Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প399 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কন্ট্রোল – ৫০

    ফারহান ওমর বিশ্বাসই করতে পারছে না ডিবি পুলিশ তার ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে। তাদের কাছে নাকি খবর আছে এই ফ্ল্যাটে অবৈধ মাদকদ্রব্য রাখে সে!

    “ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হু আই অ্যাম?”

    লোকটা যে মদ্যপ সেটা তার ইংরেজি শুনে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল বাস্টার্ড। বাঙালি মদ খেলে ইংরেজ চরিত্রে অভিনয় করে!

    পিস্তলটা তাক্ করলো লোকটার কপাল বরাবর। “ঝামেলা করবেন না! চিৎকার করলেই গুলি করে দেবো…তল্লাশী করতে দিন।”

    “প্লিজ! প্লিজ…পিস্তলটা সরান!” বলল জাহান গ্রুপের লোকটা।

    “চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসে থাকুন।”

    “আপনি এভাবে আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে তল্লাশী করতে পারেন না। আপনার কাছে ওয়ারেন্ট আছে?”

    “বানচোদ!” দাঁতে দাঁত পিষে বলল বাস্টার্ড। “চুপচাপ সোফায় বস্!” পিস্তলটা এবার বুকে ঠেকালো। “এটা দিয়ে গুলি করলে শব্দ হয় না, বুঝতে পেরেছিস?”

    হতবাক হয়ে গেল আলভীর ঘনিষ্ঠ লোকটি। এই জীবনে কেউ কখনও তার সঙ্গে এভাবে কথা বলেনি। এমন কী আলভীও না!

    “আমি কিছু প্রশ্ন করবো, সত্যি সত্যি জবাব দেবেন,” শীতল কণ্ঠে বলল এবার, আবারো আপনি সম্বোধনে ফিরে এলো। “মিথ্যা বললে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করবেন।”

    ভয়ে ঢোক গিলল ফারহান। তার মাথায় ঢুকছে না, এসব কী হচ্ছে! “তার আগে বলুন আপনাকে কে বলল আমার ফ্ল্যাটে ড্রাগ আছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”

    “আমি আমাদের ইন্টেলিজেন্সের কথা আপনাকে বলে দেবো?” মুচকি হাসলো সে। “চুপচাপ বসে থাকুন। আমার প্রশ্নের বাইরে একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের করবেন না।”

    ফারহান এমন শীতল চাহনি আর শান্ত নার্ভের কাউকে অস্ত্র হাতে দেখেনি। চুপচাপ লিভিং রুমের সোফায় বসে পড়লো সে।

    “আলভী কোথায় গেছে?” কবরস্তান থেকে ফিরে আসার পরদিনই ইউটিউবের সেই নিউজ চ্যানেলের বরাতে জানতে পেরেছিল আলভী করিম দেশের বাইরে চলে গেছে।

    বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। এবার সত্যি সত্যি একটা ভয় জেঁকে বসলো তার ভেতরে। এই লোক সম্ভবত ডিবির কেউ না! তাহলে কে?!

    “আমি জানি আপনি সব জানেন,” পিস্তলটা আবারো তাক্ করলো লোকটার দিকে। “বলুন?”

    নিশ্বাস দ্রুত হয়ে গেল ফারহান ওমরের। কী বলবে বুঝতে পারছে না। এই লোক তাহলে মাদকদ্রব্য তল্লাশী করতে তার ফ্ল্যাটে হানা দেয়নি, এসেছে আলভীর খোঁজে! কে এই লোক?!

    “তাড়াতাড়ি বলুন,” তাড়া দিলো বাস্টার্ড। “এটাই একমাত্র প্রশ্ন না…আরো অনেক কিছু বলতে হবে আপনাকে।”

    ফ্ল্যাটের মালিক ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালো অস্ত্রধারীর দিকে। “আপনি কে, ভাই?”

    “একদম চুপ। আমি তিন গুণবো…” পিস্তলটা জিম্মির হাঁটুর দিকে তাক্‌ করলো এবার। “মুখ না খুললে এখানে গুলি করে দেবো।”

    হুমকিটা এত শান্ত কণ্ঠে দেয়া হলো যে ফারহান ওমরের বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেল।

    “এক…”

    “প্লিজ!” দু হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করলো জাহান গ্রুপের লোকটা। “ও এখন দুবাইতে আছে।”

    “দুবাইর কোথায়?”

    ফারহানের রীতিমতো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে, শার্টের ভেতরে ঘেমেও গেছে। জামা-কাপড় ছাড়ার আগেই ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েছে এই লোক। “ফ্-ফোন দেখে বলতে হবে!” তোতলালো একটু।

    “দেখুন।”

    ফারহান ওমর কম্পিত হাতে পকেট থেকে মোবাইলফোনটা বের করলো। আলভী এখন যেখানে থাকে সেই ঠিকানা এই লোককে বলে দিলে কীই বা করতে পারবে? দুবাইতে গিয়ে ধরবে? অসম্ভব। ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না। “মুখে বলবো?” ফোনের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে তাকালো ফারহান ওমর।

    পিস্তলটা বাঁ-হাতে নিয়ে নিলো বাস্টার্ড, ডানহাতে পকেট থেকে মোবাইলফোনটা বের করে রেকর্ডিং অপশনে গিয়ে ফোনটা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিলো। “বলুন।”

    “দুবাইর জুমেইরাহ্ বিচে অ্যাড্রেস বিচ রিসোর্টে ওর একটা স্কাই ম্যানশন পেন্থাউজ আছে…সেভেনটি থার্ড থেকে ফিফথ ফ্লোর পর্যন্ত। জিরো জিরো সিক্স।”

    ত্রিপলেক্স পেন্থাউজ? অবাক হলো বাস্টার্ড।

    ফোনটার রেকর্ডিং অপশন বন্ধ করে সোফার হাতলের উপরে রাখলো সে। “এবার বলুন, রেবাকে খুন করেছে কে?”

    রেবা?! রীতিমতো একটা ঝাঁকুনি খেলো ফারহান ওমর। হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর পাঠিয়েছে একে? ওদের কেউ! ডিবির ভেস্টটার দিকে তাকালো ভালো করে।

    “কী হলো?”

    বাস্টার্ডের কথায় চমকে উঠল আলভীর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। “আমি আসলে-” কথাটা শেষ করতে পারলো না ফারহান ওমর, পিস্তলটা কপাল বরাবর উঠে আসতেই থমকে গেল।

    “আমি কি আবারো তিন গুণবো?” লোকটার দিকে স্থির আর শীতল চোখে তাকিয়ে বলল কথাটা।

    মাথা দোলালো ফারহান। “আ-আ-আলভী!” তোতলালো আবারো।

    “সেটা আমি জানি…খুনটা কে করেছে?”

    জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো ফারহান। “এটা তো আমি জানি না!” তীব্র ভয় পাচ্ছে সে। এই ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার কথা জেনে গেলে তো বিপদ!

    “তাহলে কে জানে?”

    নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করলো আলভীর উপদেষ্টা। “আকবর হাসান…ও জানে। এসব কাজ ও হ্যান্ডেল করে।”

    “আর আপনি কী করেন?”

    পিট পিট করে তাকালো ফারহান। “আ-আমি… লিগ্যাল…”

    “এবার গুণতে শুরু করলে কিন্তু থামবো না!”

    “ভাই!” দম ফুরিয়ে যেন হাঁপাতে লাগলো। “এটা আসলেই আকবর সাহেব জানে, আমি শুধু নামটা জানি…কই থাকে কিচ্ছু জানি না।”

    “কী নাম?”

    “মঙ্গু।”

    বাস্টার্ডের কাছে মনে হলো লোকটা সত্যিই বলছে। “আকবর হাসান কোথায় থাকে?”

    কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকার পর ফারহান ওমর বলল, “ছয় নাম্বার রোডে।”

    অবাক হলো বাস্টার্ড। “গুলশানেই?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো লিগ্যাল অ্যাডভাইজার।

    “আপনার সঙ্গে ভালোই যোগাযোগ আছে তার, না?”

    আবারো চোখ পিট পিট করে তাকালো লোকটা।

    “ফ্যামিলি নিয়ে থাকে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    একটু ভাবলো বাস্টার্ড। “জেল থেকে বের হবার পর দেখা হয়েছিল?”

    “হ্যাঁ।”

    “কোথায়?”

    “এখানেই এসেছিল।”

    “আপনার এখানে প্রায়ই আসে?”

    “না, না,” বলল লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। “তার মামলাটা নিয়ে কথা বলার জন্য…”

    সত্যিটা হলো. আকবর হাসান পঁচিশ লাখ নিয়ে ডাক্তারকে মাত্র দশ লাখে ম্যানেজ করতে গেছিল, বাকি পনেরো লাখ থেকে তাকে একটা অংশ ভাগ দিতে বাধ্য করেছিল।

    চট করেই একটা বুদ্ধি চলে এলো বাস্টার্ডের মাথায়। “ওকে এখানে ডাকুন তাহলে।”

    “কী?!” বিস্ময়ে বলল ফারহান ওমর।

    “ফোন করে এখানে আসতে বলুন। বলবেন, একটা জরুরি ব্যাপারে কথা আছে, ফোনে বলা ঠিক হবে না।”

    “এত রাতে আসতে বলবো?”

    “কাছেই তো থাকে, সমস্যা কী?”

    “না, মানে…আগে কখনও এত রাতে তাকে ডাকিনি।”

    “এখন ডাকবেন।” বাস্টার্ড এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছে না। এখান থেকে চলে যাবার পরই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবে, সতর্ক হয়ে যাবে বাকিরা। তখন তাদের কারোর নাগাল পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

    “ফোন করুন, ডাকুন ওকে,” আবারো আদেশের সুরে বলল।

    “আপনি আসলে কী চান, ভাই?” অসহায়ের মতো বলল ফারহান। “আলভী কোথায় থাকে সেটা তো বললামই!”

    তার দিকে শীতল চোখে চেয়ে রইলো বাস্টার্ড। পিস্তলটা এখনও তাক্ করে রেখেছে। “স্পিকার মোডে দিয়ে কল করুন।”

    অগত্যা ইচ্ছের বিরুদ্ধে জাহান গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার কল করলো। তিন বার রিং হবার পরই কলটা রিসিভ করা হলো ওপাশ থেকে।

    “কী ব্যাপার, এত রাতে?” ভারি আর ফ্যাসেফেসে কণ্ঠে বলল আকবর হাসান। “বসের কোনো মেসেজ আছে নাকি?”

    ফারহান ওমরকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাস্টার্ড : হ্যাঁ। মেসেজ আছে।

    “হুম…সেরকমই।”

    “বলেন তাইলে?”

    “না মানে…” বাস্টার্ডের দিকে তাকালো। “…ফোনে বলা ঠিক হবে না।”

    “ওহ্,” সদ্য জেল থেকে মুক্তি পাওয়া লোকটি বলল। “তাহলে কাল আসবো আপনার ওখানে?”

    আবারো অস্ত্রধারীর দিকে তাকালো ফারহান। ইশারাটা বুঝতে পারলো সে। “ক্-কাল না… আজকে আসুন।”

    “এমার্জেন্সি মনে হচ্ছে?”

    “হুম।”

    “কিছু হয়েছে নাকি?”

    “আসেন, সব বলবো,” ম্রিয়মান কণ্ঠে বলল ফারহান ওমর।

    “ঠিক আছে।”

    কলটা শেষ হবার পর বাস্টার্ড তার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে মৃদুলকে কল করলো। “আকবর হাসান নামের একজন আসবে একটু পরই… দারোয়ানকে দিয়ে গেট খোলাবে, তোমাকে যেন না দেখে ঐ লোক। ঢোকার সাথে সাথে আমাকে একটা মিস কল দিও।” ফোনটা রাখার পর দেখতে পেলো আলভীর অ্যাডভাইজার তার দিকে চেয়ে আছে অবাক হয়ে।

    “আপনারা কারা, ভাই?” ভয়ার্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো।

    “আপনারা যাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ভাবেন সবকিছু করতে পারবেন, আমরা তাদের কেউ না।”

    কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না ফারহান ওমর। ডিবি পোশাকধারীর চাহনি দেখে অবাক হলো, ঘরের চারপাশটা দেখে নিচ্ছে।

    বাস্টার্ড একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল দ্রুত। “আপনার সেকেন্ড ফোনটা দিন,” হাত বাড়ালো সে।

    ফারহান ওমর বুঝতে পারলো না লোকটা কী করতে চাচ্ছে। পকেট থেকে তার দ্বিতীয় ফোনটা বের করে দিলো আগন্তুকের হাতে।

    “চুপচাপ বাথরুমে চলে যান, আমি না ডাকলে বের হবেন না আর ওখানে গিয়ে কোনো রকম আওয়াজ করার চেষ্টা করবেন না।”

    পিস্তলের মুখে আলভীর অ্যাডভাইজারকে লিভিংরুমের অ্যাটাচড বাথরুমের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো সে। এখন অপেক্ষার পালা। তবে তার ধারণা খুব বেশি সময় লাগবে না। ছয় নাম্বার রোডে থাকে লোকটা, রাতের এই সময়ে পায়ে হেঁটেই চলে আসতে পারবে ছয়-সাত মিনিটে।

    যতোটা কঠিন ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক সহজেই আলভীর ক্লোজ অ্যাসোসিয়েট্সদের নাগাল পেয়ে গেছে সে। একইসঙ্গে ফারহান ওমর আর আকবর হাসানকে পাওয়াটা বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে। তারপরও জানে, বড়জোর কালকের দিন পর্যন্ত সময় পাবে, এর মধ্যে ঐ খুনির নাগাল পাওয়া সম্ভব কি না জানে না। তবে একটা চেষ্টা করে দেখবে।

    একটু পর তার ফোনে মিসকলটা এলো, সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো সে, দরজার কাছে গিয়ে চোখ রাখলো পিপহোলে। মিনিটখানেক পরই লিফটের দরজাটা খুলে গেল, বের হয়ে এলো চল্লিশের কোঠায় এক লোক। প্ৰায় ফারহান ওমরের বয়সি। একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট গায়ে। কলিং বেলটা বাজালো সে।

    বাঁ-হাতে দরজার নব ধরে আস্তে করে খুলে ফেলল বাস্টার্ড, ডান হাতে তার পিস্তলটা।

    আকবর হাসান ডিবির ভেস্ট পরা একজনকে দেখে ভিরমি খেলো কিন্তু কিছু বলার আগেই দেখতে পেলো তার দিকে পিস্তল তাক্ করা আছে।

    “চুপচাপ ভেতরে আসুন,” বলল সে। “উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টাও করবেন না,” পিস্তলটা এবার আকবর হাসানের বুকের কাছে ঠেকালো।

    লোকটা ভড়কে গেল পুরোপুরি। ঠিক যেমনটা ক-দিন আগে ভড়কে গেছিল হোমিসাইডের স্টিঙ্গ অপারেশনের সময়। কিন্তু জেল থেকে বের হবার পর নিজেদের লোকের ফ্ল্যাটে এরকম কিছু আশা করেনি। পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সে। পিস্তলের মুখে ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধ্য হলো। “ফারহান কোথায়?” কম্পিত কণ্ঠে জানতে চাইলো।

    “সোফায় বসুন,” প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল বাস্টার্ড।

    আকবর হাসান বিস্ফারিত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে অনেকটা সম্মোহিতের মতো বসে পড়লো সোফায়।

    “কথাবার্তা শুরু করার আগে বলে রাখি, এই পিস্তল দিয়ে গুলি করলে কোনো শব্দ হয় না…বুঝতেই পারছেন, উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করলে গুলি করতে আমি দু বার ভাববো না।”

    কথাটা আরো বেশি ভড়কে দিলো লোকটাকে। এসব কী হচ্ছে! বার বার তার সঙ্গেই কেন হচ্ছে! ডিবির ভেস্ট পরা এই লোক কী বলছে বুঝতে পারলো না। জীবনে প্রথম বারের মতো জেলে গেছিল, যদিও সেটা মাত্র কয়েক দিনের জন্য কিন্তু সেটাই তার কাছে বিরাট বড় ধাক্কা ছিল। মিডিয়াতে খবরটা চাউর হয়ে যাবার পর আত্মীয়-স্বজন আর পরিবারের লোকজনদের কাছে মুখ দেখানোই দায় হয়ে পড়েছে। জামিনে মুক্তি পাবার পর নিজের ফ্ল্যাট আর এখানে আসা ছাড়া আর কোথাও যায়নি। এখন ডিবির এই লোকটা ফারহান ওমরকে দিয়ে তাকে এখানে ডেকে এনেছে কী উদ্দেশ্যে?

    “আমি যা জানতে চাইবো, সব ঠিক ঠিক বলবেন। মিথ্যে বললে এই ঘর থেকে বের হতে পারবেন না।”

    হুমকিটা আমলে না নিয়ে পারলো না আকবর হাসান। নির্ঘাত তার শনির দশা চলছে। হাতের গমেড পাথরের আঙটিটার দিকে তাকালো। বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য এক জ্যোতিষী এটা দিয়েছিল। সে-ও এতদিন বিশ্বাস করে এসেছিল এই পাথর তাকে বিপদ থেকে বাঁচায়। কিন্তু আজ প্রথম বারের মতো এসব নিরেট পাথরের আদৌ কোনো কারিকুরি আছে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলো তার মধ্যে।

    “রেবাকে মরেছে কে?”

    হতবিহ্বল অবস্থায় এই প্রশ্নটা তাকে আরো বেশি নাড়িয়ে দিলো। হোমিসাইডের জেফরি বেগের প্রেমিকার কথা জানতে চাইছে ডিবির লোকটা?! “আমি জানি না।”

    “ফারহান ওমর তাহলে মিথ্যে বলেছে?”

    গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো আকবর হাসান। “ও কোথায়?” কোনোমতে বলতে পারলো।

    “আছে,” পিস্তলটা বুক বরাবর তাক্ করে বলল। “আপনি আগে মুখ খুলুন, তারপর দুজনকে একসঙ্গে করা হবে।”

    ভুরু কুঁচকে গেল জাহান গ্রুপের ট্রাবলশুটারের। “আপনি কে, একটু বলবেন কি?” নরম সুরে জানতে চাইলো। “আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে নেগোশিয়েশন করতে “

    বাস্টার্ড তার পিস্তলটা আকবর হাসানের কপালে ঠেকালো। “আমি প্রশ্ন

    করবো আপনি জবাব দেবেন। সত্যি না বললে এই অস্ত্র থেকে গুলি বের হবে, বুঝতে পেরেছেন?”

    আকবর হাসান ভয়ার্ত চোখে তাকালো।

    “রেবাকে কে মেরেছে?”

    “আলভী!”

    মাথা দোলালো বাস্টার্ড। “কাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছে?”

    “আমি কী করে বলবো?…আমি তো তখন জেলে।”

    “খুনি কে সেটা আপনি জানেন। তার নাম বলুন…কোথায় থাকে, কিভাবে তাকে পাবো?”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো আকবর হাসান। জীবনে বেশ কিছু পেশাদার খুনি দেখেছে কাছ থেকে কিন্তু ডিবির ভেস্ট পরা এই লোককে দেখে তার ভেতরে ভয়ের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। অজানা আশঙ্কা দানা বাঁধছে মনে। এই লোক কী করে ডিবি”র হয়? ওদের কেউ হলে কি জাহান গ্রুপের দু দুজন কর্মকর্তাকে এভাবে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করতে পারতো? লোকটা আবার জানতে চাইছে রেবা নামের ঐ মেয়েটার কথা! এই লোক কি তাহলে হোমিসাইডের জেফরি বেগের ঘনিষ্ঠ কেউ?

    “বলুন, আমার হাতে সময় নেই,” তাগাদা দিলো বাস্টার্ড।

    “মঙ্গুই করেছে…” অবশেষে সত্যিটা বলল, কারণ ফারহান এই লোককে কী বলেছে সে জানে না। সেক্ষেত্রে সত্যিটা বলা-ই বেশি নিরাপদ।

    “ওকে আমার চাই,” শান্ত কণ্ঠে বলল বাস্টার্ড। “আমার হাতে ওকে তুলে না দিলে আপনাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।”

    এই প্রথম আকবর হাসানের মনে হলো এই লোক সম্ভবত ফারহানকে মেরে ফেলেছে! ভাবনাটা মাথায় আসতেই বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেল তার। রীতিমতো হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো। ঠিক তখনই পাশের বাথরুম থেকে পুরুষ মানুষের হাঁচি দেবার শব্দ হলো একটা!

    বাস্টার্ড তাকালো সেদিকে, তারপর জিম্মির দিকে। “বলুন?”

    অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো আকবর হাসান। ফারহান বেঁচে আছে! এই লোকটা ওকে বাথরুমে আটকে রেখেছে!

    “ও থাকে কেরাণীগঞ্জে।”

    “পার্টিকুলার ঠিকানাটা দিন?”

    “ও কোথায় থাকে সেটা আসলে কেউই জানে না, ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রফেশনাল খুনি…কখন কোথায় থাকে সেটা আমরা কী করে জানবো?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো বাস্টার্ড। কথাটা সম্ভবত সত্যি। একজন পেশাদার খুনি, জাহান গ্রুপের হয়ে কাজ করে, তার বাড়ির খবর কে রাখে। “তাহলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন কিভাবে…ফোনে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো আকবর হাসান।

    “ওর নাম্বার আপনার কাছে আছে?”

    “জি।”

    “আপনার ফোন থেকে ওর নাম্বারটা বের করে আমাকে দেখান।”

    আকবর হাসান পকেট থেকে ফোন বের করে কললিস্ট থেকে নাম্বারটা দেখালো। “এই যে…”

    ফোনের ডিসপ্লেটা দেখলো সে। বাঁ-হাত দিয়ে সেটা নিয়ে নিলো আকবর হাসানের কাছ থেকে। শেষবার কল করেছিল সাত-আটদিন আগে! তারপর দুটো মেসেজ। “ওর সঙ্গে দেখা করেন কোথায়… কিভাবে?”

    প্রশ্নটা যেন বুঝতে পারলো না ট্রাবলশুটার।

    “ওকে নিশ্চয়ই চেকে পেমেন্ট করেন না, ক্যাশ দেন…লেনদেনটা কিভাবে করেন? আপনিই করেন মনে হয়…ডাক্তারকে ঘুষটা আপনিই দিতে গেছিলেন।”

    কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিলো আকবর হাসান। “ওকে মেসেজ দিলেই ও দেখা করতে চলে আসে…যখন যেখানে বলি সেখানেই…”

    “শেষবার কোথায় দেখা করেছিলেন?”

    “জাহান সিটিতে…জেড ব্লকে একটা লেক আছে, ওখানে।”

    “ওখানে কেন?”

    “ওটাই শেষ ব্লক, জায়গাটা এখনও ফাঁকা।

    কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিলো সে। “আপনার আর কোনো ফোন আছে?”

    “না।”

    বাস্টার্ড জানে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো সময় চলে গেছে, আর বেশিক্ষণ এখানে থাকা ঠিক হবে না। আকবর হাসানের দিকে তার ফোনটা বাড়িয়ে দিলো। “ওই লোককে একটা মেসেজ করুন…আগামিকাল সকাল দশটায়, জাহান সিটির জেড ব্লকে লেকের পাশে দেখা করে যেন।“

    জাহান গ্রুপের ট্রাবলশুটার ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ লিখে দেখালো বাস্টার্ডকে, তার ইশারা পেয়ে সেন্ড করে দিলো সেটা।

    দু তিন মিনিট অপেক্ষা করার পর বলল, “এবার ঐ ঘরে চলে যান, “ ফোনটা আবারো সেই লোকের হাত থেকে নিয়ে ডান দিকে একটা ঘরের দরজা দেখিয়ে দিলো। সম্ভবত ওটা বেডরুম।

    আকবর হাসান উঠে দাঁড়ালো, চুপচাপ দরজা খুলে ঢুকে পড়লো ভেতরে। তার পেছন পেছন ঘরে ঢুকলো বাস্টার্ডও, আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো সে।

    “পেছনে তাকাবেন না,” শান্ত কণ্ঠে বলল। পিস্তল ধরা হাতটা উপরে উঠে এলো, তাক্ করলো আকবর হাসানের মাথার পেছনে।

    থুতু ফেলার মতো একটা শব্দ হলো কেবল।

    আলভীর ঘনিষ্ঠ লোকটি মুখ থুবড়ে পড়ে গেল মেঝেতে। ধুপ করে একটা শব্দ, সেই সঙ্গে অস্ফুট গোঙানি, তারপরই শরীরটা কেঁপে উঠল শেষ বারের মতো, নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো ঘরের মেঝেতে।

    লোকটার পকেট চেক করে দেখলো সত্যি সত্যি আর কোনো ফোন নেই।

    ঘর থেকে বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো সে। এবার অ্যাটাচড বাথরুমের দরজায় টোকা মারলো : “দরজা খুলুন।”

    ভেতর থেকে দরজাটা খুলে দিলো ফারহান ওমর। তার চোখেমুখে জিজ্ঞাসা।

    “আমি এখন চলে যাবো… যাবার পর কাউকে ফোন করবেন না। কিচ্ছু বলবেন না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো লোকটা।

    “ঘুরে দাঁড়ান।”

    একটু অবাক হলেও কথামতো ঘুরে দাঁড়ালো ফারহান ওমর।

    আর একটাও শব্দ ব্যয় করলো না বাস্টার্ড, গুলি চালালো লোকটার মাথার পেছনে। আগেরজনের মতোই গোঙানি দিয়ে বাথরুমের দেয়ালে আছড়ে পড়লো সে। মৃত্যু নিশ্চিত কি না সেটা পরখ করে দেখার দরকারও মনে করলো না, দ্রুত বের হয়ে গেল ফ্ল্যাট থেকে।

    এই ঘরের কোনো কিছুই সে স্পর্শ করেনি-দুজনের ফোন তিনটা ছাড়া। সেই ফোনগুলো তার সঙ্গেই আছে এখন।

    অধ্যায় ৫১

    জাহান গ্রুপ কি আবারো কোনো মেয়েকে সরিয়ে দিতে চাইছে নাকি!

    রাতের বেলায় মেসেজটা পেয়ে মঙ্গু বেশ অবাক হয়েই ভেবেছিল। বাঁকা হাসি ফুটে উঠেছিল তার ঠোঁটে। এখন সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন

    কাজের জন্য আকবর হাসানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে।

    জাহান গ্রুপের মতো প্রভাবশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু আগে কখনও কোনো মেয়েকে হত্যা করার কাজ দেয়া হয়নি তাকে। হুট করেই সপ্তাহখানেক আগে প্রথমবার এরকম কাজ দেয়া হলে অবাক হয়েছিল। ধরেই নিয়েছিল কাজটা বাপ-বেটার যেকোনো একজনের তরফ থেকে এসেছে।

    এইসব কাজকে এখন কন্ট্রাক্টরি ব্যবসার মতোই দেখে সে। যে বাজেট দেওয়া হয় তার থেকে যতোটুকু সম্ভব কম খরচ করে কাজ করার চেষ্টা করে। হাজার হোক তাদের মতো লোকজন তো শেষ পর্যন্ত টাকার জন্যই কাজ করে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে, যতো উপরের স্তরের মানুষজনকে ম্যানেজ করে কাজ করা হয় ততই খরচ বেড়ে যায়। নিচুস্তরের মানুষজনদের সঙ্গে কাজ করলে লাভ বেশি। এরা অভাবী, বড় কিছু চাওয়ার মতো সাহসও দেখায় না।

    তাকে যেভাবে বলা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই কাজটা করেছিল। একেবারে নিখুঁত ছিল তার পরিকল্পনা। আর সবকিছু ম্যানেজ করতে খুব একটা বেগও পেতে হয়নি।

    এই ভবনে কামারা বিডি নামে ফ্ল্যাট ভাড়া দেবার প্রতিষ্ঠান আছে, ওরা তিন দিনের নিচে ফ্ল্যাট ভাড়া দেয় না। আকবর হাসানই বলে দিয়েছিল তাকে ওখানে ওঠার জন্য। তার কাছে তো মাস্টার-কি আছেই, সেটা দিয়ে খুব সহজে মেয়েটার দরজার লক খোলা সম্ভব। সম্ভবত তার এই মাস্টার-কি দিয়ে দুনিয়ার অর্ধেক দরজার তালা খোলা যাবে!

    ঐদিন মেয়েটা তার ঘর থেকে বের হয়ে গেছিল আটটার পর পর। দু দিন ধরে জানালার পাশে বসে মঙ্গু দেখেছে, ডিনারের পর রাত দশটার দিকে এই ফ্ল্যাটের আরো দুই তরুণীর সঙ্গে বাইরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে। ভেবেছিল ঐদিনও একই কাজ করবে কিন্তু আগেভাগেই বের হয়ে যায় মেয়েটা। সে আর ঝুঁকি নেয়নি, এরপর যদি বের না হয়? আর রাতের বেলায় ফিরে আসার পর ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে রাখার সম্ভাবনা অনেক—যেহেতু মেয়েটা একা থাকে ফ্ল্যাটে। সেটা হলে মাস্টার-কি দিয়ে লকটা খুললেও দরজা খোলা যাবে না।

    এরপরই নিজের ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায় ব্যাগটা নিয়ে। মাস্টার-কি দিয়ে খুব সহজেই দরজা খুলে ঢুকে পড়ে ফ্ল্যাটে, ভেতর থেকে দরজাটা লক করে ােয়—কারণ মেয়েটা চাবি দিয়ে লক খুলে ঢুকবে। এই লকগুলো-ই বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির দরজায় ব্যবহার করা হয়—ভেতর থেকে লক-বাটন প্রেস করে লক করা যায় কিন্তু বাইরে থেকে খুলতে গেলে চাবি লাগে।

    খুব দেরি করে ফিরে এসেছিল মেয়েটা। মঙ্গু পুরোটা সময় গেস্টরুমের অন্ধকার বেলকনিতে বসে অপেক্ষা করেছে তার জন্য। নিচের রাস্তায় তিন মেয়েকে ফিরে আসতে দেখে কমন-ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তাড়াহুড়া করেনি একটুও। রাত আরো গাঢ় হলে, আশেপাশের সবাই শুতে গেলে বের হয়ে আসতো।

    সেটা অবশ্য হয়নি

    মেয়েটা বেশ দেরি করে, রাত বারোটার পর ফিরে এসেছিল ফ্ল্যাটে। এরপরই বিপত্তিটা ঘটে—কোনোভাবেই হাঁচিটা আটকাতে পারেনি সে। সম্ভবত দুনিয়ার কেউই সেটা করতে পারে না।

    নির্জন ফ্ল্যাটে একটা বাথরুমের ভেতর থেকে পুরুষ মানুষের হাঁচির শব্দ শুনে মেয়েটা পুরোপুরি ভড়কে গেছিল।

    “কে?!” ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেছিল ড্রইংরুম থেকে

    মঙ্গু বুঝে যায় আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বের হয়ে আসে, দেখতে পায় বিস্ফারিত চোখে মেয়েটা চেয়ে আছে তার দিকে। তীব্র ভয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিল, চিৎকার দেবারও ক্ষমতা ছিল না। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

    কিন্তু মঙ্গু তাকে ধরার আগেই সম্বিত ফিরে পায়, একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে চলে যায় বেডরুমে, মেয়েটার পিছু পিছু দৌড়ে গেলেও অল্পের জন্যে ধরতে পারেনি। অ্যাটাচড বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সোনিয়া।

    বাথরুমের পিভিসি দরজাটা দেখে মুচকি হেসেছিল সে। পর পর দুটো লাথি মারে সেই দরজায়। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে ওঠে। ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রেখেছিল বলে খুলতে একটু বেগ পেয়েছিল।

    কাঁধ দিয়ে কয়েকটা ধাক্কা মারার পর দরজার ছিটকিনিটা খুলে আসে চৌকাঠ থেকে, কানে ফোন চেপে রাখা মেয়েটি আর্তচিৎকার দেয়। এরপরই মঙ্গু তার পিস্তলটা বের করে আনে এক হাতে, অন্য হাতে মেয়েটার মুখ চেপে ধরে। ভাগ্য ভালো তার, মেয়েটা যাকে ফোন করেছিল সে কল রিসিভ করেনি।

    পিস্তলের মুখে ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটাকে খুব সহজেই কাবু করতে পেরেছিল। দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখলে ফ্ল্যাটটা বলতে গেলে সাউন্ডপ্রুফ হয়ে যায়-এটা তাকে আগেই বলে দিয়েছিল আকবর হাসান। সেজন্যেই মেয়েটাকে খুন করার আগে একদফা ধর্ষণ করে নেয় হাত-পা-মুখ না বেঁধেই। একেবারে সত্যিকারের ধর্ষণের মজা পেয়েছিল সে।

    অনেকদিন পর!

    কারওয়ান বাজারে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের চেলা হিসেবে কাজ করার সময় সে আর তার দোস্ত গিট্টু নাসির প্রথমবার ধর্ষণ করেছিল রেললাইনের পাশে। ওখানে তখন শত শত ঝুপড়ি ঘর ছিল। ঝুপড়ি নামের একটা গ্রুপও ছিল সেখানে। ওই মেয়েটার নাম ছিল সালেহা। গ্রাম থেকে সদ্য এসেছিল ঢাকায়, উঠেছিল তার এক দূরসম্পর্কের খালার কাছে। গিট্টু আর তার চোখে পড়ে গেছিল অল্প বয়সি মেয়েটা। খালা তাদেরকে খুব ভয় পেতো, প্রস্তাবটা পেয়ে অনেক ভেবে শেষে রাজি হয়ে যায়। নিজের ঘরে ওদেরকে ঢুকতে দিয়ে চুপচাপ বের হয়ে যায় মহিলা। একটা চাকু গলার কাছে ধরে মেয়েটাকে বশে আনে গিট্টু আর সে, তারপর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। খুব বেশি বাধা দিতে পারেনি ভীতসন্ত্রস্ত মেয়েটি।

    তবে বনানীর মেয়েটা দিয়েছিল! শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করেছিল নিজেকে রক্ষা করার জন্য।

    আরে মাগি, বড়লোকের সঙ্গে শুইছোস না? তোর আবার কিসের সতীগিরি? মেয়েটার কাছ থেকে বাধা পেয়ে আরো বেশি ক্ষেপে গেছিল সে। পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। মেয়েটা হাতজোড় করে বলেছিল, তার পেটে তিনমাসের বাচ্চা আছে। তিন মাস? এটা কোনো ব্যাপার! অনেকে তো টেরই পায় না! সে যদি জোড়াজুড়ি না করে, আপসে কাজটা করতে দেয় তাহলে পেটের বাচ্চাটা নষ্ট হবে না। একদম ঠিক থাকবে-আশ্বস্ত করে বলেছিল। মেয়েটা অনেক অনুনয় আর কান্নাকাটি করেও তার মন গলাতে পারেনি। আরে শালি, তুই তো একটু পরই মরবি, মরার আগে মজা দিয়ে যা! সেই সঙ্গে তুই-ও এই দুনিয়াতে শেষবারের মতো মজা নিয়ে নে!

    মেয়েটাকে প্রথম থেকেই ভয় দেখিয়েছিল চিল্লাফাল্লা করলে খুন করে ফেলবে। এই ভয়ে পরীর মতো সুন্দর অল্প বয়সি মেয়েটা জোর করে তার সমস্ত ভয়, কান্না আর আর্তনাদ চেপে রেখেছিল। তারপরও করার সময় একহাতে মেয়েটার মুখ চেপে রেখে অন্যহাতে পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছিল মাথায়।

    একবার ধর্ষণ করার পরই দেখে মেয়েটা তীব্র ভয় আর যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। বিছানা থেকে উঠে সিগারেট ধরায় তখন। বেশ ফুর ফুরে মেজাজে ছিল। কতো সহজ কাজ। এত সহজ আর মজার কাজ কমই জোটে।

    পরিকল্পনামতোই সবকিছু এগোচ্ছিল কিন্তু ধর্ষণের পরই বাড়ির নিচে পুলিশের গাড়ি দেখে ভড়কে গেছিল সে। ঐ মুহূর্তটা ছিল ভয়ঙ্কর টেনশনের। কী করবে বুঝতে পারছিল না। মেয়েটাকে তখনও মেরে ফেলেনি, এই অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে দোতলার ফ্ল্যাটে চলে যাওয়াও সম্ভব ছিল না।

    ভেবেই পাচ্ছিল না পুলিশের গাড়ি কেন এলো, কে পাঠালো ওদেরকে? এক পর্যায়ে আকবর হাসানকে ফোন দেবার কথাও মাথায় আসে তার কিন্তু সেটা আর দিতে হয়নি, একটু পরই পুলিশের গাড়িটা চলে গেছিল।

    এরপর দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করার ইচ্ছেটা জলাঞ্জলি দিয়ে কাজে নেমে পড়ে। মেয়েটার জ্ঞান আবার ফিরে এসেছিল, তাই পকেট থেকে ক্লোরোফর্মের শিশিটা বের করে রুমালে ঢেলে নেয়, সেটা মুখে চেপে ধরতেই দ্বিতীয় বারের মতো জ্ঞান হারায়। সেই অবস্থায় মেয়েটার ঘাড় মটকাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে।

    পরিকল্পনামতো পুরো ব্যাপারটাকে “আত্মহত্যা” হিসেবে দেখাতে হবে, সেজন্যে একটা ব্যাগে করে দড়ি, ক্লোরোফর্ম, স্যানিটাইজেশনের একটা স্প্রে আর প্লাঞ্জারসহ কিছু দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে গেছিল।

    আকবর হাসান তাকে বলেছিল পুরো ঘরটা তল্লাশী করে দেখতে। মেয়েটার ফোন থেকে আলভীর সবগুলো ছবি আর মেসেজ ডিলিট করে ফেলতে হবে। সেটাই করেছিল সে। মেয়েটার নিথর দেহ একা একা দড়িতে ঝোলাতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। প্রথমবার হাত ফসকে পড়েও গেছিল। কাজশেষে ঘরে যেসব জায়গায় তার হাতের ছাপ পড়েছে সেগুলো মুছে ফেলে।

    এরপর স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে বাথরুমের ছিটকিনির আঙটাটা লাগিয়ে রাখে যাতে কেউ ধরতে না পারে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খোলা হয়েছিল। কিন্তু মেইন দরজায় ঠিক উল্টোটা করে সে সেখানকার ছিটকিনির আঙটাটার একদিকের ভ্রু খুলে দরজার পাশে মেঝেতে ফেলে রাখে বাইরে থেকে দরজা ভেঙে ঢুকলে যেন মনে হয় ভেতর থেকে ছিটকিনিটা লাগানো ছিল, ধাক্কার চোটে খুলে গেছে। সে জানতো এই ছোট্ট একটা কাজ পুরো ব্যাপারটাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে।

    সব কাজ শেষ করার পর দোতলার ফ্ল্যাটে চলে যায় মঙ্গু। কামারা বিডি থেকে ফ্ল্যাটটা রেন্ট নেওয়ার সময় বলেছিল শেষদিন খুব সকালে তার ফ্লাইট, ভোরের দিকে চলে যাবে। তাই ফজরের আজান দিলে দারোয়ানের কাছে চাবিটা দিয়ে বের হয়ে পড়ে।

    এত সুন্দর কাজটা করার পরও সবকিছু ভজঘট পাকিয়ে গেল কিভাবে সে জানে না। অবশ্য সেটার জন্য তাকে কোনো দোষ দেয়নি আকবর হাসান। তার প্রমাণও পেয়েছে কয়দিন বাদেই আরেকটা কাজ দেয়া হয় তাকে। এটাও একটা মেয়ে। এবার সাজাতে হবে দুর্ঘটনার নাটক।

    তিন দিন ধরে অনুসরণ করে কাজটা করেছিল সে।

    এক সময় কারওয়ান বাজারে সব্জির ট্রাক-পিকআপ ভ্যান চালাতো, পিচ্চি হান্নানের হয়ে কাজ করতো এরকম এক চ্যালাকে নিয়ে রেকি করেছিল। মেয়েটা পর পর দু দিন তার গাড়ি নিয়ে বের হলেও মওকাটা পেয়ে যায় তৃতীয় দিনে। মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাতের পাশে একটা ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনে গাড়িতে ওঠার সময়ই সুযোগটা এসে যায়-গাড়ির দিকে এগিয়ে যাবার সময় থমকে দাঁড়ায়, ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে নেয়—কেউ কল দিয়েছিল সম্ভবত-কিন্তু ফোনটা হাতে নেবার আগেই পিকআপ ভ্যানটা ছুটে গিয়ে আঘাত করে মেয়েটাকে।

    মঙ্গু নিশ্চিত ছিল অমন আঘাতের পর কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না। সেটাই হয়েছে। একেবারে স্পট ডেড। তার চ্যালা অ্যাকসিডেন্টের পর ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছিল বেশ দক্ষতার সঙ্গেই।

    উবারটা জাহান সিটির জেড ব্লকের নির্জন লেকের সামনে চলে আসতেই ছাইরঙা একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো মঙ্গু। ড্রাইভার গাড়িটা থামালে ভাড়ার টাকা দিয়ে নেমে পড়লো সে।

    সম্ভবত নিজের গাড়ি নিয়ে আসেনি আকবর হাসান, জাহান গ্রুপের কোনো গাড়ি ব্যবহার করছে। কয়েকটা ব্লক পরেই তাদের অফিস, তার গাড়িটা দেখলে হয়তো এখানকার অনেকেই চিনে ফেলতে পারে। সকাল সকাল এমন নির্জন জায়গায় আকবর হাসান কেন যাচ্ছে এ নিয়ে কৌতূহল জাগতেই পারে। বেচারা এমনিতেই দশ লক্ষ টাকার ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছিল ক-দিন আগে, জেল থেকে মাত্র বের হয়েছে।

    দূর থেকেই দেখতে পেলো মাইক্রোবাসের ড্রাইভিং সিটে এক ছেলে বসে আছে। কাছে আসতেই সেই ছেলেটার সঙ্গে চোখাচোখি হলো তার। পেছনের দিকে ইঙ্গিত করেলো তাকে, সঙ্গে সঙ্গে স্লাইডিং ডোরটা খুলে গেল।

    রীতিমতো বজ্রাহত হলো দৃশ্যটা দেখে। গাড়ির ভেতরে আকবর হাসান নয়, অন্য একজন বসে আছে, আর সেই লোকটার হাতে পিস্তল! সাইলেন্সার লাগানো অস্ত্রটা তার দিকেই তাক করা!

    কয়েক মুহূর্তের জন্য তার মনে হলো আরেকটি স্টিঙ্গ অপারেশনের শিকার হয়েছে সে!

    অধ্যায় ৫২

    সকাল সকাল এত বড় খারাপ খবর কখনও শোনেনি শাহজাহান করিম

    সকালে নাস্তা করার পর পিঙ্ক প্যালেসের সামনের টেরাসে বসে সবুজ ঘাসের লনটা দেখতে দেখতে এক কাপ চা খায়। ভিভিআইপিদের সঙ্গে কফি খেলেও তার আসল নেশা চায়ে। বিগত দশ বছর ধরে সারাদিনের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় সময় তার এটাই আর এই সময়টুকুই কি না বরবাদ করে দিলো সিকিউরিটি চিফ কায়সার। মাত্রই তার অ্যাসিসটেন্ট ছেলেটা বিভিন্ন মিডিয়ার খবরগুলো পড়ে শোনাতে শুরু করেছিল।

    কায়সারকেও এত সকালে কখনও প্যালেসে আসতে দেখেনি, সেজন্যে থম থমে মুখ নিয়ে যখন তার সামনে এসে দাঁড়ালো বুঝতে পেরেছিল খারাপ কোনো সংবাদই নিয়ে এসেছে।

    “স্যার, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমর আর আকবর হাসান…” কথাটা বলেই গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিয়েছিল সিকিউরিটি চিফ।

    কয়েক মুহূর্তের জন্য শাহজাহান ভেবেছিল এ দুজনকে বুঝি হোমিসাইডের ঐ অফিসার গ্রেফতার করেছে।

    “…তাদের লাশ পাওয়া গেছে একটু আগে।”

    বজ্রাহত হয়েছিল কথাটা শুনে। “লাশ মানে?” চায়ের কাপটা রেখে দিয়েছিল অবিশ্বাস্য কথাটা শুনে।

    “ফারহানের বাসায়…একটু আগে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে,” চোখেমুখে তীব্র আতঙ্ক নিয়ে বলেছিল কায়সার। “দুজনকেই গুলি করে মারা হয়েছে।”

    এইটুকু শোনার পরই পুরোপুরি বোবা হয়ে গেছিল শাহজাহান করিম। এসব কী হচ্ছে, কারা করছে, কিছুই বুঝতে পারছে না।

    “ওখানকার দারোয়ান বলেছে রাতের বেলায় ডিবির দুজন লোক ঢুকেছিল ফ্ল্যাটে,” দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পর বলল কায়সার আহমেদ। “একটু পর আকবর হাসানও যায় ওখানে। মনে হয় উনাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।”

    “কে ডাকছিল?” থম থমে মুখ জিজ্ঞেস করলো।

    কাঁধ তুলল কায়সার। “সম্ভবত ফারহান সাহেবকে দিয়ে কিলারাই ডেকে এনেছিল…আকবর সাহেব তো কাছেই থাকেন।”

    চুপ মেরে রইলো শাহজাহান করিম।

    “স্যার, আমি আপনাদের…ম্যাডামের, সবার সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি। দয়া করে হুটহাট প্যালেসের বাইরে যাবেন না। ঘটনা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার কাছে।”

    জাহান গ্রুপের মালিক মুখ তুলে তাকালো কায়সারের দিকে। “বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও পরতে হইবো নাকি?” তিক্তমুখে থুতু ফেলতে চাইলো কিন্তু এই মার্বেল টেরাসে সেটা করা থেকে বিরত রাখলো নিজেকে।

    কায়সার আহমেদ চুপ করে রইলো। এরকম দুঃসংবাদ শোনার পর যে তার নিয়োগকর্তার মেজাজ খারাপ হবে সেটা অনুমেয়ই ছিল।

    “পুলিশ গেছে না ওইখানে?”

    “জি, স্যার।”

    “ওই হোমিসাইডরা?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো কায়সার। “খুনের কেসগুলো ওরাই দেখে…” অমনি তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। “এক্সকিউজ মি, স্যার।” জাহান সিটির সিকিউরিটি টিমের একজন কল করেছে তাকে। একটু সরে গিয়ে কলটা রিসিভ করলো। “হ্যাঁ, বলো?” ওপাশ থেকে আরেকটা দুঃসংবাদ শোনার পর চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল তার।

    শাহজাহান করিম কিছু একটা আঁচ করতে পেরে চেয়ে রইলো সিকিউরিটি চিফের দিকে।

    “মাই গড!” অস্ফুট স্বরে বলল। “…কেউ যেন না জানে, ঠিক আছে? আর পুলিশকে ভুলেও জানাবে না। আমি আসছি একটু পর।”

    “কী হইছে আবার?” চোখেমুখে উদ্বিগ্নতা নিয়ে জানতে চাইলো জাহান গ্রুপের প্রধান।

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো সিকিউরিটি চিফ। “স্যার, একটু আগে মঙ্গুর লাশ পেয়েছে আমাদের রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটির লোকজন।”

    “মঙ্গু!” অবিশ্বাসে বলে উঠল শাহজাহান করিম। তার বহু পুরনো আর বিশ্বস্ত এক লোক। “ওরে কইখন পাইলো?!”

    “সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না,” কায়সার আহমেদ রীতিমতো ভড়কে গেছে।

    “আরে লাশটা পাইলো কইখন?”

    “স্যার, আমাদের এইখানেই…জেড ব্লকে, লেকের পাশে।”

    অবিশ্বাসের সাথে চেয়ে রইলো শাহজাহান করিম। জেড ব্লকটা মাত্র মাটি ভরাট করে প্লটগুলোর বাউন্ডারি দেয়া হচ্ছে, কয়েক মাস পর বিক্রি শুরু হবার কথা। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি। কিন্তু এটা তার নিজের এলাকা, এখানেই সে থাকে, আর এখানেই কি না খুন করে লাশ ফেলে গেছে! তার ছেলে আসলে কাদের বিরুদ্ধে কী করেছে বুঝতে পারছে না।

    “ওকেও মাথায় গুলি করা হয়েছে!”

    “হায় খোদা! কী শুরু হইছে এইসব!” বিড়বিড় করে বলল শাহজাহান। একই কথা কায়সার আহমেদও মনে মনে বলছে কিন্তু মুখে আনতে পারছে না।

    “কারা করতাছে?” থমথমে মুখে জানতে চাইলো ধনাঢ্য ব্যবসায়ি।

    “এটাই তো বুঝতে পারছি না, স্যার।”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো জাহান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। “ঐ যে অফিসার…কী জানি নাম?”

    “জেফরি বেগ?”

    “ওর বউরে কে মারছে?”

    “বউ না, স্যার…ফিয়ানসে।”

    “ওই একই হইলো,” নিজের রাগ দমন করতে বেগ পেলো শাহজাহান।

    “ওটা মেবি অ্যাকসিডেন্টই, স্যার…কো-ইন্সিডেন্টলি এই সময়ে হয়ে গেছে।”

    হাত নেড়ে কথাটা উড়িয়ে দিলো শাহজাহান করিম। “তুমি জানো না সেইটা বলো!” তারপর সরাসরি তাকালো সিকিউরিটি চিফের দিকে। “ওরে এত কইলাম কিচ্ছু না করতে, শুনলো না! যাওনের আগে আরেকটা আকাম করলো!” ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবুজ লনের দিকে চেয়ে রইলো পিঙ্ক প্যালেসের অধিপতি। “ওই মাইয়াটারে মারছে কে এতদিনেও বাইর করতে পারলা না! এরমইদ্যে এতকিছু ঘইট্যা গেল!”

    এবার বিপাকেই পড়লো কায়সার আহমেদ।

    ঐদিন না তোমারে কইলাম মাইয়াটারে কে মারছে খবর নিতে, নিছিলা?”

    “জি, স্যার,” বুকে সাহস সঞ্চয় করে জবাব দিলো সিকিউরিটি চিফ।

    “কে?” সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো শাহজাহান করিম।

    খুক খুক করে কাশলো সাবেক পুলিশ।

    “আরে কাশাকাশি পরে কইরো, আগে কও কে করছে কামটা?”

    “আপনি ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলুন, স্যার।”

    বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো শাহজাহান

    অধ্যায় ৫৩

    যতোটা কঠিন ভেবেছিল আদতে মঙ্গুকে কব্জায় নিতে পেরেছিল তার চেয়ে অনেক সহজেই।

    সম্ভবত এই খুনি কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি। হয়তো গ্যাং ফাইটের অভিজ্ঞতা ছিল তার, সহজ শিকার করেছে সব সময় কিন্তু গান পয়েন্টে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল না। লোকটার চোখমুখ দেখেই এটা আন্দাজ করতে পেরেছিল।

    দু দুটো মেয়েকে কাপুরুষের মতো হত্যা করেছে সে!

    পেশাদার খুনি হিসেবে বাস্টার্ড কখনও নারী এবং শিশুদের হত্যা করেনি। আত্মরক্ষার্থে একবার সন্ত্রাসী ব্ল্যাক রঞ্জুর স্ত্রী মিনাকে পাল্টা গুলি করেছিল। কিন্তু ঐ মহিলা যদি পিস্তল বের করে গুলি না করতো কখনওই পাল্টা গুলি ছুঁড়তো না।

    মঙ্গুকে কব্জায় নেবার পর সবটাই শুনেছে সে, বলতে বাধ্য করেছে পিস্তলের মুখে। মাইক্রোবাসের ভেতরে, সাইলেন্সার পিস্তলের মুখে তার আর কিছুই করার ছিল না। বুঝতে পারছিল একটা এসএমএস পেয়ে ছুটে এসে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলেছে।

    সত্যি বলতে বাস্টার্ডও ভাবেনি টেক্সট মেসেজ পেয়ে এই খুনি চলে আসবে। সে কেবল একটা সুযোগ নিয়েছিল। জাহান গ্রুপের যতো নোংরা কাজ আছে, তার সবই ডিল করতো আকবর হাসান। খুনিদের সঙ্গে সাধারণত সে-ই যোগাযোগ রাখতো। তার ফোনে দেখেছে, মঙ্গুকে যতো বার না কল দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি এসএমএস করেছে। দুটো এসএমএস অনেকটা এরকম ছিল : জেড, ১২, সোমবার/ জেড, ২, রোববার।

    বুঝতে পেরেছিল, জেড ব্লকে অমুক সময় অমুক দিন চলে আসার কথা বলেছে। ওরকমভাবেই গতকাল রাতে মঙ্গুকে একটা মেসেজ দিয়েছিল আকবর হাসানের মাধ্যমে। ভেবেছিল লোকটা কল ব্যাক করবে কিংবা মেসেজ দিয়ে নিশ্চিত হতে চাইবে। সঙ্গত কারণেই কোনো জবাব না পেয়ে মিটিংটা ক্যান্সেল করে দেবে। তিন তিনটি ফোন নষ্ট করার পর এমনটাই ভেবেছিল। এখন বুঝতে পারছে, জাহান গ্রুপের হয়ে যারা এমন কাজ করে তারা একটা কল কিংবা মেসেজ পেলেই চলে আসে।

    মঙ্গু তাকে এ-ও বলেছে জাহান গ্রুপের হয়ে এই মুহূর্তে খুব বেশি “লোক” এ কাজ করে না। অনেকেই বিদেশে চলে গেছে, কেউ কেউ বেঘোরে মারা গেছে হয় প্রতিপক্ষের হাতে নয়তো ক্রসফায়ারে। অনেকে আবার রিটায়ার্ডও করেছে। মঙ্গু ছাড়া এই মুহূর্তে আর মাত্র দুজন আছে এরকম কাজ করার জন্য। সেই দুজনের একজন ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে, অন্যজনের আবার অভিজ্ঞতা কম। কম বলতে খুনকে আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানোর অনভিজ্ঞতাকে বোঝায়। সে কারণেই পর পর দুটো কাজ তাকেই দেয়া হয়েছে।

    তবে প্রথমে সে বলেনি ঘাড় মটকে খুন করার আগে মেয়েটার সঙ্গে কী করেছিল। এক নিউজ পোর্টালে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের খবরটা বাস্টার্ড পড়েছিল—সোনিয়াকে হত্যা করার আগে ধর্ষণ করা হয়।

    ততক্ষণে গাড়ির ভেতরে মঙ্গুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে দশ মিনিট চলে গেছিল। দূর থেকে জেড ব্লকের আশেপাশে দুয়েকটা গাড়িও চোখে পড়ে। সম্ভবত সাইট ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ওখানকার কর্মরত কেউ হবে, তাই আর কিস্সা-কাহিনি শোনেনি, লোকটাকে অস্ত্রের মুখে বলেছিল মাথার উপরে দু হাত তুলে যেন গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়িটা চলে যাওয়ার আগে ভুলেও যেন ফিরে না তাকায়।

    বাস্টার্ডের পরনে তখনও ডিবির ভেস্টটা ছিল, মঙ্গু তাদের দুজনকেই ডিবির লোক ভেবেছে শুরু থেকে, তাই এ কথা শুনে একটু অবাকই হয়েছিল। ভেবেছিল তাকে গ্রেফতার করা হবে।

    চুপচাপ দু হাত তুলে পেছন ফিরে গাড়ি থেকে নেমে যেতেই তার মাথায় গুলিটা করা হয়। একটাই যথেষ্ট ছিল। মাথার পেছন দিক দিয়ে নাইন মিলিমিটার ক্যালিবারের গুলিটা ঢুকে মঙ্গুর দুই চোখের মাঝখানে বড় সড় একটা গর্ত তৈরি করে বের হয়ে গেছিল। মুখ থুবড়ে পড়ে গেছিল জাহান গ্রুপের খুনি। বাস্টার্ড এটাই চেয়েছিল-লাশটা লেকের পাশের রাস্তার উপরে পড়ে থাকুক।

    এখন উত্তরায় অমূল্যবাবুর বাড়ির দোতলায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছে সে। গাড়িটা নিয়ে চলে গেছে মৃদুল। বেশ ভালো অঙ্কের বখশিস দিয়েছে তাকে। দরকার হলে আবারো ডাকা হবে। তবে সেটার প্রয়োজন পড়বে বলে মনে করছে না সে।

    গত রাতটা মৃদুল আর সে মাইক্রোবাসেই কাটিয়ে দিয়েছিল, গাড়ির ভেতরে স্বল্প পরিসরে ভালো ঘুম হয়নি তাদের। গুলশান দুইয়ের একটা নির্জন রাস্তার পাশে অনেকগুলো গাড়ির পাশে পার্ক করেছিল মাইক্রোবাসটা।

    ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে দুচোখ বন্ধ করে ঘুমাবার চেষ্টা করলো পার্থিব রায় চৌধুরি।

    অধ্যায় ৫৪

    জেফরি বেগ নিশ্চিত এটা বাবলুর কাজ!

    কবরস্তানে ওর সঙ্গে দেখা হবার পর কথা বলার মাঝপথেই জামান চলে আসায় জাদুকরের মতো উধাও হয়ে গেছিল সে। তারপরই দিলান মামুদের কাছ থেকে শোনে আলভী দেশ ছেড়েছে। ধরেই নিয়েছিল বাবলুর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে লোকটা। চাইলেও সে কিছু করতে পারবে না। একটু আগেও জানতে পারেনি ঐ পেশাদার খুনি কাজটা করতে রাজি হয়েছে কি না।

    এখন অবশ্য তার মনে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই! আলভী নেই তো কী হয়েছে, যারা রেবার খুনের সঙ্গে জড়িত তারা তো আছে-বাবলু তাদেরকেই ঘায়েল করছে এখন।

    এর পেছনে বছরের পর বছর ধরে লেগে ছিল সে, ওর কাজকারবারের ব্যাপারে ভালো ধারণাই রাখে। ওর পক্ষেই সম্ভব সুরক্ষিত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ঢুকে খুন করে নির্বিঘ্নে চলে যাওয়া।

    সত্যি বলতে অপার বিস্ময় নিয়েই সে আবিষ্কার করেছে, এই জীবনে প্রথমবারের মতো কারোর খুন হবার কথা শোনার পর ভেতরে ভেতরে সে উল্লসিত বোধ করছে! রেবা খুন হবার পর তার বুকের ভেতরে যে তীব্র শোক আর যন্ত্রণা গুমোট বেঁধে ছিল, তার কিছুটা উপশম হয়েছে।

    সকাল এগারোটার পরই জামান তাকে ফোন করে জানায়, সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া আকবর হাসানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে গুলশানের এক ফ্ল্যাটে, যেটার মালিক জাহান গ্রুপের আরেক কর্মকর্তা ফারহান ওমর। বাথরুমের ভেতরে তারও লাশ পাওয়া গেছে। দুজনকেই কাছ থেকে মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের কোনো বাসিন্দা এবং দারোয়ান গুলির শব্দ পায়নি!

    বাবলু! সঙ্গে সঙ্গেই তার মাথার ভেতরে এই নামটা উচ্চারিত হয়েছিল। সম্ভবত জামানও একই রকম চিন্তা করে থাকতে পারে, তবে এ নিয়ে সে কিছু বলেনি। তার সঙ্গে সঙ্গে এই ছেলেটাও দীর্ঘদিন ধরে পেশাদার খুনি বাস্টার্ডের পেছনে লেগে ছিল। সে যেহেতু এক মাসের ছুটিতে আছে, এখন হোমিসাইডের পক্ষ থেকে জামানই তদন্ত করছে ডাবল-মার্ডারের এই কেসটা I

    পরিহাসের হাসি ফুটে উঠেছিল তার ঠোঁটে। জামান যদি জানতো!

    সহকারির সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই তাকে এসএমএস পাঠায় ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট দিলান মামুদ। রেবার মৃত্যুর পর তাকে ফোন দেয়নি এই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, জামানের কাছ থেকে খবরা-খবর নিয়েছে তার। আজকেও সরাসরি ফোন না করে বাংলায় একটা এসএমএস পাঠিয়েছে : আমি কি ফোন করতে পারি?

    মেসেজের জবাবে কল করলো সে।

    “হ্যালো, কেমন আছেন?” ওপাশ থেকে বলল ক্র্যাক্ড নিউজের ওয়ানম্যান আর্মি।

    “এই তো…” জেফরি বেগ বলল তাকে। এছাড়া আর কীই বা বলার আছে তার? সে তো বলতে পারে না ভালো আছে! এই মুহূর্তে যে কিছুটা শাস্তি পাচ্ছে সেটাই বা কিভাবে বলে? এই লোক নির্ঘাত জাহান গ্রুপের দুজন কর্মকর্তার খুন হবার বিষয়টি জানে।

    “ওদের খবরটা শুনেছেন তো?”

    জেফরি জানে ইচ্ছে করেই জাহান গ্রুপের নামটা নেয়নি দিলান। বলা তো যায় না, দেশের কোন প্রতিষ্ঠান কোত্থেকে বসে আড়ি পাতছে! জোর গুজব আছে, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিষিদ্ধ “পেগাসাস” সফটওয়্যার কিনেছে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। “হ্যাঁ… জামান বলল একটু আগে।” সে অবশ্য রাখঢাক করলো না। ছুটিতে থাকলেও হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর হিসেবে এটা তার জানারই কথা।

    “আপনার সঙ্গে দেখা করা যাবে কি?”

    অবাক হলো জেফরি। জাহান গ্রুপের দুই কর্মকর্তা, যারা কি না মালিকপক্ষের অপকর্মগুলো করে থাকে, তাদের নিহত হবার ঘটনা নিয়ে তার সঙ্গে কী কথা বলতে চায়?

    “জামান আপনাকে যেটা বলেছে সেই বিষয় নিয়ে না…” বলল দিলান। যেন ফোনের ওপাশ থেকেই হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটরের মনোভাব বুঝতে পেরেছে।

    আরো বেশি ধন্দে পড়ে গেল জেফরি। ওই দুজনের ঘটনা নিয়ে না? “আচ্ছা, আসুন…কোথায় মিট করতে চান, বলুন?”

    “যদি কোনো সমস্যা না হয় আপনার ওখানে আসি? আমি এখন একটা কাজে বারিধারায় আছি।”

    “ঠিক আছে। আপনাকে লোকেশনটা হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দিচ্ছি।”

    “থ্যাঙ্ক ইউ।”

    এখন দিলান মামুদের জন্য অপেক্ষা করার সময় সে ভাবছে, সাংবাদিক ঠিক কী নিয়ে আলাপ করতে চাইছে। কয়েক মিনিট ব্যর্থ চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দিলো। কী দরকার এত ভাবার, একটু পরই সেটা

    জানা যাবে।

    বাকি সময়টুকু ফ্ল্যাটে পায়চারি করে কাটিয়ে দিলো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। পনেরো মিনিট পর তার দরজার কলিংবেলটা বেজে উঠল

    “কী অবস্থা?” দরজা খুলতেই সহাস্যে বলল দিলান মামুদ। হাতটা বাড়িয়ে দিলো করমর্দনের জন্য।

    সাংবাদিকের উষ্ণ হাতটা ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে এলো জেফরি। “বাইক নিয়ে এসেছেন?”

    “হ্যাঁ…ঢাকায় যে জ্যাম বাইক ছাড়া চলাফেরা করাই মুশকিল।” মাঝারি আকৃতির ড্রইংরুমের একটা সোফায় বসে পড়লো দিলান।

    “আপনাকে কিন্তু চা-কফি দিয়ে আপ্যায়ন করতে পারছি না… বাসায় কাজের লোক রাখি না আমি।”

    “আরে, কী যে বলেন,” হাসিমুখে বলল দিলান মামুদ। “আমি আজকাল চা-কফি দুটোই কমিয়ে দিয়েছি।”

    বিপরীত দিকের একটা সোফায় বসে পড়লো জেফরি বেগ।

    “আপনাকে কি সার্ভিলেন্স করা হচ্ছে?”

    কথাটা শুনে অবাকই হলো ইনভেস্টিগেটর। “বলেন কী!”

    “আমার তো সেরকমই মনে হচ্ছে।”

    একই কথা বাবলুও তাকে বলেছিল কবরস্তানে। “কারা সার্ভিলেন্স করছে? কোনো আইডিয়া আছে আপনার?”

    কাঁধ তুলল সাংবাদিক। “শিওর না, তবে আমার ধারণা ওরা সরকারি লোকজন।”

    এবার বুঝতে পারলো জেফরি। সম্ভবত হোমিসাইডের মহাপরিচালক ফারুক স্যারের কাজ এটা।

    “মনে হচ্ছে ওরা আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্যই অ্যাসাইন্‌ড হয়েছে।”

    “হতে পারে, আমার জানা নেই।” একটু থেমে বলল, “বলুন, আপনার ব্যাপারটা কী?”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো দিলান। “একটু আগে, জাহান গ্রুপের দুজনের খুন হবার নিউজটা পাবার পর পর আমার পোর্টালের ইমেইলে একটা ছবি পাঠিয়েছে একজন…অ্যানোনিমাস কেউ।”

    আগ্রহী হয়ে উঠল হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটর। “কীসের ছবি?”

    “ওয়েট,” দিলান মামুদ নিজের ফোনটা বের করে জেফরি বেগের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

    ফোনের স্ক্রিন জুড়ে একটা ছবি মাঝবয়সি এক লোক রাস্তার উপরে চিৎ হয়ে পড়ে আছে, একদলা রক্তের মধ্যে ডুবে আছে তার মাথাটা।

    ভুরু কুঁচকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো। “এই লোক কে?”

    “এক অ্যানোনিমাস সেন্ডার বলছে এর নাম মঙ্গু, জাহান গ্রুপের কিলার।”

    ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের দিকে বিস্ময়ে তাকালো ইনভেস্টিগেটর।

    “সেন্ডারের দাবি সোনিয়াকে এই লোকই খুন করেছে… আপনার রেবাকেও!”

    কথাটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল জেফরি বেগ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
    Next Article অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }