Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প610 Mins Read0

    ২.১৭ মীমাংসা

    মীমাংসা

    কিরীটীর চিঠি,–

    রসময়ের মৃত্যুর পর সুবিনয় অল্পদিনের মধ্যেই জমিদারী সেরেস্তায় আমূল পরিবর্তন ঘটান।

    প্রথমেই আনলেন তিনি সতীনাথ লাহিড়ীকে। তারপর হাত করলেন তারিণী চক্রবর্তীকে। এবং সর্বশেষে আমাদের ডাঃ কালীপদ মুখার্জীকে।

    কালীপদ মুখার্জী একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক। চিকিৎসক হিসাবে বহু অর্থও তিনি জমিয়েছেন। তথাপি কেন যে তিনি অর্থের লোভে নৃশংস-হত্যার মধ্যে তাঁর চিকিৎসাবিদ্যাকে জড়িয়ে নিজেকে এবং এত বড় সম্মান ও গৌরবের বস্তু চিকিৎসাশাস্ত্রকে কলঙ্কিত করলেন, তার সদুত্তর একমাত্র হয়ত তিনিই দিতে পারেন। বিচারের চোখে আজ তিনি কলঙ্কমুক্ত হলেও, মানুষ হিসাবে আমরা কেউ তাঁকে ক্ষমা করতে পারি না। সুহাসের হত্যাপরাধে যদি কারও মৃত্যুদণ্ড হয়, তবে সর্বাগ্রে তাঁরই হওয়া উচিত। কিন্তু যা সে কথা, যা বলছিলাম, টাকার লোভে ডাঃ কালীপদ মুখার্জী এসে সুবিনয়ের সঙ্গে হাত মেলালেন। প্রথমে টিটেনাস রোগের বীজাণু প্রয়োগে হত্যা করবার চেষ্টা যখন ঘটনাচক্রে ব্যর্থ হল, শয়তান ডাক্তার তখন সুহাসের শরীরে প্লেগের জীবাণু ইনজেক্ট করে হত্যা করবার মনস্থ করলেন। মুখার্জী তাঁর সহকারীও রিসার্চ-স্টুডেন্ট ডাঃ অমর ঘোষকে বম্বেতে পাঠালেন প্লেগ কালচার নিয়ে আসতে।

    ডাঃ অমর ঘোষ তাঁর যে জবানবন্দি আমার কাছে দিয়েছেন তা পাঠিয়ে দিলাম।

    আমি ডাঃ অমর ঘোষ স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিচ্ছি: ডাঃ মুখার্জীর অনুরোধে আমি বম্বে প্লেগ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি নাকি প্লেগ ব্যাসিলি সম্পর্কে কি একটা জটিল রিসার্চ করছেন এবং তার এক টিউব প্লেগ কালচার চাই। তিনি এও আমাকে বলেন, প্লেগ কালচার নিয়ে যে তিনি কোনো রিসার্চ করছেন একথা একান্তভাবে গোপন রাখতে চান। কারণ তাঁর এক্সপেরিমেন্ট সম্পূর্ণ হওয়ার আগে এ কথা কেউ জানুক এ তাঁর মোটেই অভিপ্রেত নয়।

    রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কর্নেল মেনন তাঁর বিশেষ পরিচিত এবং তাঁকে বললে সুবিধা হতে পারে, তথাপি তিনি তাঁকেও সে কথা বলতে চান না। আমি যদি কোন উপায়ে গোপনে একটি প্লেগ কালচার টিউব বম্বে থেকে নিয়ে আসতে পারি সকলের অজ্ঞাতে তাহলে তিনি বিশেষ বাধিত হন। শুধু যে তাঁর কথাতেই আমি রাজী হয়েছিলাম তা নয়, ঐ সময় আমার অর্থেরও বিশেষ প্রয়োজন হয়। অর্থের কোন সুরাহাই যখন করে উঠতে পারছি না, তখন একদিন হঠাৎ ডাঃ মুখার্জী আমাকে ডেকে বলেন, যদি কোন উপায়ে বম্বে থেকে একটি প্লেগ কালচার টিউব আমি এনে দিতে পারি, তিনি আমাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দেবেন এবং ব্যবস্থা সব তিনিই করে দেবেন। অর্থপ্রাপ্তির আশু কোন উপায় আর না দেখে, শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রস্তাবেই আমি সম্মত হই এবং কর্নেল মেননএর কাছে তাঁর পরিচিতিপত্র নিয়ে আমি বম্বেতে রওনা হই।

    সেখানে গিয়ে দিন-দশেকের মধ্যেই যে কি উপায়ে আমি একটি প্লেগ কালচার টিউব হস্তগত করি সে-কথা আর বলব না, তবে এইটুকু বলছি, একটি টিউব সংগ্রহ করে সেই রাত্রেই বম্বে মেলে আমি রওনা হই। কলকাতায় পৌঁছেই টিউবটা আমি ডাঃ মুখার্জীকে দিই, তিনিও আমায় পাঁচহাজার টাকা নগদ হাতে হাতে তখুনি দিয়ে দেন। তবে এ-কথা আমি অকপটে স্বীকার করছি, যদি আগে ঘুণাক্ষরেও আমি জানতে পারতাম কিসের জন্য ডাঃ মুখার্জী আমাকে দিয়ে প্লেগ কালচার টিউব সংগ্রহ করেছিলেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমি এই হীন কাজে হাত দিতাম না। পরে যখন আসল ব্যাপার জানতে পারলাম, তখন আমার অনুশোচনার আর অবধি পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু তখন নিজের মাথা বাঁচাতে সবই গোপন করে যেতে হল। পরে নিরন্তর সেই কথাটাই আমার মনে হয়েছে, ডা সুধীন চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের জন্য সর্বাংশে না হলেও অনেকাংশেই দায়ী আমি হয়ত। আজ তাই কিরীটীবাবুর অনুরোধে সব কথা লিখেই দিলাম। এর জন্য যে কোন শাস্তিই আমি মাথা পেতে নিতে রাজী আছি, তবু নিদোষ ডাঃ সুধীন চৌধুরী কলঙ্কমুক্ত হোন এই চাই। আজ যদি তিনি মুক্তি পান, তবে হয়ত এই মহাপাপের যার সঙ্গে পরোক্ষে আমি ভাগ্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছি তার কিছুটা প্রায়শ্চিত্তও আমার করা হবে। ইতিডাঃ অমর ঘোষ।

    ডাঃ অমর ঘোষের স্বীকৃতি পড়লেন তো! নিশ্চয়ই কাগজে দেখে থাকবেন, গত পরশু অর্থাৎ ঐ বিবৃতি দেবার দুদিন পরেই তিনি সুইসাইড করেছেন হাই ডোজে মরফিন নিয়ে। যা এখন বোধ হয় বুঝতে পারছেন, কেমন করে কি উপায়ে প্লেগ-ব্যাসিলি সংগৃহীত হয়েছিল। ডাঃ অমর ঘোষের সাহায্যে প্লেগ কালচার সংগ্রহ করে ডাঃ মুখার্জী সেই বিষ সুহাসের শরীরে প্রবেশ করালেন। কিন্তু দুঃখ এই, ডাঃ ঘোষের স্বীকৃতির পরও ডাঃ মুখার্জীকে আমরা ধরতে পারব না, কারণ যে যে পরিচিতিপত্র তিনি কর্নেল মেননকে দিয়েছিলেন সেটার অস্তিত্ত্ব আজ ইহজগতে আর নেই। সম্ভবত বহু অর্থের বিনিময়ে কর্নেল মেনন সেটাকে ভস্মীভূত করেছেন এবং আমার যথাসাধ্য চেষ্টাসত্ত্বেও সেই পরিচিতিপত্র সম্পর্কে কর্নেল মেনন তাঁর সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, কোন পত্রই তিনি নাকি ডাঃ মুখার্জীর কাছ হতে পাননি, কেবলমাত্র ডাঃ ঘোষের মৌখিক অনুরোধেই তিনি ডাঃ ঘোষকে ইনস্টিটিউটে কাজ করতে সম্মতি দিয়েছিলেন। ডাঃ ঘোষ কর্নেল মেননের কাছে এসে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, ডাঃ মুখার্জী তাঁকে প্লেগ ইনস্টিটিউটে কয়েকদিন কাজ করবার জন্য পাঠিয়েছেন। এবং কর্ণেল মেনন নাকি তাঁর বন্ধু। ডাঃ মুখার্জীর মৌখিক অনুরোধ রক্ষা করেই ডাঃ অমর ঘোষকে ইনস্টিটিউটে প্রবেশাধিকার দেন এবং রায়পুর হত্যা-মামলার জবানবন্দি দিতে গিয়ে বিচারালয়ে কর্নেল মেনন সেই কথাই বলে এসেছেন। তিনি সেদিনও যে কথা বলেছিলেন, আজও তাই বলছেন, এর বেশী তাঁর বলবার মত কিছুই নেই। এরপর আর কর্নেল মনেনকে আমি দ্বিতীয় প্রশ্ন করি নি। কারণ জানতাম, কর্নেল মেননের মত একজন সম্মানী সরকারী উচ্চপদস্থ ব্যক্তি আর যাই করুন না কেন, যে ভুল একবার করে ফেলেছেন এবং যে ভুলের আজ সংশোধন করতে গেলে তাঁর এতদিনকার সম্মান প্রতিপত্তি সব ধূলায় লুষ্ঠিত হবে সেই ভয়েই আজ তাঁকে এমনি করে সর্ব ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানাতেই হবে। তাছাড়া অর্থের লোভকে কাটিয়ে ওঠবার মত মানসিক বলও তাঁর নেই। বিদ্যা তাঁকে ডিগ্রী দিলেও বিদ্যার গৌরব দেয়নি। কর্নেল মেননের কথা এখানেই থাক।

    যাহোক তাহলে এখন আমরা ধরে নিতে পারি অনায়াসেই যে, নির্বিবাদে ডাঃ ঘোষের মারফতই বম্বে থেকে এক টিউব প্লেগ কালচার ডাঃ মুখার্জীর হাতে পৌঁছেছিল।

    এবারে আসা যাক—the blackman with the black umbrella-র রহস্যে। আমার মনে হয় আদালতে বিচারের সময় এই point-টাতে আপনারা তেমন গুরুত্ব দেননি। সুহাস মল্লিক যেদিন শিয়ালদহ স্টেশনে অসুস্থ হয়ে কালোলোকটির ছাতার খোঁচা (?) খেয়ে এবং আমার মতে যে সময় হতভাগ্য সুহাসের দেহে প্লেগ-বীজাণু inject করা হয়, সেদিনকার সেই ঘটনাটা যেন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করা হয়নি, অর্থাৎ সেই অচেনা কালো ছত্রধারীলোকটির movement-টাযেভাবে ঠিক অনুসন্ধান করা উচিত ছিল, আদালতে সেভাবে করা হয়নি। যদিও ঐ ছত্রধারী লোকটিকে কেবলমাত্র সুহাসের হত্যা-ব্যাপারে একটা যন্ত্র হিসাবেই কাজে লাগানো হয়েছিল। এবং যদিও আসলে উক্ত লোকটি এই দুর্ঘটনায় সামান্য একটি পার্শ্বচরিত্র মাত্র, তথাপি লোকটিকে অন্তত খুঁজে বার করবার চেষ্টা করাও। আপনাদের খুবই উচিত ছিল না কি? তর্কের খাতিরেও নিশ্চয়ই এখন সেকথা অস্বীকার করতে পারবেন না, কি বলেন? কিন্তু যাক সেকথা, যা ঘটনাচক্রে হয়ে ওঠেনি, এখন আর সেটার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের হত্যা-মামলার সেই রহস্যময় কালো লোকটিকে আর ইহজগতে জীবিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।

    তবে সেই লোকটি, যে কালো ছাতাটি ব্যবহার করেছিল, সেটা আমি উদ্ধার করেছি। সেটা আপনাকে পাঠানো হল, পরীক্ষা করে দেখবেন।

    এই ছাতার ব্যাপারেও হত্যাকারী তার অসাধারণ বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিরই পরিচয় দিয়েছে। ছাতার একটি শিকের সঙ্গে দেখবেন চমৎকারভাবে দেখতে অবিকল প্রায় একটি ছোট হাইপোডারমিক সিরিঞ্জের মত একটা যন্ত্র লাগানো আছে। ঐ সিরিঞ্জের মত যন্ত্রের ভিতরেই ছিল সংগুপ্ত প্লেগের জীবাণু।

    ওর মেকানিজম এত সূক্ষ্ম ও চমৎকার যে যন্ত্রটির শেষে ছোট যে রবারের ক্যাপটি আছে, ওতে চাপ পড়লেই যন্ত্রটি থেকে ভিতরকার তরল পদার্থ প্রেসারে বের হয়ে সিরিঞ্জের মত যন্ত্রের অগ্রভাগের সঙ্গে যুক্ত নিড-পথে বের হয়ে আসবে। ছাতাটি খুলে ভাল করে পরীক্ষা না করে দেখা পর্যন্ত এসব কিছুই কারও নজরে পড়তে পারে না।

    সত্যি ঐ অত্যাশ্চর্য যন্ত্রের পরিকল্পনাকারী, আমাদের চোখে যেই হোক না কেন, I take my hats off! সংবাদপত্রে রায়পুরের হত্যা-সংক্রান্ত ঘটনাবলী পড়তে পড়তে ঐ ছাতার কথা শোনা অবধি আমার মনে একটা খটকা লেগেছিল। কেন যেন আমার মনে হয়েছিল, নিশ্চয়ই ঐ ছাতার মধ্যে কোন একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। আসলে সুহাসের হত্যার ব্যাপারে ছাতাটি প্রাইমারি, সেকেণ্ডারি ঐকালোলোকটি। রায়পুরের প্রাসাদে যে রাত্রে সুবিনয়ের কাকা শ্রীযুক্ত নিশানাথ নিহত হন সেই রাত্রে তদন্তে গিয়ে সুবিনয়ের কক্ষে প্রবেশ করে, প্রথমেই যে দুটি অন্যের দৃষ্টিতে ও বিচারে অতি সাধারণ (?) বস্তু, আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সে হচ্ছে ১নং ছাতাটি এবং ২নং দেওয়ালে ঝোলানো একটি পাঁচ-সেলের হান্টিং টর্চ।

    আপনি হয়ত এখনই প্রশ্ন করবেন, সর্বাগ্রে কেন ঐ বস্তু দুটিই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল?

    তার জবাবে বলব, রায়পুরের ধনশালী ও শৌখীন রাজাবাহাদুরের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে আর যাই লোকে আশা করুক না কেন, আলমারির মাথায় তুলে রাখা সামান্য পুরাতন একটি ছাতা দেখবার আশা নিশ্চয়ই কেউ করে না বা করতে পারে না। তাই আলমারির মাথায় রাখা ঐছাতাটি আমার দৃষ্টিকে আকর্ষণ করেছিল এবং যে বাড়ির ঘরে ঘরে ডায়নামোর সাহায্যে সারারাত্রি আলো জ্বালাবার সুব্যবস্থা আছে এবং যার কোনদিনই শিকারের কোন বাতিক বা হবি নেই, তার ঘরে হঠাৎ পাঁচ-সেলের হান্টিং টর্চের বা কি এমন প্রয়োজন থাকতে পারেতাই দেওয়ালে ঝোলানো পাঁচ-সেলের হাষ্টিং টচটাও আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। চিরদিনই কোন ব্যাপারে মনে যখন আমার বিন্দুমাত্রও সন্দেহের ছায়াপাত হয়, সে ব্যাপারের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে নিজের মনকে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সন্তুষ্ট করতে পারি, আমি স্থির থাকতে পারি না। সে যাই হোক, মনের সন্দেহের নিরবসানের জন্যই পরের দিন সর্বপ্রথম বিকাশের সাহায্যে উক্ত বস্তু দুটি আমি রায়পুরের রাজবাটি থেকে সবার অলক্ষ্যে সংগ্রহ করে আনি। এবং আমার সন্দেহ যে অমূলক নয়, সেটাও সহজে প্রমাণিত হয়ে যায়। কি করে ছাতা আর টচটা সংগ্রহ করেছি, সে-কথা আর নাই বা বললাম। সাদা কথায় শুনিয়ে রাখি, জিনিস দুটি চুরি করিয়ে এনেছি এবং ঐ ছাতা ও টর্চের রহস্যের উদঘাটিত হবার পরই আর কালো লোকটির সন্ধানের প্রচেষ্টা ত্যাগ করি। ছাতাটি পরীক্ষা করলেই বুঝতে পারবেন, কি উপায়ে হতভাগ্য সুহাসের দেহে প্লেগ-বীজাণু প্রবেশ করানো হয়েছিল।

    এবারে আসা যাক পাঁচ-সেলের হাষ্টিং টচটির কথায়। টচটি পরীক্ষা করলেই দেখতে পাবেন, টর্চের আকার হলেও আসলে ওটি টর্চ নয়। টর্চের যেখানে আলোর বা লাগোনো থাকে, সেখানে দেখুন একটি গোলাকার ছিদ্রপথ আছে। এবং বাতির পিছনকার ক্যাপটি খুলুন, দেখবেন ভেতরে একটি এক-বিঘত পরিমাণ সরু পেনসিলের মত ইস্পাতের নল বসানো আছে। ঐ জিনিসটির খোলর মধ্যে তিনটি ড্রাই সেল ভরা যায়। এবং টর্চের বোতাম টিপলেই, সেলের কারেন্টে আলো জ্বালার পরিবর্তে ঐ সরু নলের ভিতর থেকে প্রচণ্ড গতিতে একটি সরু ইস্পাতের তৈরী তীর বের হয়ে মুখের ছিদ্রপথ দিয়ে ছুটে সামনের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়। তাই বলছিলাম, আসলে দেখতে বস্তুটি পাঁচ-সেলের একটি হান্টিং টর্চের মত হলেও, তীর নিক্ষেপের ওটি একটি চমৎকার যন্ত্রবিশেষ। এবং ঐ যন্ত্রের সাহায্যেই সতীনাথ লাহিড়ী ও নিশানাথ মল্লিককে হত্যা করা হয়েছে। ঐ ছাতা ও টর্চের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী হচ্ছে স্বয়ং সতীনাথ লাহিড়ী। হতভাগ্য তার নিজের মৃত্যুবাণ নিজ হাতেই তৈরী করে দিয়েছিল। সতীনাথের সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পেরেছি, সতীনাথ ছিল একজন মেধাবী বিজ্ঞানের ছাত্র। সৎকাজে তার বুদ্ধিকে পরিচালিত করতে পারলে আজ দেশের অনেক উপকারই তার দ্বারা হত। কিন্তু যে বুদ্ধি ভগবান তার মস্তিষ্কে দিয়েছিলেন, তার অপব্যবহারেই তার অকাল মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তার প্রতিভার শোচনীয় পরিসমাপ্তি ঘটালো।

    সতীনাথের জীবনকথা সংগ্রহ করে আমি যতটুকু জেনেছি তা এই ছোটবেলা হতেই নাকি সতীনাথের সায়েন্সের দিকে প্রবল একটা ঝোঁক ছিল। নানাপ্রকারের যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রায় সময়ই সে নাড়াচাড়া করত। লাহিড়ী একটা ছোটখাটো ইলেকট্রিক কারখানা করে চেতলা অঞ্চলে কাজ করত। একবার মধ্যরাত্রে ঐ কারখানার সামনে হঠাৎ সুবিনয়ের গাড়ি ইলেকট্রিক সংক্রান্ত ব্যাপারে বিগড়ে যায়। সতীনাথ গাড়ি মেরামত করে দেয়। এই সূত্রেই সুবিনয়ের সঙ্গে আলাপ সতীনাথের। বলাই বাহুল্য, সতীনাথ ঐ সামান্য ঘটনার মধ্য দিয়েই সুবিনয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ক্রমে দুজনের মধ্যে গভীর আলাপ জমে ওঠে। সতীনাথ কারখানায় তালা লাগিয়ে দিয়ে একেবারে সুবিনয়ের সেক্রেটারী পদে নিযুক্ত হয়। সুহাসকে হত্যা করার ফন্দি আঁটছিলেন সুবিনয় অনেকদিন ধরে। সতীনাথকে পেয়ে ভেবেছিলেন সতীনাথের সাহায্যে কাজ হাসিল করে নেবেন; অর্থাৎ তার মাথায় সাদা কথায় কাঁঠাল ভাঙবেন। কিন্তু সতীনাথ যে অত নিরীহ বোকা নয়, সে-কথা বুঝতে হয়ত সুবিনয়ের খুবি বেশী দেরি হয়নি। তাই সতীনাথের ব্যাঙ্ক-ব্যালান্সটা ক্রমে স্ফীত হয়ে উঠতে থাকে। সতীনাথের ঘর থেকে সুব্রত যেসব কাগজপত্র উদ্ধার করেছিল সেগুলিই তার প্রমাণ দেবে নিঃসংশয়ে। সতীনাথ কিন্তু ওর আসল নাম নয়-ছদ্মনাম। আসল নাম শ্রীপতি লাহিড়ী। যা হোক, সুহাসের হত্যার ব্যাপারে সতীনাথের তৈরী অস্ত্র ও ডাঃ মুখার্জীর সংগৃহীত প্লেগ বীজাণু কাজে লাগানো হয়।

    সতীনাথই যে ছাতা ও টর্চের পরিকল্পনাকারী সেটা তার ঘরের ভিতরকার জিনিসপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ফ্ল্যাট ফাইলের ভিতরকার কয়েকটি ডকুমেন্ট ও প্ল্যান থেকে আমি পরে জানতে পারি।

    শেষটায় অর্থের নেশায় সতীনাথ নিশ্চয় মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। এবং তাই হয়ত এত তাড়াতাড়ি তার মৃত্যুর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল সুবিনয়ের কাছে।

    তাছাড়া সুহাসের হত্যার ব্যাপারে সতীনাথ মস্ত বড় প্রমাণ, তার বেঁচে থাকাটাও সেদিক থেকে সুহাসের হত্যাকারীর পক্ষে নিরাপদ নয় এতটুকু। কাজেই তাকে সরতে হল।

    এবং বেচারী নিজের হাতের মৃত্যুবাণ নিজের বুক পেতে নিয়ে কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করে গেল।

    সতীনাথেকে যখন হত্যা করা হয়, দুভাগ্যক্রমে বোধ হয় নিশানাথ সে ব্যাপারটা দেখে ফেলেছিলেন, তাই তাঁকেও হত্যা করবার প্রয়োজন হয়ে পড়ল হত্যাকারীর পক্ষে একই কারণে। কুক্ষণে হতভাগ্য নিশানাথ বলে ফেলেছিলেন সকলের সামনে, black man with that big torch! তারপর তাঁর সেই কথা, that mischeivous boy again started his old game! কাজেই হত্যাকারী বুঝতে পেরেছিল এর পরও যদি নিশানাথ বেঁচে থাকেন, তাঁকে পাগল বলে রটনা করলেও সর্বনাশ ঘটতে হয়ত দেরি হয়ে না। মানুষের মন। তাছাড়া আরও একটা কথা এর মধ্যে আছে, কোন মানুষকে যখন সর্বনাশের নেশায় পায়, ধাপের পর ধাপ সে নেমেই চলে অন্ধকারের অতল গহ্বরে যতক্ষণ না সে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস নেয়। নিশানাথ বর্ণিত সেই ওল্ড গেমের কথা রাণীর চিঠি ও জবানবন্দির মধ্যেই পাবেন। তাই আর পুনরুক্তি করলাম না।

    যাহোক সতীনাথের হত্যার কথাটা একবার ভেবে দেখুন: মহেশ সামন্ত, তারিণী চক্রবর্তী ও সুবোধ মণ্ডলের জবানবন্দি হতে কতকগুলো ব্যাপার অতি পরিষ্কার ভাবেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিশেষ করে সুবোধ মণ্ডলের জবানবন্দি-যা এই কাগজের সঙ্গেই আলাদা করে আমি পাঠালাম পড়ে দেখবেন। যে রাত্রে সতীনাথ অদৃশ্য আততায়ীর হাতে নিহত হয়, সেরাত্রে হত্যার কিছুক্ষণ পূর্বেও সতীনাথ তার বাসাতেই ছিল। সতীনাথের বাড়ির ভৃত্যদের জবানবন্দি হতে জানা যায়, পাগড়ী বাঁধা এক দারোয়ান (?) গিয়ে সতীনাথকে একখানা চিঠি দিয়ে আসে। এবং ঐ চিঠি পাওয়ার পরই সতীনাথ বাসা হতে নিষ্ক্রান্ত হয়। এবং যাওয়ার সময় ভূত্যকে বলে যায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সে আবার ফিরে আসছে। ভৃত্য বংশীর প্রথম দিকের জবানবন্দি যদি সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে বাসা হতে বের হয়ে আসবার ঘণ্টা দুই পূর্বে কোন এক সময় দারোয়ান-বেশী কোন এক ব্যক্তি চিঠি নিয়ে গিয়েছিল সতীনাথের কাছে।

    সতীনাথের ভৃত্য বংশী গোলমাল শুনেই রাজবাড়িতে ছুটে আসে। রাজবাড়ি ও সতীনাথের বাসার দূরত্ব এমন কিছু নয়, যাতে করে বাসা থেকে বের হয়ে আসবার পর রাজবাড়িতে পৌঁছতে সতীনাথের প্রায় দুঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তাইতেই মনে হয় আমার সতীনাথ চিঠি পেয়েই নিশ্চয় রাজবাড়ির দিকে যায়নি, আগে অন্য কোথাও গিয়েছিল, পরে রাজবাড়িতে যায়। এবং তা যদি হয় তো, আমার অনুমান মৃত্যুর পূর্বে সতীনাথের রাজবাড়ির বাইরে অন্য কোন জায়গায় হত্যাকারীর সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা বা কথাবার্তা হয়েছিল এবং সেই সময় সতীনাথের পকেট থেকে চিঠিখানি খোয়া যায়। কিন্তু ভৃত্য বংশীর কথায়ও আমি তেমন আশ্বাস স্থাপন করতে পারছি না। কারণ প্রথমে একবার সে বলেছে—এই ঘণ্টা দুইও হবে না কে একটা লোক বাবুর কাছে চিঠি নিয়ে গিয়েছিল, আবার পরমুহূর্তে জেরায় বলেছে লোকটা বের হয়ে আসবার মিনিট পনের-কুড়ির মধ্যেই বংশী গোলমাল শুনে ছুটে আসে।

    এখন কথাটা হচ্ছে, বংশীর জবানবন্দির মধ্যে কোন্ কাথাটা সত্যি! প্রথম না দ্বিতীয়! আমি বলব দ্বিতীয় নয়, প্রথম কথাটাই। তার কারণ ১নং মৃত সতীনাথের পায়ে যে জুতো ছিল তার মধ্যে নরম লাল রংয়ের এঁটেল মাটি লেগেছিল। যেটা পরের দিন ময়নাঘরে ময়নাতদন্তের সময় সুব্রত উপস্থিত হয়ে দেখতে পায়। ২নং সতীনাথের বাসা থেকে রাজবাড়ির রাস্তায় কোথাও ঐ সময় কোন লাল রংয়ের এঁটেল মাটির অস্তিত্বই ছিল না। ৩নং যে নাগরা জুতোটা পাঠিয়েছি তার সোলেও লাল এঁটেল মাটি দেখতে পাবেন। নদীর ধারে লাল রঙের এঁটেল মাটি একমাত্র ঐ শহরে আছে আমি দেখেছি। তাতে করে আমার মনে হয় বংশী প্রথমটাই সত্যি বলেছিল। ঐ রাত্রে মৃত্যুর পূর্বে সতীনাথের হত্যাকারীর সঙ্গে নদীর ধারে দেখা হয়েছিল এবং কথাবার্তাও হয়েছিল নিশ্চয়ই,এই আমার বিশ্বাস। এবং প্রায় একই সঙ্গে দুজনে অল্পক্ষণ আগেপিছে রাজবাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। খুব সম্ভব অন্দরমহলের আঙিনায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই হত্যাকারী সতীনাথকে অতর্কিতে সামনের দিক থেকে তারই তৈরী মৃত্যুবাণ নিক্ষেপ করে হত্যা করে। এবং হত্যা করেই সতীনাথের চীৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই হত্যাকারী বাড়ির মধ্যে গিয়ে আত্মগোপন করে। তারপর সময় বুঝে আবার অকুস্থানে আবির্ভূত হয়। হত্যার দিন রাত্রে অস্পষ্ট চাঁদের আলো ছিল। সেই আলোতেই নিশানাথ তাঁর শয়নকক্ষের খোলা জানালাপথে ঘটনাচক্রে সমগ্র ব্যাপারটি হয়ত দেখতে পান। সতীনাথের প্রতি মৃত্যুবাণ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল মারাত্মক ঐ টর্চ যন্ত্রটিরই সাহায্যে, এবং নিশানাথ সে ব্যাপার দেখে ফেলেছিলেন বলেই বলেছিলেন—black man with that big torch! এবং আগেই বলেছি ঐ স্বগত উক্তিই হল তাঁর মৃত্যুর কারণ।

    নিশানাথ ছাড়াও আর একজন ঐ নৃশংস হত্যা-ব্যাপারে সাক্ষী থাকতে পারত, সারারাত্রি ঘুরে যে ঐ দরজায় পাহারায় নিযুক্ত থাকত, দারোয়ান ছোট্টু সিং। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দারোয়ান ছোট্টু সিং সে রাত্রে জীবিত থেকেও মরেই ছিল, প্রচণ্ড সিদ্ধির নেশার প্রভাবে। ছোট্টু সিংয়ের জবানবন্দি হতেই সেকথা আমাদের জানতে কষ্ট হয় না। কিন্তু ছোট্টু সিং যে তার জবানবন্দিতে বলেছে, তার প্রচণ্ড সিদ্ধির নেশার কথাটা কেউই জানতেন না, এ কথা সর্বৈব মিথ্যা। ছোট্টু সিংয়ের ধারণা যদিও তাই, আসলে কিন্তু ঠিক তা নয়। হত্যাকারীর পরামর্শ মতই তার সঙ্গী মানে নেশার সাথী তারিণী চক্রবর্তীই বেশী পরিমাণে ছোট্টু সিংকে সিদ্ধি-সেবন করিয়েছিল সেরাত্রে সম্ভবত। কারণ ছোট্টু সিং ও তারিণী প্রত্যহ সন্ধ্যার সময় একসঙ্গে সিদ্ধির সরবত পান করত। তবে একটা ব্যাপার হতে পারে, সরবত খাবার সময় ছোট্ট সিং ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি, সরবত পানের নেশার ঝোঁকে ঠিক কতটা পরিমাণে সিদ্ধি সে সরবতের সঙ্গে গলাধঃকরণ করছে। আশ্চর্য হবেন না, ব্যাপারটা আগাগোড়াই প্ল্যান-মাফিক ঘটেছে, গোড়া হতে শেষ পর্যন্ত। হত্যাকারী যখন সতীনাথের কাছে দারোয়ানের বেশে চিঠি নিয়ে যায়, তখন তার জুতোর শব্দ সুবোধ মণ্ডল শুনতে পেয়েছিল, ও কথা তার জবানবন্দিতেই প্রকাশ। এবং একমাত্র সুবোধ মণ্ডলই নয়, তারিণী চক্রবর্তীও শুনতে পেয়েছিল, তবে তারিণী জানত আসলে লোকটি কে, আর সুবোধ মণ্ডল ভেবেছিল লোকটা ছোট্টু সিং, এই যা প্রভেদ। হত্যাকারী দারোয়ানের বেশ নিয়েছিল এইজন্য যে কেউ তাকে দেখে ফেললেও যাতে ছোট্ট সিং ছাড়া অন্য কেউ না ভাবে। আসলে ব্যাপারটা যাই হোক, সতীনাথের হত্যার সময়ে একমাত্র নিশানাথ ছাড়া আর দ্বিতীয় সাক্ষী কেউ ছিল না। এবং বর্তমানে নিশানাথ যখন মৃত, তখন সামান্য ঐ নাগরা জুতো টর্চ ও অন্যান্য সাক্ষীর জবানবন্দির সাহায্যে হত্যাকারীকে ফাঁসানোনা যাবে না। সে আজ আমাদের সকলের নাগালের বাইরে। সতীনাথের হত্যাকারীর ঐ একটিমাত্র অপরাধই তো নয়, নিশানাথেরও হত্যাকারী সে। এবং সতীনাথ শিবনাথকে একই প্রক্রিয়ায় ঐ মারাত্মক টর্চ যন্ত্রটির সাহায্যে বিষাক্ত মৃত্যুবাণ নিক্ষেপ করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। সতীনাথের জন্য দুঃখ নেই। লোভীর চরম পুরস্কারই মিলেছে। দুঃখ হতভাগ্য নিরীহ অবিবেচক নিশানাথের জন্য। অবিবেচক এইজন্যই বললাম, স্নেহে ও মমতায় যদি সে অন্ধ না হত, তবে সেই child of the past কোনদিনই পরবর্তীকালে তার old game আবার শুরু করতে পারত না হয়ত এবং সুহাসের মৃত্যু হতে পর পর এতগুলো হত্যাকাণ্ডও ঘটত না।

    এখন আসা যাক সেরাত্রে কিভাবে নিশানাথকে হত্যা করা হয়েছিল—নিশানাথের প্রতি মৃত্যুবাণ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল রাজাবাহাদুরের শয়নকক্ষের জানলাপথে। কারণ নিশানাথের মৃত্যুর পর মৃতদেহের position, যা এই মামলার প্রসিডিংস থেকে পড়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন, কথাটার মধ্যে সন্দেহ রাখবার মত কিছুই নেই।

    মৃত্যুর পূর্বে বিষজর্জরিত নিশানাথ যে স্বল্পকাল বেঁচেছিলেন তার মধ্যেই তাঁর শেষ মৃত্যু-চিৎকার শুনে মালতী দেবী ছুটে তাঁর ঘরে গিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। এবং ঠিক পূর্বমুহূর্তে অস্পষ্ট কণ্ঠে যে শেষ কথাটিমৃত্যুপথযাত্রী উচ্চারণ করেছিলেন, সেটি হত্যাকারীরই ডাকনামটি। মালতী দেবী নিজস্ব জবানবন্দিতেই সেকথা স্বীকার করেছেন দেখতে পাবেন।

    নিশানাথ ও সতীনাথের হত্যার ব্যাপার শেষ করবার পূর্বে আর একটি কথা যা আপনার জানা প্রয়োজন, সতীনাথই তার অমোঘ মৃত্যুবাণ যন্ত্রের নিক্ষেপের পরিকল্পনাকারী এবং যন্ত্রটি ব্যবহারের পূর্বে তাকে অনোর এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হয়েছিল ও তার জন্য হয়ত অনেক ড্রাইসেলের প্রয়োজন হয়েছে তার, সে-সবেরই প্রমাণ তার নিজের বাক্সেই ছিল—ইয়েসগুলো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.