Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প399 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কন্ট্রোল – ৭৫

    পোল্যান্ড আইল্যান্ডটা ঘুরে দেখার জন্য বের হয়েছে বাস্টার্ড। সৈকত ধরে হাঁটতে হাঁটতে পুরো দ্বীপটা ঘুরে আসতে চাইছে সে।

    ভিলায় বিশ্রাম নিচ্ছে কিসিঞ্জার। ছরি ছাড়া হাঁটতে পারে না ঠিকমতো। এই বালুকাবেলায় ছরি দিয়ে হাঁটাও কষ্টকর। লোকটার সময় শেষ হয়ে এসেছে, মনের জোরে বেঁচে আছে এখনও। হয়তো আরো এক-দু মাস টিকে যাবে। তবে তার প্রাণশক্তি শেষ হবার পথে। একটানা বেশিক্ষণ কথা বললেও হাঁপিয়ে যায়।

    পোল্যান্ড আইল্যান্ডে দুটো জেটি আছে। এখানে যেসব স্পিডবোট, ইয়ট আর ওয়াটার ট্যাক্সি আসে সেগুলো এই দুই জেটিতেই নোঙর করে। সে খেয়াল করেছে জেটিতে সব সময়ই পাঁচ-ছয়টা নৌযান নোঙর করা থাকে—বেশিরভাগই স্পিডবোট। কিন্তু সেগুলো একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় থাকে সেগুলো, কোনো পাহারাদার কিংবা সিকিউরিটি চোখে পড়েনি। সত্যি বলতে তার কোনো দরকারও নেই। এই দ্বীপে যারা আসে তারা কেউ বোট চুরি করে পালাবে না। তাদের পাসপোর্ট আর আইডেন্টিকার্ডের কপি জমা থাকে ডেস্কে। কেউ যদি ভুলেভালেও পালায় দুবাইর উপকূলে পৌঁছালেই ধরা পড়ে যাবে। বোটটা নির্দিষ্ট কোথাও নোঙর করতে হবে, আর সেটা করতে গেলেই কাগজপত্র দেখতে চাইবে।

    এসব কথা সে রিসেপশনিস্টদের একজনের সঙ্গে আলাপ করে জেনে নিয়েছিল নিতান্তই প্রথমবার আসা একজন হিসেবে। রিসেপশনিস্ট তাকে একটুও সন্দেহ করেনি। ভেবেছে এক ধনী ক্যান্সার পেশেন্টের কেয়ার- গিভার, জীবনে কখনও এরকম জায়গা দেখেনি, তাই কৌতুহল থেকে জানতে টানতে চাচ্ছে।

    রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে সব শোনার পর জেটিতে নোঙর করা বোটগুলোর আশা ছেড়ে দিয়েছে সে। এখানে কিছু করে ওরকম একটা বোট নিয়ে পালানো যাবে না। অন্য কিছু করতে হবে, আর সেই চিন্তাটা করবে পরে। আগে আলভীকে ট্র্যাক করতে হবে, এখানকার কোন ভিলায় আছে সেটা জানতে হবে।

    প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা সময় নিয়ে নির্জন দ্বীপটা এক চক্কর দিয়ে আসার পথে বুঝতে পারলো, এখানে অন্যসব ভিলায়, রিসোর্টে কিংবা হোটেলের রিসেপশন ডেস্ক পর্যন্তই যাওয়া যাবে, তার বেশি না। বাইরে সিসিক্যাম না থাকলেও ভবনের ভেতরে, বিশেষ করে উপরে-নিচে ওঠা-নামা করার জায়গায় সিসিক্যাম রয়েছে। দুয়েকটা হোটেলে ঢুঁ মেরেই বুঝতে পেরেছে এটা।

    তার মানে আরেকটা হতাশা যোগ হলো- আলভী যেখানে আছে সেখানে ঢুকে কিছু করা যাবে না। ব্যর্থ মনোরথে নিজের ভিলায় ফিরে এলো বাস্টার্ড। প্রথম বেডরুমটায় উঁকি মেরে দেখলো কিসিঞ্জার এখনও ঘুমাচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হয় না লোকটার। দিনের বেলায় ক্লান্তিতে একটু ঘুমিয়ে পড়ে।

    কিসিঞ্জারের বেডরুমের দরজাটা বন্ধ করে নিজের ঘরে ফিরে এলো সে। জামা না পাল্টেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। পুরো দ্বীপটা এক চক্কর হেঁটে আসায় পা দুটো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার।

    চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো, এখানে আলভী কোথায় আছে সেটা কিভাবে জানতে পারবে। মাত্র তিন দিনের জন্য এসেছে, সেই সময় কয়েক দিন বাড়ানো যেতে পারে কিন্তু সেটা করতে গেলেও তাকে আগে জানতে হবে জাহান গ্রুপের সিইও আদৌ এখানে আছে কি না।

    এখানকার কোনো কর্মচারির কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সাহায্যই পাওয়া যাবে না। ভিলা-রিসোর্ট আর হোটেলগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের, ফলে কার গেস্ট কে এটা কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। গভীর করে শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো। একটা না একটা উপায় তো বের হবেই। শিকারের এত কাছে এসে পড়েছে, এত নির্জন আর অরক্ষিত একটা জায়গায় যদি কিছু করতে না পারে তাহলে কাজটা আরো বেশি কঠিন হয়ে যাবে।

    এমন সময় মেইন দরজার কলিং বেলটা মৃদু শব্দে বেজে উঠল। অবাক হলো না সে। রুম সার্ভিসের কেউ এসেছে সম্ভবত। হয়তো কোনো কম্প্লিমেন্টারি ড্রিঙ্ক দিতে এসেছে কিংবা অন্য কোনো দরকারে।

    বিছানা থেকে উঠে মেইন দরজার সামনে চলে গেল বাস্টার্ড। এখানকার লোকজন যথেষ্ট কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন, একবারই মাত্র বেল বাজিয়েছে, অস্থির হয়ে বার বার বাজায়নি। সম্ভবত ওদের ট্রেইনিংয়ের সময় এইসব আদব-কায়দা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।

    দরজাটা খুলে ফেলল বাস্টার্ড, দেখতে পেলো এক্সিকিউটিভ সুট-প্যান্ট পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।

    কিন্তু সেটা মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপরই বুঝতে পারলো, এই মুখটা সে অনেক আগে দেখেছিল!

    অধ্যায় ৭৬

    আইনাত!

    এমন ধাক্কা জীবনেও খায়নি বাস্টার্ড। দরজা খোলার পর যদি দেখতো ব্ল্যাক রঞ্জু পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে, কেবল তখনই এতটা ভড়কে যেতো সে।

    দীর্ঘদিন পর তাকে দেখে আইনাতের ঠোঁটে কেমন পরিহাসের হাসি ফুটে উঠল। “কী বলবো, দুনিয়াটা খুব ছোটো? নাকি গোল!” ইংরেজিতে বলল কথাটা। বাবলু যেহেতু উর্দু বলতে পারে না, করাচিতে থাকার সময় ইংরেজিতেই কথা বলতো তারা।

    বাস্টার্ড জানে মেয়েটাকে না চেনার ভাণ করার কোনো উপায় নেই, তাতে করে পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হবে।

    “একটু আগেও আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না, এখন শতভাগ নিশ্চিত।”

    এ কথার কোনো জবাব দিলো না বাবলু।

    “ভেতরে আসতে বলবে না?” বাঁকাহাসি দিয়ে বলল মওলানা ইউসুফের মেয়ে।

    “সরি, আসো,” দরজাটা পুরো খুলে দিলো

    “ভেবেছিলাম আমাকে না চেনার ভাণ করবে,” ঘরের চারপাশটা দেখলো। “কে এসেছে তোমার সঙ্গে? রিলেটিভ নাকি সত্যি সত্যি কেয়ার- গিভারের কাজ করছো আজকাল?”

    আইনাত এটাও জানে দেখে অবাক হলো বাস্টার্ড

    “অতো অবাক হবার কিছু নেই। এই ভিলাগুলো এইচআরএইচ গ্রুপের, আমি ওদের একজন এম্প্লয়ি।”

    এবার হিসেব মেলাতে পারলো। কিন্তু কাকতালটা মেনে নিতে কষ্টই হচ্ছে তার। করাচি তাকে চমকে দিয়েছিল, এখন দেখতে পাচ্ছে দুবাইও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। দু দুটো কাকতাল গভীর সন্দেহ তৈরি করছে তার মধ্যে। প্রথমে কিসিঞ্জারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল আলভীর পেন্থাউজের সামনে, আর এখন শিকার যখন তার নাগালের মধ্যে, এক যুগ আগের করাচির আইনাত চলে এসেছে একেবারে তার দোরগোড়ায়!

    “মনে হচ্ছে আমাকে দেখে খুশি হতে পারোনি তুমি!“

    “না, সেরকম কিছু না।”

    “মিথ্যুক!” মুচকি হেসে বলল আইনাত।

    অভিযোগটা মেনে নিলো বাস্টার্ড। তারা দুজন বসলো ভিলার সুপরিসর লিভিংরুমে, এখান থেকে বড় বড় কাচের ফ্রেঞ্চ জানালা দিয়ে সৈকত দেখা যায়।

    “গেস্টদের পাসপোর্ট-আইডিকার্ডের কপিগুলো কম্পিউটারে রাখা থাকে,” পায়ের উপরে পা তুলে দিয়ে বলল। “ওগুলো দেখার সময় তোমার ছবিটা দেখেছি। নাম অবশ্য ভিন্ন। আগের বার যেন কী নামে গিয়েছিলে করাচিতে?”

    কাঁধ তুলল বাস্টার্ড। “মনে নেই।”

    “ওহ্,” কৃত্রিম অবাক হবার ভাণ করলো মেয়েটা। “অনেক নাম তোমার, না?”

    সে বুঝতে পারছে তার মিশনটা শুধু ঝুঁকিতে পড়েনি, সে নিজেও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এটা কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। আইনাতের বাপকে খুন করার জন্য করাচিতে গিয়েছিল, আর নিজের মিশনটা সফল করার জন্য এই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয়ও করেছিল সে। তবে সত্যিটা হলো, মেয়েটার প্রতি মায়া-ও জন্মে গেছিল। আইনাত হয়তো সেটা কখনও বুঝতে পারবে না।

    “কেমন আছো তুমি?” কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বাস্টার্ড জানতে চাইলো।

    “এই যে দেখছো…দুবাইতে আছি, একটা জব করছি, এখানেই থাকি এখন।” তারপর গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো। “তুমি চলে যাওয়ার দুই বছর পর আবারো বিয়ে করেছিলাম, চার বছরের বেশি টেকেনি। বারো বছরের এক ছেলে আছে আমার,” একটু গম্ভীর হয়ে গেল কথাটা বলার পর। “আমার সেই প্রতিবন্ধী ভাইটার কথা মনে আছে তোমার?” হুট করে প্রসঙ্গ পাল্টালো। “ও আমার সঙ্গেই থাকে এখানে।”

    তারপর কয়েক মুহূর্তের নিরবতা।

    “তুমি বিয়ে করেছো?” অবশেষে আইনাতই সেই নিরবতা ভাঙলো।

    মাথা দোলালো বাস্টার্ড।

    “ভালো করেছো,” গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো। “তোমার আসলেই বিয়ে করা উচিত না।”

    “জানি।”

    পরিহাসের হাসি দেখা গেল আইনাতের ঠোঁটে। “পুরুষ মানুষ হয়তো অনেক রকমের হয় কিন্তু আমার কাছে স্রেফ দুই রকমের… ব্যবহার করে নয়তো অবহেলা করে!”

    কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করে, বুঝতে সমস্যা হলো না। “আমি কোন রকম?”

    কাঁধ তুলল মেয়েটি। “শুনতে ভালো লাগবে না তোমার।”

    মুচকি হাসলো পেশাদার খুনি।

    “আমি বোকার মতো অনেক পরে এটা বুঝেছি,” একটু চুপ করে থেকে আবার বলল, “আমি কি এখানে স্মোক করতে পারি?”

    “অবশ্যই,” বলল সে।

    “জানালাটা খুলে দাও।” পকেট থেকে ওরিস ব্র্যান্ডের একটা ন্যানো প্যাকেট বের করলো আইনাত। “তুমি তো মনে হয় স্মোক করো না?”

    “হুম,” ফ্রেঞ্চ জানালার কাচের কপাটটা খুলে দিলো সে।

    লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো মেয়েটি। দশ-বারো বছরে তেমন পরিবর্তন হয়নি। শুধু একটু গম্ভীর আর শান্ত হয়ে গেছে। কিংবা হতে বাধ্য হয়েছে। কর্পোরেট জগতের আদব-কেতাও রপ্ত করে ফেলেছে ভালোমতো।

    “দুবাই অনেক সিকিউরড জায়গা, বুঝলে?” সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বলল আইনাত। “এখানে কিছু করাটা বোকামি হবে।”

    বাস্টার্ড কথাটা খন্ডাতে গেল না, কোনো কিছু স্বীকারও করলো না।

    “আমি তোমার মিশন ভণ্ডুল করার মতো কিছু করবো না, তোমার কাজে বাধাও দেবো না। তারপরও এসব কেন বললাম, জানো?”

    মেয়েটার দিকে স্থিরচোখে চেয়ে রইলো পেশাদার খুনি।

    লম্বা করে সিগারেটে টান দিয়ে কিছু একটা ভাবলো। “থাক, তুমি এসব বুঝবে না।”

    “আমার উপরে অনেক রেগে আছো জানি,” আস্তে করে বলল বাস্টার্ড। “সরি!”

    আইনাত বড় বড় চোখে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো, সেই চোখদুটো টল টল করছে। “আচ্ছা, আমার ভাইকে মেরেছিলে কেন?”

    হুট করে প্রসঙ্গ পাল্টে এমন প্রশ্ন করাতে অবাক হলো বাস্টার্ড, নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো সে। কী বলবে বুঝতে পারলো না।

    “করাচিতে যে কারণে এসেছিলে সেটা তো করেছিলেই, ভাইকে কেন মারলে?”

    নিশ্চুপ রইলো বাবলু, মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো কেবল। নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামির মতো লাগছে। যা-ই বলবে আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো শোনাবে এখন। আর এ কাজটা করতে খুবই অপছন্দ করে সে।

    “কেনজানি মনে হয়, আমার জন্যই তুমি এটা করেছিলে!”

    সত্যি বলতে বাস্টার্ড অবাকই হলো। আইনাত যে এটা বুঝতে পারবে কখনও আশা করেনি।

    “তুমি বোধহয় বুঝতে পারছিলে ও থাকলে আমি কখনও মুক্তি পেতাম না।”

    মুচকি হাসলো পেশাদার খুনি। “শুনে ভালো লাগলো…তোমার উপকারে এসেছিল তাহলে।”

    “হ্যাঁ, সঙ্গে সঙ্গেই সায় দিয়ে বলল। “সেজন্যেই আমাকে কষ্ট দিলে ও মাফ করে দিয়েছি তোমাকে।”

    বাস্টার্ড কিছু না বলে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলো। চোস্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট টানছে ঠিকই কিন্তু তার চোখদুটো বেমানানভাবেই অন্য কিছু প্রকাশ করছে।

    “তুমি কি জানো, আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম?”

    “হুম।”

    “আমি কতো বোকা, তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম…সত্যি সত্যি!”

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল বাস্টার্ড। মেয়েটার সঙ্গে এমন প্রতারণা করতে তারও খারাপ লেগেছিল কিন্তু মিশনের সফলতার কারণে বাধ্য হয়ে করেছিল সে।

    “হাস্যকর শোনাচ্ছে কিন্তু এটাই সত্যি। কখনও ভালোবাসা পাইনি তো সেজন্যে হয়তো…” তার কণ্ঠ ধরে এলো।

    আইনাতের দীর্ঘশ্বাস আরো বেশি নাড়িয়ে দিলো তাকে। গভীর করে শ্বাস নিয়ে আস্তে করে বলল, “সরি অ্যাগেইন!”

    “উফ!” কপট ভঙ্গিতে বলল। “এসব বলো না তো…তোমার সঙ্গে যায় না।”

    চুপ মেরে রইলো বাস্টার্ড।

    “তুমি তোমার কাজ করেছো…” কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল,

    “আর আমি বোকার মতো একজন অ্যাসাসিনের প্রেমে পড়ে গেছিলাম…যে কি না আমার বাবাকে মারতে এসেছিল। হরিবল স্টোরি। ফিল্মের মতো, না?”

    মেয়েটাকে কী বলবে, কোনো কথা খুঁজে পেলো না সে।

    “কিন্তু তোমার উপরে আমার কোনো রাগ নেই,” সিগারেটে লম্বা করে টান দিয়ে বলল। “প্রথমে রাগ হয়েছিল, কষ্টও পেয়েছিলাম… অবুঝের মতো কান্নাকাটি করেছি, নিজেকে প্রতারিত মনে হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কী জানো, তোমাকে ঘেন্না করতে পারিনি!” একটু থেমে শ্বাস নিয়ে নিলো। “পরে বুঝলাম, তোমার কারণে আমি মুক্তি পেয়েছি, সেজন্যে তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।”

    মেয়েটার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালো বাস্টার্ড।

    “টার্গেট কে আমাকে বলার দরকার নেই… দুবাইর শেখ যে না সেটা বুঝতে পেরেছি। এই ম্যানমেইড আইল্যান্ডে কিছু বিদেশি টুরিস্ট ছাড়া আর কেউ নেই। তোমার স্বদেশি একজন আছে, সে হবে হয়তো। হু কেয়াস!”

    বাস্টার্ড বুঝতে পারলো, এই মেয়ে সব বুঝে গেছে। তার কাছে কোনো কিছু অস্বীকার করে লাভ নেই।

    “আমি জানি তুমি তোমার কাজ নিয়ে কিছুই বলবে না,” হেসে বলল কথাটা। “…জানতেও চাই না।”

    “বলতে পারি এক শর্তে,” আস্তে করে বলল।

    “কাউকে যেন না বলি?” মুখ টিপে হেসে ফেলল মেয়েটি।

    মাথা দোলালো পাসপোর্টে যার নাম পার্থিব রায় চৌধুরী। “না, পুরো গল্পটা শুনতে হবে।”

    ভুরু কুঁচকে গেল আইনাতের, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিলো। “আমার হাতে সময় আছে।”

    অধ্যায় ৭৭

    “আমার বাবারটাও কি এরকম কিছু ছিল?”

    সোনিয়া এবং রেবা হত্যাকাণ্ডের কথা শোনার পর বলল আইনাত।

    “না। ওটা কন্ট্রাক্ট ছিল। তোমার বাবার হাতে যে কয়জন নিহত হয়েছিল তাদের একজনের ছেলের…”

    ভুরু কপালে উঠে গেল মেয়েটার। “এটা তাহলে কন্ট্রাক্ট না?”

    কাঁধ তুলল বাস্টার্ড। “এটা অন্য কিছু… তুমি বুঝবে না।”

    দ্বিতীয় সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে মাথা নেড়ে সায় দিলো আইনাত। “তুমি চলে যাওয়ার পর বাবার অতীত নিয়ে আমি একটু ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম…এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের কর্মের জন্য দায়ি।”

    আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।

    “তুমি আমাকে নিয়ে এখনও কনফিউজড, তাই না?”

    মুচকি হেসে গাল চুলকালো কেবল।

    “আমার ধারণা আমি এখান থেকে চলে যাবার পরই তুমি চেকআউট করবে। সত্যি বলতে আমিও সেটা চাই.” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আইনাত। “তুমি চলে যাও, তাওফিক…এটাই তো তোমার আসল নাম, না?” একটু থেমে আবার বলল, “তোমার ঐ স্বদেশি বিজনেস টাইকুন পুরো একটা গ্যাং নিয়ে এসেছে এখানে…আট-নয়জন তো হবেই। খালি হাতে তুমি ওদের সঙ্গে কী করবে? খালি হাতেই তো এসেছো…ওয়াটার ট্যাক্সিতে ওঠার আগেই ভালো করে স্ক্যান করা হয়েছে, সঙ্গে কিছু থাকলে ধরা পড়ে যেতে নির্ঘাত।”

    “হুম,” ছোট্ট করে বলল বাস্টার্ড।

    “এতগুলো লোকের মধ্য থেকে কী করবে তুমি? কিচ্ছু করতে পারবে না। তুমি বরং চলে যাও।”

    সত্যি বলতে আইনাতের সঙ্গে দেখা হবার আগেই এরকমটা ভেবেছে। “কোনোভাবে যদি সফল-ও হও, এখান থেকে দুবাইর মেইনল্যান্ডে যেতে পারবে না। এখানকার সিকিউরিটি খুবই কড়া। আমার মনে হয় তুমিও সেটা জানো…জানো না?”

    “এ নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।”

    “তারপরও তুমি চেষ্টা করে দেখবে, তাই না?”

    মাথা দোলালো বাস্টার্ড। “এখন সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছি।”

    আইনাতের চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেল। “আমার জন্য?”

    “না,” মেয়েটার চোখে সরাসরি চোখ রেখে বলল। “অনেক বেশি মানুষ… সিকিউরিটিও অনেক টাইট।”

    “হ্যাঁ,” মাথা নেড়ে সায় দিলো মওলানা ইউসুফের মেয়ে। “ওই ভিলাতে তুমি ঢুকতেই পারবে না। আর ঢুকতে পারলেও খালি হাতে আট-দশজনকে কিভাবে মোকাবেলা করবে?”

    কাঁধ তুলল বাস্টার্ড। এটা করার প্রশ্নই ওঠে না। সে কাজ করে একা- লোন উষ্ণের মতো। চুপিসারে এগিয়ে যায় শিকারের কাছে, তারপর অলক্ষ্যে আঘাত হানে।

    “আশা করি তুমি নিজেকে ব্রুস লি ভাবো না,” মুচকি হেসে সিগারেটে পর পর দুটো টান দিলো।

    হেসে ফেলল বাবলু। “আমি অতোটা ছেলেমানুষ নই।”

    “হুম, তুমি অনেক বেশি হিসেবি…জানি,” সিগারেটটা শেষ করে সামনের নিচু টেবিলের উপর রাখা অ্যাস্ট্রেতে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। “যাই তাহলে। দশ দিনের লিভ নিয়েছিলাম, আজকেই শেষ অফিস ছিল।”

    বাস্টার্ডও উঠে দাঁড়ালো।

    “যাবার আগে একটা হাগ দেবে না?” প্রসন্নভাবে হেসে বলল আইনাত। “এরপর তো আর কখনও না-ও দেখা হতে পারে!”

    “কে জানে!” মুচকি হেসে বলল বাবলু। “পৃথিবীটা তো খুব ছোটো আর গোল!” তারপরই মেয়েটাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সে। এক যুগ আগের সুপরিচিত গন্ধটা টের পেলো নাকে। স্মৃতিতে মানুষের শরীরের গন্ধ ও থাকে!

    “মাঝেমধ্যে আমি ভাবি…” জড়িয়ে ধরেই কানে কানে বলল আইনাত। “তুমি আমার জীবনে হুট করে না এলে কী হতো? আমি কি এত সহজে মুক্তি পেতাম? মুক্তি পেয়ে-ই বা কী হলো?” তাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকালো এবার। “ভালোবাসা তো পেলাম না!”

    বাস্টার্ড কিছু বলল না, বলতে পারলো না আসলে।

    “আচ্ছা, তুমি কি আমার কথা ভাবতে?…ভাবো?!”

    “হুম।”

    “মিথ্যুক!”

    মুচকি হেসে গাল চুলকালো সে। “তোমার জন্য আমার খুব মায়া জন্মেছিল।”

    “শুনে খুশি হলাম, অন্তত করুণা করোনি বলে!” মলিন হাসি দিলো আইনাত। “আমি অবশ্য আজকাল প্রতিদিনই তোমার কথা ভাবি…কেন ভাবি জানো?”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো পেশাদার খুনি।

    “থাক, তুমি ওসব বুঝবে না।” আর কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়ালো মেয়েটি, কেতাদূরস্ত এক্সিকিউটিভদের মতো আত্মবিশ্বাসি ঢঙে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। বের হয়ে যাবার আগে দরজার নবটা ধরে পেছন ফিরে তাকালো পিতৃহত্যাকারীর দিকে। “ভালো থেকো!”

    অপসৃয়মান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো সে।

    “কে, ওটা?”

    চমকে ডান দিকে তাকালো বাস্টার্ড। লাঠিতে ভর দিয়ে চোখেমুখে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিসিঞ্জার।

    অধ্যায় ৭৮

    গতকাল সন্ধ্যার আগে লন্ডন থেকে দুবাইতে উড়ে এসেছে প্রেসিডেন্টের মেয়েজামাই শাকিল চৌধুরি। এখানে নেমেই আলভীর অতিথি হিসেবে ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডে চলে এসেছে সে, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে উঠতি এক মডেলকে।

    মেয়েটা দেশি হলেও চিনতে পারলো না জাহান গ্রুপের সিইও। পরিচিতদের প্রায় সবাইকে সে চেনে-হয় তাদের গ্রুপের কোনো প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন করেছে, নয়তো কোনো পার্টিতে দেখা হয়েছে।

    শাকিল চৌধুরির আগেই প্যারিস থেকে তার তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু চলে এসেছে এখানে। রাতভর জুয়া খেলে কাটিয়েছে তারা কিন্তু অতিরিক্ত কোকেন নেবার কারণে পর পর তিনবার হেরে দেড় কোটি টাকা খুইয়েছে আলভী। তার বন্ধুরা এই পরিমাণ টাকা জিতে এমন ভাব করছে যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছে! সবচাইতে বেশি বিগলিত হয়েছে প্রেসিডেন্টের মেয়েজামাই। গাধাটাকে ওর শ্বশুড় প্রেসিডেন্ট হবার পরই এই পরিমাণ টাকার একটা হাতঘড়ি গিফট করেছিল। এই টাকা যে তার কাছে মামুলি সেটা ভুলে গেছে নতুন নতুন পয়সা হাতানো লোকটি। সত্যি বলতে হেরে গিয়ে বন্ধুদের খুশি হওয়াটাই বেশি উপভোগ করছে আলভী। কিন্তু এক পর্যায়ে শাকিল চৌধুরি অদ্ভুত একটা বাজি ধরেছিল তার সঙ্গে—এই দানে সে জিতে গেলে খুকুমনিকে এক রাতের জন্য দিতে হবে।

    প্রস্তাবটা শুনে মুচকি হেসেছিল সে। এরকম বাজি কলেজ জীবনেও ধরতো বান্ধবীদের সঙ্গে। ওয়ান-টু-ওয়ান তাস খেলতো, বাজিতে যে জিতবে তার কথামতো কাজ করতে হবে। মেয়েগুলো “কান-ধরে-দাঁড়িয়ে থাকা” আর “পা-ধরে-সালাম” করার চেয়ে বেশি কিছু করার সাহস দেখাতো না। কিন্তু আলভী ওরকম ছেলেমানুষি শর্ত দিতো না, তার শর্তগুলো হতো “ইচ্ছেমতো কিস করতে দিতে হবে” কিংবা “সেক্স করতে হবে…এরকম।

    মেয়েগুলো এমন প্রস্তাব শুনে ন্যাকামির সুরে “ওহ নো”, “মাই গড,” “ইউ নটি” বলতো। কেউ কেউ এমন ভাব করতো যেন এই শর্তে মোটেও খেলবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা খেলতো আর হেরে গেলে আলভীর দেয়া শর্ত মেনেও নিতো।

    প্রেসিডেন্টের মেয়েজামাই যখন এ কথা বলল সে খুব একটা অবাক হয়নি। শাকিল চৌধুরির নজর যে খুকুমনির উপরে পড়েছে, শুরু থেকেই বুঝতে পারছিল।

    “আর আমি জিতলে…?” বলেছিল আলভী।

    “ইউ হ্যাভ টু আস্ড ফর ইট!” সহাস্যে বলেছিল কথাটা।

    “ওকে। যেইটারে নিয়া আসছো ওইটারে দিতে হইবো।”

    হা-হা করে অট্টহাসি দিয়ে রাজি হয়ে গেছিল শাকিল। কিন্তু নচ্ছারটা টাকার বাজি জিতলেও খুকুমনিকে জিততে পারেনি। মেহমানকে অবশ্য বিমুখ করেনি আলভী, তার মডেলকে বগল দাবা করে খুকুমনিকে দিয়ে দিয়েছে নিজ থেকেই।

    এখন সেই মডেলকে নিয়েই আছে, তবে ভিলা থেকে একটু দূরে, সমুদ্রের উপরে ভাসমান ভিলাগুলোর একটাতে। গতকালই এই ফ্লোটিং ভিলাগুলো তার নজরে এসেছিল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ভিলাগুলোর নিচতলা পানির নিচে, অনেকটা অ্যাকুরিয়ামের মতো দেখতে বেডরুম আছে সেখানে। ব্রোশিওরে ছবি দেখে তার আরো ভালো লেগে গেছিল। ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত কাচের দেয়াল, ওপাশে সমুদ্রের তলদেশ। চারপাশে মৃত কোরাল পড়ে আছে, নানান রঙের মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে। তখনই ঠিক করেছিল এখানে কয়েকটা দিন থাকবে।

    এখন এই ফ্লোটিং ভিলার উপরতলায় সান ডেকে একটা রিক্লাইন চেয়ারে বসে চারপাশটা দেখছে আলভী। তার পরনে থ্রি-কোয়ার্টার আর ফ্লানেল শার্ট, চোখে সানগ্লাস। এখান থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে দুবাইর উপকূলটা দেখা যায়। সবার আগে চোখে পড়ে এই বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুরুজ আল খলিফা। তার কাছে মনে হলো একটা উত্থিত লিঙ্গের মতো দর্পভরে দাঁড়িয়ে আছে সেটা!

    বাঁ-দিকে পঞ্চাশ মিটার দূরে আইল্যান্ডের দিকে তাকালো। তার রেন্ট নেয়া ভিলাটা এখান থেকে দেখা যায় না, ওটা দ্বীপের বিপরীত দিকে অবস্থিত। ওখানে প্রেসিডেন্টের মেয়েজামাই কী করছে কে জানে। তার অন্য মেহমানরাও মেয়ে নিয়ে এসেছে, হয়তো অদল বদলের খেলা খেলছে ওরা।

    খেলুক! সে-ও খেলবে আজ রাতে। একটুও তাড়াহুড়া করবে না। বয়স যখন কম ছিল খুব তাড়াহুড়া করতো এসব ব্যাপারে। অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে, আস্তে ধীরে, সময় নিয়ে করলে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়।

    একটু আগে ঐ মডেল মেয়েটাকে নিয়ে কোকেন সেবন করেছে আলভী। মেয়েটার সম্ভবত প্রথমবার, কেমন বেসামাল হয়ে পড়েছে অল্পতেই। নিচতলার অ্যাকুরিয়াম বেডরুমে বেঘোরে পড়ে আছে এখন।

    মুচকি হাসি ফুটে উঠল তার ঠোঁটে। আজ রাতে মেয়েটাকে সে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা দেবে।

    অধ্যায় ৭৯

    “ওহ্!”

    আইনাতের কথা শোনা পর একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিসিঞ্জার।

    তারা এখন সৈকতে হাঁটছে। অনেকক্ষণ ঘুমানোর পর একটু হাঁটাহাঁটি করার ইচ্ছে জেগেছে অসুস্থ মানুষটার। ধীর পায়ে ছরি হাতে বালির সৈকতে হেঁটে বেড়াচ্ছে তাই।

    কিসিঞ্জারের খুব বলতে ইচ্ছে করছে দুনিয়াটা আসলেই ছোটো-বিশেষ করে মানুষের জন্য। কিন্তু বলল না। এ কথা সে এরইমধ্যে বাবলুকে বলেছে।

    “আমাদের চেকআউট করা উচিত,” গম্ভীর মুখে বলল।

    মুখ তুলে তাকালো বাস্টার্ড।

    “ঐ মেয়েটা এখানকার অথরিটিকে বলে দিতে পারে তোমার কথা।”

    “আমার তা মনে হয় না।”

    কিসিঞ্জারের ভুরু কপালে উঠে গেল, দীর্ঘশ্বাসটা লুকানোরও চেষ্টা করলো না। “তুমি ওকে কষ্ট দিয়েছো, চিট করেছো…” একটু থেমে আবার বলল, “মেয়েরা খুবই প্রতিশোধপরায়ণ হয়, ওদের অন্তর্জালা বেশি। প্রতারিত হলে সে কথা ভুলে যায় না সহজে। ওরা আসলে কিছুই ভোলে না, সব মনে রাখে।”

    কাঁধ তুলল বাস্টার্ড। “আইনাত ওরকম না।”

    পরিহাসের হাসি হাসলো ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষটি। “মনে হচ্ছে তোমার মেয়ে-অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে বেশ ভালো।” একটা ভারি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “মানো আর না মানো, ভালো ভালো অভিজ্ঞতাগুলো আমাদেরকে কিছুই শেখায় না, সুখকর অনুভূতি দেয় শুধু। আমরা শিখি খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে।”

    “আপনি তাহলে চলে যেতে চাইছেন?”

    নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো কিসিঞ্জার। “ওই মেয়েটার কথা না হয় বাদই দিলাম, এখানে তো মনে হচ্ছে না আলভীকে কিছু করা যাবে।”

    চুপ মেরে রইলো বাস্টার্ড।

    লোকটার মুখের মিটিমিটি হাসি এই ভগ্নস্বাস্থ্যের মধ্যেও বিলীন হয়ে যায়নি। অল্প একটু হেঁটেই সৈকতের একটি বেঞ্চে বসে পড়লো ক্লান্ত হয়ে। হাতের লাঠিটা দু হাতে ধরে থুতনিটা রাখলো সেটার উপরে। “তিন দিনের জন্য অলরেডি পে করে দিয়েছি…টাকাগুলো জলে ফেলতে চাইছো না?”

    বাঁকাহাসি দিলো বাস্টার্ড। তার কাছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও এই লোক এখানকার সবকিছু নিজের কার্ডে পরিশোধ করেছে। আর সেটা কেবলমাত্র ঔদার্য থেকে নয়-একজন কেয়ার গিভার তার নিজের কার্ড থেকে পে করলে সন্দেহের সৃষ্টি হবে।

    “ভুলে গেছেন মনে হচ্ছে, টাকাগুলো আপনি দিয়েছেন।”

    কিসিঞ্জারের শব্দহীন হাসিটা চওড়া হলো। “আরে, আমি তো মজা করে বলছি।”

    সমুদ্রের দিকে তাকালো বাস্টার্ড। সে এখনও বিশ্বাস করে কাজে নামলে শিকারের নাজুক অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভালো করেই জানে, শিকার-ই সুযোগটা তৈরি করে দেবে। এবারও শেষ পর্যন্ত দেখতে চাচ্ছে সেটা।

    “ঐ মেয়ে যদি উল্টাপাল্টা কিছু করেও…” একটু ভেবে বলল কিসিঞ্জার। “খুব বড় বিপদে ফেলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো বাস্টার্ড।

    “তার কাছে শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। কেবল অনুমান করছে…এটা কি কেউ আমলে নেবে?” নিজেই এর জবাব দিলো। “নেবে না।”

    আবারো সমুদ্রের দিকে তাকালো বাস্টার্ড। এতকিছু ভাবেনি সে। সত্যিটা হলো, আইনাতের চোখে কষ্ট দেখেছে, চাপা ক্ষোভও দেখেছে কিন্তু প্রতিহিংসা দেখেনি।

    “তবে উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেললে কিন্তু বিরাট বড় ঝামেলায় পড়তে হবে। তিল থেকে তালও হয়ে যেতে পারে। এখানকার পুলিশ খুবই এফিশিয়েন্ট…” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এবার। “তার চেয়ে ভালো চলে যাই আমরা, কী বলো?”

    সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো বাস্টার্ড। দূরে, দুবাইর উপকূল রেখাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আর সেখানে বুরুজ আল খলিফা মাথা উঁচু করে তার অনন্য উচ্চতা জাহির করছে। হঠাৎ চোখের কোণে কিছু একটা দেখতে পেয়ে ফ্লোটিং ভিলাগুলোর দিকে তাকালো। তাদের থেকে সবচেয়ে কাছের ভিলার উপরে, রেলিংয়ে ভর দিয়ে এক লোক সিগারেট খাচ্ছে। চোখে সানগ্লাস। গায়ে ফ্লানেলের শার্ট। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।

    এত দূর থেকে চেহারাটা বোঝা না গেলেও তার কাছে চেনা চেনা লাগলো। নেটে, ইউটিউবে অনেক দেখেছে মুখটা। পকেট থেকে মোবাইলফোন বের করলো সে। কিসিঞ্জার এখনও উদাস চোখে চেয়ে আছে সমুদ্রের দিকে, তার অলক্ষ্যেই ফোনের ক্যামেরাটা জুম করলো সর্বোচ্চ মাত্রায়।

    আলভী!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
    Next Article অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }