Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কুটু মিয়া – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প132 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. কতক্ষণ পানিতে আছি

    কুটু আমি কতক্ষণ পানিতে আছি?

    আটতিরিশ ঘণ্টা।

    শুধু ঘণ্টার হিসাব দিলে হবে না, মিনিটের হিসাবও লাগবে। আটত্রিশ ঘণ্টা কত মিনিট?

    আটতিরিশ ঘণ্টা সাত মিনিট।

    তোমার কি মনে হয় আমি পানিতে বাস করার বিশ্ব রেকর্ড করতে পারব?

    মানুষ চেষ্টা নিলে সব পারে।

    ভুল বললে কুটু। মানুষ চেষ্টা নিলেও সব কিছু পারে না। আমি হাজার চেষ্টা করলেও গান গাইতে পারব না। আমার গানের গলা নাই। গান গাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। সম্ভব হলো না। আমি যখন একা থাকতাম তখন মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান করতাম। এখন আমার সঙ্গে তুমি থাকি। লজ্জা লাগে বলে গাইতে পারি না।

    কোন ধরনের গান করতেন।

    বেশির ভাগ ইসলামি সঙ্গীত। তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে টাইপ।

    আমি অন্য ঘরে যাই, আপনি গান করেন।

    না তুমি থাক। আমি ঠিক করেছি এখন থেকে গান গাওয়ার ইচ্ছা হলে তোমার সামনেই গাই। তুমি তো বাইরের কেউ না। তুমি হলে আপনা লোক। কুট, তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি– অল্পদিনের মধ্যে তোমার মাথ্যার চুল। বড় হয়েছে, নখ বড় হয়েছে। তোমাকে দেখতে কিন্তু খারাপ লাগছে না।

    শুকরিয়া।

    হামিদার ধমক খেয়ে তুমি যে চুল কেটে বাবু হয়ে গিয়েছিলে। তোমাকে দেখতে তখন ভালো লাগছিল না। একেকজনকে একেকভাবে মানায়। কাউকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় মানায়। কাউকে আবার নোংরা অবস্থায় মানায়। কুট তুমি কি গোসল বন্ধ করে দিয়েছ?

     

     

    জ্বি স্যার। পানি আমার শইলে সহ্য হয় না।

    সহ্য না হলে গোসল করার কোনো দরকার দেখি না। আমি চলব আমার মতো। পছন্দ না হলে আসবে না। কী বলো কুটু, সত্যি বলছি না?

    জ্বি স্যার।

    ভদকার সাপ্লাই আছে তো?

    তিন বোতল আছে।

    আরো আনিয়ে রাখ। হঠাৎ সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে বিরাট বিপদে পড়ব। স্টক পাকা ভালো। টাকা সুটকেসে আছে। চাবি কোথায় আছে জানো?

    আপনার বালিশের নিচে।

    ভেরি গুড। যখন প্রয়োজন হবে টাকা নিয়ে খরচ করবে। আমি দরিদ্র হতে পারি কিন্তু আমার হার্ট অনেক বড়। হাট কী জানো?

    না।

    হার্ট হলো হৃদয়। হার্ট একটা ইংরেজি শব্দ। বানান হলো— HEART, গ্লাসে ঢেলে জিনিস দাও। একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবে আমার গ্রাস যেন কখনো খালি থাকে।

    আইজ বেশি খাইয়া ফেলছেন স্যার। আর খাইলে বমি করবেন।

    আমার বমি আমি করব। যেখানে ইচ্ছা সেখানে করব। বুঝতে পারছ?

     

     

    জ্বি স্যার।

    রাত এখন কত?

    একটা বাজে স্যার।

    তুমি সব সময় ঘণ্টায় উত্তর দাও কেন? একটা বেজে কত মিনিট সেটা বলো।

    একটা পাঁচ।

    পাঁচ মিনিট সময় যে তুমি অগ্রাহ্য করলে এটা ঠিক করলে না। পাঁচ মিনিট। অনেক লম্বা সময়। পাঁচ মিনিট হলো তিনশ সেকেন্ড।

    স্যার যাই, রান্না করতে হইব।

    রান্না করতে হবে না। আজ আমি সলিড কিছু খাব না। লিকুইড জিনিস খাব। শুয়ে আছি লিকুইডের ভেতর। খাবও লিকুইড। লিকুইড হলো একটা ইংরেজি শব্দ। অর্থ হলো তরল। লিকুইড বানান শিখে রাখ— LIQUID. কুটু মিয়া–

    স্যার বলেন।

    আজ তোমাকে আমি গান শুনাব। একবার যাত্রা দেখতে গিয়ে এই গান শুনেছি। গানটা অন্তরে গেঁথে আছে। সুর যদি ভুল ভাল হয় কিছু মনে করো না। এখন তুমি গল্প বলো। প্রথমে তোমার গল্প, তারপর আমার গান। আবার তোমার। শা, আবার আমার গান। এই ভাবে চলতে থাকবে। কালো, গল্প বলো।

    গল্প জানি না স্যার।

    তোমার নিজের কথা বলো। তোমার বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী পুত্র কন্যা ওদের কথা বলো। তোমার ঘর সংসারের কথা। এটাই গল্প। রাজারানীর গল্প তো তোমার কাছে শুনতে চাচ্ছি না।

     

     

    নিজের সংসারের কথা কিছু ইয়াদ নাই স্যার। ভাসা ভাসা ইয়াদ আছে। স্ত্রীর চেহারা মনে আছে, নাম মনে নাই। মেয়েটার চেহারাও মনে নাই, নামও মনে নাই।

    তোমার এই অসুখটার নাম হলো এমনেশিয়া। স্মৃতি শক্তি বিলোপ। স্মৃতি শক্তি কীভাবে নষ্ট হলো? মাথায় আঘাত পেয়েছিলে? তোমার মাথার চুলের যেমন খাবলা খাবলা অবস্থা। মনে হয় আঘাত পেয়েছ।

    জ্বি না স্যার। আমার মৃত্যুর পর সব কেমন আউলা হইয়া গেছে। জীবিত যখন ছিলাম তখনকার কথা মনে নাই। ভাসা ভাসা ইয়াদ হয়। আবার বিস্মরণ। হয়। কবরের ভিতর আমার চুলগুলা পইড়া গেল। সব চুল পইড়া গেছিল। এখন কিছু কিছু উঠতেছে।

    কুটুর কথা শুনে আলাউদ্দিন কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর হাতে ধরা ভদকার গ্লাস একটানে শেষ করে বললেন আমি কানে ভুল শুনেছি কি না বুঝতে পারছি না। তুমি কী বললে, মৃত্যুর পর সব আউলা হয়ে গেছে।

    জ্বি।

    তুমি মারা গেছু না কি?

    জ্বি স্যার।

    কত দিন আগে মারা গেছ?

    এই ধরেন কুড়ি বছর।

    কুটু!

    জ্বি স্যার।

     

     

    তুমি যে খুবই বিস্ময়কর কথা বলছ এটা বুঝতে পারছ?

    জ্বি না।

    আমার ও ধারণা তুমি বুঝতে পারছ না। বুঝতে পারলে এ ধরনের কথা বলতে। আমি নিতান্ত ভদ্রলোক এবং ভালো মানুষ বলে তোমাকে কিছু বললাম না। অন্য কেউ মিথ্যা কথা বলার জন্য তোমাকে শত্রু ধমক দিত। হাজী সাহেবের সামনে এমন কথা বললে তিনি তোমাকে কানে ধরে উঠবোস করতেন। যাই হোক, তোমার গল্প বলার কথা তুমি গল্প বলেছ, এখন আমার গান শুনানোর পালা। তুমিও কোৱালে আমার সঙ্গে বরৰে। গানটা একটু অশীল আছে। কী করবে বলো— জগতের ভালো ভালো জিনিস সবই অশ্লীল।

    আলাউদ্দিন গান ধরলেন। কুটু ও তার সঙ্গে কোরাসে শামিল হলো।

    হাটু পানিতে নামিয়া কন্যা হাঁটু মাপ্তন করে
    কন্যার হাঁটু দেখিয়া আমার দিল কুড়কুড় করে।

    (কুটু এবং আলাউদ্দিন একত্রে কোরাস)
    যমুনার জল দেখতে কালো
    স্নান করিতে লাগে ভালো
    যৌবন মিশিয়া গেল জলে।

    নাড়ি পানিতে নামিয়া কন্যা নাভি মাঞ্জন করে।
    কন্যার নাভি দেখিয়া আমার দিল কুড়কুড় করে।

    (কোরাস)
    যমুনার জল দেখতে কালো
    স্নান করিতে লাগে ভালো
    যৌবন মিশিয়া গেল জলে।

     

     

    বুক পানিতে নামিয়া কন্যা বুক মাঞ্জন করে
    কন্যার বুক দেখিয়া আমার দিল কুকুড় করে।

    (কোরাস)
    যমুনার জল দেখতে কাল
    স্নান করিতে লাগে ভালো
    যৌবন মিশিয়া গেল জলে…।

    গান শেষ করে আলাউদ্দিন হুক্কার নল হাতে নিলেন। কুটু তাঁর জন্যে নয়াবাজার থেকে রবারের নল লাগানো হুক্কা কিনে এনেছে। পানিতে শুয়ে সিগারেট টানা যায় না। হুক্কা টানতে কোনো সমস্যা নেই। কুয়েতের শেখ আব্দাল রহমান পানিতে শুয়ে শুয়ে হুক্কা টানতেন। কুটু শুক্কার আইডিয়া সেখান থেকেই পেয়েছে। হুক্কা টানতে আলাউদ্দিনের খুবই ভালো লাগে। কেমন গুড়ুক গুড়ুক শব্দ হয়। সিগারেটের মতো না যে দুটা টান দিলেই শেষ। যতক্ষণ ইচ্ছা টানা যায়।

    কুটু মিয়া?

    জ্বি স্যার।

    আমার গান শেষ হয়েছে, এখন তোমার গল্প বলার পালা। গরু শুরু কর। তবে এবার মিথ্যা গল্প বলবে না। যদি মিথ্যা গল্প কর তাহলে কিন্তু কানে ধরে উঠবোস করাব। দেরি করবে না। ওয়ান টু থ্রি— গো। গো হলো একটা ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ শুরু কর। বানান হলো GO.

    কুটু শুরু করল— আমার মৃত্যু হইছিল জুম্মাবার। সকালে মৃত্যু হইছে। নামাজে জানাজা হইছে জুম্মার পর। ইমাম সাহেব বললেন, কুটু মিয়ারে তোমরা তাড়াতাড়ি কবর দাও। দিন থাকতে থাকতে যদি কবর হয় তাহলে সোয়াব বেশি। গোর আজাবও হয় কম।

     

     

    আলাউদ্দিন হুক্কার নলে লম্বা টান দিয়ে বললেন, ইমাম সাহেবের কথা তুমি শুনলে কীভাবে? তুমি তো মরেই গেছ।

    কুটু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, সমস্যা তো স্যার এইখানেই। আমি মইরা গছি কিন্তু সবার সব কা ওছি। চোখ বন্ধ, চোখে কিছু দেশতছি না। তবে হালকাভাবে নিঃশ্বাস নিতেছি। নাক বন্ধ নাকের গর্তে তুলা দিয়া দিছে। মুখ দিয়া অল্প অল্প নিঃশ্বাস নিতেছি। কাফনের কাপড় মুখের উপরে থাকায় শ্বাস টানতে খুবই কষ্ট। চিক্কার কইরা বলতে ইচ্ছা করছে— আমি মরি নাই। আমারে তোরা কবর দিস না। মুখ দিয়া কথা বাইর হয় না। হাত নড়াইতে চাই, নড়াইতে পারি না।

    এইভাবে তোমাকে কবর দিয়ে দিল।

    জ্বি। কুকুর দিয়া সবাই চইলা গেল। কবরের ভিতরে কী যে গরম। আপনেরে কী বলব। মনে হইল গরম তাওয়ায় শুইয়া আছি। আহারে কী কষ্ট। শুরু হইল কুম বৃষ্টি। শইল ডুইবা গেল পানিতে। নকি মুখ পানির উপর, সমান ভাইসা আছি। মনে মনে ভাবতেছি— আমার নাম কুটু। আমি বাজি ধইরা সাঁতার দিয়া নদী পার হইছি আর আইজ আমার মৃত্যু হাঁটু পানিতে।

    তারপর?

    এক সময় মনে হইল আমি ছাড়াও কবরের ভিতরে আরেকজন কে যেন আছে। নড়ে চড়ে শব্দ পাই। হাসে— সেই শব্দ পাই। মেয়ে ছেলের হাসি। কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দ। অল্প বয়সী মেয়ের হাসি।

    এইগুলো তোমার মনের ধান্ধা। বেশি ভয় পেলে মনে ধান্ধা লাগে। আমার নিজেরও কয়েকবার লেগেছে। মনে হয়েছে খাটের নিচে তুমি বসে আছ। কখনো কাগজ ছিড়ছ, কখনো বা কারো মুখের উপর বালিশ চেপে ধরেছ।

    মনের বান্ধা হইতে পারে। স্যার, ভয় পাইছিলাম অত্যাধিক। মাঝে মাঝে কবর কাঁপত। যখন কাঁপত তখন মেঘের ডাকের মতো শব্দ হইত।

    তারপর কী হলো?

     

     

    কত সময় যে পার হইল তার হিসাব নাই। তবে মেলা সময় পার করছি। এক সময় দেখলাম চোখ মেলতে পারি। চোখ মেললাম। ঘুটঘুট্টি আহ্মাইর। কবরের ভিতর দিনও যা রাতও তা। এই আন্ধাইর অন্তরের ভিতরে ঢুইকা যায়। আমার সমস্ত শইলে পোকা ধইরা গেল। আহা কী কষ্ট। পোকা কামড়ায়, হাত নড়াইতে পারি না। ডান চোখটা সেই সময় পোকা খাইয়া ফেলল। কিছুই করতে পারলাম না।

    ক্ষুধা তৃষ্ণা ছিল না?

    ক্ষুধা ছিল না, তবে পানির পিপাসা হইত। পানির পিপাসা হইত আবার চইলা যাইত।

    তারপর কী হলো?

    এক সময় দেখলাম হাত নড়াইতে পারি। পা নড়াইতে পারি। তখন কাফনের। ভিতর থেইকা বাইর হইলাম। মাটিতে হেলান দিয়া বসলাম।

    কবরের ভেতর বসার জায়গা থাকে?

    জি থাকে। কবর সেই ভাবে খোঁদা হয়।

    তুমি করে বসে রইলে?

    জি।

    বের হবার চেষ্টা করলে না?

    জ্বি না। আমার মনে হইল— ভালোই তো আছি। বাইর হইয়া কী লাভ? ক্ষুধা তৃষ্ণা কিছুই নাই। একটা আলাদা শান্তি। তবে কবর যখন কাঁপত তখন বড় অস্থির লাগত। বড়ই ভয় লাগত। ভয়ের চোটে পরায়ই পিশাব করে ফেলতাম।

     

     

    কতদিন এইভাবে বসে ছিলে?

    মনে হয় এক সপ্তাহ।

    তুমি না বললে কবরের ভেতর ঘুটঘুট্রি অন্ধকার। দিন রাত্রি বুঝলে কী করে?

    চোখ মেলার পরে বুঝলাম দিনের বেলা কবরের ভিতর সামান্য আলো থাকে। মাটির ফাঁক ফোঁকড় দিয়া ঢুকে। দিন রাত্রির হিসাব পাওয়া যায়।

    এক সপ্তাহ পরে কবর থেকে বের হয়ে এলে?

    জ্বি। রাতে বাইর হইছি। কাফনের কাপড়টা লুঙ্গির মতো প্যাচ দিয়া কোমরে পইরা গেলাম আমার বাড়িতে। স্ত্রীর নাম ধইরা ডাক দিলাম।

    কী নাম?

    সেই নাম এখন ইয়াদ নাই।

    তোমার স্ত্রী বের হয়ে এলো?

    জ্বি। সে বাইর হইল, আমার মা বাইর হইলেন। ছোট ভাই একটা ছিল, সে বাইর হইল। শুরু হইয়া গেল চিৎকার চেচামেচি। বিরাট ধুন্ধুমার। সবাই মনে করল আমি পিশাচ। কবর থেইক্যা উইঠা আসছি।

    তারপর কী হলো?

    পুরা গ্রাম জাইগ্যা গেল! এরী মশাল নিয়ে আমারে আগুনে পোড়ানোর জন্য দুইটা আসল। আমি দৌড় দিলাম। এরাও পিছে পিছে দৌড় দিল। কাফনের সাদা কাপড় দূর থেইকা দেখা যায়। আমি যেইখানে যাই এরা সেইখানে উপস্থিত হয়। শেষে কাপড় ফেইলা দিয়া ল্যাংটা হইয়া দৌড় দিলাম। অনেক কষ্টে জীবন নিয়া পালাইছি। চইলা আসলাম ঢাকা শহরে। অনেকদিন ভিক্ষা করছি।

     

     

    গ্রামে আর ফিরে যাও নি?

    জি না।

    না গিয়ে ভালোই করেছ। তোমাকে দেখলেই ভাববে তুমি মৃত মানুষ। আবার তাড়া করবে। কী দরকার?

    আমার গল্পটা কি স্যার বিশ্বাস হইছে?

    না, বিশ্বাস হয় নাই। তাতে কিছু যায় আসে না কুটু। অন্যের বিশ্বাসের উপর তো কারোর হাত নাই। তোমার গল্প শেষ হয়েছে। এখন আমার গান শুরু হবে। আগেরটাই গাই— কি বলে?

    জ্বি আচ্ছা।

    তুমি কোরাসে সামিল হয়ে। একা একা গান গেয়ে মজা নাই।

    আলাউদ্দিন গান ধরলেন–

    যমুনার জল দেখতে কালো
    স্নান করিতে লাগে ভালো
    যৌবন ভাসিয়া গেল জলে।

    কুটু ও তাঁর সঙ্গে গলা মিলাল। একসময় গান থামিয়ে আলাউদ্দিন আচমকা জিজ্ঞেস করলেন, কুটু ঠিক করে বলো তো আমার শরীরে ফোকা উঠেছে?

    কুটু বলল, পিঠের দিকে দুই একটা উঠছে।

    ফোসকার ভিতর পোকা আছে?

     

     

    কুটু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। আলাউদ্দিন বললেন, কবরের ভিতর তোমার শরীরে যে পোকা উঠেছিল এইগুলি কি সেই পোকা?

    কুটু বলল, জ্বি একই পাকা।

    আলাউদ্দিন বললেন, কুটু তুমি জীবিত মানুষ না মৃত মানুষ?

    কুটু বলল, আমি জানি না।

    আলাউদ্দিন আবারো গানে টান দিলেন–

    নাভি পানিতে নামিয়া কন্যা নাভি মাঞ্জন করে।
    কন্যার নাভি দেখিয়া আমার দিল কুকুড় করে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগৌরীপুর জংশন – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কিছুক্ষণ – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }