Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২ – বিমল মিত্র

    বিমল মিত্র এক পাতা গল্প950 Mins Read0

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২২

    ২২

    সকাল থেকেই সনাতনবাবু তৈরি হয়েছিলেন। নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠেছেন। নিজেই নিজের সব জামা-কাপড় বার করেছেন। কখনও নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়নি তাঁকে। কোথায় কোন্ জামা কোন্ কাপড় থাকে তাও জানেন না। আলমারির চাবি ও কোনও দিন নিজের হাতে স্পর্শ করেন নি। কোন্ ফুটোতে কোন্ চাবি লাগে তাও জানেন না।

    শম্ভু হঠাৎ দেখতে পেয়ে বললে—এ কী জামা পরেছেন দাদাবাবু, এ যে উল্টো পরেছেন!

    —হোক্ উল্টো, উল্টো পরলে কে দেখতে পাচ্ছে?

    শম্ভু বললে—আসুন, আমি ঠিক করে দিচ্ছি—

    দীপঙ্কর নিচের বেঠকখানা ঘরে বসে ছিল অপেক্ষা করে। আপিসে যাবার জন্যে তৈরি হয়েই এসেছিল। অনেকক্ষণ বসে থাকার পরেও সনাতনবাবু আসছেন না।

    হঠাৎ মা-মণি ঘরে ঢুকলেন। বললেন—কোথায় যাচ্ছো তুমি সোনাকে নিয়ে? দীপঙ্কর মা-মণির এই হঠাৎ উপস্থিতির জন্যে প্রস্তুত ছিল না। এই প্রশ্নের জন্যেও প্রস্তুত ছিল না। কী বলবে বুঝতে পারল না। মা-মণি আবার বললেন—তোমায় সেদিন বলেছিলুম না যে তুমি আমার ছেলের কানে ফুস্-মন্তর দিতে এসোনা—

    দীপঙ্কর বললে—সনাতনবাবু যদি না যেতে চান তো আমি জোর করে তাঁকে নিয়ে যাবো না—

    —তুমি তো বড় বেয়াদপ্ দেখছি।

    দীপঙ্কর বললে—আপনি মিছিমিছি রাগ করছেন আমার ওপর!

    মা-মণি বললেন—আবার তুমি আমার মুখের ওপর কথা বলছো? তুমি যাও এখান থেকে, বেরিয়ে চলে যাও—

    দীপঙ্কর উঠে দাঁড়াল। বললে—আপনি আমাকে আজ যেতে বললেও যাবো না, সনাতনবাবু এলে তিনি যা বলবেন, তাই করবো!

    —তা আমি কেউ না? তোমার কাছে আমার ছেলেই আমার চেয়ে বড় হলো?

    দীপঙ্কর বললে—আপনি ভুল বুঝেছেন মা-মণি, আমি আপনাকে সে-কথা বলিনি। আপনাকে আমি সম্মান করেই কথা বলেছি, আপনার যথাযোগ্য মর্যাদা আমি দিয়েছি, তবু আপনি আমাকে অপমান করছেন। আমি আপনারও শুভাকাঙ্ক্ষী, সনাতনবাবুরও শুভাকাঙ্ক্ষী—

    —ছেঁদো কথা রাখো, আমি যা বলছি করো, তুমি এখান থেকে চলে যাও, আর কখনও এসো না। যেদিন থেকে তুমি এসে ঢুকেছ, সেইদিন থেকেই শনি ঢুকেছে আমার সংসারে। আমার কত সাধের সংসার, আমার কত যত্নের বাড়ি, সব ছারখার হয়ে গেল তোমাদের জন্যে! কেন তুমি আসো? আমার বউকে নিয়ে গেছ, তাতেও তোমাদের সাধ মেটেনি? এখন আবার আমার ছেলেকে ভাঙিয়ে নিতে চাও—

    বলতে বলতে মা-মণি যেন বেদনায় নরম হয়ে এলেন। অনুশোচনায় সজল হয়ে এলেন। এমন চেহারা কখনও দেখেনি দীপঙ্কর মা-মণির।

    মা-মণি আবার বলতে লাগলেন—আমি তোমাদের কী করেছি বলো তো? কী করেছি আমি তোমাদের? আর কারই বা আমি কী সর্বনাশ করেছি? আমার সোনার সংসার তোমরা দশজনে মিলে কেন এমন করে নষ্ট করলে? কী পাপ করেছিলুম আমি? হঠাৎ শম্ভু ঘরে এল্ বললে—মা-মণি, দাদাবাবুর বোতাম কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না তো! কোথায় আছে?

    একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন মা-মণি।

    —দাদাবাবুর বোতাম কোথায় তা আমি কী জানি? আমি দাদাবাবুর বোতাম লুকিয়ে রেখেছি যে আমাকে জিজ্ঞেস করছিস?

    শম্ভু তাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচলো। মা-মণি যেন নিজের মনের আগুনেই নিজে পুড়তে লাগলেন। বললেন—খবরদার বলছি, আমাকে কারো কোনও কথা জিজ্ঞেস করবি না কেউ, আমি কেউ নই এ-বাড়ির, আমি কারোর ব্যাপারে থাকি না, থাকবোও না—

    কিন্তু যাকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বলা সে ততক্ষণে ঘর থেকে বাইরে চলে গেছে। দীপঙ্করের দিকে ফিরে মা-মণি বললেন—বলি, তুমি ভদ্দরলোকের ছেলে, না কী? কথা যে তোমার কানে যায় না মোটে—

    সঙ্গে সঙ্গে সনাতনবাবু এসে পড়েছেন। বললেন—চলুন, চলুন, বোতাম না হলে আর কী এমন অসুবিধে—চলুন, আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি, চলুন—

    —সোনা!!

    বোধ হয় বহুদিন বাদে এই প্রথম মা-মণি নিজের ছেলেকে নাম ধরে ডাকলেন।

    —কী মা-মণি?

    —কোথায় যাচ্ছো শুনি? আমাকে না জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছো শুনি? বৌকে আনতে?

    সনাতনবাবু ধুতির কোঁচা গোছাতে গোছাতে বললেন—হ্যাঁ—

    —তাকে যে আনতে যাচ্ছো, তা আমাকে জিজ্ঞেস করেছ? আমার মত নিয়েছ? আমিও তো একটা মানুষ, না কি মনে করেছ মা-মাগী একটা মানুষই নয়!

    সনাতনবাবু কথাটা শুনে যেন আরো বিব্রত হয়ে পড়লেন। বললেন—সে কি মা, আমি তো খারাপ কাজ কিছু করছি না, বড় কষ্টে পড়েছে তোমার বৌমা, টাকার অভাবে দীপঙ্করবাবুর আপিসে চাকরি করতে হচ্ছে তাকে—তাই আনতে যাচ্ছি, বাড়ির বউ চাকরি করবে, কথাটা কি ভালো? তুমিই বলো?

    —তা সে কি তোমার পায়ে ধরে সেধেছে এখানে আসবার জন্যে?

    —সাধবে কেন? আমরাই তো তাকে তাড়িয়ে দিয়েছি, সে কোন্ সাহসে সাধবে আবার? তার কি লজ্জা-সম্ভ্রম-মান-অপমানের কিছু বাকি রেখেছি আমরা?

    মা-মণি বললে—খুব তো লজ্জা-সম্ভ্রমের কথা আওড়াচ্ছো দেখছি, কিন্তু এতদিন কার বাড়িতে কার সঙ্গে রাত কাটাচ্ছে সে খবরটা রেখেছ? নির্মল পালিত আমাকে সব বলেছে!

    সনাতনবাবু বললেন—আর তুমিও তাই বিশ্বাস করলে? তোমার বৌমাকে তুমিই চেনো আর আমি চিনি না? আর তা ছাড়া রাত যদি কাটিয়েই থাকে তো তার জন্যে কে দায়ী মা!

    —তার মানে?

    দীপঙ্কর দেখলে মা-মণির সমস্ত শরীরটা থর থর করে কাঁপছে। যেন এখনি প্ৰলয়- কান্ড শুরু হবে। আবার চেঁচিয়ে উঠলেন। বললেন—তার মানে আমি দায়ী?

    সনাতনবাবু বললেন—আমি কি তাই বলেছি তোমাকে মা-মণি? বলেছি তুমিও দায়ী, আমিও দায়ী!

    বলে দীপঙ্করের দিকে ফিরে বললেন—চলুন দীপঙ্করবাবু, আপনার আপিসের দেরি করিয়ে দিলাম—

    দীপঙ্কর বললে—না, আপনি সেজন্যে ভাববেন না, আমি আজ দেরি হবে জেনেই বেরিয়েছি—

    সনাতনবাবু বললেন—বোতামটা পাওয়া গেল না, বোতামের জন্যেই এতক্ষণ দেরি হয়ে গেল—

    দীপঙ্কর বললে—তাতে কী হয়েছে, আমি সেদিন আপনাকে বলে গেলাম পরের দিন আসবো, কিন্তু সময় করে আসতে পারিনি—চলুন—

    বাইরের সদরের দিকেই পা বাড়াচ্ছিল দীপঙ্কর। হঠাৎ মা-মণির বজ্র-গম্ভীর গলায় আওয়াজে থেমে যেতে হলো।

    —যেও না, শোন!

    সনাতনবাবু ফিরলেন। বললেন—আমাকে বললে?

    মা-মণি বললেন—হ্যাঁ, যদি বৌকে আনতেই হয় তো একটা কথা মনে রেখে তবে এনো, তোমার বউ আমাদের এই রাস্তায় মিত্তিরদের বাড়িটা ভাড়া করেছে! বিশ্বাস না হয় নির্মল পালিতকে জিজ্ঞেস কোর!

    —ভারা করেছে? তোমার বৌমা? কীসের জন্যে?

    সনাতনবাবু দীপঙ্করের মুখের দিকেও চাইলেন। জিজ্ঞেস করলেন—ভাড়া করেছে নাকি দীপুবাবু? আপনি তো বলেননি কিছু আমাকে? কীসের জন্যে ভাড়া করেছে?

    উত্তর দিলেন মা-মণি! তাঁর গলায় বিষ ঢেলে দিয়ে বললেন—কীসের জন্যে আবার, ব্যবসা করবার জন্যে!

    —মা!!

    মা-মণিও কম উত্তেজিত হননি। বললেন—চোখ রাঙাচ্ছো কাকে? চোখ রাঙাচ্ছো কাকে তুমি খোকা! আমিই এ-বাড়ির মালিক, এ-বাড়িতে বৌকে আনতে হলে আমার অনুমতি নিতে হবে, এই আমার হুকুম। আমার হুকুমটা মনে রেখে তবে বৌকে আনতে যেও—

    বলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন দোতলার সিঁড়ির দিকে। সনাতনবাবুও সদর দরজার দিকে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ পেছনে একটা শব্দ হতেই দীপঙ্কর ফিরে দেখলে মা- মণি সিড়ির প্রথম ধাপটার ওপর উঠতে গিয়ে ধপাস করে পা পিছলে পড়ে গেছেন। দীপঙ্করও দেখেছে, সনাতনবাবুও দেখেছে।

    দীপঙ্কর দৌড়ে ধরে তুলতে গেল। কিন্তু কী ভেবে একটু সঙ্কোচও হলো আবার। কিন্তু সনাতনবাবু ততক্ষণে অবস্থাটা বুঝে নিয়েছেন। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে মা-মণির হাতটা ধরে তুলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মা-মণির তেজ বোধ হয় তখনও কমেনি। একেবারে আর্তনাদের মত করে চেঁচিয়ে উঠলেন—ছুঁও না আমাকে, ছুঁও না–তোমার মত ছেলের ছোঁয়াচও পাপ—

    সনাতনবাবু কিন্তু দমলেন না তবু। নিচু হয়ে বললেন—মা-মণি, লেগেছে খুব?

    শব্দ পেয়ে শম্ভু দৌড়ে এসেছে। ভেতর-বাড়ি থেকে কৈলাসও দৌড়ে এসেছে। বাতাসীর-মা, ভূতির-মা, তারাও দৌড়ে এসেছে। ঠাকুর রাঁধতে রাঁধতে খবর পেয়ে দৌড়ে এসেছে। ভিড় জমে গেল বারান্দায়। মাথাটাতেই বেশি লেগেছিল। সিঁড়ির সিমেন্টের ওপর টপ্ টপ্ করে রক্ত পড়তে লাগলো।

    সনাতনবাবু বললেন—শম্ভু, ডাক্তারবাবুকে খবর দে একবার —

    দীপঙ্কর জিভ্সে করলে—ব্লাড প্রেশার ছিল নাকি মা-মণির?

    সনাতনবাবু বললেন—তা তো জানি না—

    ডাক্তারবাবু বোধ হয় পাড়ারই। সঙ্গে সঙ্গে এসে হাজির হলেন। পরীক্ষা করতে লাগলেন। সনাতনবাবু তখন নিজেই কাঁপছেন থর থর করে। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলেন—কেমন দেখলেন ডাক্তারবাবু?

    ডাক্তারবাবু ব্লাডপ্রেশারটা দেখছিলেন তখন। দেখা শেষ করে বললেন—না, প্রেশার নর্মাল—এমনি পা শিপ করে পড়ে গেছেন—কিছু ভয় নেই—এবার ধরাধরি করে ভেতরে শুইয়ে দিন —

    মা-মণি তখন অচৈতন্য। আর মুখে সেই ঝাঁজ নেই। সনাতনবাবু দীপঙ্করের দিকে চেয়ে বললেন—আজ আর আমার যাওয়া হবে না দীপঙ্করবাবু, দেখছেন তো ব্যাপারটা—

    দীপঙ্করও বললে-না না আজকে আপনার আর যাওয়ার দরকার নেই—আমি আসি—

    সনাতনবাবু বললেন—আপনি সতীকে সব জানাবেন দীপঙ্করবাবু,–বলবেন আমি যেতুম ঠিক, কিন্তু বাধা পড়লো—সে যেন একবার মা-মণিকে দেখতে আসে—

    দীপঙ্কর বললে—কিন্তু আমার সঙ্গে যে সতী আর কথা বলে না—

    —কেন? কথা বলে না কেন?

    দীপঙ্কর বললে—আর আমিও তো এখানে কলকাতায় বেশি দিন থাকছি না, আমি ও ট্র্যান্সফার হয়ে চলে যাচ্ছি, তাই ভেবেছিলাম যাবার আগে একটা যাহোক ব্যবস্থা করে যাবো…….

    —কোথায় ট্র্যান্সফার হচ্ছে?

    দীপঙ্কর বললে—ময়মনসিংহ।

    রাস্তায় বেরিয়েই নজরে পড়লো। সনাতনবাবুদের বাড়ি ঢোকবার সময় অতটা লক্ষ্য হয়নি। ঠিক সামনের বাড়িটা। এতদিন প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে এসেছে, এ-বাড়িটার দিকে কখনও নজর পড়েনি আগে। কোন মিত্তিরদের বাড়ি। ওপরে দু’খানা ঘর, নিচেও দু’খানা। রাজমিস্ত্রী খাটছে বাইরে। বাঁশের ভারা বেঁধেছে। চুন-কাম হচ্ছে সমস্ত বাড়িটা। এইখানেই এসে সতী উঠবে। এইখানেই মিস্টার ঘোষালের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকবে। একেবারে এক ছাদের তলায়। একেবারে ঘোষ-বাড়ির মুখোমুখি। একেবারে সনাতনবাবুর চোখের সামনে। একেবারে নয়নরঞ্জিনী দাসীর বুকের ওপর!

    আস্তে আস্তে দীপঙ্কর হাজরা রোডে গিয়ে পড়লো। তারপর হাজরা রোড থেকে একেবারে সোজা ডালহৌসী স্কোয়ার।

    ট্যাক্সিটা আপিসের দিকেই যাচ্ছিল, কিন্তু দীপঙ্করের কী মনে হলো, বললে— সামনে চলো—

    সোজা গিয়ে ট্যাক্সিটা থামলো রাইটার্স বিল্ডিং-এর সামনে। তখন অনেক ভিড় জমেছে সেখানে। বার্মা ইভাকুয়ীজ আপিসের সামনে অসংখ্য মানুষ উদ্‌গ্রীব হয়ে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নিতে এসেছে। দীপঙ্কর তাদের ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে ভেতরে ঢুকলো। সমস্ত কলকাতা যেন এসে জুটেছে এই আপিসের সামনে। জেনারেল ওয়াভেল বার্মা নিয়ে নেবার তোড়জোর করছে তখন। কিন্তু সবাই বলছে এবার ইন্ডিয়ার ওপর বোমা পড়বে। এবার কলকাতার পালা। দীপঙ্করের কানে নানারকম কথা এল। পাশের দেয়ালে পোস্টার পড়েছে—একজন জাপানী রাইফেল উঁচিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে। ছবির নিচেয় বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে—’গুজবে কান দিবেন না’। আরো কত রকমের সব পোস্টার। খরচ কমান। যুদ্ধে জয়লাভে সাহায্য করতে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট কিনুন। ঘুড়ি উড়িয়ে সূতো নষ্ট করবেন না। ছেঁড়া জামা-কাপড় সেলাই করে পরুন।

    অনেকক্ষণ পরে দীপঙ্করও জানালাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর রসিদটা এগিয়ে দিলে। বললে—ভুবনেশ্বর মিত্র—টিম্বার মার্চেন্ট—প্রোম্‌

    ভেতরে ক্লার্করা খেটে-খেটে হিম্-শিম্ খেয়ে যাচ্ছে। গাদা-গাদা ফর্ম, গাদা গাদা ফাইল। দীপঙ্করের হাত থেকে রসিদটা নিয়ে কাগজ-পত্র-ফাইল সব ঘাঁটতে লাগলো। তারপর খানিক পরে বললে—এখনও নো ট্রেস্—কোনও খবর নেই—এই নিন —

    দীপঙ্কর বললে—সে কি? আজ তিনমাস ধরে ঘুরে যাচ্ছি, এখনও খবর আসেনি, আই মাস্ট সী ইওর চীফ। আমি আপনাদের চীফের সঙ্গে দেখা করবো—আর একটু ভালো করে দেখুন —

    ক্লার্কদেরও দোষ নেই। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে বিপর্যস্ত। আবার কাগজ-পত্ৰ- ফাইল পাড়লে। আবার নতুন করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। শেষে পাওয়া গেল। বললে—এই যে স্যার, পেয়েছি—

    —পেয়েছেন? বেঁচে আছেন?

    ক্লার্কটা বললে—না, এই ক্যাজুয়েল্টি-লিস্টে নাম রয়েছে, ভুবনেশ্বর মিত্র—টিম্বার মার্চেন্ট—প্রোম্‌—

    —মারা গেছেন?

    ক্লার্ক বললে—হ্যাঁ, ইভাকুয়েশনের সময় যে জাহাজে উঠেছিলেন, সেই জাহাজটাই বোমা পড়ে ডুবে গেছে, কোনও লোক বাঁচেনি—যারা ছিল তারাও ডেড্‌—এই দেখুন, লিস্ট দেখুন—

    বলে ভদ্রলোক ছাপানো ক্যাজুয়াল্টি-লিস্টটা বাড়িয়ে দিচ্ছিল, কিন্তু দীপঙ্করের তখন সমস্ত হাত-পা হিম হয়ে গেছে। মুখ দিয়েও কথা বেরুচ্ছে না যেন।

    বললে—আর একবার ভালো করে দেখুন, ভুলও তো হতে পারে—

    ভদ্রলোক বললে—ভুল হবে কী করে স্যার, আপনি নিজের চোখেই দেখুন না, এই তো ছাপার অক্ষরে লেখা রয়েছে—ভুবনেশ্বর মিত্র—টিম্বার মার্চেন্ট—প্রোম্—বার্মা। এ খবর কখনও ভুল হতে পারে, আপনি নিজের চোখেই দেখুন না—

    —কিন্তু এক নামের দুজনও তো থাকতে পারে?

    ভদ্রলোক এবার বিরক্ত হলো। তার অনেক কাজ। পেছনে অনেক লোক তখনও দাঁড়িয়ে আছে। কাগজ-পত্র গুটিয়ে রেখে বললে—তা ভুল থাকলে থাকবে—আমরা ছাপার অক্ষরে যা দেখছি তাই আপনাকে বললুম-এর পরেও যদি আপনার সন্দেহ হয় তো হোক—তাতে আমরা কী করতে পারি—

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী
    Next Article কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    Related Articles

    বিমল মিত্র

    সাহেব বিবি গোলাম – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    বেগম মেরী বিশ্বাস – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    আসামী হাজির – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }