Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২ – বিমল মিত্র

    বিমল মিত্র এক পাতা গল্প950 Mins Read0

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৭

    ৭

    আজো এক-একদিন মনে হয় যে-জীবন যুগ থেকে যুগে, কল্পকাল থেকে কল্পকালে পরিব্যাপ্ত, যে-জীবন ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেন থেকে শুরু করে স্টেশন রোড, গড়িয়াহাটা, ফ্রি- স্কুল স্ট্রীট, কলকাতা, ভারতবর্ষ, সমস্ত পৃথিবীতে প্রসারিত, তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা মিস্ মাইকেল কতটুকু? একটা মিস্ মাইকেল কি একটা বিন্তীদির আত্মত্যাগ কত সামান্য? তাইত একটা নেপোলিয়ন, কি একটা আলেকজান্ডার কি একটা চেঙ্গিস খাঁর আত্মদান সংসারী লোকের চোখে অনেকখানি। ঐতিহাসিকদের চোখেও তার অনেক দাম। কিন্তু ফ্রি-স্কুল স্ট্রীটের সেই সেদিনকার একটি মৃত্যু কারো মনেই হয়ত দাগ কাটেনি। হয়ত সেদিন অন্য ফ্ল্যাটের মেয়েদের নৈশ-অভিযানে একটু বাধার সৃষ্টিও করেনি। হয়ত সেদিন বোকার মত মোটর-বাইক চালিয়ে কেউ এসে শিসও দেয়নি নিচেয় দাঁড়িয়ে। নিউ মার্কেটের গণি মিয়া, মূলজী শেঠ, হুকুমালী দোকানে বসে একটু আপসোস করেছে বড় জোর। কিন্তু বাইরের রাস্তায় মোটরগাড়ি আর ফুটপাথে খদ্দেরদের ভিড়ে তাদের সে-সব আপসোসও হয়ত তখন মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়। আবার হয়ত একদিন পরেই কেউ এসে ভাড়া নিয়েছে সে-ফ্ল্যাট। আবার পিয়ানোর টুং- টাং শব্দে পাড়া থেকে সে-বিভীষিকা মুছে গেছে। মুছে গেছে সকলের মন থেকে। হলিউডের ফিল্ম-স্টার ভিভিয়ান লেও হয়ত টের পেলে না কলকাতার ফ্রি-স্কুল স্ট্রীটের একটা অখ্যাত ফ্ল্যাট-জীবনের শেষ পরিণতির ইতিহাসটুকু। ইতিহাস থেকেও মুছে গেল একেবারে মিস্ মাইকেল। মুছে গেল মিস্ মাইকেল আর সেই তার পাঁচশো তেরখানা লাভ-লেটারের দীর্ঘনিঃশ্বাস।

    গণি মিয়া বললে—ও-সব মাগীদের কথা ছেড়ে দাও ভাইয়া, ওদের চিৎ-পাতের কড়ি এমনি উৎপাতেই যায়—

    মিস্টার ঘোষাল যেন কেমন বেপরোয়া। বললে-এ আর কী হবে সেন, চলো, লেট্‌ আস গো—এসব এখানকার ডেইলি ইন্সিডেন্ট—

    থানার ইন্সপেক্টরও যেন কেমন নিরাসক্ত। রক্তমাখা গাউনখানা হাত দিয়ে ছুঁয়েও একটু শিউরে উঠল না! ডাক্তার এসেছিল। যথারীতি, পরীক্ষা যা করার করলে। ইনভেস্টিগেশন যা হবার তা হলো। প্রথম দিন খবরের কাগজে ঘটনাটা এক কোণে ছাপা হয়েছিল। কিন্তু কে আর তা নিয়ে মাথা ঘামাবে? মিস্ মাইকেলের মৃত্যুর চেয়েও বড় বড় মৃত্যুতে তখন ছেয়ে গেছে পৃথিবীর মন। মানুষ তখন আর মৃত্যুতে কাতর হয় না। মরতেও কাতর হয় না, মারতেও কাতর হয় না।

    .

    সেদিন হঠাৎ বলা-নেই কওয়া-নেই সন্তোষ-কাকা একেবারে সামনে এসে দাঁড়াল। বললে—বাবাজী, তোমার সঙ্গে একটা কথা ছিল—

    দীপঙ্কর বললে—কী কথা বলুন?

    —তুমি তো কথাই দিয়েছিলে। কিন্তু বৌদির অসুখের জন্যে আটকে ছিল য়্যাদ্দিন।

    —কী আটকে ছিল? দীপঙ্কর তবু বুঝতে পারলে না।

    —এই ক্ষিরির বিয়ে।

    দীপঙ্কর অবাক হয়ে গেল। বললে—কত টাকা লাগবে আপনার মেয়ের বিয়েতে বলুন?

    সন্তোষ-কাকা বললে—সে তোমার বিয়ে, তুমি বুঝবে, বৌদি বুঝবে আর ক্ষিরি বুঝবে। আমি কে বাবাজী? আমি কেউ না দেখছো তো, ওই মেয়েটির বিয়ে দিয়ে আমি ঝাড়া-হাত-পা হয়ে যাবো। তারপর আমাকে দুটি খেতে দাও ভালো, না-খেতে দাও উপোস করবো। আমার জন্যে তোমাদের ভাবতে হবে না। বুঝলে বাবাজী, আমি হলুম বিবাগী মানুষ। দুখ-ভিখ করা আমার অভ্যেস আছে। আমার কথা ছেড়ে দাও

    দীপঙ্কর তখন আপিসে যাচ্ছিল—

    পেছনে যেন ফিস ফিস করে কার গলার আওয়াজ হলো। কে যেন আলগোছে ডাকলে—বাবা—

    দীপঙ্কর আর দাঁড়াল না।

    সন্তোষ-কাকা বললে—এখন আর তোমাকে বিরক্ত করবো না বাবাজী, তুমি এখন আপিসে যাও ওবেলা কথা হবে’খন–

    তারপর মেয়ের দিকে ফিরে বললে—কী রে, কী বলছিলি? দেখছিস তোর বিয়ের কথাটা পাড়ছি বাবাজীর কাছে, আর ওমনি দিলি তো সব ভন্ডুল করে—! আর কথা বলবার সময় পেলিনে?

    তারপর মেয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললে—বাজারে যেতে হবে? কী আনতে? তেল না ঘি?

    ক্ষিরি বললে—তুমি একটু চুপ করো না বাবা তোমার দুটি পায়ে পড়ি, তুমি একটু চুপ করো না—

    —কেন রে? কী করলুম আমি? চুরি করেছি আমি? না ডাকাতি করেছি যে চুপ করতে যাবো?

    ক্ষিরি বললে—তোমার জন্যে আমার লজ্জায় আত্মঘাতী হতে ইচ্ছে করে বাবা, আমি যে কী করি!

    সন্তোষ-কাকা ক্ষিরিকে ঠেলে দিয়ে বললে—তোকে কিছু করতে হবে না, তুই রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করগে দিকিনি! আজকে কী রান্না করছিস, বল?

    তারপর ক্ষিরির পেছন-পেছন রান্নাঘরে গিয়ে বলে—কী যে রান্না করিস তুই! তোর মা কপি দিয়ে কই মাছ দিয়ে একরকম রান্না করতো, আহা, এখনও জিভে লেগে রয়েছে—সেই রকম একদিন রাঁধতে পারিস না?

    ক্ষিরি কিছু কথা বললে না।

    সন্তোষ-কাকা বলতে লাগলো—আর-এক কাজ কর দিকিনি, সরষের তেলে ভাল করে জিরে-মরিচটা ভেজে নে, ভেজে নিয়ে দুটো কাঁচা লঙ্কা ছেড়ে দে, তারপর ডুমো ডুমো কপি তাতে ছেড়ে দে, দেখবি………

    ক্ষিরি আর থাকতে পারলে না। বললে-বাবা তুমি যাও তো, তুমি রান্না-ঘর ছেড়ে তোমার নিজের কাজ করোগে যাও তো—

    সন্তোষ-কাকা অবাক হয়ে যায়। বলে—কেন রে, আমি আবার কী করলুম তোর?

    ক্ষিরি বলে—সমস্ত দিন খাওয়ার চিন্তা ভাল লাগে না, তুমি তোমার নিজের কাজ করোগে যাও না—

    —নিজের কাজ? আমার আবার নিজের কাজ কীরে? আমার খাওয়া ছাড়া কাজটা কী শুনি? খাবো দাবো বাজার করবো, এই তো আমার কাজ। যদি দোকানে যাবার থাকে তো বল্ আমাকে, নিয়ে আসি—

    —তোমায় কিছুছু নিয়ে আসতে হবে না।

    সন্তোষ-কাকা বলে—তা দোকানেও যেতে হবে না, গপ্‌পোও করতে পারবো না— তাহলে আমি কী করবো বল? আর তা না হলে একবাটি মুড়ি দে, বসে বসে চিবোই-

    ক্ষিরি বলে—তুমি ওপরে গিয়ে জ্যাঠাইমার কাছে একটু বোস না। সেখানে বসলেও তো একটু কাজ হয়—

    সন্তোষ-কাকার যেন কিছুই ভাল লাগে না। ওদিকে পাড়ার লোকের সঙ্গে কথা বললেও বেশিক্ষণ জমে না। পাড়ার সব লোকই ব্যস্তবাগীশ। বাড়িতে ক্ষিরিও কাজে- কর্মে ব্যস্ত। কাশীটাকে অকারণে ধমক দেয়। সন্তোষ-কাকা কাছে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে বলে—ঘুমোচ্ছিস যে বড়? ঘুমোচ্ছিস কেন?

    কাশী ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ায়। বলে—কিছু কাজ আছে?

    সন্তোষ-কাকা বলে—কাজ থাকুক-না-থাকুক, তুই ঘুমোবি কেন? ঘুমোবি কেন তুই? গুনে গুনে মাইনে নিস নে?

    কাশী হকচকিয়ে যায়। বলে—তা কী কাজ আছে বলুন না—

    সন্তোষ-কাকা বলে—কাজ না থাকে, ঘর ঝাঁট দে—

    কাশী বলে—ঝাঁট তো দিয়েছি সকালে

    —তা সকালে ঝাঁট দিয়েছিস বলে কি আর দুপুরবেলা ঝাঁট দিতে নেই! দে, ঘর ঝাঁট দে আবার, আমি দেখি বসে বসে—

    গোলমাল শুনে ক্ষিরি কাছে আসে। বাবার কান্ড দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। সন্তোষ – কাকা মেয়েকে দেখেই বলে—এই দ্যাখ্ ক্ষিরি, দ্যাখ কাশীর কান্ড, একবার ঘর ঝাঁট দিলে নাকি আর-একবার ঘর ঝাঁট দিতে নেই—আমার সঙ্গে আবার তকো করছে—

    কাশী তখন ঝাঁটা নিয়ে ঘর ঝাঁট দিতে আরম্ভ করেছে।

    বাবা বাইরে আসতেই ক্ষিরি বলে—কেন বাবা তুমি অমন করে বকো বলো তো কাশীকে যখন-তখন?

    সন্তোষকাকা চিৎকার করে ওঠে—বলে—আমি বকি! আমি কখন আবার বকলুম শুনি? তুই তো কেবল আমাকে বকতেই দেখিস-তা চাকর মানুষ, বকবো না। যদি বকেই থাকি তো কী অন্যায়টা করেছি শুনি? বকবো না? হাজার বার বকবো, লক্ষ বার বকবো! মাইনে নেয় না ও? আমি অপ্‌চো-নষ্ট দেখতে পারিনে! বেশ করেছি, বকেছি— আরো বকবো বেটাকে—

    ক্ষিরি বলে—তা যাদের চাকর তারা বকুক, তুমি কেন বকতে যাও—? আমরা কে? আমরা দুদিনের জন্যে এসেছি, আমাদের ও-সব কথায় থাকবার দরকার কী?

    কেন? দুদিনের জন্যে এসেছি মানে! দুদিনের জন্যে এসেছি মানেটা কী? তুই-ই তো এ-বাড়ির গিন্নী, ও তো তোরই চাকর! তুই তো আমার মেয়ে? তা আমি কেউই নই এ-বাড়ির? আমার কাউকে বকবার ক্ষেমতা নেই? আমি তো দীপুর শ্বশুর হলাম, জামাই- এর চাকর তো আমারও চাকর বটে—

    ক্ষিরি লজ্জায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কথাটা কেউ শুনতে পেয়েছে কিনা দেখে নেয়। তারপর বলে—আচ্ছা বাবা, তুমি কী বলো তো? তুমি কী?

    —কেন? আমি কী?

    সন্তোষ-কাকা মেয়ের কথা কিছু বুঝতে পারে না। বলে—আমাকে তুই এত হতচ্ছেদ্দা করিস কেন বল তো? আমাকে তুই হতচ্ছেদ্দা করিস কেন এত?

    —না, তোমার সঙ্গে আর আমি কথা বলতে পারি না। তুমি যাও তো, তুমি বাড়ি থেকে একটু বেরোও, এদিক ওদিক ঘুরে এসো–যাও—তোমার দুটি পায়ে পড়ি, তুমি একটু বেরোও—

    —কী? তুই আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললি?

    ক্ষিরি বললে—বেরিয়ে যেতে বলিনি। বলছি একটু বাইরে বেড়িয়ে এসো, সারাদিন বাড়ির মধ্যে থেকে থেকে তোমার মাথা গরম হয়ে গেছে—

    সন্তোষ-কাকারও আত্মসম্মান-জ্ঞান আছে—মেয়ের কথা শুনে প্রথমটা কেমন হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তারপর বললে—তাই যাচ্ছি আমি। তাতেই যদি তোর মনস্কামনা পূর্ণ হয় তো তাই যাচ্ছি। আমি আর আসবো না এ-বাড়িতে। আমি যদি এক বাপের বেটা হই তো আর আসবো না এ-বাড়িতে—আমি চললুম—

    বলে সত্যি-সত্যিই সন্তোষ-কাকা দপ্ দপ্ করে পা ফেলতে ফেলতে সদর দরজাটা দড়াম করে শব্দ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।

    ক্ষীরোদা বাবার কান্ড দেখে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে।

    .

    দুপুর বেলা। খাওয়া হয়নি, দাওয়া হয়নি। মাথার ওপর রোদ ঝাঁ-ঝাঁ করে। রাস্তার ধারে পার্কের বেঞ্চিতে গিয়ে বসে পড়ে সন্তোষ-কাকা। ও-পাশের একটা কারখানার ঘড়িতে একটা বেজেছে কাঁটায় কাঁটায়। পার্কের মধ্যে দু’ একটা কুকুর পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রাস্তায় ট্রাম বাস শব্দ করতে করতে চলেছে। সন্তোষ-কাকা চেয়ে থাকে রাস্তার দিকে। কাশী হয়ত তাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। কী বিরাট-বিরাট মিলিটারি মোটরগাড়ি গুম্ গুম্ আওয়াজ করতে করতে চলেছে। রাস্তা কাঁপছে, পার্ক কাঁপছে, বাতাসগুলো পর্যন্ত যেন কাঁপছে সেই শব্দে। সন্তোষ-কাকার খুব ক্ষিদে পেতে লাগলো। বাইরে একটা জলের কল রয়েছে। সন্তোষ-কাকা জলের কলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর কলটা টিপলে। দুপুর একটার সময় কোথায় জল? খানিকক্ষণ নাড়া-চাড়া করেও কিছু ফল হলো না। হতাশ হয়ে আবার বেঞ্চিটায় এসে বসলো। কিন্তু সন্তোষ-কাকার মনে হলো যেন পেটের ভেতরটা মোচড় দিতে শুরু করেছে।

    —ও ভায়া, একটু জল দিতে পারো!

    সামনের ফুটপাথে একটা খাবারের দোকান। সামনের কাচের বাক্সের মধ্যে খাবার সাজানো রয়েছে থরে থরে। গজা আছে, রসগোল্লা আছে, পান্তুয়াও আছে। সন্দেশ আছে। বোঁদে মিহিদানা, দরবেশ। সবই আছে।

    —ওগুলো কী হে ভায়া? কালো-কালো ও-গুলো কী?

    দোকানী বললে-কালো জাম। নেবেন না কি?

    সন্তোষ-কাকা গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখতে দেখতে বললে—কালোজাম? ভাল-ভাল! কত করে দাম ফেলেছ?

    —দু’ আনা।

    —দু’ আ-না!

    সন্তোষ-কাকা চমকে উঠলো। বললে—বড্ড গলা-কাটা দাম করেছ তো ভায়া। আমাদের রসুলপুর যদি যাও তো এর ডবল্ পান্তুয়া তোমায় দু’ আনায় খাইয়ে দেব! কলকাতা শহরের তো সবই গলা-কাটা দর হে—! মাথায় থাকুক আমার কলকাতা শহর—

    দোকানী লক্ষ্য করছিল সন্তোষ-কাকাকে। বললে—কী নেবেন আপনি?

    সন্তোষ-কাকা বললে—নিতে তো ইচ্ছে হয়, কিন্তু তোমাদের যা দর! শুনলে হাত- পা বুকের মধ্যে সেঁদিয়ে আসে—

    —তা কিছু যদি না-নেন্ তো যান এখান থেকে, দোকানের সামনে ভিড় বাড়াবেন না!

    সন্তোষ-কাকা রেগে যায়। বলে—আমি ভিড় বাড়াচ্ছি?

    —তা জিনিস নেবেন না তো দর করছেন কেন মিছিমিছি? দর জেনে কী হবে?

    সন্তোষ-কাকা বলে—বেশ তো মজা, দর জিজ্ঞেস করাও অন্যায় হয়ে গেল? তুমি তো বেশ দোকানী হে

    দোকানী তখন সহ্যের শেষ-সীমায় গিয়ে পৌঁছিয়েছে। বললে—আপনি নেবেন কী বলুন তো?

    সন্তোষ-কাকা বললে—কিছুই নেব না, শুধু একটু জল চাইছি, এই খাবার জল আর কী!

    —খাবার জল-টল হবে না, আপনি যান এখান থেকে।

    সন্তোষ-কাকা অবাক হয়ে যায়। বলে—এ তো তাজ্জব লোক দেখছি। একটু খাবার জল চাইছি, তা-ও দেবে না। বলি তেষ্টার জল খেলেও কি পয়সা দিতে হবে নাকি?

    —আমার জল আমি যদি না-দিই তো কী করতে পারো শুনি?

    —তা বেশ, খাবো না জল। না-দিলে না-দিলে—তার জন্যে অত কথা শোনাচ্ছো কেন আবার? তুমি ‘না’ বললেই চলে যাবো। আমি অত সাত-কথার লোক নই। তুমি আমায় চেন না তাই বলছো হে! জানো আমার জামাই রেলে চাকরি করে?

    শেষ পর্যন্ত দোকানীর আর সহ্য হয় না। একেবারে দোকান ছেড়ে সামনে এগিয়ে আসে। বলে—বেরিয়ে যাও এখান থেকে, বেরিয়ে যাও—

    ভয়ে ভয়ে সন্তোষ-কাকা পেছু হটে আসে। বলে—ঠিক আছে, না-হয় জল দেবে না খেতে, তা বলে অত চোট-পাট্ কেন? মারবে নাকি আমাকে?

    —হ্যাঁ মারবো! করবে কী তুমি? কী করবে আমার?

    সন্তোষ-কাকা তখন রণে ভঙ্গ দেয়। হেঁটে আবার রাস্তা পার হয়। পেছন ফিরে বলে—জলও খেতে দেবে না আবার মুখে চোট্‌-পাও করবে, বেশ লোক যাহোক সব

    পেছন ফিরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা হৈ-চৈ কানে গেল। রাস্তার সমস্ত লোক চিৎকার করে উঠেছে এক সঙ্গে—গেল, গেল, গেল—

    আর সঙ্গে সঙ্গে একটা মিলিটারি লরী একেবারে ঠিক ঘাড়ের কাছে এসে ব্রেক কষে থেমে পড়লো। আর একটুর জন্যে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল মানুষটা। গাড়ির ভেতরে মিলিটারি ড্রাইভার, ইংরিজীতে কী-সব গালাগালি দিয়ে উঠলো চিৎকার করে। এক গাদা লোক জমে গেল। সবাই ধমক দিলে।

    বললে—কী রকম মানুষ আপনি মশাই, এখুনি যে যাচিছলেন—

    ততক্ষণে সন্তোষ-কাকা দূরে সরে পড়েছে। বললে—তা আমার কী দোষ মশাই, যে গাড়ি চালাবে তার চোখ নেই? কানা নাকি?

    বলতে বলতে আবার পার্কের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো। রাস্তর লোকজন তখনও দেখছিল সন্তোষ-কাকার দিকে চেয়ে। গাড়িটা চলে যেতেই ভিড় পালা হয়ে এল। সন্তোষ-কাকা দূর থেকে দেখলে চেয়ে চেয়ে। কলকাতার সব লোক পাগল। পাগলের রাজ্যি কলকাতা শহর। কী এমন অন্যায় করেছে সন্তোষ-কাকা? দোকানে গিয়ে একটু তেষ্টার জল চেয়েছে আর মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে একেবারে? রসুলপুরে কত লোক অজানা-অচেনা বাড়িতে গিয়ে পাতা পেড়ে ভাত খায়। তার বেলা তো দোষ হয় না। আর গাড়ির গারোয়ানেরই বা কী আক্কেল! দেখে শুনে চলতে পারো না বাপু! রাস্তা তো মানুষের হাঁটার জন্যেই তৈরি হয়েছে। গাড়ি চালাবার জন্যে তো হয়নি! গাড়ি চালাতে দিচ্ছি, সে-ই তো তোমাদের ভাগ্যি! যত সব পাগল। পাগলের ডিম সব!

    আবার ফাঁকা হয়ে গেল জায়গাটা। আবার ক্ষিদে পেতে লাগলো সন্তোষ-কাকার। পেটের ভেতর কে যেন বাটনা বাটছে! মোচড় দিচ্ছে নাড়ি-ভুঁড়িগুলো। ঘড়িতে চারটে বাজলো। রাস্তায় জল দিচ্ছে নল দিয়ে। আবার উঠে দাঁড়াল সন্তোষ-কাকা! এখনও তো কেউ খুঁজতে আসছে না। কাশীটা কোনও কম্মের নয়। বেটা কেবল মাইনে নেবার যম। কোনও কাজ নেই, কেবল ঘুমোবে পড়ে পড়ে। একটা মানুষ যে না-খেয়ে পার্কে বসে বসে ঝিমোচ্ছে সেদিকে তোর খেয়াল নেই। ক্ষিরি তো বাপকে খুঁজতে রাস্তায় বেরোতে পারে না। তাহলে তুই আছিস কী করতে? তুই তো দেখবি কাকাবাবু কোথায় গেল? তুই তো বাড়ির বাইরে এসে রাস্তার ধারে চোখ বুলোবি! এই যে মানুষটা না-খেয়ে পার্কে বসে হা-পিত্যেশ করে চেয়ে রয়েছে পথের দিকে, এই যে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়তে- পড়তে বেঁচে গেল মানুষটা, তার জন্যে তোর একটু ভাবনা নেই রে? কাকাবাবু খেলে কি না-খেলে তাতে তোর কী? তুই চাকর মাইনে পেলেই হলো? তুই একটু খোঁজ আমাকে! একবার ভাবতেও তো পারিস যে, কাকাবাবু পার্কেও যেতে পারে। পার্কটা না-হয় একবার খুঁজে আসি!

    নাঃ, এ বেটাকে ছাড়াতেই হবে! বেটার চাকরি খেয়ে তবে আমি জলগ্রহণ করবো! বেটা কোনও কাজের নয়। বেটা আমাকে খুঁজে বার করতেও পারে না! এই তো, আমি লুকিয়েও নেই, মরেও যাই নি! পার্কের বেঞ্চির ওপর রাস্তার দিকে চেয়ে তোর জন্যে বসে আছি! বেটা এ দিকটাই একবার মাড়াচ্ছে না!

    সন্তোষ-কাকা উঠলো।

    তারপর আস্তে আস্তে আবার বাড়ির রাস্তাটা ধরলে! দূর থেকে বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কাছে গিয়েও কেমন থমকে দাঁড়াল। কার জন্যে বাড়ি যাওয়া। কিসের টান! মেয়ের? মেয়েই কি বাপের কষ্টটা বুঝতে পারছে! মেয়ে যদি বাপের কষ্টটা বুঝতো তো ভাবনা! আরে, কার জন্যে এত করি? আমার কে আছে তুই ছাড়া? আমি যে সুখের গাঁ ছেড়ে এখানে এই পাগলের রাজ্যিতে রয়েছি, সে কার জন্যে? কার সুখের জন্যে? আমার না তোর? তোর বিয়ের জন্যেই তো আমি এই কলকাতা শহরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সে-ও তো তোরই ভালোর জন্যে! আমার কী? আমার আর ক’টা দিন! তোর বিয়েটা হয়ে গেলেই তো আমার কর্তব্য খালাস!

    গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দেখলে সন্তোষ-কাকা।

    কোথাও কারো টিকির দেখা নেই। পাড়াটা যেন খাঁ খাঁ করছে। কাদের বাড়ির একজন ঝি কাপড় চাপা দিয়ে এক কাঁসি ভাত নিয়ে যাচ্ছে। একটা কাক মাথার ওপর উড়ছে। ঝি’টা ডান হাতে একটা লাঠি মাথার ওপর নাড়াতে নাড়াতে চলেছে।

    সন্তোষ-কাকা আরো সাবধান করে দিলে। বললে—খুব সাবধানে ভাত নিয়ে যাবে বাছা, কাগ্ আছে মাথায়—

    ঝিটা গায়ে মাখলে না কথা। কাপড়ের আড়ালে ভাতগুলো একটু দেখা যাচ্ছে। মোটা চালের ভাত। পুরো এক কাঁসি। যতক্ষণ ভাত নিয়ে গেল, ততক্ষণ একদৃষ্টে চেয়ে রইল সন্তোষ-কাকা। সবাই বেশ পেট পুরে ভাত খাবে। সবাই বেশ ভাত খেয়ে আরাম করে ঢেকুর তুলবে, আর তার কপালেই ভাত নেই!

    হঠাৎ একটা শব্দ হতেই সন্তোষ-কাকা ফিরে দেখলে অবাক কান্ড! সেই এক কাঁসি ভাত রাস্তায় পড়ে ছত্রখান। ঝিটার হাত থেকে থালাটা পড়ে গেছে, আর একপাল কাক গোল হয়ে ঘিরেছে ঝি’টাকে। সন্তোষকাকা দৌড়ে কাছে গেল। বললে—হু-হুস্— হু—

    কাক কি আর সহজে নড়ে! একটু পেছিয়ে যায় লাফাতে লাফাতে; আবার এগিয়ে আসে। একটাকে তাড়াতে গেলে আর একটা ছোঁ মারতে আসে পেছন থেকে।

    সন্তোষ-কাকা বললে—আমাকে লাঠিটা দাও তো বাছা, কাগের গুষ্টির আমি নির্বংশ করছি—। তোমাকে বললাম তখন একটু সাবধানে যেতে—এখন হলো তো!

    বেচারী এমনিতেই তখন লজ্জায় পড়েছে। ভাতগুলোর দিকে চেয়ে চোখ দিয়ে তার জল বেরিয়ে এল।

    সন্তোষ-কাকা বললে—দেখ দিকিনি, কী কান্ড হবে এখন? এমন ভাতগুলো নষ্ট হলো তো? এখন কী খাবে তুমি?

    ঝিটার মুখে তখন আর কিছু কথা বেরোচ্ছে না। তাড়াতাড়ি কাঁসিটা কুড়িয়ে নিয়ে সে-জায়গা থেকে সরে গেল। সন্তোষ-কাকা দেখলে যে-বাড়িটা থেকে ঝিটা বেরিয়েছিল, সেই বাড়িতেই গিয়ে ঢুকলো আবার। সন্তোষ-কাকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকগুলোর ভাত খাওয়া দেখতে লাগলো। প্রথমে সন্তোষ-কাকাকে দেখে একটু ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু একটু সরে যেতেই কাকগুলো এগিয়ে এসে গপ্ গপ্ করে ভাতগুলো গিলতে লাগলো। ভাত খাওয়া দেখতে দেখতে সন্তোষ-কাকার নিজের জিভ দিয়েই জল পড়তে লাগলো। আহা, এই ভাত! কারোর ভোগেই লাগলো না শেষ পর্যন্ত! ঝিঁটাও খেতে পেলে না, কেউই খেতে পেলে না। সন্তোষ-কাকাকে দিলেও খেয়ে সাবাড় করে দিত। শুধু ভাত নয়। পুঁইশাকের চচ্চড়িও রয়েছে। বেশ মোটা-মোটা ডাঁটা। চিংড়ি মাছের ঝোলও ছিল বোধ হয়। বড়ি আলু আর চিংড়ি মাছ দিয়ে রাঁধা। আহা বেশ খেতে হয়। ক্ষিরির মা রাধতো এমন করে! ভাতগুলো ততক্ষণে সব ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে ফেলেছে কাকেরা। একটা কণাও আর পড়ে নেই তখন। খোয়ার রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে পর্যন্ত ঠুকরে তুলে খেয়ে নিয়েছে। একটা ছিটে-ফোঁটাও আর পড়ে নেই। কাকগুলো তখন বাড়ির পাঁচিলে উঠে ঠোঁট মুছছে পা দিয়ে। সন্তোষ-কাকা তাদের দিকে চেয়ে বললে—বেশ করেছিস্ তোরা খেয়েছিস্—ভাত হলো লক্ষ্মী, ভাত ফেলতে নেই—বেশ করেছিস্—

    তারপর কাকগুলো একে একে আবার সব কোথায় উড়ে গেল।

    সন্তোষ-কাকা আবার বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো। কেউ কোথাও নেই। সবাই বাড়ির ভেতরে খেয়ে দেয়ে জিরোচ্ছে। ভারি আরাম সকলের। সে যে এখন না-খেয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। এই-ই সংসার। একেই বলে ধোঁকার টাটি!

    —এই, ও খোকা, ও ভাই, তুমি কোথায় যাচ্ছো হে?

    একটা কাদের বাড়ির চাকর বুঝি। রাস্তায় বেরিয়েছে কাজ-কর্ম সেরে। বললে—এই বাড়িতে আমি কাজ করি—কেন?

    সন্তোষ-কাকা বললে—একটা কাজ করতে পারবে? বেশি হ্যাঙ্গামের কাজ নয়, ওই যে বাড়িটা দেখছো, উইটে আমার জামাই-এর বাড়ি, বুঝলে?

    চাকরটা বললে—বুঝলাম, কিন্তু কী করতে হবে?

    —সামান্য কাজ হে, তোমায় খাটাবো না বেশি, তুমি শুধু ওই বাড়িতে যাবে, গিয়ে আমার মেয়েকে বলবে যে তার বাপ ওই পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে—বাস্‌, এই টুকুন কথা বলবে। আর তোমায় কিছুছু করতে হবে না—

    —আর কিছু বলতে হবে না?

    সন্তোষ-কাকা বললে—না—

    চাকরটা চলেই যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ এক কান্ড ঘটলো। পেছন থেকে একটা মোটরগাড়ি আসছিল। তার ভেতর থেকে কে যেন ডাকলে। বললে—এখানে কী করছেন কাকাবাবু?

    সন্তোষ-কাকা পেছন ফিরেই অবাক! বললে—এই যে বাবাজী, তুমি?

    দীপঙ্কর এমন সময় কোনোদিন বাড়ি ফেরে না। আপিসের কাজে বালিগঞ্জ স্টেশনে আসতে হয়েছিল একবার আপিসেরই গাড়ি নিয়ে। স্টেশন-মাস্টার মজুমদারবাবুর সঙ্গে আসছিল। রাস্তার মধ্যে সন্তোষ-কাকাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দিলে।

    সন্তোষ-কাকার তখন চোখে জল বেরিয়ে আসবার যোগাড়। বললে—এই যে বাবাজী, এই বিকেল গড়িয়ে গেল, এখনও আমার ভাত খাওয়া হয়নি—

    দীপঙ্কর বললে—কেন? এই এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে আছেন কেন?

    সন্তোষ-কাকা বললে—তা ভাত দিলে তবে তো খাবো বাবাজী! আমার মেয়েই যে আমাকে ভাত খেতে দিলে না। শেষ পর্যন্ত, এই-ই আমার কপালে ছিল বাবাজী, জানো, এই বিকেল গড়িয়ে গেল, এখনও আমার ভাত খাওয়া হয়নি—

    বলতে বলতে সন্তোষ-কাকা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠলো।

    দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কেন, খেতে দেয়নি কেন? কী করেছিলেন আপনি?

    —কী আবার করবো? তুমি তো আমাকে চেন বাবাজী এতদিন ধরে তুমি আমাকে দেখেছো, আমাকে কখনও কারো সাতে-পাঁচে থাকতে দেখেছ? আমি কোনো দিকেই থাকি না। খাই-দাই আর নিজের মনেই কাঁসি বাজাই। তা আমাকে বলে কি না বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে! কেন, বাবাজী, আমি কী এমন অপরাধ করেছি যে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো? আমি আমার জামাই-এর বাড়িতে থাকবো তাতে যদি কিছু বলতে হয় তো তুমি বলবে! ও কে? ও বলবার কে শুনি?

    দীপঙ্কর কিছু বললে না। ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বললে। সন্তোষ-কাকা তখন গাড়িতে উঠে বসেছে। বললে—আমার অপরাধের মধ্যে অপরাধ হয়েছে, ক্ষিরির বিয়ের কথা তোমাকে বলেছি। তা বলবো না? কী বলো বাবাজী! ক্ষিরিকে তুমি বিয়ে করবে কথা দাওনি? বলো তো তুমি?

    বাড়ির সামনে গাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল। দীপঙ্কর কথার কিছু উত্তর না দিয়ে নেমে পড়লো। সন্তোষ-কাকাও নামতে নামতে বললে—তুমি তো আমাকে পাকা-কথাই দিয়ে দিয়েছ, এই বৌদি একটু ভাল হয়ে উঠলেই দু-হাত এক করে দেব! তা সেই কথাটা বলেছি বলেই ক্ষিরির যত রাগ আমার ওপর। বুঝলে বাবাজী, আমাকে যা-নয়-তাই বলে বাড়ি থেকে বার করে দিলে একেবারে—বললে, ভাত দেব না খেতে—তা না দিক গে, ভাবলাম খাবো না আমি ভাত, দেখি কী করতে পারিস তুই—

    গাড়ি থেকে নেমেই দীপঙ্কর সোজা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেল। সন্তোষ-কাকাও ভেতরে ঢুকলো।

    খাটের ওপর দীপঙ্করের মা শুয়ে ছিল চাদর চাপা দিয়ে। অনেকক্ষণ পরে যেন হুঁশ হলো। ক’দিন থেকে কিছুই পেটে যাচ্ছে না। কিছু মুখে দিলেই বমি-বমি ভাব। কিছু রোচে না মুখে। মনে মনে কেবল জপ করে—আমার দীপু রইল মা, দীপুকে দেখো তুমি! দীপুর আর কেউ রইল না মা সংসারে। আমার কত সাধ ছিল মা, কিছুই মিটলো না। কোনও দিকেই কিছু সুরাহা হলো না। বড় সরল ছেলে আমার, কারো কোনোও কথায় থাকে না, মা বলতে সে অজ্ঞান—তোমার কাছেই রেখে গেলাম আমার দীপুকে। তুমি দেখো মা, তার ভালো-মন্দ সব কিছু দেখো—

    হঠাৎ যেন খেয়াল হলো। বললে—কে মা, ক্ষীরোদা? তোমার খাওয়া হয়েছে? ক্ষীরোদা বললে—এই ডাবের জলটা খেয়ে নিন জ্যাঠাইমা—

    —তোমার খাওয়া হয়েছে তো?

    ক্ষীরোদা তবু দ্বিধা করতে লাগলো।

    —কথা বলছো না কেন মা? তোমার খাওয়া হয়েছে তো? সন্তোষ খেয়েছে? আমার কী যে হলো মা, তোমরা দু’দিনের জন্যে এলে, কী খাচ্ছো, কেমন থাকছো, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না—

    বলে মা চোখের জল মোছবার চেষ্টা করলে।

    মা বললে—এই এতটুকু বেলা থেকে ওই দীপুকে মানুষ করেছি জানো মা, কী কষ্টে যে মানুষ করেছি, তা কেউ জানে না। দিনের পর দিন পরের বাড়িতে ঝাঁটা খেয়ে, গাল- মন্দ খেয়ে, ওকে বুকে করে চোখের জল মুছেছি, কেউ টের পায়নি! তা ভগবান যখন মুখ তুলে চাইলেন, তখন আবার আমি অসুখে পড়লুম—

    —আপনি কাঁদবেন না জ্যাঠাইমা, আপনি ভালো হয়ে যাবেন!

    মা বললে—সন্তোষ কোথায় গেল মা?

    ক্ষীরোদা বললে—বাবা বাড়ি থেকে চলে গেছে, ভাত-টাত কিছু খায়নি—আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে

    —ওমা, কী সব্বনাশ, কোথায় গেছে, আমাকে বলোনি তো?

    —আপনাকে বলে আর কষ্ট দিতে চাইনি মিছিমিছি—

    —তা ভাত খেলে না কেন? তুমি বুঝি কিছু বলেছিলে বাবাকে? দেখ দিকিনি, আমি এখন কী করি। তুমিও বুঝি তাই এত বেলা পর্যন্ত না-খেয়ে উপোস করে আছো? ছি- ছি, কাশীকে ডাকো তাহলে, কাশীকে ডেকে ওঁকে খুঁজে আনতে বলো—হয়ত রাগ করে কোথায় গিয়ে বসে আছে—ছি-ছি—

    হঠাৎ দীপঙ্কর ঘরে ঢুকেছে। বললে—কেমন আছো মা তুমি এখন?

    মাও অবাক হয়ে গেছে। বললে—ওমা, তুই আবার আপিস কামাই করলি নাকি? হঠাৎ এলি যে?

    দীপঙ্কর বললে—আপিসের কাজে এদিকে এসেছিলাম, তাই তোমাকে একবার দেখতে এলাম—

    সঙ্গে সঙ্গে সন্তোষ-কাকাও ঘরে ঢুকেছে। ঘরে ঢুকেই বলতে আরম্ভ করলে— – ওই দেখ বাবা, ওকেই জিজ্ঞাসা করে দেখ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে কি না— ওই তো তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে—

    মা হাঁফাতে হাঁফাতে বললে—হ্যাঁগা সন্তোষ, তুমি কী বলো তো? তুমি খেলে না দেলে না, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে, আর এদিকে তোমার এইটুকুন মেয়েটা এই এত বেলা পর্যন্ত উপোস করে রইল? তোমার আক্কেলখানা কী-রকম শুনি? না-খেয়ে পিত্তি পড়িয়ে নিজেও ভুগবে আর দুধের মেয়েটাকেও যে ভোগাবে! আমি অসুখে পড়েই যত জ্বালা হয়েছে—

    সন্তোষ-কাকা বললে—তা তুমি তো ক্ষিরির দিকে টেনে কথা বলবেই বৌদি, আর আমার জ্বালাটা তো বুঝলে না। আমি কী সাধ করে উপোস করে আছি? আমার বুঝি ক্ষিদে পায় না? আমার বুঝি ক্ষিদের চোটে চোখ-কান ঝাঁ-ঝাঁ করে না? আমি যে পার্কের বেঞ্চিতে বসে ভ্যারান্ডা ভাজছি, সেদিকে তো তোমার দুধের মেয়ের হিসেব নেই?

    —তা ক্ষিদে পেলে বাড়িতে চলে আসলেই পারতে?

    সন্তোষ-কাকা বললে—বা বা বা, তুমি তো বেশ বলছো বৌদি! েিদ পেলেই আমি বাড়িতে চলে আসবো? কেন, আমার কি মান-সম্ভ্রম কিছুছু থাকতে নেই? গরীব লোক বলে আমি কি কান্ডজ্ঞানটাও হারিয়ে বসে আছি? ও-মেয়ে আমাকে কি না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। ওর বাড়ি, যে ও বেরিয়ে যেতে বলবে?

    মা ক্ষীরোদার দিকে চেয়ে বললে—ছি মা, বাবাকে কি অমন কথা বলতে আছে?

    —শুধু কি তাই? আরো কত কথা বলেছে জিজ্ঞেস করো না ওকে, ওই তো সামনেই মুখ বুজে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আমি তো মিছে-কথা বলছি না—জিজ্ঞেস করো না—

    মা বললে—যাও মা, বাবাকে ভাত বেড়ে দিয়ে, নিজেও খেয়ে নাও—বাবা হলো গুরুজন, বাবাকে কি ওসব কথা বলতে আছে?

    সন্তোষ-কাকা তবু নাছোড়বান্দা। বললে—না, আমি ভাত খাবো না, কিছুতেই খাবো না তো, ও আগে বলুক, ও দোষ করেছে—

    মা বললে—বলো না মা বলো। বাবার কাছে মাপ চাও—তাতে কোনো লজ্জা নেই—

    একে দীপঙ্করের সামনে ক্ষীরোদা মুখ তুলে কথা বলতে পারে না, তার ওপর মাপ চাওয়ার কথা উঠতে আরো নীচু হয়ে গেল তার মাথাটা! ঘরের এককোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

    —দেখছো তো বৌদি! তোমার দুধের মেয়ের আক্কেলখানা দেখছো তো! অথচ আমি কিছুছু বলিনি ওকে জানো বৌদি! ওরই ভালোর জন্যে আমি ভেবে ভেবে মরি। ওকে শুধু বলার মধ্যে বলেছি যে, জ্যাঠাইমাকে বল্ একটু তাড়াতাড়ি করতে—

    মা বুঝতে পারলে না। জিজ্ঞেস করলে—কীসের তাড়াতাড়ি—

    সন্তোষ-কাকা বললে—ওর বিয়ের। তুমিও তো কথা দিয়েছ আর বাবাজীও রাজী হয়ে গেছে। শুধু-শুধু দেরি করে তো লাভ নেই! মুখের কথাই হলো আসল—তা তোমার মাঝখান থেকে অসুখ হয়েই তো বিয়েটা আটকে গেল। তা তোমাকেও বলি বৌদি, তোমার অসুখ যদি এক বছর ধরে চলে তো ছেলের বিয়ে কি বলে তুমি আটকে রাখো? তোমারও তো একটু ছেলের দিকটা ভাবা উচিত—

    দীপঙ্কর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল। এবার একটু নড়ে দাঁড়াল।

    মা বললে—আমি আর সারবো না সন্তোষ—

    সন্তোষ-কাকা বললে—তা তো বটেই, আর, বয়েসও তো হচ্ছে! এই আমাকেই দেখ না, আগে কত উপোস করেছি, এখন একটু না-খেলেই একেবারে মরো-মরো অবস্থা হয়। মনে হয় যে, পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাই। আর আগে?

    তারপর হঠাৎ থেমে বললে—তা যাকগে এসব বাজে কথা! এখন দীপুও সামনে রয়েছে, তুমিও রয়েছ, আর ক্ষিরির রয়েছে, আমিও রয়েছি—এই মওকায় একটা পাকা- কথা দিয়ে দাও দিকিনি—বিয়েটা কবে দেবে? মানে আর কতদিন আমাকে এমনি ঝুলিয়ে রাখবে?

    সন্তোষ-কাকার সোজা কথা। তবু ঘরের অন্য তিনজন প্রাণীই যেন সন্তোষ-কাকার কথায় অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো।

    মা বললে—আর ক’টা দিন সবুর করো সন্তোষ, আমি একটু দাঁড়িয়ে উঠি—

    সন্তোষ-কাকা বললে-তা তো সবুর করতে পারি, কিন্তু সবুর করতে করতে যে আমার মেয়ে বুড়ী হয়ে গেল, তোমরা তো আমার মেয়ের দিকে একবার চোখ তুলে চাইছো না–শেষকালে যে পাড়ার লোক বউ দেখে তোমাকেই ছি-ছি করবে—

    তারপর দীপঙ্করের দিকে ফিরে বললে—কী বলো বাবাজী, আমি কিছু অন্যায় বলেছি?

    কিন্তু যাকে উদ্দেশ করে বলা, সেই দীপঙ্কর তখন আর নেই সেখানে। দীপঙ্কর যে এই কথার মধ্যে কখন নিঃশব্দে চলে গেছে, সেটাই কেউ জানতে পারেনি। মাও জানতে পারেনি, ক্ষীরোদাও জানতে পারেনি। এমন কি, সন্তোষ-কাকাও জানতে পারেনি!

    মা বললে—ওমা, দীপু কোথায় চলে গেল?

    সন্তোষ-কাকা বললে—দেখলে তো? তুমি নিজের চোখেই দেখলে তো? বিয়ের পাকা-কথা যেই বলেছি ওমনি তোমার ছেলে পালিয়েছে—না বৌদি, এ ভালো কথা নয়! আমাকে ভালোমানুষ পেয়ে তোমরা যে এই রকম কথার খেলাপ করবে, এটা তো ভালো নয়! আজকে একটা কথা তোমাকে দিতেই হবে—নইলে আমি মামলা করবো বলে রাখছি—

    .

    প্রথমে কাশী টের পেয়েছিল। বলেছিল— দাদাবাবু, আপনি আবার চলে যাচ্ছেন যে?

    দীপঙ্কর বলেছিল—তুই মা’কে বলে দিস, আমাকে আবার আপিসে যেতে হবে, আপিসে কাজ ফেলে এসেছি—

    তাড়াতাড়ি সব কাজ করতে হয়। কাজের যেন আর শেষ নেই। বালিগঞ্জ স্টেশনে মজুমদারবাবু বহুদিনের পুরনো স্টেশন-মাস্টার। সেই গোড়া থেকে আছে এ-স্টেশনে। যখন এই বালিগঞ্জ জঙ্গল ছিল, তখন থেকে। আস্তে আস্তে ট্রাম লাইন হলো, বাড়িঘর হলো।

    মজুমদারবাবু বলেছিল—আমাকে এখান থেকে বদলি করবেন না স্যার, আমার ছেলেমেয়েরা এখানকার স্কুলে পড়ছে—

    দীপঙ্কর বললে—আপনি বরং একবার মিস্টার ঘোষালের সঙ্গে দেখা করুন এ- বিষয়ে—

    মজুমদারবাবু বললে—আপনার সামনে যেমনভাবে কথা বলতে পারি, তাঁর সামনে তো বলতে পারি না তেমন করে—

    দীপঙ্কর বললে—কিন্তু এস্টাবলিশমেন্টের ব্যাপারটা তো আমি দেখি-না মজুমদারবাবু, ও-সব মিস্টার ঘোষালই দেখেন—

    সত্যিই মিস্টার ঘোষালের সঙ্গে কেউই দেখা করতে চায় না। যেন মিস্টার ঘোষালকে এড়িয়ে চলতেই চায় সকলে।

    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছিল। দীপঙ্কর বললে-দেখি আমি আপনার কী করতে পারি—

    রেলের সমস্ত স্টাফ সেন-সাহেবের মুখ চেয়ে অপেক্ষা করে। সেন-সাহেবের সঙ্গেই সবাই সাহস করে কথা বলতে পারে। অথচ কেউই জানে না যে সংসারে দীপঙ্করের মত নিঃসহায় কেউ নেই। কারোর কোনও উপকার করবার ক্ষমতাটুকুও নেই তার। কারোর কোনও দুঃখ দূর করবার ক্ষমতাও নেই। সব ক্ষমতা তার কেড়ে নিয়েছে মিস্টার ঘোষাল। এর চেয়ে অপমান, এর চেয়ে অসম্মান যেন আর নেই। তার বাইরের পোশাকটা, বাইরের চেহারাটা দেখে যেন সবাই তাকে বিচার করে। মাইনের মানদন্ড দিয়ে তাকে সম্মান করে, সমীহ করে,–হয়ত কেউ কেউ ঈর্ষাও করে।

    গাড়িটা হাজরা রোডের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ কী খেয়াল হলো দীপঙ্করের ভুবনেশ্বরবাবু কি এসেছেন? ভুবনেশ্বরবাবুর কি এই ক’দিনের মধ্যে কলকাতায় আসা সম্ভব?

    হয়ত এসেছেন। হয়ত এসে সতীর শাশুড়ীকে সব বোঝাচ্ছেন। হয়ত মেয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন শাশুড়ীর কাছে। হয়ত সতীও ক্ষমা চেয়েছে শাশুড়ীর পায়ে হাত দিয়ে।

    শাশুড়ী হয়ত বলেছেন—এই তোমার বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করো যে, আমার কথা মেনে চলবে—

    সতী হয়ত সব শর্তেই রাজী হয়েছে। সতী হয়ত সুখী হয়েছে তারপর থেকে। হয়ত সুখেরই ঘর করছে প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের বাড়িতে। আহা, সুখী হলেই তো ভাল। শুধু সতী কেন, শুধু লক্ষ্মীদিই-বা কেন, সবাই সুখী হোক। এ পৃথিবীতে সবাই সুখে জীবন কাটাক।

    হঠাৎ হরিশ মুখার্জি রোডের সামনে আসতেই গাড়িটা থামতে বললে।

    সেই ব্যারিস্টার পালিতের বাড়ি। নির্মল পালিত কি এখন এত সকাল-সকাল কোর্ট থেকে এসেছে? এত সকালে কোর্টে থেকে আসার তো কোনও সম্ভাবনা নেই। একমাত্র নির্মল পালিতই সে-দিনের সেই ঘটনার সাক্ষী ছিল। দীপঙ্কর আর লক্ষ্মীদি চলে আসার পর নির্মল পালিতই শুধু সেই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী ছিল সেদিন। তাকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারা যাবে সব ঘটনা। আর শুধু সেদিন কেন? নির্মল পালিত তো প্রায়ই যায় প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে। রোজ গিয়ে মা-মণিকে বৈষয়িক পরামর্শ দেয়। প্রপার্টি আর প্রফিট সম্পর্কে আলোচনা করে মা-মণির সঙ্গে। ব্যারিস্টার পালিতের মারা যাবার পর থেকে মিলই হয়েছে এখন তাঁর শ্রেষ্ঠ পরামর্শদাতা।

    সেই পুরোন বাড়ি। একদিন এই বাড়ি থেকেই ছেলেবেলায় তাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যারিস্টার পালিত। তাড়িয়ে দিয়েছিল তাকে আর কিরণকে। বাড়িটা ঠিক সেই রকমই আছে। সেই লাল ইঁট বার-করা দেয়াল। সেই লতানো অর্কিড। সেই টবের ওপর পাম গাছ বাসানো।

    সামনের দরোয়ান সেলাম করলে আজ। হয়ত দীপঙ্করকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই এত খাতির। মানুষের মর্যাদা দেয় তারা পয়সা দেখে।

    দরোয়ান বললে—সাহেব তো নেই হুজুর —

    দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কখন থাকেন বাড়িতে?

    —সাত বাজে!

    সন্ধ্যে সাতটা! তাই ভাল। সন্ধ্যেবেলা আপিসের ফেরত এখানে একবার আসবে দীপঙ্কর। নির্মল পালিতের কাছেই সব খবর পাওয়া যাবে। সে প্রতিদিনের খবর রাখে। প্রত্যেক দিন ও-বাড়িতে যায়!

    দীপঙ্কর ফিরছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতেই হঠাৎ একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল গেটের সামনে। দীপঙ্কর চেয়ে দেখলে গাড়ির ভেতর নির্মল পালিত বসে আছে। গাড়ি থেকে নেমে সামনে দীপঙ্করকে দেখেই হাতটা বাড়িয়ে দিলে—হ্যাল্লো, দীপু, তুই?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী
    Next Article কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    Related Articles

    বিমল মিত্র

    সাহেব বিবি গোলাম – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    বেগম মেরী বিশ্বাস – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    আসামী হাজির – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }