Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ওডিসি – হোমার

    পার্থ সারথী দাস এক পাতা গল্প358 Mins Read0

    ১৯. ইউরিক্লীয়া ওডিসিয়াসকে দেখে চিনতে পারল

    উনবিংশ পর্ব
    ইউরিক্লীয়া ওডিসিয়াসকে দেখে চিনতে পারল

    সেই নিশীথ রাত্রির স্তব্ধ গভীর নির্জনে প্রায়ান্ধকার প্রশস্ত কক্ষটিতে বসে বসে ভাবতে লাগলেন রাজা ওডিসিয়াস। দেবী এথেনের সহায়তায় কিভাবে পাণিপ্রার্থীদের পতন ঘটানো যায় সেকথা বার বার ভাবতে লাগলেন। প্রথমে তিনি তাঁর পুত্রকে কিছু নির্দেশ দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন।

    ওডিসিয়াস বললেন, টেলিমেকাস, অস্ত্রগুলো এবার সব সরিয়ে রাখতে হবে অন্য ঘরে। পাণিপ্রার্থীরা এবিষয়ে কোন কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলবে অস্ত্রগারে ধোয়া উঠছিল এবং আগুনে অনেক অস্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো সরিয়ে রেখেছ। তাছাড়া হাতের কাছে অস্ত্র থাকলে তারা নিজেদের মধ্যেই মারামারি কাটাকাটি করে আনন্দোৎসব সব মাটি করে ফেলবে এটাও অন্যতম কারণ। এইভাবে এক মিথ্যা কথার আপাত মধুর প্রলেপ দিয়ে তাদের সংশয়কে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে।

    পিতার কথামত কাজ করার আগে টেলিমেকাস সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত দাসী তার ধাত্রী ইউরিক্লীয়াকে ডেকে বলল, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি অস্ত্রগুলো অস্ত্রাগার হতে অন্য এক ঘরে বহন করে রাখি ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি দাসীদের এখানে আসতে দেবে না। তাদের আপন আপন ঘরে আটকে রাখবে। অস্ত্রাগারে ধোয়া উঠছিল। আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল অস্ত্রগুলো। এতদিন ছোট ছিলাম বলে ওদিকে তাকিয়ে দেখি নি।

    ইউরিক্লীয়া বলল, বাড়ির জিনিসপত্রের দিকে নজর দিয়েছ দেখে খুশি হচ্ছি। কিন্তু আলো দেখাবে কে?

    টেলিমেকাস বলল, সেই বিদেশী। আমার রুটি যে খাবে তাকে কাজও করতে হবে।

    ইউরিক্লীয়া দাসীদের ঘরগুলো বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দিয়ে ওডিসিয়াস ও টেলিমেকাস দুজনে অস্ত্রগুলো নিয়ে যেতে লাগলেন এক ঘর হতে অন্য ঘরে। প্যালাস এথেন তাদের এক উজ্জ্বল মশাল হাতে আলো দেখাতে লাগলেন। টেলিমেকাস আশ্চর্য হয়ে বলল, নিশ্চয় কোন দেবতা নেমে এসেছেন এ বাড়িতে। ঘরের দেওয়ালগুলো, কাড়িবরগা ও সুউচ্চ স্তম্ভগুলো সব এক অত্যুজ্জ্বল বিভায় আলোকিত হয়ে উঠেছে।

    ওডিসিয়াস বললেন, দেবতাদের মহিমা বোঝার সাধ্য মানুষদের নেই। এখন তুমি শুতে চলে যাও। দাসীরা ঘর পরিষ্কার করছে। তোমার মা বোধ হয় আমাকে কিছু কথা জিজ্ঞাসা করবে।

    টেলিমেকাস চলে গেলে রাণী পেনিলোপ তার উপরতলার ঘর থেকে নেমে এসে আগুনের ধারে একটি রৌপ্য নির্মিত চেয়ারে বসলেন। দাসীরা খাওয়ার টেবিলগুলো পরিষ্কার করতে লাগল। মেলানথা আবার একবার ওডিসিয়াসকে তিরস্কার করল। বলল, বেশ ত খেয়েছ এবার যাও। না যাও তো তোমাকে বার করে দেওয়া হবে।

    ওডিসিয়াস তখন তার পানে ভ্রুকুটি করে বললেন, আমি ছিন্ন মলিন পোশাক পরে আছি বলেই কি তুমি এরকম ব্যবহার করছ? একদিন আমারও সুদিন ছিল। তখন আমার শত শত দাস-দাসী ছিল এবং যে দ্বারে আসত তাকেই ভিক্ষা দিতাম অকাতরে। জিয়াসের বিধানে আমার সব যায়। সুতরাং তুমি মনে রেখো, তোমারও এ চাকরি চলে যেতে পারে। তোমার কাজ রাণীমা বা টেলিমেকাসের পছন্দ নাও হতে পারে।

    সব কথা শুনে পেনিলোপ মেলানথোকে বললেন, আমি সব শুনেছি। তুমি অন্যায় করেছ এবং তোমাকে ফলভোগ করতে হবে। তোমরা সকলেই চাও না আমি এই বিদেশীর কাছ থেকে তাঁর সব অভিজ্ঞতার কথা শুনি।

    এবার ইউরিনোমের দিকে ঘুরে পেনিলোপ বললেন, আমার কাছে এর বসার জায়গা করে দাও। এঁর মুখ থেকে আমি সব কাহিনী শুনব।

    তাঁর সামনে একটি কাঠের আসনে ওডিসিয়াস বসলে পেনিলোপ প্রশ্ন করলেন, প্রথমে বলুন আপনি কোথায় থেকে আসছেন? আপনার বাড়িতেই বা কে কে আছে?

    ওডিসিয়াস উত্তর করলেন, জগতে এমন কোন লোক নেই যে আপনার কাছ থেকে কোন কথা গোপন করে রাখতে পারে। আপনার বুদ্ধির কথা সারা জগতে সুবিদিত। কিন্তু আমার অনুরোধ, আপনি আমাকে যেকোন প্রশ্ন করতে পারেন শুধু আমার বংশ ও বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করবেন না। কারণ তাহলে অতীতের কথা স্মৃতিপটে সব উদিত হয়ে আমার দুঃখ বাড়িয়ে দেবে। জীবনে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি আমি। এখানে দুঃখে শোকে বিলাপ করে বা অশ্রুপাত করে আপনার দাসীদের বিরক্তি উৎপাদন করে কোন লাভ নেই।

    পেনিলোপ বললেন, মহাশয়, যেদিন ওডিসিয়াস ইলিয়ামনগরীর পথে যাত্রা শুরু করেন সেইদিন আমার রূপ গুণ ছেড়ে চলে যায় আমাকে। আবার যদি তিনি ফিরে আসেন তাহলেই যে রূপ গুণও ফিরে আসবে আমার মধ্যে। আজ তাঁর অবর্তমানে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দুলসিয়াম, সেমি, প্রভৃতি রাজ্যগুলোর রাজা ও রাজকুমারেরা জোর করে আমায় প্রেম নিবেদন করে আমার সম্পত্তি নষ্ট করছে। তাদের জন্য আজ আমি আমার অতিথিদের দিকে ঠিকমত নজর দিতে পারছি না। অনেক সময় ভিক্ষুক ও দূতকে অবহেলা করতে হয় আমায়। রাজা ওডিসিয়াসের বিরহে অন্তর জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে আমার। তারা আমার বিবাহের জন্য চাপ দিতে থাকায় নানারকম ছলনার দ্বারা শান্ত রাখতে হয় তাদের। প্রথমে আমি এক কৌশল অবলম্বন করেছিলাম। আমি বৃদ্ধ লাৰ্তেসের মৃত্যুর পর তাঁর একটি একটি শবাচ্ছাদন তৈরির জন্য সূচীশিল্পখচিত এক বস্ত্র বয়ন করতাম। আমি তাদের বলতাম এই বস্ত্রদ্বারা লাৰ্তেসের মৃতদেহকে আচ্ছাদিত করা না হলে আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারা আমার কথা মনে নিল। কিন্তু আমি অনেকদিন ধরে সুচীশিল্পের কাজগুলো করতাম দিনের বেলায় আর রাত্রিতে তা খুলে দিতাম। এইভাবে কৌশলে তাদের ঠেকিয়ে রাখতাম। বলতাম, একাজ শেষ না করে আমি বিবাহ করতে বা কোথাও যেতে পারব না।

    কিন্তু আমার এক দাসী একথা তাদের বলে দেওয়ায় তারা একদিন আমার চাতুর্য হাতনাতে ধরে ফেলে এবং সেই শিল্পকর্ম ত্যাগ করতে হয় আমাকে। এখন আর কোন অজুহাত আমি খাড়া করতে পারব না। তাছাড়া আমার পিতা মাতাও আমাকে কোন একজনকে বিবাহের কথা বলছে। টেলিমেকাসও এখন তার রাজ্যভার গ্রহণ করার উপযুক্ত হয়েছে। যাই হোক, আমার অনুরোধ, আপনি আপনার বংশ পরিচয়ের কথা কিছু বলুন।

    ওডিসিয়াস বললেন, সেকথা বললে আমার দুঃখ আরো বেড়ে যাবে। তবু যখন আপনি ছাড়বেন না তখন বলছি। দূর নীল সমুদ্রের মাঝখানে ক্রীট নামে এক দ্বীপ আছে। তার চারদিকের বেলাভূমিগুলো সমুদ্রের তরঙ্গের দ্বারা সততবিধৌত। সেই বিশাল দ্বীপে সাইডোনিয়া, দোরিয়া প্রভৃতি ছোট ছোট রাজ্য আছে। রাজা চাইনস ছিলেন সারা ক্রীট দ্বীপের রাজা। তিনি ছিলেন আমার পিতামহ। আমার পিতা নিউক্যালিয়নসের দুই পুত্র আইডোমেনেউস ট্রয়যুদ্ধে যাত্রা করলে আমি বাড়িতেই রয়ে যাই। এই সময় ট্রয়যুদ্ধে যোগদান করার জন্য সমুদ্রপথে যেতে যেতে একবার রাজা ওডিসিয়াস আমাদের রাজ্য ক্রীটদ্বীপে এসে ওঠেন ভাগ্যতাড়িত হয়ে। ঝড়ে তাঁর জাহাজটি প্রায় ভেঙ্গে যায়। তিনি এসে আইডোমেনেউসের খোঁজ করে বলেন, তিনি তাঁর বন্ধু। তখন আমি তাঁকে যথাযযাগ্য মর্যাদার সঙ্গে আমাদের রাজ্যে কিছুদিনের জন্য আতিথ্য দান করি। কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করার পর তিনি ঝড় থামলে আবার রওনা হন।

    এমনভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে এই মনগড়া কাহিনী বললেন ওডিসিয়াস যে পেনিলোপের চোখে জল এল। বরফগলা জলে সহসাপুষ্ট কোন নদীর মত দুচোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়ে উঠল তাঁর। স্ত্রীর চোখে জল দেখে ওডিসিয়াসের চোখেও জল এসেছিল। কিন্তু তিনি কৌশলে সে অশ্রুবেগ সংযত করলেন।

    চোখ হতে অশ্রুমোচন করে পেনিলোপ বললেন, আপনি যে সত্যসত্যই তাঁকে আতিথ্য দান করেন তার কিছু প্রমাণ দিতে পারেন? যেমন তখন তিনি কি ধরনের পোশাক পরে ছিলেন। তিনি দেখতে কেমন ছিলেন? তাঁর সঙ্গে সে কে ছিল?

    ওডিসিয়াস বললেন, উনিশ বছর আগে তাঁকে দেখেছি। তাঁর একটি চিত্র তুলে ধরব। তিনি তখন নীলাভ রঙের একটি বহির্বাস পরেছিলেন। সেটিতে সোনার জরির কাজ করা একটি ছবি ছিল–তাতে ছিল একটি শিকারী কুকুর একটি মৃগশিশুকে নিয়ে পালাচ্ছে আর মৃগশিশুটি পালানোর জন্য ছটফট করছে। গোটা ছবিটিতে সোনার জরির কাজ করা। তাঁর দেহবন্ধনীটি সূর্যের মত জ্বলজ্বল করছিল। জানি না এ পোশাক তিনি বাড়ি থেকে পরিধান করে বেরিয়েছিলেন না অন্য কেউ তাঁকে দিয়েছিল। তিনি খুব জনপ্রিয় রাজা ছিলেন এবং আমি নিজেই তাঁকে একটি ব্রোঞ্জনির্মিত তরবারি আর নীল রঙের পোশাক দান করি। তাঁর সঙ্গে তাঁর এক সহচর ছিল; তার নাম ছিল ইউরিবেটস। তার গায়ের রঙ কালো এবং মাথার চুলগুলো কোঁকড়ানো ছিল।

    এই কাহিনী সত্যতার কথা জানতে পেরে পেনিলোপের চোখে আরো জল এল। তিনি বুঝতে পারলেন এ কাহিনীর প্রতিটি কথা যথার্থ। তিনি বললেন, আমিই এ পোশাক তাঁকে দিয়েছিলাম। একদিন যাঁকে এ বাড়ি থেকে বিদায় জানিয়েছিলাম, সেবাড়িতে আর কোনদিন অভ্যর্থনা জানাতে পারব না তাকে। কি কুক্ষণেই না তিনি যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন।

    সূক্ষ্মবুদ্ধিসম্পন্ন ওডিসিয়াস উত্তর করলেন, আমার অনুরোধ, অশ্রুপাতের দ্বারা আপনার গণ্ডদ্বয় অহেতুক সিক্ত ও মলিন করে তুলবেন না। যে স্বামীর কাছ থেকে কোন নারী ভালবাসা পায়, তার সন্তান সানন্দে গর্ভে ধারণ করে তাকে হারিয়ে সে কাঁদবেই। তার উপর ওডিসিয়াস আপনার দেবতুল্য স্বামী। কিন্তু ওডিসিয়াস প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে আমি যে সত্য সংবাদ দান করছি তার উপর নির্ভর করে আপনি অশ্রুপাত বন্ধ করুন। আমি আগেই বলেছি তিনি বর্তমানে থ্রেসপ্রোশিয়া দ্বীপে সুস্থ অবস্থায় অবস্থান করছেন। তবে তার জাহাজটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তাঁর লোকজন সূর্যদেবতার পশু বধ করায় তারা সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। আমি গ্রেসপ্রোশিয়ার রাজা ফীডনের কাছ থেকে শুনেছি, তিনি ফেসীয়দের কাছ থেকে প্রচুর ধনরত্ন পেয়েছেন এবং তা নিয়ে শিঘ্রই প্রত্যাবর্তন করবেন। তবে তার আগে তিনি দোদোনায় গিয়ে সেই পবিত্র ওক গাছের মাধ্যমে তাঁর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে জিয়াসের ইচ্ছার কথা জানতে গেছেন। তিনি জানতে গেছেন তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর তিনি প্রকাশ্যে অথবা ছদ্মবেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। সুতরাং বুঝতে পারছেন তিনি শীঘ্রই ফিরে আসছেন। আমি সর্বপ্রধান দেবতা জিয়াসের নামে শপথ করে বলছি, ওডিসিয়াস এই বছরের এই তিথিতে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করবেন, আমার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হবেই। তিনি যে ধনরত্ন আনবেন তাতে তাঁর দশপুরুষের ব্যয়ভার বাহিত হবে।

    পেনিলোপ উত্তর করলেন, আপনার কথা সত্যই বিজ্ঞজনোচিত। আমার একজন বৃদ্ধ দাসী আছে। সে আমার স্বামী ওডিসিয়াসকে তার জন্মমুহূর্ত হতে লালন করেছে। তাকে ডাকছি। এস ইউরিক্রীয়া, এঁর সেবা করো, ইনি তোমার মনিবের সমবয়সী এঁর হাত পাও তোমার মনিবের মতই। দুঃখ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়লে কোন মানুষের বয়স তাড়াতাড়ি বেড়ে চলে।

    ইউরিক্লীয়া হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ওডিসিয়াসের উদ্দেশ্যে বলতে লাগল, হায়, কত পশুই না জিয়াসকে বলি দিয়েছ। তথাপি তিনি তোমার ঘরে ফেরার কোন ব্যবস্থা করলেন না। হে বিদেশী, আজ যেমন তুমি আমাদের এ বাড়ির দাসদাসীর উপহাস লাভ করলে তেমনি আমার মনিবও হয়ত বিদেশে কারো বাড়িতে এমনি বিদ্রূপবাণ ভোগ করছেন। তবু আমি তোমার পা ধুইয়ে দেব। শুধু পেনিলোপের খাতিরে নয়, তোমার জন্যও বটে। কারণ আজ পর্যন্ত যত অতিথি এ বাড়িতে এসেছে তাদের মধ্যে একমাত্র তোমাকেই দেখতে অবিকল আমার মনিবের মত, তোমার চোখের দৃষ্টি কণ্ঠস্বর ও পায়ের গঠন আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ওডিসিয়াসের কথা। ওডিসিয়াস সতর্কভাবে বললেন, হে ধাত্রী, যারা আমাদের দুজনকে দেখে তারা তাই বলে। তারা বলে আমরা দুজনে দেখতে অনেকটা একরকম।

    ওডিসিয়াসের পা ধোয়াবার জন্য ইউরিক্লীয়া জল নিয়ে এলে অন্ধকারের দিকে মুখটা ঘোরালেন ওডিসিয়াস। কারণ তিনি ভাবলেন তাঁর হাঁটুর কাছে যে একটি দাগ আছে তা ইউরিক্লীয়া দেখে চিনতে পারবে।

    ইউরিক্লীয়া তাঁর পা ধুতে এসে সেই দাগটি দেখে ওডিসিয়াসকে চিনতে পারল সঙ্গে সঙ্গে। যৌবনে ওডিসিয়াস যখন একবার তার পিতামহ অটোলিকাসের বাড়ি বেড়াতে যান তখন একদিন পার্ণেসাস অঞ্চলে শিকার করতে গেলে একটি শূকর তার দাঁত বসিয়ে হাঁটুর কাছে একজায়গার অনেকখানি মাংস উঠিয়ে নেয়। অটোলিকাস ওডিসিয়াসের জন্মের পর ইথাকায় এসে তার বাবা মাকে বলে যান ওডিসিয়াস বড় হয়ে যেন একবার তাঁর বাড়ি বেড়াতে যায়। তাহলে তিনি অনেক উপহার দেবেন। সেইমত ওডিসিয়াস যৌবনে পদার্পণ করার পরই পিতামহ অটোলিকাসের বাড়ি বেড়াতে যান। মাতামহ ও মাতামহী দুজনেই মহা খুশি হন ওডিসিয়াসকে দেখে। একদিন সকালের দিকে অটোলিকাসের পুত্রদের সঙ্গে পার্ণের্সসের অরণ্য অঞ্চলে শিকার করতে যান ওডিসিয়াস। একটি অন্ধকার ঝোঁপের মধ্যে একটি শূকর লুকিয়ে থেকে তাঁকে অতর্কিতে আক্রমণ করে হাঁটুর কাছ থেকে অনেকটা মাংস ছিঁড়ে নেয়। ওডিসিয়াসও তাঁর বর্শা দিয়ে শূকরটার ঘাড়টাকে বিদ্ধ করে বধ করেন। পরে সুস্থ হলে মাতামহের বাড়ি থেকে ফিরে আসেন ওডিসিয়াস।

    আজ সেই ক্ষত দেখে ওডিসিয়াসকে চিনতে পেরে অবরুদ্ধ হয়ে উঠল তার কণ্ঠ। একই সঙ্গে অনুভত আনন্দ ও অন্তর্বেদনার বিগলিতপ্রবাহ অশ্রু হয়ে ঝরে পড়তে লাগল দুই চোখ দিয়ে। ওডিসিয়াসের চিবুক ধরে ইউরিক্লীয়া বলল, আমি বুঝতে পেরেছি বাছা তুমিই ওডিসিয়াস। এই কথা বলে পেনিলোপকে একটা ইশারায় জানাবার জন্য তাঁর পানে মুখ ঘোরাল ইউরিক্লীয়া। কিন্তু এথেন তখন পেনিলোপের দৃষ্টি অন্যদিকে নিবন্ধ রাখায় ইউক্লীয়ার ইশারা দেখতে পেলেন না। এমন সময় অডিসিয়াস ইউরিক্লীয়ার মুখটাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললেন, হে ধাত্রী, একদিন আপন বক্ষের স্তন্য দান করে যাকে লালন করেছ, আজ কি তুমি তার ধ্বংস চাও? তুমি যখন আমাকে চিনতে পেরেছ তখন চুপ করে থাকবে, এখন কাউকে একথা বলবে না। তা না হলে আমি এইসব প্রেমোন্মত্ত পাণিপ্রার্থীদের পরাস্ত করার পর অন্যান্য দাসীদের সঙ্গে তোমাকেও মৃত্যুপরীতে পাঠাব।

    ইউরিক্লীয়া বলল, বৎস, আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলার কোন দরকার নেই। আমি একখণ্ড পাথর বা একতাল লোহার মত নীরব থাকব। তুমি জান আমি কত বিশ্বস্ত এবং গোপনতা বজায় রাখার ব্যাপারে কত কঠোর। তুমি এই সব মহাশয়দের পতন ঘটানোর পর আমি দাসীদের সম্পর্কে সঠিক সংবাদ দান করব যাতে তুমি ভালমন্দ চিনতে পার।

    ওডিসিয়াস বললেন সে কাজ আমি নিজেই পারব। এখন তুমি শুধু চুপ করে থাকবে।

    ইউরিক্লীয়া আবার এক গামলা জল এনে অলিভ তেল মাখিয়ে ওডিসিয়াসের পা দুটি ভাল করে ধুয়ে দিল। আগুনের কাছে গিয়ে সে পা দুটি একবার সেঁকে নিলেন তিনি।

    তখন পেনিলোপ বললেন, মহাশয়, এখন শুতে যাবার সময় হলেও আমি আপনাকে আরো একটি কথা জিজ্ঞাসা করব। অনেক দুঃখী মানুষ সুযোগ পেলে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আমার মনের দুঃখের কোন সীমা পরিসীমা নেই। সারাদিন গৃহকর্ম তদারক করার ফাঁকে ফাঁকে আমি অশ্রু বিসর্জন করি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। কিন্তু রাত্রিবেলায় বিছানায় শুতেই অজস্র চিন্তার কাঁটা হুল ফোঁটায় আমার অন্তরে। বিষাদ পরিণত হয় নারকীয় যন্ত্রণায়।

    আপনি হয়ত জানেন পান্ডারীয়াসের কন্যা বাদামী রঙের নাইটিঙ্গেল তার আপন পুত্র-সন্তানকে নিজের হাতে খুন করার ফলে পাখি হয়ে সকরুণ স্বরে গান গেয়ে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। আমাকেও তার মত সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে এক বিচ্ছেদের বেদনা। আমি কি আমার পুত্রের সঙ্গেই এক প্রাসাদে থেকে যাব, আমি কি বিশ্বস্ত রয়ে যাব আমার স্বামীর প্রতি? অথবা আমি পাণিপ্রার্থীদের মধ্যে যে সবচেয়ে উদার তাকে বিবাহ করে চলে যাব তার ঘরে? যখন আমার পুত্র ছোট ছিল তখন আমার অন্য

    কোথাও যাবার কোন প্রশ্নই উঠত না। কিন্তু এখন সে বড় হয়ে যখন দেখছে আমার, জন্য তার ধনসম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে তখন সে স্পষ্টতই আমাকে চলে যেতে বলছে। সে যাই হোক, আমি আমার এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্বন্ধে প্রশ্ন করব আপনাকে। আমার কুড়িটি রাজহংসী আছে। তারা পুকুর থেকে উঠে এসে প্রাসাদের একস্থানে ডালের দানা খুঁটে খুঁটে খায়। কিন্তু একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম কোথা হতে একটা বিরাট ঈগল পাখি এসে রাজহাঁসগুলোকে সব মেরে ফেলল। আমি চিৎকার করতে উঠতে আমার দাসীরা ছুটে এল। একটা ঘরের ছাদের উপর বসে থাকা ঈগলটা তখন বলল, আমি তোমার স্বামী ওডিসিয়াস আর আমার দ্বারা নিহত রাজহাঁসগুলো তোমার প্রেমনিবেদনকারীরা। আমি এবার ফিরে এসেছি। রাজহাঁসগুলো ওদের প্রতীক হিসেবে হত্যা করেছি। এবার আসল পাণিপ্রার্থীদর প্রত্যেককে সমুচিত শাস্তি দান করব। এরপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে উঠে দেখি আমার রাজহাঁসগুলো সেই নির্দিষ্ট জায়গায় শস্যকণাগুলো খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।

    ওডিসিয়াস এই স্বপ্নের কথা শুনে বললেন, আপনার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে রাজা ওডিসিয়াস যা বলেছিলেন, তাই হলো স্বপ্নের অর্থ। একজন পাণিপ্রার্থীও জীবন্ত থাকবে না।

    পেনিলোপ বললেন, স্বপ্ন মানুষকে বড় বিমূঢ় করে। স্বপ্নে মানুষ যা যা দেখে তা সব সত্য হয় না। আমার মনে হয়, স্বপ্নদের আসবার দুটি দরজা আছে। যেকোন স্বপ্ন দুটির কোন একটি দরজা দিয়ে আসে মানুষের মনে। একটি দরজা হলো শৃঙ্গনির্মিত আর একটি দরজা হলো গজদন্তে নির্মিত। গজদন্তের দরজা দিয়ে যেসব স্বপ্ন আসে তারা মিথ্যা, অলীক। কিন্তু শৃঙ্গনির্মিত দরজা দিয়ে আসা স্বপ্নগুলো সত্য হয়। কিন্তু আমার ভয় আমার স্বপ্নটি শৃঙ্গনির্মিত দরজা দিয়ে আসে নি। যাই হোক, আর একটি কথা আপনাকে বলব। ওডিসিয়াসের বাড়ি থেকে আমার চলে যাবার সেই অভিশপ্ত দিনটি এগিয়ে আসছে। আমি এই উপলক্ষে পাণিপ্রার্থীদের মধ্যে এক শক্তি পরীক্ষার অনুষ্ঠান করব। আমাদের প্রসাদে একটি বিরাট ধনুক আছে। আমার সব পাণিপ্রার্থীর প্রত্যেককে এক শর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেই ধনুকে শর সংযোজন করে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে বিদ্ধ করতে হবে। যে সফল হবে, জয়ী হবে এ প্রতিযোগিতায়, তাকে আমি বিবাহ করে চলে যাব এ বাড়ি ছেড়ে। যে বাড়িতে আমি বধূ হয়ে একদিন আসি সে বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে হবে আমার।

    ওডিসিয়াস উত্তর করলেন, যত তাড়াতাড়ি এ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান হয় ততই ভাল। তবে কোন পাণিপ্রার্থী সে ধনুকে শর সংযোজন করতে না করতেই ওডিসিয়াস স্বয়ং এসে পড়বেন।

    পেনিলোপ বললেন, আপনি যদি সারারাত এইভাবে বসে গল্প করেন তাহলেও কখনো তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে উঠবে না আমার চোখ। কিন্তু মানুষ তো একেবারে না ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। তাই আমাকে শুতে যেতেই হবে। আপনি তাহলে এ ঘরে আপনার ইচ্ছামত যেকোন স্থানে যেকোনভাবে শুয়ে পড়তে পারেন। এ ঘরে কেউ থাকবে না।

    এইকথা বলে দাসীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে পেনিলোপ তাঁর উপরতলার ঘরে চলে গেলেন। কিন্তু বিছানায় শুয়ে তাঁর প্রিয়তম স্বামীর জন্য কাঁদতে লাগলেন অতন্দ্র নয়নে। অবশেষে দেবী এথেনের নির্দেশে নিদ্রাদেবী এসে ভর করলেন তার দুচোখের উপর।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র
    Next Article ইলিয়াড – হোমার

    Related Articles

    পার্থ সারথী দাস

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    পার্থ সারথী দাস

    ইলিয়াড – হোমার

    September 12, 2025
    পার্থ সারথী দাস

    ওডিসি – হোমার

    September 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }