Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প311 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১২. বোনের বিয়ে ঠিক

    হাবিবুর রহমান তাঁর বোনের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। বরের নাম হেদায়েতুল ইসলাম। সে তার ফার্মেসিতে কাজ করে। ম্যানেজার। বয়স চল্লিশ হয় নি, তবে মাথার সব চুল পেকে গেছে বলে তাকে বেশ বয়স্ক দেখায়। সে চুলে কলপ দেয় না। কলপ দিলে অ্যালার্জির মতো হয়। নাক-মুখ ফুলে উঠে। পাকাচুলের এই মানুষটাকে তুমি তুমি করে বলতে হাবিবুর রহমানের অস্বস্তি লাগে।

    হেদায়েতুল ইসলামের এটা দ্বিতীয় বিবাহ। প্রথম স্ত্রী একবছর আগে মারা গেছে। সেই পক্ষের দুটা ছেলেমেয়ে আছে। একজনের বয়স সাত, আরেকজনের চার। এরা থাকে নারায়ণগঞ্জে, নানির বাড়িতে। হেদায়েতুল ইসলাম ঠিক করে রেখেছে, বিয়ের পর বাচ্চাদের নিজের কাছে এনে রাখবে। তার এমন স্ত্রী দরকার যার অন্তরে মায়া মহব্বত আছে। সে নিজের জন্যে বিয়ে করতে চায় না। বাচ্চাদের মানুষ করার জন্যে বিয়ে করতে চায়।

    হাবিবুর রহমান বিষয়টা নিয়ে তৌহিদার সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তৌহিদা শান্ত গলায় বলেছে–ভাইজান, আপনি যা বলবেন তাই হবে।

    হাবিবুর রহমান বললেন, ওর আগের পক্ষের দুটা সন্তান আছে, এই নিয়ে তোর কোনো সমস্যা নাই তো?

    তৌহিদা বলেছে, না।

    ঝালকাঠির পাত্রটা হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে পড়েছি মুশকিলে। তবে এই পাত্রও খারাপ না। অনেকদিন দেখেছি। স্বভাব-চরিত্র ভালো। আজকালকার জমানায় ভালো স্বভাব-চরিত্রের পাত্র পাওয়া অসম্ভব। লোম বাছতে কম্বল উজাড় হওয়ার অবস্থা। তারপরেও তোর একটা মতামত আছে। ভালোমতো চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নে।

    তৌহিদা বলল, ভাইজান, আপনি যা বলবেন তাই হবে।

    ছেলেকে একদিন বাসায় নিয়ে আসি। তুই কথা বলে দেখ।

    তৌহিদা বলল, দরকার নাই। আপনি তো কথা বলেছেন। আমি আর কী কথা বলব।

    পুরুষদের কথা বলা এবং মেয়েদের কথা বলা আলাদা। মেয়েরা দুই একটা কথা বলেই অনেক কিছু বুঝে ফেলে। পুরুষরা পারে না। নিয়ে আসি একদিন।

    আপনার ইচ্ছা।

    এক হরতালের দিনে হাবিবুর রহমান তাঁর ম্যানেজারকে বাসায় নিয়ে এলেন। তৌহিদা ম্যানেজারের জন্য চা-নাশতা নিয়ে গেল।

    আধবুড়া একজন চোয়াল-ভাঙা মানুষ কুজো হয়ে বসার ঘরের বেতের চেয়ারে বসে আছে। মাথায় চুল নেই বললেই হয়। যা আছে সবই পাকা। লোকটা মাথা সামান্য কাত করে দাঁড়কাকের মতো বসে আছে। তার গা থেকে প্রচণ্ড ঘামের গন্ধ আসছে। লোকটা তৌহিদাকে ঢুকতে দেখে বলল, ভালো আছ। তৌহিদা?

    তৌহিদা বলল, জি।

    চা-নাশতার দরকার ছিল না। সকালে এককাপ আর রাতে ঘুমাবার আগে এককাপ। এর বেশি খাই না। অনেকের চা খেলে রাতে ঘুম হয় না। আমার উল্টা। চা না খেলে ঘুম হয় না।

    তৌহিদা কিছু বলল না। তার কান্না পাচ্ছে। তার ইচ্ছা করছে চাপা গলায় বলে, এই দাঁড়কাক, তুই চেয়ারে বসে আছিস কেন? তুই ডাস্টবিনের উপর বসে থাক।

    হেদায়েত বলল, তুমি কিছু বললো। চুপচাপ কেন? তোমরা কয় ভাই-বোন?

    তৌহিদা বলল, আমি একা।

    স্যার যে বললেন, তোমরা দুই বোন।

    দুই বোন ছিলাম, একবোন খুব ছোটবেলায় মারা গেছে।

    কীভাবে মারা গেছে?

    পানিতে ডুবে।

    আফসোস। বিরাট আফসোস।

    তৌহিদা আবারো মনে মনে বলল, তোর আফসোস কী জন্যে? শালী থাকবে না, কারো সঙ্গে ইটিস-পিটিস করতে পারবি না, এইজন্যে আফসোস?

    লোকটা সুড়ৎ করে চায়ে চুমুক দিল। এক চুমুকে আধাকাপ চা খালি। এই লোকটার সবকিছুই কি খারাপ? এত গরম চা এক চুমুকে খেয়ে ফেলল।

    তৌহিদা, আমার বিষয়ে তোমার যদি কিছু জিজ্ঞেস করার থাকে, জিজ্ঞেস কর। আছে কিছু?

    কিছু নাই।

    আমার বাচ্চা দুটার কথা কি স্যার বলেছেন?

    জি।

    মেয়ের নাম রানী, আর ছেলের নাম রেখেছি গোলাপ। জন্মের সময় গায়ের রঙ গোলাপের মতো ছিল এইজন্যে গোলাপ। এখন রঙ কালো হয়ে গেছে। জন্মের সময়ের রঙ লাস্টিং করে না। তৌহিদা, দেখি তোমার বাঁ হাতটা?

    তৌহিদা চমকে উঠে বলল, কেন?

    আমি অল্পবিস্তর পামিস্ট্রি জানি। কিরোর বই পড়ে পড়ে শিখেছি। আমার সঙ্গে তোমার বিয়ের ফলাফল শুভ হবে কি-না একটু দেখি। দুজনের হাত পাশাপাশি মিলিয়ে দেখতে হয়। পুরুষদের ডান হাত, মেয়েদের বা হাত।

    তৌহিদা হাত বাড়িয়ে দিল। তার আচরণে সঙ্কোচের চিহ্নও নেই। তার মন বলছে, এই লোকটা তার বাঁ হাত এখন কিছুক্ষণ কচলাবে। কচলানো হাতে লেগে থাকবে লোকটার গায়ের ঘামের গন্ধ। সাবান দিয়ে ধুলেও এই গন্ধ যাবে না।

    তোমার সানলাইন তো মারাত্মক। মাউন্ট অব জুপিটারে আবার আছে ক্রস। ডাবল অ্যাকশন। বিয়ের পর টাকা-পয়সার যোগ আছে।

    এতক্ষণ লোকটার প্রতি তার তেমন ঘেন্না হচ্ছিল না। এখন হচ্ছে। লোকটার হাতটাকে মনে হচ্ছে মাকড়শা। একটা কালো মাকড়শা পাঁচটা পা নিয়ে তার হাতের উপর কিলবিল করছে। তৌহিদা অপেক্ষা করছে কখন লোকটা হাত ছাড়বে সে চলে যেতে পারবে। লোকটার হাত ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই।

    হেদায়েত হাসিমুখে বলল, তোমার হাতে আছে মীনপুচ্ছ। খুবই মারাত্মক। লাখে একটা পাওয়া যায়। তুমি বিরাট ভাগ্যবতী। অবশ্য একটা জিনিস তোমার খারাপ। স্বাস্থ্যরেখা। রাতে ঘুম ভালো হয়?

    হুঁ।

    অ্যানিমিয়া আছে। এটা হাত দেখে বলছি না। চোখ দেখে বলছি! অনেক দিন ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে আছি। এখন ডাক্তারদের চেয়ে জ্ঞান বেশি! একদিন। ফার্মেসিতে চলে এসো, ওষুধ দিয়ে দিব। ফলিক অ্যাসিড। তার সঙ্গে এক পাতা। ফাইভ মিলিগ্রাম রিভোফ্লবিন। এটা একটা ভিটামিন ট্যাবলেট। ফলিক অ্যাসিডের সঙ্গে রিভোফ্লবিন খেলে অ্যাকশান ভালো হয়। অনেকেই বিষয়টা জানে না।

    জি আচ্ছা।

    পানি বেশি করে খাবে। সকালে একগ্লাস পানি খাবে খালি পেটে পানিতে লেবুর রস চিপে দিবে। লেবুতে আছে ভিটামিন সি।

    তৌহিদা উঠে দাঁড়াল। লোকটা এখন আগের মতো ঘাড় কাত করে দাঁড়কাক হয়ে গেছে। তৌহিদার বমি বমি ভাব হলো। কারণ লোকটা এখন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৌহিদার বুকের দিকে। কোনো লজ্জাও সে বোধ করছে না। খুব ভালো হতো তৌহিদা যদি বলতে পারত–আপনি আমার বুক দেখতে চান? বাথরুমে আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি। এখানে দেখাতে পারব না। ভাইজান যে-কোনো সময় চলে আসতে পারেন। যা ভাবা যায় তা কখনোই বলা যায় না। তৌহিদা ঘর ছেড়ে শান্ত ভঙ্গিতেই বের হয়ে গেল।

    হাবিবুর রহমান আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কথা হয়েছে?

    তৌহিদা বলল, জি ভাইজান।

    কথাবার্তা বলে কী মনে হলো?

    ভালো।

    স্মার্ট ছেলে না?

    জি।

    ভালো হাত দেখতে পারে। বিয়ের পর বলবি হাত দেখে দেবে।

    আচ্ছা।

    হাবিবুর রহমান আনন্দিত গলায় বললেন, বিয়ের তারিখ করে ফেলি? বিয়ের কথাবার্তা একবার হয়ে গেলে দেরি করতে নাই।

    তৌহিদা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। দুটি হাতই সাবান দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে। এই লোক দুটি হাতেই ঘামের গন্ধ লাগিয়ে দিয়েছে।

    দুপুরে তৌহিদা কিছু খেতে পারল না। সাবান দিয়ে ধুয়েও হাত থেকে ঘামের গন্ধ যায় নি। এই গন্ধ নিয়ে ভাত খাওয়া যাবে না। ভাতের মধ্যে গন্ধ ঢুকে যাচ্ছে।

    ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষের ঘুম হয় না, কিন্তু তৌহিদার গাঢ় ঘুম হলো। সে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখল, মতিন তার পাশে শুয়ে আছে। মতিনের একটা হাত তার গায়ে। সে সাবধানে হাতটা সরিয়ে দিতেই মতিন জেগে উঠে বলল, কী হয়েছে? তৌহিদা বলল, গায়ের উপর হাত রাখ কেন? ভার লাগে না?

    মতিন বলল, তাহলে হাত রাখব কোথায়?

    তৌহিদা বলল, হাত যেখানে ইচ্ছা রাখ। আমার গায়ে না।

    মতিন বিস্মিত হয়ে বলল, স্ত্রীর গায়ে হাত রাখতে পারব না?

    তৌহিদা বলল, তুমি তো আমাকে বিয়ে কর নি। আমি তোমার স্ত্রী না।

    মতিন বলল, তাহলে আমার স্ত্রী কে?

    তৌহিদা বলল, তোমার স্ত্রীর নাম নিশু।

    মতিন সঙ্গে সঙ্গে পাশ ফিরল। অমনি দেখা গেল ওপাশে নিশু শুয়ে আছে। স্বপ্নে বিষয়টা মোটেই অস্বাভাবিক মনে হলো না। মনে হলো এটাই স্বাভাবিক। মতিন নিশুর গায়ে হাত রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। তৌহিদা কাঁদছে।

    তৌহিদা কাঁদতে কাঁদতেই ঘুম থেকে জেগে উঠল। তাকাল বিছানার পাশে। বিছানা খালি। অথচ তার মনে হচ্ছিল বিছানায় মতিনকে দেখা যাবে। মতিনের পাশে নিশু মেয়েটাকে দেখা যাবে।

    বাচ্চা ছেলেদের গলায় কে যেন তাকে ডাকছে–ও তৌহিদা! ও তৌহিদা! বাচ্চা ছেলেদের গলায় তাকে কে ডাকবে? এ বাড়িতে বাচ্চা কেউ নেই। ঘুম ভাঙার পর কিছুক্ষণ এলোমেলো সময় কাটে। মানুষের গলার স্বর চেনা যায় না। তাই হচ্ছে নিশ্চয়ই। তৌহিদা তার ঘর থেকে বের হলো।

    সালেহা তৌহিদাকে ডেকে ডেকে বিরক্ত হচ্ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে কঠিন ধমক দেন। তিনি রোগীমানুষ। একবার ডাকলেই তৌহিদা ছুটে আসবে। তা-না, ডেকে গলা ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।

    বুবু, আমাকে ডেকেছেন?

    সালেহা তিক্ত গলায় বললেন, তোমাকে কেন ডাকব? আমি এই দেশের মহারানীকে ডাকছি। তুমি কি মহারানী? আমার গায়ে একটা পাতলা চাদর এনে দাও।

    তৌহিদা চাদর এনে দিল। সালেহা বলেন, চাদর দিতে বললাম সঙ্গে সঙ্গে চাদর দিয়ে দিলে, একবার জিজ্ঞেসও করলে না, কেন। কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখবে না? তৌহিদা কপালে হাত দিয়ে বলল, জ্বর আছে।

    জ্বরটা কত দেখ? থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা এখনো জানো না? জীবনে একটা জিনিসই তো শিখেছ, ফিচ ফিচ করে কান্না।

    তৌহিদা জ্বর দেখল। জ্বর একশ দুই-এর সামান্য কম। সালেহা বললেন, জ্বর উঠা শুরু হয়েছে। আরো উঠবে।

    বুবু, মাথায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করি?

    সালেহা বললেন, তোমাকে কোনো ব্যবস্থা করতে হবে না। তুমি আমার মাথার পাশে চেয়ার টেনে বসো। তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।

    তৌহিদা চেয়ার টেনে বসল। তার সামান্য ভয় ভয় করছে। জ্বরের ঘোরে। সালেহা কী না কী বলেন। জ্বর বেশি হয়ে গেলে তার মাথার ঠিক থাকে না।

    তোমার ভাইজান না-কি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে?

    তৌহিদা জবাব দিল না। সালেহা কড়া গলায় বললেন, কথা বললে জবাব দিবে। কাঠের মূর্তি হয়ে যাবে না। তোমার ভাইজান কি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে?

    জি।

    পাত্র নাকি বাসায় এসেছিল? তোমার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতও হয়েছে।

    জি।

    এত নাটক হয়ে গেল, আমি কই ছিলাম?

    বুবু আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।

    আমাকে ঘুম থেকে জাগানো গেল না?

    গতরাতে আপনি এক ফোটা ঘুমান নাই। ভাইজান এইজন্যেই আপনাকে ডাকেন নাই।

    তোমার ভাইজান বলল, পাত্র নাকি তোমার খুবই পছন্দ হয়েছে?

    তৌহিদা এই প্রশ্নের জবাব দিল না। মাথা নিচু করে বসে রইল। সালেহা বললেন, ঘাটের মরাকে বিয়ের জন্যে পাগল হয়ে গেলে কেন? শরীর বেশি আউলা হয়ে গেছে? শরীর বেশি আউলা হলে বাজারে দোকান দিয়ে বসো। শরীরও ঠিক থাকবে পয়সাও পাবে। এইটা ভালো না?

    তৌহিদার চোখে পানি এসে গেছে। সে সাবধানে চোখের পানি মুছল। বুবু দেখে ফেললে সমস্যা হবে। আরো কী কথা বলবেন কে জানে। তাঁর মুখ ছুটে গেলে সমস্যা আছে। আগে তিনি নোংরা বলতেন না। এখন বলেন। অসুখে ভুগে ভুগে এরকম হয়েছে।

    তৌহিদা।

    জু বুবু।

    আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি, তোমার জন্য সবচে ভালো হয় যদি তুমি তোমার ভাইজানকে বিয়ে কর। সে তোমার আপন ভাই না, সৎ ভাইও না। লতায় পাতায় ভাই। বেচারার কোনো ছেলেপুলে নাই। তোমাকে বিয়ে করলে হয়তো সন্তান হবে। সতিনের সংসার নিয়ে তোমার চিন্তার কিছু নাই। আমি বেশিদিন বাঁচব না।

    তৌহিদা ভীত গলায় বলল, আমি সারাজীবন উনাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখেছি।

    সালেহা বললেন, এখন স্বামীর মতো দেখবে। এই নিয়ে আর কথা বলব না। জ্বরটা আবার দেখ। জ্বর যদি একশ তিন হয় তাহলে মাথায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা কর। তার আগে আমার মোবাইল টেলিফোনটা খুঁজে বের কর। মতিনের নাম্বারটায় টেলিফোন করে ওকে ধরে আমাকে দাও। আজকে আমি তার বিষ ঝেড়ে দেব। সে নাকি আমার ভাই। আজ আমি তার ভাইগিরি বের করে দেব। কত বড় বদমাশ! আমার এখানে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

    তৌহিদা ক্ষীণ গলায় বলল, ভয়ে আসে না। আপনি বকা দিবেন।

    ভয়, না? ভয় পায়। ভয় আমি তাকে গিলায়ে খাওয়ায়ে দিব। আমাকে চিনে না। আমি সালেহা বেগম।

    তৌহিদা কিছুক্ষণ মোবাইল টেলিফোন নাড়াচাড়া করে ভীত গলায় বলল, উনি টেলিফোন ধরছেন না। বলেই মনে হলো তার মিথ্যাটা বুবু ধরে ফেলবেন। তার রাগ আরো বেড়ে যাবে।

    সালেহা মিথ্যা ধরতে পারলেন না। তিনি ক্লান্ত গলায় বললেন, চেষ্টা চালিয়ে যাও। যখন ধরতে পারবে তখন আমাকে দেবে। তারপর দেখবে কত ধানে কত চাল। আমি ঐ কুত্তার বাচ্চাটার বিষ ঝাড়ব। আমার নাম সালেহা বেগম না, আমার নাম সালেহা ওঝা।

     

    মতিন তার মেসের ঘরে। দরজা জানালা বন্ধ। সে লেখা নিয়ে বসেছে। লেখার শিরোনাম নদ্দিউ নতিম এবং একটি হস্তীশাবক। নদ্দিউ নতিম বিচিত্র স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তিনি একবার শখ করে সার্কাসের দল থেকে একটি হাতির বাচ্চা কিনেছিলেন। হাতির বাচ্চাটা তার সঙ্গে দেড় বছর ছিল। এই দেড় বছরে তিনি কোনো লেখালেখি করেন নি। হাতির বাচ্চা নিয়ে সময় কাটিয়েছিলেন। তিনি তার আজীবনিতে বলেছেন এই দেড় বছর তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। এই বিষয় নিয়ে লেখা।

    লেখার মাঝামাঝি সময়ে নিশুর টেলিফোন এলো। তার গলা ক্লান্ত ও বিষণ্ণ। সে বলল, মতিন, তুমি একটু আসতে পারবে?

    মতিন বলল, কোথায়?

    ক্লিনিকে। আমি ক্লিনিকের ডক্টরদের চেম্বারে বসে আছি।

    মতিন বলল, আসতে পারব না। আমি লেখা নিয়ে বসেছি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছি।

    নিশু বলল, মতিন, আমি বিপদে পড়েছি।

    মতিন বলল, আমিও বিপদে পড়েছি। নদ্দিউ নতিম হাতির বাচ্চাটার সঙ্গে কথা বলতেন। হাতির বাচ্চা কথোপকথনে অংশ নিত। অংশটা কীভাবে নিত সেটাই ঠিক করতে পারছি না।

    নিশু ধরা গলায় বলল, মতিন, কিছুক্ষণ আগে আমার বাবা মারা গেছেন।

    মতিন বলল, সে-কী!

    নিশু বলল, ডেডবডি নিয়ে আমি কী করব, কোথায় যাব, কবর কোথায় হবে। কিছুই বুঝতে পারছি না। টেনশনে এমন অবস্থা আমি কাঁদতেও পারছি না।

    মতিন বলল, তুমি নিশ্চিন্ত মনে বসে থাক। আমি আমার দুলাভাইকে ক্লিনিকের ঠিকানা দিয়ে টেলিফোন করছি। উনি এইসব বিষয়ে বিরাট অ্যাক্সপার্ট লোক। তোমাকে কিছুই করতে হবে না। যা করার উনিই করবেন।

    তুমি আসবে না?

    মতিন বলল, আমি লেখার এমন এক পর্যায়ে আছি যে লেখা ছেড়ে উঠা সম্ভব না। আচ্ছা হাতির ডাককে বাংলায় কী বলে যেন?

    বৃংহতি।

    বাহ্ সুন্দর নাম! নিশু শোন, তুমি কি এই ব্যাপারটা লক্ষ করেছ?–ঘোড়ার ডাকে আলাদা নাম আছে, হেষা। হাতির ডাকের আলাদা নাম বৃংহতি। কিন্তু বাঘের ডাকের কোনো আলাদা নাম নেই। বাঘের ডাকের একটা আলাদা নাম থাকা উচিত ছিল না?

    নিশু জবাব না দিয়ে লাইন কেটে দিল।

     

    নিশুর প্রচণ্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। কাকে সে পানির কথা বলবে? যে ডাক্তার তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছেন তিনি নেই। অন্য ডাক্তাররা এই ঘরে ঢুকছে বেরুচ্ছে। অনেকেই তাকে দেখছে বিরক্ত চোখে। অপরিচিত একটা মেয়ে তাদের ঘরে জবুথবু হয়ে বসে আছে, বিরক্ত হবারই কথা। একজন আবার জিজ্ঞেস করল, আপনার কি কাউকে দরকার? নিও না-সূচক মাথা নেড়েছে।

    নিশু ঘড়ি দেখল। বাবা মারা যাবার পরপরই সে একবার ঘড়ি দেখেছিল। কেন দেখেছিল? মৃত্যুর সময় জানার জন্যে? জন্ম-সময় জানাটা জরুরি। মৃত্যু সময় জেনে কী হবে?

    তার বাবা বিখ্যাত কেউ হলে পত্রিকায় নিউজ হতো–জনাব আজিজ আহমেদ অমুক দিন এতটার সময় অমুক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর একমাত্র সন্তান পাশে ছিল। তার ডাক নাম নিশু। সে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী।

    আচ্ছা এসব সে কী ভাবছে? তার উচিত হাউমাউ করে কাঁদা। সে কাঁদতেও পারছে না। কান্না আসছে না। এমন কি হতে পারে পরিচিত কেউ আশেপাশে নেই বলে সে কাদতে পারছে না? বাবার জন্যে সে কোনো দুঃখ পাচ্ছে না–এটা তো ঠিক না। বাবা ছাড়া তার কে আছে? কিছুদিন থেকে বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব খারাপ যাচ্ছিল। এই কারণে কি তার মনে বাবার উপর চাপা রাগ আছে? রাগ আছে বলেই এখনো তার চোখ শুকিয়ে আছে।

    জীবনের শেষের কয়েকটা দিন তার মাথারও ঠিক ছিল না। আবোলতাবোল কথা বলতেন। একদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে নিশুকে দেখে বিরক্ত গলায় বললেন, একা এসেছিস কেন? জামাই কই?

    নিশু বলল, আমি বিয়ে করেছি নাকি যে জামাই নিয়ে আসব?

    আজিজ আহমেদ রাগী গলায় বললেন, আমার সঙ্গে ঠাট্টা ফাজলামি করবি। আমি ঠাট্টা ফাজলামি পছন্দ করি না। তুই যে গোপনে বিয়ে করেছিস এই খবর আমি জানি।

    নিশু বলল, এই খবর যদি জানো তাহলে বলো কাকে বিয়ে করেছি?

    মতিনকে। আর কাকে!

    ও আচ্ছা।

    ও আচ্ছা আবার কী? স্বীকার কর।

    আচ্ছা যাও স্বীকার করলাম।

    তুই একা আসিস কেন? ওকে আনিস না কেন?

    মতিন তোমাকে ভয় পায় বলে আসে না। ভাবে তাকে তুমি বকা দিবে।

    বকা তো তাকে দেবই! গোপনে বিয়ে করার জন্য বুকা দেব না? আমাকে রোজ কেন দেখতে আসে না এইজন্যে বকা দেব। আরেকটা কথা, তুই মতিনকে নাম ধরে ডাকবি না। তুই তুকারি করবি না। বিয়ের আগে ডেকেছিস—আর না।

    ঠিক আছে আর ডাকব না। বাবা, তুমি কথা বেশি বলছ। এত কথা বলা। ঠিক না।

    তোরা স্বামী-স্ত্রী সারারাত জেগে কথা বলিস। তোদর কথার যন্ত্রণায় আমি ঘুমাতে পারি না। আর আমি কথা বললেই অসুবিধা?

    মৃত্যুর পাঁচ-দশ মিনিট আগে তিনি ঘোরের মধ্যে চলে গেলেন। অদৃশ্য কোনো একজনের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি আজরাইল। আপনাকে চিনতে পারি নাই, ক্ষমা করবেন। আপনি কি আমার জান কবচ করতে এসেছেন? জি করেন। আপনি কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন বলে চিনতে পারি নাই। আপনাকে সালামও দিতে ভুলে গেছি। আসসালামু আলায়কুম। আমার পাশে আমার মেয়ে বসে আছে। তার নাম নিশু। সে আবার কয়েকদিন আগে গোপনে। বিয়ে করেছে। আমার মেয়ে জামাইয়ের নাম মতিন। সে আমাকে খুব ভয় পায় বলে হাসপাতালে আসে না। আপনি একটু সরে গিয়ে আমার মেয়েটার পেছনে দাঁড়ান। আপনাকে দেখলে আমার মেয়ে ভয় পাবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }