Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প399 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কন্ট্রোল – ৮০

    শিকার সুযোগ করে দেয়, শিকারী নয়!

    নিজের কথাটাই মনে মনে উচ্চারিত করেছিল বাস্টার্ড।

    আলভী এখন সুরক্ষিত ভিলায় নয়, দ্বীপ থেকে পঞ্চাশ-ষাট মিটার দূরে, সমুদ্রে ভাসমান ভিলায় আছে! সঙ্গে এক মেয়ে ছাড়া পুরোপুরি একা।

    এবং অরক্ষিত!

    তার ধারণা ফ্লোটিং ভিলাগুলোতে সিসিক্যাম নেই। এখানকার ধনী গেস্টরা সিসিক্যাম থাকলে নিরাপদ বোধ করবে না, ব্ল্যাকমেইলের শিকার হবার আশঙ্কা করবে, নিশ্চিন্তে ফূর্তি-টুর্তি করতে পারবে না তারা। তাদের ভিলা”তেও কোনো সিসিক্যাম নেই। সেদিক থেকে দেখলে ফ্লোটিং ভিলাগুলোর ভাড়া অনেক বেশি, ওখানে সিসিক্যাম না থাকারণ কথা।

    তারপরও নিশ্চিত হবার জন্য এখানে থাকা ব্রোশিওরগুলো দেখেছে। স্পষ্ট করে লেখা আছে সেখানে, ফ্লোটিং ভিলাগুলোতে কোনো রকম সার্ভিলেন্স করা হয় না। এখানকার প্রায় সবগুলো ভিলা-রিসোর্ট-প্যালাসের একগাদা ব্রোশিওর আছে তাদের ভিলার লিভিংরুমের টেবিলের উপরে।

    এই দ্বীপে কিছু সিকিউরিটিকে পাহারা দিতে দেখেছে কিন্তু তারা কেউই সারাক্ষণ এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায় না। বড় বড় ভিলা আর রিসোর্টে হাতে গোণা কিছু সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও তাদের সঙ্গে অস্ত্র দেখেনি। তার মানে তাল পাতার সেঁপাই। তবে তাদেরকে মোকাবেলা করার ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনা তার নেই।

    যে ভিলায় আলভী উঠেছিল সেখানে ঢুকে তাকে হত্যা করা ছিল অসম্ভব কাজ। কিন্তু ফ্লোটিং ভিলার ব্যাপারে এ কথা বলা যায় না!

    “কী ভাবছো?”

    সম্বিত ফিরে পেয়ে বাস্টার্ড দেখতে পেলো লাঠিতে ভর দিয়ে উৎসুক চোখে চেয়ে আছে কিসিঞ্জার। তারা এখন সৈকতের শেষে গাছগাছালির কাছে বড় একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা নামছে, পশ্চিম দিকের আকাশ রক্তিম হয়ে উঠেছে।

    “এমন সুযোগ আর আসবে না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো মৃত্যুপথযাত্রি। “কিন্তু কিভাবে করবে?”

    কাঁধ তুলল বাস্টার্ড। “সেটাই ভাবছি।”

    মাথার ফেদোরা হ্যাটটা ঠেলে কপালের উপরে ওঠালো কিসিঞ্জার। তাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে না। “তুমি শিওর আর কেউ নেই ওখানে?”

    “হু। এক মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই,” বাস্টার্ড বলল। একটু আগে রেলিংয়ে টালমাটাল অবস্থায় এক মেয়েকে উঠে আসতে দেখেছে।

    আলভীকে ফ্লোটিং ভিলায় আবিষ্কার করার পর ঘন্টাখানেক সময় চলে গেছে, এই সময়ের মধ্যেই ফ্লোটিং ভিলার ব্রোশিওরটায় চোখ বুলিয়ে নিয়েছে ভালোমতো।

    এই ফ্লোটিং ভিলাগুলোর নাম ফ্লোটিং সি-হর্স। দোতলার অর্ধেকটা পানির নিচে, সেখানে আছে বেডরুম, লিভিং রুম আর কিচেন। গ্রাউন্ড লেভেলে আছে বারান্দার মতো একটা অংশ আর ডাইনিং রুম। পানির নিচের বেডরুমটাকে তারা অ্যাকুরিয়াম বলে। গ্রাউন্ড লেভেলের উপরের অংশটার নাম সান ডেক। ওখানে একটা জাকুজি বাথটাব আর শেড দেয়া অংশও আছে। পুরো সান ডেকটা কাচের রেলিং দিয়ে ঘেরা। এই ফ্লোটিং সি-হর্সগুলোর তিনটি ফ্লোরের মোট আয়তন চার হাজার বর্গ ফুটের মতো। তবে কিচেন থাকলেও আইল্যান্ডের নিজস্ব কিচেন থেকে খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা আছে।

    সবটা পড়ে বাস্টার্ড বুঝতে পেরেছে, সাধারণত হানিমুন কাপলরা বেশি থাকে এখানে।

    “যা-ই করো সবার আগে ঠিক করতে হবে এখান থেকে মেইনল্যান্ডে যাবে কী করে,” অনেকক্ষণ পর বলল কিসিঞ্জার। “ওটা ঠিক না করে কিচ্ছু করা যাবে না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো বাবলু। এটা নিয়ে সে-ও ভাবছে এখন। যতোটুকু জানতে পেরেছে, প্রতি পনেরো মিনিট পর পর ফেরি আসা যাওয়া করে এই আইল্যান্ডগুলোতে। শেষ ফেরিটা ছাড়ে রাত ১২টায়। সকাল আটটা থেকে আবার শুরু হয় এই সার্ভিস। যাদের নিজস্ব বোট কিংবা ইয়ট আছে তারা সেগুলোতে করেই যাতায়াত করতে পারে। আর ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো সকাল আটটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত চলাচল করে।

    অবশ্য ছোটো বড় অনেক বোট আছে এখানে, ওগুলোর কিছু কিছু যত্রতত্র রেখে দেয়া হয়েছে গেস্টদের ব্যবহারের জন্য। গতকাল দুই শ্বেতাঙ্গকে দেখেছে দ্বীপের আশেপাশে ওরকম দুটো বোট নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। তবে ওগুলো দিয়ে চার কিলোমিটার পাড়ি দেয়া যাবে না।

    “কিন্তু তুমি ওকে…” কথাটা বলে চুপ মেরে গেল কিসিঞ্জার। “তোমার কাছে তো কোনো অস্ত্র নেই!”

    মুচকি হেসে লোকটার দিকে তাকালো বাস্টার্ড। “আপনার কি ধারণা একেবারে খালি হাতে শিকার করতে এই জঙ্গলে ঢুকেছি?”

    ভুরু কপালে উঠে গেল কিসিঞ্জারের।

    অধ্যায় ৮১

    রাতের খাবার খেয়ে তারা দুজন নিজেদের ভিলার সামনে এসে দাঁড়ালো। দুজনের চোখ অদূরে সমুদ্রের উপর ভেসে থাকা ফ্লোটিং ভিলাটার দিকে। বেশ দূরে দূরে এরকম আরো পাঁচটি ভিলা আছে এখানে।

    “সকাল আটটায় আমরা চেকআউট করবো।”

    বাস্টার্ডের দিকে তাকালো কিসিঞ্জার। “কিন্তু কাজটা করবে কখন?”

    “রাতে।”

    মাথা দোলালো ক্যান্সারে আক্রান্ত লোকটি। “রাতে কখন?”

    “ভোরের দিকে।”

    “ভোরের দিকে কেন?”

    মুচকি হাসলো পেশাদার খুনি। এই আইডিয়াটা কোত্থেকে পেয়েছে সেটা বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারলো না। “ওরা তখন ঘুমিয়ে থাকবে।”

    “আচ্ছা।”

    অনেক আগে, সে যখন ছোটো তখন পেয়ারির মা নামে তার লালন- পালনকারী মহিলা বলেছিল চোরেরা নাকি ভোরের আগে দিয়ে মানুষের বাড়িতে চুরি করতে আসে কারণ ঐ সময়ে সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকে।

    “তাহলে তো ঘটনা ঘটার পর চার-পাঁচ ঘণ্টা এখানে থাকতে হবে, এতক্ষণ থাকাটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে।”

    ভুরু কুঁচকে গেল বাস্টার্ডের। “কী রকম?”

    “এই সময়ের মধ্যে যদি ওদের কেউ ওখানে যায়?”

    মাথা দোলালো সে। “যাবে না। আলভীকে ডিস্টার্ব করার মতো সাহস কারোর হবে না। ওরা কেউ অতো সকালে ঘুম থেকে উঠবে বলে মনে করেন?”

    “না, তা হয়তো উঠবে না। তবুও আমার কাছে কেনজানি রিস্কি মনে হচ্ছে… আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না তোমাকে,” একটু থেমে আবার বলল, “তাহলে লাগেজ-টাগেজ গুছিয়ে রাখতে হবে, চেকআউটও করে ফেলতে হবে এখনই। পেমেন্ট যেহেতু আগেই ক্লিয়ার করা হয়েছে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমি ফোন করে ওদের বলে দিচ্ছি আমরা আর্লি মর্নিং চেকআউট করবো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো বাস্টার্ড।

    রাত দশটারও বেশি বাজে। সমুদ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঁচ-ছয়টি ফ্লোটিং ভিলার মধ্যে কেবল একটাতে আলো জ্বলছে। দূরে, দুবাইর উপকূল

    চোখ ঝলসানো আলোয় জ্বল জ্বল করছে এখন।

    “আপনি ঘুমাতে চলে যান,” অসুস্থ লোকটাকে বলল সে। “আমি দরকার হলে আপনাকে ডাকবো।”

    কিসিঞ্জারের শরীর খুবই দুর্বল। ঘুম না এলেও দশটার মধ্যে শুয়ে পড়ে, ঝিম মেরে পড়ে থাকে বিছানায়। ঘুমের ওষুধ খায় বলে শেষ রাতের দিকে ঘুম আসে তার।

    লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। “ঠিক আছে, আমি গেলাম কিন্তু একটা কথা…”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো বাস্টার্ড।

    “হলে তো হলোই, না হলেও কাল সকালে আমরা চলে যাচ্ছি। দিস ইজ ফাইনাল।”

    “হুম,” গম্ভীর মুখে সায় দিলো বাবলু।

    কিসিঞ্জার আর কিছু না বলে চলে গেল।

    *

    পরবর্তি দুই ঘণ্টা শিকারীর মতো ধৈর্য নিয়ে এক জায়গায় বসে রইলো বাস্টার্ড। তার চোখ একই জায়গায় নিবদ্ধ। মনে মনে অনেকগুলো বিষয় ঠিক করে ফেলল সে।

    রাত গাঢ় হলেও পাশের লেবানন আইল্যান্ডে পার্টি হচ্ছে। রুম সার্ভিসের এক ছেলে তাকে বলেছে, আজকে ওখানে এক মাল্টি মিলিয়েনেয়ার তার প্রেমিকাকে প্রপোজ করার পার্টি দিয়েছে, সেই পার্টি প্রায় শেষ হবার পথে। লোকজন বোটে করে আশেপাশের মিনি আইল্যান্ডগুলোতে চলে যাচ্ছে এখন।

    রাত একটার পর ফ্লোটিং ভিলার সান ডেকের রেলিংয়ে আলভীকে দেখতে পেলো বাস্টার্ড। দূর থেকেও বুঝতে পারলো একটু টালমাটাল অবস্থায় ডেকের রেলিংয়ে ভর দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। তার পরনে বুক খোলা নাইট গাউন। ভেতরে একটা বক্সার ছাড়া পুরোপুরি নগ্ন। হয়তো ঐ মেয়েটার সঙ্গে উদ্দাম সেক্স করেছে একটু আগে। পর পর দুটো সিগারেট শেষ করে আবারো নিচে নেমে গেল সে।

    আরো দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পর বাস্টার্ড বুঝতে পারলো পুরো আইল্যান্ডটা নিশ্চুপ হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ ফ্লোটিং ভিলাগুলো খালি, সেগুলো পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে আছে। আলভী যেটাতে আছে সেটার বাইরে আর গ্রাউন্ড লেভেলে দুটো বাতি জ্বলছে কেবল।

    চারপাশে ভালো করে তাকালো। জনমানুষের কোনো চিহ্ন নেই। এখানকার স্টাফরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে। আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। সৈকতের ডান দিকে একটা রোয়িং বোট রাখা আছে, এরকম বোটে করেই দুই শ্বেতাঙ্গকে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিল। বোটটার দিকে এগিয়ে যাবার সময় সেই পুরনো রোমাঞ্চটা টের পেলো আরো একবার।

    বোটে উঠে বসলো সে। লিভারে আটকে রাখা বৈঠা দুটো খুবই ধীরে ধীরে বাইলো। দূরত্বটা আনুমানিক পঞ্চাশ মিটারের মতো, সাত-আট মিনিট পর ফ্লোটিং ভিলার কাছে চলে এলো সে। শব্দ যাতে না হয় সেজন্যে শেষ কিছুটা পথ একেবারে মন্থর গতিতে বৈঠা মারলো।

    প্রায় চুপিসারে বোটটা ভেড়ালো ফ্লোটিং ভিলার সামনের প্ল্যাটফর্মে। এই অংশটুকু দেখতে অনেকটা পল্টনের মতো। এখানে আগে থেকেই একটা বোট ভেড়ানো আছে। নিজের বোটের দড়িটা বেঁধে রাখলো প্ল্যাটফর্মের নিচু রেলিংয়ের সঙ্গে। বারান্দার মতো খোলা জায়গা থেকে ভেতরের দিকে এগিয়ে গেল সে, চেষ্টা করলো কোনো রকম শব্দ না করতে।

    একটা সুপরিসর লিভিং স্পেস আর ডাইনিং টেবিল দেখতে পেলো সেখানে-ব্রোশিওরে ঠিক যেমনটা দেখেছিল। নিচে যাওয়ার জন্য প্যাঁচানো একটা সিঁড়ি আছে ডাইনিং স্পেসের বাঁ-দিকে, সেই সিঁড়ির কাছে যেতেই নারী কণ্ঠের মৃদু গোঙানিটা শুনতে পেলো। থমকে দাঁড়ালো বাস্টার্ড। নারী- পুরুষের যৌথ শব্দটা ধরতে পারলো এবার। প্রাণভরেই চিৎকার করছে দুজন কিন্তু সেই শব্দ বাইরে খুব কমই আসছে।

    একটু অপেক্ষা করলো সে। তিন-চার মিনিট পরই নিস্তেজ হয়ে পড়লো কণ্ঠদুটো। তারপর দীর্ঘ মৌনতা। আরেকটু অপেক্ষা করে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিলো, সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখতেই নিচ থেকে দরজা খোলার শব্দ পেলো।

    কেউ উঠে আসছে!

    সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং স্পেসে চলে এলো বাস্টার্ড। লুকানোর কোনো জায়গা নেই সেখানে। চট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো কী করতে হবে। নিঃশব্দ শিকারীর মতো নয়, সটান দাঁড়িয়ে রইলো সে, যেন কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।

    ধপ ধপ করে রাতের নিশুতি ভেঙে সিঁড়ির উপরে পায়ের আওয়াজটা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। বুঝতে পারলো আলভী ফোনে কথা বলছে কারোর সঙ্গে। তবে সে গ্রাউন্ড লেভেলে না এসে উপরের সান ডেকে চলে গেল।

    “আমি বুঝতে পারতাছি না, তোমরা এতগুলান মানুষ থাকতে এইটা কেমনে হইলো, অ্যাঁ?”

    রাতের স্তব্ধতার মধ্যে নিচ থেকে কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো বাস্টার্ড।

    “বিচি গালায়া দিছে?…শালি করছে কী! আরে, শাকিল তো একটা মাদারচোদ…ওইটারে এক রাইতের লাইগ্যা চাইছোস, ইচ্ছামতো লাগা…ভিডিও করতে গেলি ক্যান?!”

    বাস্টার্ডের ভুরু কপালে উঠে গেল।

    “ওরে কোকেন নিতে দিছো ক্যান?… ওয় এইগুলা নিতে পারে না। গত বছর প্যালেসে কী করছিল, মনে নাই?”

    কোকেন? এরা দুবাইতে কোকেন নিয়ে এসেছে!

    “ধুর! মাথা খারাপ হইছে তোমাগো? এত রাইতে রুম সার্ভিসের কাউরে ডাইকো না, এইখানকার ক্লিনিকে নেওনেরও দরকার নাই…শালার ওইখানে বরফের টুকরা টাকরা দিতে কও, ঠিক হইয়া যাইবো। মাইয়া মানুষের হাতে এত জোর নাই যে বিচি গালাইয়া দিবো!… ব্যথা-ট্যাথা পাইছে…ঠিক হইয়া যাইবো সব।”

    বাস্টার্ড বুঝতে পারলো শেষ রাতে শাকিল নামে আলভীর একজন ভ্রমণ সঙ্গির অণ্ডকোষ হুমকির মুখে পড়ে গেছে কোনো এক মেয়ের কারণে।

    ভাইরাল কুইন? নিশ্চিত হতে পারলো না।

    “শোনো, ওইটারে অন্য রুমে রাখো, আমি সকালে আইতাছি, কেউ যেন কিচ্ছু না করে!” একটু পরই সান ডেকের উপর থেকে আলভীর গালিটা ভেসে এলো : “বাইনচোদ! ছোটোলোকের বাচ্চা!”

    নিচ থেকে সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ পেলো বাস্টার্ড-আলভী সিগারেট ধরিয়েছে আর তখনই খেয়াল করলো ফ্লোটিং ভিলার সামনে দুটো বোট ভেড়ানো আছে। আলভীর নজরে পড়লে সন্দেহ জাগবে আরেকটা বোট কী করে এলো এখানে!

    কিছু একটা করতে হবে। দ্রুত।

    যদিও উপরতলায় সান ডেকে আলভী সম্ভবত পশ্চিম-দিকের রেলিংয়ে আছে বলে তার চোখে পড়ছে না নিচের পুবদিকে দুটো বোট বাঁধা আছে।

    গুছিয়ে নিলো কী করবে। ধীর পায়ে কর্তৃত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে লিভিং স্পেসটা ছেড়ে খোলা প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে গেল বাস্টার্ড, উপরের সান ডেকের দিকে তাকালো সে। যেমনটা আন্দাজ করেছিল, আলভী পশ্চিমদিকের রেলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে।

    “হ্যালো, স্যার?” ইংরেজিতে বলল।

    ভুত দেখার মতো চমকে নিচের দিকে তাকালো আলভী। তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়। উত্তর দিকের রেলিংয়ের সামনে এসে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো।

    অধ্যায় ৮২

    “কে আপনি?!”

    আলভীও ইংরেজিতে জানতে চাইলো। তার চোখেমুখে অবিশ্বাস আর অজানা আতঙ্ক ভর করেছে।

    “আমি এখানকার ডিইএ থেকে এসেছি, স্যার। দয়া করে নিচে নেমে আসুন…আপনার সঙ্গে কথা বলতে হবে।” দৃঢ়তার সঙ্গে জবরস্ত ইংরেজিতে বলল বাস্টার্ড।

    “ডিইএ মানে?” জাহান গ্রুপের সিইও বুঝতে না পেরে বলল।

    “ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি।”

    কথাটা শুনে আরো বেশি ভড়কে গেল জাহান গ্রুপের সিইও। ভয়ে ঢোক গিলল এবার।

    “আমাদের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে, এখানে কিছু অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটেছে। আপনি নিচে নেমে আসুন, আমাদেরকে কথা বলতে হবে, স্যার।”

    টলোমলো পায়ে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে এলো আলভী।

    “আমাদের কাছে তথ্য আছে, আপনারা এখানে ইলিগ্যাল সাবটেন্স ইউজ করছেন, বেআইনী কাজ-কর্ম করছেন। “

    “কী?!” খুবই অবাক হলো। তার চোখদুটো লাল টকটকে, মাথার চুল এলোমেলো। পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত সে। “আ-আমার অ্যা-অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে!”

    “আমি ড্রাগের কথা বলছি, স্যার,” বলল বাস্টার্ড। “যেমনটা বলেছি, ইলিগ্যাল সাবটেন্স ইউজ করছেন।”

    ভড়কে যাওয়া চোখেমুখে চেয়ে রইলো আলভী।

    “নির্দিষ্ট করে বললে কোকেন…আমাদের কাছে ইনফর্মেশন আছে, আপনি কোকেন নিয়ে এসেছেন এখানে। এটা দুবাইর আইন পারমিট করে না।”

    আবারো ঢোক গিলল আলভী করিম। দুবাইর আইন-কানুন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে তার। ড্রাগ তো দূরের কথা, অ্যালকোহল পর্যন্ত নিষিদ্ধ এখানে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডসহ এক্সক্লুসিভ অনেক জোন আছে যেখানে অ্যালকোহল সিদ্ধ। তবে কোনো প্রকার ড্রাগের অনুমতি নেই, ওগলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    “আপনার ভ্রমণসঙ্গিদের ব্যাপারেও রিপোর্ট হয়েছে,” আরেকটু চাপ তৈরি করার জন্য বলল। “ভিলার ভেতরে একটা অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটেছে…ড্রাগ এবং ভায়োলেন্সের কথা বলছি, স্যার।”

    আলভীকে দেখে মনে হলো বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।

    “আমাকে তল্লাশী করতে হবে। আপনি এখানকার সম্মানিত গেস্ট আপনার সুনাম আর প্রাইভেসি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্যে আমি একা এসেছি। আপনি আমাকে কো-অপারেট না করলে বিষয়টা অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। আপনি কি বুঝতে পারছেন?”

    আলভী বুঝতে পারছে কিন্তু কী করবে, কী বলবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। নিচতলার বেডরুমে ভালো পরিমাণের কোকেন আছে, ওই অখ্যাত মডেলটাও কোকেন নিয়েছে একটু আগে, উদ্দাম সেক্স করার পর মেয়েটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে এখন।

    বাস্টার্ড বুঝতে পারলো আলভী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। খুব বেশিক্ষণ এভাবে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। দ্বীপ থেকে কেউ দেখে ফেললে সন্দেহ করবে নির্ঘাত

    “আমরা এটা নিয়ে কথা বলে একটা ডিল করতে পারি…কী বলেন, স্যার?” স্মিত হাসি দিয়ে প্রস্তাবটা দিলো।

    কথাটার মানে খুব দ্রুতই বুঝতে পারলো আলভী। ভ্রু কপালে উঠে গেল তার। “ওকে…চমৎকার।” সে জানে, পৃথিবীর সবখানেই ঘুষ চলে—সেটা স্বর্গের মতো অপরাধমুক্ত দুবাইতেও।

    চারপাশে তাকালো বাস্টার্ড। “এই খোলা জায়গায় না, স্যার।”

    “ওহ্,” বুঝতে পারলো সিইও। “ওইদিকে আসুন তাহলে,” কথাটা বলেই ঘুরে দাঁড়ালো।

    গ্রাউন্ড লেভেলের বিশাল লিভিং স্পেসে একজোড়া সোফা আছে, সেখানে চলে এলো তারা। স্লাইডিং ডোর দিয়ে জায়গাটা সামনের প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা করা যায়।

    “আমার মনে হয় নিচে কথা বললে ভালো হয়,” বাস্টার্ড পেছন দিকটা দেখে বলল। “এদিকটা দিয়ে আমাদের দেখা যাবে।”

    আলভী বুঝতে পারলো না রাতের এই শেষভাগে কে দেখবে তাদেরকে। “গেস্টদের অনেকেই নিশাচর,” ব্যাখ্যা করলো সে। “অনেকেরই আবার বদঅভ্যেস আছে…বিচে সেক্স করে।”

    ভুরু কপালে উঠে গেল জাহান গ্রুপের সিইওর।

    “তাছাড়া আজকে লেবানন আইল্যান্ডে পার্টি হয়েছে…এখনও কিছু গেস্ট আছে ওখানে, ওরা দেখে ফেলতে পারে।”

    “বুঝতে পেরেছি,” মাথা নেড়ে সায় দিলো আলভী। “নিচে আসুন,” বলেই বাঁ-দিকের প্যাঁচানো সিঁড়িটা দিয়ে নেমে গেল।

    তাকে অনুসরণ করলো বাস্টার্ড।

    ছোট্ট এই সিঁড়িটা দিয়ে নিচতলায় চলে এলো তারা। ডান দিকের একটা দরজা খোলা, সেটা দিয়ে অ্যাকুরিয়ামের মতো বিশাল কাচের জানালাসমৃদ্ধ চমৎকার একটি বেডরুম দেখতে পেলো, সেই সাথে বিছানায় নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকা এক তরুণীকেও। গায়ের চাদরটা প্রায় সরে থাকায় তার নগ্ন শরীর অনেকটাই উন্মুক্ত। মেয়েটার দু হাত একজোড়া হ্যান্ডকাফ দিয়ে বিছানার হেডবোর্ডের সঙ্গে বাঁধা!

    আলভী নেশাগ্রস্ত, তার কাণ্ডজ্ঞান ঠিকমতো কাজ করছে না। যদি করতো দরজাটা বন্ধ করে রাখতো। দরজাটা খোলা দেখতে পেয়ে দ্রুত বন্ধ করে দিলো সে। তারপরই পেছনে তাকিয়ে দেখলো দুবাইর ডিইএ এজেন্ট তার দিকে স্থিরচোখে চেয়ে আছে।

    “খুব খারাপ, স্যার!” আক্ষেপে মাথা দুলিয়ে বলল বাস্টার্ড।

    কাচুমাচু খেলো আলভী। “প্লিজ, আসুন…” বেডরুমের বিপরীত দিকের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

    বড় সড় একটা লিভিংরুম, দুই জোড়া সুদৃশ্য ঘিয়েরঙা চামড়ার সোফা আছে সেখানে।

    “এবার বলুন?” একটা সোফায় বসে পড়লো জাহান গ্রুপের সিইও। “ব্যাপারটা মিটমাট করতে হলে কী করতে হবে আমাকে? মানে, কতো দিতে হবে?”

    একটু সঙ্কোচ করার ভাণ করলো বাস্টার্ড। “অনেকগুলো আইন ভেঙেছেন, স্যার…অ্যাবিউজের ঘটনাও ঘটেছে। আপনার সঙ্গি-সাথিরা ওখানে কী করেছে, আপনার কোনো আইডিয়া নেই। *

    আক্ষেপে মাথা দোলালো আলভী। আইল্যান্ডের ওই ভিলায় প্রেসিডেন্টের মেয়েজামাই যে কী করেছে সে জানে। অল্প পানির মাছ গভীর পানিতে গেলে যা হয়। “আমি সেটার জন্য এক্সট্রিমলি সরি…এখন বলুন, ব্যাপারটা কিভাবে মিটমাট করা যায়?”

    লোকটার দিকে স্থিরচোখে তাকালো বাস্টার্ড। “আপনি খুব ভাগ্যবান, আমি টিম নিয়ে এলে সিচুয়েশনটা কন্ট্রোল করা যেতো না, সবাইকে ম্যানেজ করা খুব কঠিন হতো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো আলভী করিম।

    “আপনিই বলুন, কিভাবে মিটমাট করতে চাচ্ছেন?”

    গাল চুলকে নিলো জাহান গ্রুপের সিইও। “পাঁচ হাজার ডলার?”

    “অনেক কম…বিশেষ করে যে বেআইনি কাজগুলো করেছেন….”

    “আমার কাছে এখানে এর চেয়ে বেশি নাই…ভিলাতে আছে, ওখান থেকে নিয়ে আসতে হবে।”

    “ওহ,” বিরসমুখে বলল নকল ডিইএ। “ঠিক আছে। আপনি এখানকার সম্মানিত গেস্ট, আপনার রেপুটেশনের কথা বিবেচনা করে ব্যাপারটা এখানেই মিটমাট করে ফেলছি। আমি কিছু দেখিনি, এখানেও আসিনি। ঠিক আছে, স্যার?”

    “থ্যাঙ্কস, অফিসার,” কৃতজ্ঞচিত্তে বলল আলভী।

    “কিন্তু বাকি যে কয়দিন আছেন একটু সতর্ক থাকবেন, অলরেডি রিপোর্ট হয়ে গেছে আপনাদের কিছু কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।”

    “শিওর শিওর,” মাথা দুলিয়ে বলল ধনীর দুলাল।

    হাত তুলে আশ্বস্ত করে বলল, “ওয়েট, আমি আসছি।” পাশের বেডরুমে চলে গেল সে।

    পকেট থেকে ছোট্ট একটা পারফিউমের শিশি বের করলো বাস্টার্ড। আশা করলো সবকিছু পরিকল্পনামতোই হবে।

    একটু পরই আলভী ফিরে এলো লিভিংরুমে। ডলারগুলো তার দিকে বাড়িয়ে দিতে যাবে অমনি ভুয়া ডিইএ এজেন্ট বলল, “এই পারফিউমটা কোন ব্র্যান্ডের? আমি কি এটা ইউজ করতে পারি?”

    ভুরু কুঁচকে তাকালো আলভী। সে জানে এখানে বেসিনের উপরে কিছু কম্প্লিমেন্টারি পারফিউম রাখা আছে এই কিন্তু শিশিটা চিনতে পারলো না। আচমকা তার মুখে স্প্রে করে দিলো বাস্টার্ড।

    “হোয়াট দ্য হেল!” রেগেমেগে তাকালো সে। আবারো স্প্রের শিকার হলো। “ওফ!” মুখটা সরিয়ে নেবার চেষ্টা করলো, আর তখনই টের পেলো তার চুলের মুঠি ধরে নাকের কাছে শিশিটা এনে আরেক বার স্প্রে করলো ডিইএ”র লোকটা। একটা চিৎকার দিলো। “আ-আ!”

    কিন্তু বাস্টার্ডের মধ্যে কোনো রকম উদ্বেগ দেখা গেল না। সে জানে এই চিৎকার বাইরে যাবে না। সি-হর্স নামে পরিচিত এই ফ্লোটিং ভিলার পানির নিচের ফ্লোরে আছে তারা, পুরোপুরি এয়ার-টাইট। প্রায় সাউন্ডপ্রুফ।

    আলভী কোনো রকম প্রতিরোধ করার আগেই ঢলে পড়লো পুরু কার্পেটের উপর।

    কাজ করেছে বলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো বাস্টার্ড!

    দুবাইতে যে কোনোরকম অস্ত্র নিয়ে যাওয়া যাবে না সেটা ভালো করেই জানতো। আরো জানতো এখানকার ব্ল্যাকমার্কেট থেকেও অস্ত্র কেনা সম্ভব হবে না, তাই আসার সময় পকেটে করে ছোট্ট একটা পারফিউমের শিশি নিয়ে এসেছে। মৃদুলের মাধ্যমে ভালোমানের ক্লোরোফর্ম জোগাড় করে পারফিউমের শিশিটায় ভরে নিয়েছিল। একজন মানুষকে কাবু করার জন্য ওইটুকু ক্লোরোফর্মের স্প্রে-ই যথেষ্ট।

    দেশিয় বাজারে বিশেষ করে অনলাইনে অবৈধভাবে ক্লোরোফর্মের স্প্রে বিক্রি হয়, সেগুলো পকেটে ভরে সহজেই পরিবহন করা যায় কিন্তু সে পথে যায়নি বাস্টার্ড। ওইসব জিনিস নিয়ে বিমানে করে বিদেশের মাটিতে পা রাখা যাবে না, চেকিংয়ে ধরা পড়লে সমূহ বিপদ। শুধুমাত্র সন্দেহেরই উদ্রেক করবে না, বিরাট বড় সন্ত্রাসী-অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে যাবে, সেজন্যেই পারফিউমের শিশিতে ভরে নিয়েছিল।

    অস্ত্র ছাড়া কোনো শিকারী শিকারে বের হয় না-এটা সে সব সময় মেনে চলে, তাই ছোট্ট আর সামান্য হলেও এই অস্ত্রটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল।

    সত্যি বলতে, মাস দেড়েক আগে ব্ল্যাক রঞ্জুর দল তার ফ্ল্যাটে হানা দেবার সময় যে ট্র্যাঙ্কুলাইজার গান ব্যবহার করেছিল, সেখান থেকেই এই আইডিয়াটা তার মাথায় এসেছে।

    এখন পায়ের কাছে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা আলভী করিমের দিকে তাকালো। এটাই তার শিকার আর সে নিজেই শিকার করার সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছে!

    অধ্যায় ৮৩

    রোয়িং বোটটা সৈকতে ভিড়তেই বাস্টার্ড দেখতে পেলো রোগাক্রান্ত মানুষটি হুইল চেয়ারে বসে আছে বালির সৈকতটি যেখানে শেষ আর গাছগাছালির শুরু, ঠিক সেখানে।

    এখনও অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি তবে ভোর সমাগত প্রায়।

    “আপনি এখানে?” কাছে এসে জানতে চাইলো। হুইল চেয়ারে বসা দেখে আরো বেশি তাজ্জব হয়েছে সে। “আপনার শরীর ভালো তো?”

    “শরীর ভালো আছে কী করে বলি!” কিসিঞ্জারের ক্লান্ত চোখদুটো প্ৰায় বুজে এসেছে। “এটা তো বলার উপায় নেই এখন। শরীর খুব খারাপই বলতে হবে।”

    ক্যান্সারে পর্যুদণ্ড এই লোক যে এরকম জবাব দেবে, জানলে প্রশ্নটাই করতো না।

    “ঘুম আসছিল না,” ক্লান্ত কণ্ঠে বলল কিসিঞ্জার। “রাতে ঘুমের ওষুধ খাইনি আজ।

    “ওহ্।” বাবলু জানে এই লোক তার জন্য দুশ্চিন্তা করেছে সারাটা রাত, সেজন্যে ইচ্ছে করেই ঘুমায়নি। “আপনি এখানে কখন এসেছেন?”

    “তুমি বের হবার পরই।”

    আরেক বার অবাক হলো। এই লোক অসুস্থ শরীর নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে!

    “মুসলমান মারা গেলে ইন্না লিল্লাহে পড়তে হয়, জানো তো?…আমি কি এখন সেটা পড়বো?”

    কিসিঞ্জারের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলো বাস্টার্ড। “পড়তে পারেন।”

    কিন্তু সেরকম কিছু পড়লো না রোগাক্রান্ত মানুষটি, তার বদলে গভীর করে শ্বাস নিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখদুটো বন্ধ করে রাখলো। তার মুখে সব সময় যে হাসিটা লেপ্টে থাকে সেটা এখন নেই। সম্ভবত রাত জাগার কারণে হুট করেই তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে।

    “কিভাবে কী করলে বুঝতে পারছি না। যাকগে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও,” তাড়া দিয়ে বলল। “এখান থেকে আমাদেরকে চলে যেতে হবে।”

    “এখন কিভাবে যাবো?” অবাক হলো বাস্টার্ড। সকাল আটটার আগে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হয় না। তাদের কাছে নিজস্ব কোনো বোট কিংবা ইয়টও নেই।

    কিন্তু কিসিঞ্জার মুখ খোলার আগেই সে দেখতে পেলো তাদের ভিলার সর্ববামের জেটিটার কাছে একটা ওয়াটার ট্যাক্সি এসে ভিড়ছে এই অসময়ে, আর সেটার ছাদের উপরে লাল রঙের রুফ-লাইট জ্বলছে—যেমনটা পুলিশের গাড়িতে থাকে!

    ওহ্!

    এরকম কিছুর জন্যে সে প্রস্তুত ছিল না একদমই। বাস্টার্ডের শুধু মনে হলো তীরে এসে তরী ডুবতে বসেছে!

    অধ্যায় ৮৪

    কয়েক মুহূর্তের জন্য তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল।

    ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ফ্লোটিং ভিলায় কাজটা ঠিকমতো করার পরই আইল্যান্ডে পুলিশ চলে আসবে। অনেক কিছুই ভেবেছিল—কী হলে কী হতে পারে কিন্তু সত্যি বলতে এরকম কিছু তার মাথায়ও আসেনি।

    তাহলে কি ফ্লোটিং ভিলায় সার্ভিলেন্স ক্যামেরা আছে?!

    চিন্তাটা তার শিরদাড়ায় শীতল একটা প্রবাহ বইয়ে দিলো। খালি চোখে এরকম কিছুই দেখেনি। কিন্তু এস্টেট-অব-আর্ট প্রযুক্তির ছড়াছড়ি সমগ্র দুবাইতে। এই আইল্যান্ডেরই এক জায়গায় সারাক্ষণ কৃত্রিম বৃষ্টি পড়ে। তাদের পক্ষে খালি চোখে ধরা পড়ে না এরকম অত্যাধুনিক সিসিক্যাম বসানো কী আর এমন! এটা তার মাথায় রাখা উচিত ছিল। এত বড় ভুল কিভাবে হলো বুঝতে পারছে না।

    কিসিঞ্জারের দিকে তাকালো, হুইলচেয়ারে বসে মিটিমিটি হাসছে! তার কাছে মনে হচ্ছে বিকারগ্রস্তের মতো আচরণ করছে অসুস্থ এই মানুষটি।

    জেটিতে ওয়াটার-ট্যাক্সিটা ভিড়তেই সেখান থেকে নেমে এলো বলশালী তিনজন পুলিশ। তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে তারা!

    বাস্টার্ড ভালো করেই জানে, এই মিনি আইল্যান্ডে লুকানো সম্ভব না, আর এখান থেকে পালাবারও কোনো পথ নেই! আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে।

    তার হাতে আলতো করে চাপড় মারলো কিসিঞ্জার। “আমিই ওদেরকে কল করেছি।”

    অবিশ্বাসে লোকটার দিকে তাকালো। তবে কি কিসিঞ্জার প্রতিশোধ নিলো একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে?!

    “মি. আনিসুর রহমান?” পুলিশের একজন ইংরেজিতে জানতে চাইলো কাছে এসে?!”

    “ইয়েস, আই অ্যাম।”

    “ইউ আর ডান হিয়ার, স্যার?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো ক্যান্সারের রোগি

    “ওকে, উই উইল টেক ইউ ব্যাক টু দ্য শোর,” বলেই তাদের একজন কিসিঞ্জারকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো।

    “তুমি লাগেজ নিয়ে আসো, বাবলু,” দশাসই লোকটার কোল থেকে মিটিমিটি হেসে বলল। “হুট করেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি…আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।”

    এ সময় অন্য এক পুলিশ হুইলচেয়ারটা ফোল্ড করে তুলে নিলো।

    “জলদি করো!” জেটির দিকে যেতে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল। “আমার সময় মনে হয় শেষ হয়ে আসছে!”

    সম্বিত ফিরে পেলো বাস্টার্ড, চেয়ে দেখলো কিসিঞ্জারের হুইলচেয়ারটা যেখানে ছিল ঠিক তার পেছনেই, ঝোঁপের কাছে তাদের লাগেজদুটো রাখা আছে। সেগুলো হাতে তুলে নিয়ে পুলিশদের পেছনে পেছনে এগিয়ে গেল সে।

    পরিহাসের হাসি ফুটে উঠল বাস্টার্ডের ঠোঁটে। খুন করে পুলিশ প্রহরায় পুলিশের নৌযানে করে পালিয়ে যাচ্ছে!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
    Next Article অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }