Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এম্পায়ার অভ দা মোগল : দি টেনটেড থ্রোন – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    লেখক এক পাতা গল্প617 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.০৬ সুবিধাবাদী শয়তান

    মহবত খান ক্লান্ত-দর্শন রাজকীয় অশ্বারোহী বার্তাবাহকের হাত থেকে চামড়ার তৈরি বার্তার থলিটা গ্রহণ করে যে মাত্র পাঁচ মিনিট আগে খুররমকে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ধূলোর মেঘের আড়ালে অগ্রসরমান সৈন্যদলের সাথে এসে যোগ দিয়েছে। মহবত খান চামড়ার জীর্ণ থলিটা খুলে ভেতরে রক্ষিত একমাত্র চিঠিচা বের করেন এবং সবুজ সীলমোহর ভাঙেন। চিঠিটায় দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে তিনি তাঁর যা জানার জেনে নেন। সীলমোহরটা যদিও জাহাঙ্গীরের কিন্তু চিঠির লেখাটা মেহেরুন্নিসার, তাকে প্রদত্ত আদেশের ক্ষেত্রে প্রায়শই যা হয়ে থাকে। তাঁর চিঠির ভাষা কঠোর: বদমাশটার বোধোদয় ঘটেছে এবং শর্ত মেনে নিয়েছে, তাঁর ভবিষ্যতের ভালো ব্যবহারের নিশ্চয়তা স্বার্থে নিজের দুই ছেলেকে আমাদের তত্ত্বাবধানে প্রেরণে সম্মত হয়েছে। আপনার অভিযান সমাপ্ত হয়েছে। আগ্রায় ফিরে আমার পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষা করেন যা আমরা কাশ্মীর পৌঁছাবার পরে প্রেরণ করা হবে। মেহের। চিঠি লেখার স্থান আর তারিখ এরপরে দেয়া রয়েছে–লাহোর।

    মহবত খান চিঠির কাগজটা নিজের হাতের মুঠোর মুচড়ে নিয়ে ভাবে, কোনো সামান্যতম ধন্যবাদজ্ঞাপন বা শুভেচ্ছার একটা শব্দও নেই। ‘কোনো উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই, সে বার্তাবাহককে বলে, কেবল মামুলি প্রাপ্তিস্বীকার যে আমি আদেশ পেয়েছি। তার পাশে অবস্থানরত আধিকারিকের দিকে তাকিয়ে–খয়েরী রঙের ঘোড়ায় উপবিষ্ট, অশোক নামের এক সুঠামদেহী তরুণ রাজপুত–সে বলে, ‘সম্রাট–বা বলা যায় সম্রাজ্ঞী–আমাদের ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযান সমাপ্ত হয়েছে। আমরা এখানেই যাত্রাবিরতি করে আজ রাতের মত শিবির স্থাপন করবো। তারপরে, গলার স্বর মোলায়েম করে, সে তার একজন পরিচারকের উদ্দেশ্যে বলে, বার্তাবাহক যেন ভালো করে খাবার আর বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায় আর সেই সাথে সে ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করার সময় তাকে যেন তাজা ঘোড়া দেয়া হয় সে বিষয়টা নিশ্চিত করবে।

    *

    মহবত খান সেই রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারেন না, তার তাবুর অভ্যন্তরভাগ গরম আর বায়ুহীন সেটাই একমাত্র কারণ না–তাবুর ভেতরটা আসলেই সেরকম–বা তিনি তাঁর স্বদেশের সুরা সিরাজ নিজের কয়েকজন বয়োজ্যষ্ঠ সেনাপতিদের সাথে বসে প্রচুর পান করেছেন–সেটাও তিনি করেছেন–কিন্তু সেসব কারণে না তার ঘুম হয়না কারণ তিনি খানিকটা অসন্তুষ্টবোধ করেন যেভাবে সাংক্ষেপিক ভঙ্গিতে তাকে আর তার বাহিনীকে আগ্রা ডেকে পাঠান হয়েছে–এবং সেটাও ম্রাটের আদেশে নয়, তিনি চিন্তা করেন, সম্রাজ্ঞীর আদেশে। তাঁর অসন্তোষের বাড়তি আরেকটা কারণ এই যে তিনি অবশ্য পালনীয় আদেশজ্ঞাপক এই চিঠির মূল আরম্ভক। সে কল্পনা করে যদিও এবারই প্রথম নয় কেন সে সম্রাটের প্রতি তার আনুগত্যকে ব্যবহার করে তাকে একজন সাধারণ সৈন্যের মত এটা সেটা আদেশ দেয়ার সুযোগ কেন মেহেরুন্নিসাকে দেবে। খুররম আর তার মিত্রদের পরাস্ত করতে পারলে তার অনুসারীরা যে বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হত সেটা থেকে এবার অযৌক্তিকভাবে তিনি তাকে আর তার লোকদের কেন বঞ্চিত করেছেন? এবং তিনি যদিও একজন মামুলি রমণী যদিও তিনি তার দেখা সবচেয়ে ধূর্ত আর হিসেবী মহিলা আর সেইসাথে তারই মত পারস্যের অধিবাসী।

    তিনি যদিও সম্রাটকে–সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে পরাক্রমশালী মানুষ ভেড়য়া পোষা কুকুরে পর্যবসিত করেছেন কিন্তু সে নিজে তাঁর চেয়ে উন্নত বা নিদেনপক্ষে তাঁর সমকক্ষ সবক্ষেত্রে। তাঁদের দুজনের দেহেই যদিও পার্সী রক্ত প্রবাহিত কিন্তু পারস্যে তাঁর পরিবার অনেকবেশি অভিজাত হিসাবে স্বীকৃত। তাঁর চেয়ে কোনোভাবেই মেহেরুন্নিসার ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার এক্তিয়ার নেই। তিনি ধূর্ত হতে পারেন কিন্তু তিনি কোনোভাবেই তার চেয়ে বেশি ধূর্ত নন। তিনি তার মত কোনো সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন না এবং তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভবও না। মহবত খান যতই নিজের সাথে তর্ক করে, সুতির চাদরের নিচে শুয়ে যতই গরমে মাথা নাড়ে এপাশ ওপাশ করে, ততই তার কাছে মনে হয় মেহেরুন্নিসার কর্তৃত্ব তাঁর আর সহ্য করা উচিত হবে না। খুররমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আর উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজের ভোঁতা বুদ্ধির জামাতা শাহরিয়ারকে প্রবর্ধন করে এখন যখন সুরা শেষ পর্যন্ত পারভেজের মৃত্যুর কারণ হয়েছে তখন সে নিজে তারই মত রাজকীয় ক্ষমতার একজন চৌকষ নিয়ন্তা। সে সম্ভবত ভুলই করেছে আরও আগেই হয়ত অসুস্থ সম্রাট আর তার হিসেবী, স্বার্থসিদ্ধিতে নিপূণা এবং রূঢ়ভাষী প্রধানা মহিয়ষীর বিরুদ্ধে তরুণ মহিমান্বিত খুররমের সাথে নিজের বাহিনী নিয়ে যোগ দেয়ার কথা ভাবা উচিত ছিল? অভিযানে প্রেরণ করার কারণে তারা উভয়েই দরবারে অনুপস্থিত থাকার মানে এই যে তার সাথে মাত্র একবারই খুররমের মুখোমুখি দেখা হয়েছে কিন্তু তিনি সব অর্থেই একজন ভালো আর উদার নেতা এবং মহবত খানের নিজস্ব বাহিনীকে তার এড়িয়ে যাবার সামর্থ্যই সেনাপতি হিসাবে তার দক্ষতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। খুররম এমনই আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করে যে তার দরবারে এবং দরবারের বাইরে এখনও অনেক অনুগামী রয়েছে যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা সবাই আত্মগোপন করে রয়েছে। তার এখন হয়তো পক্ষ পরিবর্তন করা উচিত? যুবরাজকে দীর্ঘ পশ্চাদপসারণের সময় তার সাথে খুররমের সমর্থকদের সংঘটিত বিচ্ছিন্ন লড়াই আর খণ্ডযুদ্ধ সবসময়েই যুদ্ধের রীতিনীতি মেনেই সংঘটিত হয়েছে। কোনো হত্যাযজ্ঞ, কোনো মৃত্যুদণ্ড, নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু উভয়পক্ষের কোনো দিকেই ঘটেনি যার ফলে তিক্ত ঘৃণা বা দীর্ঘস্থায়ী জিঘাংসামূলক বিবাদের সূত্রপাত ঘটতে পারে।

    রজনী অতিক্রান্ত হবার সাথে সাথে মহবত খানের আস্থর নড়াচড়া অব্যাহত থাকে, তার মন এখন ঘুমাবার পক্ষে অনেকবেশি সক্রিয়, তার মনে আরেকটা ভাবনার উদয় হয়। সে কি ক্ষমতার এই দ্বন্দ্বের ভিতরে নিজের জন্য আলাদা স্বাধীন একটা ভূমিকা তৈরি করতে পারে না? বার্তাবাহক আর তার আগে যারা এসেছিল তাঁদের কাছ থেকে সে জানতে পেরেছে যে বসন্তের এই সূচনালগ্নে সম্রাট আর সম্রাজ্ঞী অমাত্যদের বিশাল একটা দল আর সাথে মালবাহী বহর নিয়ে–তাঁদের সাথে বিশাল কোনো বাহিনী নেই–কাশ্মীরের অভিমুখে চলেছেন, খুররমকে সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করার পরে তারা খুশি মনে ধরেই নিয়েছেন যে তাঁদের এই মুহূর্তে ভয় পাবার মত আর কোনো হুমকি নেই। তাদের যদি হিসাবে ভুল হয়ে থাকে তাহলে কি হবে এবং সে নিজে তাঁদের অনুগত, বশংবদও বলা চলে, যত রূঢ়ভাবেই দেয়া হোক না কেন সব আদেশ পালনকারী সেনাপতির ভূমিকা থেকে নিজেকে সম্রাজ্যের এবং সেই সাথে তাদের ভাগ্যের নিয়ন্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

    সম্রাট দম্পতি নয় বরং সেই কি তাদের নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থানে নেই? সে আর তার অনুগত দশ হাজার সৈন্য যারা সবাই ব্যক্তিগত ভাবে তার প্রতি অনুগত সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীকে অনুসরণ করতে শুরু করে এবং তাদের নিকট হতে খুররমের সন্তানদের ছিনিয়ে নেয় তাহলে কি হবে? এই মুহূর্তে মৈত্রী করার চেয়ে তখন কি সে খুররমের অনুগ্রহ লাভের জন্য সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে না? আরও ভালো হয়, যদিও সেটা আরও দুঃসাহসের কাজ হবে, সে আফিম আসক্ত সম্রাট আর তাঁর স্ত্রীকেও খুররমের সন্তানদের সাথে বন্দি করে, সে তাহলে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনার শর্ত নির্ধারণের সুযোগ পাবে। তার অনুগ্রহ লাভ করতে সম্রাট আর খুররম একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করুক। সে যদি খুররমকে ধাওয়া করা অব্যাহত রাখে বা এই মুহূর্তে তার সাথে মৈত্রীর সম্বন্ধ স্থাপন করে তাহলে সে আর কত সম্পদ লুট করতে পারবে বা কত বেশি ক্ষমতার অধিকারী হবে? এমন একটা কৌশল মোটেই কল্পনা নয়। তাঁর দীর্ঘ সামরিক অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে যে সবচেয়ে দুঃসাহসী আর অপূর্ববিদিত পরিকল্পনা অনেক সময় সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করে সম্ভবত তাঁদের অভিনবত্ব দ্বারা বিস্ময় আর আতঙ্ক সৃষ্টির কারণে। সে ভাবে পুরো বিষয়টাই ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু সে বিপদের মুখোমুখি হয়ে বা দীর্ঘ প্রতিকূলতা পরিহার করার পরিকল্পনা করার সময়েই সে কেবল বেঁচে রয়েছে বলে অনুভব করতে পারে। একজন সৈন্য হিসাবে এটাই তার প্রথম পরিচয়। আগামীকাল সকালে সে অবশ্যই নিজের লোকদের সাথে আলোচনা করবে কিন্তু তাদের আনুগত্য কিংবা পুরষ্কারের জন্য তাদের আকাঙ্খ সম্বন্ধে তার ভিতরে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর মন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। সে পুরো রাজকীয় দলকেই বন্দি করবে এবং সম্রাট তৈরি আর বিনাশের খেলা খেলবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার কয়েক মিনিটের ভিতরে মশার ভনভন শব্দ আর গরম উপেক্ষা করে, মহবত খান গভীর, নিরপদ্রব নিদ্রায় তলিয়ে যায়।

    *

    জাহাঙ্গীর তার তাবুর পুরু গালিচার উপরে রেশমের বুটিদার কারুকাজ করা আবরণ দ্বারা আবৃত তাকিয়ার গায়ে আরেকটু আরাম করে নিজেকে স্থাপন করে। তিনি ভাবেন, তিনি বৃদ্ধ হচ্ছেন। রাজকীয় সৈন্যসারি–প্রায় এক মাইল দীর্ঘ–উত্তরপশ্চিম দিকে আরেকটা দিনের মন্থর অগ্রযাত্রা সমাপ্ত করার সময় হাওদায় প্রায় আটঘণ্টা অতিবাহিত করে তার সমস্ত শরীরের মাংসপেশী ব্যাথায় টনটন করছে। ঝিলম নদীর ফেনায়িত সবুজ স্রোতধারার দৃশ্য, তাদের কাশ্মীর পৌঁছাবার পূর্বে শেষ বিশাল অন্তরায়, প্রীতিকর। সেইসাথে অবশ্য সম্রাটের লাল তাবুও যা আগেই প্রেরণ করা হয়েছিল এবং ইতিমধ্যেই নদীর তীরে স্থাপিত হয়েছে।

    ‘আমরা অতিক্রম করা কত দ্রুত আরম্ভ করবো? মেহেরুন্নিসা, যে একটা নিচু তেপায়ার উপরে তার পাশেই বসে রয়েছে, জানতে চায়।

    ‘আমার আধিকারিকেরা জানিয়েছে পুরো বহরটার নদী অতিক্রম করতে দুই দিন, হয়তো আরও বেশি সময় লাগবে। তুমি দেখতেই পাচ্ছো, পাহাড় থেকে নেমে আসা বরফ গলা পানিতে ঝিলমের পানি কেমন স্ফীতি লাভ করেছে। সেতু নির্মাণ করতে একটু বেশি সময়ই লাগবে। তারা বলেছে আমরা দ্বিতীয় দিনের শুরুতে নদী অতিক্রম করবো।’

    ‘কোনো ব্যাপার না। আমাদের যাত্রা বিরতি করার স্থানটা ভালোই হয়েছে এবং আমাদের তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই। সে নিজের মুখের উপর থেকে চুলের একটা গোছা সরায়। আপনি ক্লান্ত। আমি একটু পরেই পরিচারকদের আদেশ দেব হাম্মামখানায় আগুন জ্বালাতে যাতে আপনি গোসল করতে পারেন।

    জাহাঙ্গীর মাথা নাড়ে এবং চোখ বন্ধ করে। তিনি কৃতজ্ঞ যে মেহেরুন্নিসা কাশ্মীর আসবার পরামর্শ দিয়েছিল। খুররমের সাথে বিরোধ অন্তত নিষ্পত্তি হয়েছে এবং রাজধানী আগ্রা থেকে এত দূরে ভ্রমণ করা এখন তার জন্য নিরাপদ। মাজিদ খানের নিকট হতে আগত শেষ বার্তা অনুসারে, খুররম বালাঘাট পৌঁছে গিয়েছে এবং সেখানের সুবেদার হিসাবে নিরবে নিজের কাজ আরম্ভ করেছে। মেহেরুন্নিসার আপত্তি সত্ত্বেও, সময়ই বলে দেবে, সে তার অংশের চুক্তির শর্ত রক্ষা করবে কি না জাহাঙ্গীর আশা যা সে করবে। নিজের দুই সন্তানকে সমর্পণ করাটা অবশ্যই তার সদাচারণের একটা নিদর্শন।

    গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা এখন যখন এড়ান সম্ভব হয়েছে সীমান্তের ওপাশের শত্রুর কাছ থেকে তার ভয় পাবার সামান্যই কারণ রয়েছে যারা এতদিন মোগল সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল ঠিক যেমন দূর থেকে শিয়াল আহত পশুর রক্তের গন্ধ টের পায়। তিনি আগ্রা ত্যাগ করার কিছুদিন পূর্বেই পারস্যের শাহের কাছ থেকে উপহার হিসাবে নিখুঁত কালো ছয়টা স্ট্যালিয়ন ঘোড়া এসেছে, সাথে ছিল অনন্ত বন্ধুত্বের স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে একটা চিঠি। কিন্তু জাহাঙ্গীর খুব ভালো করেই জানেন যে শাহ যদি সামান্যতম সুযোগ আঁচ করতে পারতেন তিনি হিরাত, কান্দাহার কিংবা হেলমন্দ নদীর এবং তাঁর সীমান্তের নিকটবর্তী অন্য কোনো শক্ত মোগল ঘাঁটি দখল করতেন।

    সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের পরে, তিনি উত্তেজনা প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং কাশ্মীরের হ্রদ আর পুস্পোদ্যান সেটা দিতে পারে। তার আব্বাজান মোগলদের জন্য প্রথমবার অঞ্চলটা দখল করার পরে সে প্রথমবার যখন এখানকার বসন্তে প্রথম ফোঁটা জাফরানের ফিকে বেগুনী ফুলের কেয়ারি দেখেছিল তখনই সে এলাকাটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। সে সেখানে আকবরের নৈকট্য অনুভব করে। ডাল হ্রদের ঝকঝকে বুকে সে হয়ত সারাটা রাজকীয় নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াবে বা শিকারের সন্ধানে আশেপাশের পাহাড়ে ঘোড়ায় চেপে ঘুরে বেড়াবার অবসরে ধীরে ধীরে হয়ত মানসিক প্রশান্তি ফিরে পাবে যা খুররম নষ্ট করে দিয়েছিল। তিনি হয়ত নিজের শারীরিক শক্তিও পুনরুদ্ধার করতে পারবেন এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যে অনবরত কাশির প্রকোপ তাকে পর্যদস্ত করেছে সেটা হয়ত সেরেও যেতে পারে।

    তিনি সহসা বাইরে কোথাও থেকে বাচ্চাদের গলার স্বর ভেসে আসতে শুনেন। ওটা দারা শুকোহ নাকি আওরঙ্গজেবের কণ্ঠ?

    মেহেরুন্নিসা মাথা নাড়েন। আমি তাদের নদীর তীরে তীরন্দাজি অনুশীলন করতে বলেছি। বাচ্চা দুটো এতবেশী প্রাণবন্ত… যাত্রার ক্লান্তি তাঁদের এতটুকুও স্পর্শ করে না।

    ‘আমি প্রায়ই ভাবি বেচারাদের তাদের বাবা-মার কাছ থেকে পৃথক করাটা কি ঠিক হয়েছে। তাদের নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে।’

    ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ ছিল না। সাম্রাজ্যের ভিতরে শান্তি স্থাপন করাটা জরুরি ছিল এবং তারা আমাদের হেফাজতে থাকলে সেটা অর্জন করতে সহায়তা করবে। আমরা তাঁদের সাথে ভালো আচরণ করছি। তাঁদের কোনো কিছুর অভাব রাখা হয়নি।’

    ‘কিন্তু তারা নিশ্চয়ই তাদের বাবা-মা’র অভাব অনুভব করে। তারা অন্তত তিনমাস তাঁদের না দেখে রয়েছে। আওরঙ্গজেবকে যদিও যথেষ্ট উহ্লুই মনে হয় কিন্তু দারা শুকোহকে আমি মাঝে মাঝে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি এবং ভ্রু কুঁচকে রয়েছে আর আমি নিজেকে প্রশ্ন করি সে কি চিন্তা করছে…’।

    ‘সে একটা বাচ্চা ছেলে। সে সম্ভবত ভাবছে সে আবার কখন শিকারে কিংবা বাজপাখি উড়াতে যাবে। মেহেরুন্নিসা দ্রুত আর ভাবনাটা মন থেকে দূর করার স্বরে বলে। আমার এখন মনে হয় নিজেরই হাম্মানের তাবুতে যাওয়া উচিত পানি গরম করার বিষয়টা তদারক করতে। গত সন্ধ্যায় পানি ঠিকমত গরম করা হয়নি–পরিচারকেরা অলস হয়ে উঠেছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ কাঠ সংগ্রহ করে নি। আমি এরপরে আপনার সন্ধ্যাবেলার সুরা প্রস্তুত করবো।’

    মেহেরুন্নিসা চলে যাবার পরে, জাহাঙ্গীর পুনরায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। তিনি দারা শুকোহ আর আওরঙ্গজেবের ভক্ত হয়ে উঠেছেন এবং আজকাল টের পান তাঁর প্রতি তাদের প্রাথমিক স্বল্পভাষিতা হয়ত শিথিল হতে শুরু করেছে। পিতা আর পুত্রের সম্পর্কের চেয়ে দাদাজান আর তাঁর নাতির মধ্যকার সম্পর্ক আরো কম অস্বস্তিকর হওয়া উচিত… প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো অনুষঙ্গ সেখানে থাকতে পারে না। তাঁর নিজের আব্বাজান আকবর হয়ত এই কারণেই তার নাতিদের মাঝে এমন আনন্দ খুঁজে পেতেন।

    *

    ‘সেনাপতি, আমরা রাজকীয় বহরের নাগাল ধরে ফেলেছি। মহামান্য সম্রাট ঝিলম নদীর তীরে আমাদের প্রায় পাঁচ মাইল সামনে গত দু’রাত ধরে শিবির স্থাপন করে অবস্থান করছেন যখন তার লোকেরা নদীর উপর নৌকা দিয়ে সেতু নির্মাণে ব্যস্ত। তাঁর অধিকাংশ সৈন্য–আমার ধারণা তাঁর সাথের তিন হাজারের দুই হাজার–আজ সন্ধ্যাবেলা অন্ধকার নামার আগেই নদী অতিক্রম করেছে এবং আমি তারপরে চিৎকার করে রাতের মত পারাপার বন্ধ রাখার আদেশ দিতে শুনেছি এবং তারপরে রাতের খাবার তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমি নিশ্চিত রাজকীয় বহর আগামী কাল নদী অতিক্রম করবে,’ চারপাশের ভূপ্রকৃতির সাথে মিশে যাবার জন্য ধুসর খয়েরী রঙের পোষাকে আপাদমস্তক আবৃত গুপ্তদূত সেদিন সন্ধ্যাবেলা অন্ধকার নামার পরে ভারমুক্ত মহবত খানকে জানায়।

    মহবত খান তার লোকদের মানসিকতা সম্বন্ধে ঠিক যেমনটা আশা করেছিল তাঁরা তাঁর সাহসী আর আবেগতাড়িত পরিকল্পনার প্রতি সাথে সাথে এবং সবস্বরে নিজেদের সমর্থন জ্ঞাপন করে অনিবার্য ঝুঁকি আর বিপদের সম্ভাবনা সত্ত্বেও। তার পোড় খাওয়া রাজপুত বাহিনীর পুরো দলটাও একই রায় দিয়েছে। রাজকীয় বহরের চেয়ে আটগুণ দ্রুত অগ্রসর হয়ে তারা দ্রুত ব্যবধান হ্রাস করেছে। আসবার পথে কোনো রাজকীয় আধিকারিক তাঁদের এহেন দ্রুততার বা তাদের অভিযান সম্পর্কে খোঁজখবর নিলে মহবত খান জোরালো কণ্ঠে যখন জানিয়েছে যে আরেকটা সফল অভিযানের সংবাদ সে নিজে সম্রাটকে দিতে চায় তারা সহজেই সন্তুষ্ট হয়েছে। তা যাই হোক সে কৃতজ্ঞ যে ধাওয়া করার পর্ব সমাপ্ত হয়েছে এবং সময় হয়েছে তাঁদের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার।

    শিবিরের পেছনের অংশে কি পাহারার বন্দোবস্ত রয়েছে?’ মহবত খান জানতে চায়।

    না, গুপ্তদূত উত্তর দেয়। প্রহরী অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু সেটাও গুটি কয়েকজন এবং তারা শিবিরের সীমানার কাছাকাছি অবস্থান করে আর তাঁদের দেখে ভীষণ নিরুদ্বিগ্ন মনে হয়েছে। আমি পরিক্রমণে কেবল তাঁদেরই বের হতে দেখেছি যারা সম্ভবত নদীর অপর তীরে সামনের পথ পর্যবেক্ষণে রওয়ানা হয়েছিল।

    মহবত খান মৃদু হাসে। পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে চক্রান্ত শুরু করেছে। সকালে আরো রাজকীয় সৈন্য নদী অতিক্রম করা পর্যন্ত তাকে কেবল অপেক্ষা করতে হবে, সেতু পুড়িয়ে বা অবরোধ করে সে তারপরে শিবিরে হামলা চালিয়ে সম্রাট, সম্রাজ্ঞী আর খুররমের দুই সন্তানকে বন্দি করবে। নিরাপত্তার খাতিরে সে আর তার লোকেরা আজ রাতে অবশ্য এক বা দুই মাইলের মত পিছিয়ে যাবে এবং রান্নার জন্য আগুন জ্বালাবে না যা হয়ত তাদের অবস্থানের কথা ফাঁস করে দিতে পারে।

    *

    পাহাড়ের এবং ঝিলমের অববাহিকা ঘিরে রাখা পর্বতের ছায়ায় কনকনে শীতল একটা রাত। মহবত খান যখন সকাল হবার সাথে তার অশ্বারোহী যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়ে রওয়ানা দেয় তখনও চারপাশের চরাচর ভারি কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ভাগ্য নিঃসন্দেহে তাঁর পক্ষে রয়েছে। সে ভাবে নদী পারাপারের স্থানে কুয়াশার কারণে তারা কারো চোখে ধরা না পড়ে পৌঁছে। যাবে। কিন্তু সে অবশ্যই কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে না। সে অবশ্যই সংযত থাকবে এবং কোনো কিছুই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেবে না। সে অনেক সেনাপতিকে যুদ্ধে পরাজিত হতে দেখেছে কারণ তারা ভেবেছিল সবকিছু অতিমাত্রায় তাদের পক্ষে রয়েছে যার কারণে তারা ঠিকমত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে নি বা তাদের আক্রমণে যথেষ্ট যত্নশীল হয়নি। সে তাই তার অধীনস্তদের গত রাতে তাঁর জারি করা আদেশ সম্বন্ধে আরো একবার সতর্ক করে দেয়।

    ‘অশোক, সে তার বাহিনীর অগ্রভাগে বাদামি রঙের ঘোড়ায় উপবিষ্ট তরুণ রাজপুত যোদ্ধাকে ডাকে। তোমার দায়িত্ব নৌকার সেতু অকার্যকর করা যাতে কোনো রাজকীয় সৈন্য নদী পার হয়ে আসতে না পারে। দরকার মনে করলে সেতু পুড়িয়ে দেবে। রাজেশ, তুমি’–সে ঘুরে আরেকজন বয়স্ক ঝাঁকড়া দাড়িঅলা যোদ্ধার দিকে তাকায় যার মুখে চুলের প্রান্তদেশ থেকে দাড়ি পর্যন্ত আড়াআড়ি একটা ক্ষতচিহ্ন রয়েছে এবং যেখানে তাঁর বামচোখ থাকার কথা ছিল তার উপরে চামড়ার একটা পট্টি বাঁধা–’তুমি আর তোমার লোকেরা শিবির ঘিরে ফেলবে এবং দেখবে কেউ যেন দক্ষিণে আমাদের আক্রমণের খবর জানাতে পালিয়ে যেতে না পারে। আমি বাকি সৈন্যদের নিয়ে নিজে রাজকীয় পরিবারকে বন্দি করার জন্য যাব।

    ‘তোমরা সবাই মনে রাখবে, যতদূর সম্ভব হতাহতের বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবে কেবল আমাদের লোকদের ক্ষেত্রেই না রাজকীয় সৈন্যদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের তাদের যত বেশি সম্ভব তত বেশি লোকের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা, রাজকীয় পরিবারের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তাঁরা জীবিত অবস্থায় আমাদের কাছে তাদের ওজনের পরিমাণ সোনার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি মূল্যবান। তারা মারা গেলে তাঁদের ওজন আমাদের টেনে পাতালে নিয়ে যাবে, সবাইকে আমাদের শত্রুতে পরিণত করবে এবং সমঝোতা অসম্ভব করে তুলবে। তোমরা আমার কথা বুঝতে পেরেছো?’ তাঁর আধিকারিকেরা মাথা নাড়ে। ‘এখন এসো এই কুয়াশার সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করা যাক।

    মহবত খান বৃত্তাকারে ঘোড়া ঘুরিয়ে নিয়ে চরাচর ঢেকে রাখা ধুসরতার মাঝে এগিয়ে যায়। তার ভবিষ্যতের জন্য আগামী কয়েক ঘন্টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সে হয় সাম্রাজ্যের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে নতুবা যদি তার ধৃষ্টতাপূর্ণ প্রয়াস ব্যর্থ হয়, ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হবে–সম্রাট কখনও একজন বিশ্বাসঘাতককে দ্রুত বা সহজে মৃত্যুবরণ করতে দেন না। সে শূলবিদ্ধ অবস্থায় বা গরম সূর্যের নিচে গলা পর্যন্ত বালিতে পুতে যাঁদের মৃত্যু বরণ করার জন্য ফেলে রাখতে দেখেছিল কিংবা জীবন্ত অবস্থায় ভাবলেশহীন চোখের নির্যাতনকারী নাড়িভূড়ি ইঞ্চি ইঞ্চি করে টেনে বের করে একটা লাঠির চারদিকে পেঁচানোর স্মৃতি মনে পড়তে সে কেঁপে উঠে। তাকে তার নিজের এবং তাঁর লোকদের খাতিরে অবশ্যই সফল হতে হবে এবং সে সফল হবেই। সে নিজের কালো স্ট্যালিয়নকে গম্ভীর মুখে সামনে এগোবার জন্য তাড়া দেয়।

    এক ঘন্টার ভিতরে এবং কোনো ঘটনা ছাড়া বা তাদের অবস্থান ফাঁস হবার কোনো নির্দিষ্ট ইঙ্গিত ছাড়াই সে এবং তাঁর লোকেরা ঝিলম নদীর তীরের কিছু নিচু মাটির টিলায় উঠে আসে এবং নিচে অবস্থিত নৌকার সেতুর দিকে তাকায়। কুয়াশা এখনও যদিও রয়েছে কিন্তু দ্রুত পাতলা আর ছাড়া ছাড়া হয়ে উঠছে। মহবত খান কুয়াশার মাঝে বিদ্যমান ফাঁকের ভিতর দিয়ে দেখতে পায় যে আরো রাজকীয় সৈন্য সেতু অতিক্রম করছে তাদের সাথে রয়েছে হাতির পাল যাদের ওজন আর হাঁটার ভঙ্গির কারণে দ্রুত বহমান পানির স্রোতে সেতুর নৌকাগুলো টলমল করে উঁচুনিচু হয়, হিমবাহ আর পাহাড় থেকে বয়ে আনা পলি আর পাথরের কারণে পানির ধুসর সবুজাভ দেখায়। গড়াতে থাকা কুয়াশার মাঝে বিদ্যমান আরেকটা ফাঁক দিয়ে মহবত খান দেখে যে লাল রঙের রাজকীয় তাবু এখনও তার পাড়ের দিকেই রয়েছে এবং তাদের পাশেই রান্নার চুলা জ্বলছে–সম্রাট আর সম্রাজ্ঞী সম্ভবত আলস্যের সাথে সকালের প্রাতরাশ সম্পন্ন করছেন। সে দরবারে নিজের উপস্থিতি থেকে জানে যে সম্রাট, পূর্ববর্তী রাতে নিজের মাত্রাতিরিক্ত সেবনের কারণে বিভ্রান্ত থাকায়–সেটা হতে পারে আফিম, সুরা কিংবা উভয়ের মিশ্রণ–প্রায়শই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেন আর আধা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন এবং দুপুরের আগে কখনও পুরোপুরি মানসিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হন না। সে দোয়া করে যে তিনি আজও যেন সেরকমই করেন কিন্তু সে এর উপর নির্ভর করতে পারে না।

    মহবত খান নিজের আধিকারিকদের দিকে ঘুরে আদেশ দেয়, নষ্ট করার মত সময় নেই। এখন সক্রিয় হও এবং দ্রুত। তোমাদের লোকেরা যেন শৃঙ্খলা বজায় রাখে। তাদের আমাদের নিশান অবমুক্ত করতে আদেশ দাও যাতে রাজকীয় সৈন্যরা আমাদের পরিচয় বুঝতে পারে আর আমাদের অভিপ্রায় সম্বন্ধে তাদের যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব অনিশ্চয়তার মাঝে রাখতে চেষ্টা করো।’ সে কথাটা শেষ করেই গোড়ালি দিয়ে নিজের কালো ঘোড়ার পরে তো দেয়, যা সাগ্রহে সাড়া দেয় এবং মাটির পাহাড়ের উপর দিয়ে নিচের শিবিরের দিকে দ্রুত নামতে শুরু করলে মাটির ঢেলা ছিটকে উঠে।

    *

    মহবত খান পাঁচ মিনিট পরে জাহাঙ্গীরের খাপছাড়াভাবে সুরক্ষিত শিবিরের ভিতর দিয়ে আস্কন্দিত বেগে ঘোড়া হাঁকিয়ে এগিয়ে যায়। প্রথম কয়েকজন প্রহরী এতটাই বিভ্রান্তবোধ করে যে তাঁরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেরি করে ফেলে এবং তারা অস্ত্রধারণ করার আগেই সংখ্যায় অনেকবেশি তার নিজের লোক এসে তাঁদের ঘিরে ফেলে। সে নদীর দিকে এগিয়ে যাবার সময় চারপাশে তাকায় এবং রাজেশের লোকদের শিবিরের চারপাশে নিজেদের দ্বারা একটা বৃত্তাকার ব্যুহ রচনা করতে দেখে আর অশোকের সাথের লোকেরা ঘোড়া হাঁকিয়ে নৌকার সেতুর দিকে ছুটে চলেছে, যাবার সময় তাঁদের ঘোড়ার খুরের আঘাতে রান্নার পাত্র এবং শিবিরের অন্যান্য আলগা উপকরণ ছিটকে যায়। সে গুলির কোনো শব্দ শুনতে পায় না এবং কোনো তীর বাতাসে ভাসতে দেখে না, সে এবার তাই রাজকীয় তাবুর দিকে অগ্রসর হতে আরম্ভ করে। সে অচিরেই তাবুর সামনে নিজেকে দেখতে পায় এবং সে ঝড়ের বেগে সেদিকে এগিয়ে যেতে বেশ কয়েকজন লোক আতঙ্কে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। তাদের শত্রুবিহীন মুখাবয়ব এবং কোমল, উজ্জ্বল রঙের কাপড় দেখে মনে হয় তারা হাম্মামের খোঁজা। সে এত জোরে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে যে ঘোড়াটা পেছনের পায়ে ভর দিয়ে প্রায় দাঁড়িয়ে পড়ে। মহবত খান তার বাহনকে স্থির করে খোঁজাদের একজনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য পিঠ থেকে দ্রুত লাফিয়ে নিচে নামে, নমনীয় দেহের অধিকারী তরুণ প্রথমে মহবত খানের হাত থেকে ছাড়া পেতে কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তি করে মোড়ায় কিন্তু কোনো লাভ হবে না বুঝতে পারা মাত্র সে প্রতিরোধের আর কোনো চেষ্টা করে না। মহবত খান দ্রুত তাঁর কাঁধ ধরে এবং জোরে ঝাঁকি দেয়। সম্রাট কোথায়?

    খোঁজা লোকটা কোনো কথা বলে না কিন্তু মাথা ঘুরিয়ে দশ ফিট দূরে অবস্থিত একটা এলাকার দিকে তাকায় যা শিকারের জটিল দৃশ্যাবলী অঙ্কিত কাঠের তিরস্করণী দ্বারা আলাদা করা এবং চামড়ার ফালি দিয়ে প্যানেলগুলো একত্রে বাঁধা। প্যানেলের নিচ দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ছে। হাম্মাম তাবু–গোসলের তাবু–মহবত খান ভাবে গতরাতের ভোগলালসার চিহ্ন ধুয়ে ফেলতে তিনি নিশ্চয়ই সেখানে রয়েছেন। খোঁজাটাকে একপাশে ছুঁড়ে ফেলে, সে দৌড়ে ঘিরে রাখা এলাকাটার দিকে যায় এবং লাথি মেরে কয়েকটা প্যানেলে ছিটকে ফেলে।

    গোলাপজলের গন্ধে ভেতরটা ভরে আছে। পাথরের একটা টুকরো থেকে তৈরি করা গোসলের বিশাল পাত্রটা থেকে বাষ্প উড়ছে যা সম্রাট ভ্রমণের সময় সর্বদা সাথে রাখেন কিন্তু গোসলের পাত্রটা খালি কেবল গরম পানি সেখানে রয়েছে এবং তাঁর পাশে যে দু’জনকে মহবত খান দেখতে পায় তাঁদের কমনীয় মুখে আতঙ্ক আর ভয় স্পষ্ট ফুটে রয়েছে। সে সহসা নদীর পাড় থেকে গাদাবন্দুকের পরপর কয়েকটা গুলির শব্দ শুনতে পায়। সম্রাট কোথায়? সবকিছু কি তাহলে ভেস্তে যেতে বসেছে? নাকি আল্লাহ না করেন, তাঁর দীর্ঘ যাত্রার সময় তাঁরই কোনো লোক কি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, জাহাঙ্গীরকে সুযোগ করে দিয়েছে তার জন্য ফাঁদ পাততে? মহবত খান ঘুরে দাঁড়ায় এবং প্রচণ্ড বেগে হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হতে থাকা অবস্থায় দৌড়ে হাম্মাম থেকে বের হয়ে আসে। সম্রাটকে খুঁজে বের করো!’

    *

    জাহাঙ্গীরের স্বপ্নে ইস্পাতের সাথে ইস্পাতের ঘর্ষণ আর চিৎকারের শব্দ ছন্দোবদ্ধ ভঙ্গিতে আন্দোলিত হয়। কিন্তু তারপরে সহসা নিকটবর্তী হতে, তারা তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ করে।

    তিনি নিজের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলোকে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করতে করতে নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ান, এবং তার কর্চিকে ডেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তিনি ধীর পায়ে তাবুর প্রবেশ মুখের দিকে এগিয়ে যান।

    মহবত খান ঘোড়ায় চেপে নদীর তীরে ফিরে যাবার জন্য মন স্থির করায় তাবুর পর্দা উঠার দৃশ্যটা তাঁর নজর এড়িয়ে যায় এবং তখনও রাতের পোষাক পরিহিত অবস্থায় ভেতর থেকে বের হয়ে আসা পিঠ টানটান করে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্বল অবয়বের সাথে সে কোনোমতে নিজেকে ধাক্কা খাওয়া থেকে বিরত রাখে। সে সাথে সাথে জাহাঙ্গীরকে চিনতে পারে, আগের চেয়েও কৃশকায় এবং চোখ আরও কোটরে ঢুকে গিয়েছে।

    সম্রাটই প্রথমে কথা বলেন। মহবত খান, এসব হট্টগোলের কি মানে?

    মহবত খান কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা খুঁজে পায় না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো মতে উত্তর দেয়। আমি সাম্রাজ্যের খাতিরে আপনাকে বন্দি করতে এসেছি।’

    ‘সাম্রাজ্যের খাতিরে বন্দি করতে? কি উদ্ভট কথা! তুমি কি বলতে চাও?

    ‘সম্রাজ্ঞী এবং আপনার বর্তমান পারিষদবর্গ আপনার না বরং তাদের নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করতে বেশি আগ্রহী। আপনাকে পরামর্শ দেয়ার জন্য তাদের চেয়ে আমি অনেক ভালো অবস্থানে আছি,’ মহবত খান আনাড়ির মত বলে।

    ‘তোমার এতবড় স্পর্ধা!’ জাহাঙ্গীর গর্জে উঠে তার চোখে মুখে সেই পুরাতন ক্রোধ আর আগুন ঝিলিক দেয় এবং তাঁর হাত কোমরের কাছে উঠে আসে যেখানে যদি তাঁর পোষাক সম্পূর্ণ হতো তবে সেখানে তাঁর খঞ্জরটা গোঁজা থাকত। খঞ্জর অনুপস্থিত দেখে তিনি চারপাশে নিজের প্রহরীদের খুঁজতে চেষ্টা করেন কিন্তু যে কয়েকজন তার চোখে পড়ে সবাই মাটিতে থেবড়ে বসে রয়েছে, হাত ইতিমধ্যে পিছমোড়া করে বাঁধা আর মহবত খানের লোকেরা সব জায়গায় উদ্যত তরবারি হাতে ঘুরে বেড়ায় প্রথম সকালের আলোয় তাদের হাতের তরবারি ঝিলিক দেয়। তিনি হাত নামিয়ে নেন এবং জানতে চান, পরামর্শদাতাদের এই সম্ভাব্য পরিবর্তন কি আমি নিজে পছন্দ করতে পারি?

    ‘জাহাপনা, যথা সময়ে, আপনি দেখতে পাবেন আপনার বর্তমান পরামর্শদাতাদের চেয়ে আমি কত ভালো পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। মহবত খানের মনে হয় আফিমের কারণে চোখের মণি প্রসারিত হওয়া সত্ত্বেও সম্রাট যেন নিজের পছন্দের বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন। তিনি অবশেষে মাথা নাড়েন যেন বুঝতে পেরেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের চেষ্টা করা বৃথা এবং ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে তার তাবুর লাল চাঁদোয়ার নিচে ফিরে যান। সম্রাটের তাবু পাহারা দাও কিন্তু তার সাথে শিষ্টতা বজায় রেখে আচরণ করবে। তিনি আমাদের সম্রাট।

    তাবুর অভ্যন্তরে জাহাঙ্গীর একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করেন। মহবত খান কি অর্জন করতে পারবে বলে মনে করেছে? জাহাঙ্গীর জানেন এই মুহূর্তে তার সামান্যই করণীয় রয়েছে। তার নাতিরা আর মেহেরুন্নিসা কোথায়? তিনি শীঘ্রই বাইরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে উত্তর জানতে পারেন।

    ‘সেনাপতি, আমরা খুররমের সন্তানদের হেফাজতে নিয়েছি, তিনি শুনতে পান। আমরা তাকে অন্যদের চেয়ে সামান্য দূরে স্থাপিত কঠোর পাহারাধীন এক তাবুতে খুঁজে পেয়েছি। দারা শুকোহ কেবল জানতে চাইছে তাদের বাবা-মার কাছে কখন ফিরিয়ে দেয়া হবে সে কেবলই বলছে আমাদের তাহলে ভালোমত পুরস্কৃত করা হবে। আমি তাকে বলেছি যে সেটা এখনই হবে না আর তাকে ধৈর্যধারণ করতে বলেছি। আওরঙ্গজেব সামান্যই কথা বলেছে কিন্তু আমি তার চোখে ঔদ্ধত্য দেখেছি।

    ‘রাজেশ, সেটা ভালো, জাহাঙ্গীর মহবত খানের উত্তর শুনতে পান। ‘খুররম, তাহলে অন্তত আমাদের সাথে সমঝোতায় আসতে পারলে খুশিই হবে। ছেলেদের ভালোমত যত্ন নাও কিন্তু তাদের চোখে চোখে রাখবে। আমি তাদের পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করছি না। সম্রাজ্ঞী কোথায়?

    ‘আমি জানি না। শিবিরের সবস্থানে আমার লোকেরা খুঁজে দেখছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায় নি। হাম্মামখানার আমরা এক খোঁজাকে পেয়েছি যে বলছে কালো একটা আলখাল্লা পরিহিত অবস্থায় নিজের ধনুক আর তীরের তূণ নিয়ে তিনি লাফিয়ে একটা ঘোড়া পিঠে উঠে দুই পা দু’পাশে ঝুলিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে বের হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেনাপতি কোনো মেয়ের পক্ষে এভাবে ঘোড়া চড়া অসম্ভব।

    ‘সম্রাজ্ঞীকে তুমি কখনও দেখোনি তাই এমন বলছো। এই মহিলার বক্ষপিঞ্জরে বাঘিনীর হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে।

    জাহাঙ্গীর মৃদু হাসে। মহবত খানকে মোটেই আহাম্মক বলা যাবে না। মেহেরুন্নিসা মুক্ত থাকায় এখনও সব আশা শেষ হয়ে যায় নি।

    তাবুর বাইরে মহবত খান, দুশ্চিন্তা আর আশঙ্কায় তাঁর আরো একবার কুঁচকে উঠেছে, দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের ঘোড়ায় উপবিষ্ট হোন এবং নৌকার তৈরি সেতুর দিকে এগিয়ে যান। সম্রাজ্ঞী যদি আসলেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হোন তাহলে তার পরিকল্পনা কেবল অর্ধেক সফল হবে। নদী খুব কাছেই অবস্থিত হওয়ায় কয়েক মিনিটের ভিতরে তাকে আবার ঘোড়ার পিঠ থেকে নামতে দেখা যায়। সেতুর চারপাশে প্রাণের কোনো লক্ষণ নেই, যা অক্ষত রয়েছে তার কয়েকজন তবকিকে অনতিদূরে একটা উল্টান মালবাহী শকটের পেছনে আত্মগোপন করে থাকতে দেখা যায়। তারা তাদের বন্দুক গুলিবর্ষণের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় তেপায়ায় রেখে অবস্থান করছে এবং নদীর অপর পাড়ে তাক করা অবস্থায় লম্বা ব্যারেলের উপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। অন্যদের ভিতরে অশোককে দেখা যায়, ঝুঁকে তাদের দু’জন সহযোদ্ধার তদারকি করছে যা দেখতে বন্দুকের গুলির ক্ষতচিহ্নের মত মনে হয়। অন্যত্র রক্তে রঞ্জিত কাপড় নিয়ে, নদীর তীরে দু’জনের মৃতদেহ হাত পা ছড়িয়ে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে। মহবত খানের কাছে এখন স্পষ্ট হয় গুলির শব্দ কোথা থেকে এসেছিল এবং সে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ধারণা করতে পারে এখানে আসলে কি ঘটেছিল। অশোক, কি ব্যাপার?

    ‘প্রথমে সবকিছুই ভালোমত চলছিল। আমরা সেতুতে উঠার পথ অবরোধ করি। সেতুর উপরে যারা অবস্থান করছিল তারা আমাদের আদেশ অনুযায়ী যদি বাধা দিতে চেষ্টা করে তাহলে আমাদের বন্দুকেন নিশানা হবার হুমকি শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে নেমে আসে বা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। যারা নদী পার হবার জন্য অপেক্ষা করছিলো–যাদের বেশির ভাগই খচ্চরের সাথে খচ্চর-চালক–প্রায় সাথে সাথে আত্মসমর্পণ করে কেবল তাঁদের পারাপারের ব্যবস্থা তদারককারী এই আধিকারিক তরবারি বের করেছিল। মহবত খান অশোকের হাতের নির্দেশ অনুসরণ করে তাকিয়ে হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা সুঠামদেহী এক অবয়বকে দেখতে পায় যাকে অশোকের দু’জন লোক পাহারা দিচ্ছে। তাকে নিরস্ত করার আগেই সে আমার একজন অধস্তন সেনাপতিকে সামান্য আহত করেছে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’

    কিন্তু তাহলে অন্য লোকগুলো কীভাবে আহত হল আর মারা গেল?

    ‘এই ঘটনার কয়েক মিনিটের বেশি পরের কথা না যখন আমি আমার পেছনে ঘোড়ার ধাবমান খুরের আওয়াজ শুনতে পাই এবং আলখাল্লা পরিহিত একটা অবয়ব প্রচণ্ড গতিতে ঘোড়া হাঁকিয়ে সেতুর দিকে ছুটে যায়। আমি চিৎকার করি, “থামুন, নতুবা আমরা গুলি করব!” অশ্বারোহীর মাথা থেকে এমন সময় মস্তকাবরনী খসে গেলে আমি লম্বা কালো চুল বাতাসে উড়তে দেখি। আমি এক মুহূর্তের জন্য ভাবি যে অশ্বারোহী একজন মহিলা কিন্তু তারপরে আমি ধারণাটা নাকচ করে দেই। কোনো মেয়ের পক্ষে দু’পাশে দু’পা ঝুলিয়ে দিয়ে এভাবে প্রাণীটাকে হাত আর হাঁটু দিয়ে তাড়া দেয়া সম্ভব না। আমি গুলি করার আদেশ দিতে যাব তখন আমি বুঝতে পারি যে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমি এতবেশি সময় নিজের সাথে তর্ক করেছি যে অশ্বারোহী সেই সুযোগে সেতুতে উঠার পথ পাহারা দেয়া দুই প্রহরীকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছে একজন কাঁপতে কাঁপতে পানিতে গিয়ে পড়েছে আর সে ইতিমধ্যে সেতু অর্ধেক অতিক্রম করে ফেলেছে ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের দাপটে সেতুর নৌকাগুলো ভীষণভাবে টলমল করছে। আপনার নির্দেশ স্মরণে থাকায় যে প্রভাবশালী হতে পারে এমন লোকদের ক্ষতি যেন না হয় আমি অশ্বারোহীকে নির্বিঘ্নে সেতু অতিক্রম করার সুযোগ দেই। আমি লোকটার সাহসের তারিফ না করে পারছি না। তিনি নদীর অপর তীরে পৌঁছাবার পরে গাদাবন্দুকের গুলিবর্ষণ শুরু হয় এবং অবিরাম গুলিবর্ষণের প্রথম ঝাপটাই আমাদের হতাহতের কারণ। আমরা তারপর থেকে কিছুক্ষণ পর পরই গুলি বিনিময় করছি।’

    ‘তুমি গুলি না করে ভালো করেছে। তুমি চিন্তাও করতে পারো না তুমি তাহলে কাকে খুন করে বসতে,’ মহবত খান বলেন। তারপরে, তার পরিস্থিতিতে বিষয়টা অদ্ভুতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ চিন্তা করে, তিনি যোগ করেন, ‘সেতু পুড়িয়ে দাও, যাতে কেউ ফিরে আসতে না পারে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএম্পায়ার অভ দ্য মোগল : দ্য সার্পেন্টস্ টুথ – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
    Next Article রুলার অভ দা ওয়ার্ল্ড : এম্পায়ার অভ দা মোগল – অ্যালেক্স রাদারফোর্ড

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }