Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প399 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কন্ট্রোল – ৫৫

    জীবনে এরকম উদ্ভট প্রশ্নের মুখোমুখি হয়নি ফারুক আহমেদ।

    হোমিসাইডের মহাপরিচালক হিসেবে প্রায় শুরু থেকেই আছে সে, মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রভাবশালী মহল আর সরকারের চাপ সামলে, অধস্তনদের কাছে নিজেকে ছোটো না করে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় তাকে। কিন্তু হোমমিনিস্টারের এমন কথায় মেজাজ না হারিয়ে পারলো না।

    সবাইকে নিজেদের মতো ভাবে নাকি! মনে মনে বলেছিল। জেফরি বেগ করবে খুন খারাবি?!

    লাঞ্চের পর একটু বিশ্রাম নেবার অভ্যাস আছে অফিসসংলগ্ন প্রাইভেট রুমে, আজকে সেটা করতে পারেনি, রীতিমতো জরুরি তলব করে সচিবালয়ে মিনিস্ট্রির অফিসে ডেকে আনা হয়েছে তাকে।

    লম্বা করে শ্বাস নিয়ে অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন করলো। “স্যার, আমার এই অফিসার আট-দশদিন ধরে বাড়ি থেকেই বের হয়নি। একবার শুধু কবরস্তানে গেছে, বাকি সময়টা নিজের ফ্ল্যাটেই ছিল…এখনও আছে।”

    “কবরস্তানে কেন গেছিল?” জানতে চাইলো মন্ত্রি।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারুক আহমেদ। “কিছুদিন আগে ওর ফিয়ানসে রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে, মেন্টালি খুব ভেঙে পড়েছে, আমি এক মাসের ছুটি দিয়ে দিয়েছি, ও এখন আমাদের সার্ভিলেন্সে আছে।”

    ভুরু কুঁচকে গেল মিনিস্টারের। “সার্ভিলেন্সে রেখেছেন কেন?”

    আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হোমিসাইডের মহাপরিচালক। “ওর প্রটেকশানের জন্য।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো মন্ত্রি।

    “আমার কাছে মনে হচ্ছে…মানে আমি বিশ্বাস করি ওর ফিয়ানসেকে আসলে মার্ডার করা হয়েছে। ইট ওয়াজ অ্যা কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার, স্যার!”

    হোমমিনিস্টারের চোখেমুখে বিস্ময়। “বলেন কি?!”

    “জি, স্যার,” মুখটা বিষন্ন হয়ে গেল মহাপরিচালকের।

    “কে করলো?…কারা করলো?”

    বুক ভরে নিশ্বাস নিলো ফারুক আহমেদ। কখনও কখনও ডিপ্লোমেসি বাদ দিয়ে, সৌজন্যতার পরাকাষ্ঠা না দেখিয়ে সত্যটা বলে দিতে হয়, নইলে সেই সত্যের প্রতি অবিচার করা হয়। “জাহান গ্রুপ, স্যার।”

    মন্ত্রিকে দেখে মনে হলো না খুব বেশি অবাক হয়েছে। “আপনি মনে করছেন ওই মেয়েটার সুসাইড…মানে মার্ডার কেস নিয়ে ঝামেলাটার শুরু হইছে?”

    মিনিস্টারের দিকে সরাসরি তাকালো হোমিসাইডের ডিজি। “জি, স্যার। আমি আমার এই অফিসারকে হারাতে চাই না। ওর মতো অফিসার দেশের সম্পদ।”

    গম্ভীর মুখে চুপচাপ শুনে গেল মন্ত্রি।

    “ওর কতো সাফল্য আছে আমি নিজেও গুণে শেষ করতে পারবো না। এই তো মাসখানেক আগে ব্ল্যাক রঞ্জুকে ধরলো…প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেলের তালিকায় ওর নাম আছে, সামনের মাসে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নেবে…এরকম একজন অফিসারকে যদি বাঁচাতে না পারি তাহলে মহাপরিচালক হয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না।”

    “হুম।” গুরুগম্ভীর দেখালো মন্ত্রিকে, ফাঁকা দৃষ্টি নিয়ে ফ্লোরের কোনো এক দিকে তাকিয়ে আছে।

    “আমি জানি ওদের অনেক ক্ষমতা, অনেক কিছুই করতে পারে, করে আবার পারও পেয়ে যায়…হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও জামিন পেয়ে বের হয়ে যায়।”

    হোমমিনিস্টার এবারও চুপ করে রইলো।

    “আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি, স্যার… এছাড়া কী করবো, বলুন?”

    মুখ তুলে তাকালো মিনিস্টার। “দেখেন, আপনি হয়তো ভাবতাছেন ওই জাহান গ্রুপের পকেটে চলে গেছে সবাই, আসলে তো এইটা সত্যি না।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো ফারুক আহমেদ। তার খুব বলতে ইচ্ছে করছে, তাহলে কোনটা সত্যি, স্যার?

    “অনেক কারণেই অনেক কিছু করতে পারি না, তার মানে এই না যে দেশের চায়া রাষ্ট্রের চায়া কেউ বড়,” একটু থেমে আবার বলল, “আপনি আপনার অফিসারে প্রটেক্ট করতাছেন, ঠিকই করতাছেন। একটুও কেয়ার করবেন না। মনে রাখবেন, আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। এইবার দেখুম কতো দূর যায়…বহুত বাইড়্যা গেছে ওরা।”

    ফারুক আহমেদের কাছে এবারও মনে হলো হোমমিনিস্টার আসলেই বটবৃক্ষ, সত্যিকারের অভিভাবকের মতোই কথা বলছে।

    মিনিস্ট্রি থেকে যখন বের হয়ে এলো, মনে হলো তার বুকের ছাতি দশ ইঞ্চি বেড়ে গেছে!

    অধ্যায় ৫৬

    ঐদিন বিকেলে অফিস থেকে সোজা জেফরির ফ্ল্যাটে চলে আসার পর শোকগ্রস্ত বিষন্ন মানুষটিকে একটু নির্ভার দেখে জামান মোটেও অবাক হলো না। যারা তার ভালোবাসার মানুষটিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের এমন পরিণতিতে কিছুটা হালকা বোধ করতেই পারে।

    প্রথমেই গুলশানের ডাবল মার্ডারের ব্যাপারে জেফরি বেগকে বিস্তারিত জানালো সে : প্রায় মাসখানেক সময় ধরে গুলশানের ঐ ফ্ল্যাটে একাই ছিল জাহান গ্রুপের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমর। বর্তমানে তার স্ত্রী কানাডায় ছুটি কাটাচ্ছে ছোটো বোনের সঙ্গে। ওদের একমাত্র ছেলেও আছে মায়ের সঙ্গে, ছুটি কাটানোর পাশাপাশি ওখানকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছে ছেলেটা। অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দারোয়ান বলেছে, রাত এগারোটার দিকে ফারহান ওমর ফ্ল্যাটে ঢোকার পরই ডিবির ভেস্ট পরে দুজন লোক আসে, একজন উপরে চলে গেলেও অন্যজন নিচতলায় মেইন গেটের সামনে ছিল।

    ডিবির ভেস্ট!

    কথাটা শোনামাত্রই জেফরি বেগের মনে পড়ে গেল, মাস দেড়েক আগে ঝন্টুরূপী ব্ল্যাক রঞ্জু যে দলটাকে পাঠিয়েছিল বাবলুর ফ্ল্যাটে, তারাও ডিবির ভেস্ট পরে গেছিল। আবার তাদের দলের পেছনে যখন ঐ পেশাদার খুনি লাগলো, সে-ও একই ভেস্ট ব্যবহার করেছিল। তখন অবশ্য সে একা ছিল-ওয়ানম্যান আর্মি। কিন্তু এখানে আরেকজন আছে তার সঙ্গে।

    ডিবির লোকটা বলেছিল ফারহান ওমর তার ফ্ল্যাটে ড্রাগ রাখে, সেটার তল্লাশী চালাতে এসেছে তারা। আনুমানিক পৌণে বারোটার দিকে আকবর হাসান আসে ফ্ল্যাটে। তাকে দারোয়ান চেনে, এর আগেও কয়েক বার এসেছিল ফারহানের ফ্ল্যাটে।

    রাত বারোটার পরে ঐ ডিবি অফিসার নিচে নেমে আসে, সঙ্গিকে নিয়ে রাস্তার ওপারে পার্ক করে রাখা একটা মাইক্রোবাসে উঠে চলে যায়। দারোয়ান জোর দিয়ে বলেছে কোনো ধরণের গুলির শব্দ শোনেনি। এমনকি ফারহান ওমরের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও গুলির শব্দ কিংবা ধস্তাধস্তির আওয়াজ পায়নি।

    সাইলেন্সার!

    জেফরি বেগ জানে এটা বাবলুর সিগনেচার। দুয়েকটা ঘটনা বাদে এই পেশাদার খুনি সব সময়ই সাইলেন্সার ব্যবহার করেছে। অবশ্য কিছুদিন আগে নকল রঞ্জু এবং তার ঘনিষ্ঠ কিছু লোককে কব্জায় নিয়েছিল ট্র্যাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে। সেটা সম্ভবত রঞ্জুর লোকজনের কাছ থেকে নিয়েছিল।

    রাতে আকবর হাসান বাসায় ফিরে আসতে দেরি করছিল বলে তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। রাত একটার পর তারা ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ফোনটা বন্ধ পায়, ফলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে তারা। স্ত্রীকে বলে গেছিল কাছেই, গুলশান চার নাম্বারে যাচ্ছে তাদের প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ফারহান ওমরের বাসায়, ফলে তারা থানায় যোগাযোগ না করে সরাসরি সেখানে গিয়ে হাজির হয়। ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিল না, সহজেই ঢুকতে পেরেছিল তারা। খোঁজাখুঁজি করে বেডরুম আর বাথরুমে দুজনের রক্তাক্ত মৃতদেহ আবিষ্কার করে।

    “খুনদুটো একেবারে বাস্টার্ডের স্টাইলে করেছে, স্যার,” জামান বলল।

    এ কথার কোনো জবাব দিলো না জেফরি।

    “মাত্র একজন কিভাবে ওরকম ফ্ল্যাটে ঢুকে দুজনকে মেরে ফেলল!”

    সহকারির মতো অবশ্য সে এতটা বিস্মিত হচ্ছে না, কারণ এটা যে বাবলু এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই তার মধ্যে। “সিসিক্যাম ফুটেজ থেকে কিছু পাওনি?” জানতে চাইলো।

    “ফুটেজ পেয়েছি কিন্তু সেখানে দুজনের কারোর চেহারাই পরিষ্কার দেখা যায়নি। দুজনের মাথায়-ই ক্যাপ ছিল, লম্বা মতোন লোকটার মুখে মাস্ক, আরেকজনের মুখে দাড়ি।” একটু থেমে আরো বলল, “নিহত দুজনের কারো সঙ্গেই ফোন ছিল না… কিলার সেগুলো নিয়ে গেছে সঙ্গে করে।”

    “ওগুলো ট্র্যাক করেছো?”

    “করেছি, স্যার…তিনটাই পাওয়া গেছে জাহান সিটিতে, জেড ব্লকের লেকের পাশে।”

    এই পর্যায়ে এসে জেফরির বলতে ইচ্ছে করলো দিলান মামুদের কাছে পাঠানো ছবিটার কথা। কিন্তু এটা বললে জামানের সন্দেহ আরো গাঢ় হবে। জাহান গ্রুপ তাদের খুনি মঙ্গুর নিহত হবার খবরটা চেপে গেছে, সুতরাং জামানকে সেটা বলার দরকার নেই।

    “স্যার, আপনার কী মনে হয়?”

    কাঁধ তুলল হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। “বুঝতে পারছি না।”

    “ওদের প্রতিপক্ষ আছে…যদিও দুর্বল কিন্তু আছে। ওরা করতে পারে,” তারপর একটু ভেবে বলল, “জাহান গ্রুপের প্রতিপক্ষদের কেউ বাস্টার্ডকে হায়ার করলো না তো, স্যার?”

    ঠোঁট ওল্টালো জেফরি। “কী জানি!” পরক্ষণেই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “তুমি কি জানো আমাকে কিছু মানুষ সার্ভিলেন্স করছে?”

    জামান অবাক হবার ভাণ করলো, “তাই নাকি?”

    ছেলেটা যে অভিনয়ে একদমই কাঁচা বুঝতে পারলো জেফরি বেগ। “ফারুক স্যারের কাজ মনে হচ্ছে।”

    “হতে পারে, স্যার।”

    “আর কোনো খবর আছে?” জানতে চাইলো।

    “আপুর বড় ভাই তার মাকে নিয়ে স্টেট্সে চলে যাচ্ছে কালকে।

    একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো জেফরি বেগের ভেতর থেকে কিন্তু কিছু বলার আগেই তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ডিসপ্লে”তে অপরিচিত নাম্বার দেখে কলটা ধরলো না।

    “এই দুটো মার্ডারের খবর আমি দিলান মামুদকে জানিয়ে দিয়েছি। উনি এসেছিলেন ক্রাইমসিনে।” একটু থেমে আবার বলল, “মিডিয়াতে এসব খবর প্রচারিত হলে কিন্তু সরকারের উপরে চাপ বাড়ে, অপরাধীরাও বেশি সাহস করে না, তদন্তে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়, স্যার।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। সে নিজেও একই কাজ করেছে সোনিয়ার কেসে।

    জেফরি কিছু বলতে যাবে, অমনি একটা ইনকামিং মেসেজের বিপ্ হলো। মেসেজটা পড়লো সে :

    স্যার, আমি কায়সার। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। প্লিজ।

    কিন্তু জাহান গ্রুপের সিকিরিউটি চিফ কেন তার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে, বুঝতে পারলো না জেফরি বেগ।

    অধ্যায় ৫৭

    পিঙ্ক প্যালেসের দোতলায় উঠতেও লিফট ব্যবহার করে শাহজাহান করিম I

    তিনতলার প্রাসাদোপম বাড়িতে যে লিফট থাকতে পারে এটা হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না। সেই লিফটে করেই দোতলায় চলে এলো।

    প্যালেসের হেলি প্যাডে তার স্ত্রী সিতারার হেলিকপ্টারটা ল্যান্ড করেছে একটু আগে। দক্ষিণ-বঙ্গের এক গ্রামে তার মামাতো ভাইয়ের শ্যালক আকবরের দাফন হয়েছে, সেখান থেকে ফিরে এসেছে।

    ঘরের দরজার সামনে এসে টোকা মারলো শাহজাহান। একটু পর দরজা খুলে দিলো এক গৃহকর্মি মেয়ে। বড় সাহেবকে দেখে সম্ভ্রমের সঙ্গে সালাম দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। যতোক্ষণ সাহেব আছে এই মেয়ে বাইরে অপেক্ষা করবে।

    সিতারা বেগম গায়ে একটা পার্সিয়ান শাল জড়িয়ে রেখেছে। কুলখানিতে যাওয়ার আগে আজ সকালে চুলে কলপ করেছিল, একটু বেশিই কালো দেখাচ্ছে পাতলা হয়ে যাওয়া চুলগুলো। কপালের সামনে এবং কানের দিকটায় এখনও কলপের কালচে ছোপ ছোপ দাগগুলো মুছে যায়নি। বৃদ্ধ বয়সে তার স্ত্রী এসব কেন করে শাহজাহান করিম বোঝে না। তা-ও আবার শোকের বাড়িতে যাবার সময়!

    “খাইছো?” ঘরে ঢুকেই বলল স্ত্রীকে। যদিও ভালো করেই জানে এখনও রাতের খাবার খায়নি।

    “না,” ছোট্ট করে জবাব দিলো সিতারা বেগম। “এইসব কী হইতাছে, তুমি কিছু করতাছো না ক্যান?” রাগ দেখিয়ে বলল।

    “আমি আর কী করুম, যা করার তো তুমিই কইরা ফালাইছো!”

    ভুরু কুঁচকে গেল মিসেস শাহজাহানের। “কী কইবার চাও তুমি?”

    “ওই মাইয়াটা…” চোখমুখ তিক্ততায় ভরে উঠল জাহান গ্রুপের মালিকের। “…ওরে কে মারছে, জানো না তুমি?”

    নাকের পাটা ফুলে উঠল সিতারা বেগমের। “ওই মাইয়া সুইসাইড করছে…ওরে কেউ মারেনি।”

    “তুমি কেমনে জানলা সুইসাইড করছে?” তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো স্ত্রীর দিকে।

    “পেপারে পড়ছি,” কাটাকাটাভাবে জবাব দিলো প্রাসাদের মালেকিন।

    “হাহ!” বাঁকাহাসি দিলো শাহজাহান করিম। “পেপারে পড়ছো তুমি! তোমার লাইগ্যা স্পেশাল পেপার বাইর করে আমার হমন্দিরা!”

    স্ত্রী চুপ মেরে রইলো, কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।

    “কবে থিকা তুমি পেপার পড়া শুরু করলা, অ্যাঁ?”

    “কী কইতে আইছো সেইটা কও, এত ভেজর ভেজর করতাছো ক্যান?!”

    শাহজাহান রেগেমেগে একাকার। “মাইনষে কি সাধে কয়, মাইয়া মানুষ বেশি বুঝলেই সমস্যা!”

    স্ত্রী-ও চটে গেল। “তুমি যখন দুই পয়সার মালিক ছিলা তখন কে আছিল তোমার পাশে? কে তোমারে বুদ্ধি দিতো? এহন মাইয়া মানুষ বেশি বোঝে, না?”

    “বালের পেচাল!” মেজাজ হারালো জাহান গ্রুপের মালিক। “সবটা আমি নিজে করছি! তোমার বুদ্ধিতে চললে কাগজই বেচতে হইতো সারাজীবন!”

    “ভুইলা যাইয়ো না ওই কাগজের ব্যবসাটাও আমার বাবার থিকা টাকা নিয়া শুরু করছিলা!”

    “পাইছে এক কথা! তোমার বাপ-ভাইরে এরপর যা দিছি দশ কোটির কম হইবো না…লাখ টাকার খোটা দিও না আমারে।”

    “খোটা দিমু ক্যান? মনে করায়া দিলাম।”

    “মনে আছে আমার, ভুলি নাই,” তিক্তমুখে বলল আলভীর বাবা। “মনে আছে দেইখ্যা-ই তোমার আকাইম্যা ভাইটারে জাহান সিটিতে এক বিঘার প্লট দিছি, ছোটো বইনটারে দশ কাঠার প্লট দিয়া বিল্ডিংও তুইল্যা দিছি।” নিজের রাগ প্রশমিত করার জন্য জোরে জোরে শ্বাস নিলো।

    সিতারা বেগম অবশ্য এসব কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারলো না।

    “তোমার বাপে আমারে চাইর লাখ দিছিল আর তোমার ভাইরে দিছিল আশি লাখ। আইজকা সে কই আর আমি কই!”

    এবারও চুপচাপ হজম করলো শাহজাহান করিমের সহধর্মিনি।

    “আমারে বললেই হইতো, তুমি ক্যান এইসব করতে গেলা?”

    “ক্যান, আমি করলে সমস্যা কী? খালি তুমিই কইরা যাইবা, আমি পারুম না?”

    “বেক্কল কুনহানকার!” বিড় বিড় করে বলল জাহান গ্রুপের মালিক।

    “আমার সইয়ের মাইয়ারে নিজের পোলার বৌ কইরা ঘরে তুলছি, আমার একটা দায়িত্ব আছে না?”

    গ্রিন গ্রুপের হাকিম সাহেবের স্ত্রীর সঙ্গে সিতারা বেগমের সখ্যতা বহু কাল আগের। ছোটোবেলায় তারা সই পাতিয়েছিল, তখন দুই বাড়ির মানুষজন বিয়ে বাড়ির মতোন অনুষ্ঠান করে আত্মীয়স্বজন আর পাড়া- প্রতিবেশিদের খাইয়েছিল। এক সময় এমন রেওয়াজ ছিল এ দেশে, বিশেষ করে গ্রামগুলোতে। এখনকার ছেলেমেয়েদের এসব বললে কিস্সা-কাহিনি মনে করবে। সেই বাল্যকালের সইয়ের মেয়ে মাহিকে শখ করে ছোটো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল সিতারা।

    “আগেই আলভীরে কইছিলাম মাইয়াটার লগে যেন না মেশে, ও আমার কথা শুনে নাই।”

    এটা অবশ্য শাহজাহান করিমের জানা ছিল না। তার স্ত্রী তাকে এ নিয়ে কিছু বলেনি। “তুমি এইটা কেমনে জানলা?”

    “মাহি কইছিল।”

    “ওয় কী কইরা জানলো এইটা?”

    স্ত্রীর মুখে বাঁকা হাসি। “যেভাবে আমি জানছিলাম তোমার পেয়ারের মুশতারির কথা!”

    একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো জাহান গ্রুপের মালিক। বহুকাল আগে যৌবনের দিনগুলোতে, সিতারা বেগম তখন দুই সন্তানের জননী, মুশতারি নামের এক বিহারী মেয়ের প্রেমে পড়েছিল সে। অনেক সতর্কতার পরও তার স্ত্রী কিভাবে যেন জেনে গেছিল।

    “ঠিক কইরা কও, ওয় কেমনে জানলো এইটা?”

    “ওই যে ফেসবুক না কী আছে…ওইখান থিকা জানছে।”

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল শাহজাহান। “আমারে বললা না ক্যান?” প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাইলো।

    “তোমারে কইলে তুমি করতে দিতা?” আবারো মুখ ঝামটা দিলো। “তুমি করতা হিসাব! কোনটা করলে লাভ হইবো, কোনটা করলে লস হইবো…জীবনেও করতে দিতা না।”

    “এত বড় একটা কাম করবা আর হিসাব করবা না?” চটে গেল আবার। “এই যে কামটা করছো, কী লাভ হইছে?”

    অক্ষম রাগে অল্প বয়সিদের মতো হাত কচলালো সিতারা বেগম। “বহুত হিসাব করছি, হিসাব কইরা কাম হয় নাই। আলভী আমার মাথা ছুঁইয়া কসম খাইছিল ঐ মাইয়াটার লগে আর মিশবো না। কিমুন পোলা, মায়ের মাথা ছোঁওনের পরও মেলামেশা বন্ধ করে নাই।

    “তুমি কেমনে জানলা ওয় মেশে?” সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো শাহজাহান “মাহি কইছে। ফেসবুকে ওর এক বান্ধবী সব জানায়া দিছে ওরে, ছবিও দিছে।”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো জাহান গ্রুপের শাহজাহান। এই ফেসবুক জিনিসটা সে এখনও বোঝে না। শুধু জানে, আজকাল অনেক অঘটনের পেছনে এটা ভূমিকা রাখে। এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আলভীর মেয়েবাজির কথা তার কানেও যায় কিন্তু এ আর এমন কী। এসব কি আমলে নেয়ার মতো বিষয়? ছেলেমানুষ একটু আধটু এদিক সেদিক যেতেই পারে, দেখতে হবে শেষ পর্যন্ত ঘরে ফিরে আসে কি না। তাছাড়া বড় ছেলের অপকর্মের পর এসব মেয়েবাজি নিয়ে মনে মনে এক ধরণের স্বস্তিই পায় সে-অন্তত লাইনেই আছে, বড়টার মতো বেলাইনে যায় নাই!

    “বাজাইরা মাইয়াটা-ই যত্ত নষ্টের মূল। আর কিছু না, টাকার লোভে আলভীর লগে জড়াইছে।”

    “বাজারের মাইয়ার কাছে ভালা মানুষ যায় না, তোমার পোলায় গেছে। “ মুখ ঝামটা দিলো স্ত্রী। “ব্যাটা মানুষ যাইবো-ই…সাধু হইলেও যাইবো বদমাইশ হইলেও যাইবো…পুরা বাপের মতো হইছে!”

    শেষ কথাটা শুনে রাগ হলো না শাহজাহান করিমের বরং মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। “বাপের মতো হইছে বইল্যা-ই মুখ দেখাইতে পারতাছো, মামুগোর মতো হইলে আর মুখ দেখাইতে হইতো না!”

    সিতারা বেগম ফুঁসে উঠলেও নিজেকে সংবরণ করলো। তার বড় ছেলের নামও আজকাল পারতঃপক্ষে এ বাড়িতে উচ্চারিত হয় না। যে কীর্তি করে বিদেশে গেছে, সেটা তাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনের জন্যই হৃদয়বিদারক ছিল। একই কাজ তার বড় ভাইও করেছে কিন্তু বাইরের লোকজন খুব একটা জানতো না বলে বেঁচে গেছিল তারা।

    “আকবররে দিয়া করাইছো কামটা, না?” জানতে চাইলো শাহজাহান।

    সিতারা বেগম এ কথার কোনো জবাব দিলো না।

    তার স্ত্রী না বললেও সে একদম নিশ্চিত, কাজটা আকবরই করেছে। বোনের কথায়-ই সে পুরো ব্যাপারটা গোপন রেখেছিল। এই ভুলের খেসারত দিয়েছে নিজের জীবন দিয়ে। তাকে বলা উচিত ছিল। যদি বলতো, কোনোভাবেই এটা করতে দিতো না। সবকিছু ম্যানেজ করতো অন্যভাবে। একদম আওয়াজ ছাড়া।

    “কিছু কইলেই তো ছ্যাৎ কইরা ওঠো,” শান্ত কণ্ঠে বলল এবার। “কত্তো বড় ভুল করছো সেইটা যদি জানতা!”

    স্বামীর দিকে তাকালো সিতারা বেগম।

    পরিহাসের হাসি ফুটে উঠল শাহজাহান করিমের ঠোঁটে। “তোমার মামাতো ভাইয়ের শালা ছাড়াও আমাগো এক কর্মচারি খুন হইছে। আর আকবর যারে দিয়া কাম করাইছে ওয়-ও শ্যাষ! বুঝবার পারছো কী করছো তুমি?”

    সিতারা বেগম আবারো হাত কচলাতে শুরু করলো। “সব ভেজাল লাগছে ওই মাইয়াটার ঘটনা থিকা।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো শাহজাহান। “ওই মাইয়াটা যে প্রেগন্যান্ট আছিল জানতা তুমি?”

    “হের লাইগ্যা-ই তো সরায়া দিছি!” গর্বিত ভঙ্গিতে বলল মিসেস শাহজাহান। যেন নিজের কাজের যুতসই একটা কারণ পেয়ে গেছে এবার। “আলভীরে ফাঁসায়া দিছিল, বিয়ার লাইগ্যা চাপ দিতাছিল।”

    আক্ষেপে মাথা দোলালো জাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান। আবারো বলতে ইচ্ছে করলো মাইয়া মানুষ একটু বেশি বোঝে কিন্তু সেটা আর বলল না। “তারপরও তুমি এই কামটা করতে পারলা?”

    সিতারা বেগম বুঝতে পারলো না স্বামীর কথাটা। চোখ পিট পিট করে তাকালো।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল জাহান গ্রুপের মালিক। “খুন হইলে, সুইসাইড হইলে যে পোস্ট মর্টেম করা হয়, জানো না?”

    আলভীর মা এখনও বুঝতে পারছে না তার স্বামী কী বলতে চাচ্ছে।

    “পোস্ট মর্টেম করলে তো বাইর হইয়া যায় প্রেগন্যান্ট কি না।”

    “এইটা জানলে কী সমস্যা?”

    “ বেক্কল মাইয়া মানুষ!” কথাটা না বলে পারলো না শাহজাহান করিম। “তিনজন মরছে, এইবার তোমার পিছনেও লাগবো…ওই খেয়াল আছে?”

    মিসেস শাহজাহান বিস্ফারিত চোখে তাকালো স্বামীর দিকে।

    অধ্যায় ৫৮

    কায়সারকে দেখেই জেফরি বেগ বুঝতে পারলো সে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।

    ঘন্টাখানেক আগে এসএমএস পাঠিয়ে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। জামানকে বিদায় দেবার পর তার মনে হয়েছে জাহান গ্রুপের সিকিউরিটি চিফের কথাটা শোনা দরকার। এই লোক তাকে আগেই সাবধান করে দিয়েছিল আলভীর ব্যাপারে কিন্তু সেটার গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। এবার কী বলে শোনার জন্যই কল করে তাকে। কিন্তু কায়সার ফোনে কিছু বলতে চাচ্ছিল না, অগত্যা তার ফ্ল্যাটে চলে আসতে বলে।

    সোফায় জড়োসরো হয়ে বসে আছে কায়সার। “স্যার, বিশ্বাস করেন আলভী যে এমন কাজ করবে আমিও বুঝতে পারিনি।”

    জেফরি বেগ হ্যাঁ-না কিছুই বলল না। সাবেক পুলিশকে ভালো করে লক্ষ্য করলো। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, যেন মৃত্যুভয় জেঁকে বসেছে তার মধ্যে।

    “আমি তাকে বলেছি, আপনার যেন কিছু না করে…বড় স্যারও আমাকে ডেকে বলে দিয়েছিলেন আপনার কোনো ক্ষতি যেন না করে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটর।

    “যতো নষ্টের গোড়া ঐ ফারহান সাহেব,” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল। “আমাকে বাদ দিয়ে তার সঙ্গে প্রাইভেট রুমে মিটিং করেছিল আলভী।”

    জেফরি এবারও কিছু বলল না, অপেক্ষায় থাকলো বাকিটা শোনার জন্য।

    “কাজটা করেছিল ওদের পুরনো এক লোক, ওর লাশও পাওয়া গেছে জাহান সিটিতে!” চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠল তার।

    “রেবার কথা ওরা কিভাবে জানতে পারলো?” শীতল কণ্ঠে জানতে চাইলো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর।

    ঢোক গিলল কায়সার। “তা তো জানি না, স্যার। এটা কিভাবে জানলো কে জানে!” কপালের ডানপাশটা চুলকালো। “আপনি তো এখন ফেমাস, পত্রিকায় আপনাকে নিয়ে লেখা ছাপা হয়, ওখান থেকে জানতে পারে।”

    দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো জেফরির ভেতর থেকে। সাবেক এই পুলিশ কতোটুকু সত্যি বলছে সে জানে না, তবে ব্ল্যাক রঞ্জুকে গ্রেফতার করার পর পত্রিকায় তার উপরে যে কয়টা ফিচার ছাপা হয়েছিল তার মধ্যে একটাতে রেবার কথা লেখা ছিল : মেধাবি এই ইনভেস্টিগেটর এখনও ব্যাচেলর। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে রেবা নামের একজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। খুব শিঘ্রই শুভ কাজটা সেরে ফেলবেন তিনি।

    ফিচারটা পড়ে অবাক হয়েছিল সে। রিপোর্টার কোত্থেকে জানতে পারলো এমন প্রশ্ন জেগেছিল তার মনে। নিশ্চয়ই হোমিসাইডের কেউ বলেনি। যাই হোক, ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশি মাথাও ঘামায়নি। সাংবাদিকেরা এর চেয়েও অনেক বেশি গোপনীয় খবর বের করতে পারে, সেদিক থেকে দেখলে ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে প্রেম করে যে মেয়ের সঙ্গে তার খবর জানাটা কী আর এমন কঠিন কাজ।

    “স্যার, আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ!” অনেকটা আর্তনাদ করে বলল কায়সার।

    অবাক হলো জেফরি বেগ, ভুরু কুঁচকে তাকালো সাবেক সহকর্মির দিকে।

    “আমি যা করেছি নিজের পরিবারের জন্যই করেছি। জাহান গ্রুপে কাজটা নিয়েছি শুধুমাত্র সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে,” একটু থামলো সে। “আমার এক ছেলে এক মেয়ে…দেরি করে বাচ্চা নিয়েছিলাম…ওদের বয়স বেশি না,” প্রায় কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা হলো। “আমার কিছু হয়ে গেলে ওদের…” কণ্ঠ ধরে এলো তার।

    লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। “তুমি আমাকে এ কথা কেন বলছো, কায়সার? তোমার কি ধারণা আমি এসব করাচ্ছি? এই ফ্ল্যাটে বসে দূর থেকে সবকিছু কন্ট্রোল করছি?”

    ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো সাবেক পুলিশ। ভয়ার্ত চোখেমুখে ঢোক গিলল সে।

    “তোমার অবস্থাটা বুঝতে পারছি কিন্তু এসব কথা আমাকে বলছো কেন সেটাই বুঝতে পারছি না।”

    “প্লিজ, স্যার…ভুল বুঝবেন না,” অনুনয় করে বলল কায়সার আহমেদ। “আমি আসলে খুব ভয়ে আছি, একদিনে তিন-তিনটা খুন হয়ে গেছে…আমার জায়গায় আপনি থাকলেও ভয় পেতেন।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি।

    কয়েক মুহূর্ত অপলক আর ভীতসন্ত্রস্ত চোখে চেয়ে রইলো কায়সার, তারপর জোরে জোরে মাথা নাড়লো। “আমি যেহেতু জাহান গ্রুপের সিকিউরিটির কাজ করি, আলভীর খুব ঘনিষ্ঠ, আমিও তো টার্গেট হতে পারি, পারি না?”

    “তোমার কি ধারণা, ঐ লোক তোমাদের পেছনে লেগেছে?”

    চোখদুটো পিট পিট করে তাকালো সিকিউরিটি চিফ। “ঠিক তা না, স্যার।”

    “তাহলে?”

    “আ-আলভীর পেছনে লেগেছে, ওকে না পেয়ে ক্লোজ সার্কেলের লোকজনকে ধরছে।”

    “কেন?”

    “মনে হয় আলভীর নাগাল পেতে চাইছে।”

    “যারা মারা গেছে তারা কি জানতো আলভী কোথায় আছে এখন?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জাহান গ্রুপের কর্মকর্তা। “জানতো, স্যার… মঙ্গু বাদে বাকি দুজনেই জানতো।”

    “তুমিও জানো?”

    কয়েক মুহূর্ত কিছু না বলে অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো জাহান গ্রুপের সিকিউরিটি চিফ। “জ্-জানি, স্যার।” সামান্য তোতলালো আবার।

    “আলভীর নাগাল পেলে কী করবে ঐ লোক?” স্থিরচোখে চেয়ে বলল হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। “বিদেশে গিয়ে ওকে মারবে?”

    “তাই তো মনে হচ্ছে।”

    “এটা কি সম্ভব?” জেফরি বেগ মাথা দোলালো। “আমার কাছে তো অসম্ভব মনে হচ্ছে।”

    লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিলো কায়সার। সত্যি বলতে তারও এটা মনে হচ্ছে না। “তাহলে কি সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ কেউ করছে এসব?”

    “তুমি বলতে চাচ্ছো, সোনিয়াকে আলভী মেরেছে?” পাল্টা জিজ্ঞেস করলো।

    “সত্যি বলতে, এই কাজটা আলভী করেনি।”

    জেফরি বেগ অপেক্ষা করলো আরো কিছু শোনার জন্য। এই লোকের আসল উদ্দেশ্যটা কী বুঝতে পারছে না। সত্যি সত্যি ভড়কে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, নাকি তার থেকে কথা বের করতে এসেছে?

    “আমারও ধারণা ছিল মেয়েটা ওর রক্ষিতা, পরে বুঝতে পেরেছি ও আসলে মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছিল। কতোটা সিরিয়াস ছিল, জানি না।”

    “তাহলে ওকে কে মারলো?” ভুরু কুঁচকে গেল জেফরি বেগের।

    কায়সার ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো তার দিকে। আবারো ঢোক গিলল সে।

    “এ ব্যাপারে তোমার রিজার্ভেশন থাকলে আমাকে বলার দরকার নেই।”

    “না, স্যার…আপনাকে বলতে সমস্যা নেই। হয়তো বিশ্বাস করবেন না, কাজটা আসলে করিয়েছে আলভীর মা।”

    সত্যি বলতে তাজ্জব বনে গেল জেফরি বেগ। “ওর মা?!”

    “জি, স্যার। আলভী চেয়েছিল মেয়েটা যেন অ্যাবরশন করে ফেলে…এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু চাপ দিচ্ছিল।”

    “তুমি কী করে জানলে এটা?”

    “জাহান গ্রুপে এসব কাজ করতো আকবর সাহেব। মিসেস শাহজাহানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিল ঐ লোক। জেল থেকে বের হয়ে আকবর হাসান আমাকে এটা বলেছিলেন। স্যারের ওয়াইফের কথা শুনে যে বিরাট বড় ভুল করেছে সেটা বুঝতে পারছিল। ম্যাডাম তাকে বলেছিলেন কথাটা যেন কেউ না জানে, বিশেষ করে শাহজাহান স্যার আর আলভী।”

    বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটরের। কিন্তু জাহান গ্রুপ বলে কথা। নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে জমি দখল করতে গিয়ে কতো মানুষকে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এরকম একটি পরিবারের কারো পক্ষে খুন-খারাবি করা মামুলি ব্যাপার। কিন্তু মায়ের বয়সি বৃদ্ধ একজন মহিলা অল্প বয়সি এক মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করিয়েছে শুধু এটুকুতেই তার যতো বিস্ময়। হোমিসাইডের দীর্ঘ কর্মজীবনে মেয়েদেরকে, বিশেষ করে মায়ের বয়সি কাউকে খুব বেশি অপরাধ করতে দেখেনি।

    “আলভীর বিয়েটা দিয়েছিলেন ওর মা, গ্রিন গ্রুপের মালিকের ওয়াইফ উনার বান্ধবী, সেই বান্ধবীর একমাত্র মেয়েকে ছেলের বউ করে ঘরে এনেছিলেন।”

    “আলভী এটা জানে?”

    মাথা দোলালো কায়সার। “দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত জানতো না, এখন জানে কি না বলতে পারবো না আমি।”

    “শাহজাহান সাহেব জানে তো?”

    “জি, স্যার…আমি-ই জানিয়েছি। উনি আমাকে বলেছেন এটা যেন আলভী না জানে,” কথাটা বলে মাথা নিচু করে ফেলল।

    “রেবার কাজটাও কি এই খুনিই করেছে,” আস্তে করে বলল জেফরি। “আলভী নিশ্চয়ই কাজটা সরাসরি খুনিকে দেয়নি?”

    স্থিরচোখে চেয়ে রইলো জাহান গ্রুপের সিকিউরিটি চিফ।

    “আকবর হাসান তখন জেলে ছিল, তাহলে ওটার ব্যবস্থা কে করেছে?”

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল কায়সার। “যে করেছে সে এখন বেঁচে নেই, স্যার।”

    ফারহান ওমর! বুঝতে পারলো জেফরি বেগ। লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “আমি আর কী বলবো, শুধু বলবো তোমার উচিত নিজের দিকটা দেখা। জাহান গ্রুপে তুমি চাকরি করো, ওদের জন্য জীবনবাজি রাখার তো দরকার দেখছি না।”

    আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিলো কায়সার আহমেদ। “ঠিক বলেছেন, স্যার।” তারপর কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “আমি কি আপনার ওয়াশরুমটা একটু ইউজ করতে পারি?”

    “শিওর। এই যে…” ড্রইংরুমের বাঁ-দিকে কমন ওয়াশ-রুমটার দরজা দেখিয়ে দিলো।

    চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেল কায়সার।

    জেফরি বেগ বুঝতে পারলো তার সাবেক কলিগ খুব টেনশনে পড়ে গেছে, নার্ভাস ব্রেকডাউনও হচ্ছে সম্ভবত। টেনশনের সময় ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ তৈরি হয়।

    একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে গেল তার ভেতর থেকে। স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য এই মেধাবি পুলিশ অফিসার চাকরি ছেড়ে জাহান গ্রুপের সিকিউরিটি চিফের দায়িত্ব পালন করছে। তার ভাষায়, এই চাকরি তাকে বাড়ি-গাড়ি আর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিয়েছে। যেন এগুলোই জীবনের সবকিছু!

    ফাদার হোবার্টের একটা কথা মনে পড়ে গেল তার : স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন গড়ার লোভে যে মানুষ নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেয় সে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ। আর ক্ষুদ্র মানুষ তুচ্ছ জিনিসের জন্যেও অনেক কিছু করতে পারে। এদেরকে বিশ্বাস করতে নেই।

    একটু পর ওয়াশ-রুমের দরজা খুলে বের হয়ে এলো কায়সার। জেফরির বিপরীত দিকের সোফায় বসে সামনের টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা তুলে ঢক ঢক করে পান করলো। “স্যার, আমি তাহলে আসি,” গ্লাসটা রেখে বলল। “আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন, প্লিজ। আমি আসলে খুব ভয়ে আছি, বুঝতেই পারছেন।”

    উঠে দাঁড়ালো কায়সার, নিঃশব্দে সালাম দিয়ে চুপচাপ বের হয়ে গেল।

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে মাথা দোলালো জেফরি বেগ, উঠে দরজাটা বন্ধ করে ফিরে আসার সময় ছোট্ট একটা জিনিস চোখে পড়লো তার-টেবিলের উপরে একটা বিজনেস কার্ড। হাতে নিয়ে দেখলো সেটা। অন্য কারোর বিজনেস কার্ড আর সেটার উল্টোপিঠে ইংরেজিতে একটা ঠিকানা লেখা : অ্যাড্রেস বিচ রিসোর্ট, স্কাই ম্যানশন পেন্থাউজ ০০৬, জুমেইরাহ্ বিচ, দুবাই।

    বন্ধ দরজাটার দিকে তাকালো জেফরি, এইমাত্র সেখান দিয়ে বের হয়ে গেছে কায়সার। সম্ভবত পানি খাওয়ার সময় আলগোছে এটা রেখে গেছে।

    ফাদার হোবার্টের উপদেশটা আবারো মনে পড়ে গেল তার।

    অধ্যায় ৫৯

    আক্ষরিক অর্থেই সিদ্ধান্তটা হুট করে নিয়েছে বাস্টার্ড।

    মাঠ কেমন সেটা মাঠে না নামলে বোঝা যায় না- দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে জানে সে। তার কাজের ধরণটাই এমন, সব সময় পরিকল্পনা করে কিছু করা যায় না। দূর থেকে যে হিসেব করা হয় সেটা আন্দাজের উপরে ভিত্তি করে; ওরকম হিসেব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেলে না। অনেক সময় মাঠে নেমেই দেখে নিতে হয়, তারপর সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করতে হয়।

    শিকার করতে গেলে আগে বনের ভেতরে ঢুকতে হবে!

    গত সপ্তাহে অমূল্যবাবুকে কথাটা বলতেই তার দিকে স্থিরচোখে তাকিয়ে ছিল কয়েক মুহূর্ত। দুবাইর কথা শুনে এতটা অবাক হবার কী আছে বুঝতে পারেনি অবশ্য। “ওই লোক এখন দুবাইতে আছে?!”

    মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল বাস্টার্ড।

    পত্রিকায় জাহান গ্রুপের দুই কর্মকর্তার খুন হবার সংবাদটি ভালোমতোই এসেছিল। সম্ভবত এমন খবর চেপে যাওয়া হলে কথা উঠতে পারে, সেজন্যে মিডিয়াগুলোকে প্রভাবিত করতে চায়নি তারা। একদিনে দু-দুজন কর্মকর্তা খুন হবার ঘটনা সারা দেশেই আলোড়ন তুলেছে। বাবুর চোখেও পড়েছে খবরটি। চোখে পড়েছে বললে ভুল বলা হবে, কানে গেছে তার! ইদানিং অনলাইন-অফলাইন থেকে খবর বাছাই করে বাবুকে পড়ে শোনায় নন্দ। তবে সেটা বিকেলে। সকাল সকাল পত্রিকা পড়ার পুরনো অভ্যাসটি বাদ দিয়েছে অমূল্যবাবু।

    “এটাও কি সমাজ সেবা?” গম্ভীর কণ্ঠে এমনভাবে কথাটা বলেছিল যেন নতুন কোনো পাগলামিতে আক্রান্ত হয়েছে সে। বাবুর খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, যে লোক দীর্ঘদিন ধরে তোমার পেছনে লেগে আছে, তার হয়ে কাজ করতে চাচ্ছো? পরক্ষণেই তার মনে পড়ে গিয়েছিল, যে কি না চেনে না জানে না এরকম একজনের জন্য কুমিল্লার তিতাস পাড়ে গিয়ে কাজ করে এসেছে, তাকে এটা বলা অনর্থক।

    একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবু বলেছিল, “ওখানে গিয়ে তুমি ওই লোককে পাবে?”

    “জানি না।”

    এমন জবাব শুনে সত্তুরোর্ধ মানুষটি অবাক হয়নি, হতাশ হয়েছিল। “না জেনেই অতো দূরে যেতে চাচ্ছো?”

    মাথার এক পাশ চুলকে নিয়েছিল সে। “ওখানে গিয়ে দেখি কী অবস্থা…হলে হলো না হলে ফিরে এলাম।”

    অমূল্যবাবুর ভুরুজোড়া সামান্য কপালে উঠে গেছিল, এরকম কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারপর আরেক বার গভীর করে শ্বাস নিয়ে বলেছিল, “দেখি, কী করা যায়।”

    পার্থিব রায় চৌধুরি নামে তার আনকোড়া পাসপোর্ট, সেখানে এখনও কোনো দেশের ভিসা নেই। এই পাসপোর্ট দিয়ে দুবাইতে যেতে হলে বাবুর সাহায্য লাগবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, অমূল্যবাবু এই সিদ্ধান্তটি যতোই অপছন্দ করুক, শেষ পর্যন্ত সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেবে। এর কারণ, বাবু ভালো করেই জানে সে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে টলানো যাবে না। সাহায্য না করলে অন্য কোনোভাবে চেষ্টা করবে।

    তিন-চার দিন পরই দুবাই যাবার টিকেট আর কোথায় থাকবে সেটার ব্যবস্থা করে দেয় বাবু। সি ই এ সিদ্দিকির একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বানিয়ে তাকে জরুরি কোনো কাজে দুবাইতে পাঠানো হচ্ছে-এরকম কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছে।

    “করাচি আর দুবাই এক না,” পাসপোর্ট আর টিকেটসহ কাগজপত্রগুলো দেবার সময় বলেছিল অমূল্যবাবু। “তুমি যদি মনে করে থাকো দুবাই খুব সহজ জায়গা তাহলে ভুল করছো। করাচি একটা জঙ্গল, শিকার করা যায় সেখানে…দুবাই একটা চিড়িয়াখানা, শিকার করার জায়গা না ওটা।”

    মুচকি হেসেছিল বাস্টার্ড। “আমি কোনো কিছুকেই সহজ মনে করি না। ওখানে গিয়ে দেখবো সুযোগ আছে কি না। না হলে চলে আসবো, ঝুঁকি নেবো না।”

    কথাটা শুনে তার দিকে স্থিরচোখে চেয়ে ছিল লোকটা। বাস্টার্ড বুঝতে পারছিল বাবু কী ভাবছে। কেবল ঝুঁকির কথা চিন্তা করে সে পিছু হটেছে, এমন নজির কমই আছে।

    “আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখো… হোয়াটসঅ্যাপে।” আর কিছু বলেনি অমূল্যবাবু।

    সত্যি বলতে, নিজেকে যতোটুকু চেনে, পরিস্থিতিতে পড়লেই সমাধানের পথ খুঁজে পায় সে। অন্যদের সঙ্গে তার একটা পার্থক্য আছে,

    কঠিন অবস্থায় মাথা আউলে যায় না বরং দ্রুত কাজ করতে শুরু করে। সব সময়ই এমনটা হয়ে আসছে।

    ঐ দুজন ঘনিষ্ঠ লোক মারা যাবার আগে তাকে বলেছে, দুয়েক মাসের আগে আলভী দেশে ফিরে আসবে না। এরপরও যে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবটাই নির্ভর করছে এখানকার পরিস্থিতির উপরে। কিন্তু সে জানে, তিন-তিনটা খুনের পর আলভীর এই এক্সোডাসের মেয়াদ আরো বাড়বে, সহসা দেশে আসবে না সে। ফিরে এলেও কঠিন নিরাপত্তা বুহ্যের মধ্যে থাকবে। রাশান দেহরক্ষি ছাড়া এক পা-ও বাইরে যাবে না। হয়তো বুলেটপ্রুফ ভেস্টও ব্যবহার করবে। তখন তার সুকঠিন নিরাপত্তা ভেদ করে আঘাত হানাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এসব কারণে দুবাইকে-ই বেছে নিয়েছে সে।

    যেকোনো উন্নত দেশের কসমোপলিটান শহরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে মরুর বুকে গড়ে ওঠা এই শহরটি। এখানকার সিকিউরিটি সম্ভবত টপনচ। ইন্টারনেট থেকে যে জ্ঞান লাভ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় জিরো ক্রাইমের এই শহরটি একটু বেশিই আধুনিক। দুনিয়াতে নতুন যতো প্রযুক্তি আসে, এখানকার উচ্চাভিলাষী শেখ সবার আগে সেগুলো লুফে নেয়। সম্ভবত কয়েক লক্ষ সিসিক্যাম আছে ওখানে।

    তারপরও এসব তথ্য তাকে হতাশ করেনি, কপালে চিন্তার ভাঁজও ফেলেনি। ভালো করেই জানে, আলভী নিজেকে ঐ সুরম্য আর ব্যয়বহুল পেন্থাউজে বন্দি করে রাখবে না। দুবাইতে নিজেকে নিরাপদ ভাবছে, রাশান দেহরক্ষিদেরও সঙ্গে করে নিয়ে যায়নি। ঘুণাক্ষরেও ভাবছে না ওখানে কেউ তার উপরে আঘাত হানতে পারে।

    অন্য দিকে বাস্টার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা, ওরা কেউই তার কথা জানে না-যারা জানতো তারা সবাই মরে গেছে! মেরে ফেলেছি! সঙ্গে সঙ্গে শুধরে দিলে নিজেকে।

    এখন প্লেনের বিজনেস ক্লাসে বসে হাতঘড়িতে সময় দেখলো সে। ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজের ঢাকা টু দুবাইর সরাসরি ফ্লাইটটা পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, বাকি আছে আর মাত্র দশ-পনেরো মিনিট।

    দুবাইর আল আমাল স্ট্রিটের একটি বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে বাবু, ওখানেই উঠতে হবে তাকে। সম্ভবত বাড়িটা সি ই এ সিদ্দিকির নিজের, কিংবা তার কোনো ব্যবসায়িক পার্টনারের। গুগল করে দেখেছে, ওখান থেকে আলভীর পেন্থাউজটি খুব বেশি দূরে নয়।

    বিমানবালার ঘোষণা শুনে গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো বাস্টার্ড। দুবাই তাকে চমকে দেবে নাকি হতাশ করবে জানে না। তবে দেশের বাইরে গিয়ে শিকার করার পুরনো রোমাঞ্চটা অনুভব করতে শুরু করেছে আবার।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
    Next Article অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }