Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    করাচি (বেগ-বাস্টার্ড ৫) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প368 Mins Read0
    ⤶

    ৭০. প্লেনে বসে চোখ বন্ধ করে

    অধ্যায় ৭০

    প্লেনে বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে। তার মুখটা দেখলে মনে হবে এক ধরণের প্রশান্তিতে ভরে আছে।

    গতকাল রাতে মাত্র বিশ মিনিটের মধ্যেই জাভেদ ওয়ার্সি গাড়ি নিয়ে চলে এসছিলো গুলজার-এ-হিজরির বাইরে সচল রোডে। রওনা দেবার আগে ছেলেটা বলেছিলো তার আসতে কমপক্ষে পনেরো-বিশ মিনিট লাগবে। এই সময়টা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি কিংবা হাটাহাটি না করে দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে নেয় সে। সচল রোডে এসে রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা নাপিতের দোকান দেখে ঢুকে পড়ে। দু-দিনের খোঁচা-খোঁচা দাড়ি কামিয়ে সময়টা পার করে দেয় ভালোভাবেই।

    জাভেদ যখন গাড়ি নিয়ে নাপিতের দোকানের সামনে চলে এলো তখন পরিস্কার মুখ নিয়ে বের হয়ে আসে সে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে হা-করে থাকে ছেলেটা। মুচকি হেসে জাভেদের গাড়িতে উঠে বসে।

    “আজকের রাতটা কোথায় থাকা যায়, বলো?” পেছনের সিটে বসে জিজ্ঞেস করে ছেলেটাকে। “ঐ হোটেলে তো ওঠা যাবে না। অন্য কোনো হোটেলে উঠতে হবে। এয়ারপোর্টের কাছে হলে ভালো হয়।”

    “হোটেলে উঠবেন!” রিয়ার-মিররে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে জাভেদ।

    “হুম। শুধু আজকের রাতের জন্যই।”

    “পাসপোর্ট আছে আপনার সাথে?…ওটা না ঐ হোটেলে?”

    মুচকি হাসে সে। “হুম, ওখানেই ছিলো…এখন আমার কাছে।”

    জাভেদ বুঝতে পারে না। হোটেল থেকে এই লোক তার পাসপোর্ট কিভাবে নিয়ে এলো? কখন নিয়ে এলো? কিন্তু প্রশ্ন করার লোভ সামলে নিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে সে। “এয়ারপোর্টের কাছে কোয়েটা হোটেল আছে…ওখানে যাবেন?”

    “ওকে।”

    “ভাড়া কিন্তু একটু বেশি?”

    “কতো হতে পারে?”

    “ধরেন পাঁচ হাজার রুপি?”

    এটা একটা সমস্যা ছিলো। সামুনাবাদ হোটেলে তার লাগেজে যে ডলার আর রুপি ছিলো সেগুলো পাসপোর্টের মতোই বেহাত হয়ে গেছে।

    “জাভেদ?” অনেকক্ষণ ভাবার পর সে বলে।

    “জি, ভাই?”

    “তুমি কি আমাকে কিছু রুপি ধার দিতে পারবে?”

    “পারবো, ভাই। কতো?”

    “পাঁচ-ছয় হাজার?”

    “ওকে।”

    “শুকরিয়া।” মুচকি হাসে ছেলেটা। “আপনাকেও শুকরিয়া।”

    “কেন?”

    “আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। আমার উপরে আস্থা রাখার জন্য।”

    পেছন থেকে জাভেদের কাঁধে হাত রেখে সে বলে, “তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে, জাভেদ। সত্যি, অনেক ভালো। তুমি বিদেশে চলে যাও। এখানে থেকো না। আরেকটা কথা বলি, কখনও পলিটিশিয়ানদের সঙ্গে থেকো না। সে যতো ভালোই হোক না কেন।”

    রিয়ার-মিরর দিয়ে পেছনের সিটে তাকায় জাভেদ ওয়ার্সি, তবে কিছু বলে না।

    “পিস্তলটা নাও…এটা আর আমার দরকার নেই। কম্পার্টমেন্টে লুকিয়ে রাখো।”

    জাভেদ একহাতে স্টিয়ারিং ধরে পেছন থেকে পিস্তলটা নিয়ে ড্যাশবোর্ডের গোপন কম্পার্টমেন্টে লুকিয়ে ফেলে।

    এরপর হোটেল কোয়েটায় যাবার আগে মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে একটা লাগেজ কিনে নেয় সে। জাভেদের সঙ্গে ছয়হাজার রুপি ছিলো, তার পুরোটাই দিয়ে দেয় তাকে। ছেলেটা জানায়, দরকার হলে আরা কিছু রুপি তাকে দিতে পারবে।

    হোটেলে ওঠার আগে বাস্টার্ড জানিয়ে দেয় সকালে তাকে ফোন করে বলে দেবে কখন তার ফ্লাইট। জাভেদকে বিদায় দিয়ে কোয়েটা হোটেলের একটা রুম ভাড়া নিয়ে নেয় সে। গরমপানিতে গোসল করে রাত দশটার দিকে হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে হালকা ডিনার করে রুমে এসে টিভি ছেড়ে দেয়। সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে একটা ঘটনাই আধিপত্য বিস্তার করে আছে : মুম্বাই’র ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলা। তখনও হোটেল তাজ সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয় নি, তবে কমান্ডোরা ঢুকে পড়েছে অভ্যন্তরে। আশা করা যায় শেষ রাতের দিকে হোটেলটি পুরোপুরি সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।

    এ পর্যন্ত খবর দেখে বাতি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে সে। খুব সকালে উঠে এয়ারলাইন্সে ফোন করে টিকেট কনফার্ম করে। তারা জানায়, সৌভাগ্যক্রমে আজ বিকেল ৪টার ফ্লাইটে বুকিং দেয়া যেতে পারে। বাস্টার্ড এক মুহূর্তও দেরি না করে বুকিং দিয়ে দেয়। এরপর সারাটা সকাল হোটেল রুমেই কাটিয়ে দেয় সে। দুপুরের আগে শুটার সামাদকে ফোন করে বলে, জাভেদকে কিছু টাকা দিতে চায় কিন্তু সেটা দেশে ফিরে গিয়ে। এ মুহূর্তে তার সব টাকা বেহাত হয়ে গেছে। সামাদ জানায়, জাভেদকে পরে টাকা পাঠিয়ে দেয়া যাবে, এ নিয়ে সে যেনো কোনো চিন্তা না করে।

    সকালের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত টিভি দেখেই কাটিয়েছে সে। তাজ হোটেলটিও অবশেষে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করা হয়েছে ভোরের দিকে। একজন বাদে বাকি নয়জন সন্ত্রাসীর সবাই নিহত। একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসী কাসাবের ধরা পড়ার ছবি দেখে নড়েচড়ে বসেছিলো। এই চেহারাটা তার স্পষ্ট মনে আছে। ছেলেটাকে দেখেছিলো করাচির নির্জন বিচে। মওলানার বাড়িতে দু-জন হ্যান্ডলারের একজনকেও তখন দেখেছিলো। দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে কোনো সমস্যাই হয় নি তার।

    পৃথিবীটা কতোই না অদ্ভুত, ভাবে সে। কেউ কখনও জানতেও পারবে না, মুম্বাইর হামলায় অংশ নেয়া কমপক্ষে একজনের সাথে তার দেখা হয়েছিলো করাচির কোনো র্নিজন বিচে। আবার তাদেরই দু-জন হ্যান্ডলার, যারা মওলানা ইউসুফ হোসাইনীর বাড়িতে বসে সন্ত্রাসীদের নির্দেশ দিচ্ছিলো, তারাও মারা পড়েছে তার হাতে।

    প্লেনে ওঠার ঠিক আগে দিয়ে এয়ারপোর্টে বসে আইনাতকে একটা মেসেজ পাঠায় সে :

    আমি কে, কোত্থেকে এসেছিলাম এ সব নিয়ে ভেবে কোনো লাভ নেই। নতুন করে আবার সবকিছু শুর করো। নিজের মতো করে বাঁচো।

    ভালো থেকো।

    তওফিক

    এরপরই মোবাইলফোনটা অফ করে দিয়ে চিরকালের জন্য করাচির সিমটা খুলে ফেলে সে। তার জন্য করাচির অধ্যায় ওখানেই শেষ।

    এয়ারহোস্টেসের কণ্ঠটা স্পিকারে ভেসে আসতেই চোখ খুলে তাকালো। সবাইকে সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশ দিচ্ছে মেয়েটি। প্লেন একটু পরই ঢাকার জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করবে। সিটবেল্টটা বেধে আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললো। দেশের মাটিতে প্লেনের চাকা স্পর্শ করতেই অন্যরকম এক ভালোলাগার অনুভূতি বয়ে গেলো সারা শরীরে। এটা সব সময়ই ঘটে। সম্ভবত সব সময়ই ঘটবে।

    হোম সুইট হোম!

    অধ্যায় একাত্তর

    বারো তলার উপরে অ্যাট দি টপ রেস্টুরেন্টে বসে আছে জামিল আহমেদ আন্দোলন। তাকে যারা দীর্ঘদিন ধরে চেনে-জানে তারা গত কয়েকদিন ধরে একটা জিনিস ভালোভাবেই লক্ষ্য করছে, জামিলের চেহারায় এক ধরণের প্রশান্তি চলে এসেছে। তাকে খুব নির্ভারও দেখাচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে বড় কর্তব্যটি পালন করার পর মানুষ যেমন নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, তাকে দেখলে এখন তেমনি মনে হবে।

    তার ঘনিষ্ঠজনেরা শুধু তার মধ্যে এই পরিবর্তনটিই দেখতে পাচ্ছে বললে ভুল বলা হবে। দু-দিন আগে জামিল আহমেদ তার অফিসের সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারির বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে। যার যা দাবি ছিলো হুট করেই মিটিয়ে দিয়েছে বিনা নোটিশে। যাদের প্রমোশন দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিলো তারা। প্রমোশন পেয়ে গেছে। যারা তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য দরখাস্ত করে। রেখেছিলো, দিনের পরদিন ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, তারা হুট করেই আরাধ্য চাকরিটা পেয়ে গেছে!

    অফিসের ম্যানেজমেন্টে যারা আছে তারা বিস্মিত। তাদের তো এতো লোকের দরকার নেই। ঢালাওভাবে সবাইকে প্রমোশন দেয়াটাও ঠিক হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের কথা মাথায় রাখা উচিত। এমনভাবে চলতে থাকলে বছর শেষে মালিক হিসেবে তিনি কিছুই পাবেন না!

    এসব কথার জবাব দিয়েছে সে প্রসন্ন এক হাসির মধ্য দিয়ে। সমস্যা নেই। সে যা করেছে বুঝেশুনেই করেছে। তার অগোচরে যে কর্মকর্তারা এ নিয়ে নানান ধরণের স্পেকুলেশন করেছে, এখনও করছে সেটা সে ভালো করেই জানে। তবে এটাও জানে, ক-দিন পরই এসব ভুলে গিয়ে সবাই আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সারপ্রাইজ বেশিদিন টিকে থাকে না।

    তবে কেউ জানে না তার এই পরিবর্তনের আসল কারণ। এমন কি যে ছেলেটা অসাধ্য সাধন করে তাকে তার জীবনের সবচাইতে সেরা মুহূর্তটি উপহার দিয়েছে তার কাছেও এটা অজানাই রয়ে গেছে।

    হাতঘড়িতে সময় দেখলো। সন্ধ্যা সাতটা দশ মিনিট। তার মধ্যে কোনো করাছি অধৈর্যও দেখা যাচ্ছে না। আরো একঘণ্টাও যদি এখানে বসে থাকতে হয় তাতেও সে কিছু মনে কবে না। কফির কাপটা তুলে নিয়ে ছোট্ট করে চুমুক দিলো। আসলেই, তার এই রেস্টুরেন্টের কফিটা দারুণ। ঐ ছেলেটা মোটেও বাড়িয়ে বলে নি। প্রথম দেখা থেকে আজ পর্যন্ত ছেলেটির সবকিছুই তাকে অবাক করে দিচ্ছে। ঘুণাক্ষরেও সে ভাবে নি এ-দেশের কোনো ভাড়াটে খুনি করাচিতে গিয়ে মওলানার বাড়িতে ঢুকে তাকে খুন করে নির্বিঘ্নে চলে আসবে। তাও আবার খুন করার আগে ঘাতকের সাথে মোবাইলেফোনে কথা বলিয়ে দেয়া, গুলি করে পশুটাকে হত্যা করার শব্দ শোনানোর মতো নাটকীয় কিছু!

    ছেলেটা দেখতে দেবদূতের মতো। চাল-চলনে ভীষণ স্মার্ট। যথেষ্ট পরিমিতবোধও আছে। ব্যবহার অমায়িক। বলা বাহুল্য, প্রখর বুদ্ধির অধিকারী সে, অথচ এরকম একটি ছেলে কিনা পেশায় খুনি!

    “সরি অ্যাগেইন।”

    কথাটা শুনে চমকে তাকালো জামিল আহমেদ। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে করাচি থেকে ফিরে আসা সেই যুবক। “না, না…ইটস ওকে,” বললো সে।

    “আগেই বলেছি…আপনার রেস্টুরেন্টের লিফটটা খুব রাশ থাকে।”

    প্রসন্নভাবে হাসলো জামিল আহমেদ। “আমি কেবল টপ ফ্লোরটা কিনে নিয়েছি…পুরো বিল্ডিংটা নয়।”

    মুচকি হেসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো, সে। “তাহলে বলবো এটা অন্য কোথাও শিফট করে ফেলুন।”

    জামিল কিছু বললো না। ওয়েটারকে ডাকলো সে। “কফি?”

    বাস্টার্ড মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    যথারীতি গোমড়ামুখে অর্ডার নিয়ে চলে গেলো ওয়েটার।

    “সাধারণত কাজ শেষ হয়ে যাবার পর এরকম মিটিং আমি করি না,” আস্তে করে বললো সে। কিন্তু বিশেষ একটা কারণে এটা করতে হলো।”

    অবাক হলো জামিল আহমেদ। “কারণটা কি?”

    “বলছি,” বলেই পকেট থেকে মোবাইলফোন বের করে একটা ভিডিও ফাইল ওপেন করলো। তার আগে এটা দেখুন।” ফোনটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলো এবার।

    ফোনের দিকে বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো জামিল আহমেদ আন্দোলন। অভাবনীয় একটি দৃশ্য। একাত্তরের ইউসুফ আলী দু-হাতে গলা চেপে ধরে মেঝেতে শুয়ে পড়ছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তার হাত-মুখ। চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে যেতে চাইছে যেনো। কিছু বলার চেষ্টা করলেও মুখ দিয়ে গল গল করে শুধু রক্তবমি হচ্ছে।

    “সুযোগটা পেয়ে গেলাম তাই ভাবলাম ভিডিও করে রাখি, অকাট্য প্রমাণ হিসেবে থাকবে।”

    বাস্টার্ডের দিকে মুখ তুলে তাকালো সে। “প্রমাণ মানে?”

    “মওলানা ইউসুফ হোসাইনী যে খুন হয়েছে সেটা পাকিস্তানের কোনো পত্র-পত্রিকা কিংবা টিভি নিউজে আসে নি। কেন আসে নি তা অবশ্য বুঝতে পেরেছি।”

    “কেন আসে নি?”

    মুচকি হাসলো সে। “গল্পটা খুব লম্বা…জটিলও।” একটু থেমে আবার বললো, “যাক, আশা করি এখন আর আপনার মনে কোনো সন্দেহ নেই।”

    প্রসন্নভাবে হাসলো জামিল আহমেদ। এ নিয়ে আমার মধ্যে কোনো সন্দেহই তৈরি হয় নি।”

    চুপ মেরে রইলো বাস্টার্ড। সে যে কাজ করে সেগুলো প্রমাণ করার কাজটা করে থাকে পত্র-পত্রিকা আর টিভি-নিউজ চ্যানেলগুলো। কিন্তু মওলানার বেলায় সেটা ঘটে নি।

    “আমি আপনাকে কী বলে যে-”

    “দরকার নেই,” জামিলের কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বললো সে। “আপনি একটা কাজ দিয়েছিলেন, টাকার বিনিময়ে আমি সেটা করেছি। ঘটনা এখানেই শেষ।”

    কয়েক মুহূর্ত চুপ মেরে রইলো শহীদের সন্তান। “…আমি আপনার পেমেন্টটা… মানে… ওটা…” কেমন একটা দ্বিধা এসে ভর করলো জামিল আহমেদের মধ্যে। এই জীবনে কখনও কারো সামনে এতোটা দ্বিধাগ্রস্ত হয় নি। লোকজন বলে খুব অল্পবয়স থেকেই সে স্মার্ট আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। তার চিরলড়াকু মা তাকে এভাবেই গড়ে তুলেছিলেন।

    এমন সময় ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেলো।

    “দিতে দেরি হবে?…কোনো সমস্যা নেই।” কফিতে চুমুক দিলো বাস্টার্ড।

    “ব্যাপার সেটা নয়, নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললো জামিল। “আসলে আমি পেমেন্টটা বাড়িয়ে দিতে চাচ্ছিলাম।”

    বাস্টার্ড চেয়ে রইলো শহীদের সন্তানের দিকে। মুচকি হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে। “বোনাস দিতে চাচ্ছেন?”

    বিব্রত হলো মি: আহমেদ।

    “আমি বাড়তি যা কিছু করেছি সেটা সুযোগ পেয়েছি বলেই করেছি…বোনাস পাবার জন্য করি নি।” কফির কাপটা নামিয়ে রেখে আবার বললো, “আমি যে কাজ করি তাতে কোনো বোনাস নেই।”

    মাথা দোলালো জামিল। “এটা বোনাসের ব্যাপার নয়। আসলে আমার মনে হচ্ছে বেশি দিতে…মানে পেমেন্টটা বাড়িয়ে দিলে আমার নিজেরই ভালো লাগবে।”

    “ধন্যবাদ। আমাদের মধ্যে যে কথা হয়েছিলো সেটা দিলেই আপনার সাথে সব লেনদেন শেষ হয়ে যাবে। কফিতে মনোযোগ দিলো আবার।

    স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো জামিল।

    “একটা কথা শুধু মনে রাখবেন, মওলানা ইউসুফ হোসাইনীকে হত্যা করে আপনি ভালো একটা কাজই করেছেন।”

    “মানে?” বিস্ময়ে বলে উঠলো জামিল আহমেদ আন্দোলন।

    মুচকি হাসলো বাস্টার্ড। “সবটা খুলে বলা যাবে না…লম্বাগল্প। আর গল্প করতে আমার একদম ভালো লাগে না।” উঠে দাঁড়ালো সে। “তবে এটুকু বলতে পারি, কয়েকদিন আগে দুনিয়া কাঁপিয়ে দেয়ার মতো একটি ঘটনার সাথে সে জড়িত ছিলো।”

    জামিল আহমেদ আন্দোলনকে বিস্ময়ে আবিষ্ট করে পেশাদার খুনি চলে গেলো। ও কি বলে গেলো? মনে মনে বলে উঠলো সে। কয়েকদিন আগে…?!

    তারপরই ভাবনাটা তার মাথায় এলো। মুম্বাই হামলা?! অসম্ভব! মাথা দোলালো। কিন্তু ছেলেটার কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতেও পারছে না। এটা কিভাবে সম্ভব?!

    *

    অ্যাট দি টপ থেকে নীচে নামার সময় বাস্টার্ড মনে মনে ঠিক করলো নতুন কাজটায় নামার আগে ঢাকার বাইরে নির্জন কোথাও গিয়ে এক সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে আসবে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, করাচি থেকে ফিরেই আরেকটি কাজ পেয়ে গেছে, আর এই কাজটা স্বয়ং অমূল্যবাবুর!

    সত্যি বলতে, নতুন কাজটার কথা শোনামাত্রই সে ভিরমি খেয়েছিলো, কিন্তু পরে যখন বিস্তারিত শুনলো তখন বুঝতে পারলো সবটা। এমনিতেও সে রাজি হতো কারণ বাবু বলেছে এটা তার নিজের কাজ। তবে অন্যসব কাজের মতো এ-কাজটা করা যাবে না, এটা করতে হবে বাবুর নিজস্ব ছকে। বাধাধরা সময় নেই ঠিকই কিন্তু নির্দিষ্ট ঐ ছকে কাজটা করতে গেলে অনেক বেশি সময় লাগবে, কমপক্ষে এক-দেড় মাস।

    সব শোনার পর কাজটা করার ব্যাপারে তার মধ্যে আর কোনো দ্বিধা থাকে নি। অল্পবয়সি নিষ্পাপ বাচ্চাদের সাথে যারা খারাপ কাজ করে সেই ছোটোবেলা থেকেই তাদেরকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। তোক না সে জনপ্রিয় কোনো লেখক!

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনেক্সট (বেগ-বাস্টার্ড – ৬) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }