরল, যেন ভেঙে যায় একটুও। একজন আর্কাইভিস্টের দক্ষতায় সে কাগজটাকে ধরল। তারপর সেটাকে তুলে না এনে ব্যাগটাকেই নামিয়ে দিল নিচে। এ-ও আর্কাইভিস্টের কায়দায়। তারপর কাজটা শেষ করতে না করতেই হাঁপাতে শুরু করল সে।

    কাগজগুলোকে খতিয়ে দেখার জন্য স্থাপন করল সে এক্সাম টেবিলে। তার পাশ থেকে এবার ভিট্টোরিয়া কথা বলে উঠল, ছোট ছোট কাগজের দলা।

    নড করল ল্যাঙডন। তাদের সামনের কাগজের দলাটাকে দেখে মনে হতে পারে কোন পেপারব্যাক থেকে ছিড়েখুড়ে আনা হয়েছে ভঙ্গুর কয়েকটা পাতা। সে দেখতে পেল সেখানে কাগজ আর কলমের চিহ্ন আছে, আছে গ্যালিলিওর নিজের হাতে করা স্বাক্ষর।

    এক মুহূর্তেই ল্যাঙডন যেন অন্য ভুবনে চলে গেল, ভুলে গেল যে তারা এখন জীবন-মরণের ঠিক মাঝখানে বসবাস করছে, ভুলে গেল স্থান-কাল-পাত্রের কথা। নির্জলা বিস্ময় নিয়ে সে শুধু চেয়ে আছে কাগজগুলোর দিকে। মোনা লিসায় ব্রাশের টানের ক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞ যেমন সাবধানতা অবলম্বন করবে তেমন যত্ন এখন ল্যাঙডনের হাতে…।

    হাতে ধরা বিবর্ণ হলদে প্যাপিরাসগুলোর আসল হবার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সবচে বড় কথা, পাতাগুলোর হাল একেবারে সুন্দর। রঙে একটু বিচ্যুতি আছে, সূর্যে নেয়ে ওঠা কাগজের একটা ভাব আছে, তারপরও, এত ভাল অবস্থা আশাও করা যায় না।

    তার মুখমন্ডল একটু ঘেমে উঠছে, কেঁপে উঠছে কিছুটা। আর বোরা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে ভিট্টোরিয়া।

    একটা স্পাটুলা এগিয়ে দাও, প্লিজ। বলল ল্যাঙডন। সাথে সাথে পাশে থাকা স্টেইনলেস স্টিল আর্কাইভাল টুল থেকে একটা তুলে আনল ভিট্টোরিয়া। দিল তার, হাতে। সে খুব সাবধানতার সাথে সেটা দিয়ে খুলল কাগজের ভজ, তার আগে হাত দিয়ে টুলটার গা থেকে সম্ভাব্য ময়লা ঝেড়ে নিয়েছে।

    একটু অবাক হয়েই সে টানা টানা লেখার প্রথম পৃষ্ঠার দিকে নজর দিল। সেখানে ছোট ছোট ক্যালিগ্রাফিক লেখাও আছে যেগুলো দেখে কোন মানে বোঝা যায় না। এখানে কোন গাণিতিক হিসাব নেই, নেই কোন ডায়াগ্রাম, এটা নির্জলা একটা রচনা।

    হেলিওসেন্ট্রিসিটি, সূর্যকেন্দ্রিকতা। বলল ভিট্টোরিয়া, ফোলিও ওয়ানের  হেডলাইনটাকে অনুবাদ করে। দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবী কেন্দ্রিকতার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এখানে গ্যালিলিও। পুরনোদিনের ইতালিয়ান, পড়া কষ্টকর। অনুবাদ করা আরো গলদঘর্ম হয়ে যাবার মত কাজ।

    ভুলে যাও, যেন কিছুই এসে যায় না ল্যাঙডনের, আমরা গণিতের খোঁজ করছি। দ্য পিওর ল্যাঙ্গুয়েজ। পরের পাতাটা খোলার জন্য সে টুলটাকে ব্যবহার করল। আরো এক রচনা। নেই কোন অঙ্ক, নেই কোন নকশা। দস্তানার ভিতরে ঘেমে নেয়ে উঠছে ল্যাঙডনের হাত।

    গ্রহগুলোর গতিবিধি, এবারও অনুবাদ করে দিল ভিট্টোরিয়া।

    আর যে কোন দিন হলে প্রাণপাত করে হলেও ল্যাঙডন খুঁটিয়ে পড়ত পুরো বইটা, এতোদিন পরে নাসার গ্রহ-অবস্থিতি বিষয়ক চূড়ান্ত গবেষণায় যে কথা উঠে আসছে সেটার শুরু এখান থেকেই। কিন্তু আজ সময় নেই হাতে।

    নো ম্যাথ। অবশেষে বলল ভিট্টোরিয়া, তিনি কথা বলছেন গ্রহগতিবিদ্যা আর ডিম্বাকার কক্ষপথ টাইপের বিষয় নিয়ে।

    ডিম্বাকার কক্ষপথ! মনে আছে ল্যাঙডনের, গ্যালিলিও মহা বিপাকে পড়ে যান গ্রহের ডিম্বাকার পরিভ্রমণ পথ বাৎলে দেবার পরই। উঁহু, ভ্যাটিকান সায় দিচ্ছে না। ভ্যাটিকান বলছে, গ্রহগুলোর পথ একেবারে নিখুঁত, গোলাকার। ডিম্বাকার হতেই পারে না। কিন্তু গ্যালিলিওর ইলুমিনেটি তার কথা মেনে নিয়েছে। অক্ষরে অক্ষরে। ইলুমিনেটির ডিম্বাকার পথ আজো বিখ্যাত। আজকের মেসনিক লেখাগুলোতে, প্যাডে বা চিহ্নে সেই ডিম্বাকার পথের প্রমাণ মিলে যায়।

    পরেরটা। বলল ভিট্টোরিয়া।

    সাথে সাথে উল্টে দিল ল্যাঙডন।

    চন্দ্রকলা ও জোয়ার-ভাটা। বলল সে, কোন সংখ্যা নেই। নেই কোন ডায়াগ্রাম।

    আবার উল্টাল ল্যাঙডন। কিছুই নেই। আরো প্রায় ডজনখানেক পাতা উল্টে গেল সে সাথে সাথে। নেই। নেই। নেই।

    আমি মনে করেছিলাম এ লোক গণিতবিদ ছিলেন,হতাশ সুরে বলল ভিট্টোরিয়া, এখানে অঙ্কের কোন নাম-নিশানাও নেই।

    টের পাচ্ছে ল্যাঙডন, তার ভিতরের বাতাস আস্তে ধীরে পাতলা হয়ে আসছে। পাতলা হয়ে আসছে আশা। চিড় ধরছে বিশ্বাসের গায়ে।

    এখানে কি নেই। অবশেষে সিদ্ধান্ত দেয়ার সুরে বলল ভিট্টোরিয়া, কোন গণিত নেই। কয়েকটা তারিখ, কয়েকটা স্ট্যান্ডার্ড ফিগার, কিন্তু কোনটা দেখেই মনে হয় না যে সেখানে কোন স্কু আছে।

    পরের পাতা উল্টে নিল ল্যাঙডন। ছাড়ল একটা দীর্ঘশ্বাস। এটাও রচনা। শেষ। পাতা।

    একেবারে ছোট বই। বলল ভিট্টোরিয়া।

    নড করল ল্যাঙডন।

    মার্ডা, আমরা রোমে এ নামেই এগুলোকে ডাকি।

    হাবিজাবি বলল ল্যাঙডন মনে মনে। তাকিয়ে আছে কাঁচের দিকে। তারক্ষন মেনে নিতে পারছে না। কোন না কোন সূত্র থাকবেই থাকবে, বলল সে অবশেষে। এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে সেই সাইনো। আমি নিশ্চিত।

    হয়ত ডি আই আই আই এর ব্যাপারে তোমার কোন ভুল হয়েছে নাকি?

    লিঙ্গুয়া পিউরা। আর কী হতে পারে এর মানে?

    আর্ট?

    এখানে তো কোন ডায়াগ্রাম বা ছবি নেই।

    যদ্দূর বোঝা যাচ্ছে, লিঙ্গুয়া পিউরা বলতে ইতালিয় বাদে অন্য কোন ভাষা বোঝানো হচ্ছে। এটুকু বোঝা যায় সহজেই।

    আমিও তোমার সাথে একমত।

    কিন্তু সহজে মেনে নেবার পাত্র নয় ল্যাঙডন, নাম্বারগুলো অবশ্যই লেখা আছে। গণিত নিশ্চই ইকুয়েশনের বদলে শব্দে লেখা আছে। আমি নিশ্চিত।

    সাথে সাথে বলল ভিট্টোরিয়া, সবগুলো পাতা খুটিয়ে দেখতে অনেক সময় লাগবে। অন্তত আমাদের হাতে থাকা সময়ের তুলনায় অনেক।

    এই সময়টারই অভাব আছে আমাদের। কাজ ভাগ করে নিতে হবে। আর কোন গত্যান্তর নেই। সাথে সাথে উল্টে নিল ল্যাঙডন পাতাগুলো, সংখ্যা খুঁজে বের করার মত ইতালিয় আমার জানা আছে। কার্ডের মত করে সে দু ভাগ করে ফেলল পাতাগুলোকে, তারপর এগিয়ে দিল ভিট্টোরিয়ার দিকে অর্ধেকটা। আমি নিশ্চিত, এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে আমাদের লক্ষ্য।

    ভিট্টোরিয়া হাত বাড়িয়ে নিল তার পাতা। তারপর সেটায় দৃষ্টি দিল।

    স্প্যাটুলা! চিৎকার করে উঠল ল্যাঙডন সাথে সাথে, হাতে ধরো না। স্প্যাটুলা ব্যবহার কর।

    আমার হাতে গ্লাভ পরা আছে। সতেজে জবাব দিল ভিট্টোরিয়া, কতটা ক্ষতি করতে পারব আমি?

    যা বললাম কর। অবশেষে মেয়েটা তুলে নিল স্প্যাটুলা, তুমিও কি আমার মত অনুভব করছ? টেনশন?

    না। দমের অভাব।

    অবশ্যই, ল্যাঙডন অতিমানব নয় যে দমের অভাব বোধ করবে না। তার কল্পনার চেয়েও দ্রুত পাতলা হয়ে যাচ্ছে বাতাস। তারা জানে তাদের তড়িঘড়ি করতে হবে। আর্কাইভের এই হালের সাথে সে মোটেও অপরিচিত নয়। কিন্তু এ অবস্থা অনাকাক্ষিত। আর একটুও বাক্যব্যয় না করে সে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল বুভুক্ষুর মত।

    দেখা দাও! ড্যাম ইট! দেখা দাও!

     

    ৫৩.

    আণ্ডারগ্রাউন্ড টানেলে, রোমের কোন এক জায়গায় একটা কালো অবয়ব হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছে। আদ্যিকালের প্যাসেজওয়ের গুমোট বাতাস হাপ ধরিয়ে দেয়। টর্চের আলোয় যেন আরো ভারি হয়ে যাচ্ছে। উপরে, ভয় পাওয়া কণ্ঠস্বরের কথা ধ্বণিত প্রতিদ্ধণিত হচ্ছে। বৃথাই।

    কোণা ঘুরে সে তাদের দেখতে পায়। ঠিক যেভাবে ফেলে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই। চারজন বুড়ো লোক, একটা পুরনো পাথরের গায়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে তাদের।

    কুই এ্যাটেস ভোয়াস? তাদের একজন ফ্রেঞ্চে দাবি করল, আমাদের নিয়ে কী করতে চাও তুমি?

    হিলফে! আরেক কণ্ঠ বলল, যেতে দাও আমাদের!

    আমরা কারা সে সম্পর্কে তোমার কি বিন্দুমাত্র জ্ঞান আছে? আরেকজন স্প্যানিশ টান সহ ইংরেজিতে বলল।

    নিরবতা! ভারি কণ্ঠ একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করল। এর উপরে আর কোন শব্দের গুঞ্জন নেই।

    চার বন্দির একজন, ইতালিয়, গভীর চোখে তাদের অপহরণকারীর দিকে তাকাল, তার সারা গা শিরশির করে উঠল, কী যেন দেখতে পেল সে সেখানে। গড হেল্প আস। বলল সে মনে মনে।

    হাতের ঘড়ির দিকে তাকাল লোকটা, তারপর চোখ ফেলল তার বন্দিদের দিকে। সময় চলে এসেছে, বলল সে, কে আগে যাবে?

     

    ৫৪.

    আর্কাইভাল ভল্টের ভিতরে সামনের ক্যালিগ্রাফির দিকে তাকিয়ে রবার্ট ল্যাঙডন

    বুঝতে পারলে সেখানে সংখ্যা আছে। মিল… সেন্টি… উন, দিয়ে, ত্রে… সিঙ্কোয়ান্তা। আমার একটা গাণিতিক রেফারেন্স দরকার, যে রকমই হোক না কেন, একটা গানিতিক রেফারেন্স!

    একের পর এক পাতা পড়ে যেতে শুরু করেছে সে। হাতে ধরা স্প্যাটুলার সাথে সাথে হাতও কাপছে তার, থরথর করে। একটু পরে সে টের পায়, স্পাটুলাটা সরিয়ে রেখেছে সে। উল্টাচ্ছে পাতা হাত দিয়েই। উপস! ভাবল সে। অক্সিজেনের অভাব কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার। বোধবুদ্ধির লয় আসে যে কোন সময়। দেখে মনে হচ্ছে আমি আর্কাইভিস্টদের দোজখে জ্বলেপুড়ে মরব।

    সময় বয়ে যাচ্ছে? বলল ভিট্টোরিয়া, তারপর তাকাল ল্যাঙডনের হাতের দিকে। মহোৎসাহে সেও সমান তালে হাত দিয়ে পাতা উল্টানো শুরু করল সাথে সাথে।

    ভাগ্যের দেখা?

    মাথা নাড়ল ভিট্টোরিয়া, কোন লেখা দেখে বোঝার উপায় নেই ম্যাথমেটিকাল কোন ক্লু আছে কিনা।

    বাড়তে থাকা জটিলতার সাথে হাতের পাতাগুলো উল্টে যাচ্ছে ল্যাঙডন। এম্নিতেই ল্যাঙডনের ইতালিয় জ্ঞান আধপোড়া, তার উপর প্রাচীণ ভাষা আরো বেশি তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে। ল্যাঙডনের অনেক আগেই ভিট্টোরিয়া তার ভাগের পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখা শেষ করেছে। এবার সে একটা হতাশা ভরা দৃষ্টি দিল ল্যাঙডনের দিকে। তারপর আবার দেখা শুরু করল আগের পাতাগুলোই।

    শেষ পাতা শেষ করে ল্যাঙডন কষে একটা গালি ঝেড়ে তাকাল ভিট্টোরিয়ার দিকে। বেচারি তার পাতার দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

    কী? জিজ্ঞেস করল ল্যাঙডন।

    জবাব দিল না ভিট্টোরিয়া, বরং প্রশ্ন করল, তোমার পাতায় কোন ফুটনোট পেয়েছ নাকি?

    মনে হয় না। কেন?

    এ পাতায় একটা পাদটিকা আছে। দেখে একটু খটকা লাগে।

    সাথে সাথে এগিয়ে এল ল্যাঙডন, ভিট্টোরিয়ার ঘাড়ের উপর দিয়ে তাকাল সামনে। প্রথম প্রথম সে কিছুই দেখতে পায় না, দেখল শুধু পাতা নং-৫, তারপর আরো খেয়াল দিতে দিয়ে সে একটু ভিড়মি খেল। ফোলিও ফাইভ, ফাইভ, পিথাগোরাস, পেন্টাগ্রাম, ইলুমিনেটি। ভেবে পায় না ল্যাঙডন, ইলুমিনেটি কি পাঁচ নম্বর পাতাকে তাদের লুকিয়ে থাকার সূত্র হিসাবে উপস্থাপিত করেছে? আশপাশের লালচে ধোঁয়াশায় একটু আশার আলো দেখতে পায় সে। ফুটনোট কি গাণিতিক?।

    মাথা নাড়ল ভিট্টোরিয়া, টেক্সট। এক লাইন। খুবই ছোট প্রিন্টিং, দেখে প্রায় বোঝাই যায় না।

    আশা আরো মিইয়ে গেল, কিন্তু এটা গাণিতিকভাবে থাকার কথা। লিঙ্গুয়া পিউরা।

    জানি, আমি জানি। বলল মেয়েটা, তবু আমার মনে হয় কথাটার অর্থ তুমি জানতে চাবে। কী একটা আভাস যেন তার কণ্ঠে।

    পড়ে যাও।

    সাথে সাথে ভিট্টোরিয়া পড়ে ফেলল লাইনটাকে, আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীক্ষা।

    কথাগুলোর মাথামুণ্ডু কিছু বুঝে উঠতে পারল না যেন ল্যাঙডন, আই এ্যাম স্যরি?

    আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীক্ষা।

    আলোক-পথ?

    ঠিক তাই, আলোক-পথ।

    এক মুহূর্তে যেন ডুবে গেল ল্যাঙডন কোন অতলে, আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরী! সে বুঝে উঠতে পারে না কীভাবে ব্যাপারটাকে নিবে, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারে, এখানে সরাসরি ইলুমিনেটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরী! মাথাটা যেন ভুল জ্বালানি দেয়া কোন ইঞ্জিন। তুমি নিশ্চিত, অনুবাদে কোন ভুল হয়নি?

    একটু ইতস্তত করে ভিট্টোরিয়া, আসলে… একটা অদ্ভুত নজর দিয়ে তাকায় সে ল্যাঙড়নের দিকে, টেকনিক্যালি বলতে গেলে, এটা ঠিক ভাষান্তর নয়। লাইনটা লেখা আছে ইংরেজিতে!

    সাথে সাথে ঠান্ডা হয়ে এল ল্যাঙডনের ভিতরটা। কেঁপে গেল অন্তরাত্মা, ইংরেজি?

    ঠেলে দিল ভিট্টোরিয়া লেখাটা তার দিকে। আর সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ল ল্যাঙডন সেটার উপরে। আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীা। ইংরেজি! কিন্তু একটা ইতালিয় বইতে ইংরেজি আসছে কোন দুঃখে?

    শ্রাগ করল ভিট্টোরিয়া। তার চোখমুখেও দ্বিধা। হয়ত কাদের জবানিতে ইংরেজিই লিঙ্গুয়া পিউরা! আজকের দিনে আমরা এ ভাষাটাকেই বিজ্ঞানের আন-র্জাতিক ভাষা হিসাবে অভিহিত করি। অন্তত সার্নে।

    কিন্তু এটা কোন কথা হল, বল? যুক্তি দেখাচ্ছে ভিট্টোরিয়া, আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীক্ষা! এই মরার কথা কোন মানে দেখায় বল?

    তার কথা ঠিক, ভাবল ল্যাঙডন। কোন মানে এখন আপাতত বোঝা যাচ্ছে না। তারপরও, তোলপাড় চলছে তার মনে। ব্যাপারটা বেখাপ্পা, ভাবছে সে, এ কথা দিয়ে কী বোঝা যাবে?

    আমাদের এখান থেকে পাততাড়ি গুটাতে হবে। বলল ভিট্টোরিয়া, তাড়াতাড়ি!

    কান দিল না তার কথায় ল্যাঙডন। তার তনুমন এখন একটা চিন্তায় মশগুল, আলোক-পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীক্ষা। এটা ইম্বিক পেন্টামিটারের লাইন নয়তো? সে বলল হঠাৎ করে, তারপর বলতেই থাকল, সিলেবল নিয়ে খেলা। একবার একভাবে পড়া তো আরেকবার আরেকভাবে পড়া।

    জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া, কী বলছ?

    ফিলিপ এক্সটারের একাডেমি অব ইংলিশের কথা এক মুহূর্তে মনে পড়ে গেল ল্যাঙডনের। শেক্সপিয়রের লিম্বিক পেন্টামিটারের একটা লাইন নিয়ে হাবুডুবু খাওয়া স্কুল বেসবলের তারকা পিটার গ্রির সারাক্ষণ নাকাল হত। তাদের প্রফেসর, একজন পটে আকা আদর্শ স্কুলমাস্টার, বলতেন, পেন্টা-মিটার, গির! বাসার প্লেটের কথা একবার ভাব। একটা পেন্টাগন। পাঁচটা পাশ, পেন্টা! পেন্টা! পেন্টা! পেন্টা! হায় খোদা!

    পাঁচটা কুপলেট, আর প্রতিটায় দুটা করে সিলেবল। সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে সে তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে এমন সব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করে কাটিয়েছে। লিম্বিক পেন্টামিটারের সাথে ইলুমিনেটির মিল আছে। ইলুমিনেটির বেসও পাঁচ আর দুই!

    এইতো, হচ্ছে! জোরে জোরে ভাবা শুরু করল ল্যাঙডন, সরিয়ে দিতে চাচ্ছে মন থেকে। কী যেন খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। পাঁচ, পিথাগোরাস আর পেন্টাথলনের চিহ্ন দুই, জগতের সব কিছুর বৈপরীত্যের, জোড়ার চিহ্ন।

    আর এক মুহূর্তে বাকি কথাটাও তার ভিতরে উদিত হল। পিওর ভার্স, পিওর ল্যাঙ্গুয়েজ, লা লিঙ্গুয়া পিউরা। এই কথাটাই কি বোঝাতে চায় ইলুমিনেটি? আলোক পথ পড়ে আছে, পবিত্র পরীক্ষা…

    ওহ! না! বলল ভিট্টোরিয়া।

    না। এটার দ্বিমুখী লেখা হবার কোন সম্ভাবনা নেই। এ্যাম্বিগ্রাম নয় এটা।

    না। একটা এ্যাম্বিগ্রাম নয়, কিন্তু, এটা… কথা শেষ না করেই লেখাঁটিকে ঘোরাতে শুরু করে নব্বই ডিগ্রি করে।

    এটা কী?

    চোখ তুলে তাকাল ভিট্টোরিয়া, এটাই একমাত্র লাইন নয়।

    আরো একটা আছে?

    প্রত্যেক মার্জিনে একটা করে লাইন আছে। উপরে, নিচে, বামে, ডানে। আমার মনে হয় এটা কোন কবিতা।

    চার লাইনের? বিষম খেল ল্যাঙডন, আমাকে দেখতে দাও, গ্যালিলিও কবি ছিলেন!

    কিন্তু তার দিকে এগিয়ে দিল না ভিট্টোরিয়া পাতাগুলো। আমি লেখাগুলো আগে দেখিনি কারণ এগুলো মার্জিনের কাছে বসে আছে। আর এগুলোর আকার একেবারে ক্ষুদে। একটা কথা জান? গ্যালিলিও কথাগুলো লেখেননি।

    কী?

    এখানে যে কবির স্বাক্ষর আছে নাম তার জন মিল্টন।

    জন মিল্টন? সেই বিখ্যাত ইংরেজ কবি, যিনি প্যারাডাইস লস্টের মত বিখ্যাত লেখার রচয়িতা। তিনিও গ্যালিলিওর সমসাময়িক, তিনিও গ্যালিলিওর সাথে দেখা করেছেন, তাদের মধ্যে কোন প্রকার আঁতাত থাকা বিচিত্র কিছু নয়। সবাই জানে, জন মিল্টন ষোলশ আটত্রিশে রোমে একটা তীর্থযাত্রা করেন, আলোকিত মানুষদের সাথে দেখা করার জন্য। তিনি এই প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর বাসায় দেখা করেন, তার গৃহবন্দি থাকার সময়টায়। সেখানে তারা আলো নিয়ে আলোচনা করেন, আলোচনা করেন জ্ঞান নিয়ে, পৃথিবীর রেনেসার দুই দিকপাল। তাদের এ দেখা করা নিয়েও অনেক শিল্পকর্মের জন্ম হয়েছে। এ্যানিব্যাল গ্যাটির গ্যালিলিও গ্র্যান্ড মিল্টন এমনি এক বিখ্যাত চিত্র। ফ্লোরেন্সের আই এম এস এস জাদুঘরে আজো সেই ছবি শোভা পায়।

    মিল্টন গ্যালিলিওকে চিনতেন, তাই না? বলল ভিট্টোরিয়া, হয়ত তিনি গ্যালিলিওর খাতিরে কবিতাটা লিখে দিয়েছেন।

    এবার হাতে তুলে নিল ভিট্টোরিয়ার হাত থেকে কাগজটাকে সে, তারপর দেখল সবচে আগের লাইনটা, তারপর একবার ঘুরিয়ে নিয়ে আরেকপাশের লেখা, তারপর আবার, তারপর আবার। চক্র পূর্ণ হয়েছে। প্রথম লাইনটা ভিট্টোরিয়া পড়ল, আসলে সেটা কবিতার তৃতীয় লাইন। এবার ল্যাঙডন আবার লেখাটা পড়তে শুরু করল। ঘড়ির কাঁটার দিকে। উপর-ডান-নিচ-বাম। যখন সে পড়াটা শেষ করল, দম বন্ধ হয়ে এল তার। আপনি পেরেছেন, মিস ভেট্রা।

    হাসল মেয়েটা, প্রাণখোলা হাসি, দারুণ, এবার কি আমরা এই নরক থেকে বেরুতে পারি?

    আমার এই লাইনগুলো কপি করতে হবে। একটা পেন্সিল আর কাগজ পেতে

    মাথা নাড়ল ভিট্টোরিয়া, ভুলে যাও, প্রফেসর। খেলার মত কোন সময় হাতে নেই। মিকি টিকটিক করছে। তার হাত থেকে ছোঁ মেরে কাগজটুকু তুলে নিয়েই সে রওনা হল দরজার দিকে।

    দাঁড়িয়ে থাকল ল্যাঙডন, তুমি এটাকে বাইরে নিয়ে যেতে পার না। এটা—

    কিন্তু বেরিয়ে গেল ভিট্টোরিয়া।

     

    ৫৫.

    ল্যাঙডন আর ভিট্টোরিয়া পবিত্র আর্কাইভের বাইরে বেরিয়ে এল। ল্যাঙডনের ফুসফুস ভরে দিচ্ছে পরিচ্ছন্ন বাতাস। নির্মল বাতাসের যেন কোন তুলনা নেই। সে পৃথিবীর সবচে গোপনীয় ভল্ট থেকে বেরিয়ে এল। ক্যামারলেনগো বলেছিল, আমি আপনাকে আমার বিশ্বাস দিয়ে দিচ্ছি।

    তাড়াতাড়ি, বলল ভিট্টোরিয়া, ওলিভেট্টির অফিসের দিকে তার দৃষ্টি।

    যদি এক বিন্দু পানি ঐ প্যাপিরাসে পড়ে

    শান্ত হও। আমরা এর ব্যবচ্ছেদ করে ফেললে তারপর যত্ন-আত্তি করে তাদের পবিত্র ফোলিও পাঁচ ফিরিয়ে দিতে পারব।

    গতি বাড়িয়ে দিল ল্যাঙডন। তার চলায় আসল আরো দ্রুতি। কিন্তু একটা ব্যাপার সে মোটেও ভুলতে পারছে না। জন মিল্টন একজন ইলুমিনেটি ছিলেন। তিনি ফোলিও পাঁচ প্রকাশ করার জন্য একটা কবিতা লিখেছেন… ভ্যাটিকানের চোখের আড়ালে।

    বাইরে বেরিয়েই ভিট্টোরিয়া ফোড়ন কাটল, তুমি কি মনে কর এটা ডিসাইফার করার তোমার কম্ম? নাকি এতটা সময় আমরা উলুবনে মুক্তা চূড়ালাম?

    ল্যাঙডন যত্ন করে কাগজটা তুলে নিল ভিট্টোরিয়ার হাত থেকে। তারপর সেটাকে নির্দ্বিধায় পুরে ফেলল টুইড জ্যাকেটের পকেটে, সূর্যের আলো আর আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করতে। আমি এরই মধ্যে এটাকে ডিসাইফার করে ফেলেছি।

    সাথে সাথে থমকে গেল ভিট্টোরিয়া, তুমি কী করেছ?

    কিন্তু থামল না ল্যাঙডন।

    হাল ছাড়ার পাত্রী নয় ভিট্টোরিয়া, তুমি মাত্র একবার পড়েছ এটা। আর তাতেই হয়ে গেল? এটার জটিল হবার কথা।

    ল্যাঙডন জানে, মেয়েটার কথাই সত্যি হবার কথা। কিন্তু তার পরও, সে কীভাবে কীভাবে যেন একবার পড়েই এটার কোড ভেঙে ফেলেছে। এখনো তার মনে পড়ে যায় পুরনোদিনের একটা কথাঃ যদি সমাধানটা যন্ত্রণাদায়ক ও কঠিন না হয়, তাহলে বুঝতে হবে তুমি ভুল করেছ।

    আমি ডিসাইফার করেছি এটাকে। চলার গতি বাড়িয়ে দিয়ে সে বলল, আমি জানি প্রথম হত্যাকান্ডটা কোথায় হবে। ওলিভেট্টির কাছে পৌঁছতে হবে যে করেই হোক।

    আরো কাছে চলে এল ভিট্টোরিয়া, তুমি এরই মধ্যে জেনে গেলে কী করে? আরেকবার জিনিসটাকে দেখতে দাও। বক্সারের দক্ষতায় মেয়েটা তার জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে আনল কাগজটাকে।

    সাবধান, বলল ল্যাঙডন, তুমি…

    ওর কথার ঘোড়াই পরোয়া করে ভিট্টোরিয়া। ফোলিওটাকে হাতে নিয়ে সে যেন ল্যাঙডনের পাশে পাশে উড়ছে, আলতো হাতে ধরে রেখেছে সেটাকে, বিকালের সূর্যের শেষ আলোয়। তাকিয়ে আছে মার্জিনগুলোর দিকে। মেয়েটা জোরে জোরে পড়া শুরু করতেই ল্যাঙডন তার দিকে হাত বাড়িয়ে ছোঁ মারল। কিন্তু তার বদলে একটা মুখ ঝামটা দিয়ে ফিরিয়ে দিল তাকে ভিট্টোরিয়া। তার কণ্ঠ চিরে শব্দগুলো এখন বিমূর্ত হয়ে উঠছে।

    এক মুহূর্তের জন্য, শব্দগুলো শুনতে পেয়ে বিবশ হয়ে পড়ে ল্যাঙডন, যেন সময়ের ভিতর দিয়ে ভ্রমণ করা শুরু হল… যেন সেও গ্যালিলিওর গুপ্ত সভার সভ্য, প্রথমবারের মত ঐশীবাণীর মত এই কবিতা শুনতে পাচ্ছে… যেন সে জানে, এটা একটা সূত্র, একটা ম্যাপ, বিজ্ঞানের চার প্রতীকের চিহ্ন, চিহ্ন চতুষ্টয়… এই চারটা প্রতীক রোমে ছড়িয়ে আছে, বাৎলে দিচ্ছে রোমের ভিতর থেকে ইলুমিনেটিতে যাবার গুপ্ত দ্বারের কথা। ভিট্টোরিয়ার ঠোঁট থেকে গানের সুরে বেরিয়ে আসতে লাগল কথাগুলোঃ

    ফ্রম শান্তি স আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস হোল,
    ক্রস রোম দ্য মিস্টিক এলিমেন্টস আনফোল্ড।
    দ্য পাথ অব লাইট ইজ লেইড, দ্য সেক্রেড টেস্ট,
    লেট এ্যাঞ্জেলস গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট।

    ভিট্টোরিয়া পরপর দুবার লেখাগুলো পড়ে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিল।

    মনে মনে আউড়ে নিল ল্যাঙডন, ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ ডেমন হোল, এ একটা ব্যাপারে কবিতা স্ফটিক-স্বচ্ছ। পাথ অব ইলুমিনেশনের শুরু হয়েছে শান্তির মাজারে। সেখান থেকে, এ্যাক্রস রোম, পথ বলে দিতে দ্বিধা করেননি মিল্টন।

    ফ্রম শান্তি স আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস্ হোল,
    ক্রস রোম দ্য মিস্টিক এলিমেন্টস আনফোল্ড।

    রহস্যময় এলিমেন্ট। তারপরও, পরিষ্কার ও আর্থ-এয়ার-ফায়ার-ওয়াটার। বিজ্ঞানের চার এলিমেন্ট। প্রাচীণ বিজ্ঞানের চার মূলমন্ত্র। চার মৌলিক পদার্থ। ধর্মের ছদ্মাবরণে ইলুমিনেটির চার প্রতীক প্রায় প্রকাশ্যেই লুকিয়ে আছে।

    প্রথম মার্কারটা, বলল ভিট্টোরিয়া, দেখে মনে হচ্ছে এটা শান্তিস টম্বে আছে।

    হাসল ল্যাঙডন, বলেছি না আমি তোমাকে? ব্যাপারটা তেমন জটিল নয়।

    তো? শান্তিটা কে? ভিট্টোরিয়া জিজ্ঞেস করল, যেন ল্যাঙডন সবজান্তা, আর তার মাজারটাই বা কোথায়?

    নিজে নিজে মুচকে হাসল ল্যাঙডন। সে ভেবে বেশ পুলকিত হয়, সাধারণ মানুষ শান্তি বলতে কাউকে চেনে না। অথচ এটা রেনেসার আমলের সবচে দামি শিল্পীদের মধ্যে একজনের নামের দ্বিতীয় অংশ… এমন এক লোক যিনি মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াসের জন্য কাজ করা শুরু করেছিলেন। আর আটত্রিশ বছর বয়সে যখন তিনি মারা যান, তার কাজের মধ্যে ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফ্রোস্কোগুলো। আর প্রথম নাম দিয়ে পরিচিতি পাওয়া খুবই দুর্লভ একটা ব্যাপার, তার অধিকারী হয়েছিলেন নেপোলিয়ান, গ্যালিলিও আর যিশুর মত ব্যক্তিত্বরা। এ লোকের চিহ্ন, যাকে টাও ক্রস বলা হয়, সেটাও কম বিখ্যাত নয়। SHAPE * MERGEFORMAT

    টাও ক্রস। এর সাথে কৌতুহলোদ্দীপক চিহ্নও আছে।

    শান্তি, বলল সে অবশেষে, হল মহান রেনেসাঁ আর্টিস্ট রাফায়েলের শেষ নাম।

    চোখ তুলে তাকাল দ্বিধান্বিত ভিট্টোরিয়া, শান্তি? রাফায়েল? সেই রাফায়েল?।

    ওয়ান এ্যান্ড ওনলি রাফায়েল। প্রায় উড়ে চলেছে ল্যাঙডন সুইস গার্ডের অফিসের দিকে।

    তার মানে রাফায়েলের কবর থেকেই পাথ অব ইলুমিনেশন শুরু হচ্ছে?

    এমনটাইতো মনে হয়। তড়িঘড়ি করে যেতে যেত বলল ল্যাঙডন, ইলুমিনেটি বড় বড় আকিয়ে আর শিল্পীদের মাঝেমধ্যে অনারারি ব্রাদার হিসাবে নেয়। হয়ত শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই ইলুমিনেটি রাফায়েলের কবর বেছে নিয়েছে। আবার এ-ও জানত ল্যাঙডন, আরো অনেক ধর্মীয় শিল্পীর মত রাফায়েলও তোপের মুখে পড়া ব্যক্তিত্ব।

    যত্ন করে কাগজটা ফিরিয়ে দিল ভিট্টোরিয়া, তো, কোথায় লুকিয়ে আছে রাফায়েল?

    বিশ্বাস কর আর নাই কর, তার কবর প্যান্থিয়নে।

    প্যান্থিয়নে?

    দ্য রাফায়েল এট দ্য প্যান্থিয়ন। প্যান্থিয়ন এমন এক জায়গা যেখানে আকিয়েরা সমাহিত হন। বলতেই হল ল্যাঙডনকে, আর যাই হোক, প্যান্থিয়নকে তারা আশা করেনি। এখানে প্রথম মার্কারটা থাকবে সেটা কে ভেবেছিল! তার মনে হয়েছিল প্রথম চিহ্নটা থাকবে কোন অখ্যাত, দুর্গম জায়গার নিভৃত কোন চার্চে, যেখানে মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। সেই মোলশ সালেও, রোমের মধ্যে সবচে দর্শনীয় জায়গার একটা ছিল এই প্যান্থিয়ন, এর বি-শা-ল, শতছিদ্রযুক্ত গম্বুজটা দেখার মত জায়গা ছিল।

    প্যান্থিয়ন কি কোন গির্জা? প্রশ্ন করল মেয়েটা।

    রোমের প্রাচীনতম ক্যাথলিক চার্চ।

    কিন্তু তুমি কি মনে কর প্রথম কার্ডিনালকে কতল করা হবে প্যান্থিয়নে? এটাতো রোমের সবচে ব্যস্ত টুরিস্ট স্পটের মধ্যে একটা। লোকে লোকারণ্য।

    শ্রাগ করল ল্যাঙডন, ইলুমিনেটির দাবি অনুযায়ী, তারা এমন কিছু করতে চায় যেটা সারা দুনিয়া দেখবে। প্যান্থিয়নের মত একটা জায়গায় একজন সম্ভাব্য পোপকে মারা যেতে দেখলে কিছু লোকের চোখতো ঠিক ঠিক খুলে যাবে।

    কিন্তু কী করে এ লোকগুলো আশা করে যে প্যান্থিয়নের মত একটা জায়গায় প্রকাশ্যে খুন করে তারা ঠিক ঠিক বেঁচেবর্তে চলে যেতে পারবে? এ তো একেবারে অসম্ভব।

    ভ্যাটিকান সিটি থেকে চারজন সম্ভাব্য পোপকে তুলে আনার মতই অসম্ভব, কী বল? কবিতাটা স্পষ্ট পথ দেখাচ্ছে।

    আর তুমি নিশ্চিত যে রাফায়েল ঐ মরার প্যান্থিয়নের মধ্যেই শুয়ে আছে?

    আমি তার কবর অনেকবার দেখেছি।

    নড করল ভিট্টোরিয়া, কটা বাজে?

    সাড়ে সাত।

    প্যান্থিয়ন কি এখান থেকে দূরে?

    মাইলখানেক হবে। আমাদের হাতে সময় আছে।

    কবিতায় লেখা আছে শান্তি স আর্থি টম্ব। এর কোন সুরাহা করতে পারছ? আসলে রোমে এরচে আৰ্থি আর কোন জায়গা নেই। একটা কথা বলে রাখি, প্যান্থিয়ন মানে যেমন আকিয়েদের কবরস্থান, একই ভাবে এ শব্দের আরো একটা অর্থ আছে, সব দেবতাদের আরাধনাস্থল। প্যাস্থেসিজম থেকে এ শব্দটা এসেছে। পাগন দেবতাদের জন্য এটা নির্ধারিত। মাদার আর্থ তাদের আরাধ্য।

    আর্কিটেকচারের ছাত্র হিসাবে ল্যাঙডন একবার ভিড়মি খেয়েছিল একটা ব্যাপার জানতে পেরে, প্যান্থিয়নের মূল চেম্বারটার ডাইমেনশন নাকি গায়ার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল! গায়া-দ্য গডেস অব আর্থ।

    ওকে! বলল ভিট্টোরিয়া, এখনো হাল ছাড়তে নারাজ সে, আর ডেমনস হোল? ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস্ হোল?

    এ একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছে না ল্যাঙডন, নিশ্চই সেটা ওকুলাসকে নির্দেশ করে। বলল সে, কোনমতে নিজেকে জড়ো করে নিয়ে, প্যান্থিয়নের ছাদে যে বিশাল আকৃতির গর্ত রয়েছে সেটার কথা বোঝানো হয়ে থাকতে পারে ডেমনস হোল দিয়ে।

    কিন্তু এটা একটা গির্জা। বলল ভিট্টোরিয়া, তার পাশে পাশে হাটতে হাটতে, তারা কেন ঐ খোলা জায়গাটাকে ডেমনস্ হোল বলবে? শয়তানের গর্ত বলার কোন কারণতো দেখা যাচ্ছে না।

    এই একটা ব্যাপার নিয়েই নাকানি-চুবানি খাচ্ছিল ভিতরে ভিতরে ল্যাঙডনও। সে কখনো শয়তানের গর্ত-কথাটা শোনেনি। কিন্তু একজন বিখ্যাত সমালোচকের কথা তার মনে পড়ে যায়, তিনি বলেছিলেন, ষষ্ঠ বোনিফেসের দ্বারা নির্মিত হবার সময় প্যান্থিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য শয়তানরা এ গর্তটা করেছিল।

    আর কেন, বলল ভিট্টোরিয়া, কেন তারা শান্তি নামটা ব্যবহার করবে যেখানে তার আসল নাম রাফায়েল। অন্তত এ নামে সবাই চেনে তাকে।

    তুমি অনেক প্রশ্ন কর।

    আমার বাবা এ কথাটাই বলতেন।

    দুটা সম্ভাব্য কারণ আছে। প্রথমত, রাফায়েল শব্দটায় অনেক বেশি সিলেবল আছে। এটা হয়ত কবিতার মাত্রা আর ছন্দকে বিদ্ধস্ত করে দিত।

    খুব একটা ধোপে টিকছে না।

    ঠিক আছে। আর শান্তি নামটা দিয়ে রাফায়েলের ব্যাপারটাকে আরো একটু ঘোলাটে করে নেয়া হল, যেন সহজে কেউ বুঝে উঠতে না পারে।

    ভিট্টোরিয়া এখনো তার কথা মেনে নিতে পারছে না। আমি নিশ্চিত রাফায়েল যখন জীবিত ছিলেন সে সময়টায় তার দু নামই যথেষ্ট বিখ্যাত ছিল।

    অবাক হলেও, কথাটা মোটেও সত্যি নয়। সে সময়কার একটা ঐতিহ্য ছিল, এক শব্দের নামের মধ্যে মাহাত্ম ছিল একটু হলেও বেশি। আজকালের পপ স্টাররা যেমন করে, তেমনি করেছিলেন রাফায়েল। ম্যাডোনার কথাই ধর। সে কিন্তু তার নামের সাথে সিন্ধোনে ব্যবহার করে না কখনো।

    বেশ মজা পেল যেন ভিট্টোরিয়া, তুমি ম্যাড়োনার শেষ নাম জান?

    একটু মজা পেল ল্যাঙডনও। কোন কথা বলল না সে। সোজা হেঁটে গেল সুইস গার্ডের অফিসের দিকে।

    তাদের পিছন থেকে একটা কণ্ঠ বলে উঠল, ফার্মাতেভি!

    ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন সাথে সাথে তাদেরকে একটা বন্দুকের মুখে দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়াল।

    এ্যাটেন্টো! চিৎকার করে উঠল ভিট্টোরিয়া, পড়ে গেল এক পাশে, দেখ, দেখ…

    নন স্পেসটাটোভি! চিৎকার করল গার্ডও, কক করছে তার আগ্নেয়াস্ত্র।

    সোলডেটো! মাঠের অপর প্রান্ত থেকে ভোজবাজির মত উদয় হল ওলিভেট্টি, যেতে দাও ওদের!

    আমতা আমতা করছে সৈন্যটা, মা, সিনর, ই উনা ডোনা—

    ভিতরে!

    সিনর, নন পোসে–

    এখনি! আমাদের উপর নূতন আদেশ এসেছে। ক্যাপ্টেন রোচার কোরকে বিফ করবে। দু মিনিটের মধ্যে। আমরা একটা সার্চের কাজে নেমে পড়ব।

    চোখে বিস্ময় নিয়ে গার্ড তড়িঘড়ি করে ঢুকে গেল সিকিউরিটি সেন্টারের দিকে। তাদের দিকে মার্চ করে এগিয়ে এল ওলিভেট্টি, আমাদের সবচে গোপনীয় আর্কাইভে? আমি একটা ব্যাখ্যা চাই।

    আমাদের কাছে সুসংবাদ আছে। বলল ল্যাঙডন। সরু হয়ে গেল ওলিভেট্টির চোখ, আশা করি খবরটা আসলেই সু হবে।

     

    ৫৬.

    চার অচিহ্নিত আলফা রোমিও ১৫৫ টি-স্পার্ক ভায়া ডেই করোনারি ধরে ফাইটার  প্লেনের মত ছুটে চলল। চার্চি-পার্দিনি সেমি অটোমেটিক সহ বারোজন সাদা পোশাকের সুইস গার্ড আছে সেগুলোতে। আছে লোকাল রেডিয়াস নার্ভ গ্যাস ক্যানিস্টার, আর লঙ রেঞ্জ শটগান। তিনজন শার্প শুটার হাতে নিয়েছে লেজার সাইটেড রাইফেল।

    সবচে সামনে থাকা গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে বসা ওলিভেট্টি ফিরে তাকাল পিছনে বসা ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডনের দিকে। আমাকে আপনারা নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখন আমি বেরিয়ে এলাম।

    ছোট গাড়িতে একটু হাসফাস করে উঠল ল্যাঙডন, আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পারছি–

    না, আপনি বুঝতে পারছেন না! কখনো চড়ে না ওলিভেট্টির গলা, আমি এইমাত্র ভ্যাটিকান থেকে আমার সেরা এক ডজন লোককে সরিয়ে নিলাম। কনক্লেভের ঠিক আগে। আমি বেরিয়ে এলাম একজন আমেরিকানের কথায় যে কিনা আগে কখনো আমার চোখে পড়েনি এবং যার কাছে একটা চারশো বছর আগের কবিতা আছে প্রমাণস্বরূপ। আর এন্টিম্যাটার খুঁজে বের করার মত গুরুভার দিয়ে এলাম জুনিয়র অফিসারদের হাতে।

    পকেট থেকে প্যাপিরাসটা বের করে এবার কথা বলে উঠল ল্যাঙডন, আমি যতটুকু জানি তা হল, চিহ্নটা আছে রাফায়েলের কবরে, আর রাফায়েলের কবর আছে। প্যান্থিয়নে।

    সাথে সাথে কমান্ডারের পাশে বসা অফিসার বলে উঠল, তার কথা ঠিক, কমান্ডার। আমি আর আমার স্ত্রী–

    ড্রাইভ! যেন চড় বসিয়ে দিল ওলিভেট্টি। আবার ফিরে এল ল্যাঙডনের দিকে।

    কীভাবে এমন একটা জনাকীর্ণ জায়গায় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে আপসে আপ সটকে পড়বে?

    আমি জানি না। বলল ল্যাঙডন, কিন্তু ইলুমিনেটির কায়কারবার যে অনেক উচ্চ স্তরের সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তারা সার্ন আর ভ্যাটিকানের মত দুর্গগুলোয় খুব সহজেই কেল্লা ফতে করেছে। এটা বলা চলে একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার যে আমরা জানি হত্যাকান্ডটা কোথায় হবে। প্যান্থিয়নই আপনার একমাত্র সুযোগ, পাকড়াও করে নিন লোকটাকে সেখানেই।

    আরো বৈপরীত্য। বলল ওলিভেট্টি, একমাত্র সুযোগ? আমার মনে হয় আপনারা বললেন আরো কী সব পথওয়ে আছে। মার্কারের সিরিজ। প্যান্থিয়নই সে জায়গা যেখান থেকে আর সব পথের সন্ধান আমরা পাব। লোকটাকে ধরার চারটা সুযোগ থাকছে আমাদের সামনে।

    আমি তেমনি আশা করেছি, হার মানার পাত্র নয় ল্যাঙডনও, সুযোগ থাকত আরো এক শতাব্দি আগে।

    ল্যাঙডন জানে, প্যান্থিয়ন প্রথম জায়গা। কিন্তু পরেরগুলো যে কোথায় তা ভেবে কুল পায়না সে। যে কোন জায়গায় হতে পারে। সময় তাদের সাথে গাদ্দারি করতে পারে। প্রতারিত হতে পারে তারা। এই এত বছর পরেও পাথ অব ইলুমিনেশন যে অক্ষত থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু আশা ছাড়ছে না সে। ইলুমিনেটি লেয়ার পর্যন্ত যাবার আশা রাখা যায়। হায়! এমনটা না হবার সম্ভাবনাই বেশি।

    ভ্যাটিকান প্যান্থিয়নের সব মূর্তি ধ্বংস আর স্থানান্তর করেছে আঠারোশ সালের শতকে।  ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ভিট্টোরিয়া, কেন?

    স্ট্যাচুগুলো পাগান অলিম্পিয়ান দেবতাদের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রথম নিদর্শন হাপিস হয়ে গেছে। আর সেই সাথে

    আর কোন আশা? বলল ভিট্টোরিয়া, ইলুমিনেটির পথ খুঁজে পাবার?

    মাথা নাড়ল ল্যাঙডন, আমাদের হাতে একটা গুলি আছে। দ্য প্যান্থিয়ন, তারপর উধাও হয়ে যাবে পথ।

    তাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে চিল্কার করে উঠল ওলিভেটি, পুল ওভার! সাথে সাথে ব্রেক কষে ধরল ড্রাইভার, তীক্ষ্ণ্ণ একটা ক্যাচ-ক্যাচে শব্দে থেমে গেল গাড়িটা, সেই সাথে পিছনের তিনটা আলফা রোমিও। থেমে গেল ভ্যাটিকানের গাড়ি বহর।

    কী করছেন আপনি! চিৎকার করে উঠল ভিট্টোরিয়াও।

    আমার কাজ। ঠান্ডা সুরে বলল ওলিভেট্টি, মিস্টার ল্যাঙডন, আপনি যখন আমাকে বললেন যে প্যান্থিয়নে আসার পথে আপনি ব্যাপারটা ব্যখ্যা করবেন তখন আমার একটা ক্ষুদে আশা ছিল আমি জানতে পারব কেন আমার লোকেরা এখানে আসছে। আমি এ পর্যন্ত আশা রাখতে পারছিলাম, কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। আপনার রূপকথার গালগল্প অনেক শুনলাম, এবং আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। এখুনি সরিয়ে নিচ্ছি আমি এই মিশন। বের করল সে তার ওয়াকিটকি, কথা বলতে শুরু করল।

    পিছন থেকে এগিয়ে এসে ভিট্টোরিয়া তার হাত জাপ্টে ধরল, আপনি পারেন না…

    সাথে সাথে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সে তাকাল ভিট্টোরিয়ার দিকে, আপনি কখনো প্যান্থিয়নে গেছেন?

    না। কিন্তু আমি—

    আমাকে এ সম্পর্কে একটু বলতে দিন। প্যান্থিয়ন একটা ঘর। পাথর আর সিমেন্টে গাঁথা একটা বিশাল গোলাকৃতি ঘর। এর প্রবেশপথ মাত্র একটা, কোন জানালা নেই, নেই কোন সরু গলিপথ। সে প্রবেশপথ আগলে রাখে কমপক্ষে চারজন রোমান পুলিশ, সশস্ত্র পুলিশ, জায়গাটাকে আগলে রাখে শিল্পকর্ম চোরদের, এন্টি ক্রিশ্চিয়ান টেররিস্টদের, ভবঘুরে আর জিপসিদের কাছ থেকে।

    আপনার পয়েন্ট? ঠান্ডা স্বরে বলল মেয়েটা।

    আমার পয়েন্ট? হাত ঝাঁকাল ওলিভেট্টি, আঁকড়ে ধরেছে গাড়ির সিটটা সে। আমার পয়েন্ট হল, আপনারা এইমাত্র আমাকে যা হবার কথা বললেন সেটা হওয়া একেবারে অসম্ভব। একবার দৃশ্যটা মনশ্চক্ষে কল্পনা করুন, প্যান্থিয়নের ভিতরে কী করে একজন কার্ডিনালকে হত্যা করা সম্ভব? আর গোড়ার কথা ধরতে গেলে, কী করে একজন মানুষ সাথে বন্দি নিয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে এগিয়ে যাবে? আর পরের কথাতো আরো স্বাভাবিক, কী করে তাকে সেখানে খুন করে আবার সাততাড়াতাড়ি পাততাড়ি গোটাবে? শরীর এলিয়ে দিল ওলিভেটি, তার ঠান্ডা চোখ এখন ল্যাঙডনের মুখের দিকে তাকিয়ে, কীভাবে, মিস্টার ল্যাঙডন? একটা বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্য গড়ে নিন।

    আরো যেন এগিয়ে আসছে ল্যাঙডনের চারপাশের এলাকা, আরো যেন সংকুচিত হয়ে পড়ছে সে। আমার কোন ধারণাই নেই। আমি কোন এ্যাসাসিন নই! সে কোন মরার পন্থা অনুসরণ করবে তার থোড়াই আমি জানি! আমি শুধু জানি যে

    একটা মাত্র দৃশ্য বানিয়ে নিন। বলল ভিট্টোরিয়া, চাপ দেয়ার ভঙ্গীতে, তার কণ্ঠ আস্তে আস্তে সরু হয়ে উঠছে, কীভাবে? ঘরটার ছিদ্র ওয়ালা ছাদের উপরে একটা হেলিকপ্টার নিয়ে হত্যাকারী এগিয়ে আসবে, তারপর ছুড়ে দিবে একজন ব্র্যান্ডেড কার্ডিনালকে? কার্ডিনাল মার্বেলের টাইলের উপর আছড়ে পড়বেন এবং সাথে সাথে বেমক্কা পটল তুলবেন!

    সাথে সাথে সবাই ভিট্টোরিয়ার দিকে চোখ মেলে তাকাল। তোমার কল্পনা, মেয়ে, ভাবল ল্যাঙডন, খুবই অসুস্থ এবং খুবই ত্বড়িৎ গতির।

    কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারল না ওলিভেট্টি, সম্ভব,.. আমি মানছি… কিন্তু–

    কিম্বা হন্তারক কার্ডিনালকে একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে যাবে প্যান্থিয়নের দিকে, তারপর ভিতরে নিয়ে গলা টিপে তাকে সেখানেই বসিয়ে রেখে সটকে পড়বে।

    কথাগুলো যেন ভালই প্রভাব ফেলল ওলিভেট্টির উপর।

    নট ব্যাড! খুশি হয়ে উঠছে ল্যাঙডনও।

    অথবা, মেয়েটার বলা যেন ফুরাতে চায় না, কিলার অন্য পথে–

    আমি আপনার কথা শুনেছি, বলল অধৈর্য ভঙ্গিমায় ওলিভেট্টি, যথেষ্ট! বড় করে আরেকটা দম নিল কমান্ডার। বাইরের দিকে তাকাল সে। সেখানে আরেক কার থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল একজন সোলজার। তার পরনে সাদামাটা সাহেবি পোশাক।

    সব ঠিক আছেতো, কমান্ডার? জামার হাতা গুটিয়ে মিলিটারি কায়দায় দাঁড়াল সে, সাতটা চল্লিশ, কমান্ডার, আমাদের পজিশন নিতে সময় লাগবে।

    অনেকটা দিশেহারা ভঙ্গীমায় নড করল ওলিভেট্টি, কিন্তু অনেক সময় ধরে টু শব্দটাও করল না। ড্যাশবোর্ডের উপর, হালকা ধূলার পরতে হাত দিয়ে সে একটা রেখা তৈরি করল অনেক সময় ধরে। সাইডভিউ মিররে সে অনেকণ ধরে ল্যাঙডনকে পর্যবেণ করল, ল্যাঙডনও অনুভব করছে তার শ্যেন দৃষ্টি। অবশেষে সে ফিরে তাকাল গার্ডের দিকে। তার কণ্ঠে প্রতিদ্ধণিত হল কর্তৃত্বের সুর, আমি ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে যাওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করছি। পিয়াজ্জা ডেলা রাউন্ড ধরে গাড়ি যাবে, যাবে ভায়া ডিগ্রি অরফ্যানি ধরে, পিয়াজ্জা সেন্টারনিও আর সেন্ট ইউস্টাচিও ধরে। একটা অন্যটার ত্রিসীমানায় যেন না যায়, ছায়াও যেন না মাড়ায় দু ব্লকের মধ্যে। একবার কোনমতে পার্ক করতে পারলেই তোমরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিয়ে অপো করবে আমার অর্ডারের জন্য। তিন মিনিট।

    ভেরি গুড, স্যার। সৈন্যটা ফিরে গেল তার গাড়িতে।

    সাথে সাথে খুশিতে ঝলমল করে উঠল ভিট্টোরিয়ার ম্লান মুখ, উদ্ভাসিত হল ল্যাঙডনের ভাবভঙ্গিও। একই সাথে তারা দুজন অনুভব করল একটা ক্ষীণ সুতা যেন তাদের মধ্যে আছে। যেন তারা এরই মধ্যে বাঁধা পড়ে গেছে।

    কমান্ডার ঘাড় ঘোরাল ল্যাঙডনের দিকে, কটমটে দৃষ্টি হেনে বলল, মিস্টার ল্যাঙডন, আমাদের দেখে গায়েপড়ে না হাসাটাই ভাল হয়।

    সাথে সাথে কষ্টেসৃষ্টে একটু হাসি জড়ো করতে পারল সে। কীভাবে আমি এমন কাজ করতে পারি?

     

    ৫৭.

    সার্নের ডিরেক্টর ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার চোখ খুলল নাস্তানাবুদ অবস্থায়, তার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় নানা কিম্ভুত বস্তু জুড়ে দেয়া হয়েছে। হাজারটা মেডিক্যাল এ্যাপারেটাস। সে নিজেকে সার্নের একটা গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল রুমে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করল। বিছানার পাশেই আছে হুইলচেয়ারটা। সবচে ভাল সংবাদ, সে এখন খুব সহজেই শ্বাস নিতে পারছে।

    সে দেখতে পায় চেয়ারে ঝোলানো আছে জামাকাপড়। বাইরে একজন নার্সের কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। সে আলগোছে, একটুও শব্দ না করে গা তুলল, হাত বাড়াল খুলে রাখা জামা-কাপড়ের জন্য। মরে যাওয়া পা দুটার সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করে সে গা-টা তুলে দেয় হুইলচেয়ারে, কোনমতে।

    একটু কেশে নিয়ে সে চেয়ার চালালো দরজার দিকে। সে চলছে হাতে হাতে। তারপর একটুও শব্দ না করে যখন সে দরজা দিয়ে বাইরে তাকাল তখন দেখতে পেল সামনের বারান্দায় কেউ নেই।

    একেবারে চোরের মত নিঃশব্দে ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার বেরিয়ে এল মেডিক্যাল এরিয়া থেকে।

     

    ৫৮.

    সাত-চল্লিশ-ছয় এবং ত্রিশ… মার্ক! ওয়াকি-টকিতে কথা বলা সত্ত্বেও ওলিভেষ্টির গলার স্বর উঁচুতে উঠল না একটুও। একেবারে ফিসফিসিয়ে বলা হল কথাটুকু।

    আলফা রোমিওর ব্যাকসিটে বসা ল্যাঙডন বেশ বুঝতে পারছে, ঘামছে সে ভিতরে ভিতরে, হ্যারিস টুইড এবার ক্যারিশমা দেখাবে। প্যান্থিয়ন এখান থেকে তিন ব্লক দূরে। তার পাশে বসে আছে ভিট্টোরিয়া, বেচারির দৃষ্টি ওলিভেট্টির দিকে। কমান্ডার শেষ মুহূর্তের অর্ডার দিচ্ছে ওয়াকি-টকিতে।

    ডিপ্লয়মেন্টটা হবে আট পয়েন্টে। আট দিক থেকে এগিয়ে যাবে তোমরা। তোমাদের যেন শেষ মুহূর্তের আগে দেখা না যায়। খেয়াল রাখতে হবে, হামলা হবে নন-লিথাল। ছাদটাকে স্পট করার জন্য আমাদের কিছু লোক প্রয়োজন পড়বে। প্রাইমারি হচ্ছে টার্গেট, আর আমাদের পরের লক্ষ্য সেকেন্ডারি, এ্যাসেট।

    হায় খোদা! ভাবল ল্যাঙডন, এইমাত্র যে কথাটা ওলিভেট্টি তার দলকে বলল, সেটার ধাক্কায় বোবা হয়ে গেছে সে, কার্ডিনালকে বাঁচাননা মূল লক্ষ্য নয়। সেকেন্ডারি, এ্যাসেট।

    আবার বলছি, সাধারণ নিয়ম, টার্গেটকে অবশ্যই জীবিত পেতে হবে। গো! ওয়াকি-টকি অফ করে দিল ওলিভেট্টি।

    ভিট্টোরিয়ার চোখমুখ এখনো শক্ত হয়ে আছে, কমান্ডার, ভিতরে কেউ কি যাচ্ছে?

    ভিতরে?

    প্যান্থিয়নের ভিতরে। যেখানে ঘটনাটা ঘটার কথা, সেখানে?

    এ্যাটেন্টো! আরো বেশি শক্ত হয়ে গেছে কমান্ডারের কন্ঠ, আমার ব্যাঙ্ক এর ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে কি? আমার লোকজন একবার দেখেই বেশ বুঝে ফেলতে পারবে করণীয়। আপনার সহকর্মী এইমাত্র আমাকে বললেন যে এটাই খুনিকে ধরার একমাত্র সুযোগ। সেটা ভেস্তে দেয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই ভিতরে কোন সৈন্যদলকে মার্চ করিয়ে দিয়ে।

    কিন্তু যদি এরই মধ্যে খুনি ভিতরে ঢুকে গিয়ে থাকে?

    হাতের ঘড়ি আরেকবার পরীক্ষা করে নিল ওলিভেটি সাথে সাথে, টার্গেটের ভিতরে যাবার কথা আটটায়। এখনো পনের মিনিট বাকি আছে।

    সে বলেছে শিকারকে হত্যা করা হবে আটটায়। তার মানে এই নয় যে সে পনের মিনিট আগে ভিতরে যেতে পারবে না তাকে নিয়ে। আর আপনার লোেকরা যদি টার্গেটকে বেরিয়ে আসতে দেখে এবং জানতে না পারে কে সে, তাহলে? কারো না কারো জানাতেই হবে যে ভিতরে কোন সমস্যা নেই।

    এ মুহূর্তে কোন ঝুঁকি নেয়া যাবে না।

    যদি লোকটাকে চেনাই না গেল তবুও না?

    ভোল পাল্টে যাবার মত সময় নেই আমাদের হাতে। ছদ্মবেশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে–

    আমি আসলে আমার কথা বলছিলাম। বলল ভিট্টোরিয়া।

    সাথে সাথে ফিরে একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকল ল্যাঙডন।

    মাথা নাড়ল ওলিভেট্টি, অবশ্যই নয়।

    সে আমার বাবাকে হত্যা করেছে।

    ঠিক তাই, এজন্যেই সে জানতে পারে কে আপনি।

    ফোনে তার কথা আপনি ঠিকই শুনতে পেয়েছেন। তার কোন ধারণাই ছিল না যে লিওনার্দো ট্রোর একটা মেয়ে আছে। আর এ-ও ঠিক, সে আমি দেখতে কেমন তার কচুটাও জানে না। একজন টুরিস্টের মত আমি ভিতরে ঢুকে যেতে পারব অবলীলায়। আমি যদি সন্দেহজনক কোন কিছু দেখি সাথে সাথে ইশারায় আপনার লোকদের আসতে বলতে পারি।

    স্যরি। এমন কিছু করতে দিতে পারি না আমি।

    কমান্ডান্টে! ওলিভেট্টির রিসিভার কঁকিয়ে উঠল, উত্তর পয়েন্টের দিকে উই হ্যাভ এ সিচুয়েশন। আমাদের দৃষ্টির পথ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সামনের ফোয়ারার জন্য। পিয়াজ্জার সমভূমির দিকে না এগিয়ে গেলে আমরা কিছুই দেখতে পাব না। অন্তত প্রবেশপথটা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাবে। আপনার কী মত? আমরা দৃষ্টিহীন হয়ে থাকব, নাকি ধরা পড়ে যাব চোখে?

    ভিট্টোরিয়ার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেছে, এইতো! এবার যাচ্ছি আমি! বলেই সে খুলে ফেলল তার পাশের দরজা। বেরিয়ে এল সাথে সাথে।

    সাথে সাথে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল ওলিভেট্টিও। হাতে ধরা ওয়াকি-টকি। চক্কর দিল সে একটা, ভিট্টোরিয়াকে ঘিরে।

    বেরিয়ে এল ল্যাঙডনও, কী করছে মেয়েটা!

    পথরোধ করে দাঁড়াল ওলিভেট্টি, মিস ট্টো, আপনার অনুভূতি খুবই ভাল, কিন্তু আমি কোন সিভিলিয়ানকে নাক গলাতে দিতে পারি না।

    নাক গলাতে দেয়া! আপনি চোখ বেঁধে উড়ছেন। আমাকে সহায়তা করতে দিন।

    ভিতরে একজন মার্কার থাকলে আমার বরং ভাল হয়। কিন্তু…

    কিন্তু কী? তেতে উঠল ভিট্টোরিয়া, আমি একটা মেয়ে, এইতো?

    চুপ করে থাকল ওলিভেউি।

    আপনি ভাল করেই জানেন, কমান্ডার, এখানে মেয়ে হওয়াটা মোটেও খারাপ কোন ব্যাপার না। বরং সেখানে সবাইকেই সন্দেহ করা হতে পারে, কোন মেয়েকে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় ভ্যাটিকান পাঠিয়েছে এ ব্যাপারটা খুনি কল্পনাও করতে পারবে না। এরচে বড় কোন সুযোগ হয় না।

    আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন।

    আমাকে সাহায্য করতে দিন।

    খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার সাথে যোগাযোগ রাখার কোন পথ থাকবে না হাতে। আমি আপনার হাতে আর যাই হোক, একটা ওয়াকি-টকি তুলে দিতে পারছি না। আবার না দিলেও দূরে সরে যাচ্ছেন।

    শার্টের পকেটে হাত ডুবিয়ে ভিট্টোরিয়া তার সেলুলার ফোনটা তুলে আনল, অনেক অনেক টুরিস্ট সেলফোন ব্যবহার করে।

    ওলিভেন্ট্রি কোনমতে দাঁত কামড়ে রইল।

    ভিট্টোরিয়া ফোনের ভঁজ খুলল, তারপর উল্লসিত কণ্ঠে বলর, হাই হানি! আমি দাঁড়িয়ে আছি প্যান্থিয়নে। চমক্কার জায়গা। তোমার দেখা উচিৎ! আবার সে ভাঁজটা বন্ধ করল সে, কে জানবে কীভাবে? একেই বলে নো রিস্ক সিচুয়েশন। আমাকে আপনার চোখ হতে দিন। বলল সে হড়বড় করে, আপনার নাম্বার কত?

    কোন জবাব দিল না ওলিভেট্টি।

    ড্রাইভারকে দেখে মনে হচ্ছে তার মনেও কিছু কিছু কথা ঘোরাঘুরি করছে। বেরিয়ে এল সেও। টেনে নিয়ে গেল কমান্ডারকে একপাশে, তারপর বেশ কিছুক্ষণ গুজগুজ করল ইতালিয়ানে। এরপর ফিরে এল সে। বলল, এ নাম্বারগুলো প্রোগ্রাম করুন। সে ডিজিট বলা শুরু করল।

    ভিট্টোরিয়া তার ফোন প্রোগ্রাম করল।

    এবার নাম্বারটা কল করুন।

    অটো ডায়াল প্রেস করল ভিট্টোরিয়া। ওলিভেট্টির বেল্টের ফোন বাজতে শুরু করল। সে তুলে আনল ফোনটা, তারপর বলল, ভিতরে চলে যান, মিস ভেট্রা খোলা রাখুন চোখ। বেরিয়ে আসুন, তারপর সব খুলে বলুন আমাকে।

    বন্ধ করে ফেলল ভিট্টোরিয়া ফোনটা, থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।

    এবার একটু সচকিত হয়ে উঠল ল্যাঙডন, এক মিনিট, বলল সে, আপনি তাকে একা একা ভিতরে পাঠাচ্ছেন?

    রবার্ট, আমি ভালই থাকব। বিশ্বাস রাখতে পার অবলীলায়। প্লিজ।

    আবার সুইস গার্ড ড্রাইভার কথা বলতে শুরু করল ওলিভেট্টির সাথে।

    ব্যাপারটা বিপজ্জনক। ভিট্টোরিয়াকে বলল ল্যাঙডন।

    তার কথা কিন্তু একদম ঠিক, বলল ওলিভেটি, আমাদের সেরা লোকজনও কোনদিন একা একা কাজ করে না। আর আমার লেফটেন্যান্ট বলল তাদের মতামত। তারা চায় আপনারা দুজনেই ভিতরে যাবেন।

    আমাদের দুজনেই! মনে মনে দ্বিধায় পড়ে গেল ল্যাঙডন, আসলে আমি ভাবছি—

    আপনাদের দুজনেই যাচ্ছেন, একত্রে, ফরমান জারি করল ওলিভেট্টি, আপনাদের দেখতে একেবারে ট্যুরিস্ট জুটির মত লাগবে, প্রয়োজনে একে অন্যকে ব্যাক-আপও দিতে পারবেন। এ ফরম্যাটটায়ই আমি সবচে বেশি তৃপ্তি পাব।

    শ্রাগ করল ভিট্টোরিয়া, ফাইন। আমি দ্রুত যেতে চাচ্ছি।

    মনে মনে গজগজ করল ল্যাঙডন, নাইস মুভ, কাউবয়!

    সামনে, রাস্তার দিকে আঙুল তাক করল ওলিভেট্টি, ভায়া ডেলগি অরফ্যানি আপনাদের প্রথম রাস্তা। বামে যান। সোজা প্যান্থিয়নে গিয়ে হাজির হবেন। দু মিনিট হাটতে হবে, ব্যস। তারপর আমি আমার লোকদের নির্দেশনা দিব এখানে বসে। অপেক্ষা করব আপনাদের কলের জন্য। সে খুলে আনল পিস্তলটা, আপনাদের কেউ কি জানেন কী করে একটা আগ্নেয়াস্ত্রকে সামলাতে হয়?

    একটা বিট মিস করল ল্যাঙডনের হার্ট, আমাদের আদৌ কোন আগ্নেয়াস্ত্রের দরকার নেই!

    হাত বাড়িয়ে দিল ভিট্টোরিয়া, আমি চল্লিশ মিটার দূর থেকে ধেয়ে যাওয়া কোন শিপের বো তে রাখা যে কোন বস্তুকে চোখের পলকে ঝেড়ে ফেলতে পারি।

    গুড! উফুল্ল কন্ঠে বলল কমান্ডার, আপনাকে ব্যাপারটা প্রমাণ করতে হবে।

    ভিট্টোরিয়া তার শর্টসের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ মেলল ল্যাঙডনের দিকে।

    ও, না? তুমি এমন কাজ করতে পার না! চোখের ভাষায় বলল ল্যাঙডন, কিন্তু মেয়েটা এত চটপটে যে ধরা পড়ে গেল সে। সোজাসাপ্টা হাত বাড়াল সে, খুলে ফেলল জ্যাকেটের একপাশ, তারপর সেধিয়ে দিল পিস্তলটাকে, তার বুক পকেটে। যেন কোন পাথর সোজা ধেয়ে আসছে তার পকেটে। তার একমাত্র শান্তির খবর হল, ভায়াগ্রামা এই পকেটে নেই। আছে অন্য একটায়।

    দেখতে আমাদের দুগ্ধপোষ্য লাগছে, বলল ভিট্টোরিয়া, তারপর আকড়ে ধরল ল্যাঙডনের হাত, ঠিক প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া জুটির মত, তারপর নেমে পড়ল পথে।

    ড্রাইভার আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়ে বলল, কথাটা মগজে ঢুকিয়ে নিন, আপনারা প্রেমে চুর হয়ে যাওয়া একটা জুটি। হাতে হাত রাখা, তারপর ঘনিষ্ঠভাবে চলাচল করাটা তাই দেখতে অত্যন্ত প্রীতিকর লাগবে। আপনারা কিন্তু নববিবাহিত দম্পতি।

    ল্যাঙডন এখনো ঠিক মানিয়ে নিতে পারছে না ব্যাপারটার সাথে। সে কি ভুল দেখল? ভিট্টোরিয়ার ঠোঁটের কোণে একটা হাসির মৃদু রেখা দেখা দিয়েছিল কি?

     

    ৫৯.

    কর্পো ডি ভিজিল্যাঞ্জায় সুইস গার্ডের বাইরের ঘাঁটি, এটায় তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা  নিয়ে কাজ করে, ভ্যাটিকানের বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, পাপাল এরিয়ায় কোন অনুষ্ঠান হলে সবচে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আজকে, যাই হোক, সেটা অন্য কোন কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

    সুইস গার্ডের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আজ এখানে আস্তানা গেড়েছে। হম্বিতম্বি করে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। ক্যাপ্টেন এলিয়াস রোচার। ক্যাপ্টেনের বুকের ছাতি দেখলে যে কারো অন্তরাত্মা খাঁচাছাড়া হয়ে যাবে। তার পরনে প্রচলিত ক্যাপ্টেনের পোশাক। মাথায় একটা লাল রঙের ব্যারেট, তেরছা করে পরে আছে সে সেটাকে, খুব কায়দা করা সৈনিকের মত। এত বিশালদেহী মানুষটার কষ্ঠ ঠিক মানায় না। রিনঝিনে। যেন কোন চিকণ সুরের যন্ত্র বেজে যাচ্ছে। তার লোকজন তাকে আড়ালে-আবডালে অর্সো বলে ডাকে। গ্রিজলি ভালুক। অনেকে আবার তাকে ভাইপার সাপের ছায়ায় চলা ভালুক নামেও ডাকে। কমান্ডার ওলিভেট্টি হল সেই ভাইপার। রোচার ভাইপারের চেয়ে কোন অংশে কম ভয়াল নয়, কিন্তু অন্ততপক্ষে তাকে আসতে দেখা যাবে।

    রোচারের লোকজন একেবারে নিখুঁত এ্যাটেনশনের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কোন নড়াচড়া নেই। এইমাত্র যে খবর তারা পেয়েছে তাতে তাদের রক্তচাপ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

    আরেক লেফটেন্যান্ট চার্ট্রান্ড মনেপ্রাণে আফসোস করছিল এখানে আসতে চাওয়া আর নিরানব্বই ভাগ ব্যর্থ অফিসারের সাথে সে কেন ছিল না। বিশ বছর বয়সে চার্ট্রান্ড ফোর্সের সবচে নবীন গার্ড। সে ভ্যাটিকানে আছে মোটামুটি মাস তিনেক ধরে। আর সবার মত চার্ট্রান্ডও সুইস আর্মির কাছ থেকে ট্রেনিং পেয়েছে আর দু বছর কাটিয়েছে। অসবিল্ডাঙ এ। রোমের বাইরে সুইস গার্ডের গুপ্ত ব্যারাকেও তার সময় কেটেছে অনেক। তবু, তার ট্রেনিংয়ের কোন অংশই তাকে এ অবস্থা মোকাবিলা করার মত দক্ষ করে তোলেনি।

    প্রথমে চার্ট্রান্ড মনে করেছিল যে এই ব্রিফিঙটা আসলে কোন বিদঘুটে ট্রেনিংয়ের অংশ। ভবিষ্যতের অস্ত্র? প্রাচীণ গুপ্ত সংঘ? অপহৃত কার্ডিনালরা? তারপরই নোচার তাদের এর উপর ভিডিও দেখাল। সাথে সাথে চার্ট্রান্ড বুঝে ফেলল, এটা কোন প্রশিক্ষণ নয়, নয় কোন পরীক্ষা।

    আমরা নির্বাচিত জায়গার পাওয়ার অফ করে দিব, বলছে রেচার, যাতে বোমাটার চৌম্বক ক্ষেত্রের দেখা পাই। আমরা চারজন চারজন করে ময়দানে নেমে যাব। প্রত্যেকের সাথে থাকবে ইনফ্রারেড গগলস। প্রচলিত বাগ-ফাইন্ডার দিয়েও কাজ সারব আমরা। সাব ওম থ্রি থাকলেই সেখানটা সার্চ করতে হবে। কোন প্রশ্ন?

    নেই।

    চার্ট্রান্ড একটু আগ বাড়িয়ে বলল, যদি জিনিসটাকে খুঁজে না পাই তো? আর প্রশ্নটা করেই মনেপ্রাণে সে কামনা করতে থাকে, এটা যেন শুনতে না পায় ক্যাপ্টেন।

    লাল ব্যারেটের নিচ থেকে গ্রিজলি ভালুক তার দিকে আগুন ঝরানো দৃষ্টি হানল। তারপর একটা স্যাটুল ঠুকে দিয়ে ব্রিফিংয়ের ইতি টানল।

    ঈশ্বরের গতি, ছেলেরা!

     

    ৬০.

    প্যান্থিয়ন থেকে দু ব্লক দূরে, ভিট্টোরিয়া ও ল্যাঙডন একটা ট্যাক্সির সারি পেরিয়ে গেল। ড্রাইভাররা ফ্রন্ট সিটে বসে ঝিমাচ্ছে।

    নিজের সমস্ত চিন্তা ভাবনা গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল ল্যাঙডন, কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই প্রতিকূল। মাত্র দু ঘণ্টা আগে সে কেম্বুিজের আরামদায়ক বাসায় শুয়ে ছিল।

    আর এখন সে ইউরোপে, আদ্যিকালের দানবদের মধ্যকার লড়াই চাক্ষুস করছে। হ্যারিস টুইডের দু পকেটে দুটা বিপরীত ধারা এখন, আর সেই সাথে বাহুলগ্ন হয়ে আছে এক অনিন্দ্যসুন্দর মেয়ে।

    সে আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখে ভিট্টোরিয়ার দিকে। মেয়েটার দৃষ্টি একেবারে সামনে। তার ধরে থাকার মধ্যে এক ধরনের শক্তিমত্তা আছে; স্বাধীন, ড্যামকেয়ার মেয়ের শক্তিমত্তা। তার আঙুলগুলো আলতো করে আদর করছে তাকে, সত্যিকার প্রেমিক-যুগলের মত। একটুও জড়তা নেই। একটু যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল ল্যাঙডন। বাস্তবে ফিরে আস! বলল সে নিজেকেই।

    তার জড়তা টের পাচ্ছে ভিট্টোরিয়াও, রিল্যাক্স! বলল সে, আমাদের দেখতে নববিবাহিত দম্পতির মত লাগার কথা।

    আমি রিল্যাক্সড।

    তুমি আমার হাতটা গুঁড়া করে ফেলছ। সাথে সাথে হাতটায় ঢিল দিল ল্যাঙডন।

    চোখ দিয়ে দম নাও। বলল ভিট্টোরিয়া।

    কী?

    এটা মাসলগুলোকে রিল্যাক্স করে। নাম প্রণায়ামা।

    পিরানহা?

    মাছ না। প্রণায়ামা। নেভার মাইন্ড।

    তারা মোড় ঘোরার সাথে সাথে সামনে ভোজবাজির মত উদিত হল প্যান্থিয়ন। ল্যাঙডন সাথে সাথে প্রশংসার দৃষ্টি হানল এটার দিকে। চোখেমুখে তার ঠিকরে বেরুচ্ছে প্রশংসা। দ্য প্যান্থিয়ন! সব দেবতার মন্দির। পাগান দেবতাদের। প্রকৃতি আর পৃথিবীর দেবতাগণ। অবাক চোখে সে তাকায় সামনে। তাকিয়েই থাকে। এখান থেকে দেখতে অনেকটা চৌকোণা মনে হলেও সে জানে আসলে সেটা ভিতরে গোলাকার। তারা যে ভুল করেনি তা বোঝা গেল এম এ্যাগ্রিপ্পা এল এফ কোস টার্টিয়াম ফেসিট দেখে। সাথে সাথে মনে মনে অনুবাদ করে নিল লেখাটাকে ল্যাঙডন। মার্কাস এ্যাগ্রিপ্পা, কনসাল ফর দ্য থার্ড টাইম, বিল্ট দিস।

    চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে সে। হাতে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে একদল টুরিস্ট সেখানে আনাগোনা করছে। লা টাজা ডিওরোর আউটডোর ক্যাফেতে অনেকে আবার রোমের সেরা আইস কফি চেখে দেখছে। আর প্যান্থিয়নের বাইরে, ঠিক যেমনটা বলেছিল ওলিভেট্টি, চারজন সশস্ত্র রোমান পুলিশ এ্যাটেনশন হয়ে দাড়িয়ে আছে।

    দেখতে বেশ শান্তই লাগে। বলল ভিট্টোরিয়া।

    নড করল ল্যাঙডন। সে এখানে বাহুলগ্না করে একটা মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে ইতিহাসের সবচে ভয়াল ঘটনাগুলোর মধ্যে একটার জন্য, কল্পনাটা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয় তার জন্য। ভিট্টোরিয়া তার পাশে পাশে আছে ঠিকই, তারপরও, একটা ব্যাপার ভেবে সে বিষম খায়, সে-ই সবাইকে এখানে দাঁড় করিয়েছে, প্রতিটা কু দিয়েছে। চিনিয়েছে ইলুমিনেটি পয়েমের অর্থ। সে জানে, এই সেই স্থান। এটাই শান্তিস টম্ব। এখানে, রাফায়েলের কবরের পাশে, উপরের বিশাল ছিদ্রটার নিচে, সে অনেকবার এসেছে।

    বাজে কটা? প্রশ্ন ছুড়ল ভিট্টোরিয়া।

    সাতটা পঞ্চাশ। আর দশ মিনিট।

    আশা করি ব্যাটারা ভাল হবে। বলল ভিট্টোরিয়া, ভিতরে যদি কিছু ঘটেই যায়, বলল সে আফসোসের সুরে, আমরা সবাই ক্রসফায়ারে পড়ে যাব।

    বড় করে একটা দম নিয়ে ল্যাঙডন এগিয়ে গেল সামনের দিকে। পকেটের গানটা যেন আরো ভারি হয়ে আসছে। তার মনে একটা চিন্তা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। একবার যদি চোখ দেয় পুলিশেরা, তাহলে কেল্লা ফতে। সোজা হাজতের ভাত জুটবে কপালে। কিন্তু অফিসার তার দিকে একবারের বেশি দৃষ্টি দিল না। না, ছদ্মবেশ ভালই হয়েছে।

    প্রশ্ন করল সে ভিট্টোরিয়ার দিকে লক্ষ্য করে, ট্রাঙ্কুইলাইজার গানের বাইরে আর কিছু দিয়ে কখনো গুলি করেছ?

    তুমি কি আমাকে ঠিক বিশ্বাস কর না?

    বিশ্বাস করা? আমি তোমাকে আদৌ এখন পর্যন্ত ভাল করে চিনতেই পারলাম না! বিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে কী করে?

    আর আমি কিনা ভেবে বসে আছি আমরা নববিবাহিত দম্পতি!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন
    Next Article দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.