Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কাদা kada

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প8 Mins Read0

    একঘেয়ে গ্রামজীবনের মধ্যে হঠাৎ উৎসাহের উদয় হল আমাদের পাশের বাড়ির শামাকাকার চিঠির বিষয়ে। শামাকাকা আমার কাকা হন, অবিশ্রাম গ্রামস্থেক। শামাকাকার বয়স কত তা জানি না, তিনি নাকি কলেজ পড়েন কলকাতায় না কোথায়। গ্রামে এসে মাঝে মাঝে দেখতে পাই।

    বিয়ে হবে আমাদের গ্রামের কাছে নসরাপুরে। নসরাপুর গ্রামের বীরেনের ভাগ্নির সঙ্গে। বীরেনের ভাগ্নিকে দেখেছি, বুড়োমানুষ, ঐ গ্রামেরই পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা। আমাদের গাঁয়ে এসেছিলেনও বারকয়েক। বিয়ে হবে সামনের উৎসবের দিন।

    উৎসবের দিন ঠিক করলাম একটা উৎসব করতে হবে এই বিয়ের দিন। আমার উৎসাহটা সবচেয়ে বেশি। আমি ভেবেছি দক্ষিণ মাঠের বেলের ধার থেকে কতগুলো পাকাটি নিয়ে এলাম এবং পথের ধারের গাছের একগাছা কেটে পাকাটি উনুনের ডালের ছাটা দিয়ে বাঁধলাম।

    হরি জাঠামশায় দেখে বললেন—ও কী হচ্ছে?

    বড় বড় মাটের কাঁচের পরকলা বসানো চশমার ভিতর দিয়ে দেখে হরি জাঠামশায় আমার দিকে কটমট করে তাকালেন। ভয়ে ভয়ে গাছ থেকে নেমে পড়লাম।

    —বলি—ও—এই—

    —কী?

    —বাজি এলো করবে শামাকাকার বিয়েতে, তাই পাকাটি বাঁধছি।

    —ইঃ, যত ছেলেমানুষি! এই একটা সস্তা পাকাটি উড়লে এলো হবে। কতগুলো উড়বে ওটা? যতগুলো হয়।

    —ছাই হবে! বুদ্ধি কত! ও কখনো উড়বে?

    হরি জাঠামশায় চলে গেলেন। আমার রাগ হল মনে মনে। উনি সব জানেন কিনা? পাকাটি উড়বে না তবে কী উড়বে?

    যেমন বিয়ের দিন এসে পড়ল। যেদিন বিয়ের বর রওনা হয়ে চলে গেল, সেদিন পাকাটি উড়াতে সুদীপ সতু ও হিমু বারণ করল—আজ উড়লে কী হবে? যেদিন বর আসবে বউ নিয়ে, সেদিন উড়লে দিবি। দেখাবে ভালো। বিয়ের বরযাত্রী গেল গাঁসুদ্ধ ঝঁঝটিয়ে। কিন্তু আমার যে অত উৎসাহ, আমারই যাওয়া হল না। কেন যে যাওয়া হল না, কী জানি! বাবা গেলেন অথচ আমায় নিয়ে গেলেন না।

    তার জন্য কোনো কাণ্ডকারখানা করলাম না। খাওয়ার ওপর আমার বিশেষ কোনো লাভ নেই। খেয়ে আমি সহজে পারিনি, পেটের অসুখ করে। ওই জন্যই বোধ হয় বাবা আমায় নিয়ে গেলেন না, কে জানে?

    মঙ্গলবার সকালে আগে বর-বউ আসবে, বরযাত্রীরা ফিরে এসে বলে। আমি ঠিক করলাম যেমন ওরা আসবে, অমনি যে পথে আসবে ওরা, সে পথের দুধারের গাছ যত পাকাটি বেঁধেছি, সবগুলো উড়াবো।

    কেবল ঘর-বার করছি, একে ওকে কেবল জিজ্ঞাস করছি, কখন বর আসবে? বলা যায়-যায়। এমন সময় নীলু এসে বলে শীঘ্রই চল—বউ এসেছে—

    আমি বললাম—কে বলে?

    নীলু আমার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চলল। গায়লাপাড়ার মোড়ে গিয়ে বাজনার শব্দ পাওয়া গেল যেথা। বললাম—কোথায় রে?

    —তা বুনোপাড়ার কাছে হবে। অনেক দূর এখনো।

    দেখতে দেখতে শামাকাকার ঘোড়ার গাড়ি কাছে এসে গেল। আমরা ঘোড়ার গাড়ি বিশেষ দেখিনি, দু-একখানা কালোভেজে শহর থেকে এসে এ গ্রামে ঢোকে, তাও আমাদের জীবনে সবসুদ্ধু মিলে বার-দুই দেখেছি মাত্র।

    ছেলের দল কলরব করে উঠল—ওই যে ঘোড়ার গাড়ি!

    সেসে বর-বউসুদ্ধু গাড়ি কাছে এসে পড়ল।

    এইবার কিন্তু বাধল মুশকিল। পাকা রাস্তা ছেড়ে খানিকটা কাঁচা রাস্তায় গেল আমাদের গ্রাম। শ্রাবণ মাসের শেষ, বজায় কাদা হয়েছে কাঁচা রাস্তায়। বিশেষ করে একটা জায়গায় হাবড় কাদা—সেটার নাম যাঁড়াতলার দ’। গাড়ি সেখানে এসে সেই হাবড়ে পড়ে পুঁতে গেল। মোষের গাড়ি যে গাড়ি সে কাদায় পড়লে ওঠে না, শ্রেণীর ঘোড়ার সাধ্যি কী সে হাবড় থেকে গাড়ি ওঠায়?

    ননী বলে—এ রামকাদা থেকে বাছাধনের আর উঠতে হবে না! ও রাগা ঘানা ঘোড়ার কেঁচে এই হাবড় ঠেলে ওঠা!

    তখন সবাই মিলে চাকা ঠেলতে লাগলাম। গাড়ি চলে এলো শামাকাকাদের বাড়ি। শামাকাকার মা বউ বরণ করে ঘরে তুললেন।

    তখনও সকাল হয়নি। বর্ষাকাল, রোদ আছে কি নেই বোঝা যায় না—যদিও তিন-চারদিন বৃষ্টি হয়নি। আমাদের আকর্ষণের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোড়ার গাড়িখানা। সেখানা বকুলতলায় দাঁড়িয়ে, তার চারপাশে ঘিরে গ্রামের যত ছেলেপেলে। গাড়োয়ান বলেছে, যদি আমরা ষাঁড়াতলার দ’-এর হাবড় পর্যন্ত গিয়ে চাকা ঠেলে গাড়ি উঠিয়ে দিতে রাজি হই, তবে সে আমাদের গাড়িতে চড়তে দেবে পাকা রাস্তা পর্যন্ত।

    আমরা সবাই হৈ-হৈ করে গাড়িতে উঠলাম, কতক গাড়ির ছাদে, কতক পেছনে, কতক ভেতরে। ষাঁড়াতলার দ’-এর কাদা থেকে সবাই মিলে ঠেলে গাড়ি উঠিয়ে দিলাম, তার বদলে পাকা রাস্তা পর্যন্ত আমাদের গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে গেল—কী মজা!

    আমরা যখন পাকা রাস্তায়, তখন সকাল হয়ে অন্ধকার নামল। ননী বলে—গা ধোবা কোথায়? সেটা অত কাদা!

    আমাকে বলে—মশাল জ্বালবি। চুপ কর কে ডাকছে!

    সর্বনাশ! আমার বাবার গলা।

    সকাল হয়ে গিয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাবা আমায় খুঁজতে বেরিয়েছেন। তিনিই ডাকাডাকি করছেন। সকালের সময় বাড়ি ফিরিনি, বাবা ডাকতে বেরিয়েছেন।

    ননী বলে—এলো দিবি গাছ গাছ?

    আর এলো! আমার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। বাবা কাছে এসে পড়েছেন ডাকতে ডাকতে।

    আমি উত্তর দিলাম—যা-ই-ই—

    এই সকালে সারা গায়ে কাদা মেখে আমি ভূত হয়ে আছি। আপাদমস্তক কাদা। চালাক গাড়োয়ান একটুখানি গাড়িতে চড়বার লোভ দেখিয়ে কাজ সেরিয়ে চলে গিয়েছে। এখন আমায় ঠকায় কে?

    বাবা এসে আমার কান ধরলেন। বললেন, “হতভাগা বাঁদর, পড়া নেই, শোনা নেই—এত রাত পর্যন্ত বাঁদরের দলের সঙ্গে মিশে থাকিস—এ কী? গায়ে এত কাদা কেন?”

    আমি কাঁদো-কাঁদো সুরে বললাম, “এই গাড়োয়ান বলল—আমার গাড়িটা একটু ঠেলে দাও—ভয়ংকর কাদা—তাই সবাই মিলে—আমি আসতে চাইনি… আমায় ওরা নিয়ে এল—ওই ননী, নীলু, শশী—”

    বলতে বলতে সাক্ষ্যমাণের চোখে সুদীপদের দিকে ফিরে চাইতে গিয়ে দেখি জনপ্রাণী সেখানে নেই। কে কোথায় দিয়ে সরে পড়েছে এরই মধ্যে।

    বাবা বললেন, “তোমার দোষ নেই? তোমাকে সবাই নিয়ে গিয়েছিল? তুমি বুড়ো দামড়া কিছু জানো না—না? ঘোড়ার গাড়িতে না চড়লে তোমার—”

    কথা শেষ না করেই দুড়দাড় মার। চড় ও কিল। বিষম মার। চোখে সর্ষের ফুল।

    কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এলাম বাবার আগে আগে। মা বললেন, “আচ্ছা তোমার কী ভীমরতি হয়েছে না কী? এই ভোর সকালে ছেলেটাকে অমন ভূতান্তি মার—ওমা, তা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে না হয় গিয়েছিল একটু, আজ একটা আনন্দের দিন ওদের, তোমার মতো বুড়ো তা ওরা নয়—ছিঃ ছিঃ—নে, এদিকে সরে আয়, খুব এমাদ করছে—এসো—”

    সে রাতে পাকাটি জ্বালিয়ে রাশনাই করা আমার দ্বারা আর সম্ভব হয়নি।

    এর ত্রিশ বছর পরের কথা।

    আমি কলকাতায় চাকরি করি। বর্ষাকাল। মহাকুমার স্টেশনে নেমে বাড়ি যাবো, এমন সময় শামাকাকার ছেলের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হল।

    শামাকাকা মারা গিয়েছেন আজ দশ-বারো বছর, গ্রাম ছেড়ে তাঁর ছেলেরা আজকাল শহরে বাস করে, শামাকাকার বড় ছেলেটি এখানে চাকরি করে। ওর নাম অশ্বিন।

    অশ্বিন বলল, “বাড়ি যাচ্ছেন দাদা? দীপ্তির বিয়ে পরশু। আপনাকে আসতেই হবে অবিশ্যি অবিশ্যি। আসুন না একবার আমাদের বাসায়—”

    গেলাম। দীপ্তি ষোল-সতেরো বছরের সুদ্ধ মেয়ে। আমায় দেখে খুশি হয়ে এগিয়ে এল। বললাম, “কোথায় তোর বিয়ে হচ্ছে রে দীপ্তি?”

    দীপ্তি মুখভঙ্গি করে বলল, “আহা-হা!”

    —তার মানে?

    —তার মানে আপনার মুশকিল।

    —কথার কী যে ছিরি!

    —হবে না ছিরি? আপনার কথার ছিরিই বা কী এমন?

    —বল না কোথায় বিয়ে হচ্ছে?

    —ফের?

    দাঁড়াও দীপ্তি, চালাকি যদি করবি—বল, কথার উত্তর দে—

    দীপ্তি আঁচল নাড়তে নাড়তে বলল, “আহা, যেন জানেন না আর কী!”

    আমি বিস্ময়ের সুরে বললাম, “সেখানে নাকি? সে-ই?”

    —হ্যাঁ।

    —ভালো। খুশি হলাম।

    —খুশি কিসের?

    —আবার চালাকি করবি দীপা! হাসিনি খুশি তুই?

    —ওরকম বলো—আমি মরব আপনি খেয়ে। সত্যি বলছি।

    —আচ্ছা যা, আর কিছু বলবি না। এখন একটু চা করে খাওয়াবি, না এমনি চলে যাবো?

    —খাওয়াবো, ওমা—ঘোড়ার জিন দিয়ে যে! এমন তা কখনো দেখিনি—

    —দেখিসনি, দেখলি। নিয়ে আয় চা।

    —খাবেন কিছু?

    —তোর খুশি।

    একটু পরে চা ও খাবার হাতে দীপ্তি এসে ঢুকে বলল, “সামবারে কিন্তু আসতে হবে। আপনাকে থাকতে বলতাম এখানে, কিন্তু বলব না। বাড়িতে বড্ড ভিড়। আপনার কষ্ট হবে। সামবার আসবেন অবিশ্যি অবিশ্যি—”

    —আচ্ছা।

    —কথা দিলেন?

    —নিশ্চয়। বরযাত্রী না কনেযাত্রী?

    —দুই-ই। আপনাদের গাঁয়ের যখন বর, তখন বরযাত্রী তা হতেই হবে।

    —কনেযাত্রী কার অনুরোধে?

    —আমার।

    —আচ্ছা আসি—

    —ঠিক আসবেন পরশু?

    —ঠিক।

    —ঠিক?

    —ঠিক।

    দীপ্তি থাম ধরে দাঁড়িয়ে রইল যখন আমি চলে এসে রাস্তার ওপর উঠছি।

    যার সঙ্গে দীপ্তির বিবাহ, সে আমাদের গ্রামেরই ছেলে বটে কিন্তু তারা পশ্চিমবাসী। দেশের বাড়িতে খুড়তুতো-ভাইরা থাকে। এই বিবাহ উপলক্ষে বহুকাল পরে ওরা সবাই দেশে এসেছে, বিয়ের পরই আবার চলে যাবে। গ্রাম আমিও গেলাম অনেকদিন পরে, আমিও গ্রাম ছেড়েছি দশ-পনেরো বছর। গ্রামে যেতেই ওদের দল এসে আমায় বরযাত্রী হওয়ার নিমন্ত্রণ করে গেল।

    বিবাহের দিন এসে পড়ল।

    বিবাহের লগ্ন সকালের অন্ধকারেই।

    অন্যান্য বরযাত্রী কতক নৌকায়, কতক গরুর গাড়িতে রওনা হয়ে কনের বাড়ি চলে গেল। শহর থেকে একখানা ঘোড়ার গাড়ি এসেছে, সেখানাতে বর, বরকর্তা, পুরোহিত ও আমি যাবার তোড়জোড় হয়েছে।

    বর বলল, “নিতাইদা চা খেয়ে নাও, আর বেশি দেরি না হয়, বাবাকে বলো—তুমিও সব সেরে নাও!”

    —সে ভাবনা তোমার কেন, যা করবার করছি।

    —শোনো একটা কথা। দীপ্তি তোমায় কিছু বলেছিল?

    —না।

    —বিয়ের বিষয়ে?

    —না।

    —দেখা হয়নি আসবার দিন?

    —না। কেন?

    —তাই জিজ্ঞাস করছি।

    সকালের অতি দেরি আছে, তখন আমরা ঘোড়ার গাড়িতে গিয়ে উঠলাম, গাড়িও ছেড়ে দিল।

    আমাদের পেছনে শাঁখ বাজতে লাগল, ঢোল পড়তে লাগল।

    গাড়ি গাঁ ছেড়ে খানিকদূর যেতে না যেতে অন্ধকার নামল, সেসে ষাঁড়াতলার দ’এর কাদায় গিয়ে পড়ল গাড়ি। কিছুতেই আর ওঠে না। ঝাড়া পনেরো মিনিট বৃথা চেষ্টার পর গাড়োয়ান বলল, “বাবু, একটু নামতে হবে। খালি গাড়ি তখন নিয়ে গিয়েছিলাম, এখন ভারী গাড়ি যাবে না। আপনারা একটু নামুন—”

    অগত্যা নামা গেল—কিন্তু তখন গাড়ির চার চাকা যা পুঁতবার পুঁতে গিয়েছে।

    ঘোড়াকে চাবুক মারলে কী হবে, গাড়ি নড়ে না!

    তখন আমি আর বরকর্তা দুজনে সেই কাদায় নেমে চাকা ঠেললাম। কোনো লোক নেই। বরকে বা পুরোহিতমশায়কে অনুরোধ করা যায় না চাকা ঠেলতে। আমরা দুজন ছাড়া ঠেলবে কে?

    দীপ্তির বিয়ের শুভলগ্ন উত্তীর্ণ না হয়ে যায়, তার বিয়েতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, প্রাণপণে ঠেলতে লাগলুম সেই চাকা, সেই ষাঁড়াতলার হাবড়ের মধ্যে। আপাদমস্তক কাদায় মাখামাখি হল। বরকর্তা বুড়োমানুষ, তাকে আমি বেশি ঠেলতে দিলাম না। নিজেই ঠেলে কাদা পার করে তুললাম।

    বর বলল, “এঃ, তোমার এ কী চেহারা হল! কাদায় যে—”

    আমি বললাম, “তোমরা যাও, আমি যাচ্ছি—”

    সবাই বলে উঠল, “সে কী? সে কী? সে কী হয় নাকি?”

    —আচ্ছা এখানে আপনারা, পেছনে আসছি। জামাকাপড় ছেড়ে আসি—

    গাড়ি চলে গেল।

    আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সেদিকে চেয়ে। আর আমি যাব না। দীপ্তির বিয়ে শুভলগ্ন হোক, বাধাশূন্য হোক।

    হঠাৎ আমার মনে পড়ল একদিনের কথা, দীপ্তির বাবা বিয়ে করে যেদিন ওর মাকে নিয়ে ফিরেছিলেন। ত্রিশ বছর আগের ঠিক এমনি এক অন্ধকার সকাল।

    সেই শ্রাবণ মাসে ষাঁড়াতলার দ’এর কাদা ঠেলে গাড়ি উঠিয়েছিলাম কাদায় মাখামাখি হয়ে। বাবার কাছে মার খেয়েছিলাম।

    আজ আবার তাঁদেরই মেয়ের বিয়েতে সেই রকমই গাড়ি ঠেলছি, গাড়িও যাচ্ছে শহরের দিকেই। তাঁদেরই মেয়ে দীপ্তি। হয়তো সে আজ খুব রাগ করবে আমি না—

    জীবনে কী আশ্চর্য ঘটনাই সব ঘটে!

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরঙিলা নায়ের মাঝি – জসীম উদ্দীন
    Next Article মাটির কান্না – জসীম উদ্দীন

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী ছোটগল্প

    আসল বেনারসী ল্যাংড়া

    April 5, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    জুয়াড়ির বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    অন্ধের বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    সর্ববিদ্যাবিশারদের বউ

    March 27, 2025
    ছোটগল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    প্রৌঢ়ের বউ

    March 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }