Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প397 Mins Read0

    ৩১-৩৫. সন্তর্পণে কিরীটী এগিয়ে চলে

    ৩১.

    সন্তর্পণে কিরীটী এগিয়ে চলে।

    ওরা স্টেশনের দিকেই এগিয়ে চলে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা মালগাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়।

    আর ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ ওদের কানে এল একটা যান্ত্রিক শব্দ। লোহা জাতীয় কোন কিছুর মেটালিক শব্দ বলে যেন সেটা মনে হল।

    কিরীটী হাতের টর্চটা আগেই নিভিয়ে দিয়েছিল। অন্ধকারে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে কিরীটী তীক্ষ্ণ সন্ধানী দৃষ্টিতে। কোথা থেকে ঐ শব্দটা আসছে জানবার বুঝবার চেষ্টা করে। শব্দটা এক-একবার হচ্ছিল। আবার একটুক্ষণের জন্যে থামছিল।

    ক্রমশ বুঝতে পারে কিরীটী শব্দটা মালগাড়ির অন্য দিক থেকে আসছে।

    শব্দটা অনুসরণ করে এবারে এগোয় কিরীটী। কয়েক পা সন্তর্পণে এগোতেই ঝাপসা ঝাপসা অন্ধকারে কিরীটীর নজরে পড়ে, দুজন লোক কি একটা ভারী মত বস্তু অন্ধকারে মাথায় করে বয়ে রেল-লাইন দিয়ে প্রাচীরের দিকে এগিয়ে চলেছে সতর্ক ভাবে।

    তারপরই ওদের কানে এল সতর্ক একটা গলার স্বর, কটা হল রে?

    দশটা। অন্য কে একজন জবাব দিল।

    সবই মনে হচ্ছে কাপড়ের পেটি। প্রথম জনের গলার স্বর আবার শোনা গেল।

    আরও একজনের—অর্থাৎ এবার তৃতীয় ব্যক্তির গলার স্বর শোনা গেল, আসল মালটা বোধ হয় এই কাপড়ের পেটির মধ্যেই আছে!

    ঠিক গুনেছিস তো? এটাই ষোল নম্বর ওয়াগন তো?

    হ্যাঁ, হ্যাঁ। না গুনে ওয়াগন ভেঙেছি নাকি? দ্বিতীয় ব্যক্তি জবাব দেয়।

    তৃতীয় ব্যক্তি বলে, এবারে শালা ওই বুড়ো শকুনিটা যদি মোটা মত লাভের অঙ্ক থেকে না দেয় তো আমারই একদিন কি ওরই একদিন।

    অন্য একজন বলে, শালা একের নম্বরের কঞ্জুষ, স্বার্থপর। কেবল নিজের কোলের দিকেই ঝোল টানে।

    ও শালার মরণের পাখনা গজিয়েছে। ওকেও দেখ না গুলজার সিংয়ের পথেই পা বাড়াতে হবে একদিন।…কটা মাল নামালি রে? দ্বিতীয়ের গলা।

    দশটা পেটি। তৃতীয় বক্তা বলে।

    দূরে ঐ সময় সুব্রতর নজরে পড়ে লাইটারের আলো-তিনবার জ্বলল, আবার নিভে গেল।

    সুব্রত! চাপা গলায় ডাকে কিরীটী, চট করে যা—সুদর্শনকে এখানে ডেকে নিয়ে আয়।

    সুব্রত শিকারী বিড়ালের মতই সতর্ক ও ক্ষিপ্র গতিতে যেন কিরীটীর নির্দেশমত সুদর্শনের দিকে চলে গেল।

    সুব্রত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তির চাপা গলার স্বর কিরীটী আবার শুনতে পায়, ওহে, ভাল মনে হচ্ছে না।

    তৃতীয় ব্যক্তি শুধোয়, কেন? কি হল আবার?

    দ্বিতীয় ব্যক্তির গলার স্বর শোনা যায়, দূরে একটা কীসের আলো যেন তিনবার জ্বলে নিভে গেল!

    প্রথম ব্যক্তির গলার স্বর আবার শোনা গেল, তখুনি বলেছিলাম, গুলজার সিংয়ের মরার পর এত তাড়াতাড়ি আবার এদিকে না আসতে। শুনলে না তো আমার কথা?

    চতুর্থ ব্যক্তির গলার স্বর আবার শোনা গেল, থাম থাম, আর উপদেশ ছড়াসনি!

    সে তুমি যাই বল—আমার কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ ভাল মনে হচ্ছে না। প্রথম ব্যক্তির গলার স্বর আবার শোনা গেল।

    পঞ্চম ব্যক্তির গলার স্বর, আরে যানে দো ইয়ার—এই ঠাণ্ডিকো রাতমে কৌন তুমারা পিছে পড়েগী! চল, জলদি মাল উঠাও!

    প্রথম ব্যক্তির গলার স্বর, আর দুটো বাকি আছে।

    সুদর্শন ততক্ষণে ওইখানে পৌঁছে গেছে।

    প্রথম ব্যক্তির গলার স্বর আবার শোনা যায়। কি ব্যাপার, ওরা যে গাড়িতে মাল তুলে দিতে গেল তো গেলই! ফেরার আর নাম নেই!

    স্পষ্ট গলার স্বর।

    মনে হয় যেন সুদর্শনও গলার স্বরটা শুনতে পেয়েছিল। পরিচিত গলার স্বরটা শুনে সে যেন হঠাৎ চমকে ওঠে।

    হয়ত তার মুখ দিয়ে নামটা বের হয়েই আসত, কিন্তু তার আগেই কিরীটী ওর মুখে হাত চাপা দেয় এবং হিহি করে বলে, উঁহু, উত্তেজিত হয়ো না ভায়া।

    এ সময় কিরীটীর নজরে পড়ল, বোধ হয় ওদের মধ্যে যে লোক দুটো মাল নিয়ে গিয়েছিল—তারা লাইন টপকে টপকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ঐদিকেই ছুটে আসছে।

    লোক দুটো ওয়াগনগুলোর ওদিকে চলে গেল। দ্রুত পায়ের শব্দ।

    কি রে, কি ব্যাপার? প্রথম ব্যক্তি শুধোয়।

    পুলিস!

    পুলিস? কোথায়?

    লরি ঘিরে ফেলেছে। ভোলা আর হোঁৎকা সটকেছে—

    শালা কুত্তার বাচ্চা। প্রথম ব্যক্তি বলে।

    দূর থেকে একটা মালগাড়ি আসছে মনে হয়—তারই শব্দ। শব্দ তুলে মালগাড়িটা ওদের পাশ দিয়ে এগিয়ে চলে।

    সুদর্শন, রেডি-চল ওদিকে! কিরীটী বললে এবারে।

    কিন্তু দুটো ওয়াগনের মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে অন্যাদিকে আসবার পর দেখা গেল কেউ সেখানে নেই। গোটা দুই পেটি কেবল পড়ে আছে। রেললাইনের ওপরে আর একটা ওয়াগনের দরজার লক ভাঙা, কপাট খোলা।

    রেললাইন ধরে দুটো লোক ছুটছিল, হঠাৎ কানে এল পর পর কটা ফায়ারিংয়ের আওয়াজ। ফারারিংয়ের আওয়াজ ইয়ার্ডের মধ্যে ছড়িয়ে গেল।

    কিরীটী হুইসেল বাজাল একটা।

    দেখতে দেখতে কয়েকজন আর্মড পুলিস ঘটনাস্থলে খোলা ওয়াগনটার সামনে এসে পড়ে ছুটতে ছুটতে।

    ইন্সপেক্টার কল্যাণ মিত্র বলেন, কি ব্যাপার? ওয়াগন ভেঙেছে দেখছি!

    কিরীটী বললে, হ্যাঁ, মিস্টার মিত্র-ইউ আর লেট।

    আমরা কাছেই ছিলাম—শেষ ওয়াগনটার ধারে!

    দেখতে পেলেন না তবু? কিরীটী প্রশ্ন করে।

    না।

    অন্তত ঘণ্টাখানেক হবে ওরা এসে ওয়াগন ভেঙেছে। কিরীটী বললে।

    আমি ভেবেছিলাম, হয়ত রাত আরও বেশি হলে–

    ঠিক আছে, এখানে দুজন আমর্ড পুলিশ পাহারা রেখে আপনারা থানায় যান, আমরা থানায় আসছি একটু পরে।

    কিরীটী কথাগুলো কল্যাণ মিত্রকে বলে সুদর্শনের দিকে তাকাল, চল সুদর্শন, তোমার দশ নম্বর পল্লীতে যাওয়া যাক।

    কিন্তু সেখানে কি আর এখন তাকে পাওয়া যাবে দাদা?

    চলই না হে, একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতিটা কি!

    ইয়ার্ড থেকে মাঠের ভেতর দিয়ে দশ নম্বর পল্লীতে পৌঁছতে মিনিট কুড়ি লাগে হেঁটে।

    পল্লীর মধ্যে পৌঁছে সুদর্শন নিজের মনেই এগোচ্ছিল, কিন্তু কিরীটী তাকে হঠাৎ বাধা দিল, ওদিকে কোথায় চলেচ ভায়া?

    ওকে অ্যারেস্ট করবেন না?

    আরে ব্যস্ত কি—আগে অন্য একটা জায়গা একটিবার ঘুরে আসি চল!

    কোথায় যাবেন?

    তোমার সাবিত্রী দেবীর কুঞ্জে—

    কোথায়?

    বললাম তো। তোমার সাবিত্রী দেবীর কুঞ্জের কাছে। চল।

    সুদর্শন যেন ব্যাপারটা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেনি, তাই কতকটা যেন হতভম্ব হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে অনড় অবস্থায়।

    কি হল, দাঁড়িয়ে রইলে কেন—চল!

    কিন্তু দাদা, সাবিত্রী

    আহা, চলই না হে! তোমার সেই একচক্ষু হরিণের মত নিবুদ্ধিতা না করে ফিরে হয় একবার তাকালেই অন্য দিকে! চল চল, hurry up!

    সুদর্শন অতঃপর যেন কতকটা অনিচ্ছাসত্ত্বেই কিরীটীর নির্দেশমত সাবিত্রীদের গৃহের দিকে অগ্রসর হয়।

    সুব্রত তখন মিটিমিটি হাসছিল।

    ওরা বুঝতে পারেনি যে ব্যাপারটা তখন তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

    .

    ৩২.

    সাবিত্রীদের গৃহের কাছাকাছি পৌঁছতেই একটা বেহালার সুর ওদের কানে এল।

    কে যেন বেহালায় দরবারী কানাড়া আলাপ করছে।

    বাঃ ভারি মিষ্টি হাত! কিরীটী বলে, কে বেহালায় দরবারী কানাড়া বাজাচ্ছে হে সুদর্শন?

    জানি না তো!

    তোমার সাবিত্রী দেবী নয় তো?

    জানি না।

    বল কি! সে বেহালা বাজাতে পারে কিনা সে খবরটি এখনও অজ্ঞাত তোমার! তবে কি ছাই ভালবাস!

    আঃ, দাদা—

    যাই বল ভায়া, চমৎকার দরবারী কানাড়া আলাপ জমিয়েছে। কিরীটী আবার বললে।

    হঠাৎ ওই সময় ওদের নজরে পড়ল সামনেরই একটা বাড়ির সামনের ঘরেরই ঈষৎ খোলা জানালা-পথে মৃদু আলোর আভাস আসছে এবং মনে হল বেহালার সুর সেই আলোকিত কক্ষ হতেই ভেসে আসছে।

    কিরীটী দাঁড়াল, সুদর্শন।

    দাদা?

    ওইটিই তোমার মিত্র মশাই—অর্থাৎ আমাদের সুবোধ মিত্র মশাইয়ের বাড়ি না?

    সুদর্শন মৃদু গলায় বলে, হ্যাঁ।

    মিত্র মশাই-ই মনে হচ্ছে আমাদের এই মধ্যরাত্রের সুরকার!

    হ্যাঁ। ওঁর ঘরে বেহালা দেখেছিলাম মনে পড়েছে, প্রথম দিন আলাপের সময়।

    অমন ভাল সুরকার একজন, অথচ তুমি তাকে অবহেলাই করেছ! প্রথম দিন সামান্য আলাপের পর আর তার সঙ্গে আলাপ জমাবারই চেষ্টা করনি-কে-কে ওখানে?

    আজ্ঞে স্যার আমি!

    অন্ধকারে কিরীটীর প্রশ্নে দুটো বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান থেকে কে একজন আত্মগোপনকারী বের হয়ে এল আলো-আঁধারি থেকে নিঃশব্দে।

    সুদর্শন চমকে ওঠে আগন্তুককে চিনতে পেরে যেন।

    মানুষটি আর কেউ নয়, ব্যায়ামপুষ্ট তাগড়াই চেহারার অন্নপূর্ণা জুট মিলের লেবারার হীরু সাহা–যাকে ঘিরে প্রথম দর্শন থেকেই সুদর্শন একটু বেশি মাত্রায় সন্দিগ্ধ হয়েছিল।

    কিন্তু অতঃপর সব যেন কেমন ঘুলিয়ে যাচ্ছে সুদর্শনের। সুদর্শন যেন বোবা।

    .

    হীরু সাহা তখন কিরীটীকে বলছে চাপা গলায়, দেখলেন স্যার, আমি আপনাকে বলিনি!

    হ্যাঁ, এখন দেখছি তুমি ঠিকই বলেছিলে হীরুবাবু। তা কোন্ পথে ফিরল?

    এই পথেই নাকি? কিরীটী শুধায়।

    বলতে পারি না স্যার। ফিরতে আমি দেখিনি।

    ওই বাড়িতে পিছন দিয়ে ঢোকাবার আর কোন রাস্তা আছে?

    তা একটা আছে স্যার।

    আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখানে একটু অপেক্ষা কর হীরুবাবু। চল হে সুদর্শন।

    কোথায়? সাবিত্রীদের বাড়িতে এই রাত্রে হানা দেবেন নাকি এখন?

    সেটা কি ভাল দেখাবে হে! তার চাইতে চল দেখি, মিত্র মশাইকে দিয়ে যদি সাবিত্রী দেবীকে তার ওখানেই ডেকে আনানো যায় একবার! এস।

    সুদর্শন এগিয়ে গেল কিরীটীর সঙ্গে সঙ্গে যেন একটু অনিচ্ছার সঙ্গেই।

    সুবোধ মিত্রের বাড়ির সামনে এসে ওরা তিনজনে দাঁড়াল।

    সদর দরজা বন্ধ। কিরীটী এগিয়ে গিয়ে বন্ধ দরজার গায়ে ধাক্কা দিল। কিন্তু দু-দুবার ধাক্কা দেওয়া সত্ত্বেও দরজা খুলল না। বেহালার বাজনাও থামল না।

    সুদর্শন এবারে কিরীটীর ইঙ্গিতে বেশ জেরেই দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকে, সুবোধবাবু-–ও মশাই সুবোধবাবু, দরজাটা খুলুন!

    এবারে বাজনা থেমে গেল। একটু পরে দরজাও খুলে গেল।

    আলোকিত কক্ষের খোলা-দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে সুবোধ মিত্র। পরনে একটা লুঙ্গি, গায়ে একটা শাল জড়ানো।

    কে? আমি সুদর্শন মল্লিক, থানার ও. সি.-

    আসুন, আসুন। কি ব্যাপার মল্লিক মশাই—এত রাত্রে?

    একটু বিশেষ প্রয়োজন আছে। চলুন ভেতরে।

    সুবোধ মিত্র দরজা ছেড়ে দাঁড়াল, সকলে ভেতরে প্রবেশ করল। প্রথমে সুদর্শন, তার পশ্চাতে কিরীটী ও সুব্রত।

    সুদর্শনের সঙ্গে আরও দুজন অপরিচিত ব্যক্তিকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে সুবোধ মিত্র হঠাৎ যেন কেমন একটু বিস্মিতই হয়েছে, তার মুখের চেহারা দেখে মনে হল।

    সুদর্শনবাবু, এঁরা? সুবোধ মিত্র প্রশ্ন করে।

    সুদর্শন বলে, এঁকে দেখেননি হয়ত, তবে নাম নিশ্চয়ই এঁর শুনেছেন সুবোধবাবু! কিরীটী রায়—আর উনি সুব্রত রায়!

    নমস্কার। সুবোধ মিত্র হাত তুলে নমস্কার জানায়।

    কিরীটীও প্রতিনমস্কার জানায়।

    কিরীটী হঠাৎ প্রশ্ন করে সুবোধ মিত্রের মুখের দিকে তাকিয়ে, বাইরে তো বেশ ঠাণ্ডা, আপনার কপালে দেখছি ঘাম! এত শীতেও ঘামছেন আপনি?

    সুবোধ মিত্র তাড়াতাড়ি কম্পিত হাতে কপালের ঘামটা মুছে ফেলবার চেষ্টা করতে করতে বলে, ওই মানে-আমার বরাবরই একটু গরমটা বেশি!

    তাই দেখছি। কিরীটী কথাটা বলে মৃদু হাসল।

    .

    ৩৩.

    কিরীটীর দুটি চোখের সন্ধানী দৃষ্টি কিন্তু কথার মধ্যেও ঘরের চতুর্দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

    আবার সুবোধ মিত্রের খালিপায়ের দিকে তাকিয়ে কিরীটী প্রশ্ন করে, আপনি বুঝি। বাড়িতে খালিপায়েই থাকেন সাধারণত। কোন চটি বা চপ্পল দেখছি না ঘরে?

    চপ্পল-মানে, ওই বাইরের বারান্দাতে আছে।

    সুব্রত আর সুদর্শন দুজনেই চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। কিরীটীই আবার প্রশ্ন করে, কিন্তু হাতে আপনার অত তেল-ময়লা লেগেছে কেন সুবোধবাবু?

    কিরীটীর কথায় সকলেরই নজরে পড়ে, সুবোধ মিত্রের হাত দুটো—দুই হাতের পাতা ও আঙুলেই তেল-কালি ময়লা লেগে আছে।

    সুবোধ মিত্র যেন হঠাৎ কেমন বোবা হয়ে গেছে।

    ফ্যালফ্যাল করে প্রশ্নকারী কিরীটীর মুখের দিকে একবার তাকায়, তারপরই নিজের কালি-তেল-ময়লা-মাখা হাত দুটোর দিকে তাকায়।

    এত রাত্র হাতে আপনার তেল-কালি-ময়লা লাগল কি করে সুবোধবাবু?

    ঐ মানে—ফিরে এসে একটা মেসিন সারাচ্ছিলাম।

    মেসিন, কীসের মেসিন?

    ঐ–-

    কিরীটীর স্বর হঠাৎ গম্ভীর শোনাল এরপরে যখন সে বলল, তাড়াতাড়িতে হাত দুটোও সাফ করবার সময় পাননি মনে হচ্ছে!

    না না, তা নয়—

    তবে?

    কিরীটীর দুটো শ্যেন চক্ষুর দৃষ্টি সুবোধ মিত্রের ওপরে স্থির নিবদ্ধ—মিত্র মশাই, একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন যে!

    কি বলছেন?

    আমি যে কি বলছি, শান্ত কঠিন গলায় কিরীটী বলে, আপনার না বোঝাবার কথা নয়। বুঝতে পারছেন না—হাতে ঝুল-কালি, কপালে ঘাম। বেহালার হাতটি আপনার সত্যিই মিষ্টি মিত্র মশাই, কিন্তু সুরসৃষ্টি করে নিজেকে আপনি আড়াল করতে পারেন। নি, কারণ সুরের মধ্যে তাল কেটে যাচ্ছিল মধ্যে মধ্যে!

    কি বলছেন, তাল কেটে যাচ্ছিল?

    হ্যাঁ, বুঝতে পারেননি। কিন্তু কেন বলুন তো? অবিশ্যি অশান্ত মনে, উদ্বেগে সুরসৃষ্টি হয় না, তালও কাটতে পারে!

    আজ্ঞে—

    তা হলেও আই মাস্ট প্রেজ ইয়োর নার্ভ সুবোধবাবু!

    সুদর্শনবাবু, এসবের মানে কি—আমি জানতে পারি কি? রুক্ষ গলায় সুবোধ মিত্র প্রশ্ন করে, কেন এভাবে আপনারা মাঝরাতে আমার বাড়িতে ঢুকে–

    জবাব দিল কিরীটী। তীক্ষ্ণ শাণিত কণ্ঠস্বরে বললে, শুনুন মিত্র মশাই, অকারণে উনি আসেননি এই মধ্যরাত্রে এখানে-আপনার নামে গুরুতর অভিযোগ আছে!!

    অভিযোগ? হোয়াট ড়ু ইউ মীন? কীসের অভিযোগ?

    গত তিন বছর ধরে এ তল্লাটে ওয়াগন ভেঙে যে সব মালপত্র চুরি যাচ্ছে ইয়ার্ড থেকে—সেই দলেরই রিং-লিডার হিসাবে আপনাকে উনি গ্রেপ্তার করতে এসেছেন।

    কি পাগলের মত আবোল-তাবোল বকছেন মশাই? ওয়াগন ভেঙে মাল চুরি করেছি আমি?

    সুবোধবাবু! কিরীটী আবার বলে, আপনি যদি জানতেন কার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি প্রতিবাদ জানাবার চেষ্টা করছেন গলা চড়িয়ে, তার সত্য পরিচয়টা?

    থামুন মশাই, থামুন!

    সুদর্শন ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল। ব্যাপারটা তখনও যেন তার স্বপ্নেরও অতীত।

    কিরীটী বলতে থাকে, শুধু তাই নয় মিত্র মশাই, ওইটি ছাড়াও আর একটি গুরুতর অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে আছে, মাধবীকে হত্যা করেছেন আপনিই!

    থামবেন মশাই? এটা আমার বাড়ি-পাগলা গারদ নয়।

    কিন্তু সুবাধ মিত্রের কথাটা শেষ হল না, সহসা খোলা দরজার ওদিক থেকে এক নারী-কণ্ঠস্বর ভেসে এল, হা হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই ধরেছেন! ও-ই দিদিকে খুন করেছে।

    কে? এ কি, সাবিত্রী।

    বিস্মিত হতভম্ব সুদর্শনের কণ্ঠ থেকে একটা অস্ফুট শব্দের মত কথাগুলো স্বতোচ্চারিত হল যেন।

    সাবিত্রী তখন ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। উত্তেজনায় সে হাঁপাচ্ছে।

    সাবিত্রী! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিৎকার করে ওঠে সুবোধ মিত্র।

    করুন—করুন সুদর্শনবাবু, ওকে গ্রেপ্তার করুন। সাবিত্রী বলে, ও-ই আমার দিদিকে হত্যা করেছে। একসঙ্গে দুজনে সে-রাত্রে দিদির শো ভাঙবার পর ফিরেছেন জানি, আমি সব জানি—শয়তান, খুনী! তোমার-তোমার ফাঁসি হোক, এই আমি চাই।

    তবে রে হারামজাদী।

    সহসা বাঘের মত সুবোধ মিত্র সাবিত্রীর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তার গলাটা দুহাতে। চেপে ধরে।-খুন করব তোকে আজ।

    সুব্রত প্রথমটায় ঘটনার আকস্মিকতায় একটু হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণেই সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সুবোধ মিত্রের পর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটা জুজুৎসুর প্যাচ দিয়ে তাকে ফেলে দেয়।

    সাবিত্রী পড়ে যায় ওই সঙ্গে।

    কিন্তু সুবোধ মিত্র তখন যেন মরীয়া হয়ে উঠেছে এবং সুব্রত বুঝতে পারে সুবোধ মিত্র লোকটা গায়ে যথেষ্ট শক্তি ধরে। সুব্রত তাকে জাপটে ধরেছিল, কিন্তু সুবোধ মিত্র সুব্রতর কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয় এবং খোঁচা খাওয়া হিংস্র বাঘের মত উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে গিয়ে ঘরের কোণে যে বড় ফ্লাওয়ার ভাসে একগোছা রজনীগন্ধা ছিল, সেটার মধ্যে চকিতে হাত ঢুকিয়ে ছোট একটা অটোমেটিক পিস্তল বের করে সাবিত্রীকে লক্ষ্য করে পর পর দুটো গুলি চালায়।

    একটা গুলি মিস করে, কিন্তু অন্যটা সাবিত্রীর ডানহাতে বিদ্ধ হয়।

    চিৎকার করে ওঠে সাবিত্রী।

    ইতিমধ্যে সুদর্শনও তার পকেট থেকে পিস্তল বের করেছিল, কিন্তু মাঝখানে সাবিত্রী থাকায় সে গুলি চালাতে পারে না। সাবিত্রী টলে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুদর্শন সুবোধ মিত্রের হাত লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

    সুবোধ মিত্রের হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়।

    সেই অবসরে সুব্রত ঝাপিয়ে পড়ে সুবোধ মিত্রকে দুহাতে সবলে জাপটে ধরে।

    .

    ৩৪.

    এবারে আর সুবোধ মিত্র সুব্রতর কবল থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করেও সফল হয় না।

    সুদর্শনও ইতিমধ্যে এগিয়ে আসে সুব্রতর সাহায্যে।

    বাইরে দুজন প্রহরী পূর্ব হতেই কাছে মোতায়েন ছিল। কিরীটীর নির্দেশে তাকে ডেকে তাদের সাহায্যে সুবোধ মিত্রের হাতে হাতকরা পরিয়ে দিল সুব্রত।

    সুবোধ মিত্র এতক্ষণে চুপচাপ হয়ে যায়।

    সুদর্শন সাবিত্রীর ক্ষতস্থানটা পরীক্ষা করছিল।

    কিরীটী বললে, তুমি ডাক্তার নও ভায়া, চটপট ওকে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা কর।

    আমার জীপটা নিয়ে আসি। সুদর্শন বলে।

    তাই যাও।

    আহত সাবিত্রীকে হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে সুদর্শনের সঙ্গেই কিরীটী পাঠিয়ে দেয় পুলিশের জীপে।

    রাত তখন প্রায় তিনটে বেজে গেছে। দশ নম্বর পল্লীতে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। অনেকেরই ইতিমধ্যে গোলমালে ও গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। সবাই ছুটে আসে সুবোধ মিত্রের বাড়ির আশেপাশে।

    কিরীটী বললে, এখানে আর নয়—চল থানায় যাওয়া যাক।

    সকলে অতঃপর হাতকড়া-পরা সুবোধ মিত্রকে নিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হল।

    বহু লোক থানার আশেপাশে এসে ভিড় করে উকিঝুঁকি দিতে থাকে।

    কিরীটী আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল।

    সেই ব্যবস্থা মতই খগেন পাঠক, কল্যাণ বোস, অবিনাশ ও নরহরি সরকারকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

    একটা বেঞ্চে সবাই পাশাপাশি বসে সশস্ত্র পুলিস প্রহারায়। সুবোধ মিত্রকে থানায় কয়েদঘরে হাতকড়া পরিয়ে আমড় প্রহরায় রাখার ব্যবস্থা হল।

    ঘণ্টাখানেক বাদে সুদর্শন হাসপাতাল থেকে ফিরে এল।

    ব্যবস্থা করে এলে? কিরীটী প্রশ্ন করে।

    হ্যাঁ দাদা। সাবিত্রীকে ও. টি.-তে নিয়ে গিয়েছে, খুব ব্লিডিং হচ্ছে।

    ভয় নেই। মনে হয় মারাত্মক কিছু নয়। দেখ তো ভায়া, একটু চায়ের ব্যবস্থা করা যায় কিনা!

    এখুনি ব্যবস্থা করছি।

    সুদর্শন ভিতরে চলে গেল।

    .

    আরও আধ ঘণ্টা পরে থানায় সুদর্শনের অফিসঘরের মধ্যে।

    রাত তখন সোয়া বারোটা হবে।

    কিরীটী, সুব্রত, কল্যাণ মিত্র ও সুদর্শন বসেছিল থানায় সুদর্শনের অফিস ঘরে।

    কিরীটী একটা চুবরাটে অগ্নিসংযোগ করে গোটা দুই টান দিয়ে বলে, এখন তো বুঝতে পারছ সুদর্শন, তোমারও ঠিক সেই কথামালার একচক্ষু হরিণের দশা হয়েছিল! সব দিকেই তুমি নজর দিয়েছিলে—দাওনি কেবল মিত্র মশাইয়ের দিকে!

    আমি সত্যি বলছি, কল্পনাও করতে পারিনি দাদা যে ওই সুবোধ মিত্রের মত একজন ভদ্রলোক, মিষ্টভাষী, শিক্ষিত শিষ্টাচারী—

    সুদর্শনকে বাধা দিয়ে কিরীটী বলে, প্রজাপতির রঙটা দেখেই তুমি ভুলেছিলে ভায়া, কিন্তু সেই মন-মাতানো রূপের পেছনে যে কাটাওলা শুয়োপোকার একটা ইতিহাস থাকে, সেটা একবারও মনে পড়ল না কেন তা তুমিই জান!

    মাথা নিচু করে সুদর্শন।

    কিরীটী বলে, অবশ্যি এও সত্যি, আমি আশা করিনি, মিত্র মশাই আমার পাতা ফাঁদে অত সহজে অমন করে এসে আজ পা বাড়াবেন! ভাবছিলাম পর পর দুটো খুন হয়ে গেল, এখন কিছুদিন হয়ত মিত্র মশাই একটু সাবধানে পা ফেলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু লোভ বড় সাংঘাতিক বস্তু। বুকের মধ্যে লোভের আগুন একবার জ্বললে সহজে নিভতে চায় না। আর লোভের ধর্মই হচ্ছে, হাত সে বাড়িয়েই চলে।

    কিন্তু দাদা-সুদর্শন যেন কি বলবার চেষ্টা করে।

    কিরীটী তাকে বাধা দিয়ে বলে, অবিশ্যি শুধু লোভই নয়, পরম আত্মম্ভরিতাও সুবোধ মিত্রকে আজ রাত্রে চরম সর্বনাশের মধ্যে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল।

    আপনি কি দাদা, সুদর্শন আবার বলে, প্রথম থেকেই সুবোধ মিত্রকে সন্দেহ করেছিলেন?

    হ্যাঁ, কতকটা বলতে পার। তবে অবিশ্যি আমার মনের সিক্সথ সেন্স কাজ করেছিল। একটু থেমে কিরীটী আবার বলে, তুমি জান না, তোমাকে বলিওনি-এ অঞ্চলের ওয়াগন থেকে মাল চুরি যাবার রহস্য উদ্ঘাটনের ব্যাপারটা তোমাদের উপরওয়ালার একান্ত অনুরোধে হাতে নেওয়ার পরই এখানে এসে আমি ছদ্মবেশে দশ-বারো দিন ঘুরে ঘুরে বেড়াই।

    আশ্চর্য! সুদর্শন বলে।

    কিরীটী মৃদু হেসে বলে, হ্যাঁ, কেন জানাইনি—জানতে তোমাকে দিইনি কেন জান? কারণ তুমি জানা মানেই সুবোধ মিত্র ও তার দলবলেরও জানতে পারা!

    কিন্তু–

    বুঝতে পারছ না, কেন? আমার এ তল্লাটে আনাগোনা শুরু হয়েছে আর কেউ না জানুক সুবোধ মিত্র জানতে পারতই। তার ফলে যা হবার তাই হত–অর্থাৎ দশজোড়া চোখ সর্বক্ষণ তোমাকে পাহারা দিত এবং তার দলবল সতর্ক হয়ে যেত, যেটা আমি আদৌ চাইনি-আর তাতে করে অনুসন্ধানের ব্যাপারটাও চালানো এত সহজে যেত না। কিন্তু যা বলছিলাম, একা তো আমার পক্ষে সব সংবাদ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। এবং এ তল্লাটে অনুসন্ধানের কাজ গোপনে চালাতে হলে এমন একজনকে চাই যে এ তল্লাটেরই একজন। অথচ বিশ্বাসী কে এমন আছে- কাকে পাই? খোঁজখবর নিতে শুরু করলাম গোপনে গোপনে। এখানকার রেস্টুরেন্টের গোলাব সিং আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত, তাকেই ধরলাম ঐ ব্যাপারে। সেই-ই আলাপ করিয়ে দিল আমায় হীরু সাহার সঙ্গে। বললে, সাচ্চা আদমী, বিশ্বাসী। হীরু সাহাকেই দলে নিলাম।

    আশ্চর্য! অথচ হীরুর প্রতি আমার

    বরাবরই একটা সন্দেহ ছিল, তাই না ভায়া? না হে, গোলাব সিং মিথ্যা বলেনি–লোকটা শুধু সৎ-ই নয়, সরল। তবে হ্যাঁ, একটু রাগী গোয়ারগোবিন্দ টাইপের-অবশ্যি সেইখানেই হীরুর চরিত্র সম্পর্কে তোমার ভুল হয়েছিল।

    তারপর?

    তারপর থেকে হীরুই সব সংবাদ আমাকে সরবরাহ করত। এতে একটু সুবিধা হয়েছিল আমার–

    কি?

    হীরু দশ পল্লীরই একজন ও গুণ্ডাপ্রকৃতির বলে তার উপরে কারও সন্দেহ পড়েনি।

    তারপর?

    হীরু সাহাকে দলে পাওয়ায় আমার আরও একটা সুবিধা হয়েছিল।

    কি?

    হীরুকে পল্লীর কেউ চট করে ঘাঁটাবার সাহস পেত না। সে-ই আমাকে একটা বিশেষ সংবাদ দেয়।

    বিশেষ সংবাদ!

    হ্যাঁ, মাধবী-হত্যার রাত্রে সে মাধবী ও একজনকে মাঠের দিকে যেতে দেখেছিল গোটা বারোর সময়। মাধবীকে সে চিনতে পেরেছিল, কিন্তু অন্যজনকে পারেনি।

    থামলেন কেন, বলুন দাদা! সুদর্শন বলে।

    ইতিমধ্যে সব ব্যাপারটা আগাগোড়া পর্যালোচনা করে একটা কথা আমার মনে হয়েছিল–

    কি? সুদর্শন প্রশ্ন করে।

    .

    ৩৫.

    কিরীটী বলতে থাকে সুদর্শনের প্রশ্নের জবাবে।

    প্রথমত, ইয়ার্ড থেকে ওয়াগন ভেঙে মাল সরানোর ব্যাপারে যারা জড়িত, তাদের সঙ্গে হয় ওই দশ নম্বর পল্লীর কারও-না-কারোর সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চয়ই আছে, নয়ত দশ নম্বর পল্লীরই লোক তারা।

    এবং দ্বিতীয়ত, পর পর যে হত্যাগুলো এ তল্লাটে সংঘটিত হয়েছে, সে হত্যাব্যাপারগুলো পৃথক কিছু নয়—ওই ওয়াগন ভাঙার ব্যাপারেরই খণ্ডাংশ বা ওরই সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

    কাজেই সর্বাগ্রে তখন যে কথাটা আমার মনে হয়, সেটা হচ্ছে ওই দশ নম্বর পল্লী থেকেই আমায় অনুসন্ধান শুরু করতে হবে। করলামও তাই। এবং ভাগ্যক্রমে আগেই বলেছি, হীরু সাহাকে সাহায্যকারী পেয়ে গিয়েছিলাম!

    কিন্তু সুবোধ মিত্রকে সন্দেহ করলেন কেন?

    প্রথমে তার ওপর আমার সন্দেহ হয়নি। সন্দেহটা প্রথম জাগে মাধবীর মৃত্যুর পর।

    কেন?

    কারণ হীরু সাহার মুখে যে কথাটা শুনেছিলাম, তাছাড়াও আরও দুটো সংবাদ তার কাছ থেকে পেয়েছিলাম!

    কি সংবাদ?

    প্রথমত, বাইরে দশ নম্বর পল্লীর সবাই যদিও জানত, সুবোধ মিত্রের সঙ্গে মাধবীর কোন যোগাযোগ ছিল না—সেটা সত্য নয়, আসলে মাধবীই ছিল সুবোধ মিত্রের দক্ষিণ বাহুঁ। এবং শুনলে তুমি আশ্চর্য হবে ভায়া—

    কি?

    আসলে সুবোধ মিত্রের রক্ষিতা ছিল মাধবী!

    সে কি! অর্ধস্ফুট কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠে সুদর্শন।

    জানতাম কথাটা শুনে তুমি বিস্ময়ের প্রচণ্ড এক ধাক্কা খাবে। কিন্তু কথাটা নির্মম সত্য। বাইরে সে দেখাত বটে সুবোধ মিত্রকে ঘৃণা করে, এবং সুবাধ মিত্রও তার সঙ্গে যে কোন যোগাযোগ আছে হাবেভাবে আদৌ তা প্রকাশ করত না। কিন্তু হলে কি হবে, সকলের চোখে তারা ধুলো দিলেও একজনের চোখে তারা ধুলো দিতে পারেনি—সে সবই জানত-বলতে পার জানতে পেরেছিল—

    কে?

    বল তো কে?

    কে?

    তোমার সাবিত্রী। বলেন কি দাদা! সাবিত্রী জানত?

    হ্যাঁ, ভায়া, জানত। ভুলে যাচ্ছ কেন, একঘরে তারা শুতো—দুই বোন। আর সুবোধ মিত্র ছিল তাদের ঠিক নেক্সট-ডোর নেবার। মাধবীর হত্যার রাত্রে তাই সাবিত্রী জেগে ছটফট করছিল তার দিদির প্রতীক্ষ্ণয়। কারণ সে তো জানতই যে মধ্যে মধ্যে তার দিদির বাড়ি ফিরতে রাত হয় এবং তার কারণ থিয়েটার বা রিহার্সাল নয়—সুবোধ মিত্র–

    আশ্চর্য!

    এখনও তোমার বয়স অল্প, অভিজ্ঞতাও তোমার সামান্যই ভায়া। তাই তুমি জান না নারীচরিত্র কি দুজ্ঞেয়, কি বিচিত্র!

    সুদর্শন আবার তার কথাটার পুনরাবৃত্তি করে, আশ্চর্য! সাবিত্রী জানত অথচ–

    অথচ তোমাকে সে বলেনি! আরে গর্দভ, এটা বুঝতে পারছ না কেন, কিরীটী সুদর্শনকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই বলে, প্রথম প্রেমের মুহূর্তে কোন মেয়ে কখনও তাদের সংসারের লজ্জার কথা মুখ ফুটে প্রেমাস্পদের কাছে বলে না-বলতে পারে না।

    কিন্তু দাদা—

    ভয় নেই ভায়া, সাবিত্রী খাটি হীরে। অপাত্রে তুমি হৃদয় দান করোনি। কিরীটী হাসতে হাসতে বলে।

    সুদর্শনের মুখটা সহসা লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে। সে আর কিরীটীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না।

    কিরীটী বলে, মনে আছে তোমার, মাধবীহত্যার রাত্রে সাবিত্রী তার দিদির অপেক্ষায় জেগে থাকতে থাকতে নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল।

    হ্যাঁ।

    আসলে তা নয়। তবে?

    ইদানীং পতিতবাবুর স্ত্রী—ওদের মা, মাধবীর গতিবিধি সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে উঠেছিলেন। তাই সাবিত্রী ঘুমোয়নি, জেগেই ছিল-এবং সম্ভবত সুবোধ ও মাধবীকে একত্রে দেখেছিল।

    কিরীটী আবার বলতে শুরু করে, থাক যা বলছিলাম, সাবিত্রী ভয়েও খানিকটা মুখ খুলতে পারেনি। মিত্র মশাইটি তো আমাদের সহজ চীজ নন! একটু থেমে কিরীটী আবার বলতে শুরু করে, মাধবীর সঙ্গে মিত্র মশাইয়ের যোগাযোগের ব্যাপারটা যেমন আমাকে চমকে দেয়, ঠিক তেমনি নরহরি সরকারের ওখানে মাধবীর যাতায়াতটাও দুইয়ে দুইয়ে চারের মত মিত্র মশাইয়ের প্রতি মনটা আমার আরও সন্দেহযুক্ত করে তোলে। আর ওই শেষোক্ত কারণেই মিত্র মশাইয়ের ওপর আমার সমস্ত সন্দেহটা গিয়ে পড়ে। তারপরই আমি মিত্র মশাইয়ের ওপর কড়া নজর রাখি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.