Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প114 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. মাগরিবের নামাজ শেষ করে

    মাগরিবের নামাজ শেষ করে মবিন উদ্দিন শোবার ঘরে চুপচাপ বসে আছেন। আজো ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে। ঘর অন্ধকার মেঝেতে হারিকেন জ্বলছে। সুরমা বাটিতে করে ভাজা মুড়ি নিয়ে ঢুকলেন। মবিন উদ্দিন বলেন, মুড়ি খাব না।

    সুরমা বললেন, তোমার কি শরীর খারাপ করেছে? তখন থেকে চুপচাপ বসে মাছ।

    মবিন উদ্দিন জবাব দিলেন না। সুরমা বললেন, বোনের বাড়িতে কী হল বল। বকুলের বিয়ে নিয়ে নতুন কোন কথা হয়েছে?

    না।

    ওরা খুব খুশি না?

    হুঁ।

    এ রকম মুখ শুকনা করে বসে আচ্ছ কেন? ব্যাপারটা কী বলতো?

    কোন ব্যাপার না। আমি ভাল লাগছে না।

    রাহেলা কি তোমাকে কিছু বলেছে!

    না সে আর কী বলবে।

    মনে হচ্ছে তুমি কোন কিছু নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তা করছ? কী নিয়ে দুঃশ্চিন্তা।

    কোন কিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না। এম্নি শরীরটা ভাল লাগছে না। আচ্ছা সুরমা শোন—ম্যাজিশিয়ান ছেলেটাকে এখন চলে যেতে বললে কেমন হয়?

    সুরমা বিস্মিত হয়ে বললেন, ওকে চলে যেতে বলবে কেন?

    অনেক দিনতো হয়ে গেল। এখন সে তার ঘর বাড়িতে যাক।

    তার কি ঘর বাড়ি আছে না-কি যে সে যাবে। যাবেটা কোথায়?

    আগে যেখানে ছিল সেখানে যাবে। সারা জীবনতো আর আমরা একটা মানুষকে পলিবো না। তাই না।

    তুমিতো খুবই আজগুবি কথা বলছ। একটা অসহায় ছেলে যাবার জায়গা নেই। সে তোমার কয়টা ভাত খাচ্ছে? তুমি কি তাকে পোলাও কোর্মা খাওয়াচ্ছো?

    না তা না।

    তা না তাহলে কী? ওকে নিয়ে তোমার সমস্যাটা কী?

    বাইরের একটা ছেলে ঘরে পড়ে আছে। লোকজন নানান কথা বলাবলি কার।”

    সেই লোকজনটা কে? তোমার বোন?

    হ্যাঁ সে বলছিল।

    কী বলছিল ওকে বিদেয় করে দিতে?

    হুঁ।

    আমার সংসারে কে থাকবে না থাকবে সেটা আমি দেখব। তার সংসার নিয়েতো আমি চিন্তা করি না। সে কেন আমার সংসার নিয়ে মাথা ঘামাবে।

    আচ্ছা।

    আমি টুনুর ঘরটা ওকে খুলে দিয়েছি। এখন থেকে এই ঘরেই সে থাকবে।

    মবিন উদ্দিন স্ত্রীর দিকে তাকালেন। কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। টুনুর মৃত্যুর পর তার ঘর তালাবন্ধ ছিল। সুরমা বলেছিলেন, তিনি কোনদিন এই ঘরের তালা খুলবেন না। এই ঘরের তালা সারাজীবন বন্ধ থাকবে। সেই তালা খোলা হয়েছে।

    মবিন উদ্দিন বললেন, ছেলেটাকে তুমি খুব পছন্দ কর?

    হ্যাঁ করি তাতে অসুবিধা কী! একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে পছন্দ করতে পারে না?

    আগে যে বলতে ছেলেটা মানুষ না। জ্বীন এখন আর তা বল না।

    কী ধরনের কথা তোমার, শুধু শুধু একটা ছেলেকে আমি জীন বলব কেন? আমার কি মাথাটা খারাপ হয়েছে।

    না, তোমার মাথা ঠিকই আছে।

    সুরমা বললেন, আমার সঙ্গে এসো একটা জিনিস দেখে যাও।

    কী দেখব?

    সুপ্তি ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার ঘর কী সুন্দর করে সাজিয়েছে দেখে যাও। আমি ঘরে ঢুকে অবাকই হয়েছি। মন লাগিয়ে কাজ করলে সুপ্তি ঘরের কাজ ভাল করে। এসে দেখে যাও।

    এখন না। পরে দেখব।

    সুপ্তির হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার মনে খুব আনন্দ। এত আনন্দ ভাল না। যত আনন্দ তত দুঃখ। এই জন্যেই যাদের জীবনে আনন্দের ভাগ কম তাদের জীবনে দুঃখও কম। এটাও বোধহয় ঠিক না, তার জীবনে আনন্দ, নেই বললেই হয় অথচ দুঃখতো তাই বলে কম তাতো না। বুধবারের মধ্যে এক লক্ষ টাকা জোগাড় করতে হবে। কোথায় পাবেন এত টাকা?

    সুপ্তি হাসছে। মর্কিন উদ্দিন মেয়ের হাসি শুনছেন। ম্যাজিশিয়ান ছেলেটাকে বিদায় করে দিলে তার এই মেয়েটা সবচে’ কষ্ট পাবে। তার এই মেয়েটা দুঃখী। তার দুঃখের কোন সীমা নেই। অন্য কেউ তা জানুক বা না জানুক, তিনি জানেন। তার এই মেয়েটা যখন গভীর আনন্দ নিয়ে ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে তখন তার ভাল লাগে। আহা মেয়েটা আনন্দে থাকুক। আনন্দ মেয়েটার জন্যে খুব দরকার।

    .

    সুপ্তির সঙ্গে টুনুর ভাবটা সবচে বেশি। সে বিকট একটা চিৎকার দেবে, “ম্যাজিক ভাইয়া, ও ম্যাজিক ভাইয়া।”

    ম্যাজিক ভাইয়া ঘর থেকে হাসি মুখে বের হবে। সুপ্তি তাকে দেখে হড়বড় করে বলবে, আজ স্কুলে কী হয়েছে শুনে যান। শুনলে আপনার দম বন্ধ হয়ে যাবে। দারুণ একটা ঘটনা ঘটেছে। জিয়োগ্রাফি মিসের কথা আপনাকে বলেছি না খুব রাগী। আমাদের হেড মিসট্রেস আপা পর্যন্ত তাঁকে ভয় পান। এই মিস আজকে চেয়ার ভেঙ্গে হুড়মুড় করে পড়ে গেছেন। আমাদের হাসি আসছে কিন্তু আমরা হাসতে পারছি না। ভয়ে কাঠ হয়ে আছি। তখন কী হল জানেন? কেউ হাসল না। আমাদের ফার্স্ট গার্ল সাদেকা হঠাৎ খিল খিল করে হেসে ফেলল, সেই হাসি আর থামেই না। জিয়োগ্রাফি আপা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তিনি চিন্তাও করতে পারেননি সাদেকা হাসতে পারে। এই হল সুপ্তির রোজকার রুটিন। প্রতিদিনই তাদের স্কুলে মজার মজার কিছু ঘটছে। স্কুল থেকে ফিরেই সেই সব মজার ঘটনা ম্যাজিক ভাইয়াকে না শোনানো পর্যন্ত সুপ্তির শান্তি নেই।

    আগে সুপ্তিকে পড়াতেন মবিন উদ্দিন। সুপ্তি গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে থাকতো–মবিন উদ্দিন তার বইগুলি পড়তেন। একবার দুবার তিনবার। সুপ্তি তৃতীয়বারের সময় বলতো, বাবা আর লাগবে না হয়েছে। এখন তুমি আমার হাতের লেখা দেখ। হাতের লেখাগুলি কি এখনো বড় বড়? এরচে ছোটতো। করতে পারি না। এরচে ছোট করলে কেউ পড়তে পারবে না।

    এখন সুপ্তির পড়ার ধরন বদলেছে। মবিন উদ্দিনের স্থান নিয়েছে ম্যাজিশিয়ান। সে পড়ে, সুপ্তি গালে হাত দিয়ে শোনে। এবং পড়ার মাঝখানে বলে, থুক্কু। আবার পড়েন। আমি আসলে আপনার পড়া শুনছিলাম না। অন্য কিছু ভাবছিলাম।

    কী ভাবছিলে?

    তা বলা যাবে না।

    বলা যাবে না কেন?

    বলা যাবে না কারণ আমি যদি বলি তাহলে আপনার একটু মন খারাপ হবে। আমি আপনার মন খারাপ করতে চাই না। শুধু আপনার কেন কারোরই মন খারাপ করতে চাই না।

    তুমি বল–আমার মন খারাপ হবে না।

    ম্যাজিক ভাইয়া, আমি যদিও খুব হাসি-খুশি থাকি তারপরেও আমার কিন্তু সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে। ভয়ংকর মন খারাপ থাকে। প্রতি রাতে ঘুমুবার আগে আমি কাঁদি।

    ও আচ্ছা।

    কেন কাঁদি জানেন? কাঁদি কারণ আমার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা করে, বুঝতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারি না। হাজার চেষ্টা করেও পারি না। আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে–হিন্দু মেয়ে, নাম অর্চনা সবাই বলে সে না-কি পরীর মত সুন্দর। আরেকটা মেয়ে আছে নাম কামরুন নেসা সবাই আড়ালে কামরুনেসাকে ডাকে মিকি মাউস। তার চেহারা না-কি ইঁদুরের মত। আমি ওদের দুজনের মুখের উপর হাত বুলিয়েছি দু’জনকে আমার একই রকম লেগেছে।

    সব মানুষতো এক রকমই।

    মোটেই এক রকম না, কেউ সুন্দর কেউ অসুন্দর। সেই সুন্দর অসুন্দরটাই বুঝতে পারি না। আমার খুব কষ্ট হয়। কেউ কালো, কেউ ফর্সা। কালো ফর্সা কী? আচ্ছা থাক অনেক বক বক করলাম, এখন পড়া শুরু করুন। পড়া শুরু করার আগে বলুন–আপনাকে যে সব কথা বললাম, সে সব কথা কখনো বাবা। বা মা’কে বলবেন না।

    বলব না।

    এইভাবে বললে হবে না। বিদ্যা ছুঁয়ে বলুন। জ্যামিতি বইটা ছুঁয়ে বলুন।

    জ্যামিতি বই ছুঁয়ে শপথ করলে কী হবে?

    আপনার আর জ্যামিতি শেখা হবে না। ত্রিভুজের দুটি বাহু আর তাদের অন্তঃস্থ কোণ সমান হলে যে ত্রিভুজ দুটি মন হয় এই সাধারণ ব্যাপারটাও আপনি জানবেন না।

    আচ্ছা যাও শপথ করলাম।

    পড়াশোনার শেষে টুনুকে ম্যাজিক দেখাতে হয়। রোজ এক একটা দেখাতে হবেই। ম্যাজিকগুলি খুর দরবার খুব সুন্দর আবার খুবই সহজ। তারচেয়েও বড় কথা চোখে না দেখেও সুপ্তি ম্যাজিকগুলি বুঝতে পারে। ম্যাজিক দেখানোর জন্যে ম্যাজিশিয়ানের কিছুই লাগে। সে সুপ্তিকে বলবে, দেখি তোমার বল পয়েন্ট কলমটা হাতে শক্ত করে ধরে থাক। সুপ্তি ধরে থাকল।

    এবার কলামটার দিকে তাকিয়ে থাক। দৃষ্টি পুরোপুরি কলমটার উপার। অন্য কোন দিকে তাকাবে না। আড় চোখেও না।

    আমার তাকানো না তাকানোয় তো কিছু যাচ্ছে আসছে না। আমি তো কিছু দেখছি না।

    তবু তাকিয়ে থাক।

    সুপ্তি তাকিয়ে থাকল।

    চোখের পাতা ফেলবে না।

    পাতা ফেললে কী হবে?

    ম্যাজিক হবে না।

    সুপ্তি তাকিয়ে থাকে তা ফেলার জন্য চোখে পানি জমতে শুরু করে এবং তখন মনে হয় হাতের ভেতরই কলমটা যেন বদলে যাচ্ছে। কোন অদ্ভুত উপায়ে যেন জীবন্ত হয়ে যাচ্ছে। জিনিসটা যেন হাতের ভেতর ছটফট করছে। ভয় পেয়ে কলমটা ফেলে দিয়ে সুপ্তি বিস্মিত হয়ে বলে,এটা আপনি কীভাবে করেন?

    সে হাসে।

    সুপ্তি বলে, না হাসলে হবে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেই আপনি শুধু হাসেন। হাসি বন্ধ। আপনাকে বলতে হবে।

    এই ধরনের ম্যাজিক খুবই সহজ। ইচ্ছা করলে তুমিও পারবে।

    তাহলে আমাকে শিখিয়ে দিন। আমি স্কুলে বন্ধুদের দেখাব। ওদের আক্কেল গুড়ুম করে দেব।

    সে গম্ভীর হয়ে বলে, আচ্ছা শেখাব।

    কবে শেখাবেন বলুন। তাড়াতাড়ি শেখাতে হবে। নয়তো একদিন দেখবেন ম্যাজিক শেখার আগেই আমি ফট করে মরে গেছি।

    মরে যাবে কেন?

    ও আচ্ছা আপনাকে বলা হয়নি–আমি বেশিদিন বাঁচব না।

    সেটা কী করে জান?

    খুব ভাল করে জানি। কোন একদিন আমি ফট করে মরে যাব। কীভাবে মরবো তাও জানি।

    কীভাবে মরবে?

    পুকুরে ডুবে। আমাদের নানার বাড়িতে বিরাট একটা পুকুর আছে। পুকুরটার চারদিকে নারকেল গাছ। খুব গভীর পুকুর। কোন একদিন নানার বাড়িতে যাব। সারাদিন মনের আনন্দে পুকুরের চারদিকে হাঁটব। তারপর…

    তারপর কী? তারপর ঝপাং।

    ঝপাং মানে?

    আমি লাফ দিয়ে পুকুরে পড়ে যাব। আর উঠব না। কারণ আমি সাঁতার জানি না।

    এইটা তুমি ঠিক করে রেখেছ?

    হুঁ। অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। শুধু একজনকে বলেছিলাম, ভাইয়াকে। আর এখন বললাম আপনাকে, আপনি বোধহয় আমার কথা বিশ্বাস করেননি। তাই না?

    ম্যাজিশিয়ান কিছু বলল না। সুপ্তি নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ভাইয়াও বিশ্বাস করেনি। ভাইয়ার সঙ্গে আসলেই আপনার অনেক মিল। বিশ্বাস না করলে নাই। এইসব আলাপ করতে ভাল লাগছে না। অন্য কোনো আলাপ করুন। আচ্ছা বলুন তো পৃথিবীর সবচে বড় ম্যাজিশিয়ান কে ছিলেন? আপনার কি ধারণা পিসি সরকার? হয়নি। মারলীন। ইংল্যান্ডের রাজা কিং আর্থারের সভাতে উনি ছিলেন একজন সভাসদ। তার মতো বড় ম্যাজিশিয়ান এই পৃথিবীতে হয় নি কোনোদিন হবেও না।

    তোমাকে কে বলেছে?

    আমাদের জিয়োগ্রাফি ম্যাডাম। উনি যেমন রাগী তেমনই জ্ঞানী।

    আমার ধারণা এই পৃথিবীর সবচে বড় ম্যাজিশিয়ান হল গাছ।

    গাছ?

    হ্যাঁ গাছের মতো ম্যাজিক আর কেউ জানে না। এদের ম্যাজিক তুলনাহীন।

    বাবা যে বলে আপনার মাথা খারাপ, ঠিকই বলে। আপনার মাথা পুরোপুরি মাসকান্দা।

    মাসকান্দা মানে কী খুব বেশি মাথা খারাপ?

    হুঁ। মাসকান্দা মানে হল চিকিৎসার অতীত মাথা খারাপ। দিনকান্দা মানে–চিকিৎসা করলে সারবে। মাথা খারাপ হোক আর যাই হোক আপনাকে আমি কিন্তু খুব পছন্দ করি। এটা কি আপনি জানেন?

    জানি।

    কতটা পছন্দ করি তা-কি আপনি জানেন?

    হ্যাঁ তাও জানি।

    আপনি নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ করেন। করেন না?

    হ্যাঁ করি।

    কতটুক পছন্দ করেন?

    আমার পছন্দের ধরনটা আবার অন্য রকম, আমি সব মানুষকেই একই রকম পছন্দ করি।

    তার মানে কি আমাকে যতটা পছন্দ করেন রাস্তার একটা ফকিরণীকেও ততটা পছন্দ করেন?

    হ্যাঁ।

    আপনি এ-রকম কেন?

    আমি এরকম কারণ আমি ঠিক মানুষ না।

    মানুষ না তাহলে আপনি কী?

    আমি আসলে গাছ। এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা আসলে মানুষ না গাছ। তাদের জীবন-যাপন প্রণালী মানুষের মতো তবে…

    তবে কী?

    থাক তুমি বুঝবে না।

    আমি ঠিকই বুঝেছি আপনি একজন ফোর্টি নাইন প্লাস ফোর্টি নাইন। ডাবল ফোর্টি নাইন।

    সুপ্তি খিলখিল করে হাসছে। ম্যাজিশিয়ান ছেলেটিও হাসছে। সুপ্তি হাসি থামিয়ে বলল,

    আপনি ভাইয়ার মতই ডাবল ফোর্টি নাইন।

    সেও কি বলত সে গাছ?

    না তা বলত না। তবে সারাক্ষণ হাসলে লোকে পাগল বলবে না? একবার কি হয়েছে শুনুন, বাবা রাগ করে ঠাশ করে তার গালে চড় মেরেছে। সে চড় খেয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। কেন বলুন তো?

    বলতে পারছি না।

    কারণ—চড়ের শব্দ হল–ঠাশ। কিন্তু বাবার চড়ের শব্দটা না-কি ছিল ধরাম। দরজা বন্ধ করার মতো শব্দ। এই জন্যে হাসছিল।

    তোমার ভাইয়া তো খুব মজার মানুষ ছিলেন।

    মোটেই মজার মানুষ ছিল না। ভাইয়া ছিল—ডাবল ফোর্টি নাইন। মাসকান্দা টাইপ।

    ম্যাজিশিয়ান সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্তি মাথা ঝাকিয়ে বলল, আচ্ছা বাদ দিনতো এই নিয়ে কথা বলতে আমার ভাল লাগছে না। অন্যকিছু নিয়ে কথা বলুন। আচ্ছা আমি একটা ছড়া বলছি মন দিয়ে ছড়াটা শুনুন—

    গুণধর ছেলে সে মায়ের আদর
    খেলতো না, হাসতো না, নামটি সাগর
    তনুতার কৃশকায় মুখটি করুণ।
    ছেলেটি কী খেত—আপনি বলুন।

    কী বলতে পারবেন, সাগর নামের ছেলেটা কী খেত?

    না বলতে পারছি না।

    ছড়ার প্রতিটি লাইনের প্রথম অক্ষরটা আলাদা করুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন সাগরের প্রিয় খাদ্য কী? হি হি হি।

    সুপ্তি হাসছে। ম্যাজিশিয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে।

    .

    আজ বুধবার। মবিন উদ্দিন তার দোকান বিক্রি করে দিয়েছেন। দুই লাখ দশ হাজার টাকা পেয়েছেন। তাড়াহুড়া করে বিক্রি করতে হল। খোঁজ-খবর করে বিক্রি করতে পারলে হয়ত আরো বেশি পেতেন। পুরো ব্যাপারটা করতে হয়েছে। গোপনে। সুরমা সুপ্তি কেউ জানে না। ইচ্ছা করেই জানাননি। তারা খুব মন খারাপ করতে। বিক্রি না করে উপায়ও ছিল না। বুধবার সন্ধ্যায় আব্দুল মজিদ চলে আসবে। ভদ্র এবং বিনয়ী গলায় বলবে, ভাইজান টাকাটা। আপনাকেতো বলেছিলাম খুব দরকার।

    মবিন উদ্দিন জানেন টাকার তার কোন দরকার নেই। মেয়ে বিয়ের অজুহাত তৈরী হয়েছে। অনেক দিন পর চাপ দেবার সুযোগ পাওয়া গেছে। আব্দুল মজিদ কখনোই কোন সুযোগ ছাড়ে না। এই সুযোগ কেন ছাড়বে? তার উচিত ছিল টাকাটা দিয়ে দেয়া। তিনি পারেননি। এখনো পারছেন না। কিন্তু এখন আর গত্যন্তর ছিল না।

    কেউ দোকান বিক্রির খবর জানে না। কিন্তু মবিন উদ্দিনের ধারণা ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা জানে। খুব ভাল করেই জানে। সকালে তিনি দলিল রেজিস্ট্রির জন্যে যাচ্ছেন সে বলল, কোথায় যান?

    তিনি বললেন, দোকানে।

    এটা মিথ্যা কথা। তিনি যাচ্ছিলেন—সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। ছেলেটা কেমন করে জানি হাসল। তারপর বলল, আমি সঙ্গে আসব?

    তিনি বললেন, না।

    সঙ্গে নিয়ে এলে ভাল হত। এতগুলি টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা। আজকাল এক দুইশ টাকার জন্যে মানুষ খুন হয়। তার সঙ্গে থাকবে দুই লাখ দশ হাজার টাকা।

    তিনি কাউকে সঙ্গে নিলেন না। একাই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গেলেন। দোকান বিক্রি করলেন। অনেক সখ করে দোকান দিয়েছিলেন। সুখে দুঃখে এই দোকান তার সঙ্গী ছিল। শো রুমের পেছনে ছোট্ট ঘরটায় চৌকি পাতা। চৌকিতে বিছানা। মাঝে মাঝে তিনি রাতে দোকানে এসে ঘুমাতেন। সুরমার সঙ্গে রাগারাগি করে দোকানে চলে যেতেন। অনেক রাতে টুনু টর্চ লাইট নিয়ে আসত। গম্ভীর গলায় বলতো, বাবা ঘরে চল। তিনি কথা বাড়াতেন না। সঙ্গে সঙ্গে রওনা হতেন। বেচারা এতদূর একা একা এসেছে। তার রাগ করে ঘুমুতে আসার ঘরটা আর থাকল না। সুরমাকে ব্যাপারটা কীভাবে বলবেন বুঝতে পারছেন না। পরাশ করার একজ{ কেউ থাকলে ভাল হত।

    ছেলেটা যদি বেঁচে থাকত। টুনু বেঁচে থাকলে তার কোন সমস্যাই হত না। তিনি গম্ভীর ভঙ্গিতে ছেলেকে বলতেন—নেরে ব্যাটা, বিরাট সমস্যায় পড়েছি। দোকান বিক্রি করে দিয়েছি। এই নে এখানে দু’লাখ দশ হাজার টাকা আছে। তোর ফুপা সন্ধ্যাবেলা আসবে তাকে এক লাখ টাকা দিবি। বাকি টাকায় কী করবি না করবি তুই দেখ? সংসার চালাতে হবে। কীভাবে চালাবি তুই জানিস। আমি অবসর নিলাম। পাচটা টাকা দে চায়ের স্টল থেকে চা খেয়ে আসি। চায়ের স্টলের মজাই অন্যরকম।

    সকাল এগারোটার মধ্যেই দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে গেল। তিনি পাঞ্জাবির পকেটে টাকা নিয়ে বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছা করছে শহরের পথে পথে হাঁটতে। এতগুলি টাকা পকেটে নিয়ে পথে পথে হাঁটা সম্ভব না। তিনি ঠিক করলেন তার দোকানে যাবেন। তার পুরানো ঘরে দুপুরটা শুয়ে থাকবেন।

    শেষবারের মত শুয়ে থাকা। বিকেলে বাড়ি ফিরবেন। আব্দুল মজিদকে টাকাটা দিয়ে দেবার পর সুরমাকে সব খুলে বলবেন। বিউটি বুকের নতুন মালিক শেষবারের মতো তাঁকে কিছুক্ষণ তাঁর পুরানো জায়গায় শুয়ে থাকতে দিতে নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। বাড়ি ফেরার পথে নিধু সাহার কাপড়ের দোকান থেকে সুপ্তির জন্যে একটা শাড়ি কিনে ফেলবেন। মেয়েটার শাড়ির শখ। জীবনের প্রথম শাড়ি পরা মেয়েদের জন্যে বিরাট একটা ঘটনা। সেই ঘটনাটা আজ রাতেই ঘটুক। দুঃখের দিনেও তো দু’একটা আনন্দময় ঘটনা ঘটতে পারে।

    সুপ্তিদের স্কুল দু’টার সময় ছুটি হয়। মবিন উদ্দিন স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন। মেয়েকে নিয়ে রিকশায় করে বাড়িতে ফেরেন। দিন দশেক হল, রিকশায় করে ফিরছেন না—হেঁটে ফিরছেন। সুপ্তিকে বলেছেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ একসারসাইজ হচ্ছে হাঁটা। যারা দিনে এক ঘণ্টা হাঁটে তাদের কোন অসুখ বিসুখ হয় না। ফকিরণীদের দেখ—খেতে পায় না বললেই হয়। এদের স্বাস্থ্য কিন্তু খারাপ না। অসুখ বিসুখও কম হয়। ঠিক বলছি না?

    সুপ্তি হাসি চাপতে চাপতে বলল, ঠিক বলছ।

    কাজেই আমি ঠিক করেছি তোকে হেঁটে স্কুলে আনব। আবার আমরা ফেরত যাব হাঁটতে হাঁটতে। ঠিক আছে রে মা?

    ঠিক আছে।

    হাঁটতে কষ্ট হবে না-তো?

    মোটেই কষ্ট হবে না।

    সুপ্তির হাঁটতে কষ্টতো হয়ই না বরং ভাল লাগে। রাস্তাঘাট চেনা হয়ে যায়। স্কুল গেট থেকে কিছুদূর গেলেই চামড়ার গন্ধ পাওয়া যায়। তার মানে বড় রাস্তা এসে পড়েছে। বড় রাস্তায় ঢোকার মুখেই স্যুটকেসের দোকান। চামড়ার গন্ধ। আসে স্যুটকেসের দোকান থেকে। দোকানটাকে বাঁদিকে রেখে তারা এগুতে থাকে। যখন ভক করে নাকে মুখে তীব্র পচা গন্ধ ঢোকে তখন রাস্তা ক্রস করে ঐ পারে যেতে হয়। তীব্র গন্ধটা আসে ডাস্টবিন থেকে। রাস্তা পার হবার পর অল্প একটু যাবার পর গলিতে ঢুকতে হয়। গলিটা চেনাও সহজ। গুলির মুখেই চায়ের দোকান। চা বানানোর টুং টাং শব্দ আসে—চা পাতার মিষ্টি গন্ধ আসে।

    মবিন উদ্দিন বলেন, হাত ধরে হাঁট মা। হাত না ধরে হাঁটছিস কীভাবে।

    সুপ্তি বলে, তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না তো বাবা। তুমি আমার আগে আগে যাও। আমি তোমার পেছনে আসছি। কোন সমস্যা নেই।

    এখানে একটা মানহোল আছে।

    আমি জানি ম্যানহোল আছে। ম্যানহোল থেকে গন্ধ আসছে—আমি গন্ধ পাচ্ছি।

    বাবার হাত ধরতে অসুবিধা কী?

    কোন অসুবিধা নেই আমি একা একা যেতে চাচ্ছি।

    তুই বড়ই আশ্চর্য মেয়ে।

    তুমিও বড়ই আশ্চর্য বাবা।

    আজ সুপ্তির স্কুল ছুটি হয়ে গেলে বারোটায়। এটা এমন কোন সমস্যা না। দু’ঘণ্টা বসে থাকলেই বাবা চলে আসবেন। কিংবা সে যদি হেডমিসট্রেস আপাকে বলে, তাহলে আপা তাকে বাড়ি পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন। দপ্তরীকে সঙ্গে দিয়ে দেবেন। কিংবা আপনরা কেউ বাড়ি যাবার পথে তাকে নামিয়ে দিয়ে যাবেন এ রকম আগেও হয়েছে। সুপ্তি আধাঘন্টার মত ক্লাসেই বসে রইল। মেয়েরা সব চলে গেছে ক্লাস ফাঁকা। হঠাৎ তার মনে হল-একা একা বাড়ির দিকে রওনা হলে কেমন হয়? সে নিশ্চিত যে যেতে পারবে তার কোন সমস্যাই হবে না। এবং তারতো এটাই করা উচিত। সারা জীবন কি কেউ তাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটবে। রাস্তা পার করিয়ে দেবে?

    সুপ্তি স্কুল গেটের কাছে এসে দাঁড়াল। তার একটু ভয় ভয় লাগছে যদিও সে জানে ভয়ের কিছুই নেই। ভয় পেলেই ভয়। জিয়োগ্রাফী আপা প্রায়ই বলেন-”বনের বাঘে খায় না। মনের বাঘে খায়।” আসল বাঘের চেয়ে মনের ভেতরে যে বাঘ বাস করে সেই বাঘ অনেক অনেক অনেক ভয়ংকর।

    সুপ্তি কোন রকম সমস্যা ছাড়া বড় রাস্তায় এল। রাস্তা পার হল। চায়ের দোকান পার হয়ে গলিতে ঢুকে পড়ল এইসময় একটা সমস্যা—হুড়মুড় করে সাইকেল নিয়ে কে একজন তার গায়ে উঠে পড়ল। সুপ্তির হাত থেকে বইখাতা ছিটকে পড়ে গেল। সাইকেলওয়ালাও তার সঙ্গে পড়ে গিয়েছে এবং সে মনে হয় ভালই ব্যথা হয়েছে। সুপ্তি উঠে পড়েছে নিজে নিজে, কিন্তু সাইকেলওয়ালাকে লোকজন ধরে তুলল। সে রাগী গলায় বলল, দেখেশুনে চলতে পার না। তুমি কি আন্ধা। দেখতেছে সাইকেল নিয়ে আসতেছি। তারপরও সরে না।

    সুপ্তি বলল, আপনি হর্ণ দেননি কেন?

    হর্ণ দেব কেন? তুমি চোখে দেখ না? চোখ নাই?

    সুপ্তি প্রায় বলেই ফেলেছিল তার চোখ আছে কিন্তু সে দেখতে পায়নি। সুপ্তি বলল না। কারণ হঠাৎ তার মনে প্রচণ্ড একটা ভয় ঢুকে গেছে। সে দিক ঠিক করতে পারছে না। সে কোন দিকে যাবে। সোজা যাবে, না পেছন দিকে যাবে? তার এরকম হল কেন? আশেপাশে কোথাও একটা সাইকেল পার্টস এর দোকান থাকার কথা। সেটা কোন দিকে?

    হাতের ছিটকে পড়া বইগুলি তোলা দরকার। বইগুলি কোথায় পড়েছে? জ্যামিতি বক্সের আশেপাশে? জ্যামিতি বাক্স কোথায় পড়েছে সে জানে। পড়ার শব্দ শুনেছে। বইগুলিও শব্দ করেই পড়েছে। তবে অনেকগুলি বই। বই পড়ে যাবার শব্দ একরকম। জ্যামিতি বাক্সের শব্দ আলাদা। সুপ্তি নিচু হয়ে জ্যামিতি বাক্স তুলল। বই তোলার জন্যে এদিক ওদিক হাত দিচ্ছে ওমি একজন বলল, এই মেয়ে আন্ধা। সুপ্তির শরীর শক্ত হয়ে গেল। বই না তুলেই সে উঠে দাঁড়াল। সুপ্তি লক্ষ্য করল অনেকদিন পর তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে এতগুলি লোকের সামনে কেঁদে ফেললে সমস্যা হবে। মনে হচ্ছে সত্যি চোখে পানি এসে যাবে। যে করেই হোক চোখের পানি আটকাতে হবে।

    ও আল্লা সত্যি চক্ষে দেখে না। এই তুমি একলা কই রওনা হইছ। তোমার বাড়ি কোনখানে?

    সুপ্তি বাসায় ফিরল রিকশা করে। যে ছেলে সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দিয়েছে সে সাইকেলে করে তার পেছনে পেছনে এসেছে। খুবই বিরক্তিকর ছেলে। পেছনে থেকে সারাক্ষণ কথা বলছে—

    কী নাম তোমার?

    সুপ্তি।

    তুমি আমার খুব রাগ করেছ তাই না?

    না।

    আমি জানি রাগ করেছ। আমি আসলেই বুঝতে পারিনি।

    আমি রাগ করিনি।

    তুমি কি সব সময় এ রকম একা একা চলাফেরা কর। এটাতো ঠিক না।

    আপনি আমার পেছনে পেছনে আসছেন কেন? আপনি চলে যান।

    তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

    পৌঁছতে হবে না।

    পৌঁছাতে হবে কি হবে না, সেটা আমি বুঝব। সুপ্তি শোন আমার নাম জহির। আমি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।

    ও আচ্ছা।

    নেত্রকোনায় আমার দাদার বাড়ি। দাদা অসুস্থ উনাকে দেখতে এসেছিলাম।

    ও আচ্ছা।

    তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছ?

    আমি তো আপনাকে বললাম রাগ করিনি। আমাদের বাড়ি চলে এসেছে। সামনের টিনের বাড়িটা আমাদের আপনি এখন যান।

    তুমিতো চোখে দেখতে পাও না। তুমি বুঝলে কী করে সামনের বাড়িটা তোমাদের?

    আমি অনুমানে অনেক কিছু বুঝতে পারি।

    তুমি কি সত্যি সত্যি চোখে দেখ না?

    না।

    আমার নামটা তোমার কি মনে আছে–জহির।

    আপনার নাম মনে রেখে কী হবে?

    বলেই সুপ্তি ঘরে রিকসা থেকে নামল। রিকসা ভাড়া দেবার সময় পেল না, জহির দিয়ে দিল। সুপ্তি বলল, আপনি এখন চলে যান। অনেকক্ষণ বিরক্ত করেছেন। আর করবেন না। সুপ্তি ঘরে ঢোকার পরেও জহির কিছু সময় লজ্জিত মুখে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।

    দুপুরে ম্যাজিশিয়ান ভাত খাচ্ছে আর সুপ্তি খুব আগ্রহ করে বলছে আজ সে কী করে একা একা হেঁটে চলে এসেছে। পথে সামান্য সমস্যা হয়েছিল তবে সেই সমস্যা সামাল দেয়া গেছে। ম্যাজিশিয়ান বলল, একা একা আসতে পেরে তুমি খুব খুশি?

    সুপ্তি বলল, হ্যাঁ খুশি। আমি অন্যসব মানুষের মতো চলাফেরা করতে চাই। কেউ যেন কোনদিন বুঝতে না পারে যে আমার কোন সমস্যা আছে।

    ম্যাজিশিয়ান বলল, তা তুমি করতে পারবে।

    কী করে বললেন?

    আমি অনেক কিছু বলতে পারি।

    সুপ্তি হাসতে হাসতে বলল, আপনি অনেক কিছু বলতে পারেন কী জন্যে? আপনি মানুষ না আপনি গাছ এই জন্যে?

    তোমার বিশ্বাস হয় না, তাই না?

    না হয় না, কারণ আমি তো আর গাছ না, আমি মানুষ। মানুষদের অনেক বুদ্ধি। তারা চট করে কিছু বিশ্বাস করে না। তার একটা কথা বলি? আপনি আমাদের মতোই সাধারণ একজন মানুষ। একটাই তফাৎ, আপনি সুন্দর ম্যাজিক জানেন। আমরা জানি না। ম্যাজিক জানলেই মানুষ অন্য রকম হয়ে যায় না।

    সুপ্তি শোন, আমি কিন্তু আসলেই মানুষ না।

    সুপ্তি বলল, মানুষ না হলে আপনি কে?

    আমি তো আগেও তোমাকে বলেছি। আমি আসলে গাছ।

    সুপ্তি গম্ভীর মুখে বলল, বেশি বেশি গাছ গাছ করবেন না-তে। বেশি বেশি গাছ গাছ করলে আমরা আপনাকে কেটে লাকড়ি বানিয়ে সেই লাকড়ি দিয়ে হয়তো বেঁধে খেয়ে ফেলব।

    বলতে বলতে সুপ্তি হেসে গড়িয়ে পড়ল। ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা তাকিয়ে। আছে। অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা পড়ছে না। তার বড় বড় চোখ চক চক ঝক ঝক করছে। সেই চোখের দিকে তাকালে বুকের ভেতর হঠাৎ ধ্বক করে একটা ধাক্কা লাগে।

    .

    মবিন উদ্দিন বাড়ি ফিরলেন সন্ধ্যার আগে আগে। তার মুখে লজ্জিত ভাব। হাতে কাপড়ের প্যাকেট।

    সুরমা বললেন, প্যাকেটে কী?

    মবিন উদ্দিন ইতস্ততঃ করে বলরেন, সুপ্তির জন্যে একটা শাড়ি এনেছি। মেয়েটা অনেকদিন থেকে শাড়ি শাড়ি করছিল।

    ভাল করেছ।

    তোমার জন্যেও একটা শাড়ি কিনেছি। দেখতো রংটা পছন্দ হয় কি-না। ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার জন্যে একটা পাঞ্জাবি এনেছি। ওকে দিয়ে আস।

    সুরমা বিস্মিত হয়ে বলল, সবার জন্যে কাপড় জামা ব্যাপার কী?

    কোন ব্যাপার না। কিনলাম।

    টাকা পেয়েছ কোথায়?

    ছিল কিছু। শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?

    সুরমা আনন্দিত গলায় বললেন, খুব পছন্দ হয়েছে।

    অজুর পানি দাও। মাগরেবের নামাজ পড়ব।

    সুরমা অজুর পানি দিতে দিতে বললেন, তুমি যে কবিরাজী অষুধটা দাও আমার মনে হয় অষুধটা কাজ করছে। সুপ্তির ব্যথা উঠেছিল অল্প কিছুক্ষণ ছিল। বেশি হলে বড়জোর এক মিনিট। তারপর চলে গেল।

    বল কী এটাতো খুবই আনন্দের খবর।

    আনন্দের খবরতো বটেই। আমি দশ রাকাত শোকরানা নামাজ পড়েছি।

    সুপ্তি কোথায়?

    বাবলুর সঙ্গে গল্প করছে। ডাকব?

    না থাক ডাকার দরকার নেই। শাড়িটা ওকে দাও—পরুক। দেখি মেয়েকে কেমন লাগে। ভাল কথা—আব্দুল মজিদ কি এসেছিল?

    না তে। উনার আসার কথা না-কি?

    হুঁ। আসলে বসিয়ে গল্প-টল্প কর। আমার নামাজ শেষ হতে দেরি হবে। সারাদিনের নামাজ কাজা হয়েছে।

    মবিন উদ্দিন অনেকক্ষণ ধরে নামাজ পড়লেন। নামাজে বসেই সুপ্তির আনন্দের চিৎকার শুনে বুঝলেন, তার শাড়ি খুব পছন্দ হয়েছে।

    তাঁর নামাজ বোধহয় হচ্ছে না। মন বাইরে চলে যাচ্ছে। আব্দুল মজিদ এসেছে এটাও নামাজে বসে টের পেলেন। তার সঙ্গে সুপ্তির যে কথাবার্তা হচ্ছে তাও শুনতে পাচ্ছেন।

    ফুপা কেমন আছেন?

    খুব ভাল আছি মা।

    ফুপা দেখেন বাবা আমার জন্যে একটা শাড়ি কিনে এনেছেন। কী সুন্দর রঙ দেখেছেন? বাবা কখনো ভাল কিছু কিনতে পারে না। এই প্রথম ভাল জিনিস কিন।

    রঙটা তো সুন্দর।

    মা’র শাড়িটা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। মা’র শাড়িটা আরো অনেক সুন্দর। মজার ব্যাপার কি জানেন ফুপা? মা’র বেশি পছন্দ আমার শাড়িটা, আবার আমার পছন্দ মা’র শাড়িটা।

    দু’জনে বদলাবদলি করে নাও।

    উহুঁ তা করব না।

    ভাইজান কি ঘরে আছেন?

    হুঁ আছেন। এই একটু আগে ফিরেছেন। নামাজ পড়ছেন। ফুপা আপনি বসুন। চা দেই।

    কষ্ট না হলে দীও। ভাল কথা তোমাদের সঙ্গে একটা ছেলে নাকি থাকে? ম্যাজিক দেখায়?

    হুঁ থাকে। তার সঙ্গে কথা বলবেন? ডাকব?

    না এখন থাক। পরে কথা বলব। তুমি দেখ ভাইজানের নামাজ শেষ হয়েছে কি-না।

    মবিন উদ্দিন নামাজ শেষ করে বসার ঘরে গেলেন। আব্দুল মজিদ সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। এবং যথারীতি কদমবুসি করল। বিনয়ের সঙ্গে আব্দুল মজিদ বলল, ভাইজান ভাল আছেন?

    মবিন উদ্দিন বললেন, ভাল আছি। তুমি বোস। তার মাথার ভেতর একটা ধাক্কার মত অনুভব করলেন। তাঁর সমস্ত মাথা ঘুরে উঠল। কানের ডগা ব্যথা করতে লাগল। এবং তিনি অসম্ভব বিস্ময়ের সঙ্গে আব্দুল মজিদের দিকে তাকালেন। কারণ তার মনে হল তিনি আব্দুল মজিদ মনে মনে কী ভাবছে সব বুঝতে পারছেন। এটা কি তার মনের কল্পনা, না তিনি সৃতি বুঝতে পারছেন। মানুষের মনের কথা বুঝতে পারার কোন কারণ নেই। অথচ তিনি যে মনের কথা বুঝতে পারছেন তা সত্যি। এখানে কোন ভুল নেই।

    আব্দুল মজিদ মনে মনে ভাবছে–ছাগলা ব্যাটা কি টাকা জোগাড় করেছে। মনে তো হয় না। এদিকে শাড়ি ফাড়ি কিনে হুলুস্থুল। নামাজও পড়ল লম্বা চওড়া। নামাজে কাজ দিবে না। আমাকে চেনে না। অনেক দিন সবুর করেছি এইবার ধরলাম। ধরছি যখন ছাড়ব না।

    মবিন উদ্দিনের খুবই অস্বস্তি লাগছে। একী কান্ড। আব্দুল মজিদু এইসব কী ভাবছে। সুপ্তি এসে চা দিয়ে গেল। আব্দুল মজিদ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, মা চা ভাল বানিয়েছ। অনেক দিন পর ভাল চা খেলাম। তোমার ফুপু রান্না বান্নায় ভাল। চা বানাতে দাও—আর পারবে না। তুমি একদিন গিয়ে তোমার ফুপুকে চা বানানো শিখিয়ে দিও গো মা।

    মবিন উদ্দিন বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলেন, আব্দুল মজিদ মনে মনে অন্য কথা বলছে। সে বলছে—এটা কী বানিয়েছে? ধামড়ি মেয়ে চা বানানো শিখেনি। কয়েকটা পাতা দিয়ে পানি গরম করলেই চা হয়ে গেল। এই চা খাওয়া আর চিনি দিয়ে ঘোড়ার পিসাব খাওয়া এক জিনিস।

    আব্দুল মজিদ হাসিমুখে তাকাচ্ছে। মবিন উদ্দিন সেই হাসি দেখে শিউরে উঠলেন। মানুষের ভেতরের এবং বাইরের রূপের এত তফাৎ মানুষ এত অদ্ভুত!

    ভাইজান টাকাটার কি জোগাড় হয়েছে?

    মবিন উদ্দিন বললেন, হ্যাঁ হয়েছে।

    আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন ভাইজান। খুব টেনশানে ছিলাম। কী যে ভাল লাগছে। মনে হল ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।

    মবিন উদ্দিন বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলেন, আব্দুল মজিদের মনের কথা সম্পূর্ণ অন্য। আব্দুল মজিদ বলছে—গাধাটা বলে কী টাকা জোগাড় করে ফেলেছে। পেয়েছে কোথায়? জমিজামা বিক্রি করেছে? না-কি দোকান বেচে দিয়েছে। দোকান বিক্রি করলে সবার মনটন খারাপ থাকতো। শাড়ি ফাড়ি কিনে আমোদ-ফুর্তি করত না। জমা টাকা? গাধাটার এত টাকা ছিল? ইস আগেই টাকাটা নেয়া উচিত ছিল।

    ভাইজানের টাকার জোগাড় করতে কষ্ট হয় নি তো?

    না কষ্ট হয় নাই।

    মবিন উদ্দিন বুঝতে পারছেন আব্দুল মজিদ মনে মনে বলছে–আচ্ছা ব্যাটা কি টাকাটা সত্যি জোগাড় করেছে? না-কি এখনি বলবে, মজিদ টাকাটা একজনের দিয়ে যাবার কথা। এখনো আসছে না কেন বুঝতে পারছি না। যাই হোক তুমি চলে যাও। আমি কাল পরশু নিয়ে আসব। এইসব বলে লাভ হবে না। আমি যাচ্ছি না।

    মবিন উদ্দিন বললেন, তুমি একটু বোস আমি টাকাটা নিয়ে আসি।

    আব্দুল মজিদ বসে রইল। তার চোখে মুখে বিস্ময়। মবিন উদ্দিন পাঁচশ’ টাকার দুটা বান্ডিল এনে মজিদের হাতে তুলেন।

    টাকাটা গুণে নাও মজিদ।

    ছিঃ ছিঃ কী বলেন। আপনি টাকা দিচ্ছেন সেই টাকা গুণতে হবে না-কি? আমি যেমন মানুষ, ফেরেশতা টাকা দিলেও গুণে নেই। তবে আপনার ব্যাপার ভিন্ন। এই জীবনে মানুষ তো কম দেখিনি ভাইজান। কিন্তু আপনার মত দেখি নাই। রাহেলাকে ঐদিন বলছিলাম- তোমার মেয়ের বিয়ের উকিল বাপ করতে হবে ভাইজানকে। তাঁর মত একটা মানুষকে উকিল বাপ পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।

    মবিন উদ্দিন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলেন যে আব্দুল মজিদ মনে মনে ভাবছে—ব্যাটা তোকে পাম দিয়ে আকাশে তুলে দিলাম। তুই আসলে কী জিনিস সেটা আমি যেমন জানি তুইও জানিস। তুই হলি হাদারাম নাম্বার ওয়ান। একটা টেংরা মাছের মাথায় যে বুদ্ধি তোর বুদ্ধি তার চেয়েও কম।

    আব্দুল মজিদকে বিদেয় করে মবিন উদ্দিন ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার ঘরে ঢুকলেন। হঠাৎ তার মনে প্রচন্ড একটা সন্দেহ ঢুকেছে। তার মনে হচ্ছে—আব্দুল মজিদের মনের কথা বুঝতে পারার ব্যাপারে ম্যাজিশিয়ান ছেলেটির কোন হাত আছে।

    মবিন উদ্দিনকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বাবলু কেমন করে যেন হাসল। তারপরই গম্ভীর হয়ে গেল। মবিন উদ্দিন তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article মেঘের ওপর বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }