Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কুহেলিকা – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প153 Mins Read0
    ⤷

    কুহেলিকা – ০১

    কুহেলিকা – ০১

    নারী লইয়া আলোচনা চলিতেছিল। …

    তরুণ কবি হারুণ তাহার হরিণ-চোখ তুলিয়া কপোত-কূজনের মতো মিষ্টি করিয়া বলিল, ‘নারী কুহেলিকা’।

    যেস্থানে আলোচনা চলিতেছিল, তাহা আসলে ‘মেস’ হইলেও, হইয়া দাঁড়াইয়াছে একটি পুরোমাত্রায় আড্ডা।

    দুই তিনটি চতুষ্পায়া জুড়িয়া বসিয়া প্রায় বিশ বাইশ জন তরুণ। ইহাদের একজন – লক্ষ্মীছাড়ার মতো চেহারা – একজন ইয়ারের ঊরু উপাধান করিয়া আর একজন ইয়ারের দুই স্কন্ধে দুই পা তুলিয়া দিয়া নির্বিকার চিত্তে সিগারেট ফুঁকিতেছে। এ আলোচনায় কেবল তাহারই কোনো উৎসাহ দেখা যাইতেছিল না। নাম তাহার – বখ্‌তে-জাহাঙ্গীর কী উহা অপেক্ষাও নসিব বুলন্দ দারাজ গোছের একটা কিছু। কিন্তু অব্যবহারের দরুন তাহা এখন আর কাহারও মনে নাই। তাহাকে সকলে উপেক্ষা বা আদর করিয়া উলঝলুল বলিয়া ডাকে। এ নাম দেওয়ার গৌরবের দাবি লইয়া বহু বাগ্‌বিতণ্ডা হইয়া গিয়াছে। এখন এই নামই তাহার কায়েম হইয়া গিয়াছে। ‘উলঝলুল’ উর্দু শব্দ, মানে এর – বিশৃঙ্খল, এলোমেলো।

    কবি হারুণ যখন নারীকে ‘কুহেলিকা’ আখ্যা দিল, তখন কেহ হাসিল, কেহ টিপ্পনী কাটিল, শুধু উলঝলুল কিছু বলিল না। এক টানে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিগারেট পুড়াইয়া তাহারই পুঞ্জীভূত ধোঁয়া ঊর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত করিয়া শুধু বলিল, ‘হুম!’

    আমজাদ ওকালতি পড়ে এবং কবিতা লেখার কসরত করে। সে বলিল, তার চেয়ে বলো না কবি, নারী প্রহেলিকা! বাবা, সাত সমুদ্দুর তেরো নদী সাঁতরিয়েও বিবি গুলে-বকৌলির কিনারা করা যায় না! – বলিয়ায় একবার চারিদিকে ঝটিতি চোখের সার্চলাইট বুলাইয়া লইল। মনে হইল, সকলেই তাহার রসিকতায় রসিয়া উঠিয়াছে। কেবল হারুণ যেন একটু মুচকিয়া হাসিল।

    উলঝলুল আবার এক রাশ ধোঁয়া ছাড়িয়া দীর্ঘনিশ্বাসের সহিত শব্দ করিল–হুম!

    একটু যেন বিদ্রুপের আমেজ! আমজাদ অপ্রতিভ ও ক্ষুণ্ন হইল। কেহ কেহ হাসিলও যেন।

    আশরাফ নতুন বিবাহ করিয়াছে, তাহার বধূ ত্রয়োদশী – যৌবনোন্মুখী। কিন্তু এত সাধাসাধি করিয়া এত চিঠি লিখিয়া সে কেবল একটি মাত্র পত্রের উত্তর পাইয়াছে। কিন্তু তাহা ঠিক পত্রোত্তর নয়। তাহাতে শুধু লেখা ছিল দুইটি লাইন – ‘রমণীর মন, সহস্র বর্ষেরই সখা সাধনার ধন!’ বধূ রবীন্দ্রনাথ পড়িতেছে! আশরাফ তাহার বাম হাতের তালুর উপর দক্ষিণ হাতের মুষ্টি সজোরে ঠাসিয়া দিয়া বলিল, ‘নারী অহমিকা!’

    উলঝলুল এইবার বেশ জোরেই পূর্বমতো শব্দ করিয়া উঠিল – হুম্‌ম্। এইবার তারই মধ্যে একটু অভিনয়ের কারুণ্যের আমেজ!

    সকলে সমস্বরে হাসিয়া উঠিল। মনে হইল, একসঙ্গে এক ঝাঁকা থালা বরতন পড়িয়া ভাঙিয়া গেল!

    আশরাফ লাফাইয়া উলঝলুলের চাঁচর-চুলের গুচ্ছ ধরিয়া আকর্ষণ করিয়া বলিল, ‘এই শালা, অমন করলি যে?’

    এমন ইয়ার্কি ইহাদের মধ্যে প্রায়ই হয়।

    উলঝলুল ফিরিয়াও দেখিল না। পূর্বের মতো সচ্চিদানন্দ হইয়া শুইয়া সিগারেট ফুঁকিতে লাগিল।

    রায়হান কয়েক বৎসর হইতে কলিকাতায় বসিয়া বসিয়া বি. এ. ফেল করিতেছে। ইহারই মধ্যে তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে এবং বিবাহের অপরিহার্য পরিণাম সন্তান-সন্ততি একটু ঘটা করিয়াই আসিতে শুরু করিয়াছে। রায়হান কিন্তু যত তিক্তবিরক্ত হইয়া উঠিতেছে, ততই মোটা হইতেছে। তবে উদরের সহিত সামঞ্জস্য রাখিয়া পা ও মাথা মোটাইয়া কুলাইয়া উঠিতেছে না। মেসে তাহার আদরের ডাকনাম ‘কুম্ভীর মিয়াঁ’। কুম্ভীর মিয়াঁ কাশিয়া গলা পরিষ্কার করিয়া যাহা বলিল – তাহাতে মনে হইল, কেহ তাহার কণ্ঠে অনেকগুলা বাঁশের চ্যাঁচারি পুরিয়া দিয়াছে!

    হাসির হুল্লোড় পড়িয়া গেল।

    উলঝলুল এক লম্ফে স্প্রিং-এর পুতুলের মতো লাফাইয়া উঠিয়া বসিল। তাহার পর কুম্ভীর মিয়াঁর ভুঁড়ির উপর দৃষ্টি রাখিয়া আবার সিগারেট ফুঁকিতে লাগিল।

    তরিকের রসিক বলিয়া নামডাক আছে। উলঝলুলের দৃষ্টি লক্ষ করিয়া বলিল, ‘কী হে, ভুঁড়ি কসছ নাকি? কত কালি হবে বলো তো!’

    আবার হাসির কোরাস! যেন অনেকগুলো নোড়া শানের উপর দিয়া গড়াইয়া যাইতেছে ও আসিতেছে!

    উলঝলুল যেন কিছুই শুনিতেছিল না। সে ঊর্ধ্ব-নয়ন হইয়া হুস করিয়া খানিকটা ধোঁয়া ছাড়িয়া জড়িতকণ্ঠে উচ্চারণ করিল, ‘নারী নায়িকা!’

    তাহার বলিবার ভঙ্গি ও ঔদাসীন্যের ভাব দেখিয়া সকলে হাসিয়া উঠিল। কে একজন পিছন হইতে তাহার পিঠ চাপড়াইয়া দিয়া বলিল, ‘বাহবা, কী তেয়সা!’

    ইউসুফ একটু স্থূল ধরনের। বেঁকিয়ে বলা সে বুঝিতও না পছন্দও করিত না। সে উলঝলুলকে এ কথার অর্থ আর একটু পরিষ্কার করিয়া বলিবার জন্য ধরিয়া বসিল।

    অনেকেই তাহার সহিত এই অনুরোধে যোগদান করিল।

    উলঝলুল অটল। শুধু আর একবার পূর্বের মতো করিয়া বলিল, ‘নারী নায়িকা!’

    সকলে তখন হাল ছাড়িয়া দিয়া হারুণকে ধরিয়া বসিল।…

    হারুণ সত্যই কবি। তাহার খ্যাতি ইহারই মধ্যে বেশ চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতেছে। তবে সে খ্যাতি হয়তো হেনা-চাঁপা-বকুল-কেয়ার মতো সুতীব্র দূর-সঞ্চারী নয়। গোলাবের মতো যতটুকু গন্ধ যাইতেছে, অন্তত ততটুকু স্থান মিষ্ট স্নিগ্ধতায় ভরপুর করিয়া তুলিতেছে। সুন্দর ছিপছিপে গড়ন। রং বেশ ফর্সাই। একটু উদাস-উদাস ভাব। যেন সে নিজেকে জানে না, চেনে না। অথবা জানিয়াও অবহেলা করে। রং আর রূপ ছাড়া, পৃথিবীর আর কোনো কিছুতে যেন তার আকাঙ্ক্ষা নাই, কৌতূহল নাই। সবচেয়ে সুন্দর তাহার চোখ। অবশ্য দেখিতেও সে প্রিয়দর্শন। চোখ দুটি যেন কোনো সেকালের মোগল-কুমারীর – বাদশাজাদির। তবে কেমন যেন বিষাদখিন্ন। দৃষ্টি আবেশ মাখা স্বপন-জড়িত। যখন সে কারুর পানে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, মনে হয় – সে যাহাকে দেখিতেছে দৃষ্টি তাহাকে পারাইয়া গিয়াছে – সে দেখার অতীতকে দেখিতেছে।….

    সে এইবার বি.এ. দিবে। তবে পড়ায় তাহার বিশেষ ইচ্ছা নাই। পড়ায় মানে – কলেজের পড়ায়। ‘বাজে বই’ সে যথেষ্ট পড়ে। – অর্থাৎ পৃথিবীর নামজাদা এমন কোনো লেখক বা কবি নাই, যাঁহার সম্বন্ধে সে জানে না।

    তবু সে মন দিয়াই পড়িতেছে। সে পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাহার দিকেই তাহাদের সংসার তাকাইয়া আছে – যেমন করিয়া ভিখারি খঞ্জ তাহার একমাত্র অবলম্বন যষ্টির দিকে তাকাইয়া থাকে।

    তাহার পিতা অন্ধ, মাতা উন্মাদরোগগ্রস্তা। বাড়িতে দুইটি অবিবাহিতা বোন এবং একটি ছোটো ভাই। পিতা যে পেনশন পান, তাহাতে ভাতে-ভাত খাইয়া দিন চলে, তার বেশি আর চলে না। ছোটো ভাইটি গ্রামের ইস্কুলে পড়ে। সে-ই সংসার দেখে।

    হারুণ টিউশনি করিয়া নিজের খরচ চালায় এবং বাড়িতে ছোটো ভাইটিকে নিজে না খাইয়াও দশটি করিয়া টাকা পাঠায়।

    বাড়ি তাহার বীরভূম জেলায়।… যাক, যাহা বলিতেছিলাম –

    মেস-বাহিনী পাকড়াও করিয়া বসিল হারুণকে, ‘কবি, বলো তোমার কুহেলিকার অর্থ।’

    সে কিছু বলিবার আগেই কেহ বলিল, ‘কবি প্রেমে পড়েছে!’ কেহ বলিল, ‘বাবা! যা-সব হেঁয়ালি কবিতা লেখা হচ্ছে আজকাল!’ কেহ বলিল, ‘চোখ দুটি ক্রমেই যে রকম ঢুলুঢুলু হচ্ছে দিন-কে-দিন, কোথায় শিরাজি টানছ বাবা? আমরা কি সে ভাঁটিখানার সন্ধান পেতে পারিনে?’ ইত্যাদি।

    হারুণ তাই বলিয়া মিনমিনে ছেলেও নয়। সে বলিল, ‘অত গোলমাল করলে বলি কী করে বলো? আমার বলা তো তোমরাই বলে নিচ্ছ।’

    কুম্ভীর মিয়াঁ হাঁকড়াইয়া উঠিল, ‘এই! সব চোপ। বাস, আর একটি কথা কইছ কী – ভুঁড়ি চাপা! একেবারে ব্যাং-চ্যাপটা!’

    হারুণ বলিল, ‘নারী শুধু ইঙ্গিত, সে প্রকাশ নয়। নারীকে আমরা দেখি, বেলাভূমে দাঁড়িয়ে – মহাসিন্ধু দেখার মতো। তীরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের যতটুকু দেখা যায়, আমরা নারীকে দেখি ততটুকু। সমুদ্রের জলে আমরা যতটুকু নামতে পারি, নারীর মাঝেও ডুবি ততটুকুই।… সে সর্বদা রহস্যের পর রহস্য-জাল দিয়ে নিজেকে গোপন করছে – এই তার স্বভাব।…

    হারুণ যেন দিশা হারাইল। মনে হইল, সে যেন চকোরের মতো চাঁদের সুধা পান করিয়া উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে! সে যেন পরিস্থানে শুইয়া ফুল ফোটার স্বপন দেখিতেছে।

    সে বলিয়া যাইতে লাগিল, ‘কী গভীর রহস্য ওদের চোখে-মুখে। ওরা চাঁদের মতো মায়াবী; তারার মতো সুদূর। ছায়াপথের মতো রহস্য।… শুধু আবছায়া, শুধু গোপন! ওরা যেন পৃথিবী হতে কোটি কোটি মাইল দূরে। গ্রহলোক ওদের চোখে চেয়ে আছে অবাক হয়ে – খুকি যেমন করে সন্ধ্যাতারা দেখে। ওদের হয়তো শুধু দেখা যায়, ধরা যায় না। রাখা যায়, ছোঁয়া যায় না। ওরা যেন চাঁদের শোভা, চোখের জলের বাদলা-রাতে চারপাশের বিষাদ-ঘন মেঘে ইন্দ্রধনুর বৃত্ত রচনা করে। দু-দণ্ডের তরে, তারপর মিলিয়ে যায়। ওরা যেন জলের ঢেউ, ফুলের গন্ধ, পাতার শ্যামলিমা। ওদের অনুভব করো, দেখো, কিন্তু ধরতে যেয়ো না।’

    সকলে মুগ্ধবিস্ময়ে শুনিতেছিল। কিন্তু তাহারা শুনিতেছিল, না সুন্দরকে – কবিকে দেখিতেছিল, বলা দুষ্কর। হঠাৎ উলঝলুল হারুণের অসমাপ্ত সুরের সহিত সুর রাখিয়া বলিয়া উঠিল, ‘ঢেউ ধরতে গেলেই জলে ডুববে। গন্ধ ধরতে গেলেই বিঁধবে কাঁটা। শ্যামলিমা ধরতে গেলেই বাজবে শাখা। নারী দেবী, ওকে ছুঁতে নেই, পায়ের নীচে গড় করতে হয়।… কিন্তু কবি, নারী নায়িকা। ও ছাড়া নারীর আর কোনো সংজ্ঞাই নেই।’

    অনেকেই না বুঝিয়া হাসিল। কেহ মজা অনুভব করিল, কেহ মানে বুঝিল না।

    তরিক তাহার রসিক নাম বজায় রাখিবার জন্য দিগ্‌বসন পর্যন্ত হইতে রাজি। সে মুখ বিকৃত করিয়া স্বর কাঁপাইয়া বলিয়া উঠিল, ‘ওরে ব্যাটা, তাই তোমার তনু দিনের দিন এমন ক্ষীণ হচ্ছে! তুমি যে নায়ক হয়ে বসে আছ, তা কে জানে! তোমার ডিসপেপসিয়া হয়েছে! যাও, শিগগির এক শিশি ‘কুওতে-মেদা’ কিনে খেয়ে ফেলো!’

    হাসির তুফান বহিয়া গেল!

    উলঝলুল দৃক্‌পাতও করিল না। নির্বিকারচিত্তে সিগারেট পোড়াইয়া ধূম্রপুঞ্জের সৃষ্টি করিতে লাগিল।

    সে বরাবরই এই রকমের ।

    হারুণ এই সব বাজে হুল্লোড়ে যোগদান করিতেছিল না বটে, তবে সে যে এসব উপভোগ করিতেছিল, তাহা তাহার মুখ দেখিয়া বেশ বোঝা যাইতেছিল।

    হারুণ সাধারণত একটু কম কথা বলে, কিন্তু দরকার হইলে এত বেশি বলে যে, তাহা প্রায় বক্তৃতা হইয়া উঠে।

    হারুণের ওপর সকলেরই বেশ একটা সহজ শ্রদ্ধা ছিল। সে শুধু কবি বলিয়াই নয়, মানুষ বলিয়া। তাহাকে কেহ কখনও তরল হইতে দেখে নাই।

    কাজেই হারুণ যখন উলঝলুলকে মৃদু হাসিয়া নারী নায়িকা কেন, জিজ্ঞাসা করিল, উলঝলুল তখন তাহার নির্বিকারত্বের বাঁধুনি একটু শিথিল করিল।

    সে বলিল, “আমি জানি, নারী মাত্রই নায়িকা। ওরা প্রত্যেকে প্রতিদিন গল্প আর উপন্যাস সৃজন করে চলেছে।… তবে বড্ড বজ্র আঁটুনি – অবশ্য গেরো ফস্কা। কত “চোখের বালি” কত “ঘরে বাইরে”, কত “গৃহদাহ”, “চরিত্রহীন” সৃষ্টি করছে নারী, তার কটাই বা তোমাদের চোখে পড়ে কবি।… যে কোনো মেয়েকে দুটো দিন ভালো করে দেখো, দেখবে লক্ষ্মী-পক্ষী ইত্যাদি চতুর পুরুষের দেওয়া যত সব বিশেষণ কোনোটাই তাকে মানায় না। তবে, নারী বেচারি সংস্কার আর সমাজের খাতিরে সে যা নয় – তাই হবার জন্যে আমরণ সাধনা করছে। সে যুগ যুগ ধরে চতুর পুরুষের ছাঁচে নিজেকে ঢেলে পুরুষকে খুশি করছে। পুরুষ কিন্তু দিব্যি গায়ে ফুঁ দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এবং নারীকে শিখাচ্ছে দাঁড় ও ছোলা কলার মহিমা। সমানে সমানে বোঝাপড়া হলে নারীকে দেখতে শুধু নায়িকা রূপেই। তোমরা নারীকে দেখ, সে যা হলে ভালো হয় – তাই করে আর আমাদের মতো নিরেট মানুষে দেখে, নারীকে সে যা আছে – তার এক চুলও অতিক্রম না করে। তোমরা যারা নারীকে পূজা কর, আমার এ নির্মমতায় হয়তো ব্যথা পাবে, কিন্তু আমি নারীকে পূজা না করলেও অশ্রদ্ধা করিনে এবং শ্রদ্ধা হয়তো তোমাদের চেয়ে বেশিই করি। কিন্তু তাকে অতিরিক্ত অলংকার পরিয়ে সুন্দর করে – সিঁদুর-কঙ্কণ পরিয়ে কল্যাণী করে নয়। আমি সহজ নারীকে, নিরাভরণাকে করি বন্দনা। রাংতার সাজ পরিয়ে নারীকে দেবী করবার সাধনা আমার নয়। তিন হাত নারীকে বারো হাত শাড়ি পরিয়ে বিপুল করে বাইশ সের লুৎফুন্নিসাকে হিরা জহরত সোনাদানা পরিয়ে এক মনি ভারাক্রান্ত করে – নারীকে প্রসংসা করার চাতুরি আমার নয়! তোমরা হয়তো চটবে, কিন্তু আমি বলি কী, জান? আমি চাই রূপের মোমতাজকে। তাজমহল দিয়ে মোমতাজকে আড়াল করার অবমাননা আমাকে পীড়া দেয়। আমার ক্ষমতা যদি থাকত, ওই বন্দনাগার হতে মোমতাজকে আমি মুক্তি দিতাম। কবরের ভিতর যদি শান্তি থাকে, তবে ‘জাহানারা’ ‘মোমতাজ’ বেচারির চেয়ে অনেক শান্তিতে আছে। জাহানারার কবরের শষ্প-আচ্ছাদনকে মানুষের অহংকার দলিত করেনি, কোনো পাষাণ-দেউল তার বুকে বসে তার বাইরের আকাশ আলোকে আড়াল করে দাঁড়ায়নি!…”

    সকলে স্তব্ধ হইয়া শুনিতেছিল এই আধ-পাগলের প্রলাপ। কে একজন বলিয়া উঠিল, ‘পাগলের পাগলামিতেও মাঝে মাঝে মানে থাকে!’ উলঝলুল জোরে-জোরে সিগারেট টানিয়া নিমেষে প্রায় দেড়টা সিগারেট পুড়াইয়া ফেলিল। তাহার পর আবার বলিতে আরম্ভ করিল। –

    ‘দেখো মানুষ যা নয়, সেই মিথ্যায় অভিষিক্ত করে তাকে খুব শ্রদ্ধা দেখাচ্ছ বলে তোমরা খুব বাহবা নিতে পার, কিন্তু আমার শ্রদ্ধা করার ধারা অন্য রকম। মানুষের – তা তিনি নর হন আর নারীই হন – যা আছে তাই নিয়েই তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার, সম্মান দেখাবার শক্তি ও সাহস আমার আছে। আমার মত অন্তত অতটুকু তৈরি হয়েছে। – শয়তান সৃষ্টি করা সত্ত্বেও আমি স্রষ্টাকে সম্মান করি। তোমরা শয়তানের নিন্দা করে স্রষ্টার ওপর ‘সেনসার মোসন’ আন, প্রকারান্তরে তাঁর সৃষ্টির দোষ ধরে সমালোচনা কর, আমি তা করিনে – এই যা তফাত। তোমরা নারীকে দেবী বলে এই কথাটাই পাকে-প্রকারে স্মরণ করিয়ে দাও যে, সে আসলে মানবী – দেবী হলেই তাকে মানায় ভালো! নারীকে এ অবমাননা করবার দুর্মতি আমার যেন কোনো দিন না হয়।’

    তমিজ এতক্ষণ ধরিয়া কথা কহে নাই। সে অতিমাত্রায় রুচিবাগীশ। এই জন্য সকলে তাহাকে বে-তমিজ বলিয়া খ্যাপাইত। তাহার আদর্শ ছিল রামানন্দ ও তুষ্ণীকুমার বাবু। উলঝলুলকে সে সহিতে পারিত না। সে একেবারে খেপিয়া উঠিয়া বলিল, ‘বাবা পাগলা-গাজি, তুমি থামো! তোমার আর বক্তিমে দিতে হবে না! তোমার মতো বিশ্ব-বখাটে ছেলের আদর্শ নিয়ে জগৎ চলছে না আর চলবেও না!’

    উলঝলুল হাসিয়া বলিল, “ভাই বে-তমিজ! চটছ কেন? আমি তো তোমার ‘সাধারণ ব্রাহ্ম মন্দিরে’ বা ‘দেবালয়ে’ গিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিনে। তোমার গুরুর আর তোমাদের মতন আদর্শবাদীর ন্যাকামি আর মিথ্যাচার অসহ্য বলেই তো এত ঘা দিই। শয়তানের ওপর আমার কোনো আক্রোশ নেই, কেননা সে যা – তা সে লুকোয় না, তাকে চিনতে কারুর বেগ পেতে হয় না। কিন্তু ভিতরের কড়া-ক্রান্তি-হিসাবরত স্বার্থপর মুদিওয়ালা বানিয়াকে যখন বাইরের আচার্যের দাড়ি দিয়ে ঢাকতে যাও, তখনই আমি আসি ওই পর-দাড়ির মুখোশ খুলে তার ভিতরের বীভৎস কদর্যতা সকলের সামনে তুলে ধরতে। অবশ্য, তার জন্য আমাকেও অনেকটা নীচে নেমে যেতে হয়। কিন্তু যাক, তোমার রুচিবিকারের ভণ্ডামি আর ন্যাকামি নিয়ে আলোচনা করবার যদি দরকার হয় আর একদিন করব। আমাদের যে আলোচনা চলছিল – তাই চলুক।’

    হারুণ বলিল, ‘তুমি কি বলছ, নারীর আর যত রূপ মিথ্যা? সেবিকা, প্রীতিময়ী, স্নেহময়ী – এসব রূপ তার ছলনা? এ মূর্তি সে নিয়েছে তার পুরুষের স্তুতি আর বন্দনার প্রতিদানে – কিংবা তা আরও পাবার লোভে? অথবা তাকে এ সাজে সাজিয়েছে ঈর্ষাতুর পুরুষ? তাকে অবগুন্ঠন পরিয়েছে পুরুষ, মানি – কিন্তু সে তো তাকে সুন্দর করার উদ্দেশ্যেই। নারীকে ঘোমটার আড়াল করে দাঁড় করিয়েই তো তাকে পাবার নেশা বাড়িয়ে দিয়েছে হৃদয়ের। এই আড়ালই কাব্য সৃষ্টি করছে। যক্ষকে চিত্রকূটের আড়াল না দিলে কি মেঘদূত-এর সৃষ্টি হত? সীতাকে রাবণ হরণ না করলে কি রামায়ণ পেতাম? দ্রৌপদীর কেশাকর্ষণ কৌরবেরা করেছিল বলেই মহাভারতের মহাদানে আমাদের পাত্র পূর্ণ হয়ে উঠেছে!’

    উলঝলুল পুঞ্জীভূত ধূম্র নাসিকা ও মুখ-গহ্বর দিয়া উদ্‌গিরণ করিয়া আরও কিছু বলিবার আয়োজন করিতেই চা, গুড়ের সন্দেশ এবং লুচি আসিয়া হাজির হইল।

    দেখা গেল, যুবকদের কাছেও নারী অপেক্ষা গুড়ের সন্দেশ অনেক মিষ্টি এবং লুচি ও চা ঢের ঢের প্রিয়। গুড়ের সন্দেশ ও লুচিতে নারী ডুবিয়া গেল। তাহাদের খাইবার ধরন দেখিয়া মনে হইল, যেন বাঁকুড়ার দুর্ভিক্ষ-প্রপীড়িত অথবা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর-ফেরত একদল বুভুক্ষু। কুম্ভীর মিয়াঁ এক গালে এক ডজন লুচি ও এক গালে এক ডজন গুড়ের সন্দেশ পুরিয়া মুখ-সঞ্চালনবিদ্যার যে অদ্ভুত আর্ট দেখাইতেছিল, তাহা দেখিয়া কেহ হাসিতেছিল – কেহ ওই বিদ্যা আয়ত্ত করিবার মকশো করিতেছিল, আর যাহারা রাগিয়া উঠিতেছিল তাহাদেরই মধ্যে একজন খানিকটা নস্য লইয়া কুম্ভীর মিয়াঁর নাকে ঠাসিয়া দিল। কুম্ভীর মিয়াঁ নস্য লইত না। অতএব ইহার পর যে বীভৎস দৃশ্যের সৃষ্টি হইল, তাহা না বলাই ভালো। তাহার মুখ-গহ্বর হইতে লালা-মিশ্রিত সমস্ত লুচি ও সন্দেশ উৎক্ষিপ্ত হইয়া প্রায় সকলের অঙ্গ অভিষিক্ত করিয়া দিল। খাওয়া রহিল পড়িয়া, লাফাইয়া যে যেখানে পারিল পলাইল। কিন্তু কুম্ভীর মিয়াঁর হাঁচি আর থামে না। হাঁচিতে, কাশিতে, লালাতে, শিকনিতে মিশিয়া একটা বিতিকিচ্ছি ব্যাপার হইয়া গেল। বিকচ্ছ ও প্রায় দিগ্‌বসন কুম্ভীর মিয়াঁর ভুঁড়ি হাঁচির বেগে প্রবল বেগে আন্দোলিত হইতে লাগিল, – স্টিমার পার হইয়া যাইবার পর গঙ্গা-বক্ষের বয়া যেমন করিয়া দুলিতে থাকে! চক্ষু ত্রৈলঙ্গ স্বামীর মতো হইয়া উঠিল। হাঁচি-নিষিক্ত নাসিকা দেখিয়া মনে হইল, যেন কর্তিত খেজুরগুঁড়ি দিয়া রস চোঁয়াইতেছে। কেহ তাহার মাথায় কেহ বা ভুঁড়িতে বদনা বদনা পানি ঢালিতে লাগিল। তরিক ‘সুরা ইয়াসিন’ পড়িয়া শুনাইতে লাগিল। ‘সুরা ইয়াসিন’ অন্তিম সময়েই শুনাইয়া থাকে এবং ‘আজান’ নামাজের সময় ব্যতীত অন্য সময় দিলে সাধারণত লোকে মনে করিয়া থাকে – কাহারও বাড়িতে সন্তান হইয়াছে। সুতরাং তরিকের ‘সুরা ইয়াসিন’ পড়াতে যত না হাসির সৃষ্টি হইল, আমজাদ তাড়াতাড়ি কাছা খুলিয়া প্রাণপণ চিৎকারে আজান দিতে শুরু করায় সকলে হাসিয়া লুটাইয়া পড়িল!

    মোটের উপর, যদি কোনো মাতাল এটাকে একটা তাড়িখানা মনে করিয়া ঢুকিয়া পড়িত তাহা হইলে তাহাকে দোষ দেওয়া চলিত না।

    এইবার কুম্ভীর মিয়াঁর রাগিবার পালা। রাগাইয়া গালি খাওয়া মুখরোচক বটে, তবে তাহা লুচি ও গুড়ের সন্দেশ নয়। কাজেই তাহা গলাধঃকরণ করিতে অনেকেরই যথেষ্ট বেগ পাইতে হইল। কিন্তু থাক, আর নয়। মেসে এসব ব্যাপার কিছু নতুন নয়।

    আড্ডা যখন ভাঙিল, তখন রাত্রি পাশ ফিরিয়া শুইয়াছে। ঘড়িতে ঢং করিয়া একটা বাজিল।

    বাবুর্চি বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। সুতরাং যে যা পারিল দুটো মুখে গুঁজিয়া দিয়া আপন আপন সিটে লম্বা হইয়া পড়িল।

    ঘুম আসিল কিনা বলিতে পারি না, কেননা হপ্তা-খানিকের মধ্যেই গ্রীষ্মের ছুটি। প্রায় সব কলেজই বন্ধ হইয়া যাইবে।

    শুইয়া শুইয়া তরুণেরা গ্রীষ্মের আর পূজার ছুটির আগে যেসব কথা ভাবে, তাহা আন্দাজ করিলে – তরুণেরা যাই হউন, রুচিবাগীশ কুঞ্চিত-নাসিকার দল খুশি হইবেন না। তাঁহারা ভাবিতে পারেন, ছেলেরা সেসময় ভগবৎচিন্তা করে মনে মনে। ইহাও হয়তো বলে – যেন, খুব ভোরে তার ঘুম ভাঙিয়া যায় – সে ফজরের নামাজ পড়িবে! তাঁহাদের এরূপ ভাবায় সমবেদনা প্রকাশ করিতেছি। কিন্তু তরুণেরা তাহা ভাবে না। সকলের কথা বলিতে পারি না, তবে অধিকাংশ তরুণই সেসময় আমতলা, পুকুর-ঘাট, নদীরপাড় এবং আনুষঙ্গিক মধুর আরও কিছুর স্মৃতি – এই সবই হয়তো বিশেষ করিয়া ভাবে।

    কাজেই ঘুম সে রাত্রে কাহার আসিল জানি না; অন্তত উলঝলুল ও হারুণের আসে নাই।

    সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রায়তন যে কামরাটি এবং যাহাতে একটি মাত্র সিট ছিল, সেই কামরাটিতে উলঝলুল একা থাকিত। আড্ডা যখন ভাঙিয়া গেল এবং মেস শান্ত হইল, তখন হারুণ তাহার তক্তা প্যাঁটরা টানিয়া উলঝলুলের স্বল্পায়তন কামরাটির অবকাশটুকু ভরাট করিয়া ফেলিল। উলঝলুল প্রায় গোপাল-কাছা হইয়া চিৎপটাং দিয়া শুইয়া ধূম্রমার্গে বিচরণ করিতেছিল। সে হারুণের তক্তা টানার ঘেসড়ানিতে সচকিত হইয়া উপুড় হইয়া শুইয়া হারুণের কার্যকলাপ দেখিতে লাগিল। দেখিয়া খুব বেশি বিস্মিত হইল বলিয়া মনে হইল না। একরাশ উচ্ছৃঙ্খল কেশের গুচ্ছ ললাট হইতে তুলিয়া সে একটু হাসিল মনে হইল। হারুণও তাহা দেখিয়া ঈষৎ হাসিল।

    বাহির তখন শব্দহীন। ক্বচিৎ মোটরের চাকার ঘর্ঘরধ্বনি সেই শব্দহীন অতলতায় নিমেষের জন্য চঞ্চলতার দোলা দিয়া মিলাইয়া যাইতেছিল, – নিশীথ-রাতে তীরের তরুশাখা হইতে একটি ছোট্ট ফল পড়িয়া দিঘির নিতলতায় যেমন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। আকাশে অগণিত নক্ষত্র ফেনাইয়া উঠিতেছিল ছায়াপথের কূলে কূলে। ওরা যেন জ্যোতির্ভ্রমর, আকাশ যেন নীলোৎপল, চাঁদ যেন তাহার পদ্মচাকি।

    নীরব নিস্পন্দ জগৎ। রাতের চোখে নিদ্রা যেন জড়াইয়া ধরিয়াছে। এমনই নীরব-নিশীথে যদি হৃদয়ের সান্নিধ্য হৃদয় দিয়া অনুভব করা যায়, তবে সে নিশীথ যেন জীবনে আর না কাটে।

    কলিকাতার সকল রাজপথ সকল অলিগলির ধুলা-কাদা পায়ে লাগিয়াছে বলিয়াই হতভাগ্য জাহাঙ্গীর আজ উলঝলুল নামের বিদ্রুপ-তিলক পরিয়াছে। অগ্ন্যুৎপাতের ভস্মরাশির মধ্য হইতে মানুষকে টানিয়া বাহির করিবার – বাঁচাইবার দুরন্ত সাধনা তাহাকে পাইয়া বসিয়াছে বলিয়া, সত্যকে দর্পণের মতো হাতে ধরিয়া দেখিতে চায় বলিয়া সে আজ রুচিবাগীশ নীতি-কচকচিদের ঘৃণার বক্র ইঙ্গিত সহিয়া যাইতেছে। – হারুনের চোখে জল আসিল। সে কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করিতে পারিতেছিল না। সে হঠাৎ উলঝলুলকে স্পর্শ করিয়া বলিয়া উঠিল, ‘ওগো সত্যব্রত, ওগো বেদনা-সুন্দর, ওগো পাগল, তোমায় সালাম, হাজারবার সালাম, করি!’ উলঝলুল তখন অঘোর ঘুমাইতেছে!

    বাহিরে তাকাইয়া হারুণের মনে হইল সারা আকাশ বাতাস যেন ঘুমাইয়া চাঁদের স্বপন দেখিতেছে! পবিত্র শান্তিতে তাহার হৃদয় স্নিগ্ধ হইয়া গেল। সে ঘুমের ক্ষীরসাগরে ডুবিয়া গেল।

    আকাশ, চন্দ্র ও তারকা সাক্ষী রহিল… আজ একটি হৃদয় আর একটি হৃদয়ের সান্নিধ্য লাভ করিল – শুধু হাসি বদল করিয়া…

    ধরা আজ সুন্দরতর হইল।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleযুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম
    Next Article গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    ভাঙার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    বাঁধনহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মৃত্যুক্ষুধা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    দোলনচাঁপা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }