Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প311 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৫. তৌহিদা এসেছে নিউ সালেহা ফার্মেসিতে

    তৌহিদা এসেছে নিউ সালেহা ফার্মেসিতে। সে তার ভাইজানের সঙ্গে গোপনে কিছু কথা বলবে। সালেহা বুবু তাকে নিয়ে ভয়াবহ পরিকল্পনা করেছেন, সেই কথা। কথাগুলি সে শেষ পর্যন্ত বলতে পারবে কি-না বুঝতে পারছে না। হয়তো বলতে পারবে না। কিছুক্ষণ ভাইজানের সামনে চোখমুখ লাল করে বসে থেকে উঠে চলে আসবে। সে কী করে ভাইজানকে বলবে–ভাইজান, সালেহা বুবু আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে দেয়ার চিন্তা করছেন।

    ভাইজান তার মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনলে বিরক্ত হবেন। হয়তো তাকে ধমক দিয়ে বলবেন, তোর বুবু অসুস্থ। মাথার ঠিক নাই। সে উল্টাপাল্টা কিছু বলল আর তুই আমাকে সেটা বলার জন্য ফার্মেসিতে চলে এসেছিস? তোর লজ্জা লাগল না? ভাইজান অবশ্যই এ নিয়ে তাকে ধমক দিতে পারেন। কত ছোটবেলায় সে ভাইজানের সঙ্গে থাকতে এসেছে। তখন সবসময় তার নাক দিয়ে সিকনি পড়ত। চোখে পড়লেই ভাইজান বলতেন, কাছে আয় নাক ঝেড়ে দেই। ঝড়বৃষ্টির রাতে ভয়ে তার ঘুম হতো না। বজ্রপাতের সময় বিছানায় বসে কাঁদত। তখন ভাইজান বলতেন, আয় আমার সঙ্গে এসে ঘুমা। গায়ের উপর পা তুলবি না। গায়ের উপর পা তুললে পা ভেঙে দেব।

    হাবিবুর রহমান ফার্মেসিতে ছিলেন না। তিনি মোহাম্মদপুর বাজারে গেছেন। শিং মাছ কিনতে। কাচকলা দিয়ে শিং মাছের ঝোল অতি সহজপাচ্য। সালেহার জন্য শিং মাছ তিনি দেখেশুনে কিনেন। পেট লাল হয়ে আছে এরকম শিং মাছ চলবে না। লাল পেটের শিং মাছ গুরুপাক। এই তথ্য সবাই জানে না। তিনি এক কবিরাজের কাছে শুনেছেন।

    ফার্মেসির ম্যানেজার হেদায়েতুল ইসলাম তৌহিদাকে দেখে আনন্দিত গলায় বলল, আস আস। আজ সকাল থেকেই কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি আসবে। এসে ভালো করেছ, কিছু ওষুধপত্র দিয়ে দিব। প্রেসারটাও মেপে দিব। সবারই উচিত সপ্তাহে একবার প্রেসার মাপা।

    তৌহিদা বলল, ভাইজান কোথায়?

    স্যার বাজারে গেছেন। বাজার থেকে সরাসরি ফার্মেসিতে আসবেন।

    তৌহিদা ভেতরের ঘরে এসে বসল। ম্যানেজার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘরে ঢুকে ফ্যান ছাড়তে ছাড়তে বলল, ইস ঘেমে কী অবস্থা! তোমার গা কি বেশি ঘামে? বগল ঘামে? বগল ঘামার লোশন আছে। দিয়ে দিব।

    পুরুষমানুষের মুখে এটা কী ধরনের কথা! সে আরো কী বলবে কে জানে। তৌহিদার মনে হলো তার ঘরে এসে বসা ঠিক হয় নি। এই লোক এখন অবশ্যই তার গায়ে হাত দিবে। লোকটার চোখ চকচক করছে।

    তৌহিদা বলল, আমি যাই।

    বসতে না বসতেই যাই। তোমার সমস্যাটা কী? আমি কি পরপুরুষ? দুদিন পরে আমাকে বিয়ে করছ না!

    তৌহিদা যা ভেবেছিল তাই, লোকটা তার হাত ধরে ফেলেছে। এই হাত শুধু যে তার হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে তা না, অন্য কোথাও যাবে। ঐদিন লোকটাকে দাঁড়কাকের মতো লাগছিল। আজও দাঁড়কাকের মতোই লাগছে। বদমাশটা একটা শার্ট পরেছে, উপরের বোতাম লাগায় নি। বুকের পাকা লোম দেখা যাচ্ছে। এরচে কুৎসিত দৃশ্য কি পৃথিবীতে কিছু আছে? তৌহিদা একদৃষ্টিতে লোকটার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নখ বড় বড় হয়ে আছে। নখের নিচে ময়লা। নাম যেন কী লোকটার? হেদায়েতুল ইসলাম। তার একটা ছেলে একটা মেয়ে। ছেলেটার নাম গোলাপ। এই লোকটার সঙ্গে বিয়ে হলে সে তাকে ডাকবে গোলাপের বাপ। লোকটার হাত এখন তৌহিদার উরুতে। তৌহিদা কী বলবে–এই গোলাপের বাপ, হাত সরাও? না-কি বলবে, এই হারামজাদা! হাত কোথায় রেখেছিস? থাপ্পড় দিয়ে তোর দাঁত ফেলে দিব।

    তৌহিদা ঝট করে উঠে দাঁড়াল। হেদায়েতুল ইসলাম বলল, কী হলো, যাও কোথায়?

    তৌহিদা বলল, আমার কাজ আছে।

    চা আনতে বলেছি। চা খেয়ে যাও। এই ফাঁকে প্রেসারটা মেপে দেই। আমি সিওর তোমার প্রেসার আছে।

    তৌহিদা প্রায় ছুটেই বের হয়ে গেল। কিছুই বলা যায় না এই লোক তাকে ঝাপ্টে ধরে ফেলতে পারে।

    এই শোন, স্যারকে কী বলব?

    আপনার যা ইচ্ছা বলুন।

    সাহসী মেয়ে তৌহিদা কখনোই ছিল না। আশ্রিত মেয়েরা কখনো সাহসী হয় না। তাদের মধ্যে পরগাছা ভাব থেকেই যায়। তারপরেও সে আজ ভালো রকম সাহস দেখাল। বাসায় ফিরে না গিয়ে রিকশা নিয়ে মতিনের মেসে উপস্থিত হলো। মতিনের মেসে (বেঙ্গল মেস) সে আগে কখনো আসে নি। কথাটা পুরোপুরি সত্যি না। এর আগে দুবার এসেছে, তবে ভেতরে ঢোকে নি। ভেতরে ঢোকার সাহস হয় নি। গেটের সামনে থেকে ফিরে গেছে। আজ সে ঢুকে পড়েছে। রুম নাম্বার সতেরো। তৌহিদা জানে না সে মতিনকে কী বলবে। তার জীবনের ভয়ঙ্কর বিপদের কথাটা হয়তো বলবে। কিংবা কিছুই বলবে না। আমেকদিন এই মানুষটাকে সে দেখে না। কিছুক্ষণ চোখের দেখা দেখল। সেটাও তো কম না। তার যেমন কপাল, রুম নাম্বার সতেরোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে তালা ঝুলছে। কিছু কিছু মানুষের কপাল এত খারাপ হয় কেন?

    দরজায় তালা নেই। দরজা ভেতর থেকে বন্ধও না। সামান্য ফাক হয়ে আছে। তৌহিদার এখন কী করা উচিত? দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে যাওয়া? না-কি দরজায় টোকা দেয়া?

    তৌহিদা দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল।

    আরে তৌ তুমি! What a pleasant surprise. আজ সকাল থেকে মনটা খুব খারাপ। তোমাকে দেখে মন ভালো হয়ে গেছে।

    তৌহিদার পা কাঁপছে। কেন জানি তার মনে হচ্ছে সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। পড়ে গেলেই ভালো হয়। মতিন ভাই তখন বাধ্য হয়ে তাকে ধরাধরি করে বিছানায় শুইয়ে দেবে। সে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবে মতিন ভাইয়ের বিছানায়। এটাও কম কী? তার মতো মেয়ের জীবনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দই থাকবে। বড় আনন্দ কখনোই থাকবে না। বড় আনন্দ ভাগ্যবতীদের। জন্যে। সে কোনোকালেই ভাগ্যবতী ছিল না।

    তৌ, এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো।

    তৌহিদার মনে হলো মতিন ভাই তাকে তৌ ডাকছেন না। তিনি ডাকছেন বৌ। আর কী সুন্দর করেই না ডাকছেন। বৌ, এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসো।

    সে কোথায় বসবে? ঘরে একটা চেয়ার আছে। চেয়ারে বসলে মতিন ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক দূরে বসা হয়। সে যদি বিছানায় মতিন ভাইয়ের পাশে বসে তাহলে কি তিনি রাগ করবেন? কিংবা তাকে বেহায়া ভাববেন?

    তৌহিদা চেয়ারে বসতে বসতে বিড়বিড় করে কী যেন বলল! কী বলল সে নিজেও বুঝতে পারল না।

    মতিন বলল, তুমি এত দূরে বসেছ কেন? বিছানায় বসো। আমার কাছাকাছি বসো। তোমাকে দেখে খুবই অবাক হয়েছি। আমার মেসের ঠিকানা কোথায় পেয়েছ? আচ্ছা থাক, ঠিকানা কোথায় পেয়েছ বলার দরকার নেই। ঠিকানা পাওয়া ইম্পোর্টেন্ট না। ঠিকানায় চলে আসা ইম্পোর্টেন্ট।

    তৌহিদার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। সে অনেক কষ্টে চোখের পানি সামলে তিনের বিছানায় এসে বসল। মতিন বলল, এখন শোন কেন আমার মনটা খারাপ।

    বলুন।

    একটা দশ এগারো বছরের ছেলে আছে, তার নাম লমক!

    কী নাম? লমক?

    তার নাম কমল, আমি উল্টো করে বললাম, লমক। কারণ এই ছেলেটা অনেক কথাই উল্টো করে বলে।

    কেন?

    ছেলেটা আর দশজনের মতো না। আলাদা। এদের বলে অটিস্টিক বেবি। এই ধরনের শিশুদের অনেকেই মানসিক রোগী ভাবে। তাদের ভাবভঙ্গি সেরকমই। তবে তারা কোনো কোনো দিকে অস্বাভাবিক মেধাবী হয়। কেউ হয় সঙ্গীতে আবার কেউ হয় অঙ্কে। এই ছেলেটির মেধা হাইয়ার ম্যাথে। ছেলেটা তার একটা সিক্রেট আমাকে লিখে জানিয়েছিল। সিক্রেটটা আমি এতদিন পড়ি নি। ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম। আজ সকালে পড়েছি। পড়ার পর থেকে মনে হচ্ছে কেন পড়লাম। সব সিক্রেট জানতে নেই।

    তৌহিদা ক্ষীণ স্বরে বলল, সিক্রেটটা কী?

    মতিন বলল, সিক্রেট বলে বেড়ানোর বিষয় না। তাহলে আর সিক্রেট থাকে না।

    তৌহিদা বলল, সে আপনাকে তার সিক্রেট বলল কেন?

    সিক্রেট কাউকে না কাউকে বলতে হয়। তুমি কি তোমার জীবনের সব গোপন বিষয় নিজের কাছে রেখে দিয়েছ? কাউকে নিশ্চয়ই বলেছ।

    আমার বলার কেউ নেই।

    এখন নেই, কোনো একদিন হবে তখন বলবে।

    তৌহিদা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, গোপন কথা বলার মতো কেউ হবে

    মতিন বলল, এরকমও হতে পারে। তখন কী করতে হয় জানো? তখন গোপন কথা দিয়ে কবিতা লিখতে হয়। কবিতা লিখে সবাইকে জানিয়ে দিতে হয়। নদ্দিউ নতিম এই কাজটাই সারাজীবন করেছেন।

    নদ্দিউ নতিম কে?

    একজন উজবেক কবি। যেমন তাঁর কবিতা অসাধারণ, মানুষ হিসেবেও তিনি অসাধারণ। তার একটা কবিতা তোমাকে পড়ে শোনাই? গোপন কথা নিয়ে তার একটা কবিতা আছে–

    একটি গোপন কথা
    পদ্ম জেনেছিল
    পদ্ম তাই লজ্জায়
    লুকিয়েছে মুখ
    মীনদের মাঝে কোলাহল
    পদ্মের হয়েছে আজ
    কেমন অসুখ?

    মতিন কবিতা পড়ে যাচ্ছে, পাশে বসে চোখ মুছছে তৌহিদা। একই সঙ্গে তার ভয়ঙ্কর কষ্ট হচ্ছে আবার ভয়ঙ্কর আনন্দও হচ্ছে। কষ্টের কারণটা স্পষ্ট, কিন্তু আনন্দের কারণটা স্পষ্ট না। সে সারাজীবন এই মানুষটার পাশে বসে থাকতে পারবে না। তাকে একসময় উঠে চলে যেতে হবে। তার একদিন বিয়ে হবে। গায়ে ঘামের গন্ধভর্তি কোনো এক দাঁড়কাকের সঙ্গেই হবে। সেই দাঁড়কাক তাকে কবিতা শোনাবে না, সে হাত বুলাবে তার উরুতে।

    তৌহিদা কবিতা পড়ার মাঝখানেই উঠে দাঁড়াল। মতিন বলল, কোথায় যাও?

    তৌহিদা বলল, বাসায় যাব। আমার শরীরটা খারাপ লাগছে।

    এসো আমি একটা ট্যাক্সি করে দেই।

    তৌহিদা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, আপনাকে আসতে হবে না।

    কাঁদছ কেন?

    আমার ইচ্ছা হচ্ছে কাদছি। আপনার কী?

    দুটা মিনিট বসো তো। চা খাও।

    এই মানুষটা তাকে চা খেতে বলছে। দাঁড়কাকটাও বলেছিল। দুজনের কথা বলার ধরন কত আলাদা।

    তৌহিদা উঠে দাঁড়াল। মতিন ঝট করে তার হাত ধরে টেনে বসাল। দাঁড়কাকটাও তার হাত ধরেছিল।

    তৌ শোন, মন খারাপ করে কাঁদতে কাঁদতে তুমি আমার ঘর থেকে যাবে তা আমি হতে দেব না।

    তৌহিদা ফেঁপাতে ফোঁপাতে বলল, আপনি আমার মন ভালো করে দেবেন?

    মতিন বলল, অবশ্যই।

    তৌহিদা বলল, কীভাবে?

    কোনো একটা জটিল জিনিস তোমার মাথায় ঢুকিয়ে দেব। একটা ধাধা। তুমি ধাধার রহস্য বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। মন খারাপ ভাব দূর হয়ে যাবে। তুমি একটা কাজ কর, ড্রয়ারটা খোল। কমলের লেখা সিক্রেটটা ড্রয়ারে আছে। হাতে নাও। পড়। দেখ কোনো অর্থ বের করতে পার কি-না।

    তৌহিদা ড্রয়ার খুলে কাগজ হাতে নিল। হিজিবিজি এইসব কী লেখা? এর অর্থ কী?

    অর্থ বের করার চেষ্টা কর।

    তৌহিদা গভীর মনোযোগে লেখা পড়ার চেষ্টা করছে।

    মতিন বলল, দেখি তোমার বুদ্ধি।

    terces ym uoy gnillet ma I owN. kram htrib a evah I. redluohs thgiR. der si ruoloC…

    তৌহিদা কাগজ থেকে চোখ না তুলেই বলল, এটা কি কোনো বিদেশী ভাষা?

    বিদেশী ভাষা অবশ্যই। তবে তোমার জানা ভাষা। ইংরেজি।

     

    কমল তার ঘরের রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছিল। মুনা দরজার পাশ থেকে বললেন, কমল, আসব?

    কমল জবাব দিল না। আগের মতোই দুলতে থাকল। মুনা ঘরে ঢুকলেন। ছেলের ডানপাশে রাখা সাইডটেবিলে বসলেন। কমলের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি যদি দোলা বন্ধ কর তাহলে তোমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতে পারি।

    এখন গল্প করব না।

    গল্প না। তোমাকে আমার কিছু জরুরি কথা বলা দরকার।

    কমল বলল, won ton.

    এর মানে কী? কমল বলল, এর মানে Not now.

    মুনা বললেন, কথাটা আমার এখনই বলা দরকার।

    তাহলে বলো। কিন্তু আমি দোলা বন্ধ করব না।

    তুমি না-কি তোমার বাবাকে বলেছ মতিন নামের লোকটিকে ছাড়া তুমি কোথাও যাবে না?

    হুঁ।

    কেন?

    বাবাকে explain করেছি।

    আমাকেও কর। তোমার মুখ থেকেই তোমার এক্সপ্লেনেশন শুনতে চাই।

    এককথা বারবার বলতে ইচ্ছা করে না।

    তুমি এককথা বারবার বলো।

    এখন বলব না। এখন আমি অন্য একটা জিনিস নিয়ে চিন্তা করছি।

    জিনিসটা কী?

    Hilberts hotel paradox. হিলবার্টের হোটেলে আছে অসীম সংখ্যার রুম। প্রতিটি রুমে একজন অতিথি আছে। তখন হঠাৎ করে আরো অসীম সংখ্যার অতিথি উপস্থিত হলো। তারা কোথায় থাকবে? মা, তুমি বলো তারা কোথায় থাকবে?

    মুনা হতাশ গলায় বললেন, তারা অন্য হোটেলে যাবে।

    কমল বলল, না। কারণ আলফা নাল প্লাস আলফা নাল সমান সমান আলফা নাল। আবার আলফা নাল গুণন আলফা নাল সমান সমান আলফা নাল।

    আলফা নাল কী?

    আলফা শব্দ এসেছে হিব্রু আলেফ থেকে। আলফা নাল হলো যেখানে সব স্বাভাবিক সংখ্যা আছে। ম্যাথমেটিশিয়ান Cantor এটা বের করেছিলেন। মা, বোর্ডে লিখব?

    মুনা কিছু বললেন না। কমল উৎসাহের সঙ্গে বোর্ডের সামনে দাঁড়াল। হাতে লাল চক নিয়ে লিখতে লাগল—

    a0  +  1 = a0
    a0  +  a0 = a0
    a0 x a0 = a0
    (a0)^50 = a0
    (a0)^(1/2) = a0

    মুনা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকার আর অর্থ হয়। চলে যাওয়াও যাচ্ছে না, কমল মন খারাপ করবে। বিদঘুটে লেখাগুলি লিখে সে যে আনন্দ পাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। তার চোখ ঝলমল করছে। তাকে দেখাচ্ছেও সুন্দর। একজন ক্ষুদে মাস্টার। চক-ডাস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ছড়ার কানাই মাস্টার–

    আমি আজ কানাই মাস্টার
    পড় মোর বিড়াল ছানাটি…

    কমল মার দিকে তাকিয়ে বলল, মা, ইন্টারেস্টিং না?

    মুনা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। কমল বলল, এরচে ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখবে?

    এরচে ইন্টারেস্টিং জিনিসও আছে?

    অবশ্যই আছে। এখন আমি একটা সিরিজ লিখব। সিরিজটা মন দিয়ে দেখ।

    কমল বোর্ডের একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত একটা সিরিজ লিখল–

    1-1+1-1+1-1+1-1+1-1…

    মা, সিরিজটা দেখেছ?

    হুঁ।

    এর উত্তর কত?

    মুনা বললেন, উত্তর শূন্য। প্লাস মাইনাসে সব কাটাকাটি হয়ে যাচ্ছে।

    কমল বলল, একই সিরিজ আমি ব্র্যাকেট দিয়ে লিখছি। দেখ কী হয়–

    1+(-1+1)+(-1+1)+(-1+1)…

    এর উত্তর কত মা?

    মুনা বললেন, ওয়ান!

    কমল বলল, এখন কি মজাটা বুঝতে পারছ মা? একই সিরিজের উত্তর একবার হচ্ছে শূন্য। আরেকবার হচ্ছে One, অদ্ভুত না?

    মুনা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন।

    কমল বলল, One যদি হয় বাতি জ্বলা আর শূন্য যদি হয় বাতি নেভা, তাহলে কী হয়? এই সিরিজটা অগ্রসর হচ্ছে, বাতি জ্বলছে বাতি নিভছে। আমরা পুরোপুরি কখনো বলতে পারব না–বাতি জ্বলছে না নিভছে।

    মুনা বললেন, তোমার এইসব শুনে আমার মাথা ধরে যাচ্ছে। তুমি বাতি জ্বালাতে থাক নিভাতে থাক, আমি ঘুমুতে গেলাম।

    সালেহ ইমরান তাঁর স্টাডিরুমে টিভি ছেড়ে বসেছেন। দেখছেন সিএনএন। টিভিতে একদল সন্ত্রাসীকে দেখাচ্ছে। তারা রাশিয়ার একটা স্কুলের একদল ছাত্রকে আটকে রেখেছে। হুমকি দিচ্ছে সবাইকে মেরে ফেলা হবে। তবে তাদের দলের যে কজন রাশিয়ার কারাগারে আছে তাদের ছেড়ে দিলে এই কাজটা তারা করবে না। সালেহ ইমরান ভেবেই পাচ্ছেন না একদল অবোধ শিশুকেও কেউ জিম্মি করতে পারে! ঘটনা কোনদিকে মোড় নেয় দেখার জন্যে তিনি আজ প্রায় সারাদিনই টিভির সামনে বসেছিলেন। তার ধারণা শেষ পর্যন্ত প্রতিটি শিশুই মুক্তি পাবে। শিশুদের বাবা-মারা বাইরে অপেক্ষা করছেন। তারা যখন তাদের বাচ্চাদের ফিরে পাবেন তখন যে আনন্দময় পরিবেশ হবে সেটা দেখার জন্যেই সালেহ ইমরান অপেক্ষা করছেন। তার ধারণা এই দৃশ্যটি হবে জগতের মধুরতম কিছু দৃশ্যের একটি।

    রাত এগারোটা। মুনা স্টাডিরুমের দরজা ধরে দাঁড়ালেন। দরজায় টোকা দিলেন। সালেহ ইমরান টিভি পর্দা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মুনা বললেন, তুমি ঘুমুবে না?

    সালেহ ইমরান বললেন, তুমি শুয়ে পড়, আমার দেরি হবে।

    মুনা বললেন, তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।

    আগামীকাল শুনি।

    যে-কথা এখন বলতে চাচ্ছি আগামীকাল তা নাও বলতে ইচ্ছা হতে পারে।

    কথাগুলি কি খুবই জরুরি?

    হ্যাঁ জরুরি। খুব জরুরি কি-না তা জানি না, তবে জরুরি।

    সালেহ ইমরান বললেন, কথাগুলি কি এখানেই বলবে,–কি আমাকে বিশেষ কোনো জায়গায় যেতে হবে?

    মুনা বললেন, এখানেও বলতে পারি, আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি প্রেমের কোনো সংলাপ বলব না যে তোমাকে নীপবনে যেতে হবে।

    সালেহ ইমরান টিভি বন্ধ করলেন। মুনা এসে তাঁর সামনে বসতে বসতে সহজ গলায় বললেন, এই বাড়িতে বাস করে আমি কোনো আনন্দ পাচ্ছি না।

    এই কথা তো আগেও কয়েকবার শুনেছি। এটাই তোমার জরুরি কথা?

    হ্যাঁ। এই বাড়িতে কোনো আনন্দ নেই। আমি যখন ছেলের কাছে যাই, সে হিজিবিজি কথা বলে। আমি যখন তোমার কাছে আসি, তুমি ঝিম ধরে থাক। তোমার এই বাড়িটাতে মনে হয় সময় থেমে আছে।

    তোমার বাড়ি তোমার বাড়ি করছ কেন? বাড়িটা তো তোমারও।

    মুনা বললেন, এই বাড়িটাকে কখনো আমার নিজের বাড়ি মনে হয় নি। বাড়িটাকে আমার হোটেলের মতো লাগে। যে হোটেলে আমি গেস্ট হিসেবে থাকতে এসেছি। মেয়াদ শেষ হলে বিল মিটিয়ে চলে যাব।

    বিল মেটাতে চাচ্ছ?

    মুনা বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন, হ্যাঁ চাচ্ছি।

    সালেহ ইমরান বললেন, কমল? কমলের কী হবে?

    সে থাকবে তোমার সঙ্গে। তোমাকে সে আমার চেয়ে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া তার পাশে কে আছে কে নেই এটাকে সে কোনোরকম গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না।

    মুনা উঠে দাঁড়ালেন।

    সালেহ ইমরান বললেন, তোমার কথা শেষ?

    মুনা বললেন, হ্যাঁ শেষ। এখন তুমি টিভি ছাড়তে পার। চা বা কফি লাগবে? পাঠাতে বলব?

    সালেহ ইমরান বললেন, তোমার কথার সারমর্ম কী? মুনা বললেন, সারমর্ম হলো, আমি তোমার সঙ্গে বাস করব না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }