Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এ টেল ট্যু সিটীজ – চার্লস ডিকেন্স

    চার্লস ডিকেন্স এক পাতা গল্প93 Mins Read0

    এ টেল ট্যু সিটীজ – ৮

    ০৮. মৃত্যু ও অমৃত

    পাগলের মত ডাক্তার ম্যানেট ঘুরতে লাগলেন শহরের পথে-পথে। যে-যেখানে বন্ধু আছে, যেখানে তিলমাত্র সহানুভূতি পাওয়ার আশা আছে, সকলের দরজায় পাগলের মত ঘুরতে লাগলেন তিনি। এই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডাক্তার হিসেবে বহু লোকের বহু উপকার তিনি করেছেন। কিন্তু কেউ-ই আজ বেপরোয়া বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে রাজী হল না। আর ওধারে তার প্রতীক্ষায় ব্যাঙ্কের অফিসে বসে রইলেন লরী ও–

    সিডনী কার্টন!

    সিডনী কার্টন?–হ্যাঁ, সেই উছুঙ্খল, সুরাসক্ত, চরিত্রহীন, মক্কেলহীন উকিল সিডনী কার্টন! সে বহুদিন থেকে ফ্রান্সে রয়েছে। লুসীরা ডার্নের অনুসরণ করে প্যারীতে উপনীত হবার ঠিক পরেই সে এসেছে। কিন্তু ঘটনার গতি লক্ষ্য করা ছাড়া আর কিছুই সে করেনি। কী-ই বা করবার ছিল? যেখানে ডাক্তার ম্যানেটের মত সম্মানিত ব্যক্তিকেই অগ্রসর হতে হয়েছে অতি সাবধানে, সেখানে বিদেশী সিডনী কি করতে পারে? সে শুধু বাইরে বাইরে সন্ধান নিয়েছে, দুশ্চিন্তায় কাতর লুসীর কাছে গিয়ে সমবেদনা জানাবার প্রয়াস সে করেনি।

    আজ, ডার্নের ভাগ্য যখন চূড়ান্তভাবে স্থির হয়ে গেছে, সে এসে বসলো লরীর অফিসে।

    এখানে সিডনী কার্টনের আর একটু পরিচয় দেওয়া দরকার। যেদিন আদালতে তার চেহারার সমত্ব দেখিয়ে সে ডানের মুক্তির উপায় করে দেয়, সেদিন স্বভাবতই ডাক্তার ম্যানেট আর লুসীর দৃষ্টি তার উপর পড়েছিল। ডার্নের সঙ্গে সঙ্গে সে-ও লুসীদের বাড়িতে আসে। লুসীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে, ডানের মতন সেও মুগ্ধ হয়। কিন্তু যখন জানতে পারলো, লুসী ডার্নেকে ভালবাসে, তখন কার্টন তার মনের সমস্ত ভালবাসার খবর তার নিজের মনেই রুদ্ধ করে রেখে দিলো। জগতে আর কেউই সে-খবর জানলো না। লুসীর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে কাটনের অবলম্বনহীন জীবন ক্রমশ একেবারেই ব্যর্থ হয়ে গেল। আদালতে তার পসার একদম কমে গেল! শোনা গেল, লন্ডনের আঁধার পল্লীর অন্ধকার হোটেলে-হোটেলে, দুশ্চরিত্র লোকেদের সঙ্গে সে ঘুরে বেড়ায়। ক্রমশ সে নিজে ইচ্ছে করেই লুসীদের বাড়ি আসা বন্ধ করে দিলো, কিন্তু লুসীকে না দেখে তার মন যখন হাঁপিয়ে উঠতো, তখন এক একদিন হঠাৎ এসে উপস্থিত হতো। কিন্তু লুসীর সঙ্গে কোন কথা বড়-একটা বলতো না। লুসীর মেয়েকে আদর করে চলে যেত। যতক্ষণ সে লুসীদের বাড়িতে থাকতো, ততক্ষণ তার কথাবার্তায়, তার ভঙ্গিতে, কেউ বিন্দুমাত্র আপত্তি করবার কিছু পেতো না। সীদের বাড়িতে না এলেও, লুসীদের সব খবরই সে রাখত। তার গোপন ভালবাসার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, কোন রকমে লুসীর সাহায্যে আসা। তাই যখন সে শুনলো, ডার্নে ফ্রান্সে গিয়ে বিপন্ন হয়েছে, তাকে উদ্ধার করবার জন্যে লুসীরাও ফ্রান্সে চলে গিয়েছে, সে আর লন্ডনে বসে থাকতে পারেনি।

    হ্যাঁ, একটা কাজ করেছে সিডনী ইতিমধ্যে। সেই গুপ্তচর বরসাদ। সে এখন ফরাসী-সাধারণতন্ত্রে চাকরি করে। সেই বরসাদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করেছে সিডনী। লন্ডনের ওল্ড বেইলী কোর্টে যখন মামলা হয় ডার্নের, তখন এই বরসাদ ছিল সরকারপক্ষের সাক্ষী। সে যে গভর্নমেন্টের মাইনে-করা গোয়েন্দা, তার কাজই যে ছিল জনসাধারণের ভিতর ঘুরে-ঘুরে রাজদ্রোহীর সন্ধান করা, এটা একরকম প্রমাণই হয়ে গিয়েছিল সে-মামলায়। সিডনী সে-কথা জানতো। আজ বরসাদ ইংলন্ড থেকে তাড়িত হয়ে ফরাসী-সাধারণতন্ত্রের চাকরি নিয়েছে–প্রজাদরদী সেজে। তার পূর্ব-ইতিহাস যদি প্রকাশ হয়ে পড়ে, এই মুহূর্তে চাকরি তো যাবেই তার, এই মুহূর্হে বিদ্রোহীরা তাকে গিলোটিনের মুখে ফেলে দেবে।

    হ্যাঁ, সিডনী জানে বরসাদের পূর্ব-ইতিহাস। সিডনী যদি বিরক্ত হয়, বত্সদের সর্বনাশ করতে পারে এক মিনিটে। ইংলন্ডের সরকারী-গোয়েন্দার একটিমাত্রই স্থান আছে ফরাসী-সাধারণতন্ত্রে। সে-স্থান হল, গিলোটিনের তলায়। কাজেই বাদ আজ সিডনীর আজ্ঞাবহ। এবং

    এবং–বরসাদের চাকরি হল কনসিয়েরজারী কারাগারে। সেখানে সে প্রহরীদের একজন সর্দার। আর ঐ কনসিয়েরজারী কারাগারেই থাকে সেই সব বন্দীরা, যাদের উপর প্রাণদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ ডার্নেও সেইখানেই।

    ম্যানেটের প্রতীক্ষায় বসে থাকতে-থাকতে সিডনী চঞ্চল হয়ে উঠলো। ম্যানেট যা করবার, তা করুন! কিন্তু ধরে নেওয়া যাক, তিনি ফিরে এলেন ব্যর্থ হয়ে! তখন কী হবে? এই আসন্ন সর্বনাশ থেকে লুসীকে বাঁচাবার কোন উপায়ই কি সিডনীর হাতে নেই?

    লরীকে সে বললো–আপনি বসুন, আমি ঘুরে আসছি!

    সিডনী গেল বরসাদের সন্ধানে। তাকে খুঁজে বার করে অতি গোপনে, অতি সাবধানে সে তাকে বললো একটি কথা। একটি মিনতি, একটি অনুরোধ, একটি আদেশ! সে আদেশ যদি অবজ্ঞা করে বরসাদ,না! অবজ্ঞা করবার সাহস তার নেই, কেননা তাতে নিশ্চিত মৃত্যু বরসাদের!

    কিন্তু সে-আদেশ পালন করলেও যে মৃত্যু থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে, তার ভরসা কী? এত-বড় বিপজ্জনক কাজের কল্পনা কি করে করলো সিডনী, তাই ভেবে পেলো না বেচারী গুপ্তচর!

    কিন্তু সিডনী কঠোর, কোন কারণেই তার সংকল্প ত্যাগ করবে না। তার এ আদেশ মানতেই হবে বরসাদকে! নইলে চললো সিডনী বরসাদের পূর্ব-ইতিহাস প্রকাশ করে দিতে! বরসাদ ভেবে দেখলো–সিডনীর সাহায্য করলে, প্রাণ বাঁচলেও বাঁচতে পারে। কিন্তু সাহায্য না করলে প্রাণ যাবেই। অতএব–

    বরসাদের সঙ্গে সমস্ত পরামর্শ স্থির করে, সিডনী গেল এক ওষুধের দোকানে। কয়েকটা ওষুধ সে কিনলো। বিক্রেতা সাবধান করে দিলো সিডনীকে—ওষুধগুলি একসাথে মিশিয়ে ফেলবেন না কিন্তু! তাতে কী আশঙ্কা আছে জানেন তো?

    –জানি–বলে সিডনী বিদায় হল।

    তারপর সিডনী গেল ডিফার্জের মদের দোকানে। এখানে সে যায় মাঝে-মাঝে। মার্কুইস এভরিমন্ডির সঙ্গে চেহারার আশ্চর্য মিল আছে এই ইংরেজের, তা সবাই জানে ডিফার্জের দোকানে। সবাইকে এ-কথাটা আগে থাকতে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন বিবেচনা করেছে সিডনী।

    মদের দোকানে বসে রইলো বহুক্ষণ সিডনী। মদ খাবার ভানই করলো, কিন্তু খেলো খুব সামান্যই। আজ তার মাথা ঠিক রাখা প্রয়োজন। আজ মদ খেলে চলবে না। খবরের কাগজ আড়াল দিয়ে সুরাপানের ভানই করলো আজ সিডনী। অবশেষে মদটা মাটিতে ফেলে দিয়ে সে বেরিয়ে এল।

    রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর।

    লরীর ঘরে তখনও লরী একা। তবে বেশিক্ষণ আর অপেক্ষা করতে হল না। ম্যানেট ধীরে-ধীরে সিঁড়িতে উঠছেন শোনা গেল। ধীরে-ধীরে তিনি ঘরে এসে ঢুকলেন।

    খবর আর জিজ্ঞাসা করে জানতে হল না। ম্যানেটের চোখের পাগলের মত দৃষ্টি, তার কম্পিত পদক্ষেপ, তার উস্কোখুস্কো চুল–সব সমস্বরে ঘোষণা করলো– না, কিছু হয়নি, কিছু করতে পারিনি, কোন আশা দেয়নি কেউ!

    কিন্তু সে যাই হোক, ম্যানেটের হল কী? তিনি পাগলের মত চারিদিকে চাইছেন কেন? কী খুঁজছেন তিনি? তার ভাব দেখে লরীর শঙ্কা হল–তিনি হয়তো ঠিক প্রকৃতিস্থ নেই!

    লরীর মনে এক মহা আশঙ্কা জেগে উঠলো। তবে কি এই শোকের ধাক্কায় ম্যানেট আবার পাগল হয়ে যাবেন? কিছুক্ষণ কাতর ভাবে এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে, অতি ক্ষীণ স্বরে ডাক্তার ম্যানেট জিজ্ঞাসা করলেন–কোথায় গেল সেগুলো? আমার জুতো-সেলাইয়ের সরঞ্জামগুলো?

    আকাশ ভেঙে পড়ল লরীর মাথায!

    ম্যানেট আবার পাগল হয়ে গেছেন!

    আবার তার মন ফিরে গেছে ব্যাস্টিলের ১০৫ নং গহ্বরে, যেখানে সারা দিনমান তাঁর একমাত্র কাজ ছিল, জুতো সেলাই করা! দীর্ঘ দশ বৎসরের সংসার-ধর্মের ইতিহাস এক নিমেষে তিনি ভুলে গেছেন, ভুলে গেছেন লুসীকে পর্যন্ত–যে-লুসী হল তার চোখের আলো, বুকের রক্ত, ইহ-পরকালের একমাত্র অবলম্বন।

    লরী আর কার্টন তাকে ধরে শুইয়ে দিলেন সোফার উপরে, আগুনের পাশে!–এখনই আনিয়ে দিচ্ছি আপনার সেলাইয়ের সরঞ্জাম–এই বলে আশ্বাস দিলেন অবুঝ পাগলকে। পাগল শ্রান্ত দেহে ঘুমিয়ে পড়লো সেই সোফায় শুয়ে!

    তখন সিডনী আর লরী পরস্পরের দিকে তাকালেন। লরীর চোখে শুধুই গভীর নৈরাশ্য। সিডনীর চোখে গভীর নৈরাশ্যের ভিতরও ক্ষীণ একটু উত্তেজনার আভাস!

    সে বললো–হ্যাঁ, সবই শেষ হল বলা চলে। তবে যতক্ষণ শাস, ততক্ষণ আশ! কাল বেলা তিনটেয় ডার্নের শেষ নিশ্বাস পড়বার কথা! ততক্ষণ–দেখা যাক কি হয়! আপনার পাসপোর্টগুলি তৈরি আছে তো?

    লরীর বোধগম্য হল না–এ-সময়ে পাসপোর্টের কথা কেন? তবু তিনি পকেট থেকে বার করে দেখালেন–একতাড়া কাগজ। সেগুলি ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়ার অনুমতিপত্র! লরী, ম্যানেট, লুসী, ডার্নে, লুসীর মেয়ে, লুসীর দাসী, লরীর ভৃত্য– সকলের জন্য এক-একখানা। সিডনী নিজের পকেট থেকে ঐরকমই আর-একখানা পাসপোর্ট বার করে লরীর হাতে দিল। সেখানিতে নাম লেখা–সিডনী কার্টন, এডভভাকেট, ইংরেজ!

    জিজ্ঞাসু নেত্রে লরী চাইলেন সিডনীর পানে।

    সিডনী বললো–কাল বেলা দু’টোর সময় ম্যানেটের বাড়িতে আমি আসবো। গাড়িতে আপনারা সব উঠে বসে থাকবেন। প্রতীক্ষা করবেন আমার জন্য। আমি যে অবস্থাই এসে পৌঁছেই, তখনই আমায় গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেবেন সীমান্তপানে। কারণ, বিলম্বে বিপদের আশঙ্কা আছে। ডানের প্রাণ যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই ডার্নের স্ত্রী-কন্যাকে বন্দী করবার জন্য প্রস্তুত হয়েছে–এভরিমন্ডিদের চিরশত্রু মাদাম ডিফার্জ।

    এ পরামর্শ মনঃপূত হল লরীর। নিজের বা ম্যানেটের জন্য তিনি চিন্তিত নন, কিন্তু এভরিমল্ডি-বংশের শত্রুদের হাতে, লুসী ও তার কন্যার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা যে খুবই আছে, তা বোঝা শক্ত নয়। গভীর বিষাদে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি স্বীকৃত হলেন–কাল বেলা দু’টোয় তিনি গাড়িতে সবাইকে তুলে নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন প্যারী ছেড়ে যাবার জন্য, সিডনী এসে পৌঁছোলেই তাকে নিয়ে ছেড়ে দেবেন গাড়ি।

    ***

    বেলা তিনটে! ডার্নে শুনেছেন–বেলা তিনটেয় গিলোটিনের ছুরি পড়বে তাঁর কণ্ঠে! তার একার নয়, আরো একান্ন জন বন্দীর কণ্ঠে! বাহান্ন জন শত্রু নিপাত হবে সাধারণতন্ত্রের, ঐ একই সময়ে।

    বেলা তিনটে! সকাল থেকেই ডার্নের কানে ঘড়ির শব্দগুলো একটা বিশেষ বার্তা যেন শুনিয়ে শুনিয়ে যায়! সাতটা বাজলো। সাতটা বাজতে আর জীবনে শুনবে না ডানে! আটটা! আটটার বাজনা জন্মের শোধ এইবার শুনে নাও ডার্নে! নয়টা!–বারোটা! একটা….

    ডার্নে দু’টোর সময়ই তৈরি থাকবেন স্থির করেছিলেন। যাতে কারারক্ষীরা এসে এক সেকেন্ডও দেরি করতে না বাধ্য হয়–মার্কুইস এভরিমন্ডির জন্য!

    কিন্তু–এ-এ কী? সিডনী কার্টন? সিডনী কার্টন—লন্ডন থেকে প্যারীতে। এই সময়ে? যাই হোক, যা মনে করেই এসে থাকে কার্টন, একে দিয়ে লুসীকে একটা। শেষ খবর পাঠানো যেতে পারে হয়তো! একটা শেষ বিদায়বাণী!

    দু’একটা আজে-বাজে কথা বললো কার্টন! যেমন চিরদিন বলে সে! তারপর সে ডার্নেকে বলল–একটা চিঠি লেখ তোমার স্ত্রীকে! আমি পৌঁছে দিতে পারব!

    ডার্নে চিঠি লিখতে বসলেন। এ সময়ে মন স্থির করে চিঠি লেখা সহজ নয়। তবে, ডার্নের মন এ-অবস্থায়ও কতকটা স্থির। তা না হলে, এই বর্ষাধিক কালের অসহ্য অপমান আর যাতনায় কবে ভেঙে পড়তেন তিনি।

    চিঠি লিখতে লিখতে হঠাৎ ডানের চোখে পড়লো সিডনী হাত দিয়েছে তার বুকের ভিতর। কী যেন টেনে বার করছে! কী অদ্ভুত! লোকটা কি অস্ত্র নিয়ে এসেছে এই হাজার পারাওলায় ঘেরা কারাদুর্গে? কী-জন্য? ডার্নে প্রশ্ন করলেন, চিঠি লেখা বন্ধ করে–ও কী তোমার হাতে, কার্টন?

    কিন্তু উত্তর শোনবার সময় আর ল না ডার্নের। একখানা রুমাল এসে চাপা পড়লো ডানের নাকের উপর। ব্যাপার না বুঝতে পেরে, গিলোটিনমুখী ডার্নে সিডনীর হাত ছাড়াবার জন্য ধস্তাধস্তি করতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎই আক্রমণ করেছে সিডনী, তারপর ঔষধটার কাজও হয় খুব তাড়াতাড়ি। তিনি হাত ছাড়াতে পারলেন না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

    সিডনী জানতো, জ্ঞান থাকতে ডানে কখনও অন্যের জীবন নষ্ট করে নিজের জীবন বাঁচাতে স্বীকার করবেন না। তাই এই কৌশল সিডনীর।

    ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের বান, মায় টুপী জুতো রুমাল-ডার্নেকে পরিয়ে দিল সিডনী। ডার্নের চুলটি পর্যন্ত আঁচড়ে দিল নিজের ফ্যাশানে। তারপর ডার্নের কাপড়-জামা নিজে পরে দ্বারে টোকা দিল। বাইরেই পাহারায় আছে বরসাদ, সে খুললো দরজা।

    সিডনী চোখ টিপে বললো—আমার বন্ধুটি মূৰ্ছা গেছেন প্রহরী! এঁকে বাইরে পাঠাবার ব্যবস্থা করো!

    চোখ টিপেই বরদ সম্মতি জ্ঞাপন করলো। দু’জন প্রহরী এল তার আহ্বানে। তারা বরসাদের কথামত অচেতন ডার্নেকে বহন করে নিয়ে চললো দুর্গের বাইরে। দ্বার রুদ্ধ করে বরাদও চললো তাদের পিছনে। সিডনীর শেষ আদেশ-ডার্নেকে পৌঁছে দিতে হবে ম্যানেটের বাড়িতে বেনা দুটোর ভিতর। তা নইলে শেষ মুহূর্তেও সিডনী বক্সাদকে অভিযুক্ত করে যাবে সরকারি গোয়েন্দা বলে।

    বরসাদ যেতে-যেতে উঁচু গলায় হেঁকে বলে গেল–তুমিও তৈরি হও এভরিমন্ডি! তিনটে বাজতে বাকি নেই বেশি!–ডার্নের বাহকেরা হেসে উঠলো সে রসিকতা শুনে।

    ***

    সীমান্ত-পানে ছুটে চলেছে ঘোড়ার গf। সীমান্ত : এখানে যাত্রীদের কাগজপত্র পরীক্ষা হবে। গাড়ি থামলো। লরী নেমে এসে সমস্ত কাগজপত্র দিলেন অফিসারের হাতে। একে-একে নাম ডাকতে লাগলেন অফিসার!

    –আলেকজান্ডার ম্যানেট!–ডাক্তার!

    লরী দেখিয়ে দিলেন–গাড়ির এক কোণে বৃদ্ধ ডাক্তার নিচু গলায় কাতর স্বরে কেবলই গোঙাচ্ছেন, কেবলই গোঙাচ্ছেন…লরী বুঝিয়ে দিলেন–এভরিমন্ডির শ্বশুর কিনা উনি! এভরিমন্ডি এতক্ষণ গিলোটিনের তলায় নীত হয়েছে, সেই কল্পনাতেই কাতর হয়েছেন বৃদ্ধ। মনের দৃঢ়তা ওঁর নষ্ট হয়ে গেছে সেই আঠারো বছর ব্যাস্টিলবাসের ফলে!

    অফিসার রেগে উঠেছিলেন–এভরিমন্ডির দরুন ম্যানেটের শোকের কথা শুনে। সাধারণতন্ত্রের শত্রুর জন্য যে কাঁদে, সেও তো শত্রু সাধারণতন্ত্রের!–কিন্তু পরমুহূর্তেই চতুর লরীর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়লো ডাক্তারের ব্যাস্টিলবাসের কাহিনী! অফিসার সামলে গেলেন! তাইতো! আঠারো বছর যে লোক ব্যাস্টিলবাস করেছে, তাকে–আর যাই হোক–সাধারণতন্ত্রের শত্রু বলা চলে না।

    –লুসী এভরিমন্ডি! এভরিমন্ডির স্ত্রী!

    অশ্রুমুখী লুসীকে দেখিয়ে দিলেন লরী, সঙ্গে-সঙ্গে বলতে ভুললেন না যে, লুসী–ম্যানেটের কন্যা!

    –লুসী এভরিমন্ডি। এভরিমন্ডির কন্যা! শিশু লুসীকে দেখিয়ে দিলেন লরী।

    –সিডনী কার্টন, এডভোকেট, ইংরেজ! গাড়ির এক কোণে কাপড় চাপা দিয়ে পড়ে আছেন কার্টন। অফিসার বললেন ভদ্রলোক কি অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন?

    –হ্যাঁ! এভরিমন্ডির বন্ধু কিনা! শেষ সাক্ষাতের পর থেকেই অচৈতন্য।

    –জার্ভিস লরী! ব্যাঙ্কার! ইংরেজ!

    –আমি।

    –যেতে পারেন!

    গাড়ি চলেছে। মাঝে-মাঝে ঘোড়া বদলানো হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। এক-একবার গাড়ি থামে, আর ভয়ে অস্থির হয়ে ওঠে ওরা! এ-গাড়ি কি আর ছাড়বে না? কখন আসবে নতুন ঘোড়া? যদি কেউ পেছন থেকে ধেয়ে আসে? যদি এই প্রকাণ্ড ছলনার কথা প্রকাশ হয়ে পড়ে থাকে? দেখুন, দেখুন, মিস্টার লরী! বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখুন-পেছনে ও শব্দ কিসের?

    নাঃ, ও কিছু নয়!

    হঠাৎ গাড়ির কোণ থেকে কাপড়ে-ঢাকা অচেতন কার্টন-বেশি ডার্নে বলে উঠলো–তোমার বুকে ওটা কি লুকিয়ে রেখেছো কার্টন? তাড়াতাড়ি তার মুখে হাত চাপা দিল রোরুদ্যমানা লুসী। কেউ শুনলো না তো? ধীরে ধীরে কেটে আসতে থাকে ডার্নের মূছার ঘোর।

    গাড়ি চলছে। নাঃ, পিছনে আসেনি কেউ, পলাতক আসামী ধরবার জন্য। শুধু পিছনে ধাওয়া করে চলেছে পাগল হাওয়া, ধাওয়া করে চলেছে কালো-কালো মেঘ, নীল-আকাশে ভেসে ভেসে আসছে সঙ্গে সঙ্গে চতুর্থীর চাঁদ, ঘোর নিশীথিনী এলো চুল নাচিয়ে ছুটেছে পলাতক-আসামীর পিছনে-পিছনে। তাকিয়ে তাকিয়ে তাই দেখে লুসী, আর লুসীর অন্তর বলে ওঠে, ধন্যবাদ ভগবান–সাধারণতন্ত্রের সৈনিক কাউকে তো পিছনে দেখি না।

    ***

    বেলা তিনটে বাজে! রাজপথে চলেছে ছ’খানা খোলা গাড়ি! বাহান্ন জন লোক সেই ছ’খানা গাড়িতে। যুবক, বৃদ্ধ, যুবতী, বৃদ্ধা–শিশুও দু-একজন। ধনী মানী জমিদার, মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী, দরিদ্র শ্রমিক–সব আছে সেই গাড়িতে।

    অশ্বারোহী প্রহরী চলেছে ঐ ছ’খানা গাড়ি বেষ্টন করে। তরোয়াল উঁচিয়ে তারা দেখিয়ে দিচ্ছে একজন বিশেষ বন্দীকে! ঐ সেই এভরিমন্ডি! যে মুক্তি পেতে পেতে আবার ধরা পড়েছে। গিলোটিনকে ফাঁকি দেওয়া কি অত সোজা?

    এভরিমন্ডি একটি ক্ষীণা বালিকার সঙ্গে কথা কইতে ব্যস্ত। অন্য কোনদিকে দৃষ্টি নেই তার! বালিকার বয়স আঠারো-উনিশের বেশি হবে না, একান্ত নিরীহ গোবেচারী সে! তাকেও ধরে এনেছে সাধারণতন্ত্রের শত্রু বলে! বিপ্লবের সেই পাগলামির দিনে, বিচার ছিল প্রহসন। যে-কেউ একজন এসে যা-হোক একটা অভিযোগ করলেই হল! তাহলেই গিলোটিন!

    বালিকা কাতর হয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল এভরিমন্ডির পাশে! সে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছে, আশা দিয়েছে, মৃত্যুর মুখোমুখি শান্তভাবে দাঁড়াবার সাহস দিয়েছে সে!

    জনতার ভিতর কোলাহল উঠলো–নিপাত হোক এভরিমন্ডি! সাধারণতন্ত্রের শত্রু সবাই নিপাত হোক! অভিজাত বড়লোক নিপাত হোক সবাই!

    একটা লোক বলে উঠল–থামো। থামো! এভরিমন্ডি তো নিজের সাজা মাথা পেতেই নিতে চলেছে! আর অভিশাপ কেন?

    এ হল, মিঃ বরসাদ।

    ঢং ঢং ঢং, তিনটে বাজলো!

    ঘ্যাঁচ!–একটা মাথা গড়িয়ে পড়ল ঝুড়ির ভেতর।

    ঘ্যাঁচ–আর একটা।

    মাদাম ডিফার্জের সঙ্গিনীরা গিলোটিনের অদূরে বসে আছে চেয়ারে! হাতে তাদের উল আর কাঁটা! তারা গুনে যাচ্ছে–এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ…

    ক্ষীণা বালিকাটি এভরিমন্ডিকে বলছে

    –শেষ সময়ে তোমায় মিলিয়ে দিয়েছেন ভগবান! তোমায় পেয়ে তবে আমি ভগবানকে স্মরণ করতে পেরেছি।

    –কিচ্ছু ভেবো না বোন! আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে শুধু! অন্য কোন দিকে তাকিয়ো না! এক সেকেন্ডে শেষ হয়ে যাবে। তারপর ভগবানের রাজ্য। আনন্দের দিন! কোন ভয় নেই!

    এমন সময় এল মেয়েটির ডাক।

    এভরিমন্ডি-রূপী সিডনীই ধীর-হস্তে ঠেলে দিল মেয়েটিকে। সিডনীর দিকে দুই আয়ত চক্ষুর দৃষ্টি রেখে সে অবনত করল নিজের মাথা! সে চক্ষুর দৃষ্টিতে ভয়ের লেশ নেই, আছে অশেষ বিশ্বাস।

    সেই অন্তিম দৃষ্টির সামনে মেয়েটি স্পষ্ট দেখলো, সিডনীর পরিবর্তে তার সামনে দাঁড়িয়ে আলোক-মূর্তি যীশু, দুই হাত প্রসারিত করে। সিডনীর মুখ থেকে শান্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হল যীশুর পরম আশ্বাস-বাণী,–আমিই পুনর্জীবন! আমিই অনন্ত জীবন! আমাতে যে বিশ্বাস করে, মরেও সে বাঁচবে! আমাতে যে বিশ্বাস করে, মৃত্যু নাই তার!

    আনন্দে ভরে ওঠে মেয়েটির শেষ মুহূর্ত।

    একটা ক্ষীণ শব্দ হয় শুধু। মেয়েটির ছিন্ন মাথা ঝুড়িতে গিয়ে পড়ে। উল বুনতে বুনতে মহিলারা গোনে–বাইশ!

    এবার ডাক পড়লো, এভরিমন্ডি।

    সিডনী বুক ফুলিয়ে গিলোটিনের তলায় গিয়ে দাঁড়ায়।

    .

    লক্ষ-কণ্ঠের স্তিমিত কলরব কানে আসে তার। চোখে পড়ে লক্ষ আবছা মুখ! উন্মত্ত জনতার উল্লাসধ্বনি তরঙ্গের মতো আছড়ে পড়ে…কিন্তু সিডনীর চোখের সামনে তখন জ্বলছে শুধু একটা আলো। কে যেন সিডনীর কানে কানে বলে, এস বন্ধু, এস ক্লান্ত পথিক!

    উপর থেকে নেমে আসছে গিলোটিনের ধারালো ছুরি।

    উল বুনতে বুনতে মহিলারা গোনে–তেইশ!

    -সমাপ্ত-

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য পিকউইক পেপার্স – চার্লস ডিকেন্স
    Next Article ডেভিড কপারফিল্ড – চার্লস ডিকেন্স

    Related Articles

    চার্লস ডিকেন্স

    ডেভিড কপারফিল্ড – চার্লস ডিকেন্স

    August 9, 2025
    চার্লস ডিকেন্স

    দ্য পিকউইক পেপার্স – চার্লস ডিকেন্স

    August 9, 2025
    চার্লস ডিকেন্স

    নিকোলাস নিকলবি – চার্লস ডিকেন্স

    August 9, 2025
    চার্লস ডিকেন্স

    অলিভার টুইস্ট – চার্লস ডিকেন্স

    August 9, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.