Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২ – বিমল মিত্র

    বিমল মিত্র এক পাতা গল্প950 Mins Read0

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.২৯

    ২৯

    তখন সমস্ত আপিসের মধ্যে সকালবেলার জের চলেছে। কোথাও কারো কাজ করার নাম নেই। সেই মিস্টার এন কে ঘোষাল। বহু লোকের অপমান আর অত্যাচার জমে পাহাড় হয়ে উঠেছিল ঘোষাল সাহেবের জন্যে। সেই ঘোষাল সাহেবের চূড়ান্ত শাস্তিতে উল্লাস হবে বৈ কি। উল্লাসের চোটে টিফিন রুমেই ডজন-ডজন সিঙাড়া-চপ্-কাটলেট উড়তে লাগলো। কেউ আর কারো সীটে-এ বসে নেই। দু’জনে দেখা হলেই এক কথা। শালা শুয়োরের বাচ্চার ব্যাপার শুনেছো তো?

    —আর সেই মেয়েটা কোথায়? তার কী হলো মশাই?

    শুধু হেড-আপিসেই নয়। সর্বত্র। শেয়ালদ’র কন্ট্রোল-রুমে, বালিগঞ্জ স্টেশন- মাস্টারের ঘরে। সাউথ-কেবিন, নর্থ-কেবিন। এমন কি গড়িয়াহাটা লেভেল-ক্রসিংএর গেটম্যানরা পর্যন্ত। এতদিন পরে একটা মুখরোচক খবর পেয়ে সকলের জিভ্ দিয়ে টস্ টস্ করে লালা পড়ছে। এমন খবর শুনেও আনন্দ, শুনিয়েও আনন্দ। সমস্ত লাইনময় খবর চলাচল হতে লাগলো। শুয়োরের বাচ্চা এখন কী করছে? বাবা, মাথার উপর দর্পহারী মধুসূদন আছে একজন। তাঁর নজর এড়াতে পারবে না কেউ!

    —মনে আছে তো কালীবাবু সেই অপমানের কথা? গেট-আউট্ বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের?

    —মনে নেই আবার। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে মশাই। বাতাসে নড়ে। হাত দিয়ে নাড়াতে হয় না।

    ঘরের মধ্যে বসে দীপঙ্করের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হচ্ছিল। পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা যেন গ্রাস করে ফেলছিল তাকে। সতীর লজ্জা যেন তারই লজ্জা। সতীর আঘাত যেন তারই আঘাত! বার বার অনেকবার তাকে টেলিফোন্ ধরতে হয়েছে আজ সকাল থেকে। কেউ কনগ্র্যাচুলেট করেছে। কেউ আসল ঘটনাটা জানতে চাইছে। কে ট্রাফিকের অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার হবে, কে তার খালি চেয়ারটায় বসবে, এই নিয়ে উঁচু মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এর সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে মিস্টার ক্রফোর্ডের ওপর।

    হঠাৎ হুড়মুড় করে সনাতনবাবু ঘরে ঢুকলেন। মধুর বাধাও তিনি শোনেন নি।

    —এসেছেন? চলুন।

    সনাতনবাবু বললেন—এখন কেমন আছেন তিনি দীপঙ্করবাবু?

    দীপঙ্কর সনাতনবাবুর চেহারার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেল। বললে—আপনি খাওয়া-দাওয়া করেন নি এখনও?

    সনাতনবাবু বললেন–সে পরে বলছি, এখন কেমন আছেন তিনি বলুন আগে!

    দীপঙ্কর বললে—ঘণ্টা খানেক আগে আমি টেলিফোন করেছিলাম আমাদের হসপিট্যালে, তখনও আনকনশাস ছিল, এখন একটু আগে আবার করেছিলাম, শুনলাম জ্ঞান হয়েছে—কিন্তু খুব উইক্—

    —আপনি নিজে একবার যাননি দেখতে?

    দীপঙ্কর বললে—আমি দেখা করতে চাই না সনাতনবাবু, আমাকে দেখলে হয়ত অসুখ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনাকে ডেকেছি। আপনাকে হসপিট্যালে নিয়ে যাচ্ছি, চলুন—

    সনাতনবাবু বললেন—চলুন—

    দীপঙ্কর কাগজ-পত্র গুছোতে গুছোতে বললে—দেখুন না, আমার কী ব্যাপার, আমি এদিকে ময়মনসিং-এ ট্র্যানফার হবার জন্যে তৈরি হচ্ছি হঠাৎ আমাকে মিস্টার ঘোষালের কাছ থেকে চার্জ বুঝে নিতে হলো।

    ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার উপক্রম করতেই এস্টাবলিশমেন্ট সেকশানের সুধীরবাবু হঠাৎ ঘরে ঢুকলো।—কী সুধীরবাবু? কিছু চাই?

    সুধীরবাবুর হাতে ফাইল ছিল একটা। বললে—সেই ভেকেন্সিটার কথাই বলতে এসেছিলাম—জার্নাল সেক্‌শানের ভেকেন্সি —

    —ভেকেন্সি? জার্নাল সেকশানে আবার ভেকেন্সি কোত্থেকে হলো?

    —আজ্ঞে, স্যার, বাবু লক্ষ্মণচন্দ্র সরকার তো গাঙ্গুলীবাবুর লিঙ্ ভেকেন্সিতে কাজ করছিল, সেই গাঙ্গুলীবাবু আর আসবেন না—

    —আসবেন না মানে? এতদিন হলো কাশ্মীরে গেছেন, এখনও কোনও খবর দিচ্ছেন না, তাঁর পাসের অ্যাভলেবিলিটি পিরিয়ড়ও তো শেষ হয়ে গেছে। একটা চিঠি লিখুন আপনারা? এখনও কেন ডিউটি রিজিউম্ করছেন না—তার খবর নিন—

    —খবর নিয়েছিলুম স্যার। তাঁর উইডো চিঠি লিখেছেন—

    —উইডো? উইডো মানে?

    —আজ্ঞে তিনি সুইসাইড্ করেছেন!

    দীপঙ্কর আকাশ থেকে পড়লো। বললে—বলছেন কী আপনি? কবে সুইসাইড করেছেন? কোথায় সুইসাইড করেছেন?

    সুধীরবাবু বললে—মোগলসরাই স্টেশনে। মোগলসরাই স্টেশনের ওয়েটিং রুমের পাশে—

    .

    সেই গাঙ্গুলীবাবু! একটা অস্পৃশ্য ইলেকট্রিক্ শক্ যেন সমস্ত শরীরটাকে আচমকা নাড়া দিয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। সেই গাঙ্গুলীবাবু! আপিসে আসার প্রথম দিনটি থেকে যার সঙ্গে অচ্ছেদ্য যোগ ছিল, সেই গাঙ্গুলীবাবু!

    কী হয়েছিল তাঁর? হঠাৎ সুইসাইড্ করতে গেলেন কেন?

    দীপঙ্করের মনে হলো আকাশ যেন আর তার মাথার ওপর নেই, মাটি যেন পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে, বাতাস থেমে গিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে। সব সুখ, সব দুঃখ, সব বেদনা, সব আনন্দ, সব অনুভূতি যেন এক নিমেষে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এক অভূতপূর্ব নিশ্চেতনা ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে ফেলবে! চোখের ওপর ভেসে গেল সেই চেহারাটা। সেই সংসার, বৌবাজারের গলির মধ্যেকার সেই অসুখী স্ত্রী। কত পরিপাটী যত্নে টেবিলের ওপরে সাজানো এব্রয়ডারি করা ঢাকনি। দেয়ালে কত সযত্নে টাঙানো ফ্রেমে আঁটা নাড়ু-গোপালের কার্পেট। আর সেই স্ত্রী। স্ত্রী বলতো—যে নিজের স্ত্রীকে শাড়ি গয়না দিতে পারে না, তার গলায় দড়ি, গলায় দড়ি—

    —কী হয়েছিল তাঁর? সুইসাইড্ করলেন কী ভাবে?

    তিন বার গলায় দড়ি কথাটা উচ্চারণ করতো গাঙ্গুলীবাবুর স্ত্রী! দীপঙ্করের সামনেই তো সেদিন বলেছিল। কী করুণ কী ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছিল গাঙ্গুলীবাবুর মুখটা। গাঙ্গুীবাবু কি সেদিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পেরেছিল এই মর্মান্তিক পরিণতির কথা! না কি গাঙ্গুলীবাবু সেই তখনি সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছিল! পলে পলে তিলে তিলে মৃত্যুর অপবাদ সইতে সইতে হয়ত অবধারিত মৃত্যুর সামনে এসে আর দ্বিধা করতে পারেনি। মৃত্যু বুঝি এমনি করেই আসে। আর মৃত্যুও তো নয় ঠিক এটা। এ যে অপমৃত্যু! অপমৃত্যুর হয়ত এই-ই নিয়ম!

    —না স্যার, কেন যে সুইসাইড করলেন তিনি, তা কেউ জানে না। তিনি নিজে একটা চিঠি নাকি লিখে রেখে গিয়েছেন—লিখে গেছেন—তাঁর মৃত্যুর জন্যে আর কেউ দায়ী নয়—

    —মিথ্যে কথা! মিথ্যে কথা!

    দীপঙ্কর চিৎকার করে উঠলো। চিৎকার করা স্বভাব নয় বড় একটা দীপঙ্করের। কিন্তু হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে হলো। মিথ্যে কথা! মিথ্যে কথা! সবাই দায়ী, সবাই দায়ী এই মৃত্যুর জন্যে! আপনি দায়ী, আমি দায়ী, মিস্টার ঘোষাল দায়ী, মিস্টার ক্রফোর্ড দায়ী। জেনারেল ম্যানেজার রেলওয়ে বোর্ড দায়ী। আর শুধু আমরা কেন, শুধু এই যুদ্ধই বা কেন, আমরা যারা পৃথিবীতে এখনও বেঁচে আছি, সবাই- ই গাঙ্গুলীবাবুর মৃত্যুর জন্যে দায়ী! আমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি, আমরা স্বার্থপর হয়ে উঠেছি, আমরা আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত দাবি করেছি, আমরা অমানুষ হয়ে গিয়েছি বলে গাঙ্গুলীবাবুরা অপঘাত-মৃত্যু বরণ করে।

    —তিনি নিজের হাতে লিখে গেছেন স্যার, তাঁর উইডো লিখেছেন।

    —তা হোক! আপনি আমার চেয়ে বেশি চেনেন গাঙ্গুলীবাবুকে?

    সুধীরবাবু হকচকিয়ে গেলেন। বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইলেন সেন-সাহেবের দিকে! দীপঙ্কর বললে—আসুন, গাঙ্গুলীবাবুর পার্সোন্যাল্ ফাইলটা আনুন-মিস্টার ক্রফোর্ড নিজে স্যাংশন করে দিয়েছে তাঁর গ্রেড়, আনুন ফাইলটা—শিগির আনুন আমার কাছে—

    সুধীরবাবু তাড়াতাড়ি ফাইলটা নিয়ে এলেন। দীপঙ্কর ফাইলটা নিজের হাতে টেনে নিয়ে বললেন—এই দেখুন, এই জায়গাটা দেখুন—একটা লোক চোদ্দ বছর একটা জার্নাল সেকশানে বসে পচছে তা আমাদের খেয়াল নেই—! একে প্রমোশন্ দেওয়া হয়েছে, আপনি জানেন না?

    সুধীরবাবু সেন-সাহেবকে আগে এতটা রাগতে দেখে নি কখনও। বললে—তিনি ফিরে এলেই তো খবরটা পেতেন—

    —তা এ ক’মাস মাইনে নিচ্ছেন না দেখেও আপনাদের সন্দেহ হয়নি? আশ্চর্য!

    আশ্চর্যই বটে! দীপঙ্করের চোখের সামনে যেন দৃশ্যটা ভেসে উঠলো। মোগল-সরাই স্টেশন। রাত্রে এসে ট্রেনটা থেমেছে। ট্রেন থেকে যথারীতি নেমেছে গাঙ্গুলীবাবু। স্ত্রী- কন্যা-পরিবার নিয়েই নেমেছে। স্ত্রীর গায়ে দামী শাড়ি, দামী গয়না, পায়ে দামী জুতো!

    —দিদিকে জামাইবাবু ফেরবার পথে কাশীটা দেখিয়েছিল, আমাকে কাশী দেখাবে না?

    গাঙ্গুলীবাবু হয়ত বলেছিল—তার জন্যেই তো নামছি এখানে!

    স্ত্রী বললে—তাহলে এ-শাড়িটা বদলে নিই, কী বলো? একটা খারাপ শাড়ি পরলে লোকে কী বলবে?

    —তা পরো!

    কোনও কিছুতেই আপত্তি করেনি গাঙ্গুলীবাবু। কোনও কিছুতেই আর বিরাগ নেই গাঙ্গুলীবাবুর। বিরাগও নেই, অনুরাগও নেই। গাঙ্গুলীবাবু স্ত্রীর সব আবদার সব অনুরোধ পালন করে এসেছে সারা রাস্তা। স্ত্রী যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। কাশ্মীরে গিয়ে শাল কিনেছে দিদিদের মতন, শাড়ি কিনেছে, ভেলভেটের জুতো কিনেছে। আইভরির চুড়ি কিনেছে। স্ত্রীর কোনও সাধই অপূর্ণ রাখেনি গাঙ্গুলীবাবু। নিঃশব্দে সমস্ত কর্তব্য পালন করে এসেছে। জামাইবাবুরা যা যা কিনেছে, যা যা খরচ করেছে, সব তেমনি করেই করেছে। টাকা আছে কি নেই, সে প্রশ্ন তোলেনি গাঙ্গুলীবাবুর স্ত্রী! গাঙ্গুলীবাবু দু’হাত বিলিয়ে দিয়েয়ে নিজের আত্মাকে। তার পর দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে এসেছে মোগলসরাই স্টেশনে। যেন অনেক বছর জার্নাল সেকশানে একই চেয়ারে একই গ্রেডে চাকরি করে আসার পর, প্রথম প্রমোশনের আশায় উজ্জীবিত হবার লগ্ন এসেছে।

    —আর কিছু কিনবে তুমি?

    —আর কী কিনবো বলো?

    —আর কোনও শাল, আর কোনও শাড়ি, আর কোনও শৌখিন জিনিস?

    —কিনবো? তোমার আরো টাকা আছে?

    গাঙ্গুলীবাবু উত্তর দিয়েছে—টাকার জন্যে তুমি ভেবো না, সেনবাবু আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে খরচ করবার জন্যে, অনেক অনেক টাকা,—আরো টাকা, দরকার হলে আরো টাকা পাঠাবে আমাকে—

    স্ত্রীর মুখটা আনন্দে উপচে পড়তে লাগলো। বললে-সত্যি বলছো?

    —সত্যি! আমার জন্যে প্রমোশনের ব্যবস্থায় করে দেবে সেনবাবু। কোনও ভাবনা নেই আর তোমার। তুমি আর কী কিনবে বলো না—

    স্ত্রী বললে—তাহলে একটা বেনারসী কিনবো আমি, একটা খাঁটি কড়িয়াল বেনারসী—আমার বড়দির মতন, সাড়ে তিনশো টাকা তার দাম কলকাতাতে—

    —তা তাই কিনো তুমি। আর কিছু কিনবে?

    —আরো দেবে?

    গাঙ্গুলীবাবু বলেছে—হ্যাঁ, তুমি যা ইচ্ছে কিনবে, আমার টাকার কথা ভেবো না—

    —তাহলে, দেখ, আর একটা সস্তার বেনারসী কিনবো, এই দেড়শো টাকার মতন দামে, যেটা এই বিয়ে-বাড়িতে পরে-টরে যাওয়া যায়, আর সাড়ে তিনশো টাকারটা পূজোর সময় ঠাকুর দেখতে যাবার সময় পরবো, কী বলো?

    গাঙ্গুলীবাবু বলেছে—সস্তা কেনবার দরকার কী? দুটোই দামী কেনো না।

    —দুটোই দামী কিনবো? তাহলে বড়দিও চমকে উঠবে, দুজনেরই খুব হিংসে হবে জানো—আমার শাড়ি দেখে—

    —তা তিনখানাই কেনো না। তিনখানা ইচ্ছে হলে তিনখানাও কিনতে পারো।

    স্ত্রী বললে—না, তুমি ঠাট্টা করছো—

    গাঙ্গুলীবাবু বললে—না ঠাট্টা নয়, তোমার কোনও সাধই আর অপূর্ণ রাখবো না— সেই ওয়েটিংরুমের অন্ধকারে স্ত্রী গাঙ্গুলীবাবুর বুকের ওপর মাথাটা হেলিয়ে দিলে। চোখ দুটো বুজিয়ে বললে—ওগো, সত্যিই তুমি এত ভালো! তুমি আমার বড় জামাইবাবুর চেয়েও ভালো—! কেন তুমি আগে অমন ছিলে বলো তো! এখন কেমন তোমায় ভালো লাগছে আমার—

    তারপর একটু থেমে বললে—ওগো, তাহলে এক কাজ করবো, পূজোর সময় কড়িয়ালটা পরবো, আর বড়দিদির মেয়ের বিয়ের সময় অন্য কড়িয়ালটা পড়বো। খুব ভালো হবে, না গো? কথা বলছো না কেন, কথা বলো তুমি? সকলে কেমন চমকে যাবে, না গো?

    তারপর অনেকক্ষণ তেমনি করে বুকে মাথা হেলিয়ে রেখে বলতে লাগলো—কিন্তু দেখ, কলকাতায় এবার ফিরে গিয়ে একটা মাতাসা গড়িয়ে দিও আমাকে—

    —তা দেব!

    —আর গয়না গড়িয়ে রাখলে তো তোমার কিছু লোকসান নেই, খুকুর বিয়ের সময় আর তোমাকে সোনা কিনতে হবে না তখন।

    তারপর আরো রাত হলো। ঘন্টায় ঘন্টায় অনুরাগের ডিভিডেন্ডের অঙ্ক বাড়তে লাগলো। জার্মান আর্মি তখন আরো অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। সেবার শীতে পেছিয়ে এসেছিল জার্মান আর্মি। এবার এপ্রিল মাসেই গ্রাস করে নেবে সমস্ত রাশিয়া। ককেশাস্ চাই হিটলারের। ককেশাসের তেল বড় দরকারী। তেল না হলে ট্যাঙ্ক চলবে না, এরোপ্লেন চলবে না। মহাজনদের টাকা আটকে থাকবে। আরো চালিয়ে নিয়ে যাওয়া চাই যুদ্ধটা। যুদ্ধ চললে সুধাংশু আরো প্রমোশন পাবে, চৌধুরীর আরো অ্যালাওয়েস্ বাড়বে, লক্ষ্মীদির আরো টাকা জমবে ব্যাঙ্কে। মানস সাধারণের মত রেলের কেরানী হবে না। সে গাড়ি চড়বে, সে বড় হবে, মানুষ হবে, মহামানব হবে। আর নির্মল পালিত আরো বড়, আরো টাকার মালিক হবে। আরো ধনী, আরো ক্ষমতার অধিকারী। আরো নয়নরঞ্জিনী দাসীর প্রপার্টি গ্রাস করতে হবে। আমেরিকা টাকা খাটিয়েছে পার্শিয়ার অয়েল-মাইনে, ব্রিটেন টাকা ইনভেস্ট্ করছে ইজিপ্টে, ইন্ডিয়ায়, আফ্রিকায়। ফ্রান্স টাকা খাটিয়েছে ইস্ট এশিয়ায়, জার্মানী ইটালীকেও টাকা ইনভেস্ট করতে দিতে হবে। তাদের স্ত্রীদেরও কাশ্মীরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, তাদের স্ত্রীদেরও কড়িয়াল শাড়ি কিনে দিতে হবে। তাদের স্ত্রীদেরও মান্তাসা কিনে দিতে হবে। লোভের সিংহাসনে সবাই সম্রাট হয়ে বসবে। আর কোনও উদ্দেশ্য নেই, আর কোনও আকাঙ্খা নেই কারো—

    গাঙ্গুলীবাবুরও আর কোনও উদ্দেশ্য নেই। গাঙ্গুলীবাবুরও আর কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই। গাঙ্গুলীবাবু উঠলো ইজিচেয়ার ছেড়ে। মোগল-সরাই স্টেশন তখন শান্ত হয়ে এসেছে। বিরাট ইয়ার্ডের কোন্ কোণে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তখন শান্টিং-ইঞ্জিন গাড়ি কাটছে আর গাড়ি জুড়ছে। প্লাটফরমের ওপর ফাল্গু কয়েকটা লোক ঘুমিয়ে আছে অকাতরে। কোন্ ঘাটের লোক তারা, কোথায় এসে কোন্ ঘাটে নৌকো ভিড়িয়েছে জীবনের।

    গাঙ্গুলীবাবু একটু নড়তেই স্ত্রী বললে—কোথায় যাচ্ছো?

    —এই দেখে আসি, কখন ট্রেন আসবে!

    ওধারে পাহাড় জমে আছে গুঁড়ো কয়লার। ওয়াটারিং স্টেশন। মাথার ওপর কলের জলের ওভার-হেড় পাইপ্। কয়েকটা পোকা লাইট-পোস্ট ঘিরে বাতিটার তলায় খেলা করছে। চারদটা গলায় ছিল, সেটা গলা থেকে নামিয়ে নিলে গাঙ্গুলীবাবু। কড়িয়াল শাড়ি, সোনার মাতাসা, বড় জামাইবাবু, খুকু, খুকুর বিয়ে, কাবুলিওয়ালা, কো-অপারেটিভ্ ব্যাঙ্ক, সব ঝাপসা হয়ে এল! পাশেই একটা গাছ। কী গাছ ভগবান জানে। ঠিক হাতের একটু ওপরেই একটা মোটা ডাল। গাঙ্গুলীবাবু ডালটার নিচে গিয়ে দাঁড়াল। এম-এ পাস করেছে গাঙ্গুলীবাবু ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে। আমায় ক্ষমা করবেন সেনবাবু। আমায় আপনি ক্ষমা করবেন। আমায় আপনি দয়া করে ক্ষমা করবেন। আমি হেরে গেলুম! রেলের জার্নাল কেশানের এ-বি গ্রেডের ক্লার্ক। ডিভিডেন্ডের রেসে আমি লাস্ট্ হর্স। আমায় আপনি ঘৃণা করবেন না। পারেন তো আমায় ক্ষমা করবেন। আর চেষ্টা করবেন আমায় ভুলে যেতে। যেমন আমি ভুলে গিয়েছি এখন। আমার স্ত্রী-কন্যা সকলের কথা ভুলে গিয়েছি। মনে করবেন সমাজে গাঙ্গুলীবাবু নামে একটা ডাস্টবিন ছিল, এই সভ্যতার সুইপার এসে তাকে লাথি মেরে দূর করে দিয়েছে।

    —তারপর?

    মোগল-সরাই স্টেশনে সেদিন একজন স্ত্রীলোক আর একটা শিশুর কান্নায় ট্রেন- চলাচল কিছুক্ষণের জন্যে ব্যাহত হয়েছিল কিনা তার বিবরণ কোথাও লেখা নেই। এক্স- ক্লার্ক গাঙ্গুলীবাবুর পার্সোনাল ফাইলেও তা লেখা থাকার কথা নয়ই তবু দীপঙ্কর কল্পনা করে নিতে পারে। যথারীতি বেনারসের ট্রেনটা এল। ওয়েটিং-রুমের একটা বিধবা- পরিবার সেদিন সেই সেখানেই কড়িয়াল শাড়ি আর সোনার মাতাসার শোকে অধীর হয়ে উঠেছিল, কিন্তু লোকে বললে—বড় প্যাথেটিক্ সীন্ মশাই—! সত্যিই, কী নিষ্ঠুর হাসব্যান্ডটা! স্ত্রী আর মেয়েকে ওয়েটিং-রুমের মধ্যে রেখে নিজে কি না সুইসাইড করলো গলায় দড়ি দিয়ে! স্ত্রীর দিকটা একটু ভেবেও দেখলো না মশাই—এমন পাষন্ড স্বামী!

    দীপঙ্কর বললে—যাক্, আপনার হাতে এস্টাবলিশমেন্টের ভার দেওয়া হয়েছে, শুধু আইন মেনটেন করবার জন্যে নয় সুধীরবাবু, সুবিচার করবার জন্যে। আপনারাই দেখবেন কোথায় ইন্জাটিস্ হচ্ছে—

    সুধীরবাবু বললে—স্যার, আমি তো এর জন্যে দায়ী নই—

    —আপনাকে বলছি না আমি সুধীরবাবু, আমি নিজেকেও বলছি। আপনি আমি সবাই দায়ী এ-জন্যে। গাঙ্গুলীবাবু কি একটা আছে সুধীরবাবু আমাদের আপিসে? আমি জানি না আমি চিনি না এমন অনেক গাঙ্গুলীবাবু আছে সেকশানে-সেকশানে! আজ তারা হয়ত উপায় না পেয়ে মোগলসরাই স্টেশনে গিয়ে আত্মহত্যা করে নিজেদের দুঃখের জ্বালা জুড়োয়, কিন্তু দলে যেদিন তারা ভারি হবে, সেদিন আর তা করবে না, সেদিন এই আপিসের ভিত্ পর্যন্ত টলিয়ে দেবে—যান্ আপনি—

    সুধীরবাবু ছাড়া পেয়ে বাঁচলো। দরজার বাইরে চলে গেল।

    পেছন থেকে দীপঙ্কর আবার ডাকলে—সুধীরবাবু শুনুন—

    সুধীরবাবু আবার ঘরে ঢুকতেই দীপঙ্কর বললে—গাঙ্গুলীবাবুর ভেকেন্সিতে বাবু লক্ষ্মণচন্দ্র সরকার এখনও কাজ করছে তো?

    —হ্যাঁ সার।

    —তাহলে ওখানে লক্ষ্মণবাবুকে অ্যাবসর্ব করে নেবেন—যান্—

    .

    সনাতনবাবু এতক্ষণে কথা বললেন। বললেন—আপনাদের তো অনেক কাজ এখানে দীপঙ্করবাবু?

    দীপঙ্কর বললে—কাজ তত নয় সনাতনবাবু, যতটা কাজের আড়ম্বর। কাজ যদি সবাই করে, তাহলে কাজের চাপও কমে যায়। কিন্তু সে থাক, আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি, চলুন—আপনার এখনও খাওয়া হয়নি—

    তারপরে টেলিফোন্‌টা তুলতে গিয়েও রেখে দিলে। বললে—আর টেলিফোন করবো না, আপনাকে হঠাৎ দেখে খুব অবাক হবে যাবে সতী। আপনি আসবেন ভাবতেই পারবে না—বড় খুশী হবে—

    কিন্তু হঠাৎ অজ্ঞানই বা হলেন কেন দীপঙ্করবাবু? শরীর খারাপ নাকি? আর তা ছাড়া অভ্যেস তো নেই, আপিসের এত খাটুনি সহ্য হবে কেন?

    তারপর যেন নিজের মনেই কী ভেবে নিয়ে বললেন—অথচ দেখুন, এ-চাকরি করার কোনও দরকার ছিল না, সামান্য অর্থের জন্যে এ কী পরিশ্রম বলুন তো। স্ত্রীলোকদের কি এসব হ্যাঙ্গামা সহ্য হয়?

    দীপঙ্কর বললে-আপনি যদি একটু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তো ওর ভাল হয়—আপনি জানেন না সনাতনবাবু, আপনাদের কাছে থাকতে ওর কত লোভ। মনে প্রাণে সতী তো স্ত্রীই হতে চায়, গৃহিণীই হতে চায়, ওর নিজের জায়গায় ওর আসল আসনটা পাততে চায়, কিন্তু ভাগ্যচক্রে সেটাই সতী পেলে না—

    —হ্যাঁ ভাল কথা। আমার চিঠিটা পেয়ে কী বললেন তিনি?

    দীপঙ্কর সব কথাই খুলে বুঝিয়ে বললে। কেমন করে তার ময়মনসিং-এ বলির অর্ডার অপ্রত্যাশিত ভাবে রদ্ হয়ে গেছে। সকাল বেলা আপিসে এসে চিঠিটা সতীকে পাঠিয়ে দেবার ইচ্ছে থাকলেও কেন দেওয়া সম্ভাব হয়নি, সবই বললে। বললে—মিস্টার ঘোষাল ধরা পড়ে ভালো হলো কি মন্দ হলো জানি না-তবে মনে হলো এই সুযোগে হয়ত সতী আপনাদের কাছেই যেতে চাইবে। এখন তার সমস্ত আশ্ৰয়ই ভেঙে গেছে। এখন এক আপনি ছাড়া তার কেউই নেই বলতে গেলে—

    সনাতনবাবু সব শুনলেন। বললেন—রাগ করে অনেক মানুষ নিজের পায়ে কুড়ুল মারে দীপঙ্করবাবু, কিন্তু আমরা কুড়ুল মারাটাই তার দেখি, রাগটা আর দেখি না—।

    দীপঙ্কর বললে—আজ কি আপনি তার রাগটাই বড় করে দেখবেন সনাতনবাবু?

    সনাতনবাবু বললেন—আমি কোনটাই দেখি না দীপঙ্করবাবু, আমি মানুষটাকেই দেখি। আমি তাঁকে চিনেছি বলেই আপনার টেলিফোন্ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছি। আপনি তাঁকে হয়ত বেশি চেনেন, কিন্তু আমিও তো তাঁকে কম চিনি না—

    —আপনার মা’কে এবার একটু বুঝিয়ে বলবেন সনাতনবাবু। অনেক দিন আগে একবার সতীকে অনেক বুঝিয়ে আপনার মা’র কাছে নিজে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন যে-শাস্তি সে পেয়েছিল, তারপর তাকে আর কোনও অনুরোধ করার সাহসই আমার নেই—। এবার কোনও উপায় না পেয়ে শেষবারের মত তাই আপনাকেই ডেকেছি—

    সনাতনবাবু বললেন—আমার মা’কে আপনি ঠিক চেনেন নি দীপঙ্করবাবু!

    —কিন্তু এত অত্যাচার তিনি সতীর ওপর কেন করেন? সতীও তো মানুষ! সতীও তো একদিন আবার মা হবে, একদিন আবার শাশুড়ী হবে, সেদিন এমনি করেই যদি সে তার পুত্রবধূর ওপর পীড়ন করে?

    সনাতনবাবু হাসতে লাগলেন। বললেন—আমার মা তো মা বলেই পীড়ন করে, আর সতী সতী বলেই বিদ্রোহ করে! আমি বাধা দিতে গেলেও তারা যে তাই-ই করবে—

    —কিন্তু অন্যায়ের বিপক্ষে আপনি বাধা দেবেন না?

    —কিন্তু কাকে আপনি অন্যায় বলছেন দীপঙ্করবাবু?

    —সতীকে অত্যাচার করাটাও অন্যায় নয় বলতে চান আপনি? কী অন্যায় করেছে সে? আপনাদের কতটুকু ক্ষতি করেছে সে যার জন্যে আজ আপনাদের বাড়ির বউ হয়ে এত বড় অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য হয়েছে? জানেন, আর একটু হলে সে আপনাদের বাড়ির সামনের বাড়িটা ভাড়া করে আপনাদের চোখের সামনে অসামাজিক জবিন-যাপন করতো? তাতেও সে পিছ্পাও হয়নি! তার এই অধঃপতনের জন্যে কে দায়ী? সে, না আপনারা?

    সনাতনবাবু বললেন—আপনি তো খুব উত্তেজিত হতে পারেন দীপঙ্করবাবু?

    —উত্তেজিত হবো না? সতীকে আপনারা কোথা থেকে কোথায় নামিয়ে নিয়ে এসেছেন জানেন? আপনি তো আপনার মা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন নি কোনও দিন! চোখের সামনে অন্যায় দেখেও কোনও প্রতিকার করেন নি তার?

    সনাতনবাবু প্রশান্ত দৃষ্টিতে দীপঙ্করের দিকে চেয়ে হাসতে লাগলেন।

    বললেন—আপনি দীপঙ্করবাবু সত্যিই উত্তেজিত হয়ে পড়েন সহজে—

    —কিন্তু এমন করে এড়িয়ে যেতে পারবেন না সনাতনবাবু! আপনাকে আজ জবাব দিতেই হবে। বলতেই হবে কেন আপনি এত সহজ? কেন এত নির্বিরোধী? কার ভয়ে কীসের স্বার্থে আপনি একটা কথাও জোর গলায় বলতে পারেন না?

    সনাতনবাবু হাসতে লাগলেন আবার। বললেন—প্রতিবাদ করলেই কি প্রতিকার হয় দীপঙ্করবাবু?

    —কিন্তু অন্যায় সহ্য করাও তো আর এক রকমের পাপ!

    সনাতনবাবু বললেন—প্রতিবাদ করলেই কি পূবের সূর্য পশ্চিমে ওঠে?

    দীপঙ্কর বললে—কিন্তু পূব দিকে সূর্য ওঠা তো অন্যায় নয় সনাতনবাবু। তার প্রতিবাদ করতে তো কেউ আপনাকে বলছে না?

    সনাতনবাবু বললেন—আপনি হয়ত বলছেন না, কিন্তু কেউ কেউ তো বলে! আমার মা তো বলে। আমার মা বলে পূব দিকে সূর্য ওঠাটা নাকি ঠিক নয়,

    দীপঙ্কর বললে—কিন্তু আপনি তো জানেন সেটা ভুল। সুতরাং সেটার প্রতিবাদ করা আপনার উচিত ছিল—! তখন বোঝা উচিত ছিল সতী যেটা বলে সেইটেই ঠিক।

    সনাতনবাবু আরো হাসতে লাগলেন। বললেন—না, তাই-ই বা কী করে বলি দীপঙ্করবাবু? ওদিকে সতী যে বলে পশ্চিম দিকে সূর্য ডোবাটাও বেঠিক—! এখন আমি কার প্রতিবাদ করি, বলুন? মা যখন নির্মল পালিত বাবুকে বিশ্বাস করেছিল, তখনও তাই আমি প্রতিবাদ করিনি, সতী যখন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখনও তাই প্রতিবাদ করিনি। তাতে লাভ-লোকসান কার কী হলো জানি না, কারণ লাভ ক্ষতি দিয়ে তো আমি জীবনকে বিচার করি না—সে বিচার করবে মারোয়াড়ীরা, সে বিচার তো হিসেব-নবিশের বিচার—

    দীপঙ্কর খানিকক্ষণ সনাতনবাবুর মুখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। এ- মানুষটাকে যেন আজ নতুন-করে চিনতে পারলে দীপঙ্কর। একটা লাজুক মুখচোরা ভীরু মেরুদন্ডহীন লোক বলেই এতদিন ধারণা হয়েছিল সনাতনবাবুকে। কিন্তু আজ যেন দীপঙ্কর নিজের সামনে নতুন এক সনাতনবাবুকে দেখতে পেলে।

    হঠাৎ দীপঙ্কর বললে—তা হলে সতীর জন্যে আপনি কোনও অভাব অনুভব করেন না, বলুন?

    —কে বললে, করি না? সতীর সঙ্গে কি আমার লাভ-লোকসানের সম্পর্ক যে তার অভাব বোধ করবো না আমি? আকাশে মেঘ করলে সূর্যের অভাব বোধ করবো না, আমাকে কি আপনি এতই নিষ্প্রাণ মনে করেন? যেদিন পড়ে গিয়ে মা’র পা মুচকে গেল, সেদিন রাত্রে আমার ঘুম আসেনি, সে কি মা’র সঙ্গে আমার লাভ-লোকসানের সম্পর্ক থাকলে সম্ভব হতো?

    এ এক বিচিত্র মানুষ সনাতনবাবু! এ এক বিচিত্র ছেলে, এ এক বিচিত্র স্বামী! দীপঙ্কর তখনও অবাক হয়ে চেয়ে আছে সনাতনবাবুর দিকে! সনাতনবাবু হঠাৎ বললেন—চলুন দীপঙ্করবাবু, আর দেরি নয়, আপনার একটু কাজের ক্ষতি করেও চলুন—

    মনে আছে সেদিন দীপঙ্কর আপিস থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে যাবার সমস্ত রাস্তাটাতে বার বার অবাক হয়ে চেয়ে দেখেছিল সনাতনবাবুর দিকে। এতদিন তবে কোন্ সনাতনবাবুকে চিনে এসেছে? এতদিনের সব চেনা কি তার ভুল চেনা? এতদিনের সব দেখা কি তবে ভুল দেখা?

    দীপঙ্কর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলে—আচ্ছা সনাতনবাবু, এতদিন সতী যে মিস্টার ঘোষালের ফ্ল্যাটে ছিল, তাতে আপনার কোনও কষ্ট হয়নি?

    সনাতনবাবু যেন চমকে উঠলেন—বললেন—মিস্টার ঘোষালের ফ্ল্যাটে মানে?

    দীপঙ্কর বললে—মিস্টার ঘোষালের ফ্ল্যাটে ঠিক নয় অবশ্য, কিন্তু পাশাপাশি ফ্ল্যাটে তো ছিল! তা শুনেও আপনার কষ্ট হয় নি?

    সনাতনবাবু বললেন—কে বললে কষ্ট হয়নি? কষ্ট হয়েছে বলেই তো আজ তাঁর বিপদের কথা শুনে এখুনি তাঁকে দেখতে যাচ্ছি—

    —আর তখন কি সুখে ছিল বলেই দেখতে যাননি?

    সনাতনবাবু বললেন—সুখে তিনি কোনওদিন ছিলেন না দীপঙ্করবাবু, তিনি সুখে থাকতে পারেন না। সুখ তাঁর জন্যে নয়—

    —কেন? তারও কি সুখের আকাঙ্ক্ষা থাকতে নেই? তারও কি অন্য আর পাঁচজন মেয়ের মত স্ত্রী হয়ে স্বামীর সংসার করতে ইচ্ছে হয় না, মনে করেন?

    সনাতনবাবু বললেন—সুখ কথাটা বড় গোলমেলে দীপঙ্করবাবু। সুখের জন্যেই আমরা সবাই চেঁচাই, কিন্তু সুখই কি আমরা চাই? সতীর কথা ছেড়ে দিন, আমার মা- মণিই কি সুখ চেয়েছিল? আমার মা-মণি সুখ চাইলে সুখই পেত, সতীও সুখ চাইলে সুখ পেত।

    —সুখ চায়নি তো কী চেয়েছিল?

    সনাতনবাবু বললেন—আমার মা-মণি চেয়েছিল টাকা—

    —আর সতী? সতী কী চেয়েছিল?

    সনাতনবাবু বললেন-তাঁর সঙ্গে আমার শুধু বিয়েই হয়েছিল,—তিনি তখন নিজেই জানতেন না তিনি কী চান!

    —তারপর? তারপর বিয়ের পরে কী চেয়েছিল?

    সনাতনবাবু বললেন—তিনি চেয়েছিলেন স্বামীকে, তিনি চেয়েছিলেন আমাকে। তিনি সুখ চানি। তিনি জানতেন না যে কোনও কিছুকে অবলম্বন করে সুখ চাইতে গেলে, অবলম্বনটাও যায়, সুখও আসে না—

    —কিন্তু এত জেনেও তাকে আপনি কেন এত কষ্ট দিয়েছেন সনাতনবাবু?

    সনাতনবাবু বললেন—কিন্তু জেনেও তো আমি অসহায় ছিলাম দীপঙ্করবাবু। আমি যে আমার নিজেকে দিয়েও তাঁকে সুখী করতে পারতাম না। কারণ তাঁর চাওয়াটাই ছিল ভুল—

    দীপঙ্কর এবার দৃঢ় হয়ে উঠলো। বললে—সনাতনবাবু, আমার একটা অনুরোধ আপনি রাখুন, আমার একটা অনুরোধ আপনাকে রাখতে অনুরোধ করছি—রাখবেন?

    তখন গাড়ি গড়িয়ে চলছে তীর বেগে। রেলের আপিসের সেই বন্ধন থেকে দীপঙ্কর তখন বেরিয়ে এসেছে। রাস্তায় একটা প্রোসেসন চলেছে। সামনে কংগ্রেসের ফ্ল্যাগ নিয়ে একজন সকলকে সামলে চলেছেন। বেশ ফরসা চেহারা। খদ্দরের পোশাক পরা। হৃষ্টপুষ্ট মুখখানা। পেছনে অসংখ্য ছেলে। গান্ধী টুপি মাথায় পরা। হঠাৎ নজরে পড়লো প্রাণমথবাবুকে। সেই গোড়ালী চাপা সু- জুতো। সেই পান-ভর্তি মুখ। সেই দৃঢ় বলিষ্ঠ মুখশ্রী। সকলকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। সেই ঠিক আগেকার মত। ঠিক সেই ধর্মদাস ট্রাস্ট মডেল স্কুলের সময় যেমন করতেন। ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ। আর ঠিক তাঁর পাশেই ফোঁটা। ফোঁটার গায়ে আরো সাদা খদ্দর। আরো পাতলা খদ্দর। ফোঁটারই যেন উৎসাহটা বেশি। সমস্ত কলকাতাটা যেন আজ কংগ্রেসের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছে। শুধু কি ফোঁটার মুখের দিকে? শুধু কি ছিটের মুখের দিকে? শুধু কি প্রাণমথবাবুর মুখের দিকে? সমস্ত ইন্ডিয়া তখন আরো উদ্গ্রীব হয়ে চেয়ে রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর মুখের দিকে, জওহরলাল নেহরুর মুখের দিকে, বল্লভভাই প্যাটেলের মুখের দিকে। আর কার দিকেই বা চাইবে? সুভাষ বোস যে নেই, সি আর দাশ যে নেই। কুইট্ ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া থেকে চলে যাও। আমরা আমাদের দেশ নিজেরা চালাবো। হরিজন পত্রিকায় গান্ধী লিখেছেন—Whatever the consequences, therefore, to India, her real safety and Britain’s too lie in orderly and timely with-drawal from India.

    সমস্ত পৃথিবী স্তম্ভিত হয়ে গেছে কংগ্রেসের প্রস্তাব শুনে। এ বিদ্রোহ। এ বিপ্লব। বেয়নেট-এর মুখে এর জবাব দিয়ে দাও। চার্চিল সাহেব মুখে চুরোট পুরে দিয়ে হেসেছে শুধু। ইন্ডিয়া তো আর শুধু কংগ্রেসের নয়। ইন্ডিয়া তো আর শুধু মিস্টার গান্ধীর নয়।

    মধুসূদনের রোয়াকে হয়ত তখনও সেই আড্ডা চলে। সেই আগেকার মত। দীপঙ্কর আর যায়নি সেখানে। হয়ত দুনিকাকা আরো বুড়ো হয়ে গেছে। হয়ত পঞ্চাদাও সেই আগেকার মত তর্ক করে খবরের কাগজ নিয়ে।

    —আরে বাবা, কংগ্রেসই তো আর সর্বেসর্বা নয়?

    পঞ্চাদা হয়ত বলেছে—তা কংগ্রেস সর্বেসর্বা নয় তো, কে সর্বেসর্বা শুনি? তোমার চার্চিল?

    চার্চিলের নাম শুনে সবাই হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ে। কোথায় রইল চার্চিল। রুজভেল্ট না এলে কোথায় থাকতো চার্চিল বাছাধন!

    চার্চিল সাহেব বলেছে—ইন্ডিয়ায় কি শুধু হিন্দু আছে? মুসলমান নেই? মহম্মদ আলি জিন্নাও তো একজন লীডার। তারপর সিডিউল্‌ড্ ক্লাস আছে, আম্বেদকর আছে—। কংগ্রেসকে মানবো কেন শুনি? কংগ্রেস কে?

    পঞ্চাদা বলেছে—তা তুমি কেন বাধা দিচ্ছ দুনিকাকা? স্বরাজ হলে তুমিও তো বেনিফিটটা পাবে? চাল সস্তা হবে, ডাল সস্তা হবে, দুধ সস্তা হবে—

    দুনিকাকা বলেছেন—ছাই হবে, ছাই হবে, এই কাঁচকলাটা হবে—

    মধুসূদনের বড়দা বলেছে—এই তোমাদের মত সব লোকের জন্যেই স্বরাজ আটকে যাচ্ছে দুনিকাকা নইলে অ্যাদ্দিন কবে এসে যেত—

    দুনিকাকা ক্ষেপে যেত—আরে আমার কথা ছেড়ে দে, আমি তো ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের খয়ের খাঁ,—জিন্নাকে কথাটা বোঝাগে যা না। ওই আম্বেদকরকে বোঝা না গিয়ে তোরা, তার বেলায় তো পেটে ইংরিজী বিদ্যে নেই—বোঝাগে যা—

    সত্যিই তো। নাইটি মিলিয়ন মুসলিম আছে, ফিফ্‌টি মিলিয়ন ডিপ্রেস্‌ ক্লাশ আছে, নেটিভ্ স্টেটে নাইটি ফাইভ মিলিয়ন প্রজারা আছে—টোট্যাল তিনশো নব্বুই মিলিয়ন লোকের মধ্যে দু’শো পঞ্চান্ন মিলিয়ন তো তারাই। তাদের বোঝাগে যা! তারা তোদের গান্ধীর কথা শুনবে? তারা গান্ধীকে মানে?

    তারপর একটু থেমে দুনিকাকা বললেন—আর তোরা কেউ তো কারো কথা বুঝিস না, দেশে হাজারটা ভাষা, বিহারীদের বলিস মেড়ো, মুসলমানদের বলিস নেড়ে—তোরা তো বলিস, ইন্ডিয়া—ইন্ডিয়া—তোদের নিজেদের মধ্যেই কী মিলটা আছে শুনি? স্বরাজ হরে সামলাতে পারবি এত ঝঞ্ঝাট?

    রাগে ঘেন্নায় কথাটা বলে দুনিকাকা যেন নিঃশব্দে একটা ছি ছি করে ওঠে।

    সামণে প্রাণমথবাবুকে দেখে তবু দীপঙ্করের যেন একটু আশা হলো। কোথাও কোন বিরোধ নেই মানুষটার মধ্যে! সেই নাইটি মিলিয়ন হিন্দুর প্রতিনিধি সেজেও তো আজ বেরিয়েছেন রাস্তায়। এই একই প্রশ্ন যদি করা যায় প্রাণমথবাবুকে তো প্রাণমথবাবু কী জবাব দেবেন? প্রাণমথবাবু তো বিরোধে বিশ্বাস করেন না, অবিশ্বাসে বিশ্বাস করেন না, তাহলে প্রাণমথবাবু এ-কথার কী জবাব দেবেন?

    সর্দার ভল্লভভাই প্যাটেল আমেদাবাদে বলেছেন—Anarchy is always preferable to salvery, as there is hope of independence arising out of anarchy. The movement will not collapse if the leaders are rounded up.

    প্রসেসটা আস্তে আস্তে সরে যেতেই গাড়িটা আবার ছেড়ে দিলে। দীপঙ্কর পাশের দিকে চেয়ে দেখলে। সনাতনবাবু তখনও সেই মিছিলের দিকে চেয়ে আছেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী
    Next Article কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    Related Articles

    বিমল মিত্র

    সাহেব বিবি গোলাম – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    বেগম মেরী বিশ্বাস – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    আসামী হাজির – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }