Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প610 Mins Read0

    ২.০৭ রাণীমা

    রাণীমা

    রাজাবাহাদুর একজন ভৃত্যকে রাণীমাকে ডাকতে পাঠালেন। একটু পরেই রাণীমা মালতী দেবী ধীর মন্থর পদে ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করলেন। কিরীটী চোখ তুলে মালতী দেবীর দিকে তাকাল।

    মালতী দেবী সত্যিই অপরূপ রূপলাবণ্যময়ী, বয়েস এখনও চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে, ছোটখাটো গড়ন, অত্যন্ত শীর্ণ। মুখখানি যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মত নিখুঁত। পরিধানে একটি দুধ-গরদ থান, নিরাভরণা। কিন্তু একটা জিনিস, মুখের দিকে তাকালেই মনে হয়, অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সহিষ্ণু।

    মা, আপনাকে আমার প্রয়োজনের তাগিদে বিরক্ত করতে হল বলে আমি একান্ত দুঃখিত, কিরীটী বলে, বেশীক্ষণ আপনাকে কষ্ট দেব না মা। দু-চারটে প্রশ্ন শুধু আমি করতে চাই, আশা করি ছেলের অপরাধ নেবেন না।

    বলুন। শান্ত অথচ দৃঢ়স্বরে মালতী দেবী বললেন।

    এবারে কিরীটী ঘরের মধ্যে উপস্থিত বিকাশ ও রাজাবাহাদুরের দিকে তাকাল। অনুগ্রহ করে, কিরীটী মৃদুস্বরে বললে, আপনারা যদি দু-চার মিনিটের জন্য একটু বাইরে যান।

    জবাবে বিকাশই রাজাবাহাদুরের দিকে তাকিয়ে বললেন, আসুন রাজাবাহাদুর।

    দুজনে ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন। কিরীটী এগিয়ে গিয়ে দরজাটি ভেজিয়ে দিল। তারপর মালতী দেবীর দিকে এগিয়ে এসে মৃদুকণ্ঠে বললে, মা, আমি আপনার কাছে কয়েকটি কথার জবাব চাই।

    আপনি কথা বলতে পারেন স্বচ্ছন্দে। কেননা এ ঘরটি এমনভাবে তৈরী যে, চিৎকার করে কথা বললেও এ ঘরের বাইরে শব্দ যায় না। এই ঘরের দেওয়ালগুলো সকল শব্দকেই শুষে নেয়। আবার এর পাশের ঘরটি এমনভাবে তৈরী যে, আশেপাশের দুটি ঘর ও ঠিক তার নীচের ঘরের সমস্ত শব্দ যত আস্তেই হোক না কেন অনায়াসেই শোনা যাবে। ঘর দুটি এভাবে আমার স্বামীই তাঁর জীবিত অবস্থায় জার্মান ইঞ্জিনীয়ার দিয়ে প্ল্যান করে তৈরী করেছিলেন।

    আশ্চর্য তো! কিন্তু এইভাবে ঘর দুটি তৈরী করার কারণ?

    কারণ এই ঘরটিতে বসে তিনি স্টেট সংক্রান্ত সকল শলাপরামর্শ গোপনে করতেন, আর পাশের ঘরটিতে তিনি শয়ন করতেন বলে যাতে করে সামান্যতম শব্দও শুনতে পান, তাই ঐ ব্যবস্থা করেছিলেন।

    আপনার স্বামী অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সে কথা থাক। নিশানাথবাবুর চিৎকার শুনেই আপনি তাঁর ঘরে ছুটে যান, কেমন তাই না?

    একটু ইতস্তত করে মালতী দেবী মৃদুকণ্ঠে বললেন, হ্যাঁ।

    আপনি কোন ঘরে তখন ছিলেন?

    রন্ধনশালার দিকে। আমি ওঁর খাবার সাজাচ্ছিলাম, আমার হাতে ছাড়া ঠাকুরপো কারও হাতে খেতে চাইতেন না ইদানীং।

    কেন?

    তাঁর কেমন একটা ধারণা হয়তো ছিল, তাঁকে এরা বিষ খাইয়ে মারতে চায়।

    কেন, এ রকম ধারণার কোনো কারণ ঘটেছিল কি?

    এবার যেন বেশ একটু ইতস্তত করেই মালতী দেবী জবাব দিলেন, না, আমার মনে হয়, ইদানীং তাঁর মাথার একটু দোষ হয়েছিল, তাই হয়ত ঐসব আবোলতাবোল ভাবতেন। কে এমন এ বাড়িতে আছে বলুন যে তাঁকে বিষ খাইয়ে মারতে চাইবে! ঐসব তাঁর বিকৃত মস্তিষ্কের কল্পনা।

    সত্যিই আপনার তাই বলেই মনে হয় রাণীমা?

    হ্যাঁ।

    শুনেছি রাজাবাহাদুর সুবিনয় মল্লিকই তাঁকে মাথা খারাপ হওয়ার পর আগ্রহ করে রায়পুরে নিয়ে আসেন।

    হ্যাঁ, বিনয় ওকে অত্যন্ত ভক্তিশ্রদ্ধা করত ও ভালবাসত, আমার দুই দেবরের মধ্যে একমাত্র উনিই এদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ওদের আর এক কাকা যিনি এখানেই আছেন, তিনি এদের সঙ্গে কখনও কথা পর্যন্ত বলেন না। শুনেছি পথেঘাটে দেখা হলেও চোখ ফিরিয়ে নেন।

    কিন্তু আমি তো শুনেছি হারাধন মল্লিক লোকটি ভাল।

    তা হতে পারে।

    আচ্ছা মা, চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে নিশানাথবাবুকে জীবিত দেখেছিলেন, না মৃত দেখেছিলেন?

    মালতী দেবী চুপ করে রইলেন। কোনো জবাব দিলেন না।

    বলুন—

    আমি…না, তাঁকে আমি জীবিত দেখিনি, আমি যখন ঘরে গেছি, তাঁর দেহে তখন আর প্রাণ ছিল না। প্রথম দিকে একটু ইতস্তত করে শেষের দিকে কতকটা যেন অস্বাভাবিক জোর দিয়েই মালতী দেবী কথাগুলো বলে গেলেন।

    কিরীটী অল্পক্ষণ কি যেন একটু চিন্তা করলে, তারপর সমস্ত সংকোচকে একপাশে ঠেলে ফেলে হঠাৎ প্রশ্ন করলে, মা, আমার মুখের দিকে তাকান তো। আমি আপনার সন্তানের মত। কোনো লজ্জা বা সংকোচ করবেন না। কয়েকটা পুরানো কথা আপনাকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই। জানি কথাগুলো আপনার ভাল লাগবে না। শুনলে হয়তো বা ব্যথা পাবেন, কিন্তু আমারও না জিজ্ঞাসা করলে চলবে না। একান্ত নিরুপায় আমি।

    মালতী দেবী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন। যে চোখের দৃষ্টিতে কিরীটীর মুখের দিকে তাকালেন, সে চোখের দৃষ্টিতে কোনো সংকোচের বালাই ছিল না।

    কিরীটী দৃঢ়স্বরে বলতে লাগল, শুনুন মা, এ রাজবাড়িতে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব একসূত্রে বাঁধা এবং তার কিনারা না করতে পারলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে, তাই গোড়া থেকেই আমি শুরু করতে চাই।

    মনে পড়ে আপনার মা, আপনার ছেলে সুহাসের মৃত্যুর আগে যেদিন তাকে নিয়ে আপনারা কলকাতা থেকে রায়পুরে আসছেন, সেদিন সকালের দিকে হঠাৎ এক সময় আপনি ও সুবিনয়বাবু সুহাসের ঘরে ঢুকে দেখতে পান, ডাঃ সুধীন চৌধুরী সুহাসকে একটা ইনজেকশন দিচ্ছেন। কোর্টেআপনিমামলার সময় ঐকথাই বলেছিলেন মনে পড়ে কিমা, আপনি নিশ্চয়ইভোলেননি! মামলার সময় জেরার মুখে বলেছিলেন, আপনি সুহাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, কিসের আবার ইনজেকশন সে দিচ্ছে, তার জবাবে নাকি সুহাস কিছু বলেন নি!

    হ্যাঁ, মৃদু ক্ষীণ ক্ষীণ স্বরে মালতী দেবী জবাব দেন।

    আপনার ছেলের ঐ জবাবেই আপনি সেদিন সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কি?

    মালতী দেবী কিরীটীর প্রশ্নের কোনো জবাব দিলেন না, খোলা জানালাপথে অন্ধকারে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অনেক কথাই রাণীমার বুকের মধ্যে যেন বরফের মত জমাট বেঁধে আছে। তাঁর একমাত্র পুত্র সুহাস! তাঁর জীবনের একটি মাত্র স্বপ্ন! তাও আজ বিফল হয়ে গেছে, শুধু স্মৃতিভারে আজও তিনি এইখানে পড়ে আছেন। কবে তিনি স্মৃতিমুক্ত হবেন!

    মা! কিরীটী মৃদু স্নেহসিক্ত অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলতে লাগল, যে গেছে সে আর ফিরবে না। কিন্তু সন্তান, বিশেষ করে একটিমাত্র সন্তানকে হারানোর যে কী দুঃসহ ব্যথা তা আপনি মর্মে-মর্মেই জেনেছেন। অগাধ ঐশ্বর্যের অধীশ্বরী হয়েও আপনি আজ কাঙালিনী। মা হয়ে মায়ের ব্যথা আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। আপনি জানেন নিশ্চয়ই এ কথা যে, আর যারই পক্ষে সম্ভব হোক, সুধীনের পক্ষে সুহাসকে খুন করা একেবারেই অসম্ভব!

    অতীতকে আর টেনে আনবেন না। মালতী দেবী বললেন।

    আমার নাম অর্জুন। আমি আপনার সন্তানের মত, অৰ্জুন বলেই আমাকে ডাকবেন। এবং তুমি বলেই সম্বোধন করবেন মা।

    যা চুকেবুকে গেছে, তা আর কেন?

    আমাদের সকলের উপরে এমন একজন আছেন জানবেন তাঁর সদা জাগ্রত দৃষ্টি থেকে টী তাঁর বিচার এখনও বাকি আছে। সত্যিকারের দোষী যে, একদিন তাকে মাথা পেতে দণ্ড নিতেই হবে।

    কিন্তু—

    একবার ভেবে দেখুন মা, সুধীনের মার কথা, তাঁরও তো ঐ একটি মাত্রই সন্তান!

    না, আমি কিছু জানি না। আমি কিছু জানি না! সহসা মালতী দেবী দু হাতের পাতা চোখে ঢেকে রুদ্ধ আবেগে কেঁদে ফেললেন।

    মা, আমার সত্যিকারের পরিচয় আপনি জানেন না, জানলে বুঝতেন মিথ্যা আশা এ জীবনে আমি কাউকে দিইনি। বলেছি সুধীনের মাকে, সুধীন আবার তাঁর মার বুকে ফিরে যাবেই। আপনি জানেন না, কিন্তু আমি জানি, সুধীন আদালতে বিচারের সময় অনেক কথার যে জবাব দিতে অস্বীকার জানিয়েছিল, সে কেবল আপনাকেই বাঁচাতে। পাছে আপনাকে গিয়ে প্রত্যহ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় এবং আপনার মাথা নীচু হয়, সেই ভয়ে এবং আপনার ছেলে মৃত সুহাসের প্রতি অসীম স্নেহের বশেই সে সব কিছুই প্রায় অস্বীকার করে বা না-জানার ভান করে নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছিল। একবার ভেবে দেখুন তো, এ কত বড় ত্যাগ-স্বীকার! আর আপনি? তার এত বড় ত্যাগের কি প্রতিদান দিয়েছেন!

    কে? কে তুমি?… কি চাও? ভীতচকিত কণ্ঠে মালতী দেবী প্রশ্ন করেন হঠাৎ।

    আমি? কিরীটী মৃদু হাসলে, পরিচয়টা আজ আমার ভোলাই থাক মা। সময় হলেই সব জানতে পারবেন। হ্যাঁ, আপনি যেতে পারেন মা, আপনি অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হয়েছেন।

    কিন্তু–, মালতী দেবী ইতস্তত করতে থাকেন।

    আমার যতটুকু আপনার কাছে জানবার ছিল জেনেছি, আপনি এবারে যেতে পারেন মা।

    কতকটা যেন একপ্রকার টলতে টলতেই মালতী দেবী দরজার দিকে অগ্রসর হলেন। কিরীটী তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে নিজ হাতে দরজা খুলে রাস্তা করে দিল। মালতী দেবী ঘর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।

    পাশের ঘরে একটা সোফার উপরে বিকাশ বসে বসে ঝিমাচ্ছিল, আর সুবিনয় অস্থির পদে ঘরময় পায়চারি করছিলেন।

    বিকাশবাবু!

    কিরীটীর ডাকে বিকাশ ধড়ফড় করে উঠে বসে, অ্যাঁ!

    চলুন রাজাবাহাদুর, এবারে মৃতদেহটা দেখে আসা যাক।

    আগে আগে রাজাবাহাদুর, পিছনে কিরীটী ও বিকাশ অগ্রসর হল।

    সিঁড়ি দিয়ে নেমে একতলায় এসে অন্য একটা ঘোরানো সিঁড়িপথে, দোতলা ও একতলার মাঝামাঝি একটি বদ্ধ ঘরের দরজার সামনে এসে সকলে দাঁড়াল। ঘরের দরজার শিকল ভোলা ছিল, রাজাবাহাদুরই শিকল খুলে দরজা ঠেলে আহ্বান জানালেন, আসুন—এই ঘর।

    সকলে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল, ঘরের মধ্যে উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। মাঝারি গোছের ঘরখানি।

    আসবাবপত্র তেমন বিশেষ কিছুই নেই, একটি পালঙ্ক, তার উপরে শয্যা বিছানো। একটি শ্বেতপাথরের টীপয়। ঘরের কোণে একটি মাঝারি সাইজের কাঁচের আয়না বসানো আলমারি, একটি বুক-সেলফ ও একটি মাত্র ক্যাম্বিসের আরাম-কেদারা।

    ঘরের মধ্যে একটি দরজা ও দুটি জানালা। দুটি জানালাই ভোলা। একটি খোলা জানালার সামনে উপুড় হয়ে একপাশে কাত হয়ে ধনুকের মত বেঁকে নিশানাথের মৃতদেহটা পড়ে আছে, হাতের ও পায়ের আঙুলগুলো দুমড়ে বেঁকে গেছে। মুখে একটা অস্বাভাবিক যন্ত্রণার চিহ্ন তখনও সুস্পষ্ট।

    কিরীটী সোজা সেই খোলা জানলাটার সামনে এসে দাঁড়াল; সামনেই অন্দর ও সদরের সংযোগস্থলে সেই আঙিনা চোখে পড়ে। কিরীটী আশেপাশে বাইরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে সহসা তার দুটো যেন ঈষৎ কুঞ্চিত হয়ে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গেই সরল হয়ে আসে চোখের দৃষ্টিটা, যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মৃত্যুর সমস্ত সমাধানই যেন মুহূর্তে তার চোখের সামনে অন্ধকারে বিদ্যুৎ-ঝলকের মত প্রকটিত হয়ে ওঠে। চোখ ফিরিয়ে সে আবার মৃতদেহের উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। লাহিড়ীর মৃত্যু-ব্যাপার ঠিক সুব্রতর চিঠিতে যেমনটি সে লিখেছিল এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই একটি তীর নিশানাথের বুকে বিদ্ধ হয়ে আছে। হত্যাপদ্ধতি যখন দুক্ষেত্রে অবিকল এক—একই গৃহে এবং রাত্রের অন্ধকারে, তখন কিরীটীর বুঝতে বাকি থাকেনা, লাহিড়ীও নিশানাথের হত্যাকারী একইলোক। নিশানাথ সম্পর্কে সুব্রতর অনেকগুলো কথা চিঠির অক্ষরে ওর মনের পাতায় যেন ছায়াছবির মত একটার পর একটা ভেসে যায়।

    মৃতদেহ দেখা হয়ে গেছে বিকাশবাবু। ওপরে রাজাবাহাদুরের বসবার ঘরে চেয়ারের ওপরে আমার সিগার কেসটা ভুলে ফেলে এসেছি, যদি অনুগ্রহ করে নিয়ে আসেন। হঠাৎ কিরীটী বলল।

    বিকাশ কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যেতেই বেশ অনুচ্চ কণ্ঠে কিরীটী বললে, রাজাবাহাদুর, একটা কথা, আপনার কাকা নিশানাথ মল্লিক ও আপনার ম্যানেজার সতীনাথের হত্যাকারী কে সত্যিই কি জানবার জন্য আগ্রহী?

    সুবিনয় যেন কিরীটীর কথায় প্রথমটা হঠাৎ চমকে ওঠেন, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, এ-কথার মানে কি অর্জুনবাবু? আপনি কি বলতে চান?

    আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এমনও তো হতে পারে ঐ দুটি হত্যারহস্যের মূল খুঁজে বের করতে গেলে হয়ত যাকে বলে আমাদের কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে গোখরো সাপ গর্ত থেকে বের হয়ে আসা—ভাবছি, সত্যিই যদি তেমন কিছু ঘটে, তাহলে সাপের সে ছোবল সামলাবার মত সকলেই নীলকণ্ঠ কিনা।

    ইন্সপেক্টার, আপনি ভুলে যাবেন না কার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি কথা বলছেন। তাছাড়া আমি আপনার পরিহাসের পাত্র নই। খুনের তদন্ত করতে এসেছেন তাই করুন এবং যদি তদন্ত শেষ হয়ে গিয়ে থাকে, আমি এবারে আপনাদের যেতে বলব, কারণ রাত্রি অনেক হয়েছে। আমি অত্যন্ত পরিশ্রান্ত। রাজাবাহাদুর যেন একটু রুক্ষ গলায় ঐ কথাগুলো বললেন।

    বিকাশ এসে কক্ষে প্রবেশ করল, হাতে তার কিরীটীর সুবর্ণনির্মিত সিগারকেসটি।

    বিকাশের হাত হতে সিগার-কেসটি নিয়ে কিরীটী একটি সিগারে অগ্নিসংযোগ করে খানিকটা ধোঁয়া উদগীরণ করে বললে,চলুন বিকাশবাবু, রাত্রি অনেক হল। এই ঘরে একটা তালা দিয়ে চাবিটা নিয়ে চলুন, সকালে মৃতদেহটা ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। আচ্ছা আসি তাহলে, নমস্কার রাজাবাহাদুর।

    দুজনে উঠে দাঁড়াল

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.