Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প610 Mins Read0

    ১৭. ঘরে ঢুকে শুনি রঞ্জন রক্ষিত

    ঘরে ঢুকে শুনি রঞ্জন রক্ষিত কিরীটীর কোন একটা প্রশ্নের জবাবে তখন বলছেন, সে আপনি যাই বলুন না মিঃ রায়, আমি তবু বলব রীতিমত এটা একটা টরচার। বিশেষ করে এখানে যাঁরা মহিলারা উপস্থিত আছেন, just think of them, ভেবে দেখুন তাঁদের কথা।

    কিন্তু এভাবে প্রশ্ন না করা ছাড়া আমাদের উপায়ই বা কি বলুন মিঃ রক্ষিত! কিরীটী বলে।

    কেন, আপনারা কি মনে করেন এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন তাঁদের মধ্যে কেউই মিস সেনকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়ে তাঁর হাতে বিষের পাত্র তুলে দিয়েছিলেন? তাই যদি ভেবে থাকেন তো বলব, এটা যেমন অ্যাবসার্ড তেমনি হাস্যকর। ভুলে যাবেন না মিঃ রায়, এখানে যাঁরা আসেন বা আজ রাত্রে উপস্থিত আছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই একটা বংশপরিচয়, সমাজ ও শিক্ষা, কৃষ্টির ঐতিহ্য আছে। প্রত্যেকেই তাঁরা কালচার্ড সোসাইটি থেকে এসেছেন।

    কথাটা আমি আপনার নিশ্চয় অবিশ্বাস করছি না মিঃ রক্ষিত। কারণ প্রথমত যে দুর্ঘটনার সঙ্গে আপনারা সকলে সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ ভাবেই বলুন জড়িত হয়ে পড়েছেন, আজ এখানে সেটা আইনের চোখে অপরাধমূলক বলেই এ ধরনের জবানবন্দি পুলিসের কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে আপনারা বাধ্য, তা সে আপনাদের ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক। অবশ্য ইচ্ছে করলে আপনারা চুপ করে থাকতে পারেন, যেটা বলব সম্পূর্ণ যে যাঁর আপনাদের নিজ নিজ রিস্কে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা সমাজ বা পরিচয়ের যে নজির আপনি তুলেছেন তার জবাবে এইটুকুই আমি বলতে পারি, পাপকে কি আজও আমরা শিক্ষাদীক্ষা ও সমাজ-পরিচয়ের দিক থেকে গণ্ডী দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখতে পেরেছি? কিন্তু যাক সে কথা, আপনাকে যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব পেলে সুখী হব!

    সে আপনি চাইবেন না কেন মিঃ রায়, আমি কিন্তু তবু বলব, মানুষের নার্ভের ওপরে এ আপনাদের নিছক একটা জুলুম।

    জুলুম!

    নিশ্চয়ই।

    জুলুম যদি হয়ও মিঃ রক্ষিত, আমার প্রশ্নগুলোর জবাব আপনাদের কাছ থেকে আমার পাবার চেষ্টা করতেই হবে। এখন কথা হচ্ছে আপনি আমার সেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে রাজী আছেন কিনা?

    মুহূর্তকাল গম্ভীর হয়ে কিরীটীর মুখের দিকে চেয়ে থেকে মিঃ রক্ষিত নিরাসক্ত কণ্ঠে বললেন, বেশ বলুন, কি জানতে চান আপনারা আমার কাছ থেকে?

    কিরীটী প্রত্যুত্তরে এবারে মৃদু হেসে তার প্রশ্ন করল। বললে, আজ রাত্রে আপনি কখন এখানে এসেছেন?

    আমি এখানে মশাই নিয়মিত যাকে বলে আসি না। মধ্যে মধ্যে আসি।

    সে প্রশ্ন তো আপনাকে আমি করিনি, আমি জিজ্ঞাসা করেছি আজ রাত্রে কখন আপনি এসেছেন?

    তা ঠিক সময়টা আমার মনে নেই।

    আন্দাজ করেই না হয় বলুন। দু-চার মিনিট এদিক-ওদিক হলেই বা।

    মুশকিলে ফেললেন মশাই। এমনি করে আজ সময়ের জবাবদিহি করতে হবে জানলে কারেক্ট টাইমটাই দেখে রাখতাম।

    বেশ আপনাকেই আমি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি মিঃ রক্ষিত, একটা ব্যাপার আজকের রাত্রের, তা থেকে হয়ত আজ রাত্রে এখানে কখন এসেছেন টাইমটা আপনার মনে পড়তে পারে। রাত নটা নাগাদ আজ আপনি ও বিশাখা চৌধুরী বার-রুমে ছিলেন, মনে পড়ছে?

    দাঁড়ান দাঁড়ানমশাই, আমার আজরাত্রেরমুভমেন্টের অনেক ডিটেলসইতোদেখছি আপনারা ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে বসে আছেন! ভাল। তা ছিলাম। বিশাখার সঙ্গে বসে দুটো পেগ ড্রিঙ্ক করেছি বটে এখানে এসে। কিন্তু সেটা যে ঠিক রাত নটার সময়ই তা হলফ করে বলি কি করে বলুন?

    বেশ। সে যাক। বার-রুমে যাবার কতক্ষণ আগে আপনি আজ এখানে আসেন—পনের-বিশ মিনিট, আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা?

    তা বোধ হয় রাত সাড়ে আটটা হবে। দু-চার মিনিট আগে বা পরেও হতে পারে।

    আপনি সোজা হলঘরে এসেই ঢোকেন তো?

    হ্যাঁ, সেটা আমার মনে আছে।

    সে সময় হলঘরে কে কে ছিল আপনার মনে আছে মিঃ রক্ষিত?

    বিশাখা চৌধুরী আর অশোক রায় ছিল হলঘরে।

    অশোক রায় ছিলেন হলঘরে সে সময়?

    তাই আমার মনে হয়। আমি ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই দেখেছিলাম তাকে দুনম্বর দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তার পিছনটা আমি দেখেছিলাম।

    তাহলে আপনি সিওর নন যে, তিনিই অশোক রায় কিনা?

    বা রে! অশোক রায়কে আমি চিনি না? অশোক রায়ই। তার হাঁটবার ভঙ্গীটুকু পর্যন্ত যে আমার পরিচিত।

    অশোক রায়ের সঙ্গে তাহলে কি আপনার এই সঙ্ঘ ছাড়াও অন্যরকম ভাবে জানাশোনা ছিল?

    ছিল বৈকি। শেয়ার মার্কেটে যাদের যাওয়া-আসা আছে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার বিশেষ পরিচয় আছে।

    সত্যি আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে আপনি শেয়ার মার্কেটের একজন বিশেষ পরিচিত। আপনার বুঝি অফিস আছে কোনো?

    হ্যামডেন অ্যাণ্ড রক্ষিত কোম্পানির আমিই তো মেজর শেয়ারহোল্ডার।

    হুঁ, আচ্ছা মিঃ রক্ষিত, আপনার তো শেয়ার মার্কেটের অনেকের সঙ্গেই পরিচয় আছে। এখানে যাঁরা আসা-যাওয়া করেন, মানে আপনাদের এখানকার এই মেম্বারদের মধ্যেকার কার কার শেয়ার মার্কেটে যাতায়াত আছে বা শেয়ার সম্পর্কে কারা ইনটারেসটেড-নামগুলো যদি বলেন?

    এখানকার অনেকেই তো শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ইনটারেসটেড-অশোক রায়,মনোজ দত্ত, মহারানী, সুধীরঞ্জন, নিখিল ভৌমিক!

    আপনাদের প্রেসিডেন্ট?

    Dont talk about him, a hopeless fellow! ও জানে শুধু টাকা-আনা-পাইয়ের হিসাব করতে আর নিজের ঘরের মধ্যে গুম হয়ে নিজের ধার-করা vanity নিয়ে বসে থাকতে!

    কিরীটী রঞ্জন রক্ষিতের কথায় মৃদু হাসে। তারপর আবার প্রশ্ন করে, আচ্ছা আপনার অফিসে যাতায়াত আছেবাইরের এমন দু-চারজনইনফ্লুয়েনসিয়াললোকেরনাম করতে পারেন?

    কেন পারব না! অনেক মহাত্মাই তো শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ইনটারেসটেড!

    যথা?

    এই ধরুন না ব্যারিস্টার ব্রজেন সোম, সলিসিটার আর. এন. মিত্র, ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরী।

    হঠাৎ রঞ্জন রক্ষিতের মুখে ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীর নামটা শুনে চমকে ওঠে যেন কিরীটী, কিন্তু পরক্ষণেই সে ভাবটা সামলে নেয়।

    ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীকে আপনি তাহলে চেনেন?

    খুব ভাল ভাবেই চিনি। চমৎকার লোক।

    কিন্তু তিনি তো শুনেছি অত্যন্ত busy ডাক্তার। তা তিনি এসবের সময় পান?

    হুঁ, জানেন নাতো শেয়ার মার্কেটের একজন পোকা বললেও চলে লোকটাকে! তিনটে-চারটে নাগাদ প্রত্যহ একবার যানই আমার অফিসে। নেহাৎ না যেতে পারলে টেলিফোন করেন।

    যাক সে কথা। আপনি যে একটু আগে বলছিলেন হলঘরে ঢুকে আজ আপনি বিশাখা চৌধুরীকে দেখেছিলেন, তিনি তখন হলঘরে কি করছিলেন?

    একটা সোফার ওপরে বসে ছিলেন চুপটি করে। আমার যাবার পরে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, চলুন মিঃ রক্ষিত, I was waiting for you! বললাম, সে কি? তার জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আজ সন্ধ্যা থেকেই কেমন যেন একটু dull লাগছে, কিছু ভাল লাগছে না। চলুন একটু ড্রিঙ্ক করা যাক। যদি আপনার আপত্তি না থাকে। অগত্যা কি আর করি বলুন? একজন ভদ্রমহিলা ড্রিঙ্ক অফার করছেন! দুজনে গিয়ে ঢুকলাম বারে।

    তারপর?

    তারপর বোধ হয় আধঘণ্টা সেই ঘরেই বসে দুজনে ড্রিঙ্ক করেছি।

    আপনারা যে-সময় বারে বসে ড্রিঙ্ক করছিলেন তখন মহারানী সে ঘরে এসেছিলেন?

    কে, মহারানী?

    হ্যাঁ!

    মনে হচ্ছে যেন একবার এসেছিলেন।

    কতক্ষণ সেখানে ছিলেন মহারানী?

    তা ঠিক মনে নেই।

    বিশাখা চৌধুরী আপনার সঙ্গে বার-রুমে কতক্ষণ ছিলেন?

    মাঝখানে মনে পড়ছে ড্রিঙ্ক করতে করতে মিনিট পনেরো-কুড়ির জন্য বোধ হয় একবার উঠে যান বার থেকে। তারপর আবার এসে বসেন।

    অশোক রায় বা মিত্রা সেনকে সামনাসামনি আপনি আজ রাত্রে একবারও দেখেছেন?

    না।

    আচ্ছা এবারে আপনি যেতে পারেন। দয়া করে বিশাখা চৌধুরীকে একবার এ ঘরে যদি পাঠিয়ে দেন!

    দিচ্ছি।

    রঞ্জন রক্ষিত ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

    .

    এবারে ঘরে এলেন বিশাখা চৌধুরী।

    কিরীটী তাঁকে আহ্বান জানাল, আসুন মিসেস চৌধুরী, বসুন।

    নির্দিষ্ট চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বিশাখা চৌধুরী একবার তেরছা ভাবে তীব্ৰদৃষ্টিতে যেন আমার দিকে তাকাল। সে দৃষ্টিতে সে-সময় আমার প্রতি আর যাই থাক ভালবাসা যে বিন্দুমাত্রও ছিল না সে সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ। এবং কেন জানি না, তাঁর দৃষ্টির সঙ্গে আমার দৃষ্টি মিলতেই চোখটা আমি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।

    হঠাৎ কিরীটীর কণ্ঠস্বরে আবার চমকে ফিরে তাকালাম।

    কিরীটী বিশাখা চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বলছে, সুব্রতর ওপরে যেন আপনি অবিচার করবেন মিসেস চৌধুরী। আপনাকে আমি এ-কথা হলপ করে বলতে পারি, আপনার প্রতি ওর গত কদিনের ব্যবহারের মধ্যে আর যাই থাক, এতটুকু প্রতারণাও ছিল না। আর ছদ্মবেশে ওর এখানে আসাটা ওর নিজের ইচ্ছায় ঘটেনি, আমরাই পরামর্শ মত!

    থাক, ওঁর কথা আর বলবেন না। একটা যেন অতর্কিত থাবা দিয়েই কিরীটীর বক্তব্যটা অর্ধপথে থামিয়ে দিলেন বিশাখা চৌধুরী। তারপরই বললেন, আপনাদের সমস্ত ব্যাপারটা তাহলে pre-arranged! আগে থেকেই সব প্ল্যান করা ছিল!

    সত্যি কথা বলতে গেলে, কতকটা হ্যাঁ-ও বটে, আবার কতকটা না-ও বটে। যাক সে কথা। আপনাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। যদি অনুগ্রহ করে আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেন।

    সাধ্য হলে দেব।

    অবিশ্যি আপনার সাধ্যের বাইরে কোন প্রশ্ন আমি করব না।

    দেখুন মিঃ রায়, আমার ঘণ্টাখানেক ধরে প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে, যা আপনার জিজ্ঞাস্য আছে একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে আমাকে ছেড়ে দিলে বিশেষ বাধিত হব।

    মিসেস চৌধুরী—

    প্লিজ। আমাকে বিশাখা চৌধুরী বলে ডাকলেই বাধিত হব।

    স্যরি। আচ্ছা আপনি আজ কখন এখানে আসেন?

    সোয়া আটটা কি আটটা বিশ হবে।

    সোজা আপনি হলঘরে এসেই ঢোকেন তো?

    হ্যাঁ।

    হলঘরে তখন আর কেউ ছিল?

    ছিল, অশোক রায়।

    আর মিত্রা সেন?

    না, তাকে দেখিনি।

    মিত্রা সেনকে আজ একবারও দেখেননি?

    না।

    মহারানীকে দেখেছিলেন কখন প্রথম?

    ঠিক মনে করে বলতে পারছি না। দুঃখিত।

    মহারানীকে হলঘরে এসে মিত্রা সেনের মৃত্যুসংবাদ দেবার আগে একবারও দেখেছেন কিনা আপনার মনে পড়ছে না?

    না।

    আচ্ছা মিঃ রক্ষিতের সঙ্গে এই ঘরে বসে ড্রিঙ্ক করতে করতে আপনি নাকি উঠে বাইরে কোথায় মিনিট পনের-কুড়ির জন্য গিয়েছিলেন, তারপর আবার এই ঘরে ফিরে আসেন, কথাটা কি সত্যি?

    Funny! কে আপনাকে এ কথা বলেছে মিঃ রায়? আমি এ ঘর থেকে বের হয়ে যাবার পর আর তো এ ঘরে ফিরে আসিনি? আমি এ ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে হলঘরেই ছিলাম।

    এ ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে আবার আপনি এ ঘরে ফিরে আসেননি তাহলে?

    Certainly not!

    কিন্তু যদি বলি আজ রাত্রে মিত্রা সেনের মৃতদেহ বাগানের মধ্যে আবিষ্কৃত হবার পূর্বেই একবার আপনি কোন এক সময় নিচের বাগানে গিয়েছিলেন?

    তাহলে আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে বাধ্য হব যে, আপনার অনুমানটা বা জানাটা সম্পূর্ণ ভুল!

    বিশাখা চৌধুরীর সদম্ভ উক্তির সঙ্গে সঙ্গে কিরীটীর মুখখানা যে সহসা কঠিন হয়ে ওঠে। তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে বিশাখার মুখের দিকে তাকিয়ে চাপা মৃদু কণ্ঠে এবারে সে বলে, ভুল!

    হ্যাঁ।

    তারপর কিরীটী সঙ্গে সঙ্গেই যেন এগিয়ে গেল দুপা উপবিষ্টা বিশাখা চৌধুরীর দিকে এবং হাত বাড়িয়ে তাঁর মাথার কেশ থেকে ছোট পাতা সমেত কামিনীগাছের একটা ভাঙা শাখা টেনে বের করে বলল, মিত্রা সেন যেখানে বেঞ্চের ওপর মৃত অবস্থায় ছিলেন তার পিছন দিকে একটা কামিনী গাছের বোপ আছে, আপনার নিশ্চয়ই অজানা থাকবার কথা নয়। কিন্তু মিত্রা সেনের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হবার পর আপনারা যখন সকলে মিলে বেঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়ান, সে-সময় কেমন করে এই বস্তুটি আপনার চুলের সঙ্গে আটকে থাকতে পারে বলতে পারেন। যদি সত্যি আপনার কথাই মেনে নেওয়া যায় যে, সেই সময়ই প্রথম আপনি আজ নীচের বাগানে গিয়েছিলেন।

    বিশাখার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মুখের কোথায়ও যেন বিন্দুমাত্র রক্ত আর নেই। সমস্ত রক্ত যেন তাঁর মুখ থেকে কে ব্লটিং পেপারে শুষে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, কিরীটীর মুখের দিকে স্থাপিত তাঁর দু-চোখের বোবাদৃষ্টির মধ্যে সেই মুহূর্তে যে অসহায় করুণ একটা ভাব ফুটে উঠেছিল তা থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, তিনি যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছেন যেন।

    ন যযৌ ন তস্থৌ।

    কী, জবাব দিন?

    বিশাখা চৌধুরীর এতক্ষণের সমস্ত দৃঢ়তা যেন কিরীটীর শেষ প্রশ্নের নির্মম আঘাতে গুঁড়িয়ে একেবারে চুরমার হয়ে গেল।

    হঠাৎ দুহাতের মধ্যে মুখ ঢেকে চাপা আর্ত করুণ কণ্ঠে বলে উঠলেন এবারে বিশাখা, বিশ্বাস করুন মিঃ রায়, আমি-আমি মিত্রার মৃত্যুসম্পর্কে কিছু জানি না, কিছু জানি না।

    কিন্তু নিষ্ঠুর কিরীটী।

    পূর্ববৎ কঠিন কণ্ঠেই এবারে সে বললে, আপনি তাহলে মিসেস চৌধুরী স্বীকার করছেন এখন যে, আগে আর একবার আপনি আজ রাত্রে একসময় নীচের বাগানে গিয়েছিলেন?

    মৃদু ক্ষীণকণ্ঠে এবার প্রত্মর এল ছোট একটিমাত্র শব্দে, হ্যাঁ।

    হুঁ। তাহলে এই ঘরে বসে যখন রঞ্জনের সঙ্গে ড্রিঙ্ক করছিলেন, তার আগেই অর্থাৎ মিঃ রক্ষিতের সঙ্গে দেখা হবার আগেই আপনি একবার বাগানে গিয়েছিলেন?

    হ্যাঁ। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন মিঃ রায়, আমি কিছু জানি না। মিত্রার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

    সত্যই যদি তাই হয় তো আপনাকে আমি এইটুকুই আশ্বাস দিতে পারি যে আপনার শঙ্কিত হবারও কোন কারণ নেই। তবে আমি যা-যা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি তার মধ্যে যেন কোন কিন্তু রাখবেন না। সত্য জবাবই দেবেন যা জানেন।

    বলুন।

    আপনি এখানে এসে সোজা তাহলে বাগানেই যান?

    একটু ইতস্তত করে বিশাখা জবাব দেন, হ্যাঁ।

    কিন্তু কেন? এসেই সোজা বাগানে গেলেন কেন?

    অশোককে যেতে দেখেছিলাম।

    তার মানে আপনি তাঁকে ফলো করেছিলেন, তাই কি?

    হ্যাঁ।

    কিন্তু কেন ফলো করছিলেন তাঁকে?

    প্রত্যুত্তরে এবারে চুপ করে রইলেন মাথাটা নীচু করে বিশাখা চৌধুরী।

    কই, জবাব দিন?

    একজন আমাকে অশোক ও মিত্রার ওপরে নজর রাখতে বলেছিল।

    হুঁ। কে—সে লোকটি কে?

    ক্ষমা করবেন আমাকে মিঃ রায়, আমি তার নাম করতে পারব না।

    পারবেন না?

    না।

    কেন? শুনুন আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এটুকু বিশ্বাস আমাকে করতে পারেন, আপনার কাছ থেকে যে নামটা আমি জেনেছি এ কথা কাউকেই আমি জানাব না। ইচ্ছে করলে আপনি নামটা একটুকরো কাগজে লিখে আমাকে জানাতে পারেন।

    ক্ষমা করবেন। তবু পারবো না। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

    তাহলে এই আমি বুঝব যে আপনি বলবেন না ইচ্ছে করেই!

    বললাম তো আপনাকে আমার কথা। আপনি এখন যা বোঝেন।

    মুহূর্তকাল প্রত্যুত্তরে কিরীটী চুপ করে রইল, তারপর মৃদুকণ্ঠে বললে, নামটা যখন বলবেনই

    বলে আপনি স্থিরপ্রতিজ্ঞ, মিথ্যে পীড়াপীড়ি আর আপনাকে আমি করব না। তবে এটা ঠিকই জানবেন বিশাখা দেবী, এই মুহূর্তে না হলেও, তার নাম জানতে খুব বেশী দেরি আমার হবে না। নাম তার আমি জানবই। যাক সে কথা, আপনি নীচে গিয়ে কী করছিলেন আর কখনই বা ফিরে আসেন?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.