Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প397 Mins Read0

    ২৬-৩০. আমাদের পাড়ার হরগোবিন্দ

    ২৬.

    আমাদের পাড়ার হরগোবিন্দকে চেনেন?

    কে? যার ওই লেদ মেশিনের কারখানা আছে?

    হ্যাঁ। তার মেয়ে সবিতা। তার সঙ্গে ছোড়দার খুব ভাব। বিয়ে করবে তাকে। মাতাল, হরগোবিন্দ সংসারে বিশেষ কিছুই দেয় না। ছোড়দাই তো সবিতাদের সংসারটা বলতে .. গেলে চালায়।

    তাই নাকি? তা কই, অবিনাশবাবু-তোমার দাদা তো সেকথা বললেন না?

    দাদা বা দিদি কেউই ব্যাপারটা জানত না। একমাত্র আমিই জানি।

    তা এক কাজ করলেই তো পারেন অমলেন্দুবাবু, মেয়েটিকে বিয়ে করে নিয়ে এলেই তো হয়। দুটো সংসার আর টানতে হয় না।

    বিয়ে ছোড়দা করবে না।

    কেন?

    ছোড়দাও ভীষণ মদ খায়।

    জানি।

    কিন্তু সবিতা সেকথা জানে না।

    তাই বুঝি?

    হ্যাঁ। তাছাড়া সবিতা মাতালকে ভয়ানক ঘৃণা করে। মদ তো ছোড়দা ছাড়তে পারবে —অথচ বিয়ে করে সবিতাকে বাড়ি নিয়ে এলে হয়ত সব একদিন-না-একদিন জানাজানি হয়ে যাবে, তাই হয়তো–

    বিচিত্র ব্যাপার দেখছি!

    আরও একটা ব্যাপার আছে।

    কি?

    সবিতাকে ছোড়দা অনেকবার বলেছে, সে নাকি মদ স্পর্শও করে না!

    জনবহুল রাস্তা ধরে বাস ছুটে চলেছিল। শীতের আলো ইতিমধ্যেই ম্লান হয়ে এসেছিল। রাস্তার আলো জ্বলতে শুরু করেছিল একটি দুটি করে।

    সুদর্শন একসময় ডাকে, সাবিত্রী!

    সাবিত্রী সুদর্শনের দিকে তাকাল।

    বলছিলাম, আমি যদি তোমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিই?

    দেবেন? সত্যিই? সাবিত্রীর চোখের মণি দুটে-প্রত্যাশার আনন্দে যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

    দেব। তবে আগে পরীক্ষাটা দিতে হবে তোমায়—তারপর।

    কিন্তু–

    সাবিত্রী কি বলবার চেষ্টা করে, কিন্তু একপ্রকার স্মিতহাস্যে থামিয়ে দিয়েই মুখের দিকে তাকিয়ে সুদর্শন বলে, কোন কিন্তু না, পরীক্ষা তোমাকে দিতেই হবে। তোমার পরীক্ষার ফিস আমিই দেব। তুমি অমত করতে পারবে না।

    সাবিত্রী যেন কেমন মনে হল থমমত খেয়ে গিয়েছে সুদর্শনের কথায়।

    একটু মৃদু কণ্ঠে বলে, আপনি দেবেন!

    তাই যদি দিই?

    না না, তা হয় না।

    কেন হয় না সাবিত্রী?

    না, আপনার টাকা আমি নিতে পারি না।

    বেশ তো, মনে কর না, এমনি নিচ্ছ না—তুমি টাকাটা ধার নিচ্ছ আমার কাছ থেকে। তারপর চাকরি হলে শোধ করে দিয়ো না হয়।

    না। কথাটা বলে সাবিত্রী মুখটা ঘুরিয়ে নিল রাস্তার দিকে।

    সাবিত্রী, আমি ওই কথাটা বলায় কি তুমি রাগ করলে?

    সাবিত্রী কোন জবাব দেয় না, বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

    কিন্তু তুমি বিশ্বাস কর সাবিত্রী, আমি তোমাকে কোনরকম অপমান করতে চাইনি। বন্ধু হিসাবে

    আমরা গরিব বলেই তো, সাবিত্রী ওর মুখের দিকে তাকাল। তার দু-চোখে জল, গলার স্বরটা যেন বুজে আসে কান্নায়।

    ছি ছি সাবিত্রী, একবারও ওকথা আমার মনে হয়নি। তুমি এত করে পড়াশুনা করলে, পরীক্ষার জন্য বছর দুই ধরে নিজেকে তৈরি করলে, অথচ কয়েকটা টাকার অভাবে পরীক্ষাটা তোমার দেওয়া হবে না—তাই বলেছিলাম কথাটা।

    ইতিমধ্যে বাস কলেজ স্ট্রীট হ্যারিসন রোডের জংশনে পৌঁছে গিয়েছিল।

    সাবিত্রী উঠে দাঁড়াল।আমি এখানে নামব।

    সাবিত্রী নেমে গেল।

    বাস আবার গন্তব্যপথে ছুটে চলে।

    .

    সুদর্শন যখন কিরীটীর গড়িয়াহাটের বাড়িতে পৌঁছল, তখন প্রায় সাড়ে ছটা বাজে। শীতের সন্ধ্যা, অন্ধকার হয়ে গিয়েছে বেশ-শহরের সর্বত্র আলো জ্বলে উঠেছে।

    গড়িয়াহাটার নম্বরগুলো কেমন যেন এলোমেলো ভাবে এদিক-এদিক ছড়ানো। নম্বরটা খুঁজে পেতে বেশ একটু সময়ই লাগে সুদর্শনের।

    দরজার বেল টিপতেই জংলী এসে দরজা খুলে দিল।

    বাবু আছেন?

    জংলী বললে, বাবু একটু বের হয়েছেন, এলে আপনাকে বসতে বলে গিয়েছেন। সিঁড়ির ঘরে যান।

    দোতলার ও একতলার মাঝামাঝি মেজোনিন ফ্লোর। ঘরে আলো জ্বলছিল।

    সিঁড়ি বেয়ে উঠে কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই কৃষ্ণাকে দেখতে পেল সুদর্শন। কৃষ্ণা ঘরের মেঝেতে কার্পেটের ওপর বসে সেতার বাজাচ্ছিল। সুদর্শন কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাজনা থামিয়ে সেতারটা নামিয়ে রাখল কৃষ্ণা।

    আসুন সুদর্শনবাবু!

    আপনি বাজনা থামালেন কেন বৌদি?

    কৃষ্ণা মৃদু হাসে। আপনার দাদা একটু বেরিয়েছে, আপনাকে বসতে বলে গেছে। বসুন, চা করে আনি।

    আপনি ব্যস্ত হবেন না বৌদি, বসুন।

    ব্যস্ত কি! আমারও চায়ের পিপাসা পেয়েছে। বসুন, আসছি আমি।

    কৃষ্ণা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    .

    ২৭.

    কিরীটীর নতুন বাড়িতে আগে আর আসেনি সুদর্শন।

    মেজোনিন ফ্লোরের ঘরটা নেহাত ছোট নয়, আকারে বেশ বড়ই হবে। একধারে সোপা সেট ও একধারে সোফা-কাম-বেড একটি।

    এক কোণে পাশাপাশি দুটো আলমারি। একটাতে ঠাসা বই, অন্যটায় নানা ধরনের সব কিউরিও।

    ছোট আলমারিটার মাথায় একটা মাটির বুদ্ধের ধ্যানস্থ মুখ। কৃষ্ণনগরের তৈরি। আলমারির মাথায় একটা দামী জার্মান ক্যাজেল ঘড়ি। সোফার একপাশে ফোন। বিদেশী ফোন-সাদা রঙের।

    মাঝখানে ডিম্বাকৃতি সেন্টার টেবিল–ওপরে কাচ বসানো। টেবিলের ওপরে ফ্লাওয়ার ভাসে এক গাছা টাটকা রজনীগন্ধা। ঘরের মধ্যে ধূপ ও ফুলের মিশ্র একটা গন্ধ বাতাসে।

    ফোনের পাশে কিছু স্পন, সোভিয়েত ল্যান্ড, নবকল্লোল ইত্যাদি মাসিক ও পাক্ষিক পত্র। একটা নবকল্লোল টেনে নিয়ে সুদর্শন পাতা ওলটাতে থাকে। মিনিট পনেরো বাদেই কৃষ্ণা ভৃত্যের হাতে চায়ের ট্রে ও প্লেটে কিছু মিষ্টি নিয়ে কাচের দরজা ঠেলে এসে ঘরে প্রবেশ করল।

    ও কি বৌদি, প্লেটে এত কি খাবার এনেছেন? ও কথা তো ছিল না! বলেছিলেন তো কেবল চায়ের কথা!

    আপনার দাদার হুকুম।

    তার মানে?

    হ্যাঁ। আমাকে বলে গিয়েছে, আজ যেন আপনাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।

    হঠাৎ দাদার অমন নির্দেশ দেবার হেতু?

    তা তো জানি না। বলে গিয়েছে মিষ্টিমুখ করাতে আপনাকে, তাই নিয়ে এলাম।

    কথাগুলো বলে মৃদু হাসে কৃষ্ণা।

    ঠিক আছে, তাহলে আগে দাদা আসুন, শুনি আগে কেন তিনি আমাকে মিষ্টিমুখ করাতে চান—তারপর না হয় দেখা যাবে। বলতে বলতে একটা চায়ের কাপ হাতে তুলে নিল সুদর্শন।

    কৃষ্ণাও একটা কাপ তুলে নিয়েছিল। সে তখনও মৃদু মৃদু হাসছে।

    হঠাৎই যেন একটা সম্ভাবনার কথা চকিতে সুদর্শনের মনের পাতায় উঁকি দিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখটা লাল হয়ে ওঠে।

    কৃষ্ণা তখনও হাসছে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি।

    সুদর্শন মুখটা নামিয়ে নেয়। নিজেকে সুদর্শন কেমন যেন বিব্রত বোধ করে—কেমন একটা অস্বস্তি।

    কৃষ্ণার চোখের দিকে কয়েকটা মুহূর্ত যেন তাকাতে পারে না সুদর্শন।

    তারপর আপনার খবর কি বলুন? কৃষ্ণা স্মিতকণ্ঠে শুধায় একসময়।

    ওই একরকম চলে যাচ্ছ।

    ওই একরকম কেন? ও যে বলছিল—

    কি বলছিলেন দাদা?

    নতুন যেখানে পোস্টিং হয়েছেন, আপনার থানা এলাকাটা বেশ ভালই!

    ভাল না ছাই! চোরাকারবারির আচ্ছা একটা। তিন বছরে সাত-সাতটা খুন!

    আহা, সে-সব তো সব থানাতেই থাকে। নচেৎ আপনাদের প্রয়োজনটাই বা কি? তাছাড়া ওই সঙ্গে কোন আনন্দের উৎসও তো থাকতে পারে।

    কৃষ্ণার কথা এবার আর অস্পষ্ট নয়—এবং কৃষ্ণার আলোচনার গতিটা যে কোন্ দিকে চলেছে সুদর্শনের বুঝতে কষ্ট হয় না।

    তবু সুদর্শন বলে, থানা-অফিসারদের জীবনে, বিশেষ কর আজকালকার দিনে, কোন আনন্দই আর নেই বৌদি। হাজারটা ঝামেলা—প্রবলেম

    আরে ভাই, প্রবলেম না হলে জীবন কি?

    সুদর্শন হঠাৎ কিরীটীর কণ্ঠস্বরে দরজার দিকে ফিরে তাকায়।

    ইতিমধ্যে কখন যে কিরীটী ঘরের কাচের দরজা ঠেলে জাপানী রবারের চপ্পল পায়ে নিঃশব্দে ভেতরে পা দিয়েছে, ও জানতেও পারেনি।

    কিরীটী একটা সোফার ওপর বসতে বসতে বললে, তারপর সুদর্শনবাবু, তোমার সেই তিনির খবর বল?

    সুদর্শনের মুখটা সহসা আবার লাল হয়ে ওঠে।

    কিগো সুদর্শনবাবু?

    কি যে যা-তা বলেন দাদা!

    আহা যা-তা নয় হে, যা-তা নয়। আমি জিজ্ঞাসা করছি, সবচাইতে বেশি ইম্পর্টেন্ট নিউজ যেটা—অর্থাৎ তোমার সাবিত্রী দেবীর খবর কি?

    দাদা, আপনি যদি ওই রকম করেন তো আমি উঠে যাব বলছি!

    আরে বস বস। তুমি জান না কিন্তু তাকে আমি না দেখে তোমার মুখ থেকে শুনেই বুঝতে পেরেছি সাবিত্রী মেয়েটি সত্যিই ভাল। অপাত্রে তুমি মন দাওনি।

    সবটাই আগাগোড়া আপনারা একটা কল্পনা। ক্ষীণকণ্ঠে যেন প্রতিবাদ জানাবার চেষ্টা করে সুদর্শন আবার।

    কল্পনা কেন হবে, চাক্ষুষ পরিচয় হয়েছে।

    মানে? সাবিত্রীকে আপনি দেখলেনই বা কখন—পরিচয়ই বা হল কি করে তার সঙ্গে আপনার?

    হয়েছে হে ভায়া হয়েছে। তারপই কৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে কিরীটী বলে, জান কৃষ্ণা, সত্যিই সাবিত্রী মেয়েটি বড় ভাল। অবিশ্যি তারও লাক আছে বলব, নচেৎ সুদর্শনের নজরে সে পড়ে?

    দাদা, থামবেন আপনি!

    থামতে আমি রাজি আছি ভায়া, কিন্তু সেটা তো আর কিছু তোমার মনের সত্যিকারের কথা নয়।

    আপনি কি ওই সব আজেবাজে কথা বলবার জন্যেই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দাদা?

    আজেবাজ কি হে! এর চাইতে প্রয়োজনীয় কথা—

    সম্পূর্ণ আজেবাজে।

    না হে না। সাবিত্রীর বোন মাধবী নিহত না হলে সাবিত্রী যেমন এত তাড়াতাড়ি তোমার অত কাছে আসত না, তেমনি মাধবী নিহত না হলেও বোধ করি এত তাড়াতাড়ি তোমার দশ নম্বর পল্লীর হত্যারহস্যগুলির মূল সূত্রটিও আমি খুঁজে পেতাম না।

    কিরীটীর কথায় যেন হঠাৎ চমকে ওঠে সুদর্শন।

    কি বলছেন দাদা!

    ঠিকই বলছি ভায়া। হত্যাকারী মাধবীকে হত্যা করেই কেবল যে তার জীবনের সর্বাপেক্ষা বড় ব্লান্ডার করেছে তাই নয়, সেই সঙ্গে ইতিপূর্বে ওই অঞ্চলে যে সব হত্যাব্যাপার সংঘটিত হয়েছে, সেই রহস্যের অন্ধকারেও আলোকসম্পাত করেছে নিজের

    অজ্ঞাতেই।

    কিছু বুঝতে পারছি না দাদা! মাধবীকে হত্যা করে হত্যাকারী ভুল করছে কেন বলছেন?

    আরে ভায়া, এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি নারী-হৃদয়ের রহস্য উদঘাটনে অগ্রসর হয়েছ।

    আঃ দাদা, প্লীজ!

    শোন সুদর্শন, আমার অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তো—যে প্রেম মানুষকে ক্ষেত্রবিশেষে নিঃস্ব বৈরাগী করে তোলে, সেই প্রেমই আবার ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যে কি নিষ্ঠুর, নৃশংস, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে, মাধবীর মৃত্যুই তার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। তবে এও আমি বলব, সেটা হয়ত ঠিক প্রেম নয়—বলতে পার মানুষের আদিম রিপুর দহন অথবা একটা অত্যন্ত রূঢ় যৌন আকর্ষণ।

    যৌন আকর্ষণ।

    কিরীটী সুদর্শনের দিকে তাকিয়ে আবার বললে, হ্যাঁ। যা তোমার মাধবী দেবীর সারাটা দেহ জুড়ে ছিল এবং পুরুষ মাত্রেরই বুকে যা মারাত্মক লোভের আগুন জ্বালিয়ে তুলত সর্বদা!

    আপনি তাহলে বলতে চাইছেন–

    সুদর্শনকে বাধা দিয়ে কিরীটী বলে, সেই মারাত্মক যৌন আকর্ষণের অতৃপ্তিরই শেষ পরিণতি এবং যা স্বাভাবিক ওই সব ক্ষেত্রে অর্থাৎ সেই রিভেঞ্জ নিতে গিয়েই মাধবীর হত্যাকারী নিজেই আমার চোখে কেবল যে এক্সপোজডই হয়ে গিয়েছে তাই নয়, সেই সঙ্গে ইতিপূর্বে যেসব হত্যা-ব্যাপার সংঘটিত হয়েছে, সেই রহস্যর অন্ধকারেও নিজের অজ্ঞাতে আলোকসম্পাত করেছে–যা তোমাকে একটু আগেই আমি বলছিলাম!

    .

    ২৮.

    কিরীটীর শেষের কথায় সুদর্শন যেন উত্তেজনায় ভেঙে পড়ে। বলে, সত্যি-সত্যিই আপনি জানতে পেরেছেন দাদা, মাধবীর হত্যাকারী কে?

    কেবল মাধবীরই বা কেন? গুলজার সিংয়েরও! কিরীটী বলে।

    জানতে পেরেছেন?

    এটা তো স্বীকার করবে ভায়া, ঐ সবগুলো হত্যার সঙ্গেই ঐ তল্লাটের ওয়াগন ভেঙে মালচুরির ব্যাপারটার একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে আর তাতেই আমার মনে। হয়—

    তাহলে কি দাদা আপনি–

    কিরীটী মৃদু হেসে বাধা দিয়ে বলে, সঠিক একবারে জানতে না পারলেও অনুমান করতে কিছুটা পেরেছি বৈকি। এবং এও বুঝতে পেরেছি একই ব্যাক্তি উভয়ের হত্যাকারী–হ্যাঁ, অন্তত সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি।

    কে-কে সে দাদা?

    মনে হয় দু-একদিনের মধ্যেই তুমিও জানতে পারবে।

    তাহলে আপনি কি বলতে চান, গত তিন বছর ধরে যেসব হত্যা ওই অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে, সব একজনেরই কীর্তি?

    তা হয়ত হতেও পারে, নাও হতে পারে।

    তবে?

    তবে এটা ঠিক, হত্যাকারীও ওই ওয়াগন থেকে মাল চুরির ব্যাপারে কোন-না-কোন। ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল।

    অর্থাৎ তাদেরই একজন ছিল?

    নিঃশন্দেহে।

    তবে কি মাধবীও–

    জোর গলায় কিছু বলা যায় না সুদর্শন। কারণ একটা ব্যাপার তুমি সহজ ভাবে বিচার করে দেখলে বুঝতে পারবে, মাধবী ওই অঞ্চলেই বসবাস করত এবং থিয়েটারের ব্যাপারে তাকে প্রায়ই অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরত হত। সেক্ষেত্রে তার পক্ষে আকস্মিক ভাবে কিছু দেখে ফেলা বা জানতে পারাটা এমন কিছু আশ্চর্যের ব্যাপার যেমন ছিল না, তেমনি পরে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তাদের দলে গিয়ে ভিড়ে পড়াটাও কিছু অস্বাভাবিক ছিল না।

    আচ্ছা আপনার কি ধারণা দাদা, ওই ওয়াগন ভেঙে মাল সরাবার ব্যাপারটা এই অঞ্চলেরই কোন এক বিশেষ ব্যক্তির কীর্তি?

    ঐ অঞ্চলেরই অবিশ্যি—তবে—

    তবে?

    ব্রেন নিঃসন্দেহে একজনের। বাকি সব ছিল হয়ত তার হাতে দড়ি-বাঁধা পুতুলনাচের পুতুল মাত্র। কিন্তু আর ভয় নেই ভায়া—আজ এই পর্যন্ত, কাল বাদে পরশু তুমি এস –আশা করছি তোমার দশ নম্বর পল্লীর রহস্যের যবনিকা উত্তোলন করত পারব।, তুমি বরং তোমার বৌদির সঙ্গে গল্প কর।

    কিরীটী বের হয়ে যাবার পরও অনেকক্ষণ সুদর্শন বসে কৃষ্ণার সঙ্গে গল্প করল।

    .

    পরের দিনই সন্ধ্যার দিকে সুদর্শন কিরীটীর একটা জরুরী কল পেয়ে তার গড়িয়াহাটার বাড়িতে এসে হাজির হল।

    কি ব্যাপার দাদা, হঠাৎ জরুরী তলব?

    হ্যাঁ, চল।

    কোথায়?

    তোমারই তল্লাটে। তোমার সঙ্গে আজ রাত্রে একবার ঘুরে দেখব।

    বেশ তো, চলুন। কিন্তু হঠাৎ সেখানে?

    কিরীটী বলে, একটা ফাঁদ পাতা হয়েছে। বাঘ হয়ত সে ফাঁদে পড়লেও পড়তে পারে, যদি অবিশ্যি লাক আমাদের ফেভার করে!

    কৃষ্ণা বলে, এখনি বেরুবে নাকি?

    হ্যাঁ।

    ফিরবে কখন?

    সে কি এখন-এখনই বলা যায়।

    তাহলে তো তার কোন ঠিক নেই?

    তা নেই।

    তবে কিছু খেয়ে যাও।

    না। পেটে কিছু পড়লেই ঘুম পাবে। তুমি বরং এক কাজ কর কৃষ্ণা!

    কি?

    কিছু স্যান্ডউইচ তৈরি করে দাও, আর ফ্লাস্কে কফি তিনজনের মত।

    কৃষ্ণা উঠে গেল।

    সুদর্শন, তুমি বরং কিছু খেয়ে নাও না?

    না দাদা, আমার ক্ষিধে নেই।

    আহা, এখন না থাকলেও একটু পরে পেতেও তো পারে!

    না , ক্ষিধে পাবে না।

    বাইরে ওই সময় জুতোর শব্দ পাওয়া গেল।

    কিরীটী মুহূর্তকাল কান পেতে সিঁড়িতে জুতোর শব্দটা শুনে বলে, সুব্রত এসে গেল বোধ হচ্ছে!

    সত্যিই সুব্রত এসে পরক্ষণে ঘরে ঢুকল।

    সুব্রতর পরিধানে গরম লংস ও গায়ে বাদামী একটা গলাবন্ধ গ্রেট কোট।

    পায়ে ভারী রবার সোলের জুতো।

    সুব্রতর দিকে তাকিয়ে কিরীটী বললে, দ্যাটস গুড! তুই বস্ সুব্রত, আমি চট করে জামা-কাপড়টা পালটে আসি। কথাগুলো বলে কিরীটী উঠে পাশের ঘরে চলে গেল।

    সুব্রত বসতে বসতে বলে, তারপর সুদর্শনবাবু, কতক্ষণ?

    এই কিছুক্ষণ। আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন মনে হচ্ছে!

    হ্যাঁ। কারণ ব্যাপারটার মধ্যে যথেষ্ট রিস্ক আছে। দলে আমরা যতটা ভারী থাকি, ততই শেফ।

    তাই যদি হয় তো দাদা আমাকে আগে বললেই তো পারতেন, থানা থেকে কিছু পুলিশ-ফোর্সের ব্যবস্থা করা যেত।

    কিরীটী ওই সময় পাশের ঘর থেকে সাড়া দেয়, না হে, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়—আমাদের দেশের একটা প্রবাদ আছে, জান না? তাছাড়া রক্তলোভী ব্যাঘ্র চতুর, চট করে ফাদে পা বাড়ায় না!

    .

    ২৯.

    কথাগুলা বলতে বলত কিরীটী এসে ঘরে প্রবেশ করল।

    দেখা গেল কিরীটী খুব দ্রুত তার বেশ পরিবর্তন করেছে ইতিমধ্যেই। মুখে চাপদাড়ি, মাথায় পাগড়ি, পরিধানে কালো গরম সুট। হঠাৎ কোন পাঞ্জাবী বলে ভুল হয়।

    এ কি দাদা, এই বেশে যাবেন নাকি? সুদর্শন শুধায়।

    যস্মিন দেশে যদাচার ভায়া! বলতে বলতে হাতঘড়ির দিকে তাকাল কিরীটী, দশটা বাজতে বাজতে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যেতে পারব বোধ হয়—এখন নটা বাজতে দশ মিনিট বাকি!

    কৃষ্ণা এসে ঘরে ঢুকল। হাতে তার একটা প্যাকেট আর ফ্লাক্স ঝোলানো।

    ওগুলো সুব্রতকে দাও কৃষ্ণা।

    সুব্রত হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে পকেটে ভরে নিল আর ফ্লাস্কটা ঝুলিয়ে নিল কাধে।

    সুব্রত, তোর গাড়ি এনেছিস তো?

    হ্যাঁ।

    চল, তাহলে আর দেরি নয়—বের হয়ে পড়া যাক। চল সুদর্শন।

    সুদর্শন উঠে দাঁড়াল।

    গাড়িতে যেতে যেতে কিরীটী বলে, মৌকা একটা হঠাৎ এসে গেল সুদর্শন। দুপুরেই ট্র্যাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছ থেকে ফোন পেয়ে ভাবলাম, এক ঢিলে যদি দুই পাখি মারা যায় তো মন্দ কি! ভাল কথা সুদর্শন

    বসুন, দাদা?

    তোমার সঙ্গে অস্ত্র আছে তো?

    অস্ত্র!

    হ্যাঁ, তোমার আগ্নেয়াস্ত্রটি?

    না, আনিনি তো সঙ্গে।

    তাহলে এক কাজ কর—

    বলুন?

    তোমাকে বড় রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিচ্ছি। তুমি থানায় গিয়ে অস্ত্রটি লোড করে নিয়ে ঠিক রাত এগারোটা নাগাদ বের হয়ে পড়বে।

    তারপর?

    সোজা চলে যাবে রেলওয়ে ইয়ার্ডে।

    কিন্তু আপনারা?

    আমরা তোমাকে খুঁজে নেব।

    কেমন করে? যা অন্ধকার রাত আজ—

    সঙ্গে তোমার সিগারটে-লাইটারটা থাকবে তো?

    সব সময়ই তো পকেটে থাকে।

    সেটা পর পর তিনবার জ্বেলো। তাহলেও তোমাকে আমরা স্পট করতে পারব।

    বেশ, তাই হবে।

    সুব্রত আর কিরীটী পাশাপাশি সীটে বসেছিল, সুদর্শন সামনের সীটে ড্রাইভারের পাশে বসেছিল।

    মিশির!

    ড্রাইভার কিরীটীর ডাকে সাড়া দেয়, জী সাব!

    তুমি আমাদের নামিয়ে দিয়ে সোজা থানায় চলে যাবে।

    থানায়?

    হ্যাঁ। যেখানে আমরা নামব তারই বাঁ দিক দিয়ে যে পুবমুখো রাস্তাটা চলে গেছে, সেটা ধরে সোজা গেলেই থানায় পৌঁছে যাবে। থানা সেখান থেকে খুব বেশি দূর নয়।

    বহুৎ আচ্ছা সাব।

    হঠাৎ ওই সময় সুব্রত প্রশ্ন করে, গুলজার সিংয়ের ব্যাপারটা কিছু জানতে পারলি কিরীটী?

    হ্যাঁ, তোর ধারণাটাই ঠিক। ফ্রি স্কুল স্ত্রীটে ওর একটা ইলেকট্রিক্যাল গুডস, রেডিও, রেডিওগ্রাম, ফ্রিজ প্রভৃতির ঝকঝকে সাজানো-গোছানো দোকান আছে-ইস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানি। আর খুব সম্ভবত ঐ দোকানটি ও ব্যবসাই ছিল গুলজার সিংয়ের কামোফ্লাজ।

    দোকানে কর্মচারী নেই?

    আছে জনা-পাঁচেক। দুটি অল্পবয়সী ছোকরা পাঞ্জাবী, দুটি বাঙালী আর একটি অ্যাংলো মেয়ে-বয়স চব্বিশ-পঁচিশ। সেই অ্যাংলো মেয়েটিকে আমি আগে থাকতেই চিনতাম, মিসেস শেয়েল।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। একসময় ফ্রিজার কর্পোরেশনে ও সেলস-গার্ল ছিল। আমাকে দেখেই চিনতে পারল। ইশারায় তাকে বাইরে ডেকে সোজা গিয়ে উঠলাম একটা রেস্তোরাঁয়। তার কাছে সিংয়ের অনেক কিছু জানতে পারলাম।

    কি রকম?

    বম্বের ফিল্ম মার্কেটে ও একজন ফিনানসিয়ার। হুঁণ্ডিতে টাকা ধার দেয়। বুঝলাম সেটা দশ-পাঁচ হাজার টাকার ব্যাপার নিশ্চয়ই নয়—হিন্দিফ্লিম মানেই লাখ নিয়ে কারবার! কাজেই বুঝতে কষ্ট হল না ইস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানি থেকে ওই টাকা আসে না–আসতে পারে না। ওই টাকা অন্য খাতে আসে তার পকেটে।

    তাহলে তো দেখতে পাচ্ছি, লোকটাকে হত্যা করবার কারণ ছিল! সুব্রত বললে।

    তা ছিল বৈকি। বিনা কারণে কেউ কি কাউকে হত্যা করে? কিরীটী বললে।

    সুদর্শন ওদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারে, ও যখন থানার মধ্যে বসে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছিল, তখন কিরীটী অনেকটা এগিয়ে গেছে।

    কিরীটী ওই সময় বলে, তবে এটাও ঠিক সুব্রত, গুলজার সিং নিহত না হলে হয়ত এত তাড়াতাড়ি ঐ গোলকধাঁধার সহজ রাস্তাটা আমি খুঁজে পেতাম না।

    কিরীটী পকেট থেকে চুরুট বের করে তাতে অগ্নিসংযোগ করতে করতে বলে আবার, কিন্তু এখনও একটা ব্যাপার আমার কাছে অস্পষ্ট রয়ে গেছে, গুলজার সিংয়ের মত ধূর্ত লোক অমন করে ফাদে পা দিয়েছিল কি করে? সে যে মাধবীর ব্যাপারটা, জানতে পারেনি তাও তো মনে হয় না!

    সুদর্শনই ওই সময় প্রশ্ন করে, মাধবী? মাধবীর সঙ্গে গুলজার সিংয়ের কোন সম্পর্ক ছিল নাকি?

    নিঃসন্দেহে। কিন্তু কতখানি ঘনিষ্ঠতা ছিল জানি না।

    কি করে বুঝলেন?

    পুলিশ গুলজারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার ফ্ল্যাট সার্চ করতে গিয়ে তার শোবার ঘরে ড্রয়ারের মধ্যে মাধবীর একটা ফটো পেয়েছে।

    সে কি! সুদর্শন বলে ওঠে।

    শুনে খুব শকড় হলে সুদর্শন, তাই না? জান না চলতি প্রবাদটা। নারী চরিত্র দেবতারই অগম্য-তা মানুষ কি কথা!

    আমার কেমন যেন সব ঘুলিয়ে যাচ্ছে দাদা! সুদর্শন বলে।

    যাবে ভায়া—আরও যাবে। যখন মাধবীর হত্যাকারীকে তুমি চিনতে পারবে।

    মাধবীর হত্যাকারী কি ওই গুলজার সিংই নাকি?

    না। মৃদু হেসে কিরীটী বলে।

    তবে?

    তবে যদি অনুমানটা আমার মিথ্যা না হয় তো গুলজার সিং পূর্বাহ্রেই মাধবীর মৃত্যুর ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরেছিল। অর্থাৎ সে জানতে পেরেছিল মাধবীর হত্যাকারী কে আর সেই কারণেই সে হত্যাকারীর সঙ্গে একটা মোকাবিলা করবার জন্য সে-রাত্রে ওইখানে এসেছিল এবং কথাটা সম্পূর্ণ না জেনেই সে হত্যাকারী যে আসতে পারে অনুমান করে তার জন্য পূর্বাহ্নেই ফাঁদ পেতে রেখেছিল।

    কিরীটী বলতে বলতে একবার হাতের চুরুটের ছাইটা গাড়ির মধ্যস্থিত অ্যাসট্রেতে ঝেড়ে ফেলে তার অর্ধসমাপ্ত কথার মধ্যে ফিরে যায়।

    বলে, অবিশ্যি গুলজার সিংয়ের প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যাবার আক্রোশ ও সেই সঙ্গে তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও তাকে মৃত্যু-ফঁদের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল সে-রাত্রে। এবং যার ফলে দুটো ব্যাপার হল।

    দুটো ব্যাপার? সুদর্শন প্রশ্ন করে।

    হ্যাঁ। প্রথমত, গুলজার সিং দিল প্রাণ, আর দ্বিতীয়ত, হত্যাকারী আবার ভুল করল আর একটা-এবং সেটাই হল তার সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ভুল।

    আবার কি ভুল করল?

    কতকটা যেন ছেলেমানুষের মতই সুদর্শন প্রশ্ন করে। সে যেন গল্প শুনছে আর কিরীটী যেন গল্প বলে চলেছে।

    প্ৰথম ভুল করেছিল সে মাধবীকে হত্যা করে, দ্বিতীয় ভুল করল সে গুলজার সিংকে হত্যা করে।

    কেন, ভুল করল কেন?

    ভুল করল এই কারণে যে গুলজার সিং যে মাধবীর অন্যতম প্রেমিক বা প্রণয়প্রার্থী, এবং যে ব্যাপারটা কারও জানবার কথা নয়, সেটাই প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্ধ আক্রোশে হত্যাকারী আমার চোখে স্পষ্ট করে দিল—and I also got my clue! অর্থাৎ গুলজার সিং নিহত না হলে আমরা বোধ হয় এত তাড়াতাড়ি রহস্যের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারতাম না। আরও বেশ কিছুদিন অন্ধকারেই হাতড়ে বেড়াতে হত। কিন্তু আর নয়, আমরা বোধ হয় এসে গেলাম। মিশির?

    জী সাব!

    আউর থোড়া যাকে ডাইনা তরফ গাড়ি রোখো, সুদর্শন সাব উতার যায়গা। সুদর্শন, তোমাকে যা বলেছি মনে থাকে যেন। রাত এগারোটার আগে বেরোবে না, তাড়াহুড়ো করবে না।

    সুদর্শন মৃদুকণ্ঠে বলে, না দাদা, যেমন বলেছেন তাই করব।

    .

    ৩০.

    সুদর্শনকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি আরও কিছুটা এগোতেই কিরীটী মিশিরকে বলল, এইখানেই গাড়ি রাখ মিশির।

    মিশির গাড়ি থামায়।

    কিরীটী ও সুব্রত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। মিশির ওদের নামিয়ে দিয়ে তার প্রতি কিরীটীর পূর্ব নির্দেশমত থানার দিকেই গাড়ি চালায়। গাড়িটা ক্রমে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।

    কিরীটী হাতঘড়ির দিকে তাকাল। রাত দশটা বাজতে আর মিনিট তিনেক আছে।

    রাস্তায় মানুষের, বাস, মোটর, সাইকেল ও সাইকেল-রিকশার চলাচল তখনও বেশ আছে—যদিও শীতের রাত। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেকটা কম। ভিড় অনেকটা পাতলা হয়ে এসেছে। ক্রমশ পাতলা হচ্ছে আরও। তা প্রায় দোকানপাঠ বন্ধ, বললেই চলে।

    কিছুটা এগিয়ে এসে বাজারের পরে যে রাস্তাটা পূর্বদিকে চলে গেছে, কিরীটী ও সুব্রত সেই রাস্তা ধরেই চলতে থাকে।

    আগে একদিন কিরীটী ওই রাস্তাটা ধরে হেঁটে যতটা সম্ভব দেখে গিয়েছিল, কাজেই রাস্তাটা তার অপরিচিত নয়। সে স্বচ্ছন্দ গতিতেই এগিয়ে চলছিল।

    প্রায় আধমাইলটাক হাঁটার পর বাঁয়ে মোড় নিল কিরীটী। একটা পুকুরের ধার দিয়ে সরু পায়ে-চলা আর একটা রাস্তা, এবারে সেই রাস্তাটাই ধরল কিরীটী। সুব্রত নিঃশব্দে তাকে অনুসরণ করে।

    এদিকটায় তেমন আলোর ব্যবস্থা না থাকায় বেশ অন্ধকার। কিরীটী পকেট থেকে টর্চটা বের করে সাবধানে সেই টর্চের আলোয় পথ দেখে দেখে অগ্রসর হয়।

    সাবধানে আয় সুব্রত-বেকায়দায় এদিকে-ওদিকে পা পড়লে কিন্তু এই শীতের রাতে সোজা হয় পানাপুকুরের জলে, না হয় কাঁচা নর্দমার পঙ্করাশির মধ্যে প্রপাত হবি। কারণ একদিকে পানাপুকুর,অন্যদিকে কাচা ড্রেন। কিরীটী চাপা গলায় বলল।

    ড্রেনের দুর্গন্ধ ও কচুরিপানার একটা আঁশটে গন্ধে সুব্রত আগেই বুঝতে পেরেছিল, আশেপাশে কোথাও কাচা ড্রেন আছে। সেটা যে একেবারে পাশেই জানতে পেরে সুব্রত আরও সাবধানে হাঁটতে লাগল আবছা অন্ধকারে।

    পুকুরটা শেষ হল একসময়। তারপর কিছু বস্তি-বাড়ি। রাস্তা সেখানেও রীতিমত সঙ্কীর্ণ। আলোর কোন ব্যবস্থাই নেই। প্রায় মিনিট কুড়ি হাঁটবার পর একটা ভাঙা প্রাচীরের ভেতর দিয়ে ওরা পড়ল এসে রেলওয়ে ইয়ার্ডে।

    অন্ধকার এখন আর অত মনে হয় না, কারণ ইয়ার্ডের আলোয় খুব স্পষ্ট না হলেও এরা দেখতে পাচ্ছে এখন চারদিক আবছা-আবছা।

    এদিকে-ওদিকে সিগন্যালের লাল ও সবুজ আলো আকাশের অন্ধকারে পড়ে।

    অসংখ্য ইস্পাতের লাইন এঁকেবেঁকে সাপের মত চলে গেছে।

    ইঞ্জিনের শব্দ। একটা বোধ হয় মেল ট্রেন চলে গেল পশ্চিমগামী।

    এখানে-ওখানে সারা ইয়ার্ডে ছড়িয়ে আবছা আলো-অন্ধকারে মালগাড়ি ও প্যাসেঞ্জার বগিগুলো দাঁড়িয়ে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.