Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কুটু মিয়া – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প132 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. কে দেখা করতে এসেছে

    আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে? কে দেখা করতে এসেছে?

    ঐ যে লোকটা শইল্যে বন ঘেরান।

    কুটু মিয়া?

    জ্বে কুটু মিয়া। আাগো আমার ডর লাগতাছে।

    হামিদা বিছানায় শুয়ে ছিল, উঠে বসল। তার ইচ্ছা আসিয়াকে একটা কড়া। ধমক দেয়। আহ্লাদী ধরনের কথা অসহ্য লাগে। আমার ভয় লাগতাছে মানে কী? ভর লাগার কী হয়েছে? এইসব হচ্ছে মন রাখার কথা। আলিয়া বুঝতে পারছে কুটুকে তার আপা অপছন্দ করছে- কাজেই সে ডুর লাগার কথা বলছে। যদি এমন হতো সে কুটুকে পছন্দ করত তাহলে আসিয়া বলত— লোকটা এমুন ভালো। দেখলেই মনে শান্তি শান্তি লাগে।

    হামিদা বলল, সে কী চায়?

    আফনের সাথে কথা বলতে চায়। হাতে আইসক্রিমের বাটি। মনে হয় তরকারি আনছে। আফাগো হের তরকারি খাইয়েন না। হের শইল দিয়া ভুরভুর কইরা পচা গোবরের বাস আসতাছে।

    হামিদা বলল, আসিয়া এত কথা বলার দরকার নেই। আমি ওর তরকারি খাব কি খাব না সেটা আমি ঠিক করব। আজ কি বার?

    বুধবার।

    আজ কি নয় তারিখ?

    জানি না আফা।

    আজ যে নয় তারিখ, বুধবার এই তথ্য হামিদার জানা আছে। তারপরেও অন্যের কাছে জানতে চাওয়ার অর্থ কি এই যে হামিদা চাচ্ছে না আজকের দিনটা বুধবার হোক? তার অবচেতন মন আসিয়ার কাছ থেকে অন্য কিছু শুনতে চাচ্ছে। হামিদা খাট থেকে নামল। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ঘরের কোণার দিকে তাকাল। দুটা সুটকেস রেডি করা আছে। কুটুর হাতে স্যুটকেস দুটা দিয়ে সে এখনই চলে যেতে পারে। যেতেই মুম্বন হবে আগে যাওয়াই কি ভালো না? কিন্তু মন টুনিছে না। একেবারেই মন টানছে না।

     

    হাজী সাহেবের বসার ঘরে কুটু দাঁড়িয়ে আছে। হামিদাকে দেখে সে বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দিল। হামিদা বলল, কী ব্যাপার কুটু?

    কুটু জবাব দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কুটুর গা থেকে কোনো পচা গন্ধ আসছে না। লেবুর গন্ধের মতো গন্ধ আসছে। অতি হালকা ঘ্রাণ কিন্তু স্পষ্ট। লেবু বাগানে যখন লেবু ফুল ফুটে তখন বাগানের আশেপাশে এমন সৌরভ পাওয়া যায়। আসিয়া বলছিল পচা গোবরের গন্ধ। আসিয়ার কথা সত্যি না।

    হামিদা দ্রুত চিন্তা করছে। কুটুর গা থেকে আগেও একবার লেবুর গন্ধ এসেছিল। আজ আসছে। এর পেছনে কোনো কারণ কি আছে? কুটু কি জানে লেবুর গন্ধ তার খুব পছন্দের?

    কুটু বলল, আপনার জন্য তরকারি আনছি। কাইল রাইতে এই তরকারিটা খাইয়া স্যার খুব পছন্দ করছিলেন। স্যার বললেন, আপনার জন্য এক বাটি পাঠাইতে।

    হামিদা বলল, তুমি কিসের তরকারি এনে আমি একটু আন্দাজ করি। দেখি আমার আন্দাজ ঠিক হয় কি-না। তুমি এনেছ শিং মাছের ডিমের তরকারি। আমার আন্দাজ কি ঠিক হয়েছে?

    কুটু চাপা গলায় বলল, জ্বি আপা।

    হামিদা বলল, আমার অনুমান করার শক্তি দেখে তুমি মুগ্ধ হও নি?

    কুটু জবাব দিল না। হামিদা বলল, আমি নিজে কিন্তু মুগ্ধ হয়েছি। অনুমান। কীভাবে করলাম জানো? শিং মাছের ডিমের কোল আমার খুব পছন্দের। দেশের বাড়িতে মা এই রান্নাটা রাধতেন। ভালো কোনো খাবারের কথা মনে হলেই আমার শিং মাছের ডিমের কথা মনে হয়। আমার পছন্দের জিনিসগুলি তুমি কীভাবে টের পাচ্ছ?

    কুটু মেঝের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। যে আইসক্রিমের বাটিতে করে সে ডিম নিয়ে এসেছিল সেই বাটি সে এখন পিঠের দিকে সরিয়ে রেখেছে।

    হামিদা বলল, তুমি কি মানুষের মনের কষ্মা বুঝতে পার? দাঁড়িয়ে থেক না। কথার উত্তর দাও।

    কুটু না-সূচক মাথা নাড়ল।

    হামিদা বলল, তুমি আমাকে চা বানিয়ে খাইয়েছিলে। দেখা গেল যে চা আমাকে খাইয়ে সেই মশলা চা অনেক দিন থেকেই আমার খাওয়ার শঙ্খ। আমার জন; তরকারি নিয়ে এসেছ। দেখা গেল যে তরকারি এনেছ সেই তরকারি অনেক দিন থেকে আমার খাওয়ার শখ। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।

    কুটু বিড়বিড় করে বলল, আমি নিজেও কিছু বুঝি না আপা।

    হামিদা বলল, আজ আমি ঐ বাড়িতে যাচ্ছি। সে-রকম কথা আছে। তুমি কি সেটা জানো?

    জানি।

    যদি জানো তাহলে তরকারি নিয়ে এলে কেন?

    কুটু নিচু গলায় বলল, আপনারে বলতে আসছি যেন আপনি না যান।

    আমার নিজের বাড়িতে আমি যাব না?

    অবশ্যই যাইবেন আপা। কয়েকটা দিন পরে যাইবেন। কয়েকটা কুত্তা আইসা। জুটছে। কুত্তাগুলা খুবই উপদ্রব করতেছে। এর মধ্যে একটা কুত্তার হইছে জ্বলাতঙ্ক। পাগলা কুত্তা।

    তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ? আমি আমার নিজের বাড়িতে যাব না— কুকুরের ভয়ে? আমি অবশই যাব। আজই যাব।

    জ্বি আচ্ছা।

    কুটু শোন, বাড়িতে গিয়ে আমি যেন তোমাকে দেখতে না পাই। তোমার চাকরি অনেক দিন হয়েছে। এখন চাকরি শেষ। বুঝতে পারছ কী বলছি?

    জ্বি। তরকারিটা কি রাইখা যাব, না নিয়ে যাব?

    হামিদা ক্লান্ত গলায় বলল, তরকারি যা ইচ্ছা কর। ঐ তরকারি আমি খাব না। এখন আমার সামনে থেকে বিদেয় হও। সাময়িক বিদায় না পুরোপুরি বিদায়। আমি আমার বাড়িতে যখন যাব তখন যেন তোমাকে না দেখি।

     

    হাজী সাহেব বইয়ের দোকানে বসে আছেন। তাঁর চোখ মুখ শুকনা। মুখ হা করা। তিনি পান খাচ্ছিলেন। পান চিবানো বন্ধ হওয়ায় মুখে পানের রসের আস্তরণ জমে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ তার মুখের ভিতরে খয়েরি রং করে দিয়েছে। হাজী সাহেব দশ মিনিট আগে খবর পেয়েছেন ইয়াকুব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। কুকুরের কামড়ে কেউ মারা গেছে এটা তিনি আগে শুনেন নি। কুকুর সুন্দরবনের বাঘ না। ঝেড়ে লাথি দিলে কুকুর পালাবার পথ পায় না। সেই কুকুর কামড়ে মানুষ মেরে ফেলেছে— এটা কেমন কথা!

    ইয়াকুবের এক চাচাতো ভাই দোকানের সামনে এসে বিরাট হৈচৈ শুরু করেছে। তাকে ঘিরে মানুষের ভিড়। সে আকাশ ফাটিয়ে চিক্কার করছে— কুত্তা দিয়া আমার ভাইরে খাওয়াইছে। কী সর্বনাশ করছে গো! কুত্তা দিয়া আমার ভাইরে খাওয়াইছে। আফনেরা বিচার করেন। আমার আদরের ভাইরে কুত্তা খাইয়া সেলাইই।

    হাজী সাহেব ম্যানেজারকে বললেন, টাকা দিয়ে যেন এর মুখ বন্ধ করা হয়। তারপর আড়ালে নিয়ে যেন শক্ত থাপ্পড় দেয়া হয়।

    হাজী সাহেবের মেজাজ খুবই খারাপ হয়েছে। তার সামনে নানান ঝামেলা। হাসপাতাল থেকে ডেডবড়ি আসবে। সেই ডেডবড়ি গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে। সঙ্গে টাকা পয়সা দিতে হবে। পুলিশের ঝামেলা ও হবে। গন্ধে গন্ধে পুলিশ চলে আসবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু মানেই পুলিশের মুখে হাসি। ওসি সাহেব তদন্তে আসবেন। গলা নিচু করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলবেন- ইয়াকুব হলো প্রেসের কর্মচারী। সে তো দারোয়ানের কাজ জানে না। তারপরেও তাকে আপনি দারোয়ানের কাজে কেন পাঠালেন?

    যে কুকুরগুলি মানুষ মেরেছে তারা তো আপনার ভাগ্নির পোষা কুকুর। আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়েছি কুকুরগুলি আপনাদের লোকের ইশারায় ঝাপিয়ে পড়েছে। ঘটনা কি সত্যি সত্যি হোক আর মিথ্যা হোক, আপনাকে আর আপনার ভাগ্নিকে একটু থানায় যেতে হবে।

    পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্যে ম্যানেজারকে আগেভাগেই থানায় পাঠানো দরকার। হামিদার বাড়িতেও যাওয়া দরকার। আলাউদ্দিনকে সবকিছু বুঝিয়ে আসতে হবে। পুলিশ যদি তদন্তে আসে তাহলে যেন উল্টাপাল্টা কিছু না। বলে। তাকে বলতে হবে নকশন কুকুর কামড়েছে আমি কিছুই জানি না। আমার শরীর খারাপ ছিল। আমি দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিলাম।

    লাশের সুরতহাল হবে। সুরতহালের রিপোর্টে যেন কিছু না থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সুরতহাল যে ডাক্তার করবে তাকে টাকা খাইয়ে রাখতে হবে। যেন সে ঠিকঠাক লেখে কুকুরের কামড়ে মৃত্যু। উল্টাপাল্টা কোনো লাইন লিখে ফেললে সাড়ে সর্বনাশ।

    হাজী সাহেব দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। সভাবে মরেও রক্ষা নাই। চারদিকে টাকা খাওয়াতে হচ্ছে। এরচে আফসোসের কারণ আর কী হতে পারে! ইয়াকুবের ভাইয়ের চিঙ্কার বন্ধ হয়েছে। তাকে সাতশ টাকা দেয়া হয়েছে। সে এখন বেশ খুশি মনেই দোকানের এক কোণায় বসে পিরিচে ঢেলে চা খাচ্ছে। দোকানের সামনে মানুষের ভিড় কমছে না। বরং বাড়ছে।

    হাজী সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। আজ আর দোকান খোলা রাখা যাবে না। বসতে হলে প্রেসে গিয়ে বসতে হবে। তারও আগে আলাউদ্দিনের কাছে যেতে হবে। হামিদাকে আজ কেন আনলেন সেটা তাকে বলা দরকার। সে নিশ্চয়ই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। হয়তো দেখা যাবে হামিদার বাড়ির সামনে ও রাজ্যের ভিড়। টিভি ক্যামেরা চলে এসেছে। চ্যানেল গুলি চালু হওয়ায় আজকাল নতুন জিনিস শুরু হয়েছে। অন দা স্পট নিউজ। চেংড়া কোনো ছেলে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে হামিদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট করবে—

    এই সেই ঘাতক বাড়ি। এই বাড়িরই দুটি কুকুরের আক্রমণ প্রাণ দিতে হলো নিরীহ ইয়াকুবকে। ঐ যে দেখা যাচ্ছে ঘাতক কুকুর দুটিকে। তাদের শান্ত চেহারা, আলস্যের লেজ নাড়া লেখে কে বলবে এরা দুই হন্তারক!

     

    হাজী সাহেব হামিদার বাড়ির সামনে এসে খুবই অবাক হলেন। নিরিবিলি বাড়ি পড়ে আছে। চারপাশে কেউ নেই। হাজী সাহেব ভয়ে ভয়ে গেট খুললেন। তার মনে শঙ্কা কখন কুকুর দুটি ছুটে আসে। বাড়ির আশেপাশে কোনো কুকুরই নেই। দোতলায় উঠার সিড়ির গোড়ায় একটা কালো কুকুর দেখা গেল। সে হাজী। সাহেবকে দেখে কুঁই কুঁই করে উঠে চলে গেল। কুকুরটাকে মোটেই ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে না। রাস্তার নেড়ি কুকুর কখনো ভয়ঙ্কর হয় না। এদের জীবন কাটে ডাস্টবিনে ডাস্টবিনে খাবারের সন্ধানে। কুকুরসুলভ গুণাবলী এদের মধ্যে দেখা যায় না। হাজী সাহেব কুকুরটার দিকে তাকিয়ে যাহ বলতেই কুকুরটা যেভাবে চমকে লাফিয়ে উঠল এবং কুই কুই করতে করতে পালিয়ে গেল তা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় মানুষকে কামড়ানোর সাহস এই কুকুর কোনোদিনও সংগ্রহ করতে পারবে না।

    কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দিল কুটু। সে হাজী সাহেবকে দেখে বিয়ে। প্রায় নুয়ে গেল। হাজী সাহেব বললেন, কেমন আছ?

    কুটু বলল, ভালো আছি জনাব।

    আলাউদ্দিন বাসায় আছে?

    জি আছেন। শুয়ে আছেন।

    শুয়ে আছে কেন? শরীর খারাপ

    জি।

    হয়েছে কী–জ্বর?

    জ্বর সামান্য আছে। শইলে পানি আইছে।

    বলো কি? ডাক্তার দেখিয়েই?

    জ্বি না। দেখি স্যার যদি রাজি হন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়া যাব।

    আলাউদ্দিনকে দেখে হাজী সাহেব চমকে উঠলেন। এই কদিনে কী হয়েছে। মানুষটাকে তো চেনাই যাচ্ছে না। মুখ এ ফুলেছ যে চোখই ঢাকা পড়ার অবস্থা। জায়গায় জায়গায় চুল উঠে যাচ্ছে। এখন তাঁর মাথায় খাবলা খাবলা চুল। শরীরে মনে হয় রক্ত নেই। মুখ সাদা, ঠোঁট সাদা। হাজী সাহেব কুটুর দিকে তাকিয়ে বললেন, ঘরে বিকটু পচা গন্ধ। গন্ধটা কোথেকে আসছে?

    কুটু বলল, ইঁদুর মইরা পইচা গেছে। পচা ইঁদুরের গন্ধ। কোন চিপা চাপায় মরছে খুঁইজা পাইতেছি না।

    দরজা জানালাও তো সব বন্ধ। দরজা জানালা খোল, পর্দা সরাও, ঘরে আলো বাতাস আসুক। দরজা জানালা খুলে রাখলে পচা গন্ধ কিছু কমবে। মেঝে ফিনাইল। দিয়ে ধুয়ে দাও।

    কুটু মিয়া বলল, জ্বি আচ্ছা।

    হাজী সাহেব আলাউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার ব্যাপারটা কী বলো তো?

    আলাউদ্দিন ফিসফিস করে বললেন, আপনার কাছে আমি ক্ষমা চাই।

    হাজী সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, ক্ষমা চাচ্ছ কেন? অপরাধটা কী করেছ?

    বইটা লিখতে পারছি না। হস্তরেখা বিজ্ঞান।

    তোমার শরীরের যে অবস্থা— এই অবস্থায় বই লেখা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি অতি দ্রুত কোনো হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি হও। আজ কালের মধ্যে ভর্তি হও।

    আলাউদ্দিন বললেন, আমার শরীরটা দুর্বল, এছাড়া আর কোনো অসুখ বিসুখ নাই।

    হাজী সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, কী বলছ অসুখ বিসুখ নাই! তোমার তো হাত পায়ের সব আঙুল নীল হয়ে আছে। আমার ধারণা তোমার সিরিয়াস কিছু হয়েছে। অবশ্যই তুমি আজ ডাক্তারের কাছে যাবে। আমি সন্ধ্যাবেলা গাড়ি নিয়ে আসব। তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। ডাক্তার বললে হাসপাতালে ভর্তি হবে।

    আলাউদ্দিন বললেন, জি আচ্ছা।

    তুমি তৈরি থাকবে। আমি ঠিক চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে চলে আসব। হামিদাকে আজ আর অনলাম না। তোমাকে ডাক্তার নিশ্চয়ই হাসপাতালে ভর্তি করবে। হামিদা খালি বাড়িতে এসে কী করবে! ও কয়েক দিন পরে আসুক। আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব।

    জি আচ্ছা। আপনার অনেক মেহেরবানি।

    মেহেরবানির কিছু না, এটা আমার কর্তব্য। তুমি তো বাইরের কেউ না। তুমি এখন আমার আত্মীয়। ভাগ্নিজামাই। তোমাকে তো আমি আসল কথাই বলতে ভুলে গিয়েছি। তোমার কাছে পুলিশ আসতে পারে। যদি আসে, বলবে আমি কিছুই জানি না। আমার শরীর খারাপ। রাত আটটার সময় দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছি।

    আলাউদ্দিন বলল, আপনার কথা বুঝতে পারছি না। আমি কী জানি না?

    ইয়াকুবকে কখন কুকুরে কামড়েছে আর কখন সে মারা গেছে কিছুই জানো। না।

    আমি তো আসলেই কিছু জানি না। ইয়াকুব কে?

    কিছু যদি না জানো তাহলে ইয়াকুব কে এটাও জানার দরকার নেই। এই জগতে যত কম জানা যায় ততই ভালো। আমি উঠলাম। বিকেলে আসব। হামিদাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসি। তুমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাও।

    আপনি যা বলবেন আমি তাই করব। হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে ভর্তি হব। যদি বলেন এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে আমি চলে যাব।

    হাজী সাহেব ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সেটা আমি জানি। তুমি নিতান্তই ভালো মানুষ। আফসোস, হামিদা এটা বুঝতে পারছে না। যাই হোক তোমার ঘরে আমি আর থাকতে পারছি না। পচা গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তোমার বাবুর্চিকে বলে সে যেন খাট পালঙ্ক সরিয়ে মরা ইঁদুর খুঁজে বের করে। গন্ধেই তো। মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে।

    আলাউদ্দিন বললেন, আমার বাবুর্চি বিষয়ে একটা কথা ছিল। হামিদা বলেছে বাবুর্চিকে বিদায় করে দিতে। আজকেই চলে যেতে বলেছে। তাকে কি বিদায় করে দেব।

    হাজী সাহেব বললেন, আরে না ও থাকুক। যেতে হলে পরে যাবে। এখন। তাকে বলে— পচা ইঁদুরটা খুঁজে বের করতে।

    আলাউদ্দিন চুপ করে রইলেন। পচা ইদরটা কোথায় তিনি জানেন। বুক। শেলফের পেছনে। কুটু মিয়াই এনে রেখেছে। কুটুর যুক্তি হলো— মদ যারা খায়। তাদের মুখ থেকে মদের গন্ধ বের হয়। ঘরে কোনো পচা ইঁদুর থাকলে সেই ইঁদুরের বিকট গন্ধে অন্য গন্ধ কেউ টের পাবে না। আলাউদ্দিন কুটুর বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। আসলেই তো ঘটনা সে-রকম। হাজী সাহেব কিছুই টের পান নি। পচা ইঁদুরের গন্ধে আলাউদ্দিনের নিজের অসুবিধা হচ্ছে না। পচা গন্ধটা নাকে সয়ে গেছে।

     

    হাজী সাহেব দোতলার সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন। সিঁড়ির গোড়ায় কালো কুকুরটা দাঁড়িয়ে আছে। তার সঙ্গে আরেকটা কুকুর যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় কুকুরটা ছোট। দুটা কুকুরই তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের চোখ চকচক করছে। শ্বাপদ প্রাণীদের চোখ রাতে জ্বলে, এদের দেখা যাচ্ছে দিনেই জ্বলছে। হাজী সাহেব উপর থেকে বললেন- এই যাহ!

    দুটা কুকুর দুদিকে সরে গেল। তবে বেশি দূর গেল না। মাঝখানে জায়গা রেখে দুপাশে দাঁড়াল। এবং তাকিয়ে রইল হাজী সাহেবের দিকে। এক মুহূর্তের জানো ও দৃষ্টি সরালি না।

    হাজী সাহেব একবার ভাবলেন কুটুকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন। হাতে লাঠিসোঠা থাকবে। কুকুর দুটিকে দেখতে ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে না। রাস্তার নেড়ি কুকুর যেরকম থাকে সে-রকম। কিন্তু এরাই তো ইয়াকুবকে কামড়ে মেরে ফেলেছে। যদি তাকে তাড়া করে। তাছাড়া এদের চোখের দৃষ্টি ভালো না। হাজী সাহেব নিচে নেমে এলেন। তিনি ঠিক করে রেখেছেন যদি তাকে দেখে কুকুর দুটা কাছে এগিয়ে আসে তাহলেই দোতলায় উঠে কুটুকে নিয়ে আসবেন। কুকুব দুটা যে-রকম দাঁড়িয়ে ছিল সে-রকম দাঁড়িয়ে রইল। হাজী সাহেব উঠোনে নামলেন।

    কুকুর দুটা এখনো তাকিয়ে আছে। লেজ নাড়ছে, কিন্তু নড়ছে না। তিনি গেটের দিকে এগুচ্ছেন। কুকুর দুটা এখন তার পেছনে পেছনে আসছে। তার কাছে হঠাৎ মনে হলো এরা তাঁকে কামড়াবে। অবশ্যই কামড়াবে। যে-কোনো মুহূর্তে দুজন দুদিক থেকে তাঁর গায়ে ঝাপিয়ে পড়বে। আতঙ্কে হাজী সাহেবের শরীর হিম হয়ে গেল। তিনি শুনেছেন মানুষ যদি ভয় পায় কুকুর সেই ভয় বুঝতে পেরে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ভয় পাওয়া যাবে না। কিন্তু তিনি ভয়ের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। তার কপাল ঘামছে। প্রবল ইচ্ছা করছে দৌড় দিতে। তিনি গেটের কাছাকাছি চলে এসেছেন। কুকুর দুটার কিছু বোঝার আগেই তিনি দৌড়ে গেট পার হতে পারবেন। কিন্তু দৌড়ানো ঠিক হবে না। কুকুরের সামনে যারাই দৌড় দিয়েছে তারাই কুকুরের কামড় খেয়েছে। ইয়াকুব হঠাৎ ভয় পেয়ে দৌড় দিয়েছিল বলেই কামড় খেয়েছে।

    হাজী সাহেব গেট পার হলেন। এখন তিনি রাস্তায়। রাস্তার পাশে গাছের নিচে একটা খালি রিকশা আছে। রিকশায় কোনোমতে উঠে পড়তে পারলে আর ভয় নেই। চলন্ত রিকশার কোনো যাত্রীকে কুকুর কামড়েছে বলে শোনা যায় না। এই কুকুর দুটা পাগলা কুকুরও না। পাগলা কুকুরের চালচলন আলাদা থাকে। এরা সারাক্ষণ মুখ হা করে থাকে। মুখ দিয়ে লালা পড়ে। পাগলা কুকুরের লেজ নামানো থাকে। এই কুকুর দুটির লেঞ্জ নামানো না। ভ্ৰাদের মুখ দিয়ে লালা ও পাড়ছে না।

    হাজী সাহেব রিকশায় উঠলেন। রিকশাওয়ালাকে ক্ষীণ স্বরে বললেন, বাংলাবাজার যাও। রিকশাওয়ালা রিকশা চালাচ্ছে। কুকুর দুটা পেছনে পেছনে আসছে। আসুক, এখন আর কোনো সমস্যা নেই। হাজী সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আর তখনই কুকুর দুটা দুদিক থেকে এসে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। তিনি উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেন। রিকশা উল্টে গেল। কুকুর দুটা পায়ের মাংসে দাঁত বসিয়ে দিয়েছে। রিকশা উল্টে যাবার পরও এরা পালিয়ে গেল না। দাত বসিয়ে রাখল।

    তিনি দুই হাত দিয়ে কালো কুকুরটার মাথা সরাতে চেষ্টা করলেন। কালো কুকুরটা তার পা ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকাল। এবং তার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। তার কাছে মনে হলো কুকুরটা প্রকাণ্ড হা করেছে। কুকুরটা এখন তার পুরো মাথাটাই তার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে নেবে।

    তিনি চিৎকার করে বললেন, বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও।

    হাজী সাহেবকে যখন কুকুর কামড়ে ধরেছে তখন হামিদা বাথরুমে গোসল করছিল। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে মাথা দিয়েছে তখনই সে কুকুর দুটার গর্জন শুনল। সেই সঙ্গে স্পষ্ট শুনল— তার মামা চিৎকার করছেন, বাঁচাও আমাকে বাঁচাও।

    বাথরুম থেকে আধভেজা হয়ে সে ছুটে বের হলো। সিড়ি দিয়ে সে ছুটে নামছিল এবং চিৎকার করছিল, মামাকে কুকুর মেরে ফেলছে। মামাকে কুকুর মেরে ফেলছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগৌরীপুর জংশন – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কিছুক্ষণ – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }