Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২ – বিমল মিত্র

    বিমল মিত্র এক পাতা গল্প950 Mins Read0

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৯৩

    ৯৩

    রেলওয়ে আপিসেও তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। সাজ সাজ রব চারদিকে। জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে ট্র্যান্সপোর্টেশন ম্যানেজার, সি-ও-পি-এস, সি-সি-এস, ডি-টি-এস সবাই ব্যস্ত। বছরে একবার জেনারেল ম্যানেজারের ইনস্পেকশ্যান স্পেশ্যাল যায়। সমস্ত জোনে ঘুরবে স্পেশ্যাল। জেনারেল ম্যানেজার নিজে সব জমিদারী দেখবে। প্রজাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা হবে। এই দিনই প্রথম লোকে তাকে চাক্ষুষ দেখবে। ক্রফোর্ড সাহেব ঘন-ঘন তলব দিচ্ছে মিস্টার ভার্মাকে। ঘন-ঘন তলব দিচ্ছে অভয়ঙ্করকে। সমস্ত ডিপার্টমেন্টেই এক অবস্থা। ক্রফোর্ড সাহেব অস্থির হয়ে উঠেছে। কে-জি-দাশবাবু, রামলিঙ্গমবাবু ফাইল নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে পা ব্যথা করে ফেললে। একবার রেকর্ড-সেকশন আর একবার ডি-টি-এস এর ঘর। জেনারেল-ম্যানেজার সকলকে হয়রান করে মারবে! তারপর যখন স্পেশ্যাল শেষ হয়ে যাবে তখন আবার কিছু দিনের জন্যে সব ঠান্ডা! আর তারপর তো রাম-রাজত্ব! পাসবাবু একবার এ-সেকশানে যায়, আর একবার ও-সেকশানে! বলে—কিছু শুনলেন নাকি কে-জি-দাশবাবু?

    —কীসের কী?

    হরিশবাবু বললে—শুনলাম নাকি আমাদের আপিস ট্রানসফার হয়ে যাচ্ছে?

    —আর রাখুন মশাই আপনি, দেখছেন আমরা এখন জেনারেল-ম্যানেজারের স্পেশ্যাল নিয়ে হিম-শিম খেয়ে যাচ্ছি—এখন চাকরি রাখাই আমাদের দায় হয়ে উঠেছে—

    ক্রফোর্ড সাহেব কিছুতেই খুশী নয়। ভার্মা গিয়ে ফাইল এগিয়ে দেয় সামনে। অভয়ঙ্কর গিয়ে ফাইল এগিয়ে দেয়। তবু কিছুতেই খুশী হয় না মিস্টার ক্রফোর্ড। বলে-নো নো, দিস ইজ নট দি থিং—

    শেষকালে কোনও উপায় না দেখে এসট্যাবলিশমেন্ট সেকশানের সুধীরবাবুকে ডেকে পাঠায়। বলে—সেনকে টেলিগ্রাফ করে দাও হেড ক্লার্ক, তাকে এখনি চলে আসতে টেলিগ্রাফ করে দাও, সেন যাবে স্পেশ্যাল ট্রেনে–এক্সপ্রেস টেলিগ্রাফ—

    সুধীরবাবু সেকশানে গিয়ে বলে—কী জ্বালা! সেন-সাহেব না ‘হলে কি আর রেল চলবে না মশাই? ক্রফোর্ড সাহেবের যে কী এক ফ্যান্সি হয়েছে।

    সত্যিই অনেক সাহেব দেখেছে সুধীরবাবু। বহুদিন চাকরি হয়ে গেল তার। অন সাহেব থেকে শুরু করে রবিনসন সাহেব পর্যন্ত অনেক সাহেব দেখেছে সুধীরবাবু। প্রত্যেক বছরেই এরকম স্পেশ্যাল ট্রেন ছেড়েছে। জেনারেল-ম্যানেজারের টুর-প্রোগ্রাম এই প্রথম নয়। কিন্তু এবার যেন সবই উল্টো-পাল্টা। এবার যেন ক্রফোর্ড সাহেবের মত মানুষও একটু বিচলিত হয়েছে। তা বিচলিত হবার মত দিন-কালও পড়েছে। সেই সব যুগ আর নেই রেলওয়েতে। এখন ক্লার্করা আর আগেকার মত কাজ করে না মন দিয়ে। এখন ইউনিয়ন হয়েছে। এখন কমিউনিস্টরা ঢুকেছে চাকরিতে। নতুন-নতুন ছোকরা সব। সব কথাতেই কোড় দেখায়। ম্যানুয়্যাল দেখায়। এখন দেয়ালে-দেয়ালে হাতে লেখা পোস্টার এঁটে দেয়। রেলওয়ে-বোর্ড থেকে এখন কড়া-কড়া চিঠি আসে। আগেকার চেয়েও কড়া। পার্লামেন্টে কোশ্চেন ওঠে। যত স্বদেশী হবার কথা উঠছে ততই যেন চাপ পড়ছে। সব কথাতেই এখন দিল্লি থেকে কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়। আরে এতই যদি কৈফিয়ৎ চাওয়া তো এখানে হেড-আপিস রাখা কেন? হেড-আপিস দিল্লিতে উঠিয়ে নিয়ে গেলেই হয়!

    সেদিন ক্রফোর্ড সাহেব আবার ডেকে পাঠালে। সুধীরবাবু ঘরে যেতেই সাহেব বললে—লুক হিয়ার হেড ক্লার্ক, সেনকে আর একটা আর্জেন্ট টেলিগ্রাম পাঠাও—বলে দাও, ট্রেন থেকে নেমেই যেন ডাইরেক্ট আমার সঙ্গে দেখা করে, সমস্ত মেস-আপ করে রেখে দিয়েছে এরা—

    তা তাই-ই সই। সেইভাবেই সুধীরবাবু টেলিগ্রাফ করে দিয়েছিল। সেদিন সকাল বেলাই ক্রফোর্ড সাহেব আপিসে এসে হাজির। ব্রেকফাস্ট করা হয়নি। আর কটা দিন। তারপরেই ক্রফোর্ড সাহেব চলে যাবে চাকরি ছেড়ে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে কানাডায় গিয়ে সেটেল করবে। আর ইন্ডিয়া নয়। ইন্ডিয়ায় আর থাকা চলবে না ইউরোপীয়ানদের। ক্লাবের সব মেম্বারদেরও সেই মত। এইবার তার সার্ভিস-লাইফের শেষ ইনস্পেকশন স্পেশ্যাল।

    —গুড মর্ণিং মিস্টার ক্রফোর্ড!

    সাহেব মুখ তুলতেই সামনে দেখলে সেন দাঁড়িয়ে আছে। বললে—টেক ইওর সীট সেন, হাউ ডু ইউ ডু—

    তারপর পাশের ফাইলগুলো টেনে নিলে সাহেব। বুঝিয়ে বললে—কেন সেনকে সোজা আপিসে আসতে বলেছে। জেনারেল-ম্যানেজার বড় রাগ করেছে। সব মেস-আপ হয়ে গেছে। স্টেটমেন্টগুলোও তৈরি হয়নি। কাল রাত দশটা পর্যন্ত টাইপিস্টদের খাটানো হয়েছে। এখনও কমপ্লিট হয়নি। ওদিকে দিল্লির বোর্ড থেকে ন্যাস্টি লেটার এসেছে,–এই দেখ!

    দীপঙ্কর দেখলে। ফাইলগুলো পড়লে। টুর-প্রোগ্রাম ঠিক হয়ে গেছে, কিন্তু স্টেটমেন্ট কমপ্লিট হয়নি। দীপঙ্কর বললে—আপনি কিছু ভাববেন না স্যার, আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি—

    বাইরে বেরোতেই অভয়ঙ্কর এগিয়ে এল। বললে—এ রকম চেহারা হলো কেন সেন? ক্লাইমেট কেমন শিলিগুড়ির?

    দীপঙ্করের সে-সব কথার উত্তর দেবার সময় ছিল না। ক্রফোর্ড সাহেবের কাজ নিয়ে শেষ করে দিতে হবে। আর বেশী দেরি নেই। চারদিকে খবর চলে গেছে। ওদিকে লক্ষ্মীকান্তপুর, আরো ওদিকে ডায়মন্ডহারবার। তারপর বজবজ লাইন। স্পেশ্যাল ছাড়বে। টুর প্রোগ্রামটা আবার দেখে নিলে দীপঙ্কর। অনেক দূর যেতে হবে তাকে। যেদিন থেকে দীপঙ্কর এই পৃথিবীতে যাত্রা শুরু করেছে, আবার সেইদিন থেকেই স্পেশ্যাল স্টার্ট করবে। নিজের নিরিবিলি ঘরটার মধ্যে দীপঙ্কর ফাইলটা তৈরি করতে করতে যেন অনেক শতাব্দী অতিক্রম করে এল। শতাব্দীই বটে। সেই ছোট বেলার ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেন থেকে শুরু করে আজকের এই শিলিগুড়ি পর্যন্ত আসতে যেন তার অনেক শতাব্দী কেটে গেছে। কত যুগ, কত শতাব্দী অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। কত উত্থান-পতন। দীপঙ্করের মনে হতে লাগলো—তার এই পরিক্রমায় যেন কেউ তার সঙ্গী নেই। তার নিঃসঙ্গ যাত্রার একমাত্র সান্ত্বনা যেন সে নিজেই। সে নিজেই সংগ্ৰাম করে এসেছে নিজের সঙ্গে। সংগ্রাম বৈ কি! নিজের সঙ্গেই সংগ্রাম। সেই কিরণের সঙ্গেই তার প্রথম সাক্ষাৎ সেই যাত্রায়। সেই কিরণকেই একদিন হারাতে হলো। তারপর এল লক্ষ্মীদি। লক্ষ্মীদিও হারিয়ে গেল। লক্ষ্মীদির পরে এল সতী। সতী, সনাতনবাবু, নয়নরঞ্জিনী, নির্মল পালিত, সন্তোষকাকা, ক্ষীরোদা, গাঙ্গুলীবাবু সবাই একে একে হারিয়ে গেছে আজ। আর কারোর সঙ্গে কোনও সম্পর্কও নেই তার, আর সম্পর্ক থাকবেও না। শিলিগুড়ি গিয়ে কাউকে কোনও খবর দেয়নি, কারোর খবর রাখেওনি সে।

    হঠাৎ দরজাটায় একটা শব্দ হতেই দীপঙ্কর মাথা তুললে। বললে—ইয়েস, কাম ইন—

    না, ভার্মা নয়, অভয়ঙ্করও নয়। কেউ না। লক্ষ্মণ সরকার।

    দীপঙ্কর মুখ তুলে চাইল। সেই লক্ষ্মণ সরকারের চেহারা এই এক বছরেই বদলে গিয়েছে। বললে—বোস, কেমন আছো?

    লক্ষ্মণ সরকার যেন অনেক সঙ্কোচের পর বসলো। বললে—তুমি কেমন আছো? দীপঙ্কর বললে—ভালো—

    তারপর একটু থেমে দীপঙ্কর আবার হঠাৎ জিজ্ঞেস করলে—ক্ষীরোদা কেমন আছো?

    লক্ষ্মণ সরকার বললে—ভালো।

    —আর মাসীমা?

    —মাসীমাও ভাল আছে।

    আর কোনও কথা খানিকক্ষণ কারোর মুখ দিয়েই যেন বেরোচ্চে না। একটু পরে লক্ষ্মণ সরকার বললে-আমার চিঠি পেয়েছিলে তুমি?

    দীপঙ্কর বললে—হ্যাঁ পেয়েছিলাম—এই যে পকেটে রয়েছে—

    লক্ষ্মণ সরকার বললে—প্রথমে ভেবেছিলুম তোমাকে চিঠি লিখবো না। ভেবেছিলাম—তুমি বিরক্ত হবে। ক্ষীরোদাও বারণ করেছির লিখতে—

    —বারণ করেছিল? কেন?

    —ক্ষীরোদা বলেছিল—তুমি নাকি আমাদের ভুলে গেছ।

    দীপঙ্কর কিছু বললে না। তারপর নিজের মনেই যেন বললে—ভুলতে যদি পারতুম তাহলে তো ভালোই হতো!

    —কিন্তু যখন শুনলুম তুমি আজ আসছো এখানে, ক্রফোর্ড সাহেব তোমাকে ডেকেছে, তখন লিখলুম। আজকে রাত্তিরে তুমি আসছো তো?

    —কেন?

    —আজ ক্ষীরোদা তোমাকে আমাদের বাড়ি খেতে বলেছিল! তোমার কি সময় হবে?

    -–কেন? হঠাৎ আবার খাওয়ার ব্যাপার কেন?

    লক্ষ্মণ বললে—তা জানি না। তোমার কি আপত্তি আছে?

    দীপঙ্কর বললে—না আপত্তি কেন থাকবে? কিন্তু কেন মিছিমিছি কষ্ট করতে যাবে আবার?

    —না আমার আর কষ্ট কীসের। তোমার জন্যে আজ সে সারাদিন বসে বসে রান্না করেছে। তুমি এলে সে খুব খুশী হতো! আমিও…….

    —আচ্ছা, যাবো, তুমি এখন যাও!

    বলে দীপঙ্কর আবার নিজের কাজে মন দিলে। অনেকদিন পরে কলকাতায় এসে যেন সব আবার মনে পড়তে লাগলো। শুধু ক্ষীরোদাই বা কেন? অনেক জায়গাতেই তো যেতে ইচ্ছে করে। প্রাণমথবাবুর সঙ্গেও দেখা করা উচিত। গড়িয়াহাট লেভেল ক্রসিং- এর বাড়িতেও একবার গেলে ভালো হয়। প্রিয়নাথ মল্লিক রোডেও একবার সনাতনবাবুর সঙ্গে দেখা করা উচিত! সতী কি সনাতনবাবুর কাছে ফিরে গেছে? কে জানে?

    দুপুর বারোটা বাজলো। দীপঙ্কর ঘড়ির দিকে চাইলে। তারপর আবার সে নিজের ভাবনার তলায় তলিয়ে গেল। যখন মাথা তুললে তখন একটু-একটু মেঘ করেছে। জানালার বাইরের আকাশটা তার নিজের মনের মতই ভারাক্রান্ত।

    ঠিক দেড়টার সময়ই স্পেশ্যাল ছাড়বার কথা। বেলেঘাটা স্টেশনের নর্থ কেবিন থেকে টেলিফোন হলো সাউথ কেবিনে। কে? লাহিড়ী? স্পেশ্যাল ট্রেন ছাড়বে। লাইন ক্লিয়ার দাও—

    —এত দেরি কেন হে? দেড়টা তো কখন বেজে গেছে!

    নর্থ কেবিন বললে—আর বলো কেন ভাই। জেনারেল ম্যানেজার নিজেই আসতে দেরি করে দিয়েছে—

    যখন শেষ পর্যন্ত ট্রেন ছাড়লো, তখন টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ট্রাফিক ম্যানেজার, ট্র্যান্সপোর্টেশন ম্যানেজার, চীফ ইঞ্জিনীয়ার, সি-এম-ও, ডি-টি-এস সবাই উঠে পড়লো। চার বোগীর স্পেশ্যাল। শেষে একটা অবজার্বেশান কার। প্রথমে বালিগঞ্জ। তারপর সোনারপুর। সকলের শেষে ডায়মন্ডহারবার। বেলেরঘাটা থেকে

    স্পশ্যাল ঝড়ের গতিতে ছেড়ে দিলে। পাকা ড্রাইভার। নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস চালায়। এই কিছুদিন আগে ভাইসরয়ের স্পেশ্যাল চালিয়ে এসেছে। একটা গাড়িতে বয় বাবুর্চি খানসামা চলেছে। বালিগঞ্জ স্টেশনে আফটারনুন-টি দেবে তারা। দীপঙ্কর ফাইল ক’টা নিয়ে আবার দেখতে লাগলো। ক্রফোর্ড সাহেব বললে—বালিগঞ্জে এই পেপারগুলো জেনারেল ম্যানেজার চাইতে পারে—কীপ দেম হ্যান্ডি—

    স্টেশন মাস্টার মজুমদারবাবুর তখন শশব্যস্ত অবস্থা। একবার ইয়ার্ড ঘুরে আসে, আবার একবার গুডস্ শেডে যায়। সব যেন ঠিক-ঠাক থাকে। কোথাও যেন না ময়লা পড়ে থাকে। একটা প্রমোশনের সময় এসেছে। এই সময়ে পার্সোন্যাল ফাইলে একটা দাগ পড়লেই ফিউচার-কেরীয়ার নষ্ট। এমন সময় টিকিট-কালেক্টর দত্তবাবু স্টেশন- মাস্টারকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসেছে।

    —এই দেখুন মাস্টার মশাই, আবার এই লোকটাকে ধরেছি, রোজ-রোজ উইদাউট টিকিটে ট্রাভেল করে।

    মজুমদারবাবু দেখলে। এক মুখ খোঁচা-খোঁচা দাড়িগোঁফ। ময়লা কোট-প্যান্ট। হাতে একটা নোটবুক। বেশ স্মার্ট চোখ-মুখ। মজুমদারবাবুকে দেখেই পেন্সিল নিয়ে নোটবুকে কী যেন লিখতে লাগলো—কী নাম তোমার! কী নাম?

    মজুমদারবাবু বললে—আরে একে ধরেছ কেন? এই সময়ে ঝামেলার দরকার নেই, এখুনি জেনারেল ম্যানেজারের স্পেশ্যাল এসে যাচ্ছে—

    দত্তবাবু বললে—আজ্ঞে, রোজ রোজ এই রকম করে, আবার বললে রুখে আসে—

    লোকটা তখন মজুমদারবাবুর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। বললে—কী নাম তোমার বলো? তোমার নামেও ভাইসরয়ের কাছে রিপোর্ট করে দেব, সুরেন বাঁড়ুজ্যেকে ধরিয়ে দিয়েছি, বিপিন পালকে ধরিয়ে দিয়েছি—আমি কাউকে ছাড়বো না—ও গান্ধী বেটাকেও রেহাই দেব না আমি, কী নাম তোমার বলো?

    মজুমদারবাবু বললে—আরে এই সময়ে পাগলকে নিয়ে তুমি ঝামেলা বাধাচ্ছো, দাও, ছেড়ে দাও ওকে। একে এখন কোত্থেকে ধরলে? কে ও?

    —আজ্ঞে, মস্ত বড়লোকের ছেলে, নিজেও ব্যারিস্টার ছির শুনেছি—রোজ এই রকম করে আসে টিকিট না কেটে—

    কিন্তু তখন আর ওসব কথা শোনার সময় নেই। ওদিকে লাইন কিয়ার হয়ে গেছে স্পেশ্যালের। আর খানিক পরেই দেখতে-দেখতে হুড়মুড় করে এসে পড়লো জেনারেল ম্যানেজার। মজুমদারবাবু সামনের প্লাটফরমে রেড সিগন্যাল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর বুকটা দুর-দুর করে উঠলো। এখনি জেনারেল ম্যানেজার নামবে। চীফ- ইঞ্জিনীয়ার নামবে, ট্র্যাফিক ম্যানেজার নামবে, ট্র্যান্সপোর্টেশন ম্যানেজার নামবে। সবাই নেমে স্টেশন ইনস্পেক্ট করবে।

    কিন্তু কেউ নামে না। বৃষ্টি তখন বেশ জোরে পড়ছে। হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। জোলো হাওয়া। মজুমদারবাবু কি রকম হতভম্ব হয়ে গেল। কেউ নামে না কেন? জেনারেল ম্যানেজারের কম্পার্টমেন্টের সামনে সবাই গিয়ে দাঁড়াল। তারপর ভেতরে গিয়ে কী সব কথাবার্তা হলো। সেন সাহেবকে দেখে মজুমদারবাবু এগিয়ে গেল। বললে—কী হলো স্যার? কেন, নামছেন না কেন?

    সেন-সাহেব বললে—জেনারেল ম্যানেজারের জ্বর হয়েছে—বোধ হয় স্পেশ্যাল ক্যানসেল্ড হয়ে যাবে!

    সে কি! এমন তো কখনও হয়নি আগে! সত্যিই তাই হলো শেষ পর্যন্ত! আবার ডাউন লাইন ক্লিয়ার দিতে হলো। আবার স্পেশ্যাল ফিরে গেল। সবাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে। এত তোড়জোড় এত উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা সব চুপ হয়ে গেল এক নিমেষে। ট্রেন ছাড়ার আগে সেন নেমে গেল। অভয়ঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কী হলো সেন? তুমি ফিরে যাবে না?

    দীপঙ্কর বললে—না, আমার একটা কাজ আছে এদিকে, আমায় একবার কালিঘাটে যেতে হবে, ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেনএ—

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী
    Next Article কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    Related Articles

    বিমল মিত্র

    সাহেব বিবি গোলাম – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    বেগম মেরী বিশ্বাস – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    আসামী হাজির – বিমল মিত্র

    May 29, 2025
    বিমল মিত্র

    কড়ি দিয়ে কিনলাম ১ – বিমল মিত্র

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }