Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এবারো বারো – সত্যজিৎ রায়

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প1107 Mins Read0

    মহিম সান্যালের ঘটনা

    তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘চমকলালের কথা ত তোদের বলেছি, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ হ্যাঁ,’ বলল ন্যাপলা। সেই ম্যাজিশিয়ান ত? যার আপনি ম্যানেজার ছিলেন?’

    ‘হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন—অবিশ্যি যখনকার কথা বলছি তখন তিনি রিটায়ার করেছেন—যাঁর আমি সেক্রেটারি ছিলাম।’

    ‘রিটায়ার করলে আবার সেক্রেটারির কী দরকার?’ বলল ন্যাপলা।

    ‘তাঁর ক্ষেত্রে দরকার ছিল। সেটা ব্যাপারটা শুনলেই বুঝতে পারবি।’

    ‘তা হলে বলুন সে গল্প।’

    ‘বলছি—আগে এই জানালাটা বন্ধ করে দে ত। বৃষ্টির ছাঁট আসছে।’

    আমি উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম।

    তারিণীখুড়ো দুধ চিনি ছাড়া গরম চায়ে একটা সশব্দ চুমুক দিয়ে তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন।

    বছর পনেরো আগের ঘটনা। আমি তখন সবে কানপুরে একটা ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে কলকাতায় এসেছি। হাতে কাজ নেই, কিন্তু পকেটে পয়সা জমেছে বেশ কিছু। নতুন কী করা যায় ভাবছি, এমন সময় আমার এক পুরোন আলাপী জগন্নাথ পাকড়াশির সঙ্গে দেখা। সে বলল, ‘তোমাকেই খুঁজছিলুম।’ আমি বললাম, ‘কেন, কী ব্যাপার?’ ‘মহিম সান্যালের নাম শুনেছ?’ ‘জাদুকর মহিম সান্যাল?’ ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। তিনি অবিশ্যি এখন রিটায়ার করেছেন, কিন্তু কেন জানি তাঁর একজন সেক্রেটারির দরকার পড়েছে। ইংরিজি আর টাইপিং জানা চাই। আমার তোমার কথা মনে পড়ল।’

    আমি বললাম, ‘চাকরি একটা হলে মন্দ হত না। কিন্তু এ ভদ্রলোকের সঙ্গে যোগাযোগ করব কী করে?’

    ‘মহিম সান্যাল থাকেন পাম এভিনিউতে। দাঁড়াও দেখি, আমার কাছে হয়ত তাঁর ঠিকানা রয়েছে।’

    পাকড়াশির নোট বুকে মহিম সান্যালের ঠিকানাটা ছিল, সেটা আমার নোট বুকে টুকে নিলাম।

    দুদিন পরে ছিল রোববার। সকালে সোজা চলে গেলুম সান্যাল মশাইয়ের বাড়ি। বেশ গোছালো, ছিমছাম এক তলা বাড়ি, যদিও বেশি বড় না।

    ভদ্রলোককে দেখেই ভালো লেগে গেল। বয়স ষাট-বাষট্টি, মাথার চুল পাতলা হয়ে এসেছে, চেহারায় একটা শান্ত গাম্ভীর্য, অথচ ঠোঁটের কোণে একটা হাসি লেগে আছে সব সময়।

    আমি নিজের পরিচয় দিলাম। ভদ্রলোক মিনিট পনেরো ধরে আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করে একটু বাজিয়ে দেখে নিলেন। বোধহয় ভালোই ইমপ্রেশন দিলাম, কারণ ভদ্রলোক বললেন, ‘তোমাকে দিয়ে আমার কাজ চলবে বলে মনে হচ্ছে।’

    আমি বললাম, ‘কাজটা কী সেটা জানতে পারি কি?’

    ‘আমার ম্যাজিক দেখেছ কখনও?’ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।

    ‘প্রায় কুড়ি বছর আগে,’ আমি বললাম। ‘একটা পুজো প্যান্ডেলে দেখেছিলাম বলে মনে পড়ছে।’

    ‘হ্যাঁ,’ বললেন মহিম সান্যাল। ‘আমি অনেক পুজো প্যান্ডেলে ম্যাজিক দেখিয়েছি। শুধু দিশি ম্যাজিক দেখাতুম, তাই আমার বড় স্টেজের দরকার হত না। আমার যখন বছর পঞ্চাশ বয়স তখন থেকে আমি ম্যাজিক দেখানো ছেড়ে দিয়ে ভারতীয় ম্যাজিক সম্বন্ধে চর্চা আরম্ভ করি। তার জন্য আমাকে সারা ভারতবর্ষ ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এমন জায়গা নেই যেখানে আমি যাইনি। এমনিতে আমি হোমিওপ্যাথি করতাম, তাতে রোজগার ছিল ভালো। হাজারের উপর ম্যাজিক সংগ্রহ করেছি। শুধু হাত সাফাই-ই আছে তিনশো ছাপান্ন রকম। আমার গবেষণার ফল হল একটা সাড়ে চারশো পাতার হাতে লেখা ইংরিজি পাণ্ডুলিপি। নাম দিয়েছি ইন্ডিয়ান ম্যাজিক। সেই পাণ্ডুলিপি এখন টাইপ করতে হবে, কারণ বিদেশের একজন নাম করা প্রকাশক আমার পাণ্ডুলিপি ছাপার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ কাজ পারবে ত?’

    ‘একবার পাণ্ডুলিপিটা দেখতে পারি?’

    ভদ্রলোক তিনটে মোটা ফাইল আমাকে এনে দিলেন। দেখলাম বেশ পরিষ্কার ঝরঝরে লেখা, টাইপ করতে কোনও অসুবিধা হবে না। তখনই সব কথাবার্তা হয়ে গেল। যা মাইনে অফার করলেন ভদ্রলোক, তাতে আমার দিব্যি চলে যাবে। বুঝলাম ভদ্রলোক ম্যাজিক দেখিয়ে আর ডাক্তারি করে বেশ ভালো পয়সা করেছেন।

    এবার আমি একটা প্রশ্ন না করে পারলাম না।

    ‘আপনার বাড়িতে কোনও সাড়া শব্দ পাচ্ছি না—আপনি কি এখানে একা থাকেন?’

    ‘হ্যাঁ, বললেন ভদ্রলোক। ‘আমার স্ত্রী গত হয়েছেন দশ বছর হল। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সে ব্যাঙ্গালোরে থাকে। আমার ছেলে অনীশ বাইরে চাকরি করে।’

    ভদ্রলোক একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। বুঝলাম একাকীত্বটা যে তিনি খুব উপভোগ করেন তা নয়।

    আমি আমার কাজের টাইম জেনে নিলাম। সকাল দশটায় আসতে হবে, দুপুরে সান্যাল মশাইয়ের সঙ্গেই খাওয়া, আর সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত কাজ।

    কাজে লেগে পড়লাম। পাণ্ডুলিপিটা যতই পড়ছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। আশ্চর্য সংগ্রহ ভদ্রলোকের। ভারতীয় জাদু যত রকম হতে পারে—মাদারি কা খেল, ভোজবাজি, ভেল্কি—সব কিছুই আছে। বই হলে একটা অতি মূল্যবান জিনিস হবে সেটাও বুঝতে পারলাম।

    দুপুরে খাবার সময় ভদ্রলোক তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন, শুনতে গল্পের মতো লাগে। যখন জাদুকর ছিলেন তখন বেশির ভাগই নেটিভ স্টেটে রাজা রাজড়াদের ম্যাজিক দেখাতেন। সব খেলাই হত ফরাসের উপর। স্টেজের কোনও বালাই নেই। এমনি ম্যাজিক ছাড়াও ভদ্রলোক যেটা খুব ভালো পারতেন সেটা হল হিপ্‌নটিজম বা সম্মোহন। বিদেশি ম্যাজিক ভদ্রলোক ভালো চোখে দেখতেন না, কারণ তাতে হাত সাফাই-এর চেয়ে যন্ত্রপাতির ব্যবহারটাই বেশি। সেখানে জাদুকর হচ্ছে একজন শো-ম্যান। ভারতীয় ম্যাজিক বিদেশির চেয়ে অনেক বেশি খাঁটি। সেটা ফুটপাথে বসেও দেখানো যায়। তাতে যন্ত্রপাতির দরকার লাগে না। যেটার প্রয়োজন হয় সেটা হল জাদুকরের দক্ষতা।

    এই সময়—তখন আমার টাইপিং প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে—একটা ব্যাপার হল।

    কলকাতায় এক ম্যাজিশিয়ান এলেন শো দিতে। আসল নাম সূর্যকান্ত লাহিড়ী, কিন্তু তিনি নিজেকে The great Soorya বলে প্রচার করেন। তাঁর পোস্টার বা বিজ্ঞাপনে ওই নামই থাকে। মহিমবাবু কাগজে এই জাদুকরের বিজ্ঞাপন দেখে বললেন, ‘এঁর নাম ত শুনিনি। ইনি নতুন আমদানি বলে মনে হচ্ছে।’ আমার একটু একটু ইচ্ছে করছিল এই ছোকরার ম্যাজিক দেখতে, কিন্তু সেটা আর সান্যাল মশাইকে বললাম না।

    দুদিন পরে একটা টেলিফোন এল দুপুর বেলা। আমার টেবিলেই টেলিফোন থাকে, তুলে হ্যালো বলতে উল্টো দিক থেকে কথা এল—‘আমি সূর্যকান্ত লাহিড়ী কথা বলছি; জাদুকর দ্য গ্রেট সুরিয়া বলে আমি পরিচিত। একবার মহিম সান্যালের সঙ্গে কথা বলতে পারি কি?’

    আমি বললাম, ‘আপনার প্রয়োজনটা কী জানতে পারি? আমি ওনার সেক্রেটারি কথা বলছি।’

    উত্তর এল—‘আমি ভদ্রলোকের নাম অনেক শুনেছি। তিনি দিশি ম্যাজিক দেখাতেন সেটা আমি জানি। তাঁকে আমার শোয়ে আমন্ত্রণ জানাতে চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে আসতে বলতে চাই।’

    আমি সান্যালমশাইকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি পরদিন সকালে সময় দিলেন। আমি সে কথা সূর্যকান্তকে জানিয়ে দিলাম।

    পরদিন সূর্যকান্ত সকাল সাড়ে দশটার সময় এল। আমি তাকে বৈঠকখানায় বসালাম। বছর পঁয়ত্রিশেক বয়স, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, বেশ ব্রাইট চেহারা। আর চোখে মুখে কথা বলে। মহিমবাবু আসতেই তাঁকে নমস্কার করে বলল, ‘আমি জানি আপনি বিদেশি জাদু পছন্দ করেন না, কিন্তু আমার একান্ত অনুরোধ যদি একটিবার আমার শো-য়ে আসেন। আমি ছেলেবেলা থেকে আপনার নাম শুনেছি, আপনার খ্যাতির কথা জানি। আমার গুরু সুলতান খাঁ আপনার ম্যাজিক দেখেছিলেন, তিনিও খুব সুখ্যাতি করেছিলেন। আশা করি আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না। আপনাদের জন্য দুখানা টিকিট আমি নিয়ে এসেছি—একেবারে সামনের সারির মাঝখানে। আপনারা এলে আমি কৃতার্থ হব। কালই সন্ধ্যায় শো—মাত্র দুঘণ্টা সময় আপনার যাবে।’

    আমি ভেবেছিলাম মহিমবাবু হয়ত আপত্তি করবেন, কিন্তু দেখলাম তিনি রাজি হয়ে গেলেন। সূর্যকান্ত অত্যন্ত খুশি মনে বিদায় নিল।

    পরদিন সন্ধ্যা ছ’টায় মহাজাতি সদনে শো, আমরা ঠিক পাঁচ মিনিট আগে গিয়ে হাজির হলাম। লোক বেশ ভালোই হয়েছে, প্রায় হাউসফুল।

    দ্য গ্রেট সুরিয়া দেখলাম পাংচুয়ালিটিতে বিশ্বাস করে, কারণ ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় ছটার সময় পর্দা সরে গেল।

    বিদেশি ম্যাজিক যেমন হয়, তার তুলনায় সূর্যকান্তের শো নেহাৎ নিন্দের নয়। ম্যাজিক ছাড়াও দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য নানারকম বন্দোবস্ত রয়েছে, তার মধ্যে এক হল রংচঙে সেটসেটিং, দুই হল বাজনা, আর তিন হল ছয়জন মেয়ে সহকারী—তারা সকলেই বেশ সুশ্রী।

    সবচেয়ে অবাক লাগল মহিম সান্যালের প্রতিক্রিয়া দেখে। তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে শো দেখছিলেন এবং প্রত্যেক আইটেমের পর হাততালি দিচ্ছিলেন। আমি একবার ফিস্‌ ফিস্‌ করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার বেশ ভালো লাগছে বলে মনে হচ্ছে?’

    ভদ্রলোক বললেন, ‘প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর পরে এ জিনিস দেখছি। শেষ দেখেছি চীনে জাদুকর চ্যাং-এর ম্যাজিক। যৌবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, মন্দ লাগছে না। তবে সবই যন্ত্রের কারসাজি আর রংতামাসা দিয়ে লোকের মন ভোলানো। আসল ম্যাজিক যাকে বলে সে জিনিস এটা নয়। আর এ দেখছি হিপ্‌নটিজম জানে না।’

    শেষ আইটেমের আগে সূর্যকান্ত একটা ব্যাপার করল। মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে এসে দর্শকদের উদ্দেশ করে বলল, ‘আজ আমাদের বিশেষ সৌভাগ্য যে সামনের সারিতে উপস্থিত রয়েছেন এমন একজন জাদুকর যাঁর নাম আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে লোকের মুখে মুখে ফিরত। ইনি ভারতীয় জাদুর জন্য যা করেছেন তার তুলনা হয় না। আমি মহিম সান্যালকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি উনি মঞ্চে তাঁর অন্তত একটা জাদু দর্শকদের দেখান। তিনি সরঞ্জাম কিছুই আনেননি। কিন্তু সরঞ্জাম উনি ব্যবহার করতে চাইলে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করব, এবং তিনি আমার অনুরোধ রক্ষা করলে আমার আনন্দের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। মহিমবাবু!’

    মহিমবাবু আমার হাতে একটা মৃদু চাপ দিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর পাশের সিঁড়ি দিয়ে উঠে মঞ্চে হাজির হলেন। দর্শকরা সকলে চুপ। কী ঘটতে চলেছে তা কারুরই ধারণায় নেই। আমিও চুপ।

    মহিমবাবু দর্শকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘বহুদিন পরে এ জিনিস করছি, কিন্তু ত্রুটি হলে আশা করি আপনারা ক্ষমা করবেন। আমি আপনাদের দুটো খেলা দেখাব। দুটোই দিশি। তার প্রথমটা হল হাত সাফাই। সূর্যকান্ত, তোমার তিনটি বল যদি আমাকে দাও।’

    সূর্যকান্তর এক সহকারী তৎক্ষণাৎ দুটো লাল এবং সাদা বল মহিমবাবুকে এনে দিল।

    সেই বল নিয়ে মহিমবাবু যা করলেন তার চমৎকারিত্ব বর্ণনা দেবার ভাষা আমার নেই। হাত সাফাই যে এমন হতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না।

    এখন হলে হাততালির চোটে কান পাতা দায়, এবং সে হাততালিতে সূর্যকান্তও যোগ দিল।

    হাত সাফাই দেখিয়ে মহিমবাবু বলগুলো সূর্যকান্তকে ফেরত দিয়ে বললেন, ‘এবার আমি আমার দ্বিতীয় জাদু দেখাতে চাই। আমি সম্মোহন বা হিপ্‌নটিজম শিখেছিলাম অমৃতসরে এক ফুটপাথের জাদুকরের কাছ থেকে। তারই সামান্য নিদর্শন আমি আপনাদের দেখাচ্ছি। আমি সূর্যকান্তবাবুর অনুরোধ রক্ষা করেছি। আশা করি তার প্রতিদানে তিনিও আমার একটি সামান্য অনুরোধ রক্ষা করবেন। আমি তাঁকেই সম্মোহিত করতে চাই।’

    সূর্যকান্ত দেখলাম বেশ স্পোর্টিং; সে রাজি হয়ে গেল।

    মহিমবাবু সূর্যকান্তকে একটা চেয়ারে বসিয়ে তার সামনে নিজেও একটা চেয়ারে বসলেন। তারপর বললেন, ‘আপনি আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকুন।’

    সূর্যকান্ত আদেশ পালন করল। তিন মিনিটের মধ্যে লক্ষ করলাম সূর্যকান্তর চোখের চাউনি বদলে গেছে। তার চোখ দুটো যেন পাথরের চোখ। সে যেন সামনের জিনিস দেখেও দেখতে পারছে না।

    মহিম সান্যাল এবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। সূর্যকান্তর দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে তিনি বললেন, ‘আপনাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।’

    ‘করুন,’ ভাবলেশহীন কণ্ঠে উত্তর দিল সূর্যকান্ত।

    ‘আপনি কতদিন হল ম্যাজিক দেখাচ্ছেন?’

    ‘পাঁচ বছর।’

    ‘কার কাছে আপনি ম্যাজিক শিখেছেন?’

    ‘সুলতান খাঁ।’

    ‘কবে থেকে শিখতে আরম্ভ করেছেন?’

    ‘আমার যখন পঁচিশ বছর বয়স!’

    ‘আপনার এখন বয়স কত?’

    ‘পঁয়ত্রিশ।’

    ‘ম্যাজিক দেখানর আগে আপনি কী করতেন?’

    ‘দিল্লিতে চাকরি করতাম।’

    ‘কী চাকরি?’

    ‘খবরের কাগজের রিপোর্টার।’

    ‘তার আগে?’

    ‘আমি কলকাতায় থাকতাম।’

    ‘কোথায়?’

    ‘চব্বিশ নম্বর ল্যান্‌স্‌ডাউন রোড।’

    ‘কার সঙ্গে থাকতেন আপনি?’

    ‘আমার বাবা।’

    ‘আপনার বাবার নাম কী?’

    ‘মহিম সান্যাল।’

    আমি স্তম্ভিত। হলে পিন পড়লে তার আওয়াজ পাওয়া যেত।

    ‘আপনার আসল নাম কী?’ প্রশ্ন করলেন মহিমবাবু।

    ‘অনীশ সান্যাল।’

    ‘আপনি আপনার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘এখনো বাবার উপর রাগ আছে?’

    ‘না, আর নেই। আমি ভুল করেছিলাম, অন্যায় করেছিলাম।’

    এর পরে সূর্যকান্ত ওরফে অনীশের চোখের সামনে হাত নেড়ে তাকে হিপ্‌নোটাইজ্‌ড অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন মহিম সান্যাল।

    দর্শক কিছুক্ষণ হতভম্ব থেকে হঠাৎ তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ল। এদিকে অনীশও হতভম্ব। সে ত কিছুই জানে না এতক্ষণ কী হয়েছে। এবার মহিমবাবু তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘কেমন বোধ করছ, অনীশ—কোনও কষ্ট হয়নি ত?’

    এতক্ষণে অনীশ বুঝতে পারল। সে তার বাবাকে প্রণাম করে তাঁকে জড়িয়ে ধরল।

    পরে মহিমবাবু আমাকে বলেছিলেন যে সূর্যকান্তর গলার আওয়াজ আর কানের লতি থেকেই ছেলেকে চিনতে পেরেছিলেন তিনি। পরদিন সকালে অনীশ আবার এসেছিল। বলল এর পরে ওর উত্তরপ্রদেশে টুর আছে। তারপর পনেরো দিন অবসর। সেই সময়টা সে পাম এভিনিউতে বাবার কাছে এসেই থাকবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকৈলাসে কেলেঙ্কারি – সত্যজিৎ রায়
    Next Article একের পিঠে দুই – সত্যজিৎ রায়

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }