Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    বার্ট্রান্ড রাসেল এক পাতা গল্প318 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. আমরা কি মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকি?

    ৪. আমরা কি মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকি?

    (এই প্রবন্ধটি ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত জীবন ও মৃত্যুর রহস্য,’ নামক গ্রন্থে প্রথম প্রকাশিত হয়। বিশপ ব্যারেন্সের দ্বারা রচিত একটি প্রবন্ধ যেটির কথা রাসেল উল্লেখ করেন তা এই একই গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।)

    মৃত্যুর পর আমরা জীবিত থাকবো কিনা তার আলোচনা ভালোভাবে করার আগে আমাদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো যে আজকের মানুষটি কাল যেমন ছিল সে আজও সেই একই মানুষ আছে কিনা। দার্শনিকরা চিন্তা করতে অভ্যস্ত ছিলেন যে নির্দিষ্ট সারসত্ত্বাগুলো আছে। আত্মা এবং শরীর এমন কিছু যা দিনের পর দিন থেকে যায়। একবার যে আত্মা সৃষ্টি হয়েছে তা সমগ্র ভবিষ্যৎ সময় ধরে থেকে যায় এবং সাময়িকভাবে শরীর মৃত্যুর পর নষ্ট হয়ে যায় ততদিন পর্যন্ত যতদিন না শরীরের আবার পুনর্জাগরণ হয়।

    বর্তমান জীবন সম্পর্কে ধর্মমতের যে অংশ যুক্ত তা নিশ্চিতভাবে অসত্য। শরীরের সাধন ও অপচয়ের পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবর্তিত পদার্থবিজ্ঞানের পরমাণু নিরবচ্ছিন্নভাবে কখনই বিদ্যমান থাকতে পারত না বলেই মনে হয়। তাই কোন অর্থেই বলা যায় না যে এই পরমাণুটি সেই পরমাণুর মতো একই যা কিছু মিনিট আগে বিদ্যমান ছিল। মানবশরীরের নিরবচ্ছিন্নতা অভ্যাস ও আচরণের বিষয়, কখনও সারসত্ত্বার বিষয় নয়।

    এই একই জিনিস মনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়। আমরা চিন্তা করি, অনুভব করি এবং কাজ করি। কিন্তু চিন্তা অনুভব এবং কার্য ব্যতিরিক্ত কোন অনাবৃত অস্তিত্ব নেই। মন অথবা আত্মা সেই বস্তু, যাকে এই ঘটনাগুলোকে বহন করতেই হয়। একজন ব্যক্তির মানসিক ধারাবাহিকতা তার অভ্যাস ও স্মৃতির ধারাবাহিকতা। কাল একজন মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল যার অনুভব আমি মনে করতে পারি, কিন্তু বস্তুত কালকে আমি নিজেই কতকগুলি মানসিক ঘটনা যেগুলো বর্তমানে স্মরণ করা হয় এবং যে ঘটনাগুলো সেই ব্যক্তির অংশরূপে গণ্য করা হয়ে থাকে যে ব্যক্তি ঘটনাগুলো স্মরণ করে। এই সমস্ত জিনিসগুলো একজন মানুষকে একটি ধারাবাহিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন করে গঠন করে যে অভিজ্ঞতাগুলি স্মৃতির দ্বারা যুক্ত এবং ওই একই ধরণের বস্তুর দ্বারা যুক্ত যাকে আমরা অভ্যাস বা আচরণ বলে থাকি।

    এই জন্য যদি আমাদের বিশ্বাস করতে হয় যে একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পরও জীবিত থাকে, তবে আমাদের এই বিশ্বাস করতে হবে যে সমস্ত স্মৃতি ও অভ্যাসসমূহ ব্যক্তিকে গঠন করে তাকে একটি নতুন ঘটনাসমূহের প্রস্থে প্রদর্শিত হতে হবে।

    কেউ এটা প্রমাণ করতে পারে না যে এমনটা ঘটবে না। কিন্তু এটা দেখা খুবই সোজা যে এই ব্যাপারটি খুবই অসঙ্গতিকর। মস্তিষ্কের কাঠামোর সাথে আমাদের স্মৃতিসমূহ ও অভ্যাসসমূহ জড়িত। জড়িত এমন ভাবে যেমন ভাবে একটি নদী নদীগর্ভের সাথে জড়িত থাকে। একটি নদীর জল সর্বদাই পরিবর্তনশীল। কিন্তু সে তার ধারা সর্বদাই বজায় রাখে কারণ পূর্বের বৃষ্টিধারা জলনালীকে ক্ষয় করে দিয়েছে। এই একইভাবে, পূর্ব ঘটনাসমূহ মস্তিষ্কের নালীকে ক্ষয় করে এবং আমাদের চিন্তা সেই নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটাই হল স্মৃতিশক্তি ও মানসিক অভ্যাসসমূহের কারণ। কিন্তু কাঠামো হিসেবে মস্তিষ্ক মৃত্যুর পর ধ্বংস হয়ে যায়। এইজন্য আশা করা যায় মস্তিষ্কও মৃত্যুর পর ধ্বংস হয়ে যাবে। এই আশা করা ছাড়া অন্য কোনভাবে চিন্তা করার উপায় নেই যে একটি নদী ভূমিকম্প হবার পর তার পুরানো ধারায় টিকে থাকবে কারণ ভূমিকম্প উপত্যকা ছিল এমন একটি জায়গায় একটি পর্বতমালা সৃষ্টি করে দেয়।

    এইজন্য একজন বলতেই পারে যে সমস্ত স্মৃতি, সমস্ত মনসমূহ একটি সম্পদের উপরে নির্ভর করে এবং যা যে-কোন বিশেষ ধরণের বস্তুগত কাঠামোসমূহে লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্যান্য ধরণের বস্তুসমূহে অতি অল্প পরিমাণই বিদ্যমান থাকে। এই সম্পদটি হল অভ্যাস সমূহ বা একই ধরণের ঘটনা সমূহ বারবার ঘটার ফলে যা গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, উজ্জ্বল আলো চোখের তারাকে সংকুচিত করে এবং যদি আপনি কোন মানুষের চোখে বারবার আলোর ঝলক ফেলেন এবং একই সঙ্গে তার কানের সামনে পেটাঘড়ি বাজান, তাহলে দেখা যাবে শেষে কেবলমাত্র পেটাঘড়ির শব্দেই তার চোখটি সংকুচিত হচ্ছে। মস্তিষ্ক ও স্নায়ু ব্যবস্থা সম্পর্কেও ওই একই ঘটনা ঘটে। বিয়বস্তুগত কাঠামো সম্পর্কেও ঐ একই কথা বলতে হয়। এটা দেখা যাবে যে একদম একই ধরণের ঘটনা সমূহ যা ব্যাখ্যা করতে পারে ভাষার প্রতি আমাদের সাড়া দেওয়াটাকে এবং তাকে আমাদের ব্যবহার করাটাকে, তারা কি ভাবে আমাদের স্মৃতিসমূহ ও আবেগসমূহকে জাগিয়ে তোলে তাকে এবং আমাদের অভ্যাসের ফলে গড়ে ওঠা নৈতিক ও অনৈতিক আচরণসমূহকে, বলতে গেলে সেই সব কিছুকে যা আমাদের মানসিক ব্যক্তিত্বকে গড়ে তোলে, একমাত্র সেই অংশটি ছাড়া যেটি আমাদের বংশধর দ্বারা গড়ে ওঠে। যে অংশটি বংশগতির দ্বারা নির্ধারিত হয় তাকে আমরা আমাদের পরবর্তী বংশধরদের দিয়ে যেতে পারি কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তিতে, কিন্তু তা কখনও জীবিত থাকতে পারে না যার শরীরটি মৃত্যুর পর টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে। তাই আমাদের অভিজ্ঞতা যতদূর পৌঁছেছে তার উপর নির্ভর করে বলতে গেলে বলতে হয় যে ব্যক্তিত্বের অর্জিত অংশ এবং বংশগতির দ্বারা নির্মিত অংশ উভয়ই বিশেষ শারীরিক কাঠামোসমূহের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আবদ্ধ। আমরা সবাই জানি যে মস্তিষ্কে আঘাত লাগলে স্মৃতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। একজন ধার্মিক মানুষ এনসেফালাইটিস লেথারজিকার কবলে পড়ে লম্পট মানুষে পরিনত হতে পারে এবং আয়োডিনের অভাবে একটি বুদ্ধিমান বালক বোকায় পরিণত হতে পারে। এই ধরণের অতিপরিচিত ঘটনাগুলির উপর চোখ রেখে এটা অসম্ভব বলে মনে হয় যে মৃত্যুর পর মস্তিষ্ক কাঠামোর সম্পূর্ণ ধ্বংসের পরও মন জীবিত থাকে।

    এটা কোন যৌক্তিক বির্তক নয়, কিন্তু সেই আবেগসমূহ, যা ভবিষ্যৎ জীবনে বিশ্বাসকে ডেকে আনবে।

    এইসব আবেগসমূহের মধ্যে মৃত্যুভীতিটাই গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রবৃত্তিগত এবং প্রাণীতত্ত্ববিদ্যার দিক দিয়ে কার্যকর। যদি আমরা মৃত্যুর পর জীবনের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসপরায়ণ হয়ে থাকি তবে আমাদের মৃত্যুভীতিপরায়ণতাকে একেবারে মুছে ফেলা উচিত। তখন ব্যাপারটি কৌতূহলোদ্দীপক হয়ে উঠবে এবং সেটা এমন হয়ে দাঁড়াবে যে আমরা অনুশোচনা করতে বাধ্য হব। কিন্তু আমাদের মানবজাতি এবং উপমানবজাতির পূর্বপুরুষরা ভূবিদ্যাগত যুগগুলোতে আমাদের শত্রুদের সঙ্গে লড়েছে ও তাদের নির্মূল করে ছেড়েছে এবং তারা তাদের সাহসের দ্বারা লাভবান হয়েছে। এইজন্য ঘটনাচক্রে স্বাভাবিক মৃত্যু-ভীতিকে অতিক্রম করতে সামর্থলাভ করবার জন্য জীবনযুদ্ধে বিজয়ীদের কাছে এটা ছিল একটা বড় সুবিধা। জন্তু এবং বর্বরদের মধ্যে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাদের যুদ্ধপ্রিয়তাই যথেষ্ট। কিন্তু উন্নতির একটি বিশেষ পর্যায়ে এসে, মহম্মদীয়রা প্রথম প্রমাণ করতে পেরেছিল যে স্বর্গে বিশ্বাস ব্যাপারটাতে যথেষ্ট পরিমাণ সামরিক মূল্য আছে যা প্রাকৃতিক যুদ্ধপ্রিয়তাকে প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়েই সম্ভব। এইজন্য আমাদের স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে অমরত্বে বিশ্বাসপরায়ণ হতে উৎসাহী করার জন্য সমরতত্ত্ববিদরা যথেষ্ট জ্ঞানী এবং সর্বদা তারা মনে করায় যে এই জগৎ সম্পর্কে উদাসীনতাকে তৈরি করতে না পারলে এই বিশ্বাস কখনই গম্ভীর হয়ে উঠবে না।

    অন্য যে আবেগ মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত থাকার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে থাকে তা মানুষের মহানত্বকে প্রশংসা করার মধ্যে দিয়ে করে। যেমন বারমিংহামের বিশপ বলেছেন, তার মন অন্য যে-কোন কিছুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি সূক্ষ্ম যন্ত্র যা সবার আগে তার মধ্যে আবির্ভূত হয়েছিল সে জানে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক। সে ওয়েস্টমিনিষ্টার অ্যাবে নির্মাণ করতে পারে। সে পারে উড়োজাহাজ তৈরি করতে। সে সূর্যের দূরত্বকে হিসেবে করে বার করতে পারে…। তাই মানুষ কি মৃত্যুর পর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হবে? সেই অতুলনীয় যন্ত্র, তার মন, যখন জীবন স্তব্ধ হয়ে যাবে, তখন উধাও হয়ে যেতে পারে কি?

    বিশপ তার যুক্তি প্রদর্শনে এই ভাবে এগিয়েছেন যে একটি বৌদ্ধিক উদ্দেশ্যের দ্বারা এই বিশ্ব আকৃতিসম্পন্ন হয়েছে এবং শাসিত হচ্ছে। তাই মানুষকে তৈরি করে তাকে ধ্বংস হতে দেওয়াটা খুবই বুদ্ধিহীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

    এই বিতর্কে অনেকগুলি উত্তর দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, প্রকৃতির সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দেখা যায় নীতিবিদ্যা অথবা সৌন্দর্যবিজ্ঞানমূলক মূল্যবোধের অনুপ্রবেশে আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। আগে মনে করা হত যে স্বর্গীয় শরীরগুলো একটি বৃত্তে অবশ্যই ঘোরে। বৃত্তই একমাত্র যথার্থ বক্ররেখা (Curve) এবং ঐ প্রজাতিগুলি অবশ্যই অপরিবর্তনীয়। কেননা ঈশ্বর কেবলমাত্র তাই সৃষ্টি করেন যা যথার্থ এবং যাদের কোন রকম উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। এই কারণে কেবলমাত্র অনুশোচনা ছাড়া মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করাটা একটা অনর্থক ব্যাপার। কারণ পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তাদের পাঠানো হয়েছে এবং এই রকম আরও অনেক কিছু। যদিও এটা দেখা গেছে যে যতদূর পর্যন্ত আমরা আবিস্কার করতে পারি ততদূর পর্যন্ত আমরা দেখি যে প্রকৃতি আমাদের দ্বারা প্রদেয় মূল্যগুলির প্রতি উদাসীন থাকে। প্রকৃতিকে কেবলমাত্র জানা যেতে পারে আমাদের ভালো-মন্দ বিচারকে অবজ্ঞার দ্বারা। বিশ্বের একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে, কিন্তু তা আমাদের জানার মধ্যে কখনই পড়ে না, যদি তাই হত তবে সেই উদ্দেশ্য আমাদের মতোই সমগোত্রীয় হত।

    এখানে চমৎকৃত হবার মতো কিছুই নেই। ড. বারনেস আমাদের বলেছেন যে মানুষ কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা জানে। কিন্তু, বস্তুত নৃতত্ত্ববিদ্যা অনুযায়ী, ভালো-মন্দের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এতই পরিবর্তনশীল যে তার মধ্যে কোন একটাও কখনও স্থায়ী হয়নি। এইজন্য আমরা বলতে পারি না যে মানুষ জানে কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ, তবে কেবলমাত্র কিছু মানুষ তা পারে। সেইসব মানুষগুলি কেমন? নিৎসে একটি নীতিশাস্ত্রের স্বপক্ষে তার যুক্তি দেখিয়েছেন যা মৌলিকভাবে খ্ৰীষ্টীয়দের নীতিশাস্ত্রের থেকে স্বতন্ত্র এবং কিছু শক্তিশালী সরকার তার সেই শিক্ষাকে গ্রহণও করেছে। যদি ভালো-মন্দের জ্ঞানটাই অমরত্বের একটি যুক্তি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে আমরা নিৎসে না খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করব। তারপর আমরা দেখাবো যে খ্রীষ্টরা অমর কিন্তু হিটলার এবং মুসোলিনি অমর নয় অথবা উল্টোটা। সিদ্ধান্তটি অবশ্যই যুদ্ধক্ষেত্রে নিতে হবে, কেবলমাত্র করে নিলে হবে না। যাদের হাতে সব থেকে বিষাক্ত গ্যাস আছে তাদের হাতে নীতি শাস্ত্র আছে, এইজন্য তারাই হবে অমর।

    আমাদের চারপাশের সব কিছুর মতোই অর্থাৎ প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির মতোই ভালো ও মন্দের বিষয়ের উপর আমাদের অনুভব এবং বিশ্বাস বেড়ে উঠেছে আমাদের অস্তিত্বের জন্য সগ্রামের মধ্যে দিয়ে। এছাড়া তাদের কোন স্বর্গীয় অথবা অতিপ্রাকৃতিক উৎস নেই। ঈশপের একটি গল্পে আছে, একটি সিংহকে একটি ছবি দেখানো হল যে ছবিটিতে অনেকগুলি শিকারী অনেকগুলি সিংহকে ধরছে এবং তাই বলে মন্তব্য করা হল যে, যদি সিংহটি এই ছবিগুলি আঁকত তবে দেখা যেত যে সিংহরা শিকারীদের ধরছে। ড. বারনেস বলেছেন, মানুষ একটি অতি উত্তম প্রাণী কেননা সে উড়োজাহাজ বানাতে পারে। কিছুক্ষণ আগেই যে। মাছিগুলি সিলিংয়ের উপর ঘুরে বেড়ায় তাদের চালাকি নিয়ে একটি সম্মিলিত সংগীত গাওয়া হচ্ছিল : ‘এটা কি লয়েড জর্জ করতে পারেন? এটা কি. মিঃ বালডুইন করতে পারেন? এটা কি রামসে ম্যাক করতে পারেন? না’ এর উপর ভিত্তি করে একমাত্র ঈশ্বরবিশ্বাসী মানসিকতাসম্পন্ন মাছিই এই সশব্দ যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে এবং নিঃসন্দেহে অন্যান্য মাছিগুলি তাতে বিশ্বাস করার মতো অনেক কিছুই খুঁজে পাবে।

    অধিকন্তু, এটা তখনি ঘটে থাকে যখন আমরা অবাস্তবভাবে মানুষের সম্পর্কে এই ধরণের উচ্চ মতামত পোষণ করে থাকি। খুব সঠিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, মানুষ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ খুবই মন্দ চিন্তা পোষণ করে থাকে। সভ্য দেশগুলি তাদের বেশির ভাগ শুল্ক ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ পরস্পরের নাগরিকদের হত্যা করবার জন্য ব্যয় করে থাকে। নৈতিক সমর্থনে যে সমস্ত কার্যকলাপ ঘটেছে তার দীর্ঘ ইতিহাসকে বিবেচনা করা যাক। নরবলি, প্রচলিত ধর্মমত অনুযায়ী বিরোধীদের হত্যা, ডাইনি শিকার, সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড ও লুঠ, বিষাক্ত গ্যাসের দ্বারা হাজার হাজার মানুষের হত্যাকাণ্ড নির্বিচারে পরিচালনা, এসবের অন্তত একটাকেও ড. বারনেসের বিশপ-সম্প্রদায় সমর্থন করার দরকার মনে হয়, যেহেতু তিনি একজন অ-খ্রীষ্টীয় হতে নারাজ কিংবা বিরোধের বেলায় তিনি শান্তিকামী। এই সমস্ত অমঙ্গল এবং শাস্ত্রীয় মতবাদ যাদের দ্বারা ওই অমঙ্গলজনক কার্য ত্বরান্বিত হয়েছে সেগুলো কি সত্যই একজন বুদ্ধিমান স্রষ্টার প্রমাণ? এবং আমরা কি সত্যই এই ইচ্ছা করতে পারি যে মানুষগুলি এইসব কাজ তাদের চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকা উচিত? যে জগতে আমরা বাস করি তাকে বিশৃঙ্খল ও দুর্ঘটনার ফলরূপে আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু যদি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিপ্রায়ের ফলরূপে নির্গত হত, তবে সেই অভিপ্রায়টি শয়তানের অভিপ্রায়ই হত। আমার দিক দিয়ে বলতে গেলে, আমি মনে করি দুর্ঘটনা অনেক কম যন্ত্রণাদায়ক এবং অনেক সত্যবৎ প্রতীয়মান কল্পনা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল
    Next Article বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় রচনাবলী ২ (দ্বিতীয় খণ্ড)

    Related Articles

    বার্ট্রান্ড রাসেল

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    কর্তৃত্ব ও ব্যক্তিসত্তা – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    ধর্ম ও বিজ্ঞান – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    দর্শনের সমস্যাবলি – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    বার্ট্রান্ড রাসেল

    মানুষের কি কোনো ভবিষ্যত আছে? – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }