Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এবং মার্কেট ভিজিট – অভীক সরকার

    লেখক এক পাতা গল্প376 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    আপিসের গল্প

    নতুন যে অফিসে জয়েন করেছি, সে মশাই চমৎকার জায়গা। সুন্দর সাজানো অফিস, ইয়্যাত্তোবড় একটা কেবিন দিয়েছে আমাকে, তাতে জনা দুয়েক লোক বক্সিং করতে পারে, চাইলে ভারতনাট্যমও নাচতে পারে, কুচিপুড়ি নাচলেই বা আটকাচ্ছে কে? এমনকি আমার দৃঢ় বিশ্বাস চেপেচুপে বসলে শীতকালে একটা পিকনিক অবধি করে ফেলা যায়! লোকজনও দেখলাম উদার, মহৎ, সাহসী, সচ্চরিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি আর কি!

    আমাদের বহুতর ডিভিশনের মধ্যে একটি ডিভিশন হলো ওয়াটার পিউরিফায়ার, শর্টে ওয়াপু। তার যিনি কাস্টমার কেয়ার দেখেন তিনিও একই অফিসে বসেন। অত্যন্ত সরল, নিয়মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী এই ভদ্রলোকের একটিই বৈশিষ্ট্য, এঁর গলার আওয়াজটি জবরদস্ত। থেকে থেকেই বাজখাঁই গলার আওয়াজে আমরা চমকে চমকে উঠি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা ভদ্রলোক নিজের গিন্নিকে প্রেম নিবেদন করলেও সেটা ওঁদের পাড়ার রাস্তার মোড় থেকে শোনা যায়। দশানন রাবণ খাণ্ডার রাগে রৌদ্ররসের গান গাইলে এইরকমই শোনাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

    মুশকিল হয় ভদ্রলোকের হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে। মাঝেমধ্যে আমরা চমকিত হয়ে উঠি, কখনও কখনও চিন্তিত। রাষ্ট্রভাষার এতটা দুর্গতি মেনে নেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে হৃদয়ে সংশয়াকুল প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকে।

    এই তো সেদিন শুনি খুবই উত্তেজিত হয়ে হেড অফিসে কার সঙ্গে বার্তালাপ চালাচ্ছেন, ‘ব্যাটা বহুত বদমাশ হ্যায়। আপ অ্যায়সে অ্যায়সে উস ফাইলকো নেহি ছোড়নে কা, উসকা বগল মে রিমার্কস মারিয়ে, মানে বাজে রিমার্কস মারিয়ে। আরে মারিয়ে না, বগল মে খুব বাজে বাজে রিমার্কস মারিয়ে….’ এইরকমভাবে খানিকক্ষণ চলার পর উঠে দাঁড়িয়ে বলতে বাধ্য হলাম, ‘আরে দাদা, বগলে রিমার্কস নয়, ডিও মারতে বলুন, যা গরম!’

    কাল আবার শুনি কাকে বলছেন, ‘আরে আপ মদন স্ট্রিট যাইয়ে, কাম একদম হো যানেকা গ্যারান্টি হ্যায়। আরে মদন স্ট্রিট নেহি সমঝা, আরে মদন স্ট্রিট….’

    আমরা তো স্তম্ভিত! মিত্রদা দেহ রেখেছেন বলে তো শুনিনি! নাকি দিদি পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই না দিয়ে দাদার একবারে জীবিতাবস্থাতেই একপিস ”মদন ধরণী” উপহার দিলেন? আমাদের চিন্তাপর লোকজনকে প্রশ্নের মহাসিন্ধুতে নিমজ্জিত রেখে সারা অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই অমোঘ প্রশ্ন, ‘আরে মশাই মদন স্ট্রিট নেহি জানতা, কিস টাইপকা ট্যাক্স কন্সালটেন্ট হ্যায় আপ? আরে চাঁদনির কাছে মদন ষ্ট্রীট…..’

    কিয়ৎক্ষণ পরে সেই ব্যাসকূট সমাধান করেন কমার্শিয়াল অফিসারটি। উঠে গিয়ে সেই মদনপথাভিমুখী ভদ্রলোকের পিঠে হাত রেখে ছলছল চোখে জানান, ‘দাদা, আপনি শান্ত হোন, মদন নয়, ওটা ম্যাডান স্ট্রিট হবে!’

    তবে কাণ্ডটা ঘটলো সেদিন। মার্কেট সেরে অফিসে ঢুকে দেখি সারা অফিসে শ্মশানের স্তব্ধতা। শুধু এসির শব্দ, লোকজন হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে, আর তাদের পিঠটা ফুলে ফুলে উঠছে, হাসিতে না কান্নায় বোঝা যাচ্ছে না। শুধু একটাই গলা শোনা যাচ্ছে, আমাদের সুভদ্র সদালাপী কাস্টমার কেয়ারিং ভদ্রলোকটির। তিনি প্রগাঢ় অধ্যবসায়ের সঙ্গে কোনও মহিলা কাস্টমারকে বোঝাচ্ছেন, ‘আপকা একদম জল নেহি নিকল রাহা হ্যায় ম্যাডাম? আরে নিচেকা হ্যাণ্ডেল হাত লাগাকে টিপিয়ে না, টিপিয়ে। টিপতে টিপতেই আপকা পানি নিকলেগা!’

    কী ভাবছন এতেই শেষ? আজ্ঞে না। এই অফিসে নমুনা কম নেই। এই যেমন ধরুন বলাই। না না, ওর নাম বলাই নয়, জাস্ট ধরে নিতে বল্লুম। একটু আস্তে ধরবেন, এই যা।

    বলাই হচ্ছে, যাকে বলে আমাদের সকল কাজের কাজী।

    সব অফিসেই দেখবেন এমন একটি ছেলে থাকে যার কাজ ফাইফরমাশ খাটা। যেমন এই চট করে পান এনে দেওয়া, টাইমে টাইমে চা বা কফি খাওয়ানো, একটু জেরক্স করে আনা, ফাইলটা বড় সাহেবের ঘরে দিয়ে আসা..এই আর কি। পদমর্যাদায় পিয়নের থেকে একটু নীচে, এদের ইংরেজিতে বলে errand boy।

    একটু খেয়াল করলে আরও দেখবেন যে সচরাচর এরাই অফিসের সবচেয়ে কর্মঠ কর্মী হয়। এরা একদিন অফিসে না এলে ত্রাহি মধুসূদন রব ওঠে। প্রবীণ কেরানীটি প্রায়ই কাজে ভুল করতে থাকেন, নতুন এমবিএ করে আসা ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনিটি কাজ ছেড়ে সুন্দরী এইচ আর অফিসারের সঙ্গে হাওয়া খেতে গিয়ে হাওয়া হয়ে যায় আর রক্তচক্ষু বড়সাহেব হাতে মাথা কাটতে থাকেন।

    আমার এই সবব errand boys দের নিয়ে অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। আজ অবধি যে যে অফিসে চাকরি করেছি, দেখেছি যে এদের বুদ্ধি, স্মার্টনেস, বিনয়, কাজ করিয়ে নেওয়ার কৌশল কোন বড় ম্যানেজারের থেকে কম নয়। ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত জটিল কাজকর্ম অবধি নির্ভুল দক্ষতায় করতে দেখেছি, অথচ পড়াশোনা হয়তো এইট পাশ!

    ঠেকলাম এই অফিসে এসে!

    ছোকরার নাম, আগেই বলেছি, ধরে নিন বলাই। এমনিতে চটপটে ছেলে, অসুবিধা একটাই, কথাটা বড় আধোআধো বলে, প্রথমে বুঝতে কষ্ট হয়। মানে হয়তো জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ পাশের হোটেলে কি রান্না হয়েছে রে?’ উত্তর এলো, ‘মোতার তলকালি আল তিকেন ভত্তা’। এখন প্রাকৃত পৈঙ্গলে ”পুনবন্তা” কবি ওগগর ভত্তা খেয়ে ”কান্তা” কে ধন্য করেছিলেন। এ যুগে আমাকে মোতার ইয়ের সঙ্গে কিসের না কিসের ভত্তা খেতে হবে ভেবে তীব্র ঘৃণা ও শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ি। পরে বুঝতে পারি, বেচারির সাদা মনে কাদা নাই, মোচার তরকারি আর চিকেনের ভর্তাই তো খাওয়াতে চেয়েছে!

    বলাইবাবুর সময়জ্ঞান অসামান্য। একদিন হয়তো শখ করে একটু বিরিয়ানি খেয়েছি অফিসে। ভিজিটিং কার্ড দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে আয়েশ করে হয়তো বল্লুম, ‘বলাই, মিষ্টি পাতা দিয়ে, কিমাম দিয়ে এক খিলি জম্পেশ পান খাওয়া দিকি বাপধন।’ বাবু সন্ধ্যে ছ”টা নাগাদ এসে পানটা টেবিলে রেখে গ্যালগেলে হেস বলবেন, ‘কুব বালো পান থ্যার, গলিয়াহাত তেকে নিয়ে এলাম।’ এরপর প্রেমাশ্রু বিসর্জন করা ছাড়া আর কিই বা করার থাকে বলুন?

    আর শুধু সময়জ্ঞান কেন, ভদ্রলোকের কাণ্ডজ্ঞানও প্রায় প্রবাদপ্রতিম! মাঝেমধ্যেই ঘোর বিপদে পড়তে হয়।

    যেমন ধরুন উনি রোজ দুপুরে আমার কেবিনে ঢুকে অতি নম্রভদ্র ভাবে সুচিন্তিত প্রশ্ন পেশ করেন, ‘আজ ছোয়াবিনের তলকালি আল দিমেল দালনা হয়েথে। পোত্তর বলা কি বলবো?’

    (অস্যার্থ, আজ সোয়াবিনের তরকারি আর ডিমের ডালনা হয়েছে। প্রভু কি এর সঙ্গে পোস্তর বড়াও ইচ্ছা করেন?)।

    আমি কিছু একটা বলে টাকা দিয়ে দিই, দ্বিপ্রাহরিক ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয়ে যায়।

    মুশকিল হচ্ছে কখন কি জিজ্ঞাসা করা উচিৎ, সেটা সবসময় মহাপ্রভুর ঠিক খেয়াল থাকে না!

    গত মাসের মাঝামাঝি নাগাদ টিভিএস গ্রুপের এক অত্যন্ত উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদল আমার অফিসে দেখা করতে এসেছিলেন। ইস্ট রিজিওনে টিভিএস গ্রুপ ব্যবসা বাড়াচ্ছে, তারা আমাদের চায় সহযোগী হিসেবে। আমাদের হেড অফিস গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছেন, এখন রিজিওনাল লেভেলে চুক্তিপত্র সই সাবুদ হবে। প্রতিনিধিদলের দুজন বাঙালি একজন তামিল, এবং এই তামিল ভদ্রলোকই দেখলাম শুদ্ধ বাংলা বলেন, বিন্দুমাত্র ইংরেজির মিশেল নেই। আমাদের বোর্ডরুমে বসে মার্জিন স্ট্রাকচার, ইনফ্রা ডেভেলপমেন্ট, ডিস্ট্রিবিউশন ব্লু প্রিন্ট ইত্যাদি নিয়ে ঘনঘোর আলোচনা চলছে। এই সব মীটিং আসলে একধরণের স্নায়ুযুদ্ধ। দুপক্ষই চায় তাদের দিকে বেশি বেনিফিট টেনে নিতে। টেনশনের আবহাওয়া আর কাঠ কাঠ হাসিমুখে আলাপ চালানো লোকজনদের দেখে বোঝা যাবে না যে আসলে প্রত্যেকের দুহাতে রয়েছে দুটো করে খোলা অদৃশ্য তলোয়ার।

    এমন সময়ে দরজা খুলে শ্রীমান বলাইয়ের প্রবেশ। পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই গাম্ভীর্য সর্বাঙ্গে মেখে তার ঘোষণা, ‘কুমলো ফুল ভাজা, ইলিথের ধোল আর আলু পোত্ত হয়েছে। আপনি কী খাবেন?’

    এই ঋষিবাক্যে আমরা স্তম্ভিত! টিভিএসের রিজিওনাল হেড কথার খেই হারিয়ে আমতা আমতা করতে থাকেন। শুধু তামিল ভদ্রলোক জামার হাতা দিয়ে জিভের জলটা মুছে নিয়ে বললেন, ‘ইলিশের ঝোলটাই চলুক, না কী? আর, ইয়ে ইলিশের ডিমের বড়া হবে না?’

    সেইদিনই চুক্তি সই হয়, ইলিশ ভাজা খেতে খেতে।

    তবে গতকাল বলাই যা করেছে, তার তুলনা নেই!

    দিন দশেক হলো ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠেছি। সেই ইস্তক কিছু খেতে পারছি না, কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে, সারা মুখ তেতো। কাল বহুকষ্টে অফিসে এসেছি। টুকটাক কাজ কম্ম করছি, ঠিক দুক্কুরবেলা ভগ্নদূতের প্রবেশ, ‘আজকে হয়েথে তিকেন কছা আর লুটি….’, মেনুকার্ড আওড়াবার আগেই তাকে থামিয়ে দিই, ‘একটা শশা আরে একটা আপেল আনবি।’ ছোকরা খানিকক্ষণ হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আকর্ণবিস্তৃত হাসে, ‘একতা তিকেন কছা, তিনটে লুটি আর একটা আপেল আর একটা থথা?’

    দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে থাকি। অতঃপর শ্রীমান বলাইয়ের ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম হয়। ‘থিক আথে থ্যার,’ বলে চলে যেতে উদ্যত হয়েই আবার ফিরে আসে, ‘পান আনতে হবে থ্যার?’

    কপালের ঘাম মুছি। বটেই তো, একটা শশা আর একটা আপেল, এমন রাজসিক মধ্যাহ্নভোজের পর একটা পান না খেলে কি আর চলে? আপনারাই বলুন?

    ঘন্টাখানেক বাদে দেখি থালায় করে সুচারুভাবে একটা শশা আর আপেল কেটে এনেছে, এক কোণে একটু বিটনুন। দেখে খুশি না হয়ে পারি না, কে বলে বলাইয়ের বুদ্ধি নেই? শাবাশি টাবাশি দিয়ে খেতে যাবো, এমন সময়, যাহ…খাবো কি দিয়ে? ল্যাপটপে কাজ করতে করতে খাচ্ছি,খালি হাতে তো খেতে পারছি না এখন!

    ‘বলাই।’

    ‘থ্যার।’

    ‘তোর মাথায় বুদ্ধি কবে হবে বলবি?’

    ‘কেন থ্যার?’

    ‘বলি কি দিয়ে খাবো? একটা ফর্ক অন্তত দিয়ে যা। খেতে দিলে স্পুন, ফর্ক এসব দিতে হয়, সবই কি বলে দিতে হবে ভাই?’

    সে তো মা কালীর মতো ‘এ ম্মা, ন্যা ন্যা ন্যা’ করতে করতে দৌড়..কিছুক্ষণ বাদেই একটা স্পুন আর ফর্ক এনে হাজির।

    যাই হোক, কচমচ করে পিত্তিরক্ষা করে তো কাজেকম্মে মন দিলাম। প্রচুর ফোনাফুনি, ধমকধামক, মিষ্টিকথা ইত্যাদি শেষে যখন একটু ছাড়ান পেলাম, তখন দেখি সন্ধ্যে ছ’টা বাজে। কর্মচঞ্চল অফিসে। সবাই মন দিয়ে কাজে কম্মে ব্যস্ত। একটু এদিকওদিক হেঁটে দেখলাম শরীরটা টাটিয়ে গেছে। জল টল খেয়ে নিজের সীটে বসে মালুম হলো, পাচ্ছে প্রবল ক্ষিদে। স্বাভাবিক, দুপুরে প্রায় কিছুই খাইনি। অতএব অগতির গতি সেই….

    ‘বলাইইইই’

    ‘বলুন থ্যার।’

    ‘নিচ থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে আয় দেখি। শোন, বেশি করে কাঁচালঙ্কা আর বাদাম দিতে বলবি, মনে থাকে যেন। আর দেখিস তো, গরম চপ ভাজছে কি না। একটা আলুর চপ আর একটা বেগুনি নিবি।’ ইত্যাদি বলে প্রফুল্ল মনে যারা তখনও ব্যস্ত তাদের বিরক্ত করতে চলে যাই। অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার ভদ্রলোক নির্বিরোধী লোক, তার সঙ্গে কলকাতার ফ্ল্যাটের দাম নিয়ে খুবই চিত্তাকর্ষক আলোচনার পর এইচ আর এর কাছে যাই। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতিগতি, মোদীর বিদেশনীতি, মমতার মহরম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণ করে ব্যাপক বিনোদিত হয়ে সীটে ফিরে এসেছি, এসেই আমি স্তম্ভিত!

    টেবিলে সযত্নে সাজানো থালার ওপর শোভা পাচ্ছে একটি মুড়ির ঠোঙা এবং একটি চপ। পাশে ততোধিক যত্নে শায়িত রয়েছে একটি চকচকে চামচ ও একটি কাঁটাচামচ!

    এসব অবশ্য গা সওয়া হয়ে গেছে। হাজার হোক, আমারই অফিসের লোক, একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে তো হয়ই। কিন্তু ইন্টারভিউ নিতে গিয়েও যদি এরকম নমুনার সামনাসামনি হতে হয় তাহলে কীই বা বলার থাকে বলুন?

    সদ্য আমাদের ডেটা অ্যাসিস্ট্যান্টের পোস্টটি খালি হয়েছে। ডেটা অ্যাসিস্ট্যান্ট বলতে MIS এক্সিকিউটিভ আর কি। সারা রিজিওনের সমস্ত তথ্য গুছিয়ে রাখবে, দরকার মতন অ্যানালিসিস করে সাজিয়ে দেবে, এই হলো গিয়ে কাজ। সেই পোস্টটাই খালি।অথচ সেলসে ডেটা অ্যানালিসিস ছাড়া স্ট্রাটেজি প্ল্যানিং করা আর অ্যামাজনের জঙ্গলে টর্চ আর ম্যাপ ছাড়া পোলার বিয়ার খুঁজতে যাওয়া প্রায় একই ব্যাপার।

    এমন হাতি ঘোড়া কোয়্যালিফিকেশন কিছু লাগে না। থার্ড পার্টি পে রোল, হাজার পনেরো মতন মাইনে দোবো। ক্কঅত্বত্রন এ দুরন্ত নলেজ আর গ্র্যা জুয়েট হলেই চলে। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে মোটামুটি একটা নাম্বার দেখে নিই, এই পোস্টে রকেট সায়েন্টিস্ট লাগে না। আমি রকেট ওড়াবো না, ডেটা না ওড়ালেই খুশি!

    তা বেশ কয়েকটি ইন্টার্ভিউ নেওয়ার পর যখন হতাশ হয়ে পড়েছি, বাঙালি জাতির অবক্ষয় তথা সার্বিক অবনতি নিয়ে একটা জ্বালাময়ী প্রবন্ধ লিখবো ভাবছি, (আহা, বাঙালির আর কে আছে বলুন? রবীন্দ্রনাথ মারা গেলেন, সুভাষ বাবুও ফিরলেন না, আর আমারও শরীরটা ভালো নেই!), এমন সময়ে তিনি এলেন!

    ছোকরাকে প্রথম দর্শনেই বেশ পছন্দ হয়ে গেলো। চালাকচতুর চোখমুখ, বডিতে এডুকেশন আছে, ভালো ফ্যামিলির ছেলে, আর কি চাই? বাবা কোথাও একটা ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, ছোঁড়া জয়েন্টে একুশশো না কত যেন র‌্যারঙ্ক করেছিলো, বাবার ক্যান্সার ধরা পড়াতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারেনি। দশ বছরে মাত্তর একবার চাকরি বদলেছে। কেন জয়েন করতে চাও জিজ্ঞেস করাতে সটান বলে দিলো, ”বিয়ে করেছি স্যার, বেশি মাইনে না হলে বউ প্যাঁদাবে বলেছে”। স্পষ্টতই খুশি হলুম, সত্যি কথা আমি চিরকালই পছন্দ করি, আর বউকে কে না ভয় করে চলে বলুন? আমি তো বিলক্ষণ ভয় পাই, আপনি?

    আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। থাক তাহলে এখন, পরে একদিন না হয়…

    যাই হোক, ব্যাপারটা বেশ পজিটিভলি ঘন হয়ে এসেছে, এমন সময় আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলুম, ”হেঁ হেঁ, প্রিয় ফুটবল ক্লাব কি খোকা?” ছেলে বুক চিতিয়ে বললো, ”কেন স্যার? ইস্টবেঙ্গল।”

    নেহাত ইন্টার্ভিউ বোর্ডে ক্যাণ্ডিডেটকে জড়িয়ে ধরে চকাম করে হামি খাওয়াটা শাস্ত্রে মানা, নইলে ছোকরাকে কোলে তুলে চুমু খেতুম। আনন্দাশ্রু গোপনে চাপতে চাপতে বল্লুম, ‘বাহ বাহ বেশ বেশ, শুনে খুশি হলুম। দাঁড়াও বাপু, আসছি।’

    এই বলে বাইরে গিয়ে এইচ আর এর ভদ্রমহিলাকে এর সিভি প্রসেস করতে বলে ফের চেয়ারে এসে জুত করে বসলুম। যাকগে, শেষ পর্যন্ত মনোমত ছেলে পাওয়া গেছে ভেবে বেশ তৃপ্তির সঙ্গে সামনে চাইতেই দেখি ছোকরা জুলজুল করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি খুব স্নেহময় স্বরে বল্লুম, ‘তা ভাইটি, পাস কোর্সে বি এ করেছো তো শুনলুম, বিয়ে করে পাস করার চেষ্টায় আছো তাও শুনলুম। তা বাপু, তোমার ফেভারিট সাবজেক্ট কি শুনি?’

    ‘বাংলা সাহিত্য, আর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস স্যার’

    ওই যে বললাম, চকাম করে হামি খাওয়া মানা!

    গদগদ হয়ে বেশ ঘনিয়ে এলাম, ‘বাহ বাহ। বেশ বেশ। তা বাপু বলোতো, চর্যাপদ কোন রাজবংশের রাজত্বকালে লেখা’।

    খুবই কনফিডেন্ট উত্তর এলো ‘সম্রাট অশোকের সময় স্যার’।

    কনফিডেন্স দেখে যে খুবই মোহিত হলুম সে বলা বাহুল্য, কিন্তু সেটা বোধহয় আমার চোখেমুখে ঠিক ফুটে ওঠেনি, ছেলে চট করে তাকিয়ে বললো, ‘ওহ সরি স্যার, নন্দ বংশের সময়।’

    ক্ষীণ ন্ট্রে চিঁ চিঁ করে বল্লুম, ”ঠিক বলছো ভাই?”

    সে ছোকরা ভারি আশ্চর্য হলো। চোখ কপালে তুলে বললো ‘নয়? তাহলে কি সেই মুণ্ডু ছিলো না সেই রাজার সময়ে স্যার?’

    কণিষ্ক জীবিত থাকার সময়েও মুন্ডু ছাড়াই রাজত্ব চালাতেন কিনা মনে করার প্রবল চেষ্টা চালাতে থাকি। এবং সে বোধহয় আমার মুখের দিকে চেয়ে ভাবিত হয়ে পড়ে। একের পর এক রাজত্বের নাম বলে যেতে থাকে, ‘চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী? নাকি সেই পাগলা রাজা তুঘলকের সময়? নাকি আকবরের সময় লেখা স্যার? বাবর নয় তো? ও হো, সেনবংশ, হ্যা হ্যা হ্যা, মনে পড়েছে। যাশ্লা, নয়? তাহলে কি পালবংশ? নাকি….’

    হুড়মুড়িয়ে প্রায় টেবিলের ওপর ঝাঁপ দিয়ে সে মহাপুরুষকে থামাই, ‘আপাতত ওই পালবংশটাই থাক, পরে না হয় ভেবেচিন্তে দেখা যাবেখন, কেমন?’ ভয় হচ্ছিলো, ছোকরা এরপর এগোতে এগোতে ওয়ারেন হেস্টিংস অবধি না পৌঁছে যায়!

    উঠে গিয়ে মুখে চোখে জল দিই। তারপর খানিক পর এসে ফের তাকে নিয়ে পড়ি, ‘প্রিয় উপন্যাস কি তোমার?’

    ‘পথের পাঁচালী, স্যার’

    চমৎকৃত হই, ‘বেশ বেশ, কার লেখা বলোতো?’

    ‘সত্যজিৎ রায় স্যার। এইটা কিন্তু আমার ভুল হতেই পারে না, এত্তবার দেখলুম’।

    স্তব্ধ হয়ে থাকি, শোক আর আতঙ্কের মাঝামাঝি একটা অবস্থায়। এরপর ধরা গলায় জিজ্ঞেস করি,

    ‘প্রিয় লেখক?’

    ‘রবীন্দ্রনাথ, স্যার’

    ছেলের গলায় যে ভক্তি ঝরে পড়ে, তার তুলনা একমাত্র পান্নালালের গলায় শ্যামাসঙ্গীত! সেই গদগদ স্বর, সেই ভক্তিরসাপ্লুত আকুতি, সেই সমর্পণের ভাব।

    কিন্তু ঠেকে শিখেছি, ফলে সতর্ক হয়ে এগোতেই হয়। মেঝেতে চুরচুর হয়ে ছড়িয়ে থাকা কনফিডেন্স কুড়িয়েবাড়িয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘রবীন্দ্রনাথের লেখা কোন গল্পটা সবচেয়ে ভালো লাগে?’

    অনেকক্ষণ সে উদাস চোখে আমার কেবিনের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। খানিকক্ষণ পর কাকেদের ওড়াউড়ি দেখেটেখে ছলছল চোখে জানায়, ‘দুটো গল্প খুব প্রিয় স্যার। দুটোই খুব দুঃখের গল্প। কোনটা বলবো বলুন?’

    ‘আহা, তুমি দুটোর নামই বলো না।’

    ‘মহেশ আর অভাগীর স্বর্গ’।

    খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। কানের ভিতরে উচ্চিংড়ে লাফাতে থাকে, মাথার খুলির মধ্যে রোদ্দুর রায়ের অ্যাসিড রক কন্সার্ট!

    খানিকক্ষণ বাদে শরীরটা সামান্য ভালো লাগলে চোখ খুলি, গলা দিয়ে একটা হতাশা বেরিয়েই পড়ে, ‘বাংলা সাহিত্যের খুবই দুরবস্থা দেখছি!’

    ‘সে আর বলতে?’ ছোকরা দেখি হঠাৎ খুব উৎসাহিত হয়ে উঠে বিপুল বেগে হাত পা নেড়ে আমাকে বোঝাতে লাগলো, ‘দুরবস্থা বলে দুরবস্থা? আজকাল তো ভালো সাহিত্য আর লেখা হয়ই না স্যার। আর তার ওপর এসেছে এই এক নতুন হুজুগ, ফেসবুকে সাহিত্যরচনা! সবাই নাকি পটাপট লেখক হয়ে যাচ্ছে স্যার, সব্বাই রবীন্দ্রনাথ। আর তাও না হয় বুঝতুম, শখ হয়েছে বলে আঁকিবুঁকি কাটছিস, ওখানেই চেপে যা! ওমা, আজকাল দেখি এরা আবার বইও বার করছে স্যার, কি আস্পদ্দা বলুন দিকি! একজনকে তো বলেছিলাম স্যার, বাংলা সাহিত্যের এত বড় সর্বনাশ করছিস, বলি তোদের বাড়িতে মা বোন নেই? তেড়ে মারতে এলো! কি সাহস ভাবুন অ্যাঁ! আর তো আর, এই তো গত বইমেলায় দুটো ফিশফ্রাই খেলাম আর একটা বই দেখলাম, ”মার্কেট ভিজিট”, তা ভাবলুম সেলসের বইটই হবে, আমিও তো সেলসের লোক, কিনলুম না হয়। ওমা, কিনে দেখি গপ্পের বই! আর সে কি জিনিস কি বলবো, দু পাতার বেশি পড়া যায় না। যেমন জঘন্য লেখা, তেমন ভাষার ইয়ে, আর তেমনই কতগুলো বাজে নচ্ছার জোক্স স্যার….ওটা দিয়ে অবশ্য আমার বাড়ির ডাইনিং টেবিলটার একটা পায়া একটু উঁচু করেছি স্যার, বেশি লস হয়নি। বাংলা সাহিত্যের খুবই দুরবস্থা স্যার, এসব বইও ছেপে বার হচ্ছে..কি আর বলবো…. ‘

    আমার একটা ডেটা অ্যাসিস্ট্যান্ট দরকার। সন্ধানে কেউ থাকলে বলবেন প্লিজ। থার্ড পার্টি পে রোল, হাজার পনেরো মতন মাইনে। মোটামুটিরকম গ্র্যালজুয়েট হলেই হবে, যেন এক্সেল খুব ভালো জানে, আর হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যেন দূর দূর তক কোনও সম্পর্ক না থাকে!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকাউরীবুড়ির মন্দির – অভীক সরকার
    Next Article এবং ইনকুইজিশন – অভীক সরকার

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }