Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প575 Mins Read0

    ০৭. প্যান্থিয়নের ভিতরে বাতাস শীতল

    ৬১.

    প্যান্থিয়নের ভিতরে বাতাস শীতল, একটু ভারি। চারদিকে ইতিহাসের সব দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একশো চল্লিশ ফুট উঁচু গম্বুজের ভিতরে ঢুকে আবারও ঠান্ডা হয়ে আসে ল্যাঙডনের ভিতরটা। সেন্ট পিটার্সও হার মেনে যাবে এটার সামনে। এখানে একই সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং আর আর্টের অসাধারণ মিশেল দেখা যাচ্ছে। তাদের মাথার উপরে বিশাল গোলাকার ছিদ্রটা দিয়ে বিকালের রোদ আলস্য ভরে এলিয়ে পড়ছে। দ্য অকুলাস! ভাবল সে, দ্য ডেমনস্ হোল!

    এসে পড়েছে তারা।

    তাদের পায়ের কাছে, পলিশ করা মার্বেলের মেঝের দিকে নেমে এসেছে এই সুউচ্চ ভবনটা। দর্শনার্থীদের পায়ের মৃদু শব্দই ভিতরে শব্দের একটা ইন্দ্রজাল তৈরি করে দিচ্ছে। দেখতে পেল ল্যাঙডন, ডজনখানেক পর্যটক এলোমেলো পা ফেলে যাচ্ছে। তুমি কি এখানেই আছ?

    দেখে বেশ শান্ত মনে হচ্ছে। বলল ভিট্টোরিয়া। এখনো তার হাত ধরে আছে। নড করল ল্যাঙডন।

    রাফায়েলের মাজার কোথায়?

    একটু সময় নিল ল্যাঙডন। দম ফিরে পাবার চেষ্টা করছে। রুমটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল সে। কবর। পিলার। ভাস্কর্য। শিল্পকর্ম। সে ঠিক নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারছে না। তারপর অবশেষে সে বলল, আমার মনে হয় রাফায়েলেরটা ঐদিকে।

    পুরো রুমের বাকি জায়গাটুকু একটু দেখে নিল ভিট্টোরিয়া। আমি এমন কাউকে দেখছি না যাকে তাকিয়ে খুনি বলে মনে হবে এবং যে এখানে এসেছে একজন প্রেফারিতি কার্ডিনালকে হত্যা করতে। আমরা কি আরেকটু চোখ বুলিয়ে নিব?

    নড করল ল্যাঙডন, এখানে মাত্র একটা জায়গাই আছে যেখানে কেউ গা ঢাকা দিতে পারবে। আমাদের বরং রিইন্ট্রাঞ্জে চেক করে দেখা ভাল।

    দ্য রিএ্যাক্সেস?

    হ্যাঁ। দ্য রিএ্যাক্সেস ইন দ্য ওয়াল।

    কবর আর শিল্পকর্মের সারির বাইরে আরো একটা জিনিস আছে এখানে। দেয়াল থেকে বাঁকা হয়ে একটু করে অংশ বেরিয়ে আছে। এগুলো খুব একটা যে বড় তা না। কিন্তু অন্ধকারে গা ঢাকা দেয়ার জন্য এরচে ভাল জায়গা এখানে নেই। মনের দুঃখ সহ সে কল্পনা করে, প্যান্থিয়নের এখানটায় পাগন দেবতাদের মূর্তি রাখা হত। তারপর দিন পাল্টে গেল। ভ্যাটিকান দখল করে নিল জায়গাটাকে। বানাল চার্চ। হারিয়ে গেল অলিম্পিয়ান গডরা। একটা কথা ভেবে কুল পায় না সে। সে বিজ্ঞানের প্রথম দিককার এক অনন্য সৃষ্টির ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু এর নির্মাতারা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। তাদের সংস্কৃতি আর তাদের ধর্ম আজ শুধুই গবেষণার বিষয়। বিলুপ্তির অতলে হারিয়ে গেছে তারা। তার কল্পনায় এখন ইলুমিনেটির দিকে নির্দেশ করা একটা মৃর্তির কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। এর স্রষ্টা কে? কোথায় আছে এখন সেটা? টিকে আছেতো? পাথ অব ইলুমিনেশন কি খুঁজে পাওয়া যাবে এখান থেকে এ যুগেও?

    আমি বামের পথ ধরছি, বলল ভিট্টোরিয়া, আর তুমি যাচ্ছ ডানে। চেক করতে করতে একশো আশি ডিগ্রিতে আবার দেখা হচ্ছে।

    আড়ষ্ট একটা হাসি দিল ল্যাঙডন।

    তারপর এগিয়ে গেল পথ ধরে। তার মন এখনো আগের কথাগুলো আউড়ে যাচ্ছে। খুনির কথা প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। আটটার সময়। বিজ্ঞানের বেদীতে কুমারি মেয়ের বলিদান। মৃত্যুবরণের একটা গাণিতিক হার… আট, নয়, দশ, এগারো… একেবারে মধ্যরাতে।

    হাতের ঘড়ি আরো একবার পরীক্ষা করে নিল সে। সাতটা বায়ান্ন। আর মাত্র আট মিনিট।

    ল্যাঙডন সামনে এগিয়ে যাবার সময় একজন ইতালিয় ক্যাথলিক রাজার কবর পেরিয়ে গেল। লোকটার কবর একটু বিচিত্রভাবে বসানো। দর্শনার্থীদের একটা জটলা ব্যাপারটা নিয়ে ধাঁধায় পড়ে গেছে। কিন্তু ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য থামল না ল্যাঙডন। পূর্বে মুখ দিয়ে কবর দেয়া নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। সিম্বলজি দুশো বারো ক্লাসে এ নিয়ে একটা হট্টগোল বেঁধে গিয়েছিল। এই গত মাসেই।

    অসম্ভব! এমন কিছু হতেই পারে না। বলেছিল একটা মেয়ে। পূর্বমুখী খ্রিস্টান মাজারগুলোর মূল কথা বোঝানোর পর সে চেঁচিয়ে উঠেছিল। কেন শুধু শুধু খ্রিস্টানরা তাদের টম্বগুলোকে উঠতি সূর্যের দিকে মুখ দিয়ে রাখবে? আমরা খ্রিস্টানত্বের ব্যাপারে কথা বলছি… সূর্য পূজার ব্যাপারে নয়।

    সাথে সাথে আপেল চিবাতে চিবাতে সে ডাকল, মিস্টার হিজরট! চিৎকার করল সেও।

    পিছনের সারিতে বসে ঝিমাতে থাকা একটা ছেলে হড়বড় করে বলল, জ্বি? আমি?

    ল্যাঙডন দেয়ালে ঠাসা একটা রেনেসাঁর আর্টের পোশাকের দিকে নির্দেশ করল। ঈশ্বরের সামনে নতজানু হয়ে আছে লোকটা, কে সে?

    উম… কোন সন্ত?

    ব্রিলিয়ান্ট! আর কী করে তুমি বুঝলে যে সেটা কোন সন্তের ছবি?

    তার পরনে একটা হ্যালো আছে?

    এ্যাক্সিলেন্ট! আর এই সোনালি হ্যালো কি তোমাকে অন্য কোন কথা মনে করিয়ে দেয়?

    সাথে সাথে হিজরটের মুখের স্নান ভাব উধাও হয়ে যায়। হাসিতে ভেসে ওঠে সে। ইয়াহু! গত টার্মে আমরা যে ইজিলিয়ান জিনিসগুলো নিয়ে পড়ালেখা করেছিলাম। সেই… উম্… সানডিস্ক…।

    ঠিক তাই, মিশরিয় সৌর চাকতি, থ্যাঙ্ক ইউ, হিজরট। আবার ঘুমিয়ে পড়। ফিরে তাকাল ল্যাঙডন ক্লাসের দিকে, হ্যালোস, আর বেশিরভাগ ক্রিশ্চিয়ান সিম্বলজির মত, এটাকেও ইজিপ্সিয়ান সূর্য-আরাধনা থেকে ধার করা হয়েছে। খ্রিস্টবাদে সূর্যপূজার উদাহরণের কোন শেষ নেই।

    এক্সকিউজ মি? তেতে উঠল প্রথমদিকে বসা সেই মেয়েটা, আমি সব সময় চার্চে যাই। সেখানে সূর্য পূজার মত কোন ব্যাপার আমার চোখে পড়েনি কখননা!

    আসলেই? পঁচিশে ডিসেম্বর তোমরা কী সেলিব্রেট কর?

    ক্রিসমাস। জেসাস ক্রাইস্টের জন্মজয়ন্তি।

    অথচ, বাইবেলের কথানুসারে, যীশু খ্রিস্ট জন্ম নেন মার্চে। তাহলে আমরা ডিসেম্বরের শেষ দিকটায় কী উদযাপন করছি?

    নিরবতা।

    হাসল ল্যাঙডন, ডিসেম্বর পঁচিশ, আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, হল গিয়ে প্রাচীণ পাগান ছুটির দিন। সোল ইনভিক্টাস। অজেয় সূর্য। এটা কিন্তু অবাক হলেও সত্যি কথা, সূর্যের ফিরে আসার দিন। তার আগ পর্যন্ত দিন শুধু ছোটই হত। তারপর এ দিনটা এলে আবার তা বড় হতে থাকে। তার মানে সূর্যের অজেয়তার পূজা করা হচ্ছে।

    আরো এক কামড় আপেল মুখে নিল ল্যাঙডন।

    বিজয়ী ধর্মগুলো, সে বলে চলছে, মাঝে মাঝে পুরনো ধর্মের দু-একটা ব্যাপার ইচ্ছা করেই তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়, যেন ধর্ম পাল্টানোটা খুব বেশি আঘাত হয়ে দেখা না দেয়। এর একটা সুন্দর নাম আছে। ট্রান্সমিউটেশন। এর ফলে মানুষ নতুন ধর্মের উপর কিছুটা আস্থা রাখতে শেখে। ফলে বদলে যাওয়া লোকগুলো সেই একই অনুষ্ঠান পালন করে, একই ভাবে সূর্য পূজা করে, শুধু তাদের পরনে থাকে নতুন ধর্মের খোলস… ফলে অন্য আরো কোন ঈশ্বরের আরাধনা চলে আসে তাদের কর্মে।

    সামনের মেয়েটা ফোস ফোস করছে যেন, আপনি বলতে চান খ্রিস্টবাদ আসলে সূর্য পূজার নূতন রূপ ছাড়া আর কিছুই নয়?।

    অবশ্যই না। খ্রিস্টান শুধু সূর্য পূজা থেকে ধার করেনি, ঐতিহ্য ধার করেছে আরো অনেক কিছু থেকে। ক্রিস্টিয়ান ক্যানোনাইজেশন আসলে আগের দিনের দেব সৃষ্টির কাজ থেকে নেয়া। গড-ইটিংয়ের ব্যাপারটা এসেছে প্রাচীণ এ্যাজটেকদের কাছ থেকে। সেই হলি কষ্যনিয়ন! এমনকি আমাদের পাপ মোচনের জন্য যীশুর আত্মাহুতিও আমাদের মৌলিক কোন ব্যাপার নয়। এটাও ধার করা। কোয়েঞ্জালকোটের প্রাচীণ পুরাণে দেখা যায় জনপদের পাপ স্খলন করতে তরুণ যুবার দল জীবনপাত করছে।

    এবার আরো কঠিন হয়ে গেল মেয়েটার কণ্ঠ, তাহলে, এমন কিছু কি আছে খ্রিস্টানত্বে যা দিয়ে ব্যাপারটার কিছু দিককে মৌলিক বলা চলে?

    যে কোন মূল বিশ্বাসের বেশিরভাগই আসলে মোটামুটি খাদ মিশানো। ধর্ম কখনোই এককভাবে শুরু হয়নি। বরং তাদের একটার উপর ভিত্তি করে আরেকটা গজিয়ে উঠছে হরদম। আধুনিক ধর্ম আর কিছুই নয়… মানুষ শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে অচেনাকে চেনার, অব্যাখ্যাতকে ব্যাখ্যা করার জন্য যা করে আসছে সেগুলোর একটা সম্মিলিত রূপই এই ধর্ম।

    উম… হোল্ড অন! হিজরট বলল, বোঝা যাচ্ছে এতোক্ষণে তার চোখের ঘুম পালিয়েছে, আমি ক্রিশ্চিয়ানিজমের এমন কিছুর কথা জানি যা একেবারে মৌলিক। আমাদের গড়ের ব্যাপারে কী হবে? খ্রিস্টানরা কখনোই ঈশ্বরকে অন্যের আদলে আকেনি। তারা এ্যাজটেক আর সৌর-পূজারীদের মত তাকে কোন অবয়ব দেয়নি। তার অবয়ব শ্বেত-শুভ্র, তার দাড়ি লম্বা এবং পাকা। এর সাথে নিশ্চই আর সব ধর্মের মিল নেই। আমাদের ঈশ্বর মৌলিক, ঠিক না?

    আবারো হাসল ল্যাঙডন। যখন প্রথমদিকের খ্রিস্টানরা তাদের আদিকালের দেবতাদের ছেড়ে এসেছে–পাগান দেবতা, রোমান দেবতা, গ্লিক, সান, মিথ্রাইক, যাই হোক–তারা চার্চকে সর্বক্ষণ প্রশ্ন করে তিতি বিরক্ত করেছে, তাদের নতুন ঈশ্বর দেখতে কেমন? বিজ্ঞের মতই জবাব দিয়েছে গির্জা। সবচে ক্ষমতাবান, সবচে ভয় পাওয়া জনকেই বেছে নিয়েছে তারা… সব ইতিহাস-সচেতন মানুষের কাছেই তার পরিচিতি আছে।

    এখনো ঠিক যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না ছাত্রটা। একজন বৃদ্ধলোক, যার শ্বেত-শুভ্র দাঁড়ি আছে?

    দেয়ালে রাখা প্রাচীণকালের দেবতাদের চার্টের দিকে আঙুল তাক করল ল্যাঙডন। সেখানেও বড় বড় সাদা দাড়ির সাথে মানিয়ে গেছেন দেবতা।

    জিউসের সাথে মিল পাওয়া যায় না কি?

    সেদিন ক্লান্টা এভাবেই শেষ হয়েছিল।

    গুড ইভিনিং. এক লোকের কণ্ঠ বলল।

    সাথে সাথে লাফ দিল ল্যাঙডন। ফিরে এসেছে সে প্যান্থিয়নে। নীল ক্যাপ পরা এক বয়েসি লোকের সাথে সে আরেকটু হলে ধাক্কা খেয়েছিল। তার বুকে একটা লাল ক্রস। তার হলদে দাঁতে ঝিকিয়ে উঠল হাসি।

    আপনি ইংরেজ, ঠিক না? লোকটার উচ্চারণ পুরোপুরি টাসকান।

    পিটপিট করল ল্যাঙডন চোখ, তারপর বলল, আসলে তা নয়, আমি আমেরিকান।

    লোকটা যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল, ওহ্, হ্যাভেন! মাফ করবেন, প্লিজ। আপনার পোশাক এত ভালভাবে সাজানো ছিল… আমি মনে করে বসলাম… ক্ষমা করবেন।

    আমি কি আপনার কোন কাজে লাগতে পারি? বলল ল্যাঙডম অবশেষে। তার হৃদপিন্ড এখনো ধ্বক ধ্বক করছে।

    না, আসলে আমি ভাবছিলাম আমিই হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আমিই এখানকার সিসেরোন।

    লোকটা তার সিটি ইস্যু করা ব্যাজের দিকে সগর্বে নির্দেশ করল। আপনার রোম ভ্রমণ আরো চিত্তাকর্ষক করার দায়িত্ব বর্তেছে আমার মত মানুষদের কাঁধে।

    আরো চিত্তাকর্ষক! ল্যাঙডন জানে, এরচে বেশি চিত্তাকর্ষক রোম ভ্রমণ গত কয়েক শতকে কোন মানুষ করেনি।

    আপনাকে দেখে মনে হয় উঁচু কোন কাজে নিয়োজিত আছেন বলল গাইড, মনে হচ্ছে আপনি ইতিহাস সম্পর্কে আর সবার চেয়ে বেশি আগ্রহী। অন্তত গডপড়তার চেয়ে বেশি। আপনাকে এই অত্যন্ত সুন্দর এলাকা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।

    হাসল সে সাথে সাথে, অনেক ধনাবাদ আপনাকে, কিন্তু আমি নিজেই একজন আর্ট হিস্টোরিয়ান আর

    অসাধারণ! যেন কোন জুয়ায় এইমাত্র লোকটা একটা বিশাল দান জিতে নিয়েছে, এমন সুরে বলল, তাহলে আপনার মত আগ্রহ আর কার হবে এসব বিষয়ে?

    না। আসলে আমি আশা করি। দ্য প্যান্থিয়ন… লোকটা বলা শুরু করল তার ধূসর স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে, মার্কাস এ্যাগ্রিপ্পা এটা বানিয়েছিলেন খ্রিস্টপূর্বাব্দ সাতাশ সালে।

    হ্যাঁ। এবং একশো উনিশ খ্রিস্টাব্দে সেটাকে আবার বানানো হয়। এবার স্থপতি ছিলেন হ্যাড্রিয়ন।

    নিউ অর্লিন্সে উনিশো ষাট সালে সুপারডোম গড়ার আগে এটাই ছিল পৃথিবীর সবচে বড় ফ্রি স্ট্যান্ডিং ডোম!

    মনে মনে গজগজ করল ল্যাওড়ন। লোকটাকে কোনমতে থামানো যাচ্ছে না।

    আর পঞ্চম শতাব্দির এক লোক প্যান্থিয়নকে তুলনা করেছিল শয়তানের আস্তানার সাথে। তার মতে, উপরের দিককার ঐ ছিদ্রটা দিয়ে শয়তানরা অনুপ্রবেশ করবে। এন্ট্রান্স ফর দ্য ডেমনস।

    লোকটা এখনো ভাগছে না। কী করা যায়। সে এবার কথা বলতে বলতে মুখ তুলে তাকাল ওকুলাসের দিকে। তার মনে বিভীষিকার সৃষ্টি করল একটা চিন্তা। ভিট্টোরিয়ার কথা যদি ঠিক হয়? একটা অসাড় করা চিন্তা এলোমেলোভাবে চলছে তার মনোজগতে… একজন ব্র্যান্ডেড কার্ডিনাল ঐ গর্ত ধরে পড়ছে! পড়ছে মর্মরের বাঁধানো মেঝেতে। এটা দেখার মত একটা ব্যাপার হবে, অন্তত মিডিয়ার কাছে। ল্যাঙডন এরই মধ্যে জরিপ শুরু করে দিয়েছে। ভিতরে কোন সাংবাদিক আছে কি? নেই।

     

    রুমের অন্যপ্রান্তে, ভিট্টোরিয়া চষে চলেছে চারধার। তার স্বভাবসুলভ তীক্ষ্ণ্ণ চোখ দিয়ে। বাবার মৃত্যুর পর, এই প্রথম সে একা হতে পেরে যেন নিজের কষ্টটাকে উঠে আসতে দিল। গত আটটা ঘণ্টা কীভাবে কীভাবে পেরিয়ে গেল কে জানে! খুন হয়ে গেছে তার বাবা–নিষ্ঠুরভাবে, নির্মমভাবে। একই ব্যথা উথলে ওঠে তার বাবার আবিষ্কারকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রে রূপান্তরিত হতে দেখে। এন্টিম্যাটারটা বহনযোগ্যতা পেয়েছে তার দোষে। তারই আবিস্কৃত পন্থায়। ব্যাপারটা আরো যন্ত্রণা বয়ে আনে তার কাছে… তার বাবার সত্যানুসন্ধান আজ পড়ে আছে ভ্যাটিকানে, খোদ আরাধ্য স্থানে, ধ্বংসদূত হয়ে।

    তার জীবনে আরেক বিস্ময় এই একেবারে অপরিচিত লোকটা। রবার্ট ল্যাঙডন। লোকটার চোখে কোন আকর্ষণ নেই… নিরুত্তাপ। একটা মেয়ে যে তার সাথে আছে, সুন্দর একটা মেয়ে, তা যেন সে টেরই পাচ্ছে না। ঠিক যেন কোনকিছুকে বিন্দুমাত্র মূল্য না দেয়া সমুদ্রের উর্মিমালা… বেপরোয়া, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক। আজও সে সেই সমুদ্রের কাছেই ছিল। তারপরই খবরটা… সে আসলেই সন্তুষ্ট ল্যাঙডনের মত একজন সঙ্গী পেয়ে। শুধু উষ্ণ সঙ্গই নয়, নয় শক্তির একটা উৎস হিসাবে, ল্যাঙডনের ত্বড়িৎ বুদ্ধিমত্তা তার বাবার খুনিকে ধরে ফেলার একটা সুযোগ এনে দিয়েছে।

    বিশাল গোলার্ধ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বড় করে শ্বাস নেয় একটা ভিট্টোরিয়া। সে ভাবতেও পারে না সমস্ত প্রাণীর প্রতি অদ্ভুত মায়া মাখানো লোকটা, নিতান্তই ধার্মিক লোকটাকে এমন বিকৃত মানসিকতায় খুন করা যায়। সে খুনিকে মৃত অবস্থায় দেখতে চায়। মৃত। সে দেখতে পায় কী এক অব্যাখ্যাত ক্রোধ তার ইতালিয় রক্তে টগবগ করে ফুটছে… এ জীবনে প্রথমবারের মত। তার সিসিলিয়ান পূর্বপুরুষরা পরিবারের অমোচনীয় তিতে ফিসফিস করে যেন প্রতিশোধের কথা মনে করিয়ে দিেছ প্রতিনিয়ত। ভেট্টো! ভাবল মেয়েটা, এবং প্রথমবারের মত তার মূল অর্থ অনুধাবন করতে পারল।

    এগিয়ে গেল সে সামনে, সেখানটায় রাফায়েল শান্তির কবর আছে। শায়িত আছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এক দেয়ালচিত্র আকিয়ে।

    রাফায়েল শান্তি, ১৪৮৩-১৫২০

    সে মনোযোগ দিয়ে পড়ল কবরফলকটা। দেখল সেখানকার লেখা।

    তারপর… সে আবার পড়ল।

    এরপর পড়ল আর।

    এক মুহূর্ত পরে, সে ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে যেতে লাগল, রবার্ট। রবার্ট!

     

    ৬২.

    ল্যাঙডন গায়েপড়া গাইডের জ্বালা যন্ত্রণায় হন্যে হয়ে গেছে, কিন্তু লাভ হচ্ছে না  কিছুমাত্র। তার কাজ আটকে গেছে অনেকাংশে, আটকে গেছে শেষটা। সে ফিরে তাকাল লোকটার দিকে। এখনো একমনে বকবক করছে বয়েসি লোকটা। ল্যাঙডন এগিয়ে গেল সামনের এ্যালকোভের দিকে।

    দেখে মনে হচ্ছে বেশ উপভোগ করছেন আপনি এ ব্যাপারটা,বেহায়ার মত কথা বলেই যাচ্ছে লোকটা। আপনি কি জানেন, দেয়ালের এই পুরুত্বের জন্যই ডোমটা প্রায় ভরশূণ্য হয়ে আছে?

    নড করল ল্যাঙডন, একবিন্দুও শুনছে না সে লোকটার কথা। হঠাৎ পিছন থেকে কে একজন তাকে ধরে ফেলল। ভিট্টোরিয়া। তার চোখমুখে ঠিকরে পড়ছে আতঙ্ক। সাথে সাথে ল্যাঙডনের মনে হল একটা কথা। সে নিশ্চই কোন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে। আৎকে উঠল ল্যাঙডন।

    আহ্! আপনার স্ত্রী। গাইড লোকটা যেন সত্যি সত্যি উৎফুল্ল হয়েছে, আরো একজন মেহমান পেয়ে যেন আহ্লাদে আটখানা। সে তার শর্ট প্যান্ট আর উঁচু হয়ে ওঠা বুটের দিকে চোখ রেখে বলল, এবার আমি হলপ করে বলতে পারি, আপনি একজন আমেরিকান।

    আমি একজন ইতালিয়। ওহ! ডিয়ার!

    রবার্ট! ফিসফিস করল ভিট্টোরিয়া, পিছনটা দিল গাইডের দিকে, গ্যালিলিওর ডায়াগ্রামা। আমি দেখতে চাই ওটাকে।

    ডায়াগ্রামা! নির্দ্বিধায় নাক গলাল সেই বেহায়া গাইড, মাই! আপনারা নিশ্চই অনেক কিছু জানেন। কপাল মন্দ, ডকুমেন্টটা দেখতে পাবেন না। সেটা ভ্যাটিকান সিটির গোপন আর্কাইভে।

    আপনি কি আমাদের মাফ করতে পারবেন? একটু কষ্ট হয়ে যেন বলল ল্যাঙডন। ভিট্টোরিয়ার আতঙ্ক দেখে সে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। যত্ন করে সে ডায়াগ্রামার ফোলিওটা বের করল। হচ্ছেটা কী?

    এখানে কোন ডেট দেয়া আছে।

    খুঁটিয়ে দেখল ল্যাঙ৬ন, কোন তারিখ তো…

    ট্যুরিস্ট রিপ্রোডাকশন, বলল ল্যাঙডন, দাঁতের ফাঁক দিয়ে, আপনার সহায়তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আর আমার স্ত্রী একটু একান্ত সময় কাটাতে চাই।

    লোকটা পিছিয়ে গেল। তার চোখ পড়ে আছে কাগজটার উপর।

    তারিখ… আবার বলল ভিট্টোরিয়া, কবে এটা প্রকাশ পায়?

    রোমান অক্ষরে লেখা আছে। সমস্যাটা কোথায়?

    ষোলশ উনচল্লিশ?

    হু। সমস্যা কোথায়?

    চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল মেয়েটার, আমরা সমস্যায় আছি, রবার্ট, মহা সমস্যায়। তারিখ মিলছে না।

    কোন তারিখ মিলছে না?

    রাফায়েলের টম্বের তারিখ। সতেরশো উনষাটের আগ পর্যন্ত তিনি এখানে শায়িত হননি। ডায়াগ্রামা ছাপা হবার এক শতক পরে।

    ল্যাঙডন একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চেষ্টা করছে কথার মর্ম বোঝার। না। রাফায়েল মারা গেছেন পনেরশ বিশে। ডায়াগ্রামার অনেক অনেক আগে।

    ঠিক তাই। কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত তিনি এখানে ছিলেন না। অনেক অনেক পরে। তাকে এখানে কবর দেয়া হয়।

    কী যা-তা বলছ?

    আমি এইমাত্র সেটা পড়ে এলাম। শতেরশ আটান্ন সালে রাফায়েলের দেহাবশেষ এখানে কবর দেয়া হয়। ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে তাকে এখানে দাফন করা। হয় আবার।

    কথাগুলোর ধাক্কা মোটেও সামলে উঠতে পারছে না সে। কী আবোল তাবোল কথাবার্তা হচ্ছে এসব!

    কবিতাটা যখন লেখা হয়, ঘোষণার সুরে বলে ভিট্টোরিয়া, তখন রাফায়েলের কবর অন্য কোথাও ছিল। এখানে নয়। সে সময়টায় প্যান্থিয়নের সাথে এ লোকের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না।

    কিন্তু… এর মানে…

    তাই আমি বলছি। আমরা ভুল জায়গায় এসে বসে আছি।

    অসম্ভব… আমি নিশ্চিত ছিলাম… ভাবছে ল্যাঙডন।

    সাথে সাথে এগিয়ে গেল ভিট্টোরিয়া ল্যাঙডনকে টেনে নিয়ে, সিনর, মাফ করবেন আমাদের। ষোলশ সালের আগে রাফায়েলের দেহাবশেষ কোথায় ছিল?

    আর্ব… আর্বিনো। তার জন্মস্থানে।

    অসম্ভব! বলল ল্যাঙডন, মাথা নাড়তে নাড়তে। ইলুমিনেটির আস্তানা এই রোমেই ছিল। আর তাদের সমস্ত কর্মকান্ডও সীমিত ছিল এখানে। রাফায়েলের জন্মস্থানের সাথে এটার পথের কোন সম্পর্ক গড়ানো অসম্ভব।

    ইলুমিনেটি? সাথে সাথে রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে গেল গাইডের চোখজোড়া, আপনারা কারা বলুন তো?

    সাথে সাথে দায়িত্ব নিয়ে নিল ভিট্টোরিয়া, আমরা এমন এক জায়গার সন্ধানে বেরিয়েছি যেটাকে শান্তিস আর্থি টম্ব বলা হয়। রোমের ভিতরেই কোথাও। আপনি কি আমাদের বলতে পারেন কোথায় হতে পারে জায়গাটা?

    রোমে এটাই রাফায়েলের একমাত্র কবর।

    ল্যাঙডন চেষ্টা করছে ভাবার। কিন্তু তার মন মানতে রাজি নয়।

    ষোলশ পঞ্চান্নতে রাফায়েলের টম্ব যদি রোমে না-ই থেকে থাকে তাহলে কী উদ্দেশ্যে কবিতাটা লেখা হয়? শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ দ্য ডেমনস হোল? কোন চুলার কথা এটা? ভাব!

    শান্তি নামে আর কোন আর্টিস্ট কি ছিলেন? যথা সম্ভব কথা আদায় করে নিচ্ছে মেয়েটা।

    আমি তো জানি না।

    আর কোন কোন পেশায় এমন বিখ্যাত কেউ থাকতে পারেন? বিজ্ঞানী, কবি বা এ্যাস্ট্রোনোমার? শান্তি নামে?

    এবার যাবার পাঁয়তাড়া কষছে গাইড লোকটা, না, ম্যাডাম, আমি একমাত্র শান্তি র কথা জানি। রাফায়েল দ্য আর্কিটেক্ট।

    আর্কিটেক্ট? আমিতো জানতাম তিনি একজন পেইন্টার।

    তিনি উভয়ই ছিলেন। তাদের সবাই। মাইকেলেঞ্জেলো, দা ভিঞ্চি, রাফায়েল।

    ল্যাঙডন চারপাশের কবরগুলোর অবস্থিতি দেখে এখন আর কোন কথা তার মনে জায়গা করে নিতে পারছে না। শান্তি একজন স্থপতি ছিলেন। তখনকার আর্কিটেক্টরা দু ধরনের কাজই করত। এক-বিশাল বিশাল ধর্মীয় মূর্তি বানাত, অথবা বিভিন্ন দর্শনীয় কবরের এলাকায় ভবন তৈরি করত। শন্তিস টম্ব। এমনটা কি হতে পারে? তার কল্পনা

    এবার খুব দ্রুত পাখা মেলতে শুরু করল…

    দা ভিঞ্চির মোনালিসা

    মনেটের ওয়াটারলিলি

    মাইকেলেঞ্জেলোর ডেভিড

    শান্তির আর্থি টম্ব…

    শান্তি টটার ডিজাইন করেছেন। বলল ল্যাঙডন অবশেষে।

    ঘুরে দাঁড়াল ভিট্টোরিয়া, কী?

    রাফায়েলের টম্ব বলতে রাফায়েল যেখানে শায়িত আছেন সেকথা বলা হয়নি, তিনি যে টম্ব ডিজাইন করেছেন সেটার কথা বলা হচ্ছে।

    কী আবোল তাবোল বকছ?

    আমরা ভুল পথে হাঁটছি, আসলে শান্তি যেখানে শুয়ে আছেন সেখানকার কথা বলা হয়নি। তিনি যে টটার ডিজাইন করেছিলেন অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে সেটার কথাই বলা হয়েছে। রেনেসাঁর সময়টায় যত জ্ঞানী-গুণী মারা যেত তাদের কবর দেয়া হত রোমে। আর সে সময়টার লোক ছিলেন রাফায়েল। রাফায়েলের টম্ব বলতে শত শত কবরখানাকে বোঝানো হতে পারে। নিশ্চই তিনি অনেক ডিজাইন করেছেন।

    শত শত?

    ঠিক তাই।

    আর তার মধ্যে কোন না কোনটা আর্থি, প্রফেসর।

    সাথে সাথে একটা ধাক্কা খেল ল্যাঙডন। সে রাফায়েলের কাজ সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। যা জানে তা দিয়ে মোটামুটি কাজ চালিয়ে নেয়া যায়। তাই বলে… এখানে মাইকেলেঞ্জেলো হলে সে তেড়েফুঁড়ে সব বলতে পারত। সে বড়জোর আরো খান-দুই বিখ্যাত টম্বের কথা বলতে পারবে কিন্তু সেগুলো দেখতে কেমনতরো তার বিন্দু বিসর্গও বলতে পারবে না।

    একটু একটু করে পিছিয়ে যেতে থাকা গাইডের দিকে তাকাল ভিট্টোরিয়া, কারণ ল্যাঙডন কোন খেই পাচ্ছে না। সে খপ করে ধরে ফেলল লোকটার হাত, আমরা একটা টম্বের হদিস চাই। এমন এক টম্ব যেটা রাফায়েলের ডিজাইন করা এবং যাকে আর্থি বলা চলে।

    এবার যেন গাইডের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। রাফায়েলের টম্ব? আমি জানি না। তিনি অনেক অনেক ডিজাইন করেছেন। আর আপনারা হয়ত রাফায়েলের ডিজাইন করা কোন চ্যাপেলের কথা বলছেন, টম্ব নয়। স্থপতিরা সব সময় টম্বের সাথে চ্যাপেলের গডন গুলিয়ে ফেলেন। এটা করে তারা মজা পান।

    হঠাৎ টের পায় ল্যাঙডন, লোকটার কথা কত সত্যি!

    রাফায়েলের টম্ব বা চ্যাপেলগুলোর কোনটা কি মেটে হিসাবে বিবেচিত?

    শ্রাগ করল লোকটা। আমি দুঃখিত। আপনি কী বলতে চান তার কিছুই আমি বুঝে উঠতে পারছি না। মেটে দিয়ে কী বোঝাচ্ছেন তা আপনিই ভাল বলতে পারবেন। আমার এবার যেতে হয় যে!

    এবার নাচার হয়ে যাওয়া গাইডের দিকে তাকিয়ে ডায়াগ্রামা থেকে পড়তে শুরু করল ভিট্টোরিয়া, ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস হোল। এর কোন মানে কি আপনি ধরতে পারছেন?

    একটুও নয়।

    এবার হঠাৎ করে যেই ধরে ফেলল ল্যাঙডন, উল্লসিত হয়ে উঠল সে, ডেমনস হোল! আরে, মরার শব্দগুলো আগে কেন মনে পড়ল না!

    রাফায়েলের টম্ব বা চ্যাপেলের কোনটায় কি ওকুলাস আছে? মানে উপরে কোন ছিদ্র আছে?

    আমার জানা মতে, প্যান্থিয়ন ইউনিক। কিন্তু…।

    দুজনে একই সাথে চিল্কার করে উঠল, কিন্তু কী?

    একটা ডেমনস হোল? কিন্তু… বুকো ডিয়াভোলো?

    নড করল ভিট্টোরিয়া, অর্থ করলে, ঠিক তাই।

    হাসল লোকটা। এই একটা ব্যাপার আছে যেটার সাথে আমি তেমন একটা পরিচিত নই। আমার ভুল না হলে বুকো ডিয়াভেলো দিয়ে আন্ডারক্রফট বোঝানো হয়।

    আন্ডারক্রফট? জিজ্ঞেস করল ল্যাঙডন, ক্রিপ্ট?

    ঠিক তাই। চার্চের নিচে, মাটির তলায় লাশ মাটি দেয়ার জায়গা। কিন্তু এটা দিয়ে শুধু ক্রিপ্ট বোঝানো হয় না। বোঝানো হয় বিশেষ ধরনের ক্রিপ্ট। আমি যদ্দূর জানি, কবর দেয়ার এক বিশাল এলাকা, যেটা কোন চ্যাপেলে থাকে… অন্য কোন টম্বের নিচে…

    অসুয়ারি এ্যানেক্স? জবাব দাবি করল ল্যাঙডন, সাথে সাথে উবে গেল তার ভিতরের হতাশা।

    আরে… এই শব্দটাই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

    ব্যাপারটাকে মাথায় সেঁধিয়ে নিল ল্যাঙড়ন। অসুয়ারি এ্যানেক্স হল এক প্রকারের চ্যাপেল। মাঝে মাঝে চার্চ যখন তাদের প্রিয় সদস্যদের কবর দেয় তখন মাঝে মাঝে পরিবারের লোকজন দাবি করে যেন তাদের একত্রে কবর দেয়া হয়… তাদের আশা থাকে গির্জার ভিতরেই কোথাও তারা দুজনেই বা সবাই সমাহিত হবে। যখন একটা চার্চের যথেষ্ট টাকা বা জায়গা থাকে না একটা পরিবারের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়ার মত তখন বিকল্প ব্যবস্থা দেখা হয়। তখনি তারা মাঝে মাঝে অসুয়ারি এ্যানেক্স খোঁড়ে। টম্বের পাশে মেঝেতে একটা গর্ত খোদাই করে। ডেমনস হোল। কালক্রমে এটা বেশ জনপ্রিয় একটা পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়।

    এবার ল্যাঙডনের হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে। ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস হোল। যেন কোন প্রশ্নের উত্তর মিলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাফায়েল কি এমন কোন টম্ব ডিজাইন করেছিলেন যেটায় তেমন ডেমনস হোল ছিল?

    আসলে… আমি দুঃখিত, এখন একটার কথা মাত্র মনে পড়ছে।

    মাত্র একটা! হতাশ হল ল্যাঙডন। সে আরো বেশি আশা করেছিল।

    কোথায়? প্রায় চিক্কার করে উঠল ভিট্টোরিয়া।

    তাদের দিকে অবাক করা চোখে তাকাল লোকটা, এটাকে চিগি চ্যাপেল নামে ডাকা হয়। অগাস্টিনো চিগি আর তার ভাইয়ের টম্ব। শিল্প আর বিজ্ঞানের বড় বড় মহারথী তারা।

    বিজ্ঞানের? ভিট্টোরিয়ার দিকে চকিত দৃষ্টি বুলিয়ে ল্যাঙডন তাকাল লোটার দিকে।

    কোথায়? আবার প্রশ্ন করল মেয়েটা।

    আমি বলতে পারি না টম্বটা আর্থি কিনা… কিন্তু এটুকু নির্দ্বিধায় বলতে পারি… এটা ডিফারেন্টে।

    ডিফারেন্ট? ল্যাঙডন বলল, কীভাবে?

    স্থাপত্যের দিক দিয়ে। রাফায়েল শুধু আর্কিটেক্ট ছিলেন। ভিতরের কারুকাজ আর অন্যান্য ব্যাপার করেছে বাকীরা। আমার মনে পড়ছে না কারা।

    ল্যাঙডন এবার যেন তীরের কাছে চলে এসেছে। সেই বিখ্যাত ইলুমিনেটি আর্টিস্ট, মাস্টার, আর কে?

    কবরটা আর যেমনি হোক না কেন.. বলছে গাইড, সেটা দেখে মনে তৃপ্তি আসবে না। কেন আসবে না? আমার ঈশ্বর জানেন। কে পিরামিদেসের নিচে শায়িত হতে চায়?

    নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না ল্যাঙডন, পিরামিড? একটা চ্যাপেলের ভিতরে পিরামিড আছে? এখান থেকে কতদূরে?

    মাইলখানেক উত্তরে। সান্তা মারিয়া ডেল প্রোপোলোতে।

    সাথে সাথে ধন্যবাদ দিয়ে হিসাব চুকিয়ে দিতে চাইল ভিক্টোরিয়া, ধন্যবাদ আপনাকে, চল-

    হেই! সাথে সাথে বাধা দিল বয়েসি গাইড লোকটা, আমি ভেবে পাই না কী বোকা আমি!

    ভিট্টোরিয়া সাথে সাথে তার দিকে তাকাল, বলবেন না প্লিজ, আপনার কোন ভুল হয়েছে।

    না, ভুল হয়নি। বরং একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আসি। চিগি চ্যাপেল সব সময় চিগি নামে পরিচিতি পায় না। এর আরো একটা নাম আছে। চ্যাপেলা ডেলা টেরা।

    চ্যাপেল অব দ্য ল্যান্ড? অনুবাদ করেই জানতে চাইল ল্যাঙডন।

    না। শুধরে দিল ভিট্টোরিয়া, চ্যাপেল অব দ্য আর্থ।

     

    ভিট্টোরিয়া ভেট্রা তার সেলফোনে যোগাযোগ করল কমান্ডারের সাথে। কমান্ড ওলিভেট্টি! বলল সে, আমরা ভুল জায়গায় মাথা কুটে মরছি।

    ভুল? কী বলতে চান আপনি?

    সায়েন্সের প্রথম অল্টার হল চিগি চ্যাপেল।

    কোথায়? কিন্তু মিস্টার ল্যাঙডন বলেছিলেন…

    সান্তা মারিয়া ডেল পোপোলো। এক মাইল উত্তরে। আপনার লোকজনকে সেখানে সরিয়ে নিন। দ্রুত। আমাদের হাতে মাত্র চার মিনিট সময় আছে।

    কিন্তু আমার লোকজন এখানে পজিশনে আছে। আমি সম্ভবত সময়ের মধ্যে…

    মুভ! বন্ধ করে দিল ভিট্টোরিয়া তার সেলফোনটা।

    তার পিছনে পিছনে প্যাভিয়ন থেকে বেরিয়ে এল ল্যাঙডন।

    এখন আর সুইস গার্ডের গাড়িতে আরামে আয়েশে ফিরে যাবার সময় নেই। ভিট্টোরিয়া খামচে ধরল ল্যাঙডনের হাত। সোজাসাপ্টা নিয়ে চলল সামনের দিকে। তারপর যেখানে ট্যাক্সির লাইন জটলা বাধিয়ে রেখেছে সেখানে প্রথম ক্যাবটাকে খালি পেয়েই ঝটকা দিয়ে খুলে ফেলল সেটার দরজা। ধরফড় করে জেগে উঠল ড্রাইভার।

    সে কিছু বোঝার আগেই ভিতরে ঠেলে দিল সে ল্যাঙডনকে, তারপর কিছু বুঝতে দিয়ে ড্রাইভারকে বলল, সান্তা মারিয়া ডেল পোপোলো। চিত্তার করল সে, প্রেসতো!

    ঘুমভাঙা চোখে তাকিয়ে কী বুঝল ড্রাইভারই বলতে পারবে। সোজা এ্যাক্সিলারেটরে পা দাবিয়ে দিল সে।

     

    ৬৩.

    গুন্থার গ্লিক চিনিতা ম্যাক্রির কাছ থেকে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল নিজের তহাতে।

    আমি তোমাকে আরো আগেই বলেছিলাম, বলল গ্লিক, আরো কিছু কি চাপ দিয়ে, ব্রিটিশ টেটলার একমাত্র পত্রিকা নয় যেটা সর্বক্ষণ এসব নিয়ে মেতে থাকে।

    ম্যাক্রি আরো কাছে এসে চোখ বুলিয়ে নেয়। গ্লিকের কোথাও ভুল হয়নি। গত দশ বছরে বিবিসির ডাটাবেসে ইলুমিনেটি নামক সংস্থাটা নিয়ে ছবার খবর বেরিয়েছে। আমাকে লালচে রঙে রাঙিয়ে নাও। মনে মনে বলল ম্যাক্রি। কে এই কাহিনীর জনক? কোন সাংবাদিক? সে রসিকতা ভালই করতে জানে।

    নোংরা রসিকতা বিবিসি করে না।

    তারা তোমাকে ভাড়া করেছে কোন দুঃখে?

    আমি বুঝতে পারছি না কেন তুমি এমন করল। ইলুমিনেটি একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার।

    একই রকম ঐতিহাসিক ব্যাপার ডাইনি বুড়িরা, ইউ এফ ও এবং নোচ নেস দানবেরা।

    ঘটনার পরম্পরা পড়ছে গ্লিক। উইনস্টন চার্চিল নামে কোন লোকের কথা কি কখনো তুমি শুনেছ?

    মনের ঘন্টি বাজিয়ে দেয়।

    তুমি কি জান, উনিশো বিশের দশকে এই চার্চিল ইলুমিনেটির অনৈতিক কাজের জন্য সারা দুনিয়াকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন?

    কোথায় এ নিয়ে লেখা এসেছিল? ব্রিটিশ টেটলারে?

    লন্ডন হেরাল্ডে। আটই ফেব্রুয়ারি, উনিশো বিশ।

    অসম্ভব।

    নিজের চোখে দেখ।

    ক্লিপটার দিকে আরো তীক্ষ্ণ্ণ চোখে তাকায় ম্যাক্রি। ঠিকই তো! যাক। চার্চিল একজন প্যারানয়েড ছিল।

    সে একা হলেও কথা ছিল। উড্রো উইলসন উনিশো একুশে আরো একটা তথ্য জানান। রেডিও ব্রডকাস্টে তিনি ঘোষণা করেন, আমেরিকান অর্থনীতির উপর ক্রমাগত ইলুমিনেটির প্রভাব বাড়ছে। তুমি কি রেডিও ট্রান্সক্রিপ্টটা দেখতে চাও?

    আসলে না।

    তিনি বলেছিলেন, খুব ভালভাবে সংগঠিত, খুব তীক্ষ্ণ্ণ মেধা সম্পন্ন, খুব পরিপূর্ণ, খুব লক্ষ্যস্থির করা এমন এক শক্তি আছে যারা যখন কোন কথা বলে তার উপর কোন কথা বলার মত শক্তি আর কেউ পায় না।

    আমি কখনো এ সম্পর্কে কিছু শুনিনি!

    হয়ত এজন্যে যে উনিশো একুশের দিকে তুমি একেবারে দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলে।

    ভাল, ভাল! ম্যাক্রি মনে মনে একটু ধাক্কা পেলেও সেটাকে কোনমতে সামলে নেয়। তার বয়স এখন তেতাল্লিশ। কম নয়। তার চুলের ঢল এখন একটু ধূসর হয়ে উঠছে। তার মা, একজন ব্যাপ্টিস্ট, তাকে শিক্ষা দিয়েছিল।

    যখন তুমি একজন কালো মহিলা, তার মা বলতেন, কখনো সত্যটা লুকানোর চেষ্টা করবে না। যেদিন তুমি তেমন কোন চেষ্টা করবে সেদিনই তোমার আত্মিক মৃত্যু হবে। আর তাই, সক সময় তুমি হাসবে। তারা ভেবে মরবে কোন দুঃখে তুমি হাসছ।

    কখনো সিসিল রোডসের নাম শুনেছ? জিজ্ঞেস করল গ্লিক।

    ব্রিটিশ প্রযোজক?

    জি। রোডস স্কলারশিপ যিনি শুরু করেন।

    আমাকে বলো না–

    ইলুমিনেটাস।

    বিএস?

    বিবিসি, আসলে। নভেম্বর মোল, উনিশো চুরাশি।

    আমরা লিখেছি যে সিসিল রোডস ইলুমিনেটি?

    আর আমরা আরো জানি যে রোডস স্কলারশিপ আর কিছু নয়। তরুণ ইলুমিনেটিদের পড়ালেখা চালানোর জন্য একটা সহায়তার বৈতরণী।

    অসম্ভব! আমার চাচা একজন রোডস স্কলার ছিলেন।

    বিল ক্লিনটনও।

    এবার তেতে উঠল ম্যাক্রি। সে গুজবে খবরে মোটেও বিশ্বাস করে না বরং ব্যাপারটাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তবু সে জানে, বিবিসির মত কোন প্রতিষ্ঠানই এত ছেকে, এত ভেবে চিন্তে খবর প্রকাশ করে না।

    আরো একটা ব্যাপার আছে ম্যাক্রি, কথাটা তোমার জন্য ভালই হবে। উনিশো আটানব্বইয়ের পাঁচ মার্চ। পার্লামেন্ট কমিটি চেয়ার, ক্রিস মুলিন। ডাকলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সবাইকে, যারা মেসন ছিলেন। তাদের সাথে মতামতের বিনিময় হল

    তার।

    মনে আছে ম্যাক্রির। ভুলে যায়নি সে। কেন এটা হয়েছিল? আরেকবার বলবে?

    পড়ল গ্লিক, … মেসনদের ভিতরেই দানা বেঁধে উঠছে আর একটা গুপ্ত সংস্থা। সেটা আগা-পাশ-তলা এক সর্বগ্রাসী সংঘ যেটা রাজনৈতিক আর আর্থিক সুবিধাগুলো একে একে দখল করে নিচ্ছে।

    কথা সত্যি।

    কিন্তু তাতে করে সমস্যা আরো বেড়ে যায়। পার্লামেন্টের মেসনরা সাথে সাথে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এমনটাই হবার কথা। বেশিরভাগই ছিল একেবারে গোবেচারা। তারা মেসনে যোগ দিয়েছে রাজনৈতিক সুবিধা পাবার জন্য। মানুষের সেবা, সমাজসেবা, চ্যারিটি… ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের দরকার সুবিধা।

    দরকার ছিল সুবিধা।

    যাই হোক। বলল গ্লিক, মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে, এটার দিকে তাকাও একবার। এখানে ইলুমিনেটির গোড়ার দিকে আসা হচ্ছে। গ্যালিলিওর সময়টা। ফ্রান্সের গুয়েরেনেট, স্পেনের এ্যালুম্বাডােস, এমনকি কার্ল মার্ক্স এবং রাশিয়ান বিপ্লব।

    ইতিহাসের একটা নিজস্ব পন্থা আছে। নিজেকে সে বারবার নিজের মত করে লিখে নেয়।

    দারুণ! তুমি সাম্প্রতিক কালের কোন তথ্য পেতে চাও? এদিকে চোখ মেলে তাকাও। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এখানে একটা নতুন খবর আছে।

    জার্নালে?

    তুমি কি জানো আমেরিকায় বর্তমানে সবচে জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম কোনটা?

    পিন দ্য টেইল অন পামেলা এন্ডারসন।

    কাছাকাছি। এর নামঃ ইলুমিনেটি: নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার।

    ম্যাক্রি এবার এগিয়ে এসে পড়তে শুরু করল, স্টিভ জ্যাকসনের গেম সব সময়েই দারুণ বাজার পায়… এক পরা-ঐতিহাসিক এ্যাডভেঞ্চার যেখানে বাভারিয়া থেকে প্রাচীণ শয়তানি সংঘের দ্বারা পুরো পৃথিবীতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। আপনি এগুলোকে অন-লাইনেও পেতে পারেন…।

    এবার টনক নড়ল ম্যাক্রির, এই ইলুমিনেটির সাথে ক্রিশ্চিয়ানিটির কী প্রতিদ্বন্দ্বীতা?

    শুধু খ্রিস্টবাদ নয়। এক কথায় ধর্ম। আমি যে লোকটার কথ এইমাত্র শুনলাম সে আর যাই হোক না কেন, এমন কোন সংঘ থেকে আসতেও পারে।

    ওহ্! কাম অন! তুমি নিশ্চই আশা কর না যে এ লোকদের সাথে সত্যি সত্যি সেই প্রাচীণ ইলুমিনেটির যোগাযোগ আছে এবং তারা ভ্যাটিকান সিটি থেকে চারজন কার্ডিনালকে গাপ করে দিয়েছে। নাকি?

    ইলুমিনেটির সেই বার্তাবাহকের কথা? অবশ্যই বিশ্বাস করি।

     

    ৬৪.

    ল্যাঙডন আর ভিট্টোরিয়ার ট্যাক্সি এক মিনিটের মধ্যে ভায়া ডেলা স্লোফা ধরে এক টানে চলে এল এক মাইল পথ। ঠিক যেন কোন ড্রাগ গেম, কিম্বা বলা ভাল প্রিন্ট। আটটার ঠিক আগে আগে তারা সেখানে পৌঁছল। কোন সমস্যা না হওয়াতে ল্যাঙডন ট্যাক্সিওয়ালা লোকটাকে ডলারে পে করল। অনেক বেশি। সাথে সাথে বাইরে বেরিয়ে এল তারা দুজন। জনপ্রিয় রোসাতি ক্যাফেতে এলাকার কয়েকজন লোকের হৈ হল্লা ছাড়া এলাকাটাকে একেবারে নিরব বলা চলে। বাতাসে পেস্ট্রির চনমনে গন্ধ।

    এখনো ল্যাঙডন প্যান্থিয়নের ব্যাপারটা ভুল হবার ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না। চোখ পড়ে আছে মিকির দিকে, তার মন পড়ে আছে রাত আটটার দিকে। এখনি টিকটিক শুরু করে দিয়েছে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। পিয়াজ্জা যেন ইলুমিনেটির নানা বর্ণের প্রতীকে ভরপুর। শুধু আকৃতিগত মিল নয়। দেখা যাচ্ছে ডলারে থাকা পিরামিড। উচ্চতার প্রতীক। এখানে এটা একটু অন্যরকম। পাথুরে গডন, বিশাল উচ্চতা, বিপুল বপু। এখানে সবাই এটাকে এক নামে চেনে।

    মনোলিথটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ল্যাঙডন টের পায় যে আরো বেশি উল্লেখ্য কিছু দেখা যাচ্ছে এখানে।

    আমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছি, বলল সে শান্ত স্বরে, একবার আশপাশে তাকিয়ে দেখ। শিউরে উঠছে সে মনে মনে প্রকাশ করছে না।

    সামনে একটা পাথুরে পথ। সেদিক থেকে আরো একটা ব্যাপার চোখে পড়ে। দেখে পরিচিত মনে হচ্ছে কি?

    ত্রিকোণ পাথরের স্তুপের উপরে জ্বলজ্বলে একটা তারকা?

    পিরামিডের উপরে আলোক বর্তিকার উৎস।

    নড়েচড়ে দাঁড়াল ভিট্টোরিয়া, ঠিক যেন… ঠিক যেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট সিল?

    ঠিক তাই। মেসনিক এক ডলারের নোট।

    সাথে সাথে গভীর ভাবে একটা দম নিল ভিট্টোরিয়া, তারপর একটা মুহূর্ত চুপ থেকে সে বলল, তাহলে কোথায় সেই মরার চার্চ?

     

    সান্তা মারিয়া ডেল পোপোল গির্জা দাঁড়িয়ে আছে একটা ভুল জায়গায় বসানো যুদ্ধজাহাজের মত। পিয়াজ্জার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে। একাদশ শতকের স্থাপত্য সগর্বে মাথা উঁচু করে রেখেছে।

    এগিয়ে গেল ল্যাঙডনও। ভিতরে কি সত্যি সত্যি কোন হত্যাকান্ড হতে যাচ্ছে? কে জানে! শিউরে উঠল সে আবার। তার মনে একটাই আশা। ওলিভেট্টি যদি কোনমতে তাড়াতাড়ি করতে পারে! আবারও তার পকেটের পিস্তলটা ভারি ভারি ঠেকছে।

    গির্জার প্রথমদিকের সিঁড়িগুলো হল ভেন্টাগ্নিও- স্বাগত জানানো, বাঁকানো পথ কিন্তু এ পথ বাঁধা পড়ে আছে। নির্মাণ সামগ্রীতে ঠাসা জায়গাটা। সেই সাথে এটা সতর্কবাণীও লটকে দেয়া আছেঃ

    কন্সট্রাজিওন। নন এন্টারে।

    ব্যাপারটা লক্ষ্য করে আরেকবার বিষম খেল তারা দুজনেই। একটা নির্মীয়মান চার্চ মানে খুনির খুন করার জন্য একেবারে অভয়ারণ্য। প্যান্থিয়নের মত না। কোন চালাকির দরকার নেই, নেই কোন পরিকল্পনা বা ছদ্মবেশের। শুধু ঢোকার জন্য একটা পথ বের করে নাও, ব্যস।

    বিনা দ্বিধায় ভিট্টোরিয়া সেগুলোর ভিতর দিয়ে পথ করে নিয়ে এগিয়ে গেল।। তাকে বাধা দিল ল্যাঙডন, ভিট্টোরিয়া! বলল সে, এখনো যদি লোকটা ভিতরে থেকে থাকে

    কিন্তু থোড়াই পরোয়া করে ভিট্টোরিয়া। সে গটগট করে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। চার্চের মূল দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তড়িঘড়ি করে তার পিছন পিছন এগিয়ে এল ল্যাঙডন। প্রাণান্ত চেষ্টা করল তাকে বাধা দেয়ার। কিন্তু যা করার করে বসেছে ভিট্টোরিয়া। চার্চের মূল হলরুমের কাঠের দরজার হাতল ধরে টেনে নিয়েছে নিজের দিকে। কিন্তু দরজা খুলছে না।

    নিশ্চই অন্য কোন প্রবেশপথ আছে। বলল ভিট্টোরিয়া

    সম্ভবত। শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল ল্যাঙডন, কিন্তু ওলিভেট্টি এক মিনিটের মধ্যে এখানে হাজির হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সবচে ভাল হয় আমরা যদি বাইরেই থাকি আর অপেক্ষা করি মূল সময়ের জন্য। যেন কেউ বাইরে বেরুতে না পারে–

    সাথে সাথে চট করে তার দিকে ফিরল ভিট্টোরিয়া। চোখ তার আগুন বর্ষাচ্ছে, যদি ঢোকার মত অন্য কোন পথ থেকেই থাকে, বেরুবার পথও থাকবে। লোকটা যদি একবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আমাদের প্রাণপাখিও উড়ে যাবে। আমরা হয়ে যাব ফ্রিগেটি।

    মেয়েটার কথা যে ঠিক সেটা বোঝার মত ইতালিয় ল্যাঙডন জানে।

    চার্চের মূল পথটা অন্ধকার। দু পাশেই উঁচু দেয়াল। সেখানে আরো একটা গন্ধ টের পাওয়া যাচ্ছে। আর সব মহান সিটির মতই এটা, যেখানে বার আছে অগুণতি কিন্তু রেস্ট রুমের সংখ্যা একেবারে হাতেগোণা। বিশটার অনুপাতে একটা। তাই ইউরিনের গন্ধ তাকে বিরক্ত করছে।

    এই অন্ধকারের দিকেই তারা দুজনে এগিয়ে গেল যেখানে অবশেষে ভিট্টোরিয়া আকড়ে ধরল ল্যাঙডনের বাহু। নির্দেশ করল সামনে।

    ভিট্টোরিয়ার দেখানো দিকে চোখ পড়েছে ল্যাঙডনেরও। সামনের কাঠের দরজাটায় ভারি পাল্লা ঠাসা। বোঝাই যাচ্ছে এটা ক্লার্জিদের জন্য একটা প্রাইভেট এন্ট্রান্স।

    বেশ কয়েক বছর ধরেই এগুলো একেবারে অকেজো হয়ে আছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা আর বাড়ি-ঘর তুলে নেয় যারা সেসব লোকজন গলি-তস্য গলি আর পথ বানিয়ে বানিয়ে একেবারে অকেজো করে দিয়েছে গির্জাটার অন্য প্রবেশপথটাকে।

    দ্রুত এগিয়ে গেল ভিট্টোরিয়া, এগিয়ে গেল ল্যাঙডনও। যেখানে ভোরনব থাকার কথা সেখানে একটা কিস্তুত কিমার্কার জিনিস ঝুলছে।

    এ্যানুলাস, ফিসফিস করল ল্যাঙড়ন। কাছে এগিয়ে গেছে সে। আলতো করে টেনে ধরেছে সে রিঙটাকে। সে টেনে ধরল রিঙটাকে তার দিকে। ফলে ভিতর থেকে একটু ক্লিক করে শব্দ হল। এগিয়ে গেল ভিট্টোরিয়া, একটু অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে তাকে। রিঙটাকে এবার ল্যাঙডন সেটাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাল। তিনশো ষাট ডিগ্রি ঠিকভাবেই এটা ঘুরে গেল। অন্যদিকেও ল্যাঙডন একই ভাবে ঘোরাল সে জিনিসটাকে এবং একই ফল পেল।

    সামনের গলির দিকে চোখ ফেলল ভিট্টোরিয়া, তুমি কি মনে কর সেখানে আরো পথ আছে?

    সন্দেহ করছে ল্যাঙড়নও। রেনেসাঁর যুগের স্থাপত্যকর্মগুলোর আরো কিছু বৈশিষ্ট আছে। সেগুলোকে নিরাপদ করার একটা তাগিদ থাকত সবার। তাই যথা সম্ভব কম প্রবেশপথ রাখা হত সে যুগে। সেখানে যদি আর কোন পথ থেকেই থাকে, থাকবে পিছনে। অবশেষে বলল সে, তবে সেটা আছে বেরিয়ে আসার পথ হিসাবে। ঢোকার পথ নয়।

    কথা শোনার সময় নেই ভিট্টোরিয়ার। সে কথা শেষ হয়ে যাবার আগেই ছোটা শুরু করল।

    সামনে এগিয়ে গেল ল্যাঙডন। তার দুপাশে দেয়াল আকাশ ছুঁয়ে দিচ্ছে। আশপাশে কোথাও একটা বেল বেজে উঠল। আটটা বাজে।

     

    প্রথম ডাকটা শুনতে পায়নি রবার্ট ল্যাঙডন। ভিট্টোরিয়া ডাকছে তাকে। সে একটা কাচের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চার্চের ভিতরটা দেখার প্রাণান্ত চেষ্টায় মেতে ছিল।

    রবার্ট! আবার ডাক আসলে সে সচকিত হয়। একটু জোরে এই ফিসফিসে শব্দটা আসে এবার।

    মাথা তুলে তাকাল ল্যাঙডন। পথের শেষপ্রান্তে আছে ভিট্টোরিয়া। সে গির্জার পিছনদিকটা নির্দেশ করে তার দিকে ফিরে হাত নাড়ছিল। ল্যাঙডন ধীরে জগিং করার ভঙ্গিতে তার দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে একটা সরু পথ। সোজা নেমে গেছে গির্জার তলার দিকে।

    প্রবেশপথ? জিজ্ঞেস করল ভিক্টোরিয়া।

    নড় করল ল্যাঙডন। আসলে একটা বহির্গমন পথ। কিন্তু এখন আমরা প্রবেশ বাহির নিয়ে বিবাদ না করি।

    ভিট্টোরিয়ার কর্মোদ্যমে কোন ঢিল নেই। সে সাথে সাথে বলল, দরজাটা চেক করে নিই। যদি ভোলা পাওয়া যায়!

    ল্যাঙডন মুখ খুলতে নিয়েছিল। মানা করবে। তার আগেই কাজে নেমে পড়ল ভিট্টোরিয়া।

    দাঁড়াও! বলল ল্যাঙডন তাকে।

    অধৈর্য ভঙ্গিতে তার দিকে তাকাল মেয়েটা।

    বাগড়া দিল ল্যাঙডন, আমি আগে যাচ্ছি।

    কেন? বীরত্ব দেখানো?

    সৌন্দর্যের আগে এগিয়ে যাবে বয়স।

    এটা কি কোন রকমের প্রশংসার মধ্যে পড়ছে?

    হাসল একটু ল্যাঙডন। ভাগ্যিস আলো কম ছিল, তার অপ্রস্তুত ভাবটা ধরা পড়ে যাচ্ছে না। সিড়ির ব্যাপারে সাবধান।

    দেয়ালে এক হাত রেখে সে খুব ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ভিতরে। হাতের তালুতে খোচা দিচ্ছে পাথুরে এবড়োথেবড়ো দেয়াল। মিনোটারের গোলকধাধায় কীভাবে তরুণ ডেডেলাস আঁধারে হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে গিয়েছিল সে কথাটা তার মনে পড়ে। একটা বিশ্বাস তার দৃঢ় ছিল, একবারো দেয়াল থেকে সরে না গেলে সে ঠিক ঠিক আসল জায়গায় গিয়ে হাজির হবে। বেরুতে পারবে গোলকধাধা থেকে। দেয়ালে হাত রেখে ল্যাঙডন এগিয়ে যাচ্ছে, সে জানে না ঠিক পথটা শেষ করতে চায় কিনা।

    সুড়ঙ্গটা আরো আরো সরু হয়ে আসছে। গতি কমাল ল্যাঙডন। তার ঠিক পিছনেই এগিয়ে আসছে ভিট্টোরিয়া। দেয়াল ঘুরে যাবার পর একটা অর্ধ-গোলাকৃতির এ্যালকেভে গিয়ে হাজির হল তারা। অবাক হলেও সত্যি, এখানে আলোর একটা ক্ষীণতম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আলোর আড়ালে দেখতে পেল সে, একটা বড় কাঠের দরজা আছে।

    ওহ্! বলল সে।

    লক করা?

    ছিল।

    ছিল? এবার এগিয়ে এল মেয়েটা।

    হাতের ইশারায় দেখাল ল্যাঙডন। ভিতর থেকে আলোর একটা ক্ষীণ রেখা এগিয়ে আসছে। দরজা ভাসছে আলোয়। এটার পাল্লা খোলা হয়েছে যে টুল দিয়ে সেটা এখনো লাগানো আছে।

    নিরবতায় তারা একটা মুহূর্ত চুপ করে বসে থাকে। তারপর, আঁধারে ভিট্টোরিয়ার হাত টের পায় ল্যাঙডন। তার বুকে হাতড়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।

    রিল্যাক্স, প্রফেসর। বলল সে, আমি শুধু গানটা খুঁজে পাবার চেষ্টা করছি।

     

    সেই মুহূর্তেই, ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের ভিতরে চারদিক থেকে সুইস গার্ডের একটা টাস্ক ফোর্স এগিয়ে এল। জাদুঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং গার্ডরা ইউ এস মেরিনদের জন্য বরাদ্দকৃত নাইট ভিশন গগলস পরে আছে , সবুজের শেডে প্রতিটা জিনিস দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। প্রত্যেকের সাথে একটা করে হেডফোন আছে, সেটার সাথে আছে একটা করে ছোট এ্যান্টেনার মত ডিভাইস। এগুলো তারা ব্যবহার করে সপ্তাহে দুবার। ইলেক্ট্রনিক ছারপোকা খুঁজে বের করার কাজে। তাদের দক্ষ হাতের কাজ এগিয়ে চলেছে প্রতি পলে। সামনে চৌম্বক ক্ষেত্রের বিন্দুমাত্র চিহ্ন দেখা গেলেও সেটা ধরা পড়ে যাবে।

    আজ রাতে, যাই হোক, তারা কোন ঝুঁকি নিচ্ছে না।

     

    ৬৫.

    সান্তা মারিয়া ডেল পোপোলোর ভিতরটা মৃদু আলোয় নেয়ে উঠছে। দেখতে মোটেও  ক্যাথেড্রালের মত নয়। বরং দেখে মনে হতে পারে কোন অর্ধ সমাপ্ত সাবওয়ে ট্রেনের স্টেশন এটা। মূল মঞ্চটাও খালি নেই। চারধারে ঠাসা জিনিসপত্র। নির্মাণ সামগ্রী। অতিকায় থাম উঠে গেছে অনেক উপরে, ছাদ পর্যন্ত। সামনে একটা দেয়ালচিত্র দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে যায় ল্যাঙডন সেটার দিকে একটু।

    কিছু নড়ছে না ভিতরে। একেবারে স্থির।

    দু হাত একত্র করে ভিট্টোরিয়া পিস্তলটা বের করে আনে। ঘড়ি চেক করে দেখে ল্যাঙডন, আটটা বেজে চার। আমরা ভিতরে ঢোকার সাহস করে ঠিক ভাল করিনি। ভাবছে সে, এখানে থাকাটা বেশি সাহসের কাজ। আর এমন খুনে সাহসের কোন দরকার নেই। সে জানে, খুনি যদি এখানে থেকেও থাকে, সে চাইলেই যে কোন দরজা। দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। কোন সমস্যা হবে না তার। আর লোকটা নিশ্চই খুনোখুনীতে সিদ্ধহস্ত। তাই এত কষ্ট করে ভিতরে ঢোকার কোন মানেই দাঁড়াবে না। ভিতরে তাকে পাকড়াও করে ফেলার পথটাই সবচে ভাল হত… আর যদি সে ভিতরে থেকে থাকত তাহলে না একটা কথা ছিল। ল্যাঙডন প্যান্থিয়নে সে চেষ্টা করে দেখেছে এবং লাভের লাভ কিছু এখানেও হবে বলে মনে হয় না। সে আর এখন যাই বলুক না কেন, সতর্ক থাকতে বলতে পারে না। এই পর্যায়ে সে-ই সবাইকে টেনে এনেছে।

    ভিতরটা খুটিয়ে দেখল মেয়েটা… তো, কোথায় তোমার চিগি চ্যাপেল?

    চারদিকে তাকাল সে। বিশাল কামরা, কামরার লাগোয়া দেয়াল, দেয়ালের ফ্রেস্কো, স্তুপ করে রাখা রাশি রাশি নির্মাণ সামগ্রী… সবই আছে ঠিকঠাক। কিন্তু একটা ব্যাপার হঠাৎ করে তার মনে পড়ে গেল। রেনেসাঁর যুগে মাঝেমধ্যেই গির্জার মধ্যে একাধিক চ্যাপেল বানানোর রেওয়াজ ছিল। নটরডেমের মত বড় বড় ক্যাথেড্রালগুলোয়। ডজন ডজন আছে। চ্যাপেলগুলো ঠিক ঘর নয়, বরং যেন একটা শূণ্যতা। অর্ধ গোলাকার এলাকা… একটা গির্জার বাইরের এলাকা জুড়ে থাকে।

    চার দেয়ালে চারটা ছবি দেখে মনে মনে ভাবল ল্যাঙডন, দুঃসংবাদ। এখানে মোট আটটা চাপেল আছে। যদিও আট সংখ্যাটা বুক কাঁপিয়ে দেয়ার মত কিছু নয় তবু এখন এই আটটাকে দেখে ফেলা মুখের কথা নয়। সবগুলোই এখন নির্মাণকালীন সতর্কতার মধ্যে পড়ছে। সবগুলোতেই পলিথিন দিয়ে প্রবেশপথ ঢেকে রাখা।

    এই সবগুলোতে প্রবেশ করার কথা চিন্তাও করা যায় না। বলল ভিট্টোরিয়াকে ল্যাঙডন, তারচে মনে হয় কোনটা চিগি সেটা বোঝার জন্য বরং ভিতরে যাওয়া অনেক ভাল। কিন্তু সেটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মত ব্যাপার হবে না কি? আমি চিন্তা করছিলাম ওলি-

    কোথায় সেকেন্ডারি লেফট এপস্?

    আর্কিটেকচারাল কথাবার্তা শুনে একটু দমে গেছে ল্যাঙডন মনে মনে, সেকেন্ডারি লেফট এপস?

    তার পিছনের দেয়ালের দিকে নির্দেশ করল ভিট্টোরিয়া! সেখানকার পাথরে একটা টাইল বসানো। তারা বাইরে যে সিম্বল দেখেছে এখানেও সেটা আছে। একটা পিরামিডের উপরে এক জ্বলজ্বলে তারকা। এর পাশে লেখা আছে আরো কিছু

    কোট অব আর্মস অব আলেক্সান্দার চিগি
    হুজ টম্ব ইজ লোকেটেড ইন দি
    সেকেন্ডারি লেফট এপস্ অব দ্য ক্যাথেড্রাল

    নড করল ল্যাঙডন। চিগির কোর্ট অব আর্মস কি পিরামিড আর তারা? হঠাৎ তার মাথায় আরো একটা চিন্তা খেলে গেল। এই চিগি লোকটাও ইলুমিনেটাস নয়ত? নড করল সে ভিট্টোরিয়ার দিকে তাকিয়ে, নাইস ওয়ার্ক, ন্যান্সি ড্রিউ।

    কী?

    নেভার মাইন্ড। আমি–

    একটা ধাতব জিনিস পড়ল তাদের সামনে। সেটা থেকে ঝনঝন শব্দে সারা হল ভরে গেল। শব্দের দিতে তাক করে ধরেই রেখেছে ভিট্টোরিয়া তার হাতের গানটাকে। তাকে পাশ থেকে আশ্বাসের ভঙ্গিতে ধরল ল্যাঙডন। নিরবতা। আবার শব্দ এল। এবার শ্বাস আটকে ধরল ল্যাঙডন, আমাদের এখানে আসাটা মোটেও উচিৎ হয়নি! শব্দটা তাদের ভড়কে দিয়েছে। এবার তারা এগিয়ে এল। দেখা যাচ্ছে কী যেন। পিলারের দিকে।

    ফিগলিও ডি পুট্টানা! পিছনে পড়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করল ভিট্টোরিয়া। ল্যাঙডন তার সাথে এলিয়ে পড়ল।

    সামনে ছিল একটা আধ খাওয়া স্যান্ডউইচ মুখে বিশাল বপু এক ইদুর। সেটা বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল তাদের দিকে। নির্নিমেষ। তাকিয়ে থাকল ভিট্টোরিয়ার হাতের গানটার দিকে। যেন ব্যারেল নিরীক্ষণ করছে। তারপর বিরক্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে গেল সামনে।

    সন অব এ… কোনমতে নিজেকে সামলে নিল ল্যাঙডন। মুখ ফসকে বেমক্কা গালিটা আর একটু হলেই বেরিয়ে যাচ্ছিল।

    নিচু করল ভিট্টোরিয়া গানটাকে। ছন্দ ফিরে পেতে কয়েকটা মুহূর্ত নষ্ট করল। সামনে এক মহিলার আধ খাওয়া লাঞ্চবক্স দেখা যাচ্ছে। লিপস্টিক লেগে আছে সেটায়।

    ভিট্টোরিয়ার দিকে রোষ কষায়িত নেত্রে তাকিয়ে ল্যাঙডন বলল, মরার লোকটা যদি এখানে থেকেই থাকে তাহলে তোমার কথা ঠিক ঠিক শুনতে পেয়েছে, তুমি কি শিওর এখনো ওলিভেট্টির জন্য অপেক্ষা করবে না?

    সেকেন্ডারি লেফট অপস, যেন তার কোন কথাই শুনতে পায়নি ভিট্টোরিয়া, এমন সুরে বলল, কোথায় হতে পারে জায়গাটা?

    অনেক চেষ্টা চরিত্র করে ল্যাঙডন বুঝে নিল কোথায় আছে চিগি চ্যাপেল। তারপর সেদিকে ফিরে সন্ত্রস্ত হয়ে দেখল, তাদের হিসাব ঠিকই আছে, এটা ভাল খবর। খারাপ খবর হল, তারা একেবারে প্রান্তে বসে আছে। যেতে হলে চিগির চ্যাপেলের মত আরো তিনটাকে পেরিয়ে যেতে হবে।

    দাঁড়াও, বলল ল্যাঙডন, আমি আগে যাচ্ছি। ভুলে যাও। আমিই কিন্তু প্যান্থিয়নে আগে গিয়েছিলাম।

    সাথে সাথে তার দিকে ঘুরে দাঁড়াল ভিট্টোরিয়া, পুরোপুরি মারমুখী, কিন্তু অস্ত্র আছে আমার কাছে।

    তার চোখে আসলে অন্য কথা দেখতে পাচ্ছে ল্যাঙডন, … আমিই সে জন যার বাবা মারা গেছে। গণবিদ্ধংসী অস্ত্র তৈরির ইন্ধন যে যুগিয়েছিল সে জন আমিই। এই লোকটার উপর প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার শুধু…

    মেনে নিল ল্যাঙডন। এগিয়ে যেতে দিল তাকে। ভিট্টোরিয়ার পাশে পাশে এগিয়ে আসছে সে। যেন পাগলাটে, অন্য গ্রহের আতঙ্কে ভরা কোন খেলা খেলছে তারা।

    ভিতরে ভিতরে গির্জাটা একেবারে নিশ্ৰুপ। বাইরের হট্টগোলের এক কণাও আসছে না পাথুরে দেয়াল ভেদ করে। একের পর এক চ্যাপেল পেরিয়ে যাবার সময় যেন মৃত অতৃপ্ত আত্মাগুলো তাদের দিকে মুখ ভেঙচে দিচ্ছে। প্রাস্টিকের আড়াল সরালেই যেন তাদের দেখা পাওয়া যাবে।

    সময় যাচ্ছে বয়ে। ভেবে কূল পায় না ল্যাঙডন, এখন বাজে আটটা ছ। এতোক্ষণে খুনির নকশাও উবে যাবার কথা। হত্যাকারি কি যথেষ্ট সময় সচেতন? সে কি ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন সেখানে যাবার আগেই পাততাড়ি গুটাবে? সে এসেছে কিনা তাও এখন এক প্রশ্ন। যদি সে এসেই থাকে, যদি কাজ সারতে থাকে তাহলে ঈশ্বর তাদের রক্ষা করুন। সামনে কোন দৃশ্য দেখতে পাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ল্যাঙডন।

    দ্বিতীয় এপস্টা পেরিয়ে এল তারা। আস্তে আস্তে আলো নিভে আসছে ভিতরে। বাইরের দরজা দিয়ে আলো আসছে না। আসছে জানালা দিয়ে। সেদিকে তাকিয়ে বেশ বলে দেয়া যায় সূর্য অস্ত নেয়ার পায়তাড়া কষছে খুব দ্রুত। তারা চলে যাবার সময় পাশে প্লাস্টিক একটু নড়ে উঠল। ঘরের বাতাসের চাপে তারতম্য হলে এমন হয়। এখন কোন ফ্যানও চলছে না। কোন দরজা খুললেই এমনটা হতে পারে।

    সামনে এগিয়ে গিয়েই হাতের পিস্তল প্রস্তুত করল ভিট্টোরিয়া, এখানেই গ্রানাইটের গায়ে খোদিত হয়ে আছে দুটা শব্দঃ

    চ্যাপেল চিগি

    নড করল ল্যাঙডন অন্ধকারেই। একটা মোটা থামের পিছনে তারা দুজনই সামরিক কায়দায় অবস্থান নিল। তারপর ভিট্টোরিয়া ইশারা করল। সে বসে আছে পিস্তল তাক কর।

    প্রার্থনা করার এইতো সময়! ভাবল ল্যাঙডন। তারপর অতি যত্নে সরাল প্লাস্টিকের আবরণ। একটু একটু করে। একটু সরল জিনিসটা তারপর একেবারে বিশ্রী আওয়াজ উঠল সেখান থেকে। কাঠ হয়ে গেল দুজনেই। সতর্কতা। নিরবতা। একটা মিনিট কেটে যাবার আগেই ভিট্টোরিয়া এগিয়ে এল একটু ক্রল করে। চোখ রাখল ফাঁকা দিয়ে। তার ঠিক পিছনেই আছে ল্যাঙডন। কাঁধের উপর দিয়ে তাকাচ্ছে।

    শ্বাস চেপে রাখল তারা দুজনেই।

    খালি! অবশেষে বলল ভিট্টোরিয়া, গানটা নিচু করতে করতে, আমরা বেশি দেরি করে ফেলেছি।

    কথা শুনল না ল্যাঙডন। এখন সে অন্য কোন এক ভুবনে বিচরণ করছে। তার জীবনে কখনো এমন একটা চ্যাপেলের কথা চিন্তা করেনি। পুরোটাই চেস্টনাট মার্বেলে বাধাই করা। শ্বাসরোধ করে ফেলে চিগি চ্যাপেল। দেখে খুব সহজেই বলা চলে এটা। যথা সম্ভব আর্থি। দেখে মনে হয় গ্যালিলিও আর তার ইলুমিনেটি সযত্নে এ ডিজাইন করেছে।

    মাথার উপরে, গম্বুজের ভিতরপৃষ্টে জ্বলজ্বল করছে নক্ষত্রলোক, জ্যোতির্বিদ্যার সাত গ্রহ। নিচে রাশির বারো চিহ্ন। পাগান আর্থি প্রতীকগুলো আস্তে আস্তে এ্যাস্ট্রোনমিতে জায়গা করে নিয়েছে। রাশিও সরাসরি নির্দেশ করে মাটি, বাতাস, আগুন, পানি… আর্থ ইজ ফর পাওয়ার কথাটা মনে মনে আউড়ে নেয় ল্যাঙডন।

    দেয়ালের অনেক নিচের দিকে দেখল পৃথিবীর চারটী কাল নিয়ে কথা–প্রিমাভেরা, এস্টাটে, অটান্নো, ইনভেরননা! দূরে আরো একটা জিনিস দেখে থমকে গেল ল্যাঙডন। বিড়বিড় করল, হতে পারে না! এ হতে পারে না! কিন্তু চোখের দেখাকে অবিশ্বাস করার বিন্দুমাত্র যো নেই। দূরে দেখা যাচ্ছে দুটা দশফুট উঁচু মার্বেলের পিরামিড! একেবারে নিখুঁত।

    আমি কোন কার্ডিনালকে দেখতে পাচ্ছি না। বলল ফিসফিসিয়ে ভিট্টোরিয়া, কিম্বা কোন খুনিকে। সে সরাল প্লাস্টিকটা তারপর চলে গেল ভিতরে।

    কিন্তু ল্যাঙডনের মন-মগজে ঢুকে গেছে পিরামিড, একটা খ্রিস্টানদের চ্যাপেলে মরার পিরামিড আছে কী করতে? আর অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেখানে আরো বিস্ময় লুকিয়ে আছে। প্রতিটা পিরামিডের চূড়ায় বসিয়ে দেয়া আছে একটা করে স্বর্ণের মেডেলিয়ান… এমন জিনিস জীবনে খুব কমই দেখেছে ল্যাঙউন… একেবারে নিখুঁত গোলাকৃতি। বাইরে থেকে আলো আসায় চকচক করছে পালিশ করা সোনার চাকতি। গ্যালিলিওর নিখুঁত বৃত্ত? পিরামিড? তারকা খচিত ছাদ? এই ঘরটায় ইলুমিনেটির চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ল্যাঙডনের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি হারে।

    রবার্ট, দেখ!

    ভিট্টোরিয়ার কথা শুনে তাকল সে দেখানো দিকটায়। ব্লাডি হেল! চিৎকার করেই সে ঝাঁপ দিল একদিকে।

    সামনে তেমনি একটা পিরামিডের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তারকার প্রতীক, ঠিক যেমনটা তারা বাইরে দেখে এসেছে। আছে একটা খুলির চিহ্ন আর সবচে বড় কথা, মেঝে থেকে পিরামিড হয়ে ওঠা একটা অংশের উপরটায় নিখুঁত বৃত্ত আছে। সেটা দেখতে ম্যানহোলের মত।

    ডেমনস হোল! খাবি খেতে খেতে বলল ল্যাঙডন। সাথে সাথে সে গর্তটার দিকে যাওয়া শুরু করল। ভিতর থেকে একটা ভ্যাপসা গন্ধ উঠে আসছে।

    মুখের উপর একটা হাত রাখল ভিট্টোরিয়া, চি পুৎজা।

    ক্ষয় হতে থাকা হাড় থেকে বাষ্প উঠে আসছে। ব্যখ্যা করল ল্যাঙডন। এগিয়ে গেল সামনের দিকে। মুখে জামার হাতা চাপা দিয়ে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিল ভিতরে। কালিগোলা অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না আমি।

    তোমার কী মনে হয়? নিচে কেউ আছে?

    জানার কোন উপায় নেই।

    গর্তটার দূরপ্রান্তে ভিট্টোরিয়া নজর দিল। একটা পচতে থাকা পুরনো নড়বড়ে সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে। নেমে গেছে অতলে।

    মাথা নাড়ল ল্যাঙডন, ঠিক নরকের মত।

    হয়ত নিচে কোন ফ্লাশলাইট আছে। আমি একটু নজর বুলিয়ে নিতে চাই। বলল ভিট্টোরিয়া।

    সাবধান! আমরা কিন্তু নিশ্চিত জানি না হ্যাসাসিন এখানে আছে কিনা।

    তাই কিন্তু এরই মধ্যে হাপিস হয়ে গেছে ভিট্টোরিয়া।

    কী কঠিন ব্রতের মেয়েরে বাবা! মনে মনে আউড়ে নিল ল্যাঙডন কথাটুকু।

    গর্তের কাছাকাছি যেতেই সে গন্ধে মাথা ফাঁকা ফাঁকা অনুভব করল। বড় করে একটা শ্বাস নেয়ার পর সে উঁকি দিল, বলা ভাল মাথা ঢুকিয়ে দিল গর্তের ভিতরে। আস্তে আস্তে চোখ মানিয়ে নিতে শুরু করায় এবার ছায়ার মধ্যেই একটু একটু করে দেখতে পেল সে নানা অবয়ব। বোঝা যাচ্ছে গর্তটা একটা ছোট চেম্বারে গিয়ে উন্মুক্ত হয়েছে। ডেমনস হোল! আবার ভাবল সে। কে জানে, চিগিদের কত প্রজন্ম এখানে শায়িত আছে! চোখ বন্ধ করল ল্যাঙডন, তার চোখের তারাকে আরো তীক্ষ্ণ্ণ করার চেষ্টা করল যেন অন্ধকারেও দেখা যায়। আবার যখন সে চোখ খুলল, একটা বিচিত্র ব্যাপার দেখতে পেল। ভিতরে যেন একটা শরীর ভাসছে। আমি কি কোন মরদেহ দেখছি? ভেবে কূল পায় না ল্যাঙডন। আবার চোখ বন্ধ করল সে। আবার খুলল, যেন আলোর ক্ষীণতম রেখাও স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।

    ভিতরটাকে এবার একটু দেখা যাচ্ছে।

    এমন সময় পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল, দেখ!

    সাথে সাথে সে উঠে বসার চেষ্টা করছে, কিন্তু ঘাড়ের দিকে টের পেল একটা শীতল স্পর্শ। জমে গেল সে সেখানেই।

    তারপর বুঝতে পারল মানুষটা আর কেউ নয়, স্বয়ং ভিট্টোরিয়া।

    কী করছ তুমি! রাগে গজগজ করছে ল্যাঙডন।

    তোমার জন্য একটা আলোর উৎস খুঁজে এনেছি। বলল ভিট্টোরিয়া সমান তালে, ব্রো টর্চ।

    ভিট্টোরিয়ার হাতের টর্চটার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে দম ফেলল ল্যাঙডন।

    এরচে ভাল কিছু পাওয়া দুষ্কর। কলল ভিট্টোরিয়া, এটাকেই কষ্টে সৃষ্টে তুলে এনেছি। কোন ফ্লাশলাইট নেই।

    ঘাড়ের দিকে হাত রেখে বলল ল্যাঙডন, আমি তোমার আসার আওয়াজ পাইনি! শব্দ করার কথা ছিল কি আমার?

    টর্চটা তুলে নিয়ে সে এগিয়ে যেতে থাকে গর্তটার দিকে। ভিতরে আলো ফেলল সে। দেয়ালে। আলোর বন্যায় ভেসে গেল ভিতরটা। ছোট একটা ঘর। গোলাকৃতি। পাশে বিশ ফুট হবে কোনক্রমে। গভীরতা হবে ফুট ত্রিশেক। আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। মেঝে থেকে। মেঝেটা মাটির সোঁদা গন্ধ তাহলে কিছুটা মাটি থেকেও আসছিল।

    তারপর ল্যাঙডন শরীরটা দেখতে পেল।

    সাথে সাথে তার সহজাত ক্ষিপ্রতা জানিয়ে দিল কী দেখতে পাচ্ছে সে।

    সে এখানে, বলল ল্যাঙডন, চেষ্টা করছে যেন তার দৃষ্টি ঘুরে না যায়। দেহটা পড়ে আছে মাটির উপরে। আমার মনে হয় তাকে উলঙ্গ করে খুন করা হয়েছে গলায় রশি দিয়ে।

    কল্পনার চোখে সে দেখে নিল লিওনার্দো ভেট্রার মরদেহ।

    কার্ডিনাল?

    জানে না কী বলবে ল্যাঙডন। কিন্তু সে ভেবে পায় না আর কে হবে! সে তাকাল নিচে। স্থির একটা দেহের দিকে। অনড়। প্রাণহীন। আর এখনো ইতস্তত করছে ল্যাঙডন। দেহটা যেভাবে পড়ে আছে সেখানে একটা দেখার মত ব্যাপার আছে। মনে হচ্ছে যেন…

    অবশেষে শব্দ করল ল্যাঙডন, হালো

    তোমার কী মনে হয়। সে জীবিত?

    নিচ থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না।

    নড়ছে না লোকটা, ভিট্টোরিয়াকে জানাল সে, কিন্তু তার পড়ে থাকার মধ্যে, না, অসম্ভব!

    তার পড়ে থাকার মধ্যে কী? এবার ভিট্টোরিয়াও উঁকি দিল তার কাঁধের উপর দিয়ে।

    ল্যাঙডন অন্ধকারে দেখল। দেখে মনে হচ্ছে তিনি উঠে দাঁড়াচ্ছেন।

    শ্বাসরোধ করে ভিট্টোরিয়া তাকাল নিচের দিকে। তার চেহারায় বিহ্বল ভাব। এক মুহূর্ত পরে পিছিয়ে এল সে।

    তোমার কথাই ঠিক। উঠে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। হয়ত তার সহায়তা দরকার। আবার ভিতরের দিকে তাকাল মেয়েটা, বলল, হ্যালো?! মি পুয়ো সেন্টিরে?

    ভিতর থেকে কোন প্রতিদ্ধনি উঠে এল না। শুধুই নিরবতা।

    আমি নিচে যাচ্ছি। বলল অবশেষে ভিট্টোরিয়া।

    তার হাত জাপ্টে ধরল ল্যাঙডন, না, ঝুঁকি আছে। যাচ্ছি আমি।

    এবার আর কোন বাদ-অনুবাদ করল না মেয়েটা।

     

    ৬৬.

    চিনিতা ম্যাক্রি একেবারে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। ভায়া টোমাসেলিতে আলস্যে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে বিবিসির ভ্যানটা, সেটার প্যাসেঞ্জার সিটে গা এলিয়ে দিয়েছে সে। গুন্থার গ্লিক রোমের মানচিত্র খুটিয়ে দেখছে। যেন এই দুনিয়ায় নেই সে। তার এখন মহা ব্যস্ত কাটবে সময়। কারণ এবার লোকটা কিছু তথ্য সহ ফোন করেছে।

    পিয়াজ্জা ডেল পোপোলো, গ্লিক অনুরোধ করল, এ জায়গার খোঁজই আমরা করছি। সেখানে একটা গির্জা আছে। আর ভিতরে আছে কবরস্থান। আর সেখানেই আছে একটা প্রমাণ।

    প্রমাণ? শব্দ নিয়ে খেলা করতে বেশ ভাল লাগচে চিনি ম্যাক্রির, প্রমাণ আছে যে একজন কার্ডিনাল লাশ হয়ে গেছে?

    এই কথাটাই সে বলেছিল।

    তুমি যা শোন তাতেই কান দিয়ে বস, না? আশা করছে চিনিতা, যেমনটা সে প্রায়ই করে, যদি সে এখানে ইন-চার্জ থাকত! ভিডিওগ্রাফাররা, যাই হোক, ক্যামেরার সামনে থাকা রিপোর্টারের অধীনে থাকে। এটাই নিয়ম। তা হোক সে পাগল-ছাগল। এই এখন যদি গুন্থর গ্লিক ঠিক করে যে সে যাবে ফোন কলটার সত্যতা খতিয়ে দেখতে, চিনিতা আর বেল্টে বাঁধা একটা কুকুরের মধ্যে কোন ফারাক থাকবে না।

    সে আবার তাকাল গ্লিকের দিকে। তার চোয়াল শক্ত হয়ে বসেছে। লোকটার বাবা মা নিশ্চই ভাঁড়, না হলে এ লোকের এমন একটা নাম দেয়! গুন্থার গ্লিক! তার প্রাণান্ত চেষ্টার কথা বাদ দিলে, উঠে আসার জন্য বিচিত্র কসরতের কথাকে গোণায় না ধরলে, ওছার গ্লিক একেবারে ভাল একজন মানুষ…

    আমাদের কি সেন্ট পিটার্সে ফিরে যাওয়া উচিৎ নয়? যথা সম্ভব কোমল সুরে বলল মাক্রি, আমরা এই রহস্যময় চার্চের ব্যাপার পরেও খতিয়ে দেখতে পারি। আরো ঘণ্টাখানেক আগেই কনক্লেভ শুরু হয়ে গেছে। আমরা ফিরে আসার আগে কার্ডিনালরা যদি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় তাহলে ব্যাপারটাকে কি ভাল দেখাবে? নাকি আম আর ছালা দুটাই হারিয়ে আমাদের দেউলিয়া হতে হবে?

    গ্লিক তার কথাকে খোড়াই পরোয়া করে। সোজা সে এগিয়ে নিয়ে গেল গাড়িকে। ম্যাপের দিকে তার নজর। বিড়বিড় করল, আমার মনে হয় এবার ডানে যাওয়া দরকার। ঠিক তাই। ডানে। তার পরের বামের মোড়টাতেই জায়গামত হাজির হব। সামনের চিকণ গলি দিয়েও সে একই গতিতে চালানো শুরু করল ভ্যানটাকে।

    দেখ! বলল ম্যাক্রি। সে একজন ভিডিও টেকনিশিয়ান। তার মত তীক্ষ্ণ্ণ চোখ আর কার আছে। কপাল ভাল, গ্লিকও বেশ করিৎকর্মা। সাথে সাথে চেপে ধরল সে ব্রেক। আর সেই ফাকে চারটা একই রকমের আলফা রোমিও সই করে বেরিয়ে গেল। তারপর সেগুলো থামল একটা ব্লক পরে। যেখানে থামার কথা গ্লিকের।

    পাগল নাকি! চিৎকার করে উঠল ম্যাক্রি।

    ব্যাপারটাকে লক্ষ্য করেছ?

    হ্যাঁ। লক্ষ্য করেছি। আর একটু হলেই আমাদের তারা যমের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।

    না। আমি বলতে চাচ্ছি, গাড়িগুলো, সবগুলো গাড়ি একই রকম।

    তার মানে তারা বদ্ধ উন্মাদ, কোন বোধ-বুদ্ধি তাদের নেই।

    গাড়িগুলো লোকে ঠাসা।

    তো কী এসে যায়?

    চারটা গাড়ি। প্রতিটায় চারজন করে যাত্রি?

    তুমি কি কখনো কারপুলিংয়ের কথা শুনেছ?

    ইতালিতে? কড়া করেই জবাব দিল গ্লিক, তাদের এখানে এমন কিছু করার কথা নয়।

    এ্যাক্সিলারেটরে পা দাবিয়ে দিল সে। সোজা আরো এগিয়ে গেল সামনে।

    নিজের সিটে সেঁধিয়ে গেল ম্যাক্রি, কী করছ তুমি?

    আমার হঠাৎ করে মনে হচ্ছে আজ, এ সময়টায়, আমি আর তুমিই শুধু গির্জার দর্শনার্থী নই। তার নজর গিয়ে রয়েছে আলফা রোমিওগুলোর দিকে।

     

    ৬৭.

    নেমে আসাটা ধীর হল।

    একের পর এক ধাপ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নেমে এল ল্যাঙডন… চিগি চ্যাপেলের মেঝের নিচে, আরো আরো নিচে। ডেমনস হোলের ভিতরে… ভাবল সে। তার সামনের দিকটা দেয়ালের দিকে পিছনটা চেম্বারের দিকে। আঁধারে হাতড়ে হাতড়ে নেমে যেতে যেতে সে মনে মনে প্রমাদ গুণল। এই একদিনে আর কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে আল্লা মালুম। প্রতি পদে আরো একটু একটু করে আলগা হয়ে। যাচ্ছে সিঁড়িটা। যে কোন মুহূর্তে সে প্রপাত ভূতল হতে পারে।

    গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত নাকে এসে হামলে পড়ছে পচা মাংসের উৎকট গন্ধ। কোন চুলায় বসে আছে ওলিভেট্টি কে জানে!

    উপরে ভিট্টোরিয়ার অবয়ব এখনো দেখা যাচ্ছে। ল্যাঙডনের পথটাকে আলোকিত করার জন্য সে ধরে রেখেছে ব্লো টর্চটা। যত নিচে নেমে যাচ্ছে সে ততই ফিকে হয়ে আসছে উপরের আলোর নীলচে রেখা। একমাত্র যে ব্যাপারটা শক্তিমান হয়ে উঠছে ক্রমাগত তা হল-আশঙ্কা।

    বারো ধাপ পেরিয়ে যাবার পর ঘটনা ঘটল। ল্যাঙডনের পা-টা এগিয়ে এল একটা ধাপের দিকে, যেখান থেকে পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে ধাপগুলো। তার উপর গিয়েছে ক্ষয়ে। কোনমতে তাল সামলে নিল সে। তারপর মনে মনে একটা গালি কষে নিয়ে আবার নামা শুরু করল। এবার আরো সন্তপর্ণে, আরো সযত্নে।

    তিন ধাপ নামার পর আবারো আর একটু হলেই পড়ে যেতে বসেছিল সে। এবার ধাপের কোন দোষ নেই। দোষ ভয়ের। সে নেমেই দেখতে পেল খুলির একটা সংগ্রহের সামনে সে নেমে আসছে একটু একটু করে। সে দেখতে পায় ভিতরটা বিচিত্র হয়ে উঠেছে। চারধারে কঙ্কালের ছড়াছড়ি, আছে অনেক অনেক কফিনও। আধো আলো ছায়াতে, এটা আরো বেশি ভৌতিক হয়ে উঠল।

    চোখের সামনে খালি অক্ষিকোটর মুখব্যাদান করে আছে। কী অবাক ব্যাপার। মাসখানেক আগেও সে এমনি এক সন্ধ্যায় কঙ্কালের সামনে মৃদু আলোয় বসেছিল। সেবার অবশ্য ইলেক্ট্রিক লাইট ছিল না। ছিল মোমের বাতি। আর ছিল দাওয়াত। নিউ ইয়র্কের একটা আর্কিওলজিক্যাল জাদুঘরের নিমন্ত্রণে সে যোগ দিয়েছিল ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে। তাদের পাশে ছিল আদ্যিকালের ডায়নোসরের কঙ্কাল। রেবেকা স্ট্রসও ছিল সেখানে এক কালের ফ্যাশন মডেল, এখন টাইমসের আর্ট ক্রিটিক। রেবেকা স্ট্রসের চুলের ঢল এখনো কালো, এখনো একটু আধটু ঝিলিক দেয় তার সৌন্দর্য, এখনো তার স্তনের সৌন্দর্য বিহ্বল করে দেয় যে কাউকে। কাবু করে দেয়। কিন্তু সেদিন ল্যাঙডন নিশ্চিত ছিল। পাত্তা দিবে না। করেছিলও ঠিক তাই। দুবার ডাকে তাকে মহিলা। একবারও উত্তর দেয়নি সে, নিতান্তই অভদ্রলোকের মত। তার মনে একটা কথাই বারবার ঘোরাঘুরি করছিল, রেবেকা স্ট্রসের মত মহিলা আর কতকাল টিকে থাকবে!

    নামতে নামতে আরো আতঙ্কিত হয়ে উঠছিল সে। ভেবে কূল পাচ্ছিল না কী করবে। এখন যদি একবার পা ফসকে যায় তাহলেই চিৎপটাং। না, শেষ বেলায় কুপোকাত হওয়া চলবে না। তার মনে সাহস রাখতে হবে। দেয়াল তো আর ভেঙে পড়ছে না তার উপর। কিন্তু একই সাথে জুতার তলাটাও পিচ্ছিল হয়ে আসছিল আস্তে ধীরে।

    বোটকা গন্ধটা আরো জাঁকিয়ে বসতেই সে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরে তার জামার হাতা, নাকের উপর। নিচের দিকে তাকাল সে। মাংসের একটা শুভ্র তাল যে। পড়ে আছে। অচল। অন্যদিকে ফেরানো।

    তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়, লোকটা উঠার চেষ্টা করছিল।

    হ্যালো? শব্দ করেই এগিয়ে যেতে থাকে ল্যাঙডন লোকটার আরো কাছে। দেখল সে, লোকটাকে অত্যন্ত খর্বাকৃতি দেখাচ্ছে। একটু বেশিই খাটো লাগছে মনে হয়…

    হচ্ছেটা কী? উপর থেকে চিল্কার করল ভিট্টোরিয়া, আলো আরো একটু তুলে নিল সে।

    জবাব দিল না ল্যাঙডন। সবটা দেখার মত কাছে চলে গেছে সে। তারপর হঠাৎ করেই একটা ধাক্কা খেয়ে সে ব্যাপারটা বুঝে ফেলল। চেম্বারটা যেন তার চারপাশে শ্বাসরোধ করার জন্য এগিয়ে আসছে। মাটির মেঝে থেকে এগিয়ে আসা একটা দুষ্ট আত্মার মত মানুষটা আসলে একজন বৃদ্ধ… না হলেও অন্তত তার অর্ধেক।

    মাটিতে তাকে অর্ধেকটা পুঁতে দেয়া হয়েছে।

    কার্ডিনালের লাল শাস দিয়ে তাকে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে। গায়ে কোন পোশাক নেই। উপরের দিকে ফিরে লোকটা পিছন ফিরে আছে। যেন কোন পাঞ্চিং ব্যাগ। লোকটার চোখদুটা এখনো ভোলা। ঠিক উপরে, আকাশের দিকে তোলা। যেন ঈশ্বরের কাছে অনুযোগ করছে অন্তরের অন্তস্থল থেকে।

    তিনি কি মৃত? উপর থেকে জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া।

    শরীরটার দিকে এগিয়ে গেল ল্যাঙডন। আশা করি মারা যাবার সৌভাগ্য হয়েছে তার… এগিয়ে গেল সে। তাকাল লোকটার উপর দিকে তাক করে রাখা চোখের দিকে। এগিয়ে গেল সে এবং আরো একটা ধাক্কা খেল।

    না! খোদার কসম! না!

    কী?

    কোনমতে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করছে ল্যাঙডন। তিনি মারা গেছেন। আরো আগে। আমি তার মারা যাবার কারণটা দেখছি। সে দেখল, লোকটার মুখ ভর্তি হয়ে আছে মাটিতে।

    কেউ একজন তার গলা বেয়ে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে মাটি।

    মাটি? ভিট্টোরিয়া সাথে সাথে তাকাল আরো নিচে, তার মানে… আর্থ?

    আরো একটা ধাক্কা লাগল ল্যাঙডনের বুকে। আর্থ! সে প্রায় ভুলে বসেছিল, চিহ্ন চতুষ্টয়! আর্থ, এয়ার, ফায়ার, ওয়াটার। খুনিটা সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে, প্রত্যেক কার্ডিনালকে প্রাচীণ বিজ্ঞানের চার মৌলিক পদার্থে হত্যা করবে।

    প্রথম বিষয় ছিল আর্থ। ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব।

    চারপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগল সে। আর সেই সাথে তার ভিতরের সিম্বলজিস্ট জেগে উঠল আরো। আর্থ! এটার এ্যাম্বিগ্রাম কীরকম হবে? কেমন হবার কথা? এর কোন এ্যাম্বিগ্রাম কি বানানো সম্ভব?

    আর মুহূর্তকাল পরেই সে সেটাকে দেখতে পেল।

    ইলুমিনেটির কাহিনীর শতাব্দি-পুরনো ব্যাপারগুলো একে একে আসতে শুরু করল তার মনে। কার্ডিনালের বুকের চামড়া পুড়ে গেছে। সেখানে খোদিত হয়ে আছে একটা লেখা। দ্য লিঙ্গুয়া পিউরা…।

    চারপাশের ঘর ঘুরতে শুরু করার সাথে সাথে ল্যাঙডন চোখ মেলে তাকাল এম্বিগ্রামটার দিকে।

    আর্থ!

    আর্থ! ফিসফিস করল সে, আর্থ! যেন এ কথাটার কোন মানে জানে না রবার্ট ল্যাওডম।

    এবং সাথে সাথে আরো একটা ব্যাপার তার মাথা ঘুরিয়ে দিল, আরো তিনটা চিহ্ন বাকি আছে।

    চিহ্ন চতুষ্টয়!

     

    ৬৮.

    সিস্টিন চ্যাপেলের নরম মোমের আলোয় কার্ডিনাল মাটি ঘেমে নেয়ে একসা হচ্ছেন। অফিসিয়ালি কনক্লেভ শুরু হয়ে গেছে। আর এই শুরুটার মত বিচিত্র আর কোন ব্যাপার নেই।

    আধঘণ্টা আগে, সময়মত, ক্যামারলেনগো কার্লো ভেন্ট্রেস্কা চ্যাপেলে ঢুকেছিল। সামনে এগিয়ে গিয়ে সে সরাসরি ওপেনিং প্রেয়ার শুরু করে। সিস্টিনে আর কখনো এমন নিষ্ঠুর কথা শোনেননি প্রায় অশীতিপর কার্ডিনাল মাটি।

    আপনারা ভালভাবেই জানেন, বলেছিল ক্যামারলেনগো, যে আমাদের চারজন প্রেফারিতি এখন কনক্লেভে হাজির নন। আমি, বিগত হিজ হোলিনেসের দিব্যি দিয়ে আপনাদের অনুরোধ করছি… আপনারা শুরু করে দিন কাজ, যা হবার কথা। আশা করি আপনাদের চোখের সামনে শুধু ঈশ্বর থাকবেন। তারপর সে চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াল।

    কিন্তু, সাথে সাথে একজন কার্ডিনাল বলল, কোথায় তারা?

    থামল ক্যামারলেনগো, সত্যি সত্যি এ কথার জবাব আমার কাছে নেই।

    ফিরে আসবেন কখন?

    সত্যি সত্যি এ কথার জবাব আমার কাছে নেই।

    তারা ঠিক আছেন তো?

    সত্যি সত্যি এ কথার জবাব আমার কাছে নেই।

    তারা কি ফিরবেন?

    একটা লম্বা বিরতি নিল ক্যামারলেনগো।

    বিশ্বাস রাখুন। বলল সে।

    তারপর চলে গেল কামরা ছেড়ে।

    নিয়ম অনুযায়ী সিস্টিন চ্যাপেলের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বাইরে থেকে, দুটা ভারি চেইন সহ। পিছনের হলওয়েতে চোখ রাখছে চারজন সুইস গার্ড। মাটি জানে, এখন আর সেই দরজা দুটা ভোলা যাবে না। খোলা যাবে শুধু একজন পোপকে নির্বাচিত করলে, কোন কার্ডিনাল মরণাপন্ন হলে অথবা প্রেফারিতিদের কেউ ফিরে এলে।

    শেষের ব্যাপারটাই যেন সত্যি হয় সে আশায় মনে মনে প্রার্থনা করলেন মাটি। কিন্তু তার পেটের ভিতরে যে অনুভূতি গুলিয়ে উঠছে সেটার সাথে আর কিছুর তুলনা নেই। এরই নাম অস্বস্তি।

    চালাব, যেমনটা করা উচিৎ আমাদের, ভাবলেন মাটি। আর কী করতে পারি? ক্যামারলেনগো চলে যাবার সাথে সাথে ভাবা শুরু করলেন তিনি।

    আরো মিনিট ত্রিশেক চলে গেল এসব নিয়ে অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে করতে। প্রত্যেক কার্ডিনাল এগিয়ে এসে একে একে ব্যাটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করতে শুরু করলেন।

    অবশেষে শেষ কার্ডিনাল এগিয়ে এলেন। তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন।

    আমি বলি আমার দেখা থেকে যে, তার সামনে বলা শুরু করলেন আগন্তুক কার্ডিনাল, ক্রাইস্ট দ্য লর্ড, যিনি আমার বিচারক হবেন, তার কথায় আমি বলি এমন। একজনের জন্য আমার ভোট যাবে যিনি প্রভুর সামনে নতজানু, এবং যোগ্য।

    উঠে দাঁড়ালেন তিনি, তারপর ব্যালটটাকে মাথার উপরে তুলে ধরলেন যেন সবাই দেখতে পায়। সেখানে একটা প্লেট সাজানো আছে। সেটার উপর তিনি রেখে দিলেন কাগজটা। তারপর সেটাকে তুলে ধরলেন তিনি, নিচের পাত্রে ফেলে দিলেন কাগজটা। প্লেটটায় রাখতে হয় যেন কেউ একাধিক ব্যালট ফেলে না দেয় গোপনে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য।

    তিনি তার ব্যালট হাজির করার পর, আবার বসিয়ে দিলেন প্লেটটাকে পাত্রের উপর। ক্রসের সামনে নিচু হয়ে একটু সম্মান প্রদর্শন করে ফিরে গেলেন নিজের আসনে।

    শেষ ব্যালটও বসিয়ে দেয়া হয়েছে।

    এবার মাটির কাজে যাবার পালা।

    উপরের প্লেটটাকে সরিয়ে নিয়ে তিনি দু ইঞ্চি পুরু হয়ে পড়া ব্যালট পড়ে শোনানো শুরু করলেন।

    এলিগো ইন সুম্মুন পন্টিফিসেম… ঘোষণা দিলেন তিনি, প্রতিটা ব্যালটের উপরে যে লেখাটা আছে সেটা পড়তে শুরু করলেন, সুপ্রিম পন্টিফ হিসাবে আমি নির্বাচিত করছি… তারপর তিনি ঘোষণা করলেন বিবেচিত প্রার্থির নাম। এলিগো লেখাটার উপর একটা সুই চালিয়ে ছিদ্র করলেন। তারপর একটা লগবুকে সেটা টুকে রাখলেন।

    একই কাজ করলেন আবারো। উঠে দাঁড়ালেন। ব্যালট তুললেন একটা। জোরে সেটার নির্বাচিত প্রার্থির নাম বললেন। তারপর সেটাকে ছিদ্র করে অন্য পাশে সরিয়ে রাখলেন। টুকে রাখলেন লগবুকে। বুঝতে পারলেন প্রথম থেকেই, একটা হট্টগোল লেগে যাচ্ছে সামনে।

    দ্বিতীয় ব্যালট পর্যন্ত যাবার সময়েই বুঝলেন তার ব্যালটও বৃথা যাবে।

    পর পর সাতটা ব্যালটে উঠে আসল সাতজন কার্ডিনালের নাম।

    এখানকার লেখাগুলো দেখে সহজেই বোঝা যায় কে কাকে ভোট করছে। একটা বিশৃঙ্খলা লেগে গেছে কনক্লেভে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বোঝা যাচ্ছে চার প্রেফারিতি না থাকায় এবং তাদের কোন বিকল্পের কথা কেউ ভেবে না রাখায় একটা চরম অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সঠিক যোগ্য লোকের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়াতে সবাই ইচ্ছামত নিজেকে বা নিজের পছন্দসই কাউকে ভোট দিয়ে দিচ্ছে।

    কিন্তু মাটি জানেন, এটা আসলে নিজেকে উঠিয়ে আনার চেষ্টা শুধু নয়, বরং কনক্লেভকে আরো দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা। এর মধ্যে যদি কোন কার্ডিনাল যথেষ্ট ভোট না পান তো আবার ভোটাভুটি শুরু হবে…

    কার্ডিনালদের আসলে মিথ্যাই এ ভোটাভুটি,.. আসলে চলছে অপেক্ষা… প্রেফারিতিরা চলে আসেন।

     

    যখন শেষ ভোর্টটা গণনা করা হল তখন মাটি ঘোষণা করলেন, ব্যর্থ!

    তিনি সবগুলো ব্যালট একত্র করলেন। তারপর সেটাকে একটা মালার মত করে নিয়ে শুইয়ে দিলেন একটা প্লেটের উপর, রূপালি প্লেটটার উপর দিতে বললেন কিছু রাসায়নিক দ্রব্য, তারপর সেগুলো সহ সেটাকে তিনি একটা ফায়ার প্লেসের মত

    জায়গায় স্থাপন করলেন। ধরিয়ে দিলেন আগুন।

    রাসায়নিক পদার্থের কল্যাণে অনেক ধোঁয়া উঠল, কিন্তু সেটা ছড়াল না। কালো পাক দিয়ে উঠে গেল চিমনির দিকে।

    সরু চিমনি বেয়ে প্রকাশ্যে, সবার কাছে ধোঁয়াটুকু একটা বার্তা বয়ে নিয়ে গেল।

    একবার ভোট দেয়া শেষ হয়ে গেছে।

    কোন পোপ নির্বাচিত হয়নি।

     

    ৬৯.

    একটু কষ্ট করে উপরের দিকে চোখ ফেলল ল্যাঙডন। তার মাথা ঘুরছে, অপার্থিব মনে হচ্ছে চারপাশটাকে। কোনমতে উপরে চোখ তুলে তাকাল সে। তারপরও কাটছে না মন থেকে চিন্তাটা…

    আর্থ…

    আর্থ…

    উপরে উঠতে উঠতে তার মাথায় আবার স্লিপ কেটে পড়ে যাবার ভয় কাজ করতে শুরু করল। উপরে উঠে আসার দু ধাপ আগেই তার পা আবার ফসকে গেল। কোনমতে সে ধরার চেষ্টা করল মইটাকে আকড়ে, পারল না। পড়ে যেতে শুরু করল হঠাৎ করে। বাড়িয়ে দিয়েছিল সে হাত, ভিট্টোরিয়ার দিকে। তাতেও কাজ হয়নি। হঠাৎ সে টের পেল সে এখন সাধারণ অবস্থায় নেই। পড়ে যাচ্ছে।

    তারপর কী হল সে কথা মনে নেই তার।

    অনেকক্ষণ পরে, দুজন সুইস গার্ড তাকে টেনে তুলল একটা কপিকলের উপর, সে টের পেল ডেমনস হোল থেকে বেরিয়ে আসছে তার মাথা। হাসফাস করছে সে বাতাসের জন্য। তাকে ঠান্ডা পাথুরে মেঝেতে নামিয়ে দিল গার্ডরা।

    মুহূর্তখানেক ঠিক বুঝতে পারল না ল্যাঙডন কোথায় আছে সে। মাথার উপর দেখতে পাচ্ছে তারা… ঘুরতে থাকা গ্রহ। তার চোখের সামনে থেকে আস্তে আস্তে সরে গেল বিচিত্র দৃশ্যগুলো। লোকজন চিৎকার করছে। উঠে বসার চেষ্টা করল সে। একটা পিরামিডের মেঝেতে পড়ে আছে এবং একটা পরিচিত রাগি কণ্ঠ চিৎকার-চেচামেচি করছে, তারপরই একে একে সবগুলো ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠল তার কাছে।

    চিৎকার করে আকাশ মাথায় তুলছে ওলিভেট্টি, আগে কেন আপনারা এ ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি?

    কথাগুলো বলা হচ্ছে ভিট্টোরিয়াকে উদ্দেশ্য করে। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বোঝনোর চেষ্টা করছে মেয়েটা।

    তার কথাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ওলিভেট্টি চেঁচিয়ে আদেশ-নির্দেশ দিতে শুরু করল তার লোকজনে, বডিটা এখান থেকে তুলে আন। সারা ইমারত তন্ন তন্ন করে খোঁজ!

    উঠে বসার চেষ্টা করল ল্যাঙডন। সুইস গার্ডে গিজগিজ করছে চিগি চ্যাপেল। চ্যাপেলের প্রবেশপথে রাখা পলিথিন ছিড়ে ফেলা হয়েছে। তাজা বাতাস এসে ভরে দিচ্ছে তার বুক। এগিয়ে আসছে তার দিকে ভিট্টোরিয়া, তার চোখমুখে পরীর আভা।

    ঠিক আছতো তুমি? জিজ্ঞেস করতে করতে কোমল হাতে তুলে নিল সে ল্যাঙডনের হাত দুটা। পরীক্ষা করল তার হাতের পালস রেট।

    থ্যাঙ্কস! বলেই উঠে বসল ল্যাঙডন। ওলিভেট্টি পুরো পাগল হয়ে গেছে!

    নড করল ভিট্টোরিয়া। তার পাগল হয়ে যাবার কারণ আছে। আমরা ভুল করেছিলাম।

    আমরা মানে? আমি পাকিয়েছি ঝামেলাটা।

    তাহলে নিজেকে ফিরে পাও। পরের বার ধরা চাই লোকটাকে।

    পরের বার? ভেবে পাচ্ছে না এমন একটা নিষ্ঠুর কথা কী করে বলতে পারল ভিট্টোরিয়া! পরের বার বলে আর কিছু নেই। আমরা খেলায় আসল দানে হেরে বসে আছি!

    হাতের ঘড়িটা পরীক্ষা করল ভিট্টোরিয়া। মিকি বলছে আমাদের হাতে আরো চল্লিশ মিনিট সময় আছে। তোমার মন-মস্তিষ্ক ঠিক করে নাও। পরের বার তাকে আমরা পাকড়াও করছি।

    আমি তোমাকে বলেছি ভাল করেই, ভিট্টোরিয়া, আমরা সুযোগ হারিয়ে বসে আছি। পাথ অব ইলুমিনেশন- মাঝপথে থেমে গেল ল্যাঙডন।

    নরম করে হাসল ভিট্টোরিয়া।

    কষ্টেসৃষ্টে উঠে দাঁড়াল ল্যাঙডন। চোখ বোলাল চারদিকে। পিরামিড, নক্ষত্র, গ্রহ, অর্ধবৃত্ত… হঠাৎ পুরো ব্যাপারটা তার মাথায় চলে এল।

    একটা ব্যাপার এবার তার মাথায় খেলা শুরু করেছে। কী নিখুঁতভাবেই না এই পাথ অব ইলুমিনেশন বের করা হয়েছে! ভুবনখ্যাত প্যান্থিয়নকে আড়াল করেও কী চমৎকার ভাবে ঠিক রাখা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্য। এখানে আক্ষরিক অর্থেই ডেমনস হোল আছে, আছে মাটির সব ধরনের চিহ্ন। কোন ভুল-ভ্রান্তির বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। পারফেক্ট।

    বড় পিরামিডটা ধরে নিজেকে সোজা করল ল্যাঙডন। ভিট্টোরিয়ার কথাই ঠিক। এটাই যদি বিজ্ঞানের প্রথম মাইল ফলক হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই পরের জায়গাটার ইশারা নিহিত আছে এখানে। এখনো একটা ক্ষীণ সুযোগ আছে, কথাটা ভাবতে না ভাবতেই একেবারে আড়মোড়া ভেঙে শিরদাঁড়া খাড়া করল ল্যাঙডন। সুযোগ এখনো আছে। আছেই। যদি পথটার রহস্য খানিকটা সরে যায় তাহলেই পরের স্টপেজে খুনিকে হাতেনাতে ধরে ফেলার একটা সুযোগ থেকে যাবে।

    এগিয়ে এল ভিট্টোরিয়া, আমি বের করে ফেলেছি কে গোপন ইলুমিনেটি শিল্পী ছিল।

    তুমি কী করেছ?

    এখন আমাদের বের করতে হবে এখানে থাকা কোন নকশা থেকে—

    এক মিনিট! তুমি জান ইলুমিনেটির শিল্পী কে?

    হাসল ভিট্টোরিয়া, বার্নিনি। বলল সে, দ্য বার্নিনি।

    সাথে সাথে বুঝতে পারল ল্যাঙডন। কোথাও কোন ভুল হয়ে গেছে মেয়েটার। বার্নিনি? অসম্ভব। জিয়ানলরেঞ্জো বার্নিনি সর্বকালের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ স্কাল্পটর। তার খ্যাতির উপরে আর একজনই আছেন। স্বয়ং মাইকেলেঞ্জেলো। সপ্তদশ শতকে আর সবার চেয়ে বেশি কাজ করেছেন বার্নিনি। আর তারা এমন একজনের পিছনে লেগেছে যার কোন হদিস ইতিহাসে নেই।

    মাথা নাড়ল ভিট্টোরিয়া, তোমাকে দেখে খুব একটা খুশি বলে মনে হচ্ছে না।

    বার্নিনি? অসম্ভব।

    কেন? বার্নিনি ছিলেন গ্যালিলিওর সহচর। তিনি ছিলেন এক বিখ্যাত শিল্পী।

    তিনি ছিলেন এক অতি বিখ্যাত মানুষ। এবং একজন ক্যাথলিক।

    ঠিক তাই, বলল ভিট্টোরিয়া, ঠিক গ্যালিলিওর মত।

    না। একমত নয় ল্যাঙডন, কোন দিক দিয়েই এক রকম নয় ব্যাপারটা। ভ্যাটিকানের দৃষ্টিতে গ্যালিলিও ছিলেন একজন বিদ্রোহী। অন্যদিকে চার্চের প্রিয়পাত্র ছিলেন বার্নিনি। ভ্যাটিকানের সার্বিক শিল্পের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হয়েছিল তার হাতে।

    ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে তিনি তার সারা জীবন কাটিয়েছেন।

    এক চমৎকার কভার। ইলুমিনেটির গুপ্তচর। বিরক্ত বোধ করছে ল্যাঙডন, ইলুমিনেটির সদস্যরা তাদের শিল্পীকে কী নামে ডাকত জান? এল মায়েস্ট্রো ইগনোটো–দ্য আননোন মাস্টার।

    ঠিক তাই। তাদের কাছে অচেনা। ম্যাসনদের গোপনীয়তার কথা একবার ভাব। একেবারে উপরের দিকে যিনি আছেন তিনিই শুধু পুরোটা জানবেন। আর কেউ নয়। বেশিরভাগ সদস্যের কাছে বার্নিনির পরিচয় গোপন রেখেছিলেন গ্যালিলিও। বার্নিনির নিজের নিরাপত্তার জন্যই। ফলে ভ্যাটিকান কখনোই সত্যিকারের তথ্যটা জানতে পারবে না।

    এখনো সব এলোমেলো লাগছে ল্যাঙডনের। কিন্তু এটুকু সে বুঝতে পারছে, ভুল নেই মেয়েটার কথায়। যুক্তি আছে। গোপন ব্যাপারগুলোকে গুপ্ত রাখার কাজে সিদ্ধহস্ত ছিল ইলুমিনেটি। প্রত্যেকে উপরের জনের কাছে তথ্য দিত। আর কারো কাছে নয়। ফলে তাদের গোপনীয়তায় কোন ফাঁক ফোঁকড় থাকত না। পুরো ব্যাপারটা খুব কম। মানুষের কাছেই ফাঁস হয়েছিল।

    আর বার্নিনির ইলুমিনেটির সাথে যোগাযোগের ব্যাপারটাই প্রমাণ করে যে তাদের দুটা পিরামিড বানাতে হয়েছিল। মৃদু একটা হাসি ঝুলে আছে ভিট্টোরিয়ার ঠোঁটে।

    বড় আকারের পিরামিডে হাত রেখে উঠতে উঠতে কথাটুকুর গূঢ় তত্ত্ব বুঝতে পারছে ল্যাঙডন একটু একটু করে। বার্নিনি একজন ধর্মীয় শিল্পী। এই পিরামিড তার গড়ার কথা নয়।

    ত্যাগ করল ভিট্টোরিয়া, তোমার পিছনের লেখাটাকে সে কথা খুলে বল।

    সাথে সাথে পিছনে ফিরল ল্যাঙডন, দেখতে পেলঃ

    চিগি চ্যাপেলের শিল্পকর্ম
    যেখানে গতি ছিলেন রাফায়েল,
    ভিতরের সব নকশার কারুকার জিয়ানলরেজো বার্নিনি

    দুবার লেখাটা পড়ল ল্যাঙডন। এখনো সে কথাটা ঠিক হজম করতে পারছে না। এখনো তাকে তেমন বিশ্বাসী করে তুলতে পারেনি ব্যাপারটা। জিয়ানলরেঞ্জো বার্নিনি তার বিভিন্ন কাজের জন্য বিখ্যাত। কুমারী মেরি, এ্যাঞ্জেল, প্রফেট, পোপ… এসবই ছিল তার শিল্পকর্মের বিষয়। পিরামিড নিয়ে তিনি কী করছিলেন?

    উপরের দিকে তাকিয়ে আরো বোবা হয়ে গেল ল্যাঙডন। দুটা পিরামিড। সেগুলোর উপরে ঝকঝকে মেডেল। এরচে বেশি অখ্রিস্ট কাজ আর কী হতে পারে! পিরামিড, সেগুলোর উপরে তারকা, আশপাশে রাশি। ভিতরের সব নকশার কারুকার জিয়ানলরেঞ্জো বার্নিনি। যদি কথা সত্যি হয়ে থাকে, ভাবল ল্যাঙডন, তাহলে ভিট্টোরিয়ার কোন দোষ নেই।

    যদি বার্নিনি সত্যি সত্যি ইলুমিনেটির সেই চির অচেনা শিল্পী হয়ে থাকেন… এ চ্যাপেলের শিল্পকর্মে আর কোন পটুয়ার হাত পড়েনি! তথ্যগুলো এত বেশি দ্রুত এসে। ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর যে ল্যাঙডন খেই খুঁজে পাচ্ছিল না।

    বার্নিনি একজন ইলুমিনেটাস। বা

    র্নিনি ডিজাইন করেছেন ইলুমিনেটি এ্যাম্বিগ্রামগুলো।

    বার্নিনি তৈরি করেছেন পাথ অব ইলুমিনেশন।

    রা ফুটছে না ল্যাঙডনের কন্ঠে। তাহলে এই ছোট্ট চিগি চ্যাপেলেই কি বসে আছে সেই চিহ্ন যেটা ধরে রোমের অন্য কোন প্রান্তে গিয়ে উপনীত হয়ে পাথ অব ইলুমিনেশনের নকশা পাওয়া যাবে। সামনেই পড়ে আছে অল্টার অব সায়েন্স?

    বার্নিনি, বলল সে অবশেষে, আমি কখনোই কল্পনা করতে পারি না।

    ভেবে বের কর, ভ্যাটিকানের একজন সম্রান্ত আকিয়ে ছাড়া আর কার কলিজায় এত শক্তি আছে যে রোম জুড়ে বিখ্যাত সব চ্যাপেলে পাথ অব ইলুমিনেশন তৈরি করতে পারবে? অচেনা কেউ? অসম্ভব।

    কথাটাকে বিবেচনায় নিল ল্যাঙডন। পিরামিডগুলোর দিকে চোখ তুলে তাকাল সে। এর কোনটা সেই মাৰ্কার নয়তো? নাকি দুটাই?

    পিরামিডগুলো দুটা ভিন্ন দিক নির্দেশ করছে, অবশেষে বলল ল্যাঙডন। তারা চিহ্নিত নয়। সুতরাং আমি বলতে পারব না কোনটায় সূত্র বসানো আছে…।

    আমার মনে হয় না যে জিনিসের খোঁজে আমরা আতিপাতি করছি সেটা কোন পিরামিড।

    কিন্তু এখানে এগুলোই একমাত্র স্কাল্পচার।

    ওলিভেটির দিকে আঙুল তাক করে ভিট্টোরিয়া তাকে থামিয়ে দিল। সেখানে আরো কয়েকজন প্রহরী ভিড় করেছে ডেমনস হোলে।

    ল্যাঙডন মেয়েটার হাত অনুসরণ করে তাকাল সামনে। কিছুই নেই। তারপর আস্তে আস্তে নজরে এল ব্যাপারগুলো। একটা সাদা মার্বেল। একটা হাত। একটা মুখাবয়ব। দুটা মানব-অবয়ব। ল্যাঙডনের শ্বাস থেমে গেল। সে পিরামিড আর ডেমনস হোল নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে আর কিছুর দিকে তার চোখই যাচ্ছিল না।

    সোজা সে এগিয়ে গেল সামনে। সেখানে যে কী লুকিয়ে আছে এতক্ষণ তা খেয়াল করেনি। সাদা মার্বেলে খোদাই করা কারুকাজ। বাতাসে উড়ছে খোদাই করা মানুষগুলোর জামা। খাঁটি বার্নিনি-কাজ। ভ্যাটিকানের অঢেল সম্পদই পারে এমন বস্তু তৈরি করাতে। একেবারে কাছে আসার আগে সে কিছুই টের পেল না।

    এরা কারা? প্রশ্ন করল ভিট্টোরিয়া, যেন সব সওয়ালের জবাব আছে ল্যাঙডনের কাছে।

    বাক্যব্যয় করার কোন শক্তিই যেন নেই তার। অনেক কষ্টে বলল, হাবাক্কাক এ্যান্ড দি এ্যাঞ্জেল। একেবারে মিইয়ে পড়া কন্ঠে বলল সে। এই কাজটা এতোই বিখ্যাত যে কোন কোন আর্টের বইতেও জায়গা করে নিয়েছে। ভুলেই গিয়েছিল সে, এটা আছে এখানেই।

    হাবাক্কাক?

    ঠিক তাই। সেই প্রফেট যিনি পৃথিবী ধ্বংসের কথা বলেছিলেন।

    অপ্রস্তুত লাগছে ভিট্টোরিয়ার, তোমার কী মনে হয়? এটাই সেই মার্কার?

    এখনো স্থাণুর মত মাথা নাড়ল ল্যাঙডন। জীবনে আর কখনো কোন ব্যাপারে এত নিশ্চিত হয়নি সে। এটাই প্রথম ইলুমিনেটি মার্কার। কোন সন্দেহ নেই। যদিও ল্যাঙডন আশা করেছিল যে এটা দিয়ে কোন একটা দিক দেখানো হবে, তবু তা ঠিক উৎরে যাচ্ছে। এটা যে এত স্পষ্টভাবে দেখানো থাকবে সে কথা সে ভাবতেও পারেনি। প্রফেট আর এ্যাঞ্জেল, দুজনের হাতই দূরে এক দিক নির্দেশ করছে।

    হঠাৎ টের পেল ল্যাঙডন, হাসছে সে, খুব বেশি কষ্টকর নয়, কী বল?

    একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছে ভিট্টোরিয়া, তবু তার চোখ থেকে উবে যায়নি বিভ্রান্তি। আমি তাদের দিকনির্দেশ করতে দেখছি, কিন্তু তারা তো বিভ্রান্তিকর দিক নির্দেশ করছে। এ্যাঞ্জেল দেখাচ্ছে একদিক তো আরেকদিক দেখাচ্ছে প্রফেট।

    মুখ ভেঙচে হাসল ল্যাঙডন। কথা সত্যি। যদিও দুজনেই দূরে দেখাচ্ছিল, তবু তাদের দিক একে অপরের সাথে মিলে যায় না। এরই মধ্যে সমস্যার সমাধান বের করে ফেলেছে ল্যাঙডন। হঠাৎ করে সে দৌড় শুরু করল দরজার দিকে।

    কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া।

    বিল্ডিংয়ের বাইরে। দরজার দিকে ছুটে যেতে যেতে বেশ ভারমুক্ত অনুভব করল ল্যাঙডন। আমি দেখতে চাই স্কাল্পচারটা কোনদিক নির্দেশ করছে!

    থাম! কী করে তুমি জানলে কোন আঙুল ফলো করতে হবে?

    কবিতা। শেষ লাইনটা।

    লেট এ্যাঞ্জেল গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট? হতভম্বের মত ছেয়ে থাকল মেয়েটা।

     

    ৭০.

    গুন্থার গ্লিক আর চিনিতা ম্যাক্রি বিবিসি ভ্যানটাকে পার্ক করিয়ে পিয়াজ্জা ডেল  প্রোপোলোর দিকে এগিয়ে গেল। চার আলফা রোমিওর একটু পরেই তারা এসে হাজির হয়েছে। বিচিত্র ঘটনার পরম্পরা দেখতে তারা উদগ্রীব। চিনিতা এখনো জানে কী হচ্ছে এসব। শুধু একটা ব্যাপারে সে নিশ্চিত। ক্যামেরা রোল করাতে হবে।

    আসার সাথে সাথে চিনি আর গ্লিক দেখতে পেল কম বয়েসি লোকজনের একটা সৈন্যদল বেরিয়ে এল আলফা রোমিও থেকে। চার্চের চারধারে। তাদের কেউ কেউ অস্ত্র বের করে ফেলেছে। একজন অপেক্ষাকৃত বেশি বয়েসি লোক কয়েকজনকে নিয়ে গটগট করে উঠে গেল ভিতরের দিকে। ম্যাক্রি কিছুই শুনতে পায়নি। শুধু একটা ব্যাপার দেখতে পেল। সবাই ঠিকঠাক করে নিচ্ছে তাদের সাইলেন্সর। তারপরই সোজা ঢুকে গেল ভিতরে।

    চিনি ঠিক করল তারা দূরেই থাকবে, আর ছায়া থেকে ভিডিও করবে সবকিছু। হাজার হলেও, অস্ত্র হল অস্ত্র। আর তারা ভ্যানের ভিতর থেকে বেশ পরিষ্কার চিত্র পাচ্ছে। কোন আপত্তি জানায়নি গ্লিক। তারা এখন দেখতে পাচ্ছে ভিতর থেকে বাইরে, বাইরে থেকে ভিতরে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। একদল আরেক দলের সাথে উচ্চস্বরে বাদানুবাদ করছে। একটা দল বাইরের দিকটা সার্চ করতে শুরু করল। বিবিসির ক্যামেরা অনুসরণ করল তাদের। তাদের সবাই যদিও বেসামরিক পোশাক পরে আছে তবু ঠিক ঠিক বলা যায় কায়-কারবারে তারা একেবারে মিলিটারি। কী মনে হয়, কারা ওরা? জানতে চাইল চিনিতা।

    জানলে এতক্ষণে দোজখে থাকতাম। বলল সে, সমান তেজে, তোমার ক্যামেরা তাদের ধরতে পারছে তো?

    প্রত্যেকটা ফ্রেম।

    যেন সুযোগ পেল প্লিক, এখনো তুমি পোপ-ওয়াচে বেরিয়ে পড়তে চাইছ?

    কী বলতে হবে তা ঠিক ঠিক জানে না চিনিতা। অনেকদিন ধরে সাংবাদিকতার সাথে যোগ-সাজস আছে তার। সে ভাল করেই জানে, আপাতত বেশ আগ্রহোদ্দীপক ঘটনার পিছনেও একেবারে নির্জলা নিরস কারণ থাকে।

    এর কোন মানে নাও থাকতে পারে, বলল সে অবশেষে, এই লোকেরাও হয়ত তোমার মতই একটা উড়ো খবর পেয়েছে। হামলে পড়েছে সত্যতা উদ্ধারের কাজে। ফলস এ্যালার্ম হবার সম্ভাবনা কম নয়।

    গ্লিক তার হাত খামচে ধরল। ঐদিকে তাকাও। ফোকাস কর! চার্চের দিক নির্দেশ করল সে।

    সাথে সাথে ক্যামেরা ঘুরিয়ে ফেলল চিনিতা। সোজা তাক করল গির্জার প্রবেশপথের দিকে। হ্যালো দেয়ার! বলল সে। যেন স্বাগত জানাল সিঁড়ির লোকটাকে।

    উটকো লোকটা কে?

    ক্লোজ-আপ নিল চিনিতা। আগে তাকে দেখিনি। বলল সে, কিন্তু তাকে আবার দেখতে কোন আপত্তি নেই আমার।

     

    রবার্ট ল্যাঙডন গির্জা থেকে গুলির মত ছিটকে বেরিয়ে এল। চলে এল পিয়াজ্জার মাঝামাঝি পর্যন্ত। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দক্ষিণ রোমের আশপাশে টপ করে ডুবে যেতে বসেছে সূর্য। আশপাশের ভবন থেকে ছায়া এসে গিলে নিচ্ছে স্কয়ারটাকে।

    ওকে, বার্নিনি! বলল সে জোরে জোরে, কোথায় তোমার এ্যাঞ্জেল দিক নির্দেশ করছে?

    ফিরে তাকাল সে গির্জাটার দিকে, যেটা থেকে এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে সে। সে ভিতরের চিগি চ্যাপেলের কথা ভাবল। ভাবল সেটার ভিতরে থাকা এ্যাঞ্জেলের নির্দেশিত দিকের কথা। কোন প্রকার অস্বস্তি ছাড়াই সে ফিরে তাকাল পশ্চিমে। সূর্য নামছে পাটে। টিকটিক করে কেটে যাচ্ছে সেকেন্ডের কাঁটা।

    দক্ষিণ-পশ্চিম, বলল সে, পরের মার্কারটা সেখানেই।

    মনের বারোটা বাজিয়ে পাতার পর পাতা পড়ে যাওয়া ইতালিয় আর্টের বর্ণনা মনে মনে পড়ে নিচ্ছে। বার্নিনি এত বেশি কাজ করেছেন যে কোন স্পেশালিস্ট ছাড়া পুরো ব্যাপারটাকে মানিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। প্রথম কাজটা যেহেতু তার পরিচিত, আশা করছে সে, পরেরটাও পাওয়া যাবে স্মৃতি ঘটলেই। সেটাও বিখ্যাত কোন কাজ হবে।

    আর্থ, এয়ার, ফায়ার, ওয়াটার… ভাবল সে। প্রথমটায় সে আর্থ পেয়েছে। হাবাক্কাক, সেই প্রফেট যিনি পৃথিবীর লয়ের কথা বলেছিলেন।

    পরেরটা হল এয়ার। মাথাকে ঘামিয়ে বারোটা বাজাচ্ছে সে। বার্নিনির এমন কোন কাজ যেটায় এয়ার আছে… নিজেকে আরো ঝালিয়ে নিল সে। আরো সতেজ হল। আমি পাথ অব ইলুমিনেশনে আছি। আমাকে দেখাবে পথ, পাথ অব ইলুমিনেশন… এখনো এটা অক্ষ…।

    দক্ষিণ-পশ্চিম রোমের দিকে তাকিয়ে কোন একটা টাওয়ারকে খুজছে সে যাতে মনে পড়ে যায় বিখ্যাত কোন শিল্পকর্মের কথা। মনে পড়ে যায় কোন প্রখ্যাত গির্জার। কথা। একটা ম্যাপ প্রয়োজন। এমন একটা ম্যাপ যেটা দিক দেখিয়ে দেবে। যেটা থেকে ঠিক ঠিক বোঝা যাবে দক্ষিণ-পশ্চিম রোমে কোন কোন প্রাচীণ চার্চ আছে। সেগুলোর নামের উপর একবার করে চোখ বুলিয়ে নিলেই আসল সমস্যাটার সমাধান। চলে আসবে। মনে পড়ে যাবে সেটার কথা।

    এয়ার! সে চাপ দিল। বায়ু। বার্নিনি। স্কাল্পচার। এয়ার। ভাবো। ভেবে বের কর।

    ঘুরে দাঁড়াল ল্যাঙডন। ফিরে চলল চ্যাপেলের ভিতরে। সেখানে প্রবেশমুখেই দেখা হয়ে গেল ওলিভেট্টি আর ভিট্টোরিয়ার সাথে।

    দক্ষিণ-পশ্চিম। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সে, পরের গির্জাটা এখান থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে।

    ওলিভেটির ফিসফিসানি আগের চেয়েও শীতল। এবার আপনি নিশ্চিত?

    কামড়টা অনুভব করতে পারল না ল্যাঙডন। সে উত্তেজিত। আমাদের একটা ম্যাপ লাগবে। এমন এক মানচিত্র যেটায় পুরো রোমের প্রাচীণ চার্চগুলোর খতিয়ান দেয়া আছে।

    একই ভঙ্গিতে তাকে খুটিয়ে দেখল। এখনো তার হাবভাবে কোন উত্তেজনা নেই।

    হাতের ঘড়ি পরীক্ষা করে দেখল ল্যাওড়ন। আমাদের হাতে মাত্র আধঘণ্টা সময় আছে।

    ওলিভেট্টি সোজা তাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল তার গাড়ির দিকে। গাড়িটা সোজা চ্যাপেলের সামনে পার্ক করা। মনে মনে আশা জাগল ল্যাঙডনের একটু। আশা করা যায় লোকটা ম্যাপ আনতে গেছে।

    ভিট্টোরিয়া এখনো উদ্যমী, তার মানে এ্যাঞ্জেল দক্ষিণ-পশ্চিমে দিক নির্দেশ করছে? সেদিকে কোন কোন চার্চ আছে সে বিষয়ে কোন ধারণা নেই?

    আমি মরার বিল্ডিং ভেদ করে দেখতে পাই না। সখেদে বলল ল্যাঙডন, আর আমি রোমের হাজারটা গির্জার ব্যাপারেও যে সব জানি সে কথা-থেমে গেল সে।

    আরো তীক্ষ্ণ্ণ মনে হচ্ছে ভিট্টোরিয়াকে, কী?

    পিয়াজ্জার দিকে আরেকবার দৃষ্টি ফেলল ল্যাঙডন। চার্চের সিঁড়িগুলো মাড়িয়ে আসায় এবার সে আরো একটু উঁচু হয়ে গেছে। আরো একটু বেশি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বাইরের দৃশ্যগুলো। এখনো সে খুব একটা বেশি কিছু দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু এ কথাটা নিশ্চিত, একটু নির্দেশনা পাচ্ছে এখান থেকে। সামনে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা ভবন। অনেকগুলোই গির্জাটার চেয়ে উঁচু। তারপরও সে ঠিক ঠিক বুঝে ফেলল কোনদিকে তার দৃষ্টি।

     

    বিবিসি ভ্যানের ভিতরে, পিয়াজ্জার অপর প্রান্তে, বসে আছে গ্লিক আর চিনি। একেবারে আঠার মত লেগে আছে সিটের সাথে। আর তাদের শকুন দৃষ্টি আটকে আছে গির্জাটাকে ঘিরে গজিয়ে ওঠা বিচিত্র ঘটনার দিকে।

    পাচ্ছ এগুলো? প্রশ্ন করল গুন্থার গ্লিক।

    ম্যাক্রি তার নজর ধরে রেখেছে বাইরে থেকে ছাদের দিকে উঠতে থাকা লোকটার দিকে। স্পাইডার ম্যান-স্পাইডার ম্যান খেলার তুলনায় লোকটার সাজ-পোশাক একটু বেশি ভদ্র বলা চলে।

    আর মিস স্পাইডিটা কে?

    চিনিতা তাকাল নিচের অপরূপ মেয়েটার দিকে। আমি নিশ্চিত তুমি বের করার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী।

    কী মনে হয়? এডিটোরিয়ালকে কল করব?

    এখনো না। আরো একটু খতিয়ে দেখতে দাও। এখনো ঝোলাতে আরো কিছু রতে হবে যদি জানাতে হয় যে কনক্লেভের সময়টা পার করছি আমরা এখানে বসে বসে এ্যাডভেঞ্চার দেখতে দেখতে।

    তোমার কী মনে হয়? আসলেই কেউ ওই হদ্দ বুড়োদের একজনকে এখানে পটল তুলিয়ে দিয়েছে?

    হাসল চিনি, তুমি নিশ্চিত দোজখে যাবে।

    কিন্তু সাথে করে পুলিৎজার পুরস্কারটাও বগলদাবা করে নিয়ে যাব।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন
    Next Article দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.