Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প397 Mins Read0

    ০১-০৫. আপনি বিশ্বাস না করলে

    প্রজাপতি রঙ

    ০১.

    আপনি বিশ্বাস না করলে কি করতে পারি বলুন! তবে জানবেন মাধবীকে আমি হত্যা করিনি।

    হত্যা করেছেন তা কি আমি বলেছি হীরুবাবু? সুদর্শন মল্লিক মৃদু হেসে বলে, তা তো আমি বলিনি! তাছাড়া

    সুদর্শন মল্লিক ঝানু ও.সি.। যেমন পালোয়ানের মত চেহারা তেমনি দুর্জয় সাহস।

    চার-পাঁচজন ও.সি.-কে পর পর বদলি করার পর ডি.সি. নিজে বেছে বেছে তরুণ ও.সি-দের মধ্যে সুদর্শন মল্লিককেই শেষ পর্যন্ত ও তল্লাটের থানার ইনচার্জ করে বসিয়েছিলেন।

    পোস্টিং অর্ডারটা দেবার সময় ডি.সি. বলেছিলেন সুদর্শন ইউ আর মাই চয়েস। ওই তল্লাটের দশ নম্বর পল্লীটাই আমি জানি যত রকম ক্রাইমের আড়া। যত রকমের চোরাইকারবার–কাছের রেলওয়ে ইয়ার্ড থেকে ওয়াগন ভেঙে হাজার হাজার টাকার মাল সরানো তো আছেই, সেই সঙ্গে বছরে চার-পাঁচটা খুন হবেই। অথচ আজ পর্যন্ত পুলিস ধরতেই পারল না কে বা কারা ওইভাবে খুন করেছে। আজ তিন বছরে পর পর পাঁচজন অফিসারকে ওখানে পোস্টিং করেছি, but none of them-তাদের মধ্যে কেউই ব্যাপারটার এতটুকু কোন হদিস করতে পারেনি। তাই আমার মনে হয়

    কি স্যার?

    একটা গ্যাং আছে ওই দশ নম্বর পল্লীর মধ্যে যারা ওই ক্রাইমের মূলে!

    সুদর্শন বলেছিল, আমি চেষ্টা করব স্যার।

    থানার চার্জ নিয়েই ওখানে এসে সুদর্শন পর পর কদিন দশ নম্বর পল্লীটার মধ্যে গিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে এসেছিল।

    যাদের উপর তার সন্দেহ পড়েছিল, মনে মনে তাদের একটা লিস্টও তৈরি করে ফেলেছিল। এবং ঐ সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিদের লিস্ট তৈরি করবার সময়ই হীরু সাহার উপর নজর পড়ে সুদর্শনের।

    ব্যায়ামপুষ্ট তাগড়াই চেহারা হীরু সাহার। কাছেই যে জুটমিলগুলো আছে তারই একটায় চাকরি করে। বার-দুই স্কুল-ফাইন্যাল ফেল করে পড়াশুনোয় ইতি দিয়েছিল। বাড়িতে বিধবা মা আর ছোট একটি ভাই। পরনে সর্বক্ষণ টেরিলিনের প্যান্ট ও হাওয়াই শার্ট। মুখে সর্বক্ষণ সিগারেট। পল্লীর সবাই তাকে ভয় করে, সমীহ করে।

    আলাপ করবার চেষ্টা করেছিল হীরু সাহার সঙ্গে একদিন সুদর্শন, কিন্তু হীরু সাহা পাত্তা দেয়নি। বলেছিল, অত খবরে আপনার দরকারটা কি স্যার! আমি কি করি, কখন বাড়ি ফিরি, কার কার সঙ্গে আমার দোস্তি—জানবার আপনার প্রয়োজনটা কি জানতে পারি কি?

    সুদর্শন মল্লিক মৃদু হেসেছিল, তারপর বলেছিল, আপনাদের পাড়ায় এলাম, আলাপপরিচয় করব না?

    বেশি আলাপ ভাল নয় স্যার, বুঝলেন!

    কেন বলুন তো?

    না, তাই বলছি। কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল হীরু সাহা।

    পাশের বাড়ির খগেন পাঠক বলেছিল, ওকে বেশি ঘাঁটাবেন না স্যার। কখন রাতেবিরেতে চোরাগোপ্তা চালিয়ে দেবে, সঙ্গে সঙ্গে একেবারে সোজা উপরতলার বাসিন্দা হয়ে যাবেন পার্মানেন্টলি! হেঁ-হেঁ, বুঝলেন না?

    কথাগুলো বলে রহস্যময় হাসি হেসেছিল খগেন পাঠক।

    খগেন পাঠকও ওই হীরু সাহারই সমবয়সী। সে একজন নামকরা মোটর-মেকানিক এবং ঐ পল্লীর বাসিন্দা-সুদর্শনের সন্দেহের তালিকার মধ্যে অন্যতম চিহ্নিত।

    আরও একজনের উপর নজর পড়েছিল সুদর্শন মল্লিকের।

    মাধবী ব্যানার্জি।

    ওই পল্লীতেই থাকে। বাপ পতিতপাবন ব্যানার্জি অন্ধ। পূর্ববঙ্গের কোন এক স্কুলে মাস্টার ছিল। দেশ-বিভাগের ফলে ছিটকে ঘুরতে ঘুরতে ওই পল্লীতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল বছরকয়েক আগে।

    দুই ছেলে দুই মেয়ে। অবিনাশ-অমলেন্দু দুই ভাই আর দুই বোন মাধবী ও সাবিত্রী। বড় দুই ভাই স্কুলের চৌকাটটা ডিঙিয়েই লেখাপড়া ছেড়ে একজন ঢুকেছিল মিলে, অন্যজন মোটর-ড্রাইভিং শিখে হয়েছিল বাসের ড্রাইভার। দুই ভাইয়ে যা উপার্জন করে তাতে অভাব থাকার কথা নয়, কিন্তু সংসারে তারা বড় একটা উপুড়হস্ত করে না। অগত্যা মাধবীকেই হাল ধরতে হয়েছিল।

    আই.এ. পাস করে একটা অফিসে চাকরি নিয়েছিল, ওই সঙ্গে অফিসের ক্লাবে ক্লাবে অভিনয় করত। অভিনয়ে বরাবরই একটা বেশ ন্যাক ছিল মাধবীর। ঐ অভিনয় করবার ক্ষমতার জন্যই অফিসের মাইনের দুগুণ তিনগুণ ইনকাম ছিল। অভিনয় করে নানা অফিস ক্লাবে ক্লাবে বেশ মোটা টাকাই উপার্জন করত মাধবী।

    ছোট বোন সাবিত্রী কলেজে বি.এ. পড়ে।

    গরিব রিফিউজি স্কুল-মাস্টারের মেয়ে হলে কি হবে, দেখতে দুটি বোনই সুন্দরী। তাহলেও দুজনের সৌন্দর্যের মধ্যে একটা যেন পার্থক্য ছিল।

    মাধবীর দেহ ও চোখে-মুখে যেন একটা উগ্র যৌন আকর্ষণ ছিল, যেটা স্বভাবতই পুরুষকে আকর্ষণ করত। উগ্র স্পষ্ট যৌবন। দেহের প্রতিটি অঙ্গ, প্রতিটি ঢেউ যেন সোচ্চার। তার উপরে মাধবীর বেশভূষা, চালচলন, কথাবার্তা ও চোখের চাউনির মধ্যেও সর্বক্ষণ যেন একটা যৌন আবেদন স্পষ্ট হয়ে উঠত। তাই পল্লীতে অনেকেই বলাবলি করত ওর ইনকাম দেখে, কেবল চাকরি আর অভিনয়ই নয়—অন্যভাবেও উপার্জন হয় ওর।

    অথচ ছোট বোন সাবিত্রী একেবারে তার বড় বোনের যেন সম্পূর্ণ বিপরীত। শান্ত নম্র। ধীর গম্ভীর।

    পল্লীর সকলের সঙ্গেই ছিল মাধবীর আলাপ! পল্লীর সব যুবকেরই দৃষ্টি যে মাধবীকে সর্বক্ষণ ঘিরে ছিল, তাও জেনেছিল সুদর্শন মল্লিক। কিন্তু মাধবীর যে কারও প্রতি কোন বিশেষ পক্ষপাত আছে সে-সম্পর্কে কোন সংবাদই পায়নি সুদর্শন।

    মাধবীর সঙ্গেও আলাপ করেছিল সুদর্শন একদিন ওদের বাড়িতে গিয়েই।

    প্রথম আলাপের দিনই মাধবী বলেছিল, কি সৌভাগ্য, রাজার পদার্পণ কুঁড়েঘরে।

    কেন ওকথা বলছেন, মাধবী দেবী? সুদর্শন কথাটা বলে হেসেছিল।

    দেবী-টেবী নয়, আমাকে মিস ব্যানার্জী বলেই ডাকবেন দারোগাবাবু।

    বেশ, তাই হবে। কিন্তু ওই কথা বললেন কেন? আপনাদের তল্লাটে নতুন এসেছি, একটু জানা-পরিচয় থাকাটা কি ভাল নয়?

    কিন্তু আপনারা যে রাজার জাত! মাধবী একটু বাঁকা হাসি হেসে বলেছিল।

    রাজার জাত মানে? সৌহার্দ্যের কণ্ঠে—খোঁচাটা যেন বুঝতেই পারেনি, এইভাবে কথাটা বলবার চেষ্টা করেছিল সুদর্শন মল্লিক।

    তা বৈকি! খোদ সরকারের প্রতিভূ এবং এ তল্লাটের একেবারে হর্তাকর্তা দণ্ডমুণ্ডের বিধাতা!

    সুদর্শন হেসে বলেছিল, তাই বুঝি?

    নয়? ইচ্ছা করলেই তো একেবারে বেঁধে নিয়ে যেতে পারেন পাইক-পেয়াদা পাঠিয়ে!

    সে যুগ আর সেই মিস ব্যানার্জি!

    কে বললে নেই! মরা হাতি এখনও লাখ টাকা। তা যাক, তারপরই একটু থেমে বলেছিল, কিন্তু আপনাদের মত লোকের আমাদের সঙ্গে আলাপ করলে কি সুবিধা হবে।

    কেন, কেন?

    তা বৈকি! তাছাড়া কথায় বলে পুলিসে ছুঁলে আঠারো ঘা!

    আবার হেসেছিল সুদর্শন মল্লিক।

    হাসছেন যে?

    আপনি দেখছি বেশ মিষ্টি করে হুল ফোঁটাতে পারেন!

    ওমা, সে আবার কি? না, না–ছিঃ, আপনারাই হলেন আমাদের বলভরসা। আপনাদের হুল ফোঁটাব এমন ধৃষ্টতা কি থাকতে পারে! আচ্ছা চলি-আমার আবার

    অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে! নমস্কার।

    নমস্কার।

    .

    ০২.

    মাধবীদের ঠিক একেবারে পাশের বাড়িরই সুবোধ মিত্রের সঙ্গেও সুদর্শনের ওইদিনই আলাপ। ফেরার পথে হঠাৎ দেখা।

    সুবোধ মিত্র সেদিন অফিসে যায়নি। ওই দশ পল্লীরই বাসিন্দা হলেও যেন ওই পল্লীর একজন বলে মনে হয় না। বি.এ. পাস করে একটা মার্চেন্ট অফিসে চাকরি করে। রোগা দোহারা চেহারা। কালোর রঙের উপরেও একটা যেন জৌলুস আছে। চোখে-মুখে একটা বুদ্ধির দীপ্তি। জামা-কাপড়েই কেবল ধোপদুরস্ত নয়, কথাবার্তায়ও অত্যন্ত বিনয়ী ও নষ। বস্তির মধ্যে বসবাস করলেও নোকটার যে একটা রুচি আছে তা দেখলেই বোঝা যায়।

    সমাদর করে ডেকে নিয়ে সুবোধ মিত্র সুদর্শনকে তার বাইরের বসবার ঘরে বসিয়েছিল।

    বেতের একসেট সোফা, কাচের একটা আলমারি-ভর্তি বই। একদিকে একটি তক্তপোশ পাতা। উপরে একটি সুজনি বিছানো। এক কোণে একটি বুদ্ধমূর্তি ও ভাসে একগোছা ফুল। দেওয়ালে ঝোলানো একটি বেহালা।

    গরিবের ঘরে যখন পায়ের ধুলো দিয়েছেন, এক কাপ চা অন্তত খেতেই হবে। সুবোধ বললে।

    না, না—সে-সবের কোন প্রয়োজন নেই সুবোধবাবু। ওসব হাঙ্গামা করবেন না।

    হাঙ্গামা আবার কি! বসুন।

    সুবোধ মিত্র পরক্ষণেই ভিতরে চলে গিয়েছিল।

    একটু পরে সুদৃশ্য দামী সৌখীন কাপে এক কাপ চা নিয়ে ফিরে এল, নিন।

    দেখুন তো, এখন এই অবেলায় আবার চায়ের কি প্রয়োজন ছিল!

    তা হোক, আপনার মত লোক এ বাড়িতে পায়ের ধুলো দিয়েছেন–

    ঘণ্টাখানেক প্রায় আলাপ করেছিল সুদর্শন মল্লিক। খুশী হয়েছিল আলাপ করে। এবং ফিরে আসবার সময় স্বভাবতই সুবোধ মিত্র তার মনের পাতায় দাগ কেটেছিল।

    আরও একজন ছিল দশ নম্বর পল্লীর-কল্যাণ বসু। রোগা প্যাটার্নের চেহারা। কালো গায়ের রঙ। মাথায় ঘন চুল। অর্ধেক গাল পর্যন্ত জুলপি। রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিশেষ এক পার্টির চিহ্নিত লোক ওই পল্লীর। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি হবে। বিশেষ রাজনৈতিক পার্টির কর্মী হিসাবে স্বভাবটা একটু রুক্ষ। এবং বেশ একটু দাপটের সঙ্গেই যেন পল্লীর মধ্যে থাকে। পৌর প্রতিষ্ঠানের একজন বি গ্রেড ক্লার্ক।

    সে বলেছিল প্রথম আলাপের সময়েই, আপনি তাহলে আমাদের এ তল্লাটের নতুন ও.সি. হয়ে এলেন। যাক, টিকে থাকুন এই কামনা করি।

    আমাদের আর টিকে থাকাথাকি কি বলুন, কল্যাণবাবু! কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। যতদিন রাখবে এ থানায় ততদিন থাকব। হুকুম এলেই চলে যেতে হবে। এই দেখুন না, গত বছর দুয়েকের মধ্যেই চারজন এল আবার গেল আমার আগে এ থানা থেকে। কিন্তু কেন বলুন তো?

    কি–কেন?

    মানে এই থানায় ও.সি.-রা এলে চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই আবার বদলি হয়ে যায়।

    কল্যাণ কিন্তু সুদর্শন মল্লিকের কথার কোন জবাব দেয়নি। মৃদু হেসে বলেছিল, আপনাকে বোধ হয় অত তাড়াতাড়ি বদলি করবে না।

    কি করে বুঝলেন?

    আপনি বেশ এনারজেটিক। মানে?

    এই দেখুন না এখানকার থানায় এসেই শুনেছি, আপনি আমাদের পল্লীতে প্রায়ই আসছেন। আচ্ছা মশাই!

    কি?

    আমাদের এ তল্লাটের এই পল্লীটা বড়কর্তাদের একটা হেডেক, তাই না?

    কই, সেরকম তো কিছু শুনিনি!

    শুনেছেন ঠিক স্যার, চেপে যাচ্ছেন।

    সুদর্শন মল্লিক প্রত্যুত্তরে হেসেছিল। তবে বুঝেছিল কল্যাণ বসু গভীর জলের মাছ।

    তবে কি জানেন মল্লিক মশাই,-পরক্ষণেই কল্যাণ বসু বলেছিল।

    কি?

    আপনি এ তল্লাটের থানার ও.সি., যেখানে সেখানে খুশি আপনার যাবার অধিকার আছে বৈকি, কিন্তু–

    কিন্তু কি? বলুন না, থামলেন কেন কল্যাণবাবু?

    এ পল্লীর লোকেরা পুলিসের লোকদের বড় একটা পছন্দ করে না। কিন্তু আমি তো

    জানি, বন্ধু হিসেবেই হয়তো আলাপ-পরিচয় করতে আসেন, কিন্তু এরা হয়ত সাদা চোখে ব্যাপারটা নেবে না।

    কেন–কেন?

    হাজার হোক, আপনি তো জানেন, কথায় বলে পুলিস! ভাববে হয়ত কোন মতলব নিয়েই আপনি পল্লীতে ঘোরাফেরা করছেন!

    সুদর্শন মল্লিক তাকিয়ে ছিল কল্যাণ বসুর দিকে।

    কল্যাণ বসু হাসছিল।

    .

    সে যাই হোক, হীরু সাহা, খগেন পাঠক, কল্যাণ বসু, সুবোধ মিত্র ও মাধবী ব্যানার্জি দশ নম্বর পল্লীর বাসিন্দা হিসাবে তার মনের পাতায় বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল যেন। মাসচারেক তারপর নিরুপদ্রবেই কেটেছিল।

    অবিশ্যি ইতিমধ্যে কানে যে আসেনি দু-চারটে ব্যাপার তা নয়। যেমন মদ চোলাই, চোরাই মাল পাচার, ওয়াগন ব্রেক। কিন্তু সুদর্শন মল্লিক কথাগুলো কানে এলেও যেন ব্যাপারগুলোতে তেমন কোন গুরুত্ব দেয়নি বাইরে থেকে, যদিও ভিতরে ভিতরে সে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল। সর্বক্ষণই সতর্ক সজাগ থাকত। এবং তারপরও দু-পাঁচ দিন দশ নম্বর পল্লীতে গিয়েছে, এর-ওর সঙ্গে আলাপ করে আবার চলে এসেছে।

    তারপরই হঠাৎ এল দুঃসংবাদটা।

    ফলে সুদর্শন মল্লিককে সরেজমিনে তদন্তে নামতেই হল।

    নিষ্ঠুর এক হত্যাকাণ্ড।

    .

    ০৩.

    সময়টা শীতকাল।

    পৌষ শেষ হয়ে মাঘের শুরু। শহরে বেশ শীত পড়েছে কদিন থেকে।

    সকালবেলা থানার অফিসে বসে সুদর্শন মল্লিক দিন দুই আগে রাত্রে অল্পদূরে রেলওয়ে ইয়ার্ডে একটা লোডেড ওয়াগন থেকে দশ পেটি কাপড় ওয়াগন ভেঙে চুরি হয়েছে সেই সম্পর্কেই একটা রিপোর্ট খাড়া করছিল, এমন সময় দশ নম্বর পল্লীর হরগোবিন্দ ঘোষ নামে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে এসে থানায় ঢুকল।

    দারোগাবাবু আছেন নাকি?

    কে? ভিতরে আসুন।

    হরগোবিন্দ এসে ঘরে ঢুকলো। হাঁপাচ্ছে সে তখন রীতিমত।

    রোগা চেহারা। মাথার সামনের দিকটায় একগাছিও চুল নেই, চকচকে একটি টাক।

    এই যে দারোগাবাবু, শিগগির চলুন!

    কোথায়?

    দশ নম্বর পল্লীর পিছনে যে মাঠটা আছে—সেখানে।

    কেন, ব্যাপার কি?

    খুন মশাই খুন!

    খুন?

    সুদর্শন ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।

    হ্যাঁ, খুন-নৃশংস খুন!

    কে-কে খুন হল?

    ওই পল্লীরই একটি যুবতী মেয়ে।

    কি নাম বলুন তো?

    ওই যে আমাদের পল্লীর অভিনেত্রী

    অভিনেত্রী!

    হ্যাঁ, যঁহ্যাঁ, পতিতপাবন ব্যানার্জি-ওই যে অন্ধ স্কুল-মাস্টার পতিতপাবন ব্যানার্জি–তারই বড় মেয়ে মাধবী!

    সে কি?

    সুদর্শন মল্লিক যেন দ্বিতীয়বার চমকে ওঠে কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে।

    কখন খুন হল মাধবী ব্যানার্জি? জিজ্ঞাসা করে।

    তা কি করে জানব মশাই বলুন! সকালবেলা উঠে একটু প্রাতঃভ্রমণ করা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আজও বের হয়েছিলাম। দশ নম্বর পল্লীর পিছনদিকে যে মাঠটা আছে—সেই মাঠেরই মধ্যে পড়ে আছে কি একটা দূর থেকে নজরে পড়ে আমার যাবার সময়ই, কিন্তু দৃষ্টি দিইনি তখন।

    তারপর?

    ভাল করে তখন আলোও ফোটেনি আকাশে। বেড়িয়ে ফেরার সময় তখন বেশ আলো ফুটেছে চারদিকে। কি খেয়াল হল এগিয়ে গেলাম, আর গিয়ে দেখি আমাদের পল্লীর মাধবী পড়ে আছে-হাত-পা ছড়িয়ে, চোখ দুটো ঠেলে বের হয়ে এসেছে, মুখটা হাঁ করা, মুখের ভেতরে জিভটা একটু বের হয়ে এসেছে–

    পল্লীর সবাই শুনেছে?

    আমিই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে পল্লীতে খবরটা দিই। এতক্ষণে সেখানে হয়ত ভিড় হয়ে গিয়েছে। পরে মনে ভাবলাম, আমিই যখন ব্যাপারটা প্রথম দেখেছি, আমারই

    পুলিসকে একটা খবর দেওয়া কর্তব্য, তাই চলে এসেছি।

    খুব ভাল করেছেন। তা আপনিও বুঝি ওই পল্লীতেই থাকেন?

    থাকি মানে! দশ বছর আছি!

    কি নাম আপনার?

    আজ্ঞে হরগোবিন্দ ঘোষ।

    .

    সুদর্শন মল্লিক আর দেরি করে না। চারজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে তখুনি হরগোবিন্দকেও সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে পড়ে।

    সকাল খুব বেশি হলে তখন সাতটার বেশি নয়। শেষরাতের দিকে বিশ্রী ঘন কুয়াশা নেমেছিল, এখনও কুয়াশাটা ভাল করে পরিষ্কার হয়ে যায়নি। তবে দেখা যায় স্পষ্টই সব কিছু।

    থানা থেকে দশ নম্বর পল্লীটা মিনিট কুড়ি হবে হাঁটাপথে। সেই পল্লীরই পিছনে

    একটা খোলা মাঠের মত।

    এদিক-ওদিক গোটা দুই খাটাল আর একটা পুরাতন গোরস্তান আছে। তার ওধারে প্রাচীর—প্রাচীরের অপর পার্শ্বেই রেলওয়ে ইয়ার্ড।

    এই থানার চার্জ নেবার পর সুদর্শন ওই জায়গাটা, ওধারের রেলওয়ে ইয়ার্ডটা ঘুরে ঘুরে দেখে গিয়েছিল ইতিপূর্বে দিনতিনেক খুল ভাল করে, কারণ ওই ইয়ার্ড থেকেই ওয়াগন ভেঙে মাল সরাবার ব্যাপার প্রায়ই ঘটে থাকে।

    এবং যেটা সুদর্শন মল্লিকের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, নিকটবর্তী দশ নম্বর পল্লীরই কারও-না-কারও সেটা কীর্তি আর তাই সে বন্ধুত্বের ভান করে পল্লীর মধ্যে গিয়ে সকলের সঙ্গে পরিচিত হবার চেষ্টা করেছিল।

    নানা জায়গা থেকে ওয়াগন ভর্তি হয়ে নানা ধরনের পণ্যদ্রব্য আসে কলকাতা শহরে। সঙ্গে সঙ্গে কিছু সে-সব আর খালাস হয় না, কখনও পাঁচ-সাত-দশ দিন পর্যন্ত মাল ওয়াগনেই পড়ে থাকে।

    মালগাড়িগুলো ইয়ার্ডের মধ্যে একধারে শান্টিং করা থাকে খালাসের অপেক্ষায়।

    .

    ০৪.

    সীমানা প্রাচীরের চার-পাঁচটা জায়গায় ভাঙা। বোঝা যায় দুষ্কৃতকারীরা ওই পথেই ইয়ার্ডে যাতায়াত করে ও ওয়াগন ভেঙে মাল সরায়।

    তবে এও সুদর্শনের মনে হচ্ছে সুনিশ্চিত যে, ওয়াগন ভেঙে মাল পাচারের ব্যাপারে মালগাড়ির এঞ্জিন ড্রাইভার ও খালাসীদের হাতও আছে। তারাও ভাগীদার। তারাই সরবরাহ করে খবরটা। নচেৎ ওরা কেমন করেই বা জানতে পারে, কোন্ ওয়াগনে মাল আছে! একটা-আধটা মালগাড়ি তো নয়, অসংখ্য মালগাড়ি থাকে দাঁড়িয়ে ইয়ার্ডের এদিকওদিক ছড়িয়ে!

    পথ চলতে চলতে একসময় হরগোবিন্দকে সুদর্শন মল্লিক শুধায়, ঘোষ মশাই!

    আজ্ঞে, কিছু বলছেন?

    কি করা হয় আপনার?

    কাছেই আমার লেদ মেসিনের একটা দোকান আছে।

    দশ নম্বর পল্লীরই বাসিন্দা যখন আপনি, নিশ্চয়ই মাধবীকে ভাল করেই চিনতেন?

    চেনা মানে যাতায়াতের পথে সর্বদা দেখাশোনা হচ্ছে, একই পল্লীতে থাকি। কে চেনা নয়—সবাই তো চেনা!

    তা বটে। তবে বলছিলাম, আলাপ-টালাপ ছিল না মেয়েটির সঙ্গে?

    না মশাই, বড় দেমাক ছিল মেয়েটার। আমাদের বড় একটা মানুষের মধ্যেই গণ্য করত না।

    বলেন কি!

    হ্যাঁ! চাকরি করে, অভিনেত্রী-অ্যাকটো করে স্টেজে!

    খুব ভাল অভিনয় করত বুঝি?

    তা জানি না মশাই, তবে আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে সে যাতায়াত করত সর্বদা। দেখতাম প্রায়ই অনেক রাত করে ফিরত–

    একা একা?

    আগে আগে তো একা-একাই যাতায়াত করত, তবে ইদানীং দেখতাম—

    কি?

    সঙ্গে রয়েছে সুন্দরমত সুট-পরা এক বাবু!

    কে সে? আপনাদেরই পল্লীরই নাকি?

    না।

    তবে?

    জানি না। তারপরই বলে হরগোবিন্দ, বুঝলেন না, স্কুল-মাস্টারের মেয়ে হলে কি হবে-আর না বলাটা অন্যায়ই হবে, স্বভাবচরিত্র তেমন সুবিধের ছিল না!

    কেন—কেন?

    পল্লীর সব জোয়ান-মদ্দ ছোকরাগুলোই তো ওর চারপাশে ঘুরঘুর করত, হাসাহাসি ঠাট্টামস্করা চলত।

    তাই বুঝি? তা কার সঙ্গে বেশি ভাব ছিল বলে আপনার মনে হয়?

    কে জানে মশাই, ওসব গভীর জলের মাছ! হলও শেষ পর্যন্ত তেমনি, অপঘাতে মরতে হল। ওই সব চরিত্রের মেয়ের শেষ পর্যন্ত অমনটিই হয়, বুঝলেন না?

    আচ্ছা ঘোষ মশাই।

    বলুন।

    আপনাদের পল্লীতে মাধবীর কোন লাভার—মানে প্রেমিক ছিল কিনা বলতে পারেন?

    ওদের মত মেয়েছেলের কি একটা-আধটা প্রেমিক থাকে মশাই! কত প্রেমিক!

    সুদর্শনের বুঝতে কষ্ট হয় না, যে কোন কারণেই হোক মাধবীর প্রতি হরগোবিন্দর একটা আক্রোশ ছিল মনের মধ্যে।

    .

    মিনিট পঁচিশের মধ্যেই এরা পৌঁছে গেল অকুস্থানে।

    মিথ্যা বলেনি হরগোবিন্দ। ইতিমধ্যে দশ নম্বর পল্লীর অনেকেই এসে সেখানে ভিড় করেছে। নানা বয়েসী পুরুষই বেশি, তবে কিছু মেয়েও আছে। তাদের মধ্যে মাধবীর ছোট বোন সাবিত্রী আর বড় ভাই অবিনাশও ছিল।

    আরও ভিড়ের মধ্যে নজরে পড়ে সুদর্শনের—খগেন পাঠক মোটর মেকানিক, মিলের কর্মী কল্যাণ বসু, রোগা পাকাটির মত চেহারা—ওই একই মিলের কর্মী এবং সুবোধ মিত্র—সেই ভদ্র কেতাদুরস্ত মানুষটিকে বিশেষ করে।

    সুদর্শন মল্লিক ও তার সঙ্গের সেপাইদের দেখে ভিড় সরে গিয়ে ওদের এগোবার পথ করে দেয় আপনা থেকেই।

    পত্রশূন্য বটগাছটার নিচেই পড়ে আছে মাধবীর দেহটা। চিৎ হয়ে পড়ে আছে। পরনে একটা দামী শাড়ি। ডানহাতে একগাছি সোনার চুড়ি, বাঁহাতে দামী একটা লেডিস রিস্টওয়াচ।

    মুখটা সামান্য হাঁ হয়ে আছে। ঝকঝকে দাঁতের পাশ দিয়ে জিভটা যেন সামান্য বের হয়ে এসেছে। চোখের পাতা খোলা—চোখের মণি দুটো যেন বের হয়ে আসতে চায়। স্পষ্ট একটা আতঙ্ক ও সেই সঙ্গে যন্ত্রণার চিহ্ন দু-চোখের তারায়।

    মুখে ও ঠোটে প্রসাধনের চিহ্ন বেশ বোঝা যায়। ডান পায়ের হাঁটুর কাছাকাছি শাড়িটা উঠে এসেছে। মৃতদেহটা পরীক্ষা করতেই বুঝতে পারে সুদর্শন, পুরোপুরি রাইগার মর্টিস সেট ইন করেনি। পরনের শাড়িটা বেশ এলোমেলো। গায়ের ব্লাউজটা দু-এক জায়গায় ফেঁসে গিয়েছে দেখা যায়।

    মৃতদেহটাকে উপুড় করে দিতেই নজরে পড়ল সুদর্শনের-পরনের শাড়ি ও ব্লাউজে ধূলোমাটি লেগে আছে, এখানে ওখানে ফেঁসে গিয়েছে।

    মনে হয় কেউ যেন পৈশাচিক হিংস্রতায় মহিলার গায়ের ব্লাউজখানা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে।

    দেহের কোথাও কোন ক্ষতচিহ্ন নজরে পড়ল না সুদর্শনের।

    একফোঁটা রক্তের চিহ্ন নেই কোথাও। সুদর্শন আরও একটু ঝুঁকে পড়ে মৃতদেহের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতেই তার নজরে পড়ল মৃতদেহের গলায় যেন একটা আবছা কালসিটার দাগ আছে।

    সুদর্শনের পরীক্ষা হয়ে গেলে উঠে দাঁড়িয়ে চারপাশের ভিড়কে লক্ষ্য করে বললে, আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে ভিড় করছেন কেন? যান সব!

    একে একে সবাই চলে গেল। কেবল সাবিত্রী আর অবিনাশ তখনও দাঁড়িয়ে। অবিনাশ স্তব্ধ, সাবিত্রীর চোখে জল। সে নিঃশব্দে কাঁদছিল।

    চোখ দুটো কেঁদে কেঁদে লাল হয়ে উঠেছে।

    .

    ০৫.

    সাবিত্রীর বিমর্ষ মুখের দিকে তাকিয়ে সুদর্শনের মনটা যেন হঠাৎ কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তবু প্রশ্ন তো করতেই হবে, যা জানবার তাকে জানতেই হবে।

    সাবিত্রী দেবী! সুদর্শন ডাকে।

    সাবিত্রী সুদর্শনের দিকে অশ্রুভেজা লাল চোখ তুলে তাকাল।

    কাল কি আপনার দিদির কোথাও অভিনয় ছিল?

    ক্ষণকাল সাবিত্রী যেন একটু ইতস্তত করলে, তারপর কান্নাঝরা গলায় বললে, হ্যাঁ, একটা অফিস-ক্লাবে অভিনয় ছিল। বলে গিয়েছিল ফিরতে রাত হবে। বাবা তো দিদির অভিনয়ের ব্যাপারটা জানে না, তাই আমি জেগে অপেক্ষা করছিলাম।

    তারপর?

    অপেক্ষা করতে করতে কখন একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর ভোরবেলা হরগোবিন্দবাবুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়।

    সকাল হয়ে গিয়েছে তখন?

    হ্যাঁ, বেলা প্রায় পৌনে ছটা হবে। তবে—

    কি?

    কুয়াশার জন্যে আলো তখনও তত ফোটেনি ভাল করে। চেঁচামেচি শুনে দাদাও বাইরে এসেছিল। আমি আর দাদা জিজ্ঞাসা করি, ব্যাপার কি? হরগোবিন্দবাবু আমাদের বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে বললেন, শিগগির চল পল্লীর পিছনের মাঠে।

    দাদা জিজ্ঞাসা করে, কেন?

    মাধবী—তোমার বোন—

    কি—কি হয়েছে মাধবীর?

    সে মরে গিয়েছে।

    সুদর্শন প্রশ্ন করে, তারপর?

    আমরা ছুটতে ছুটতে তখুনি এখানে চলে এসেছি, দাদা আর আমি।

    আপনাদের মা-বাবা বোধ হয় এখনও শোনেননি কিছু?

    সারাটা পল্লীই জেনে গিয়েছে। অবিনাশ বললে, তাদের কি আর এতক্ষণ কিছু জানতে বাকি আছে?

    তা অবিশ্যি ঠিক। একটু থেমে সুদর্শন মল্লিক বলে, তাহলে এবার আপনারা বাড়ি যান।

    অবিনাশ শুধায়, মৃতদেহ কখন পাব?

    অনেক আইন-কানুনের ব্যাপার আছে, তাছাড়া পোস্টমর্টেম আছে। কাল বিকেলের আগে বডি পাবেন বলে তো মনে হয় না।

    অবিনাশ সাবিত্রীর হাত ধরে চলে যাচ্ছিল, সুদর্শন আবার ডাকে, একটা কথা অবিনাশবাবু–

    বলুন?

    থানায় আপনাদের দুজনেরই একটা করে এজাহার দিতে হবে। সন্ধ্যার দিকে যদি একবার আসেন–

    আসব।

    অবিনাশ আর সাবিত্রী দাঁড়াল না। যাবার জন্য পা বাড়াল।

    সুদর্শন আবার ওদের বললে, অমলেন্দুবাবুকেও আনবেন।

    .

    মৃতদেহ মর্গে পাঠাবার ব্যবস্থা করতেই বেলা বারোটা বেজে গেল।

    সুদর্শন মনে মনে যেন মাধবীর মৃত্যুর ব্যাপারটা ভেবে কিছুই কূল-কিনারা পাচ্ছিল না। মেয়েটাকে হত্যা করল কে আর কেনই বা হত্যা করল? হত্যা যে সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই। এবং মৃতদেহ পরীক্ষা করে নিয়ে সুদর্শন যতটা বুঝতে পেরেছে, যে-ই হত্যা করে থাকুক-হয় হত্যার পর বা আগে হত্যাকারী মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে, তারপর হয়ত মৃতদেহটা ওইখানে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয়েছে।

    হত্যা সম্ভবত অন্যত্র হয়েছে–কিন্তু সে কোথায়?

    আর একটা কথা মনে হয় সুদর্শনের। হত্যাকারী কি ওই দশ নম্বর পল্লীরই কেউ, না বাইরের কেউ?

    হরগোবিন্দ বর্ণিত সেই সুট-পরা বাবুটি, তার কথাটাও মনে পড়ে। তার খবরটাও যোগাড় করা দরকার।

    পল্লীতে মাধবীর প্রেমাকাঙ্ক্ষী অনেকেই ছিল। অনেকেই আকৃষ্ট হয়েছে মাধবীর প্রতি। আর একটু কৃপালাভের আশায় অনেকেই তার চারপাশে মক্ষিকার মত গুঞ্জন করে ফিরেছে। তাদের কেউ একজন নয় তো?

    প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিহিংসা গ্রহণ? কিন্তু কে?

    হীরা সাহা, খগেন পাঠক, কল্যাণ বসু কিংবা হরগোবিন্দ ঘোষ?

    হরগোবিন্দর কথায়বার্তায় মনে হয় মাধবীর প্রতি ওর একটা চাপা আক্রোশ ছিল যেন!

    এমনও হতে পারে, প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়েই হয়ত ওই আক্রোশ দেখা দিয়েছিল।

    কাজেই ঐ হরগোবিন্দ লোকটারও সংবাদ নেওয়া দরকার।

    আর একজন—আরও একজনের কথা মনে পড়ে সুদর্শনের।

    সুবোধ মিত্র।

    মাধবীদের একেবারে পাশের বাড়িতেই সে থাকে। তাকেও দেখা গিয়েছিল সকালে ভিড়ের মধ্যে। একমাত্র দেখা যায়নি হীরু সাহাকে।

    সে কি খবরটা পায়নি, না পেয়েও যায়নি?

    রাত প্রায় আটটা নাগাদ এল অবিনাশ একাই। সাবিত্রী আসেনি।

    সুদর্শন থানার অফিসঘরেই বসেছিল ওদের অপেক্ষায়।

    আসুন। একা যে! আপনার ছোট ভাই আর বোন এলেন না? বসুন।

    অমল তো এখানে নেই। বসতে বসতে বললে অবিনাশ।

    কোথায় গিয়েছেন তিনি?

    একদল বরযাত্রী নিয়ে গতকাল বিকেলে কৃষ্ণনগর গিয়েছে, এখনও ফেরেনি। তারপরই একটু থেমে অবিনাশ বললে, মা অত্যন্ত আঘাত পেয়েছেন, ঘন ঘন ফিট হচ্ছে তাঁর সংবাদটা পাওয়ার পর থেকেই, তাই সাবিত্রী আসতে পারল না।

    ঠিক আছে। কাল যখন তোক একবার যেন সময় করে থানায় আসেন। অবিশ্যি আমিই যেতে পারতাম, কিন্তু আপনার মা-বাবার কথা ভেবেই যাইনি। একটু থেমে বললে, আপনার বাবা পতিতপাবনবাবু শুনেছেন?

    হ্যাঁ।

    খুব ভেঙে পড়েছেন বোধহয়?

    কান্নাকাটি তো করছেন না, একেবারে চুপচাপ।

    খুবই স্বাভাবিক। সুদর্শন বলে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.