Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এবং মার্কেট ভিজিট – অভীক সরকার

    লেখক এক পাতা গল্প376 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দাম্পত্য

    গত মাস ছয়েক ধরে লেকটাউন এলাকায় কোন কাক বা চিল দেখা যাচ্ছে না।

    ব্যাপারটা প্রথমে মাস তিনেক আগে, এক ছুটির দিনে, খেয়াল করেন সুরেশচন্দ্র আগরওয়াল। শঙ্কিত স্বরে গিন্নীকে ডেকে বলেন, ‘ডাভড়ি, লারল তিন হফতা হুঁ কোঈ কাগলোকো নি দিখিও’। জবাবে গিয়ারসি দেবি অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে তিনতলার ফ্ল্যাটের দিকে দেখিয়ে দেন। নতুন আসা বংগালি মোটেয়ার-লুগাই দুটিই যে এই অনর্থের কারণ, সেটাও জানাতে কসুর করেন না।

    সুরেশ্চন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্রসওয়ার্ড পাজল করতে বসেন।

    সুজন আর স্নিগ্ধার বিয়েটা হয়েছিল খুব ধুমধাম করেই। দুপক্ষের জ্যোতিষীরাই ঘাড় নেড়ে রায় দিয়েছিলেন যে এই বিয়ে রাজযোটক হতে বাধ্য। স্নিগ্ধার বাপের বাড়ি বলতে গেলে বেশ বড়লোক, দেওয়া-থোওয়াতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন নি। মোটমাট দুজনের সংসার সুখের করে তুলতে কোনও পক্ষের চেষ্টাতেই কোন ত্রুটি ছিলো না।

    কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো বিধি শুধু বামই নয়, পুরো নন্দীগ্রামের সিপিএম।

    প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট বোঝা গেছিলো যে এই বিয়ের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার। তেল এবং বেগুন, আদা এবং কাঁচকলা, সাপ এবং নেউল, এরা বরং একে ওপরের প্রতি অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল। নাইট বালবের রঙ থেকে শুরু করে পর্দার ডিজাইন, ননদের ছেলের স্কুলের খরচ দেওয়া থেকে রাত জেগে কোপা ফুটবল ম্যাচ দেখা, আগ্নেয়গিরির পারদ দিনে দিনে ক্রমেই উর্ধমুখী হয়ে উঠছিল।

    সবাই আশঙ্কিত হয়ে ফাইনাল শো ডাউনের জন্যে অপেক্ষা করছিলই। তবে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হল না। সবার সম্মিলিত আশঙ্কাকে সম্মান জানিয়ে বিয়ের মাস ছয়েক বাদেই সেই ডি ডে সগৌরবে উপস্থিত!

    সেদিন ছিল স্নিগ্ধার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুপমের বিয়ে। বিয়ে বউভাত মিলিয়ে ছবি ভিডিও তোলা হয়েছিল কম নয়। সেসব সেভ করার জন্য খুব সম্ভবত বাধ্য হয়েই স্নিগ্ধা সুজনের হার্ড ড্রাইভ থেকে এগারো বছর ধরে জমানো সাড়ে সাতশ জিবি র মুভি কালেকশন ( সানি লিওনি থেকে সিটিজেন কেন, অ্যানিমেশন মুভিজের পুরো সেট) ডিলিট করে দেয়।

    জবাবে সুজন বিশেষ কিছু করেনি। শুধু স্নিগ্ধার দুটো দামি বেনারসি পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানি লছমনকে কেটে লুঙ্গি করে পরার জন্য দিয়ে আসে।

    এর পরে সংসার করা সত্যিই ভারি মুশকিল। সেইদিনই স্নিগ্ধা বাপের বাড়ি চলে আসে। আর মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে সুজনের বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিলো না।

    কিন্তু মাঝখান থেকে বাধ সাধলেন দুই মা। স্নিগ্ধার মা যতই হাপুস নয়নে বলুন,’মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি দিদি,ক্ষমা করে দিন’, সুজনের মা ততই বিব্রত হয়ে বলতে থাকেন ‘আরে না না, বৌমা ঠিক বুঝতে পারেনি, বাচ্চা মেয়ে তো। ওটা কোন ব্যাপারই না। আর আমার ছেলেরও বাঁদুরে বুদ্ধি দেখুন, অমন দামি শাড়ি তুই লুঙ্গি করে পরতে বলে এলি?’

    এইসব পর্ব পেরিয়ে, ম্যারেজ কাউন্সেলরের পরামর্শ মেনে দুজনকে ধরেবেঁধে তুলে দেওয়া হল জগন্নাথ এক্সপ্রেসে। দুটো দিন ওরা একত্তর কোথাও নিরিবিলিতে কাটিয়ে এলে কিছু হলেও হতে পারে এই আশায়।

    ট্রেন ছাড়তেই স্নিগ্ধা সুজনের উল্টোদিকে এসে বসল। প্রথম থেকেই এই ”দুদিন গিয়ে কোথাও ঘুরে আয় না” ন্যাকামিটায় ওর গা জ্বলছিল। এইভাবে বিয়ে বাঁচিয়ে এই হরিবল লোকটার সংগে থাকতে হবে? জঘন্য। ইরিটেটিং।

    বিরক্তিসহ ও তাকিয়েছিল বাইরের দিকেই। সুজন একটা ছ’শ এম.এল স্প্রাইটের বোতলে আধাআধি ভদকা আর স্প্রাইট মিশিয়ে এনেছিল। সেটাই অল্প চুমুক দিতে দিতে কাঁটা সিরিজ পড়ছে এমন সময় পাশের কামরা থেকে এক মধ্যবয়স্ক দম্পতি সবেগে এসে ওদের পাশে বডি ফেললেন।

    দুজনের মধ্যে যিনি মহিলা, সেই ফর্সা, পৃথুলা এবং পাঁচ ফুট উচ্চতার ষাট ছুঁইঁছুঁই সুন্দরী গিন্নীটি স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন ‘কিচু মনে করেন নি তো?’

    সঙ্গী ষাটোর্ধ ভদ্রলোকটি গাত্রবর্ণে ঘোরকৃষ্ণ। দোহারা চেহারার মানুষটি উচ্চতায় ছফুটের সামান্য বেশীই হবেন। তিনি রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে কাঁচাপাকা গোঁফের ডগা নাচিয়ে বললেন, ‘মনে করনের ত কিসুই দেহি না। আমরা হইলাম গিয়া বোনাফায়েড প্যাসেনযার। আমাগো সীট পাইয়া বইয়া পরসি। মনে করনের আসেডা কি হেতে?’

    মহিলা একবার শ্যেনদৃষ্টিতে ভদ্রলোককে মেপে নেন। তারপরে মধুমাখা স্বরে কিঞ্চিৎ লঙ্কার ঝাঁজ মিশিয়ে বলে ওঠেন ‘ওইভাবে হুড়যুদ্দ করতে করতে কারও গায়ের ওপর এসে পড়লে সরি বলতে হয়। তোমাকে ছোটবেলায় তোমার মা বাবা শেকায় নি?’

    ‘হে হে, ওইরকম ফুডবল মার্কা বডি হইলে ত গরাইয়া যাইবই। উনি সবই বোযসেন। তোমারে আর কওন লাগবো না’।

    বলেই ভদ্রলোক গিন্নির দিকে দৃকপাত না করে সুজনের পাশে বসে চোখ টিপে জিজ্ঞাসা করেন ‘কি খাইতাসেন? বাকার্ডি না স্মারনফ? হে হে। আমিও লইয়া আইসি, পেপসি দিয়া ওল্ড মঙ্ক , বোযলেন নি?’

    ভদ্রমহিলা অত্যন্ত স্থির গলায় বলেন ‘নিজের গুনপনার পরিচয় দেবার আগে লোকে অন্তত নিজের নামটুকুন বলে। ওনার নাম জিগ্যেস করেচ? নাকি উটেই আগে ছোঁকছোঁক, ককন খুলে বসবে। আর পারিনা বাপু’।

    ভদ্রলোক হঠাত খুব গম্ভীর হয়ে রুমাল পকেটে ঢুকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলেন’ মীট মিস্টার প্রশান ভট্টারিয়া। এক্স চিফ প্রোডাকশন ম্যানেযার অফ ভারত মেশিনারি। ইঞ্জিনিয়ার ফ্রম শিবপুর বি ই কলেয। থার্টি ফাইভ ইয়ার্স অফ আনপ্রিসিডেন্টেড এক্সাম্পল অফ…..’

    ‘ওফফ, এই সুরু হল বুড়োর। এই ছিলুম, ওই ছিলুম। অমুক সায়েব আমার ইঞ্জিরি দেকে এই বলেচিলো, ওমুক কনফারেনে ওই পেয়েচিলুম। বাঙাল বিয়ে করে যে কি গোকখুরি করেচি মা যে কি বলি। একটা সাট্টিপিকেটের জন্যে এমন হাবাতে মার্কা হা পিত্যেশ কাউকে করতে দেকিনি বাপু’

    ‘বলি বোঝবা কি কইর‌্যাব? তোমাগো ফেমিলিতে ল্যাখাপড়ার চল আসে নাকি কিসু? বউবাযারে দুইখান সোনার দোকান দুইডা বাদ দিয়া কি আসে কও দেহি? ভাইগুলা ত এক একডা খাডাশ। পয়সার গরমে ত্যাল ম্যাকম্যাক করে।’

    ‘আহাহা…. ঢং দেকে বাঁচিনে বাপু। কি দেমাক কি দেমাক। বলি আমাদের ত নাকি কিচুই ছিলো না। তা কি দেকে নেংচে নেংচে এলে হ্যাংলার মতন?’

    ‘দ্যাহ রমা, দ্যাট হ্যাপেনড বিকজ অফ আওয়ার প্যারেন্টস। বুল্টির বিয়ার গয়না গড়াইবার লগে আমার ছুডকাকা আমারে লইয়া তোমাগো দোকানে গেসিল। তা আমার রূপ (হালকা হাসি) দেইখ্যা আর ডিগ্রীখান শুইন্যা তোমার বাবার হ্যাসরপ্যাসর দেইখ্যাই তো হ্যা হ্যা হ্যা…..’

    ‘ইসস ম্যাগো, আবার সেই বিচ্চিরি হাসিটা হাসচে দ্যাকো’

    এই পর্যায়ে সুজন প্রায় হামলে পড়ে। হাত বাড়িয়ে বলে ‘সুজন বসু, বাড়ি লেকটাউন। এরিয়া সেলস ম্যানেজার অফ হাইজিন অ্যান্ড কেয়ার কম্পানি। মীট মাই ওয়াইফ স্নিগ্ধা, ফ্রম যাদভপুর, মাস্টার্স ইন কম্প্যারেটিভ লিটারেচার। আর আমাদের প্লিজ তুমি করে বলুন। আপনারা বয়সে অনেক বড়’।

    বৃদ্ধ উল্লসিত হয়ে ওঠেন ‘বাহ বাহ, যাদবপুরের মাইয়া, মাস্টার্স করস, হ্যা হ্যা,… দেখলা গিন্নি, বাঙালগুলা কেমুন আউগাইয়া যাইতাসে’।

    ‘তুমি থামো বাপু। তা বাছা, তোমাদের দেশগাঁ কোতায়? লেকটাউনতো হালে হয়েচে, জত্ত মেড়োগুলো আসর বসিয়েচে ওখানে। তা বাপু বাপ পিতেমোর ভিটেটি কোতায়?’

    সুজন খুব কুণ্ঠিত স্বরে বলে ‘বাঁকুড়া,’ শুনেই প্রৌঢ়া একগাল হাসি হেসে বলেন ‘সে তো আমাদেরও গাঁ তো ওদিকেই। বলি গাঁয়ের নামখানি কিচু জানা আচে?’

    সুজনের গলা শুকিয়ে যায়। ওরা বাঁকুড়ার বাসিন্দা নামেই, গত পঞ্চাশ বছর ধরে ওরা কলকাতার লোক। গ্রামের নামটা মুখস্থই ছিলো, কিন্তু এঁদের দেখে মাথাটা পুরো ঘেঁটে গেছে, নামটা কিছুতেই মনে আসছে না।

    ওদিকে ভদ্রলোক দিব্যি স্নিগ্ধার সংগে আলাপ জমিয়ে নিয়েছে ‘দ্যাশ যানি কোথায় কইলা ? বিক্রমপুর? হ্যা হ্যা, আমাগো ইয়ে ত কাসেই, সাভার। আহা হা হা। কত্ত যমি নদি পুহইর আসিল আমাগো। সে যদি একবার যাইতাম…..’

    এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে….

    ভদ্রমহিলা বীরদর্পে এদিকে ফেরেন, মিষ্টিস্বরে হুল ফুটিয়ে বলেন ‘বলি এইসপ গুল ঝেড়ে আর কদ্দিন চলবে বল দিকিন? জমি পুকুর ওবদি না হয় বুঝলুম, বলি নদী কি করে কারও সম্পত্তি হয় নাকি বাপু? আর সব্বারই তো শুনি ওদিকে নাকি গাদা গাদা জমিদারি ছিল। বলি বাংলাদেশে এত জমি আচে? নাকি ওদিকে এক ডেড় কাঠাতেই জমিদারি পাওয়া জেত? কি জানি বাপু, ইদিকে তো দু দশ খান গাঁ না হলে আমরা জমিদার বলে মানতেই চাইতুমনি। বলে সুজনের দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে নিঃশব্দে হাসতে থাকেন।

    বৃদ্ধ ঈষৎ গরম হয়ে বলেন, ‘দ্যাখো, দ্যাশ তুইল্যা কথা কইবা না। জানো আমরা কত কষ্ট কইর‌্যাঈ…’

    কথা শেষ হতে দেন না বৃদ্ধা, কলকল করে ওঠেন ‘ওনার কতা একবর্ণ বিশ্বেস কোরনি বাপু। বুড়ো জন্মেচে এদিকে, সাতচল্লিশের পরেই। ওপার থেকে এদেসে এসেচিলেন আমার শ্বশুরমসাই, ছিলেন ইসকুল মাসটার। আহা, অমন লোক আর হবে না বাবা, সাক্ষাৎ ঈশ্বরতুল্য মানুষ। আর আমার ছিলেন আমার শাশুড়ি, সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণা। যা কষ্ট ওনারা করেচেন। এনারা তো ওই যা হোক করে ডিগ্রী বাগিয়ে এক একজন হনু হয়েচেন, সে উনি, আমার দ্যাওর, ননদ সব একেকজন সেয়ানা নাম্বার ওয়ান….’

    -‘দ্যাহো রমা, এইসব ইন্টারনাল কথা এদিক ওদিক কওন ঠিক না।’

    ‘আহা হা হা হা। মুচ্ছো যাই আর কি। নকশা দেকে বাঁচিনে। নেহাৎ আমার সহজ সরল বাপ ডিগ্রী দেকে…’

    ‘হ্যা হ্যা হ্যা। হেইডাই তো হইল কথা। বোযলা মা, ডিগ্রী। হ্যান্ডসাম তো সিলামই, হে হে হে (‘মরণ, বুড়োর আদিক্যেতা দ্যাকো’) তারপর বোযলা কিনা, এয়াগো ফ্যামিলিতে তো ল্যাখাপড়ার তেমুন চল নাই (‘মাজে মাজে ইচ্চে করে বুড়োর মুকে নুড়ো জ্বেলে দিই’), তা শ্বশুরমশয় আমার হাত ধইর‌্যা কইলেন, ”দ্যাহো প্রশান্ত, আমার মাইয়াডা তে মানুষ হয় নাই”…

    ‘দ্যাকো, অনেক্কন ধরে সুনচি এসব। এরপর কিন্তু টিটি ডেকে টেরেন থেকে নামিয়ে দেবো, সত্যি বলচি’।

    এতক্ষণে স্নিগ্ধা এদের খুনসুটি উপভোগ করতে শুরু করেছিল। ওর মনের গভীরে জমে থাকা মালিন্য কেটে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। এই বুড়োবুড়ির কথাকাটাকাটির গভীরে কোথাও অন্তঃসলিলা ফল্গুর মত একটা ভালোবাসার চোরাটানও আছে। হয়তো বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না।

    সুজন জিজ্ঞেস করে ‘আপনারা কি কোনও কাজে যাচ্ছেন ? নাকি এমনি, আমাদেরই মতন ছুটি কাটাতে?’

    ছুটি কাটানোর কথা শুনে স্নিগ্ধা একবার ওর দিকে অপাঙ্গে তাকিয়ে নেয়। কিছু বলে না।

    ‘সে আমরা বচ্ছরে দুইবার শ্রীক্ষেত্রে আসি বাপু। বাবা জগন্নাথের পেসাদ নিয়ে ঘরে ফিরি’

    -‘এইগুলা এক একখান হোক্স, বোযলা। এইসব পূযাফুযা সব ফালতু। লোক ঠকানের কায়দা আর কি। ছুডবেলা থেইক্যা দেখতাসি….’

    -‘দেখো, ঠাকুর দেবতা নিয়ে বাজে কতা একদম বলবে না। বামুনের ছেলে, সান্ধ্যাহ্নিক টুকু করো না, বাসি কাপড়ে খেতে বস, পইতে দিয়ে মশারির দড়ি করেচ। কি ভাবচো, এসব উনি দেকেন না?’

    -‘তা আমারডা ছাড়ান দাও। তোমারটা তো দ্যাহেন। তা হেইডা দিয়া রুপুর ভালো কিছু হইলো নাকি?’

    হঠাৎ দুজনেই চুপ করে যান। ভদ্রমহিলা মাথা নিচু করে বসে থাকেন। ট্রেন তখন খড়গপুর পৌঁছেছে। ভদ্রলোক শশব্যস্ত হয়ে ‘খাওনের লগে কিসু পাওয়া যায় কি না দেহি’ বলে দরজার দিকে এগিয়ে যান।

    স্নিগ্ধা এসে সুজনের পাশে এসে বসে, কেন জানি না গা’টা একটু শিরশির করছিলো ওর। ইচ্ছে করছিলো এদিকে এসে বসতে।

    ট্রেন খড়গপুর ছাড়ালে প্রশান্তবাবু এক চাঙারি কচুরি আলুরদম আর চারটে ডিমসিদ্ধ নিয়ে ফিরে আসেন। প্রসন্ন মুখে বলে ‘খাইয়া দ্যাহ। হে হে হে। অম্রেতো, বোযলা, অম্রেতো। লিপিড প্রোফাইলের কথাডা ভুইল্যা যাও।’

    সুজন মৃদু আপত্তি করে। ‘আহা আপনি আবার কেন এত কষ্ট করে….’

    ভদ্রলোক দাবড়ে দেন, ‘আরে খাইয়া দ্যাহো। বড় বড় শেফেদের এয়াদের কাস থেইক্যা কসুরি বানানো শেখন লাগে।’

    সবাই সেই মুহূর্তে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে চাঙারির ওপর।

    স্নিগ্ধা আর সুজন একই চাঙারি থেকে কচুরি খেতে থাকে। হাতে হাত ঠেকে যায়, কাঁধে কাঁধ, আঙুলে আঙুল।

    ওদিকে খেতে খেতে প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা একবার আড়চোখে কর্তাটির দিকে তাকিয়ে নেন,

    -‘তেলেভাজা আর ডিম খাচ্চ খাও। কিন্তু বেসি বাড়াবাড়ি যদি দেকিচি, তক্ষুনি কিন্তু সরিৎ ডাকতারকে ডেকে সুদু গলা ভাত খাওয়াবো, বলে রাকলুম’।

    -‘হেইডাই দিও, সংগে যদি এক চামচ মরিচ বাটা, কসুর লতির তরকারি আর গিমা শাগের বড়া ভাইজ্যা দাও গিন্নি, দুইখান চুমা এহনই দিতে পারি হে হে হে’।

    বৃদ্ধা মুহূর্তে রাঙিয়ে ওঠেন, ‘নোলা দ্যাকো বুড়োর। আর কতাবাত্রার কি ছিরি। মুকের কোন আড় নেই ‘।

    সুজন হেসে ফ্যালে। স্নিগ্ধা সামান্য অপ্রস্তুত হয়। তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে ওঠে ‘ওঁর বুঝি ওসব খাওয়া বারণ?’

    খানিকক্ষণ চুপ থেকে মুখ খোলেন বৃদ্ধা, ‘তিন তিন বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গ্যাচে ওনার। শেষ বার তো যমের মুক থেকে সরিৎ ডাক্তার একাই টেনে এনেচিল। টানা একমাস হাসপাতালেই সংসার গুচিয়ে বসেছিলুম,’ বলেই হাত জোড় করে প্রণাম ঠোকেন উনি, ভগবান না ডাক্তারবাবু, কার উদ্দেশ্যে সেটা বোঝা যায় না অবশ্য।

    তবে তার পরেই তাঁর গলায় আগুন ঝরে পড়ে,’তাও কি বুড়োর হুঁস বলে আচে কিচু? ছাইপাঁশ গেলা কি কিচু কমতি আচে? আবার অমন দেবতুল্য ডাক্তারকে বলে কি না, ”রেগুলার কাস্টমারদের কিছু ডিস্কাউন দেবেন না?” কী বলবো বাছা, কিচুই না পেয়ে শেষে একমুঠো নজেন আর ডাক্তারবাবুর একটা নতুন পেস্কিপশন লেকার খাতা তুলে এনেচেন উনি, বচ্ছরকার বাজারের হিসেব রাকার জন্যে। কি বেয়াক্কেলে লোক ভাই কি বলবো, হাড় মাস কালি করে দিলে এক্কেবারে’

    -‘হ, নিযের কথাডা কও। হাডু দুইখান তো পুরাই ইন্ডিয়ার ইকনমি, খালি ন্যাতাইয়া ন্যাতাইয়া পড়ে। ডাইন চক্ষুখান তো গ্যাসেই। আমি কই কি একখান কালো কাপড় বাইন্ধা রাখো, পুরাই পাইরেট লাগবো’অনে, পাইরেট অব ক্যারিবিয়ার মত পাইরেট অফ বাগবাজারিয়া। পার্ফেক্ট অ্যাটায়ার ফর ইউ। হে হে হে হে। বোযলা মা, আমারে ভালোমানুষ দেইখ্যা একখান ডিফেক্টিভ বউ হ্যান্ডওভার কইর‌্যা। দিসিল..’

    ভদ্রমহিলা তেড়েফুঁড়ে ওঠেন। ‘এই নিয়েই তো চল্লিশটা বচ্ছর তোমাদের বাঙাল ফ্যামিলির সেবাযত্ন করে গেলুম। বলি তোমার ননদ দ্যাওরদের মানুষ করলো কে? কোন খেয়ালটা রাকতে শুনি? নিজের বোনের বিয়ের দিন বরের ছোটমামাকে বলনি ‘বিয়া ত দিতাসেন, পোলায় গবর্মেন্টের অফিসার, চুরিচামারির অভ্যেস নাই তো?’, বলি এসব ঝামেলা কে সামলায়? আমার দ্যাওরের আশি বছরের বিধবা শাশুড়ি ঠাকুমাকে তুমি সর্দি হয়েচে সুনে গরম জলে রাম না হুইস্কি গুলে খাওয়াওনি? ছি ছি ছি, কি কেলেঙ্কারি’।

    ভদ্রলোক একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়েন, ‘আহা, অর লগেদুইখান তুলসিপাতাও ত দিসিলাম গ্লাসের উপর’।

    -‘দ্যাকো, একদম মাতা গরম করাবে না।’

    -‘হে হে গিন্নি, রাগ কর ক্যান। তুমি ছিলা বইল্যাই ত বাইচ্যা আসি। কই কি তিরিশ বচ্ছর তো হইয়াই গ্যালো। ন্যাক্সট সাত জনমের লাইগ্যা তো উপরওয়ালার কাসে তোমার নামখান লেইখ্যা ডিমান্ড ইন্ডেন্ট যমা দিয়াই রাখসি। এহন দ্যাখার কে আগে উপরে গিয়া ইন্ডেন্টখান ফাইল করে। হ্যা হ্যা হ্যা। মনে হয় আমার চান্সডাই বেশি। কি কও?’

    -‘যত্তসব অলুক্ষুনে কতা’

    স্নিগ্ধা সুজনের পাশে ঘনিয়ে আসে। ‘আপনাদের ছেলে মেয়ে?’

    -‘তার কথা কইও না মা। কুলাঙ্গার। একখান শিক্ষিত হামবাগ’

    -‘দ্যাকো, যেকানে সেকানে নিন্দে করবে না রুপুর। হিরের টুকরো ছেলে আমার’।

    -‘করুম, হাযার বার করুম। হিরা নয়, কয়লা।’

    সুজন খুব ইতস্তত ভাবে জিজ্ঞেস করে ‘কি করেন উনি’।

    বৃদ্ধার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে’ ও তো খুউপ ভালো ছেলে বাবা। খড়গপুর আই আই টি থেকে খুব ভালো পাসটাস করে এখন অ্যামেরিকা তে আচে। বুজলে, ওকানেই মাস্টার করে, ডাক্তার হয়ে রিসাচ করে’।

    -‘ট্রেইটর। কুইসলিং। লাস্ট টেন ইয়ার্স দ্যাশে আয় নাই। মায়-বাপেরে দ্যাহনের কুনো ইসস্যাই নাই। হি ইস টু বিযি টু টক টু হিস পেরেন্টস ইভেন ওয়ান্স ইন আ মান্থ। এক বোচা নাক জাপানিরে বিয়া কইর‌্যা বাসসা কাসসা লইয়া ভালই আসে। আমাগো কথা মনেই পড়ে না।’

    -‘আহা। ওদের কত কাজ বল দিকিন। রাতদিন খাটাখাটনি…’

    -‘তাহইলে কালও ”অরে কতদিন দেহিনা ”বইল্যা কান্দতাসিলা ক্যান?’

    বৃদ্ধা চুপ করে যান।

    বয়স্ক লোকটি উঠে ট্রাভেল ব্যাগ থেকে একটা চাদর বার করে স্ত্রীর গায়ে জড়িয়ে দেন। ‘ঠান্ডা লাগাইয়ো না’।

    স্নিগ্ধা কোন কথা খুঁজে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে ‘ওনার বুঝি ঠান্ডার ধাত?’

    ‘হ, তবে কিনা আমার অ্যাকশনটা হইল গিয়া পুরাই সেল্ফিশ, বোঝলা না? বুড়ি কাল মইর‌্যাধ গ্যালে এই বুড়াডারে দেখবো কেডা? হ্যা হ্যা হ্যা’

    বৃদ্ধা কপট রাগত দৃষ্টিতে তাকান। তারপর কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করেন ‘ওসুদের ব্যাগটা কই? এখন তোমার দুটো ট্যাবলেট খাওয়ার কতা না?’

    -‘রাখসিলা কই?’

    -‘কেন? তোমার ওই নীল হাতব্যাগটার মদ্দ্যে। সেটা কোতায়?’

    বৃদ্ধ উদাস মুখে বসে থাকেন।

    -‘কতা কানে জাচ্চে না?’

    -‘যাইব কই? হোটেলে গিয়া খুইজ্যা দেখুম’অনে’।

    -‘পথে এসো। ব্যাগটাতো পাসের বারির বান্টিকে ফুটবল খেলার জন্যে দিয়ে এসচিলে। ভাগ্যিস ওর মা এসে নিয়ে গেসলো। এই নাও। এখন মুখটা খোল দিকিন। এই যে, হ্যাঁ……’

    পরম মমতায় উনি চল্লিশ বছরের সুখ দুঃখের সাথী ভদ্রলোকটির মুখে ট্যাবলেট দিয়ে জল ঢেলে দিতে থাকেন।

    সেইদিন রাতে, সুজনের বুকে আঙুল বোলাতে বোলাতে স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করে ‘বিয়ে করলেই খুব ঝগড়া হয়, না?’

    সুজন আধো ঘুমে বলে ‘হুঁ’।

    -‘ঝগড়া করাটা কি খুব ইম্পর্ট্যান্ট?’

    -‘হ্যাঁ’

    -‘হ্যাঁ?’

    -‘হ্যাঁ। তবে কি না আরও ইম্পর্ট্যান্ট হল ঝগড়া করতে করতে এক সঙ্গে বুড়ো হওয়াটা।’

    স্নিগ্ধা হয়ত আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাত করে সুজনের ঠোঁট ওর ঠোঁটের ওপর নেমে আসায় আর কিছুই বলে উঠতে পারে না ও।

    তখন অবশ্য বেশি কিছু বলার কথা ওর মনেও ছিলো না।

    আর মনে থাকলেও তখন তাতে কিছু এসে যায় না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকাউরীবুড়ির মন্দির – অভীক সরকার
    Next Article এবং ইনকুইজিশন – অভীক সরকার

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }