Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প36 Mins Read0

    ০৩. ঘরের মধ্যে বুড়ো কর্তা

    ঘরের মধ্যে বুড়ো কর্তা আহমদ আলী শেখ তাঁর বিছানায় ঘুমোচ্ছন। মাঝে মাঝে মৃদু নাক ডাকছে তার।

    বাচ্চা ছেলেটার চোখেও ঘুম। তবু বসে সে তার পরীক্ষার পড়া মুখস্ত করছে তখননা।

    আল্লাহতায়ালা বলিলেন, ইহাদের সেজদা করো। ইবলিশ বলিলো, হে সর্বশক্তিমান, আপনি যে মানুষ পয়দা করিয়াছেন ইহারা সমস্ত দুনিয়াকে জাহান্নামে পরিণত করিবে। ইহারা পরস্পরের সহিত ঝগড়া করিবে। কলহ করিবে। মারামারি করিবে।

    বুড়ো কর্তা তখুনো নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছেন।

    সহসা একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন তিনি।

    দেখলেন সর্বাঙ্গ সাদা ধবধবে কাপড়ে ঢাকা চারটে মূর্তি তার ঘরের চারপাশে এসে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে মূর্তিগুলি সামনে এগিয়ে এলো।

    মনে হলো কারো উদ্দেশ্যে যেন সেজদা করলো ওরা। তারপর একসঙ্গে অনেকটা একতালে বুড়ো কর্তার বিছানার চারপাশ ঘিরে দাঁড়ালো ওরা। আহমদ আলী শেখ অবাক হয়ে দেখলেন ওদের। হঠাৎ একটা অদ্ভুত শিহরণ অনুভব করলেন বুড়ো কর্তা। বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। হাত পাগুলো শির শির করছে।

    চারটে মূর্তি মুহূর্তে অসংখ্য মূর্তির রূপ নিলো।

    বুড়ো কর্তা দেখলেন তার মৃত বাবাকে।

    মৃত চাচাকে।

    মৃত ভাইকে।

    আরো অসংখ্য মৃত আত্মীয় স্বজনকে।

    দেখলেন, সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

    ওরা বলছে।

    আহা আমাদের ছেলে এবার আমাদের কাছে ফিরে আসবে।

    আমাদের কোলের মানিককে এবার আমরা আমাদের কাছে নিয়ে যাবো। যাদু আমার জলদি করে চলে এসো।

    থোকন আমার। মানিক আমার জলদি করে চলে এসো। বুড়ো কর্তা শিশু আহমদ আলীকে তার দাদুর কোলে প্রত্যক্ষ করলেন।

    বুড়ো তাকে আদর করছে আর বলছে, মানিক আমার। মানিক আমার। যুবক আহমদ আলী শেখকে দেখে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন বুড়ো কর্তা। দেখলেন, সেই মেয়েটিকে, যার সঙ্গে একবার বিয়ের কথা হয়েছিলো ওঁর। পরে দেনা পাওনা নিয়ে দাদুর সঙ্গে গোলমাল লেগে যাওয়ায় বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।

    মেয়েটি হাসলো। আমরা তোমাকে নিতে এসেছি, চলে এসো।

    চলে এসো। চলে এসো। অসংখ্য মূর্তি হাতছানি দিয়ে ডাকলো তাঁকে। বুড়ো কর্তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

    চোখ বড় বড় করে চারপাশে তাকলেন আহমদ আলী শেখ। ধড়ফড় করে উঠে বসে দেখলেন ঘরে কেউ নেই। শুধু সেই বাচ্চা ছেলেটা পড়ার টেবিলে বসে ঘুমে ঢুলছে।

    সারা শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে বুড়ো কর্তার। সহসা প্রচণ্ড আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি। হায় হায় একি দেখলাম। একি স্বপ্ন দেখলাম আমি। আল্লারে একি স্বপ্ন দেখলাম। ইয়া খোদা একি স্বপ্ন তুমি দেখালে আমাকে। ও মনসুর। মকবুল। আহসান। হায় হায় একি স্বপ্ন দেখলাম। বুড়ো কর্তার চিৎকারে বাচ্চা ছেলেটা ফিরে তাকালো ওর দিকে। বাড়ির অন্য সবাই আলুথালু বেশে ছুটে এলো সেখানে।

    কি হয়েছে।

    কি হয়েছে।

    আঁ কি হলো? চিৎকার করছে কেন? কি হয়েছে?

    ওদের সকলকে কাছে পেয়ে কিছুটা আস্বস্ত বোধ করলেন আহমদ আলী শেখ। কিন্তু তাঁর সমস্ত শরীর তখনো থরথর করে কাঁপছে।

    কাঁপা গলায় বিড়বিড় করে বললেন, হায় হায় একি স্বপ্ন দেখলাম। আল্লায় কি দেখালো আমাকে।

    বড় ছেলে বললো, কি হয়েছে আব্বা। কি স্বপ্ন দেখেছেন।

    খুব খারাপ স্বপ্ন।

    মেঝ ছেলে ইষৎ বিরক্তি প্রকাশ করলো, স্বপ্ন দেখে অত চিল্কারের কি হয়েছে। সেজ ছেলে বললো, স্বপ্ন তো সবাই দেখে।

    ছোট ছেলে বললো, আমি অসুস্থ মানুষ। চিৎকার শুনে বুকটা ধড়ফড় করে উঠছে। ভাবলাম কেউ বুঝি মারাই গেলো। উহ্।

    মরেনি, মরেনি। মরবে। বুড়ো কর্তা তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মনসুরের মা তোমার মনে আছে আমার আব্বা একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই যে চারটে সাদা কাপড়ে ঢাকা মূর্তি এসে খাটের চারপাশে দাঁড়ালো। মনে নইে। সেই স্বপ্ন দেখার পরদিন তো আব্বা আর মেজ ভাই হঠাৎ কলেরায় মারা গেলেন। মনে নেই।

    হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে। জোহরা খাতুন শিউরে উঠলেন। ইয়া আল্লাহ, এ স্বপ্ন আপনি কেন দেখালেন।

    বুড়ো কর্তা বললেন, বাইশ বছর আগের কথা। মনে হচ্ছে যেন এই সেদিন। আব্বা স্বপ্ন দেখে বললেন খুব খারাপ স্বপ্ন নিশ্চয়ই কোন অঘটন ঘটবে। দেখো, তারপর বাইশ বছর কেটে গেছে। আল্লার কি মেহেরবানি। কিন্তু আজ হঠাৎ আমি সেই স্বপ্ন আবার দেখলাম কেন? বড় ছেলে সান্ত্বনা দিলো, ও কিছু না আব্বা। আপনি শুয়ে পড়ুন।

    না না, তোমরা বুঝতে পারছে না। বুড়ো বললেন, নিশ্চয়ই কোন একটা অঘটন ঘটবে। নইলে এতদিন পরে সে স্বপ্ন আবার দেখলাম কেন আমি। নিশ্চয়ই কেউ মারা যাবে।

    খালি মরার কথা আর মরার কথা। ছোট ছেলে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, আমি অসুস্থ মানুষ। আমার সামনে খালি মরার কথা।

    সেজ ছেলে বললো, তুই এখানে এসেছিস কেন। গিয়ে ঘুমাগে।

    ঘুম আর হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় এত মরার কথা শুনলে কারো ঘুম হয়!

    হাতের কাছে রাখা গামছাটা তুলে নিয়ে গায়ের ঘাম মুছলেন আহমদ আলী শেখ।

    ঘরের কোণে রাখা পাখাটা এনে শ্বশুরকে বাতাস করতে লাগলো মেজ বউ।

    বুড়ো কর্তা সবার মুখের দিকে একবার করে তাকালেন।

    ছেলেদের দেখলেন।

    বউদের দেখলেন।

    আমেনাকে দেখলেন।

    রসুল আর পেঁচিকে দেখলেন।

    নিজের গিন্নীর দিকে তাকালেন।

    ভরা ফসলের ক্ষেতে পোকা পড়ার পর অসহায় আতঙ্ক নিয়ে একজন চাষী যেমন করে তাকিয়ে থাকে ঠিক তেমন করে।

    আশ্চর্য। মানুষ যে চিরকাল বেঁচে থাকে না। একদিন তাকে এ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হয় এতবড় সত্যটাকে আমি কেমন করে ভুলে গিয়েছিলাম।

    নিজের বিছানার এককোণে চুপচাপ বসে তাই ভাবছিলেন মনসুর আলী শেখ।

    দিনরাত আমি শুধু ওকালতির দলিল দস্তাবেজ আর বইপত্র নিয়ে মশগুল ছিলাম।

    কোর্টে গেছি।

    কোর্ট থেকে ফিরে এসেছি।

    মক্কেলদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মামলার নথিপত্র ঠিক করেছি।

    হাকিমের সামনে দাঁড়িয়ে যুক্তিতর্কের মায়াজাল রচনা করে অপরাধীকে বেকসুর খালাস করে নিয়ে এসেছি। হ্যাঁ। সেজন্যে টাকা পয়সা ওরা দিয়েছে আমায়। রোজগার আমি প্রচুর করেছি। কিন্তু সব কিছুই তো ইহকালের জন্যে। পরকালের জন্যে কি করেছি আমি? আজ যদি আমি মারা যাই, হ্যাঁ, আমি জানি সবাই আমার জন্যে কাঁদবে।

    তারপর।

    তারপর আমাকে কব দিয়ে আসবে ওরা।

    একা।

    আমি তখন একা।

    সেই অন্ধকার কবরে তখন সনকির নকির দুই ফেরেস্তা আসবে। ওরা আমাকে জাগাবে।

    প্রশ্ন করবে।

    আমি কে।

    আমার পিতার নাম কি।

    পরকালের জন্যে কি কি করেছি আমি?

    তখন।

    তখন কি জবাব দেবো আমি।

    আমার চোখের সামনে যখন ওরা আমার জীবনের নেকি বদির খাতাটা খুলে ধরবে আর বলবে, জীবনভর তুমি শুধু মানুষকে ধোকা দিয়েছে।

    নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্যে অহরহ মিথ্যে কথা বলেছে। মিথ্যে কথা বলতে শিখিয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে।

    তখন।

    তখন কি কৈফিয়ত দেবো আমি ওদের কাছে?

    ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠলেন মনসুর আলী শেখ।

    বড় বউ পানের বাটা সামনে নিয়ে সুপারি কাটছিলো। সহসা প্রশ্ন করলো, আববা যে বললেন ঐটা কি সত্যি?

    কি? অন্যমনস্কভাবে স্ত্রীর দিকে তাকালো মনসুর আলী।

    এই স্বপ্নের কথা। বড় বউ বললো, মানে ওই স্বপ্ন দেখার পর কি সত্যি সত্যি তোমার দাদা আর চাচা মারা গিয়েছিলো।

    হ্যাঁ! নীরবে স্ত্রীর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মনসুর আলী।

    সহসা ডাকলো। এই শোন।

    কি?

    আব্বার জায়নামাজটা কোথায়? নিয়ে এসো তো।

    জায়নামাজ দিয়ে কি করবে? বিস্ময়জ্ঞরা দৃষ্টিতে স্বামীর মুখের দিকে তাকালো বড় বউ।

    মনসুর আলী সংক্ষেপে জবাব দিলো, নামাজ পড়বে।

    সেকি, আজ হঠাৎ নামাঞ্জ পড়ঙে চাইছো?

    না, মানে, কিছুক্ষণ ইতস্তত করলো মনুসর আলী। তারপর স্ত্রীর উপর রেগে চিৎকার করে উঠলো সে। তোমার ওই মুখে মুখে তর্ক করার অভ্যেসটা এখনো গেলো না। যা বলছি তাই করো। জায়নামাজটা কোথায় আছে খুঁজে নিয়ে এলো।

    স্বামীর কাছ থেকে হঠাৎ এ ধরনের ব্যবহার আশা করেনি বড় বউ। সেই দুঃখেই হয়তো মুখ দিয়ে একটা কটু কথা বেরিয়ে গেলো ওর।

    হুঁ, একরাত নামাজ পড়লেই কি আর সারা বছরের পাপ ধুয়ে যাবে?

    কি? চমকে ফিরে তাকালো মনসুর আলী।

    চোখ দুটো বাঘের চোখের মতো জ্বলছে।

    হ্যাঁ। পাপ আমি করেছি বইকি। কিন্তু কাদের জন্য করেছি। তোমার জন্যে।

    তোমার ছেলেমেয়েদের জন্যে।

    তাদের ভবিষ্যতের জন্যে।

    যে গয়নাগুলো পরে সবার সামনে সগর্বে ঘুরে বেড়াও সেগুলোর কোত্থেকে এসেছে।

    যে ভাত আর মুরগির ঠ্যাং চিবিয়ে খাও সেগুলো কোথেকে এসেছে। স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে আর একটি কথাও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে সাহস পেলো না বড় বউ। নীরবে জায়নামাজের খোঁজে বেরিয়ে গেলো।

    অনেকক্ষণ ধরে একটা বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে মেজ ছেলে আহসান। কিন্তু কিছুতেই বইয়ে মন বসছে না তার। অথচ ঘুমও আসছে না। মেজ বউ কিছুক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে উসখুস করে বললো। হ্যাঁ, তুমি একটা ইন্সিওরেন্স করেছিলে না?

    হ্যাঁ, করেছিলাম তো। কিন্তু কেন বল তো?

    এমনি। হঠাৎ মনে পড়লো তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।

    বইটা বন্ধ করে স্ত্রীর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো আহসান। ধীরে ধীরে একটা মৃদু হাসি জেগে উঠলো তার ঠোঁটের কোণে।

    মেজ বউ অপ্রস্তুত হয়ে বললো, কি ব্যাপার, অমন করে মুখের দিকে চেয়ে আছো কেন?

    তোমাকে দেখছি আর ভাবছি।

    কি ভাবছো।

    ভাবছি, আমি মরে গেলে তুমি অনেকগুলো টাকা পাবে। ইন্সিওরেন্সের টাকা।

    অকস্মাৎ সারা মুখে যেন কেউ কালি লেপে দিলো তার। বিমর্ষ গলায় মেজ বউ বললো, ছি, আমাকে এত ছোট ভাবলে তুমি চাই না তোমার টাকা, আমি চাই না। বলতে গিয়ে গলাটা ধরে এলো দুচোখে অশু রলো ভার।

    মৃদু শব্দে হাসলো আহসান। তোমরা মেয়ে জাতটা বড় অদ্ভুত। মুহর্তে হাসতে পারো, মুহর্তে কাঁদতে পারে। কি যে পার আর কি কি যে পারো না ভেবে পাই না।

    হয়তো কান্নাটাকে রোধ করার জন্যে কি স্বামীর প্রতি প্রচণ্ড অভিমানে ছুটে পাশের বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো মেজ বউ।

    শব্দ করে দরজাটাকে মুগ্ধ করে দিলো।

    বাড়ির সেজ ছেলে মকবুল একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন টানছে আর হিসেবের খাতা দেখছে। ছোট বউ তার পিঠের কাছে এসে দাঁড়ালে মাথার মধ্যে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো। কই উত্তর দিলে না?

    কিসের উত্তর।

    আমি মারা গেলে তুমি আরেকটা বিয়ে করবে, তাই না?

    কি সব বাঙ্গে কথা বলছো। মকবুলের কণ্ঠে বিরক্তি।

    ছোট বউ-এর গলায় অভিমান আহা বলো না। বলো না, আমি মরে গেলে আরেকটা বিয়ে করবে কি না?

    না, করবো না, সংক্ষিপ্ত উত্তর।

    ইস করবো না বললেই হলো। স্বামীর পাশ থেকে বিছানার কাছে সরে গেলো ছোট বউ নিশ্চয়ই করবে। তোমাকে আমি চিনি না ভেবেছে। আজ আমি মরে যাই, কালকেই আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে এনে তুলবে তুমি।

    দেখো। এত ভালো করেই যখন আমাকে চেনো তুমি তখন মিছেমিছি কেন কথা বাড়িয়ে, বারবার আমার হিসেবটা গুলিয়ে দিচ্ছো? রেগে গেলো মকবুল।

    ভ্রূজোড়া বাঁকিয়ে ছোট বউ উত্তর দিলো, খাঁটি কথা বললেই পুরুষ মানুষগুলো অমন ক্ষেপে যায়। সহসা একটা বিশ্রী কান্ড ঘটিয়ে বসলো সে। বিছানার চাদরটাকে একটানে গুটিয়ে নিয়ে একপাশে ছুঁড়ে দিলো। বালিশটাকে ফেলে দিলো মেঝের ওপর। দূর। কার জন্যে গোছাবো এসব। আজ চোখ বুজলেই কাল আরেকটাকে এনে এ বিছানায় শোয়ারে। দূর। দূর।

    হিসেবের খাতা ছেড়ে উঠে এলো মকবুল বাহুতে হাত রেখে কাছে টেনে আনলো তাকে! কি করছো। শোনো, এদিকে এসো। তোমার বয়স কত বলোতো?

    কেন, বয়স জানাতে চাইছো কেন?

    প্রয়োজন আছে। বলো।

    বারে, তুমি জানো না বুঝি।

    তবু বলো না। স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো মকবুল।

    মুখখানা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ছোট বউ আস্তে করে উত্তর দিলো, পঁচিশ বছর।

    শোনো, পঁচিশ বছরের মেয়েটি শোনো, অদ্ভুত গলায় কাটা কাটা স্বরে বললো মকবুল। আজ আমি যদি মারা যাই তুমি তোমার বাকি বছরগুলো কি বিয়েসাদি না করে, বিধবার মতো কাটিয়ে দেবে?

    দেবো। নিশ্চয়ই দেবো। গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে জবাব দিলো ছোট বউ। আমাকে কি তোমার মতো হ্যাংলা পেয়েছে যে আরেকটা বিয়ে করবো? তোমার কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগছে আমার, মকবুল ধীরে ধীরে বললো। কিন্তু বউ শোনো, তুমি পারবে না। এক বছর। দুবছর, দশ বছর পরে হলেও তুমি আরেকটা বিয়ে করবে। ছোট বউ প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলো। মকবুল বাধা দিয়ে বললো, শোনো, এতে অন্যায়ের কিছু নেই। এটাই স্বাভাবিক। আর আমার কথা জানতে চাও? আমি একটু আগে তোমার প্রশ্নের যে উত্তর দিয়েছি সেটা সম্পূর্ণ বানানো। মিথ্যা। তোমাকে সন্তুষ্ট করবার জন্যেই বলেছি। বলেছি, কারণ সংসারে বেঁচে থাকতে হলে এই ছোটখাট মিথ্যে কথাগুলো বলতে হয়। যাকে বলি সেও জানে ওটা মিথ্যে। তবু মিথ্যে সান্ত্বনা পায়। বুঝলে? স্ত্রীর কাছ থেকে সরে গিয়ে আবার হিসেবের খাতা নিয়ে বসলো মকবুল।

    অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো ছোট বউ। এমন নিষ্ঠুর স্বামী কেউ কোনদিন দেখেছে পৃথিবীতে। সে ভাবলো মনে মনে, আর ভাবতে গিয়ে অকারণে ঠোঁটজোড়া বার কয়েক কেঁপে উঠলো তার।

    মনসুরের বড় ছেলে রসুল আর মেজোর বড় মেয়ে পেঁচি। খোলা ছাদের এককোণে দুজনে চুপচাপ বসে। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন লুকিয়ে ছাদে চলে আসে ওরা। বসে বসে গল্প করে।

    আজ পেঁচি বললো, আমার ভীষণ ভয় করছে রে।

    কেন?

    যদি তুই মারা যাস তাহলে?

    রসুল শব্দ করে হেসে উঠলো, বললো, দূর। দূর। ওসব স্বপ্নের কোন মানে আছে নাকি? বুড়ো কি দেখতে কি দেখেছে। ওসব স্বপ্নে টপ্নে বিশ্বাস করিসনে রে পেঁচি।

    পেঁচি ওর গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো, কিরে, খুব যে গলা ছেড়ে হাসছিস।

    কেন, কি হয়েছে?

    কেউ টের পেলে তখন বুঝবি মজা। আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলো পেঁচি। হঠাৎ কি মনে হতে থেমে গেলো। তারপর মৃদু হেসে বললো, এই, তোর জন্যে আজ একটা জিনিস এনেছি রে।

    কি?

    বুকের ভেতর থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে পেঁচি জবাব দিলো, সিগারেট।

    দেখি, দেখিতো। ওর হাত থেকে প্যাকেটটা লুফে নিলো রসুল। কোথায় পেয়েছিস

    চারপাশে এক নজর তাকিয়ে নিয়ে পেঁচি আস্তে করে জবাব দিলো, বাবার পকেট মেরেছি।

    বাহ। তুই আজকাল ভীষণ কাজের মেয়ে হয়ে গেছিসরে পেঁচি। দাঁড়া, একটা এক্ষুণি ধরিয়ে খাই। মরার আগে অন্তত একটা দামী সিগারেট খেয়ে মরি।

    সহসা পেঁচি বাচ্চা মেয়ের মতো হাত পা ছুড়তে শুরু করলো। এই ভলো হবে না বলছি।

    কেন? কি হয়েছে?

    তুই আবার মরার কথা বলছিস কেন আমার ভয় লাগে না বুঝি?

    আরে দূর। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে নাকে মুখে ধোয়া ছাড়লো রসুল। মরার কথা বললেই কি মানুষ মরে না কিরে তোকে বললাম না ওসব স্বপ্ন টপ্ন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাসনে পেঁচি। সব বাজে, একেবারে ভুয়ো।

    ওর কথা শুনে কিছুটা আস্বস্ত বোধ করলো পেঁচি। পরক্ষণে আবার প্রশ্ন করলো, আচ্ছা, মানুষ মরে গেলে কোথায় যায় রে?

    যাবে আবার কোথায়। মাটির সঙ্গে মিশে যায়। পা জোড়া দোলাতে দোলাতে জবাব দিলো রসুল। পেঁচি ওর গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো, দূর তুই কিছু জানিস না। মানুষ মরে গেলে হয় বেহেস্তে যায়, নইলে দোজখে যায়।

    সিগারেট খেতে খেতে একবার ওর দিকে তাকালো রসুল। কিছু বললো না।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleতৃষ্ণা – জহির রায়হান
    Next Article একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.