Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কাল তুমি আলেয়া – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প766 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    কাল তুমি আলেয়া – ১৬

    ষোল

    এ জগৎ কেন? আমি আছি বলে।

    সমস্ত প্রতিষ্ঠানটিতে অস্তিত্ব-উপলব্ধির হাওয়া লেগেছে। আপন্ন উৎসবে অস্তিত্বের এই সাড়ম্বর উপলব্ধিটুকুই আসল। আমি আছি—আমিই আছি। কিন্তু এই বৃহৎ-আমিটার সঙ্গে ছোট বড় বহু বিচ্ছিন্ন আমির প্রত্যক্ষ যোগ। সেখানেই যত গণ্ডগোল।

    ধীরাপদর মনে হয়, নিচের দিকের দক্ষ এবং সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে ওপরের দিকের কলাকুশলী বা সাধারণ বিভাগীয় কর্মীদের কারো মনই সুস্থির নয় খুব। তাদের মনের বিশ্রাম নেই, অস্তিত্বের ঘোষণায় নিজেদের দিকটা বুঝে নেবার জন্য সকলেই পেয়াদা বসিয়ে রেখেছে। ফাঁক মত অনেকেই চুপিচুপি জিজ্ঞাসা করে গেছে তাকে কি হবে—কি পাবে তারা। সেদিন টিফিনে নিজেদের আওতার মধ্যে পেয়ে বহু মাসমাইনে আর সাপ্তাহিক হারের কারিগর ছেঁকে ধরেছিল তাকে-আকাঙ্ক্ষার শূন্য ঝুলি কতটা ভরবে আর কতটা শূন্য থেকে যাবে বুঝে নিতে চায়। কিছু যে পাবে এ তারা জেনেছে, কেমন করে জেনেছে ধীরাপদ জানে না। তাদের ভাগ্য- নিয়ন্ত্রণের আসল লাগামটা এবার ধীরাপদর হাতে—সেই রকমই ধারণা তাদের। সঙ্গে চীফ কেমিস্ট ঘোষ সাহেব আছে, আর আছে মেডিক্যাল অ্যাডভাইসার লাবণ্য সরকার। এর মধ্যে মহিলাটির অবস্থান তাদের বাঞ্ছিত নয়, কিন্তু তার অসি-ধারণের মানুষটা অর্থাৎ ছোট সাহেব এতে নেই—সেটা মস্ত ভরসার কথা। তবু, আশার সরোবরে সংশয়ের ছায়া কাঁপছে একটা।

    অন্যান্য প্রতিশ্রুতির সঙ্গে স্পেশাল বোনাস ঘোষণার সংবাদটা পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ধীরাপদর বিশ্বাস, ভবিষ্যতে অবিমিশ্র আনুগত্য লাভের আশায় বড় সাহেব কোম্পানীর ইউনিয়নের কোনো পাণ্ডার কাছে সে-রকম আভাস কিছু দিয়ে থাকবেন। তার ওপর ধীরাপদ নিজেও ভুল করেছে একটু। মন বোঝার জন্য সেও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ফলে, আবেদনের চিনি ছড়িয়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটা দাবির খসড়া নিয়ে হাজির তারা। মর্ম, প্রতিষ্ঠানের আজকের এই সোনার দিনটির সঙ্গে তাদের দীর্ঘ দশ বছরের রক্ত-জল-করা পরিশ্রম যুক্ত। তখন তারা প্রাপ্তির দিকে তাকায়নি, স্বার্থ নিয়ে জুলুমবাজি করেনি। প্রতিষ্ঠানের কাছে সুস্থ জীবনযাত্রার রসদটুকুই শুধু প্রত্যাশা এখন। আবেদনে রসদের ন্যূনতম তালিকাও পেশ করেছে একটা। সেই তালিকা দেখে ধীরাপদর দুই চক্ষু স্থির। এর আংশিক মেটাতে হলেও যে টাকার দরকার সেই অঙ্ক কল্পনার বাইরে।

    ভুলের একমাত্র সার্থক ফসল অভিজ্ঞতা। স্বেচ্ছাকৃত এই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে ধীরাপদর আর একদিকে চোখ গেল। সে দিকটা খুব তুচ্ছ নয়। বড় সাহেবের নির্দেশ, সকল দিক ভেবেচিন্তে আর বিবেচনা করে প্রতিশ্রুতির সোনার জলে মুড়ে উদবোধনী তৈরী করতে হবে। এদের প্রত্যাশার সঙ্গে সেই নির্দেশের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গতির দিকটাই আগে যথাযথ জানা দরকার।

    এদিকটা জানতে গিয়ে ধীরাপদর চক্ষুস্থির। অ্যাকাউনটেন্টকে ডেকে পাঠিয়েছে, হিসাবের খাতাপত্র তলব করেছে। তারপর মোটামুটি হিসাব থেকে যে আয়ের অঙ্কটা বৃদ্ধ অ্যাকাউনটেস্ট ভদ্রলোক তুলে ধরেছেন তার সামনে, সে-ও কল্পনার বাইরে। ধীরাপদর নিখাদ বিস্ময়, এত টাকাও আবার লাভ হয় কেমন করে? আর হয় যদি, সে টাকা দিয়ে মানুষ করে কি?

    লাবণ্যর অনুপস্থিতিতে আলোচনা প্রসঙ্গে বিস্ময়টা সেদিন অমিতাভর কাছে প্রকাশ করে ফেলেছিল। এই আয়ের ভিত্তিতে প্রতিশ্রুতির খসড়াটা করবে কিনা সেই পরামর্শ. চেয়েছিল। জবাবে ছদ্মগাম্ভীর্যে ভুরু কুঁচকে পাল্টা হুমকি দিয়েছে সে, মামাকে বলে এইবার আপনার চাকরিটি খাবার সময় হয়েছে। পরে হেসে বলেছে, জানবেন – চোখ, খুলে থাকুন আরো জানবেন। কত ভাবে কল ঘুরিয়ে কত তেল আসছে সেটা ঠিক ঠিক মামাও জানে কিনা সন্দেহ।

    তাহলে কে জানে?

    ছোট সাহেব জানে, তার চেলা-চামুণ্ডারা জানে, তার এতদিনের সহকর্মিণী জানে। আবার অনেক সময় কেউ জানেও না। এই বেলোয়ারী কল আপনি ঘোরে।…তবে এবারে আপনারও জানার পালা আসছে। সহকর্মিণী সহ-শূন্য হতে চলেছেন, তাঁর সঙ্গে প্যাক্ট করুন।

    হা-হা করে হেসে উঠেছিল। ধীরাপদর ঠোটের ডগায় জবাব এসেছিল, প্যান্ট তো সম্প্রতি আপনি করেছেন দেখছি। বলেনি। বলবে না। ঠাট্টার ছলেও প্রলোভনের পরদা তুলবে না আর।

    তোলেনি। কদিন ধরে তিনজনে মিলেই আলোচনায় বসেছে। ধীরাপদর ঘরেই। অমিত ঘোষ, লাবণ্য আর ধীরাপদ। অমিত ঘোষের মেজাজপত্র ভালই এ পর্যন্ত। টেলিফোনে ডাকলেই আসে। আর ঘরে ঢোকার আগে ও-ঘর থেকে লাবণ্যকেও ডেকে নিয়ে আসে। তার বেপরোয়া ঠাট্টা আর ফষ্টিনষ্টিতে আলোচনা বেশিদূর গড়ায় না। সব থেকে বেশি আনন্দ, যে কোনো ছুতোয় লাবণ্যকে কোণঠাসা করতে পারলে। বিপরীত মত আর বিপরীত মন্তব্য ব্যক্ত করে সে পথ লাবণ্যই করে দেয়। শেষে তর্ক করে। রাগ দেখায়। বলে, কাল থেকে আর আসবে না। বলা বাহুল্য, রাগ-বিরাগের সবটাই লঘু-প্রশ্রয়পুষ্ট। অমিত ঘোষের বেপরোয়া আক্রমণও বেশির ভাগ তেমনি স্কুল, কলাকৌশল বর্জিত। তার তাপ নিভৃতে ছড়াবার মত। তবু প্রলোভনের পরদা তুলে মনটাকে সেই নিভৃতে উকিঝুঁকি দিতে দেয়নি ধীরাপদ। সেখানে বসে যে লোলুপ তাপ খোঁজে আর রূপ খোঁজে আর ইশারা খোঁজে, ভঙ্গি খোঁজে আর সুর খোঁজে আর অলক্ষ্য সুরভি খোঁজে, তার এধারে পাকাপোক্ত দেয়াল তুলেছে সে।

    এই নিরাসক্ত ব্যতিক্রমটা লাবণা অন্তত লক্ষ্য করেছে। অমিতাভকে আড়ালে কিছু বলেছে কিনা জানে না। তার সেদিনের বিদ্রূপের লক্ষ্য ধীরাপদ। আলোচনা কতটা কানে গেছে সে-ই জানে, একের পর এক সিগারেট টেনেছে আর চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখেছে অনেকক্ষণ পর্যন্ত। তারপর হঠাৎ-ই পার্শ্ববর্তিনীর উদ্দেশে বলে বসেছে, ধীরুবাবুর একখানা ফোটো তুলে দিচ্ছি। প্ল্যানিং কমিশনে পাঠিয়ে দাও, তাদের সিরিয়াস লোকের খুব অভাব শুনেছি!

    ধীরাপদ প্ল্যানের ফাইল বন্ধ করে ফেলেছে।— আজ আর হবে না, আজ থাক। চাপা আনন্দে আর ছদ্মকোপে লাবণ্য তাকেই সমর্থন করেছে তক্ষুনি। –কি করে হবে, কাজ এগোতে চান তো এঁকে বাতিল করুন।

    সঙ্গে সঙ্গে অমিতাভ মুখোমুখি ঘুরে বসে চোখ পাকিয়েছে, আমাকে বাতিল করে দুজনে এগোতে খুব সুবিধে, কেমন? দাঁড়াও মামার কাছে নালিশ করছি।

    হাসির চোটে অমিতাভ ঘর কাঁপিয়েছিল। লাবণ্যর মুখ লাল হয়েছিল। ধীরাপদ শুনেছিল। ধীরাপদ দেখেছিল। যতটুকু হাসা দরকার হেসেও ছিল হয়ত। কিন্তু ধীরাপদ কান দেয়নি। চোখ দেয়নি।

    বড় সাহেবের ভাষণে আশার প্রতিশ্রুতি আর ঘোষণা কিভাবে কতটা প্বকাশ করবে সে সম্বন্ধে একেবারে নীরব সে। কোম্পানীর বাৎসরিক আয়ের হিসেবটা একটা অস্বাচ্ছন্দ্যের মত মনের তলায় থিতিয়ে আছে। কর্মচারীদের প্রত্যাশার প্রসঙ্গগুলি শুধু উত্থাপন করেছে। কাজেই আলোচনায় বিতর্ক উপস্থিত হয়নি একদিনের জন্যেও। অমিতাভ মন দিয়ে শোনেও নি, মন দিয়ে ভাবেও নি কিছু। লাবণ্যও তর্ক করে কোন জটিলতার মধ্যে ঢুকতে চায়নি। হেতু স্পষ্ট। সে জানে বড় সাহেবের কলমের খোঁচায় শেষ পর্যন্ত প্ল্যানের অনেকটাই বাতিল হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে তার তিক্ততা সৃষ্টি করে কাজ কি? কর্মচারীরা তিন মাসের বোনাস চায় শুনে মুখ টিপে হেসেছে। ধীরাপদর দেড় মাসের প্রস্তাবনাতেও। তাতেও অবশ্য ভাগাভাগি আছে—নিম্নতম বেতন- হারে দেড় মাস থেকে ঊর্ধ্বতন বেতন-হারে পনেরো দিন পর্যন্ত।

    —করুন। কিন্তু মিস্টার মিত্র না ভাবেন সবাই মিলে আমরা শূন্যে ভাসছি! লাবণ্যর মিষ্টি ব্যঞ্জনা।

    অর্থাৎ, যা করার তিনি তো করবেনই, মাঝখান থেকে একজনের অবিবেচনার দরুন সকলের নাম খারাপ।

    আপনি কি করতে বলেন? কতটা শূন্যে ভাসছে ধীরাপদর আঁচ করার চেষ্টা। আমরা এক মাসের সাজেস্ট করলে হয়, মিস্টার মিত্র হয়ত কেটেকুটে পনেরো দিনে টেনে নামাবেন!

    এই প্ল্যানে মিস্টার মিত্র নেই। তাছাড়া কাটাকাটি টানাটানি কিছু তিনি না-ও করতে পারেন।

    অমিতাভ এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। লাবণ্যর উদ্দেশে এবারে তরল ভ্রুকুটি করে উঠল, জোরখানা দেখেছ? এ কি তোমার ব্লাডপ্রেসার মাপা যে বড় সাহেবের মেজাজ বুঝে ওঠাবে নামাবে?

    তাই তো…! সবিদ্রূপ গাম্ভীর্যে লাবণ্যেরও নতিস্বীকারে কার্পণ্য নেই।

    কিন্তু কদিন ধরে ধীরাপদ নিজের এই জোরের দিকটাই নতুন করে অনুভব করছে আবার। করছে বলেই বিদ্যুৎ-চমকের মত একটা সঙ্কল্প মনের তলায় ঝলসে উঠছে থেকে থেকে। বাণী বিবৃতি ভাষণ আর মন্তব্য লিখে অন্ধের যষ্টির মত এ ব্যাপারে অন্তত বড় সাহেবের বিশ্বাসের যষ্টিটা যে মোটামুটি তার হাতে এসে গেছে সেটা এরা কেউ জানে না। সব বিবৃত্তি আর সব ভাষণ বড় সাহেব আগে পড়েও দেখেন না আজকাল। বক্তৃতার আগে হয়ত চোখ বুলিয়ে নেন একবার। গোড়ায় গোড়ায় দুটো চারটে লাইন অদলবদল করতে চেষ্টা করেও পেরে ওঠেননি। মনে হয়েছে, একটা ভাবতরঙ্গের ওপর বেখাপ্পা আঁচড়, পড়ল, ঠিক মিশ খেল না। এখন আর সে চেষ্টাও করেন না। তথ্য পেলে সে যা লিখে দেবে, নীরস তথ্যগুলো মুচড়ে যে আবেদনের সুর নিঙড়ে নিয়ে আসবে সেই বৈচিত্র্য তিনি বহুবার দেখেছেন, বহুবার আস্বাদন করেছেন। এখন বক্তব্য বলেই খালাস তিনি, আর কিছু ভাবেন না।

    …এই জোরটার সঙ্গে নিজের একটুখানি সক্রিয় অভিসন্ধি মেশালে কি হয়? কেমন হয়? কিন্তু সবুর, এখন না। তার আগে অনেক ভাবার আছে। কোম্পানীর বাৎসরিক আয়ের হিসেবটা দিক-দিশারিণীর মত ইশারার মায়া ছড়াচ্ছে। কিন্তু রোসো, এখন না। তার আগে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করার আছে। এখনো অনেক ভাবতে বাকি, অনেক জটিলতার জট ছাড়ানো বাকি।

    আরো একটা ব্যাপার লাবণ্য বা অমিতাভ কেউ জানে না। এখানকার উৎসবের কয়েকদিনের মধ্যেই কানপুরে অল ইন্ডিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশানের বাৎসরিক অধিবেশন। সেই অধিবেশনের বড় সাহেবই প্রধান হোতা এবারে। নিজের প্রাধান্য সেখানে উনি যত বড় করে তুলতে পারবেন, আগামী বছরের লক্ষ্যের নিশানা তত কাছে এগিয়ে আসবে। এখানকার এই হাতের পাঁচ নিয়ে তাঁর ভাবনা-চিন্তার অবকাশ বা প্রেরণা কম। তিনজন যোগ্য লোক মাথা ঘামাচ্ছে তাই যথেষ্ট।

    তাঁর ব্লাডপ্রেসার এখনো বাড়তির দিকে শুনেছে। ধারাপদর অনুমান, যে কারণেই হোক ছেলের সঙ্গে সেই নির্বাক বিরোধটা ক্রমশ পুষ্ট হয়ে উঠছে আবার। পর পর ক’টা সন্ধ্যায় সিতাংশুকে অনুপস্থিত দেখল। হিমাংশু মিত্র কিছু বলেননি বা খোঁজ করেননি। ধীরাপদ গোড়ায় ভেবেছিল, রাতের আলোচনায় বিষয়বস্তু বদলেছে বলে ছেলে আসছে না। কিন্তু তা যেন নয়। বড় সাহেবের মানসিক সমাচার কুশল মনে হয় না। আর সিতাংশুর মুখ দেখলে মনে হয়, এই দুনিয়ার কোনো কিছুর মধ্যেই নেই সে।

    আসন্ন উৎসবের প্রসঙ্গ তুললে হিমাংশুবাবু শুরুতেই ছেঁটে দেন সেটা। বলেন, তোমরা করো, দেখব’খন। হঠাৎ সেদিন জিজ্ঞাসা করে বসলেন, আলোচনায় লাবণ্য আর অমিত দুজনেই আসছে তো?

    প্রশ্নের তাৎপর্য না বুঝেও ধীরাপদ ঘাড় নাড়ল। পাইপ-চাপা মুখের মৃদু-গম্ভীর হাসিটা বরাবরই কমনীয় লাগে। সেদিনও লাগল।

    —মেয়েটা পাশে আছে বলে ছোকরার মেজাজ তাহলে ঠাণ্ডাই এখন?

    জবাবের প্রত্যাশা ছিল না, বলার কৌতুকটুকুই সব। সরকারী অর্ডার সাপ্লাইয়ের গোলযোগে লাবণ্য সরকারের পাশে থাকা নিয়ে সেদিন যে ঠাট্টা করেছিলেন তারই উপসংহার এটা। কিন্তু হিমাংশু মিত্র সেখানেই থামলেন না, আরো হালকা জেরার সুরে বললেন, কতটা পাশে আছে টের পাও?

    প্রসন্ন নিরিবিলিতে বড় সাহেবের এ ধরনের পরিহাস-রীতি একেবারে নতুন নয়।

    চারুদির সহোদর নয় ধীরাপদ, সহোদরতুল্য। তিনজনের সম্পর্কের যোগটা বিচিত্র। কিন্তু তবু ভিতরে ভিতরে হোঁচট খেয়েছে একটা, সুশোভন এক টুকরো হাসিও ঠোটের কোণে টেনে আনতে পেরেছিল কিনা সন্দেহ। মনে হয়েছে, সকলের সব প্ল্যানের ওপর দিয়ে উনিও কিছু একটা প্ল্যান ছকে বসে আছেন। ওই হাসি-মাখা গাম্ভীর্য বিদীর্ণ করে তার হদিস পাওয়া শক্ত।

    কিন্তু হাসির ওপর আত্মবিস্মৃত চিন্তার ছায়াও পড়তে দেখেছে। সব কিছুই মর্মস্থলের দূরধিগম্য গহ্বরে ঠেলে দিয়েছেন তারপর। আসল কাজের কতদূর কি করলে?

    অর্থাৎ কানপুর অধিবেশনের ভাষণ রচনার কাজ। মর্যাদা-লক্ষ্মীর অন্তঃপুর পর্যন্ত নিরঙ্কুশ একখানা গালচে বিছানোর কাজ। বরমাল্য লাভ হলে মর্যাদাটুকুই শেষ পাওনা নয়, নিজের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎও দিগন্ত ছুঁয়ে আসতে পারে। মনোবল থাকলে এই বরাসন থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্পে ভারত সরকারের বাণিজ্যনীতি নিয়ন্ত্রণে পর্যন্ত তর্জনী- নির্দেশ চলে।

    অতএব এ কাজটাই কাজ আপাতত।

    চড়া প্রেসারের দরুন কড়া রকমের বিশ্রাম নির্দেশ, কিন্তু বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে বই ঘেঁটে জার্নাল ঘেঁটে প্যামফ্লেট ঘেঁটে তিনি ধীরাপদর জন্যে তথ্য সংগ্রহ করে রাখেন। রাত্রিতে তাই নিয়ে কথা হয়, আলোচনা হয়। নীরস তথ্যগুলোও এক ধরনের মানসিক প্রবণতার তলায় তলায় বুনে যেতে হবে তাকে—সেই রকমই পছন্দ বড় সাহেবের। লোক শোনে, কান-মন টানে। সেই রকম লিখতে বলেন—সেই রকম করে, আর আরো জোরালো করে।

    কিন্তু শিল্পীর মত ফুল-ফলের বীজ ছড়াবে যে লোকটা, সোনার তারে রূপোর তারে সম্ভাবনার পাকাপোক্ত জাল বুনবে তার উৎসাহ আর উদ্দীপনার অভাব দেখে ঈষৎ ক্ষুণ্ণ, ঈষৎ অসহিষ্ণু তিনি। অপর কোনো প্রসঙ্গে বরদাস্ত করতে চান না। বলেন, ওদিকের ভাবনা-চিন্তা সব অফিসে সেরে আসবে, এই ব্যাপারটা অনেক বেশি দরকারী বুঝছ না কেন?

    বুঝেছে বলেই ধীরাপদর জেগে ঘুমানো দরকার।

    বুঝেছে বলেই অন্যদিকের ভাবনা-চিন্তাটা মাঝে মধ্যে এখানেও বড় করে তোলা দরকার।

    কারণ অন্যদিকের ওই ভাবনা-চিন্তা থেকে বড় সাহেবের ভাবনা-চিন্তাটা আপাতত বিচ্ছিন্ন রাখাই উদ্দেশ্য তার। কানপুরের অধিবেশনের ব্যাপারে নিশ্চিত্ত হতে পারলে এদিকের ব্যাপারে কিছুটা অঙ্কত মন দিতেন তিনি, চোখ দিতেন। ধীরাপদর কাম্য নয় তা। অন্ধের নিষ্প্রাণ জড়-দৃষ্টি নয় সে। তার দুটো করে হাত-পা চোখ-কান আছে। দেহ আছে। সেই দেহে নিজস্ব মন বলে বস্তু আছে একটা। সেই অলক্ষ্য থেকে অনুক্ষণ তেজস্কর বাষ্প নির্গত হচ্ছে কিসের। মনটা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক উপস্বত্বের ভিতরটার ওপর দাপাদাপি লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে আর দেখছে। দেখছে, ভিতরে কোথাও বসে যায় কিনা। দেখছে, অনাগতকালে সংস্কারের কোন কাঠামোটা দাঁড়াতে পারে এর ওপর।

    কিন্তু রোসো, রোসো। সবুর। এখনো অনেক হিসেব বাকি, এখনো অনেক ভাবতে বাকি।

    হিসেব করছে আর ভাবছে। অফিসে নয়, এখানেই—এই বাড়িতেই। বড় সাহেবের সামনে বসেও নয়। রাত্রি যখন গভীর তখন। অ্যাসবেসটস পার্টিশনের ওধারে মানকের নাকের ঘড়ঘড়ানিতেই চড়াই-উৎরাইয়ের অবিরাম কসরত চলতে থাকে। ধীরাপদর একটুও অসুবিধে হয় না তাতে। বরং সুপ্তিময় নির্জনতায় উদ্দীপনা বাড়ে আরো। কোণের টেবিলের ঢাকা-আলোয় ঘাড় গুঁজে পাতার পর পাতা লেখে আর হিসেব করে। হলের আবছা আলোয় পায়চারি করে আর ভাবে।

    এ যেন একটা নেশার মত হয়ে উঠেছে। হোক নিরর্থক, নেশার আবার কে কবে অর্থ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে?

    কিছুদিন হল ধীরাপদ ঠাঁইবদল করেছে। খুব স্বেচ্ছায় করেনি, কিন্তু করলেই ভালো হত। হিমাংশু মিত্রের ঠাট্টাটা তাহলে এভাবে ছড়াত না।

    সুলতান কুঠি ছেড়ে আসার কোনো আগ্রহ না দেখে বড় সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। সে অমন একটা জায়গা আঁকড়ে পড়ে আছে কেন? এনি সুইট অ্যাফেয়ার?

    এর তিন-চার দিনের মধ্যে হিমাংশুবাবুর ওখান থেকে বেরুবার সময় অমিতাভর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা। সেও সবে ফিরছে। দেখা মাত্র চোখ পাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, কি ব্যাপার মশাই, মামা কি বলছে?

    রাত তখন সাড়ে নটা। ধীরাপদর ফেরার তাড়া ছিল। গত কদিন ধরেই এই ভাড়াটা বিশেষভাবে অনুভব করছে। গিয়ে খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়া ছাড়া কাজ নেই, তবু মনে হচ্ছিল দেরি হয়ে গেল। কিন্তু এই লোক সামনে দাঁড়ালে পাশ কাটানো শক্ত। গুরুতর কিছু নয় যে বোঝাই যাচ্ছে, তাছাড়া এইমাত্র ওই ভদ্রলোকের কাছ থেকেই নেমে আসছে। তবু ছদ্ম-অনুশাসন কৌতূহলোদ্দীপক।

    কি বলেছেন?

    কি বলেছেন। অভিভাবকসুলভ ভ্রুকুটি, ঘরে আসুন, বলছি—

    ধীরাপদ বাধা দেবার অবকাশ পেল না। ডানদিকের বড় হলের ভিতর দিয়ে লঘু পদক্ষেপে নিজের ঘরের দিকে এগোলো সে। কোটের পকেট থেকে চাবি বার করে ঘরের দরজা খুলল। বাড়ির মধ্যে মালিকের অনুপস্থিতিতে এই ঘরটাই শুধু তালাবদ্ধ থাকে।

    তেমনি অগোছালো ঘর। বহুদিন আগে যেমন দেখেছিল তেমনি। ধীরাপদর অবাধ্য দৃষ্টিটা টেবিলের তাকের দিকে গেল প্রথমেই। না, কোনো অ্যালবাম-ট্যালবাম নেই। বিছানায় বসে পড়ে অমিতাভ গায়ের কোট আর জুতো-মোজা খুলতে ব্যস্ত।

    বসুন-

    ধীরাপদ চেয়ারটা টেনে বসল।—এক্ষুনি উঠব, রাত হয়ে গেল।

    ট্রাউজারসুদ্ধ বিছানায় পা গুটিয়ে আঁটসাঁট হয়ে বসে অমিতাভ ঘটা করে ভুরু কোঁচকালো আবারও। – তা তো গেল, তা বলে আপনার জন্যে কে অপেক্ষা করে বসে আছে সেখানে?

    কেউ না। মামা কি বলেছেন?

    ওই কথাই। এখানে এসে থাকার জন্য অত সাধ্য-সাধনা করেও আপনাকে আনা যাচ্ছে না কেন? খোঁজ নিতে হচ্ছে, সন্দেহ যখন হয়েছে কিছু একটা আছে—এসব ব্যাপারে মামা রীতিমত এক্সপার্ট! হাসতে লাগল।

    ধীরাপদ চুপচাপ চেয়ে রইল খানিক। এই তামাশা আশা করেনি। বলল, ভাগ্নেও কম যায় না। তাকে দ্বিতীয়বার চোখ পাকাবার অবকাশ না দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তা এ সুখবরটা মামার মুখ থেকেই পেলেন?

    না, চারুমাসি বলছিল। মামা তাকে জিজ্ঞাসা করেছে, অত টান কিসের, আসতে চায় না কেন? সঙ্গে সঙ্গে আবার কি মনে হতে চশমার ওধারে আর এক প্রস্থ কৌতুক উপছে উঠল। লাবণ্যের ধারণা, ব্লাডপ্রেসারের সুযোগে মামাকে ভালো ভাবে বিছানায় আটকে ফেলেছে, নট নড়ন চড়ন। দুপুরে কোন্ দিকে অফিস করতে যায় খবরটা দিতে হবে তাকে —

    জোরেই হেসে উঠল এবারে। এরকম অকৃত্রিম হাসির মুখে মামা ছেড়ে আরো পদস্থ কাউকে ধরে টান দিলেও অশোভন লাগে না। কিন্তু ধীরাপদর ভিতরটা বিরক্তিতে ছেয়ে উঠছে। কেন নিজেও সঠিক জানে না। তবু একটা খবর জানার আছে। চারুদির খবর। আর পার্বতীর খবর। যাই যাই করেও ধীরাপদ দ্বিধা কাটিয়ে এর মধ্যে একদিনও সেখানে গিয়ে উঠতে পারেনি। সেদিন চারুদি বার বার করে বলে দিয়েছিল আসতে, অমিতের সঙ্গে কি কথা হয় না হয় তাকে জানাতে। কথা অনেক হয়েছে, সরকারী অর্ডার সংক্রান্ত বিড়ম্বনা গেছে, নতুন কেমিস্ট আনার উত্তাপ গেছে—সমস্ত ক্ষোভের বিপরীত প্রবাহ চলেছে এখন। তবু চারুদিকে জানাবার মত কিছু আছে একবারও মনে হয়নি। কিন্তু তার দ্বিধা চারুদির জন্যেও অভ নয়, যত আর একজনের জন্যে।

    কিন্তু এই একজনের মুখ দেখে সেই বাড়ির মানসিক সমাচার কুশলই মনে হয়।

    চারুদির এখান থেকে এলেন?

    হুঁ। মজাটা জমবে ভেবেছিল অথচ জমল না কেন তাই সম্ভবত লক্ষা করছে। ভালো আছেন তাঁরা?

    দ্বিবচনের প্রশ্নটা খেয়াল করল কিনা বোঝা গেল না। ঈষৎ বিরক্তির সুরে জবাব দিল, এমনিতে ভালই, তবে মুখ ভার আর উঠতে বসতে ঠেস। সব কাজকর্ম ছেড়ে দিনরাত তার আঁচলের তলায় বসে থাকলে বোধ হয় মন ভরে।

    কার? নির্লিপ্ত জিজ্ঞাসু।

    খুব স্বাভাবিক লাগল না প্রশ্নটা।—কার আবার, আপনার দিদির!

    আর পার্বতী?

    চকিতে দৃষ্টিটা তার মুখের ওপর এসে স্থির হল—পার্বতী কি?

    দুই এক নিমেষ তেমনি চেয়ে থেকে মনের প্রশ্নটা চোখে বোঝালো ধারাপদ। মুখের জিজ্ঞাসা ভিন্ন।—সে কেমন আছে?

    অমিতাভ হাসল বটে, কিন্তু খানিক আগের হাসির মত প্রাঞ্জল নয়। বলল, ভালই আছে, তবে মেজাজ তারও খুব ভালো নয় বোধ হয়। মাসি কয়েকবার ডেকেও সাড়া পায়নি, ঘরেও আসেনি।

    একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ধীরাপদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আরো নিরুত্তাপ শোনালো মন্তব্যটা। বলল, এলো না কেন…আপনি চলে আসার পর ওই জন্যেই হয়ত বকুনি খেতে হয়েছে।

    তার মানে?

    এতক্ষণে ধীরাপদ হাসল একটু, তার মানে আপনার আঁচলের ভাগ্য, তা এখন আপনি ছিঁড়ন খুঁড়ন যাই করুন—

    হেঁয়ালির ধার ধারে না অমিতাভ ঘোষ, স্বভাব অনুযায়ী ধমকে ওঠার কথা। কিন্তু খুব হেঁয়ালির মত লাগছিল না হয়ত, মনোযন্ত্রের একটা বিকৃত তারের ওপর আঙুল পড়েছে যেন।—অসহিষ্ণুতা সত্ত্বেও ফিরে বিদ্রুপই করে উঠল সে।—আপনার ভাগ্যে আঁচল জুটলে কি করেন, ধরে বসে থাকেন?

    আঁচল জুটলে থাকি। জোটে না। চলি-

    বাস ধরার জন্য বেশ তাড়াতাড়ি পা চালিয়েছে ধীরাপদ। একটু বাদেই গতি শিথিল হল, ভিতর থেকে কে বুঝি ওকে টানলে। তাড়া কিসের? তাগিদ কিসের? হিমাংশুবাবুর ঠাট্টাটা ফিরে আবার কানে আসতে ভিতরটা অত তিক্ত হয়ে উঠেছিল কেন? নিজেকে একটা রূঢ় বিশ্লেষণের মুখে ঠেলে দিল সে। কাজের এত চাপ সত্ত্বেও আর বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কিছুদিনের জন্যেও সুলতান কুঠি ছেড়ে আসতে মন চায় না। এতকাল ধরে আছে, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু পুরুষমানুষের কাজের থেকেও সেই দুর্বলতার প্রশ্রয়টা বড় হয়ে উঠবে—সেটা অস্বাভাবিক নয় তো কি! সেদিন সোনাবউদি পর্যন্ত বলেছিল, আপনার নড়তে বাধাটা কোথায়?

    আরো ভিতরে ঢুকবে ধীরাপদ? আরো তলিয়ে দেখবে? গণুদার ওই সংসারটি ওখানে না থাকলে সাড়ে সাতশ’ টাকা মাইনে জেনারেল সুপারভাইজার ধীরাপদ চক্রবর্তী এতকাল থাকা সত্ত্বেও সুলতান কুঠির ওই ঘরটা এভাবে আঁকড়ে থাকত কিনা ভাববে? আরো? পড়ন্ত শীতের রাতে কুয়োতলায় গুরগুব করে জল ঢেলেছিল গায়ে… আদুড় গায়ে শাড়ি জড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে সোনাবউদি এসে দাঁড়িয়েছিল খবর নিতে…ভাববে?

    আবারও জোরে হাঁটতে লাগল। জোরে হেঁটে নিজেরই অস্তস্তল দু পায়ে মাড়িয়ে যেতে লাগল।

    একাদশী শিকদারের চোখে সরাসরি জল দেখবে ভাবেনি ধীরাপদ। মাত্র মাসখানেকের জন্য যাচ্ছে শুনে আর দ্বিতীয় বাংলা খবরের কাগজখানা যেমন পাচ্ছিলেন তেমনি পাবেন জেনে একটু আশ্বস্ত হয়েছেন তিনি।

    শকুনি ভট্টচাযের শ্রাদ্ধ-শান্তি মিটে যেতে ছেলেরা গোটা সংসারটি তাঁদের কর্মস্থলে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁদের পরিত্যক্ত ঘর ক’টা রমণী পণ্ডিত দখল করতে আসছেন। যে জায়গায় ছিলেন এতকাল, রাজপ্রাসাদ মাথার ওপর ভেঙে পড়েনি তাই আশ্চর্য। যদিও গোটা বাড়িটারই এক অবস্থা, তবু যতটুকু নিরাপদ হওয়া যায়। কিন্তু একটু- আধটু চুনজলের আস্তর না করালে উঠে আসেন কি করে, বিশেষ করে যেখানে একজন দেহরক্ষা করেছেন। সমস্যাটা রমণী পণ্ডিত ধীরাপদর কাছে ব্যক্ত করতে সে টাকা বার করে দিয়েছে। তাঁকে একদিন কোণের ঘরে সে-ই ঠেলেছিল, এটুকু খেসারত তারই দেয়। ফলে রমণী পণ্ডিতও ঠাই-বদলের তোড়জোড়ে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু এরই মধ্যে মুখ শুকিয়ে অনেকবার তার কাছে এসেছেন। বলেছেন, আপনি যে কত বড় বলভরসা ছিলেন আমাদের আমরাই জানি, মানুষ তো কতই দেখলাম…।

    এই বজ্রচিত্ত লোকটার ওপর যত বিরূপই হোক এক-এক সময়, তাঁর অক্লান্ত সংগ্রামী দিকটার প্রতি ধারাপদর ভিতরে ভিতরে কোথায় যেন দরদ লুকানো একটু। জুয়ার আসরে মণুদার মদ খেয়ে আসার ব্যাপারটা জানার পর পণ্ডিতের মেয়ে কুমুর সঙ্গে তার যোগটা চেষ্টা করেও একেবারে মন থেকে ছেঁটে দিতে পারে নি। একাদশী শিকদারের ইঙ্গিত ভুলতে পারেনি। ফলে তার সব রাগ গিয়ে পড়েছে মেয়ের এই বাপের ওপর। তবু। মুখের দিকে তাকালে ব্যর্থতার সমুদ্র থেকে ডাঙায় ওঠার অক্লান্ত চেষ্টাটাই আগে চোখে পড়ে। নতুন পুরানো বইয়ের দোকানের মালিক দে-বাবুকে লোভনীয় জ্যোতিষের বই এবং তাঁর ইঙ্গিতমত আরো দু-তিনখানা সস্তা আকর্ষণের বই তিনি লিখে দিয়েছেন। তবু অনটনের মরু-বালু দিনে দিনে তেতে উঠছে।

    রমণী পণ্ডিতকেও আশ্বাস দিয়েছে ধীরাপদ, ফিরে এসে ভাববে কি, করা যায়। কিন্তু কিছুদিন বাদে সে যে এখানেই ফিরে আসবে আবার তা যেন কেউ মন থেকে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। একাদশী শিকদার না, রমণী পণ্ডিত না, এমন কি গণুদার মেয়ে উমারাণীও না।

    সকালে বারকতক এসে উমারাণী কান্না সামলে পালিয়েছে। শেষে স্যুটকেস গোছাতে দেখে একেবারে ফুঁপিয়ে কান্না। ছেলে দুটো হাঁ করে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দিদির কান্না দেখছে। তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠাণ্ডা করতে গিয়ে ধীরাপদ নাজেহাল।

    কান্না থামল তাদের মা এসে ঘরে ঢুকতে। থমকে দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখল দুই এক মুহূর্ত, তারপরেই ধমকে উঠল—এই মুখপুড়ি, সকাল থেকে তোর অত কান্নার কি হয়েছে, অ্যাঁ? যা ভাগ এখান থেকে, ধাড়ী কোথাকার—

    ফ্রকে চোখ মুহুতে মুহুতে উমা ছুটে পালালো। ধীরাপদ মৃদুগম্ভীর ঠেস দিয়েই কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগে সোনাবউদি ভ্রুকুটি করে উঠল, আপনারও তো মুখখানা দেখে মনে হচ্ছে ওর গলা ধরে কাঁদতে পারলে বাঁচেন।… শুধু সুটকেস পেখছি, আর কিছু নিচ্ছেন না?

    চোখে চোখ পড়তে ঠেস দেওয়া দূরে থাক, সামান্য জখাটাও দিয়ে উঠতে পারল না। মাথা নাড়ল। বুকের ভিতরটা টনটন করে উঠছে কেমন।….দুই চোখের গভীরে অত স্নেহ কবে কোন হারিয়ে যাওয়া দিনে আর একজনকার চোখে দেখেছিল যেন। বোধ হয় মায়ের।

    শনি-রবিবারে সত্যিই আসছেন তাহলে?

    গত রাতে উমাকে আশ্বাস দিয়েছিল, প্রত্যেক শনি-রবিবারে আসবে। বলল, দেখি—

    সোনাবউদির মুখখানা গম্ভীরই বটে, কিন্তু দৃষ্টিটা অত গভীর নয়। দেখল একটু, মনোভাব আঁচ করতে চেষ্টা করল হয়ত। আপনাকে ভালমানুষ পেয়ে কত্ত কটু কথা বলেছি, কত হেনস্থা করেছি ঠিক নেই। জ্বালা-পোড়ায় মাথা ঠিক থাকে না সব সময়, কিছু মনে রাখবেন না।

    মনোযোগ দিয়ে রিং থেকে স্যুটকেসের চাবিটা খুলে নিচ্ছিল ধরাপদ। একটা নাটকীয় অভিব্যক্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করছিল। কিন্তু একেবারে রক্ষা করা গেল না। বলল, মনে রাখার মত অন্য অনেক কিছু আছে।…তাছাড়া, আমি ভালমানুষ নই, আমার মধ্যে কত গলদ জানলে—

    থাক। বাধা পড়ল। গাম্ভীর্যের ওপর হাসির আভাস স্পষ্টতর হল আরো। — অল্পস্বল্প গলদ থাকা ভালো, সকল নোড়া শালগ্রাম হলে আমরা হলুদ বাটি কিসে? শরীরের অযত্ন করবেন না, সময়মত খাওয়া-দাওয়া করবেন। অত অনিয়ম করেন কেন? আর দিনরাত অত ভাবেন কি? ওই মেয়েটিকে যদি খুব মনে ধরে থাকে, চোখ-কান বুজে একবার কথাটা পেড়েই দেখুন না। ওতে অনেক সময় কাজ হয়।

    এতদিন ধরে এত নিষ্ঠায় মনের এধারে যে উদাসীনতার দেয়াল গাঁথল, সেটা কি ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল? শকুনি ভটচার্যের মৃত্যুর রাতে গণুদাকে টাকা দিয়েছিল বলে এই সোনাবউদি তাকে ভস্ম করতে চেয়েছিল একেবারে। যাকগে, ধীরাপদ ভাববে না। এই ক-বছর ধীরাপদ অনেক দেখল। ধীরাপদ হাসছিল। বলল, নিজের চোখ-কানের ওপর আমার যথেষ্ট মায়া আছে। চাবির রিংটা তার দিকে বাড়িয়ে দিল, এটা আপনার কাছে রাখুন, আমার কাছে থাকলে হারাবে। কদিন চেষ্টা করেও গপুদাকে ফাঁকমত ধরা গেল না, সামনের শনি-রবিবারে ওই জন্যেই একবার আসতে চেষ্টা করব। তাঁর সঙ্গে আমার বোঝাপড়া আছে।

    চাবির রিং হাতে সোনাবউদি দু চোখ কপালে তুলে ফেলল, কি বোঝাপড়া? ধরে মারধর করবেন নাকি?

    ধীরাপদ কান দিল না, স্যুটকেস হাতে উঠে দাঁড়াল। আরো দুটো কথা এই মুহূর্তেই বলে ফেলতে হবে। সোনাবউদিকে সব কথা সব সময় বলা যায় না। বলার সুযোগ মেলে না।—চলি। যে-কোনো দরকারে খবর দেবেন।…আর, একটু-আধটু আপনজন ভাবতে চেষ্টা করবেন।

    এবারে সোনাবউদির হাসি কিন্তু দৃষ্টিটা গভীর।

    মানকে আর কেয়ার টেক বাবুর আদর-যত্ন সত্ত্বেও প্রথমে কয়েকটা দিন বাড়িটাকে প্রবাস আবাসের মত লাগছিল ধীরাপদর। কাজে এসেছে, কাজ ফুরোলে চলে যাবে। ছোট সাহেবের বিয়ের সম্ভাবনা আঁচ করে কিছুদিন আগে মানকে বলেছিল, বিয়ে হচ্ছে ভালোই তো হচ্ছে, মেয়েছেলে মা থাকলে গৃহস্থবাড়ি মরুভূমির মত। মেয়েছেলের আবির্ভাবে আবার এটা গৃহস্থবাড়ি হয়ে উঠলে ফলাফল মরুভূ হয়ে উঠবে কিনা মানকে আর কেয়ার টেক বায়ুর অবশ্য সেটাই আসল দুর্ভাবনা। কিন্তু তবু কথাটা বীরাপদর আবার নতুন করে মনে পড়েছে। এ বাড়ির সবাই নিঃসঙ্গ। এখানে বাসের চিহ্ন আছে, স্থিতির মায়া জড়ানো নেই কোথাও।

    এখানে এসে থাকা নিয়ে গোড়ার দিকের ঠাঠাটা সত্যি হল দেখে মালকে আর ফেয়ার-টেক বাবু দুজনেই সচকিত একটু। পাল্লা দিয়ে দুজনেই তারা মনোরঞ্জনে ব্যস্ত।

    বড় সাহেব কিছু বলে থাকবেন হয়ত। দোতলার একটা ঘরে তার থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধীরাপদ নিচে সিঁড়ির বাঁয়ের এই হলঘরটাই বেছে নিয়েছে। মানকে পার্টিশনের এধারে থাকত এতদিন, ওধারে সরল। লোকটা একেবারে ভারই নাকের ডগায় এসে ঘাঁটি নিল দেখে অস্বস্তিতে মুখভার হয়েছিল। কিন্তু কেয়ার-টেক্ বাবু মনে মনে খুশি হয়েছে। মানকেকে শাসিয়েছে, এবারে একটু বুঝে-সুঝে নাক ডাকিও, বাবুর কোনরকম অসুবিধে হলে বুঝবে।

    সে চলে যেতে বিষণ্ন মুখে তারই সহৃদয়তা আশা করেছে মাকে।—দেখলেন বাবু! ঘুমের মধ্যে নাক কি কারো ইচ্ছে করে ডাকে, না নাকের ওপর কারো হাত থাকে?

    ধীরাপদ আশ্বাস দিয়েছে, সেজন্যে তোমার কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু তোমার অসুবিধে হবে না তো?

    এক কথায় মানকের সমস্ত অস্বস্তি জল। আর দু দিন না যেতে এই নিরুপদ্রব লোকটা পাশে থাকায় সে বরং কিছুটা নিরাপদ বোধ করেছে।

    ঘর গোছগাছ করে নেওয়ার খানিক বাদেই দু বেলার আহারের কি ব্যবস্থা হবে জানতে এসেছিল কেয়ার টেক বাবু। যেমন আদেশ হবে তেমন ব্যবস্থাই হবে। তবে কোন রকম আদেশ হলে ভালো হয় প্রকারান্তরে তাও বুঝিয়ে দিয়েছে। এযাবৎ এখানে নিয়মিত আহারের পাট তো নেই কিছু, সাহেবরা ক্বচিৎ কখনো ‘নোটিস’ দিলে ব্যবস্থা হয়। নয়তো বাইরে খাওয়ারই রেওয়াজ। তাছাড়া যা হাতের রান্না ওই মূর্তিমান মানকের, তার মত ছাপোষা লোকেরই ওই খেয়ে নাড়ি শুকিয়ে গেল— বাবুর কি রুচবে?

    ধীরাপদ ও ব্যাপারেও তাকে নিশ্চিত্ত করেছিল, বাইরেই খেয়ে আসবে। কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যেই আবার হস্তদন্ত হয়ে ফিরে এসেছে কেয়ার টেক্ বাবু। পিছনে মানকেও। সে গুরুগম্ভীর।

    কেয়ার-টেক বাবুর রিপোর্ট, আহারের ব্যাপারে বড় সাহেবের ভিন্ন আদেশ হয়েছে। দুপুরে ধীরুবাবুর অফিসে লাঞ্চ খাওয়া চলতে পারে, কিন্তু রাতে বাড়িতেই ডিনারের ব্যবস্থা থাকবে। হুকুম যখন হয়েছে সুব্যবস্থার, কোনরকম কার্পণ্য করবে না কেয়ার- টেক বাবু। ধীরুবাবুরও সে ব্যবস্থা পছন্দ হবে নিশ্চয়। ধীরুবাবুর কি পছন্দ অপছন্দ মানকে যেন ঠিক ঠিক বুঝে নেয়। আর রান্না কোনদিন ভালো না লাগলে ধীরুবাবু যেন দয়া করে তাকে বলেন।

    ধীরাপদ হাসি চেপে শুনছিল। গম্ভীর ব্যস্ততায় কেয়ার টেক বাবু চোখের আড়াল হবার সঙ্গে সঙ্গে চাপা আনন্দে মানকে ফিস ফিস করে বলল, বড় সাহেব আমাকে সামনে ডেকে সমঝে দিয়েছেন, কোনো তুরটি না ঘটে—বুঝলেন বাবু। মাল পেলে এই মাকে খারাপ রাঁধে না, ভাগ্নেবাবু পর্যন্ত কতদিন খেয়ে সুখ্যাতি করেছেন। তারও আবেদন, যখন যে রকম খেতে ইচ্ছে হবে হীরুবাবু যেন মুখ ফুটে বলেন, নইলে এ বাবদ যে টাকা বরাদ্দ হবে তারও অর্ধেক কেয়ার টেক বাবুর পেটে ঢুকবে। বললে সে ঠিক আদায় করে নেবে, কিন্তু না বললে কি আর করতে পারে সে? ভাগ্নেবাবু অনেককাল খেতে চাননি, সেই থেকে তারও ভালো মন্দ মুখে দেওয়া বন্ধ।

    এ জগৎ কেন?…আমি আছি বলে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article সেই অজানার খোঁজে – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }