Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কাঠপেন্সিল – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প105 Mins Read0
    ⤶

    আমার আছে জল

    আমার আছে জল
    (সাধারণ জল না, হট ওয়াটার)

    কিছুদিন আগে একটা ছবি বানিয়ে শেষ করেছি। নিজেরই যৌবনকালের রচনা আমার আছে জল উপন্যাসের চিত্ররূপ। প্রযোজক চ্যানেল আই। ছবিতে শর্ত জুড়ে দেওয়া, লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যে মেয়েটি প্রথম হয়েছে সে-ই হবে নায়িকা। অভিনয় জানুক বা না-জানুক। কঠিন শর্ত। শর্ত মানার অর্থ হচ্ছে ঢেঁকির চেয়েও বেশি কিছু গেলা, রাইস মিল গেলা। আমি রাইস মিল গিলে ফেললাম। কারণ অর্থনৈতিক না, কারণ হৃদয়নৈতিক। লেখালেখি করতে গিয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন অন্যকিছু করতে ইচ্ছে করে। ছবি বানানোর সময় আমার মধ্যে প্রবল ঘোর কাজ করে। এমনিতেই আমি ঘোরলাগা মানুষ। বাড়তি ঘোরে কঠিন নেশার অনুভূতি হয়। বড় ভালো লাগে।

    ছবি বানাতে প্রথম যে জিনিসটি লাগে তার নাম অর্থ। অর্থের পরেই লাগে একটা নিখুঁত চিত্রনাট্য। চিত্রনাট্য নিয়ে মোটেই মাথা ঘামালাম না। ভাবটা এরকম, আমারই তো ছাগল। ইচ্ছেমতো কেটেকুটে নিব। ছবির শুটিং শুরু হবে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে। চিত্রনাট্য বাদ দিয়ে আমি করছি লেখালেখি। মধ্যাহ্ন উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ড। আমার চিন্তা-চেতনায় মধ্যাহ্ন, আমার আছে জল না।

    লেখালেখি শেষে চিত্রনাট্য নিয়ে বসলাম এবং প্রথম যে বাক্যটি উচ্চারণ করলাম তা হচ্ছে, খাইছে আমারে। পড়লাম গভীর জলে। নানানভাবে চেষ্টা করেও চিত্রনাট্য দাঁড় করাতে পারছি না। এদিকে দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। গান লেখা হয়ে গেছে। গানে সুর দেওয়া হয়েছে। পাত্রপাত্রীরা তৈরি। ক্যামেরা, ক্রেন, ট্রলি, বৃষ্টি, জেনারেটর রেডি। রেডি না চিত্রনাট্য। আমি সারাদিন লিখি, সন্ধ্যাবেলায় যা লিখি ছিঁড়ে কুচিকুচি করি। পুত্র নিষাদ ছেড়া কাগজে হামাগুড়ি দিয়ে বড়ই আনন্দ পায়। আমি ভাবি, নিষাদের বয়সে ফিরে যেতে পারলে কত সুখেই না থাকতাম।

    করুণাময় একসময় করুণা করলেন। একদিন অবাক হয়ে দেখি, চমৎকার একটি চিত্রনাট্য দাড় করে ফেলেছি। শাওনকে পড়তে দিলাম। সে পড়ে গম্ভীর হয়ে গেল। আমি বললাম, কোনো সমস্যা? সে বলল, হ্যাঁ, সমস্যা।

    কী সমস্যা?

    সে বলল, যে-কোনো অগা মগা বগা ডিরেক্টরকে এই চিত্রনাট্য দিলে সে সুন্দর ছবি বানিয়ে দিবে। ভালো ডিরেক্টর লাগবে না।

    তার প্রশংসাবাক্য বড় ভালো লাগল। স্ত্রীর প্রশংসা পাওয়া যে কত জটিল বিষয় তা স্বামী মাত্রই জানেন।

    .

    মহাবিপদ সংকেত (দশ নম্বর)

    চিত্রনাট্য তৈরি হবার পর মহাবিপদ সংকেতের ঘণ্টা বাজতে শুরু করল। ঘণ্টা আগেই বাজছিল। আমি নির্বোধ প্রকৃতির বলে বুঝতে পারি নি। একে একে শিল্পীরা ঝরে পড়তে শুরু করলেন।

    প্রথমে সরে দাঁড়াল মাহফুজ। তাকে শুরুতে জামিল নামের একটি চরিত্রে নিয়েছিলাম। আলাভোলা টাইপ চরিত্র। পরে মনে হলো মাহফুজের চেয়ে জাহিদকে এই চরিত্রে ভালো মানাবে। মাহফুজকে মানাবে সাব্বির চরিত্রে। আমেরিকা প্রবাসী এক ফটোগ্রাফার। স্মার্ট, সুদর্শন। মাহফুজ বলল, না। সে জামিল ছাড়া অন্য চরিত্রে কাজ করবে না। তাকে অনেক বোঝালাম। সে বুঝল না।

    মাহফুজ তার নানান কর্মকান্দ্রে অনেকবার আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে, ঐদিনের কঠিন না সব আনন্দ ছাপিয়ে প্রবল বেদনায় আমাকে ঢেকে দিল। বারবার মনে হলো, আমি সবসময় আমার স্নেহ অপাত্রে দান করেছি। যেখানে আমার নিজের পুত্রকন্যাই আমার স্নেহ বুঝতে পারে নি, সেখানে দূরের মাহফুজ কী করে বুঝবে?

    মাহফুজের পরেই ছিটকে সরে গেল রিয়াজ। তার করার কথা সাব্বির। রিয়াজকে যে মাহফুজের চেয়ে আমি কোনো অংশে কম স্নেহ করেছি তা না। ছেলেটির চেহারা যেমন সুন্দর আচার-ব্যবহারও সুন্দর। অতি মিশুক অতি আড্ডাবাজ মানুষ। ছবির জগতের মানুষদের কিছু অদ্ভুত হিসাব-নিকাশ থাকে। আমার ধারণা রিয়াজ অদ্ভুত হিসাবটা করল। সে ভাবল যেহেতু মাহফুজ সাব্বির চরিত্রটা করছে না কাজেই সেখানে নিশ্চয়ই কিন্তু আছে। রিয়াজ টেলিফোনে জানাল, যে-সময়ে আমার আছে জল-এর শুটিং হবার কথা সে-সময়ে তার অন্য একটা ছবির জন্য সময় দেওয়া। তার মনে ছিল না… ইত্যাদি।

    বাকি থাকল চ্যালেঞ্জার। সেই বাকি থাকে কেন? একদিন জানলাম টাকাপয়সা বিষয়ক কিছু সমস্যা তার হচ্ছে। ইদানীং নাটক এবং টেলিফিল্ম করে যে টাকা সে পায় চ্যানেল আই তাকে তারচেয়ে অনেক কম টাকা দিচ্ছে। সে দশদিন কাজ করে এর থেকে বেশি টাকা পায়। সেখানে একমাস! চ্যালেঞ্জারকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। টাকাপয়সা তার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ এরকম আমার কখনোই মনে হয় নি।

    অবশ্যই টাকাপয়সা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারপরেও জীবন মাপার ব্যারোমিটার কখনোই অর্থ হতে পারে না। চ্যালেঞ্জারকে আমি নিজেই ছবি থেকে বাদ দিলাম। শাওন প্রবল আপত্তি করল। তার একটাই যুক্তি, চিত্রনাট্যে তুমি আইজি সাহেবের চরিত্র চ্যালেঞ্জারকে মাথায় রেখে তৈরি করেছ। চ্যালেঞ্জারকে বাদ দিয়ে অন্য যাকেই তুমি নিবে তার মধ্যে চ্যালেঞ্জারকে দেখতে চাইবে। যখন দেখবে না, তখন নিজেরই খারাপ লাগবে। তুমি চ্যালেঞ্জারকে বাদ দিও না।

    আমি হাসতে হাসতে বললাম, তোমার যুক্তি মানলাম, কিন্তু তালগাছটি আমার। আমি চ্যালেঞ্জারকে বাদ দিলাম।

    কে করবে আইজি চরিত্র?

    কাউকে না পাওয়া গেলে আমি নিজেই করব।

    পাগল হতে তোমার বেশি বাকি নেই।

    আমি বললাম, নিশ্চিন্ত থাকে। ছবি শেষ হবার আগেই পুরোপুরি পাগল হয়ে যাব।

    আমার সমুদ্রশয্যা দেখে শাওন খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল। একে টেলিফোন তাকে টেলিফোন– শিল্পী যোগাড় করা যায় কি না।

    একরাতে হতাশ হয়ে চ্যানেল আই-এর হাসানকে টেলিফোন করে বললাম, চিত্রনাট্যটা তৈরি আছে। তুমি তৌকীর আহমেদকে চিত্রনাট্যটা দিয়ে ছবি করতে বলো। সে আগেও আমার চিত্রনাট্যে দারুচিনি দ্বীপ বানিয়েছে। ভালো বানিয়েছে। এবারেরটা আরো ভালো হবে। তৌকীর পরিচালনা করলে আইজি সমস্যার সমাধান হবে। আবুল হায়াত সাহেব আনন্দের সঙ্গেই আইজি করবেন।

    হাসান বিড়বিড় করে বলল, বিশ তারিখ থেকে শুটিং শুরু, আজ সতের তারিখ, এখন আপনি এইসব কী বলছেন?

    সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন আসাদুজ্জামান নূর। শাওনকে তিনি মা ডাকেন। শাওন যখন করুণ গলায় বলল, নূর চাচা, হুমায়ুন আহমেদ মহাবিপদে পড়েছে। তার শরীর কত খারাপ সেটা তো আপনি জানেন। তাকে দেখলে মনে হয় যে-কোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হবে। আইজি চরিত্রটি আপনি করে দিন, কিংবা আলী যাকের চাচাকে রাজি করান।

    নূর বললেন, মা, তুমি হুমায়ূনকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করো। আমি বিশ তারিখের আগেই আলী যাকেরকে রাজি করাব। সে রাজি না হলে আমি তো আছিই। তুমি হুমায়ূনকে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে বলো।

    শাওন বলল, নুর চাচা থ্যাংক ইউ।

    বলতে বলতে সে চোখ মুছল। গভীর আবেগে এবং আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেছে। সে আমাকে ধরা গলায় বলল, এখন তোমার অশান্তি দূর হয়েছে তো? চলো কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুজনে ডিনার করি। তুমি তো খাওয়াদাওয়াই ছেড়ে দিয়েছ।

    আমরা বিশাল সাইজের লবস্টার দিয়ে ডিনার সারলাম। রাতে খুব আরামের ঘুম হলো।

    উনিশ তারিখ আসাদুজ্জামান নুর জানালেন, তিনি বা আলী যাকের দুজনের কেউই অভিনয় করতে পারবেন না।

    আমি শাওনের আহত এবং দুঃখিত মুখের দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। সে করুণ গলায় বলল, চ্যালেঞ্জারকে বলি? আমাদের এত বড় বিপদে তিনি পাশে দাঁড়াবেন না এটা হতেই পারে না।

    আমি বললাম, না।

    ছবির কী হবে?

    ছবি হবে। আগামীকাল থেকেই শুটিং। Countdown শুরু হয়েছে। মাঝখানে থামা যাবে না।

    আইজি চরিত্র কে করবেন?

    জানি না।

    আইজি চরিত্রে অভিনয় করার জন্যে এগিয়ে এলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। যে করুণা এই মানুষটি আমার প্রতি দেখিয়েছিলেন সেই করুণা যেন বহুগুণে এই মানুষটির প্রতি বর্ষিত হয়, তাঁর প্রতি এই আমার শুভ কামনা। গুরু নানক বলেছেন—

    দুগুনা দত্তার
    চৌগুনা জুজার

    যে দুগুণ দেয় সে চারগুণ ফেরত পায়। গুরু নানকের এই বাক্যটি আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

    ফটোগ্রাফার সাব্বির

    ফটোগ্রাফার সাব্বির চরিত্রে অভিনয় করতে এগিয়ে এলেন চিত্র জগতের আরেক নায়ক ফেরদৌস। তার সঙ্গে আমি চন্দ্রকথা ছবিতে কাজ করেছি। চিত্রনায়কদের নায়কসুলভ সমস্যা থেকে সে বহুলাংশে মুক্ত। বিয়ের পর তার স্বভাবে এবং আচরণে অন্য ধরনের স্থিরতা এসেছে। আমার আছে জল ছবিতে সাতদিনের নোটিশে তাকে যে রাজি করিয়েছে তার নাম হাসান। হাসান এই দায়িতু পালন করে মহানন্দে ইউরোপ বেড়াতে চলে গেল। আমি এবং শাওন খুবই আনন্দ পেলাম। আমরা সাব্বির নামের কঠিন একটি চরিত্রে একজন Dependable আর্টিস্ট পেলাম।

    ফেরদৌসকে অনেক শিডিউল (এ দেশে এবং পশ্চিমবঙ্গের) উলটপালট করতে হলো। তার মধ্যে যতটুকু ফাঁক পাচ্ছিল সে সিলেট থেকে বিমানে চলে যাচ্ছিল, অন্য সিডিউলে কাজ করে আবার ফিরে আসছিল।

    ফেরদৌসের একটা ছোট্ট গল্প বলার লোভ সামলাতে পারছি না। পাঠকরা জানেন কি না জানি না, ছবির সব নায়ক এবং নায়িকাদের আলাদা চেয়ার এবং বিশাল রঙিন ছাতা থাকে। নায়ক-নায়িকাদের সহকারীরা চেয়ার এবং ছাতা বহন করে।

    আমি একদিন ভুল করে ফেরদৌসের চেয়ারে বসে পড়েছি। খুবই আরামদায়ক চেয়ার। ফেরদৌস ব্যাপারটা লক্ষ করল এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার স্ত্রীকে টেলিফোন করল।

    স্যার আমার চেয়ারটায় বসে খুব আরাম পেয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে। তুমি তো এখন লন্ডনে। তুমি অবশ্যই লন্ডনের যে দোকান থেকে আমার এই চেয়ারটা কিনেছ, অবিকল সেরকম একটা চেয়ার কিনে সিলেটে পাঠাবার ব্যবস্থা করবে।

    আমি ফেরদৌসের টেলিফোনের বিষয়ে জানি না। একদিন বিস্মিত হয়ে দেখি, একই রকম দুটা চেয়ার পাশাপাশি। ফেরদৌস বিনীত গলায় বলল, স্যার, এটা আপনার জন্যে। গহীন জঙ্গলে পাওয়া এই উপহার কিছুক্ষণের জন্যে আমাকে অভিভূত করে রাখল। মনে হলো সে আমার অভিনেতা না, আমারই ছেলে। বাবার বসার কষ্ট দেখে দূরদেশ থেকে একটা চেয়ার আনিয়েছে।

    .

    জাহিদ হাসান

    টিভির নায়করা যে চলচ্চিত্রের নায়কদের মতোই বিপদজনক সঙ্গী এই ধারণা জাহিদকে দেখে জন্মেছে। যেখানেই জাহিদ সেখানেই শত শত ভক্ত। কেউ জাহিদ ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে ছবি তুলবে। কেউ অটোগ্রাফ নেবে। রিকশাওয়ালা রিকশা নিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ জাহিদকে দেখে অতি পরিচিত ভঙ্গিতে বলবে, আরে জাহিদ ভাই। ভালো আছেন? মৌ আপু ভালো?

    আমি জাহিদের মতো রসবোধসম্পন্ন মানুষ দ্বিতীয়টি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তাৎক্ষণিক Humour-এ তার জুড়ি নেই। তার রসিকতায় মুগ্ধ হয়ে কতবার যে হো হো করে হেসেছি।

    পাঠকরা কি জানেন, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং ছাইপাশ খায় না? ছাইপাশ খাওয়া অভিনেতারা অভিনয়ের অঙ্গ মনে করেন, সেখানে একজন তা খায় না দেখে অবাক হয়েছি।

    আমার আছে জল ছবিতে সে খুব ভালো অভিনয় করেছে। একটি অতি জটিল মনস্তাত্ত্বিক চরিত্র চমৎকার ফুটিয়েছে। তার অভিনীত একটি দৃশ্য মনিটরে (আমাদের এই ক্যামেরায় মনিটর আছে) দেখে আমার চোখে পানি এসেছে। আমি মনে মনে বলেছি, জিতে রহ ব্যাটা।

    জাহিদের স্ত্রী মৌ এই ছবিতে কাজ না করেও সরব উপস্থিত ছিল। হলদিরামের সনপাপড়ি আমি আগ্রহ করে খাই জানতে পেরে সে শুটিং-এর পুরো সময় সনপাপড়ির সাপ্লাইয়ের দিকে নজর রাখল। আমি মনের সাধ মিটিয়ে সনপাপড়ি খেলাম।

    ছবি শেষ। সনপাপড়িও শেষ। জাহিদের সঙ্গে কথা ছিল ঢাকায় পৌঁছে সে সনপাপড়ির দোকানের ঠিকানা দেবে। ঢাকায় পৌঁছেই সে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। মনে হচ্ছে সনপাপড়ির জন্যে আরেকটা ছবি পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে।

    .

    প্রথম রাতে বনবিড়াল বধ

    সব স্বামীই বিয়ের রাতে বিড়াল মারতে চান। বিড়াল নিয়ে আসেন। বিছানার পাশে বেঁধে রাখেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেইসব বিড়াল স্ত্রীরা মেরে ফেলেন। বিড়ালবধি স্ত্রীদের হাতে স্বামীদের বাকি জীবন ভেড়া হয়ে থাকতে হয়।

    ছবির শুটিং এক ধরনের বিবাহ প্রক্রিয়া। কাজেই এই বিবাহ প্রক্রিয়ায় বিড়ালবধ জরুরি। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, কোনো একটা কারণ বের করে শুটিং-এর প্রথম দিন খুব হৈচৈ করে এক পর্যায়ে বলব, কাজই করব না। প্যাক আপ। সবাই বুঝবে, বাপরে, এত কঠিন পরিচালক!

    আমাকে কারণ খুঁজতে হলো না। শুটিং-এর প্রথম দিন কারণ আপনাআপনি হাতে ধরা দিল।

    টিলাগাঁও রেলস্টেশনে শুটিং। আইজি সাহেব দলবল নিয়ে ট্রেন থেকে নামবেন। ক্যামেরা ওপেন হবে সাড়ে নটায়। আমি নটায় উপস্থিত হলাম। ক্যামেরাম্যান মাহফুজুর রহমান তার আগেই এসেছেন। তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে চা খাচ্ছেন। তার চিন্তার কারণ শত শত মানুষ। এদের সরিয়ে শুট কীভাবে নেয়া হবে? চ্যানেল আই যে দুজনকে (প্রোডাকশন কন্ট্রোলার) সবকিছু দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে তারা অনুপস্থিত। জানা গেল দুজনই ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙলে আসবে। ক্যামেরা চলে এসেছে, লাইটের লোকজন আসে নি। গাড়ি নেই। যে মাইক্রোবাস ক্যামেরা নিয়ে এসেছে সেটা নড়বে না। কারণ তাদের ওপর নাকি কঠিন নির্দেশ–ক্যামেরা ছাড়া এই মাইক্রোবাস আর কোনো কিছুই বহন করতে পারবে না।

    ক্যামেরাম্যান মাহফুজুর রহমান বললেন, চা খান। রাগ কন্ট্রোলে রাখুন। আল্লাহপাক যা ঠিক করে রেখেছেন তারচেয়ে বেশি কিছু হবে না, কমও হবে না।

    চায়ে চুমুক দিয়ে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। জাহিদের শ্বশুরবাড়ির চায়ের মতো চা। মুখে দেওয়া যায় না (জাহিদের শ্বশুরবাড়ির চা আমি কখনো খাই নি। জাহিদ আমাকে বলেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ চা হয় তার শ্বশুরবাড়িতে)।

    আমার চা পানে বিঘ্ন ঘটল। মধ্যবয়স্ক টাকমাথার এক ভদ্রলোক উত্তেজিত ভঙ্গিতে এগিয়ে এলেন, সিলেটি ভাষায় বললেন, আপনারা সিলেটের ঐতিহ্য নষ্ট করছেন। জীবন থাকতে আমি সিলেটের ঐতিহ্য নষ্ট করতে দিব না।

    ভদ্রলোককে সমর্থন দেবার জন্যে সমবেত জনতার এক অংশ বলল, অয় অয়। (অয় শব্দটির বাংলা মানে হ্যাঁ।

    আমি বললাম, ঐতিহ্য কীভাবে নষ্ট করেছি? সিলেটে কি ছবির শুটিং হয় না?

    হয়। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষা করার পর হয়।

    সমবেত জনতা বলল, অয় অয়।

    আমি বললাম, কী ঐতিহ্য নষ্ট করেছি?

    স্টেশনের নাম টিলাগাঁও। আপনার সেই স্টেশনকে বানিয়েছেন সোহাগী। স্টেশনের ঐতিহ্য ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।

    সমবেত জনতা গর্জে উঠল, অয় অয়।

    আমি তাকিয়ে দেখি, ঢাকা থেকে তৈরি করে আনা সোহাগী নামফলক বিভিন্ন দিকে বসে গেছে।

    ভদ্রলোক বললেন, শুটিং যদি করতেই হয় টিলাগাঁও নামে করতে হবে।

    আমি বললাম, লেখক তার বইয়ে স্টেশনের নাম দিয়েছেন সোহাগী। লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য নাম দেয়া যাবে না। সোহাগী নামই ব্যবহার করতে হবে।

    লেখকের কাছ থেকে অনুমতি নেন। তাকে মোবাইল করেন।

    আমিই লেখক। আমি অনুমতি দিলাম না।

    আমার এই কথায় দর্শকদের এক অংশ হেসে ফেলল। ভদ্রলোক ছুটে বের হয়ে গেলেন।

    আমি ভাবছি, না জানি নতুন কী যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে। মাহফুজুর রহমান ফিসফিস করে বললেন, সব সাইকোলজি প্রেডিক্ট করা মুশকিল। কী হয় না হয় কে জানে। সোহাগী নামফলক তুলে দিন। আমি বললাম, না।

    ভদ্রলোক ফিরে এসেছেন। সঙ্গে আট ন বছরের দুটি শিশু। তারা আমার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে। আমি বললাম, এখানে চারদিন শুটিং করব। ছবি তোলার অনেক সময় পাবেন। আপাতত পাবলিক কন্ট্রোল করুন। ছবির কাজ যেন ঠিকমতো করতে পারি সেই ব্যবস্থা করেন। ভদ্রলোক বললেন, অয় অয়। এবং অতি ব্যস্ততার সঙ্গে জনগণকে সামলাতে লাগলেন। স্টেশনের ঐতিহ্যবিষয়ক জটিলতার এইখানেই সমাপ্তি।

    দুপুর একটার দিকে চ্যানেল আই-এর প্রোডাকশন কন্ট্রোলার এবং তার সহকারী এসে উপস্থিত হলো। প্রোডাকশন কন্ট্রোলারের নাম কামাল, অন্যজনের নাম ভুলে গেছি। অন্যজনের মাথায় টাক। তার চেহারা এবং আচার-আচরণ ধূর্ত প্রকৃতির।

    আমি বললাম, তোমরা এত দেরিতে এসেছ?

    স্যার, রাতে ঘুম হয় নাই। ঘুমাচ্ছিলাম।

    ছবির মতো বড় ব্যাপারের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলে?

    কামাল বলল, জি-না স্যার। এটাই আমার প্রথম চাকরি।

    আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। চ্যানেল আই-এর হাসান বলেছিল, স্যার, নিখুঁত ব্যবস্থা থাকবে। সব এক্সপার্ট লোকজন দেওয়া হবে। ক্যামেরা ঠিক হবার পর আপনাকে ডাকা হবে। আপনি শুধু বলবেন, ক্যামেরা। ক্যামেরা চালু হবে। আপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঝামেলামুক্ত রাখার দায়িত্ব আমার।

    আমি কামালকে বললাম, ছবির অতি জটিল এই কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা তোমাদের নেই। তোমাদেরকে দিয়ে আমার চলবে না। চ্যানেল আই এর একটি মাইক্রোবাস আমি দেখতে পাচ্ছি। এই মুহূর্তেই তোমরা এই মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় চলে যাবে। বাকি কাজ আমি আমার লোকজন দিয়ে করাব।

    দুজনই মনে হয় হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। একসঙ্গে বলল, জি আচ্ছা স্যার। ঢাকায় চলে যাচ্ছি।

    বলেই লম্বা লম্বা পা ফেলে উধাও। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম তারা চলে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে আড়ালে আবডালে উঁকি দিতে দেখা গেল। তাদের ডেকে আবার যে ধমকাব সে ইচ্ছা করছে না। কারণ প্রথমদিনেই তিনটা সিকোয়েন্স করেছি। প্রতিটি সিকোয়েন্স চমৎকার হয়েছে। আমার মন প্রফুল্ল। কী আর হবে রাগারাগি করে!

    .

    প্রথম শট

    ছবির প্রথম শট সব পরিচালকের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছবির কিছু কুসংস্কারের একটি হলো, প্রথম শট এক টেকে Ok হতে হয়। Ok হবার পর বিপুল করতালি, তারপরই যাত্রা শুরু। আমি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ বলেই প্রথম শটের পর যখন হাততালি হতে থাকে, তখন আমার চোখে পানি আসে। আমি ব্যস্ত খাকি চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টায়।

    আমার যেসব ছবিতে শাওন থাকে, তার প্রতিটির প্রথম শট তাকে নিয়ে করেছি। ব্যক্তিগত ভালোবাসা তার একটি কারণ। একই সঙ্গে প্রথম শট সে এক টেকে Ok করবেই এই বিশ্বাস। এই প্রথম আমার আছে জল ছবিতে শাওনকে বাদ দিয়ে প্রথম শটের জন্যে বেছে নিলাম সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশুশিল্পী ওয়াফাকে। প্রথম শটে শাওনকে বাদ দিয়েছি বলেই কেউ আবার ভেবে বসবেন না যে আমাদের ঝামেলা শুরু হয়েছে। অনেকদিন মানবজমিন পত্রিকায় আমার কোনো নিউজ যাচ্ছে না। এবার হয়তো যাবে, শাওনের সংসারে আগুন। অসহায় শিশু নিষাদের কাস্টডি কে পাবে?

    শাওনকে প্রথম শটে না নেয়ার কারণ তার সঙ্গে শিল্পীর মেকাপ শেষ হয়। নি। অনেক সময় লাগবে। এতক্ষণ অপেক্ষা করার অর্থ হয় না। কাজেই শিশুশিল্পী শুয়াফা। শটটা এরকম–সোহাগী স্টেশনে সবাই নেমেছে। অপেক্ষা করছে কখন জিপ আসবে। তারা রওনা হবে ডাকবাংলোর দিকে। এই অবস্থায় সবার দৃষ্টি এড়িয়ে নিশাতের কন্যা টুনটুনি (ওয়াফা) নেমে পড়েছে রেললাইনে। হাতে দুধের বোতল। মাঝে মাঝে বোতলে টান দিচ্ছে। মনের আনন্দে রেল লাইন ধরে হাঁটাহাঁটি করছে।

    শিশুশিল্পীদের নিয়ে কাজ করতে আমি অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এরা মিমিক করায় ওস্তাদ। অনেকটাই রোবটের মতো। যা বলে দেয়া হবে তাই করবে। এক চুল এদিক-ওদিক হবে না। আমি বললাম, ওয়াফা, অ্যাকশন বলার সঙ্গে সঙ্গে তুমি বোতল হাতে রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকবে। রেললাইনের তিনটা স্লিপার পার হবার পর থামবে। এইগুলিকে বলে স্লিপার। এক দুই তিন, এই জায়গায় থামবে। বোতলটা মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ দুধ খাবে। তারপর উল্টোদিকে ফিরে হাঁটা ধরবে। আমি Stop না বলা পর্যন্ত হাঁটতেই থাকবে। পারবে?

    পারব।

    ভুল হবে না?

    না।

    একবার করে দেখাও।

    সে করে দেখাল। নিখুঁতভাবে করল। তবে একবার ক্যামেরার দিকে তাকাল। ছবির ভাষায় বলা হয় False look. তাকে ভালোমতো বুঝিয়ে দেয়া হলো যেন ক্যামেরার দিকে না তাকায়।

    .

    ক্যামেরা চালু করে অ্যাকশান বললাম। ওয়াফা কোনোরকম ভুল ছাড়া শট Ok করল। তুমুল করতালি চলছে। আমি Stop বলতে ভুলে গেছি। ওয়াফা হেঁটেই যাচ্ছে। এত হৈচৈ হচ্ছে সে একবারও ফিরে তাকাচ্ছে না।

    শিশুশিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করানোর কিছু সমস্যাও আছে। একটা উল্লেখ করি। ওয়াফার একটা শট এরকম–গরুর গাড়ি করে তারা যাচ্ছে। সে আছে মায়ের সঙ্গে। হঠাৎ দেখল একদল অতিথি পাখি উড়ে যাচ্ছে। দেখেই সে বলল, মা, দেখো দেখো, Birds! আমি বুঝিয়ে দিলাম, অ্যাকশান বলা মাত্রই তুমি বলবে, মা, দেখো দেখো, Birds!

    আচ্ছা।

    অ্যাকশান বললাম, সে নিখুঁতভাবে বলল। শট শেষ হয়ে গেল। এরপর শুরু হলো বিপদ। অন্য সিকোয়েন্স হচ্ছে। যতবারই বলছি অ্যাকশান; ওয়াফা বলছে, মা, দেখো দেখো, Birds!

    আমি ভালোমতো বুঝলাম। বললাম, এখন থেকে অ্যাকশান বললে, তুমি শুধু মার দিকে তাকিয়ে থাকবে। মা কথা বলবে, তুমি শুনবে।

    আচ্ছা।

    আমি বললাম, অ্যাকশান! ওয়াফা যথারীতি বলল, মা, দেখো দেখো, Birds!

    .

    লাক্স সুন্দরী কথা

    লাক্স সুন্দরীর নাম মীম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম মেয়েটি মুসলমান। আলিফ লাম মীমের মীম থেকে তার নাম। মেয়ের মা বললেন, (গলা নামিয়ে) স্যার, আপনার মতো অনেকেই মনে করে আমরা মুসলমান। আসলে আমরা হিন্দু। মীমের আসল নাম বিদ্যা সিনহা সাহা। চ্যানেল আই এবং আমরা অনেক কায়দা করে তার আসল নাম গোপন রেখেছি। হিন্দু জানলে তো কেউ তারে ভোট দেবে না।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ স্যার।

    তুমি কি সবাইকে এইসব কথা এখন বলে বেড়াচ্ছ?

    সবাইকে বলি না স্যার। যারা আপন তাদের বলি।

    আমি মীমের মায়ের সরলতায় মুগ্ধ হলাম। মীম তার মার মতো সরল না, তবে জটিলও না। শিশুশিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় আদায়ের যে টেকনিক, আমি তার ক্ষেত্রেও সেই টেকনিক ব্যবহার করলাম। যা করতে বলা হবে অবিকল তাই করতে হবে। ডানে তাকাতে বললে ডানে তাকাবে। বামে তাকাতে বললে বামে। প্রতিটি step বলে দেওয়া।

    কয়েকবার রিহার্সেল করা হলো। সে ঠিকমতো পারল। যখন ক্যামেরা চালু করা হলো তখন আর পারল না। আমি বললাম, আবার যদি ভুল কর আছাড় দিয়ে ট্রেন লাইনে ফেলে দেব। শুরু হলো কান্নাকাটি। আমি বললাম, চোখ মুছে শট দেবার জন্যে তৈরি হও।

    মীমের কো-আর্টিস্ট জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এই পর্যায়ে এগিয়ে এলেন। তিনি আমাকে বললেন, হুমায়ুন! মেয়েটা কান্নাকাটি করছে। তাকে আধঘণ্টা সময় দিন। সে নিজেকে Compose করুক।

    আমি বললাম, না। আজ তাকে সময় দেওয়া হলে প্রতি শটেই সময় দিতে হবে। আজ যদি সে বের হয়ে আসে পরে আর সমস্যা হবে না।

    আমি শট নিলাম। মীম উতরে গেল। তাকে নিয়েই আমার সব টেনশন। অভিনয়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই ছবির এত বড় এবং এত জটিল চরিত্রে কাজ করা কঠিন বিষয়। দিনের শেষে আমি বলব, ছবি দেখে কেউ বলতে পারবে না এটা মেয়েটার প্রথম কাজ।

    মেয়েটার বেশ কিছু প্লাসপয়েন্ট আছে—

    ১. সে ক্যামেরা ফ্রি।

    ২. সে ধৰ্মক ফ্রি। (ধমক খেয়ে কাজ করতে পারে)

    ৩. সে ভালো অনুকরণ করতে পারে।

    তবে, তাকে প্রতিটি অংশ ধরিয়ে না দিলে সে কাজ করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। আমার আছে জল ছবিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতাটা সে কাজে লাগাতে পারে কি না তাও দেখার বিষয় আছে। যদি কাজে লাগাতে পারে তাহলে তার ভবিষ্যৎ ভালো।

    তাকে ক্ষতি করেছে লাক্স সুন্দরী গ্রুমিং সেশন নামক কর্মকাণ্ড। তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে–জীবনের সার কথা একটাই, নিজেকে সুন্দর দেখানো। সাজগোজেই সব।

    মেকাপম্যান মেকাপ দিয়েছে সে চলে গেছে নিজের ঘরে। বাড়তি কিছু মেকাপ দেওয়া। আরো সুন্দর হবার চেষ্টা। তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। একদিন ডেকে বললাম, মীম! আমেরিকায় সবচে বেশি সাজগোজ করে বুড়িরী। ঠোঁটে রং, গালে রঙ, চুলে রঙ। তারপরেই আসে মধ্যবয়স্করা। তোমার মতো বয়েসী মেয়েরা কোনো সাজসজ্জাই করে না। তারা জানে বয়সের সৌন্দর্যেই তারা সুন্দর। তুমি যতই সাজবে ততই তোমাকে কৃত্রিম লাগবে। আমার আছে জল ছবির নায়িকা দিলশাদের মধ্যে কোনো কৃত্রিমত্তা নেই। সে জীবনের জটিলতা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। সে কিন্তু সাজতো না। বুঝেছ?

    বুঝেছি স্যার।

    এরপর থেকে মেকাপম্যান যতটুকু মেকাপ দেবে তার বেশি কিছু করবে না। ঠিক আছে?

    জি স্যার, ঠিক আছে।

    বলেই সে ঘরে ঢুকে গেল। সারা মুখে আরো বাড়তি কিছু রঙচঙ দিতে, চোখ আঁকতে।

    .

    মিউটিনি অন দ্য বাউন্টি

    শুটিং চলছে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহের বীজ দানা বাঁধছে। দুটি দল তৈরি হয়েছে। একদিকে চ্যানেল আই অন্যদিকে গোটা শুটিং দল। শুটিং দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে এফডিসির কামরুল। তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে অনেকেই আছে। পরোক্ষ দলের একজন নুহাশ চলচ্চিত্রের জুয়েল রানা।

    চ্যানেল আই নেতৃত্ববিহীন। চ্যানেল আই-এর প্রতি কামাল ভেজিটেবল টাইপ চরিত্র। সে কর্মকাণ্ড গোছানো নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। তার সহকারীর (নাম মনে পড়েছে, হীরন) সব কর্মকাণ্ডই অস্পষ্ট। স্টিল চিত্রগ্রাহক নাসির চ্যানেল আই-এর। সে গুপ্তচর গোছের। তার কাজ চ্যানেল আই-এর ঢাকা অফিসকে মোবাইলে খবর সরবরাহ করা (ভুল খবর)।

    এক ভোরে কামরুল উপস্থিত। দারুণ উত্তেজিত ভঙ্গিতে জানাল, সে পরিষ্কার বুঝতে পারছে কাজ শেষ হলে চ্যানেল আই কাউকে টাকাপয়সা দেবে না।

    আমি বললাম, চ্যানেল আই কোনো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান না। বিশাল প্রতিষ্ঠান। কমিটমেন্টের টাকা তারা দেবে না এটা কখনো হবে না।

    কামরুল নানান উদাহরণ দিতে লাগল। এক পর্যায়ে আমি বললাম, চ্যানেল আই টাকা না দিলে আমি নিজের পকেট থেকে দেব। এখন কি ঠিক আছে?

    জি স্যার, ঠিক আছে।

    আমি আর কোনো সমস্যার কথা শুনতে চাই না।

    স্যার আর শুনবেন না।

    এর মধ্যে ইউরোপ থেকে হাসান ঢাকা ফিরেছে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। হাসান চলে এসেছে, আর সমস্যা হবে না। দূরে বসেও সব ঠিকঠাক করার জাদুকরী ক্ষমতা এই ছেলের আছে।

    হাসান দেশে ফেরায় সমস্যা কমল না, আরো বাড়ল। সে একদিন টেলিফোন করে (যথেষ্ট বিনয় এবং ভদ্রতার সঙ্গেই) বলল, ভাবি, শুটিং-এ এই অল্প কিছু দিনেই প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেছে। সাগর ভাই চিন্তিত। আপনি কি ব্যাপারটা দেখবেন?

    শাওনের কাছ থেকে খবরটা পেয়ে খুব মন খারাপ হলো। ছবির খরচের পুরোটাই হচ্ছে চ্যানেল আই-এর হাতে। সেখানে খবরদারির কিছু নেই। তাহলে হাসানের কথার অর্থ কি এই যে, আমার কারণে অতিরিক্ত খরচের ব্যাপারটা ঘটছে।

    দারুচিনি দ্বীপে শুটিং-এর জন্যে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমি হেলিকপ্টার ব্যবহার করি নি, চারটা গরুর গাড়ি গাজীপুর থেকে সিলেট নিয়ে গিয়েছি। কারণ সিলেটে গরুর গাড়ি নেই।

    হোটেল শেরাটনে ছবির মহরত অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ল। সেই অনুষ্ঠানে ইউনিলিভারের কর্মকর্তা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ভালো ছবির নির্মাণে সব রকম আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এটা কি কথার কথা?

    সাধারণ একটি বিজ্ঞাপন তৈরির বাজেটে কি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হয়?

    চ্যানেল আই প্রতিবছর বেশ কিছু ছবি বানাচ্ছে। ছবির বাজেট হাস্যকর। পরিচালকরা চুক্তিভিত্তিক। মহানন্দে সেই বাজেটেই ছবি বানিয়ে দিচ্ছেন। এর থেকেই হয়তোবা চ্যানেল আই-এর ধারণা হয়েছে–এই বাজেটেই ছবি হয়।

    অনেক আগে বানানো শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে আমি খরচ করেছিলাম প্রায় এক কোটি টাকা (সে ছবিতে অবশ্যি আরো কিছু সমস্যা ছিল)।

    চন্দ্রকথা ছবিতে ৭৬ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। অনেক টাকা চলে গেছে সেট বানানোতে।

    সব কিছুর দাম হুহু করে বাড়ছে, সেখানে কী করে চ্যানেল আই-এর বাজেটে ছবি হবে?

    আমি কোনো পরামর্শদাতা না। তারপরেও গায়ে পড়ে ছোট্ট পরামর্শ দিচ্ছি। একজন লাক্স সুন্দরীর পুরস্কার ছবির নায়িকা হওয়া। ব্যাপারটা হাস্যকর। নায়িকা হওয়া অর্জনের বিষয়, পুরস্কারের বিষয় না। তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত নির্বাচিত লাক্স সুন্দরী নাটক করবে, টেলিফিল্ম করবে। এদের ভেতর থেকে অভিনয়ে নিপুণ একজনকে নিয়ে প্রতি চার বছর পর ভালো বাজেটে একটা ছবি হবে।

    বুঝতে পারছি আমি কোনো কাজের সাজেশন দিচ্ছি না। বর্তমান পৃথিবীর চালিকাশক্তি অর্থ। আমার আছে জল-এর বাইরে পড়ে না। ছবির অর্থের ব্যাপারটা ফয়সালা করবেন ইউনিলিভার, এশিয়াটিক এবং চ্যানেল আই। তারা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক বিষয়টি বেছে নেবেন। ছবি কী হবে না হবে তা অনেক পরের ব্যাপার।

    তবে আমার শিক্ষা সফর সম্পন্ন।

    .

    কুশপুত্তলিকা দাহ বিষয়ক জটিলতা

    বহুব্রীহি নামের একটা কমেডি ধাঁচের নাটক একবার বানিয়েছিলাম। সেই নাটকে একজন বোকা ডাক্তার ছিলেন। নাটক দেখে ডাক্তাররা এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা দারুণ ক্ষেপল। হয়তো তাদের ধারণা বাংলাদেশে কোনো বোকা ডাক্তার নেই। ডাক্তারদের এসোসিয়েশন (বিএমএ বা এই ধরনের কিছু) থেকে সিদ্ধান্ত হলো (!) যে, হুমায়ুন আহমেদ এবং তার পরিবারের কাউকে ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবা দেবেন না! এই সময় আমার ছোট মেয়ে বিপাশার প্রচণ্ড দাঁতে ব্যথা। সে কাদঁতে কাঁদতে বলল, বাবা ডাক্তাররা তো আমার ব্যথা কমাবে না। এখন আমি কী করব?

    আমি মেয়েকে কোলে নিয়ে গেলাম ডাক্তার রতনের কাছে (রতন ডেন্টাল ক্লিনিকের ডাক্তার রতন। তখন তিনি বোধহয় বিকল্প ডেন্টাল ক্লিনিকে ছিলেন, ঠিক মনে পড়ছে না) ডাক্তার রতনকে বললাম, আমার মেয়েটার প্রচণ্ড দাঁতে ব্যথা। আপনি কি তার চিকিৎসা করবেন না-কি তাকে নিয়ে দেশের বাইরে যেতে হবে?

    ডাক্তার রতন বললেন, মা আসো আমার কোলে আসো। আগে কোলে নিয়ে আদর করি তারপর চিকিৎসা।

    তখনকার সেই অদ্ভুত সময়ে চারদিকে আমার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হতে লাগল এবং আমার লেখা বইয়ে অগ্নিসংযোগ হতে লাগল। আমি খুবই মজা পেলাম।

    বহুব্রীহির আগে এইসব দিনরাত্রি নাটকে টুনিকে মেরে ফেলার জন্যে আমার জেলা ময়মনসিংহ শহরেও কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল।

    কুশপুত্তলিকা দাহের ব্যাপারটা সে কারণে আমার মাথার ভেতর ঢুকে আছে।

    যখন খবর পেলাম চ্যানেল আই-এর হাসান আসছে সিলেটে আমার সঙ্গে দেখা করতে, তখন ভাবলাম মজা করা যাক–চ্যানেল আই-এর বিরুদ্ধে আমরা স্লোগান দেব এবং হাসানের একটা কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে।

    সবাই এই আইডিয়ায় যথেষ্টই মজা পেল। জাহিদ বলল, শহীদ মিনারের সামনে একবার তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল। কারণ সে একটা সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিল।

    লাউয়াছড়ার গহীন অরণ্যে শুটিং হচ্ছে। হাসান শুটিং দেখতে গেল। শুটিং এর শেষে আমরা যথেষ্ট আনন্দ এবং হাততালির মধ্যে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করলাম। হাসান হাসছে এবং হাততালি দিচ্ছে। হাসানের এই আনন্দ যে অভিনয় তখন বুঝতে পারি নি। আমাকে পরে জানানো হয়েছে, তার অধস্তন কর্মচারীদের সামনে তাকে অপমান করা হয়েছে। সে দারুণ আহত।

    সমস্যা তার না, সমস্যা আমার। জীবনের হাস্যকর দিকটাই সবসময় আমার চোখে পড়ে। আমি রসিকতা করার চেষ্টা করি। এই রসিকতায় অন্যরা কষ্ট পাবে। এটা চট করে মাথায় আসে না। যখন বুঝতে পারি তখন আর শোধরানোর পথ থাকে না। আমার মনে থাকে না যে রসিকতা বন্ধুদের সঙ্গে করা যায়, কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে করা যায় না। হাসানকে তরুণ বন্ধুই ভেবেছি, তাকে চ্যানেল আই-এর কর্তাব্যক্তি কখনো ভাবি নি। হাসানের কাছে Sorry বলা ছাড়া আর কী বলব? তবে হাসানের মনতুষ্টির জন্যে আমি নিজেই নিজের কুশপুত্তলিকা দাহের ব্যবস্থা করেছি। অনুষ্ঠানটি হবে নুহাশ পল্লীতে। আমার স্টাফদের সামনে। অনুষ্ঠানে আমি ইউনিলিভার, এশিয়াটিক ও চ্যানেল আই-এর কর্তাব্যক্তিদের (!) এবং আমার আছে জল-এর সকল কুশিলবদের নিমন্ত্রণ করলাম। আমার ধারণা অনুষ্ঠানটি যথেষ্ট আনন্দের হবে।

    .

    মজাদার ঘটনা

    ছবির বিষয়ে যখনই কোনো সাংবাদিক রিপোর্ট করতে যান তখন তিনি গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করেন, ছবিতে মজাদার কী ঘটনা ঘটেছে? আমাকে এ রকম কোনো প্রশ্ন এখনো কেউ করে নি। আগ বাড়িয়ে নিজেই বলছি।

    ১

    প্রাচীন এক বটগাছের নিচে শুটিং হচ্ছে। মা (মুনমুন) এবং মেয়ে (শাওন) বটগাছের নিচে বসে কথা বলছে। মাস্টার শট নেয়া হয়ে গেছে। হঠাৎ ক্যামেরাম্যান মাহফুজ আমাকে ইশারায় একটা জিনিস দেখালেন। আমি হতভম্ব হয়ে দেখি দুই অভিনেত্রীর মাথার চার-পাঁচ ফুট ওপরে বটগাছের এক গর্ত থেকে একটি সাপ উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যে-কোনো সময় সে গাছ বেয়ে নিচে নেমে আসবে এবং দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবে।

    আমি ইশারায় মাহফুজকে বললাম, শুটিং বন্ধ করার দরকার নেই। শুটিং চলুক। সাপ যদি সত্যি নেমে আসে তখন দেখা যাবে। এই একটি দৃশ্যে আমি দুই অভিনেত্রী কী অভিনয় করছে তা দেখি নি, সারাক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সাপের দিকে।

    ২

    এই ছবিতে অনেকগুলি গান আছে। গানের কোরিওগ্রাফিতে সাহায্য করার জন্যে যে ছেলেটি আছে তার নাম রহিম। কেউ তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে অবশ্যি রহিম বলে না, বলে রয়। রহিম নামে মনে হয় তার মর্যাদা ঠিকমতো প্রকাশ পায় না। যাই হোক, একদিন দেখি সে ব্যস্ত হয়ে নিষাদকে নাচ দেখাচ্ছে। নিষাদের সামনে মুদ্রা করছে, কোমর দোলাচ্ছে। আমি বললাম, রয় শোন। আমার ছেলে বড় হয়ে গোঁফ কামিয়ে পুরুষ নৃত্যশিল্পী হবে এটা আমার ইচ্ছা না। তুমি এই কাজটা করবে না।

    রয় বলল, জি আচ্ছা স্যার।

    সে মুখে বলল, জি আচ্ছা কিন্তু তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে লাগল। নিষাদ মনে হয় ব্যাপারটায় মজা পেল। রয়কে দেখলেই সে হাত নাড়ায় এবং কোমর দোলানোর চেষ্টা করে।

    শুটিং অনেক দিন হলো শেষ হয়েছে, রয়ের ভূত নিষাদের ঘাড় থেকে নামে নি। কোথাও গান হলেই সে হাত নাড়ে এবং কোমর দোলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আছাড় খায়।

    .

    ৩

    আমরা তিনটা জেনারেটার নিয়ে গিয়েছিলাম। জেনারেটারের একজন এসে বলল, তিনটা জেনারেটারের একটাতে ভূতের আছড় হয়েছে। এখন কী করা?

    আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, জেনারেটরে ভূতের আছড় মানে?

    সে বলল, যে-ই জেনারেটারের আশেপাশে যাচ্ছে সে-ই আহত হচ্ছে। ছয় থেকে সাতজন বিনা কারণে আহত।

    আর কিছু?

    ক্যামেরা যখন বন্ধ থাকে তখন ভোল্টেজ ঠিক থাকে কিন্তু ক্যামেরা চালু করলেই ভোল্টেজ আপ ডাউন হয়।

    ভূত তাড়ানোর কী ব্যবস্থা করতে হবে সেটা বলো।

    মুনসি মওলানা এনে ফুঁ দেওয়াতে হবে।

    মুনসি মাওলানা খবর দিয়ে আনো।

    .

    হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের মাজার জিয়ারত

    আমরা যেখানে শুটিং করছি সেখান থেকে হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের দরগা এক-দেড় ঘণ্টার পথ। একদিন শুটিং বন্ধ রেখে দলবেঁধে রওনা হলাম মাজার জিয়ারতে। নিষাদকে পায়জামা-পাঞ্জাবি এবং টুপি পরানো হলো। তাকেও যথেষ্ট উৎসাহী মনে হলো।

    নিষাদকে কোলে নিয়ে মাজার শরীফের দিকে যাচ্ছি, আমাকে জানানো হলো–শিশুদের প্রবেশ নিষেধ।

    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কেন?

    মেয়েশিশু তো কোনোক্রমেই ঢুকতে পারবে না। পুরুষশিশুরাও নিজে নিজে হাঁটতে না পারা পর্যন্ত ঢুকতে পারবে না।

    নিষাদ হাঁটার পরীক্ষা দিল। তিন-চার কদম নিজে হেঁটে থপ করে পড়ে গেল।

    নিতান্ত অনিচ্ছায় নিষাদকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হলো। আমি ভাবছি, হযরত শাহজালাল (রাঃ) কি শিশুদের বিষয়ে এই নিষেধাজ্ঞা নিজে দিয়ে গেছেন? না-কি দরগার লোকজন এইসব অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছেন? আমাদের নবীজি যখন নামাজ পড়তেন তখন তাঁর গলা ধরে ঝুলত তাঁর নাতিরা।

    হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের মতো মহামানব মেয়েশিশু এবং পুরুষশিশুর মধ্যে ভেদাভেদ করবেন? তাদের কাছে আসতে দেবেন না? দরগার সেবায়েতরা একটি তথ্য ভুলে গেলেও হযরত শাহজালাল (রঃ) অবশ্যই কখনো ভুলেন না যে, তাঁরও জন্ম হয়েছিল এক মায়েরই গর্ভে। মেয়েরা কেন অচ্ছুৎ হবে?

    .

    পাদটিকা

    ছবি শেষ। আমি সাড়ে তিন বছর বয়েসী অভিনেতা ওয়াফাকে বললাম, ওয়াফা! সবচে ভালো অভিনয় কে করেছে?

    ওয়াফা বলল, আমি।

    আমার আরেক শিশুশিল্পী মালিহাকে (বয়স চার) জিজ্ঞাসা করলাম, ভেবে চিন্তে বলো। এই ছবিতে সবচে ভালো অভিনয় কে করেছে?

    মালিহা অনেকক্ষণ চিন্তা করে বলল, স্যার আপনি।

    .

    একজনকে বিশেষ ধন্যবাদ

    সেই একজন শাওন। বিশেষ ধন্যবাদের কারণ ব্যাখ্যা করি। আমার আছে জল ছবির কোরিওগ্রাফারের নাম রতন। রতন ছবি শুরু হবার সাতদিন আগে জানাল সে কাজ করবে না। আমি শাওনকে সেই দায়িত্ব দিলাম।

    সে বলল, আমি যখন অভিনয় করি তখন অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি না।

    আমি বললাম, পারতে হবে।

    কোরিওগ্রাফির কাজটি সে করেছে। দর্শক দেখবেন কত ভালো করেছে।

    একই সঙ্গে মীমকে অভিনয় করার প্রতিটি বিষয় ধৈর্য ধরে দেখিয়েও দিয়েছে। তার একটাই কথা, মীম খারাপ করলে সে একাই সবাইকে টেনে নিচে নামিয়ে আনবে।

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১৯৭১ – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article সকল কাঁটা ধন্য করে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }