Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প67 Mins Read0
    ⤷

    ০১-০৫. নিজের সেই সত্যিকারের নামটা

    না, এখন আর আমার নিজের সেই সত্যিকারের নামটায় কেউ ডাকে না। জানেও না অনেকে। যারা জানত তারাও ভুলে গেছে।

    তাদের স্মৃতিশক্তির প্রতি অভিযোগ করে লাভ নেই, আমি নিজেই তো প্রায় ভুলতে বসেছি। আমি আমার ছদ্মনামের খোলসের কাছে আমার সত্তাকে সমর্পণ করেছি। ওই খোলসটা আশ্চর্যরকম সেঁটে বসে গেছে সেই সত্তার উপর, ওকে আর ওর থেকে পৃথক করে বার করে আনা যাবে এমন মনে হয় না।

    অথচ দীর্ঘকাল ধরে ভেবে এসেছি বার করে আনাটা আমার ইচ্ছাধীন। যখন প্রয়োজন ফুরোবে, তখন ওই খোলসটাকে ভেঙে ফেলে বার করে আনব আমার আমিটাকে। এখন প্রয়োজন রয়েছে, এখন আমাকে ছদ্মবেশের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকতে হবে।

    এই ছদ্মবেশ যেদিন ভেঙে ফেলব, সেদিন প্রকাশিত হব, বিকশিত হব, উদ্দাম হব, প্রমত্ত হব। সেদিন হাততালি দিয়ে বলে উঠব সবাইকে, দেখ, এতদিন কেমন ঠকিয়ে এসেছি তোমাদের। তোমাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে কেমন ছল করেছি।

    সেই অনাগত দিন-রাত্রিকে চিন্তা করতে করতে আমার এই ব্রহ্মচর্যে শীর্ণ দেহটার মধ্যেকার প্রবাহিত রক্তস্রোতে ঘুঙুর বেজেছে দ্রুত ছন্দে। গভীর রাত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অস্থির পদচারণায় জেগে কাটিয়েছি।

    জেগে কাটিয়ে আর একজনের চোখে নিজেকে দেখে থরথরিয়ে কেঁপেছি, দেহটাকে নিয়ে জর্জরিত হয়েছি, তার খাদ্য যোগাতে না-পেরে দিশেহারা হয়ে মাঝরাত্রে স্নানের ঘরে গিয়ে শাওয়ার খুলে মাথা পেতেছি।

    চুলে-ভরা মাথাটা ভিজিয়ে ভিজিয়ে জলের সেই ধারাবর্ষণ গড়িয়ে পড়ছে আমার অনাবৃত বুকে পিঠে, গড়িয়ে পড়েছে আরও নীচে পা বেয়ে অনেক-অনেকক্ষণ ধরে। আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে রক্ত, থেমে গেছে ঘুঙুরের ঝমঝমানি। ঘরে এসে শুকনো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে, ভিজে চুল বালিশে ছড়িয়ে সাধনা করেছি উধাও হয়ে যাওয়া ঘুমকে ফিরিয়ে আনবার।

    আমার এই ছোট্ট ঘরখানার অপর কোনো অংশীদার নেই, তাই আমার এই নৈশচারণের সাক্ষী থাকে না। যদিও জানি আমার মায়ের মনটা ভেঙে গিয়েছিল আমি হঠাৎ তার শয্যাংশ ছাড়তে চাওয়ায়। করুণ করুণ মুখে বারবার বলেছিলেন তিনি, শুধু রাতটুকু শুবি বৈ তো নয়, ভোরবেলা উঠে নিজের কাজ করিস না বাপু!

    কিন্তু মা-র সে অনুরোধ আমি রাখিনি।

    আমার যে মমতা হয়নি তা নয়, আমি মায়ের কোলের মেয়ে, জন্মাবধি বাইশ বছর বয়েস পর্যন্ত মায়ের কাছেই শুয়েছি, নতুন কোনো ভাগীদার এসে আমাকে স্থানচ্যুত করেনি, তাই বোধ হয় বড়ো

    বেশি শূন্যতা বোধ হয়েছিল মা-র।

    কিন্তু কি করা যাবে?

    বিয়ে হয়ে বরের ঘরে চলে যেতে পারতাম তো এতদিনে! তখন মা-র সেই শূন্য শয্যা পূর্ণ করতে কে আসত? এই ভেবেই মনকে শক্ত করে নিয়েছিলাম আমি।

    বাবা বেঁচে থাকতে মা আর আমি বড়ো একটা চৌকিতে শুতাম, বাবা তার সেই বিয়ের সময়কার ফুল-পাখিদার পালঙ্কে। বাবা মারা যাবার পর মা পালঙ্কটাকে খুব মূল্যবান বলেই দাদার ঘরে নিইয়ে দিলেন। তখন দাদার বিয়ের কথা চলছিল, শুধু বাবা মারা যাওয়ার জন্যে পিছিয়ে গিয়েছিল কিছুটা।

    মা বলেছিলেন, এই খাটে আমার ফুলশয্যে হয়েছিল, আমার খোকারও হবে। কিন্তু মা-র সেই সাধ পূর্ণ হয়নি, দাদার শ্বশুরবাড়ি থেকে সাদা পালিশের জোড়াখাট পেল দাদা, বাবার খাট ঠেলামারা হয়ে পুরনো ঘরে ফিরে এল।

    মা নিশ্বাস ফেলে বললেন, খোকা তো নিল না, যখন আমার ছোটোজামাই আসবে, এই খাটে বিছানা করে দেব। হেসে বলতাম ছোটোজামাইয়ের স্বপ্নটা একটু কম করে দেখ মা, স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।

    মা রেগে উঠে বলতেন, কেন? কী ভেবেছ তুমি? বিয়ে করবে না?

    করব না এমন প্রতিজ্ঞা করছি না, হেসে বলে উঠতাম, তবে তোমার জীবদ্দশায় নাও হতে পারে।

    মা বলতেন, ক্রুদ্ধ আর গম্ভীর গলায়, তা বেশ। তাহলে খোকাকে বলে যাব, যেন এই খাটখানাতে চাপিয়েই শ্মশানে নিয়ে যায় আমায়।

    আমি মায়ের রাগ দেখে হেসে ফেলতাম। বলতাম, তাহলে তো তোমার ছেলের কাঁধে চড়া হবে না মা, গোটা বারো অন্তত মুটে ডাকতে হবে।

    বাস্তবিক সেকেলে সেই ফুল-লতা-পক্ষীদার আর গুমো গুমো পায়া দেওয়া ওই পালঙ্কটা একেবারে রাক্ষুসে ভারী। কিন্তু পালঙ্কটা আমরা না-পছন্দ বলেই তো মা-র ঘর ছাড়িনি সত্যি, আসলে আমার দেহ-মন নির্জন রাত্রির স্বাদের আশায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। মা যখন শুতে এসে তাঁর ঘামে-ভেজা আর স্নেহে-ভেজা হাতটা আমার গায়ের উপর রাখতেন, স্বীকার করতে লজ্জা হলেও স্বীকার করব, মনটা কেমন একটা বিরস স্বাদে বিতৃষ্ণ হয়ে উঠত। অথচ জানতাম মা-র মনের মধ্যে একটু প্রত্যাশার প্রতীক্ষা। জানতাম, মা অনেকক্ষণ পর্যন্ত আশা করতেন আমিও তার গায়ের উপর একটি হাত রাখি।

    সেই বিনিময়ের সূত্রে মা একটু সাহস সঞ্চয় করতে পারেন, আমার সঙ্গে আর একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে সরে আসতে পারেন, ফিসফিসিয়ে দুটো সুখ-দুঃখের কথা কইতে পারেন।

    সুখের নয়, দুঃখেরই।

    বউদি আসার পর থেকে মা-র যে চিরদিনের অপ্রতিহত কর্তৃত্ব-গৌরব ক্ষুণ্ণ হচ্ছে সে দুঃখকে মা বহন করছেন বটে, কিন্তু কিছুতেই যেন পরিপাক করে নিতে পারছেন না। অপরিপাকের সেই গ্লানি ব্যক্ত করে কিছুটা হাল্কা হতে চান মা। কিন্তু কেন জানি না, আমার সহানুভূতি আসে না, আমার ওই। ফিসফিসিনি অসহ্য লাগে। মা-র ওই সহানুভূতি-প্রত্যাশী মনের বাহক হাতখানাকে ক্লেদাক্ত লাগে। যা অনিবার্য, যা চন্দ্র-সূর্যের নিয়মের মতোই অমোঘ, তার বিরুদ্ধে ওই প্যানপ্যানানিতে অরুচি আসে আমার, তাই মা-র সেই ভিজে ভিজে হাতখানাকে গা থেকে ঝেড়ে ফেলবার জন্যে কৌশলে ঘুমের ভান করে পাশ ফিরি।

    বুঝতে পারি মা ক্ষুণ্ণ হন, গভীরভাবে একটা নিশ্বাস ফেলেন, স্বগতোক্তি করেন, বাবাঃ, এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়লি? এই তো কথা বলছিলি।

    আমাকে জেগে ঘুমিয়ে কাঠ হয়ে পড়ে থাকতে হয়, নড়বার উপায় থাকে না।

    .

    ০২.

    কিন্তু ওসব তো বর্তমান নয়, অতীত।

    এখন তো আমি বারান্দার পাশের ওই ছোট্ট ঘরটায় আস্তানা গেড়েছি। যে ঘরটায় আমার বাবা যত রাজ্যের পুরনো পত্রিকা জমিয়ে রাখতেন, জমিয়ে রাখতেন ফুটপাত থেকে কেনা পুরনো বই। পত্রিকাগুলোকেও বাবা বই বলতেন, তাই একফালি ঘরটাকে বলতেন লাইব্রেরি।

    আমরা হাসতাম বাবার ঘরের ওই নামের বাহার শুনে, কিন্তু এখন বুঝতে পারি ওই বলাটুকুর মধ্যে দিয়েই প্রাণের আকাঙ্ক্ষা মেটাতেন বাবা। হয়তো এমন কতজনের জীবনেই হয়, অন্যজনের কৌতুকহাসির কারণ হয়েও সাধ মেটায়। লোকে সেই দুধের সাধ ঘোলে মেটানো দেখে আহা না বলে বলে, আহারে!

    কিন্তু সে যাক। বাবার লাইব্রেরির সেই অমূল্য গ্রন্থরাজী ভাড়ারঘরের তাকে, চিলেকোঠার ঘরে চালান করে দিয়ে আমি নিজের জায়গা করে নিলাম। খাট-পালঙ্ক নয়, মাটিতে সতরঞ্চি পেতে সামান্য বিছানার সম্বলে শোয়া শুরু করলাম। বললাম, একা না শুলে আমরা ধ্যান-ধারণার সুবিধে হচ্ছে না।

    ধ্যান-ধারণাই তো বলতে হবে, কারণ আমি তো তখন ছদ্মবেশের খোলসে ঢুকেছি। শঙ্কর মহারাজ আমার নামকরণ করেছেন দেবী মা।

    প্রথম দর্শনের দিন থেকেই আমার উপর তার অহেতুক অগাধ কৃপা। যেচে বললেন, কাল আমি একে দীক্ষা দেব।

    শুনে তো মা-র মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেল। মা থতমত গলায় বললেন, ও এমনি বেড়াতে এসেছে বাবা, ওর এখনও বে-থা হয়নি–

    মহারাজ বললেন, সবাই কি সংসার করতে আসে? আপনার এই মেয়ে ভগবতীর অংশ। একে উচ্চমার্গের পথে এগিয়ে দেওয়া আপনার কর্তব্য। জননীই প্রকৃত হিতকারিণী!

    এই হেঁদো ঘেঁদো কথা শুনে মনে মনে ভারী হাসি পেয়েছিল, বুঝলাম এইভাবেই ওঁরা শিষ্য নম্বর পাঁচশো পঞ্চান্ন বা নশো নিরানব্বই করে থাকেন।

    কিন্তু মা ওই ঘেঁদো কথায় ভয় পেলেন, মা তাড়াতাড়ি বললেন, আচ্ছা বাবা, বাড়ি গিয়ে মেয়ের মন বুঝি—

    মা একরকম পালিয়েই এলেন আমাকে নিয়ে। বউদি বসে রইলেন তার সদ্যবিধবা ছোটো বোনকে নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে তার জন্যেই আসা। নচেৎ দাদা-বউদি কোনো মঠে এসে কোনো বাবা মহারাজের সামনে জোড়হস্তে বসে আছেন, এ দৃশ্যের মতো অকল্পনীয় দৃশ্য আর কি ছিল?

    কিন্তু আশ্চর্য, সেই সদ্যবিধবা তরুণীর বিষাদাচ্ছন্ন মুখের দিকে নাকি দৃষ্টিপাতও করেননি মহারাজ। বউদি যখন কাঁদো-কঁদো গলায় তার অবস্থা জানিয়েছিল, তখন শুকনো দুটো উপদেশবাণী দিয়েছিলেন, অদৃষ্ট, নিয়তি, প্রাক্তন কর্মফল ইত্যাদি শব্দ-সংবলিত।

    কিন্তু আমাকে কেন?

    পরে বাড়ি ফিরে ভেবে দেখেছি—আমার মুখে-চোখে অবিশ্বাসের যে কৌতুকচ্ছটা খেলা করছিল, ওঁর ওই অহেতুক কৃপা তার বিরুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ।

    অনমনীয়কে আয়ত্তে আনতে পারাই তো শক্তির পরীক্ষা। বিরুদ্ধবাদীকে স্বমতে আনতে পারার মধ্যেই তো আত্মচরিতার্থতা। আমি যে ওঁর কথাগুলোকে ছেদো ভাবছি, এটা ধরে ফেলে উনি রণক্ষেত্রে

    অবতরণ করলেন তূণে তীর ভরে। তাই আমার মধ্যে উনি ভগবতীর অংশ আবিষ্কার করলেন।

    সেটাও বুঝে ফেলে আরও কৌতুকবোধ করলাম আমি, কিন্তু মা প্রমাদ গুনলেন। মা বাড়ি ফিরে এসে বললেন, তোর আর তোর ওই বউদির সঙ্গে মঠে-ফটে যাবার দরকার নেই।

    এটাও কৌতুককর।

    বাস্তবিক পক্ষে আমাদের এই জীবনের কোন ঘটনাই বা কৌতুককর নয়। মঠটা বউদির আবিষ্কৃত বটে, কিন্তু মা-রই আকুলতা ছিল বেশি। বউদিরই বরং ইচ্ছা ছিল না তার নিজস্ব আবিষ্কৃত ভূমিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিনীর প্রবেশাধিকার ঘটুক। কিন্তু সাধু-সন্ত দেব-দেবী তো কারও কেনা জিনিস নয়, কাজেই মাকে আর আমাকেও সঙ্গে নিতে হয়েছিল বউদি বেচারাকে।

    তা তখন তাকে আমার বেচারাই মনে হয়েছিল। কারণ বউদি বেশ কয়েকবার বলেছিল, শানু লজ্জা পাবে।

    শানু অর্থাৎ শান্তি, বউদির সদ্যবিধবা বোন।

    মা কিন্তু বউদির সে অনিচ্ছাকে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, সেকি জয়ন্তী, আমরা কি শানুর পর? বেবির সঙ্গে এক বয়সী, কতদিনের ভাব ওদের!

    হ্যাঁ, তখনও আমার নাম ছিল বেবি।

    শঙ্কর মহারাজ না শুনে হেসে বলেছিলেন, নামের একটি অক্ষর আমি বদলে দেব। ধ্বনিটা ঠিক থাকবে, ছন্দটাও। শুধু একটি অক্ষর—বেবির বদলে দেবী। দেবী মা।

    শুনে তখনই বউদির মুখটা ভারী হয়ে উঠেছিল। তবে তাতে আমি দোষও দেখিনি। সেটাই স্বাভাবিক। ওর অবস্থাটা হয়েছিল যেন যে এল চষে, সে রইল বসে।

    বউদিকে ব্যাজার করে আর আমাকে তোয়াজ করে তবে সেদিনকার অভিযান মা-র। হ্যাঁ, তোয়াজ করতে হয়েছিল। আমি রেগে রেগে বলেছিলাম, তোমরা যাচ্ছ যাও না, আবার আমাকে টানা কেন? ও সব আমার ভালো লাগে না।

    মা বললেন, একদিন গেলেই বা তোর কী এত লোকসান? শানু যাচ্ছে, তোর সময়বয়সী।

    জানি এটা মা-র একটা ট্রি। এই সেন্টিমেন্টে ঘা দিয়ে কথা বলা। শানু বিধবা হয়েছে, শানু দুঃখী, অতএব শানুকে করুণা করা তোমার কর্তব্য, তাকে সঙ্গ দেওয়া তোমার মানবিকতা বোধের পরিচায়ক। এই আর কি।

    কিন্তু আসলে মা-র উদ্দেশ্য ছিল অন্য তা বুঝেছিলাম। মা সেই মহারাজের কাছে জানতে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর মেয়েটির কবে বিয়ের ফুল ফুটবে। সে ফুল যে অনেকদিন আগেই ফুটিয়ে বসিয়ে রেখেছে তার মেয়ে, সে কথাটি তো জানা ছিল না মা-র!

    তাই ব্যাকুল হচ্ছিলেন।

    আর উৎখাত করছিলেন দাদাকে।

    তা শালী বিধবা হবার আগে পর্যন্ত দাদাও চেষ্টার ত্রুটি করেনি, উঠে পড়ে লেগে পাত্র যোগাড় করে এনে আমার সামনে ধরে দিয়েছে, আমার সঙ্গে মিশতে দিয়েছে, আমাকে তার সঙ্গে বেড়াতে যেতে দিয়েছে। কিন্তু দাদাকে সফল হতে দিইনি আমি, যে কটাকে এনেছে, সব কটাকেই নাকচ করে দিয়েছি।

    অবিশ্যি মা যতই মেয়ের বিয়ে বিয়ে করুন, এই ধরনটা মা-র পছন্দ হত না। সেই চিরাচরিত পদ্ধতিতে মেয়ের অষ্টাঙ্গে গহনা পরিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে আর জানলামুখো করে বসিয়ে কনে দেখনোটাই ছিল মা-র আদর্শ। তারপর তো দেনা-পাওনার প্রশ্ন আছেই। কন্যাপক্ষ যে দেনদার, এবং বরপক্ষ পাওনাদার, এটাকে নিতান্তই স্বাভাবিক রীতি বলে মনে মনে গ্রহণ করতেন, এবং এই ভাবটাই পোষণ করতেন—ওই সব স্বাভাবিক পদ্ধতির অভাবেই বিয়েটা ঘটছে না। আর এ সন্দেহও পোষণ করতেন-টাকাকড়ি খরচা হবার ভয়েই বউদি এই ফ্যাসানটির আমদানী করেছে।

    হ্যাঁ, ফ্যাসানটি বউদিরই আমদানী।

    বউদির সঙ্গে দাদার ভাবের বিয়ে বলে, বউদি ঘটকে-ঘটানো বিয়েকে খুব নিম্নশ্রেণীর বলেই মনে করে।

    কিন্তু এটাই বা কি?

    মনে মনে একচোট হেসে নিতাম আমি।

    তুমি দাদা, আমার হিতৈষী অভিভাবক, কুল-শীল মিলিয়ে কেরিয়ার বিবেচনা করে পাত্র ধরে এনে তার সঙ্গে বেড়াতে যেতে দিলে আমায়, অথবা দুখানা টিকিট কেটে হাতে গুঁজে দিয়ে সিনেমা হল-এ পাঠিয়ে দিলে, তার নাম পূর্বরাগ?

    আমার তো এটাকে ক্যারিকেচার মনে হত।

    বার কয়েক নাকচ করে, অথবা বলতে পারা যায়, নাকচ হয়ে হয়ে (অর্থাৎ আমার ব্যবহারে নাকচ করতে বাধ্য হত তারা) যখন দাদা বউদি এবং মাকে বিরক্তির সীমারেখায় এনে ফেলেছি, আর মা জোরগলায় ঘোষণা করেছেন এসব ফ্যাশানেপনায় বিয়ে হবে না–তখন শানু আমায় উদ্ধার করল। বিধবা হয়ে এসে তার দিদির গলায় পড়ে ননদের বিয়ের থেকে অনেক বেশি গুরুতর সমস্যার জালে জড়িয়ে ফেলল বউদিকে।

    মা নেই বউদির, তাই বোনকে কাছে টেনে না এনে পারল না। আমি দৃশ্যপট থেকে একটু সরে গেলাম।

    তবে সরে গেলে মা-র চলবে কেন?

    তাই মা বউদির সঙ্গ ধরে শঙ্কর মহারাজের কাছে ছুটেছিলেন মেয়ের বিয়ে সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী শুনতে।

    কিন্তু এ কী বাণী শুনলেন?

    সবাই কি সংসার করতে আসে? কিছু কিছু মানুষকে অধ্যাত্ম পথের পথিক হতে হয়।

    মা ভয় খেয়ে বললেন, তোকে আর মঠে-ফটে যেতে হবে না।

    .

    ০৩.

    মা-র ওই নিষেধবাণীতে আর একবার কৌতুক বোধ করলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে মাথায় একটা দুষ্টুমি খেলে গেল। ভাবলাম এই তো বেশ একটা পথ পাওয়া যাচ্ছে—মার বিয়ে বিয়ে উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পাবার। কিছুদিন অন্তত এই পথে খেলানো যায় মাকে।

    আর মনের অগোচর পাপ নেই, বউদির উপর টেক্কা দেবার এই একটা সুযোগ পেয়েও বেশ আত্মপ্রসাদ লাভ করেছিলাম। বউদি গেল তার বোনকে নিয়ে আকুলতা পেশ করতে, আর বিজয়িনী হয়ে ফিরে এলাম আমি, হলাম দেবী মা, হলাম ভগবতীর অংশ, এটা অহমিকা পরিতৃপ্তির একটা সুখ এনে দিল বৈকি।

    তাই আমি অবহেলাভরে বললাম, কেন? যেতে ভয় কি? শঙ্কর মহারাজ কি আমাকে স্বর্গের পথে চালান করে দেবেন?

    মা বললেন, থাক বাবু, ঠাট্টা-তামাসা। ওদিকে আর নয়। সাধু-সন্নিসীরা বড়ো সর্বনেশে জিনিস। ওঁদের দিকে না-মাড়ানোই ভালো।

    হেসে ফেললাম।

    বললাম, মা, এই ঘণ্টাকতক আগে তুমি আমায় গঞ্জনা দিয়েছ, ওদিক মাড়াতে রাজী হচ্ছিলাম বলে।

    সে আলাদা, মা-র গলায় অসন্তোষ, সে এমনি একবার দর্শন করতে যাওয়ার কথা বলেছি।

    আমি তো ভাবছি কাল গিয়ে দীক্ষাটা নিয়ে নেব।

    বকিসনে, থাম।

    বকিসনে কি মা? অত লোকের মধ্যে থেকে তোমাদের মহারাজ আমাকেই সিলেক্ট করে বসলেন, এটা কি কম মজার? আমি কাল যাচ্ছি

    কুমতলব ছাড় বেবি, আমাকে জ্বালাতন করতে ওসব গোলমেলে কাণ্ড করতে বসিসনে। কে জানে বাবা ওঁরা সব অন্তর্যামী কিনা, ঠাট্টা-তামাসা না-করাই ভালো।

    বেশ তো, অন্তর্যামী কিনা তার পরীক্ষাটা হয়েই যাক।

    আগুন নিয়ে খেলতে চেষ্টা করিসনে বেবি!

    হেসে উঠলাম।

    বললাম, তুমি ভাবছ আগুন, আমি তো ভাবছি স্রেফ ফুলঝুরি।

    তারপর বউদি এল, থমথমে মুখ, শানুকে নিয়ে ঝপ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। তাই যায় অবশ্য। শানুকে নিয়ে বেড়াতে যায় সর্বত্র, দোকানে, সিনেমায়, অনাত্মীয় বন্ধুর বাড়িতে, আর বুঝতে আটকায় না বেশ সহজভাবেই যায়, কিন্তু বাড়ি ফিরলেই দুই বোনেই মুখটা বিষণ্ণ করে ফেলে। আত্মীয়-বাড়িতে যায় না ওই জন্যে।

    অবশ্য শানু এটা করতেই পারে। জানি, শোকের থেকে লজ্জটাই বড়ো হয়ে ওঠে এ বয়সে। ও যে স্বামী মরে যাওয়া সত্ত্বেও হাসছে, গল্প করছে, সিনেমা দেখছে, এটা স্বচ্ছন্দে করতে লজ্জা করত ওর।

    অথচ ওর যা বয়েস, তাতে শোক নিয়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া কদিনই বা বিয়ে হয়েছিল ওর? কতইবা ভালোবাসা পড়েছিল বরের উপর?

    বউদি বলত, ওর মনটা অন্যমনস্ক রাখতে নিয়ে নিয়ে বেরোই। দাদাও সেই সমীহতে তটস্থ থাকে, আর শানু মুখের উপর একটা বিষণ্ণতার প্রলেপ মেখে মনকে অন্যমনস্ক রাখবার সাধনা করে চলে।

    আমি বুঝতে পেরেছিলাম ওই মহারাজ আবিষ্কার করাও বউদির আর এক চাল। যেন অন্ধস্নেহ কেবলমাত্র অসার আমোদে নিমজ্জিত রাখছে না বিধবা ছোটোবোনকে, তার উন্নতির পথের সহায়তা করছে। খুঁজে খুঁজে বার করে ফেলেছে তার মুক্তির উপায়।

    .

    ০৪.

    প্রথম দিকে আমি একদিন বলে ফেলেছিলাম, অন্যমনস্ক রাখতে এত রকম উপায় আবিষ্কার না করে শানুর আর একবার বিয়ে দাও না বাবা! জীবনের কী-ই বা হয়েছে ওর!

    বউদি ভাবলেন, এটা বোধহয় ওঁর শোকে ভেঙে-না-পড়া বোনকে ব্যঙ্গ করা হল, তাই রুক্ষ গলায় বলে উঠলেন, কুমারী মেয়েরই একটা বর জোটে না এদেশে, তার আবার বিধবার।

    এই কুমারী কন্যাটার উল্লেখ অবশ্য আমার উপরই কটাক্ষপাত, তাই মৃদু হেসে চুপ করে গেলাম।

    যাই হোক, সেদিন বউদি যখন সাধুর মঠ থেকে ফিরে এল, মুখটা আরও থমথমে। সিনেমা দেখে ফিরে আসার থেকেও অনেক বেশি। আর ঘরে ঢুকে আদৌ বেরোলই না।

    খাবার জন্যে ডাকতে গিয়ে মা প্রায় অপমানিত হয়েই ফিরে এলেন।

    মা ভয়ে ভয়ে বললেন, ওখানে কি প্রসাদ পেয়েছ?

    বউদি ঘর থেকে ছুঁড়ে মরালেন, অভাগারা প্রসাদ পায় না মা!

    এ প্রসাদ অবশ্যই অন্য অর্থবাহী।

    মাকে ডেকে বললাম, ইচ্ছে করে অপমান হতে যাও কেন?

    কি করে জানব বল? খেতে ডাকতে হবে তো? না-খেয়ে থাকবে?

    একদিন না-খেলে মানুষ মরে না।

    একদিন কেন, নিত্যই তো খায় না। বোনের জন্যে নিজের দেহটা পাত করছে–

    বড়ো করুণা হল মায়ের উপর।

    ভাবলাম কী অবোধ, কী অবোধ!

    কিন্তু এই অবোধের শান্তিটুকু নষ্ট করতে ইচ্ছে হল না। তা ছাড়া যদি মাকে বলে বসতাম অত ভয় করবার হেতু নেই মা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আসে, দুই বোনে তার সদ্ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে মা জীবনে আর কোনোদিন শানুকে শ্রদ্ধার বা স্নেহের চক্ষে দেখতে পারতেন না। কারণ সেটা হত মা-র চিরায়ত সংস্কারের ওপর প্রকাণ্ড হাতুড়ির ঘা।

    সেটা আমি চাই না।

    শানুকে আমি ভালোবাসি। বয়সে আমার সমান-বয়সী হলেও, ওকে আমার অনেক বালিকা মনে হয়। ও অন্যের ইচ্ছের পুতুল হতে পারে। ওর স্বামী থাকলে সেই ইচ্ছের পুতুলটিকে নিয়ে সুখে সংসার করতে পারত। কিন্তু সেটা ভাগ্যে নেই লোকটার। তাই ফটু করে মরেই গেল।

    এখন তাই শানু তার দিদির ইচ্ছের পুতুল হয়ে কোনোদিন দক্ষিণেশ্বরে যাচ্ছে, কোনোদিন সিনেমা যাচ্ছে। কখনও আশ্রমে দীক্ষা নিতে ছুটেছে, কখনও লুকিয়ে হোটেলের চপ-কাটলেট খাচ্ছে।

    জানি, বউদি এটা মমতার বশেই করে। ওই ছোট্ট বোনটাকে, যে নাকি মাছ-মাংস ব্যতীত এক গ্রাস খেতে পারত না, তাকে শাকপাতা খাইয়ে রাখতে প্রাণ ফেটে যেত তার, তাই এই লুকোচুরি। সে লুকোচুরিটাকে ঘৃণা করে করুণা করতাম আমি। আর বউদি ভাবত বুদ্ধির কৌশলে ও আমাদের চোখে ধুলো দিতে পারছে।

    শানুকে ভালো না বাসলে হয়তো কোনদিন বউদির এই গোপনতাকে ধিক্কার দিয়ে বসতাম, কিন্তু আগেই বলেছি, শানুকে আমি ভালোবাসি। দাদার বিয়ে হয়ে ইস্তক তো দেখছি। ভারী নিরীহ

    আর ভীতু ভীতু মেয়েটা। ঠিক তার দিদির বিপরীত।

    কিন্তু সেদিন আমার হঠাৎ কেমন রোখ চেপে গেল, ওই মেয়েটার প্রতিপক্ষ হয়ে বসলাম।

    অথবা ওই মেয়েটায়ও নয়, ওর দিদির। কিন্তু বহির্দশ্যে ওই মেয়েটারই প্রতিপক্ষ হলাম।

    ওকে ডিঙিয়ে আমি শঙ্কর মহারাজের কৃপা অর্জন করে ফেলব।

    আর আমি সংকল্প করলাম,—ওদের নাকের সামনেই দীক্ষা নিয়ে আসব। আর দেখিয়ে দেব কৃচ্ছ্বসাধন কাকে বলে।

    এই একটা দিক। তাছাড়া, আরও একটা দিক আছে। আর সে কথা তো আগেই বলেছি। এই সুযোগে একটা ছদ্মবেশ নিয়ে আমি আমার মা-র হাত থেকে রক্ষা করব আমাকে।

    তাই পরদিন মা-র শত আপত্তি এড়িয়ে সেই শঙ্কর মহারাজের মঠে গিয়ে হাজির হলাম, দীক্ষা নিয়ে এলাম।

    প্রাণ ধরে আমায় একা ছাড়তে পারেননি মা, সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি মা-র তোয়াক্কা রাখিনি। সোজা মহারাজের সামনে গিয়ে বলেছিলাম, দীক্ষা নিতে কি কি লাগবে বলুন।

    আমার এই প্রায়-দুর্বিনীত উক্তিতে মহারাজের চেলা-চামুণ্ডারা বোধকরি চমকে উঠেছিল, কিন্তু মহারাজের চক্ষে বরাভয়।

    কিন্তু শুধুই কি বরাভয়?

    কেমন একটা পুলক-চাঞ্চল্যেরও আভাস ছিল না কি? কিসের সেই পুলক? বিজয়-গৌরবের? বোধহয় তাই। বোধহয় ভেবে আত্মপ্রসাদ অনুভব করছিলেন আমি তার মহিমায় অভিভূত হয়ে ছুটে গিয়েছি। অতএব পরীক্ষা হয়ে গেল, অন্তর্যামী নয়।

    .

    ০৫.

    সেই শুরু।

    মা আমার সঙ্গে ফিরলেন চোখের জল মুছতে মুছতে।

    আমি জোরে জোরে হেসে বললাম, কী হল? কান্নার কী হল?

    মা ডুকরে উঠলেন, কোথায় তুই বিয়ে হয়ে বরের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি যাবি, তা নয় সন্নিসীর কাছে দীক্ষা নিয়ে এলি!

    বাঃ, তাতে খারাপটা কি?

    খারাপ নয়?

    আমি তো কিছু খারাপ দেখছি না। কোনো বন্ডে তো সই করিনি যে, জীবনে কখনও সংসার করব না, অর্থাৎ বিয়ে করব না।

    সই করার বাকিই বা কি? বললেন তো, আমিষ খাদ্য খাওয়া চলবে না, নিত্য হাজার জপ করতে হবে–

    জপ করতে হবে না তো আমি হেসে উঠে বললাম, জপের খাতা তৈরি করে তাতে হাজার বার ইষ্টনাম লিখতে হবে।

    সে একই।

    উঁহু, এক নয়। চোখ বুজে জপ করার থেকে অনেক সহজ। বললেন শুনলে না, কলিতে সাধনার পদ্ধতি সহজ।

    কিন্তু এই বয়সে এসব তুই করতে যাবি কেন?

    আমি মা-র জ্বালা দেখে খুব আমোদ পেলাম। আর কারও জ্বালাতে সেইমাত্র শুনে আসা পরমার্থিক বাক্যি কিছু বর্ষণ করে ফেললাম, সাধনার কি বয়েস আছে মা? বয়েস তো এই দেহটার, আত্মার বয়েস তুমি জান? জান কি কত কোটি কোটি বছর তার আসা-যাওয়া চলছে?

    মুখস্থ করার বিদ্যেটা চিরদিনই আমার প্রবল। বাবা আমার এ বিদ্যেটায় ভারী খুশি ছিলেন। বলতেন, আমার আর তিনটে ছেলেমেয়ে রাবিশ। একটা লাইন মুখস্থ রাখতে পারে না। আজ শিখলে কাল ভোলে। বেবিই শুধু–

    আসল কথা মুখস্থ শব্দটা ভুল। বলা উচিত, অন্তরস্থ। অন্তরস্থ করতে না পারলে মুখস্থ থাকে না।

    তা যে শব্দের যে অর্থই হোক, বাবা আমায় রাশি রাশি কবিতা মুখস্থ করাতেন, এবং সন্ধেবেলায় বসে বসে সেই সব আবৃত্তি শুনতেন। শুনতেন আর বাহবা দিতেন। বলতেন, আশ্চয্যি, কমা-সেমিকোলনটি পর্যন্ত এদিক-ওদিক হয় না।

    তাই গুরু-উপদেশবাণীও আমার একবার শুনেই নিখুঁত মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।

    মা কিন্তু ভয়ঙ্করভাবে ভয় পেয়ে গেলেন। মা ভাবলেন সত্যিই বুঝি মা-র এই আদুরে মেয়েটার উপর ভগবতীর ভর হল। সংসারী মানুষের ভূত আর ভগবান দুইয়ের উপরই সমান ভয়। তাই মুখে যতই বলুক ভগবানে ভক্তি হোক, সত্যি ভক্তির পরিচয় পেলে আতঙ্কিত হয়। ভাবে ওই বুঝি ছাড়ল সংসার।

    মা-র এই আতঙ্কে আরও কৌতুক লাগল, বললাম, হয়তো পূর্বজন্মে আমি একটু কাজ এগিয়ে রেখেছিলাম, তাই এ জন্মে চট করে হয়ে গেল যোগাযোগ। নইলে শানুকে তো–

    ⤷
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }