Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প443 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩০. অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ে

    অধ্যায় ৩০

    পাশের ঘর থেকে যে শব্দটা আসছে সেটা রীতিমতো অসহ্য ঠেকছে তার কাছে। তার সামনে বসে আছে অপূর্ব সুন্দরী এক মেয়ে। সিগারেট টেনে যাচ্ছে মেয়েটি কিন্তু কিছু বলছে না। কয়েক মিনিট আগে একটা ফোন কল আসার পর থেকেই মেজাজ বিগড়ে আছে লোকটার, সেই থেকে মেয়েটিও চুপ মেরে আছে। তাদের সামনে মদের বোতল, গ্লাস, চানাচুরের প্লেট আর সিগারেটের প্যাকেট।

    “শূয়োরের বাচ্চার এতোক্ষণেও হয় না?” অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর পাশের ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললো মেজাজ খারাপ হয়ে থাকা লোকটা।

    অ্যাস্ট্রেতে সিগারেট রেখে মেয়েটা তার কাঁধে হাত রাখলো। “আহ্, তোমার হয়েছে গো কী?”

    নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে। পাশ ফিরে তাকালো মেয়েটার দিকে। এখনও ব্লাউজ পরে নি। কোনো রকমে শাড়িটা পেঁচিয়ে রেখেছে গায়ে। একটু আগে তারা অন্য রকম এক আবেশে ছিলো। দুজন দুজনকে আদর করতে করতে অস্থির করে ফেলছিলো, ঠিক তখনই ফোন কলটা আসে। ঢাকা থেকে তার ভাই যা জানালো তা তো বিশ্বাস করার মতো নয়। কিন্তু ঘটনা সবই সত্যি। বুঝতে পারছে তাদের ঘনিষ্ঠ কেউই এ কাজ করছে। কয়েক বছর আগে যখন তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়, এখানে চলে আসে, সেই অপারেশন ক্লিনহার্টের সময়টাতেও নিজেদেরকে এতোটা বিপদগ্রস্ত বলে মনে করে নি।

    তার সবচাইতে ঘনিষ্ঠ তিনজন লোককে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হত্যা করা হয়েছে। বেহাত হয়ে গেছে দু’কোটি টাকা। সবটাই অপূরণীয় ক্ষতি সন্দেহ নেই কিন্তু এসব কিছু না, সে চিন্তায় পড়ে গেছে অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে : কারা এ কাজ করলো সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই।

    পাশের ঘর থেকে আবারো একটা আওয়াজ তার মেজাজ খারাপ করে দিলো। একজোড়া নারী-পুরুষের শিকার আর গোঙানি।

    “শূয়োরের বাচ্চা কি সাউন্ড ছাড়া চুদতে পারে না!” মেয়েটাকে বললো সে।

    মুখ টিপে হাসলো মেয়েটি। “মুখের কি ছিরি গো তোমার, মাইরি!”

    “ব্লাউজ পরে নাও…” কথাটা বললো মেয়েটার উন্মুক্ত স্তনের দিকে তাকিয়ে ।

    “কেন,..ভাল্লাগছে না বুঝি?”

    মুখ সরিয়ে নিলো সে।

    “একটু আগে তো মাইগুলো নিয়ে এমনভাবে আদর করছিলে মনে হচ্ছিলো আজ বুঝি অন্য কিছুতে আর যাবে না।” বলেই মেয়েটা ব্লাউজ খুঁজতে লাগলো।

    যার উদ্দেশ্যে কথাটা বলা হলো সে এখন অন্য চিন্তায় ডুবে আছে।

    আর কিছু দিন পরই ঢাকায় যাবার কথা, সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে যখন তখনই কিনা এরকম একটা আঘাত করা হলো তাদের দলের বিরুদ্ধে! সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। তাদের সাথে এমন কাজ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে কারা?

    তাদের শত্রুর কথা বললে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না। যদিও অসংখ্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে বিগত বছরগুলোতে, তারপরও সে জানে তাদের অগোচরে তৈরি হচ্ছে প্রতিপক্ষ। তাদের সবচাইতে বড় ভয় ছিলো নিজের দলের ভেতরে কোনো বেঈমান পয়দা হচ্ছে কিনা। এখন মনে হচ্ছে সেই আশংকাই সত্যি হতে যাচ্ছে। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না। এটা তাদের কোনো প্রতিপক্ষেরও কাজ হতে পারে। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার যেখানে সেখানে প্রতিপক্ষ আর প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে কেউ এমন আঘাত করে নি বরং মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই শেষ করে দেয়া হয়েছে অনেককে।

    তিলে তিলে তারা গড়ে তুলেছে এই দলটি। একেবারে নিখুঁত সিস্টেমে চলে সেটা। আর এ কারণেই শত শত সন্ত্রাসীর এই দলটি এতো দিন ধরে টিকে আছে। নিরাপত্তার কথা যদি বলা হয় সেটাও প্রায় নিচ্ছিদ্র। কারো পক্ষে তাদের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, তাই হয়তো প্রতিপক্ষ তাদের লোকজনের উপর আঘাত হেনেছে। কিন্তু যে-ই কাজটা করে থাকুক না কেন, কতো ভয়ঙ্কর পাল্টা আঘাত হানা হবে সে সম্পর্কে কারোর কোনো ধারণাই নেই। প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে ছাড়খার করে দেয়া হবে। এমন হাল করা হবে যে, এরপর থেকে তাদের দলের বিরুদ্ধে কিছু করার আগে দশ বার ভাবতে হবে।

    তাদের দরকার প্রচুর তথ্য। এভাবে অন্ধকারে থেকে কিছু করা যাবে না। আর তথ্য পেতে হলে তাকে এক্ষুণি কাজে নেমে পড়তে হবে। সবচাইতে ভালো তথ্য দিতে পারবে পুলিশ। তাদের কেনা গোলাম হয়ে থাকা পুলিশের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে দ্রুত। মউজ ফুর্তি করার সময় এখন নয়।

    মেয়েটার দিকে তাকালো। ব্লাউজ খুঁজে পেয়েছে, এখন শাড়িটা পরে নিচ্ছে সে। অ্যাস্ট্রে থেকে একটা জ্বলন্ত সিগারেট তুলে নিয়ে লম্বা টান দিলো।

    “সুষমা, আজ এখানে থাকার দরকার নেই,” মেয়েটাকে বললো সে।

    শাড়ির কুচি করছিলো সে, কথাটা শুনে তার দিকে চেয়ে রইলো। “কি হয়েছে গো…আমায় বলা যায় না?”

    পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে টেবিলের উপর রাখলো। “তোমার বান্ধবীকে নিয়ে চলে যাও। আজ আমাদের জরুরি কিছু কাজ করতে হবে।”

    “ওমা! আমি কিভাবে তাকে ডাকবো?…তোমার বন্ধুকে বলল ওকে ছেড়ে দিতে…ওতো কার্তিকের কুত্তা হয়ে গেছে গো!”

    পাশের ঘরে যাবার একমাত্র দরজার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো সে। “শালার মাথায় মাল উঠে গেছে!” আবারো লম্বা একটা টান দিলো সিগারেটে।

    “বুঝলাম না বাপু…এতো বলে কয়ে ডেকে এনে এখন আবার তাড়িয়ে দিচ্ছো!” শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বললো সুষমা।

    পাশের ঘর থেকে আবারো শিকার ভেসে আসছে। সিগারেটটা রেখে। সেদিকে ছুটে যাবে অমনি সুষমা তার একটা হাত ধরে ফেললো।

    “রাখো তো…আমি ডাকচি।”

    সোফায় বসে পড়লো সে। সুষমা দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে হেসে ফেললো। “ওমা, আবার শুরু করেছে দেকচি!” মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে তার কাছে এসে বললো, “মেয়েটাকে মেরে ফেলবে গো।”

    রেগেমেগে তাকালো সুষমার দিকে।

    “আহা, অমন করে তাকাবে না আমার দিকে…খুব ভয় করে!” বলেই তার গলা ধরে গালে একটা চুমু খেলো ।

    “উফ!” মেয়েটাকে ছাড়িয়ে নিলো সে। “তোমার বান্ধবীকে ডাকো।”

    “ডাকচি বাবা, ডাকচি। ডাকাতের মতো চোখ রাঙাবে না।” বলেই কপট, অভিমান দেখিয়ে দরজার কাছে আবার ফিরে গেলো সুষমা ।

    “অ্যাই, তোদের হলো রে?…তাড়াতাড়ি কর, আমাদের যেতে হবে।” এর জবাবে ভেতর থেকে অট্টহাসি শোনা গেলো।

    “অ্যাই, শিমকি…তাড়াতাড়ি কর। তোর নাগরকে বল, আজ তোকে ছেড়ে দিতে…সব মজা একদিনেই লুটে নেবে নাকি!”

    আবারো হাসির রোল পড়ে গেলো। হতোদ্যম হয়ে সুষমা তার দিকে ফিরে কাঁধ তুললো।

    নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না, সোফা থেকে উঠে সজোরে লাথি মেরে বসলো বন্ধ দরজায়।

    “দরজা খোলো, রঞ্জু!”

    .

    অধ্যায় ৩১

    মনোয়ার হোসেন মঞ্জু বরফের মতো জমে আছে। তার পাশে, সোফায় বসে আছে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবুল কালাম, আর দেবদূতের মতো দেখতে আজরাইলটা বসে আছে তাদের বিপরীতে, একটা চেয়ারে। মাঝখানে একটা কফি টেবিল।

    মঞ্জুর মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। তার নার্ভ ভেঙে পড়েছে। নিজের হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। ছোটো ভাই রঞ্জুর মতো সে সাহসী নয়। একটু নরম মনের মানুষ। খুনখারাবির সাথে কোনো কালেই তার সম্পর্ক ছিলো না। কথা যা বলার বলছে আবুল কালাম।

    “আপনি কে?…কি চান?”

    “তুই কে, সেটা আগে বল,” পিস্তলটা কালামের দিকে তাক করে বললো বাস্টার্ড ।

    “আমি মঞ্জু ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ লোক।”

    “তার মানে রঙুর লোক।”

    আবুল কালাম স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো, কথাটার কোনো প্রতিবাদ করলো না।

    “ব্ল্যাক রঞ্জু কোলকাতার কোথায় আছে, বল?”

    বাস্টার্ডের এ কথায় সোফায় বসে থাকা দুজনেই চমকে উঠলো একটু।

    “বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, রঞ্জু ভাই কোথায় আছে সেটা আমরা কেউই জানি না।” আবুল কালাম বেশ শান্ত কণ্ঠেই বললো।

    পিস্তলটা এবার মঞ্জুর দিকে তাক করলো বাস্টার্ড । “কিরে, তুইও কি একই কথা বলবি?”

    প্রথমে দু’পাশে মাথা দোলালো, তারপর সেটা বাতিল করে দিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলো ব্ল্যাক রঞ্জুর আপন বড় ভাই মঞ্জু।

    “তোর বস কি বোবা নাকি..কথা বলে না কেন?”

    মঞ্জুর দিকে তাকালো আবুল কালাম। “উনি একটু ভীতুটাইপের মানুষ…খুব ভয় পেয়ে গেছেন।”

    “তুই ভয় পাস নি?” বাস্টার্ড পিস্তলটা কালামের দিকে ঘোরালো।

    কিছুই বললো না সে। তার চোখের দৃষ্টি দেখে বাস্টার্ড সতর্ক হয়ে গেলো। এর আগে ব্ল্যাক রঞ্জুর লোকজনকে খাটো করে দেখার পরিণাম ভোগ করেছে, এখন আর কাউকে সে খাটো করে দেখে না। কড়া নজর রাখছে আবুল কালামের উপর ।

    “ভাই, আমি একজন ব্যবসায়ী…রর কাজকর্মের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক—”

    হাত তুলে মঞ্জুকে থামিয়ে দিলো সে। “আমি এসব কথা শুনতে চাই নি। রঞ্জু কোলকাতার কোথায় আছে সেটা জানতে চাইছি।”

    “এ প্রশ্নের উত্তর তো আমি একটু আগেই দিয়েছি,” আবুল কালাম বললো।

    “হ্যাঁ, দিয়েছিস, কিন্তু জানি না এ কথাটা আর বলবি না। হয় ঠিকানা দিবি নয়তো মরবি।”

    মুচকি হাসলো আবুল কালাম। “ইচ্ছে করলে আমরা আপনাকে ভুল একটা ঠিকানার কথা বলতে পারি, আপনি সেটা ধরতেও পারবেন না। কিন্তু সত্যি বলছি, তার ঠিকানা আমরা জানি না।”

    লোকটার দিকে স্থির চোখে চেয়ে রইলো বাস্টার্ড। এখনও মাথা ঠাণ্ডা রেখে কথা বলে যাচ্ছে। “তুই অনেক বেশি স্মার্ট। আমি কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা পর্যন্ত চুপ করে থাকবি, বানচোত!” ধমকের সুরে বললো সে।

    দু’হাত তুলে আত্মসমপর্নের ভঙ্গি করলো আবুল কালাম।

    “তুই রঞ্জুর আপন ভাই, তুইও জানিস না রঞ্জু কোথায় থাকে?”

    মঞ্জু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। “ভাই…কেউ বিশ্বাস করবে না…র কাউকে তার ঠিকানা দেয় না।”

    মাথা দোলালো বাস্টার্ড। “তুই কখনও কোলকাতায় রঞ্জুর সাথে দেখা করতে যাস নি?”

    “গেছি,” ঢোক গিলে বললো মঞ্জু। “কিন্তু হোটেলে দেখা করেছে…কোনো বাসা বাড়িতে না।”

    “কোন হোটেলে? জায়গাটা কোথায় ছিলো?”

    কপাল চুলকে বললো মঞ্জু, “পার্ক স্ট্রটের একটা হোটেলে…নামটা যেনো কী?” পাশে বসে থাকা আবুল কালামের দিকে তাকালো সে ।

    বাস্টার্ড কালামের দিকে পিস্তলটা উঁচিয়ে ইশারা করলো কথা বলার জন্য।

    “প্যারামাউন্ট হোটেল।”

    দু’পাশে আবারো মাথা নাড়লো সে। “মনে হচ্ছে তোরা এতো সহজে বলবি না…”

    “আমি একটা কথা বলবো?” আবুল কালাম আস্তে করে বললো।

    তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলো বাস্টার্ড ।

    “আপনারা তো সুলতান, গিয়াস ভাই আর মিনা ভাবিকেও খুন করেছেন, তারা কি আপনাকে রঙু ভায়ের ঠিকানা দিতে পেরেছে…পারে নি। আমরাও পারবো না। চাইলে আপনি আমাদেরও খুন করতে পারেন…কিন্তু আসলেই আমরা জানি না। হোটেলের ম্যানেজার যদি আপনাদেরকে বলে থাকে আমরা রঞ্জু ভায়ের ঠিকানা জানি তাহলে সে মিথ্যে বলেছে।”

    বাস্টার্ড বুঝতে পারলো এই আবুল কালাম লোকটা মনে করছে পিং সিটি হোটেলের ম্যানেজার বেঈমানি করেছে তাদের সাথে। এরকম মনে করতেই পারে। একটু আগেই ম্যানেজার এখান থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা হয়তো ভাবছে ম্যানেজার সঙ্গে করে তাকে নিয়ে এসেছে। বাড়িটা দেখিয়ে দিয়েছে।

    “তোদের ম্যানেজার লোকটা কোনো কাজের না। নিজের মালিকের সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমাদেরকেই খেটেখুটে সেটা জেনে নিতে হচ্ছে।” ঢিলটা ছুঁড়ে দিলো সে। দেখা যাক কী প্রতিক্রিয়া হয়।

    কথাটা শুনে মনোয়ার হোসেন মঞ্জু নড়েচড়ে বসলো। একবার বাস্টার্ডের দিকে তাকায় তো আরেকবার আবুল কালামের দিকে। অস্থির হয়ে উঠলো সে। “যা ভেবেছিলাম, কালাম…” বিড়বিড় করে পাশের জনকে বললো মঞ্জু।

    বাস্টার্ড তার হাতঘড়ির দিকে তাকালো। “আমি তোদেরকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম…ভেবে দেখ, আমার কাছে রঞ্জুর ঠিকানা বলবি কিনা।”

    “পাঁচ মিনিট কেন, পাঁচ ঘণ্টা সময় দিলেও আমরা তার ঠিকানা বলতে পারবো না,” বেশ শান্ত কণ্ঠে বললো আবুল কালাম।

    বাস্টার্ড লোকটার দিকে কটমট চোখে তাকালো। “পাঁচ মিনিট। তারপর—”

    “তারপর কি?” তার কথা শেষ করতে দিলো না কালাম। “খুন করবেন?…করুন!”

    বাস্টার্ড খুব অবাক হলো। লেডি গিয়াসের মতো আচরণ করছে এই লোকটা। সতর্ক হয়ে উঠলো সে। দ্বিতীয়বার ভুল করা যাবে না। একটু এদিক ওদিক হলেই গুলি চালাবে।

    মঞ্জু তার সহযোগীর কথা শুনে রীতিমতো কাঁপতে লাগলো। “কালাম! তুমি এসব কী বলছো?…প্লিজ!…কা-কা…”

    বাস্টার্ড অবাক হয়ে দেখতে পেলো রঞ্জুর ভাই মঞ্জু খিচুনি দিচ্ছে। দাঁতে দাঁত পিষে খিচতে খিচতে সোফায় এলিয়ে পড়ছে লোকটা। তাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো কালাম । “মঞ্জু ভাই মৃগীরোগী…খুব বেশি টেনশন সহ্য করতে পারেন না!”

    মৃগীরোগী!

    বাস্টার্ড উঠে দাঁড়ালো। “তাকে শুইয়ে দে!” আদেশের সুরে বললো কালামকে।

    কিন্তু মঞ্জু প্রচণ্ড জোরে কাঁপুনি দিয়ে শরীরটা বাঁকিয়ে সোফা থেকে নীচে পড়ে গেলো। কালাম তাকে ধরে রাখতে পারলো না। সেও সোফা থেকে ঝুঁকে উপুড় হয়ে গেলো।

    কফি টেবিল আর সোফার মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায় পড়ে গেছে মঞ্জু। তার গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এখন। বাস্টার্ড আরেকটু ঝুঁকে যে-ই না দেখতে যাবে অমনি টেবিলটা শূন্যে ভেসে উঠলো যেনো ।

    এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় মাত্র।

    তবে তার রিফ্লেক্স ভালো হওয়াতে পিস্তল ধরা হাতটার কনুই দিয়ে টেবিলটা ব্লক করতে পারলো। সঙ্গে সঙ্গে টের পেলো তার কোমর জড়িয়ে ধরে আবুল কালাম ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভারসাম্য রাখতে পারলো না আর। হুরমুর করে চিৎ হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো সে। টেবিলটা ছিটকে পড়ে গেলো তার ডান পাশে। টেবিলে থাকা মদের বোতল আর গ্লাস ভাঙার শব্দ পেলো। মুহূর্তেই সারা ঘর ভরে গেলো অ্যালকোহলের কটু গন্ধে।

    বাস্টার্ডের উপর চড়ে বসলো আবুল কালাম নামের লোকটা, তার লক্ষ্য পিস্তল ধরা হাতটা। সেই হাত লক্ষ্য করে ছোঁ মারতেই বিদ্যুৎ গতিতে হাতটা সরিয়ে ফেলতে পারলো সে। স্বতঃফুর্ত প্রতিক্রিয়ায় গুলি করে বসলো তখনই।

    আবুল কালামের পেটে লাগলো গুলিটা। গুলির আঘাতে তার উপর থেকে একটু ছিটকে পাশে হুমরি খেয়ে পড়ে গেলো সে।

    এক ঝটকায় সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো বাস্টার্ড । পেট ধরে মেঝেতে কুকড়ে পড়ে রইলো কালাম। এখনও বেঁচে আছে।

    দু’পা পিছিয়ে গেলো বাস্টার্ড। সোফার নীচে মঞ্জু পড়ে আছে, তবে এখন আর অতোটা খিচুনি দিচ্ছে না। মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। চোখ দুটো যেনো উল্টে আছে।

    কালামের দিকে ফিরলো। পর পর কয়েকবার কাঁপুনি দিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলো ব্ল্যাক রঞ্জুর আরেক সহযোগী।

    মঞ্জু যখন খিচুনি দিয়ে সোফার নীচে পড়ে যায় তখন তাকে ধরে কালামও মেঝেতে পড়ে যেতে উদ্যত হয়। চকিতে হয়তো সে দেখে নিয়েছিলো বাস্টার্ড কফি টেবিলের ওপাশ থেকে ঝুঁকে আছে তাদের দিকে। সেই সুযোগে টেবিলটা একটু উপরের দিকে ছুঁড়ে দিয়েই কাঁধ দিয়ে বাস্টার্ডের তলপেটে আঘাত করে তার কোমর ধরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুদ্ধিটা ভালোই ছিলো, কিন্তু তার কপাল খারাপ, বাস্টার্ড আগে থেকেই তাকে চোখে চোখে রেখেছিলো। ইতিমধ্যে তার একটা শিক্ষা হয়ে গেছে : ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের কাউকে খাটো করে দেখা যাবে না।

    .

    অধ্যায় ৩২

    বড়সড় অপারেশন করার পর রোগীর জ্ঞান ফিরে আসলে যেমন হয় মনোয়ার হোসেন মঞ্জুর অবস্থা ঠিক সেরকম।

    সোফায় শুয়ে আছে। মেঝেতে পড়ে আছে আবুল কালামের নিথর দেহ। কফি টেবিলটা এখনও উল্টে পড়ে আছে মৃতদেহের পাশেই। মদের বোতল আর গ্লাস ভেঙে একাকার । অ্যালকোহলের ঝাঁঝালো গন্ধটা অসহ্য ঠেকছে।

    বাস্টার্ড তার চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ। অপেক্ষা করছে মৃগীরোগী কখন স্বাভাবিক হয়। আবুল কালাম যখন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন তার মনে হয়েছিলো মঞ্জু হয়তো ভান করেছে। তবে এখন সে জানে, লোকটা আসলেই মৃগীরোগী।

    আধ ঘণ্টা পর মঞ্জু কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে বাস্টার্ড হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

    “এই লোকটা, আবুল কালামের নিথর দেহটার দিকে ইঙ্গিত করে সে বললো, “উল্টাপাল্টা কিছু না করে যদি আমাকে রঞ্জুর ঠিকানাটা দিয়ে দিতে আমি তাকে খুন করতাম না।”

    ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো মঞ্জু।

    “এখন তাড়াতাড়ি রঞ্জুর ঠিকানাটা দিয়ে দে, আমি চলে যাই।”

    “ভাই, বিশ্বাস করেন, রঞ্জুর ঠিকানা আমার কাছে নাই…” দূর্বল কণ্ঠে বললো রঞ্জুর ভাই। “ওর কাছেও ছিলো না।” পড়ে থাকা লাশটার দিকে ইঙ্গিত করলো।

    “তাহলে কার কাছে আছে?” পিস্তলটা তুলে ধরলো সে।

    দু’হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করে কাঁপতে লাগলো মৃগীরোগী। “আমাকে মারবেন না…ভাই…মারবেন না…প্লিজ!” করুণ আর্তি জানালো সে।– “আমি তো বলেছি, রঞ্জুর ঠিকানা দিয়ে দিলে আমি কিছু করবো না। এক্ষুণি চলে যাবো।” আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলো লোকটাকে।

    মঞ্জু অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো। তার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠলো আবার। কয়েক মুহূর্তের জন্য বাস্টার্ডের মনে হলো লোকটা আসলেই তার ছোটো ভায়ের ঠিকানা জানে না। তবে আরেকটু চেষ্টা করে দেখতে চাইলো সে।

    “আমি জানি না…জানলে অবশ্যই দিয়ে দিতাম!” মঞ্জুর কণ্ঠটা আরো দূর্বল শোনালো।

    “তাহলে কে জানে?”

    মনে হলো একটু ভেবে নিচ্ছে, হাত দিয়ে কপালের একপাশটা চুলকাতে লাগলো। “লিটন নামের একজন হয়তো জানে…”

    “লিটনটা কে?” বাস্টার্ড স্থির চোখে চেয়ে জানতে চাইলো ।

    “আমি তাকে চিনি না…রঞ্জু আমাকে বলেছে লিটন নামের একজন আমার সাথে যোগাযোগ করবে, আমাকে কোলকাতায় নিয়ে যাবে কাল…লিটনই বলতে পারবে রঞ্জু কোথায় থাকে।”

    কথাটা একটু বিবেচনা করলো সে। “লিটন কোথায় থাকে? তার কোনো ফোন নাম্বার আছে তোর কাছে?”

    “আমি তো তাকে চিনি না, তার কোনো ফোন নাম্বারও নেই আমার কাছে। রঞ্জু বলছে সে-ই আমাকে ফোন করবে।”

    “কখন করবে?”

    “কাল সকালে।”

    একটু ভেবে নিলো বাস্টার্ড। তাকে কোনো ফাঁদে ফেলতে চাইছে না তো? অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আর্টকে রাখার কৌশল? এই ফাঁকে হয়তো তার লোকজন এসে যাবে এখানে।

    না। এটা তার গোপন আস্তানা। এমন কি নিজের ম্যানেজারও জানতো । তাকে কালাম নামের লোকটা নিয়ে এসেছে। অথচ লোকটা থাকে খুব কাছেই। এখানকার খবর নিশ্চয় কেউ জানে না। ব্ল্যাক রঞ্জুর দল এখন সতর্ক হয়ে উঠেছে। খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

    একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো সে। উঠে এসে পিস্তলটা তাক করলো মঞ্জুর কপাল বরাবর। “একদম কথা বলবি না। একটুও নড়বি না, নইলে তোর অবস্থা হবে ওর মতো।” কালামের মৃতদেহের দিকে ইঙ্গিত করলো বাস্টার্ড।

    দু’চোখ বন্ধ করে ফেললো মঞ্জু। তার সমস্ত শরীর আবারো কাঁপতে শুরু করলো। মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হতে লাগলো।

    “আল্লাহ…! আল্লাহ…!”

    .

    অনেক আগেই মেয়ে দুটো চলে গেছে। এখন চুপচাপ বসে আছে। দু’জনের ঠোঁটেই সিগারেট । চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

    “পুলিশ কি বললো,” খালি গা আর লুঙ্গি পরা লোকটা জানতে চাইলো।

    “তিনটা খুনই নাকি একজন করেছে। কে করেছে সেটা পুলিশ এখনও জানতে পারে নি, তবে খুনিকে ধরার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল নাকি আরেকটু হলে ধরেই ফেলেছিলো।”

    “তোমার কি কোনো আইডিয়া আছে?” খালি গায়ের লোকটা বললো।

    মাথা দোলালো অন্য লোকটা। “এখনও বুঝতে পারছি না। তবে পুলিশ জানতে পারলেই আমাকে জানাবে।”

    সিগারেটটা অ্যাস্ট্রে’তে গুঁজে রাখলো। “তুমি নিশ্চিত, আমাদের দলের ভেতরে কেউ এটা করেছে?”

    “এ পর্যন্ত যা জানি তাতে তো মনে হচ্ছে আমাদের মধ্যেই কেউ করেছে।” সিগারেটে টান দিলো সে। “তবে কেন করেছে সেটা বুঝতে পারছি না।”

    “টাকার জন্য?”

    আবারো মাথা দোলালো সে। “গিয়াসকে খুন করার পর তো টাকাগুলো পেয়েই গেছিলো…মিনাকে তাহলে মারতে গেলে কেন?”

    খালি গায়ের লোকটা চিন্তিত মুখে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    “পুলিশ বলছে গিয়াসের সাথে নাকি এক মেয়ে ছিলো…গিয়াসকে খুন করে খুনি ঐ. মেয়েটাকে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ে। খুনির সাথে ঐ মেয়েটাকে কয়েক জায়গাও দেখা গেছে।”

    “মেয়েটা কে হতে পারে?”

    “মনে হচ্ছে মিনার কোনো মেয়ে…”

    “আমি নিশ্চিত ঐ মেয়েটা এসবের সাথে জড়িত, খালি গা বললো। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে। “মিনা বেঁচে থাকলে জানা যেতো মেয়েটা কে।”

    “হয়তো তাকে ব্যবহার করেই কাজটা করা হয়েছে।”

    “তাহলে এখন কি করবে?”

    একটু চুপ করে থাকলো সে। “আমি ঢাকায় যাবো। আমার তো কোনো সমস্যা নেই। তুমি এখানেই থাকো । আমি গিয়ে দেখি ঘটনাটা কি। দূর থেকে বসে বসে সব খবর পাবো না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো অন্যজন। “সেটাই ভালো।”

    .

    অধ্যায় ৩৩

    ঢাকা ক্লাবের এক কোণে বসে আছে হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ, তার হোস্ট তানভির আকবর একদৃষ্টে চেয়ে আছে বন্ধুর দিকে। ফারুক আহমেদ ক্লাব কালচারে অভ্যস্ত নয়, ঢাকা ক্লাবে এলেই তার অস্বস্তি লাগে।

    তানভির আকবর স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান। চাকরি জীবনের শুরুতে দু’জনেই পুলিশ বিভাগে কাজ করেছে। তারা শুধু একে অন্যের ব্যাচমেটই ছিলো না, বিশ্ববিদ্যালয়েও একসাথে পড়াশোনা করেছে। একসাথেই বিসিএস। দিয়ে সরকারী চকরিতে ঢুকেছে।

    “তোমার ডিপার্টমেন্টটা তো বেশ ভালোই কাজ করছে,” বললো তানভির আকবর। “পত্রিকায় প্রায়ই তোমাদের নাম দেখি।”

    “যে হারে খুনখারাবি হয় আমাদের নাম প্রতিদিন দেখাটাই স্বাভাবিক,” ফারুক আহমেদ বিনয় দেখিয়ে বললো।

    “না, না,” মাথা দোলালো তার বন্ধু। “তোমাদের কাজকর্ম বেশ ভালো হচ্ছে। এরকম একটা ডিপার্টমেন্টের দরকার ছিলো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো হোমিসাইড প্রধান।

    “তবে লোকবল কম, তাই না?…লজিস্টিক সাপোর্ট কেমন?”

    “নতুন তো, সময় লাগবে। লোকবল বাড়ানো হচ্ছে আস্তে আস্তে…আর লজিস্টিক সাপোর্ট এখন পর্যন্ত যা আছে খারাপ না। বলতে পারো মোটামুটি।”

    “হুম,” মাথা দোলালো তানভির আকবর। “ভালো।”

    “তবে একটা বিরাট ঘাটতি আছে আমাদের।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান আকবর সাহেব।

    “ইন্টেলিজেন্স উইংটা এখনও গড়ে তুলতে পারি নি…সময় লাগবে মনে হচ্ছে।”

    “যেকোনো ইনভেস্টিগেশনে ইন্টেলিজেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” একটু থেমে তানভির আকবর বললো, “তবে তোমাদের ইন্টেলিজেন্স উইং বিল্ডআপ হবার আগ পর্যন্ত অন্যদের হেল্প নেবার সুবিধা তো আছেই, তাই না?”

    “তা আছে, কিন্তু কথায় আছে না, পরের ধনে পোন্দারি…ব্যাপারটা সেরকম হয়ে যায় আর কি।”

    হা হা করে হেসে ফেললো আকবর সাহেব। “কেন, তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে নাকি?”

    “তাতো রয়েছেই,” একটু সামনে ঝুঁকে এলো ফারুক আহমেদ। “সবচাইতে বেশি তোমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকেই পেয়েছি।”

    ভুরু কুচকে তাকালো তানভির আকবর । “আমার আগের জনের কথা বলছো?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো হোমিসাইড প্রধান। “তবে তোমার কাছ থেকে এখনও সেরকম কিছু পাই নি। ভবিষ্যতে পাবো কিনা জানি না।”

    “তুমি তো এখন পর্যন্ত আমার কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাও নি…চেয়েই দেখো না।” কণ্ঠটা একটু নীচে নামিয়ে বললো, “জলদি চেয়ো, আর কিছুদিন পর কেয়ারটেকার চলে এলে এ পদে নাও থাকতে পারি।”

    ফারুক আহমেদ এই অপেক্ষাই ছিলো। “তাহলে তো দেরি করা ঠিক হবে না।” ঠাট্টারছলে বললো ফারুক আহমেদ, তারপর একটু থেমে আবার বললো, “কয়েক দিন আগে তিনটি খুনের ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে একটা সমস্যায় পড়ে গেছি, মনে হয় এ ব্যাপারে তুমি সাহায্য করতে পারবে।”

    “কোন্ খুনের কথা বলছো?”

    “ব্ল্যাক রঞ্জুর তিনজন ঘনিষ্ঠ লোকের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছি। তুমি নিশ্চয় শুনেছো?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান। “তদন্ত তো মাত্র শুরু করলে…কতো দূর এগিয়েছো?”

    “তদন্ত ভালোমতোই এগোচ্ছে কিন্তু অন্যদিক থেকে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

    “কেমন?”

    “আমার ডিপার্টমেন্টের চিফ ইনভেস্টিগেটর জেফরিকে তো তুমি চেনো?”

    “ও তো সেলিব্রেটি হয়ে গেছে, প্রায়ই পত্রিকায় নাম দেখি, ওকে চিনবো না…কী যে বলো।”

    “জেফরি মনে করছে ব্ল্যাক রঞ্জুর তিনজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করাটা সময়ের অপচয়।”

    ভুরু কপালে তুললো তানভির আকবর। “কেন?”

    “তার ধারণা এই খুনগুলো আসলে গভমেন্টের কোনো এজেন্সি করাচ্ছে।”

    একটু অবাক হলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান। তার এ রকম মনে করার কারণ?”

    “খুনিকে সে খুব দ্রুতই ট্র্যাকডাউন করতে পেরেছিলো…কিন্তু বার বার এলিভেন্থ আওয়ারে খুনি টের পেয়ে সটকে পড়েছে। এজন্যেই সে মনে করছে গভমেন্টের কোনো এজেন্সি হয়তো আগেভাগে খুনিকে জানিয়ে দিচ্ছে…হয়তো গোপন কোনো অপারেশনের অংশ হিসেবেই খুনগুলো করা হয়েছে।”

    “তোমার ঐ ইনভেস্টিগেটরকে আশ্বস্ত করতে পারো, এরকম কিছু হচ্ছে ।” তানভির আকবর জোর দিয়ে বললো ।

    “তুমি শিউর?”

    “হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর।”

    “আমারও সেরকম ধারণা,” একটু থেমে আবার বললো, “কিন্তু জেফরি চাচ্ছে নিশ্চিত হচ্ছে।”

    “বললাম তো এরকম কিছু হচ্ছে না, তানভির আকবর বললো। “সে কিভাবে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে?”

    মনে মনে গুছিয়ে নিলো ফারুক সাহেব। “ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্ল্যাক রঞ্জু সম্পর্কে কোনো ইন্টেল আছে কিনা সেটা জানতে চাচ্ছে। তার ধারণা এরকম অপারেশন যদি আদৌ হয়ে থাকে তাহলে এ সংক্রান্ত প্রচুর ইন্টেল আছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।”

    একটু চুপ মেরে গেলো তানভির আকবর। “সাম্প্রতিক বলতে কতো দিন বোঝাচ্ছো?”

    “এই ধরো বিগত এক মাসের মতো…?”

    “প্রচুর রিপোর্ট জমা পড়ে…খুঁজে বের করাটা কঠিন কাজ। আমরা তো এখনও পুরোপুরি কম্পিউটারে চলে যাই নি। ঠিক আছে, আমি দেখবো কি করা যায়। কিন্তু…”

    “পলিটিক্যাল রিলেটেড রিপোর্টগুলো শেয়ার করা যাবে না…বোঝেই তো, ওগুলো খুব রেস্ট্রিক্টেড।”

    তানভির আকবরের এ কথায় ফারুক আহমেদ খুশি হতে পারলো না। “তাহলে তো খুব বেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না।”

    “কিছু করার নেই। পলিটিক্যাল রিপোর্টগুলো সেনসেটিভ হয়ে থাকে, ইউ নো দ্যাট।”

    “কিন্তু আমি তো অফিশিয়ালি কোনো রিকোয়েস্ট করছি না…শুধু জানতে চাইছি এরকম কোনো রিপোর্ট আছে কিনা। পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়ার জন্যেই জানতে চাইছি।”

    তানভির আকবর একটু ভেবে নিলো। “রিপোর্টের কোনো কপি পাবে না, শুধু একনজর দেখতে পাবে…ইস দ্যাট ওকে উইথ ইউ?”

    “দ্যাটস হোয়াট আই ওয়ান্টেড, ফ্রেন্ড,” কথাটা বলেই ফারুক সাহেব হাত বাড়িয়ে দিলো তার বন্ধুর দিকে।

    .

    অধ্যায় ৩৪

    মনোয়ার হোসেন মঞ্জু সারা রাত ধরে পড়ে আছে বিছানায়। একটুও নড়া চড়া করছে না। শুধু যে ভয়ে এটা করছে তা নয়, হাত-মুখ শক্ত করে বেঁধে রাখার কারণে তার পক্ষে মরার মতো পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। খুনি যখন তার কপালে পিস্তল ঠেকালো তখন ভেবেছিলো সব শেষ। এ দুনিয়া থেকে বিদায় জানানোর সময় হয়ে গেছে। কিন্তু খুনি তাকে গুলি করে নি। শুধু হাত-পা-মুখ বেধে ফেলে রাখে।

    আজরাইলটা এখনও তার ঘরে আছে। আবুল কালামের লাশটা সরিয়ে ফেলেছে সে। কোথায় রেখেছে বুঝতে পারছে না। এক ভয়ঙ্কর খুনির সাথে সারা রাত কাটিয়ে দেয়া, তাও আবার হাত-মুখ বাধা অবস্থায় তার সমগ্র জীবনের ভয় জড়ো করলেও বর্তমান ভীতির কাছে সেগুলো কিছুই না।

    মিনিটের পর মিনিট, ঘণ্টার পর ঘন্টা অতিক্রান্ত হচ্ছে আর সুতীব্র এক ভীতি তাকে অবশ করে দিচ্ছে। এরচেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। নিজেকে তার কোরবানীর বলি হতে যাওয়া পশুর মতো মনে হচ্ছে। যেকোনো সময় জবাই হয়ে যাবে।

    নিজের পরিণতি সম্পর্কে তার মনে কোনো বিভ্রান্তি নেই। একটাই নিয়তি তার জন্যে অপেক্ষা করছে : মৃত্যু।

    তবে হতাশার গাঢ় অন্ধকারে ক্ষীণ আলো যে নেই তা নয়। একটাই আশা, আগামীকাল সকালে লিটন নামে যে লোকটা আসবে সে যদি আগেভাগে বুঝতে পারে তো কিছুটা সম্ভাবনা থাকবে। আজরাইলটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না, ব্ল্যাক রঞ্জুর দলটি কতো সুরক্ষিত সিস্টেমে পরিচালিত হয়। সকালে লিটন এলেই সে বুঝতে পারবে সেটা। সশরীরে দেখা করার আগে তারা সতর্ক থাকে সব সময়। তবে লিটন কতোটা দ্রুত ধরতে পারে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে তার উপরেই সব নির্ভর করছে। মনে মনে শুধু একটা দোয়াই করলো, লিটন যেনো দ্রুত বুঝে ফেলতে পারে ।

    এখন কটা বাজে বুঝতে পারলো না। তবে রাত শেষ হয়ে যে ভোরের আলো ফুটছে সেটা বুঝতে পারলো। জানালার ভারি পদা ভেদ করে মৃদু আলো দেখা যাচ্ছে। লিটন আসবে আটটা বাজে, এখন তাহলে ক’টা বাজে?

    সারা রাত না ঘুমানোর কারণে ক্লান্তি থেকে চোখের পাতা বুজে এসেছিলো, কতোটা সময় পেরিয়ে গেছে বুঝতে পারলো না। আজরাইলটার শক্ত দু’হাতে ঝাঁকুনি খেয়ে জেগে উঠলো সে।

    “ওঠ!” আজরাইলটা বললো। তার মুখের বাঁধনটা খুলে দিলো সে। “লিটনের সাথে কি বলতে হবে মনে আছে তো?”

    তার হাত-মুখ বাঁধার আগেই বলে দিয়েছিলো সকালে লিটন চলে এলে কি বলতে হবে। মাথা নেড়ে সায় দিলে মঞ্জু। জোর করে সাহস সঞ্চয় করলো সে। এখন একটু সাহসের দরকার আছে।

    আটটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে একটা ফোন এলে বাস্টার্ড মোবাইল ফোনটা লাউডস্পিকার মোড়ে দিয়ে রঙুর বড় ভায়ের কানের কাছে ধরলো।

    “হ্যালো?” মঞ্জু বললো।

    “সুগন্ধা, মঞ্জু ভাই।”

    “হ্যাঁ, হ্যাঁ…উপরে চলে আসো, লিটন,” মঞ্জু তড়িঘড়ি করে বললো বাস্টার্ডের দিকে চেয়ে।

    ওপাশ থেকে নীরবতা নেমে এলো কিছুক্ষণের জন্য ।

    বাস্টার্ড বুঝতে পারলো না। ইশারা করলো মঞ্জুকে। ব্যাপার কি?

    “পাঁচ তলায় ডান দিকের ফ্ল্যাটটা। কোনো সমস্যা নেই, চলে আসো৷”

    লিটন নামের লোকটা আর কিছু না বলেই লাইনটা কেটে দিলো। মঞ্জুর দিকে ভালো করে তাকালো বাস্টার্ড। তার চোখের দিকে তাকাচ্ছে

    সে। কিছু একটা তার মনে খচখচ করতে শুরু করলো। ধরতে পারছে না, কিন্তু টের পাচ্ছে অস্বাভাবিক কিছু আছে এর মধ্যে। কয়েক সেকেন্ড পরই কথাটা তার মনে পড়ে গেলো।

    সুগন্ধা! নাকি শুভ সকাল বলেছে?

    এর মানে কি?

    সঙ্গে সঙ্গে পিস্তলটা তা করলো মঞ্জুর কপালে। “লিটন তোকে সুগন্ধা বললো কেন?”

    ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মঞ্জু। “সুগন্ধা?” বিস্মিত হবার ভান করলো সে। “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

    কিন্তু বাস্টার্ড স্পষ্ট শুনেছে কথাটা। একেবারেই খাপ ছাড়া একটি কথা । বলা নেই কওয়া নেই সুগন্ধা! “শূয়োরের বাচ্চা, চালাকি করবি না!”

    “ভাই, আপনি এসব কী বলছেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!” কাঁদো কাঁদো গলায় বললো মঞ্জু।

    ধন্দে পড়ে গেলো বাস্টার্ড । সে কি ঠিকমতো শুনেছে?

    “লিটন তোকে বললো না, সুগন্ধা মঞ্জু ভাই?”

    ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো মঞ্জু। “বলছে মনে হয়, কিন্তু কেন বলেছে। বুঝতে পারছি না!”

    আবারো ধন্দে পড়ে গেলো সে। কথাটা আসলেই বেখাপ্পা। কিন্তু রঞ্জুর দলের একজন এমনি এমনি এটা বলবে না। কারণটা কি?

    “বানচোত, যদি চালাকি করিস-”

    ঠিক এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলে বাস্টার্ড চুপ মেরে গেলো। বুঝতে পারলো দ্রুত কাজ করতে হবে। একটা বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সে।

    মঞ্জুকে পিস্তলের মুখে পাশের ঘরের অ্যাটাচড বাথরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এই একই বাথরুমে আরো একজন আছে-একটা লাশ।

    নিঃশব্দে অথচ দ্রুত ফিরে এলো মেইন দরজার সামনে, তবে পিপহোলে চোখ রাখলো না। দরজার কাছে এসে কান পাতলো। বোঝার চেষ্টা করলো দরজার ওপাশে কয়জন আছে। সে জানে না লিটনের সাথে আরো কেউ আছে কিনা।

    কলিংবেলটা আবারো বাজতে শুরু করলো কিন্তু বাস্টার্ড দরজা খুলে দিলো না। চট করে মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। দরজার সামনে যে রুমটা আছে সেটাতে ঢুকে একটা জিনিস খুঁজতে লাগলো।

    বৈদ্যুতিক তার।

    ওয়ার্ডরোবের উপর একটা আয়রন দেখতে পেলো, সেটার কয়েল করা তারটা খুলে ফেললো এক ঝটকায়। তারপর তারটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো আয়রন থেকে। দৌড়ে গেলো দরজার কাছে। তারের যে মাথাটা ছিঁড়ে ফেলেছে সেটা দরজার নবে পেচিয়ে দিলো, আর অন্য মাথায় যে প্লগিং সকেটটা আছে সেটা ঢুকিয়ে দিলো পাশের দেয়ালে সুইচবোর্ডের প্লাগে।

    কলিংবেলটা তৃতীয়বারের মতো বেজে উঠলো। বাস্টার্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সুইচবোর্ডের সামনে। তার বাম হাত সুইচবোর্ডের প্লাগের সুইচটার কাছে, ডান হাতে সাইলেন্সর পিস্তল। দরজার নবের দিকে স্থির হয়ে আছে তার চোখ।

    দরজার ওপাশে যে-ই থাকুক না কেন এতোক্ষণে অধৈর্য হয়ে পড়েছে, সে সম্পর্কে তার মনে কোনো সন্দেহ নেই। দরজার নবটা একটু নড়তেই সুইচ টিপে দিলো বাস্টার্ড ।

    একটা চিৎকার শোনা গেলো। প্রায় আর্তনাদের মতো। সঙ্গে সঙ্গে দরজার কাছ থেকে সরে গেলো সে। এখনও দরজার নবে ইলেক্ট্রিক প্রবাহ আছে। তার ধারণা দরজার ওপাশ থেকে গুলি করা হবে এখন। কয়েক সেকেন্ড চলে গেলো কিন্তু কিছুই হলো না। দরজার ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজও পাচ্ছে না। কী যেনো একটু ভেবে ছুটে গেলো পাশের ঘরে অ্যাটাচড বাথরুমে। দরজা খুলে মঞ্জুকে বের করে আনলো। লোকটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু বাস্টার্ড পিস্তল ঠেকিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করলো তাকে।

    দরজার কাছে সুইচবোর্ডে প্লাগের সুইচটা বন্ধ করে মঞ্জুকে পিস্তলের মুখে মেইন দরজাটার দিকে ঠেলে দিয়ে দরজা খুলে দিতে বললো। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলো মঞ্জু । তার পেছনে বাস্টার্ড । দরজার নবে হাত রেখে পেছনে ফিরে তাকালে বাস্টার্ড বাম হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে চুপ থাকতে বললো তাকে, তারপর ইশারা করলো দরজা খোলার জন্য।

    মঞ্জু দরজাটা যে-ই না খুললো সঙ্গে সঙ্গে গুলি।

    পর পর তিনটি। কানে তালা লাগার জোগার হলো।

    তিনটি গুলিই ব্ল্যাক রঞ্জুর বড় ভাই মঞ্জুর বুক আর গলায় বিদ্ধ হলো । পেছনে হুমরি খেয়ে পড়ে গেলো সে। তারপরই পর পর দুটো থুতু ফেলার শব্দ আর ঘোৎ করে একটা আওয়াজ।

    মঞ্জু দরজা খোলার ঠিক আগ মুহূর্তে বাস্টার্ড হাটু গেড়ে বসে গিয়েছিলো, তবে হাতের পিস্তলটা রেখেছিলো সামনের দিকে তাক করে। মঞ্জু গুলি খেয়ে পড়ে যেতেই দরজার সামনে অস্ত্র হাতে এক যুবককে দেখা যায়। সে আর দেরি করে নি, দ্রুত পর পর দুটো গুলি করে বসে।

    যুবকটি দরজা থেকে ছিটকে মুখ থুবরে পড়ে গেলো । বাস্টার্ড জানে মৃত্যু যন্ত্রণা খুব একটা ভোগ করতে হয় নি তাকে, কারণ প্রথম গুলিটা লেগেছে ঠিক কপালে, আর দ্বিতীয় গুলিটা গলার কাছে। স্থির ছিলো, আগে থেকে প্রস্তুত ছিলো, তাই নিশানা একেবারে অব্যর্থ হয়েছে।

    বাস্টার্ড উঠে দাঁড়ালো, মঞ্জুর নিথর দেহটা টপকে দরজা দিয়ে যে-ই না বাইরে উঁকি মেরে দেখতে যাবে অমনি গুলি।

    কয়টা গুলি করা হয়েছে বুঝতে পারলো না, শুধু বুঝতে পারলো তার পেটে আর বুকে দুটো লেগেছে।

    গুলির অভিঘাতে দু’পা পিছিয়ে দরজার ভেতরে চিৎ হয়ে পড়ে গেলো সে, ঠিক মঞ্জুর মৃতদেহের বাম দিকে। স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় আরেকটু বাম দিকে গড়িয়ে গেলো দ্রুত। সে জানে বাম দিকেই একটা ঘরের দরজা আছে। একটু আগে যেখান থেকে আয়রনটা নিয়ে এসেছিলো।

    গড়িয়ে যাবার সময়ই আরো দুটো গুলি। দুটোই মেঝেতে আঘাত হেনে ছিটকে গেলো এদিক ওদিক ।

    পেটে আর বুকে গুলির আঘাতটা তার দম বন্ধ করে দিলো কিছু সময়ের জন্য। টের পেলো কেউ আসছে। সঙ্গে সঙ্গে একটা গুলি করলো সে। থুতু ফেলার শব্দ। নিশ্চিত হতে পারলো না, এই শব্দ শুনে অস্ত্রধারী লোকটা পিছু হটবে কিনা। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো বাস্টার্ড।

    লিটনের সাথে তাহলে আরো লোক আছে! কতোজন আছে?

    সে জানে না । শিকার ধরতে গিয়ে কি সে নিজেই শিকার বনে যাচ্ছে?

    দরজার পাশে, দেয়ালের কাছে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বুক আর পেটে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। কিন্তু সে জানে এইসব যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করতে হবে। ভাবতে হবে দ্রুত আর কাজ করতে হবে তারচেয়েও ক্ষিপ্র গতিতে।

    অস্ত্রধারী যে-ই হোক না কেন, সে ধারণা করছে তার গুলি লেগেছে। দুটো গুলি খেয়ে ছিটকে পড়ে যেতে দেখেছে তাকে। এটা একটা সুবিধা। তাকে আহত বলে মনে করছে লোকটা।

    কিন্তু তার অসুবিধা কোটা?

    ভেবে নিলো একটু। লিটনের সাথে কয়জন লোক এসেছে সেটা সে জানে না। যদি জানতে পারে তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে অনেক সহজ হয়ে যাবে। মাথাটা একটু খাটাও!

    “ভাই, আমাকে মারবেন না…আপনার পায়ে পড়ি…” নিখুঁত অভিনয় করে বললো সে। যেনো গুলিবিদ্ধ, মৃত্যুপথযাত্রি একজন। নিজের অভিনয় প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হলো। যন্ত্রণাকাতর আওয়াজ তুলতে লাগলো সেইসাথে।

    “দরজা খোল, শূয়োরের বাচ্চা!” একটা ক্রুব্ধকণ্ঠ গর্জে উঠলো।

    একজন! কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

    যন্ত্রণাকাতর আওয়াজ অব্যাহত রাখলো বাস্টার্ড। বুকে আর পেটে যার দুটো গুলি লেগেছে সে তো এমনভাবেই কোঁকাবে! কাশতে শুরু করলো এবার। নিজের বাঁচিক অভিনয়েও মুগ্ধ সে। চালিয়ে যাও!

    ঘরের দিকে ভালো করে তাকালো। দরজার ঠিক বিপরীতে যে দেয়ালটা আছে সেখানে একটা বড় সাইজের ফ্রিজ। দ্রুত ভেবে নিলো। মাথাটা এখনও দারুণ কাজ করছে।

    “শূয়োরের বাচ্চা, দরজা খুলবি না!?” অস্ত্রধারীর গর্জনটা আরো তীব্র হলো এবার।

    বাস্টার্ড ফ্রিজের কাছে ছুটে গেলো। দেয়াল থেকে এক ফুট দূরত্ব রেখে ওটা রাখা হয়েছে। খুব সহজেই নিজেকে ফুজের আড়ালে নিয়ে যেতে পারলো-ডান হাত আর মাথাটা বাদে। হাতের অস্ত্রটা তাক করে রাখলো দরজার দিকে।

    চারপাশ কাঁপিয়ে আবারো গুলি হলো। বাস্টার্ড দেখতে পেলো দরজাটার নব গুঁড়িয়ে গেলো সেই গুলির আঘাতে। সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেলো দরজার ভারি পাল্প। ঠিক এই সময়টার অপেক্ষাই ছিলো সে।

    খোলা দরজা দিয়ে একটা অবয়ব দেখা যেতেই পর পর দুটো ফায়ার করলো সে। শব্দ দুটো ভোতা হলেও মানুষের আর্তনাদটা হলো জোড়ালো আর জান্তব!

    দরজার সামনে থাকা অবয়বটা হুমরি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেও জায়গা থেকে নড়লো না সে। ফ্রিজের দরজার আড়াল থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। পঁচিশ-ত্রিশ বছরের এক যুবক গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছে। শরীরটা কমার মতো বেঁকে খিচুনি দিচ্ছে সে। হাতের পিস্তলটা ছিটকে পড়ে আছে সামনেই। ডান কাঁধে আর বাম পেটে গুলি দুটো লেগেছে।

    তারপরও দক্ষ শিকারীর মতো জায়গা থেকে নড়লো না। আরেকটু অপেক্ষা করতে চাইছে। একদম নিশ্চিত হতে চাইছে আর কেউ নেই।

    উঠে এলো সে। অস্ত্রধারীর পিস্তলটা তুলে নিলো হাতে। দরজার দিকে । তাকিয়ে দেখলো দরজার বাইরে একজন পড়ে আছে। তার প্রাণ বায়ু বের হয়ে গেছে নিশ্চিত। তবে বুঝতে পারলো না কোন লিটন।

    বাইরে নিশ্চয় লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি গুলির আওয়াজ শুনেছে তারা। বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।

    তার ঘরের দরজার সামনে পড়ে থাকা লোকটা এখনও মরে নি। ভালো করে দেখে নিলো । ডান কাঁধের গুলিটায় সে কাবু হয় নি, তবে পেটের বাম দিকে যে গুলিটা লেগেছে সেটাই প্রাণঘাতি হয়ে উঠবে। সে জানে, পেটে গুলি লাগলে কঠিন যন্ত্রণা হয়। কমপক্ষে বিশ-পঁচিশ মিনিট বেঁচে থাকবে আর সুকঠিন যন্ত্রণা ভোগ করবে। যন্ত্রণাটা এতোটাই তীব্র যে এরচেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করবে।

    লোকটার দিকে তাকালো সে। যন্ত্রণায় মুখ বিকৃত করে রেখেছে। পিস্তলটা তাক করলো কপাল বরাবর।

    “ব্ল্যাক রঞ্জু কোলকাতায় কোথায় থাকে?” শান্ত কণ্ঠে বললো সে।

    “গুলি কর, শয়োর!” ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে বললো আহত লোকটা ।

    মাথা দোলালো সে। “আমি চাই তুই যন্ত্রণা ভোগ করে মরবি।”

    তার মুখে থুতু দেবার চেষ্টা করলো মৃত্যুপথযাত্রি, কিন্তু থুতু ছুঁড়ে মারার শক্তিটুকুও তার নেই। ঠোঁটের কাছে গড়িয়ে পড়লো সেটা। মাথা নেড়ে আফসোস করার ভঙ্গি করলো সে। মুচকি হেসে লোকটার পকেট থেকে মানিব্যাগ আর মোবাইলফোনটা বের করে নিলো। মানিব্যাগটা খুলে দেখতে পেলো ভেতরে একটা ছবি। আহত লোকটা এক বাচ্চাছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে খুব সম্ভবত তার স্ত্রী, পেছনে বড় একটা ব্যানারে লেখা : জিসানের শুভজন্মদিন।

    “তোর ছেলে?”

    আহত লোকটা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে এখন। কিছু বললো না তবে চোখেমুখে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

    “রঞ্জু কোথায় থাকে, বল?” শান্তকণ্ঠে বললো আবার। “অন্তত তোর ছেলে আর বউয়ের কথা ভেবে…”

    বাস্টার্ড খেয়াল করলো লোকটার দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

    “রঞ্জুর জন্যে আজ তোর এ অবস্থা…মারা যাচ্ছিস…তোর ছেলেটা এতিম হয়ে যাবে…তুই কি এখনও রঞ্জুকে বাঁচাতে চাস, নাকি তোর বউ-ছেলেকে? “

    “আ-আপনি..কে?” কষ্ট করে বলতে পারলো লোকটা। “রকে চাচ্ছেন কেন?”

    এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে বললো, “রঞ্জু কোলকাতার কোথায় থাকে?” কথাটা বলেই মানিব্যাগটা পকেটে ভরে নিলো। “তুই না বললেও আমি সেটা জেনে নিতে পারবো। রঞ্জুকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবি না। তবে নিজের ছেলেটাকে বাঁচাতে পারিস ইচ্ছে করলে।”

    “আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করবেন না, আল্লাহর দোহাই লাগে…!”

    “অবশ্যই করবো না, যদি তার বাপ আমার কথামতো কাজ করে,” একটু থেমে আবার বললো, “আমি যা চাই তা পেয়ে গেলে তোর ছেলের ক্ষতি করতে যাবো কোন্ দুঃখে? ছোটো বাচ্চাদের খুন করাটা সহজ কাজ না। খুব খারাপ লাগে।” কথাটা বলেই মাথা দুলিয়ে আফসোস করার ভঙ্গি করলো সে। “তবে আমাকে উল্টাপাল্টা ঠিকানা দিবি না। যদি দিস, খুব খারাপ লাগলেও একটা কাজ করবো।” স্থির চোখে চেয়ে আবার বললো, “তোর বউ আর ছেলেকে খুঁজে বের করাটা কঠিন হবে না।” আহত লোকটার মোবাইল ফোনটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো সে।

    লোকটা আরো জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্যে দু’চোখ বন্ধ করে একটা সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করলো।

    “চায়না টাউন… মাউন্ট অলিম্পাস…”

    .

    অধ্যায় ৩৫

    ঢাকা শহরের সবগুলো থানা থেকে ব্ল্যাক রঞ্জুর ব্যাপারে সাম্প্রতিক কিছু তথ্য জোগার করতে পেরেছে জামান। তার সম্পর্কে থানায় যেসব অভিযোগ করা হয় তার বেশিরভাগই চাঁদাবাজি সংক্রান্ত। ফোনে চাঁদা দাবি করা হয়েছে, নির্দিষ্ট দিনে চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি, এইসব।

    ব্ল্যাক রঞ্জুর দলটি প্রতি মাসে কি পরিমাণ চাঁদা দাবি করে সে সম্পর্কে জেফরির কোনো ধারণা ছিলো না, তথ্যগুলো হাতে পেয়ে বিস্মিত হলো সে।

    এরকম একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী দিনের পর দিন চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে, খুনখারাবি করে যাচ্ছে অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারছে না!

    পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্ল্যাক রঞ্জুর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৩৭টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর চাঁদাবাজির ঘটনার সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। প্রতি মাসে গড়ে দশ থেকে বারোটি বড়সড় চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকে তার দলের বিরুদ্ধে। তার মানে সত্যিকারের সংখ্যাটি আরো বেশি। অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হয় না, চুপচাপ চাঁদা দিয়ে নিজের জীবন বাঁচায়।

    তবে অদ্ভুত বিষয় হলো বিগত পনেরো-বিশ দিনে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ হঠাৎ করেই কমে গেছে : মাত্র দুটো!

    চাঁদাবাজি এক লাফে কমে আসতেই তার দলের বিরুদ্ধে মারাত্মক আঘাত হানা শুরু হলো! ব্যাপারটা জেফরির কাছে শুধু রহস্যজনকই নয়, জটিল বলেও মনে হচ্ছে।

    হাতে একটা ফুলস্কেপ কাগজ নিয়ে জামান ঢুকলো তার রুমে।

    “স্যার, কর্নেল সাহেবের বর্ণনা থেকে আর্টিস্ট এই স্কেচটা করেছে, কাগজটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো জামান।

    স্কেচটা হাতে নিয়ে দেখলো জেফরি বেগ।

    দেখতে সুদর্শনই বলা চলে। মাথার চুল বেশ ছোটো করে ছাটা। চেহারার মধ্যে খুনির কোনো লক্ষণই নেই। তবে তার কাছে কেমন জানি চেনা চেনা মনে হলো। অবশ্য এটাও ঠিক, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা শুনে যে স্কেচ তৈরি করা হয় তা আসল চেহারার সাথে অনেক সময়েই মেলে না। এটা অংশত নির্ভর করে প্রত্যক্ষদর্শী আর আর্টিস্টের উপর।

    এমন সময় জেফরির ডেস্কের ফোনটা বেজে উঠলো।

    “স্লামালেকুম, স্যার,” বললো সে। তারপর অপরপ্রান্তের কথা শুনে গেলো কিছুক্ষণ । “কখন?…আচ্ছা…ঠিক আছে, স্যার।” ফোনটা রেখে দিলো সে।

    জামান তার দিকে চেয়ে আছে।

    “ফারুক স্যার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট জোগার করতে পেরেছে।”

    “এটা তো ভালো খবর, স্যার।”

    “হুম।”

    “আমি কিন্তু নিশ্চিত, এটা গোপন কোনো অপারেশন,” জামান বললো।

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি । “দেখা যাক রিপোর্টে কী আছে।”

    নিজের ডেস্ক থেকে উঠে দাঁড়ালো জেফরি বেগ । “স্যার আমাকে এক্ষুণি দেখা করতে বলেছেন।”

    .

    উত্তরার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আসাটা মোটেও কষ্টকর কাজ ছিলো না। একটা নিরিবিলি জায়গায় ছয় তলার অ্যাপার্টমেন্টে শুটিং হচ্ছে। গুলির যেটুকু শব্দ বাইরে থেকে শোনা গেছে তাতে কেউ সন্দেহ করে নি। লোকজনও তেমন ছিলো না। মঞ্জুর অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে যে লাশটা পড়ে ছিলো সেটা লিটনের সহযোগী কাম ড্রাইভারের। লাশটা অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর ঢুকিয়ে দরজা লাগানোর সময়ই ছয় তলা থেকে শুটিং ইউনিটের এক ছোকরা এসে, হাজির হয় তার সামনে। একটা সানক্যাপ উল্টো করে পরা ।

    “কি ভাই, এতো ঠুসঠাস আওয়াজ হইতাছে ক্যান? আজব!”

    বাস্টার্ড ছেলেটার দিকে কটমট চোখে তাকালেও কিছু বলে নি।

    “শালার এই আওয়াজের কারণে তিন তিনবার আমাগো শুটিং কাট করতে হইছে…বসে তো ক্ষেইপা আগুন।”

    বাস্টার্ড ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, “এখানেও শুটিং হয়েছে, তবে সত্যিকারের শুটিং।”

    ছেলেটা অবাক চোখে চেয়ে থাকে তার দিকে। বাস্টার্ড আর দেরি করে নি সোজা লিফটের কাছে চলে যায়।

    গেটের দাড়োয়ান তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করে নি। গুলির শব্দগুলোকে সেও ধরে নিয়েছে শুটিংয়ের অংশ হিসেবে। এখানে নিয়মিতই শুটিং হয়, আর দুয়েকবার যে গোলাগুলির শব্দ হয় নি তাতো নয়। বিশেষ করে সিনেমার শুটিং যখন হয় তখন এটা বেশি ঘটে।

    অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে একটা প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিলো, সে জানে এই গাড়িতে করেই লিটন এসেছিলো। প্রথমে যাকে ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছিলো, তারপর গুলি করে মেরেছিলো দরজার বাইরে তার পকেট থেকে গাড়ির চাবিটা পায়।

    এখন সে লিটনের গাড়িটা চালাচ্ছে। উত্তরার শুটিং হাউজ থেকে বের হয়েছে প্রায় দু’ঘণ্টা আগে। পথে এক জায়গায় থেমে নাস্তা করে নিয়েছে। নাস্তা করার সময়ই লিটনের মোবাইল ফোন থেকে কতগুলো নাম্বার দেখে নিয়েছে। এরমধ্যে একটা নাম্বার রঞ্জু নামে সেভ করা, এটা যে ব্ল্যাক রঞ্জুর নাম্বার সেটা বুঝতে পারলো । নাম্বারটা ইন্ডিয়ার। তবে এই নাম্বার দিয়ে ব্ল্যাক রঞ্জুকে খুঁজে বের করা না গেলেও অন্য একটা কাজ ঠিকই করা যাবে।

    ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বাইরে গাড়িটা পার্ক করে রাখলো। লিটনের ফোনটা বের করে ব্ল্যাক রঞ্জুর নাম্বারে ডায়াল করলো সে।

    রিং হচ্ছে। একবার, দু’বার, তিনবার…

    “হ্যালো?” অপরপ্রান্ত থেকে একটা কণ্ঠ বললো। রঞ্জু?

    “হ্যালো, আমি ডাক্তার সাজ্জাদ করিম বলছি, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে,” বাস্টার্ড নিখুঁত দক্ষতায় বলে গেলো।

    “ডাক্তার…??” বিস্মিত হলো ফোনের অপর প্রান্তের লোকটা।

    “কিছুক্ষণ আগে আমাদের হাসপাতালে দু’জন অ্যাকসিডেন্টের রোগী। এসেছে, তাদেরই একজনের মোবাইল ফোন থেকে আমি কলটা করছি । রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ বলতে পারেন, সে বার বার রঞ্জু ভাই রঞ্জু ভাই বলছিলো তাই তার ফোন নাম্বার থেকে আপনার নাম্বারটা খুঁজে ফোন করেছি…”

    “অ্যাকসিডেন্ট! এটা তো লিটনের নাম্বার! কি হয়েছে লিটনের?” উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো লোকটা।

    “খুব মারাত্মক অ্যাকসিডেন্ট করেছে…এখন অবস্থা গুরুতর। আপনি তার কে হন?”

    “আমি, আমি ওর খুব ঘনিষ্ঠ…” লোকটা একটু থেমে আবার বললো, “কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট করলো?”

    “গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট…প্রাইভেটকারে ছিলো। ড্রাইভার আর আরেক সঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে।”

    ওপাশ থেকে সুকঠিন নীরবতা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

    “আপনি কি রঞ্জু বলছেন?” আস্তে করে বললো সে।

    “উমমম…হ্যাঁ।” একটু থেমে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো রঞ্জু, “অ্যাকসিডেন্টটা কোথায় করেছে?…কখন?”

    “খুব সম্ভবত দেড় ঘণ্টা আগে…উত্তরায়।”

    ওপাশ থেকে আবারো নীরবতা নেমে এলো কিছুক্ষণের জন্য ।

    “হ্যালো?”

    “হুম, বলেন?” কণ্ঠটা বেশ বিষণ্ণ।

    “আপনি কি একটু হাসপাতালে আসতে পারবেন?”

    “আমি?” আৎকে উঠলো যেনো । “আমি অনেক দূরে আছি…”

    “তাহলে তো সমস্যা হয়ে গেলো…এ সময় তার ঘনিষ্ঠ লোকজন থাকা জরুরি।” একেবারে দায়িত্বশীল ডাক্তারের মতো বললো সে।

    “আমি…আমি সেরকম একজনকে পাঠাচ্ছি হাসপাতালে। চিন্তা করবেন না। লিটনকে বাঁচিয়ে তুলতে যা দরকার তাই করুন, ডাক্তার। এক্ষুণি আপনার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি।”

    “থ্যাঙ্ক ইউ।” একটু থেমে আবার বললো, “যাকে পাঠাবেন তাকে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলবেন, আপাতত এই ফোনটা আমার কাছেই আছে, ঠিক আছে?”

    “ঠিক আছে, ডাক্তার।”

    লাইনটা কেটে দিলো বাস্টার্ড। রঞ্জুর নাগাল না পেলেও অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে বলা যায় । ফোনে কথা বলতে পেরেছে!

    .

    হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদের কাছ থেকে সব শুনে চুপ মেরে গেলো জেফরি বেগ। মহাপরিচালক বুঝতে পারছে না তার এই প্রিয়পাত্র খুশি হয়েছে নাকি অখুশি।

    “কী, খুশি তো?”

    “জি, স্যার,” বললো সে। “আমাদের তো লিখিত কিছুর দরকার নেই, অনুরোধটাও আনঅফিশিয়াল, সুতরাং ঠিকই আছে।”

    “তানভির সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, আমি জানি।”

    “স্যার, উনি কি এটা আমাকে দেখতে দেবেন, নাকি আপনাকে…?”

    এবার ফারুক আহমেদ বুঝতে পারলো জেফরির মনোভাব। সে মনে করছে ইন্টেল রিপোর্টটা শুধুমাত্র হোমিসাইডের মহাপরিচালকই দেখতে পাবে ।

    “অবশ্যই তোমাকে দেখতে দেবে,” দাঁত বের করে হেসে বললো। “তদন্তটা তুমি করছো সুতরাং তোমারই তো দেখা উচিত।”

    এবার জেফরির মুখে স্মিত হাসি দেখা গেলো। “ধন্যবাদ, স্যার।”

    “তানভিরের জায়গায় অন্য কেউ হলে কিন্তু রাজি হতো না, ওর আগে যে ছিলো সে তো আমাদেরকে উৎপাত বলে মনে করতো। যেনো গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো ওর বাপের সম্পত্তি ছিলো।”

    “স্যার, একটা কথা বলি?” জেফরি বললো।

    “বলো।”

    “যদি দেখা যায় এটা গভমেন্টেরই কোনো গোপন অপারেশন তাহলে আমাদের তদন্ত কাজের কী অবস্থা হবে?”

    “তানভির জোর দিয়ে বলেছে, এরকম কোনো কিছু হচ্ছে না। তারপরও তুমি যখন বলছো তাহলে বলি…সেরকম কিছু হলে তদন্ত কাজটি আমরা করবো না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি বেগ।

    “একটা কথা কি জানো?” ফারুক সাহেব বললো। “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু আমাদেরকে এইসব হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার ব্যাপারে কোনো রকম বাধা দেয় নি।”

    “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, স্যার?”

    “মানে, পুরো ব্যাপারটা গভমেন্টের গোপন অপারেশন হলে তারা নিশ্চয় আমাদেরকে তদন্ত করার ব্যাপারে অনীহা দেখাতো।”

    মাথা দোলালো জেফরি। “স্যার, তারা এটা করলে তো আমরা বুঝে যেতাম গভমেন্ট এরকম কিছু করছে। ব্যাপারটা গোপন রাখার জন্যেই তারা এটা করে নি।”

    জেফরির সাথে একমত পোষণ করতে বাধ্য হলো মহাপরিচালক। “তাও অবশ্য ঠিক।”

    ঠিক এমন সময় জেফরির সহকারী মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলে সে তার বসের কাছ থেকে এক্সকিউজ চেয়ে কলটা রিসিভ করলো। অনেকক্ষণ ধরে ওপাশের কথা শুনে গেলো চুপচাপ, তারপর ফোনটা রেখে তাকালো হোমিসাইডের মহাপরিচালকের দিকে।

    “স্যার, উত্তরার এক শুটিংহাউজে চারটি খুন হয়েছে,” বললো জেফরি।

    “কি?” আৎকে উঠলো ফারুক আহমেদ।

    “রঞ্জুর ভাই মঞ্জু, যাকে আমরা খুঁজছি, সেই মঞ্জুসহ ব্ল্যাক রঞ্জুর আরো দু’জন সহযোগী।

    “মাই গড!” চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো মহাপরিচালকের। এর অর্থ বুঝতে পারছো?”

    জেফরি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার বসের দিকে। “আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি গেলো গেলো রব উঠে যাবে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর তত্ত্ববধায়ক সরকার টেকওভার করবে, নির্বাচনী হাওয়া বইছে দেশে, এরকম সময় এতোগুলো খুন! ভাবাই যায় না।” তারপর মাথা দোলাতে দোলাতে আবার বললো, “না, না। এটা কোনো গভমেন্টের গোপন অপারেশন নয়। ক্ষমতাসীন সরকার ইলেকশনের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি করার ঝুঁকি নেবে না।”

    “কিন্তু স্যার, ব্যাপারটা তো বরং উল্টো হচ্ছে।” অবাক হয়ে তাকালো মহাপরিচালক। “এইসব সন্ত্রাসীর খুন হওয়াতে পাবলিক খুব খুশি। ক্রশ ফায়ার শুরু হলো যখন তখনও এরকম হয়েছিলো। এখন পর্যন্ত এসব খুনখারাবির কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে না।” মাথা নেড়ে এ কথার সাথেও সম্মতি জানালো জেফরির বস। “বরং কৃতিত্ব চলে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের কাছে।”

    “আসলে পলিটিশিয়ানদের মতিগতি আমি কখনই বুঝতে পারি না। দেই আর সো ডিফিকাল্ট। হতে পারে, ইলেকশনে বাড়তি সুবিধা পাবার জন্যেও এরকম কিছু করছে। কিন্তু…”।

    “কি, স্যার?”

    “শুধুমাত্র ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের বিরুদ্ধে হবে কেন?…আরো অনেকেই তো আছে?”

    এবার জেফরির কাছে তার বসের কথাটা খুবই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হলো। ঠিকই তো, শুধুমাত্র ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের বিরুদ্ধে হবে কেন?

    .

    ব্ল্যাক রঞ্জুর সাথে ফোনে কথা বলার পনেরো মিনিটের মধ্যেই লিটনের ফোনটা আবার বেজে উঠলো। কলটা রিসিভ করলো বাস্টার্ড।

    “হ্যালো, ডাক্তার সাজ্জাদ কবির?” অস্থির একটা কণ্ঠ বললো।

    “সাজ্জাদ করিম,” শুধরে দিলো সে।

    “ওহ্, সরি, ডাক্তার সাহেব…আমি লিটন নামের এক রোগির বন্ধু, আপনি একটু আগে তার এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলেছিলেন?”

    “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনারা এখন কোথায়?” ইচ্ছে করেই এটা বললো । সে জানতে চাইছে কয়জন এসেছে।

    “আমি তো এখন মেডিকেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে আছি…”

    তার মানে একজন এসেছে। “আপনাদের রোগি আছে ওটিতে…কেন্টিনের পাশে একটা অফিস আছে, আপনি সেখানে চলে আসুন।”

    “নীচতলার ক্যান্টিনে?”

    “হ্যাঁ, হ্যাঁ, একজন ব্যস্ত ডাক্তার সে। “আচ্ছা ভালো কথা, সাথে করে লোকজন নিয়ে এসেছেন?”

    “না,” বললো ওপাশ থেকে। “কেন, ডাক্তার সাহেব?”

    “রক্ত লাগতে পারে…সেজন্যে বলছিলাম আর কি। ঠিক আছে আপনি জলদি চলে আসুন।”

    নীচ তলার ক্যান্টিনের পাশে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির একটি অফিস আছে। দিনের এ সময়টায় অফিসটা বন্ধ থাকে। জায়গাটা হাসপাতালের সবচাইতে নিরিবিলি অংশ। রঞ্জুর লোক আসার আগেই, অপেক্ষা করার সময়টাতে লিটনের গাড়িটা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের অফিসের কাছে এনে রেখেছে সে।

    তার একটা সুবিধা হলো রঞ্জু যাকেই পাঠাক না কেন সে তাকে চিনবে না। কিন্তু বাস্টার্ড ঠিকই চিনে ফেলবে-এরকম নিরিবিলি জায়গায় অস্থির একজন মানুষ-দেখলেই বুঝতে পারবে এ হলো অ্যাকসিডেন্টের রোগির জন্যে এসেছে।

    ফোনে কথা বলার ঠিক পাঁচ-ছয় মিনিট পর দেখা গেলো ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের এক লোক হন্তদন্ত হয়ে ক্যান্টিনের কাছে এসে চারপাশে অস্থিরভাবে তাকাচ্ছে।

    ঠিক আছে, তাহলে তুমিই সেই লোক।

    লিটনের ফোনটা সাইলেন্ট মুডে দিয়ে রেখেছে। সে জানে লোকটা আবার ফোন করতে পারে। সব কিছু দেখে নিশ্চিত হবার আগে লোকটার কাছে সে ধরা দেবে না।

    ঠিক তাই হলো। লোকটা আবার ফোন দিচ্ছে।

    বাস্টার্ড ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটার কাছাকাছি কিন্তু কতোগুলো রিক্সাভ্যানের আড়ালে। ভ্যানগুলোতে স্তূপ করে রাখা সেলাইনের খালি টিউব। সে জানে, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি ইউনিয়নের নেতারা প্রতিদিন এরকম প্লাস্টিকের খালি টিউব বিক্রি করেই পাঁচ-ছয় হাজার টাকা কামায়। সরকারী হাসপাতালের দুর্নীতির একেবারে সর্বব্যাপী রূপ।

    ফোনটা রিসিভ করলো সে।

    “আমি তো এসে গেছি,” মৃত্যুপথযাত্রি রোগির উদ্বিগ্ন আত্মীয়ের কণ্ঠস্বর।

    “হ্যাঁ, আপনি এখন কোথায়?”

    “ক্যান্টিনের সামনে।”

    “ক্যান্টিনের পাশে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের সমিতির অফিসটা দেখতে পাচ্ছেন?”

    “হ্যাঁ।”

    “ওটার ডান পাশ দিয়ে যে গলিটা গেছে সেখান দিয়ে সোজা চলে আসুন। ওটি’তে, আমি ওখানেই আছি।”

    লোকটা পকেটে ফোন রেখে দ্রুত চলে গেলো সমিতির ডান পাশের গলিতে। এই গলি দিয়ে আদৌ কোনো অপারেশন থিয়েটারে যাওয়া যায় না।

    বাস্টার্ড আস্তে করে ভ্যানগুলোর আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বাম দিকে সরু একটা গলিতে ঢুকে পড়লো।

    সেই সরু গলিতে মুখোমুখি হলো তারা।

    রঞ্জুর লোকটা কিছুই বুঝতে পারলো না। বাস্টার্ডকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো সে। ঠিক তখনই ঘুরে পেছন থেকে লোকটার গলা পেচিয়ে ধরেলা বাম হাতে, আর ডান হাতের অস্ত্রটা ঠেকিয়ে রাখলো লোকটার ডান কিডনি বরাবর।

    “একদম নড়বি না!” ফিসফিসিয়ে বললো সে।

    “কে” আৎকে উঠে বললো রঞ্জুর সহযোগী।

    বাস্টার্ড তার গলাটা শক্ত করে চেপে ধরলো যেনো কোনো শব্দ করতে না পারে। “একটা কথা বলবি তো শেষ করে দেবো। আমার পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো আছে।”

    লোকটা কিছু বললো না। তবে বাস্টার্ডের হাত থেকে ছোটার জন্যে হাসফাস করতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে পিস্তলের বাট দিয়ে লোকটার ডান কানের কাছে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে বসলো সে।

    পিস্তলটা পকেটে রেখে অচেতন লোকটাকে পাঁজাকোলা করে গলি থেকে বের হয়ে কাছেই পার্ক করে রাখা লিটনের গাড়ির দিকে চলে গেলো সে। দুয়েকজন লোক দৃশ্যটা দেখলেও তাদের কাছে এটাকে অস্বাভাবিক বলে মনে হলো না। হাসপাতালে এটা খুবই পরিচিত দৃশ্য।

    যতোটা ভেবেছিলো তারচেয়ে অনেক দ্রুত আর সহজে কাজ হয়ে গেলো বলে মনে মনে খুব খুশি হলো বাস্টার্ড। রঞ্জুর এই লোকের কাছ থেকেই আসল ঠিকানাটা জানতে পারবে বলে মনে করছে ।

    বুঝতে পারছে রঞ্জুর খুব কাছে চলে এসেছে সে।

    .

    অধ্যায় ৩৬

    শত শত মাইল দূরে, কোলকাতার এক গোপন আর নিরাপদ আস্তানায় বসে স্বজন হারানোর যন্ত্রণার চেয়েও অনেক বেশি ক্রোধে ফুঁসছে দু’জন লোক।

    তারা প্রায় সমবয়সী। দেখতেও অনেকটা একই রকম। মনে হবে আপন দুভাই। একজন গালে হাত দিয়ে চিন্তিত মুখে বার বার তাকাচ্ছে ক্রোধে ফুঁসতে থাকা লোকটার দিকে। গায়ের রঙ যদি ফর্সা হতো তাহলে রাগে তার মুখটা লাল টকেটকে দেখাতো, কিন্তু কালো কুচকুচে হওয়ার দরুণ শুধুমাত্র চোখ দুটো দেখে বোঝা যাচ্ছে লোকটার মাথায় খুন চেপে গেছে।

    “এটা অ্যাকসিডেন্ট না,” এই নিয়ে কথাটা তিনবার বললো সে। মাথা দোলাতে লাগলো দু’পাশে।

    গালে হাত দিয়ে বসে থাকা লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “কে করছে এসব? কারা করছে? আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।”

    ফাঁকা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কালো কুচকুচে লোকটা। “আমরা যখন বিরাট একটা কাজ করতে যাচ্ছি তখনই কিনা এরকম আঘাতের পর আঘাত হানা হচ্ছে?”

    “তুমি শিউর, মঞ্জু ভাই…?”

    লাল টকটকে চোখে তাকালো সে। “ঝন্টুকে পাঠিয়েছি হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারবো সব।”

    “ঢাকায় আমাদের দলের সবাইকে অ্যালার্ট করে দাও না?”

    কালো লোকটি চেয়ে রইলো তার সঙ্গির দিকে। তারপর আক্ষেপে মাথা দোলালো। “সামনে আমাদের বিরাট একটা কাজ…এ মুহূর্তে সবাইকে ঘাবড়ে দেবো?”

    গাল চুলকাতে লাগলো তার সঙ্গি। “কিন্তু এভাবে আমাদের লোকজন খুন । হতে থাকলে তো দলের সবাই ভয় পেয়ে যাবে।”

    “সমস্যা তো ওখানেই,” উঠে দাঁড়ালো কালোমতো লোকটা। “এভাবে খুন হতে থাকলে সবাই ভয় পেয়ে যাবে…আবার অ্যালার্ট করে দিলেও ঘাবড়ে যাবে। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।”

    “আমি একটা কথা বলি?”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো কালো লোকটা।

    “আমাদের দলের যেসব লোক খুন হচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমরা খুব একটা উদ্বিগ্নতা দেখাবো না। এতে করে দলের নীচু লেভেলে যারা আছে তারা মনে করবে এটা নিয়ে তাদের ভাবার দরকার নেই।”

    হাতঘড়ির দিকে তাকালো কালোমতো লোকটা। মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ঝন্টু এখনও ফোন করছে না কেন? হাসপাতাল থেকে ঝন্টুর মহল্লা খুব কাছেই, এতোক্ষণে ওখানে পৌঁছে রিপোর্ট করার কথা। কী যেনো একটু ভেবে নিয়ে নিজেই ফোনটা তুলে ডায়াল করলো ঝন্টুকে।

    রিং হচ্ছে…

    পর পর দু’বার রিং হলেও কলটা রিসিভ করা হলো না।

    কালো লোকটার চোখমুখ আতঙ্কে ভরে উঠলো। তার সামনে বসে থাকা সঙ্গির চেহারায়ও ফুটে উঠলো একই রকম অভিব্যক্তি।

    “ফোন ধরছে না?”

    মাথা নাড়লো কালো লোকটা ।

    “ঘটনাটা কি…এসব কী হচ্ছে!?”

    কালো লোকটা একদৃষ্টে চেয়ে থেকে বললো, “মনে হচ্ছে ঝন্টুও শেষ!”

    .

    ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে শুধু নিজের নিঃশ্বাসটা শুনতে পাচ্ছে, বুঝতে পারছে এখনও বেঁচে আছে, তবে কোথায় আছে সেটা বুঝতে পারছে না। তার হাত-পা-মুখ শক্ত করে বাধা । জ্ঞান ফিরে আসার পর থেকেই গাঢ় অন্ধকার ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না। সবচাইতে আতঙ্কের ব্যাপার হলো কোনো রকম আওয়াজও শুনতে পাচ্ছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে জ্যান্ত কবর দেয়া হয়েছে। তাকে। একটা গুমোট আর ভ্যাপসা গন্ধ, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। মাথার ডান পাশটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে। শো শো শব্দও হচ্ছে ডান কানে। ঘরটা কতো বড় কিংবা ছোটো সেটাও ঠাওর করতে পারছে না।

    খুট করে একটা শব্দ হতেই মৃদু আলো দেখতে পেলো, সেই আলোটা আরে বেড়ে গেলে বুঝতে পারলো দরজা খুলে কেউ ঘরে ঢুকছে। দরজাটা আবার বন্ধ করলে নেমে এলো গাঢ় অন্ধকার।

    একটা আলো জ্বলে উঠলো।

    চার্জার লাইট। এইমাত্র ঘরে ঢোকা লোকটার হাতে। কিন্তু লোকটাকে চিনতে পারলো না। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মুহূর্তের কথা এখনও মনে করতে পারছে না।

    চার্জারটা তার মাথার কাছে রেখে দিয়ে লোকটা তার মুখের বাধন খুলে দিলো । আগন্তুকের চেহারা দেখতে পেলো এবার কিন্তু এখনও চিনতে পারলো না।

    “কে?” মুখের বাধন খুলে ফেলতেই বললো লোকটা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো সে। বুঝতে পারলো মুখ বেধে রাখার কারণেই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো এতোক্ষণ।

    “তুই কে?” বললো বাস্টার্ড ।

    “আমি…আমি…ঝন্টু।”

    “ব্ল্যাক রঞ্জুর খুব ঘনিষ্ঠ, না?”

    ঝন্টু কিছু বললো না।

    “রঞ্জু তো তোর চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে মনে হয়। একটু আগে ফোন দিয়েছিলো। আমি অবশ্য ফোনটা ধরি নি।”

    ঝন্টু চোখ পিটপিট করে তাকালো শুধু।

    “যদিও রঙুর সাথে আমার জরুরি একটা দরকার আছে।” বাস্টার্ড কথাটা এমনভাবে বললো শুনে মনে হলো না সত্যি জরুরি।

    “কেন?” ঝন্টুর গলা একটু কাঁপা কাঁপা শোনালো।

    “লম্বা ইতিহাস।”

    “মঞ্জু ভাই…লিটন, তারা কোথায়?” ভয়ে ভয়ে বললো সে।

    “তারা সবাই রঞ্জুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেরাই মরে গেছে।”

    ঝন্টু কিছু বললো না।

    “তুইও তাই করবি, জানি,” খুব শান্ত কণ্ঠে বললো বাস্টার্ড।

    “আপনি কি চান?”

    “রঞ্জুকে চাই।”

    “বুঝলাম না।”

    “আমি রঞ্জুকে চাই।”

    “সে তো দেশে থাকে না।”

    “কোথায় থাকে?”

    “কোলকাতায়।”

    “কোলকাতার কোথায়?”

    “আমি তো–”

    ঝন্টুর ঠোঁটে আলতো করে হাত রেখে বাস্টার্ড বললো, “এ কথা বলে অনেকেই মারা গেছে। তুইও মারা যাবি। আরেকটু ভেবে বল।”

    ঢোক গিললো ঝন্টু। “কিন্তু আমি বললেও আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। আমি জানি…”

    মুচকি হাসলো বাস্টার্ড। “না। তুই বললে বেঁচে থাকবি।” ঝন্টুর ঠোঁটে তজলী দিয়ে টোকা মেরে বললো, “এই পচা মুখটা দিয়ে সত্যি বলেছিস কিনা সেটা যাচাই করে দেখতে হবে তো, নাকি?”

    ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো ঝন্টু।

    “তুই রঞ্জুর ঠিকানাটা বললে কোলকাতায় আমার লোকজন সেটা যাচাই করে দেখবে। তারা যদি দেখে তুই সত্যি কথা বলেছিস তাহলে আমি তোকে পুলিশের হাতে তুলে দেবো। কয়েক বছর জেল খেটে বের হয়ে আসতে পারবি। আর যদি মিথ্যে বলিস, সোজা ক্ৰশফায়ার!”

    ঝন্টু কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো তার দিকে। “আপনি কি পুলিশের লোক?”

    “তারচেয়েও বড় কিছু।”

    একটু ভেবে নিলো ঝন্টু। “যাদেরকে মেরেছেন তারা আপনাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছিলো?”

    “না।”

    “তাহলে?”

    “ওরা ঠিকানা দেবার আগেই মরে গেছে!”

    “কিভাবে?”

    “আমাকে মারতে চেয়েছিলো…আমার হাত থেকে পালাতে চেয়েছিলো। কিছু করার ছিলো না। মারতে বাধ্য হয়েছি।”

    “মঞ্জু ভাইও?”।

    “না। তোর মঞ্জু ভাইকে আমি মারি নি…হারামজাদা আমার আর লিটনের। মাঝখানে পড়ে গুলি খেয়েছে।” কথাগুলো এমনভাবে বললো যেনো কতোগুলো মানুষের মৃত্যু নিছক ভুলভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু না।

    “আমাকে খুন করবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে?”

    ঠোঁট উল্টে মাথা দোলালো সে। “কোনো গ্যারান্টি নেই। মিথ্যে বললে মরবি, আর সত্যি বললে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে। তোর সাহায্যে রঞ্জুকে যদি ধরতে পারি তাহলে তোকে পুরস্কার হিসেবে প্রাণে বাঁচিয়ে দেবো । আমাদের তো একজন সাক্ষীও লাগবে, নাকি?” একটু হেসে আবার বললো, “তবে জেলটেল খাটতে হবে। একেবারে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তুই সাক্ষী হবি । রঞ্জুর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হলে তোকে জেলটেল দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে।”

    ঝন্টু চুপ মেরে রইলো।

    “এখন ভেবে দ্যাখ, রঞ্জুর জন্য তুই কতটা ত্যাগ স্বীকার করবি।” বাস্টার্ড ভালো করে তাকালো ঝন্টুর দিকে। লোকটা ভেবে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করছে। কঠিন এক সিদ্ধান্ত। “তোদের দলের একজনকে কিভাবে মেরেছি জানিস?”

    ঝন্টু শুধু চেয়ে রইলো, কিছু বললো না।

    “ভাট্টিখানায় লোহা গলানোর চুলায় ফেলে দিয়েছি…কঠিন মৃত্যু!”

    আৎকে উঠলো ঝন্টু।

    “তবে আমি ভাবছি তোর বেলায় অন্য কিছু করবো।”

    ঝন্টু এবারও কিছু বললো না।

    “তুই যদি রঞ্জুর ঠিকানা না বলিস, তাহলে ধারালো চাপাতি দিয়ে তোর পা থেকে একটু একটু করে কাটতে শুরু করবো…” চোখেমুখে যতোটা হিংস্রতা ফুটিয়ে তোলা যায় ফুটিয়ে তুললো সে। “আমার ধারণা, হাটু পর্যন্ত আসার আগেই তুই সব বলে দিবি। মাঝখান থেকে চিরজীবনের জন্যে পা দুটো হারাবি, শূয়োরের বাচ্চা!”

    পাঁচ মিনিট পর ঝন্টু মুখ খুলতে শুরু করলো।

    “রঞ্জু কখনও এক ঠিকানায় বেশি দিন থাকে না। কিছু দিন পর পর ঠিকানা বদলায়।”

    “এখন কোথায় আছে?”

    “চায়না টাউনে।”

    চায়না টাউন? লিটনও এ কথা বলেছিলো, মনে মনে ভাবলো বাস্টার্ড। “চায়না টাউনের কোথায়?”

    “মাউন্ট অলিম্পাসে।” একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো, “একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট। যতোটুকু জানি, ওটার চার তলায় রঞ্জু থাকে।”

    বাস্টার্ডের কাছে মনে হলো ঝন্টু সত্যি কথাই বলছে। তবে আরো নিশ্চিত হবার দরকার আছে।

    “তুই বুঝতে পারছিস, মিথ্যে বললে কী হবে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো ঝন্টু।

    “আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেনে যেতে পারবো তুই সত্যি বলেছিস কিনা।”

    “কিন্তু রঞ্জু যদি এইফাঁকে জায়গা বদল করে ফেলে তাহলে তো সেটা আমার দোষ না।”

    দুপাশে মাথা দোলাতে দোলাতে মুচকি হাসলো বাস্টার্ড। “চালাকি করবি না। চালাকি করে তুই বাঁচতে পারবি না। আমি কি চাই সেটা তো তুই বুঝতেই পারছিস। আমি রঞ্জুকে চাই । কিভাবে তার নাগাল পাবো সেটা বল?”

    “আমি যা জানি তাই বললাম। কোলকাতায় রঞ্জু আমাদের সাথে থাকে না। ফোনে কথা হয়, দরকার পড়লে সে নিজেই আমাদের সাথে দেখা করে । তবে রঞ্জু যদি জায়গা বদল করেও থাকে সেটা জানবে শুধুমাত্র বাবু।”

    “বাবু কে?”

    “বাবু বিনয় কৃষ্ণ।”

    “কোথায় থাকে সে?”

    “তাতীবাজার…পুরনো ঢাকায়।”

    ভুরু কুচকে তাকালো ঝন্টুর দিকে। “তোর চেয়ে ঐ বাবু বিনয় কৃষ্ণ কি রঞ্জুর বেশি ঘনিষ্ঠ নাকি?”

    “রঞ্জু যেখানেই থাকুক না কেন, বাবু জানবেই। কোলকাতায় রঞ্জুর থাকার ব্যবস্থা বাবুই করে দিয়েছেন।”

    “লোকটা করে কি?”

    “স্বর্ণ ব্যবসা…তবে তার আসল ব্যবসা হুন্ডি।” বাস্টার্ড বুঝতে পারছে এই ঝন্টু নামের লোকটা সত্যি কথাই বলছে। “রর সমস্ত টাকা-পয়সা এই বাবুই কোলকাতায় পাঠায়? হুন্ডি করে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো ঝন্টু। “দেশে একমাত্র বাবু ছাড়া আর কেউ জানে না রঞ্জু কোথায় আছে।”

    “মনে হচ্ছে তুই বেঁচে যাবি।” মুচকি হেসে বললো বাস্টার্ড। “আজ বিকেলের মধ্যেই বুঝতে পারবো তুই ঠিক বলেছিস কিনা।”

    “আমি সত্যি বলেছি। আপনি খোঁজ নিলেই বুঝতে পারবেন।”

    “এবার বাবু বিনয় কৃষ্ণ সম্পর্কে বল। ওকে কোথায় কিভাবে ধরা যাবে?”

    পরবর্তী পাঁচ মিনিট বাবু সম্পর্কে বলে গেলো ঝন্টু। এখানে এভাবে দু’তিন দিন পড়ে থাকলে কেউ মারা যাবে না, বাস্টার্ড সেটা জানে। ঝন্টুকে মারার দরকার নেই। তাকে দিয়ে ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগকে বিভ্রান্ত করা যাবে।

    তারপর অন্ধকার ঘরে আবারো হাত-মুখ বেধে ফেলে রেখে বের হয়ে এলো বাস্টার্ড। একটা পরিত্যাক্ত পাটকল। ঢাকা শহরের মাঝখানে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে।

    .

    অধ্যায় ৩৭

    উত্তরার ৪ নাম্বারে, নতুন গড়ে ওটা একটি এলাকায় একমাত্র কমপ্লিট অ্যাপার্টমেন্টে চার চারটি খুন হয়েছে। নিহতেরা সবাই ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের সদস্য। সবচাইতে বড় কথা, তাদের মধ্যে একজন মনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্ল্যাক রঞ্জুর আপন বড় ভাই।

    একজন মানুষের পক্ষে এভাবে, এতোগুলো খুন করা কি সম্ভব? জেফরি বেগের কাছে মনে হচ্ছে তার সহকারী জামানের কথাই সত্যি হতে চলেছে।

    সুলতান, লেডি গিয়াস, রঙুর স্ত্রী মিনা। আর এখন আবারো চারটি খুন!

    সবচাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ব্ল্যাক রঞ্জর দল পাল্টা কোনো আঘাত হানছে না। জেফরি এবং তার সহকারী জামান ভেবেছিলো খুব শীঘ্রই রঞ্জুর দল পাল্টা আঘাত করে বসবে। শহরে আরো খুনখারাবি বেড়ে যাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। একতরফাভাবে খুন হয়ে যাচ্ছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের ঘনিষ্ঠরা। কেন?

    জেফরির কাছে এর জবাব নেই।

    ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে নিজের ডেস্কে বসে বসে ভেবে যাচ্ছে সে। এমন সময় সাবের কামাল এসে হাজির হলো।

    “স্যার, ঐ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তিন ধরণের বুলেটের খোসা পাওয়া গেছে,” বললো সাবের কামাল।

    “তার মানে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে।”

    “তাই তো মনে হচ্ছে, স্যার।”

    “আর কিছু?” জানতে চাইলো জেফরি।

    “মনোয়ার হোসেন মঞ্জু কিন্তু সাইলেন্সর পিস্তলের গুলিতে মারা যায় নি। আমাদের সম্ভাব্য খুনি সাইলেন্সারসহ সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ রাউন্ডের গুলি ব্যবহার করে, কিন্তু মঞ্জুর শরীর থেকে যে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে সেগুলো নাইন এম এম-এর।”

    নতুন জটিলতা, মনে মনে বললো জেফরি।

    “মনে হয়, খুনি এখনও একই অস্ত্র ব্যবহার করে যাচ্ছে, স্যার।”

    “মঞ্জু ছাড়া বাকি নিহতদের পরিচয় বের করা গেছে?” জানতে চাইলো জেফরি ।

    “একজনের পরিচয় জানা গেছে। আবুল কালাম । পিং সিটির ম্যানেজার চিহ্নিত করেছে তাকে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি বেগ। এই হোটেল ম্যানেজারই খুনের ঘটনাটা উদঘাটন করেছে। লোকটা সকাল দশটার পর অ্যাপার্টমেন্টে গেলে দেখতে পায় চার চারটি লাশ পড়ে আছে।

    পুলিশের কাছে হতভম্ব ম্যানেজার বলেছে, তার বস্ মনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাথে দেখা করতে গেছিলো সে। তার মানে লোকটা জানতো তার বস কোথায় আত্মগোপন করেছিলো । জেফরি সিদ্ধান্ত নিলো লোকটাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ম্যানেজার লোকটা এমন ভয় পেয়েছে, পারলে নিজেই জেলে ঢুকে বসে থাকে। তার ধারণা তাকেও হত্যা করা হবে। তার এরকম মনে করার সঙ্গত কারণ আছে, কিন্তু কে তাকে হত্যা করবে? কেন করবে?

    এ প্রশ্নের জবাবে লোকটা কিছুই বলতে পারে নি।

    শুধুমাত্র হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টই নয়, রঞ্জুর দলের লোকজনও জানে না। কে বা কারা এসব হত্যা করছে। জেফরি এবার বুঝতে পারলো কেন রঞ্জুর দলের লোকজন পাল্টা আঘাত হানছে না শত্রু কে তারাও চিহ্নিত করতে পারে নি এখন পর্যন্ত।

    কিন্তু এটা তো আর অসম্ভব। জেফরি বেশ ভালো করেই জানে, ব্ল্যাক রঞ্জুর দলের সাথে পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে যেমন নিম্ন পর্যায়ের সখ্যতা আছে, তেমনি আছে রাজনীতিকদের সাথে । গুজব আছে, এম.পি, মন্ত্রীসহ অনেক জাঁদরেল রাজনৈতিক নেতাদের সাথেই রঞ্জুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

    হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট না হয় এখনও ধরতে পারছে না এসবের পেছনে কে বা কারা আছে, কিন্তু আঘাতটা যাদের উপর করা হচ্ছে তাদের তো জানার কথা। এ কয়দিনে ব্ল্যাক রঞ্জু নিশ্চয় অনেক জায়গায় যোগাযোগ করে জেনে নিতে পেরেছে কারা এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে। তারপরও পাল্টা আঘাত হানছে না খুনখারাবি করতে দক্ষ ব্ল্যাক রঞ্জুর দলটি!

    আরেকটা ব্যাপার, উমা নামের মেয়েটি বলেছে খুনি লেডি গিয়াসের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলো রঞ্জু কোলকাতার কোথায় থাকে। একই প্রশ্ন সে করেছিলো মিনা অর্থাৎ রঙুর স্ত্রীকে। রঞ্জুর দলে অন্য কারো কথা জানতে চায় নি। শুধু রঞ্জু কোথায় থাকে সেটাই জানতে চেয়েছে। কেন?

    সুলতানকে খুন করার পর খুনি তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে সাথে করে। তারপরই লেডি গিয়াস খুন হলো। সেই রাতেই খুনি চলে গেলো রঞ্জুর স্ত্রী মিনার ফ্ল্যাটে। মিনাও খুন হলো। তারপর একটা বিরতি। জেফরি জানে খুনি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। উমা নামের মেয়েটি এ কথা বলেছে তাদেরকে। তাহলে এই বিরতিটা গুলিবিদ্ধ হবার জন্যেই হয়েছে।

    না। উমা বলেছে গুলির আঘাতটা তেমন গুরুতর ছিলো না। তাহলে খুনি সে কারণে অপেক্ষা করে নি । পিং সিটির ম্যানেজার জামিনে মুক্তি পাবার জন্যে অপেক্ষা করেছে। ম্যানেজার মুক্ত হতেই তার পিছু নিয়েছে, তারপর মঞ্জুর গোপন ঠিকানায় চলে যায়। সেখানেই খুন করে চারজনকে। হয়তো মঞ্জুর ওখানে ব্ল্যাক রঞ্জুর বাকি দু’জন লোককে খুনিই ডেকে এনে ফাঁদে ফেলেছে, কিংবা ওরা হঠাৎ করে চলে আসাতে একটা গোলাগুলির ঘটনা ঘটে গেছে। দুটোই হতে পারে।

    তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে?

    খুনি একটা বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ব্ল্যাক রঞ্জুর পুরো দলের পেছনে লাগে নি সে, তার আসল টার্গেট রঞ্জু।

    জেফরি বেগ জবাবটা পেয়ে গেলো।

    খুনি ব্ল্যাক রঞ্জুর কাছে পৌঁছাতে চাচ্ছে।

    কিন্তু পরক্ষণেই আরেকটা প্রশ্ন উঁকি মারলো তার মনে, যার জবাব এখনও সে জানে না।

    খুনিটা কে?!

    .

    অধ্যায় ৩৮

    বাবু বিনয় কৃষ্ণের ঠিকানা, ফোন নাম্বার ছাড়াও ঝন্টুর কাছ থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জেনে নিয়েছে বাস্টার্ড। তার ধারণা লোকটাকে কাবু করার জন্যে এটাই হবে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

    বাবু বিনয় কৃষ্ণ থাকে তাতীবাজারে, বাস্টার্ড সেখান থেকে সোজা চলে এসেছে ওয়ারি নামের পুরনো ঢাকার সবচাইতে অভিজাত এলাকায়। বিনয় কৃষ্ণ বাবু নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই। বাস্টার্ড বুঝতে পারলো লোকটা এখন কোথায় আছে। এটাই চেয়েছিলো সে।

    খুঁজে খুঁজে একটা ঠিকানা বের করলো। আট তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট । এখানেই, পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাট তার গন্তব্য। সোজা ঢুকে গেলো অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে। দাড়োয়ান তার দিকে তাকালো কিন্তু কোনো প্রশ্ন। করলো না। লোকটার মনে হয় খিদে পেয়েছে, ডিউটিতে আর মন বসছে না।

    পাঁচ তলার বি-৫ ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। কলিংবেল বাজিয়ে অপেক্ষা করলো, কিছুক্ষণ পরই গেট খুলে দাঁড়ালো এক অল্পবয়সী তরুণী।

    “কাকে চাই?”

    “আমি রোজ ভিউ সোসাইটির মেম্বার, বাবুর সাথে একটু কথা বলতে চাই।”

    প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টেই একটি করে সোসাইটি থাকে, অ্যালোটিদের কাছে এটি পরিচিত একটি নাম। বাস্টার্ড সেটাই ব্যবহার করলো। এই অ্যাপার্টমেন্টটির নাম যে রোজ ভিউ সেটা ঢোকার আগেই দেখে নিয়েছে। তরুণী ঠোঁট উল্টে তাকে অপেক্ষা করার ইশারা করে ভেতরে চলে গেলো।

    একটু পরই লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা পঞ্চাশোর্ধ ভুড়িওয়ালা এক লোক হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দিলো।

    “কাকে চাই…আপনি কে?”

    “আমি রোজ ভিউ সোসাইটির মেম্বার, আমার নাম আহম্মদ,” বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলো সে। “আপনি বাবু বিনয় কৃষ্ণ?”

    বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরে বাবু বললো, “হ্যাঁ।” তারপর ভুরু কুচকে জানতে চাইলো, “আপনাকে তো চিনলাম না?”

    “আপনি তো এখানে নিয়মিত থাকেন না, থাকলে অবশ্যই চিনতে পারতেন।”

    মনে হলো বাবু একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আমার কাছে কি জন্যে এসেছেন?”

    “আরে ভাই, আপনি এসব কী শুরু করেছেন…আমরা কি বউ-বাচ্চা নিয়ে এখানে থাকতে পারবো না?” কপট আক্ষেপের সুরে বললো বাস্টার্ড।

    ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো বিনয় বাবু।

    “আপনি নাকি এই ফ্ল্যাটে অসামাজিক কাজকর্ম-”

    তাকে আর পুরো কথা বলতে দিলো না বাবু। “ভেতরে আসুন,” দরজা খুলে দিয়ে তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো।

    যে তরুণী দরজা খুলে দিয়েছিলো তাকে ভেতরে চলে যাবার জন্য ইশারা করে বাবু চলে এলো ড্রইংরুমে। তারা দুজনেই বসলো সোফায়।

    “অ্যালোটিরা নানান কানাঘুষা করছে। আপনি নাকি একজন রক্ষিতা নিয়ে থাকেন এখানে।

    “এইসব আজেবাজে কথা কে বলেছে?”

    “সবাই বলছে, তাই তো আমাকে আপনার সাথে এ নিয়ে কথা বলতে পাঠিয়েছে।”

    “আমি কি কারোরটা খাই না পরি! কারোর তো সমস্যা করি না। তাহলে…?”

    “ঠিক করে বলেন তো, দাদা, ঐ মেয়েটা আপনার কে হয়?”

    বিব্রত হলো বাবু। “কে হয় মানে?”

    “মানে, এ নিয়ে হাউকাউ হোক সেটা আমি চাই না, বুঝতেই তো পারছেন।” একটু থেমে আবার বললো, “এখানে তো আপনি রেগুলার থাকেন না, তাই না?”

    “আশ্চর্য! আমি এখানে থাকি কি থাকি না তার কৈফিয়ত কি আপনাদের কাছে দেবো নাকি?…টাকা দিয়ে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছি, কার সাথে থাকবো না থাকবো সেটা কারো জানার দরকার আছে বলে মনে করি না।”

    “কিন্তু বিনয় বাবু, ভুলে গেলে তো চলবে না, এখানে সবাই ফ্যামিলি নিয়ে থাকে। সন্তানসন্ততি নিয়ে ভালো পরিবেশে থাকতে চায় সবাই।”

    “আরে কে তাদেরকে ভালো থাকতে মানা করেছে!”

    “বাবু, এভাবে কথা বললে কিন্তু ঝগড়াঝাটি বাড়বে, তারচেয়ে ভালো আমার একটা কথা শোনেন।”

    “কি কথা?” অবাক হলো বাবু।

    “মেয়েটাকে বিয়ে করে রেখে দেন না, ল্যাঠা চুকে যাবে। কেউ কিছু বলতে সাহস করবে না। এতো ঝামেলা করার দরকার কি?”

    বাবু হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো তার দিকে।

    “বুঝতে পারছি, আপনি গোপন রাখতে চাইছেন, সমস্যা কি?…এখানকার লোকজন ছাড়া তো ব্যাপারটা কেউ জানতেও পারবে না।”

    “আমি বুঝতে পারলাম না, আজ এতোদিন ধরে এখানে আছি, কেউ কিছু বললো না, আজ হঠাৎ করে নালিশ করা শুরু হয়ে গেলো!” ।

    মুচকি হাসলো বাস্টার্ড। “আপনার এখানে কে কে থাকে?…মানে আপনারা দুজনেই থাকেন নাকি আরো লোক থাকে?”

    “আমরা দু’জন ছাড়াও একজন কাজের মহিলা থাকে,” বেশ কাটাকাটাভাবে বললো বাবু।

    “ভালো,” বলেই ঘরটার চারপাশ ভালো করে দেখে নিলো সে। “বাকিরা কোথায়?”

    বাবু ভুরু কুচকে তাকালো তার দিকে। “ভেতরের ঘরে আছে।”

    “ভালো।”

    “আপনি কি আর কিছু বলবেন?” বিরক্তির সাথে জানতে চাইলো বাবু।

    “হ্যাঁ, অনেক কথা বলার আছে,” বলেই স্থির দৃষ্টিতে তাকালো সে।

    “মানে?”

    “আপনি নিশ্চয় জানেন ব্ল্যাক রঞ্জুর অনেক ঘনিষ্ঠ লোকজন খুন হচ্ছে,” শান্ত কণ্ঠে বললো বাস্টার্ড ।

    বাবু বিনয় কৃষ্ণ যেনো বজ্রাহত হলো। “আপনি কে?”

    ভুরু তুললো সে, তবে কিছু বললো না। ভেবেছেন আপনার সাথে ব্ল্যাক রঞ্জুর সম্পর্কের কথাটা আমরা জানতে পারবো না?”

    “আপনি কি পুলিশের লোক?” বিনয় বাবু ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো।

    “আমার আসল পরিচয় জানতে পারলে আপনি পাজামা নষ্ট করে ফেলবেন।” বলেই কোমর থেকে সাইলেন্সরটা বের করে হাতে তুলে নিলো সে।”কোনো রকম চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না।”

    দু’হাত তুলে ভয়ে কাঁপতে লাগলো বাবু। “আপনি কি চান?”

    “ব্ল্যাক রঞ্জুকে চাই।”

    “তাকে আমি কিভাবে…?”

    “তাই তো! আপনি তাকে কিভাবে আমার কাছে তুলে দেবেন। সে থাকে কোলকাতায়। ইচ্ছে করলেই তো আর সেখান থেকে তাকে এনে আমার কাছে তুলে দিতে পারবেন না, তাই না?”

    বিনয় বাবু আতঙ্কভরা চোখে চেয়ে রইলো কেবল।

    “তবে একটা উপায় অবশ্য আছে।”

    “কি উপায়?” ঢোক গিলে জানতে চাইলো বাবু।

    “রঞ্জুকে কোথায় পাবো সেটা বলে দিতে পারেন…খুব সোজা, তাই না?”

    আরেকবার ঢোক গিললো বিনয় কৃষ্ণ বাবু।

    “মিথ্যে ঠিকানা দিলে সমস্যা হবে, বিশাল বিপদে পড়ে যাবেন।” একটু থেমে আবার বললো সে, “ভাবছেন, আমি কিভাবে বুঝবো ঠিকানাটা সত্যি না মিথ্যে?” মুচকি হেসে মাথা দোলালো। “কোলকাতায় আমাদের লোক আছে, তারা যাচাই করে দেখবে।”

    একটু থেমে ভালো করে বাবুর দিকে লক্ষ্য করে দেখলো সে। লোকটা কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

    “ঝন্টু আমাকে সব বলেছে,” আস্তে করে কথাটা বলেই পিস্তলটা এবার সোজা বাবুর দিকে তাক করলো।

    “আমি যদি রঞ্জুর ঠিকানা আপনাকে বলি তাহলে সে আমাকে…”

    বাঁকা হাসি হাসলো বাস্টার্ড । “কি করবে?…আপনাকে মেরে ফেলবে?”

    ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইলো বাবু।

    দু’পাশে মাথা দোলালো সে। “মৃত মানুষ কিছু করতে পারবে না, বাবু।”

    কয়েক মুহূর্তের জন্যে চোখ বন্ধ করে রইলো বাবু বিনয় কৃষ্ণ। “চায়না টাউন…মাউন্ট অলিম্পাস রেস্টুরেন্ট।” …

    বাস্টার্ডের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। এ নিয়ে তিনজন লোক এ কথা বললো। তার মানে এটাই রঞ্জুর আসল ঠিকানা।

    হঠাৎ থুতু ফেলার শব্দ হতেই বাবু বিনয় কৃষ্ণ গোল গোল চোখে চেয়ে রইলো বাস্টার্ডের দিকে। তারপর আস্তে করে ঢলে পড়লো সোফায়। কোনো শব্দ বের হলো না। একেবারে নিঃশব্দে অগ্যস্ত যাত্রা করলো।

    একটাই গুলি, আর সেটা ক্লোজ রেঞ্জে বিদ্ধ করেছে বাবুর কপালে।

    ভালোভাবে সহযোগীতা করার পুরস্কার হিসেবে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু উপহার দিয়েছে বাস্টার্ড ।

    .

    অধ্যায় ৩৯

    গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হবার আগেই হোমিসাইড প্রধান ফারুক আহমেদ জেফরি বেগকে জানিয়ে দিয়েছিলো আগামীকাল সকালে যেনো সে অফিসে না এসে সরাসরি চলে যায় স্পেশাল ব্রাঞ্চের হেড অফিসে। কথাটা শুনে মনে মনে খুব খুশিই হয়েছিলো। তার ধারণা ছিলো না এতো দ্রুত কাজ হবে।

    এখন সে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান, তানভির আকবরের রুমে বসে আছে। তাকে বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে ভদ্রলোক। কাজকর্ম কেমন করছে, হোমিসাইডের কি অবস্থা, এফবিআই’এর ট্রেনিং কেমন ছিলো ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলার পর কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে চলে গেছে।

    অপেক্ষা করছে জেফরি। বুঝতে পারছে কাঙ্খিত রিপোর্টটা নিয়েই হয়তো ফিরবে তানভির আকবর।

    পুরো দশ মিনিট পর ফিরে এলো ভদ্রলোক। তার হাতে একটি ম্যানিলা ফোল্ডার।

    “সরি ফর লেট,” অমায়িক হাসি দিয়ে নিজের ডেস্ক চেয়ারে ফিরে এলো তানভির আকবর। “আরেক কাপ চা খাবে?” . জেফরি সম্মতি দিলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধানের কথায়। বুঝতে পারছে

    দ্রলোকের চায়ের তেষ্টা পেয়েছে, তবে তার নিজের কথা বললে চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই তার নেই। শুধুমাত্র ভদ্রলোককে সঙ্গ দেবার জন্যেই হ্যাঁ বলা।

    ইন্টারকমটা তুলে দুকাপ চায়ের কথা বলে দিলো তানভির আকবর।

    “আমাদের অফিস এখনও কম্পিউটারাইজড হয় নি, আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে ইন্টেল রিপোর্টগুলো হান্ড্রেড পার্সেন্ট কম্পিউটারাইজড করে ফেলতে পারবো।”

    “ডিজিটাল ফর্মেটে ফাইল না থাকলে তো খুঁজে বের করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়, স্যার,” বললো জেফরি।

    “তাতো হয়-ই, তবে আমাদেরকে এখন সেমি-ডিজিটাল বলতে পারো।”

    জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি বেগ।

    “আমাদের এখানে শুধুমাত্র ফাইলগুলোর ট্যাগ নাম্বার আর সামান্য কিছু ডেসক্রিপশন কম্পিউটারে রাখি । এরফলে খোঁজাখুঁজির কাজটা একটু সহজ হয়েছে। তবে পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে গেলে অনেক সুবিধা, সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।”

    “তার মানে ফাইলগুলোর ইনডেক্স কম্পিউটারে রাখা থাকে?”

    “হুম,” মাথা নেড়ে সায় দিলো তানভির আকবর। “তোমাদের মতো সার্চ। ইঞ্জিন থাকা দরকার, বুঝলে?”

    জেফরি মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    একজন পিয়ন এসে দুকাপ চা দিয়ে চলে গেলে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান চোখেমুখে রহস্য এনে বললো, “ক্ষমতাসীন পলিটিশিয়ানরা, যারা দেশ চালায়, তারা নিজেদের নেতার নামে মাজার করতে বললে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে দেবে মুহূর্তেই, আর সেই কাজের ফাইল এতো দ্রুত নড়বে যে মনে হবে সুপারসনিক গতিতে চলছে, কিন্তু জনগণের সরাসরি উপকারে আসে এরকম কিছুর কথা বললেই গরীব দেশ, টাকা নেই…বুঝলে? তাছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার উন্নতি হোক এটা তারা চায়ও না।”

    “কেন, স্যার?” জেফরির আসলে এ বিষয়ে জানার কোনো ই তারপরও সৌজন্যতার খাতিরে জানতে চাইলো।

    “এতে করে তাদেরই বেশি সমস্যা হবে, ইউ নো…সারাক্ষণই তো ব্যস্ত থাকে কন্সপিরেসি নিয়ে, ভালো কাজ করে কটা?”

    একান্ত অনিচ্ছায় দাঁত বের করে হাসলো জেফরি। তার চোখ বার বার যাচ্ছে তানভির আকবরের কাছে থাকা ম্যানিলা ফোল্ডারটার দিকে।

    “চা নাও,” নিজের কাপটা তুলে নিয়ে বললো সে।

    চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে ছোট্ট করে একটা চুমুক দিলো জেফরি ।

    “ফারুক আমাকে বলেছে, তুমি নাকি মনে করছে গভমেন্টের কোনো এজেন্সি গোপন অপারেশন চালাচ্ছে?”

    চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে সে বললো, “আমার সেরকমই সন্দেহ, স্যার।”

    মাথা দোলালো তানভির আকবর। “আই ডোন্ট থিঙ্ক সো।” চায়ে একটু চুমুক দিয়ে আবার বললো ভদ্রলোক, “আমার কাছে সেরকম কোনো খবর নেই।”

    “তাহলে আর কী হতে পারে?” প্রশ্নটা করেই আবার যোগ করলো জেফরি, “রর গ্রুপে কোন্দল?” বলেই মাথা দোলাতে লাগলো সে। “এখন পর্যন্ত সেরকম মনে হচ্ছে না।”

    ব্ল্যাক রক্ত সম্পর্কে আমাদের অর্গানাইজেশনে তেমন কোনো ইন্টেল নেই। এর আগের সরকারের উপর মহলের সাথে রঞ্জুর বেশ ভালো ঘনিষ্ঠতা নাকি ছিলো। আমার ধারণা তখনই তার সম্পর্কে অনেক রিপোর্ট গায়েব করে ফেলা হয়। রিপোর্ট বলতে যা আছে তার প্রায় সবটাই চাঁদাবাজি, খুনখারাবি সংক্রান্ত, যেগুলো পত্রিকা মারফত সবাই জানে…পুরনো কিছু রিপোর্ট এখনও আছে কিন্তু ওগুলোকে জঞ্জাল বলতে পারো, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।”

    জেফরি একটু হতাশ হলো। তাহলে কি রঞ্জু সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট নেই? স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান কি এজন্যেই এতো ধানাইপানাই করছে, সরাসরি হতাশাজনক খবরটা দিতে চাচ্ছে না? একটু পরই হয়তো বলবে, দুঃখিত, ব্ল্যাক রঞ্জু সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাছে কোনো রিপোের্ট নেই। তাহলে সঙ্গে করে যে ম্যানিলা ফোল্ডারটা নিয়ে এলো সেটা কি?

    “কিছু ভাবছো?”

    জেফরি একটু চমকে উঠে বললো, “না।”

    “বলছিলাম, ব্ল্যাক রঞ্জু সম্পর্কে তেমন কোনো রিপোর্ট নেই…বুঝলে?”

    “জি, স্যার।” রিপোের্ট যদি না-ই থাকে তাহলে এতো আগডুম বাগডুম করার দরকার কি, ভাবলো জেফরি বেগ।

    “তবে কিছু দিন আগে…” কথাটা বলেই এমন ভঙ্গি করলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান যেনো দেয়ালেরও কান আছে, আর অন্য কারোর কানে কথাটা পৌঁছাক সেটা চাচ্ছে না ভদ্রলোক। …হাইলি সেন্সিটিভ পলিটিক্যাল একটা রিপোর্টে ব্ল্যাক রঞ্জুর নামটা চলে এসেছে, তানভির আকবরের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালো ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ। “রিপোর্টটা হাইলি ক্লাসিফাইড, প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছিলো। ইওর আইস অনলি? ক্যাটাগরির।”

    একটু আশার আলো দেখতে পেয়েই আবার যেনো সেটা মিলিয়ে গেলো জেফরির কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে গোপন রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সেটা কি তাকে দেখতে দেবে? মনে হয় না।

    “রিপোর্টটা কি দেখা যাবে না, স্যার?” ধৈর্য আর রাখতে পারলো না সে।

    মাথা নেড়ে মুচকি হাসলো তানভির আকবর । “যাবে।” নিজের চেয়ারে আবারো হেলান দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করার মতো ভঙ্গি করে বললো, “তোমার ভাগ্য ভালো। প্রথমত, তোমার বস্ আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাছাড়া আর কিছু দিন পরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার টেকওভার করবে। পলিটিক্যাল গভমেন্ট বিদায় নেবে। আমি হয়তো এখানে বেশি দিন আর থাকবে না। আগের সরকারের নিয়োগ কেয়ারটেকার সরকার রাখবে বলে মনে হয় না। আমি ধরে নিচ্ছি। শীঘ্রই বদলি হয়ে যাচ্ছি। সুতরাং যাবার আগে বন্ধুর একটু উপকার করে গেলোম আর কি,” বলেই হাসতে হাসতে ভদ্রলোক ম্যানিলা ফোল্ডারটা বাড়িয়ে দিলো জেফরির দিকে।

    “থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার,” ফোল্ডারটা হাতে নিয়ে বললো সে। খুলে ফেললো সেটা। বেশ মোটা একটি রিপোর্ট। স্পাইরাল বাইন্ডিং করা।

    “ফাইলটা এখানেই পড়তে হবে,” বললো তানভির আকবর।

    চোখ তুলে তাকালো জেফরি । “জি, স্যার। ফারুক স্যার আমাকে এটা বলেছেন।”

    প্রথম থেকে পড়তে শুরু করলো জেফরি বেগ।

    কয়েক মিনিট পর তার দু’চোখ কুচকে গেলো। একেবারে ডুবে গেলো রিপোর্টের ভেতর। হোমিসাইডের সবচাইতে তুখোড় ইনভেস্টিগেটরকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান চেয়ারে হেলান দিয়ে দেখতে লাগলো। যেনো বাচ্চা কোনো ছেলেকে তার প্রিয় খেলনা উপহার দিয়েছে, এরকম সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে তানভির আকবরকে।

    একটানা বিশ মিনিটের মতো পড়ে গেলো রিপোর্টটা। মাঝেমধ্যে সামনে বসা তানভির আকবরের দিকে চোখ তুলে তাকালো সে। রিপোর্ট পড়া শেষ করে জেফরি দেখতে পেলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ইঙ্গিতপূর্ণ চাহুনি দিচ্ছে।

    “একেবারেই পলিটিক্যাল ইন্টেল। বলতে পারো একটা কন্সপিরেসি বিল্ড আপ হচ্ছে। এরকম কন্সপিরেসি এ দেশে এর আগে হয়েছে কিনা জানি না। এই রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তা যদি ঘটে তাহলে বলতে হবে ঐতিহাসিক একটি ঘটনার অপেক্ষায় আছি আমরা।”

    “স্যার, এই রিপোর্ট প্রাইম মিনিস্টার দেখেছেন?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো তানভির আকবর। “আগেই তো বলেছি, ‘ইওর আইস অনলি’ ক্যাটাগরির ছিলো।”

    “তাহলে সরকারে পক্ষ থেকে কি পদক্ষেপ নেয়া হলো?”

    একটু ভেবে নিলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান। “এরকম রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সরকার কি পদক্ষেপ নেবে সেটা আমাদের জানা সম্ভব নয়, যদি না

    সরকার আমাদেরকে কিছু বলে। গভমেন্টের অনেক অর্গানাইজেশন আছে, সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ নিয়েও থাকে সেটা কাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করবে তা জানা একটু কঠিনই। এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার স্যাপার।”

    “তার মানে বলতে চাচ্ছেন, কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় নি?”

    “সেটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। আমার জানামতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় নি। তবে মনে রাখবে, এ সরকার কয়েক দিনের মধ্যে বিদায় নিচ্ছে, তারা হয়তো ঝামেলাটা কেয়ারটেকার সরকারের জন্যেই রেখে যাবে। এখন তো পুণরায় নিবার্চিত হবার চিন্তায় অস্থির তারা, এসব নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায়?”

    “কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে,” জেফরি জোর দিয়ে বললো।

    “গোপন অপারেশনের কথা বলছো?”

    “জি, স্যার।”

    মাথা দোলালো তানভির আকবর। “এরকম কিছু হচ্ছে না সেটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। এরকম কিছু হলে আমাদেরকে অ্যালার্ট করে দেয়া হতো।”

    “তাহলে?” কথাটা জেফরির মুখ ফসকে বের হয়ে গেলো।

    “রিপোর্টটা তো দেখলে, এখন তোমার তদন্তের সাথে মিলিয়ে দ্যাখো, আসলে ঘটনা কি। আমার মনে হয় এটা জানার পর তোমার তদন্তে বেশ উপকারে আসবে।”

    “অবশ্যই, স্যার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”

    “ইটস ওকে।” কথাটা বলেই জেফরির কাছ থেকে ফোল্ডারটা নিয়ে নিলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান।

    “স্যার?” জেফরি বললো।

    জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আকবর সাহেব।

    “রিপোর্টে যাদের নাম আছে, মানে, হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মচারী…তাদেরকে কি আমি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবো?”

    ভুরু কুচকে কিছুক্ষণ ভেবে নিলো তানভির আকবর। “আনঅফিশিয়ালি।” ফাইলটা একটু উপরে তুলে ধরলো ভদ্রলোক। “ঠিক এই ফাইলটা যেভাবে দেখলে। বাট, বি কেয়ারফুল। হাইলি সেন্সেটিভ অ্যান্ড ডার্টি পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স। কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ। যে কথা রিপোর্টে লেখা আছে সেটা যেকোনো ধূলার উপন্যাসের চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর।

    বিশাল একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তাহলে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }