Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কিরীটী অমনিবাস ৫ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প397 Mins Read0

    ১৬-২০. তারপরের দিন ও রাত

    তারপরের দিন ও রাত কিরীটী ঐ ঘরের মধ্যে স্রেফ চেয়ারে বসে পেসেন্স খেলেই কাটিয়ে দিল।

    নির্বিকার নিশ্চিন্ত।

    ভাবটা যেন—বিশেষ বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল তাই বিশ্রাম নিচ্ছে।

    সঙ্গে গোটাকয়েক নভেল এনেছিলাম, আমারও সেগুলো পড়ে সময় কাটতে লাগল।

    তার পরের দিনটাও ঐ ভাবেই অতিবাহিত হল।

    ক্রমে রাত্রি হল।

    কোথায় কিরীটী খাবারের ব্যবস্থা করেছিল জানি না, একটা লোক নিয়মিত চা ও আহার্য সরবরাহ করে যাচ্ছিল।

    সে রাতটাও ঐ ভাবেই কাটাতে হবে তখনও তাই মনে করেই শয্যায় আশ্রয় নিয়েছিলাম।

    এবং বোধ করি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একসময়।

    হঠাৎ কিরীটীর হাতের স্পর্শে ঘুমটা ভেঙে গেল।

    কি রে! ধড়ফড় করে উঠে বসি।

    আয় আমার সঙ্গে। চাপা সতর্ক কণ্ঠে কিরীটী বলে।

    কোথায়?

    ওদিককার ঘরে।

    কৌতূহলে কিরীটীর সঙ্গে গিয়ে সর্বশেষ ঘরটার মধ্যে প্রবেশ করলাম। ঘরটা অন্ধকার।

    দেওয়ালে, দক্ষিণের দেওয়ালে কান পেতে শোন ত কিছু শুনতে পাস কিনা?

    কান পাততেই স্পষ্ট নারীকণ্ঠ কানে এল দেওয়ালের ওপাশের ঘর থেকে।

    পারব না, পারব না—আমি কিছুতেই পারব না।

    পুরুষকণ্ঠে জবাব এল, পারতে হবেই তোমাকে।

    না।

    পারতে হবেই।

    না, না–কি তোমার সে করেছে যে তাকে এইভাবে শেষ করতে চাও তুমি?

    শেষ আমি করতাম না সীতা—

    চমকে উঠলাম সীতা নামটা শুনে।

    পুরুষকণ্ঠ তখনও বলছে, কিন্তু ঐ ইডিয়টটা যখন সব জেনে ফেলেছে একবার তখন ওকে সরে যেতেই হবে। পরশু এই সময় সে আসবে, তুমি তাকে শুধু গাড়িতে তুলে দেবে। তারপর যা করবার আমিই করব।

    সত্যিই তাহলে তাকে তুমি প্রাণেই মারা স্থির করেছ?

    একটু আগেই তো যা বলবার আমি বলেছি।

    কিন্তু আমি সত্যিই বলছি, ওর দ্বারা তোমার কোন অনিষ্টই হবে না।

    কিন্তু তোমারই বা তার জন্য এত মাথাব্যথা কেন?

    মাথাব্যথা! না, না—

    তাই তো দেখছি। না পুরনো প্রেমের ঘা-টা বুক থেকে তোমার এখনও শুকোয় নি?

    পুরোনো প্রেম?

    তাই তো মনে হচ্ছে, সম্পর্কচ্ছেদ করেও যেন তাকে ভুলতে পারনি আজও!

    নারীকণ্ঠের কোনরূপ প্রতিবাদ আর শোনা গেল না।

    যাক, আমি চললাম। যা বলে গেলাম ঠিক সেইভাবে যেন পরশু রাত্রে তুমি প্রস্তুত থাক।

    .

    একটু পরেই বারান্দায় পদশব্দ শোনা গেল। ঘরের বাইরের ঠিক সামনের বারান্দা দিয়ে কে যেন চলে গেল। আমরা দুজনে তখনও অন্ধকারে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে।

    নারীকণ্ঠস্বরটি চিনতে না পারলেও নাম শুনেছি-সে সীতা মৈত্র! ওভারসিজ লিঙ্কের সেক্রেটারি দিদিমণি। কিন্তু পুরুষটি কে? কণ্ঠস্বরে চিনতে পারলাম না তাকে।

    দুজনে আমাদের পূর্বের ঘরে আবার ফিরে এলাম।

    ঘরে ফিরে এসে কিরীটী কিছুক্ষণ পায়চারিই করতে লাগল।

    বুঝলাম পায়চারি করতে শুরু করেছে যখন-এখন ঘুমোবে না।

    আমারও ঘুম চোখ থেকে পালিয়েছিল ইতিমধ্যে।

    কিরীটী পায়চারি করতে লাগল আর আমি চেয়ারটায় গিয়ে বসলাম।

    একসময় সহসা পায়চারি থামিয়ে কিরীটী আমার মুখের দিকে তাকাল, সুব্রত!

    কি?

    বর্ধমান গিয়েছিলাম কেন জানিস?

    কেন?

    একসময় মানে চাকরির শেষদিকে বছর দুই আগে আর্থার হ্যামিলটন বর্ধমান স্টেশনের এ. এস. এম. ছিল।

    তাই নাকি!

    হ্যাঁ। ওর অতীত সম্পর্কে খোঁজ করতে বলেছিলাম পুলিসকে। তারাই আমাকে সংবাদটা দিয়েছিল। দু বছর আগের ওর সার্ভিস রেকর্ড থেকে জানা যায় হ্যামিলটন কাজে ইস্তফা দেয়।

    কেন?

    কারণটা অবিশ্যি জানা যায়নি।কিন্তু সীতার সঙ্গে তখন ওররীতিমত নাকি সখ্যতাই ছিল।

    তবে হঠাৎ গোলমালটা বাধল কেন?

    সম্ভবত অতি লোভে।

    অতি লোভে!

    হ্যাঁ। তাঁতী নষ্ট হয়েছে অতি লোভেই। কিন্তু থাক সে কথা, আপাতত কাল সকালে তোকে একটা কাজ করতে হবে।

    কি কাজ?

    লাটুবাবুর গ্যারাজে!

    তোকে একবার যেতে হবে।

    লাটুবাবার গ্যারাজে!

    হ্যাঁ।

    কেন?

    একটা সংবাদ তোকে যেমন করেই হোক যোগাড় করে আনতে হবে। লাটুবাবুর কারখানা ও গ্যারেজের বর্তমান মালিক কে?

    বেশ। কিন্তু একটা কথা তোকে জিজ্ঞাসা করব ভাবছিলাম কিরীটী!

    কি?

    এটা অবশ্য বুঝতে পেরেছি যে সীতা মৈত্র আমাদের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে, কিন্তু সেজন্যই কি–

    কি?

    তুই এখানে এসে উঠেছিস?

    হ্যাঁ, এবং সেই সংবাদটা পেয়েই বাজোরিয়াকে যখন সেদিন ফোনে বলেছিলাম এই বাড়িতে আমাকে একটা ফ্ল্যাট যোগাড় করে দিতে তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি ঘটনাচক্রে ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় তার পাশের এই ফ্ল্যাটটাই খালি হয়ে যাবে। অনেক সময় পৃথিবীতে অনেক বিচিত্র যোগাযোগ ঘটে, এ ব্যাপারেও ঠিক তাই হয়েছে।

    তোর কি ধারণা সোনার চোরাকারবারীদের সঙ্গে ঐ সীতা মৈত্র ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত?

    জড়িত কিনা এখনও সঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, তবে—

    কি?

    সীতা মৈত্রের যৌবন ও রূপ কোনটাই তো অস্বীকার করবার নয়!

    অর্থাৎ–

    অর্থাৎ এমনও হতে পারে, সীতা মৈত্রের রূপ ও যৌবন দুটোই শাণিত দুটি তরবারির মত মোক্ষম অস্ত্র হয়েছে ওদের হাতে।

    আমারও তাই মনে হচ্ছিল কদিন থেকে। তবে একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না—

    কি? কিরীটী সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকাল।

    আর্থার হ্যামিলটনের সঙ্গে সীতা মৈত্রের বর্তমান সম্পর্কটা কি?

    কি আবার, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে একদা স্ত্রী ও স্বামী ছিল। কোন কারণে বিচ্ছেদ ঘটেছে।

    কারণটা কি আমাদের ঘটোৎকচ?

    কিরীটী হেসে ওঠে।

    বললাম, হাসলি যে?

    কারণ তোর অনুমান যদি সত্যিই হয় তো বলব সীতা মৈত্রের রুচি নেই। কিন্তু মা ভৈষী! তা নয় বন্ধু, তুই নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস। কিন্তু রাত অনেক হল, একবার একটু নিদ্রাদেবীর আরাধনা করলে মন্দ হত না।

    কথাটা বলে সত্যি সত্যিই দেখলাম কিরীটী শয়নের জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।

    কিরীটী!

    কি?

    পাশের ঘরে একটু আগে যারা কথা বলছিল তাদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারলাম-সীতা মৈত্র, কিন্তু পুরুষের কণ্ঠস্বরটা কার বুঝতে পারলাম না তো!

    কিরীটী ততক্ষণে শয্যায় আশ্রয় নিয়েছে।

    একটা হাই তুলতে তুলতে বললে, পিয়ারীলাল।

    পিয়ারীলাল! সে আবার কে?

    লাটুবাবুর গ্যারাজের একজন মোটর মেকানিক। কিন্তু তোর ব্যাপার কি বল্ তো? তোর চোখে কি ঘুম নেই? আমার কিন্তু ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে!

    কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী পাশ ফিরে শুল।

    কিন্তু আমার চোখে সত্যিই তখন ঘুম ছিল না।

    কয়েকটা মুখ আমার মনের পাতায় পর পর ভেসে উঠতে লাগল একের পর এক।

    ঘটোৎকচ, সীতা মৈত্র, চিরঞ্জীব কাঞ্জিলাল, ভিখারী সাহেব এবং আর্থার হ্যামিলটন। ঐ মুখগুলোর সঙ্গে নিজের অজ্ঞাতে যেন আর একখানি মুখ ভাববার চেষ্টা করতে লাগলাম, যাকে ইতিপূর্বে আমি না দেখলেও কিরীটী নিশ্চয়ই দেখেছে, নচেৎ ও জানল কি করে যে নাম তার পিয়ারীলাল?

    লাটুবাবার কারখানার একজন মোটর মেকানিক পিয়ারীলাল। তা হোক, কিন্তু তার সঙ্গে সীতা মৈত্রের কি সম্পর্ক? আর ঘনিষ্ঠতাই বা লোকটার সঙ্গে তার কোন সূত্রে?

    এবং কে-ই বা সেই নিরীহ ইডিয়ট প্রকৃতির লোকটা যার প্রতি এখনও সীতা মৈত্রের পুরনো প্রেম বুকের মধ্যে জমানো রয়েছে, যে প্রেমের জন্য মোটর মেকানিক পিয়ারীলালের বুকে ঈর্ষাটা টনটনিয়ে উঠে রক্তনখর বিস্তার করেছে?

    অন্ধকার ঘরে শুয়ে পিয়ারীলাল আর সীতা মৈত্রের কথাই ভাবছিলাম।

    পিয়ারীলালের কণ্ঠস্বরে সেই ঈর্ষার সুরটুকু আমার কানকে এড়িয়ে যায়নি। কেবলমাত্র ইডিয়েট ওসব জেনে ফেলছে বলেই নয়, সীতা মৈত্রের বুকের মধ্যে আজও তার জন্য ভালবাসা রয়েছে বলেই এ দুনিয়া থেকে সরে যেতে হবে আজ তাকে— পিয়ারীলাল তাই চায়।

    আর যেতে তো হবেই-এই যে চিরাচরিত নীতি!

    এক আয়েষার ভাগ্যাকাশে তো দুটি চন্দ্র থাকতে পারে না-ওসমান ও বীরেন্দ্র সিংহ!

    ইডিয়ট ও মোটর মেকানিক পিয়ারীলাল!

    কিন্তু কে ঐ ইডিয়ট?

    আর সত্যিই যদি সে ইডিয়ট হত, সীতা মৈত্রের মত মেয়ের সেই ইডিয়টটার উপর দুর্বলতা থাকে কি করে?

    পিয়ারীলাল এক কথার মানুষ, সে তার কণ্ঠস্বরেই বোঝা গিয়েছে।

    ইডিয়টটার আজ প্রাণসংশয় হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে। তাকে আজ এ দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবেই।

    শুধু স্বর্ণসন্ধানীদের রহস্য কিছুটা জেনে ফেলেছে বলেই নয়, পিয়ারীলালের প্রতিদ্বন্দ্বী আজ সে।

    হায় রে বিচিত্র মানুষের মন, ভালবেসেও মুক্তি নেই, ভালবাসা পেয়েও মুক্তি নেই।

    পঞ্চশরের দুমুখো শর।

    কিন্তু ইডিয়ট–ইডিয়টটা কে? তবে কি–

    হঠাৎ বিদ্যুৎ-চমকের মতই যেন নামটা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখখানাও মনের পাতায় ভেসে উঠল—আর্থার হ্যামিলটন।

    আর্থার হ্যামিলটনেকে সীতা মৈত্র তাহলে আজও ভুলতে পারেনি!

    .

    ১৭.

    পরেরদিন সকাল আটটা নাগাদ কিরীটীর পূর্বরাত্রের নির্দেশমত ঘর থেকে বের হলাম লাটুবাবুর গ্যারাজ ও ওয়ার্কশপের বর্তমান মালিকের অনুসন্ধানে।

    আর মনের পাতায় যে অদেখা মানুষটার মুখটাকে তখনও কোন একটা পরিচিতের আকার দেবার চেষ্টা করছিলাম, সেই মোটর মেকানিক পিয়ারীলালের যদি সন্ধান পাই, দেখা পাই—সেই কথাটা ভাবতে ভাবতেই গেলাম।

    তিনতলা ও চারতলা দুটো বাড়ির মাঝখান দিয়েই বলতে গেলে প্রায় গ্যারাজ ও ওয়ার্কশপে প্রবেশের কাচা অপ্রশস্ত রাস্তাটা।

    বড় লরি বা বাস সে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে বটে, তবে একটু অসাবধান হলেই দেওয়ালে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা।

    ঢোকার মুখেই একটা হিন্দুস্থানীদের মিঠাইয়ের দোকান-লক্ষ্মীনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।

    একটা ভুষো কালির মত কালো কুচকুচে রঙ বিরাট ভুড়িওয়ালা লোক খালি গায়ে হাঁটুর উপরে কাপড় তুলে বিরাট উনুনের ধারে বসে বিরাট একটা কড়াইয়ে গরম জিলাপি ভাঁজছে।

    সদ্যভাজা জিলাপির গন্ধটা কিন্তু বেশ লাগে।

    এগিয়ে চললাম ভিতরের দিকে।

    অনেকটা জায়গা নিয়ে বিরাট টিনের শেডের তলায় গ্যারাজ ও ওয়ার্কশপ। সবটা জায়গাই অবিশ্যি টিনের শেড দেওয়া নয়, উন্মুক্ত জায়গা অনেকটা রয়েছে।

    বিশেষ কোন লোকজন সামনাসামনি চোখে পড়ল না।

    কেবল দেখলাম একটা রোগা ডিগড়িগে লম্বা শিখ দাঁতনের একটা কাঠি দিয়ে দাঁতন করছে আর অদূরের কলতলায় কে একটা লোক সাবান দিয়ে মাথা ঘষছে।

    এদিক ওদিক আট-দশটা ট্রাক, বাস ও ট্যাকশি দাঁড়িয়ে রয়েছে উন্মুক্ত জায়গাটায়।

    টিনের শেডটার মধ্যে উঁকি দিলাম। সেখানেও বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার অনেকগুলোই আছে।

    বাতাসে একটা মোবিল ও পেট্রোলের গন্ধ।

    এ গেঁড়াইয়া, গাল শুন!

    কে যে কাকে সম্বোধন করল।

    কে কাকে সম্বোধন করল জানবার জন্য এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, হঠাৎ গ্যারাজের মধ্যে একটা পার্টিশনের ভিতর থেকে বের হয়ে এল ঘটোৎকচ, পরিধানে স্ট্রাইপ দেওয়া ময়লা পায়জামা, গায়ে একটা গেঞ্জি, সদ্য সদ্য বোধ হয় ঘুম ভেঙেছে।

    একেই প্রথম দিন ওভারসিজ লিঙ্কের সেক্রেটারি দিদিমণির অফিস-ঘরে কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখেছিলাম।

    ঘটোৎকচও পার্টিশান থেকে বের হয়েই আমাকে সামনে দেখে বুঝি মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়।

    রোমশ জোড়া ভ্র-দুটো যেন একটু কুঞ্চিত হয়েই পরক্ষণে আবার সরল হয়ে আসে।

    কাকে চান? ঘটোৎকচ প্রশ্ন করে আমাকে।

    মুহূর্ত না ভেবেই জবাব দিলাম, মিঃ পিয়ারীলালের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

    ভ্রূ-যুগল আবার মুহূর্তের জন্য কুঞ্চিত হল এবং আবার সরল হল।

    ধূর্ত শিয়ালের মত চোখের দৃষ্টিটা এক লহমার জন্য বোধ হয় আমার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে নিল একবার।

    কেন, পিয়ারীলালকে দিয়ে কি হবে?

    দরকার ছিল আমার একটু–

    আমিই পিয়ারীলাল।

    আপনি পিয়ারীলাল? নমস্কার। আপনিই মোটর মেকানিক পিয়ারীরাল?

    হ্যাঁ।

    ঠিক ঐ সময়ে টিনের শেডের মধ্যে পুর্ব কোণে নজর পড়ল, উর্বশী সিগারেটের ভ্যানটা দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    কিন্তু বাঁদিকে যেন নজরই পড়েনি এমনিভাবে ঘটোৎকচের মুখের দিকে আবার তাকিয়ে বললাম, আপনি কি এই গ্যারাজ-ওয়ার্কশপের মালিক?

    ঐ সময় একটা ছোকরা এসে পিয়ারীলালের সামনে দাঁড়িয়ে বললে, চা দেব?

    হুঁ, ঘরে দে।

    ছোকরাটা চলে গেল।

    অ্যাঁ, কি বলছিলেন, মালিক? তা বলতে পারেন বৈকি, আমি-আমি ছাড়া আর মালিক কে? কিন্তু কি দরকার আপনার এই গ্যারাজের মালিক কে জেনে?

    কথাটা তাহলে আপনাকে খুলেই বলি মিঃ পিয়ারীলাল। আমার একটা বড় করে বেশ গ্যারাজ ও মোটর রিপেয়ারিং শপ খুলবার ইচ্ছা আছে। উল্টোডাঙ্গার ওদিকে একটা জায়গাও লিজ নিয়েছি।

    কথাটা বলায় দেখলাম কাজ হল।

    পিয়ারীলালের ভ্রূ-যুগল কুঞ্চিত হয়ে আবার সরল হল।

    আবার একবার যেন নতুন করে পিয়ারীলাল আমার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করল।

    আবার বললাম, তাই বড় বড় মোটর রিপেয়ারিং শপগুলো আমি ঘুরে ঘুরে যথাসম্ভব দশ দিক জানবার চেষ্টা করছি। আপনারা তো অভিজ্ঞ লোক, আপনাদের পরামর্শ মূল্যবান।

    তা কি রকম ক্যাপিটাল নিয়ে নামছেন?

    খুব বেশি নয়, হাজার পঞ্চাশ-ষাট। রিপেয়ারিং তো হবেই আমার কারখানায়, সঙ্গে বড়ি-বিলডিং, ছোটখাটো একটা লেদ মেশিন আর স্প্রে পেনটিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। আপনি কি বলেন, সেটাই বিবেচনার কাজ হবে না কি? তবে যাই করি, ভাল একআধজন মেকানিক না হলে তো আর কারখানা চালানো যাবে না। আচ্ছা সেরকম ভাল কোন মেকানিক আপনার খোঁজে আছে মিঃ পিয়ারীলাল?

    না।

    হঠাৎ পিয়ারীলালের কণ্ঠস্বরে যেন আমার কেমন খটকা লাগল।

    নিজের অজ্ঞাতেই চমকে ওর মুখের দিকে তাকাই।

    এখানে কোন্ সুবিধা হবে না। আপনি রাস্তা দেখুন!

    কথাটা বলে পিয়ারীলাল আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, সটান পার্টিশনের মধ্যে গিয়ে ঢুকল।

    .

    ১৮.

    বলাই বাহুল্য আমিও আর অতঃপর সেখানে দাঁড়াই না।

    অবিলম্বে স্থানত্যাগ করাই সমীচীন মনে হওয়ায় আমি গ্যারাজ থেকে সোজা বের হয়ে এলাম।

    কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটে গেলাম না।

    বড় রাস্তা পার হয়ে সোজা দক্ষিণমুখে হাঁটতে শুরু করলাম।

    কিন্তু কিছুদূর হাঁটবার পরই মনটা কেমন সন্দিগ্ধ হওয়ায় পিছন ফিরে তাকালাম, কেউ অনুসরণ করছে না তো!

    পশ্চাতে যারা ছিল তাদের মধ্যে তেলকালি-মাখা একটা নীলরঙের হাফপ্যান্ট ও হাওয়াই শার্ট পরিধানে রোগা লোককে দেখতে পেলাম।

    সেই লোকটার সঙ্গে আমার ব্যবধান মাত্র হাত দশেক। কেন যেন মনে হল, লোকটা আমারই পিছু পিছু আসছে! যাই হোক, আবার সামনের দিকেই চলতে শুরু করলাম। কিন্তু মনের মধ্যে সন্দেহ জেগেছে, আবার কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকালাম। ঠিক সেই ব্যবধানেই পূর্বের লোকটিকে পশ্চাতে দেখতে পেলাম।

    অতঃপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েই রইলাম। লক্ষ্য করলাম, লোকটিও দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার চলা শুরু করতেই সেও দেখি চলতে শুরু করেছে।

    আর কোন সন্দেহ রইল না। বুঝলাম লোকটা সত্যিই আমাকে অনুসরণ করছে।

    মনে মনে হেসে একটা ট্যাকশির সন্ধানে এদিক ওদিক তাকাতেই একটা খালি ট্যাকশি পাওয়া গেল।

    অতঃপর প্রায় ঘণ্টা দুই এদিক ওদিক ঘুরে পূর্বোক্ত ফ্ল্যাটে যখন ফিরে এলাম বেলা তখন প্রায় সোয়া এগারোটা।

    এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ।

    সঙ্গে ড়ুপলিকেট ইয়েল লকের চাবি ছিল, চাবি দিয়ে ঘর খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম।

    কিরীটী তখন ঘরে নেই, কোথাও বের হয়েছে নিশ্চয়ই। ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে চেয়ারটার উপর গা ঢেলে দিলাম।

    এবং এতক্ষণে যেন নিরিবিলিতে একাকী সকালবেলাকার ব্যাপারটা আদ্যোপান্ত মনেমনে ভাববার অবকাশ পেলাম।

    কিরীটী কেন আমাকে পাঠিয়েছিল লাটুবাবুর গ্যারেজের আসল মালিকের অনুসন্ধান করতে?

    আসল মালিকের নামটার কি সত্যিই কোন প্রয়োজন ছিল কিরীটীর? তবে কি কিরীটীর সেই শেষ ও আসল ঘাঁটিটিই ঐ লাটুবাবুর গ্যারাজটা? কিন্তু কথাটা যেন মন কিছুতেই মেনে নেয় না। তাছাড়া ঐ ঘটোৎকচ?

    সেরাত্রে সীতা মৈত্রের ঘরে যে পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনেছিলাম সে ঘটোৎকচের গলা নয়।

    অথচ ঘটোৎকচ বললে তারই নাম পিয়ারীলাল। মিথ্যা বলেছে বলে মনে হয় না।

    লোকটাকে আর একটু বাজিয়ে দেখতে পারলে হত।

    আরও একটা কথা—কথা বলতে বলতে হঠাৎ ঘটোৎকচের গলার স্বর যখন বদলে গেল তখন বোঝাই যাচ্ছে আমাকে সে সন্দেহ করছে বা সন্দেহের চোখে দেখেছে।

    কিন্তু হঠাৎ আমার প্রতি তার মনে সন্দেহই বা জাগল কেন? আর কি করেই বা জাগল?

    একদিন মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ওভারসিজ লিঙ্কের সেক্রেটারি দিদিমণি সীতা মৈত্রের ঘরে সে আমাকে দেখেছে।

    তাও ঐ সময় সে আর্থার হ্যামিলটনকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আমার দিকে নিশ্চয়ই ভাল করে নজর দেবারও তার অবকাশ হয়নি।

    ঐটুকু সময়ের জন্য দেখেই সে আমাকে চিনে রেখেছে, নিশ্চয়ই তা সম্ভব নয়।

    আর চিনেই যদি থাকে তো প্রথম থেকেই বা সেটা প্রকাশ করেনি কেন তার কথায়বার্তায় ও ব্যবহারে?

    কিরীটীর ধারণা, গতরাত্রে সীতা মৈত্রের ঘরে ঐ ঘটোৎকচ বা পিয়ারীলালই এসেছিল। সীতা মৈত্রের সঙ্গে ঘটোৎকচের একটা সম্পর্ক আছে।

    কিন্তু সে সম্পর্কটা কতখানি?

    ঘটোৎকচের সঙ্গে সীতা মৈত্রের সম্পর্কের কথাটা চিন্তা করতে গিয়ে কখন যে সীতা মৈত্ৰই মনটা জুড়ে বসেছে, বুঝতে পারিনি।

    কিরীটী মিথ্যা বলেনি, সত্যিই মেয়েটির অদ্ভুত যেন একটা আকর্ষণ আছে।

    এমন এক-একখানি মুখ আছে যা একবার চোখে পড়লে মনের মধ্যে এমন ভাবে একটা দাগ কেটে বসে যা কখনও বুঝি মুছে যায় না।

    সীতা মৈত্রের মুখখানি তেমনি করেই যেন মনের মধ্যে দাগ কেটে বসে গিয়েছিল।

    বার বার কেবলই একটা কথা ঘুরেফিরে মনে হচ্ছিল, সীতা মৈত্র যেন ওদের দলের নয়।

    ওদের দলে সীতা মৈত্র একান্তভাবেই বেমানান যেন।

    সত্যি দুর্ভাগ্য আর্থার হ্যামিলটনের, সীতা মৈত্রের মত স্ত্রী পেয়েও আজ সে ছন্নছাড়া, এক পাপচক্রের মধ্যে হাবুড়ুবু খাচ্ছে!

    সীতা মৈত্রের মত স্ত্রী পেয়েও আজ তার ঘরে নেই কেন? জীবনে কেন শান্তি নেই? কেন তাকে মদ খেয়ে নিজেকে ভোলবার চেষ্টা করতে হয়?

    তার কেনই বা তাকে সেই নেশার খরচ যোগবার জন্য আজ অন্যের কাছে ভিক্ষুকের মত হাত পাততে হয়?

    রাজার ঐশ্বর্য পেয়েও আজ কেন সে ভিক্ষুকেরও অধম?

    যে ভালবাসা দিয়ে একদিন সে সমস্ত পৃথিবীকে অধিকার করতে পারত, আজ সেই ভালবাসা পেয়েও কেন তাকে অমন করে হারাতে হল?

    আর কেনই বা সে অমন ভাল চাকরিটা ছেড়ে দিল?

    সীতা মৈত্রের কথা ভাবতে ভাবতে কখন একসময় বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিরীটীর ডাকে ঘুম ভেঙে গেল।

    কি রে সুব্রত, ঘুমে যে একেবারে কুম্ভকর্ণকেও হার মানালি!

    কখন এলি?

    এই তো ফিরছি। কিন্তু ব্যাপার কি বল তো? কাল রাত্রে ঘুম হয়নি নাকি?

    সে কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করলাম, কোথায় গিয়েছিলি?

    বিশেষ কোথাও না। তারপর-পিয়ারীলালের সঙ্গে আলাপ হল?

    হল আর কই!

    কেন?

    তাড়িয়ে দিল যে আলাপটা ঠিক জমে ওঠবার মুখেই।

    কি রকম?

    সংক্ষেপে সকালবেলার ঘটনাটা খুলে বললাম।

    সব শুনে কিরীটী শুধু বলল, হুঁ।

    কিন্তু আমাকে সন্দেহ করল কি করে তাই ভাবছি!

    কিরীটী কিন্তু আমার কথার ধার দিয়েও গেল না।

    সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল সে। বললে, একটা জরুরি কাজ একদম ভুলে এসেছি সুব্রত। সে কাজটা এখুনি একবার বের হয়ে গিয়ে তোকে সেরে আসতে হবে।

    কি কাজ?

    রমেশ মিত্র রোডে আমার বন্ধু সন্তোষ রায় থাকে, সেখানে গিয়ে ফোন করে কৃষ্ণাকে একটা কথা বলবি–

    বল।

    কাল রাত সাড়ে বারোটা থেকে একটার মধ্যে হীরা সিং যেন আমার পাশের বাড়িতেই যে অ্যাডভোকেট সুহাস চৌধুরী থাকেন তার গাড়িটা নিয়ে যোধপুর ক্লাবের মাঠের কাছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। কৃষ্ণা গিয়ে যেন সুহাসবাবুকে আমার কথা বলে গাড়িটা তার চেয়ে নেয়। হ্যাঁ, আর দেরি করিস না। আজ শনিবার, হাইকোর্ট বন্ধ বটে, তবে বেলা একটার মধ্যেই সুহাবাবু মাছ ধরতে একবার বের হয়ে গেলে আর তার গাড়িটা পাওয়া যাবে না। গাড়িটা ভাল, rough রাস্তায় dependable।

    আমি আর দ্বিরুক্তি না করে উঠে পড়লাম।

    .

    ১৯.

    ফিরে এসে ঘরে ঢুকে দেখি চেয়ারটার উপরে নিশ্চিন্ত আরামের গা ঢেলে দিয়ে কিরীটী ঘুমোচ্ছে।

    ইতিমধ্যে ভৃত্য টিফিন-ক্যারিয়ার করে টেবিলের উপরে আহার্য রেখে গিয়েছিল।

    হাতঘড়িতে দেখলাম বেলা তখন সাড়ে বারোটো বেজে গিয়েছে। ক্ষুধায় পেটে যেন পাক দিচ্ছিল।

    বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে কিরীটীকে ডেকে তুললাম।

    খাবি না?

    কিরীটী উঠে বসে আলস্যের একটা হাই তুলতে তুলতে বললে, আচ্ছা সুব্রত, বেদব্যাস-রচিত মহাভারত তো পড়েছিস তুই নিশ্চয়ই?

    প্লেটে খাবার সাজাত সাজাতে বললাম, একদা বাল্যকালে।

    সে যুগের অর্জুনের মত এ যুগের সুভদ্রাটিকে নিয়ে পালা না কেন তুই।

    বলতে বলতে উঠে এসে খাবারের প্লেটটা টেনে নিয়ে বসল কিরীটী।

    হাসতে হাসতে বললাম, তা মন্দ বলিসনি, কিন্তু মুশকিল আছে যে একটা।

    একটা মাছের ফ্রাই প্লেট থেকে তুলে নিয়ে বড় রকমের একটা কামড় দিয়ে আয়েস করে চিবুতে চিবুতে কিরীটী ভ্ৰ কুঁচকে নিঃশব্দে আমার মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললে, কেন?

    বললাম, সে যুগের হলধারী বলরাম যে এ যুগে রেঞ্চ হাতে ঘটোৎকচ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন!

    দূর, দূর-ওটা একটা একের নম্বরের গবেট। ওকে তো কাবু করতে দু মিনিট সময়ও লাগে না। ওসব নিয়ে মনখারাপ করিস না, বুঝলি? বলে আর একটা ফ্রাই তুলে নিয়ে আরাম করে তার স্বাদগ্রহণ করতে করতে বললে, বুঝলি, বাবা বিশ্বনাথ বলে ঝুলে পড়।

    ঝুলে পড়ব?

    হুঁ। দিবারাত্রি ঐ শ্রীমুখপঙ্কজখানি চিন্তা করার চাইতে ঝুলে পড়াই তো বুদ্ধিমানের কাজ।

    দরজার গায়ে ঐ সময় মৃদু তিনটি নক পড়ল।

    দরজাটা খুলে দে, আমাদের কি আশ্চর্য নির্মলশিব এলেন!

    সত্যি, নির্মলশিববাবুই।

    কি আশ্চর্য! আপনার কথা শেষ পর্যন্ত একেবারে সেন্ট পারসেন্ট মিলে গেল মিঃ রায়!

    একটা মাঝারি সাইজের প্যাকেট হাতে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নির্মলশিব বললে।

    আসুন নির্মলবাবু, বেশ গরম ফ্রাই আছে, খাবেন নাকি? কিরীটী ফ্রাই-সমেত টিফিনক্যারিয়ারের বাটিটা নির্মলশিবের দিকে এগিয়ে দিল।

    হঠাৎ তার অত্যধিক উৎসাহ ও উত্তেজনার মুখে কিরীটীর ঐ রকম নিরাসক্তভাবে ফ্রাইয়ের বাটি এগিয়ে দেওয়ায় ভদ্রলোক যেন কেমন একটু থতমত খেয়ে যায়।

    হাতের প্যাকেটটা হাতেই থাকে, কেমন যেন বোকার মতই প্রশ্ন করে। বলে, ফ্রাই।

    হ্যাঁ, অতি উপাদেয় ভেটকি মাছের ফ্রাই। খেয়েই দেখুন না!

    বলতে বলতে কিরীটী নিজেই আর একটা ফ্রাই বাটি থেকে তুলে নিল।

    কিন্তু মিঃ রায়–

    কি, বলুন? বামাল তো পেয়েছেন আর কেমন করে পাচার হয় তারও হদিস পেয়েছেন!

    তা—তা পেয়েছি বটে, তবে–

    কারবারীদের সন্ধান পাননি, এই তো? মা ভৈষী—যজ্ঞের যখন পেয়েছেন, হোতার সন্ধান পাবেন বৈকি!

    কিন্তু বামালেরই বা সন্ধান পেলাম কোথায়?

    পাননি?

    কই, সবই তো উর্বশী সিগারেটের প্যাকেট! বলতে বলতে হাতের প্যাকেটটা সামনের টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে নির্মলশিব হতাশায় একেবারে ভেঙে পড়ল সত্যি সত্যিই, দেখুন না উর্বশী সিগারেট।

    প্যাকেকটা সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রায় টেবিল থেকে তুলে নিয়েছিলাম।

    সত্যিই উর্বশী সিগারটের লেবেল আঁটা একটা মাঝারি আকারের সাধারণ প্যাকিং পেপারে প্যাক-করা প্যাকেট।

    আমি প্যাকেটটা খুলতে শুরু করেছি ততক্ষণে।

    কিরীটী মৃদু হেসে বলল, আপনি মশাই অত্যন্ত অবিশ্বাসী। বিশ্বাস না থাকলে কি কৃষ্ণ মেলে? ঐ দেখুন সুব্রতকে, জহুরী ঠিক জহর চিনেছে, ইতিমধ্যেই প্যাকেটটা খুলতে শুরু করেছে।

    উপর থেকে সাধারণ সিগারেটের প্যাকেট মনে হলেও—যত্ন নিয়ে প্যাকেটটা বাঁধা হয়েছে।

    এবং প্যাকেটটা খুলতেই চোখের সামনে বের হল আমাদের পর পর সাজানো যত্ন করে সব ছোট ছোট সিগারটের প্যাকেট।

    আমি প্যাকেটগুলো সব এক এক করে টেবিলের উপরে নামালাম। সবই সিগারেটের প্যাকেট-মধ্যে তার অন্য কিছু নেই।

    সিগারেটের প্যাকেটগুলো দেখে নির্মলশিবের মুখে হতাশার চিহ্ন ফুটে উঠেছিলই, আমারও মুখে বোধ হয় কিছুটা প্রকাশ পেয়েছিল।

    কিরীটী কিন্তু নির্বিকার।

    মৃদু হেসে বললে, কি, পরশপাথর মিলল না?

    এবং কথাটা বলতে বলতেই সহসা হাত বাড়িয়ে একটা প্যাকেট তুলে নিয়ে সেটা খুলে ফেলল।

    খোলা প্যাকেটের সমস্ত সিগারেট চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

    কিরীটী পরমুহূর্তেই আর একটা প্যাকেট তুলে নিল। সেটা খুলতেও সিগারেট দেখা গেল সবই।

    তবু কিন্তু নিরতিশয় উৎসাহের সঙ্গে একটার পর একটা প্যাকেট তুলে নিয়ে কিরীটী খুলে যেতে লাগল।

    কিন্তু সিগারেট–শুধু সিগারেট।

    ততক্ষণে কিরীটীরও মুখের হাসি বুঝি মুছে গিয়েছিল।

    সে যেন পাগলের মতই সিগারেটের প্যাকেটগুলো একটার পর একটা খুলতে থাকে।

    সিগারেটগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

    আমি আর নির্মলশিব নির্বাক।

    কিরীটীর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে একটা চাপা উত্তেজনায়।

    কঠিন ঋজু চাপাকণ্ঠে যেন কতকটা আত্মগতভাবেই বললে, না, ভুল হতে পারে। কিছুতেই না-বলতে বলতে হাতে যে প্যাকেকটা তখন তার ছিল সেটা খুলতেই চকচকে একটা লম্বা চাবির মত কি বের হয়ে পড়ল। সাইজে সেটা দু ইঞ্চি প্রায় লম্বা হবে।

    পেয়েছি, এই যে পেয়েছি! ভুল হতে পারে? ভুল হয়নি আমার—এই যে দেখুন!

    উত্তেজনায় ততক্ষণে আমি ও নির্মলশিববাবু কিরীটীর হাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছি।

    কি আশ্চর্য! এ যে সত্যি সত্যিই–

    নির্মলশিবের অর্ধসমাপ্ত কথাটা কিরীটীই শেষ করল, হ্যাঁ, সোনার চাবি। ওজন অন্তত তিন থেকে চার ভরি তো হবেই।

    কি আশ্চর্য! দেখি, দেখি, মিঃ রায়, দেখি–সোনার চাবিটা সাগ্রহে কৌতূহলে হাতে তুলে নিল নির্মলশিববাবু?

    কিরীটী কথা বললে আবার, আজকের প্লেনে কতগুলো বাক্স যাচ্ছিল নির্মলশিববাবু?

    দশটা বাক্স।

    দশটা বাক্স! এক-একটা বাক্স কতকগুলো করে প্যাকেট রয়েছে নিশ্চয়ই গুনে দেখেছেন?

    দেখেছি বইকি, কুড়িটা করে প্যাকেট।

    কুড়িটা। তাহলে কুড়ি ইনটু দশ—দুশো প্যাকেট, অর্থাৎ তাহলে হল দুশো ইনটু চার অর্থাৎ আটশো ভরি সোনা আজ পাচার হচ্ছিল এ দেশ থেকে!

    কি আশ্চর্য! বলেন কি? তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে!

    সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে মানে? বাক্সগুলো ছেড়ে দিয়েছেন নাকি? কিরীটী শুধাল।

    তা—তা দিয়েছি,-কেমন করে জানব বলুন মশাই যে সিগারেট চালান যাচ্ছেতার মধ্যে সত্যি সত্যিই সোনা রয়েছে!

    কিন্তু আমি তো আপনাকে সেই জন্যই-অর্থাৎ মালগুলো আটক করবার জন্যেই পাঠিয়েছিলাম!

    কি আশ্চর্য! তা তো পাঠিয়েছিলেন—কিন্তু–

    ঠিক আছে। আপনি এখুনি গিয়ে কাবুল কাস্টমসে একটাওয়ারলেস মেসেজ পাঠিয়ে দিন মালগুলো সেখানে আটক করবার জন্যে।

    কি আশ্চর্য! তা আর বলতে? এখুনি আমি যাচ্ছি!

    একপ্রকার যেন ছুটেই নির্মলশিব ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

    কিরীটী আর একটা ফ্রাই বাটি থেকে তুলে কামড় দিতে দিতে বললে, নাঃ, ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে!

    .

    ২০.

    ঘণ্টা দেড়েক বাদেই আবার নির্মলশিব হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরে এল আমাদের ফ্ল্যাটে।

    কি হল, দিয়েছেন মেসেজ পাঠিয়ে?

    হ্যাঁ, প্লেন এতক্ষণে বোধ হয় পোঁছল কাবুল পোর্টে। কিন্তু কি আশ্চর্য সত্যি সত্যিই সুব্রতবাবু, যাকে বলে তাজ্জব বনে গিয়েছি। অ্যাঁ, সিগারেটের প্যাকেটের মধ্যে সোনা! এ যে রূপকথাকেও হার মানাল!

    সত্যি, রূপকথার চাইতেও যে সময় সময় বিস্ময়কর কিছু ঘটে নির্মলশিববাবু!

    কিন্তু তা যেন হল, এই উর্বশী সিগারেটের ব্যাপারটা আপনাকে সন্ধান দিল কে মিঃ রায়?

    মৃদু হেসে কিরীটী বলে, কে আবার দেবে। ভগবান যে দুজোড়া চক্ষু কপালের ওপর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন সেই চক্ষুজোড়াই সন্ধান দিয়েছে। তা যেন হল,-আমাকে আর একটা যে কাজের ভার দিয়েছিলাম সেটার কতদূর করলেন?

    কিসের? সেই হরগোবিন্দবাবুর কুকুর দুটোর কথা তো?

    হ্যাঁ।

    বললেন, তিনি কুকুর নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন ঠিক সময়—কথা দিয়েছেন।

    ঠিক আছে, তাহলে আপনাকে ঠিক যে জায়গায় থাকতে বলেছি সেইখানে সশস্ত্র একেবারে হাজির থাকবেন কাল রাত্রে যথাসময়ে।

    কি আশ্চর্য! থাকব বৈকি!

    তাহলে এবারে আসতে আজ্ঞা হোক।

    কি আশ্চর্য! উঠতে বলছেন তাহলে? হ্যাঁ।

    বেশ, বেশ। কি আশ্চর্য। তাহলে আমি চলি, কি বলেন?

    হ্যাঁ।

    নির্মলশিববাবু বিদায় নেবার পর কিরীটী বললে, সুব্রত, ঘরটা একটু পরিষ্কার করে রাখ।

    কেন, কি ব্যাপার?

    বলা তো যায় না, হঠাৎ ধর তোরই খোঁজে কোন ভদ্রমহিলার যদি এ ঘরে এই সময়ে আবির্ভাব ঘটে তিনি কি ভাববেন বল্ তো! ভাববেন হয়ত আমরা বুঝি কেবল দক্ষিণ হস্তে একটি ব্যাপারের সঙ্গেই পরিচিত। সেটা কি খুব শোভন হবে।

    তা যেন বুঝলাম, কিন্তু আসছেন কে?

    কে বলতে পারে-হয়ত চিত্রাঙ্গদা, নয়ত রাজনটী বসন্তসেনা, কিংবা স্বয়ং উর্বশীই এই ক্ষুদ্র ফ্ল্যাটে আবির্ভূতা হতে পারেন।

    হেঁয়ালি রাখ। কথাটা খুলে বল্।

    আমিই কি সঠিক জানি নাকি যে হেঁয়ালি ছেড়ে সঠিক বলব! সবটাই তো আমার অনুমান।

    কিন্তু কিরীটীর অনুমান সেরাত্রে মিথ্যেই হল।

    অথচ সেরাত্রে প্রতিটি মুহূর্ত যে কার অপেক্ষাতে কিরীটী অসীম আগ্রহে কাটিয়েছে, একমাত্র তা আমিই জানি।

    এবং শেষ পর্যন্ত যতক্ষণ না রাত্রি প্রভাত হল কিরীটী শয্যায় গেল না।

    জেগেই কাটিয়ে দিল রাতটা।

    পরের দিনও সারাটা দিন কিরীটী ঘরে বসেই কাটিয়ে দিল।

    কোথাও বের হল না।

    কেবল চেয়ারটার উপরে চোখ বুজে বসে রইল।

    কিন্তু বুঝতে পারছিলাম তার কান দুটো খাড়া হয়ে আছে।

    এবং সে কারও আসারই প্রতীক্ষ্ণ করছে।

    অবশেষে একসময় ক্রমশ বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা এল।

    এবং ক্রমশ যতই সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হতে চলল কিরীটী একটা চাপা উত্তেজনায় যেন অস্থির হয়ে উঠতে লাগল।

    এবং ব্যাপারটা যে আদৌ হেঁয়ালি নয় সেটাই যেন ক্রমশ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল।

    কিরীটী সত্যি সত্যিই কারও আগমন প্রতীক্ষ্ণয় ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত অস্থির, অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছে গতকালের মতই।

    কিন্তু কে?

    কার আগমন প্রতীক্ষ্ণ করছে কিরীটী?

    কার আগমন প্রতীক্ষ্ণয় কিরীটী এমন চঞ্চল হয়ে উঠেছে?

    এমন উত্তেজিত হয়ে উঠেছে?

    ইতিমধ্যে কিরীটী চেয়ার থেকে উঠে পায়চারি শুরু করেছিল।

    আমি নির্বাক চেয়ারে বসে আর কিরীটী ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে।

    পায়চারি করছে দেখছি সে সমানে সেই বেলা তিনটে থেকে।

    মধ্যে মধ্যে অস্থির ভাবে নিজের মাথার চুলে আঙুল চালাচ্ছে।

    শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ একটানা কয়েক ঘণ্টার প্রতীক্ষ্ণর বুঝি অবসান হল রাত্রি সাড়ে নটায়।

    ঘরের বন্ধ দরজায় অত্যন্ত মৃদু নক পড়ল।

    সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু কিরীটী গিয়ে দরজা খুলে দিল।

    আসুন—আপনার জন্যেই এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতাম আসবেন। ও কি, বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? ঘরের ভিতরে আসুন।

    ঘরে এসে ঢুকল সীতা মৈত্র।

    আমিও দরজার কাছে এগিয়ে গিয়েছিলাম।

    কিরীটী দরজাটা বন্ধ করে দিল।

    বসুন।

    সীতা মৈত্র কিন্তু বসল না।

    হাতের হ্যান্ডব্যাগ থেকে একখানা চিঠি বের করে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললে, আপনিই তাহলে এই চিঠি আমাকে পাঠিয়েছেন?

    চিঠির নিচে তো আমার নামস্বাক্ষরই তার প্রমাণ দিচ্ছে সীতা দেবী!

    কিন্তু আমি আপনার চিঠির কোন অর্থই তো বুঝতে পারলাম না মিঃ রায়!

    মৃদু হেসে কিরীটী বললে, পেরেছেন বৈকি!

    পেরেছি?

    হ্যাঁ, পেরেছেন। নচেৎ আমার কাছে চিঠি পড়েই ছুটে আসতেন না।

    কিন্তু—

    বসুন ঐ চেয়ারটায়, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো কথা হয় না।

    বিশ্বাস করুন আপনি, আপনার এই চিঠির অর্থটা জানবার জন্যেই আমি এসেছি।

    সত্যিই কি এখনও আপনি বলতে চান সীতা দেবী, চিঠির অর্থ আপনি বোঝেননি? সত্যিই কি আপনি বলতে চান আপনার নিজের বর্তমান অবস্থার গুরুত্বটা আপনি এখনও বুঝতে পারেননি?

    আমার বর্তমান অবস্থার গুরুত্ব!

    হ্যাঁ, মৃত্যু আপনার সামনে আজ এসে ওৎ পেতে দাঁড়িয়েছে।

    মৃত্যু কথাটার সঙ্গে সঙ্গেই যেন চমকে তাকায় সীতা কিরীটীর মুখের দিকে।

    কিরীটী নির্মম কণ্ঠে বলতে লাগল, আপনি জানেন না এখনও কিন্তু আমি জানি সীতা দেবী, যে দলের সঙ্গে আজ আপনি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক ভিড়েছেন তাদের আসল ব্যাপারটা কি! ওভারসিজ লিঙ্কের আসল ও সত্যিকার ব্যাবসাটা জানেন কি?

    জানি বৈকি, কেমিক্যালস, চা, সিগারেট।

    জোর গলাতেই কথাগুলো সীতা মৈত্র বলবার চেষ্টা করলেও যেন মনে হল গলাটা তার শুকিয়ে উঠেছে।

    দু চোখে শঙ্কাব্যাকুল দৃষ্টি।

    কিন্তু ওগুলো তো বাহ্য। আসলে যে মৃগয়া ওদের চলেছে সেটা কি জানেন?

    কী?

    চোরাই সোনা চালান দেওয়া।

    সোনা?

    ছোট একটা টোক গিলে যেন প্রশ্নটা করল সীতা।

    হ্যাঁ, চোরাই সোনা। যে সোনা এদেশ থেকে নানাভাবে চুরি করে, গালিয়ে, ছোট ছোট চাবির আকারে উর্বশী সিগারেটের প্যাকেটে ভরে বিদেশে চালান দিচ্ছে আপনাদের ওভারসিজ লিঙ্কের কর্তারা!

    না, না—কি বলছেন আপনি?

    ঠিকই বলছি।

    কিরীটীবাবু, আমি সত্যিই একেবারে কিছুই জানি না।

    এতক্ষণে সত্যি সত্যিই সীতা যেন ভেঙে পড়ল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.