Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প478 Mins Read0

    ০৩. বরাবর আমাদের সামনে

    বরাবর আমাদের সামনে এসে কুমারসাহেব একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন অত্যন্ত ক্লান্তভাবে।

    আমি, কিরীটী ও ডাঃ চট্টরাজ ওঁর মুখের দিকে নিঃশব্দে একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম।

    হঠাৎ একসময় কঠিন স্তব্ধতা ভঙ্গ করে কুমারসাহেব চাপা উৎকণ্ঠিত স্বরে বললেন, মিঃ রায়, আপনাকে গতকাল ফোনে যা বলেছিলাম। সেই রকম ব্যবস্থা করেছেন তো!

    কিরীটী স্নান একটু হেসে বলে, নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনাকে বড় উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে কুমারসাহেব। আপনি কি অসুস্থ? বলতে বলতে কিরীটী হাতাঁর দাঁতের সিগার-কেসটা পকেট থেকে বের করে নিজে একটা তুলে নিয়ে কুমারসাহেবের দিকে খোলা কেন্সটা এগিয়ে দিল, সিগার প্লিজ!

    নো, থ্যাংকস। বলে কুমারসাহেব নিজের পকেট থেকে বহুমূল্য সুদৃশ্য সোনার ওপর ডায়মণ্ডে নাম লেখা সিগারেট কেসটি বের করে তার থেকে একটি দামি সিগারেট তুলে ধরলেন।

    টেবিল-ল্যাম্পের মৃদু নীলাভ আলো কুমারসাহেবের মুখের ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। ডান হাতে সিগারেটটি ধরে বাঁ হাত দিয়ে কুমারসাহেব মাঝে মাঝে কপালটা বুলাতে লাগলেন।

    সহসা কিরীটীই প্রথম প্রশ্ন করল, আপনার সেই নবনিযুক্ত প্রাইভেট সেক্রেটারী মিঃ শুভঙ্কর মিত্র এখানেই আছেন, না?

    কে শুভঙ্কর? হ্যাঁ। মৃদুস্বরে কুমারসাহেব বলতে লাগলেন, বেচারী বড্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছে। অবিশ্যি আমি তাকে দোষ দিই না। এক্ষেত্রে ওরকম না হওয়াটাই আশ্চর্য। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। আজ আবার স্বচক্ষে আমি এই বাড়িতেই কাকাবাবুকে স্পষ্ট দেখেছি। তিন-তিনখানা চিঠি তাঁর কাছ থেকে আমি ডাকে পেয়েছি, আপনি তো সবই জানেন মিঃ রায়, আমাকে তিনি প্রত্যেক চিঠিতেই বারংবার সাবধান করে দিয়েছেন, আমার রক্ত তিনি দেখবেনই! এ নাকি তাঁর জীবন-পাণ!

    কিরীটী অস্ফুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠল, ঠিক বোঝা গেল না। কাকে দেখেছেন?

    অস্ফুট স্বরে কুমারসাহেব বললেন, যেন মনে হল দিগেন্দ্রনারায়ণ, স্যার দিগেন্দ্রনারায়ণকে! ওই যে, আমার সেক্রেটারী মিঃ মিত্র আমার প্রাইভেট রুমে ঢুকছেন।

    আমরা তিনজনেই একসঙ্গে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ডানদিককার দেওয়ালে যে ছোট দরজাটি ছিল, সেটার কপাট দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। এবং যে ভদ্রলোক একটু আগে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল, তার শরীরের পিছন দিকের কালো রঙের কোটের খানিকটা অংশ দেখতে পেলাম। দরজার কপাট দুটো বন্ধ হয়ে গেল।

    সহসা আবার কুমারসাহেবের কণ্ঠস্বর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করল, মিঃ রায়, আজ সন্ধ্যার দিকে স্বচক্ষে আমি কাকাকে দেখেছি।

    আমি বা ডাঃ চট্টরাজ কোন কথা বললাম না। কিরীটী শুধু মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করল, আপনি ঠিক জানেন কুমারসাহেব, দেখতে ভুল হয়নি তো?

    আজ দুপুর থেকেই বাড়িতে আমার জন্মোৎসবের আয়োজন চলছিল। আমি আর আমার সেক্রেটারী মিঃ মিত্র বৈষয়িক কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুরের পর থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চারিদিক থমথম করছিল, মাঝে মাঝে কাড় কড় করে মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। কােজ সারিতে বোধ করি সন্ধ্যা সাতটা হবে তখন-আমন্ত্ৰিত ভদ্রলোকেরা সব একে একে এখানে আসতে শুরু করেছেন, মিঃ মিত্রকে নীচে সকলের অভ্যর্থনার জন্য পাঠিয়ে দিয়ে আমি নিজে পোশাক বদলাবার জন্য সাজঘরে গিয়ে ঢুকেছি, বাইরে তখন ঘন অন্ধকার, মাঝে মাঝে মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।…সাজঘরের ড্রেসিং টেবিলের। ওপরে একটা লাল ঘেরাটোপে ঢাকা টেবিল-ল্যাম্প জ্বলছে। মিঃ রায়, আমি যা বলছি তার একবৰ্ণও মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত নয়, পোশাক পরা হয়ে গেছে; আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার টাইটা ঠিক করছি, এমন সময় দ্বারে মৃদু করাঘাতের শব্দ শোনা গেল, কুমারসাহেব!

    দরজা খুলে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে মিঃ মিত্র আর মিঃ কালিদাস শর্ম। মিঃ শৰ্মা এখানকার এক কলেজের প্রফেসার, কিছুদিন হল তাঁর সঙ্গে আমার বেশ আলাপ হয়েছে। মিঃ শৰ্মা মিঃ মিত্রের ছোটবেলার বিশেষ বন্ধু। তঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সহসা আমার মনে পড়ল বাথরুমে আমার মুখ ধোয়ার সময় হাতের অনামিকা থেকে হীরের আংটিটা খুলে সাবানের বাক্সের ধারে রেখেছিলাম, আসবার সময় নিয়ে আসতে ভুলে গেছি…

    কথা বলতে বলতে ইতিমধ্যে কুমারসাহেবের হাতে সিগারেটটা শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটা তিনি আ্যসট্টেতে ফেলে দিলেন। পাশের হলঘর থেকে পিয়ানো সহযোগে সুমিষ্ট গানের লহরী ভেসে আসছিল।

    কুমারসাহেব। আবার বলতে শুরু করলেন, কিন্তু আপনাকে আমি ঠিক বোঝাতে পারব না মিঃ রায়, সে দৃশ্য কী ভয়ানক! ভাবতে গেলে এখনও আমার সর্বাঙ্গ কীটা দিয়ে ওঠে, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের আলো ঘরের কাচের জানলা দিয়ে হঠাৎ আলোর চমকনি লাগিয়ে যাচ্ছিল। মিঃ মিত্র ও মিঃ শম দুজনে আমার সামনেই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে, তঁদের একটু অপেক্ষা করতে বলে আমি বাথরুমের দিকে অগ্রসর হলাম।

    বাথরুমের আলো নেভানো ছিল-অন্ধকার। দরজাটা যেমন আমি খুলেছি, সহসা অন্ধকার বাথরুমটা বাইরের বিদ্যুতের আলোকে ক্ষণিকের জন্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠল; কড়কড় করে মেঘের গর্জন শোনা গেল, হঠাৎ চমকে উঠলাম। বিদ্যুতের আলোয় ঘরের জানালার দিকে চোখ পড়তেই… আমি স্পষ্ট দেখলাম…কাকা! হ্যাঁ, আমার কাকা স্যার দিগেন্দ্র জানালার কাচ দিয়ে রক্তচক্ষুতে চেয়ে দাঁতে দাঁত ঘষছেন। আমি সািভয়ে অস্ফুট চিৎকার করে চোখ বুজলাম।

    কথা বলতে বলতে অধীর আগ্রহে কুমারসাহেব কিরীটীর হাত দুটো সজোরে চেপে হয়ে ফুটে উঠেছে। কপালে এই শীতের রাতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, ঘন ঘন নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস পড়ছে।

    জানালার ধারে, কুমারসাহেব। আবার বলতে লাগলেন, কাকা ছায়ার মত দাঁড়িয়ে ছিলেন মাথাটা একদিকে একটু হেলিয়ে, একটা হাত ঝুলছে। তখনকার তাঁর সেই চোখের দৃষ্টিতে যেন একটা দানবীয় জিঘাংসা ফুটে বের হচ্ছিল।

    ডঃ চট্টরাজ আমাদের মুখের দিকে তাকালেন।

    কুমারসাহেব নিঝুম হয়ে মাথা নীচু করে বসে আছেন।

    সহসা যেন এক সময় কুমারসাহেব কেঁপে উঠলেন।

    কিরীটী ধীর স্বরে প্রশ্ন করলে, তারপর?

    আমার অস্পপুট চিৎকার বোধ হয় পাশের ঘরে মিঃ মিত্র ও মিঃ শৰ্মার কানে গিয়েছিল, র্তারা এক প্রকার ছুটেই বাথরুমে এসে প্রবেশ করলেন এবং প্রশ্ন করলেন, ব্যাপার কি কুমারবাহাদুর?

    তাড়াতাড়ি তাঁরা সুইচ টিপে বাথরুমের আলোটা জ্বেলে দিলেন; আশ্চর্য ঘরে কেউ নেই! একদম খালি, অথচ.

    বাথরুমে অন্য কোন দরজা ছিল কী? কিরীটী প্রশ্ন করল।

    না। আমি যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলাম সেটা ছাড়া বাথরুমে আর দ্বিতীয় দরজা নেই। যে জানালায় কাকাকে দেখেছিলাম, তারও সার্সি দুটো ঘরের ভিতর থেকে আটকানো ছিল।

    ডাঃ চট্টরাজ বললেন, আপনার অবচেতন মনে আপনার কাকা সম্পর্কে যে অতীত দিনের আতঙ্ক সেটাই আপনার মনকে আচ্ছন্ন করে ছিল কুমারসাহেব এবং সেই চিন্তা থেকেই আপনার এ বিভীষিকার সৃষ্টি। এটা আপনার স্বগত কৃত্রিম নিদ্রাচ্ছন্নতা বা ইংরাজীতে যাকে বলে ‘self hypnosis”—আপনার স্নানঘরের মধ্যস্থিত আলো ও আয়নার সংমিশ্রিত প্রভাবেই ওটা সৃষ্টি হয়েছিল।

    ডাক্তারের কথা শেষ হতে না হতেই কুমারসাহেব বলে উঠলেন, ডাক্তার, আপনাকে আমি আগেই বলেছি, আমি যা দেখেছি বা শুনেছি সেটা আমার ভ্রান্ত ধারণা বা মতিভ্ৰম, যাকে আপনারা ইংরাজীতে hallucination বলেন, সে রকম কোন কিছুই নয়, আমি কাকাকে স্পষ্ট দেখেছি। সত্যিই তাকে দেখেছি। কিন্তু তারপর কিন্তু আর সেখানে উপস্থিত ছিলেন না; অদৃশ্য হয়ে যান। আমার সেক্রেটারী ও মিঃ শমা চারিদিকে আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলেন, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলেন না। অবিশ্যি তাঁদের আমি তখন বলেছিলাম, ব্যাপারটা আগাগোড়াই হয়তো আমার চোখের ভুলও হতে পারে। কেননা এ ব্যাপারে তাদের আমি, বিশেষ করে আজকের উৎসবের দিনে, চিন্তিত করতে চাইনি। কিন্তু আমি ভগবানের নামে শপথ করে বলতে পারি মিঃ রায়, আমার ভুল হয়নি। আমি তাঁকে দেখেছি, সুস্পষ্ট ভাবেই প্রত্যক্ষ দেখেছি।

    কিরীটী বললে, ভাল কথা, আচ্ছা ডাঃ চট্টরাজ, আপনাদের ডাক্তারী শাস্ত্রের মনোবিজ্ঞানে এ ধরনের ব্যাপারকে কি বলে?

    ডাঃ চট্টরাজ প্রবলভাবে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, কুমারসাহেব হয় আমাদের আষাঢ়ে গল্প শোনাচ্ছেন, না হয় তামাসা করছেন নিছক আনন্দ দেবার জন্য। কিন্তু সে যাই হোক, এ ধরনের তামাসা…না, উনি একেবারে অসম্ভব কথা বলছেন।

    ঘরের আলোয় কুমারসাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত ও ভীত হয়ে পড়েছেন।

    ধীরে ধীরে এক সময় কুমারসাহেব বললেন, দেখুন ডাঃ চট্টরাজ, বিশেষ করে এ ব্যাপারে আপনাদের চাইতেও আমি বেশী বুঝি। একদিন আমি আমার কাকাকে কতখানি শ্রদ্ধা করতাম ও ভালবাসতাম। সে কথা কারও অজানা নেই; কাকার এই দুর্ঘটনার জন্য হয়তো জগতে আমার চাইতে আর কেউ বেশী দুঃখ পায়নি; শিশু বয়সে মা-বাবাকে হারাই, তারপর বারো বছর পর্যন্ত ঐ কাকার কাছেই আমি একাধারে মা ও বাবার স্নেহ-ভালবাসা পেয়ে এসেছি। কাকা যে আমার কতখানি ছিলেন তা বুঝিয়ে আপনাদের বলতে পারব না। কিন্তু এখন তীকেই আমি পৃথিবীতে সব চাইতে বেশী ভয় ও ঘৃণা করি। আমার সুখ শান্তি সব গেছে। রাতের পর রাত আমি নিদ্রাহীন চক্ষে নিদারুণ ভয়ে বিছানার ওপরেই বসে কাটিয়েছি।

    এমন সময় সুশ্ৰী দোহারা পাতলা চেহারার ডিপ ব্লু রঙের সুট-পরা একজন ভদ্রলোক আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। মুহুর্তে যেন কুমারসাহেব আপনাকে সামলে নিলেন এবং ভদ্রলোকটির দিকে তাকিয়ে সহাস্য মুখে বললেন, আসুন মিঃ শৰ্মা, এদের সঙ্গে বোধ হয় আপনার পরিচয় নেই, ইনি মিঃ কালিদাস শৰ্মা,-সিটি কলেজের প্রফেসার। আর ইনি মিঃ কিরীটী রায়— বিখ্যাত রহস্যভেদী, ইনি মিলিওনিয়ার মিঃ সুব্রত রায়—ওঁর বিশেষ বন্ধু. আর ইনি ডাঃ চট্টরাজ, বিখ্যাত নিউরালজিস্ট (মনাবিজ্ঞান বিশারদ)।

    আমরা প্রত্যেককে নমস্কার ও প্রতিনমস্কার করলাম।

    এতক্ষণ বরাবরই আমি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করছিলাম, ওদিককার যে দরজা দিয়ে অল্প আগে মিঃ মিত্র গিয়ে ঢুকেছেন কুমারসাহেবের প্রাইভেট রুমে, সেইদিকেই কিরীটী যেন সৰ্বক্ষণ তাকিয়েছিল এবং সেদিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই একসময় মৃদুকণ্ঠে বলল, আচ্ছা! কুমারসাহেব, আপনি স্যার দিগেন্দ্রকে ঠিক চিনলেন কি করে? এক বছরে কি তাঁর দেহের কোন পরিবর্তনই হয়নি?

    কি জানি তা বলতে পারি না ঠিক। কুমারসাহেব বললেন, ক্ষণিক আলোয় তাঁকে দেখেছি,

    আঃ, থামুন কুমারসাহেব! মিঃ শৰ্মা বাধা দিলেন, ঐ সব আজগুবী ব্যাপার নিয়ে এখনও আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন? আশ্চর্য আপনার মত একজন শিক্ষিত আধুনিকের পক্ষে..উঠুন, মিঃ মিত্র কফির অর্ডার দিয়ে অনেকক্ষণ হল আপনার প্রাইভেট-রুমে গিয়ে হয়তো অপেক্ষা করছেন…একটু আগেই তিনি আপনার খোঁজে এদিকেই আসছিলেন। কি একখানা আপনার বিশেষ জরুরী চিঠি এসেছে, আপনাকে সেখানা এখুনি নাকি দেখানো দরকার। একজন বেয়ারাকে আমার সামনেই বলে গেলেন। আপনাকে সেখানে পাঠিয়ে দেবার জন্য। বেয়ারা কি আপনাকে কোন খবর দেয়নি?

    কই, না! কুমারসাহেব ত্রস্তে উঠে দাঁড়ালেন, আশ্চর্য, আমি নিজেই যে তাঁকে অনেকক্ষণ আগে আমার প্রাইভেট রুমে ঢুকতে দেখলাম। ভাবলাম হয়তো কোন বিশেষ জরুরী কাজে ওঘরে গেছেন তিনি!…ক্ষমা করবেন, আমি এখুনি আসছি। বলতে বলতে কুমারসাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন।

    অ্যাসট্রেতে কুমারসাহেবের অর্ধদগ্ধ যে সিগারেটটি পড়েছিল, দেখলাম কিরীটী সেটা নিঃশব্দে হাত দিয়ে তুলে পকেটের মধ্যে রেখে দিল। কিরীটীর ব্যাপারটা ভাবছি, এমন সময় ঘরের মধ্যে একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেল, খুন! খুন!

    চমকে আমরা সকলে একসঙ্গে সামনের দিকে চোখ তুলে তাকালাম। কুমারসাহেব তখনও ঘরের অর্ধেকটা গেছেন। কিনা সন্দেহ, অদূরে দাঁড়িয়ে মিঃ শৰ্মা, একজন সাদা উর্দিপরা বেয়ারা, হাতে কফির ট্রে-সে-ই কুমারসাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। ঘরের সকলে যেন সহসা সামনে ভূত দেখে চমকে থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

    সকলের চোখেই উৎসুক ভয়ব্যাকুল দৃষ্টি।

    কিরীটী ধীরে ধীরে ঘরের মাঝখানে নিঃশব্দ পদসঞ্চারে এগিয়ে গেল। তার চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও অনুসন্ধানী হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে সে বেয়ারা ও কুমারসাহেবের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

    শুনুন, আপনারা এখন গোলমাল করবেন না। এটা উৎসব-বাড়ি। আসুন কুমারসাহেব, আমার সঙ্গে আপনার প্রাইভেট ঘরে চলুন। এই বেয়ারা, তুমভি আও। এস সুব্রত, তুমিও এস। আর ডাঃ চট্টরাজ, আপনি ততক্ষণ লালবাজারে একটা আর বেহালা থানাতে একটা করে ফোন করে দিন।

    আমরা তিনজনে দরজা ঠেলে ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। বেশ প্রশস্ত চতুষ্কোণ একটা ঘর। ঘরে ঢুকে আড়াআড়ি ভাবে চাইলেই দেখা যায়, ঘরের চারপাশে গদি-মোড়া সব চেয়ার পাতা। সিলিংয়ের বাতিটা নেভানো। অদূরে একটা টেবিলের ওপরে রক্ষিত লাল রংয়ের টেবিলল্যাম্পের আলোয় ঘরখানি আলোকিত। টেবিলটার ঠিক পাশেই একটা বড় সোফা। ঘরের দেওয়ালে ফিকে গোলাপী রং দেওয়া, এবং দেওয়ালের গায়ে এদের পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত সব অতীত যুগের ঢাল তলোয়ার ঝুলছে। ঘরের লাল আলো সেগুলোর ওপর প্রতিফলিত হয়ে যেন কেমন এক বিভীষিকায় প্রেত্যায়িত হয়ে উঠেছে। ঘরের মেঝেয় দামী পুরু। লাল রংয়ের কাপেট বিছানো। হঠাৎ টেবিলের ওপরে যে ল্যাম্পটি বসানো ছিল তার আলোয় সামনে নজর পড়তেই বিস্ময়ে আতঙ্কে যেন একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

    একজন কালো সুট পরা লোক উপুড় হয়ে কার্পেটের ওপর টেবিলের ঠিক সামনে পড়ে আছেন। তার হাতের আঙুলগুলো যেন ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছিলেন, মনে হয় যেন হাতের পাতায় দেহের ভর দিয়ে ওঠবার চেষ্টা করেছিলেন। হ্যাঁটু মোড়া অবস্থায় তিনি পড়ে আছেন। কিন্তু ভদ্রলোকের দেহের সঙ্গে মাথাটি নেই। রক্তাক্ত গর্দানটা শুধু ভয়ঙ্কর বিভীষিকায় উঁচু হয়ে আছে। মাথাটা ঘরের ঠিক মাঝখানে কর্পেটের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে কাটা গলার ওপরেই। কে যেন মাথাটাকে দেহ থেকে কেটে বসিয়ে রেখে গেছে মেঝের কাপোটের ওপর। চোখের মণি দুটো সাদা, মুখটা হ্যাঁ করা। সহসা পাশের খোলা জানোলা দিয়ে এক ঝালকা ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকল। আমরা কেঁপে উঠলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.