Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প575 Mins Read0

    ০৮. যত উপরে উঠছে ল্যাঙডন

    ৭১.

    যত উপরে উঠছে ল্যাঙডন, ততই স্পষ্ট হচ্ছে বাইরের দৃশ্য। উপরে ওঠা তার থামছে না।

    উপরের দিকে চলে যাবার পর সে আশার চেয়েও বেশি হারে হাঁপাচ্ছিল। শেষ ধাপে উঠে সে নিজেকে কোনমতে টেনে তুলল। তারপর ঝাড়ল গায়ে লাগা ধুলি ময়লা। এই উচ্চতা তাকে মোটেও ভীত করছে না। বরং ভালই লাগছে।

    সামনের দৃশ্যের কোন তুলনা নেই। যেন কোন সাগরে আগুন লেগে গেছে। আগুন লেগে গেছে বাড়িগুলোর ছাদে ছাদে। শেষ বিকালের সূর্য কৃপণভাবে কীরণ পাঠাচ্ছে সাত পাহাড়ের শহরের উপর। জীবনে প্রথমবার সে দেখতে পেল দূষণমুক্ত, স্বর্গীয় সিটা ডি ডিওকে–দ্য সিটি অব গড।

    এই ভবন সমুদ্রে ল্যাঙডন খুঁজে বের করার চেষ্টা করল ঘন্টি বাধা গির্জাগুলোকে। কিন্তু সে যতই দূরে… আরো দূরে দেখতে লাগল, ততই তার দৃষ্টি হতবিহ্বল হয়ে উঠল। চার্চের এত অভাব রোম শহরে! এখানে শত শত গির্জা আছে। ভাবছে সে। আর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে দু-একটা থেকে পারে না। চাৰ্চটাকে এখনো দেখা যাবে, যদি সেটা এখনো দাঁড়িয়ে থেকে থাকে।

    চোখকে একবিন্দু বিশ্রাম না দিয়ে সে আবার খতিয়ে দেখতে শুরু করল পুরনো দৃশ্যগুলো। সে জানে, অবশ্যই, সব চার্চের বাইরে যে দৃম্যমান মিনার থাকবে এমন কোন কথা নেই। বিশেষত ছোট স্যাঙচুয়ারিগুলোতে তা আশা করা যায় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সপ্তদশ শতকে সাঁই সাঁই করে রোমের আকৃতি বড় হয়ে যায় কারণ

    নিয়মানুযায়ী, গির্জার চেয়ে উঁচু করে কোন বাসা বানানো যেত না। কিন্তু অনেক আগেই সে কাল চলে গেছে। এখন যখন ল্যাঙডন তাকায় সেদিকে, দেখতে পায় অনেক অনেক এ্যাপার্টমেন্ট, হাই-রাইজ, টিভি টাওয়ার।

    আরো একবার দূরতম প্রান্তে ল্যাঙডনের দৃষ্টি কিছু একটা খুঁজে ফিরল। দূরে দেখা যাচ্ছে মাইকেলেঞ্জেলোর কীর্তি। সেদিকেই কোথাও আছে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, আছে ভ্যাটিকান সিটি। ভেবে সে কূল পায় না কী অবস্থায় আছে কনক্লেভের ভিতরের মানুষগুলো, পাওয়া গেছে কি এ্যান্টিম্যাটারের ক্যানিস্টারটা? যদ্দূর মনে হয়, পাওয়া যায়নি… যাবেও না।

    তার মাথায় আবার চক্কর কাটতে শুরু করল কবিতাটা। মন্ত্রের মত আউড়ে গেল সে। একের পর এক লাইন। অতি সাবধানে। ফ্রম শান্তিস আর্থি টম্ব উইথ ডেমনস হোল। তারা শান্তির টম্ব খুঁজে পেয়েছে। ক্রস রোম দ্য মিস্টিক এলিমেন্টস আনফোল্ড। মিস্টিক এলিমেন্ট হল আর্থ, এয়ার, ফায়ার, ওয়াটার। দ্য পাথ অব লাইট ইজ লেইড, দ্য সেক্রেড টেস্ট। পাথ অব ইলুমিনেশন তৈরি হয়েছে বার্নিনির স্কাল্পচার থেকে। লেট এ্যাঞ্জেল গাইড ইউ অন ইউর লফটি কোয়েস্ট।

    এই এ্যাঞ্জেল দিক নির্দেশ করছে ঠিকই।

    দক্ষিণ-পশ্চিমে।

     

    সামনের সিঁড়ির দিকে, বলল গ্লিক চড়া গলায়। কিছু একটা হচ্ছে সেখানে!

    মূল এন্ট্রান্স থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ম্যাক্রি তাকাল সেদিকে। অবশ্যই, কিছু একটা হচ্ছে সেখানে। একদল মিলিটারি সদৃশ লোক একটা আলফা রোমিওকে এগিয়ে এনেছে একেবারে সিঁড়ির কাছে। খুলে ফেলেছে ট্রাঙ্ক।

    একজন চোখ বুলাচ্ছে চারদিকে। প্রথমে ম্যাক্রির মনে হয়েছিল লোকটা তাকে দেখছে। তারপর দেখল, না, ঘুরে গেছে দৃষ্টি। আশপাশে কেউ নেই এ ভাবনাটা পাকা হবার পর সে একটা ওয়াকি-টকি বের করে কথা বলতে শুরু করল।

    এমন সময় সত্যি সত্যি একটা সৈন্যদলকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। ঠিক যেভাবে আমেরিকান ফুটবল খেলায় প্লেয়াররা দেয়াল তৈরি করে এগিয়ে আসে সেভাবে। সিঁড়ির একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত।

    একটা মানবপ্রাচীরের মত এগিয়ে আসছে তারা। তাদের পিছনে, একেবারে অদৃশ্য কিছু একটাকে তুলে আনছে চারজন সৈনিক। ভারি কিছু। ভেবে পাচ্ছে না গ্লিক কী হতে পারে ওটা।

    পিছনে তাকাল সে, তারা কি গির্জা থেকে কিছু চুরি করছে?

    জবাব দেয়ার ধাত নেই ম্যাক্রির। সে তার জুম ক্যামেরায় দৃশ্যগুলো ভালভাবেই দেখতে পাচ্ছে। তার মনে এখন অন্য চিন্তা। একটা ফাঁক-ফোঁকড়! একটা মাত্র ফ্রেম! তাতেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। লোকজন একটা প্রাণীর মত এগিয়ে আসছে। অবিচ্ছিন্ন। কাম অন! লেগে আছে ম্যাক্রি, কিন্তু তাতে কিছুই-গিয়ে আসছে না। তারপর, অবশেষে, সৈন্যরা যখন কিছু একটা তোলার চেষ্টা করছে ট্রাঙ্কে, তখনি সুযোগটা মিলে গেল ম্যাক্রির।

    অবশেষে, পাওয়া গেল ফ্রেম। আহ্লাদে আটখানা হয়ে যাবার মত সুযোগ। তারপও তেমনি পাথর পাথর ভাব ধরে বসে আছে ভিডিওগ্রাফার। একটা নয়, মোটামুটি খান দশেক ফ্রেম ঠিক ঠিক তুলে আনা গেছে।

    এডিটোরিয়ালকে কল কর! অবশেষে বলল সে, আমরা একটা ডেডবডি পেয়ে গেছি।

     

    অনেক দূরে, সার্নে, ম্যাক্সিমিলিয়ান কোহলার এগিয়ে গেল লিওনার্দো ট্রোর স্টাডিতে। হুইল চেয়ারে ভর করে। দক্ষ হ্যাকারের মত সে দেখতে লাগল প্রতিটা ফাইল-পত্র। যা পাবার চেষ্টা করছে তা না মিলে যাওয়াতে সে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গেল ট্রোর বেডরুমে। তার পাশের টেবিলটার উপরের ড্রয়ার তালা আটা। কিচেন থেকে একটা চাকু তুলে এনে সে সহজেই সেটার রহস্য উন্মোচন করল।

    ভিতরে, কোহলার ঠিক সেটাই খুঁজে পেল যেটার জন্য তন্ন তন্ন করছিল লিওনার্দো ডেট্রার স্টাডি।

     

    ৭২.

    ল্যাঙডন নেমে পড়েই ধুলাবালি ঝাড়ার কাজে লেগে পড়ল।

    কপাল মন্দ? জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া।

    মাথা নাড়ল ল্যাঙডন।

    তারা কার্ডিনালকে ট্র্যাঙ্কে পুরে দিয়েছে।

    তারপর তাকাল সে ওলিভেটি আর তার সৈন্যদলের দিকে। তারা একটা ম্যাপ মাটিতে বিছিয়ে কাজে লেগে পড়েছে।

    দক্ষিণ-পশ্চিমের খোঁজ করছে নাকি?

    নড করল মেয়েটা। কোন চার্চ নেই। এখান থেকে সোজা সেদিকে গেলে তুমি ধাক্কা খাবে সেন্ট পিটার্সের সাথে।

    গজগজ করল ল্যাঙডন। সে এগিয়ে গেল ওলিভেষ্টির দিকে। সৈন্যরা তাকে পথ ছেড়ে দিল।

    তাকাল ওলিভেট্টি, চোখ তুলে, কিছু নেই। এটা দিয়ে সব চার্চ অবশ্য দেখা যায়। শুধু বড়গুলো। মোটামুটি পঞ্চাশটা।

    আমরা কোথায়? জিজ্ঞেস করল ল্যাঙডন।

    ওলিভেট্টি পিয়াজ্জা ডেল প্রোপোলোর দিকে আঙুল রেখে সোজা দক্ষিণ-পশ্চিমে দিক নির্দেশ করল। সেদিকে রোমের অনেকগুলো বড় বড় গির্জা আছে। কালো স্তম্ভ দিয়ে সেগুলোকে নির্দেশ করার হয়। কপাল মন্দ, রোমের বড় চার্চ বলতে রোমের

    প্রাচীণ চার্চগুলোকেই বোঝানো হয়। সবই ষোলশো সালের দিকে বানানো।

    আমার কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, বলল ওলিভেট্টি, আপনি কি দিকের ব্যাপারে নিশ্চিত?

    ল্যাঙডন আবার মনে মনে দেখে নিল এ্যাঞ্জেলের নির্দেশিত দিকটার কথা। ইয়েস, স্যার। পজিটিভ।

    শ্রাগ করল ওলিভেট্টি, তারপর এর উপর দিয়ে আরো একবার সোজা দাগ কেটে গেল। পথে পড়ল মার্গারিটা ব্রিজ, ভিয়া কোলা ডি রিয়েজো আর পাশ কাটিয়ে গেল পিয়াজ্জা ডেল রিসোর্জিমেন্টোকে। কিন্তু সোজা পথে তা কোন দিকেই আক্রমণ করল না।

    কোনটার গায়েই লাগল না। শেষ পর্যন্ত তা গিয়ে ঠেকল সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে।

    সেন্ট পিটার্সের দোষ কোথায়? বলল এক সাহসি সৈন্য, তার বা চোখের নিচে গভীর ক্ষত, এটাও একটা চার্চ।

    মাথা নাড়ল সাথে সাথে ল্যাঙডন, না-না। একটা পাবলিক প্লেস হতে হবে। পিটার্স তেমন কোন সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গা নয়।

    কিন্তু সেটা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ভিতর দিয়েও গিয়েছে। সেটা পাবলিক প্লেস। বলল ভিট্টোরিয়া, এরই মধ্যে সে চলে এসেছে।

    এরই মধ্যে ল্যাঙডন এটাকে বিবেচনায় এনেছে, কোন স্ট্যাচু নেই।

    ঠিক মাঝখানে একটা মনোলিথ আছে না?

    মেয়েটার কথা ঠিক। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে একটা মিশরিয় একশিলাস্তম্ভ আছে। ল্যাঙডন সেটাকে দেখেছিল। মাথায় নানা চিন্তা এসে এসে বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

    না। ভ্যাটিকান মনোলিথটা বার্নিনির কীর্তি নয়। ক্যালিগুলা এটাকে এনেছিলেন। আর এর সাথে এয়ারের কোন সম্পর্ক নেই। আরো একটা কথা আছে। কবিতায় বলা হয়েছে নিশানাগুলো ছড়িয়ে আছে রোমে। ভ্যাটিকান সিটির কথা নেই সেখানে।

    নির্ভর করছে আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন তার উপর। নাক গলাল একজন গার্ড।

    কী? চোখ তুলে তাকাল ল্যাঙডন।

    সব সময়ই কাবাবের ভিতর হাড্ডি। বেশিরভাগ ম্যাপেই সেন্ট পিটার্স স্কয়ারকে ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে দেখানো হয়। কিন্তু এখানে আরো একটা ব্যাপার আছে। বেশিরভাগ রোমান প্রশাসক মনে করে এটা যেহেতু ভ্যাটিকানের আর সব জায়গার মত দেয়াল ঘেরা নয়, তাই এটা রোমের অভ্যন্তরীণ এলাকা।

    আপনি বাচ্চাদের মত কথা বলছেন। বলল ল্যাঙডন। এমন কথা সে কখনো শোনেনি।

    আমি এটার কথা বলেছি একটামাত্র কারণে, তেতে উঠেছে গার্ড, কারণ মিস ভেট্রা আর কমান্ডার ওলিভেট্টি এয়ারের সাথে সম্পর্কের কথা বলছিলেন।

    চোখ বড় বড় হয়ে গেল ল্যাঙডনের, আর আপনি জানেন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে বায়ুর সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু আছে?

    ঠিক তা নয়। এটা কোন স্কাল্পচার না। হয়ত এর সাথে আদৌ কোন সম্বন্ধ নেই। শোনা যাক তোমার কথা। চাপ দিল ওলিভেটি।

    শ্রাগ করল গার্ড। আমি এ সম্পর্কে জানি তার একমাত্র কারণ আমি পিয়াজ্জায় ডিউটিতে থাকি প্রায়ই। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের প্রতিটা কোণা আমার নখদর্পণে।

    স্কাল্পচার, খোদিত শিল্প, বলছে যুক্তি দেখানোর ভঙ্গিতে ল্যাঙডন, দেখতে কেমন?

    এখনো ভেবে কূল পায় না ল্যাঙডন, এত বড় সাহস কি হবে তাদের? ইলুমিনেটি কি সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ঠিক বাইরে তাদের দ্বিতীয় চিহ্ন রাখার সাহস পাবে!

    এটার পাশ দিয়ে প্রতিদিন আমি ধর্ণা দেই। বলছে সোলজার, এটা একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। ঠিক যেদিকে লাইনটা গেছে। এটাই আমাকে সে জিনিসটার কথা মনে করিয়ে দিল। যা বলেছিলাম, এটা আসলে কোন স্কাল্পচার নয়। বরং যেন কোন… ব্লক।

    পাগলাটে দেখাচ্ছে ওলিভেট্টিকে, একটা ব্লক?

    ইয়েস, স্যার। স্কয়ারে বসানো একটা মার্বেল ব্লক। মনোলিথের ভিত্তি স্বরূপ। কিন্তু ব্লকটা কোন চতুষ্কোণ নয়, বরং অর্ধচন্দ্রাকার। আর এটা নিচু হয়ে গেছে বায়ু প্রবাহের মত। বাতাস… আমার মনে হয়, যদি আপনারা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে চান।

    অত্যাশ্চর্য চোখ নিয়ে তাকাল ল্যাঙডন সৈন্যটার দিকে। রিলিফ! বলল সে হঠাৎ করে।

    সবাই তাকাল তার দিকে। রিলিফ, বলল ল্যাঙডন, স্কাল্পচারের অন্য পাশটা!

    স্কাল্পচার ইজ দ্য আর্ট অব শেপিং ফিগার্স ইন দ্য রাউন্ড গ্র্যান্ড অলসো ইন রিলিফ। চকবোর্ডে এই সংজ্ঞা লিখে আসছে সে অনেক বছর ধরে। রিলিফ হল দ্বিমাত্রিক স্কাল্পচার। পেনিতে যেভাবে আব্রাহাম লিঙ্কনের প্রোফাইল দেয়া আছে, সেভাবে। বার্নিীনির চিগি চ্যাপেলের মেডেলগুলোও তেমনি উদাহরণ।

    বাসোরেলিইভো? ইতালিয় শিল্প-কথা ব্যবহার করে গার্ড জানতে চাইল।

    হু। বাস-রিলিফ! ল্যাঙডন আরো এগিয়ে গেল সামনে। আমি ঐ টার্মগুলো নিয়ে চিন্তা করছিলাম না। যে জিনিসটা নিয়ে আপনারা কথা বলছেন সেটার নাম আসলে ওয়েস্ট পোনেন্তে–দ্য ওয়েস্ট উইন্ড। এর আরো একটা নাম আছে। রেসপিরো ডি ডিও।

    ব্রিথ অব গড?

    ঠিক তাই। এয়ার! আর একটাকে সেখানে বসানো হয়েছে সত্যিকার আর্কিটেক্টের দ্বারা!

    ল্যাঙডন দেখল, ভিট্টোরিয়ার চোখেমুখে অনিশ্চয়তা, আমি ভেবেছিলাম মাইকেলেঞ্জেলো সেন্ট পিটার্সের নির্মাতা।

    তোমার কথায় ভুল নেই। ব্যাসিলিকা গড়েছেন তিনি। কিন্তু সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ডিজাইনার ছিলেন বার্নিনি!

    যখন আলফা রোমিওর গাড়ির বহর এগিয়ে যাচ্ছে মহা ব্যস্ততায়, তখন প্রত্যেকে এত উত্তেজিত আর চিন্তিত ছিল যে কেউ খেয়াল করেনি তাদের পিছনে পিছনে পাততাড়ি গোটাচ্ছে বিবিসি ভ্যান।

     

    ৭৩.

    গুন্থার গ্লিক হন্তদন্ত হয়ে চালাচ্ছে তার পেটমোটা ভ্যানটাকে। দ্রুত যেতে থাকা আলফা রোমিওর সারিকে অনুসরণ করতে করতে গলদঘর্ম হচ্ছে সে। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়। টাইবার নদীর তীর ধরে তারা ছুটছে তীরবেগে। পন্টা মার্গারিটা ধরে তারা পেরিয়ে গেল টাইবার।

    সাধারণত গ্লিক অনুসরণ করার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চলে। ধরি মাছ ছুই পানি ধরনের দূরত্ব, যেন যাকে ফলো করা হচ্ছে সে ঠাহর না করতে পারে। কিন্তু আজকে তার ভিতরে সেসবের বালাই নেই। এই লোকগুলো উড়ালপঙ্কিতে চড়ে যাচ্ছে যেন!

    লন্ডনের সাথে একটা ফোনকল শেষ করে পিছনের সিটে, নিজের কর্মক্ষেত্রে ম্যাক্রি আবার এ্যাকশনে নামার পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার সিরিয়াসনেস এতোক্ষণে উঠে এসেছে উপরে। ফিরে তাকাল সে গ্লিকের দিকে।

    কোন খবরটা চাও? গুড নিউজ নাকি ব্যাড নিউজ?

    ব্যাড নিউজ।

    সম্পাদকীয় তেতে আছে, আমরা কাজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছি।

    সারপ্রাইজ।

    তারা আরো মনে করছে তোমার সংবাদদাতা একটা প্রতারক।

    অবশ্যই।

    আর বস এইমাত্র আমাকে বললেন যে তুমি হলে এমন এক লোক যাকে ক্ষণে ক্ষণে চা খেয়ে তরতাজা থাকতে হয় নাহলে একেবারে স্বপ্নে ডুবে থাক।

    গ্রেট। আর সুসংবাদ?

    তারা রাজি হয়েছে আমাদের এইমাত্র তোলা ফুটেজ দেখতে।

    সাথে সাথে একটা আলাভোলা হাসি ছড়িয়ে পড়ল গ্লিকের সারা মুখ জুড়ে, এবার দেখা যাবে কোন ঘুমকাতুরে কুম্ভকর্ণের নিদ্রা তাড়ানোর জন্য চায়ের প্রয়োজন আছে, তাহলে? উড়িয়ে দাও তোমার চিঠি।

    ট্রান্সমিট করতে পারব না যে পর্যন্ত না একটা স্থির জায়গায় বসছি।

    ভিয়া কোলা ডি রিয়েঙ্গোতে উঠে এল গ্লিক, এখন থামা অসম্ভব। সে আবারও আলফা রোমিও গুলোর তেলেসমাতি দেখে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। একটা তীক্ষ্ণ্ণ বাঁক নিয়ে সেগুলো ঢুকে পড়েছে পিয়াজ্জা রিসোর্জিমেন্টোতে।

    ম্যাক্রি সোজাসাপ্টা তার কম্পিউটারের কাজে নেমে পড়ল। আমার ট্রান্সমিটারটা একবার ভেঙে ফেল… বলল সে, সখেদে, আর তারপর আমি ফুটেজটুকু লন্ডন পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পৌঁছে দিয়ে আসব।

    শক্ত হয়ে বস, আমার ভালবাসা, কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি।

    ম্যাক্রি সত্যি সত্যি কাঠ কাঠ হয়ে বসে পড়েছে, কোথায়?

    সামনে ভোজবাজির মত হাজির হওয়া বিশাল গম্বুজের দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত কেলিয়ে হাসল গ্লিক, প্রাণখোলা হাসি, যেখান থেকে আমাদের ভানুমতির খেল শুরু হয়েছিল সেখানেই।

     

    সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া অনেক যন বাহনের মধ্যে মুহূর্তে জায়গা করে নিল আলফা রোমিও চারটা। তারা বিভক্ত হয়ে গিয়ে পিয়াজ্জার চারদিকে ঘিরে ফেলল। ঠান্ডা মাথায় সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসছে লোকজন। গার্ডরা সাথে সাথে সেখানে ভিড় করা ট্যুরিস্ট আর সাংবাদিকদের ভিতরে হারিয়ে গেল। কোন কোন গার্ড ঢুকে পড়ল পিলারের জঙ্গলের ভিতরে। সেখানেও মিশে গেল তারা মুহূর্তের মধ্যে। উইন্ড শিল্ডের ভিতরে বসে ল্যাঙডন দেখতে শুরু করল সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের কান্ড কারখানা।

    নেমেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওলিভেট্টি। আরো লোক আনার জন্য খবর পাঠিয়েছে ভিতরে। কয়েকজনকে পাঠিয়ে দিয়েছে সেই মনোলিথের গোড়ায়। ল্যাঙডন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ছড়ানো চত্বরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে যুদ্ধ করল। কী করে একজন ইলুমিনেটি এ্যাসাসিন এই দঙ্গলের মধ্যে ঢুকে একজন কার্ডিনালকে বেমক্কা মেরে ফেলে সদর্পে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে! কী করে সে লোকটাকে তুলে অনিবে এখানে, তারপর সর্বসমক্ষে হত্যা করবে?

    মিকি মাউসকে চেক করে দেখল আরেকবার ল্যাঙডন। আটটা চুয়ান্ন। আর মাত্র ছ মিনিট।

    এগিয়ে এল আবার গাড়ির দিকে ওলিভেট্টি, বলল ল্যাঙডন আর ভিট্টোরিয়াকে, আপনারা দুজনে এখন বার্নিনি ইটের বা ব্লকের বা কোন্ জাহান্নামের জায়গা সেটা… সেখানে হাজির থাকবেন। একই কাজ। আপনারা ট্যুরিস্ট। আর ফোন ব্যবহার করবেন বেখাপ্পা কিছু দেখামাত্র।

    ল্যাঙডন কিছু বলার বা বোঝার আগেই দেখতে পেল ভিট্টোরিয়া তার হাত চেপে ধরে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।

    সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার শেষ প্রান্তে আর একটু হলেই ডুবে যাবে শরতের সূর্য। পিয়াজ্জাকে আড়াল করে একটা বোবা করে দেয়া আকারের ছায়া এলিয়ে পড়ছে। ল্যাঙডন একটা হিম শীতলতা অনুভব করে যখন সে আর ভিট্টোরিয়া যাচ্ছে ঠান্ডা পথ ধরে। মানুষের সমুদ্রে ডুবে যেতে যেতে ল্যাঙডন বারবার চোখ বুলিয়ে যায় প্রত্যেক দর্শনার্থীর মুখে। এর মধ্যে খুনিটা নেই তো! ভিট্টোরিয়ার হাত খুব উষ্ণ লাগছে তার কাছে।

    সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের খোলা এলাকা পেরিয়ে যেতে যেতে ল্যাঙডন টের পেল একটা বিশালত্বের অনুভূতি তার মনকে দখল করে রাখছে। কী অবাক ব্যাপার, বার্নিনি সারা জীবন ভ্যাটিকানে কাটিয়েও চারশো বছর ধরে একেবারে অপরিচিত রয়ে গেছেন। বাইরের দুনিয়ার কাছে, ইলুমিনেটির গোপন মাস্টার হিসাবে।

    ওবেলিস্কের দিকে? একশিলাস্তম্ভাটার কাছে?

    পিয়াজ্জার বামদিক ধরে যাবার সময় নড করল ল্যাঙডন।

    সময়? জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া। দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে, সতর্কভাবে।

    পাঁচ।

    কিছু বলল না ভিট্টোরিয়া। কিন্তু টের পেল ল্যাঙডন, হাতের উপর ঠিক ঠিক চেপে বসেছে মেয়েটার হাত, আরো শক্ত হয়ে। সে এখনো অস্ত্রটা বহন করছে।এখনো সে দুরু দুরু বুকে আশা করে ভিট্টোরিয়া জিনিসটাকে আবার ফেরৎ চাবে না। সে চায় না সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে, সর্বসমক্ষে ভিট্টোরিয়া গানটা ব্যবহার করে কোন খুনির হাঁটুর হাড়ি উড়িয়ে দিয়ে খবরের পাতায় চলে আসুক। আবার এ কথাটা মনে পড়লেও তার অস্থির লাগে। একজন কার্ডিনালকে এখানে ব্র্যান্ডেড অবস্থায় পাওয়া যাবার কথা।

    এয়ার… ভাবছে ল্যাঙডন, বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বস্তু… সে ব্র্যান্ডটার চিহ্ন বোঝার চেষ্টা করছে। কেমন হবে এ্যাম্বিগ্রামটা! কথা ভেবে এখনো কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না সে। একটা বিশাল মরুভূমির উপরে বসানো গ্রানাইটের পাথরে যেন সে দাড়িয়ে আছে। চারধার ঘিরে আছে সুইস গার্ড। যদি হ্যাসাসিন ঠিক ঠিক চেষ্টাটা করে, তবু সে কীভাবে বেঁচেবর্তে যাবে তাই ভেবে পায় না সে।

    পিয়াজ্জা গোলাপের একেবারে কেন্দ্রে কালিগুলার সাড়ে তিনশ টন ওজনের মিশ রিয় ওবেলিস্কটা দাঁড়িয়ে আছে এক ঠায়। এটা একাশি ফুট উপরে উঠে গেছে, সেখানে একটা ফাপা ধাতব ক্রস মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বলছে, শির দেগা, নাহি দেগা আমামা। এটা এত উঁচুতে যে চারদিক আঁধারে ভরে গেলেও এটার মাথাকে ছুয়ে দিতে পারেনি বিকালের ছায়া।

    চারদিকে ছায়া, তার মধ্যে একটু রোদের সামনে অপার্থিব মাহাত্মে ঝকঝক করছে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ধাতব ক্রস, যে ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে যিশু প্রাণপাত করেছিলেন সেটারই এক অনুকরণ।

    চির উন্নত মম শির। একেবারে নিখুঁত দূরত্ব থেকে দুটা ঝর্ণা শোভিত করছে ওবেলিস্কটাকে। সাধারণের কাছে দেখে মনে হবে এটা দেখতে সুন্দর, ব্যস। কিন্তু এর মধ্যে আরো গুপ্ত রহস্য রয়েছে যেগুলোর কিছু কিছু জানে চিহ্নবিদরা, আর যতটা জানে ল্যাঙডন, বর্তমানে তারচে বেশি মনে হয় কোন বিশেষজ্ঞ জানে না।

    পুরো রোম জুড়ে মিশরিয় চিহ্ন ছড়িয়ে আছে। পিরামিড, অর্ধচন্দ্র, অদ্ভুত জ্যামিতি… এর অর্থ পুরোটা জানতে পারবে না বিশেষজ্ঞরা যে পর্যন্ত না বার্নিনির পুরো রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে।

    ওবেলিস্কের কাছাকাছি পৌঁছেই আরো ধীর হয়ে গেল ভিট্টোরিয়া। সে এমনভাবে থামল, যেন ল্যাঙডন অসুস্থ, তাকে একটু সুযোগ দিতে হবে আস্তে ধীরে একটু বিশ্রাম করার। সাথে সাথে বুঝে ফেলল ল্যাঙডন, সেও একটু কাশির মত শব্দ করে চোয়াল ঝুলিয়ে দিল।  পৃথিবীর সবচে বড় গির্জার বাইরে কোথাও… ওবেলিস্কের আশপাশেই সেকেন্ড অল্টার অব সায়েন্স লুকিয়ে আছে–বার্নিনির ওয়েস্ট পনেন্টে–সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের একটা ডিম্বাকার ব্লক।

     

    গুন্থার গ্লিক সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের চারপাশে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারের দিকে নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে আছে। একটু যেন উদাস। অন্য যে কোন দিনে, টুইড জ্যাকেট পরা বাবু সাজা লোকটা আর তার সাথের সুন্দর, খাকি শর্টস পরা মেয়েটা তার নজর মোটেও কাড়ত না।

    দেখে মনে হচ্ছে তারা সুখি দম্পতি অথবা বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড, রোম চষে ফেলার কাজে বেরিয়েছে পর্যটক হয়ে। কিন্তু আজকের দিনের সাথে আর কোন দিনের সম্পর্ক স্থাপন করা চলে না। আজ অচেনা ফোনকলের দিন, মরদেহ বের করার দিন, বোম জুড়ে তান্ডব তোলা কার রেসিংয়ের দিন, টুইড জ্যাকেট পরা ফুটবাবু সেজে থাকা লোকের তরতর করে প্রাচীণ গির্জার কার্নিশ ধরে ছাদে উঠে গিয়ে আল্লা মালুম কী যেন খোঁজার দিন, সর্বোপরি, নতুন পোপ নির্বাচনের দিন।

    পিছু ছাড়ার পাত্র নয় গ্লিক।

    সে স্কয়ারের অন্য প্রান্তে দেখতে পেল ম্যাক্ৰিকে। সে ঠিক সেখানেই গেছে যেখানে যেতে বলেছিল গ্লিক। অদ্ভুত সেই জুটির লেজ ধরে। সে প্রেস লেখা জ্যাকেট পরে আছে। আলতো হাতে ধরে রেখেছে ক্যামেরা। জায়গা করে নিচ্ছে ভিড়ের মধ্যে। আশপাশে আর কোন সাংবাদিক নেই। তাই অনেক পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ল বিবিসি লেখা ওয়ালা ম্যাক্রির পোশাক।

    আলফা রোমিওর ট্রাঙ্কে ভরে দেয়া যে নাঙা লাশটার ফুটেজ ধরেছিল সে সেটা এখন সম্প্রচারিত হচ্ছে ভ্যানের ভি সি আর ট্রান্সমিটারে। গ্লিক জানে এই মুহূর্তে ছবিগুলো উড়ে চলেছে লন্ডনের উদ্দেশ্যে, তার মাথার উপর দিয়ে। সম্পাদকীয় কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।

    তার একটা কামনা ছিল। ম্যাক্রিকে নিয়ে কোনমতে যদি লাশটার কাছাকাছি ঘেঁষা যেত। কিন্তু কাবাবে হাড়ি হয়ে বসে ছিল সাদা পোশাকের সৈন্যদল।

    সে জানে, এই মুহূর্তে সেই সৈন্যদলই মিশে গেছে ভিড়ের সাথে। বড়সড় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে আজ।

    প্রচারণার ডান হাত হল মিডিয়া, বলেছিল খুনি। সে আরেকবার চোখ ফেলল দূরপ্রান্তে পার্ক করা অন্যান্য মিডিয়া ভ্যানের দিকে। আবার তাকাল ম্যাক্রির দিকে। পিছন পিছন যাচ্ছে সে। রহস্যময় জুটির পিছনে।

     

    ৭৪.

    ল্যাঙডন দেখল তার চোখ পড়ে আছে দশ কদম সামনে। ট্যুরিস্টদের ভিড়ের ফাঁক  থেকে উঁকি দিচ্ছে বার্নিনির ওয়েস্ট পনেন্টে। দেখেছে ভিট্টোরিয়াও, তার হাত আরো শক্ত করে বসে গেল ল্যাঙডনের বাহুতে।

    রিল্যাক্স! বলল ভিট্টোরিয়ার দিকে ফিরে ল্যাঙডন, ফিসফিস করে, তোমার ঐ পিরানহা না কী যেন… সেটা কর।

    হাতের উপর চাপ কমিয়ে দিল ভিট্টোরিয়া সাথে সাথে।

    তারা যত কাছে যাচ্ছে ততই যেন প্রতিটা ব্যাপার একেবারে নির্দোষ দেখাচ্ছে। সব স্বাভাবিক। ভ্রমণপিয়াসীরা দল বেঁধে হাল্কা হল্লা করছে। অপেক্ষা করছে ভক্তরা নতুন পোপের জন্য। একটা বাচ্চা মেয়ে মনোলিথের গোড়ায় খাবার দিচ্ছে কবুতরের ঝাঁককে।

    হাতঘড়ি আর একবার চেক করা থেকে কোনক্রমে বিরত করল নিজেকে ল্যাঙডন। সে জানে।

    দ্য টাইম হ্যাথ কাম।

    সময় চলে এসেছে।

    পায়ের তলায় চলে এল ডিম্বাকার এলাকা। ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন একটা টেনশন ফ্রি মুডে থামতে শুরু করল। যেন কোন ট্যুরিস্ট-জোড়া সামনের জিনিসটা দেখার জন্য থেমেছে।

    ওয়েস্ট পনেন্টে, বলল ভিট্টোরিয়া, পাথরের উপরে খোদাই করে দেয়া লেখাটা পড়তে পড়তে।

    কতবার এখানে এসেছে ল্যাঙডন, কতবার রোমে এসেছে, কত বইতে এসব নিয়ে নিযুত লেখাজোকা পড়েছে সে সতৃষ্ণ চোখে। কিন্তু এখনো এর পুরো ব্যাপারটা ধরা পড়ে যায়নি।

    বড়জোর ফুট তিনেক হবে আকার-আকৃতিতে। পশ্চিম-বাতাসের জন্য মুখিয়ে আছে যেন পাথরটা। বার্নিনি পুরো রোমের দিকে একটা বাতাস বইয়ে দিয়েছেন..কত সূক্ষভাবে! কোথায় ব্রিদ অব গড আর কোথায় সেকেন্ড এলিমেন্ট অব সায়েন্স! এয়ার… বার্নিনি বাতাসকে পাঁচটা দমকা হাওয়ায় বিভক্ত করেছেন। পাঁচ… ল্যাঙডনের বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে গ্যালিলিওর কথা। দুটা তারকা, পাঁচটা ঝাঁপ্টা, ডিম্বাকৃতি, সাযুজ্য… খালি খালি লাগছে তার। ফাঁকা লাগছে ভিতরটা।

    ভিট্টোরিয়া তাকে সরিয়ে নিল দূরে। আস্তে করে নিজে যেতে থাকায় সরে এল ল্যাঙডনও। বলল মেয়েটা ফিসফিসিয়ে, মনে হয় আমাদের কেউ ফলো করছে।

    ঝট করে তাকাল ল্যাঙডন, কোথায়?

    কথা না বলে আরো ত্রিশ কদম এগিয়ে গেল ভিট্টোরিয়া। সে ভ্যাটিকানের দিকে আঙুল নির্দেশ করল, যেন কিছু দেখাচ্ছে ল্যাঙডনকে গম্বুজের চূড়ায়। স্কয়ারের শুরু থেকে যে আমাদের অষ্টপ্রহর অনুসরণ করে আসছে সে-ই। বলেই আলতো করে সে তাকাল পিছনে, এখনো লেগে আছে টিকটিকিটা। চলতে থাক। কী

    কী মনে হয়? এ-ই হ্যাসাসিন?

    মাথা নাড়াল ভিট্টোরিয়া, মনে হয় না ইলুমিনেটি বিবিসির কোন ক্যামেরাসুদ্ধ সাংবাদিককে ভাড়া করবে।

     

    সেন্ট পিটার্সের ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন দুজনেই। সময় চলে এসেছে। সময় চলে এসেছে। তারা এড়িয়ে চলছে ওয়েস্ট পনেন্টেকে, খসানোর চেষ্টা করছে রিপোর্টারকে। কিন্তু বিধি বাম। আঠার মত লেগে, আছে সংবাদদাতা।

    ঘণ্টার শব্দ ছাড়া পুরো স্কয়ার একেবারে নিরেট, ঠান্ডা। শান্ত পর্যটকের দল ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অপেক্ষা করছে নতুন পোপের জন্য। ওবেলিস্কের গোড়ায় ধাক্কা খেল এক মাতাল, পিচ্চি এক মেয়ে খাবার দিচ্ছে কবুতরের ঝাককে। ভেবে পাচ্ছে না এই ফেউ কী করে পিছনে পিছনে জুটল। অবশ্যই, মনে পড়ে গেল তার। আমি আপনাদের কার্ডিনালদের ভুবনজোড়া খ্যাতি এনে দিব, বলেছিল খুনি, মিডিয়ার মাধ্যমে।

    নবম ঘণ্টার শব্দ মিলিয়ে যেতে না যেতেই একটা শান্তিময় নিরবতা নেমে এল পুরো স্কয়ার জুড়ে।

    আর তার পর পরই, চিৎকার জুড়ে দিল ছোট্ট মেয়েটা।

     

    ৭৫.

    ল্যা ডন সবার আগে চিৎকার করতে থাকা মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায় বিনা দ্বিধায়।

    আতঙ্কিত মেয়েটা তাকিয়ে আছে ওবেলিস্কের গোড়ার দিকে, যেখানে এক মাতাল পড়ে আছে। বোঝাই যায় নেশায় চুর হয়ে আছে সে। পাঁড় মাতাল। এমন দৃশ্য দেখলে কার না করুণা জাগে… রোমের বাস্তুহারাদের কেউ হবে। তার মাথা জুড়ে এলোমেলো চুল, সারা গা নোংরা একটা চাদরে আবৃত। মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেতে মেয়েটা চিৎকার করতে থাকে।

    এরপর জমে গেল ল্যাঙডনও। সে এমন দৃশ্য কল্পনা করেনি। সামনের সিঁড়ির ধাপ থেকে কালচে কী এক তরল বেরিয়ে আসছে। নিশ্চিত। রক্ত। খাঁটি রক্ত।

    তার পরই, এক মুহূর্তে সব যেন ঘটে গেল।

    বয়স্ক লোকটা আস্তে আস্তে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন, তার পরই পড়ে গেলেন সিঁড়ি বেয়ে সামনের দিকে। উবু হয়ে, মুখ নিচের দিকে দিয়ে।

    এগিয়ে গেল ল্যাঙডন প্রথমেই, চেষ্টা করল ধরতে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে অনেক।

    পড়ে আছে শরীরটা, অনড়।

    হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল ল্যাঙডন, পাশে চলে এল ভিট্টোরিয়া। জমে যাচ্ছে ভিড়।

    পিছন থেকে লোকটার গলায় আঙুল চেপে ধরল ভিট্টোরিয়া, তারপর বলল, এখনো পালস আছে। সোজা কর।

    এরই মধ্যে কাজে নেমে পড়েছে ল্যাঙডন। কাঁধ আকড়ে ধরে সে সোজা করল লোকটাকে। কিন্তু এখন আর তেমন কোন সুযোগ নেই। লোকটা যেন নরম মাংসের একটা তাল। যেভাবে সোজা করল ল্যাঙডন সেভাবেই নেতিয়ে পড়ল শরীর।

    তার বুকের অনেকটা জায়গা জুড়ে একটা ক্ষত ফুটে উঠেছে। পোড়া মাংসের গন্ধ নাকে এসে লাগছে।

    ভিট্টোরিয়া আরো সোজা করল।

    বোধশক্তিহীন লাগছে ল্যাঙডনের। সিম্বলটা একেবারে সরল।

    এয়ার! কোনক্রমে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ভিট্টোরিয়া, এই সেই লোক…।

    সাজ সাজ রব পড়ে গেছে সুইস গার্ডদের মধ্যে। তারা এরই মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি আর আদেশ-নির্দেশের হল্লা বাঁধিয়ে ফেলে অদৃশ্য খুনির পিছনে উঠেপড়ে লেগে গেছে।

    একজন টুরিস্ট বলল যে এই গরিব লোকটার পাশে বসেছিল এক কালো চামড়ার লোক, মিনিট কয়েক আগেও। এমনকি সে এই ভবঘুরে লোকটার পাশেও বসেছিল, সিঁড়িতে। তারপর হারিয়ে গেছে ভিড়ের মধ্যে।

    কাজে লেগে পড়ল ভিট্টোরিয়া। লোকটার বুকে আঘাত দিয়ে সবটুকু বাতাস বের করে আনল। অবশ্যই, চিহ্নটাকে এড়িয়ে গিয়ে। তারপর মুখে মুখে শ্বাস দেয়া শুরু করল। এরপর কী ঘটবে সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ল্যাঙডনের। একদিকে মুখে মুখে বাতাস দিচ্ছে ভিট্টোরিয়া আর অন্যদিকে রক্তের একটা ফোয়ারা ঠিক তিমির পানি উগড়ে দেয়ার মত করে ছিটকে এসে ল্যাঙডনের চোখে-মুখে এসে পড়ল।

    আৎকে উঠল ভিট্টোরিয়া, লোকটার লাঙস… বলল সে, ছিদ্র করে ফেলা হয়েছে।

    সাথে সাথে চোখ বুজিয়ে দিল ল্যাঙডন। আর কিছু করার নেই। কার্ডিনালের ফুসফুস ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলা হয়েছে। আর বেঁচে নেই লোকটা।

    সুইস গার্ড এসে পড়তে পড়তে ভিট্টোরিয়া শরীরটাকে ঢেকে দিল।

    তারপর অসহায় দৃষ্টি মেলে ল্যাঙডন দেখতে পেল বিবিসি ক্যামেরা নিয়ে তাদের পিছনে পিছনে ফেউয়ের মত ঠিক ঠিক হাজির হয়েছে রিপোর্টার মূর্তীমতী আতঙ্কের মত। এখনো তার ক্যামেরা রোল করছে। তার চোখমুখ ঠিক ঠিক ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে। তারপর শিকারি বিড়ালের মত অলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল ভিডিওগ্রাফার।

     

    ৭৬.

    চিনিতা ম্যাক্রি এগিয়ে চলছে। তার জীবনেও অনেক কথা আছে।

    সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া মানুষজনকে পাশ কাটিয়ে তার ক্যামেরা ঠিক একটা নোঙরের মত এগিয়ে গেছে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে।

    কিছু একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে, টের পেল সে। সাংবাদিকতায় থাকতে থাকতে যে কারো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব দ্রুত সচল হয়ে যায়। সেও টের পাচ্ছে, টুইড। জ্যাকেট পরা লোকটা দেখতে পায় তাকে আরো আগেই। ঘোড়াই পরোয়া করত সে, কিন্তু বাড়াভাতে ছাইয়ের মত আশপাশ থেকে আরো অনেক পাথরমুখো মানুষ ঘিরে ধরল তাকে।

    ভেবে পাচ্ছে না এতক্ষণ যা সে রেকর্ড করল সেগুলো যদি সত্যি হয়। খুন হয়ে যাওয়া লোকটা যদি তেমন কেউ হয় যাকে সন্দেহ করা হচ্ছিল, তাহলে প্লিকের কাছে আসা ভূতুড়ে কলের একটু হলেও সুরাহা হবে।

    সে ঠিক ঠিক বাতাসে বিপদের গন্ধ পেয়ে গেছে। টের পাচ্ছে, সামনে কিছু একটা খারাপি আছে তার কপালে। সাত তাড়াতাড়ি পাততাড়ি গুটিয়ে নিতে নিতে এগিয়ে যেতে থাকে বিবিসি ভ্যানের দিকে। কিন্তু বিধি বাম। হাওয়া থেকে উদয় হল একটা কমবয়েসি লোক, যার হাবভাবে-মুখভঙ্গিতে সামরিক কায়দা ফুটে উঠছে। তাদের চোখে চোখে কী যেন কথা হয়ে গেল। থেমে গেল দুজনেই।

    বজ্রপাতের মত এক ঝলকে লোকটা পকেট থেকে ওয়াকিটকি বের করে কথা বলল। তারপর এগিয়ে আসতে লাগল তার দিকে। ম্যাক্রি সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ঘুরে দাঁড়াল, তারপর সোজা মিশে গেল জনারণ্যে। ধ্বক ধ্বক করছে তার হৃদপিন্ড।

    আরো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে এ মুহূর্তে। বাতাসে বারুদের গন্ধ। হারিয়ে গিয়েই সে বাকী কাজটা সেরে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠল। বাঁচাতে হবে ফিল্মটাকে। কী করে? খুলে ফেলল সে। তারপর আলতো হাতে সেটাকে পিছনদিকে কোমরে গুজে দিয়ে কোট ছেড়ে দিল। সেটাই আড়ালে রাখবে ফিল্মটাকে। কোন চুলায় পড়ে আছ গ্লিক?

    তার বামে আরেক সোলজার দেখা দিল। কাছিয়ে আসার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে সেও। ম্যাক্রি জানে, হাতে সময় খুব অল্প। এর মধ্যে যা করার করে ফেলতে হবে। আবার ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল সে। আশপাশে আবারো হাত-পায়ের দঙ্গল। এবার মনে মনে প্রার্থনা করতে করতে সে আরেকটা খালি ফিল্ম ভরে ফেলল সে। তারপর অপেক্ষার পালা।

    সে বিবিসি ভ্যান থেকে মাত্র ত্রিশ গজ দূরে এমন সময় আবার সামনে থেকে দুজন সৈন্যকে দেখা গেল। পাহাড়ের মত দাঁড়ানো। হাত দুটা বুকে ভাঁজ করা। আবারও প্রমাদ গুণল ম্যাক্রি। আর কোথাও যাবার যো নেই। যা হবার এখানেই হবে।

    ফিল্ম। একজন হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করল খুব সহজেই, এখনি!

    মাক্রি দু হাতে জড়িয়ে ধরল ক্যামেরাটাকে। যেন দেখতে দিতে চায় না। নো চান্স।

    একটা সাইড আর্ম বের করে আনল দুজনের একজন।

    তাহলে? আমাকে গুলি কর! নিজের কণ্ঠের ভারিক্কি চাল দেখে নিজেই ভড়কে গেছে ম্যাক্রি।

    ফিল্ম! আবার বলল প্রথমজন।

    কোন নরকে পড়ে আছে গ্লিক। পা ফাঁক করে দাঁড়াল সে। তারপর আরো সতেজে বলল, চিল্কার করে, আমি বিবিসিতে কর্মরত একজন প্রফেশনাল ভিডিওগ্রাফার! ফ্রি প্রেস এ্যাক্টের দ্বাদশ আর্টিকেল অনুসারে, এই ফিল্মটা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের সম্পত্তি?

    বিন্দুমাত্র কান দিল না লোক দুজন। একেবারে পাথরমুখো হয়ে রইল। সামনে এগিয়ে এল অস্ত্র হাতের লোকটা। আমি সুইস গার্ডের একজন লেফটেন্যান্ট। আমি পবিত্র অথরিটির পক্ষ থেকে বলছি আপনি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে থাকা অবস্থায় আপনাকে সার্চ করার এবং নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার পূর্ণ অধিকার আছে আমাদের।

    তাদের চারধারে এরই মধ্যে লোকজনের একটা জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

    চিৎকার করল ম্যাক্রি, আমার পক্ষে কোনমতেই এই ক্যামেরার ভিতরে থাকা ছবি দিয়ে দেয়া সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি লন্ডনে আমাদের এডিটরের সাথে কথা বলছি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না…

    তার কথা মাঝপথেই থেমে গেল। একজন সুইস গার্ড এগিয়ে এসে হাত থেকে ছিনিয়ে নিল ক্যামেরা। অন্যজন সোজা পাকড়াও করল তাকে। বিন্দুমাত্র দরদ না দেখিয়ে খপ করে ধরল তার বাহু। তারপর নির্দয়ভাবে ফিরিয়ে আনল ভ্যাটিকানের দিকে। লোকজনের ভিতর দিয়ে জায়গা করে নিল। মুখে বলল, গ্রাজি।

    মনে মনে একটাই প্রার্থনা ম্যাক্রির। তারা যেন তাকে সার্চ না করে। তাহলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে। যদি একবার বাঁচানো যায় লুকিয়ে রাখা ফিল্মটাকে। কোনমতে যদি ট্রান্সমিট করা যায় নয়-ছয় করে, তাহলেই কেল্লা ফতে

    কিন্তু হঠাৎ একটা অঘটন ঘটে গেল। পিছন থেকে কে যেন হাত দিয়েছে কোটের নিচে। আবারো প্রমাদ গুণল সে মনে মনে। কী হচ্ছে এসব? হাতটার স্পর্শ পেয়ে বোঝা যায় কোন পুরুষের কারসাজি এটা। সে ঠিক ঠিক বুঝতে পারে এবার আর রক্ষা নেই। চলে গেল জিনিসটা। চকিতে পিছন ফিরে তাকায় ম্যাক্রি। ঠিক যা ভেবেছিল। গ্লিক শ্বাস চেপে রেখে ফিরে যাচ্ছে।

    স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ম্যাক্রি।

     

    ৭৭.

    রবার্ট ল্যাঙডন পোপের অফিসের সাথে লাগানো প্রাইভেট বাথরুমে যায়। চোখ-মুখ  থেকে ধুয়ে ফেলে রক্তের দাগ। রক্তটা তার নয়, এ শোণিত আসলে কার্ডিনাল ল্যামাসের। এই একটু আগে তিনি মারা গেলেন এমন এক জায়গায়, যেখানে তার ফিরে আসার কথা ছিল পোপ হয়ে, আজ রাতেই। ভার্জিন স্যাক্রিফাইসেজ অন দ্য অল্টার্স অব সায়েন্স। কথা রেখেছে খুনি।

    আয়নায় নিজের চেহারাই চিনতে পারছে না সে। আশ্চর্য, এরই মধ্যে ক্লান্তির একটা সুস্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে উৎকার একটা জলজ্যান্ত চিহ্ন, একই সাথে চিবুক জুড়ে জন্মেছে খোচা খোচা দাড়ি। সে যে ঘরে আছে সেটার চারদিকে আভিজাত্য। চতুর্পাশে রাজকীয়তার আবেশ। কালো মার্বেল পাথরে বাঁধানো ঘরে সোনার প্রলেপ। সুতি তোয়ালের সাথে আছে সুগন্ধি সাবান।

    এইমাত্র যে রক্তাক্ত ব্র্যান্ড সে দেখতে পেল সেটা নিয়ে চিন্তিত বোধ করছে। এয়ার! চিত্রটা যাচ্ছে না মনু থেকে। সে প্রত্যক্ষ করেছে তিন তিনটা এ্যাম্বিগ্রাম… আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর। আর সে নিশ্চিত জানে, আরো দুটা বাকি আছে।

    ঘরের বাইরে, মোটামুটি বলা চলে, ওলিভেট্টি, ক্যামারলেনগো আর ক্যাপ্টেন রোচার বাক-বিতন্ডা করছে কী করতে হবে পরে এ নিয়ে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত আবার জ্বালাচ্ছে এন্টিম্যাটার সমস্যার কোন সুরাহা না হওয়া। হয় ওলিভেট্টির লোকজন ঠিকমত ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি, সার্চ করতে পারেনি পুরোদমে, নয়তে আরো গহীন কোন জায়গায় সযত্নে বসিয়ে দেয়া হয়েছে সেটাকে।

    ল্যাঙডন হাতমুখ শুকিয়ে নিয়ে একটা ইউরিনালের খোঁজে আশপাশে চোখ বুলাল। কোন ইউরিনাল নেই। একটা বোল আছে। সেটার ঢাকনাই তুলল সে।

    কী করবে সে? আজ সারাটা দিন অসহনীয় সব চাপ সয়ে যেতে হয়েছে তাকে। পার করতে হয়েছে একের পর এক বাঁধা। খাটাতে হয়েছে ব্রেনটাকে। বিশ্রাম নেই। নেই কোন বিরাম। শুধু একের পর এক আতঙ্ক, একের পর এক রহস্য, একের পর এক সমস্যা। কী করা যায়? খাবার নেই, নেই পানীয় নেয়ার বালাই। একাধারে পাথ অব ইলুমিনেশনের খোঁজে তোলপাড় করে ফেলা। একের পর এক নৃশংস খুনকে অনুসরণ করা। আর চাপ নিতে পারছে না স্নায়ু। এই নাটকের শেষ কোথায়!

    ভাব! বলছে সে নিজের মনকে। কিন্তু এটা কোন কাজেই আসছে না।

    ফ্ল্যাশ করার সাথে সাথে আরো একটা চিন্তা তার মাথায় খেলে গেল। এটা পোপর টয়লেট। ভাবল সে। আমি এইমাত্র পোপের টয়লেটে প্রাকৃতিক কর্ম সারলাম।

    হাসল সে মুচকে মুচকে।

    পবিত্র সিংহাসন!

     

    ৭৮.

    লন্ডনে একজন বিবিসি টেকনিশিয়ান স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া এক ভিডিও ক্যাসেট বের করল। মেয়েটা ঠান্ডা মাথায় টেপটাকে এডিটর ইন চিফের ভিসিআরে ঢুকিয়ে দিল, তারপর চালিয়ে দিল সেটাকে।

    একদিকে টেপ চলছে আরেকদিকে গুন্থার গ্লিক ভ্যাটিকানে বসে কী কী বলেছিল একটু আগে সেই ফিরিস্তি বলে যাচ্ছে একাধারে। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের এইমাত্র খুন হয়ে যাওয়া লোকটার এক ছবি তুলে আনল সে বিবিসি আর্কাইভ থেকে।

    এডিটর ইন চিফ অফিস থেকে বেরিয়ে এল। তার হাতে একটা গরুর গলায় বাঁধার মত ঘন্টি। টিনটিন করে বাজিয়ে যাচ্ছে সে। সাথে সাথে নিশ্ৰুপ হয়ে গেল পুরো এডিটরিয়াল।

    পাঁচে পাঁচ! বোমা মারল লোকটা, অন এয়ার! মিডিয়া কো-অর্ডিনেটরগণ, আমি আপনাদের কন্টাক্ট শুরু করতে বলছি। বিকিকিনি করার মত একটা গরম গল্প আছে আমাদের ঝোলায়। সাথে আছে ভিডিও চিত্র!

    যার যার রোলোডেক্স আকড়ে ধরল মার্কেট কো-অর্ডিনেটররা।

    ফিল্ম স্পেক! হুঙ্কার ছাড়ল একজন।

    ত্রিশ সেকেন্ড দৈর্ঘের! জবাব দিতে দেরি করল না চিফ।

    বিষয়?

    সরাসরি হত্যা।

    আনন্দে আটখানা হয়ে গেল কো অর্ডিনেটর। ব্যবহার আর লাইসেন্স প্রাইজ কত হবে।

    প্রতিটায় এক মিলিয়ন ইউ এস ডলার।

    সাথে সাথে শক্ত হয়ে গেল প্রতিটা মাথা, কী!

    আমার কথা আপনারা ঠিকই শুনতে পেয়েছেন! খাদ্য শৃঙ্খলের উপর থেকে শুরু করতে চাচ্ছি আমি। প্রথমেই সিএনএন, এমএসএনবিসি, তারপর বাকী তিন প্রধান খবরের জায়গা। তাদেরকে একটা ডায়াল অফার করুন, তারপর ভাবার সময় দিন পাঁচটা মিনিট। সবশেষে জানিয়ে দিন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে খবর চাউর করে দিচ্ছে বিবিসি।

    কোন আজব ঘটনা ঘটল? জিজ্ঞেস করল একজন, জ্যান্ত অবস্থায় প্রধানন্ত্রীর চামড়া ছিলে কেটে কেউ কি লবণ মাখিয়ে দিয়েছে?

    মাথা ঝাঁকাল চিফ, এরচেও বেশি কিছু!

     

    এদিকে, ঠিক একই সময়ে, রোমের কোন এক গুপ্ত আড্ডায় আয়েশ করে হেলান দিয়ে বসে আছে হ্যাসাসিন। তার চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ। অনেক কাজ করা হয়ে গেছে ভালমত। অনেক কাজ করতে এখনো বাকি।

    আমি চার্চ অব ইলুমিনেশনে বসে আছি। ভাবল সে, দ্য ইলুমিনেটি লেয়ার…

    সে কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না যে এত শতাব্দি পরেও এখানে এটা বহাল তবিয়তে আছে।

    দায়িত্বশীলের মত সে বিবিসির রিপোর্টারের কাছে ডায়াল করল। আরো অনেক চমক বাকি আছে। বাকি আছে আসল ঘটনা ঘটার। আর মাত্র কিছুক্ষণ।

     

    ৭৯.

    ভিট্টোরিয়া ভেট্রা একটা পানির গ্লাসে একটু করে চুমুক দিয়ে সামনের দিকে বসা সুইস গার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে কিছু না কিছু খেতে হবে এবার। খাওয়া উচিৎ। কিন্তু খিদে নেই মোটেও। পোপের অফিস এখন সরগরম। চারদিকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের হল্কা। ক্যাপ্টেন রোচার, কমান্ডার ওলিভেট্টি এবং আরো আধ ডজন গার্ড তীক্ষ্ণ্ণ সুরে বাক-বিতন্ডা করছে কী করতে হবে পরে সে বিষয়ে।

    সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে রবার্ট ল্যাঙডন। বিধ্বস্ত চোখে সে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে।

    কোন আন্দাজ? এগিয়ে এল ভিট্টোরিয়া।

    মাথা নাড়ল বিমর্ষভাবে ল্যাঙডন।

    কেক?

    খাবারের কথায় তার মন যেন চনমনে হয়ে উঠল, ওহ! অবশ্যই! ধন্যবাদ তোমাকে। বহুদিনের বুভুক্ষের মত খেয়ে চলল সে।

    ক্যামারলেনগো ভেস্কোকে এসকর্ট করে দুজন সুইস গার্ড যখন ভিতরে নিয়ে এল তখনি পুরো ঘরে নেমে এল একটা অসহ্য নিরবতা। চ্যাম্বারলিনকে আগে যদি ডুবন্ত মনে হয়ে থাকে তো এখন বিলকুল খালি দেখাচ্ছে তাকে। বুঝে নিল ভিট্টোরিয়া।

    কী হয়েছে? ক্যামারলেনগো সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিল ওলিভেট্টির দিকে। কিন্তু তার চোখমুখের ভাষা দেখেই বোঝা যায় সে যা জানার জেনে গেছে। এখন আর নতুন করে কিছু জানাতে হবে না।

    ওলিভেষ্টির সামরিক কায়দার রিপোর্ট দেয়ার হাল দেখে যে কেউ বলবে যুদ্ধক্ষেত্রে কোন জেনারেলের কাছে ফিল্ড অফিসার তার ফিরিস্তি জানাচ্ছে, সান্তা মারিয়া ডেল প্রোপোলোর চার্চে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় কার্ডিনাল ইনারকে রাত আটটার অব্যবহিত পরে। তিনি অত্যাচারিত হয়েছেন, মাটিতে পোঁতা অবস্থায় এবং মুখভর্তি মাটি থাকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয় এবং তার বুকে দ্বিমুখী শব্দ এয়ার একে দেয়া ছিল। আর্থ। কার্ডিনাল ল্যামাসে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে নিহত হয়েছেন দশ মিনিট আগে। তার বুক ঝাঝরা করে দেয়া হয়, সেখানে বাতাস ধরে রাখার কোন উপায় ছিল

    এবং তার বুকেও একটা ব্র্যান্ড এটে দেয়া হয়েছে। এয়ার। এটাও এ্যাম্বিগ্রামাটিক। দুবারই গা ঢাকা দিয়েছে খুনি।

    ক্যামারলেনগো সারা ঘরে একটা ক্রস একে দিয়ে ধপ করে বসে পড়ল পোপের ডেস্কের পিছনে। নিচু হয়ে আছে তার মাথা।

    কার্ডিনাল গাইডেরা আর ব্যাজ্জিয়া এখনো জীবিত আছেন। চট করে উঠে গেল ক্যামারলেনগোর চোখ, এই আমাদের হাল কার্ডিনাল? দুজন কার্ডিনাল খুন হয়ে গেছেন। বাকী দুজনও খুন হবার পথে। আপনারা কী করছেন? সময় মত ধরতে পারবেন কি?

    পারব আশা করি, বলল কমান্ডার ওলিভেট্টি, আমি উৎসাহিত।

    উৎসাহিত? আমাদের কোন মাফল্য নেই। আছে শুধুই ব্যর্থতা।

    ভুল। আমরা দুটা রণে ভঙ্গ দিয়েছি, হেরে গেছি সিনর। কিন্তু পুরো যুদ্ধে আমাদের জয়ই এগিয়ে আসবে। ইলুমিনেটি আজ সন্ধ্যার ব্যাপারটাকে একটা মিডিয়া সার্কাসে পরিণত করতে চায়। আমরা আশা করি সে সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে পেরেছি। কোন রকম দুর্ঘটনা ব্যতীতই দুজন কার্ডিনালের শরীর উদ্ধার করা গেছে। কাক-পক্ষীও টের পায়নি। বলে যাচ্ছে সে, ক্যাপ্টেন রোচার আমাকে আশ্বস্ত করেছে। যে এন্টিম্যাটারটা বের করার কাজে আরো নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে।

    লাল ব্যারেটের নিচে থাকা ক্যাপ্টেন বরাচার সামনে এক পা ফেলল। ভিট্টোরিয়ার মনে হল আর সব গার্ডের তুলনায় একে একটু বেশি মানুষ মানুষ লাগছে। সামরিকতা আছে পুরোদস্তুর, কিন্তু সেই সাথে কোমলতা এবং মানবিকতাও আছে। একটা বেহালার মত তীক্ষ্ণ্ণ, সুরেলা আওয়াজ বেরিয়ে এল রোচারের কষ্ঠ চিরে, আশা করছি আমরা আপনার কাছে ক্যানিস্টারটাকে হাজির করতে পারব এক ঘণ্টার মধ্যে, সিনর।

    ক্যাপ্টেন,বলল ক্যামারলেনগো, আমার কথা বেশি হতাশায় পূর্ণ হলে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু আমি যদ্দূর জানি, ভ্যাটিকান সিটিতে একটা পূর্ণ সার্চ চালাতে হলে অনেক অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন।

    একটা পূর্ণ তল্লাশির জন্য প্রয়োজন। আপনার কথা ঠিক, সিনর। আমার মনে হচ্ছে জিনিসটা ভ্যাটিকানের হোয়াইট জোনে লুকানো আছে। এমন কোন জায়গায় যেখানে টুরিস্টরা সহজেই প্রবেশ করতে পারে। মিউজিয়ামগুলো, সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা… উদাহরণ হিসাবে বলা চলে। আমরা এরই মধ্যে সেসব জায়গার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছি। চালাচ্ছি স্ক্যান।

    আপনারা ভ্যাটিকান সিটির মাত্র কয়েক শতাংশ এলাকা জরিপ করে দেখতে চাচ্ছেন?

    জ্বি, সিনর। একজন অর্বাচীণ লোক গটগট করে ভ্যাটিকানের সংরক্ষিত এলাকায় চলে যাবে সে আশা করা বোকামি। একটা ব্যাপার নিশ্চিত বলা যায়। চুরি যাওয়া ক্যামেরাটা খোয়া গিয়েছিল একটা পাবলিক প্লেস থেকেই। একটা জাদুঘরের সিঁড়ি থেকে। বোঝাই যাচ্ছে, হামলাকারি ভিতরের গোপন জায়গাগুলোতে বিচরণ করতে পারবে না। গাণিতিক হিসাবে এগুতে গেলে বলা চলে, আমরা মনে করছি সে এই ক্যানিস্টারটাকে অন্য কোন পাবলিক প্লেসে রেখে দিয়েছে। আমাদের শক্তি সেসব জায়গায় ফোকাস করা হচ্ছে।

    আপনি একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন বারবার ক্যাপ্টেন। হত্যাকারি চারজন প্রেচারিতি কার্ডিনালকে অপহরণ করেছে। এ কাজ যে করতে পারে তার পক্ষে পাবলিক প্লেস ছাড়া আরো গোপন কোন না কোন জায়গায় যাওয়া মোটেও অসম্ভব। নয়।

    বিচলিত হবার কিছু নেই। আমরা ভাল করেই জানি প্রেফারিতি কার্ডিনালগণ আজকের বেশিরভাগ সময় দিয়েছিলেন জাদুঘরগুলোতে, সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাতে, এমন সব জায়গায় যেখানে লোকজনের ভিড়টা একটু কম থাকবে। আমরা তাই মনে করছি তাদের অপহরণ করা হয়েছে এমন কোন জায়গা থেকেই।

    তারা কী করে আমাদের দেয়াল পেরিয়ে গেল?

    আমরা এখনো এ ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিধায় আছি।

    আচ্ছা! দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল ক্যামারলেনগো, এগিয়ে গেল ওলিভেট্টির দিকে, কমান্ডার, আমি আপনার কাছ থেকে শুনতে চাচ্ছি এলাকা জনশূণ্য করে ফেলার জন্য আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

    আমরা এখনো এ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছি, সিনর। একই সাথে আমি আশান্বিত যে ক্যাপ্টেন রোচার জিনিসটাকে ঠিক ঠিক বের করতে পারবেন।

    সাথে সাথে যেন ওলিভেট্টির কথার পক্ষে ভোট দেয়ার জন্যই পায়ের শব্দ কর রোচার, স্যালুট ঠুকে দেয়ার ভঙ্গিতে। আমাদের লোকজন হোয়াইট জোনের দুই তৃতীয়াংশ খোঁজা শেষ করে ফেলেছে। আর বেশিক্ষণ বাকি নেই। আমাদের আত্মবিশ্বাস চূড়ায়।

    দেখে মনে হচ্ছে না যে ক্যামারলেনগো মোটেও আশান্বিত হয়েছে এই অগ্রগতির খবর শুনে।

    চোখের নিচে একটা কাটা দাগ নিয়ে এগিয়ে এল এক গার্ড, তার হাতে একটা বোর্ড আর বোর্ডে ম্যাপ আটা। মিস্টার ল্যাঙডন? আমি শুনেছি যে আপনি ওয়েস্ট পনেন্টে বিষয়ক ম্যাপ দেখতে চাচ্ছিলেন।

    দারুণ। আসুন, দেখা যাক।

    ভিট্টোরিয়া যখন রবার্ট ল্যাঙডনের সাথে যোগ দিয়েছে তখনো বাকিরা বকবক করেই যাচ্ছে। গার্ডও তাদের দিকে ফিরে এল। মানচিত্রটা বসানো হয়েছে পোপের ডেস্কে।

    সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে আঙুল তাক করল সৈন্যটা, এখানে আছি আমরা। ওয়েস্ট পনেন্টের নির্দেশিত দিক সোজা পূবে। ভ্যাটিকান সিটির দিকে নয়। জোয়ানের। আঙুল এগিয়ে গেল টাইবার নদী পেরিয়ে গিয়ে পুরনো রোমের কেন্দ্রবিন্দুতে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। রেখাটা চলে গেছে রোমের বেশিরভাগ পেরিয়ে। এই লাইনের আশপাশে প্রায় বিশটা চার্চ পড়ে।

    বিষম খেল ল্যাওড়ন, বিশ?

    বেশিও হতে পারে।

    এর কোনটা কি সরাসরি রেখার মধ্যে পড়ছে?

    কোন কোনটাকে বেশি কাছাকাছি মনে হয়। বলছে গার্ড, কিন্তু লাইন ধরে এগিয়ে যেতে গেলে একটু সমস্যায় পড়তে হয়।

    বাইরের দিকে বিমর্ষ মুখে তাকিয়ে থাকল ল্যাঙডন, তারপর সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে মুখ রেখেই বলল, এর কোনটাতে কি বার্নিনির ফায়ার ওয়ার্কের চিহ্ন আছে?

    নিরবতা।

    ওবেলিস্কের ব্যাপারে কী বলা চলে? কোন গির্জা কি ওবেলিস্কের আশপাশে পড়ে?

    সাথে সাথে আবার পরীক্ষা শুরু করল প্রহরী।

    ভিট্টোরিয়া দেখতে পেল, ল্যাঙডনের চোখে ঝিকিয়ে উঠছে একটু আশার আলো। তার কথাই সত্যি। প্রথম দুটা ঘটনার সাথে ওবেলিস্কের সম্পর্ক আছে। হয়ত থিমটাই ওবেলিস্কের সাথে যুক্ত। পিরামিড দিয়ে বারবার পাথ অব ইলুমিনেশনের কথা মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে কি? ভিট্টোরিয়া ব্যাপারটা নিয়ে যত ভাবতে শুরু করে ততই তা ঠিক রলে প্রতিভাত হয়… রোমের চার কোণায় চারটা বাহু। সেগুলো সর্বক্ষণ একটা আরেকটাকে নির্দেশ করবে। কিন্তু পাথ অব ইলুমিনেশনের শেষ অধ্যায়, ইলুমিনেটি লেয়ার নির্দেশ করবে না। দেখা যাবে চার বাহুকে উপরের দিকে একত্র করে নিলে ঘকটা পিরামিড গড়ে উঠছে আর সেটার ঠিক চূড়র নিচেই পাথ অব ইলুমিনেশনের শেষ কুঠরি, গুপ্ত আস্তানা ঘাপটি মেরে আছে।

    অনেক দূর দিয়ে ভাবছি, বলল ল্যাঙডন, কথা সত্যি। কিন্তু মিশরীয় স্থাপত্যগুলোর বেশিরভাগই নড়াচড়া করেছে বার্নিনির আমলে। এগুলোকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানোর কাজে তিনি যে যুক্ত ছিলেন সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

    অথবা, যোগ করল ভিট্টোরিয়া, বার্নিনি তার মার্কার বসিয়ে থাকতে পারেন ওবেলিস্কের আশপাশে।

    নড করল ল্যাঙডন, ঠিক তাই।

    খারাপ খবর, বলল গার্ড, রেখার আশপাশে কোন ওবেলিস্ক নেই। পুরো লাইন জুড়ে আরেকবার আঙুল বুলিয়ে নিল সে, এমনকি একটু দূরেও কোথাও নেই। নাথিং।

    দীর্ঘশ্বাস চাপল ল্যাওডন।

    আড়ষ্ট হয়ে গেছে ভিট্টোরিয়ার কাঁধ। সে আশা করেছিল এতে কোন কাজ হবে। কিন্তু বাস্তবে তাদের আশার মত করে সহজ হয়ে ওঠেনি ব্যাপারটা। সে তবু পজিটিভ হবার চেষ্টা করল, রবার্ট, ভাব। তুমি অবশ্যই বার্নিনির গড়া কোন গডনের কথা জান। যার সাথে আগুনের সম্পর্ক আছে। যাই হোক।

    বিশ্বাস কর। আমি ভাবতে ভাবতে ঘেমে নেয়ে একাকার। বার্নিনির কাজের লেখাজোকা নেই। তার জীবনে অযুত কাজের ছড়াছড়ি ছিল। আমার একমাত্র আশা ওয়েস্ট পনেন্টে কোন চার্চের দিকে সরাসরি দিক নির্দেশ করবে। এমন কিছু যার মাধ্যমে ঘন্টি বেজে উঠবে।

    ফুয়োকো! বলল মেয়েটা, ফায়ার। বার্নিনির কোন টাইটেল বেরিয়ে আসছে না?

    শ্রাগ করল ল্যাঙডন, তার করা আগুন ভিত্তিক অনেক বিখ্যাত স্কেচ আছে। কিন্তু এ পর্যন্তই। কোন মূর্তির কথা মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে না কোন দেয়ালে খোদাই করা কাজের কথাও। আর আরো হতাশার খবর হল, সেগুলো আছে জার্মানির লিপজিকে।

    আরো মুষড়ে পড়ল মেয়েটা। আর তুমি নিশ্চিত যে এই ব্রিথ আসলে দিকনির্দেশ করছে?

    সবই দেখেছ তুমি, ভিট্টোরিয়া। ভাল ভাবেই জান, আর কোন দিক নির্দেশের কোন সুযোগ নেই।

    মেয়েটা জানে তার কথাই ঠিক।

    আগের দুটা দিকই আমাদের অভ্রান্ত ছিল। এবারও আর কোন উপায় দেখছি না। আগের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে, এ নির্দেশনা ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

    নড করল ভিট্টোরিয়া। তার মানে আমরা ইশারা অনুসরণ করব। কিন্তু কোন পর্যন্ত? এগিয়ে এল ওলিভেট্টি। কী পেলেন আপনারা?

    অনেক অনেক চার্চ। আগ বাড়িয়ে বলল প্রহরী, দু ডজনের মত গির্জা। আমার মনে হয় প্রতিটায় চারজন করে জওয়ান দাড় করিয়ে রাখলে।

    ভুলে যাও, বলল ওলিভেষ্টি, রোষ কষায়িত নয়নে তাকিয়ে, আমরা লোকটাকে দুবার হাতেনাতে পাকড়াও করতে করতে বিফল হয়েছি। তখন আমরা জানতাম ঠিক কোথায় সে আছে। এখন বিশাল সংখ্যায় সৈনিক সরিয়ে নেয়া মানে ভ্যাটিকান সিটিকে একেবারে নিঃস্ব করে বেরিয়ে যাওয়া। সার্চেরও বারোটা বাজবে।

    আমাদের একটা রেফারেন্স বুক লাগবে, হঠাৎ যেন খেই ফিরে পেল ভিট্টোরিয়া, ডুবন্ত মানুষের মত খরকুটো আকড়ে ধরছে সে। এমন একটা বই যেটায় বার্নিনির সমস্ত কাজের ফিরিস্তি আছে। আমরা অন্তত টাইটেলগুলো দেখতে পেলে বাদবাকি ব্যাপার আন্দাজ করেও নিতে পারি।

    আমি তেমন কোন আশা দেখতে পাচ্ছি না। বলল হতাশার সুরে ল্যাঙডন, যদি এটাকে শুধুমাত্র ইলুমিনেটির জন্য বার্নিনি গড়ে দিয়ে থাকেন তাহলে সেটার কোন রেফারেন্স বইতে না থাকার কথা।

    একমত হতে পারল না মোটেও ভিট্টোরিয়া, আগের দুটা স্থাপত্যের কথা তুমি ঠিক ঠিক জানতে। সেগুলো মোটেও অখ্যাত ছিল না। তাহলে এবার সাহস হারানোর মত কিছু হচ্ছে কি?

    শ্রাগ করল ল্যাঙডন, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে। ইয়াহ্।

    আমরা যদি তার সব কাজের নমুনা নিয়ে একটু দেখি, আগুনের সাথে সংশ্লিষ্ট শব্দ পেয়েই যাব। সেটাকে আমাদের রেখার আশপাশে পেয়েও যেতে পারি। আর একবার পেয়ে গেলে কেল্লা ফতে।

    এতক্ষণে একটু আশার সুর বেজে উঠল ল্যাঙডনের কণ্ঠে, আমরা বার্নিনির সমস্ত কাজের একটা নমুনা চাই। বলল সে ওলিভেট্টির দিকে তাকিয়ে। আপনার লোকজন এখানে কফি-টেবিলের পাতলা বইপত্রের মধ্যে এমন কিছু রাখতে পারে, তাই না?

    কফি টেবিলের বই?

    নেভার মাইল্ড। যে কোন বই। যে কোন লিস্ট। ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের খবর কী? সেখানে নিশ্চই বার্নিনির কাজের রেফারেন্স থাকবে।

    চেহারায় ক্ষতচিহ্নওয়ালা লোকটা এবার এগিয়ে এল। জাদুঘরের পাওয়ার অফ করে দেয়া হয়েছে। আর রেফারেন্স রুম সুবিশাল। সেখানে কাজ করতে হলে অনেক লোকের দরকার হবে। নাহলে তল্লাশি শেষ হতে হতে সময় পেরিয়ে যাবে—

    এবারও কমান্ডার তার অধীনস্থর কথার মাঝখানে কথা বলে উঠল, বার্নিনি ওয়ার্কস… হুম… বার্নিনি ভ্যাটিকানে কর্মরত থাকার সময় কি?

    অবশ্যই। আশায় উৎফুল্ল হয়ে উঠল ল্যাঙডন, তিনি তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই এখানে ছিলেন। বিশেষত গ্যালিলিও নিয়ে বিভেদের সময়টায়।

    নড করল ওলিভেট্টি, তাহলে এখানে আরো একটা রেফারেন্স আছে।

    ভিট্টোরিয়ার কণ্ঠেও আশার প্রতিদ্ধণি উঠল, কোথায়?

    জবাব দিল না কমান্ডার। একজন প্রহরীকে দূরে সরিয়ে নিয়ে খুব দ্রুত নির্দেশ দিল। অনিশ্চিত দেখাল গার্ডের মুখভঙ্গি, একই সাথে সে সশ্রদ্ধ সম্মতি জানাল। ওলিভেট্টি কথা শেষ করার পর গার্ড ফিরল ল্যাঙডনের দিকে।

    এ পথে প্লিজ, মিস্টার ল্যাঙডন। আমাদের দ্রুত করতে হবে। এখন শোয়া নটা বাজে।

    অনুসরণ করল ল্যাঙডন। বিনা বাক্যব্যায়ে।

    ভিট্টোরিয়া বাধা দিল তাদের, আমি সাহায্য করব।

    খপ করে তার হাত ধরে ফেলল ওলিভেট্টি, তার ধরার মধ্যে কর্তৃত্বের ভাব সুস্পষ্ট। না, মিস ভেট্রা, আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।

    চলে গেল ল্যাঙডন আর গার্ড। ভিট্টোরিয়াকে অন্য পাশে নিয়ে যাবার সময় কোন ভাব খেলা করল না ওলিভেট্টির চোখেমুখে। একেবারে পাথরে খোদাই করা মুখ। কিন্তু যাই সে বলার জন্য এগিয়ে গিয়ে থাক না কেন, হতাশ হতে হল তাকে। খড়খড় করে। উঠল হাতের ওয়াকিটকি। কমান্ডান্টে!

    ঘরের প্রত্যেকে ঘুরে দাঁড়াল।

    অপ্রস্তুত কথা শোনা যাচ্ছে অপর প্রান্ত থেকে, আমার মনে হয় আপনি টেলিভিশন খুললেই ভাল করবেন।

     

    ৮০.

    ঘণ্টা দুয়েক আগে যখন ল্যাঙডন ভ্যাটিকান আর্কাইভ ছেড়ে যায় তখন সে কল্পনাও করেনি আর একটু পরে আবার এখানেই হাজির হবে। কিন্তু এখন গার্ডের সুগঠিত দেহের পিছনে পিছনে আসতে আসতে আবার সে টের পেল। ফিরে এসেছে। আর্কাইভে।

    তার এসকর্ট, সেই ক্ষতচিহ্নওয়ালা গর্ড, তাকে হাজির করল কিউবিকলগুলের কাছে। এখানকার নিরবতা একেবার বুকে এসে লাগছিল তার। অসহ্য। আগে এমন লাগেনি। এবার গার্ড নিরবতা ভঙ্গ করায় বেশ কৃতজ্ঞ বোধ করল সে।

    এখানে, আমার মনে হয়। বলল সে, নিয়ে গেল তাকে দেয়ালের কাছে যেখানে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট খুপরি বসে আছে। ছোট ভল্টগুলোর দিকে এগিয়ে এসে সে একে একে নামগুলো পড়তে শুরু করল। তারপর বলল, এখানেইতো! ঠিক যেমন বলেছিলেন কমান্ডার।

    টাইটেল পড়ল ল্যাঙডন। এ্যাটিভি ভ্যাটিকানি। ভ্যাটিকানের সম্পদ? সে একে একে শিরোনামগুলো পড়ে গেল। রিয়েল এস্টেট… কারেন্সি… ভ্যাটিকান ব্যাঙ্ক… এ্যান্টিকুইটিজ… লিস্ট চলছে তো চলছেই। কোন থামাথামি নেই।

    ভ্যাটিকানের সমস্ত সম্পদের কাগজে-কলমে লেখা তালিকা। বলল গার্ড।

    কিউবিকলের দিকে তাকিয়ে আরো একটা নিঃশ্বাস ফেলল সে। জিসাস! এই অন্ধকারে, এই শিতলতায়ও তার কাল ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

    আমার কমান্ডার বলেছেন যে বার্নিনি ভ্যাটিকানের আওতায় থাকার সময় যা-ই করেছেন তার সব সম্পদ হিসাবে এখানে লেখা থাকবে।

    নড করল ল্যাঙডন। কমান্ডারের দৃষ্টি ঠিক আছে। ভ্যাটিকানে থাকার সময়, পোপের অধীনে থাকার সময় বার্নিনি যত শিল্পকর্ম করে থাকুন না কেন, আইনত তার সবই ভ্যাটিকানের সম্পদ। তখনকার দিনে ব্যাপারটাকে এখনের মত অপমানজনক মনে করতেন না শিল্পীরা। এখানে কি ভ্যাটিকানের বাইরের গির্জাগুলোতে রাখা কাজের কথাও থাকছে?

    যেন কোন বাচ্চাকে বোঝাচ্ছে, এমন বিরক্তি নিয়ে সে বলল, অবশ্যই, ভ্যাটিকানের বাইরের সব রোমান চার্চই ভ্যাটিকানের সম্পদ।

    সব বাদ দিয়ে ল্যাঙডন মনে মনে প্রমাদ গুণছে। এই রেখার আশপাশে থাকা দু ডজন গির্জার প্রতিটাই ভ্যাটিকানের সম্পদ। এর যে কোনটায় আছে থার্ড অল্টার অব সায়েন্স। সেটা সময়মত বের করতে পারলে হয়। নাহলে কপাল চাপড়ানো ছাড়া কোন গতি থাকবে না। অন্য সময় হলে সে নির্দ্বিধায় প্রতিটা চার্চে সরেজমিন তদন্ত করতে পিছপা হত না। কিন্তু এখন তেমন কোন সময় নেই। বিশ মিনিটের মধ্যে সবগুলো চষে ফেলা সম্ভব নয় সমস্ত লোকবল কাজে লাগিয়েও।

    ভল্টের ইলেক্ট্রনিক রিভলভিং ডোরের দিকে এগিয়ে গেল ল্যাঙডন। পিছনে পিছনে আসছে না গার্ড। ঠায় দাড়িয়ে আছে যেখানে ছিল। একটু অপ্রস্তুত হাসি দিল সে, বাতাস ভালই আছে। একটু পাতলা। তবে খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয়।

    আমার উপর নির্দেশ আছে, আপনাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে কমান্ড সেন্টারে সাথে সাথে ফিরে যেতে হবে।

    চলে যাচ্ছেন আপনি?

    জি। ভল্টের ভিতরে তো দূরের কথা, আর্কাইভেই আসার কোন অনুমতি নেই সুইস গার্ডের। আমি নিয়ম ভেঙেছি আপনাকে এগিয়ে দিতে গিয়ে। কমান্ডার আমাকে এমন আদেশই করেছেন।

    নিয়ম ভেঙেছেন? তোমার কি বিন্দুমাত্র ধারণা আছে আজ রাতে এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে? আপনার মরার কমান্ডার কোন পক্ষে একটু বলতে পারেন কি আমাকে?

    এবার একেবারে পাথুরে হয়ে গেল গার্ডের মুখ। তার চোখের উপরের কাটা দাগ আরো বেশি করে দেখা যাচ্ছে। তার ভিতরে যেন প্রকাশিত হচ্ছে ওলিভেট্টি।

    মাফ চাচ্ছি! একটু লজ্জিত হয়ে বলল ল্যাঙডন, আমি… আমি আসলে এখানে আপনার কাছ থেকে একটু সহায়তা আশা করছিলাম। এই যা।

    চোখের পলক ফেলল না গার্ড একবারও। আমি আদেশ মানার জন্য ট্রেইল্ড হয়েছি। কোন ব্যাপারে দ্বিরুক্তি করা আমার নিয়ম বহির্ভূত। আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তু পেলে কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করবেন।

    আর আপনার কমান্ডার কোথায় থাকবেন?

    সাথে সাথে গার্ড তার ওয়াকিটকি বের করল। নামিয়ে রাখল টেবিলের উপর। বলল, চ্যানেল ওয়ান।

    তারপর হারিয়ে গেল কালিগোলা অন্ধকারে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন
    Next Article দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.