Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এবং মার্কেট ভিজিট – অভীক সরকার

    লেখক এক পাতা গল্প376 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    একটি বিয়ের গল্প

    ‘নমস্কার’।

    ‘নমস্কার’।

    ‘হেঁ হেঁ, একটু বসতে পারি? আসলে বড় ফ্যানটা এখানেই রেখেছে কি না! নিচে যা ভীড় আর গুমোট গরম, বাপরে। ডিস্টার্ব করলাম না তো?

    ‘আরে না নানা, নট অ্যাট অল, বসুন বসুন। একটু পরেই বিয়ে শুরু হবে, ভীড় তো হবেই এখন।’

    ‘আর গরমটাও পড়েছে মশাই, অ্যাঁ? সবে মার্চ মাস, এখনই যা আগুন ঝরাচ্ছে, মে জুনে তো একেবারে ফাটিয়ে দেবে মনে হচ্ছে। এসব ওই গ্লোবাল ওয়ার্মিং না কি, তার জন্যেই হচ্ছে নাকি ভাই?’

    ‘বলা যায় না, হতেও পারে, তবে গরমটা যে জব্বর পড়েছে, সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, গায়ে পাঞ্জাবি পরে আছি না ভিজে ন্যাতা জড়িয়ে রেখেছি বোঝাই যাচ্ছে না’।

    ‘ হ্যা হ্যা হ্যা। বেড়ে বলেছেন মশাই। ইয়ে, আমার নাম জগবন্ধু দাস, এদের প্রতিবেশী হেঁ হেঁ। বুলু, মানে যে কনে আর কি, তার বাপ হরিসাধন আমার সেই ইয়েবেলার বন্ধু বুঝলেন, সেই ভরদ্বাজ শিক্ষাশ্রম থেকে একসঙ্গে….’।

    ‘আমি অভিলাষের, মানে বরের বন্ধু। আপনার থেকে অনেক ছোটই হবো, আমাকে তুমিই বলুন ‘।

    ‘বাহ বাহ, চমৎকার। আজকাল তো এসব উঠেই গেছে হে, এমন বিনয়ী ইয়ে চট করে দেখাই যায় না, হ্যা হ্যা। তা বাপু তুমি কি বরের ছোটবেলার পাড়ার বন্ধু না স্কুল কলেজের?’

    ‘দুইই বলতে পারেন। আমরাও ওই, ইয়েবেলার বন্ধু আর কি’।

    ‘বাহ বাহ। তাহলে ওদের সব খবরই জানো বলতে হবে ভায়া। তা ছেলের বাড়ি তো শুনলাম বেশ পয়সাওয়ালা, না কি?’

    ‘ওই আর কি। কলকাতা দুর্গাপুর মিলিয়ে তিনটে সোনার শোরুম, কলকাতা শহরে খান চারেক বাড়ি, সাউথ সিটিতে দুটো ফ্ল্যাট, দার্জিলিঙে একটা বাগানবাড়ি… ‘

    ‘বাহ বাহ, বেশ বেশ, শুনে ভারি খুশি হলুম। তা ছেলে তো এমনিতে ভালোই শুনলাম, তাই তো? লেখাপড়াতে তো ভালোই, না কি?’

    ‘সি ইউ থেকে ফার্স ক্লাস ফিজিক্স অনার্স, আর তারপর ওখান থেকেই এমবিএ। সিটিব্যাঙ্কে বারো লাখটাকার অফার ছিলো, ছেড়েছুড়ে বাবার বিজনেস দেখতে এসেছে। এখন একে যদি লেখাপড়া বলতে চান…’

    ‘বলো কি হে! এ তো রীতিমতো শিক্ষিত দেখছি। আমার তো ধারণা ছিল এইসব বড়লোক বিজনেসম্যানদের ছেলেগুলো একেকটা তেএঁটে বদমাশ হয়। রাতদিন কলেজে লাফাঙ্গাগিরি করে, মেয়েদের বিরক্ত করে আরা সারাক্ষণ মদ গাঁজা খায়’।

    ‘ইয়ে, কাকু বোধহয় খুব বাংলা সিনেমা দেখেন, না?’

    ‘অ্যাঁ? হেঁ হেঁ, তা আর না বলি কি করে ভাই। আজকাল অবশ্য কমই হয়, টাইম কই? এককালে খুব দেখেছি বুইলে, স্বপন সাহার কোনও ছবি বাদ দিইনি। আহা, কিসব হলকাঁপানো ছবি ছিলো রে ভাই, ”বাবা কেন চাকর”, ”সখি তুমি কার?”, ”মানুষ কেন বেইমান”, ”সন্তান যখন শত্রু”, উফফফ। ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয় ভাই। যাকগে যাক, তা ছেলে ভালোই বলছো? ‘

    ‘হীরের টুকরো ছেলে কাকু, নিজের বন্ধু বলে বলছি না। ছোটবেলা থেকে তো চিনি। অত্যন্ত সভ্যভব্য, সৎ ছেলে, বন্ধুদের দেখে, গরীবলোক দেখলে দানধ্যান করে, মা বাবার কথা শোনে, লোক ঠকায় না, ভদ্র ব্যবহার। পার্টিতে গেলে এক আধ পেগ মদ খাওয়া ছাড়া আর কোনও নেশাই নেই। আর কাকু কাকিমাকেও তো চিনি, খুবই ভদ্র সজ্জন ফ্যামিলি। পাড়ায় খুবই জনপ্রিয়।’

    ‘বাহ, তাহলে তো ভালোই বলতে হবে।’

    ‘ইয়ে, একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম নাকি?’

    ‘অ্যাঁ? আরে না রে বাপু। বলি আমাদের বুলু, সেও কি কম নাকি? লেখাপড়া খেলাধূলা সব মিলিয়ে চৌখস মেয়ে। ক্যারাটেতে ব্ল্যাক না কি একটা বেল্ট, সাইক্লিং আর সাঁতারে স্টেট চ্যাম্পিয়ন। তার ওপর যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে সিভিল সার্ভিস দিয়ে আইপিএস অফিসার, হে হে হে, মেয়ে কিন্তু আমাদের কম নয় বাবা।’

    ‘সে আর আর বলতে? হাড়ে হাড়ে চিনেছি, বাপ রে। যা গরম মেজাজ।’

    ‘তা পুলিশের মেজাজ গরম হবে না তো কি আইসক্রিমের মতন ঠাণ্ডা মোলায়েম হবে, অ্যাঁ?’

    ‘তা নয়। তবে কিনা…’

    ‘হ্যা হ্যা হ্যা। তোমার বন্ধু কিন্তু শক্ত পাল্লায় পড়তে চলেছে ভাই, হ্যা হ্যা। ক্লাস টেন না ইলেভেনে পড়ার সময় বেপাড়ার দুএকটা ছেলে আমার মেয়েকে কিছু টোনটিটকিরি কেটেছিল, বুইলে। আমার মেয়ে হলো গিয়ে আবার বুলুর এক্কেবারে বুজুম ফ্রেণ্ড। তারপরে, বুলু গিয়ে তিনটে ছেলেকে সে কি মার, কি মার! একটার তো হাত ভাঙলো, আরেকটার বোধহয় বাঁ পা, আর শেষেরটার বোধহয় নাক আর তিনটে দাঁত। সে থানাপুলিশ, পাড়া বেপাড়ার ছেলেপিলে নিয়ে কি হুলুস্থুলু কান্ড রে ভাই। থানার ওসি তো শুনে হাসতে হাসতে মরে আর কি। তারপর বুলুকে ডেকে মাথায় হাত রেখে বলে ”বেটা, পোলিস মে আনা হ্যায় তো বাতা”, তারপর ছেলে তিনটেকে কেঁৎকা দিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করতে করতে চলে গেলো। শেষে হরিসাধন নিজে এগিয়ে এসে ছেলেগুলোর চিকিৎসার পয়সা দিতে সব ঠাণ্ডা হয়। উফ, সে যে কি ঝামেলা রে ভাই, কি বলবো। আমার মা তো বলেই দিয়েছিল, এই ধিঙ্গি মারকুট্টে মেয়ের বিয়ে হবে না, হতেই পারে না। শাস্ত্রে যেন কি একটা লেখা আছে না, স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম বলে?’

    ‘ভাগ্যিস..’

    ‘অ্যাঁ? কিছু বললে নাকি? ‘

    ‘না, সে কিছু বলিনি। বলছি এসব অবশ্য আমরা আগেই শুনেছি। তা আপনার মেয়ের জন্যে এত কিছু হলো, সে কিছু বললো না?’

    ‘সে আর কি বলবে? বুলু ওর বুজুম ফ্রেণ্ড বললুম, না! মা আমার ভারি লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে, কোনও ঝুটঝামেলার মধ্যেই নেই, সাত চড়ে রা কাড়ে না। তার ওপর বলতে নেই দেখতেও প্রতিমার মতন। ওর মায়ের রঙ আর রূপ পেয়েছে কিনা, হেঁ হেঁ হেঁ, সাক্ষাৎ লক্ষ্মীঠাকুরটি। হোম সায়েন্সে বি এ, আর কি ঠাণ্ডা ব্যবহার আর কি বলবো..তবুও….’

    ‘তবুও কি? ও কাকু, ফের একটা ফেঁৎ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যে!’

    ‘এই তো বুলুর মতই বয়েস আমার মেয়ের। রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী, তবুও দেখো, গত একবছর ধরে যে পাত্রই দেখি তাকেই আমার মেয়ে না করে দিচ্ছে, কি কেস জিজ্ঞেস করলেই বলে তার নাকি পছন্দ নয়! কি যে চায়, আইনস্টাইন নাকি প্রসেনজিৎ, কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বলি বলতো ভায়া? একমাত্র মা মরা মেয়ে, কড়া করে কিছু বলতেও পারি না। বলি অমন মারকুট্টে মাথাগরম মেয়েটার অবধি বিয়ে হয়ে গেলো, আমার মেয়েটাই কি…’

    ‘আরে কাকু, সেসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। বেদে না বাইবেলে কিসে একটা বলেছে না, ম্যারেজস আর মেড ইন হেভেন? সময় হলে দেখবেন, নিশ্চয়ই…

    ‘বলছো, অ্যাঁ? বলছো? জয়ত্তারা! তোমার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক হে। নাহ, এইবার মেজাজটা বেশ খোলতাই লাগছে। তা ইয়ে, একটা কথা বলো তো বাপু। আমি শুনেছি এই বিয়ের ভেতরে কি একটা নাকি গল্প আছে? বলি কেলেঙ্কারি কিছু আছে, না? খোলসা করে বলো দিকিন বাপু। আরে না না, এই শর্মা কাউকে বলবে না, ভগবানের কিরে’।

    ‘হেঁ হেঁ, নিজের বন্ধুর গোপন কথা ফাঁস করতে বলছেন কাকু? কথা এদিকওদিক হবে না তো? প্রমিস?’

    ‘আরে, বাবা লোকনাথের নামে প্রমিস রে ভাই। বিশ্বাস হচ্ছে না? হচ্ছে না? ঠিক হ্যায়, না হয় তো শ্রীরামকৃষ্ণর নামে করছি…’

    ‘না না ঠিক আছে। শুনবেনই তাহলে? এক্কেবারে ছাড়বেন না? তবে শুনুন।

    অভিলাষদের যে তিনটে যে শোরুম, তাদের মধ্যে সবচাইতে বড় যেটা, সেটা হচ্ছে সল্টলেকে, অভিলাষ ওখানেই বসে। তা ধরুন বছর দেড়েক আগেকার এক অক্টোবর মাস নাগাদ, সেই দোকানে একটা কেলো হয়।

    অভিলাষের আরেক বন্ধু আছে বুঝলেন, রজত নামের, রজতশুভ্র মণ্ডল। পাজির পাঝাড়া এক নম্বরের, পাক্কা শয়তান, কম করে তিন তিনটে থানায় ওর নামে এগারোখানা কেস ঝুলছে। আমরা যত বারণ করি ওর সঙ্গে মিশিস না, কে কার কথা শোনে? যাই হোক, সেই অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ, খুব সম্ভবত বুধবারই হবে, অভিলাষ দোকান বন্ধ করে লেকটাউনে রজতের বাসায় গেছিল কি একটা পরামর্শ করতে। পরে শুনেছি রাত দশটা অবধি ওইখানেই ছিলো। হঠাৎ সেখান থেকেই নাকি ওদের দোকানের সিকিওরিটি ওকে খবর দেয় ভেতরের অ্যান্টি বার্গলারি অ্যালার্ম বেজে উঠেছে, অভিলাষ যেন এক্ষুণি দোকানে আসে।

    যা হয়, ওখান থেকেই পুলিশে খবর দিয়ে অভিলাষ আর রজত তো দৌড়ল দোকানের দিকে। এদিকে খবর পেয়ে কাকু, মানে অভিলাষের বাবাও গিয়ে হাজির।’

    ‘বাপ রে। সোনার দোকানে ডাকাতি? খুব ডেয়ারিং ডাকাত বলতে হবে’।

    ‘সে আর বলতে? যাই হোক, তা খবর পেয়ে তো আপনাদের বুলু ম্যাডাম এসে হাজির, তিনিই তখন বিধাননগর দেখতেন কি না, সঙ্গে বিশাল পুলিশ ফোর্স। তা সারা দোকান ঘিরে মাইকে করে প্রচুর ধমকি টমকি দেওয়া হলো, সল্টলেক তো প্রায় ভেঙে পড়েছিল নাটক দেখতে।’

    ‘তারপর? চোর ধরা পড়লো?’

    ‘সেইটেই তো কথা। মাইকিং করে কোনও কাজ না হওয়াতে শেষে চাবি দিয়ে শাটার খুলে দরজা খোলা হলো। কাকু তো অভিলাষকে কিছুত্তেই ভেতরে যেতে দেবেন না। ওদিকে পুলিশ গুলো অবধি ইতস্তত করছে, কটা ডাকাত আছে, তাদের হাতে কি আর্মস আছে হাতে কেউ জানে না। ও মা, ম্যাডাম দেখি সার্ভিস রিভলভার হাতে দরজায় দাম করে একটা লাথি মেরে ঢুকে সোজা ঢুকে গেলেন’।

    ‘বুলুটা চিরকালই ডেয়ারডেভিল। তা বাপু তুমিও ছিলে নাকি? নইলে দেখলে কি করে?’

    ‘উরিত্তারা, কাকুর অবজার্ভেশন পাওয়ার তো সাংঘাতিক! ঠিক ধরেছেন কিন্তু! আসলে ওদের সঙ্গে আমাদের ফ্যামিলির অনেকদিনের আলাপ, তার ওপর এতদিনের বন্ধুত্ব। না গিয়ে পারি বলুন?’

    ‘হ্যা হ্যা হ্যা। অডিটে ছিলাম পাক্কা সাঁইতিরিশ বচ্ছর ভাই। আমার নজর ফাঁকি দেওয়া… হ্যা হ্যা হ্যা। যাই হোক, তারপর? চোর ধরা পড়লো?’

    ‘আরে সেইটাই তো মজা কাকু, গিয়ে দেখা গেলো কেস এক্কেবারে করেকেটেঘ্যাঁচাং।’

    ‘মানে?’

    ‘মানে শর্টসার্কিট কেস। অ্যালার্মের সার্কিট শর্ট হয়ে গিয়ে এই বিপত্তি!’

    ‘বোঝো কাণ্ড! তারপর? পুলিশ নিশ্চয়ই খুব হম্বিতম্বি করলো? বুলু কিন্তু খুব শর্ট টেম্পার্ড মেয়ে, মুহূর্তেই মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর হাত পা চলে তো…’

    ‘আরে না না, তেমন কিছু বলেনি। অভিলাষের বাবা তো লজ্জাটজ্জা পেয়ে মাফ চেয়ে নিলেন। তারপর অত রাতেই মিষ্টি আর কোল্ড ড্রিঙ্কস এনে খাওয়ালেন সব্বাইকে।’

    ‘তারপর নিশ্চয়ই ব্যাপার চুকেবুকে গেলো?’

    ‘যেত, যাওয়ারই কথা। ঝামেলা পাকালো রজত’।

    ‘সেই লেকটাউনের বন্ধু? এর নামেই খুব একচোট গালমন্দ করলে না একটু আগে?’

    ‘হ্যাঁ, সেইই। এক নম্বরের উচক্কা বদমাশ, মিটমিটে ডান একটা, পেটেপেটে খালি কুবুদ্ধি..’

    ‘ওরে বাবা, গুণধর ছেলে মনে হচ্ছে! তা সে কি করলো?’

    ‘রজতের পাক্কা জহুরির চোখ, নিজেও পাক্কা মেয়েবাজ কি না। সে তো অভিলাষের মুগ্ধ চোখমুখ দেখে বুঝেছে কেস খুব ঘোরালো। সে নিজেই গিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে আলাপটালাপ করে ম্যাডামের ফোন নাম্বার যোগাড় করে… ‘

    ‘বাপ রে, বলো কি? মানতেই হবে, ছোকরার এলেম আছে হে। ওইভাবে বুলুকে অ্যাপ্রোচ করা আর বাঘের গুহায় মাথা গলানো একই ব্যাপার। তাহলে বলি শোনো, বুলু যখন ক্লাস এইটে পড়ে, সরস্বতীপুজোর দিনে পাশের পাড়ার কে যেন একজন রিকশা করে ধুতি পাঞ্জাবি পরে ফুলবাবুটি সেজে এসেছিল বুলুকে প্রেমপত্র দেবে বলে। সে তো রিক্সা দাঁড় করিয়ে সোওজা গিয়ে বুলুদের বাড়ির কলিং বেল টিপে দাঁতটাঁত কেলিয়ে প্রপোজ করে একশা….তারপর ক্কি ক্কান্ড!’

    ‘তারপর?’

    ‘তারপর আবার কি? দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন বাড়িতে হরিসাধন আর বাকিরা কেউ ছিলো না। নইলে সে ছোকরা বেঁচে যেতো। ‘

    ‘বেঁ..বেঁচে যেতো মানে?

    ‘মানে আবার কি? যে রিক্সা চড়ে এসেছিলো, শেষে সেই বেচারাকে ওই রিকশাই নিজে চালিয়ে ফিরতে হয়, স্রেফ জাঙিয়া পরে। রিক্সাওয়ালা ছোকরা তো সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে সোজা পগারপার, বোধহয় সিধে ছাপরা পৌঁছে নিঃশ্বাস নিয়েছিলো। উফফ, সেও আরেক কাণ্ড, ভাবলেও গায়ে কাঁটা দেয়। তা তোমাদের সেই রজত ছোকরা দিব্যি গিয়ে ফোন নাম্বার চেয়ে নিলো?’

    ‘আরে মেয়ে পটাতে রজতের জুড়ি আছে নাকি? বল্লুম যে, এক নম্বরের লাফাঙ্গা! তা সে যাই হোক। রজতের তো জহুরীর চোখ, সে তো দেখামাত্র বুঝেছে, আপনাদের বুলুর বীরত্বে অভিলাষের মিডল স্ট্যাম্প ছিটকে একেবারে দর্শকদের মধ্যে। সে করলো কি, ফেব্রুয়ারির ছয় তারিখে, মানে অভিষেকের জন্মদিনে, এক এলাহি বার্থডে পার্টির আয়োজন করে বসলো। বলা বাহুল্য আমন্ত্রিতদের মধ্যে স্টার অ্যাট্রাকশন বুলু ম্যাডাম স্বয়ং!’

    ‘ইন্টারেস্টিং হে, খুবই ইন্টারেস্টিং। তা বুলু গেলো? ও কিন্তু এসব ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট শুনেছি’।

    ‘তা ম্যাডাম এলেন বই কি। একা নয় অবশ্য, সঙ্গে এক বান্ধবী ছিলেন। ছোটখাটো ফর্সামতন মিষ্টি দেখতে। খুবই কম কথা বলেন যদিও। অলিভিয়া না কি যেন একটা নাম।’

    ‘অ্যাঁ? কি বললে? অ’

    ‘কি হলো, অ বলে গম্ভীর হয়ে গেলেন যে?’

    ‘ও কিছু নয়, তুমি বলে যাও।’

    ‘যাই হোক, মোটমাট অভিলাষ চেষ্টা করলো অনেক। কিন্তু আদ্যন্ত ভালো ঘরের ছেলে, কড়া শাসনে মানুষ। রজতের মতন ছ্যায়েলছবিলা নাকি? ফলে বুলুম্যাডাম যেমনকে সেই। ঘন্টাদুয়েক শুকনো মুখে বসে থেকে শেষে গুনে গুনে দুচামচ বিরিয়ানি খেয়ে উঠে পড়লেন। কি বলবো কাকু, আরসালানের আসাদৌল্লাহ উস্তাদকে ডেকে স্পেশালি বানানো বিরিয়ানি, দেবভোগ্য জিনিস কাকু, দেবভোগ্য জিনিস! ও জিনিস যে কেউ হেলাচ্ছেদ্দা করে উঠে আসতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। পাপ, কাকু ও বিরিয়ানি ফেলে আসা পাপ। ইশশ… আমি তো ডাব্বা করে বাড়িতেও…..’

    ‘হুম, তাহলে ভবী ভুললো না?’

    ‘নাহ, কিছুতেই কিছু হলো না। মাঝখান থেকে ওই ক্যারেক্টারলেস রজত অলিভিয়াকে তুলে ফেললো’।

    ‘ক্কি ক্কি ক্কি বললে? তুলে ফেললো মানে কি? মাছ নাকি যে তুলে ফেলবে? অত্ত সহজ?’

    ‘আর কাকু, আপনিও মাইরি। বিদ্রোহী কবি শরৎচন্দ্র বলেছেন প্রেমের ফাঁদা পাতা ভুবনে, এর ওপরে আর কথা হয়, অ্যাঁ? আর তাছাড়া কালো, বেঁটে, মোটা আর টাক হলে কি হবে, রজতের একটা অদ্ভুত মেয়ে পটানোর ক্ষমতা আছে। আর তার ওপর টাকা তো আছেই। তাছাড়া একটা মাচো ইমেজও আছে, সবসময় একটা রিভলভার নিয়ে ঘোরে কি না’।

    ‘রি-রিভলভার?’

    ‘আরে ছাঁট লোহার কারবার না ওদের? এসব লাইনে রিভলবার তো রাখতেই হয়। আর তাছাড়া দুটো ডান্স বারও আছে যে, খুন যখম পুলিশ নিত্যই লেগে আছে। খড়গপুরের মস্তান শ্রীরামুলু আর খিদিরপুরের আসলাম ভাই তো ওর বাবার বুজুম ফ্রেণ্ড! ফলে বুঝতেই পারছেন, আমরা তো পইপই করে অভিলাষকে বারণ করি, ওরে ওর সঙ্গে মিশিস না, মিশিস না মিশিস না। তা কে শোনে কার কথা।লাস্ট বার যখন রজতকে পুলিশে ধরে, অভিলাষই তো বেইল করিয়ে আনলো’।

    ‘থানাপুলিশ? লাস্ট বার? মানে ছোকরার সেখানে রেগুলার যাতায়াত আছে নাকি?’

    ‘আছে তো বটেই। তবে লাস্ট বারে জোর ফেঁসে গেছিলো। ওর আগের গার্লফ্রেণ্ডকে তো পাওয়া যাচ্ছিল কি না! কেউ বলে সোনাগাছিতে বেচে দিয়েছে, কেউ বলে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছিলো বলে মেরে পুঁতে দিয়েছে’।

    ‘মাই ঘড!!!’

    ‘এতেই মাই ঘড? তাহলে তো কাকু আপনি রজত কে চেনেনই না। ছেলে মাধ্যমিক ফেল করার পরেই বাবার ব্যবসায় ঢোকে, বুঝলেন? প্রথম খুন সতেরো বছর বয়সে, গলায় ছুরি চালিয়ে। স্রেফ প্রূফ নেই বলে ছাড়া পেয়ে যায়। তারপর থেকে এখনও অব্ধি সাতটা খুন নিজের হাতে করেছে, কটা করিয়েছে জানি না। কাকপক্ষীতে টের অবধি পায় নি। হাওড়ার রেলসাইডিঙের সমস্ত গুণ্ডামস্তান গুরু বলতে একজনকেই মানে, শুনে রাখুন। আর তো আর, রজতশুভ্র মণ্ডলের নাম লালবাজারে স্পেশাল ওয়াচ লিস্টে রাখা আছে, জানেন সেটা? এর থেকে আর বেশি কি বলবো? যাক গে যাক, যা বলছিলাম। তা অভিলাষের কাজের কাজ তো কিছু হলো না, এদিকে অলিভিয়া আর রজতের তো প্রেমের ফুল ফুটে ফল ধরে ধরে আর কি’।

    ‘ভাই, জলের গ্লাসটা একটু দেবে? শরীরটা কেমন…’

    ‘এ কি! শরীর খারাপ লাগছে নাকি? আপনার বাড়ির লোকজনকে ডাকবো? য্যাত্তারা, এই নিন জল খান দেখি। প্রেশারটা ফল করলো নাকি? কি জ্বালা, দাঁড়ান দেখি….’

    ‘না বাবা, কাউকে বলতে হবে না। উতলা হয়ো না, আমি ঠিক আছি। তারপর কি হলো বলো।’

    ‘বলছেন? আপনি কিন্তু ঘামছেন কাকু, গলাটাও খুবই নির্জীব মনে হচ্ছে কিন্তু! ঠিক আছেন বলছেন? আচ্ছা, পাখাটা আরেকটু আপনার দিকে ঘুরিয়ে দিলাম। যাক গে যাক, তা কি বলছিলাম? হ্যাঁ। তা অভিলাষের তো চিঁড়ে ভিজলো না। মাঝখান থেকে আবার এক কেলো’।

    ‘অ্যাঁ? ফের কি হলো? অলিভিয়া কে নিয়ে কিছু…’

    ‘আরে ন্না ন্না, তা নয়। এর পরের মাসেই ফের এক রাত্রে অভিলাষের দোকানে সেই বার্গলার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। ফের তুলকালাম কাণ্ড। ফের বুলুম্যাম আর পুলিশ বাহিনী’।

    ‘এবার কি সত্যি চোর?’

    ‘নাহ, এবারেও ফলস, সেই একই কেস। এইবারে কিন্তু বুলুম্যাডাম আর ছাড়লেন না, দুটো গরম গরম কথা শুনিয়ে বিদায় নিলেন।’

    ‘বলেইছিলাম, মেয়েটার মেজাজ বড় কড়া। একবার তো আমার পোষা অ্যালসেশিয়ান ঘুঁচু এমনি এমনি, বুঝলে, মানে এমনি এমনি কামড়াবে বলে বা খেলবে বলে বুলুর দিকে দৌড়ে গেছিলো। না না, ঘুঁচু কামড়াতো না, ভারি সভ্যভব্য কুকুর ছিল কিনা! তা বুলু খুব কড়া করে ঘুঁচুর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিল, সেই থেকে ঘুঁচু বাইরেই বেরোতো না বুলুর গলার আওয়াজ শুনলে। তারপর?’

    ‘তারপর? একমাস বাদে ফের সেই অ্যালার্ম!!!’

    ‘এবার নিশ্চয়ই বুলু খুব কষে দিয়েছিল? ইশশ, বুলুকে দিয়েই এই রজতের বাচ্চাটাকে…’

    ‘য্যাত্তারা, রজত আবার আপনার কি করলো?’

    ‘না কিছু না। যা বলছিলে বলো’।

    ‘এইবার বুলুম্যাম একা এসেছিলেন, সঙ্গে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। এসে দেখলেন যে ফের সেই একই কাণ্ড! তবে এইবার কিন্তু উনি কিচ্ছুটি বলেননি। হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বললেন, অভিলাষের সঙ্গে তো চোখ চোখ রেখে সে কি হা হা হি হি। ‘

    ‘বাহ বাহ, তাহলে তো হয়েই গেলো। তাহলে তারপরেই কি….’

    ‘তারপরে আবার কি? পনেরো দিন বাদে ফের সেই একই কাণ্ড!’

    ‘উরে বাবারে। এই নিয়ে কতবার হলো? চার? নাকি তিনবার, অ্যাঁ? বুলু এবারও কি..’

    ‘না, এবারে ম্যাডাম একা নয়, টিম নিয়ে এসেছিলেন। ভেতরে গেলেন হাতেএকটা ট্যাব নিয়ে, কিসব দেখলেন। তারপর তো দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে সেকি হো হো করে হাসি!’

    ‘তারপর কি? ইঁদুর নিশ্চয়ই, অ্যাঁ? তারাই নিশ্চয়ই তার কেটে দিচ্ছিলো বার বার? আরে আজকালকার ইঁদুরগুলো সব শালা হাড়হারামি। সে যাই হোক, তা ইয়ে, তারপরেই কি, মানে বলতে লজ্জা করছে যদিও, তারপরেই কি ওদের ব্যাপারটা…’

    ‘তারপর বুলুম্যাডাম অভিলাষকে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় নিয়ে গেলেন।’

    ‘অ্যাঁ? অ্যাঁ?? অ্যাঁ???’

    ‘অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ। সে এক বিশশাল কেলো কাণ্ড মশাই। থানা পুলিশ উকিল আদালত নিয়ে তো সে বিশাল হুজ্জোত।’

    ‘উরেশাল্লা। এ তো বিশাল কেস ভায়া। তাই শুনছিলাম বটে, কি যেন একটা কেলেঙ্কারি আছে। তা কি কেস বাবা? পুরো ঘটনাটা কি খুলে বলতো, বেশ চনমনে ফীল কচ্ছি কিন্তু।’

    ‘কি আর বলবো কাকু। বলতে লজ্জাও লাগে, হাসিও পায়। আমাদের অভিলাষ বাবু নাকি দ্বিতীয়বারের পর থেকে ইচ্ছে করে অ্যলার্মে কি সব করে রাখতেন, যাতে টাইম হলেই অ্যালার্ম বেজে ওঠে আর আর সেই অজুহাতে ম্যাডামকে ডেকে আনা যায় !’

    ‘কেন?’

    ‘আহা, যদি ম্যাডামকে একটিবার চোখের দেখা দেখা যায়। এছাড়া আর উপায় কি?’

    ‘খ্যাঁক খ্যাঁক খৌয়া খৌয়া…উফফফ মাইরি…সত্যি বলছো? আমাদের জামাই এরকম আতাক্যালানে নাকি? হো হো হো হা হা হাহা হা হি হি হি….উফফফ ওরে বাবারে, পেট ফেটে যাবে যে রে। ওরে বাবা রে, জল দে ভাই, উফফফ, ওহহ আহহহ। সত্যি বলছো তো ভাই? বানিয়ে বলছো না তো?’

    ‘ নিয্যস সত্যি কথা কাকা। তাই তো ম্যাডাম ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি নিয়ে এসেছিলেন, লুকিয়ে লুকিয়ে একটা পিনহোল মোশন ক্যামেরা না কি ফিট করে গেছিলেন। পরের বার অ্যালার্ম বাজতেই ম্যাডাম তো সবার আগে গিয়ে ক্যামেরা চেক করেছেন, দেখেছেন যে আসল কালপ্রিট কে। ব্যাস, ক্যাচ কট কট। পুলিশকে হয়রান করা, সরকারি কর্তব্যে বাধাদান, ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি, এইরকম পাক্কা একুশখানা না সাতচল্লিশ খানা ধারায় মামলা সাজিয়ে সোওজা লক আপ’।

    ‘উফফ বাপ রে। বাপস রে….বলি থার্ড ডিগ্রি টিগ্রি দেয় নি তো? মেয়েটার মেজাজ বড়ই গরম, আর কথায় কথায় হাত চলে। একবার তো ওর ছোটবেলায় আমারদের ব্যানার্জিদা, বুঝলে, বুড়ো বয়সে ভীমরতি আর কি, ওর জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে ওকে একটু বেশি চটকে আদর করছিলেন। মেয়েটা একটা কাঁচি তুলে সটান ব্যানার্জিদার হাঁটুতে। সেই নিয়ে আরেক হুলুস্থুলু কাণ্ড। সেই থেকেই ব্যানার্জিদা খুঁড়িয়ে হাঁটেন। এই তো সেদিনই বাজারে দেখা হলো, এখন অবশ্য অন্য পাড়ায় থাকেন।’

    ‘তারপর আর কি। অলিভিয়া।’

    ‘অ্যাঁ, ক্কি ক্কি কি করলো সে? তাকে ওই গুন্ডাটার সঙ্গে ইনভলভড হতে, এই ঝামেলা হুজ্জোতের মধ্যে যেতে কে বলেছিল? আনসার মি, হোয়াই?’

    ‘যাহ, সে আমি কি করে বলবো? আমার ওপরে চেঁচাচ্ছেন কেন মশাই? আমি কি করলুম? এ তো মহা জ্বালা হলো। আর গেলেই বা, তাতে আপনার কি? আপনার তো আর কেউ হয় না।’

    ‘হেঁ হেঁ, সরি সরি। আসলে বয়েস হয়েছে তো, মাঝেমধ্যে প্রেশারটা একটু… না না, সে আমার কেউ নয়, আমার মেয়ের নাম মান্তু। যাক গে যাক, তা সেই অলিভিয়া গিয়ে করলো কি?’

    ‘কিছুই না। রজতের প্রেমে তো সে এক্কেবারে দিওয়ানা। একবার গিয়ে রজতের সঙ্গে দেখা করে, তারপর লক আপে অভিলাষের সঙ্গে, তারপর একবার ম্যাডামের সঙ্গে। আর ম্যাডামও বড় কড়া, ছোটবেলার বন্ধু বলে বিন্দুমাত্র রেয়াৎ করলেন না, স্রেফ হাঁকিয়ে দিলেন, এমনও বললেন যে ফের অভিলাষের হয়ে তরফদারি করতে এলে ওকেই লকআপে রাখবেন!’

    ‘অ্যাঁ? সে কি? কই, এসব তো আমাকে কেউ…উফফ বাপরে বাপ। বুলুর মেজাজ সেই ছোটবেলা থেকেই হেবি গরম, বুঝলেন? একবার কি হয়েছে…’

    ‘ আরে ধোর মশাই। রাখুন তো আপনার বুলুর ছোটবেলায় কি করেছে তার ব্যাখ্যান! বাঘা বাঘা উকিল নাকাল হয়ে যাচ্ছে অভিলাষের বেইল করাতে, আর আপনি…. আপনাদের সাধের বুলু যা একগাদা সাংঘাতিক দফা দিয়ে রেখেছিলো না! বোধহয় খুন, ধর্ষণ আর দেশদ্রোহ বাদ দিয়ে বাকই সবই ছিলো, তার ওপর সেই স্পাই ভিডিও। অর্ধেক উকিল তো শুনেই পিছিয়ে আসছিলো। জান কয়লা হয়ে গেছিলো মাইরি!’

    ‘তারপর?’

    ‘তারপর আর কি! একদিন রজত ওর ফাঁকা ফ্ল্যাটে অলিভিয়াকে আদর করতে করতে…’

    ‘অ্যাঁ ক্ককি ক্কি বললে? রজত ওর ফাঁকা ফ্ল্যাটে…’

    ‘আরে আপনি কাকু এমন চমকে চমকে ওঠেন না, মাইরি, গল্প বলার ইয়েটাই চলে যায়। আরে ফাঁকা ফ্ল্যাটে বয়ফ্রেণ্ড তার গার্লফ্রেণ্ডকে আদর করবে নাতো কি কেনেথ অ্যারোর ইকনমিক্সের থিওরি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করবে? আর রজতের দুটো ফ্ল্যাট আছে শুধু এইসব করার জন্যেই। ওই দুটো ফ্ল্যাটে কত মেয়ের যে সর্বনাশ…..যাক গে সে কথা, তা অলিভিয়া তো আপনার কেউ নয় বললেন। আপনি এত উতলা হচ্ছেন কেন?’

    ‘নাহ। আসলে শরীরটা আসলে একটু…বুঝলে …মাথাটা বাঁই করে ঘুরে গেলো কিনা! তা বাপু একটু তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় না অ্যাঁ ? না, মানে পরের ঘরের এত কেচ্ছা শোনা কি ভালো? ইয়ে, এতে শরীর মনের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে না?’

    ‘দেখুন কাকু, আপনিই কিন্তু শুনতে চেয়েছিলেন, আমি কিন্তু বলতে চাইনি। যদি বলেন, তো এইখানে স্টপ করে দিচ্ছি, হ্যাঁ’।

    ‘আরে ন্না ন্না। হেঁ হেঁ, এমনি বল্লুম, তা বাদ দাও। তারপর কি হলো?’

    ‘তারপর যা হলো কাকু, কি বলবো, যা হলো ভাবতেই পারবেন না। অলিভিয়া একদিন সোজা অভিলাষের মা বাবাকে নিয়ে বুলু ম্যাডামের বাড়ি!’

    ‘অ্যাঁ? সে কি? মান….মানে ওই অলিভিয়ার এত্ত সাহস? তারপর, তারপর? মারকাট দাঙ্গাহাঙ্গামা অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি, না? কিন্তু আমরা টের পেলুম না কেন বলতো? ইশ, হরিসাধন যদি একবার বলতো.. আমার দোনলাটা তো বাড়িতেই ছিল..ইশশ, আগে বললে পালিশ করে….

    ‘ধ্যার মশাই। আপনি কি মিঠুন চক্কোত্তি মার্কা মারকাট ছাড়া কিচ্ছুটি বোঝেন না, অ্যাঁ? আরে সেইদিনই তো ওদের বিয়ের দিন ফিক্স হলো মশাই!’

    ‘ অ্যাঁ? অ্যাঁ?? অ্যাঁ??? ‘

    ‘অ্যাঁ আবার কি কাকু, বলুন হ্যাঁ। সেইদিনই তো ডেট, ভেনু, মায় মেনু অবধি ঠিক হয়ে গেলো।’

    ‘আর…আর… আর অমন মারকুট্টে মেয়েটা সেটা একবাক্যে মেনে নিলো?’

    ‘কাকু, আপনি মাইরি এ লাইনে এক্কেবারে নভিস। ওসব স্বপন সাহা ছেড়ে প্রিটি উয়োম্যান বা নটিং হিল টাইপের সিনেমা দেখুন। বলি লভ ইজ স্ট্রেঞ্জ অ্যান্ড ব্লাইণ্ড, এ কথাটা কি শোনেননি? আরে মশাই, হিন্দিতে বলতে গেলে আগ দোনো তরফ বরাব্বর লাগি থি। কিছু টেকনিক্যাল আইনি প্রবলেম ছিলই, বুলুরাণির কর্তব্যপরায়ণতার সাইড এফেক্ট। তা সেই অলিভিয়া আপনাদের বুলুর বাপিকে নিয়ে গিয়ে বুলুম্যাডামের বসকে গিয়ে বলতেই কেস খাপে খাপ..’

    ‘পঞ্চুর বাপ?’

    ‘একদম।’

    ‘কিন্তু, ইয়ে সেই অলিভিয়া আর রজত তাদের কি হলো?’

    ‘তাতে আপনার কি মশাই? তারা তো বোধহয় গতমাসে কালীঘাটে গোপনে বিয়েও করেছে। মেয়েটার বাবা নাকি হেব্বি খরুস মাল, তাই আর দেরি করেনি।। এই বুলুর বিয়েটা হয়ে গেলেই বাড়িতে…… এ কি, এ কি, ও কাকু, কি হলো? অমন এলিয়ে পড়লেন কেন? এই দ্যাখো, কি ঝামেলা…আরে উঠুন…কি বিপদ…এ তো মহা জ্বালা হলো।দেখছি…’।

    ‘না বাবা থাক। কাউকে ডেকো না। শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে বুইলে। হঠাৎ করে মাথাটা….ইয়ে, মানে তুমি ঠিক বলছো ওরা বিয়ে করেছে?’

    ‘আলবাত। আরে বিয়ে না করে উপায় ছিল নাকি? অলিভিয়া যে দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট! এরপরে তো আর না প্রকাশ করে উপায় নেই। আর ওদের কারোরই ইচ্ছা নয় অ্যাবর্শন করানোর। অলিভিয়ার তো শুনলুম খুব ইচ্ছে, ওর বাবা আর ওর বাচ্চাকে নিয়ে একসঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে স্টেটাস দেবে, ‘হ্যাপি ফ্যামিলি, লভ উইনস ওভার প্রেজুডিসেস’…. আরে আরে…ফের কি হলো? ও মশাই? আবার এলিয়ে পড়লেন কেন? বলি আপনার বাড়ির কাউকে ডাকি? অসুস্থ বোধ হচ্ছে? বমি বমি পাচ্ছে? পটি পাচ্ছে? বাথরুমে যাবেন?’

    ‘ঠিক আছি বাবা, ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। শুধু প্রেশারটা একটু…’

    ‘বলি ও জগবন্ধু, এখানে কি করছোটা কি বসে বসে? বলি বুলু কি একা আমার মেয়ে? তোমাদের মেয়ে নয়? তোমরা হলে গিয়ে পাড়াপড়শি, তোমরা এখানে বসলে কি করে চলবে ভাই? একটু গিয়ে বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করো! তোমরা হলে গিয়ে আমার নিজের লোক…আরে দেখো দেখো, বাবাজীবনও এখানে যে। বলি এর সঙ্গেই আলাপ করছিলে বুঝি? তা ভালো, তা ভালো। বলি শুনেছো তো বাবাজীবনের কীর্তিকাহিনী? ‘

    ‘ইয়ে, আমি চলি কাকু। অভিলাষ বোধহয় একা খুব বোর হচ্ছে।’

    ‘ আরে দাঁড়াও বাপু। ওহে জগবন্ধু, দেখে নাও হে, একেবারে মা সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপুত্র। মাধ্যমিকে ফোর্থ, উচ্চমাধ্যমিকে সেকেণ্ড। তারপর আই আই টি দিয়ে এখন… এখন যেন কোথায় লেকচারারশিপ করছো বাবা? ম্যাসাচুসেটস না বোস্টন?’

    ‘ইয়ে বোস্টন। আমি যাই কাকু, নিচে বোধহয় অভিলাষ খুব… ‘

    ‘ আরে জামাই এখন তার শালিদের নিয়ে বিজি, তুমি ব্যস্ত হয়ো না বাবা। বলি হিরের টুকরো ছেলে হে জগবন্ধু। জগদীশচন্দ্র স্কলার, দেশ পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে কয়েকটা, আর তার ওপর ছেলে গিটারও বাজায় ভারি চমৎকার। সব মিলিয়ে হীরের টুকরো ছেলে হে। এমন ছেলের সঙ্গে আলাপ করাও গৌরবের কথা।’

    ‘সে কি? তা ভায়া কিন্তু নিজে থেকে কিছুই জানায়নি! এতক্ষণ তো অনেক কথাই হলো… ‘

    ‘বাহ বাহ, নামটা মনে রেখো জগ, এ ছেলে একদিন নোবেল পাবে। তুমিও বলতে পারবে যে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক রজতশুভ্র মণ্ডলকে তুমি ভালো করেই চেনো। এ কি? পালাচ্ছো কেন? ওকি, চললে কোথায়? ও বাবা রজত..বলি যাও কই? কথাটা শোনো…

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকাউরীবুড়ির মন্দির – অভীক সরকার
    Next Article এবং ইনকুইজিশন – অভীক সরকার

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }