Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প610 Mins Read0

    ০২. ভুজঙ্গ ডাক্তারের সঙ্গে

    ভুজঙ্গ ডাক্তারের সঙ্গে পূর্বে সাক্ষাৎ-পরিচয় না থাকলেও জনরব ও জনশ্রুতিতে লোকটি আমাদের একেবারে অপরিচিত ছিলেন না। সাক্ষাৎভাবে পরিচয়-সৌভাগ্য হল মাত্র আজই সকালে।

    রবিবার। হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ। হাসপাতালে সকালেই বেরুবার তাগাদা নেই। তাছাড়া রবিবার চেম্বারেও সকালে স্পেশাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যতীত তিনি রোগী দেখেন না। তাই ভুজঙ্গ ডাক্তার সকাল সাড়ে আটটায় কিরীটীর সঙ্গে সাক্ষাতের টাইম দিয়েছিলেন। সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল সকাল সাড়ে আটটায় ঠিক।

    আমরা পাঁচ মিনিট আগেই ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছেছিলাম। বেয়ারার হাতে পূর্বেই কিরীটীর কার্ড প্রেরিত হয়েছিল। ওয়েটিং রুমটি চমৎকার ভাবে সাজানো। একেবারে খাস ইউরোপীয়ান স্টাইলে।

    মেঝেতে দামী পুরু কার্পেট। সোফা কাউচ। গোলাকার একটি টেবিল ঘরের মধ্যস্থলে। চকচকে সব ফার্নিচারেরই চোখ ঝলসানো পালিশ। সাদা নিরাবরণ দুধধবল চুনকাম করা দেওয়ালে কিছু ফ্রেসকোর সূক্ষ্ম কাজ। কোন ছবি বা ক্যালেণ্ডার নেই। এক কোণে একটি বিরাট ঘড়ি স্ট্যাণ্ডের উপর বসানো।

    ঘরের জানলা ও দরজার পর্দায় ফিকে নীল সূক্ষ্ম বিলিতি নেটের সব পদা ঝোলানো।

    ঢং করে সময়-সংকেত ঘরের ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজবার সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে কোথায় যেন অদৃশ্য ইলেকট্রিক সাংকেতিক একটা শব্দ শোনা গেল, কঁ কঁ…. সঙ্গে সঙ্গে বেয়ারা এসে ঘরে ঢুকে বললে, আসুন।

    বেয়ারার পিছনে পিছনে করিডোর পার হয়ে আমরা এসে সম্পূর্ণ-বন্ধ একটি কপাটের সামনে দাঁড়ালাম।

    কপটটা ঠেলতেই লিং অ্যাকশানে সরে গেল, বেয়ারা বললে, ভিতরে যান।

    প্রথমে কিরীটী ও তার পশ্চাতে আমি একটি প্রশস্ত ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলাম।

    ওয়েটিং রুমটির মতই এই ঘরটিও অনুরূপ রুচিসম্মতভাবে সাজানো-গোছানো। দিনের বেলাতেও জানালায় ভারী মোটা ফিকেনীল স্ক্রিন টানা।

    চার-পাঁচটা বড় বড় ডোমের অন্তরালে অদৃশ্য শক্তিশালী বিদ্যুৎ-বাতির আলোয় ঘরটা যেন ঝলমল করছে, বাইরের সূর্যালোক ভিতরে না আসা সত্ত্বেও।

    ঘরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের অদ্ভুত সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠের আহ্বান কানে এল, আসুন। Be seated please Mr. Roy! এক মিনিট।

    কণ্ঠস্বরে সামনের দিকে তাকাতেই নজরে পড়ল সাদা ধবধবে অ্যাপ্রন গায়ে দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে অর দেওয়ালের কাছে ঘূর্ণমান একটা লিকুইড সোপর কাঁচের আধার থেকে সোপ নিয়ে ওয়াশিং বেসিনের ট্যাপে হাত ধুচ্ছেন।

    ঘরের ঠিক মধ্যখানে এক একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি টেবিল। পুরু কাঁচের প্লেট তার উপরে। একটি ডোমে ঢাকা ফ্লেকসিবিল টেবিল-ল্যাম্প।

    টেবিলের উপরে বিশেষ কিছুই নেই। একটি স্টেথোসকোপ, একটি প্রেসক্রিপসন প্যাড, এটি মুখখোলা পার্কার ফিফটিওয়ান, একটি কাঁচের গোলাকার পেপারওয়েট। একটি ঝিনুকের সুদৃশ্য অ্যাসট্রে। একটি ৯৯৯য়ের সিগারেট টিন ও একটি ম্যাচ।

    বড় টেবিলের পাশেই কাঁচের প্লেট বসানো একটি স্ট্যাণ্ডের উপরে সাদা এনামেলের ট্রেতে কিছু ডাক্তারী পরীক্ষার আবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি। তারই পাশে বসবার ঘোরানো একটি গদি-আঁটা গোল টুল। এবং তারই সামনে ডাক্তারের বসবার জন্যই বোধ হয় গদি আঁটা একটি রিভলবিং চেয়ার। টেবিলের অন্যদিকে গদি আটা সুদৃশ্য আরও দুটি চেয়ারও নজরে পড়ল। কনসালটিংয়ের সময় ঐ চেয়ারই বোধ হয় নির্দিষ্ট রোগী ও তার সঙ্গের অ্যাটেনডেন্টের জন্য। এক পাশে অন্য একটি দরজা দেখা যাচ্ছে, ভিতরে বোধ হয় সংলগ্ন আর একটি পরীক্ষা-ঘর আছে। ঘরে মেঝেতে ফিকে সবুজ বর্ণের রবার-কার্পেট বিছানো।

    নিঃশব্দ পায়ে আমরা দুজনে এগিয়ে গিয়ে সেই দুটি চেয়ারই অধিকার করে বসলাম। ডাক্তার হাত ধুতে লাগলেন।

    ওয়েটিং রুমের মত কনসালটিং রুমের দেওয়ালও সম্পূর্ণ সাদা এবং দেওয়ালে কোন ছবি বা ক্যালেণ্ডার নেই। একটি মাত্র গোলাকার ইলেকট্রিক ক্লক ছাড়া। মিনিটে মিনিটে বড় কাঁটাটা সরে যাচ্ছে এক এক ঘর।

    হাতধোয়া শেষ করে ডাক্তার আমাদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। দুই ওষ্ঠের বন্ধনীতে আলগাভাবে ধরা অর্ধদগ্ধ একটি সিগারেট। টাওয়েলের সাহায্যে হাতটা মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বললেন, সাক্ষাৎ পরিচয় আপনার সঙ্গে না থাকলেও আপনার নামটা আমার অপরিচিত নয় মিঃ রায়। বলতে বলতে টাওয়েলটা স্ট্যান্ডের উপরে রেখে রিভলবিং চেয়ারটার উপরে এসে বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

    তাকিয়েছিলাম আমি ডাক্তারের মুখের দিকেই। হাসির সঙ্গে সঙ্গেই কেমন যেন বিশ্রী লাগল। চোখটা ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম।

    ডাক্তার বলছিলেন তখন, বুঝতেই পারেন, ডাক্তার মানুষ, বড্ড un-social, নচেৎ আপনার সঙ্গে আলাপ এক-আধবার হওয়ার নিশ্চয়ই সুযোগ ঘটত।

    কিরীটী মৃদুকণ্ঠে এবারে জবাব দিল, সাক্ষাৎ-পরিচয়ের সৌভাগ্য না হলেও আপনিও আমার একেবারে অপরিচিত নন ডক্টর চৌধুরী।

    মুহূর্তে ডাক্তার চৌধুরীর পিঙ্গল চোখের তারায় যেন একটা হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। এবং সেই সঙ্গে মুখেও তাঁর হাসি ফুটে ওঠে।

    আবার আমি আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে যেন বাধ্য হলাম। একটা ক্লেদাক্ত পিচ্ছিল অনুভূতি যেন আমার সর্বদেহে ছড়িয়ে গেল।

    ডাক্তার তখন আবার বলছিলেন, বলেন কি মিঃ রায়! ডাক্তারদের তো শুনি লোকে যতটা পারে এড়িয়েই চলে। নেহাৎ বিপদে বা বেকায়দায় না পড়লে তাদের সামনাসামনি কেউ বড় একটা আসে বলে তো জানি না।

    ডাক্তারদের ডাক্তারিটাই তো একমাত্র পরিচয় নয় ডক্টর চৌধুরী! বলে কিরীটী।

    কিরীটীর জবাবে মুহূর্তের জন্য নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলেন ডক্টর চৌধুরী, তারপর মৃদু হেসে বললেন, কথাটা হয়ত আপনার মিথ্যা নয় মিঃ রায়। কিন্তু লোকে তো সেটা ভুলেই যায়। আমরাও যেন ভুলতে বসেছি।

    সেটা কিন্তু বলব আপনাদেরই নিজেদের সেম প্রফেশনের লোকেদের উপরে একটা বিশেষ পক্ষপাতিত্ব। আর সেই কারণেই বোধহয় চট করে বড় একটা কেউ আপনাদের কাছে ঘেঁষতে চায় না।

    সত্যি, আপনারও তাই মনে হয় নাকি! বলতে বলতে নিঃশেষিত-প্রায় জ্বলন্ত সিগারেটের শেষাংশটুকুর সাহায্যেই টিন থেকে একটা নতুন সিগারেট টেনে অগ্নিসংযোগ করে টিনটা কিরীটীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, চলে নিশ্চয়ই?

    ধন্যবাদ। চলে। তবে আমি সিগার আর পাইপই লাইক করি। বলতে বলতে কিরীটী পকেট থেকে চামড়ার সিগারকেসটা বের করে একটা সিগার নিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে নিল।

    What about you Subrata baboo? বলে ডাক্তার আমার দিকে টিনটা এগিয়ে দিতে দিতে মৃদু হাসলেন।

    No! Thanks! বলে সঙ্গে সঙ্গেই আমি আবার দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে নিতে যেন বাধ্য হলাম।

    ওঃ, বলেন কি মশাই! ধূমপান করেন না।

    না। দু-একবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু রপ্ত করতে পারলাম না। বলে হাসলাম। আমিও একসময় সিগার চেষ্টা করেছিলাম মিঃ রায়, কিরীটীর দিকে তাকিয়ে এবারে ডাক্তার বলতে লাগলেন, কিন্তু গন্ধটা এমন উগ্র যে সুব্রতবাবুর মতই রপ্ত করতে পারলাম না। এবং কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই টেবিলের গায়ে সংযুক্ত কোন অদৃশ্য প্রেসবটম টিপতেই কঁ কঁ করে একটা শব্দ হল ও তার পরমুহূর্তেই ঘরের মধ্যকার তৃতীয় দ্বারটি খুলে একটি মধ্যবয়সী নার্স ঘরে ঢুকে ডাক্তারের সামনে এসে দাঁড়াল, আদেশের অপেক্ষায়।

    টি প্লিজ, নার্সকে কথাটা বলেই ডাক্তার ফিরে তাকালেন কিরীটীর মুখের দিকে এবং প্রশ্ন করলেন, চা চলবে তত মিঃ রায়?

    আপত্তি নেই।

    সুব্রতবাবু আপনি—

    হেসে বললাম, আপত্তি নেই।

    নার্স চলে গেল ঘর থেকে পূর্ব দ্বার-পথে।

    আবার কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাঃ চৌধুরী কথা বললেন, মিঃ রায়, আপনার ও সুব্রতবাবুর চেহারা সংবাদপত্র মারফৎ এতবার দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে যে, দেখামাত্রই আজ আপনাদের আমার সেইজন্যই চিনে নিতে কষ্ট হয়নি।

    কিরীটী ধূমপান করতে করতে নিঃশব্দে হাসল মাত্র, কোন জবাব দিল না।

    একটু পরেই বেয়ারা ট্রেতে করে চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে এসে ঢুকল। এবং ট্রেটা ডাক্তারের সামনে নামিয়ে দিয়ে নিঃশব্দেই আবার চলে গেল।

    ডাক্তারই উঠে নিজহাতে চিনির পরিমাণ জেনে নিয়ে তিন কাপ চা তৈরী করে দু কাপ আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজে তৃতীয় ও অবশিষ্ট কাপটি তুলে নিলেন।

    চা পানের সঙ্গে সঙ্গেই গল্প চলতে লাগল।

    একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ডাক্তার যাকে বলে একেবারে চেইন স্মোকার। একটার পর একটা সিগারেট নিঃশেষ করে চলেছেন। আবার মনে হল লোকটা এত বেশী ধূমপান করে, অথচ ওর দাঁতগুলো অমন ঝকঝক করছে কি করে! কোন দাঁতে কোথাও এতটুকু নিকোটিনের ছোপ মাত্রও নেই!

    রবিবারে এভাবে দেখা করতে এসে আপনাকে বিব্রত করলাম না তো ডক্টর চৌধুরী। কিরীটী বলে।

    না, না—বিব্রত কেন করবেন। রবিবারে অবিশ্যি পূর্ব হতে কোনোস্পেশাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে গাড়িটা নিয়ে একা একাই বের হয়ে পড়ি। সমস্তটা দিন কলকাতার বাইরে এই ইট-কাঠ-পাথরের প্রাণান্তকর সভ্যতার হৈ-হট্টগোলের সীমানা পার হয়ে, কোথাও কোনো খোলা জায়গায় গিয়ে কাটিয়ে আসি। ঐ ভাবে একটা কোনও নির্জন জায়গায় ঘণ্টাকয়েক কাটানোর মধ্যে যে কত বড় একটা রিলিফ পাই—সে জানি একমাত্র আমিই। কিন্তু পরশু আপনার ফোন না পেয়ে এবং এ রবিবার সকালে কোনোস্পেশাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকায় আপনাদের আমি আসতে বলেছিলাম আজ। তাছাড়া আপনি আমার সঙ্গে নিজে থেকে দেখা করে আলাপ করতে আসছেন, সে লোভটাও তো কম নয় মিঃ রায়। সুযোগটাকে তাই সাদরে আহ্বান জানাতে এতটুকু কিন্তু দ্বিধা করিনি। কিন্তু থাক সে কথা। আপনার মত একজন লোক যে কেবল আমার সঙ্গে আলাপ করবার জন্যই এসেছেন কথাটা কেমন যেন শুধু তাই মনে হচ্ছে না মিঃ রায়, নিশ্চয়ই অন্য কোন কারণও কিছু একটা আছে। বলে ডক্টর চৌধুরী তাকালেন সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে।

    হাসল কিরীটী। বললে, একেবারে আপনার অনুমানটা যে মিথ্যে তা নয় ডক্টর চৌধুরী। সত্যিই কতকটা নিজের তাগিদেই আপনাকে একটু বিরক্ত করতে এসেছি।

    না, না—সে কি কথা! বলুন না কি প্রয়োজন আপনার? কৌতূহলে ডাক্তারের পিঙ্গল দুটো চোখের তারা যেন বারেকের জন্য ঝিকিয়ে উঠল।

    কিরীটী চুরুটের অগ্রভাগটা সামনের টেবিলের উপর রক্ষিত অ্যাশট্রের মধ্যে ঠুকতে ঠুকতে  মৃদুকণ্ঠে বললে, ডক্টর চৌধুরী, তাহলে আমার কাজের কথাটাও সেরে ফেলি, কি বলেন?

    নিশ্চয়ই। আচ্ছা, বলছিলাম আপনি ব্যারিস্টার অশোক রায়কে বোধ হয় চেনেন? কিরীটীর প্রশ্নে দ্বিতীয়বার স্পষ্ট দেখতে পেলাম ডাক্তারের চোখের তারা দুটো মুহূর্তের জন্য যেন ঝিকিয়ে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত গলায় জবাব দিলেন, হ্যাঁ, কিন্তু কেন বলুন তো?

    চেনেন তাহলে? কতদিন চেনেন?

    তা বছরখানেক তো হবেই।

    বছরখানেক!

    হ্যাঁ।

    যদি কিছু মনে না করেন তো ঐ অশোক রায় সম্পর্কেই, মানে—কিরীটী একটু ইতস্তত করে।

    না না-বলুন না কি বলছেন?

    আচ্ছা, আপনার সঙ্গে তাঁর কি সূত্রে ঠিক পরিচয়টা হয়েছিল যদি বলেন—

    ডাক্তারের সঙ্গে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যা হয়।

    অর্থাৎ রোগী হিসাবেই তো। তা তিনি

    হুঁ। কিন্তু মিঃ রায়, আর বেশি প্রশ্ন করতে পারবেন না। জানেন তো ডাক্তার ও তাঁর রোগীর মধ্যে পরস্পরের সম্পর্কটা। বলে মৃদু হাসলেন ডাঃ চৌধুরী।

    বলা বাহুল্য আমিও সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নিতে যেন বাধ্য হলাম।

    থাক। আর বলতে হবে না, বুঝেছি। কিরীটী বললে।

    কিরীটীর শেষের কথায় যেন সবিস্ময়ে তাকালেন ডাঃ চৌধুরী কিরীটীর মুখের দিকে।

    কেবল একটা কথার আর জবাব চাই। অশোক রায় প্রায়ই এখানে, মানে আপনার কাছে আসতেন, তাই না? কিরীটী আবার প্রশ্ন করল।

    প্রায়ই বলতে অবিশ্যি আপনি ঠিক কি মীন করছেন জানি না মিঃ রায়, তবে মধ্যে মধ্যে এক-আধবার আসেন। কথাটা শেষ করে হঠাৎ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাঃ চৌধুরী এবারে বললেন, কেবল ঐ সংবাদটুকু জানবার জন্যই নিশ্চয়ই এত কষ্ট করে আজ এখানে আসেননি মিঃ রায় আপনি?

    বিশ্বাস করুন ডক্টর চৌধুরী। সত্যি, ঐটুকুই আমার জানবার ছিল আপনার কাছে। বাকিটা

    বাকিটা?

    মৃদু হেসে কিরীটী জবাব দিল, সেটা জানা হয়ে গিয়েছে।

    অতঃপর দুজনেই যেন কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে থাকে। তারপর ডাঃ চৌধুরীই আবার স্তব্ধতা ভঙ্গ করেন, অবশ্য আপনি যদি কিছু মনে না করেন তো একটা প্রশ্ন ছিল আমার মিঃ রায়।

    বলুন।

    আমি যতদুর জানি অশোক রায় ব্যারিস্টার is a perfect gentleman!

    নিশ্চয়ই। তাতে কোন সন্দেহই নেই আমারও।

    কিন্তু সন্দেহ যে আপনিই মনে এনে দিচ্ছেন মিঃ রায়।

    আমি?

    কতকটা তাই তো। এ দেশে একটা প্রবাদ আছে নিশ্চয়ই জানেন, পুলিসে ছুঁলে আঠার ঘা। তা আপনি আবার তাদেরও পিতৃস্থানীয় বলে নিজের রসিকতায় নিজেই আবার মৃদু হাসলেন।

    না না—সে সব কিছুই নয়। কিরীটী বোধ হয় আশ্বাস দেবার চেষ্টা করল। কিন্তু ডাক্তারের মুখের দিকে চোখ ছিল আমার। স্পষ্ট বুঝলাম আশ্বাস হলেও সে আশ্বাসবাক্য ডাক্তারের মনে কোনরূপ দাগই কাটতে সক্ষম হয়নি। তথাপি মুখ ফুটেও আর কিছু তিনি বললেন না। কিরীটীর মুখের দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলেন।

    কিরীটীই আবার কথা বললে, আচ্ছা, আপনার পাশের ফ্ল্যাটে ঢোকবার সময় লক্ষ্য করলাম, একবারে লাগোয়া, বলতে গেলে পাশাপাশি একই রকমের দুটো গেট।

    তাই। দোতলায়ও এ-বাড়ির ঠিক আমারই মত পাশাপাশি চারটে ফ্ল্যাট। আমারটা ও আমার বাঁ পাশের ফ্ল্যাটে ওঠবার সিঁড়িটা কমন। তার পাশের ডাইনের দুটো ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে ওঠবার গেট হচ্ছে দ্বিতীয় গেটটা এবং সেটারও একটাই সিঁড়ি।

    আপনার বাঁ পাশের ফ্ল্যাটে ভাড়াটে আছে তো?

    হ্যাঁ। একজন ইণ্ডিয়ান ক্রিশচান। মিঃ গ্রিফিথ। তার স্ত্রী মিসেস্ গ্রিফিথ ও তাদের একমাত্র তরুণী কন্যা—মিস নেলী গ্রিফিথ।

    ওঃ! পাশের দুটো ফ্ল্যাটে?

    ও দুটোতে একটায় আছে শুনেছি একটি ইহুদী পরিবার। অন্যটায় আর একটি ক্রিশ্চান ফ্যামিলি।

    ভাল কথা। আচ্ছা ডক্টর চৌধুরী, রাত্রে আপনার চেম্বারে কেউ থাকে না?

    হ্যাঁ, থাকে বৈকি। চেম্বারের সঙ্গে আমার নিজস্ব একটা চার বেডের নার্সিংহোম আছে যে। রোগী থাকলে তারা থাকে আর থাকে নার্স ও কুক মাযোলাল ও দারোয়ান বা কেয়ারটেকার গুলজার সিং। কিন্তু এত কথা জিজ্ঞাসা করছেন, ব্যাপার কি বলুন তো? আমার চেম্বার ও নার্সিংহোমে কোন রহস্যের গন্ধ পেলেন নাকি? বলে মৃদু হাসলেন আবার ডাক্তার চৌধুরী।

    না না—সে-সব কিছু নয়।

    দেখবেন মিঃ রায়, ডাক্তারের চেম্বারে কোন রহস্য উদঘাটিত হলে চেম্বারটিতে তো আমার তালা পড়বেই—সেই সঙ্গে এত কষ্টে এতদিনের গড়ে তোলা বেচারী আমার প্র্যাকটিসেরও গয়া হবে।

    না না—এমনি একটা ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে একটু সাহায্য নিতে এসেছিলাম। কথায় কথায় আপনার ফ্ল্যাটের কথাটা উঠে পড়ল। আচ্ছা আর আপনাকে বিরক্ত করব না, এবারে তাহলে উঠি। ওঁঠ সুব্রত বলতে বলতে কিরীটী ও সেই সঙ্গে এতক্ষণের নীরব শ্রোতা আমিও উঠে দাঁড়ালাম।

    ডাক্তার চৌধুরী আমাদের তাঁর ঘরের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আচ্ছা নমস্কার। কিরীটী বললে। নমস্কার। দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কিরীটীর গাড়িতে এসে বসলাম।

    হীরা সিং গাড়ি ছেড়ে দিল।

    ছুটির দিনের শহর। তবু লোক-চলাচল ও কর্মব্যস্ততার যেন অন্ত নেই।

    কিরীটী গাড়িতে উঠে ব্যাক-সীটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে ছিল। তাকালাম একবার তার মুখের দিকে। বুঝলাম কোন একটা বিশেষ চিন্তা তার মস্তিষ্কের গ্রে সেলগুলোতে আবর্ত রচনা করে চলেছে।

    গত পরশুদিন দুপুরে হঠাৎ আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল ব্যাপারটা যে, সে ডাঃ চৌধুরীর সঙ্গে রবিবার সকাল সাড়ে আটটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছে দেখা করবার জন্য এবং আমাকেও সঙ্গী হিসাবে চায়।

    জিজ্ঞাসা করেছিলাম, হঠাৎ ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ করতে চাস কেন?

    কিরীটী বলেছিল, দোষ কি! তাছাড়া মানুষ-জনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় থাকাটা তো খারাপ নয়। বিশেষ করে ডাঃ ভুজঙ্গ চৌধুরীর মত একজন বিখ্যাত চিকিৎসকের সঙ্গে।

    বুঝলাম, কিন্তু—

    এর মধ্যে আবার কিন্তু কি?

    অন্য কেউ হলে কি আর কিন্তু উঠত, এ কিরীটী রায় কিনা! হেসে জবাব দিয়েছিলাম। মোটকথা আমি স্পষ্ট বুঝেছিলাম, এই হঠাৎ আলাপের ব্যাপারটা একেবারে এমনই নয়, এর পশ্চাতে একটা বিশেষ কারণ আছেই। কিরীটীর চরিত্র তো আমার অজ্ঞাত নয়। কিন্তু সেদিনও যেমন সে কিছু ভেঙে স্পষ্ট করে জানায়নি, আজও জানাবে না এমন ভেবেই আর কোন প্রশ্ন না করে বসে রইলাম।

    গাড়ি চলেছে মধ্যগতিতে।

    হঠাৎ কিরীটী প্রশ্ন করল, বাড়ি যাবি নাকি?

    তা যেতে হবে বৈকি।

    হীরা সিং, সুব্ৰতর বাড়ি হয়ে চল।

    হীরা সিং নিঃশব্দে ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানাল গাড়ি চালাতে চালাতেই।

    .

    বাড়িতে আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেল বটে কিরীটী কিন্তু মনটা সুস্থির হল না। কেবলই ঘুরেফিরে কিরীটীর ভুজঙ্গ ডাক্তারের সঙ্গে সকালের আলাপের কথাটা মনে পড়তে লাগল। আর সেই সঙ্গে মনের পাতায় ভেসে উঠতে লাগল, ভুজঙ্গ ডাক্তারের সেই চেহারাটা। খাওয়া-দাওয়ার পরই গাড়ি নিয়ে কিরীটীর বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে পড়লাম।

    এসে দেখি কিরীটী একা একা তার বাইরের ঘরে সোফার উপরে বসে এক প্যাকেট তাস নিয়ে তাসের ঘর তৈরির মধ্যে ড়ুবে আছে। পায়ের শব্দে চোখ না তুলেই বলল, আয় সুব্রত, বস্।

    কিরীটীর কথায় হঠাৎ যেন নতুন করে চোখের উপর স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠল ভুজঙ্গ চৌধুরীর সরীসৃপসদৃশ চেহারাটা ও সেই সঙ্গে তার সেই কুৎসিত হাসির কথাটা। ব্যাপারটা স্মরণ হতেই গা-টা যেন কি এক ক্লেদাক্ত অনুভূতিতে ঘিনঘিন করে উঠল।

    বললাম, তোর কেমন লাগল কিরীটী লোকটাকে?

    কিরীটী চোখ বুজে ছিল সোফার গায়ে হেলান দিয়ে। সেই অবস্থাতেই বলল, আমার?

    ছোটবেলায় টুনটুনির গল্পের বইয়ে পড়া সেই সাক্ষী শেয়ালের কথা মনে পড়ছিল লোকটাকে দেখে। মনে আছে তোর গল্পটা?

    সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল গল্পটা, বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু সত্যি ব্যাপারটা কি বল তো?

    কিসের ব্যাপার?

    বলছি হঠাৎ ভুজঙ্গ-ভবনে আজ হানা দিয়েছিলি কেন?

    কেন হানা দিয়েছিলাম?

    হুঁ।

    অবশ্যই একটা উদ্দেশ্য ছিল।

    কথাটা বলে কিরীটী এতক্ষণে মুখ খুলল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.