Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কন্ট্রোল (বেগ-বাস্টার্ড ৭) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প399 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কন্ট্রোল – ১৫

    অধ্যায় ১৫

    মেয়েটা কিছু বলতে চায় তাকে!

    জেফরি বেগ জানতো জেসি নামের মেয়েটি কেন তাকে নাম্বার দিয়েছে। সে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একজন সোর্স। হয়তো সাক্ষি দেবার সাহস দেখাবে না, তবে সে এমন কিছু জানে যা এই কেসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    বনানীর ঐ অ্যাপার্টমেন্টে কাজ সেরে হোমিসাইডে ফিরে গেল না, দুটো রাস্তা পার বারকোড ক্যাফে নামের ছোট্ট একটা ক্যাফে”তে ঢুকে পড়লো। আবাসিক এলাকা হলেও গুলশান-ধানমণ্ডির মতো বনানীতেও অনেক ক্যাফে আর রেস্টুরেন্ট আছে। এমন কোনো রাস্তা কমই আছে যেখানে রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড কিংবা ক্যাফে নেই।

    লাঞ্চের সময় নয় বলে ভেতরে কাস্টমার মাত্র দুজন। একটা কর্নারে গিয়ে বসলো সে। এখানে আসার পথেই ফোন করে বলে দিয়েছিল মিস জেসিকে।

    দশ মিনিট পর জেসি এলো ক্যাফের ভেতরে, তাকে সালাম দিয়ে বসে পড়লো টেবিলের বিপরীত দিকে। জামা পাল্টে পরিপাটী হয়ে এসেছে। দুজনের জন্য কফির অর্ডার দিয়ে আলাপচারিতা শুরু করলো জেফরি বেগ।

    “আপনি মনে হয় কিছু বলতে চান?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেসি। “কিন্তু এটা সিক্রেট থাকবে, আমার নাম যেন না আসে…ওকে?”

    “ঠিক আছে,” আশ্বাস দিয়ে বলল হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটর। “আপনি নিশ্চিন্তে বলুন।”

    “আমি কিন্তু উইটনেস হতে পারবো না। আমার কথাগুলো রেফারেন্স হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন না। আমি একা একটা মেয়েমানুষ, ওদের মতো কারোর অ্যাগেইনস্টে যেতে পারবো না।”

    মেয়েটার ভয় আর অসহায়ত্ব বুঝতে পারলো সে। এত বছর ধরে হোমিসাইডে কাজ করে বুঝেছে, শুধুমাত্র ভালো ইনভেস্টিগটের হলেই হয় না, সাধারণ জনগণ এবং সাক্ষিদের কাছে নিজেকে আস্থাভাজন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। “ওকে।”

    “আপনাদের কী মনে হচ্ছে, এটা সুইসাইড?” জেসি প্রথমেই বলল তাকে।

    কাঁধ তুলল জেফরি বেগ। “তদন্ত না করে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। “ “এটা ক্লিয়ার মার্ডার, বুঝতে পারছেন?”

    “এত জোর দিয়ে কিভাবে বলছেন?”

    “কাল অনেক রাত পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ও চলে যাবে দেশের বাড়িতে, আবার কবে দেখা হবে কে জানে তাই বাইরে গিয়ে আমরা তিনজন ডিনার করেছি…সেখান থেকে আমার ফ্ল্যাটে এসে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছি আমরা।”

    মনোযোগ দিয়ে শুনে গেল সে।

    “আপনি কি জানেন সোনিয়ার সঙ্গে কার রিলেশন ছিল?”

    “ওর বড় বোন বলেছে জাহান গ্রুপের সিইও আলভীর কথা।”

    “একদম!” জোর দিয়ে বলল জেসি। “ওই লোক ফ্ল্যাটে নিয়মিত আসতো।” দু হাত দিয়ে মাথার দু পাশটা ধরলো এবার।

    “মাথা ধরেছে?”

    “আমার কঠিন মাইগ্রেন আছে। আপনি এক কাজ করুন, আমাকে ইন্টেরোগেট করুন…প্লিজ।”

    বিস্মিত হলো জেফরি। এই প্রথম কেউ তাকে নিজ থেকে বলছে ইন্টেরোগেট করতে!

    “আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে, গুছিয়ে বলতে পারবো না কোনো কিছু। বেটার হয়, আপনি জিজ্ঞেস করে করে জেনে নিলে।”

    বুঝতে পারলো হোমিসাইডের ইনভেস্টিগটের। “সমস্যা নেই, কফি আসুক… কফি খেলে আপনার মাইগ্রেনটা কমবে।”

    “আমার মাইগ্রেন কফি খেলে যায় না।”

    তারপরও কফি চলে আসার পর জেফরি বেগ কথা বলতে শুরু করলো। “আপনার সঙ্গে সোনিয়ার কেমন সম্পর্ক ছিল?”

    “মাত্র গত রোজায় পরিচয়, এর আগে কখনও কথাও হয়নি, দুয়েক বার দেখেছি অবশ্য, ভেবেছিলাম স্টুডেন্ট, পাশের ফ্ল্যাটে ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে,” একটু থেমে মাথা দোলালো মেয়েটি। “সাত-আট রোজায় জানতে পারলাম ও একা…অবাকই হয়েছিলাম আমি,” পর পর দু বার কফিতে চুমুক দিলো।

    “কিভাবে জানতে পারলেন এটা?”

    “রোজার সময় আমার মেইড সার্ভেন্ট ওর ওখানে কাজ নিয়েছিল, ও-ই আমাকে বলেছিল সোনিয়া একা থাকে ফ্ল্যাটে। তারপর একদিন বলল, মেয়েটা রোজা রাখে, ইফতার না করেই রোজা ভাঙে এক গ্লাস পানি খেয়ে। বাচ্চা একটা মেয়ে… আপনি জানেন ওর বয়স কতো?”

    “একুশ-বাইশ?”

    “এক্সাক্টলি…বাইশ বছর মাত্র,” আবারো কফিতে চুমুক দিলো জেসি। “আমার খুব খারাপ লেগেছিল কথাটা শুনে, আমি আর আমার হাউজমেইড একা একা-ই ইফতার করতাম, তাই একদিন সোনিয়ার ফ্ল্যাটের দরজায় বেল বাজালাম, ওকে বললাম আমাদের সঙ্গে ইফতারি করার জন্য। খুব খুশি হয়েছিল ও, আমার ফ্ল্যাটে এসে ইফতার করলো, গল্প-গুজব করলো। আমিই বললাম, প্রতিদিন যেন ইফতার করে,” ভারি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “ঐদিনের পর থেকে বাকি রোজাগুলো আমার সঙ্গেই ইফতার করেছে।”

    আরো কিছু শোনার জন্য চুপ মেরে রইলো জেফরি বেগ।

    “রোজার শেষের দিকে একদিন ইফতারের পর আমার ফ্ল্যাটে ছবি-টবি তুলেছিলাম ওর সঙ্গে। আমি তো কিছুই জানতান না, ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড দেবার পরই আমার লিস্টে থাকা এক ফ্যাশন ডিজাইনার ইনবক্সে নক দিয়ে জানতে চাইলো সোনিয়ার কথা…এই মেয়ে আমার ফ্ল্যাটে কেন!”

    নড়ে চড়ে বসলো জেফরি বেগ। “আপনি কী বললেন?”

    কাঁধ তুলল জেসি। “যা সত্যি তাই বললাম…ও আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। তখন ঐ ফ্যাশন ডিজাইনার বলল, সোনিয়ার সঙ্গে নাকি জাহান গ্রুপের আলভী করিমের গোপন রিলেশন আছে।”

    ভুরু কুঁচকে গেল তার। “ঐ মহিলা এটা কিভাবে জানলো?”

    “কী বলবো আপনাকে, ওর সঙ্গে আলভীর ওয়াইফের ভালো খাতির। ওর কাছে নাকি আলভীর ওয়াইফ তার হাজব্যান্ডের এই সম্পর্কের কথাটা বলেছিল, সেজন্যে মেয়েটাকে চেনে। এটা নিয়ে ওদের মধ্যে ভালোই ঝামেলা হয়েছিল, আলভী নাকি প্রমিজ করেছিল সোনিয়ার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবে না…ও ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে।”

    এই মেয়ের কাছ থেকে আরেকটি গল্পের সন্ধান পাওয়া গেল তাহলে। “আপনি সোনিয়ার কাছ থেকে জানতে চাননি এই ব্যাপারটা নিয়ে?…ও কী করে, একা থাকে কেন?”

    মাথা দোলালো জেসি। “আমি টিপিক্যাল বাঙালি মেয়েদের মতো না, আজাইরা আগ্রহ আমার নেই। কে কিভাবে থাকে, কার সঙ্গে থাকে, কী করে…আই ডোন্ট কেয়ার!” কাঁধ তুলল। “কেউ যদি আমাকে ক্লোজ মনে করে, ট্রাস্ট করে সেটা ঠিক আছে, আই উইল লিসেন…নইলে আমার আগ্রহ হয় না।”

    প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি বেগ। এটা বাঙালি হিসেবে বিরল স্বভাবই বটে। সম্ভবত মেয়েটা স্বাবলম্বী আর নিজের বেলায়ও এমনটা আশা করে অন্যদের কাছ থেকে।

    “গত সপ্তাহে ও নিজ থেকেই আমাকে বলেছিল ওর সঙ্গে জাহান গ্রুপের সিইও”র রিলেশন আছে। আমি তখনই বুঝেছিলাম মেয়েটা ঝামেলায় পড়বে, শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো!” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল জেসি।

    “সোনিয়া কি স্মোক করতো?”

    “না, না… একদমই না।”

    “আচ্ছা।” স্মোক কে করেছিল-খুনি নাকি ভিক্টিমক—সেই উত্তর পেয়ে গেল জেফরি। “আপনি কেন এটাকে মার্ডার বলছেন সেটা কিন্তু বলেননি?”

    জেফরির প্রশ্নে মাথা ঝাঁকালো মেয়েটি। “আমি ফ্রিল্যান্সার, অনলাইনে কাজ করি রাত দুটা-তিনটা পর্যন্ত… কাল রাত দুইটার দিকে হবে…আম নট শিওর…একটা ব্রেক নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরিয়েছিলাম, নিচে তাকিয়ে দেখি পুলিশের গাড়ি।”

    নড়ে চড়ে উঠল জেফরি বেগ।

    “পুলিশের গাড়ি দেখে অবাক হয়েছিলাম। এক পুলিশ কিছুক্ষণ আমাদের বিল্ডিংটা নিচ থেকে দেখে, মেইন গেটের সামনে এসে ভেতরের কারোর সঙ্গে কথা বলে…আই গেস দারোয়ানের সঙ্গে…তারপর চলে যায়।”

    দারোয়ান এরকম কোনো কথা জেফরিকে বলেনি। তবে এটাও ঠিক সে- ও জানতে চায়নি। বুঝতে পারলো অভিজাত এলাকায় এসে দারোয়ানদের চরিত্রও পাল্টে যায় দরকারের বেশি কথা বলে না।

    “পুলিশ চলে যাবার পর আমি আবারো কাজ করতে শুরু করি, আধঘণ্টা পর সোনিয়ার ফ্ল্যাট থেকে একটা শব্দ পাই তখন।”

    “কী রকম শব্দ?”

    “কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার…লাইক, বস্তা-টস্তা টাইপের কিছু?”

    সোনিয়ার ফ্ল্যাটটা ভালোমতো দেখেছে জেফরি, এরকম কোনো কিছু তার চোখে পড়েনি। ধারণা করলো ততক্ষণে সোনিয়াকে খুন করে ফেলেছে খুনি, হয়তো তার নিথর দেহটা দড়িতে ঝোলানোর সময় হাত থেকে পড়ে থাকতে পারে।

    “আমি অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সকালে দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দে ঘুম ভাঙে আমার। পরে শুনলাম সোনিয়া সুইসাইড করেছে। কিন্তু ও সুইসাইড করার মেয়ে না, জীবনেও না!”

    সায় দিলো জেফরি বেগ। যদিও জানে বেশিরভাগ আত্মহত্যাকারীর কাছের মানুষজন এমনটাই বলে থাকে। “এতটা জোর দিয়ে কিভাবে বলছেন আপনি?”

    “কারণ সোনিয়া ওর পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করতে চায়নি!”

    সোনিয়া গর্ভবতী ছিল! অবাক হলো জেফরি বেগ।

    “কেন চায়নি সেটা অবশ্য আমাকে বলেনি। আলভী ওকে খুব চাপ দিচ্ছিল অ্যাবরশন করার জন্য, ও রাজি হয়নি। আপনিই বলুন, এই মেয়ে কি সুইসাইড করবে? বাচ্চাটাকেসহ নিজেকে মেরে ফেলবে?”

    মাথা দোলালো জেফরি। আর তখনই হুট করে একটা কথা তার মাথায় উদয় হলো। ঠিক করলো, সেটাই করবে।

    অধ্যায় ১৬

    যতো মুশকিল ততো আসান!

    মনে মনে বলল আকবর হাসান। নিজেকে একজন ট্রাবলশুটার ভাবে সে। অবশ্য আজকালকার ছেলেপেলেরা এটা শুনলে তাকে কী ভাববে কে জানে! শব্দটির সঙ্গে ওদের পরিচয় হয়েছে কম্পিউটার চালাতে গিয়ে। ওরা জানেই না কম্পিউটারে যেসব শব্দ ঘুরে বেড়ায় সেগুলোর প্রায় সবই কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে থেকেই ছিল। ওদের পক্ষে বোঝা খুব কষ্টকর হবে শব্দটির আসল মানে কী, এর ব্যাপ্তি কতোটুকু।

    সম্ভবত আমেরিকানরা এই টার্মটির প্রচলন করে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগেও মার্কিন সরকারে কমপক্ষে একজন থাকতো যাকে তারা ট্রাবলশুটার হিসেবে বিবেচনা করতো। দুনিয়ার কোথাও কোনো অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে, কোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে এদেরকে পাঠানো হতো একটা মিশন দিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে এরা সফল হতো তার প্রমাণ দীর্ঘদিন ধরে দুনিয়ার উপরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারিত্ব বজায় থাকা। আগে মিডিয়াতে এদেরকে ফলাও করে ট্রাবলশুটার বলা হলেও এখনকার ট্রাবলশুটারদেরকে একটু আড়ালেই রাখে সেই দেশের প্রশাসন, যাতে করে তারা আরো ভালোভাবে কাজটা করতে পারে।

    অনেকটা তার মতো!

    সে-ও আড়ালে থাকে সব সময়। একেবারে শুরু থেকেই। প্রায় একুশ বছর ধরে জাহান গ্রুপের হয়ে কাজ করছে। যখন এখানে ঢোকে তখন তার বয়স ছিল পঁচিশ কি ছাব্বিশ। আলভী মাত্র আট-নয় বছরের বাচ্চা ছেলে। তার বড় ভাই আরাফির বয়স তেরো কী চৌদ্দ। এই একুশ বছরে কতো সমস্যার সমাধান করেছে তার কোনো হিসেব নেই। কখনও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। অনেক সময় একটু বেশি ঝামেলা হয়েছে, একটু সময় নিয়েছে-এই যা।

    তবে কখনও এত অল্প সময়ে দুটো ঝামেলা মিটমাট করেনি।

    সে কেবল তাদের একজন কর্মচারিই নয়, শাহজাহান করিমের শ্বশুড়বাড়ির দিককার আত্মীয়ও বটে। ফলে এই পরিবারটি ঝামেলায় পড়লে তাকেই ডাকা হয় সবার আগে- কর্মচারিদের মধ্যে সে যেমন বিশ্বস্ত তেমনি কাজের। কার হয়ে কী কাজ করছে, সেটা কখনও মুখ ফুটে বলে না।

    এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, শাহজাহান সাহেবের পরিবারে ঝামেলা তৈরি হলে তার জন্য বাড়তি আয়রোজগারের সুযোগও এসে পড়ে। আজকের কাজটার কথাই ধরা যাক, যে ডাক্তার সোনিয়া নামের মেয়েটির ময়না তদন্ত করবে তাকে ম্যানেজ করার জন্য বাজেট দেয়া হয়েছে পঁচিশ লাখ টাকা কিন্তু ডাক্তার দশ লাখেই রাজি হয়ে গেছে। তার সহকারির টাকাসহ!

    লোকটা নির্ঘাত বোকা, হাজার কোটি টাকার মালিক জাহান গ্রুপের সিইও বিপদে পড়েছে, কম করে হলেও পঞ্চাশ চাওয়া উচিত ছিল। দরদাম করে না-হয় সেটা পঁচিশ-ত্রিশে আনা যেতো। লোকটার কোনো ধারণাই নেই, আলভী এ কাজের জন্য কয়েক কোটি টাকাও খরচ করতে পিছপা হতো না।

    শালার ডাক্তার! আকবর হাসানের ধারণা এই লোক জীবনে পাঁচ লাখ টাকার উপরে কোনো দুর্নীতি করেনি।

    “স্যার?…ভিতরে ঢুকবো?”

    ড্রাইভারের কথায় সম্বিত ফিরে পেলো সে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছে তার গাড়িটা। “না, বাইরে কোথাও পার্ক করো… নির্জন জায়গায়।”

    ড্রাইভার মেডিকেল কলেজের পশ্চিম দিকের গেটটার একটু আগে ফুটপাতের পাশে থামালো গাড়িটা। রাস্তার ওপারে বুয়েটের খেলার মাঠ।

    পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিলো আকবর হাসান। “চলে আসছি…ব্লু কালারের একটা গাড়ি।” ফোনটা কান থেকে সরিয়ে রাখলো। সিটের নিচে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগটার দিকে তাকালো সে, দশ লাখ টাকা আছে তাতে। এরকম ট্রানজাঙ্কশান ব্যাঙ্কের মাধ্যমে করাটা নিরাপদ নয়, নগদে সারতে হয়। ট্রেস করা যায় এমন কিছু করলে বিপদ হয়ে যেতে পারে। যদিও আজকের কাজটা নিয়ে সেরকম কিছু হবার সম্ভাবনা একদমই দেখছে না।

    বাইরে তাকালো। কিছু খালি রিক্সা ফুটপাত ঘেষে লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে। সকালের শুরুতে এই রাস্তাটা একটু নির্জন থাকে।

    অপেক্ষা করার সময় পা দুটো নাচাতে লাগলো আকবর হাসান। একটা ডিল ভালোমতো সম্পন্ন হয়ে গেলে তার মেজাজ ফুর ফুরে থাকে। একে তো নিজের কাজটা ঠিকমতো করতে পারার তৃপ্তি, দ্বিতীয়ত পকেট ভারি হওয়ার প্রশান্তি। সে কিছু না করেও, কোনো ঝুঁকি না নিয়েও আজকে ঐ বোকাচোদা ডাক্তারের চেয়ে বেশিই পাচ্ছে।

    এমন সময় সামনের দিকে চেয়ে দেখতে পেলো মাঝবয়সি এক লোক মেডিকেল কলেজের গেট দিয়ে বের হয়ে এদিকেই আসছে। চোরের মতো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকাচ্ছে, যেন তাকে দেখছে সবাই!

    ডাক্তার ভদ্রলোক গাড়ির কাছে এসে ঝুঁকে ভেতরের দিকে তাকালো, সঙ্গে সঙ্গে বাঁ-দিকের দরজাটা খুলে দিলো সে। “আসুন।”

    ভদ্রলোক গাড়ির ভেতরে ঢুকে লম্বা করে শ্বাস নিলো। একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে তাকে।

    “কখন করবেন?”

    প্রশ্নটা বুঝতে কয়েক মুহূর্ত লাগলো ডাক্তারের। “ওহ্…একটু পরই।” পায়ের কাছে রাখা ব্যাগটা ডাক্তারকে দিয়ে দিলো আকবর হাসান। টাকাভর্তি ব্যাগটা হাতে নিয়ে কেমন বোকার মতো হাসি দিলো ভদ্রলোক। বুঝতে পারছে না টাকা পেয়েই গাড়ি থেকে নেমে যাওয়াটা অভদ্রতা হয়ে যাবে কি না। “তাহলে আসি?” অবশেষে বলল।

    “প্লিজ,” স্মিত হাসি দিলো ট্রাবলশুটার।

    দরজা খুলে ডাক্তার যে-ই না বের হবে কোত্থেকে তিন-চারজন অস্ত্রধারী লোক এসে ঘিরে ফেলল গাড়িটা। ডাক্তার এবং আকবর হাসান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কয়েক মুহূর্তের জন্য তারা মনে করলো এরা বুঝি ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।

    পরক্ষণেই বুঝতে পারলো, ছিনতাইকারী হলেই বরং ভালো হতো!

    অধ্যায় ১৭

    শরীরে কী সব তার-টার জড়িয়ে হোমিসাইডের ইন্টেরোগেশন রুমে বসে আছে ডাক্তার আরাফাত রহমান।

    মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে সে। এই জীবনে যতো সুনাম কামিয়েছিল সবই আজ ধুলিসাৎ হবার পথে। দশ লাখ টাকা ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে। চাকরি, মানসম্মান সব তো শেষ হবেই, নিজের পরিবারের কাছে, সন্তানদের কাছে মুখ দেখাবে কীভাবে ভেবে পাচ্ছে না।

    সে শুনেছে এখানে লাই ডিটেক্টর দিয়ে যাচাই করা হয় সন্দেহভাজন সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে। মিথ্যে আর কী বলবে? সে তো হাতেনাতে ধরা পড়েছে টাকাসহ। আর এসবের জন্য দায়ি ঐ লোকটা। এখন তার উপরে গিয়ে জমা হচ্ছে সমস্ত ক্ষোভ।

    গতকাল বিকেলে ফোনটা এসেছিল তার কাছে। নিজের একটা নাম বলেছিল কিন্তু সেটা আর মনে করতে পারছে না। মি. হাসান না কী যেন। সুন্দর করে কথা বলেছিল লোকটা। তার সঙ্গে জরুরি একটা প্রয়োজনে দেখা করতে চায়। দীর্ঘদিনের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছিল কী জন্যে দেখা করতে চায়। এর আগেও এরকম কাজ করেছে। তবে সবটা টাকার বিনিময়ে নয়। উপর মহলের নির্দেশেও অনেক রিপোর্ট পাল্টে দিতে হয়েছে তাকে।

    সন্ধ্যার দিকে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় দেখা করেছিল লোকটার সঙ্গে। সাদা রঙের একটা সাদামাটা গাড়ি চালিয়ে এসেছিল। মি. হাসান বলতে শুরু করে, তার ক্লায়েন্ট উটকো এক ঘটনায় ফেঁসে গেছে, সে যদি একটু সাহায্য করে তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। এর বিনিময়ে তাকে উপযুক্ত টাকাও দেয়া হবে।

    হ্যাঁ, লোকটা একেবারে সরাসরি টাকার কথাটা তুলেছিল, কোনো রকম ভণিতা করেনি। তবে নিজের ক্লায়েন্টের পরিচয়টা পুরোপুরি গোপন রেখেছিল তার কাছে। সে-ও জানার চেষ্টা করেনি। তার প্রস্তাবটা ছিল খুব সোজাসাপ্টা : সোনিয়া নামের মেয়েটি সুইসাইড করেছে, আর সে গর্ভবতী ছিল না-এই দুটো ব্যাপার যেন রিপোর্টে থাকে-তার জন্য কতো টাকা দিতে হবে তাকে?

    একটু ধন্দে পড়ে গেছিল সে। কতো বললে ঠিকঠাক বলা হবে বুঝতে পারেনি। এর আগে চার লাখ টাকার একটা কাজ করেছিল। তাহলে কি পাঁচ বলবে? কিন্তু পাঁচ বললে তো পাঁচে রাজি হবে না, একটু বাড়িয়ে বলা দরকার। কামান চাইলে পিস্তল পাবে। মুখ ফস্কে বের হয়ে গেছিল দশ লাখ টাকার কথা।

    মি. হাসানের ভুরু দৃশ্যমানভাবেই কপালে উঠে গেছিল।

    তখন ভেবেছিল আরেকটু কম টাকার কথা বলবে কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে লোকটা বলেছিল কাল সকালে টাকা নিয়ে আসবে। কোথায় আর কখন আসবে সেটা অবশ্য ডাক্তার নিজেই বলে দিয়েছিল।

    ময়না তদন্তের আগেই টাকাটা হাতে পেতে চেয়েছিল সে। এসব কাজ বাকিতে করা যায় না। তাই আজ সকাল নয়টার দিকে সময় দিয়েছিল। টাকা হাতে পাবার পরই ময়না তদন্ত করতো।

    কিন্তু সেটা আর হয়নি। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছে না। এই হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট তাদের ডিলটা সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারলো সে এক রহস্যই বটে।

    এটা সত্যি, মি. হাসান কোনো রকম বিট্রে করেনি। তার দিক থেকে এটা করা প্রায় অসম্ভব। ঐ লোক নিজেও বিপদে পড়ে গেছে। তার চেয়ে কোনো অংশে কম ভড়কে যায়নি। তবে লোকটার নার্ভ বেশ শক্ত। একদম চুপ মেরে গেছে। এই ইন্টেরোগেশন রুমে নিয়ে আসার সময় ঐ লোককে অন্য কোথাও রাখা হয়েছে। হয়তো তাকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

    এমন সময় দরজাটা খুলে গেল, যে পাঁচজন লোক তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে তাদের দুজন ঢুকলো ঘরে। একজনের হাতে একটা ফাইল, অন্যজনের হাতে ল্যাপটপ। তাকে ধরে আনার সময় খেয়াল করেছে ফাইল হাতের লোকটিকে সবাই “স্যার” বলে সম্বোধন করে।

    “আমি হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ,” নিজের পরিচয় দিয়ে সন্দেহভাজনের বিপরীতে বসে পড়লো। এ দেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারি সংস্থার লোকজন সন্দেহভাজন আসামির কাছে নিজের পরিচয় দেয় না কিন্তু জেফরি তার ব্যতিক্রম। সন্দেহভাজনের জানার অধিকার আছে কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এফবিআই”র প্রশিক্ষণ তাকে এই সৌজন্যতাবোধ শিখিয়েছে। “আর ও হচ্ছে সহকারি ইনভেস্টিগেটর জামান।”

    সহকারি ইনভেস্টিগেটর বসে পড়লো তার বসের পাশে। ল্যাপটপটার সাথে ডাক্তারের হাতে লাগানো তারের কানেকশন দিলো সে।

    ডাক্তারের দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো জেফরি বেগ। মহান পেশার লোক! একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। ব্যাপারটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল সে।

    যতো জাঁদরেল ইনভেস্টিগেটরই হোক না কেন, যতো বড় আইনজীবিই লড়াই করুক, এই কেসে পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টটাই শেষ পর্যন্ত আদালতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর সেটা করতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োজিত করবে তারা। কে না জানে, এদের আসল শক্তি হলো টাকা।

    জেসির সঙ্গে কথা বলার পরই চিন্তাটা তার মাথায় আসে, এরপরই রমিজকে বলে দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারসহ যারা যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে যেন আগামি চব্বিশ ঘণ্টা আড়ি পাতা হয়। আর সেটা করতে গিয়েই জানতে পারে মি. হাসান নামের একজন ডাক্তার আরাফাতকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চাইছে। তাদের দুজনের ফোনের জিপিএস ট্র্যাক করে কালকেও ফলো করেছিল হোমিসাইডের একটি দল কিন্তু টাকাসহ হাতেনাতে ধরার জন্য জেফরি বেগ তখন তাদেরকে গ্রেফতার করেনি।

    “আপনি কি জানেন কার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন?” প্রশ্ন করা শুরু করলো জেফরি বেগ।

    প্রথম প্রশ্নেই অবাক হলো ডাক্তার। “ম-মি-মিস্টার হাসান।”

    “হ্যাঁ, সেটা ঠিক আছে কিন্তু এই লোক কে, কী করে, কার হয়ে কাজ করছে সেটা জানতেন?”

    ঢোক গিলল আরাফাত রহমান। “না, শুধু নামটা জানি।”

    “সেটাও তো পুরোপুরি জানেন না। ওই লোকের নাম আকবর হাসান, “ আক্ষেপে মাথা দোলালো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। “কার হয়ে কাজ করছেন সেটাও জানেন না। তাহলে জেনে নিন, এটা জাহান গ্রুপের সিইও আলভীর কাজ।”

    নামটা শোনামাত্র ভয়ে ঢোক গিলল ডাক্তার। এ দেশের সবচেয়ে বড় ভূমিদস্যু পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান লোক জড়িত এই ঘটনায়! সৰ্বনাশ! তাদের হাত আইনের চেয়ে না, দেশের চেয়েও বড়। দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে পারে এরা। পুলিশ আর বিচার বিভাগকে থোরাই কেয়ার করে। মাফিয়াদের চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখে, মন্ত্রি-এমপিরা তাদের হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে। শত না, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক I আগে জানলে এই ঘটনায় ভুলেও জড়াতো না।

    “আপনি দেখি ঘুষটাও ঠিকঠাক খেতে পারেন না,” কৃত্রিম আফসোসের সুরে বলল জেফরি। “হাজার কোটি টাকার লোক বিপদে পড়েছে, কোথায় তিন-চার কোটি টাকা চাইবেন…দশ লাখে রাজি হয়ে গেলেন। ওরা তো আপনাকে ফকির-মিসকিন ছাড়া আর কিছু ভাববে না।”

    অপমানে ডাক্তারের মুখ লাল হয়ে গেল, মাথা নিচু করে ফেলল সে। এরপরই টনক নড়লো তার এই ক্ষমতাবান লোক এখন নিজের প্রয়োজনেই তাকে বাঁচাতে চাইবে! তাকে না বাঁচালে ঐ আকবর হাসানকে বাঁচাতে পারবে না। আর আকবর হাসান রক্ষা না পেলে জাহান গ্রুপের সিইও কিভাবে পার পাবে?

    অন্ধকারেও আলো দেখতে শুরু করলো ডাক্তার আরাফাত। এজন্যেই জ্ঞানী-গুণীরা বলে, শেষ মুহূর্তের আগে হাল না ছাড়তে। বুকভরে নিশ্বাস নিয়ে নিলো। এ দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পরিবারটির সমর্থন পাবে সে। টেবিলের বিপরীত দিকে চোখ তুলে তাকালো। ইনভেস্টিগেটর লোকটা মিটিমিটি হাসছে। কী যেন নাম বলল? জাফরি?

    “আপনি মনে করছেন ওরা আপনাকে বাঁচাবে?”

    এ কথা শুনে রীতিমতো বজ্রাহত হলো আরাফাত রহমান। এই লোক কি মনের কথা পড়তে পারে? পরক্ষণেই নিজের দু হাতের দিকে তাকালো, সেখানে কিছু তার সেন্সর দিয়ে লাগানো আছে ল্যাপটপের সঙ্গে। তাহলে কি এই যন্ত্রটা দিয়ে মিথ্যা ধরে না, মনের কথা পড়ে ফেলে?! সৰ্বনাশ!

    “মোটেই না,” মাথা দোলালো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। “ওরা আপনাকে এলিমিনেট করে দেবার চেষ্টা করবে।”

    কথাটা শুনে চোখ পিট পিট করে তাকালো ডাক্তার। এটা সে আগে ভাবেনি। তাই তো! এরকম ক্ষমতাবানেরা কি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে? এর চেয়ে অনেক সহজ কাজ করবে তারা সরিয়ে দেবে দুনিয়া থেকে!

    হায় আল্লাহ!

    অধ্যায় ১৮

    অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে জেফরি বেগ জানে এমন স্টিঙ্গ অপারেশন দেখতে শুনতে যতো চমকপ্রদই লাগুক, থুলার মুভির মতো মনে হোক না কেন, আদালতে জাঁদরেল উকিলের সামনে সবটাই ঠুনকো হয়ে পড়বে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে সঙ্গে করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রেখেছিল। ভাগ্য ভালো, হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব একজন ম্যাজিস্ট্রেট আছে, যখন প্রয়োজন তাকে সঙ্গে রাখা যায়। আর এই ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কারণেই আদালতে জাঁদরেল আইনজীবীর দল বলতে পারবে না, হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের লোকেরা তার মক্কেলের গাড়িতে টাকার ব্যাগ রেখে সাজানো নাটক করেছে।

    অডিও কলের ব্যাপারটা অবশ্য তারা এডিট-টেডিট বলে দুর্বল করার চেষ্টা করবে। যদিও পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতা থেকে এখানেও জেফরি বেগ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কলগুলো রেকর্ড করেছে। বাকি থাকে ভিডিওটা। খোদ ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিল বলে এটাও উড়িয়ে দিতে পারবে

    না।

    যাই হোক, খুব অল্পতেই ডাক্তার আরাফাত রহমানকে কাবু করা গেছে। আকবর হাসানের প্রস্তাব এবং ঘুষের দশ লাখ টাকার লেনদেনের কথা স্বীকার করেছে সে। তবে জাহান গ্রুপের লোকটা যে সহজ হবে না, জেফরি সেটা বুঝতে পারছে।

    ইন্টেরোগেশন রুম থেকে বের হয়ে নিজের অফিসে বসে এক কাপ কফি খেয়ে নিলো। ডাক্তারকে লকাপে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে আর আকবর হাসানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইন্টেরোগেশন রুমে। কফিতে চুমুক দিয়ে ফোনটা তুলে নিলো হাতে, কল করলো দিলান মামুদকে।

    “হ্যালো?…

    কী অবস্থা?” ওপাশ থেকে বলল ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। “আবার কিছু হয়েছে নাকি?”

    “হুম…বিরাট বড় নিউজ বলতে পারেন।”

    শিষ বাজালো দিলান। “আপ দিতে হবে মনে হচ্ছে?”

    “জাহান গ্রুপের আলভী পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টটা ম্যানিপুলেট করতে চেয়েছিল…তাদের এক লোক ডাক্তারকে দশ লাখ টাকা ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে আমাদের জালে।”

    “মাম্মামিয়া!” আতিশয্যে বলে উঠল সাংবাদিক। “এটা তো নাইন পয়েন্ট নাইন স্কেলের ভূমিকম্প… কাঁপিয়ে দেবে একদম!

    “তাহলে আপনার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছি?”

    “শিওর…আন্ড থ্যাঙ্ক ইউ আগেইন।”

    ফোনটা রেখে মুচকি হাসলো জেফরি বেগ। এই দিলান মামুদকে তার এজন্যে ভালো লাগে না যে সে ভালো সাংবাদিক। এরকম ভালো সাংবাদিক এখনও অনেকেই আছে কিন্তু যে জিনিসটা থাকলে ভালো সাংবাদিক ভালো কাজ করতে পারে সেটা কয়জনের আছে কে জানে। তবে দিলান মামুদের যে আছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই-লোকটা সাহসি! অনেকটা তার মতোই!

    কফি শেষ হতেই ইন্টারকমটা বেজে উঠল। রিসিভারটা তুলে নিলো জেফরি।

    “স্যার, রেডি হয়ে গেছে,” ওপাশ থেকে বলল জামান।

    “আসছি,” খালি মগটা ডেস্কে রেখে বের হয়ে গেল। করিডোর দিয়ে যাবার সময় দেখা হয়ে গেল রমিজ লস্করের সঙ্গে। সে তার যন্ত্রপাতি আর সাইড-ব্যাগ নিয়ে লিফটের কাছে যাচ্ছে।

    “হাসপাতালে যাচ্ছো তুমি?”

    “জি, স্যার।”

    “ঠিক আছে।”

    সোনিয়ার পোস্ট মর্টেম করবে অন্য একজন করোনার আর সেখানে ফরেনসিক এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত থাকবে রমিজ। করোনারের পাশাপাশি হোমিসাইডও কিছু স্পেসিমেন সংগ্রহ করবে নিজস্ব ল্যাবে টেস্ট করার জন্য, সেই সঙ্গে পুরো পোস্ট মর্টেমটা ভিডিও করবে সে আরেকটি শক্তপোক্ত প্রমাণ হিসেবে। এই কেসে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট খুব বেশি ভাইটাল রোল প্লে

    করবে বলে জেফরি সেটা নিয়ে এত বেশি তৎপর। ভবিষ্যতে হোমিসাইডের জন্য নিজস্ব করোনার আর পোস্ট মর্টেমের ফ্যাসিলিটির ব্যবস্থা করার চিন্তা আছে তার। এ নিয়ে খুব জলদিই মহাপরিচালক ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা বলবে।

    দ্বিতীয় বারের মতো ইন্টেরোগেশন রুমে ঢুকলো জেফরি বেগ। আকবর হাসান শক্ত হয়ে বসে আছে চেয়ারে। তার হাতে সেন্সর লাগানো। জামান পাশেই দাঁড়িয়েছিল, ঊর্ধ্বতনকে বসতে দেখে সে-ও বসে পড়লো, মনোযোগ দিলো ল্যাপটপের দিকে।

    নিজের এবং জামানের পরিচয় দিয়ে জেফরি বেগ তার জেরার কাজ শুরু করলো। “আপনার পুরো নাম?”

    নির্বিকার রইলো লোকটা।

    “পেশা?” ইচ্ছে করেই চাছাছোলাভাবে, অনেকটা সামরিক কায়দায় জিজ্ঞেস করলো।

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো মি. হাসান। কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। কী পেশার কথা বলবে? জাহান গ্রুপে তার কোনো পদ-পদবি নেই, আছে শুধু জরুরি কাজ!

    “সময় নষ্ট করে লাভ নেই, মি. হাসান,” জেফরি বলল। “আপনার এস্প্রয়ার এখনও জানে না আপনি আমাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, আরো

    পরে জানতে পারবে তারা। আপনাকে ফোনে না পেলে হয়তো ভাববে টাকাগুলো নিয়ে সটকে পড়েছেন।

    বিস্ফারিত চোখে তাকালো জাহান গ্রুপের ট্রাবলশুটার, যেন তাকে অপমান করা হয়েছে।

    “কথাটা তো পুরোপুরি মিথ্যেও নয়,” মুচকি হেসে বলল জেফরি বেগ। সহকারি জামানের দিকে তাকালো, সে-ও মুখ টিপে হাসছে। “পঁচিশ লাখ নিয়েছেন জাহান গ্রুপ থেকে, ডাক্তারকে ম্যানেজ করেছেন দশ লাখে, বাকি পনেরো লাখ কি ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিয়েছেন?”

    বিস্মিত হলো আকবর হাসান। এ কথা কী করে এরা জানতে পারলো বুঝে উঠতে পারছে না।

    “এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা আবার যাদের সঙ্গে কথা বলেছে, সব আমাদের কাছে রেকর্ড করা আছে,” কৃত্রিম আফসোসের সাথে বলল, “বিরাট কেলেঙ্কারির ব্যাপার হয়ে গেছে।”

    ভুরু কুঁচকে তাকালো মি. হাসান।

    “ভুলে যাবেন না, আপনার ফোনটা এখন আমাদের হাতে,” লোকটার দিকে তাকালো প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়াই পেলো। ঘাবড়ে গেলেও জোর করে অভিব্যক্তি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

    “আপনার কল রেকর্ড অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। আর আপনার হোয়াটসঅ্যাপেও অ্যাকসেস করতে পেরেছে আমাদের টেকনিক্যাল টিম।”

    এবার আর অভিব্যক্তি লুকাতে পারলো না আকবর হাসান। স্পর্শকাতর মেসেজগুলো ডিলিট করেনি বলে ঘাবড়ে গেল পুরোপুরি।

    “আপনাকে কথা বলতে হবে, চুপ করে থাকলে কোনো লাভ হবে না। আমি চাইলে আপনার ফোনালাপ লিক করে দিতে পারি, সেটা আরো খারাপ হবে। তার চেয়ে বরং কথা বলুন। মুখ বন্ধ রেখে তো বকে সেভ করতে পারবেন না।”

    “আমি আমার উকিল ছাড়া একটা কথাও বলবো না।”

    হেসে ফেলল জেফরি বেগ। “উনি মনে হয় বিদেশে ছিলেন?” জামানের দিকে তাকালো ইঙ্গিতপূর্ণভাবে।

    “হলিউডের সিনেমা দেখেও শিখতে পারে, স্যার?” তীর্যকভাবে বলল সহকারি।

    “আমি তো সোনিয়ার কেসের ব্যাপারে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি না, করবোও না। আপনি যে সে ব্যাপারে টু শব্দও করবেন না জানি…খামোখা ঘাবড়ে গিয়ে উকিল ডাকতে চাইছেন কেন?”

    থতমত খেলো আকবর হাসান।

    “আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনার পেশা কি, এরপর জানতে চাইবো কোথায় চাকরি করেন, কতোদিন ধরে করেন…এসব প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য কারোর উকিলের দরকার পড়ে?” আবারো মাথা দোলালো জেফরি। “আপনি দেখি আসলেই অদ্ভুত।”

    মি. হাসান হাঁসফাঁস করতে শুরু করলো। এই ইনভেস্টিগেটর লোকটা দেখতে যতো মার্জিত আর ভদ্র লাগুক না কেন, চরম ধূর্ত আর স্মার্ট। তার সঙ্গে মেন্টাল গেম খেলছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো না করে সামান্য আর সাধারণ তথ্য জানতে চাইছে, তাতেই বিপাকে পড়ে গেছে সে। এই অফিসার যে জাল ফেলেছে সেটা ধীরে ধীরে গোটাবে, এ ব্যাপারে তার মনে কোনো সন্দেহ নেই।

    “রাস্তার একজন টহল পুলিশও আপনাকে থামিয়ে আপনার নাম, কোথায় থাকেন, কী করেন এগুলো জিজ্ঞেস করার অধিকার রাখে। সেই হিসেবে দশ লাখ টাকা ঘুষ দেবার সময় হাতেনাতে ধরা পড়া একজন হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটরকে মামুলি সব প্রশ্নের জবাব দেবে না?”

    আকবর হাসান ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো।

    “আপনি দেখি আমাকে টহল পুলিশও মনে করেন না। দুঃখজনক।”

    “স্যার, আমরা তো জানি উনি কে, কী করেন। আমরা বরং উনাকে দেখাই আমাদের সব তথ্য ঠিক আছে কি না।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি বেগ। মুখে তার হাসি। “সেটাই করো।”

    জামান তার ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিলো সন্দেহভাজনের দিকে। পুরোটা পর্দা জুড়ে একটা ছবি-আকবর হাসান করমর্দন করছে জাহান গ্রুপের আলভীর সঙ্গে। কয়েক দিন আগে জাহান গ্রুপের এক অনুষ্ঠানে তোলা হয়েছিল, নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ফটো অ্যালবামে এখনও আছে ছবিটা।

    মি. হাসানের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়ে গেল।

    “উনি হয়তো বলতে পারেন একটা ছবি দিয়ে কী প্রমাণিত হয়?” যুক্তি দিয়ে বলল জেফরি। “জাহান গ্রুপের সিইওর সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলে, সবাইকে কি তাদের এম্প্লয়ি হতে হবে?”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জামান। “তা ঠিক কিন্তু উনার তিনটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটাতে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে জাহান গ্রুপ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জমা করা হয়।”

    একবার জেফরি আরেক বার জামানের দিকে তাকালো আকবর হাসান।

    “আপনি এটাকে স্যালারি বলবেন না তো কী বলবেন, স্যার?”

    কাঁধ তুলল জেফরি বেগ। “বিজনেস ডিল হতে পারে না?”

    “উনার ব্যবসাটা কী?”

    “আপনি কী বলেন, মি. হাসান?” হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর জানতে চাইলো সন্দেহভাজনের কাছ থেকে।

    কিন্তু আকবর হাসান যেন পণ করেছে সবকিছু খুললেও মুখ খুলবে না! “আপনার উকিল সামনে থাকলে কি এসব প্রশ্নের জবাব দেবেন?” চোখ পিট পিট করে জেফরির দিকে তাকালো জাহান গ্রুপের ট্রাবলশুটার।

    “আমার মনে হয়, স্যার…” প্রস্তাব দেবার ভঙ্গিতে বলল জামান। “উনি ভয়ে মুখ খুলছেন না।”

    “কার ভয়, কীসের ভয়?” তাজ্জব হবার ভাণ করলো জেফরি। “আমরা তো উনাকে টর্চার করিনি, যেসব থেরাপি-টেরাপি দেয়া হয় তার কিছুই ইউজ করিনি, আমাদেরকে কেন ভয় পাবে?”

    “আমাদের কথা বলছি না, উনার চাকরিদাতার কথা বলছি।”

    ভুরু কপালে তুলল জেফরি।

    “জাহান গ্রুপ তো খুবই ত্রুট, স্যার। যখন জানতে পারবে তাদের সিইও আলভী এই ভদ্রলোকের জন্য ফেঁসে যাচ্ছে তখন উনাকে এলিমিনেট করে দিতে পারে।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো জেফরি বেগ। “হুম।”

    আকবর হাসান দাঁতে দাঁত চেপে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। ভয়ে, রাগে নাকি তার সঙ্গে তামাশা করার জন্য, বোঝা গেল না।

    “তাহলে উনাকে নিয়ে কী করবেন, স্যার?”

    আবারো কাঁধ তুলল জেফরি। “কী আর করা, একটা প্রেস কনফারেন্স ডাকি, প্রেসকে বলি এই এই ঘটনা ঘটেছে।”

    মাথা দোলালো জামান। “হাতে গোণা কিছু পত্রপত্রিকা আর টিভি চ্যানেল আসলেও তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিউজটা নিয়ে রিপোর্ট করবে না। জাহান গ্রুপকে চটাতে চাইবে না কেউ।

    সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি। “প্লেইভরা হয়তো করবে না কিন্তু যারা মুক্ত আছে, তারা?”

    “ফ্রিল্যান্সারদের কথা বলছেন, স্যার?”

    “হু…ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল, ওরা করতে পারবে। অলরেডি “ক্র্যাক্ড নিউজ” নামের একটা ইউটিউব চ্যানেল কিন্তু সোনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর খবরটা পাবলিশড করেছে, ওখানে আলভী সাহেবের নামও উল্লেখ করেছে ওরা।”

    আকবর হাসান আতঙ্কভরা দৃষ্টিতে তাকালো, এই খবরটা তার জানা ছিল না।

    “তাহলে তো এতক্ষণে জাহান গ্রুপ জেনে গেছে।”

    “মনে হয়।” একটু থেমে আবার বলল জেফরি বেগ, “আমরা বরং প্রেস কনফারেন্সই ডাকি, যারা আসবে তাদেরকে বলি সোনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে কী কী ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। উনার ঘুষের কথাটা প্রচার হয়ে গেলেই বোঝা যাবে জাহান গ্রুপ পরবর্তিতে কী করবে।”

    “আমার নাম আকবর হাসান,” এই প্রথম মুখ খুলল ট্রাবলশুটার।

    মুচকি হাসলো জেফরি। “আশ্চর্য, আপনি কী করেন, কোথায় কাজ করেন এই সিম্পল প্রশ্নগুলোও করেছিলাম, ভুলে গেছেন?”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো লোকটা। “আপনারা যা করার করেন, আমি আর কিছুই বলবো না!”

    মাথা দোলালো হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটর জেফরি বেগ। “মনে হচ্ছে আপনি সহমরণে যেতে চাইছেন। ভাবছেন, এটা করলে মৃত মানুষটি বেঁচে যাবে, আপনিও বেঁচে যাবেন!”

    স্থিরচোখে তাকিয়ে রইলো আকবর হাসান।

    “সহমরণে গেলে কেউই বাঁচে না. মি. হাসান। ডাক্তার সব স্বীকার করেছে, আমাদের হাতে অনেক শক্ত প্রমাণ আছে…আপনার ফোন থেকে আমরা আরো অনেককে ধরতে পারবো। আর এখন ঠিকঠাকভাবে পোস্ট মর্টেম হয়ে গেলে বেরিয়ে আসবে সোনিয়ার গর্ভে কার সন্তান!”

    মি. হাসান জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। এত কাঁচা কাজ কিভাবে করলো আলভী বুঝতে পারছে না। একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে, তার পেটে বাচ্চা পয়দা করলো কোন আক্কেলে? আরে, এটা কি তোর ঘরের বউ? কিছুদিন ব্যবহার করার পর ওই মেয়েটার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলেই হতো। হাতে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেতো, ঘটনা আজ এতদূর গড়াতো না।

    “সেইভ ইওর ঔন সোল!”

    জেফরির দিকে তাকিয়ে বাঁকাহাসি দিলো আকবর হাসান। টিভি- সিনেমায় যেরকম সৎ পুলিশ দেখায়, এই লোক নিজেকে সেরকম কিছুই ভাবছে। তুই নিজের কথা ভাব, মাদারচোদ! তাকে বাগে পেয়ে ভাবছে দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলেছে। এই অবস্থা খুব দ্রুতই কেটে যাবে। জাহান গ্রুপের শক্তি সম্পর্কে এই লোকের কোনো ধারণাই নেই।

    অধ্যায় ১৯

    হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জেফরি বেগ। দুজনকে ইন্টেরোগেট করা, সোনিয়ার ডেডবডির পোস্ট মর্টেমের দায়িত্ব নতুন আরেকজনকে দেয়া এবং তার সঙ্গে রমিজকে জুড়ে দেয়া, এসবই করতে হয়েছে খুব দ্রুত আর তাৎক্ষণিকভাবে। এদিকে আকবর হাসানের ফোন থেকে অনেক কিছুই পাওয়া গেছে।

    কিন্তু সে ভালো করেই জানে খুব জলদি ঝড়টা আসবে। আর প্রথম আঘাতটা হানবে মহাপরিচালকের উপরে। সেজন্যে আগেভাগেই তার সঙ্গে দেখা করে সবটা জানানোর সিদ্ধান্ত নিলো।

    ফারুক আহমেদ একটু দেরি করে আসে হোমিসাইডে, তাকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়, মিটিং করতে হয় অনেকের সঙ্গে; এসব কাজ সেরে অফিসে আসতে আসতে অনেক সময় দুপুরও গড়িয়ে যায়। আজকেও তাই হয়েছে।

    “স্যার, আসতে পারি?” দরজাটা খুলে বলল জেফরি।

    “আসো আসো,” নিজের ডেস্কে এখনও বসেনি ফারুক আহমেদ, বাঁ-দিকের ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ারগুলো খুলে ফাইল ঘাটছে। “বসো।”

    ডেস্কের সামনে বসে পড়লো জেফরি। “স্যার, জরুরি একটা কথা ছিল?”

    রিডিং গ্লাসের উপর দিয়ে তাকালো তার দিকে। “এক মিনিট,” বলেই একটা ফাইল হাতে নিয়ে ডেস্কে বসে পড়লো। সেই ফাইলটাতে চোখ বুলিয়ে বন্ধ করে রাখলো আবার। “হ্যাঁ, বলো?”

    “একটা ব্যাপারে আপনাকে ব্রিফ করা দরকার।”

    “ওকে,” রিডিংগ্লাসটা খুলে বুকের উপর দু হাত ভাঁজ করে মনোযোগ দিলো হোমিসাইডের মহাপরিচালক।

    জেফরি বেগ তাকে সংক্ষেপে সোনিয়ার কেসটা সম্পর্কে জানালো। জাহান গ্রুপের সিইও প্রাইম সাসপেক্ট জানার পর ভুরু কপালে উঠে গেল ডিজি”র। তারপর যখন জানতে পারলো ওদের ক্লোজ অ্যাসোসিয়েট এবং পোস্ট মর্টেমের দায়িত্বে থাকা দুজনকে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার করে ইন্টেরোগেট করেছে তখন থম মেরে বসে রইলো কয়েক মুহূর্ত।

    “এই হলো এখন পর্যন্ত আপডেট, স্যার।”

    গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে সায় দিলো ফারুক আহমেদ, তাকে খুবই চিন্তাগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে।

    “কী ভাবছেন, স্যার?”

    “ভাবছি জালের চেয়ে বড় মাছ ধরা পড়লে কী হয়!”

    “স্যার, জালের চেয়ে বড় মাছ কখনও ধরা পড়ে না,” দ্বিমত পোষণ করে বলল জেফরি। “জালের চেয়ে শক্তিশালী মাছ ধরা পড়তে পারে।”

    “হুম,” গম্ভীর এবং চিন্তিতমুখে বলল হোমিসাইডের মহাপরিচালক।

    “সেটাই হয়েছে তাহলে।”

    “এখনও নড়াচড়া শুরু হয়নি অবশ্য।”

    একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারুক আহমেদ। “হবে, খুব জলদিই হবে।”

    “আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, স্যার।”

    “হুম। কিন্তু এবার অগ্নি পরীক্ষায় পড়বে গভমেন্ট,” একটু থেমে আবার বলল, “আমি ভাবছি, এই অগ্নি পরীক্ষাটা গভমেন্ট কীভাবে দেবে!”

    “স্যার, আমি ভালো করেই জানি জাহান গ্রুপের অনেক ক্ষমতা কিন্তু তারা তো এই রাষ্ট্রের চেয়ে বড় হতে পারে না।”

    “রাষ্ট্র যারা চালায় তারা যদি ছোটো হয়ে থাকে ওদের কাছে তাহলে কীভাবে কী হবে!”

    “আমি জানি আপনার উপরে অনেক চাপ আসবে তাই আগেভাগে আমাদেরকে ঠিক করে নিতে হবে আমরা কোন চাপকে কিভাবে মোকাবেলা করবো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো হোমিসাইডের ডিরেক্টর জেনারেল। “আমার উপরে আর কী চাপ দেবে? আমি বলবো একটা সাসপেক্টেড হোমিসাইডের ঘটনা তদন্ত করছে আমার ডিপার্টমেন্টের চিফ ইনভেস্টিগেটর, এখানে আমার কিছু করার নেই।”

    জেফরি বুঝতে পারলো। তারা যেকোনো কেসই তদন্ত করতে পারে সম্ভাব্য হোমিসাইডাল কেস হিসেবে। থানার পুলিশ কিংবা ডিবি-সিআইডির মতো হোমিসাইডে বদলি নেই, তাদের থেকে কোনো কেসের দায়িত্ব সরিয়ে অন্য কাউকে দেয়াও সম্ভব নয়। সরকারের উচ্চমহল থেকে চাইলেও এখন হোমিসাইডকে দিয়ে কিছু করাতে পারবে না। চাপ দিতে পারে কিন্তু সেটা করলে নগ্ন হস্তক্ষেপ হবে।

    “আমি আসলে আমাকে নিয়ে ভাবছি না,” গভীর করে শ্বাস নিয়ে বলল মহাপরিচালক। “তোমাকে নিয়ে ভাবছি।”

    “আপনি আমাকে নিয়ে ভাববেন না, স্যার,” আশ্বস্ত করলো ডিজিকে। “আমার মনে হয় না সরকারের কেউ আমাকে সরাসরি চাপ দেবে এই কেসের ব্যাপারে।”

    “হুম,” ফারুক আহমেদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। “আমার ভয়টা সেখানেই।”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো জেফরি বেগ।

    “জাহান গ্রুপ যখন দেখবে গভমেন্ট কোনো কিছু করবে না তখন তারা মরিয়া হয়ে উঠবে। মরিয়া হয়ে কী করে কে জানে!” একটু থেমে আবার বলল, “এরা তো ভাবে টাকা দিয়ে সব করা যায়, আর সেই টাকাও আছে অঢেল, ভয়টা আমার সেখানেই।”

    জেফরি কিছু বলল না কিন্তু জাহান গ্রুপ কতো দূর যেতে পারে সেটাও সে দেখবে এবার। এরইমধ্যে খেলাটা শুরু হয়ে গেছে, নিউজ চাউর হয়ে গেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়ায়। দিলান মামুদের ক্র্যাক্ড নিউজের রিপোর্টটা ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল লুফে নিয়েছে, ফেসবুকেও ভাইরাল হয়ে গেছে সেটা। জাহান গ্রুপ কেসটার মোড় ঘুরিয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছে।

    “তারা কী করতে পারে কোনো আইডিয়া আছে, স্যার?”

    জেফরির দিকে স্থিরচোখে চেয়ে রইলো হোমিসাইডের মহাপরিচালক। “টাকাওয়ালারা কিন্তু প্রেডিক্টেবল হয়। তারা টাকা দিয়েই সবকিছু করতে চাইবে। তুমি যেমনটা আন্দাজ করেছিলে, ঘুষ দিয়ে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা বদলে দেবার চেষ্টা করবে… আমার ধারণা ওরা হয়তো হোমমিনিস্টারের দ্বারস্থ হবে, তাকে দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবে।”

    “কিন্তু তিনি কী করবেন? আপনাকে বলবেন কেসটা নিয়ে কাজ করা বন্ধ করে দিতে?”

    “সেটা তিনি করতেই পারেন না,” জোর দিয়ে বলল ডিজি। “আমার মনে হয় সরকারের কেউ এটা নিয়ে খুব বেশি কিছু করতে চাইবে না।”

    “হাত নোংরা হবার ভয়ে?”

    পরিহাসের হাসি দিলো মহাপরিচালক। “ন্যাংটার আবার লজ্জার ভয়!” মাথা দোলালো সে। “আসলে এই কেসে ওরা বেকায়দায় পড়ে যাবে। কিভাবে হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেশনকে ইনফ্লুয়েন্স করবে সেটা সম্ভবত ওদের জানা নেই। ওরা তোমার ব্যাপারেও ভালো করেই জানে, সমস্যাটা সেখানেই।” আবারো গভীর করে শ্বাস নিলো ফারুক আহমেদ। “জেফ, একটা কথা মনে রাখবে, আমাদের দেশের সমস্যা কিন্তু সিস্টেমের না, ব্যক্তির। সিস্টেম যা আছে ভালোই আছে কিন্তু এগুলো চালানোর জন্য যেরকম মানুষজনের দরকার, সেরকম কাউকে ইচ্ছে করেই জায়গামতো বসানো হয় না।”

    কথাটার সাথে সায় না দিয়ে পারলো না জেফরি বেগ।

    “তুমি যাকে পুরস্কার হিসেবে কোথাও বসাবে সে কি তোমার কথার অবাধ্য হবে?…হবে না। সেই সাহসই তার থাকবে না।” চেয়ারে হেলান দিলো ফারুক আহমেদ। “এখানে সিস্টেমের বারোটা বাজানো হয় টপে যে বসে আছে তাকে দিয়ে। ওরকম পদে থেকে কেউ যদি সাহস করে তাহলে বিপাকে পড়ে যায় ক্ষমতাসীনরা।”

    মহাপরিচালক কী বলতে চাচ্ছে জেফরি বেগ সেটা বুঝতে পারলো।

    “আমি কখনও তোমাকে বাধা দেইনি, দেবোও না। কিন্তু পার্টিকুলার এই কেসে একটা কথাই বলার আছে আমার, ইউ আর ডিলিং উইথ দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস পিপল ইন দিস কান্ট্রি!”

    উঠে দাঁড়ালো হোমিসাইডের চিফ ইনভেস্টিগেটর। “আমি আপনাকে আপডেট জানাবো, স্যার,” নিরবে সালাম ঠুকে বের হয়ে এলো মহাপরিচালকের রুম থেকে। করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে যাবার সময় তার ফোনটা বেজে উঠল, পকেট থেকে বের করে দেখলো রেবা কল দিয়েছে।

    “হ্যালো, কী অবস্থা?”

    “ভালো,” ওপাশ থেকে বলল। “অফিসে?”

    “হ্যাঁ, তুমি কোথায়?”

    “বাসায়। আজকে আব্বুর হাউজনার্স আসেনি, মহিলার ছেলের বউয়ের ডেলিভারি হবে আজ।”

    রেবার বাবার অবস্থা এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। থাইল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছে আশাহত হয়ে, এখন দিন গুণছে তারা। শেষ সময়টুকু যাতে কম ভোগে সেজন্যে মেডিকেশন দেয়া হচ্ছে, সব সময় দেখাশোনা করার জন্য হাউজনার্সও রাখা হয়েছে।

    “কেমন আছেন উনি?”

    একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল ফোনের ওপাশ থেকে। “…তাকানো যায় না তার দিকে…” একটু থেমে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “লাঞ্চ করেছো?”

    “না, আরেকটু পর করবো…খিদে নেই।”

    “অবেলায় এত কফি খেলে খিদে থাকবে কিভাবে!”

    কথাটা শুনে ভুরু কুঁচকে গেল জেফরির। রেবা নিশ্চয় তার অফিসের কফির কথা বলেনি, স্পষ্টতই বুঝতে পারছে অন্য রকম ইঙ্গিত আছে কথাটায়। সম্ভবত তার পরিচিত কেউ দেখেছে গতকালকে বনানীর ঐ ক্যাফেতে, সঙ্গে সুশ্রী আর স্মার্ট এক মেয়ে। আর কী লাগে! “কালকের কথা বলছো? কেউ আমাকে বনানীর এক ক্যাফেতে দেখে তোমাকে বলেছে, তাই না?”

    “নাহ,” অস্বীকার করলো রেবা। “আমাকে আবার কে বলবে, আজব! আমি তো এমনিই বললাম।”

    “ওহ,” রাগ দমন করলো জেফরি। “আমি ভাবলাম গতকাল যে আমি এক ফিমেল উইটনেসের সঙ্গে ক্যাফেতে বসে কফি খেয়েছিলাম সেটা তোমার পরিচিত কেউ দেখে তোমাকে বলেছে আর তুমিও সেটা শোনার পর থেকে ঈর্ষায় পুড়ে যাচ্ছো!”

    “কী বলো না বলো!” রেবার কণ্ঠে আবারো অস্বীকৃতি। “আমাকে আবার কে বলবে? আর আমি এসব শুনে ঈর্ষায় জ্বলবো কেন?”

    চুপ মেরে রইলো জেফরি। নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করলো।

    “রাগ করলে?” একটু কাচুমাচু খেয়ে বলল রেবা।

    “না। কাজ আছে আসলে…এখন রাখি, পরে কথা হবে।”

    “আমার কাছে মনে হচ্ছে রাগ করেছো।”

    “রাগিনি, বিরক্ত হয়েছি।”

    “সরি।”

    গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো হোমিসাইডের ইনভেস্টিগেটর। “ইটস ওকে…এখন রাখি, রাতে কথা হবে।”

    ফোনটা রেখে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো সে। এই যে কিছু মানুষ আছে কাউকে কোনো মেয়ে কিংবা ছেলের সঙ্গে কোথাও দেখলেই নিজ দায়িত্বে “খবরটা জায়গামতোন পৌঁছে দেয়, তাদেরকে আমরা “আপনজন” ভেবে ভুল করি আসলে। এরা একেকটা প্রতিশ্রুতিশীল সাইকোপ্যাথ, নয়তো স্যাডিস্ট।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবর্ন আইডেন্টিটি – রবার্ট লুডলাম
    Next Article অগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }