Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প610 Mins Read0

    ১০. আমার কণ্ঠের বিস্ময়ের সুর

    আমার কণ্ঠের বিস্ময়ের সুরটা কিরীটীর শ্রবণেন্দ্রিয়কে এড়াতে পারেনি পরমুহূর্তে বুঝলাম, কারণ সে হাতের নকশাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এবং আমার দিকে না তাকিয়েই পূর্ববৎ শান্তকণ্ঠে বললে, বিস্ময়ের এতে কি আছে! বর্ণচোরা আমের ধর্মই যে ওই। বাইরে থেকে অত সহজে বোঝবার উপায় নেই। মাস ছয়েক হল আলি ম্যানশনটি ডাঃ চৌধুরীর নামে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে।

    কিন্তু বাড়িটার দাম দেড় লক্ষ টাকার তত কম হবে বলে আমার মনে হয় না!

    তাই। তবে ক্রেতা মাত্র আশি হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। কিন্তু এর চাইতেও একটা বেশি ইনটারেস্টিং সংবাদ তোকে দিতে পারি যা তোর জানা নেই।

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকালাম। ও কিন্তু তখনও হাতের আঁকা নকশাটার দিকেই তাকিয়ে আছে। এবং এবারেও আমার দিকে না তাকিয়েই বললে, সংবাদটা অবিশ্যি শুভ। প্রজাপতি-ঘটিত সংবাদ।

    প্রজাপতি-ঘটিত সংবাদ!

    হ্যাঁ। শ্রীমান অশোক রায় শীঘ্রই বিবাহ করছেন।

    কাকে?

    শ্ৰীমতী মিত্রা সেনকে।

    সত্যি বলছিস?

    হ্যাঁ। অশোক রায় তাঁর বাপকে গতকাল রাত্রে জানিয়েছেন এবং কিছুক্ষণ আগে রাধেশ রায় সে সংবাদটি ফোনে আমাকে জানিয়েছেন।

    কিন্তু অশোক রায়ের চাইতে যে মিত্রা সেন বয়সে বড়!

    তাতে কি? এ হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রেমের ব্যাপার! পঞ্চশরের কৌতুক!

    তা রাধেশ রায় আর কি বলবেন? ভদ্রলোক নিশ্চয়ই খুশী হতে পারেননি সংবাদটা শুনে?

    তা অবশ্য হননি। কিন্তু বাপ হয়ে উপযুক্ত পুত্রের একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত ব্যাপারে তাঁর করারই বা কি আছে! বড়জোর তিনি বলতে পারতেন,ব্যাপারটা তিনি খুশীমনে নিতে পারছেন না। জবাবে হয়তো ছেলে বলে বসত, বিবাহটা যখন সে-ই করবে তখন পাত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে তার পছন্দ বা মতামতটাই সবাগ্রগণ্য।

    তা বটে, তবে বিয়েটা হচ্ছে কবে? তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছে নাকি?

    হ্যাঁ, আগামী মাসের ছ তারিখে মঙ্গলবার অর্থাৎ হাতে আর দিন দশ মাত্র সময় আছে।

    আজ তো আর যাওয়া হল না। আগামী কাল বৈকালী সঙ্ঘে গেলেই হয়ত সেখানে সংবাদটা পেতাম।

    সম্ভব না। কারণ এতদিনেও যখন কেউ সেখানকার ব্যাপারটা জানতে পারেনি, বিবাহের পূর্বে কেউ জানতে পারবে বলে মনে হয় না। বিবাহের ব্যাপারটা তাঁরা দুজনের একজনও জানাজানি করতে চায় না বলেই আমার ধারণা।

    যাই বল, মুখরোচক এই সংবাদটা জানাজানি হয়ে গেলে ওদের সোসাইটিতে একটা চাঞ্চল্য দেখা দেবে বলেই আমার বিশ্বাস। এতকাল ধরে বহু হতভাগ্য পতঙ্গকে পুড়িয়ে মিত্রা সেন রূপিণীবহ্নিশিখাশেষ পর্যন্ত যৌবনের প্রান্তসীমায় এসে মালাবদল করছেন, একটা সেনসেশনের ব্যাপারই বটে!

    জংলি এসে ঢুকল। বললে, মা জিজ্ঞাসা করলেন, খানা টেবিলে এখন দেওয়া হবে কিনা?

    হ্যাঁ, দিতে বল্।

    .

    খাবার টেবিল থেকে আমরা বাইরের ঘরে এসে বসলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দশটা বাজে প্রায়।

    কিরীটী সোফাটার উপরে বেশ আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে বসে একটা সিগারে অগ্নিসংযোগ করল। বুঝলাম আমাদের নৈশ অভিযানের এখনও দেরি আছে। মাথার মধ্যে তখনও আমার কিরীটীর কাছ থেকে শোনা সংবাদ দুটিই ঘোরাফেরা করছিল। বিশেষ করে অশোক রায় ও মিত্রা সেনের বিবাহের ব্যাপারটা। দীর্ঘদিন ধরে একান্তভাবে বোহিমিয়ান জীবন কাটিয়ে আজ হঠাৎ মিত্রা সেন ঘর বাঁধবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল কেন! এতদিনে কি তবে সে বুঝতে পেরেছে জীবনে ঘর বাঁধবার প্রয়োজনীয়তা! কিন্তু তাও তো বিশ্বাস করতে মন চায় না। এখনও তার হাবভাব, চালচলন ও ব্যবহারের মধ্যে এমন একটা ভোগের উজ্জ্বলতা রয়েছে এবং সেই উচ্ছঙ্খলতা দীর্ঘদিন ধরে রক্তের মধ্যে বাসা বেঁধেছে, সেটাকে সে অস্বীকার করতে কি এত সহজেই পারবে এবং তার মত একজন তীক্ষ্ণধী মেয়ের পক্ষে এটা নিশ্চয়ই বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না যে তার প্রতি অশোক রায়ের আকর্ষণটাকে আর যাই বলা যাক,প্রেম নয়। বরং বলা চলে ক্ষণিকের একটা মোহ। তাই যদি হয়, সেই মোহটা যখন কেটে যাবে তখনকার পরিস্থিতিটা কি ও ভাবছে না একবারের জন্যও? না ওসবের কোন বালাই-ই নেই ওদের এই বিবাহ ব্যাপারে কোনও একটা বিশেষ কারণেই এই যোগাযোগটা ঘটছে!

    বুঝতে পারিনি কিরীটীর চিন্তাধারাটাও আমার মত একই খাতে প্রবাহিত হচ্ছিল। তার প্রশ্নে যেন তাই হঠাৎ পরক্ষণেই চমকে উঠলাম।

    অশোক রায় ও মিত্রা সেনের বিয়ের ব্যাপারটা তোর কি মনে হয় সুব্রত? কিরীটী সহসা প্রশ্ন করল।

    মানে? কি ঠিক তুই বলতে চাইছিস?

    বলছি, বিয়েটা ওদের সত্যি সত্যিই শেষ পর্যন্ত হবে বলে তোর মনে হয়?

    সে আবার কি! এই তো বললি অশোক রায় তার বাপকে বিয়ের তারিখটা পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছে!

    তা অবশ্য দিয়েছে। কিন্তু মক্ষীরানীর বিয়ে হয়ে গেলে বৈকালী সঙ্ঘের কি হবে?

    কি আবার হবে, সিংহাসন শূন্য নাহি রবে। তাছাড়া বিয়ে করলেই যে মিত্রা সেন সঙ্ঘ ছেড়ে দেবে তারও তো কোনো মানে নেই!

    তা অবশ্য নেই। তবে চিরযৌবনা কুমারী মক্ষীরানীকে সকলে যে চোখে দেখত অশোক রায়ের স্ত্রী হলে কি আর তারাই সে চোখে তাকে দেখবে, না অশোক রায়ই সেটা তখন পছন্দ করবে?

    অশোক রায় তো জেনেশুনেই বিয়ে করছে। আর এতদিনের অভ্যাস মিত্রা সেনের ছাড়াতে। চাইলেই কি ছাড়তে সে পারবে নাকি! যেমন গর্ধবচন্দ্র তেমন তার ফল ভোগ করাই উচিত। সারাদেশে যেন তার মিত্রা সেন ছাড়া পাত্রী ছিল না!

    হঠাৎ ঐ সময় আমাদের কথার মাঝখানে ঘরের ফোন ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠল। কিরীটী সোফা থেকে উঠে গিয়ে রিসিভারটা তুলে নিল, হ্যালো! কে? হ্যাঁ, আমিই কথা

    বলছি, বলুন। ব্যবস্থামত নার্সিং হোম থেকে কল এসেছে। যাচ্ছি। হ্যাঁ—এক্ষুণি যাচ্ছি। মিনিট দশ-পনেরোর মধ্যেই আপনার ওখানে পৌঁছে যাব।

    কিরীটী রিসিভারটা যথাস্থানে নামিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললে, ডাক এসে গিয়েছে। মিনিট পাঁচ-সাতের মধ্যেই আমি প্রস্তুত হয়ে আসছি। এক্ষুণি আমরা বেরুব, তুই একটু বোস্।

    কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    .

    বসে বসে একটা পিকটোরিয়াল ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছিলাম, পদশব্দে মুখ তুলে তাকাতেই যেন হঠাৎ চমকে উঠলাম। দীর্ঘকায় এক পাঠান আমার সামনে দাঁড়িয়ে। পরিধানে সালোয়ার পাঞ্জাবি, মাথায় পাঠানী পাগড়ি। মুখে চাপদাড়ি,পাকানো পুরুষ্টু গোঁফ।

    গলাটা একটু ভারী ভারী করে কিরীটী কথা বলল, আদাবস্ সাব…

    কি ব্যাপার? হঠাৎ এ বেশে কেন? মৃদু হেসে প্রশ্ন করলাম।

    বানু বেগমের ভাই পীর খাঁ। এ বেশে না গেলে চলবে কেন?

    তা যেন হল, কিন্তু পাঠান পীর খাঁর সঙ্গে আমাকে বাঙালী দেখলে লোকের সন্দেহ হবে না?

    হওয়াই স্বাভাবিক। আর এক প্রস্থ সাজসজ্জা তোর জন্যেই ঘরে রেডি করে এসেছি। বি কুইক! ভোল পাল্টে আয়।

    কিরীটীর ল্যাবরেটারি ঘরের সংলগ্ন ছোট একটি অ্যান্টিরুমের মত আছে, তার মধ্যে ছদ্মবেশ ধারণের সব রকম ব্যবস্থাই থাকে আমি জানতাম। বিনা বাক্যব্যয়ে আমি উঠে সেই ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। একটা টেবিলের উপরে পাঠান-বেশনেবার সবই প্রস্তুত ছিল। তাড়াতাড়ি শুরু করে দিলাম কাজ।

    মিনিট আষ্টেকের মধ্যে যখন প্রস্তুত হয়ে কিরীটীর সামনে এসে দাঁড়ালাম, ক্ষণেকের জন্যে আমার আপাদমস্তকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে মৃদু কণ্ঠে সে বললে, ঠিক আছে। তোর নাম হবে, আয়ুব খাঁ। পীর খাঁর বোন বানু বেগমের স্বামী।…

    সর্বনাশ! বলিস কি? শেষ পর্যন্ত অপরিচিত এক ভদ্রমহিলার স্বামীর প্রক্সি দিতে হবে নাকি! না ভাই, স্বামী সেজে কাজ নেই, পাঠানী খানদানী ব্যাপার, ওরা কথায় কথায় ছোরা চালায়।

    ভয় নেই রে, ভয় নেই। বানু বেগম ও পীর খাঁ, ভাই ও বোনের দুজনের সম্মতিক্রমেই আজকের এ নৈশ অভিসার আমাদের arranged হয়েছে। তাছাড়া বানু বেগমের স্বামী আয়ুব খাঁ এখন বহু পথ দূরেপেশোয়ারে। চল চল—আর দেরিনয়, বানুবেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক, সে তার স্বামী ও ভাইকে দেখবার জন্য তার আত্মীয়ের বাড়িতে জরুরী টেলিফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে এবং সৌভাগ্যক্রমে দুজনেই আজ দুপুরে কলকাতায় এসে গিয়েছে। একজন লাহোর থেকে, অন্যজন পেশোয়ার থেকে। আর তার আত্মীয় নার্সিং হোমে টেলিফোনে। সেই সংবাদ দিয়ে বলেছেন, পীর খাঁ ও আয়ুব খাঁ দুজনেই নার্সিং হোমে যাচ্ছেন এখুনি।

    এতক্ষণে ব্যাপারটা যেন কিঞ্চিৎ বোধগম্য হয় আমার।

    রাত্রে ডাঃ চৌধুরীর নার্সিং হোমে হানা দেবার জন্য কিরীটী চমৎকার একটি প্ল্যান দাঁড় করিয়েছে।

    .

    গাড়িতে উঠে বসে বললাম, এখন কোথায়?

    গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে কিরীটী বললে, সোজা রসা রোডে আল্লাবক্সের গৃহে। তারপর তাঁরই গাড়িতে আমরা যাব ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীর নার্সিং হোমে।

    রাত ঠিক এগারোটা বেজে দশ মিনিটে আল্লাবক্সের গাড়িতে চেপে আমরা তিনজন পার্ক সাকাসের ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীর নার্সিং হোমের সামনে এসে নামলাম।

    আল্লাবক্সই এগিয়ে গিয়ে দরজার গায়ে যে ইলেকট্রিক বেল তার বোতামটা টিপল। একটু পরেই দরজা খুলে গেল, সামনে দাঁড়িয়ে: বিরাটকায় গুলজার সিং।

    আল্লাবক্স ও গুলজার সিংয়ের মধ্যে কি কথাবার্তা হল উর্দুতে। আমাদের সকলকে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে পুনরায় গুলজার সিং ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।

    গুলজার সিংকে অনুসরণ করে সিঁড়ি বেয়ে আমরা তিনজনে দোতলায় উঠলাম। ডাক্তারের চেম্বারের দরজা অতিক্রম করে আমরা প্যাসেজটা দিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে একটা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলাম। সুসজ্জিত ঘরটি ওয়েটিং রুম বলেই মনে হল।

    গুলজার সিং আমাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে প্রস্থান করল। আমরা তিনজন তিনটি চেয়ারে বসলাম এবং বসবার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে এসে প্রবেশ করল একজন স্যুট পরিহিত তরুণ। আগন্তুক ভদ্রলোক ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাবক্স উঠে দাঁড়িয়ে ইংরাজীতে প্রশ্ন করলেন, বানু বেগম কেমন আছে ডাঃ মিত্র?

    সেই রকমই। খুব restless। ডাঃ মিত্র বললেন।

    অতঃপর আল্লাবক্স আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন ডাক্তারের সঙ্গে।

    ডাঃ মিত্র আমাদের নমস্কার জানিয়ে বললেন, আসুন আপনারা। চার নম্বর কেবিনেপেসেন্ট আছে।

    ঘরের মধ্যস্থিত দুটি দ্বারপথের একটি দ্বার দিয়ে প্রথমে এগিয়ে গেলেন ডাঃ মিত্র, তাঁর পশ্চাতে আমরা তিনজন অগ্রসর হলাম তাঁকে অনুসরণ করে।

    সরু একটা প্যাসেজ, ডান দিকে পর পর অনুরূপ চারটি দরজা এবং প্রত্যেক দরজার মাথায় পর পর ইংরাজীতে এক দুই তিন চার ক্রমিক নম্বর লেখা।

    পরে বুঝেছিলাম একটা হলঘরকেই সম্পূর্ণ সিলিং পর্যন্ত পার্টিশন তুলে পর পর চারটি কিউবসে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এবং সেই কিউবসগুলোই এক-একটি কেবিন। প্রত্যেকটি কেবিনের সঙ্গেই একটি করে ছোট্ট অ্যাটাচড় বাথরুম। চার নম্বর অর্থাৎ সর্বশেষ কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে ডাঃ মিত্র বললেন, যান আপনারা ভিতরে কিন্তু রোগিণীর কণ্ডিশন ভাল নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে আসার চেষ্টা করবেন। জানেন তো—আল্লাবক্সের দিকে তাকিয়ে এবারে ডাঃ মিত্র বললেন, রাত্রে আমরা নার্সিংহোমে কখনও কোনও ভিজিটার্সকে আসতে দিই না। ডক্টর চৌধুরীর কড়া আদেশ আছে। সম্পূর্ণ আমার নিজের রিস্কে আসতে দিয়েছি আপনাদের, কেবলমাত্র রোগিণীর কথা ভেবেই।

    জবাব দিল আল্লাবক্স, আপনার এ উপকারের কথা আমরাও ভুলব না ডাঃ মিত্র।

    মৃদু হেসে ডাঃ মিত্র যে পথে এসেছিলেন সেই পথেই আবার প্রস্থান করলেন। আমরা তিনে চার নম্বর কেবিনের মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করলাম।

    কিরীটীর চোখের ইঙ্গিতে আল্লাবক্স কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। ঘরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বেডে শুয়ে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে এক রোগিণীকে আমরা ককাতে শুনলাম রোগযন্ত্রণায়।

    আল্লাবক্স বেডের কাছে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে ডাকলেন, বানু—

    ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গেই রোগিণী আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন। অপরূপ সুন্দরী এক তরুণী। রোগশীর্ণ মুখখানি, তবু তাতে যেন লেগে রয়েছে কষ্টসাধ্য একটুখানি হাসি।

    ভাইজান—

    কোনখান থেকে শুনেছিলে তুমি পরশু রাত্রে মানুষের গলার আওয়াজ?

    বাথরুমের মধ্যে যাও। ঢুকতে ডান দিককার দেওয়ালের গায়ে দেখবে একটা কাঁচের চৌকো বক্সের মধ্যে আলোটা বসানো আছে। সেই কাঁচের বাক্সটার সামনে দাঁড়াতেই সে রাত্রে মানুষের গলা শুনেছিলাম।

    অতঃপর আর সময়ক্ষেপ না করে প্রথমে কিরীটী ও সঙ্গে সঙ্গে তার পশ্চাতে আমি বাথরুমে গিয়ে ঢুকলাম।

    বাথরুমের আলোর সুইচটা ঘরে ঢুকবার মুখেই কিরীটী অন্ করে দিয়েছিল। বাথরুমটা ছোট্ট। একটা স্নানের টব একপাশে ও দেওয়ালে বসানো একটা সিঙ্ক ও কমোড।

    ঘরে ঢুকতেই আমাদের নজরে পড়ল, ডান দিককার দেওয়ালের গায়ে গাঁথা চৌকো একটা কাঁচের বাক্সের মধ্যে একটি বাল্ব জ্বলছে।

    ঘষা কাঁচের তৈরি আলোর বাক্সটি। হাত দিয়ে একবার পরখ করে কিরীটী মুহূর্তকাল যেন কি ভাবল, তারপর পকেট থেকে ছুরি বার করল। ছুরির ইস্পাতের তৈরি শক্ত ফলাটা বাক্সটার এক জায়গায় বসিয়ে সামান্য একটু চাড় দিতেই ডালাটা খুলে গেল, হাত ঢুকিয়ে। কিরীটী বাল্বটা খুলে নিতেই ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেল ও সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল একটি নারীর কণ্ঠস্বর। অত্যন্ত স্পষ্ট।

    হ্যাঁ, স্পষ্ট কথাটাই তোমাকে আমি বলতে এসেছি। আজ এবারে আমি মুক্তি চাই।

    জবাব শোনা গেল গম্ভীর পুরুষ-কণ্ঠে,তোমাকে আমি বেঁধে রাখিনি, ইচ্ছে করলেই তো তুমি যখন খুশি চলে যেতে পার। কিন্তু আমার কথা যদি শোন তো বলি এভাবে ছেলেমানুষি করে লাভটাই বা কি?

    ছেলেমানুষি!

    তাছাড়া আর একে কি বলব?

    তাই বটে! অদৃশ্য নাগপাশে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে—

    সেও তোমার ভুল ধারণা। বাঁধনই যদি মনে কর তো সেটা তোমার নিজেরই সৃষ্টি।

    আমার সৃষ্টি?

    তাই নয় তো কি?

    তা তো বলবেই! আজ ওর চাইতে বেশি প্রাপ্য আর আমার কি থাকতে পারে!

    শোন, আবোল-তাবোল কল্পনার দ্বারা নিজেকে মিথ্যা পীড়িত করো না। বাড়ি যাও। কয়েকদিন তোমার ভাল করে বিশ্রাম ও সুনিদ্রার দরকার। এই নাও। এই শিশি থেকে একটা ক্যাপসুল খেয়ে শুয়ো, দেখবে খুব সাউণ্ড স্লিপ হবে।

    ধন্যবাদ। ঘুমের ওষুধের দরকার যদি আমার হয় তো তোমার কাছে হাত পাততে হবে না।

    তারপরই সব স্তব্ধ।

    বাথরুমের আলোটা আবার জ্বলে উঠল।

    দেখলাম ইতিমধ্যে কখন একসময় কিরীটী বাল্বটা হোলডারে লাগিয়ে দিয়ে কাঁচের পাল্লাটা আটকে দিচ্ছে।

    আমরা দুজনে বাথরুম থেকে আবার ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করলাম।

    আল্লাবক্স ও বানু বেগম নিম্নকণ্ঠে পরস্পরের মধ্যে যেন কি কথাবার্তা বলছিল, আমাদের ঘরে প্রবেশ করতে দেখে আমাদের মুখের দিকে তাকাল দুজনেই।

    কিরীটী আল্লাবক্সকে চোখের ইঙ্গিতে কি যেন নির্দেশ দিল দেখলাম। আল্লাবক্স এগিয়ে গিয়ে একটা ইলেকট্রিক বোম টিপে দিল।

    মিনিটখানেকের মধ্যেই ঘরের দরজা নিঃশব্দে খুলে গেল, ঘরে এসে প্রবেশ করলেন আমাদের পূর্ব পরিচিত ডাঃ মিত্র।

    ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা কেবিন থেকে বের হয়ে এলাম।

    ডাক্তার মিত্র আমাদের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেলেন। সিঁড়ি দিয়ে মাঝামাঝি নেমেছি হঠাৎ নিচে থেকে জুতোর শব্দ কানে এল।

    তারপরই চোখে পড়ল স্যুট-পরিহিত এক পুরুষ-মূর্তি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে। আমি হঠাৎ গায়ে কিরীটীর নিঃশব্দ অঙ্গুলি-সংকেত স্পর্শ পেয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালাম সিঁড়ির ধাপের উপরেই। আগন্তুক ধীরে ধীরে উঠে নিঃশব্দে আমাদের পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেল।

    আগন্তুক কিন্তু আমাদের দিকে ফিরেও তাকাল না। বরং পাশ দিয়ে উঠে যাবার সময় যেন মনে হল পাছে আমাদের পরস্পরের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়, সেজন্য বিশেষ একটু সতর্কতা অবলম্বন করেই মুখটা ঘুরিয়ে নিয়েছিল।

    কিন্তু মুখটা ঘুরিয়ে নিলেও আগন্তুককে চিনতে আমার কষ্ট হয়নি। বিখ্যাত কয়লা-ব্যবসায়ী শ্ৰীমন্ত পাল, বৈকালী সঙ্ঘের অন্যতম মেম্বার।

    বাকি সিঁড়ি কটা অতিক্রম করে নিচে নেমে আসতেই প্রহরারত গুলজার সিংয়ের সঙ্গে দেখা হল।

    গুলজার সিং নিঃশব্দে আমাদের মুখের দিকে তাকাল এবং নিঃশব্দ সে দৃষ্টির মধ্যে আর কিছু না থাকলেও খানিকটা সন্দেহ যে উঁকি দিচ্ছিল সেটা বুঝতে কিন্তু কষ্ট হল না। কিন্তু কোনরূপ বাক্যব্যয় না করে সে যেমন দরজা খুলে দিল, আমরাও তেমনি বিনা-বাক্যব্যয়ে নার্সিং হোম থেকে বের হয়ে এলাম।

    আমাদের পশ্চাতে দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে গেল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.