Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এম্পায়ার অভ দা মোগল : দি টেনটেড থ্রোন – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    লেখক এক পাতা গল্প617 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.০৫ চরম মূল্যশোধ

    ‘মহবত খান আপনাকে পরাজিত আর বন্দি করার জন্য তার সাধ্য অনুযায়ী সবকিছু করবে।’ আজম বকস জ্বলন্ত কয়লার পাত্রে গুতো দেয় এবং খুররমকে তাঁর তেপায় নিয়ে আরেকটু নিকটে উষ্ণতার কাছে আসতে ইঙ্গিত করে। শরতকাল সমাগত প্রায় এবং পাহাড়ের উপর দিয়ে উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ইতিমধ্যেই শীতল বাতাস প্রবাহিত হতে শুরু করায় তারা দু’জনে, গান্ধক নদীর তীরে মাটির ইটের তৈরি দূর্গের প্রাঙ্গণে যেখানে বসে রয়েছে যেখানে আজম বকস খুররম আর তার পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে, সামান্য কাঁপতে থাকে।

    ‘মহবত খানকে আপনি চেনেন? খুররম খানিকটা বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চায়। আজম বকস একজন বৃদ্ধ মানুষ–সত্তরের অনেক উপরে তাঁর বয়স–আর যুবক বয়সে তিনি আকবরের বাহিনীতে যুদ্ধ করেছেন।

    ‘কেবল তাঁর নামে চিনি। তারা বলে লোকটা নাকি জাত সেনাপতি, অকুতোভয় আর বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান আর সেই সাথে উচ্চাকাঙ্খী। তাঁর এমনই গুণ যে তাঁর রাজপুত অশ্বারোহীরা সে যদিও তাদের গোত্রের লোক না তবুও আমৃত্যু তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়েছে।’

    খুররম অপলক দৃষ্টিতে গনগনে কয়লার মাঝে তাকিয়ে থাকে। সেদিনই সকালে আজম বকসের কয়েকজন লোক এসে যখন জানিয়েছে যে মহবত খানের অগ্রবর্তী বাহিনী মাত্র চার সপ্তাহ দূরে অবস্থান করছে সে রীতিমত বিস্মিত হয়েছে। সে আশা করেছিল এখানে সে কিছুদিন নিরাপদে অবস্থান করতে পারবে। তার ছেলেবেলার স্মৃতিতে আবছা মনে থাকা এই বৃদ্ধ যোদ্ধার কাছ থেকে পাটনার উত্তরে তাঁর পৈতৃক শক্তঘাঁটিতে আশ্রয়ের আমন্ত্রণ লাভ করা তাঁর জন্য ছিল স্বাগত বিস্ময়। সে হুগলী ত্যাগ করার এক সপ্তাহ পরে আজম খানের লোকজন তাকে খুঁজে পায়। বৃদ্ধ লোকটা তাঁর চিঠিতে জানায় যে তিনি খুররমের দুরবস্থা সম্বন্ধে জানেন এবং আকবরের স্মৃতির খাতিরে, যাকে তিনি শ্ৰদ্ধ করেন, জানেন যে খুররম তার প্রিয় নাতি ছিল, তিনি তাকে সাহায্য করার প্রস্তাব করছেন। খুররম সাথে সাথে রওয়ানা দিয়েছিল যা তাকে হুগলীর প্রায় দুইশ মাইল উত্তরে নিয়ে আসে। কিন্তু আরো একবার মনে হচ্ছে এই আশ্রয়ও ক্ষণস্থায়ী প্রতিপন্ন হতে চলেছে। মহবত খানের বাহিনীর বিরুদ্ধে এই ছোট দূর্গ কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারবে না। সে তার বন্ধুকে কোনোভাবেই বিপদে ফেলতে পারে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল মহবত খানের বাহিনী এখনও কেন তাকে অনুসরণ করছে।

    ‘আমি আশা করেছিলাম আমার আব্বাজান মহবত খানকে ডেকে পাঠাবেন। আমি আমার বার্তাবাহককে আগ্রা পাঠাবার পরে প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে।

    ‘আপনার বার্তাবাহক কি বিশ্বস্ত?

    ‘হ্যাঁ। আমি নিশ্চিত সে বিশ্বস্ত। কিন্তু আগ্রার পথে তাকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে এবং সে সম্ভবত কখনও সেখানে পৌঁছাতেই পারে নি। সম্রাজ্ঞী হয়ত আমার অভিযান সম্পর্কে আগেই জানতে পেরেছিলেন এবং তাকে অভিগ্রহণের জন্য আততায়ীর দল প্রেরণ করেছেন। সে হয়ত দস্যুবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে বা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার হয়ত একজন ইউরোপীয়কে পাঠান উচিত হয় নি। আমাদের চেয়ে তারা অনেক অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবকিছু যদি ঠিকমত সংগঠিত হতো তাহলে এতদিনে তার আমাকে খুঁজে পাবার কথা। মহবত খান যদি আমাকে অনুসরণ করা অব্যাহত রাখে তাহলে আমার গন্তব্য মোটেই গোপন কোনো ব্যাপার নয় আর তাছাড়া অনেকেই হুগলী থেকে এদিকে আমার বাহিনীকে আসতে দেখেছে। খুররম মুখ তুলে রাতের আকাশের উজ্জ্বল তারকারাজির দিকে তাকায়। মাথার উপরের এই রহস্যময় আর অনন্ত বিস্তারের কাছে মানুষের জীবন কত নগণ্য আর ক্ষণস্থায়ী…

    ‘এতটা বিষণ্ণ হবেন না। আজম খানের কর্কশ কণ্ঠস্বরে তার ভাবনার রেশ ছিন্ন হয়। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আমার বহুবছরের অভিজ্ঞতা একটা জিনিষ অন্তত আমায় শিখিয়েছে–ধৈর্যধারণ করতে। সবকিছু এখনও হয়ত ঠিক হয়ে যাবে।’

    খুররম মাথা নাড়ে কিন্তু সেটা কেবল ভদ্রতার খাতিরে। তাঁর পক্ষে ধৈর্যধারণ করা সম্ভব না বিশেষ করে তার নিজের এবং তাঁর পরিবারের জীবন যখন বিপজ্জনভাবে ভারসাম্যে বিরাজ করছে।

    *

    কিন্তু দুইদিন পরে, আজম বকসের ধারণাই সঠিক প্রমাণিত হয়। খুররম আরজুমান্দের সাথে বসে থাকবার সময় সহসা নতুন লোকের আগমন ঘোষণা করে দূর্গের ছোট তোরণদ্বার থেকে ঢোলের শব্দ ভেসে আসতে শুনে। সে লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচের আঙিনার দিকে নামতে শুরু করে।

    নিকোলাস ব্যালেনটাইন ঘোড়া থেকে নামছে। সে মুখ ঢেকে রাখা কাপড় সরাতে খুররম দেখে তাকে পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছে। তার চোয়ালের হাড় বসে গিয়েছে এবং তার গালে বেশ কয়েকদিনের না কামানো দাড়ির জঙ্গল।

    ‘যুবরাজ।

    নিকোলাস যখন তাঁর সামনে হাঁটু ভেঙে বসতে যাবে খুররম দ্রুত তাকে বলে, ‘এসবের এখন কোনো প্রয়োজন নেই। আমায় বলো কি হয়েছিল। তুমি কি আব্বাজানের কাছে আমার পত্র পৌঁছে দিতে পেরেছিলে? তিনি কি উত্তর দিয়েছেন?

    ‘কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমি আগ্রা পৌঁছাই যদিও আমি যেমনটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে ধীর গতিতে অগ্রসর হই। সম্রাট দেওয়ানি আমে আমার সাথে দেখা করেন যেখানে বাস্তবিকই তিনি আপনার চিঠিটা পাঠ করেছিলেন। তিনি পরের দিন আমাকে এটা দিয়ে আপনার কাছে নিয়ে আসতে বলেন। নিকোলাস তার চামড়ার আঁটসাট জামার ভেতর হাত দিয়ে চামড়ার থলেটা বের করে যা জাহাঙ্গীর তার কাছে দিয়েছে। রাস্তায় কয়েক ঘন্টার জন্য ঘুমাবার সময়ও সে সবসময়ে এটার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সতর্ক থেকেছে, সবসময়ে থলেটা তার জামার ভেতরে বুকের কাছে গুঁজে রেখেছে। সে খুররমের হাতে থলেটা তুলে দেবার সময় বুঝতে পারে তার উপর থেকে একটা বোঝা নেমে গেল।

    খুররম অস্থির আঙুল দিয়ে থলেটা খুলে, ভেতর থেকে চিঠিটা বের করে এবং পড়তে শুরু করে। নিকোলাস তার দিকে তাকিয়ে প্রথমে তাঁর চেহারায় খুশি, তারপরে বিভ্রান্তি এবং শেষে সেখানে ক্রোধের অভিব্যক্তি ফুটতে দেখে। সে একই সাথে খুররমকে দ্রুত শ্বাস নিতে শুনে এবং তাকিয়ে দেখে কীভাবে তার আঙুল কাগজটা দোমড়াতে শুরু করেছে। তারপরে সহসা নিকোলাস এবং তাঁর দেহরক্ষীদের এবং প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্যান্য পরিচারকদের উপস্থিতি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠে, সবাই একাগ্রচিত্তে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বুঝতে পেরে খুররম মনে হয় নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে। তোমাকে ধন্যবাদ,’ সে মৃদু কণ্ঠে নিকোলাসকে বলে। তুমি একটা কঠিন দায়িত্ব আনুগত্যের সাথে আর দারুণভাবে সম্পন্ন করেছো। তোমার বিশ্রাম নেয়া হলে আমরা তখন আবার এ বিষয়ে আলোচনা করবো। আমি জানতে চাই দরবারে তোমার অবস্থানের সময় কি কি হয়েছিল কিন্তু তার আগে আমায় আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে হবে।’

    খুররম যখন ঘুরে দাঁড়িয়ে ছায়ার ভিতরে ফিরে এসে উপরের তলায় উঠে যাওয়া সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে, নিকোলাসের কাছে তাকে তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ মনে হয় যিনি কিছুক্ষণ আগে সূর্যালোকিত আঙ্গিণায় উদ্গ্রীব ভঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর মাথা নত করা এবং তিনি ধীর পায়ে আরজুমান্দের কক্ষের দিকে এগিয়ে চলেছেন যেন তিনি সেখানে পৌঁছানোটা যতটা দেরি করা সম্ভব করতে আগ্রহী।

    আরজুমান্দ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তোমার বার্তাবাহক দরবার থেকে ফিরে এসেছে, তাই না? খুররম মাথা নাড়ে এবং ধীরে ওক কাঠের পাল্লা যুক্ত দরজাটা নিজের পেছনে টেনে বন্ধ করে দেয় যাতে কেউ তাদের দেখতে না পায়।

    ‘খুররম, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আপনার আব্বাজান কি বলেছেন?

    সে প্রথমে ইতস্তত করে, তারপরে বলতে আরম্ভ করে। আমি যদি বালাঘাটে আমার অবশিষ্ট লোকদের নিয়ে যেতে রাজি হই আমাকে সেখানের সুবেদার করা হয়েছে তাহলে আব্বাজান মহবত খান আর তার বাহিনীকে ডেকে পাঠাবেন। আমাকে সম্মতি দিতে হবে যে তিনি দরবারে ডেকে না পাঠান পর্যন্ত আমি সেখানে যাব না।’

    আরজুমান্দের আড়ষ্ট মুখাবয়ব সহসা রক্তিম দেখায়। রাজকীয় মিনা বাজারে প্রথমবার সে যে লাজুক উচ্ছল মেয়েটাকে দেখেছিল তাকে পুনরায় সেরকম দেখায়। এটাতো ভীষণ আনন্দের কথা। তিনি আপনার সাথে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আপনাকে মার্জনা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটা অবশ্যই তারই ইঙ্গিত করে। এতগুলো বছর ভবঘুরের মত কাটাবার পরে আমি আর আমার সন্তানেরা অবশেষে এবার নিরাপদে থাকতে পারবো।’ সে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে কিন্তু খুররম যখন তাকে একই আবেগে জড়িয়ে ধরতে ব্যর্থ হয় সে তখন তাঁর গলা ছেড়ে দিয়ে কয়েক কদম পেছনে সরে আসে। কি ব্যাপার? আপনি কি এটাই আশা করছিলেন না? খুররম, আপনাকে কেন আনন্দিত দেখাচ্ছে না? আমাকে দয়া করে সব খুলে বলেন?

    খুররম মনে মনে জাহাঙ্গীরের শীতল, সংক্ষিপ্ত, অপমানজনক শব্দগুলোর কথা ভাবে–পিতার কাছ থেকে পুত্রের কাছে মার্জনার কোনো বার্তা না বরং কোনো শাসকের কাছ থেকে অপকর্ম করা কোনো জায়গীরদারের কাছে প্রেরিত শর্তের তালিকা। আর এসব শর্তের ভিতরে যে শর্তটা এখনও মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছে সেটাই তাকে এখন আরজুমান্দের কাছে খুলে বলতে হবে।

    ‘আমার সদাচারের নিশ্চয়তা হিসাবে, আব্বাজান দাবি করেছেন যে দারা শুকোহ আর তার এক ভাইকে আমায় দরবারে পাঠাতে হবে।

    ‘কি? আরজুমান্দ ফিসফিস কণ্ঠে বলে। সে নিজের মাথায় হাত দেয় যেন এইমাত্র কেউ তাকে সেখানে আঘাত করেছে এবং তারপরে সে ধীরে ধীরে লাল মলিন গালিচার উপর হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। খুররম অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে সে যখন কাঁদতে শুরু করে। তার উচিত তাকে জড়িয়ে ধরা এবং কাছে টেনে নেয়া কিন্তু তাকে সে কীভাবে সান্ত্বনা দিতে পারে যখন সে নিজেও একই রকমের হতাশা বোধ করছে।

    ‘আমার আব্বাজান বলেছেন দুজনের সাথেই ভালো আচরণ করা হবে কিন্তু তোমার কাছ থেকে আমি সত্যি কথা গোপন রাখতে পারবো না। তারা আসলে বন্দি থাকবে সেটা যেভাবেই বলা হোক না কেন।

    ‘দারা শুকোহর বয়স এত অল্প… আমি বিষয়টা ভাবতেই পারছি না। আপনার আব্বাজান এতটা নিষ্ঠুর কীভাবে হতে পারেন? তিনি দারাকে একটা সময় ভালোবাসতেন… আমার মনে আছে দারার জন্মের সময় তিনি তাকে কি উপহার দিয়েছিলেন…’।

    ‘আমি নিশ্চিত আমার আব্বাজান আমার সন্তানদের কখনও কোনো ক্ষতি করবেন না। কিন্তু…’ সে কথা বন্ধ করে এবং আরজুমান্দের দিকে তাকায়, জানে সে বুঝতে পেরেছে।

    হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ থেকে অশ্রু মুছে নিয়ে এবং প্রাণপণে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবার চেষ্টা করতে করতে আরজুমান্দ কেবল একটা শব্দই কোনোমতে উচ্চারণ করে।

    ‘মেহেরুন্নিসা?

    সে মাথা নাড়ে।

    ‘আপনার সত্যিই মনে হয় সে তাঁদের কোনো ক্ষতি করতে পারে।

    খুররম মনে মনে ভাবে। সে মেহেরুন্নিসাকে যতটা ঘৃণা করে–এবং বিপরোয়া পরিস্থিতিতে তিনি কি করতে পারেন সেটা কে বলতে পারে?–তাতে সে কি তাকে ঠাণ্ডা মাথায় শিশু হত্যাকারী হিসাবে কল্পনা করতে পারে? না, আমার সেটা মনে হয় না, সে অবশেষে তাকে বলে। ‘আর সর্বোপরি, সে কেন এমনটা করবে? আমাদের সন্তানদের উপরে নিয়ন্ত্রণই তার জন্য যথেষ্ট। তিনি এটা জানার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধি রাখেন যে তাঁদের প্রতি যেকোনো ধরনের বিরূপ আচরণ জনমতকে আঘাত করবে। আমাদের ঐতিহ্য–সেই তৈমূরের সময় কাল থেকে এটা চলে আসছে–সেটা হল অল্পবয়সী আর নির্দোষ যুবরাজদের জীবন পবিত্র জ্ঞান করা। তারা যখন বড় হয়ে বিদ্রোহ করে কেবল তখনই তারা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হয়ে থাকে।

    আরজুমান্দ ধীরে ধীরে নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায় এবং মুখের উপর থেকে খোলা চুলের গোছা সরিয়ে দিয়ে মন্থর পায়ে জানালার দিকে হেঁটে যায়। সূর্য অস্ত যাচ্ছে, দূরের গোলাপি পাহাড়ের চূড়া গোলাপিবর্ণ ধারণ করেছে। রাতের খাবার রান্না করার জন্য জ্বালান গোবরের আগুনের ঝাঁঝালো গন্ধ সে টের পায় এবং তাকিয়ে দেখে নিচের আঙিনায় রাতের প্রথম মশালের আলো জ্বলছে। সবকিছু কত স্বাভাবিক দেখাচ্ছে, সে ভাবে, অথচ তাদের সবার জীবন কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। একজন মা হিসাবে তার কি করণীয়? তাঁর দু’জন সন্তানকে সমর্পণ করে বাকিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা? সে এখন যে মানসিক যাতনা অনুভব করছে তাঁর সাথে সন্তান জন্ম দেবার কষ্টের কোনো তুলনাই হয় না।

    ‘আমাদের সামনে একটা পথ রয়েছে। আমরা আমার আব্বাজানের শর্ত উপেক্ষা করতে পারি। আমরা উত্তরে যাত্রা করতে পারি, পাহাড়ী এলাকায় যেখানে মহবত খানের পক্ষে আমাদের অনুসরণ করা কঠিন হবে…’

    কিন্তু আরজুমান্দের মুখ সে যখন জানালা থেকে ঘুরে দাঁড়ায় কঠোর দেখায়। না। আপনি যদি আপনার আব্বাজানের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন তাহলে তিনি কি বলবেন সেটা একবার ভেবে দেখেন যে তার কাছে আমাদের সন্তানদের-তার নাতিদের-বিশ্বাস করে প্রেরণ করতে আপনার অনিচ্ছার অর্থই হচ্ছে আপনি কখনও তার প্রতি অনুগত থাকতে চাননি। তিনি তখন প্রশ্ন করবেন একজন সম্ভাব্য অনুগত আর দায়িত্ববান সন্তান কেন নিজের সন্তানদের তাদের দাদাজানের কাছে পাঠাতে অস্বীকার করবে যদি না তার বিদ্রোহ করার কোনো অভিপ্রায় না থাকে। তিনি তখন আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য দ্বিগুণ সৈন্য প্রেরণ করবেন আর আমাদের সন্তানদের তখন কি হবে?

    একজন যুবরাজ আর একজন পিতা হিসাবে–যদিও তাঁর প্রথম সহজাত অভিপ্রায় ছিল–তাঁর আব্বাজানের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা, কিন্তু আরজুমান্দ কি ঠিক কথাই বলেনি? খুররম চিন্তা করে, তাঁর বাক্য বিন্যাসের স্পষ্টতা আর তারমাঝে নিহিত সত্য তাকে চমকে দেয়। তাদের সামনে আসলে সত্যিই কি করার আছে? তাঁর সাথে মাত্র তিনশ লোক রয়েছে এবং নতুন সৈন্য নিয়োগের মত অর্থও তার নেই। সে যদি একা হত তাহলে প্রথম মোগল সম্রাট বাবরের মত সে একাকী লড়াই করতে পারতো, পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে চোরাগুপ্তা হামলার পাশাপাশি ভূখণ্ড অধিকার করার সুযোগের অপেক্ষা করতো। কিন্তু তাকে নিজের পরিবারের কথাও ভাবতে হবে…

    সে এখন যখন অনেক শান্ত সুস্থির হয়ে চিন্তা করে সে দেখে যে জাহাঙ্গীরের প্রস্তাব দাবার জটিল চালের মত তাঁর আব্বাজানের অভিপ্রায়ে সাড়া দেয়া ছাড়া তাঁর সামনে আর কোনো পথই খোলা রাখেনি। জাহাঙ্গীর একটা সময় দাবা খেলতে পছন্দ করতো, কিন্তু খুব ভালো করেই জানে কার জটিল মন থেকে তাকে তার সন্তানদের সমর্পণ করার দাবি উত্থাপনের মত ধারণার জন্ম হয়েছে। সে মানসপটে দেখতে পায় মেহেরুন্নিসা তাঁর আঙুলের চারপাশে একগোছা কাল চুল নিয়ে খেলা করার ছলে হাসছেন এই ভেবে যে সে আর আরজুমান্দ কি করবে। মেহেরুন্নিসা অনেকটা মাকড়সার মত যে একটা বা দুটো মামুলি সুতো দিয়ে শুরু করে আরো জটিল একটা জাল বুনে ফেলে। তাঁর আব্বাজান বহু বছর আগেই সেই জালে আটকা পড়েছেন। একদিন, সে নিজের কাছে ওয়াদা করে, সে এই জাল ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করবে। সে নিজেকে, সেইসাথে তাঁর পরিবারকে এবং এমনকি তার আব্বাজানকেও–যদি না তিনি এরই মধ্যে মেহেরুন্নিসার জালে পুরোপুরি হারিয়ে না যেয়ে থাকেন–তাঁর বন্ধন থেকে মুক্ত করবে, মোগল সাম্রাজ্যকে আরো একবার উন্নতির সুযোগ দেবে। কিন্তু সেই সন্তুষ্টি কেবল ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে রয়েছে। তাকে সবচেয়ে প্রথমে বর্তমানের দিকে নজর দিতে হবে।

    ‘তুমি ঠিকই বলেছো, সে কথা বলার সময় তার হৃদয়ের চারপাশে একটা ভার চেপে বসতে থাকে। সত্যি কথাটা–এবং আমার চেয়ে দ্রুত তুমি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছো–আমাদের সামনে রাজি না হয়ে অন্য কোনো পথ নেই। কিন্তু দারা শুকোহর সাথে আমরা আমাদের অন্য কোনো সন্তানকে প্রেরণ করবো-শাহ সুজা না আওরঙ্গজেব?

    ‘আওরঙ্গজেব,’ আরজুমান্দ কিছুক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দেয়। সে যদিও শাহ সুজার চেয়ে বয়সে এক বছরের ছোট কিন্তু সে শক্তিশালী–সে এখনও পর্যন্ত একদিনও অসুস্থ হয়নি–এবং সে নির্ভীক। সে এমনকি দরবারে যাবার সম্ভাবনায় উৎফুল্লও হতে পারে। আরজুমান্দের কণ্ঠস্বর সামান্য কেঁপে উঠে। তাঁদের কবে নাগাদ যেতে হবে?

    ‘আব্বাজান আমাকে আদেশ দিয়েছেন আমার সিদ্ধান্ত পাটনার সুবেদারের কাছে সাথে সাথে জানাতে যিনি রাজকীয় অশ্বারোহী বার্তাবাহকদের সাহায্যে আমার চিঠি দ্রুত আগ্রা প্রেরণের বন্দোবস্ত করবেন। আমরা যদি তাঁর প্রস্তাব মেনে নেই তাহলে কড়া প্রহরায় আমাদের সন্তানদের এলাহাবাদে প্রেরণ করতে হবে যেখানে তিনি তাঁর লোকদের পাঠাবেন তাঁদের স্বাগত জানাতে। আমাদের অবশ্যই তাদের দ্রুত প্রস্তুত করতে হবে। দারা শুকোহ বড় হয়েছে সে এটা বুঝতে পেরেছে যে আমার আর আমার আব্বাজানের মাঝে বিরোধ রয়েছে। আমাদের অবশ্যই তাকে বলতে হবে যে আমরা আমাদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছি এবং তাদের দাদাজান তাঁদের দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। আমরা কতটা বিপর্যস্ত সেটা আমরা তাদের সামনে প্রকাশ করবো না…

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএম্পায়ার অভ দ্য মোগল : দ্য সার্পেন্টস্ টুথ – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
    Next Article রুলার অভ দা ওয়ার্ল্ড : এম্পায়ার অভ দা মোগল – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }